– একটি গাড়ি কখন পরিবেশ দূষিত করে?
– যখন গাড়িটি চলে।
তাহলে গাড়ি থেকে কার্বন নিঃসরণ কমাতে হলে গাড়ি চালানো কমাতে হবে। গাড়ি চালানো কমাতে হলে গাড়ি (কার, বেবিটেক্সি) কম চালিয়ে গাড়িতে (ট্রেন, বাস) চড়া বাড়াতে হবে। এবং এর জন্য সরকারের নাগরিক যাতায়াত পরিকল্পনায় অনেক বেশি কমিউনিটি ট্রান্সপোর্ট নিয়ে ভাবতে হবে। সকালে স্কুলে যাওয়া ও অফিস-কারখানায় যাওয়া, দুপুরে স্কুল থেকে ফেরা ও সন্ধ্যায় অফিস-কারখানা থেকে ফেরা, এই যানবাহনের পিকআওয়ার শুধু অসহনীয় ট্রাফিক জ্যাম সৃষ্টি করছে না, জ্যামের পর্দার আড়ালে ওই সময়ে কার্বন নিঃসরণের মাত্রাও দিনের অন্য সময়ের চেয়ে অনেক বেশি। স্কুলবাস সত্যিই এক বড় সমাধান হবে, এদিকে নাগরিক মাত্রেরই নজর দেয়া উচিত, এবং এই পরিকল্পনাকে সফল করতে সিটি করপোরেশন ও সরকারের যাতায়াত বিভাগের পূর্ণ কর্মতৎপরতা প্রয়োজন। অফিস ও কারখানার জন্য কমিউনিটি বাস ও কমিউনিটি ট্রেন চালু করা উচিত, এবং আমাদেরও নিজের ব্যক্তিগত গাড়িতে অফিসে কারখানায় যাওয়ার অভ্যাসের ইতি ঘটানো উচিত। জনসংখ্যার এক অতি কম অংশ আমাদের দেশে নিজেদের গাড়ি ব্যবহার করে, কিন্তু এই অতি ক্ষুদ্র অংশই এখন সবচেয়ে বড় দুঃশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠছে, গত ২ বছরে দেশে জ্যামের সবচেয়ে বড় কারণ কারের সংখ্যা বৃদ্ধি, এভাবে কার বাড়তে থাকলে, আমরা যারা সরু রাস্তার আবাসিক এলাকায় থাকি তাদেরকে কারের উপর দিয়ে হেঁটে রাস্তা পার হতে হবে। এমনকি ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়েতেও এখন কারের ছড়াছড়ি। হাইওয়েতে কার চলাচল ঠেকাতে কারের ওপর অতিরিক্ত টোল আরোপ করা উচিত। যাদের কার কেনার সামর্থ্য আছে ও যাদের কার আছে, তারা কি কার কিনবেন না বা চালাবেন না ? অবশ্যই চালাবেন ও কিনবেন, এবং কার চালাবেন সন্ধ্যায়। এবং আস্তে আস্তে আমাদের এমন নীতির দিকে চলে যাওয়া উচিত যে, যিনি গাড়ি চালাতে জানেন না তিনি গাড়ি কিনতে পারবেন না। নিজেদের মধ্যে এই সচেতনতা ‘চড়ব বেশি চালাব কম’ নীতির বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে আমাদের ব্যক্তিগত যাতায়াত ভাবনা আরো যুগোপযোগী করে তোলা উচিত। এর ক্যাম্পেইন ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পূর্ণ দায়িত্ব নিতে হবে সরকারকে এবং আমাদের হতে হবে দায়িত্ববান সচেতন নাগরিক।
