আমার কোনো খেদ নেই, আমার কোনো অভিমান নেই – আপনাদেরও যা আছে ঝেড়ে ফেলুন। আমার কাজ যদি কোনো আগ্রহ তৈরি করে আপনাদের মধ্যে চেষ্টা করুন দেখুন আমার কাজ, আর যদি না করে অন্য কোনো আগ্রহের জায়গায় সময় দিন [...]

জীবনেরও দেয়ার সীমাবদ্ধতা আছে, আমি জানি। জন্ম না হলে হয়তো জানা হত না, কিন্তু জন্ম হয়ে যা জানা হল তাতে আমি প্রতিটি দিন কালো থেকেছি – মৃত্যু আমি বয়ে বেড়িয়েছি, বুদ্ধের চোখের মতো : প্রণত পাপড়ির রেখার মাঝে, তারা, যা ধ্যান খচিত – সংখ্যা মনে রাখতে হয় শুধু, চারটি পাপড়ি, দুটি তারা, কে আনত কেউ জানে না, সবাই জানে আমরা দেখছি দুটি চোখ, আর সবার মতো, বুদ্ধেরও। আমাকে কাজ করতে না দেয়ার অনেক যুক্তি থাকতে পারে, আমাকে অবজ্ঞা করার অনেক উপায় থাকতে পারে, আমাকে বসবাস করতে না দেয়ার অনেক উপলক্ষ থাকতে পারে, আমাকে অপ্রাসঙ্গিক ভাবার অনেক প্রকল্প থাকতে পারে, আমাকে যৌনবস্তু ভাবার অনেক প্রস্তাব থাকতে পারে, আমাকে অবাংলাদেশ ভাবার অনেক প্রগতিঅপ্রগতিশীল থাকতে পারে, আমাকে চামুচমুখেদেয়া বৈভবখোর ভাবার অনেক সংগ্রামঅসংগ্রামশীল থাকতে পারে – কিন্তু সবকিছুর বিপরীতে কথা হল আমি নিরন্তর কাজ করেছি। আর কাজের জন্য আমি স্থান বদল করেছি বা স্থান নির্বাচন করেছি। এবং ইতিহাসের পাতা জুড়ে আপনি দেখবেন অনেকেই তাই করেছেন – কিন্তু আমি কেন আলাদা হয়ে গেলাম? –আপনাদের দেখার ভুলেই নিশ্চয়। আপনারা কেন আমাকে এভাবে দেখলেন? – এটা আমার কোনো প্রশ্ন বা অভিমান নয়, এটা আমার বোধ, এটা এমন নয় স্থানকালের কিছু পাত্রের পরিবর্তন হলেই আপনাদের দেখার ভুল ঘটত না – সব ঠিকঠাক চলত, তা কিন্তু নয়। মন খুলে বলুন তো কত জন ভাস্কর আছে বাংলাদেশে? কত জন ভাস্কর কাজ করে বাংলাদেশে? কতটা ভাস্কর্যপ্রবণ বাংলাদেশ? তাহলে বলুন কোথায় দাঁড়িয়ে আপনাদের ভুল দেখা ঠিক হয়ে যেত? শেষ পর্যন্ত কাজে থাকতে আমাদের অনেক কিছু করতে হয়ই, যেমন কাজ শিখতেও আমাদের অনেক কিছু না করে থাকতে হয়। যেজীবন বেছে নিয়েছিলাম তার আদ্যোপান্ত আমাকেই ছিবড়ে নেবে তা জেনেই আমি জীবন শুরু করেছিলাম – আমার কোনো খেদ নেই, আমার কোনো অভিমান নেই – আপনাদেরও যা আছে ঝেড়ে ফেলুন। আমার কাজ যদি কোনো আগ্রহ তৈরি করে আপনাদের মধ্যে চেষ্টা করুন দেখুন আমার কাজ, আর যদি না করে অন্য কোনো আগ্রহের জায়গায় সময় দিন, আমার জীবন যদি কোনো আগ্রহ তৈরি করে আপনাদের মধ্যে আমার জীবনটাকে উদঘাটন করার চেষ্টা করুন, আর যদি না করে অন্য কোনো আগ্রহের…

তাই যখন নভেরা এখন আবার আমাদের ভাবনায় সচল হয়েছেন তখন এই আকাঙ্ক্ষা কি আমরা করতে পারি না যে, আমাদের এই পথিকৃৎ ভাস্করকে দেখবার জন্যে আমাদের এক জোড়া নতুন চোখ চাই? [. . .]

