আল্লাহ তাআলা হজরত ইব্রাহিম (আ.) কে নির্দেশ দিয়েছিলেন, তাঁর সবচেয়ে প্রিয় বস্তু কোরবানি দিতে। আল্লাহ তাঁর নবীকে পরীক্ষা করতে চেয়েছিলেন। স্নেহের পুত্র হজরত ইসমাইল (আ.) ছিলেন হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর সবচেয়ে প্রিয়। পিতা হয়ে পুত্রকে কোরবানি দেওয়া অসম্ভব কাজ। কিন্তু আল্লাহর নির্দেশপ্রাপ্ত হয়ে হজরত ইব্রাহিম (আ.) বিনা দ্বিধায় নিজ পুত্রকে কোরবানি দিতে উদ্যত হয়েই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। মহান আল্লাহর নির্দেশে তাঁর ছুরির নিচে হজরত ইসমাইল (আ.)-এর স্থলে কোরবানি হয়ে যায় একটি দুম্বা। স্রষ্টার প্রতি পরিপূর্ণ আনুগত্য ও ত্যাগ স্বীকারের বাণীই এ ঘটনার মাধ্যমে প্রতিফলিত হয়েছে।
স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে সন্তানের পরিবর্তে হলো পশু, তাহলে পশুর পরিবর্তে এই পরিবর্তনের যুগে অর্থ হলে ক্ষতি কী?
সবাই মিলে একই দিনে এভাবে এতগুলো পশু বিসর্জনের মধ্য দিয়ে নিজেদের পশুশক্তির বিনাশ চেয়ে কী পাশবিকতায় মেতে উঠছি আমরা?
জলবায়ু পরিবর্তনের ত্রাসের মধ্যে থেকে এই দূষণ ছড়ানো কুরবানি ত্যাগ করে, আর্থিক উৎসর্গের কোনো নীতির দিকে যেতে পারে না ধর্মপ্রাণ মুসলিম সমাজ?
মাসুদ করিম
লেখক। যদিও তার মৃত্যু হয়েছে। পাঠক। যেহেতু সে পুনর্জন্ম ঘটাতে পারে। সমালোচক। কারণ জীবন ধারন তাই করে তোলে আমাদের। আমার টুইট অনুসরণ করুন, আমার টুইট আমাকে বুঝতে অবদান রাখে। নিচের আইকনগুলো দিতে পারে আমার সাথে যোগাযোগের, আমাকে পাঠের ও আমাকে অনুসরণের একগুচ্ছ মাধ্যম।
Have your say
You must be logged in to post a comment.
১৬ comments
মনজুরাউল - ২৯ নভেম্বর ২০০৯ (৩:১১ পূর্বাহ্ণ)
এই পুরো ব্যাপারটার ভেতরেও এক ধরণের পশুবৃত্তি কাজ করছে। জঙ্গলে সিংহ একটি মোষ বা হরিণ শিকার করে তার বুকের ওপর দাঁড়িয়ে শ্রেষ্ঠত্ব জাহির করে।ত্যাগ স্বীকারের মাধ্যমে নেকি বা ছোয়াব হাসিলের আরো অনেক পন্থা থাকা স্বত্তেও “কুরবানী”র নামে পা বেঁধে পশু হত্যার আর কোনই ব্যাখ্যাই নেই সেই সিংহসম দাম্ভিকতা আর শ্রেষ্ঠত্ব প্রমান ছাড়া।
একটা সমাজ কতটা পিছিয়ে থাকা হলে সেখানে এখনো দল বেঁধে নাঙ্গা তলোয়ার হাতে রক্তাক্ত পোশাকে সারাদিনমান এক ধরণের খুনে দৃশ্যের প্রচার চলতে পারে! আমাদের প্রজন্মের পর প্রজন্ম সেই খুনে সংস্কৃতিই বহন-লালন করে চলেছে। জবেহ্ সংস্কৃতি।
কামরুজ্জামান জাহাঙ্গীর - ২৯ নভেম্বর ২০০৯ (৮:১১ পূর্বাহ্ণ)
আপনি সত্যি বলেছেন, কোরবানিতে একধরনের উল্লাসমুখর পশুত্ব আছে। আসলে এই ধর্মের তলোয়ারবাজির স্টেজ-রিহার্সাল হচ্ছে কোরবানি। ইসলাম ধর্মে যে তলোয়ারবাজি আছে (আপনি খেয়াল করে দেখবেন, মুসলমানরা দুইটা কাজ খুব ভালো পারে, এক হচ্ছে, তারা অহরহই ঘোষণা করে যে, দুনিয়ার যা কিছু হচ্ছে এর সবই কোরান শরীফে আছে; দুই হচ্ছে, এই জগতের সমগ্র কাফের-নাসেরা-ইহুদিদের কাজ হচ্ছে, মুসলমানদের সবকিছু মুছে দেয়ার কর্মটি করে যাওয়া।) এই জন্য তারা যখন-তখন জেহাদ ঘোষণা করে। তারা মনে করে তলোয়ারবাজিতে সব এস্টাব্লিস্ট করা যায়। সব ধর্মেই তাই- ভারতের শিবসেনা, ইজরাইলের জঙ্গিরা তাদের মতকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য জানবাজি রেখে কাজ করে যাচ্ছে।
তাপস দে - ২৯ নভেম্বর ২০০৯ (৩:৩১ পূর্বাহ্ণ)
ধন্যবাদ মাসুদ করিম, ভোগের আয়োজনে সংযমের আলোচনায়। আত্মসমালোচনা এবং সময়োপযোগিতায় আপনি হয়তো মুসলমানের কুরবানি নিয়ে বলেছেন, কিন্তু আমি বড় পরিসরে অন্য ধর্মের অনুসারী বা নাস্তিকদেরও এই সুযোগে একটি অনুরোধ করব।
প্রতিদিন মুক্তাংগনে অনেক বিষয়ে আলোচনা হয়। এতে আনন্দ লাভ হয়, নতুন বিষয় জানার সুযোগ হয়, সচেতনতা বাড়ে। অন্ততঃ লেখক মন্তব্যকারীর বিদ্যাবুদ্ধির পরিচয় পাওয়া যায়, আলাপ, গল্প-গুজব, ঝগড়ার সুযোগ হয়। অনেক সময় লেখার পটভূমি এত ব্যাপক হয় যে শুধু পড়া ছাড়া কিছুই করার থাকে না।
প্রতিদিনের মাংস খাওয়ার যে অভ্যাস তাই টিকিয়ে রাখে উৎসবের দিনে পশুহত্যার এই ব্যাপক আয়োজন। বেশী মাংস খেলে-মানুষের রোগব্যাধি বেশী হয, উৎপাদনের বিচারে এক কেজি শাক-সবজি,ফল-মূলের তুলনায় এক কেজি মাংসে অনেক বেশী খাদ্য-পুষ্টিদ্রব্য প্রয়োজন। পশুখাদ্য উৎপাদনে অনেক বেশী জমি প্রয়োজন, অনেক বেশী পানি প্রয়োজন, মাংস উৎপাদনে ও প্রক্রিয়াজাতকরণে পানি ও বায়ুদূষণ অনেক বেশী হয়।
গ্রীনহাউস গ্যাসের একটি বড় উৎস মাংস উৎপাদনকারী পশু।
আপনি আচরি ধর্ম – আমি সপ্তাহে একদিন নিরামিষ খাই, এর সাথে একটি ধর্মীয় অনুষঙ্গ জড়িত, তবে মনে হয় এভাবে একদিন আলাদা করে খাওয়া শুরু করাই সহজ। সবাইকে অনুরোধ রইলো। মুক্তাংগনের জন্য শুভেচ্ছা।এই মন্তব্য করতে গিয়ে কত গ্রীনহাউস গ্যাস তৈরী হল কে জানে?