আর সব সময়ের জন্য জন্মনিয়ন্ত্রণ একটি জাতীয় প্রধান পরিকল্পনার মর্যাদা পাওয়া উচিত এবং দেশের প্রতিটি দম্পতির অগ্রাধিকারভিত্তিক পরিকল্পনা হওয়া উচিত তাদের সংসারকে ছোট রাখা।
ব্যক্তিগত পর্যায়ে যখন দেখব না তখন টিভির ও যখন কাজ করব না তখন কম্পিউটারের পাওয়ার সুইচ অফ করে, যে ঘরটি খালি আছে তার বাতি বন্ধ রেখে ও রান্নাবান্না শেষ হলেই চুলা নিভিয়ে দিয়ে আমরা যেমন ব্যক্তিগতভাবে নিজেদের জ্বালানি খরচ কমাতে পারি তেমনি দেশের জ্বালানি সাশ্রয় করতে পারি। ‘চড়ব বেশি চালাব কম’ও আমাদের ও আমাদের দেশের জ্বালানি খরচ সাশ্রয়ে বড় ভূমিকা রাখতে পারবে। আর যত জ্বালানি বাঁচাব তত কার্বন নিঃসরণ কম হবে। আর যত এসব খাত থেকে কার্বন নিঃসরণ কমাতে পারব, তত উৎপাদন খাতে কিছু বেশি জ্বালানি ব্যবহার করতে পারব, আর উৎপাদনে কিছু জ্বালানি বেশি দিতে পারা মানেই শ্রমের অধিকার ও মূল্যায়নের দিকে আমাদের এগিয়ে যাওয়া।
মাসুদ করিম
লেখক। যদিও তার মৃত্যু হয়েছে। পাঠক। যেহেতু সে পুনর্জন্ম ঘটাতে পারে। সমালোচক। কারণ জীবন ধারন তাই করে তোলে আমাদের। আমার টুইট অনুসরণ করুন, আমার টুইট আমাকে বুঝতে অবদান রাখে। নিচের আইকনগুলো দিতে পারে আমার সাথে যোগাযোগের, আমাকে পাঠের ও আমাকে অনুসরণের একগুচ্ছ মাধ্যম।
Have your say
You must be logged in to post a comment.
১১ comments
abdulhalim - ২৯ ডিসেম্বর ২০০৯ (৯:০৯ পূর্বাহ্ণ)
ভাল লেখা । জ্যাম আমাদের চলার গতীকে স্তব্দ করে দিচ্ছে । আমাদের জানামতে যে জাতি যত গতীময় তারা তত এগিয়ে। এ ব্যাপারে সরকার সহ সকল সচেতন নাগরিক এগিয়ে আসতে হবে ।
তবে আপনি লেখায় কিছু তথ্য-উপাথ্য সংযোজন করলে লেখার মান বেড়ে যেতো । ধন্যবাদ।
রায়হান রশিদ - ২৯ ডিসেম্বর ২০০৯ (১০:৩৭ পূর্বাহ্ণ)
‘নৈতিকতা’, ‘সৎ জীবনযাপন’ ইত্যাদি বিষয়ে তো আমরা অনেক কথাই সেই ছোট বেলা থেকে শুনে আসছি। বাল্য শিক্ষা থেকে শুরু করে সর্বত্র সে সব উপদেশ বাণী ছড়িয়ে রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন এবং তাকে ঘিরে মানবাজাতির আসন্ন সংকট – ইত্যাদির আলোকে নৈতিক জীবনযাপনের ধারণাকে কি নতুন করে লিপিবদ্ধ/সংজ্ঞায়িত করার কোন সুযোগ বা প্রয়োজনীয়তা আছে?