নভেরা আহমেদ আর নেই — এই কথাটি প্রচারিত হবার পরে নভেরা যেন আবার ফিরে এলেন সাধারণ থেকে অসাধারণ, সব পাঠকের আলোচনায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে প্রচার মাধ্যম নভেরা বিষয়ে আবার একটু বিশেষভাবে সরগরম হয়েছে। আর এই পৃথিবীর আর এক প্রান্তে বসে সেই সরগরম দুনিয়াটায় আমি ঘুরছিলাম। খুঁজছিলাম কোথায় কী লেখা হচ্ছে, বলা হচ্ছে নভেরাকে নিয়ে। কী রূপে ফিরছেন আমাদের পথিকৃৎ ভাস্কর তাঁর মৃত্যুর পরে? খুব অল্প কিছু সংখ্যক লেখা চোখে পড়েছে যেগুলোর শব্দের গাঁথুনিতে নভেরার শিল্পী-মূর্তি ধরা পড়েছে। বাকিরা ফিরে ফিরে দেখেছেন হাসনাত আবদুল হাইয়ের ‘নভেরা’ উপন্যাস থেকে উঠে আসা নায়িকাকে। আমাদের শিল্পকলার ইতিহাস অসম্পূর্ণ থেকে যাবে যাঁকে বাদ দিলে, সেই নভেরার কেবল জীবনযাপনের গল্পই যখন তাঁকে সামনে নিয়ে আসার প্রধান অবলম্বন হয়ে দাঁড়ায়, তখন ভাবতেই হয় আমরা এখন নভেরার জন্মসাল ১৯৩০-এ দাঁড়িয়ে আছি। নভেরা আমাদের ছাড়িয়ে টাইম মেশিনে চেপে পেরিয়ে যাচ্ছেন একবিংশ শতক। বিংশ শতকের মধ্যভাগে যে নারী ভাস্কর হিসেবেই নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে লড়েছেন তাঁকে আমরা দেখছি ছানি-পড়া চোখে। যে চোখের ঝাপসা দৃষ্টি তাঁর সৃষ্টিকে কাষ্ঠবৎ জড় বিবেচনায় অবহেলা করেছে, আর রক্তমাংসের মানুষটির জীবনাচারকেই তাঁর সমস্ত জীবনের মাপকাঠিতে রূপান্তরিত করেছে, সেই দৃষ্টি কি পারে সময় থেকে এগিয়ে থাকা মানুষটির প্রকৃত স্বরূপের মূল্যায়ন করতে? পারে না, পারে না বলে এই সব দৃষ্টির অধিকারীরা তাদের নিজের অবস্থানে টেনে নামাতে চায় তাঁর শিল্পীসত্তাকে। নভেরার ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ঘটেনি, ঘটবার কথাও ছিল কিনা বুঝতে পারি না। দীর্ঘকাল তো চলেছে আমাদের শিল্পকলার ইতিহাস নভেরাকে বাদ দিয়ে কিংবা আড়াল করে। কিছু অনুসন্ধানী চোখ তাঁর শিল্পীসত্তা আর তাঁর সৃষ্টিকে নতুন করে ফিরিয়ে না আনলে নভেরা তো হারিয়েই গিয়েছিলেন। নভেরার নয়, বরং আমাদেরই সৌভাগ্য যে কেউ কেউ ফিরে দেখেছিলেন তাঁকে, নইলে ভুলভাল শিল্পের ইতিহাসের উপর দাঁড়িয়ে থাকতো আমাদের শিল্পকলার ইতিহাস। কিন্তু এর পরেও কথা থেকে যায়, কেননা শিল্পের ইতিহাস সাধারণ অর্থে শিল্পকলার মানুষেরই। সর্বসাধারণের কাছে তবে কী করে পৌঁছাবেন আমাদের শিল্পের ইতিহাসের প্রথম এবং প্রধানতম ভাস্কর? তাঁকে সাধারণের কাছে প্রথমবারের মতো নিয়ে এলেন হাসনাত আবদুল হাই। ১৯৯৪ সালের হাসনাত সাহেব ‘নভেরা’ উপন্যাসের মধ্যে দিয়েই নভেরাকে সাধারণ শিল্পানুরাগী বা কৌতূহলী পাঠকের সামনে নিয়ে আসেন। এর পরেও এই উপন্যাস বহুবার…

|| সন্তবৃন্দ ও ধর্মদ্রোহীগণ (প্রথমার্ধ) || লিখতে পারতেন যাঁরা তাঁরা যেহেতু গির্জা-সম্পৃক্ত লোকজন, তাই এটা খুব-ই স্বাভাবিক যে তাঁরা যা লিখেছেন তার বেশ বড় একটা অংশ ধর্মীয় ও যাজকীয় বিষয়াদি সম্পর্কিত, এবং সেগুলোর অনেকগুলোর-ই আজ আর তেমন প্রাসঙ্গিকতা নেই। [. . .]