রশীদ আমিন - ২৯ নভেম্বর ২০০৯ (৫:৪৯ অপরাহ্ণ)
এই বিষয়টি নিয়ে আসলে গভীরভাবে ভাবা দরকার। কিভাবে তথাকথিত এই কুরবানি বা নারকীয় পশুহত্যা উৎসবের বিরুদ্ধে একটি জনমত গড়ে তোলা যায় তা ভাবা উচিত । আপনার আমার মতো অনেকেই এই বিষয়টা মেনে নিতে পারে না, তাদেরকে কি এক প্লাটফর্মে নিয়ে আসা সম্ভব?
পশু জবাই করার চর্চা থেকে উৎসাহিত হয়ে মানুষ জবাই করতে কুণ্ঠা বোধ করে না। এই বিষয়টিও আলোচনায় নিয়ে আসা উচিত।
মোহাম্মদ মুনিম - ২ ডিসেম্বর ২০০৯ (৭:১৩ পূর্বাহ্ণ)
কোরবানির যে ব্যাপারটি আমার অপছন্দ সেটা হচ্ছে ছোট ছোট শিশুদের সামনে পশু জবাই করা হয় এবং তাদের সামনেই পশুর ছাল ছাড়ানো হয়। কিছু কিছু উপজাতি ধর্মীয় আচার আচরণের অংশ হিসাবে দলবেধে পশু বলি দেয়, সে দৃশ্যও খুব একটা প্রীতিকর নয়। প্রতি বছর পশু জবাইয়ের এই দৃশ্যটি দেখতে দেখতে শিশুদের মধ্যে কোন অপরাধ প্রবৃত্তির জন্ম নেয় কিনা সেটা আমার জানা নেই, তবে Wikipedia তে পড়লাম অনেক নিষ্ঠুর অপরাধীই শিশুকালে পশু নির্যাতন করতো। বাংলাদেশের বড় শহরগুলোতে সাধারণত কোরবানির আগের দিন পশুটি কেনা হয়। কিন্তু মফস্বলের শহরগুলোতে সপ্তাহখানেক আগে কেনা হয়, এই অল্প কয়েকদিনে বাড়ির শিশুদের সাথে পশুটির এক ধরনের সম্পর্ক গড়ে উঠে। কোরবানীর দিন সেই পশুটিকে জবাই করার ব্যাপারটি তাদের কাছে বেশ বেদনাদায়কই হওয়ার কথা (অন্তত আমি যখন ছোট ছিলাম তখন আমার বেশ মন খারাপ হতো)।
যেহেতু পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষই মাংসভোজী, কোরবানি বন্ধ হলেও পশুহত্যা বন্ধ হবে না। যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছর ৩০ বিলিয়ন পাউন্ড মাংস বিক্রি হয় এবং সে কারণে কোটি কোটি পশু হত্যা হয়। সাধারণত পশুটিকে ইলেকট্রিক শক দিয়ে, বিষাক্ত গ্যাস দিয়ে বা মাথায় গুলি করে অজ্ঞান (‘ব্রেইন ডেড’) করা হয় এবং তারপর জবাই করা হয়। ইসলামী বা ইহুদি ধর্মমতে পশু জবাইয়ের আগে পশুকে অজ্ঞান করা নিষেধ। এই অজ্ঞান করা না করা কোনটি পশুর জন্য কম কষ্টদায়ক সেটা নিয়ে বিতর্ক আছে, তবে উইলহেল্ম শুলজ নামে এক জার্মান পশুবিদ তাঁর গবেষনায় দাবী করেছেন ইসলামি বা ইহুদি ধর্মমতে পশু জবাইয়ে পশুর কষ্ট কম হয়।
ইউরোপ বা আমেরিকাতে ইসলামী পদ্ধতিতে পশু জবাই মেনে নেয়া হলেও বাংলাদেশের মত যত্রতত্র পশু জবাই নিষিদ্ধ, সাধারণত কোরবানির আগে কোন ধর্মীয় কসাইখানাতে টাকা দেয়া হলে (একভাগ, না দুভাগ না সাতভাগ এই অনুপাতে) তারাই পশু জবাই করে বাড়িতে মাংস পৌঁছে দেয়। কার গরু কত বড় এই নিয়ে বড়াই করার ব্যাপার নেই, শুধু কোন কসাইখানা কত কম মূল্যে কতভাগ মাংস দিচ্ছে এই নিয়ে একটা প্রতিযোগিতা আছে। আমেরিকাতে যেহেতু হালাল খাবার একটা বড় ব্যবসা (বিশ্বব্যাপী ৬০০ বিলিয়ন ডলার), ইদানীং অনেক বড় অমুসলিম কসাইখানাও এই ব্যবসাতে নেমে পড়েছে। বাংলাদেশেও এই পদ্ধতি চালু হলে শিশুদের সামনে পশু জবাই আর বড় গরু কেনা নিয়ে অযথা প্রতিযোগিতা বন্ধ হবে।
রায়হান রশিদ - ২ ডিসেম্বর ২০০৯ (১০:১৫ পূর্বাহ্ণ)