আরেকটি বিষয়। নৈতিক দর্শনের ওপর ভর করে ধরা যাক আমরা খুব বেশী এগোতে পারলাম না; মন্দটাই না হয় ধরে নিই আগে। সেক্ষেত্রে পন্থা হিসেবে ব্যক্তিস্বার্থকে (self-interest) তুলে ধরা কতটা কার্যকর হতে পারে বলে মনে হয়? বলাই বাহুল্য, এই ক্ষেত্রে ব্যক্তিস্বার্থকে (ভবিষ্যতের সংকটকে ঘিরে) মানবজাতির সামষ্টিক স্বার্থের অন্য পিঠ হিসেবে দেখার চেষ্টা করছি।
গৌতম - ২৯ ডিসেম্বর ২০০৯ (১:৩৩ অপরাহ্ণ)
আমার ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ অনুসারে, ঢাকা শহরের গড় গতি এখন ঘণ্টায় ১০ কিলোমিটার। অর্থাৎ ১০ কিলোমিটার রাস্তা পাড়ি দিতে মোটামুটি ঘণ্টাখানেক সময় লাগে। একটা রাজধানী শহরের গড় গতি যখন ১০ কিলোমিটার হয়, তখন শহরের কী অবস্থা তা সহজেই অনুমেয়। যদিও অন্যান্য বড় শহর সম্পর্কে কোনো অভিজ্ঞতা নেই, কিন্তু অন্তত ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার গতি না হলে একটা শহর এগুতে পারে না বলে আমার ধারণা।
ব্যক্তিপর্যায়ে পরিবর্তন অবশ্যই আনতে হবে, কিন্তু ব্যক্তিপর্যায়ের পরিবর্তনকে সামষ্টিকের সাথে যুক্ত করতে না পারলে সেটা থেকে কোনো ফল আসবে না। নিজে অনেক বিষয় নিয়ে সচেতন থাকলাম কিন্তু এই সচেতনতাটুকু অন্য কারও মধ্যে ছড়িয়ে দিলাম না- কর্পোরেট ‘বদলে যাও বদলে দাও’ দিয়েও তাতে কোনো লাভ হবে না।
লেখাটা ভালো লাগলো।
bloodycivillian - ২৯ ডিসেম্বর ২০০৯ (৬:৫৮ অপরাহ্ণ)
আরো কিছু, যেমনঃ কাজ না করলে পিসির মনিটরটি বন্ধ রাখুন, কারণ ঐটিই সবচেয়ে বেশি তড়িদগ্রাহী। মাংস কম কম খান, কারণ গবাদি পশুপালন করতে গিয়ে প্রচুর মিথেন উপজাত হিসেবে আসে, যা মূলত সিএফসি গ্যাস (বায়ৃমণ্ডলের আবরণ ক্ষয়কারী), ইনহেলারের বদলে ব্যবহার করুন ইকোহেলার (সিএফসি গ্যাস ছাড়া ইনহেলার), স্প্রে, প্রেশারাইজড কৌটো ইত্যাদি কম ব্যবহার করুন (সিএফসি গ্যাস আছে), প্রিন্টারে কম কম প্রিন্ট করুন (নইলে বেশি বেশি গাছ কাটা পড়ে) ইত্যাদি ইত্যাদি।
মানে, এককথায়, দাও ফিরে সে-অরণ্য…
মোহাম্মদ মুনিম - ৩১ ডিসেম্বর ২০০৯ (১:৩৩ পূর্বাহ্ণ)
সমগ্র বাংলাদেশে ব্যবহার করা মোট বিদ্যুতের পরিমাণ ৫০০০ মেগাওয়াট, একটি মাঝারি আকারের মার্কিন শহরেও (জনসংখ্যা ৫ লাখ) এর চেয়ে বেশী বিদ্যুতের ব্যবহার হয়। বাংলাদেশে যন্ত্রচালিত পরিবহনের সংখ্যাও অন্যান্য দেশের তুলনায় অতি অল্প (বাংলাদেশের দ্বিগুণ আকারের যুক্তরাজ্যে যানবাহনের সংখ্যা বাংলাদেশের প্রায় বিশ গুন), তারপরেও ঢাকায় বায়ু দুষণের পরিমাণ সহ্যসীমার প্রায় ১৩ গুন (৯০ দশকের শেষের দিকে একদল জাপানী গবেষকের হিসাবমতে, আমি তাঁদের প্রকল্পে দুদিনের জন্য কাজ করেছিলাম, বায়ু দুষনের প্রথম পরিমাপ নেয়া হয় সকাল সাতটায়, যানবাহনের ভীড় বাড়ার আগেই)।