Tore Janson-এর সুইডিশ ভাষায় রচিত Latin: Kulturen, historien, språket গ্রন্থের Merethe Damsgård Sørensen ও Nigel Vincet-কৃত ইংরেজি অনুবাদ A Natural History of Latin-এর বাংলা ভাষান্তর সন্তবৃন্দ ও ধর্মদ্রোহীগণ (প্রথমার্ধ) লিখতে পারতেন যাঁরা তাঁরা যেহেতু গির্জা-সম্পৃক্ত লোকজন, তাই এটা খুব-ই স্বাভাবিক যে তাঁরা যা লিখেছেন তার বেশ বড় একটা অংশ ধর্মীয় ও যাজকীয় বিষয়াদি সম্পর্কিত, এবং সেগুলোর অনেকগুলোর-ই আজ আর তেমন প্রাসঙ্গিকতা নেই। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, বাইবেলের বিভিন্ন বই তথা পর্বের টীকা-ভাষ্যদানকারী রচনাগুলো মধ্যযুগ জুড়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে, এবং কিছু পরিশ্রমী ব্যক্তি বাইবেলের প্রতিটি বইয়ের ভাষ্য রচনা করেতে সক্ষম হয়েছিলেন। সবচাইতে নিবেদিতপ্রাণ আধুনিক পণ্ডিতেরাই কেবল এসব রচনার ছোট ছোট অংশের অতিরিক্ত কিছু পড়ে উঠতে পেরেছেন; যদিও, যে-সময়ে সেগুলো লেখা হয়েছে সেই কাল সম্পর্কে গুচ্ছ গুচ্ছ খুবই জরুরি তথ্য সেখানে মাঝে মধ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতে দেখা যায় । তার চাইতে কিছুটা মজার হল কিছু পুণ্য কিংবদন্তী। সেই প্রাচীন কালেই নামজাদা লোকজনের জীবনী লেখার চল ছিল। খৃষ্টানরা সেই স্বভাব রপ্ত করলেন, যদিও স্পষ্টতই তাঁরা পুণ্যবান পুরুষ আর নারীদের নিয়েই লিখতে পছন্দ করতেন, বিশেষ করে যদি তাঁরা তাঁদের ধর্মবিশ্বাসের কারণে নিহত হয়ে থাকেন এবং তার ফলে শহীদ হয়ে থাকেন। এ ধরনের কিংবদন্তীতে সাধারণত সেই বিশেষ মানুষটির জীবনের বর্ণনা থাকে, থাকে জীবনের অজানা কাহিনী, তবে প্রথমত এবং প্রধানত সেগুলো হলো সে-সমস্ত আশ্চর্য কাজকর্ম ও অলৌকিক ঘটনা যা তাঁদের সন্ত হতে সাহায্য করেছে। প্রাচীনতম এবং সবচাইতে বিখ্যাত কিংবদন্তীগুলোর একটি হচ্ছে Tours-এর সন্ত মার্টিন সম্পর্কিত, এবং সেটার শুরু প্রসিদ্ধ একটা কাহিনী দিয়ে। মার্টিন তখনো সামরিক বাহিনীতে কর্মরত; শীতকালের এক দিনে তিনি অশ্বারোহনে কোথাও যাচ্ছেন, তখন এক দরিদ্র পুরুষ মানুষের সঙ্গে তার দেখা। প্রবল শীত থেকে নিজেকে রক্ষা করার মতো কোনো গরম পোশাক ছিল না তাঁর গায়ে। মার্টিন আগেই তাঁর সব অর্থ-কড়ি বিলিয়ে দিয়েছেন অন্য গরীব মানুষের মধ্যে, কাজেই, তখন আর কি করার ছিল তাঁর? নিজের তরবারিটা বের করে আলখাল্লাটি কেটে দুই অর্ধেক করলেন তিনি, তারপর এক অর্ধেক দান করে দিলেন দরিদ্র মানুষটিকে। এই গল্পটি সত্যি হতেও পারে কারণ লেখক সালপিসিয়াস সেভেরাস ছিলেন মার্টিনের সমসাময়িক, এবং তাঁর পরিচিত। কিন্তু তারপরেও এরপর যেসব অলৌকিকের বর্ণনা পাওয়া যায় — যেমন…

|| গ্রন্থাবলী ও লিপিকরবৃন্দ (শেষার্ধ) || তারপরেও, প্রায় এক সহস্রাব্দ ধরে, প্রাচীন যুগের সংস্কৃতি প্রচার করার দায়িত্ব প্রায় নিরঙ্কুশভাবে ছিল বিভিন্ন মঠগুলোর স্ক্রিপ্টোরিয়াম বা লেখার ঘরগুলোর ওপর। [. . .]