শুলজ সাহেব জবাই করে ফেলার পর পশুদের ইন্টারভিউ নিতে পেরেছিলেন কি না জানতে ইচ্ছে করছে। হাতে সময় আর খরচ করার মতো অর্থ থাকলে মানুষ কত কিছুই না করে! মুনিমের পুরো বক্তব্যের সাথেই একমত। মনজুরাউল ভাইয়ের এক উপমাতেই মূল বিষয় ধরা পড়ে গেছে: “জবেহ সংস্কৃতি”! ১৯৭১ এ তুখোড় জবেহ-প্রবণ যুদ্ধাপরাধীরা তার প্রমাণ রেখে গেছে ইতিহাসের পাতায়। ধন্যবাদ।
সাগুফতা শারমীন - ১ নভেম্বর ২০১২ (১২:৫০ অপরাহ্ণ)
আপনার মন্তব্যের সাথে আমিও সহমত। কুরবানীর পশু কয়েকদিন আগে কেনা হয়, বাড়ির শিশুদের সেই পশুর সাথে মিশতে দেয়া হয়, পশুকে খাওয়া দিতে উদ্বুদ্ধ করা হয়, আর ঈদের দিন তাদের বিস্মিত চোখের সামনে সেই পশুটিকে জবাই দেয়া হয়। এই জবাই দেখাতেও শিশুদের জোর করা হয়, কারণ জবাই দেখা পুন্য বলা আছে। একটি শিশু যে সানন্দ স্বতঃস্ফুর্ত সম্পর্ক তৈরি করছিল, তার বীভৎস পরিণতি।
আমার মনে আছে, ছোটবেলার একটা ছাগলের কথা, কুরবানীর আগের রাতে অনেক কাঁদছিল বলে তাকে আমরা ঘরে নিয়ে এসেছিলাম, গৃহস্থের আদরের দুলাল – সে একলা ভয় পাচ্ছিল, আমাদের পাশে কার্পেটে বসে সে টিভি দেখলো রাতের বেলা। আমাদের সেবার ঈদে কেমন লেগেছিল আমরাই জানি। আল্লাহ তাঁর বান্দাকে বাপমায়ের চেয়ে ৭০গুণ বেশি ভালবাসেন, আমাদের সেই ঈদের কষ্ট নিশ্চয়ই তাঁর ভোগ্য হতে পারে না।
বিলেতে দুধের খামারে গাভীদের প্রচুর বাছুর হয়, যেগুলি জন্মাবার পরেই চলে যায় রেসের কুকুরের আহার্য হবার জন্যে। প্রতি বছর বহু বিড়ালছানা জন্মে, যেগুলি চলে যায় পেঁচা ও অন্যান্য শিকারী পাখির খাঁচায়। প্রতি দিন একটি কসাইখানায় ১৬০০০মুরগী মারা হয়, মুরগীগুলি কনভেয়ার বেলটে চড়ে মরতে যায়, বেল্ট থেকে কেউ পড়ে গেলে পালিয়ে যায় না, আবার চড়ে বসে, এমনই বুদ্ধিহীন। এই গল্পগুলি সবই খাওয়ার পিছনের গল্প। বড় বেদনাদায়ক।
মুয়িন পার্ভেজ - ৭ ডিসেম্বর ২০০৯ (৪:২৯ অপরাহ্ণ)
বছরের নির্দিষ্ট সময়ে উপযুক্ত পশু উৎসর্গ করা সচ্ছল মুসলমানদের জন্য অত্যাবশ্যক — এর বিকল্প নির্দেশিত হয়নি; দানের ক্ষেত্রে ছদকা-জাকাতের কথা আলাদাভাবে বলাই আছে এবং কোরবানির প্রসঙ্গে কোরানের বিধান এতই সুস্পষ্ট যে তা নিয়ে ইসলামি শাস্ত্রবিদদের ইজমা-কিয়াসের শরণাপন্ন হওয়ারও দরকার নেই। ‘মুসলমান ঘরে জন্ম নিয়েও যারা নাস্তিক’ (সুশান্তর লেখা থেকে কথাটি নেওয়া) তাঁদের প্রশ্ন তো আসেই না, কিন্তু যাঁরা পূর্ণ-আস্তিক, অল্প-আস্তিক কিংবা দ্বান্দ্বিক তাঁদের কেউ-কেউ হয়তো এই বর্বর প্রথাকে মেনে নেন পারিবারিক-সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়টি ভেবেই। বিদ্রোহী হওয়ার আগে স্বাধীনতার কথা ভাবতে হয়।
কিন্তু এর বাইরেও, কোরবানি বা কালীপূজা বাদ দিলেও, আমাদের মধ্যে অনেকেই কি মাংসবিলাসে তৃপ্ত নেই? মদ্যপায়ী কয়েকজন বন্ধুকে সোৎসাহে বলতে শুনেছি, ‘মাংস ছাড়া মদ আর নুন ছাড়া পান্তাভাত একই জিনিশ!’ আমরা যদি ব্যক্তিগতভাবে মাংসবর্জনে সম্মত হতে পারি, তাহলে অন্তত প্রতিদিনের বাজারে নিরপরাধ পশুর হত্যাকাণ্ড বহুলাংশেই হ্রাস পাবে। এখানে শাস্ত্রের তাগিদ নেই, শস্ত্রের ভয় নেই। অবশ্য এই ‘মামুলি’ ব্যাপারটি নিয়ে ভাবিত হচ্ছি আমরা মুষ্টিমেয় মানুষ মাত্র; প্রতিবেশী ভদ্রলোককে বা কোনো নিষাদকে নিষেধ করার আগে নিজেই শিহরিত হই মশিউল আলমের ‘মাংসের কারবার’ গল্পের মতো লোমহর্ষক ঘটনার আশঙ্কায়!