সেই বায়ু দুষন এখন বিশ গুনে গিয়ে ঠেকার কথা। বিপুল পরিমাণ রিকশা আর অল্পকিছু গাড়ী আর বাস (যেগুলোর প্রায় সবগুলোর ইঞ্জিনের বয়সই বিশ বছরেরও বেশী) এর মাঝে আটকে আছে, বায়ুদুষণের জন্য এর চেয়ে ভালো উপায় আর হয় না। যান্ত্রিক যানবাহনে চলাচলের পরিমাণ কমিয়ে দূষণ কমাতে হলে ঢাকা বা চট্টগ্রাম শহরের লোকজনের কাজ়কর্ম ফেলে ঘরে বসে থাকা ছাড়া উপায় নেই।
ঢাকা শহরের যানজট এবং বায়ুদুষণ কমাতে হলে পাতাল রেল ছাড়া সম্ভবত গতি নেই,লন্ডনের মত অত বিস্তৃত নেটওয়ার্ক নয়, উত্তরা থেকে এয়ারপোর্ট, বনানী, মহাখালি, ফার্মগেট হয়ে মতিঝিল পর্যন্ত একটামাত্র টানা লাইন,আপাতত এই করা হলে, যানজ়ট অনেকখানি কমে যাবার কথা।
ঢাকা শহরে স্কুলবাস ব্যবহারের সমস্যা হল স্কুলবাসের ব্যয়বহুলতা। দুহাজার ছাত্রছাত্রীর একটি স্কুলের পক্ষে বিশটি বাস ক্রয় এবং রক্ষণাবেক্ষণ সহজ নয়। আর ছাত্র ছাত্রীরা ভাল স্কুলে পড়ার জন্য অনেক দূর থেকে আসে। এতসব জটিল রুটে বাস পরিচালনা করা সহজ কাজ নয়।
সমুদ্রের পানি উচ্চতা বেড়ে বাংলাদেশ যে ডুবতে বসেছে, সেটা উন্নত বিশ্বের অতি ভোগবাদিতার ফলে হয়েছে, তাতে আমাদের এক বিন্দুও দোষ নেই। তবে ঢাকা শহরের যে বীভৎস বায়ু দূষণ আছে, সেটা পুরোপুরি আমাদের দোষ, দোষটা অতি ভোগের দোষ নয়, অব্যবস্থাপনার দোষ।
মাসুদ করিম - ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১০ (৩:৪৯ পূর্বাহ্ণ)
বোগোটার প্রাক্তন মেয়র পেনালোসা বলছেন, জীবনযাত্রার মান বাড়ায় ফুটপাত — হাইওয়ে নয়।
বিস্তারিত পড়ুন এখানে।
মাসুদ করিম - ২২ মে ২০১০ (১০:১৪ পূর্বাহ্ণ)
কার কার কার চাই।/? একবার একে স্লোগান হিসেবে পড়তে পারেন, আবার প্রশ্ন হিসেবেও পড়তে পারেন — প্রথমটাতে তিনটি ‘কার’ শব্দই ইংরেজি, দ্বিতীয়টাতে ‘কার কার’ বাংলা। আমাদের দুই বড় শহরের এখনকার সবচেয়ে আলোচিত পণ্য কার বা প্রইভেট কার। আজকের প্রথম আলোর শিরোনাম ‘ দিনে ৯৮টি ব্যক্তিগত গাড়ি নামছে ঢাকার রাস্তায়’। দিনে গড়ে নিবন্ধিত ২২৭ টি গাড়ির ৯৮টিই ব্যক্তিগত কার-মাইক্রো-জিপ, শতকার ৪৩ ভাগ, এরপরেই আছে শতকরা ৩৯ ভাগ মোটর সাইকেল, মানে শতকরা ৮২ ভাগ গাড়িই ব্যক্তি পর্যায়ের। এবং আমাদের গাড়ির চাহিদা দিনে দিনে বাড়ছে।
সরকার ভাবছে নতুন গাড়ির নিবন্ধন দুমাস বন্ধ রাখতে
মাসুদ করিম - ১৭ জানুয়ারি ২০১১ (৬:০২ অপরাহ্ণ)
খবরের লিন্ক এখানে।
মাসুদ করিম - ২৩ জানুয়ারি ২০১১ (৬:৩৫ অপরাহ্ণ)
খবরের লিন্ক এখানে।
মাসুদ করিম - ১৪ মার্চ ২০১৬ (১০:৫৭ পূর্বাহ্ণ)
মাসুদ করিম - ২৩ মার্চ ২০১৯ (১২:৩৮ অপরাহ্ণ)