Tore Janson-এর সুইডিশ ভাষায় রচিত Latin: Kulturen, historien, språket গ্রন্থের Merethe Damsgård Sørensen ও Nigel Vincet-কৃত ইংরেজি অনুবাদ A Natural History of Latin-এর বাংলা ভাষান্তর   গ্রন্থাবলী ও লিপিকরবৃন্দ (শেষার্ধ) তারপরেও, প্রায় এক সহস্রাব্দ ধরে, প্রাচীন যুগের সংস্কৃতি প্রচার করার দায়িত্ব প্রায় নিরঙ্কুশভাবে ছিল বিভিন্ন মঠগুলোর স্ক্রিপ্টোরিয়াম বা লেখার ঘরগুলোর ওপর। সেখানে যেসব পাণ্ডুলিপি তৈরি হতো সেগুলো সহজপাঠ্য ছিল না সবসময়। সমস্যাটা যে হাতের লেখারই ছিল সাধারণত তা নয়, যদিও অবশ্যই লিপিকর, কাল, এবং স্থানভেদে লিখন শৈলীর তফাত হতো প্রায়ই। হস্তরেখা পরীক্ষা করে একটি পাণ্ডুলিপি তৈরির স্থান ও কাল সম্পর্কে মূল্যবান সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেন বিশেষজ্ঞরা। এই বিদ্যাটিকে বলা হয় ‘paleography’; লাতিন টেক্সট নিয়ে যাঁরা ঐকান্তিকভাবে কাজ করেন তাঁদের প্রত্যেকের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার। এমনকি যখন সেগুলো লিপিকরের নিজস্ব ধরন বা বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত, তখনো বেশিরভাগ হস্তরেখাশৈলী যথেষ্ট পরিষ্কার ও সুসামঞ্জস্যপূর্ণ; কাজেই কেউ একবার হরফগুলোর আকৃতি-প্রকৃতি চিনে ফেলতে পারলে কোনো নির্দিষ্ট টেক্সটের অক্ষরগুলো বুঝতে পারা কঠিন কোনো বিষয় নয়। দুর্ভাগ্যক্রমে, সমস্যার এখানেই শেষ নয়। একটা বড়সড় অসুবিধার জায়গা হচ্ছে — বিশেষ করে এ-কাজে যারা নতুন তাদের জন্য — শব্দ সংক্ষেপগুলো। চর্মপট মহার্ঘ হওয়ায়, যতটুকু জায়গা পাওয়া যেতো তার সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করাটা জরুরি ছিল। তাছাড়া, লিপিকরেরা প্রয়োজনাতিরিক্ত কোনো অক্ষর লেখার ব্যাপার তেমন উৎসাহী ছিলেন না, কাজেই শব্দসংক্ষেপের বেশ কিছু উপায় ছিল তাদের। তার মধ্যে সবচাইতে প্রচলিত ছিল একটা হরফের ওপর একটা রেখা টেনে দেয়া, যে রেখাটা সেই হরফের পর একটা ‘m’ বোঝাত; কাজেই ‘uerbum’ না লিখে ‘uerbū’ লিখতেন তাঁরা। এই একটা ব্যাপার হয়ত কঠিন কিছু না। কিন্তু মুশকিল হলো দুর্ভাগ্যক্রমে রেখাটা অন্য কয়েকটা জিনিস-ও বোঝাতে পারতো, যেমন, ‘r’ রয়েছে এমন কোনো সিলেবল-এর লোপ। কাজেই ‘uerbum’ -এর স্থলে আপনি 'ūbū' লিখতে পারতেন, যা অনভিজ্ঞ পাঠককে একটু মুশকিলে ফেলে দেয়। আর এটা তো কেবল শুরু; এছাড়াও ছিল আর কয়েক ডযন শব্দসংক্ষেপ, এবং সেগুলো ব্যবহারের হাজারটা উপায়। আরেকটা সমস্যা যতি বা বিরামচিহ্ন। অনেক পাণ্ডুলিপিতেই বিরামচিহ্নের কোনো বালাই নেই বললেই চলে, বা যখন তাদের দেখা মেলে তখন সেগুলো আমরা আজ যেসব ব্যবহার করি তার মতো নয়, এবং ওসব ব্যবহারের রীতিনীতিগুলো আমাদেরগুলোর চাইতে একেবারেই ভিন্ন রকম। পাঠককে…

|| গ্রন্থাবলী ও লিপিকরবৃন্দ (প্রথমার্ধ) || প্রাচীনকালে লোকে প্যপিরাসের ওপর লিখত, যেটা কিনা এমন একটি উপাদান যা স্বাভাবিক পরিবেশ পরিস্থিতিতে মাত্র কয়েকশ বছর টেকে। ফলে যিশুর জন্মের কাছাকাছি সময়ের ধ্রুপদী যুগের উৎকীর্ণ লিপি ছাড়া প্রায় কিছুই টেকেনি। [. . .]