মাসুদ করিম - ১০ অক্টোবর ২০১২ (১০:৪৪ পূর্বাহ্ণ)
হ্যাঁ, তাদের কথা এখন বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত। শুধু মদ শব্দের মানে, লাল/সাদা মদ — ভদকা, হইস্কি, বিয়ার নয়।
manik - ২৬ অক্টোবর ২০১২ (৩:০৮ অপরাহ্ণ)
জনাবেরা আপনারা কুরবানীর সাথে সাথে পূজা নিয়েও একই কথা বললে আপনাদের সাথে আছি। কারন পূজাও অপচয় ছাড়া আর কিছুই নয়। শেষ পর্যন্ত বিসর্জনের মাধ্যমে সকল টাকা নদীতে ফেলে নদী দষণ দিয়েই যার সমাপ্তি ঘটে
মাসুদ করিম - ২৭ অক্টোবর ২০১২ (৩:৩৮ অপরাহ্ণ)
কুরবানির সাথে প্রতিমা বিসর্জন ঠিক মেলে না। কুরবানির সাথে মনসা পূজা বা পাঁঠাবলি ভাল মেলে। এবং এক্ষেত্রেও বলবার কথা কিন্তু একই, একই যাত্রায় পৃথক ফলের কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু খেয়াল করলে দেখা যাবে এই পাঁঠাবলির সাথে আপামর হিন্দুসমাজের অনেকেরই যোগ নেই। হিন্দুসম্প্রদায়ের এক উল্লেখযোগ্য অংশ নিজেদেরকে এই আচার থেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছে।
বিসর্জন দেখেই প্রতিমা বিসর্জনের সাথে মিলিয়ে দূর্গাপূজা বা লক্ষ্মী বা শ্যামা পূজার নদীদূষণ বা জলদূষণের কথা আপনি বলেছেন, সেটা কিন্তু এই পূজাগুলোর সবচেয়ে আলোচিত দূষণ হলেও প্রধান দূষণ নয় (যারা প্রতিমা বিসর্জন দেন তারা একটু সচেতন হলেই বিসর্জনের সময় মাটি ছাড়া অন্য আলঙ্কারিক জিনিসপত্র একটু কষ্ট করলেই কিন্তু সাথে সাথে নদী বা জলাশয় থেকে তুলে নিতে পারেন) তারচেয়েও বড় একটা দূষণ এই পূজাগুলো করে থাকে সেটা হল শব্দদূষণ। পূজায় শব্দসীমা বেঁধে দেয়ার কাজ পশ্চিমবঙ্গে যেভাবে করা হয় আমাদের এখানে সেভাবে করা হয় না — আমাদের এখানেও সেটা করা উচিত। আর পূজোর মণ্ডপ ও প্রতিমার খরচও একটা নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে রাখাও একটা প্রয়োজনীয় বিবেচনা হয়ে ওঠা উচিত — কারণ এই বিকট ব্যয়ের চেয়ে চাঁদার টাকাকে অনেক সৃষ্টিশীল কাজে অনেক দাতব্য কাজে লাগানো যায় — এবং এই দৃষ্টান্তও হিন্দু সমাজে একেবারে বিরল নয়।
তুলনায় মুসলমান সমাজের কুরবানি সংস্কারের কোনো দৃষ্টান্ত পাওয়া যায়?
সাগুফতা শারমীন - ১ নভেম্বর ২০১২ (১২:৫৬ অপরাহ্ণ)
আশ্চর্য, যেকোনো ধর্মানুষ্ঠানেরই একটি দিক অপচয়। সে কুরবানীই হোক, পূজাই হোক আর ক্রিসমাস। কিন্তু কুরবানীর দিকগুলি বুঝতে হলে পূজা নিয়ে কথা বলতেই হবে এই মনোবৃত্তি কেন? আমার সংশয় বুঝতে গিয়ে অন্যের সংশয়াসক্ত আচরণ নিয়ে টান দিতে হবে কেন?
মাসুদ করিম - ৬ অক্টোবর ২০১৪ (৩:৩৫ অপরাহ্ণ)
মাসুদ করিম - ৬ অক্টোবর ২০১৪ (৪:১৭ অপরাহ্ণ)
মাসুদ করিম - ১২ আগস্ট ২০১৯ (২:৩৬ পূর্বাহ্ণ)
মাসুদ করিম - ৩ আগস্ট ২০২০ (৪:৩৯ অপরাহ্ণ)
এই খবরগুলো একে একে পড়লে, খুব সহজ ভাবনাতেই সিদ্ধান্তে আসা যায় : কুরবানি ত্যাগ করে, আর্থিক উৎসর্গের কোনো নীতির দিকে যেতে পারা সময়ের দাবি এখন।
=> বলা হয় দুষণ ছড়ায় না, সাবধান হলে দূষণহীন কুরবানি করা যায়। কিন্তু এক দিনে কোনো শহরে ১৩ হাজার টন বর্জ্য জমে যাওয়ার মধ্যে হাজার সাবধানতা নিয়েও দূষণ রোধ করা সম্ভব নয়। তাই, আর্থিক উৎসর্গের কোনো নীতির দিকে যেতে পারা সময়ের দাবি এখন।
<<কোরবানি: ঈদের দিন ঢাকায় জমেছিল ১৩ হাজার টন বর্জ্য ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মো.বদরুল আমিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, শনিবার তার সিটির ৭৫টি ওয়ার্ডে ৮ হাজার টনের বেশি বর্জ্য জমেছিল। আর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ৫৪টি ওয়ার্ডে ৫ হাজার টনের মত বর্জ্য জমেছিল বলে এই সিটির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা সাইদুর রহমান জানিয়েছেন। বদরুল আমিন বলছেন, ঈদের দিন রাত ১২টা পর্যন্ত দক্ষিণ সিটির ৪২টি ওয়ার্ড ‘শতভাগ’ বর্জ্যমুক্ত হয়েছিল। রোববার বেলা ২টার মধ্যে সব ওয়ার্ডে কোরবানির সব পশুবর্জ্য তারা সরিয়ে নিতে পেরেছেন। “মাননীয় মেয়রের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, আজ বেলা ২টার মধ্যে নগরীর সবগুলো ওয়ার্ড বর্জ্যমুক্ত করেছি। আজকেও বেশ কিছু স্থানে কোরবানি হবে। আমরা সেই বর্জ্য আগামী ১২ ঘণ্টার মধ্যে সরিয়ে ফেলতে কাজ করব।” মাঠ পর্যায়ে বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম তদারকির জন্য ঢাকা দক্ষিণের ১০টি অঞ্চলে একটি করে টিম গঠন করা হয়েছে। এই ১০টি টিম আগামী ৪ অগাস্ট বেলা ২টা পর্যন্ত ডিএসসিসিতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজ পর্যবেক্ষণ করবে।>>
=> বলা হয়, গরিব মিসকিন এই দিনে মাংস খেতে পায়। কিন্তু খাওয়ার চেয়ে গরিব মিসকিন এমাংস বেচে দেয়, আর এমাংস প্রধানত কেনে খাবারের হোটেলগুলো লম্বা সময় ধরে এ মাংস খদ্দেরদের খাওয়ানোর জন্য। তাহলে দেখা যাচ্ছে কুরবানির মাংস শেষ পর্যন্ত হোটেলগুলোকে অসুস্থ মুনাফা দিচ্ছে, গরিব মিসকিনের জুটছে কিছু টাকা। তাই, আর্থিক উৎসর্গের কোনো নীতির দিকে যেতে পারা সময়ের দাবি এখন।
<< কোরবানির মাংসের হাট ঢাকার গরিব মানুষরা মূলত এই হাটে মাংস বিক্রেতা; আর মূল ক্রেতা হচ্ছে বিভিন্ন হোটেল, সেই সঙ্গে নিম্ন আয়ের মানুষও কম দামে মাংস কিনতে এই হাটে ঢুঁ মারেন। গরিব মানুষরা কোরবানির ঈদের দিন ঘুরে ঘুরে যে মাংস সংগ্রহ করেন, তা সংরক্ষণের উপায় তাদের নেই, আবার একসঙ্গে এত মাংস খাবার সুযোগও নেই। তাই এই মাংস তারা বিক্রি করে দেন। তাতে হাতে কিছু নগদ টাকাও আসে। ঢাকার বেশ কয়েকটি স্থানে ঈদের দিন বিকালে এবং পরদিন এমন মাংসের হাট বসতে দেখা যায়। ঈদের দিনের মতো পরদিন রোববারও মালিবাগ রেল গেইটের সামনে এবং খিলগাঁও সড়কের ফুটপাতে দেখা গেছে এমন হাট। সেখানে একভাগ মাংস পাঁচশ থেকে ছয়শ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল। আবার কোথাও কোথাও কেজিতেও বিক্রি হচ্ছিল। পেশায় দিনমজুর হোসেন আলীকে দেখা যায় ছোট ছোট পলিথিনের ব্যাগে মাংস বিক্রি করতে। তিনি বলেন, “স্যার আজকে বিভিন্ন জায়গা গিয়া এই মাংস পাইছি। হাড্ডি কম, শুধু মাংস। বড় গরুর মাংস।” কেন মাংস বিক্রি করছেন- প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমি গরিব মানুষ। হাতে পয়সা-কড়ি নাই। ৪ কেজি মাংস পাইছি। বিক্রি করলে নগদ টাকা পামু, এটা উপকারে দিবো।” পোশাককর্মী আলেয়া এসেছলেন এই হাটে মাংস কিনতে। তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা তো গরিব মানুষ। ভিক্ষা করতে পারি না। তাই পরিবারের জন্য চাইছিলাম কিছু মাংস কিনে নেব। কিন্তু আজকে মাংসের দাম বাড়তি।” ঈদের দিন বিকালে দুই কেজি মাংস সাড়ে তিনশ টাকা দরে কিনেছিলেন জানিয়ে আলেয়া বলেন, “আজকে ডাবল হইয়া গেছে দাম।” করোনাভাইরাস সঙ্কটের এই সময় শার্ট-প্যান্ট পরা একব্যক্তিকে এই হাটে মাংস কিনতে দেখা যায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই ব্যক্তি বলেন, “কোরবানির পশু কেনার সামর্থ্য নেই, তাই এই মাংস কিনতে এসেছি। যদি পাই কয়েকদিন খাওয়া যাবে।” সন্ধ্যার পর মালিবাগের মাংস হাটে দেখা গেল আব্দুর রাজ্জাক নামে একজন কয়েকজনের কাছ থেকে ৬/৭ কেজি মাংস কিনে অপেক্ষা করছেন আর কেউ মাংস বিক্রি করতে আসে কি না। খোঁজ নিয়ে জানা গেলো রামপুরা টিভি সেন্টারের কাছে এক গলিতে তার ছোট একটা খাবার হোটেল আছে। সেই হোটেলের জন্য সে মাংস কিনতে এসেছেন তিনি। খিলাগাঁওয়ের বাসিন্দা জসিম উদ্দিন জানালেন, কোরবানির এসব মাংসের বড় ক্রেতা হচ্ছে ছোট ছোট হোটে্লের মালিকরা। “আপনি দেখবেন, লুঙ্গি পড়া কিছু ব্যক্তি মাংস কিনে এখানে জমা করেন। রাত ৮টার দিকে সব নিয়ে রিকশায় করে চলে যান। এরা সবাই অলি-গলির হোটেলের মালিক। আগামী কয়েকদিন ছোট ছোট হোটেলগুলোতে কোরবানির এইসব মাংসই রান্না করে বিক্রি করা হবে।” গামেন্টস কর্মী বিউটি জানালেন, আগের দিন তিনি ৩০০ টাকা কেজিতে মাংস কিনেছিলেন। ওই দরের আশায় আবার এসেছেন। তিনি বলেন, “স্যার চাইছিলাম আরও দুই কেজি মাংস কিনবো। ধার-কর্জ করে টাকাও আনছি কিন্তু ….” এই হাটে মাংস ছাড়া বিক্রি হচ্ছে গরুর পাকস্থলি, যাকে বলা হয় ‘বট’। বটের বেশ চাহিদাও দেখা গেছে। হাটে এসে কেউ জিজ্ঞাসা করছিলেন- ‘ভাই এখানে গরুর বট কোথায় পাওয়া যায়?” শনিবার ২০০ টাকা কেজিতে বট বিক্রি হলেও রোববার তা বিক্রি হয় ৩০০ টাকায়।>>
=> ভুলভাল মাংস কাটাকাটিতে শুধু মাংস চামড়াই নষ্ট হয় না, অনেকে হাত পা কেটে হাসপাতালে চাপ বাড়ায়, নিজের শরীরে জখম পায়। তাই, আর্থিক উৎসর্গের কোনো নীতির দিকে যেতে পারা সময়ের দাবি এখন।