Tore Janson-এর সুইডিশ ভাষায় রচিত Latin: Kulturen, historien, språket গ্রন্থের Merethe Damsgård Sørensen ও Nigel Vincet-কৃত ইংরেজি অনুবাদ A Natural History of Latin-এর বাংলা ভাষান্তর গ্রন্থাবলী ও লিপিকরবৃন্দ (প্রথমার্ধ) প্রাচীনকালে লোকে প্যপিরাসের ওপর লিখত, যেটা কিনা এমন একটি উপাদান যা স্বাভাবিক পরিবেশ পরিস্থিতিতে মাত্র কয়েকশ বছর টেকে। ফলে যিশুর জন্মের কাছাকাছি সময়ের ধ্রুপদী যুগের উৎকীর্ণ লিপি ছাড়া প্রায় কিছুই টেকেনি। সেসময়ে যা কিছু লেখা হয়েছিল তার বেশিরই ভাগ হারিয়ে গেছে প্যাপিরাস নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে। তারপরেও যে প্রাচীন যুগের সাহিত্যের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ আমাদের কাছে আছে তার কারণ হলো, নষ্ট হয়ে যাওয়ার আগে সেগুলো প্রায়-ই নকল করা হতো, কাজেই সেসব আরেকটু বেশি দিনের জন্য সংরক্ষিত হয়েছিল। সৌভাগ্যক্রমে, চর্মপট বা চর্মপত্র (parchment) বলে একটা নতুন উপাদান প্রাচীন যুগের শেষের দিকে ব্যবহার হতে শুরু করে। সেটা ছিল জীব-জন্তুর চামড়া দিয়ে তৈরি, এবং এই পাত বা ফলকগুলো ছিল কঠিন, দেখতে প্রায়ই হলদেটে, খুবই শক্ত আর টেকসই। গুটিয়ে রাখা যেতো না সেগুলোকে, কাজেই তার বদলে বড় বড় পাত বা ফলকগুলোকে ভাঁজ করে সুবিধেমতো পাতার আকার দেয়া হতো, আর তারপর সেগুলোকে একসঙ্গে করে একপাশে সবগুলোকে সেলাই করে জুড়ে দেয়া হতো। সেলাই করা শিরদাঁড়া বা পুট-টি এরপর একটা শক্ত আবরণের সঙ্গে বাঁধা হতো। আর এভাবেই আবিষ্কৃত হলো বই, কার্যত যা এখনো এভাবেই তৈরি হয়। চর্মপটের তৈরি বই চতুর্থ শতকে জনপ্রিয়তা লাভ করে। কিন্তু তারপরেও প্যাপিরাস ব্যবহৃত হতে থাকে বেশ কিছু শতক ধরে, যদিও ধীরে ধীরে তা হারিয়ে যায় পুরোপুরি। একথা সত্য যে, তুলনামূলকভাবে চর্মপট তৈরি অধিক সময়সাপেক্ষ, কিন্তু গৃহপালিত পশু সবখানেই লভ্য ছিল, ওদিকে প্যাপিরাস মিশর থেকে আমদানি করতে হতো। ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে বাণিজ্য ক্রমেই কমে গিয়ে শেষ পর্যন্ত পুরোপুরি থেমে যেতে পশ্চিম ইউরোপে প্যাপিরাস আসা-ই বন্ধ হয়ে গেল। প্রযুক্তির এই পরিবর্তনটি কিন্তু পক্ষেই গেল লাতিনের। প্যাপিরাসের রোল থেকে কেউ কোনো লাতিন টেক্সট চর্মপটে নকল করলে সেই টেক্সট তখন আরো বেশ কয়েক শতাব্দী টিকে যেতো। প্রাচীন যেসব টেক্সট আমাদের কাছে এখনো আছে সেগুলো চর্মপটে নকল করা হয়েছিল। এরকম একটি নকল তৈরি করা সময় এবং অর্থের দিক দিয়ে বড়সড় একটি বিনিয়োগই ছিল বটে, কাজেই এতে অবাক হওয়ার কিছু…

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.