<< গরু কাটতে গিয়ে হাত-পা কেটে হাসপাতালে ভিড় শনিবার দুপুরে এই হাসপাতালের জরুরি বিভাগে গিয়ে অনেক রোগী দেখা যায়, যাদের প্রায় সবাই কোরবানির মাংস কাটতে গিয়ে হাত-পা কেটেছেন। জরুরি বিভাগের সব কয়টি বিছানাই পূর্ণ হওয়ায় অনেককে দাঁড়িয়ে থাকতে বা আরেকজনের বিছানার একপাশে বসে থাকতে দেখা যায়। তাদের সবার শরীর থেকেই রক্ত ঝরছিল। একের পর এক রোগী একাই সামাল দিতে হওয়ায় প্রচণ্ড ব্যস্ততার মধ্যে থাকা চিকিৎসক উরহালা মারমার সঙ্গে কথা বলার সুযোগ হয়নি। নিজের নামটা শুধু এক টুকরো কাগজে লিখে দিয়ে বলেন, “বুঝতেই পারছেন।” এই হাসপাতালের চিকিৎসা নিতে আসা মিরপুর-১১ নম্বরের মোস্তফা কোরবানির মাংস কাটতে গিয়ে বাঁ পায়ের নিচের অংশে জখম হয়েছেন। সেখান থেকে রক্ত ঝরার দৃশ্য দেখে চিকিৎসক মারমা ছুটে এসে প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে দিতে শ্যমলী থেকে আসা এক তরুণেরও একই অবস্থা দেখে তাকে রক্ত বন্ধের জন্য নিজেকে ক্ষতস্থান চেপে ধরে রাখতে বলেন। এরপর ছুটে যান তার চেয়ে গুরুতর রোগীর দিকে। হাসপাতালের এক কর্মচারী জানান, সকাল ১০টার পর থেকে কোরবানির মাংস কাটতে গিয়ে আহত হয়ে অর্ধ শতাধিক রোগী এখানে এসেছেন। কোরবানির ঈদের দিনে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিত্রও প্রায় একই রকম ছিল বলে জানিয়েছেন সেখানকার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এএসআই আব্দুল খান। তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শুধু একের পর এক হাত-পা কাটা রোগী এসেছে এই হাসপাতালে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ৮০ জন এ ধরনের রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। এদের সবাই কোরবানির মাংস কাটতে গিয়ে আহত হয়েছেন।” পঙ্গু ও ঢাকা মেডিকেলের মতো দৃশ্য সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে দেখা না গেলেও আধা ঘণ্টা অবস্থানকালে সেখানেও প্রায় একই ধরনের সাত-আটজন রোগী আসতে দেখা গেছে। এরা সবাইও কোরবানির মাংস কাটতে গিয়ে আহত হয়েছেন। কোরবানির ঈদের কারণে এই ধরনের রোগী বেশি আসছে বলে জানান জরুরি বিভাগের চিকিৎসক প্রবাহ বিশ্বাস। এই চিকিৎসক শুক্রবার রাত ৮টায় দায়িত্ব পালন শুরু করে শনিবার সারা দিন সামলেছেন। টানা রোববার সকাল পর্যন্ত চলবে তাকে দায়িত্ব পালন করে যেতে হবে বলে জানান তিনি। কোভিড-১৯ ডেডিকেটেড হাসপাতাল হওয়ায় চিকিৎসকদের দায়িত্ব পালনের ‘রোস্টারে’ এই পরিবর্তন জানিয়ে প্রবাহ বিশ্বাস বলেন, “করোনাভাইরাস রোগীদের চিকিৎসা সেবায় থাকার পর একটি নির্দিষ্ট সময় চিকিৎসকদের কোয়ারেন্টিনে থাকতে হচ্ছে। তাই চিকিৎসকের কিছুটা সংকট থাকছে। অনেককে বাড়তি সময় দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে।” তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ঈদের দিন মাংস কাটতে গিয়ে আহত হওয়া রোগীই শনিবার বেশি পাচ্ছেন। সড়ক দুর্ঘটনায় আহতরাও আসছেন। একটার পর একটা রোগী আসছে- কারও হাতে কোপ লেগে রক্ত ঝরছে, কারও পা কেটে গেছে ছোরা ছিটকে পড়ে। কোরবানির ঈদের দিনে এ ধরনের রোগীদের সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছিল রাজধানীর পঙ্গু হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক উরহালা মারমাকে। শনিবার দুপুরে এই হাসপাতালের জরুরি বিভাগে গিয়ে অনেক রোগী দেখা যায়, যাদের প্রায় সবাই কোরবানির মাংস কাটতে গিয়ে হাত-পা কেটেছেন। জরুরি বিভাগের সব কয়টি বিছানাই পূর্ণ হওয়ায় অনেককে দাঁড়িয়ে থাকতে বা আরেকজনের বিছানার একপাশে বসে থাকতে দেখা যায়। তাদের সবার শরীর থেকেই রক্ত ঝরছিল। একের পর এক রোগী একাই সামাল দিতে হওয়ায় প্রচণ্ড ব্যস্ততার মধ্যে থাকা চিকিৎসক উরহালা মারমার সঙ্গে কথা বলার সুযোগ হয়নি। নিজের নামটা শুধু এক টুকরো কাগজে লিখে দিয়ে বলেন, “বুঝতেই পারছেন।” এই হাসপাতালের চিকিৎসা নিতে আসা মিরপুর-১১ নম্বরের মোস্তফা কোরবানির মাংস কাটতে গিয়ে বাঁ পায়ের নিচের অংশে জখম হয়েছেন। সেখান থেকে রক্ত ঝরার দৃশ্য দেখে চিকিৎসক মারমা ছুটে এসে প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে দিতে শ্যমলী থেকে আসা এক তরুণেরও একই অবস্থা দেখে তাকে রক্ত বন্ধের জন্য নিজেকে ক্ষতস্থান চেপে ধরে রাখতে বলেন। এরপর ছুটে যান তার চেয়ে গুরুতর রোগীর দিকে। হাসপাতালের এক কর্মচারী জানান, সকাল ১০টার পর থেকে কোরবানির মাংস কাটতে গিয়ে আহত হয়ে অর্ধ শতাধিক রোগী এখানে এসেছেন। কোরবানির ঈদের দিনে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিত্রও প্রায় একই রকম ছিল বলে জানিয়েছেন সেখানকার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এএসআই আব্দুল খান। তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শুধু একের পর এক হাত-পা কাটা রোগী এসেছে এই হাসপাতালে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ৮০ জন এ ধরনের রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। এদের সবাই কোরবানির মাংস কাটতে গিয়ে আহত হয়েছেন।” পঙ্গু ও ঢাকা মেডিকেলের মতো দৃশ্য সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে দেখা না গেলেও আধা ঘণ্টা অবস্থানকালে সেখানেও প্রায় একই ধরনের সাত-আটজন রোগী আসতে দেখা গেছে। এরা সবাইও কোরবানির মাংস কাটতে গিয়ে আহত হয়েছেন। কোরবানির ঈদের কারণে এই ধরনের রোগী বেশি আসছে বলে জানান জরুরি বিভাগের চিকিৎসক প্রবাহ বিশ্বাস। এই চিকিৎসক শুক্রবার রাত ৮টায় দায়িত্ব পালন শুরু করে শনিবার সারা দিন সামলেছেন। টানা রোববার সকাল পর্যন্ত চলবে তাকে দায়িত্ব পালন করে যেতে হবে বলে জানান তিনি। কোভিড-১৯ ডেডিকেটেড হাসপাতাল হওয়ায় চিকিৎসকদের দায়িত্ব পালনের ‘রোস্টারে’ এই পরিবর্তন জানিয়ে প্রবাহ বিশ্বাস বলেন, “করোনাভাইরাস রোগীদের চিকিৎসা সেবায় থাকার পর একটি নির্দিষ্ট সময় চিকিৎসকদের কোয়ারেন্টিনে থাকতে হচ্ছে। তাই চিকিৎসকের কিছুটা সংকট থাকছে। অনেককে বাড়তি সময় দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে।” তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ঈদের দিন মাংস কাটতে গিয়ে আহত হওয়া রোগীই শনিবার বেশি পাচ্ছেন। সড়ক দুর্ঘটনায় আহতরাও আসছেন। মোবাইল ব্যবসয়ী সাইফুল ইসলাম অভি রাজধানীর বিজয় সরণি মোড়ে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন। ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি মোটরসাইকেলে ছিলাম, কোত্থেকে একটি মাইক্রোবাস এসে ধাক্কা দিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়।” এই হাসপাতালে ঈদের দিন সকাল থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত ৯৩ জন রোগী এসেছেন। তাদের মধ্যে ৩১ জনকে ভর্তি করা হয়েছে। হাত-পা কাটাছেঁড়া ছাড়াও পেট ব্যথার রোগী রয়েছে বলে জানান জরুরি বিভাগে দায়িত্বরত কর্মচারী উজ্জল দেব। কোভিড-১৯ ডেডিকেটেড হলেও সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে শুক্রবার নমুনা নেওয়া হয় না জানিয়ে উজ্জল বলেন, ঈদের দিনও তারা কোভিড-১৯ নমুনা সংগ্রহ বন্ধ রেখেছেন। তবে বেলা ৩টা পর্যন্ত করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে আসা দুইজনকে ভর্তি করা হয়েছে। সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল থেকে বের হওয়ার সময় গেটে ময়মনসিংহ জেলা পুলিশের একটি অ্যাম্বুলেন্স দেখা যায়। ভেতরে এক রোগী দেখে কী হয়েছে জানতে চাইলে চালক বলেন, মাংস কাটতে গিয়ে তাদের এক পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। তবে হাসপাতাল এলাকা হিসেবে পরিচিত শেরেবাংলা নগরের শিশু হাসপাতালে কিছুটা ভিন্ন চিত্র দেখা যায় এদিন। রোগীর চাপ তেমন ছিল না। জরুরি বিভাগের চিকিৎসক পার্থ কুমার পাল সকালে দায়িত্ব নিয়েছেন। ২৪ ঘণ্টার ডিউটি শেষ হবে রোববার সকালে। তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এই হাসপাতালে ঈদের কোনো প্রভাব নেই। অভিভাবকরা যে সব রোগী নিয়ে আসছেন তার অধিকাংশই দুই-তিন দিন বয়সের।” সদ্য ভূমিষ্ঠ হওয়া এসব শিশুদের নিয়ে আসা হচ্ছে নানা সমস্যার কারণে। ঈদের দিন হওয়ায় রোগীর চাপও তুলনামূলক কম। দুপুরের পর পর্যন্ত ২৫টির রোগী এসেছে এই হাসপাতালে। তাদের মধ্যে ১০ জনকে ভর্তি করা হয়েছে। নতুন রোগীর এই সংখ্যা অন্য দিনের তুলনায় অর্ধেকের মতো বলে জানান চিকিৎসক পার্থ কুমার পাল।>>
=> সবচেয়ে বেশি যা বলা হয়, এতিমখানা মাদ্রাসাগুলো কুরবানির চামড়ার টাকায় বড় অর্থ সহায়তা পায়। এখন আর পায় না। এখন চামড়ার যেদাম পাওয়া যায় তা দিয়ে কোনো সহযোগিতা এতিমখানা মাদ্রাসাগুলোর হয় না। তাই, আর্থিক উৎসর্গের কোনো নীতির দিকে যেতে পারা সময়ের দাবি এখন।
<< কোরবানির চামড়ার দাম নাই, মাদ্রাসা-এতিমখানায় দুশ্চিন্তা এতিমখানা, হেফজোখানা ও কওমি মাদ্রাসার অর্থের বড় একটা যোগান আসে কোরবানির চামড়া বিক্রি থেকে। যশোরের ভুক্তভোগীরা বলছেন, বরাবরের মতো চামড়া পেলেও এবার দাম কম হওয়ায় ক্ষতির মুখে পড়ছে এ প্রতিষ্ঠানগুলো। যশোরের বাগআচড়া হেফজোখানার তত্ত্বাবধায়ক মাওলানা খায়রুল বাসার জানান, তাদের দরিদ্র, অসহায়, এতিম শিক্ষার্থীদের প্রতিষ্ঠানের লিল্লাহ বোর্ডিং থেকে বিনামূল্যে খাবার দেওয়া হয়। বছরের তিন থেকে চার মাসের ব্যয়ের অর্থ কোরবানির চামড়া বিক্রি থেকে আসত জানিয়ে তিনি বলেন, এবার চামড়ার দাম কম হওয়ায় সেটা সম্ভব হবে না। “শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া ও থাকা-খাওয়ায় ব্যাঘাত ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে।” সামটা মুসলিম এতিমখানার সভাপতি লিয়াকত আলি জানান, চামড়ার দাম কম হওয়ায় এতিমখানার বড় ক্ষতি হয়ে গেছে। “চামড়া থেকে আসা অর্থ দরিদ্র, অসহায়, এতিম শিক্ষার্থীদের থাকা-খাওয়া ও লেখাপড়ায় ব্যয় করা হতো। এবার হয়তো সেটা আর হবে না।” ওই এতিমখানার তত্ত্বাবধায়ক আবুল বাসার জানান, এ ঈদে তারা ২৭৭টি চামড়া চামড়া পেলেও ক্রেতা না পেয়ে এক আড়তে দিয়ে এসেছেন। বাজার দর অনুযায়ী টাকা দেওয়ার আশ্বাস মিলেছে তাদের। বেনাপোল চেকপোস্টের বাগে জান্নাত কওমি মাদ্রাসার তত্ত্বাবধায়ক আব্দুল হামিদ বলেন, এটা হয়তো খুব বেশি বড় নয় কিন্তু তারপরও চামড়া বিক্রির খাত থেকে টাকা আসত। এবার কোরবানি কম হওয়ায় চামড়া সংগ্রহও কমেছে এবং তারপরও সেটার দাম নেই বলেও জানান তিনি। নাভারনের সিরামকাটি ওয়ালুম কওমি হাফিজিয়া মাদ্রাসা প্রধান আব্দুল্লাহ আল নোমান জানান, নাভারন কাজিরবেড় ও সিরামকাটি গ্রামের বেশিরভাগ মানুষের কোরবানির চামড়া তারা পেয়ে থাকেন। “এবার গরুর চামড়া পেয়েছি ১১২টি আর খাসির ২০৫টি। বেচাবিক্রির চেষ্টা করছি কিন্তু এখনো বেঁচতি পারিনি।” জামতলা জামে মসজিদের ঈমাম হাফেজ মাওলানা হাফিজুর রহমান জানান, ধর্মীয় মতে কোরবানির মাংসের এক-তৃতীয়াংশ এবং চামড়া বিক্রির টাকা পুরোটাই গরিব মানুষের প্রাপ্য। বারোপোতা গ্রামের আল্লাদি বিবি (৮৫) বলেন, প্রত্যেক বার ঈদির পর চামড়ার কিছু টাকা পাই। এবার পালাম না। উপজেলার বড়বাড়িয়া গ্রামের ভিখারি সজ্জোত আলি (৯০) বলেন, চামড়ার কডা টাকা পাতাম, তাও পালাম না। কচ্ছে চামড়া বিক্রি নেই। বালুন্ডা হাইস্কুলের শিক্ষক মিজানুর রহমান কোরবানির ছাগলের চামড়ার ক্রেতা না পেয়ে মাটিতে পুতে ফেলেছেন। শার্শার বালুন্ডা বাজারের মাংস বিক্রেতা রেজাউল ইসলাম কোরবানি ঈদে গ্রাম থেকে চামড়া কিনে থাকেন। এবারও কিনেছেন তবে সতর্কতার সাথে বলে জানালেন তিনি। এবার ৮৩টি গরুরসহ ১৬০টি চামড়া কেনার পর রেজাউল ইসলাম বলেন, গরুর চামড়া প্রতিটি ৭০ টাকা থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত দাম দিছি। ছাগলের চামড়া কিনিছি ১৫/২০ টাকায়। কিছু চামড়া লোক দেছে 'বিক্রি করতি পারলি তারা টাকা পাবে' এই শর্তে। এদিকে, টেংরা গ্রামের আজিবর রহমান ৮২ হাজার টাকায় কেনা গরুর চামড়া তিনশ টাকায় বিক্রি করতে পেরেছেন। নাভারন বাগআচড়া বেনাপোল সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন ছয় মণ মাংস হওয়া কোরবানির ষাড়ের চামড়া বিক্রি করেছেন চারশ টাকায়। উপজেলার নাভারন বাজারে চামড়া বেচাকেনা করেন মির্জাপুর গ্রামের শফিউর রহমান এবং দক্ষিণ বুরুজবাগান গ্রামের চঞ্চল হোসেন। ‘ঢাকার ট্যানারি মালিকরা চামড়া নিচ্ছে না’ শুনে তারা চামড়া কেনার সাহস হারিয়েছেন। বড় গরুর চামড়া এক-দেড়শ টাকা দুইশ টাকায় কিনছেন। ছাগলের চামড়ার দাম ২০ টাকার উপরে কেনেননি। অনেকে ছাগলের চামড়া ফেলে রেখে চলে যাচ্ছে বলেও জানান তারা।>>