এতো ভোরে এতো আলোর ঝলকানি আর এতো গুলির শব্দ আমি কোনোদিন শুনিনি। তখন স্কুলে পড়তাম, সার্কিট হাউজের খুব কাছে থাকতাম, তারপর আমরা শুনলাম ক্যু-এর কথা, জিয়াকে মেরে ফেলার কথা। কলেজ জীবন পুরোটা আড্ডা দিয়েছি জামাল খান এলাকায়, একটি বিশেষ বাড়িকে দুয়েকজন বিশেষ বন্ধু বলত খুনির বাড়ি, হ্যাঁ, জিয়াউর রহমানের খুনির বাড়ি। কিন্তু সে খুনি ধরাছোঁয়ার বাইরে, কারণ তাকেও খুন করে ফেলা হয়েছে সেসাথে মঞ্জু ও আরো অনেক সেনা কর্মকর্তাকে মেরে ফেলা হয়েছিল। কিন্তু জিয়া হত্যার সাথে জড়িত সবাইকেই কি হত্যা করা সম্ভব হয়েছে? সব প্রত্যক্ষ-অপ্রত্যক্ষ সহযোগী ও সব পর্যবেক্ষকরা নিহত হয়েছেন? মুজিব হত্যার সাথে আওয়ামী লীগের খোন্দকার মোশতাক যেভাবে জড়িত বিএনপির জিয়া হত্যার সাথে জড়িত তেমন কেউ কি নেই? কেন খালেদা কোনোদিন এ হত্যার বিচার চান না? আমরা কি তার দিকে হাত তোলার মতো টানটান উত্তেজনার প্লট সাজাব? না কি সেদিন সকালে অনেকে যেমন বলছিল, বদরুদ্দোজা পালিয়ে গেছে সার্কিট হাউজের খিড়কি দিয়ে—মীরজাফর!মীরজাফর!! আমার মনে হয় আমাদের দেশের আর্মিরা আর্মি দ্বারা নিহত হতে ভালবাসেন, এবং খালেদা জিয়া ব্যাপারটা নিয়ে নাড়াচাড়া করতে চান না, কারণ তিনি কোনো আর্মির মনে দুঃখ দিতে চান না, যদিও বিএনপির কে কে জিয়া হত্যার সাথে জড়িত তিনি জানেন, জানেন এরশাদের কী ভূমিকা, মুখ তিনি খুলছেন না, কারণ তিনি আর্মিদের ব্যাপারে স্পর্শকাতর, এবং তিনি এও জানেন জিয়া হত্যার বিচার চাওয়ার সাথে সাথে সেনাবাহিনীতে জিয়ার কার্যকলাপের পেন্ডোরার বাক্স খুলে যাবে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সর্বপ্রকার অমঙ্গলচর্চার খবর বের হবে জনসমক্ষে, জিয়ার খালকাটা হাতে রক্তের নদীর উৎস দেখা যাবে। এবার যখন তিনি বন্দী ছিলেন, তখন মাঝে মাঝে তার মনে হয়েছিল সবার মুখোশ খুলে দেবেন, কিন্তু একটি মুখের সব বিভৎসতা বেরিয়ে যাবে বলে, সারাজীবনের মতো সাবধানতা অবলম্বন করেছেন, বিবাহিত স্ত্রীর মনের কথা অনেক সীমাবদ্ধ, বিখ্যাত লোকের বিধবার আবার কোনো সীমাবদ্ধতা নেই, কিন্তু তাকে করতে হয় অনেক হিসাব, কী চেপে গেলে লাভ বা কী প্রকাশ করলে লাভ, একটা মৃত জীবনের সব সম্ভাবনা যখন তার হাতে, তখন এতো সুযোগ শুধু স্বামী হত্যার বিচার চাওয়ার মতো নির্বুদ্ধিতা করে তিনি কেন হারাবেন? কিন্তু আমরা তো চাইতে পারি তার বিচার, আমরা যারা জানি, এক জিয়া হত্যার বিচারের মধ্য দিয়েই বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে তার প্রশাসনিক সীমাবদ্ধতার ভেতর ফিরিয়ে আনা যাবে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এই ঔদ্ধত্য বিডিআর-এ চাকুরী করব কিন্তু বিডিআর-এর পোষাক পরব না, বিডিআর-কে ঠিক করতে হলে রক্তের দাগ(সেনাবাহিনীতে কোনো রক্তের দাগ নেই, এক অফিসার আরেক অফিসারকে খুন করা, এক অফিসারের আরেক অফিসারের সাথে বন্ধুত্বের মতোই, সমানে সমান, কিন্তু বিডিআর আর্মি মারবে, এতো একেবারে আর্দালির অফিসার হত্যা করা, এতো আর্দালি অফিসারের বন্ধুত্বের মতোই অসম্ভব) মুছতে হলে বিডিআর-এর নাম পরিবর্তন করতে হবে, এই সবকিছুকে মোকাবেলার একটাই উপায় : জিয়া হত্যার বিচার এখনই চাই।
মাসুদ করিম
লেখক। যদিও তার মৃত্যু হয়েছে। পাঠক। যেহেতু সে পুনর্জন্ম ঘটাতে পারে। সমালোচক। কারণ জীবন ধারন তাই করে তোলে আমাদের। আমার টুইট অনুসরণ করুন, আমার টুইট আমাকে বুঝতে অবদান রাখে। নিচের আইকনগুলো দিতে পারে আমার সাথে যোগাযোগের, আমাকে পাঠের ও আমাকে অনুসরণের একগুচ্ছ মাধ্যম।
Have your say
You must be logged in to post a comment.
১২ comments
মাহতাব - ৭ সেপ্টেম্বর ২০০৯ (১১:৫২ অপরাহ্ণ)
তারেক জিয়া যদি এরশাদের কাছে যায় তাহলে জিয়া হত্যার বিচার কোনদিন বিএনপি র পক্ষে চাওয়া বা করা সম্ভব নয়।
নাবালক - ৮ সেপ্টেম্বর ২০০৯ (৪:২৪ অপরাহ্ণ)
এটা আবার কোন জিয়া?
বিএনপি-কে কোনো দিন তো দেখিনি জিয়া হত্যার বিচার চাই বলে স্লোগান দিতে??
মাসুদ করিম - ২০ ডিসেম্বর ২০১১ (১০:০৩ পূর্বাহ্ণ)
১৮ ডিসেম্বর ২০১১ খালেদা জিয়া বিএনপি আয়োজিত মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বলেছেন, জিয়াকে কারা হত্যা করেছে তা তিনি জানেন – এরপরই বললেন, একদিন তা বের হয়ে আসবে – তার মানে? তার অবস্থান, ও তার নাম বলব না? – বিচার এতদিনে কেন করা হয়নি সেপ্রসঙ্গে বললেন, বিএনপি উন্নয়নের রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত ছিল তাই কোনো প্রতিহিংসা চায়নি। হত্যার বিচার চাওয়া প্রতিহিংসা! সাবাশ খালেদা, তোমাকেই খুঁজছে সব হত্যাকারী – তারা তোমাকে মাথায় করে রেখেছে, তারা তোমাকে মাথায় করে রাখবে।
মাসুদ করিম - ৫ মে ২০১৪ (১১:৩১ পূর্বাহ্ণ)
যাক, গতকাল শেষ পর্যন্ত প্রকাশ্য জনসভায় খালেদা জিয়া জিয়াউর রহমানের হত্যাকারীর নাম মুখে নিলেন। কিন্তু এরশাদের বিরুদ্ধে মামলা এখন হবে না, মামলা বিচার যা হবার খালেদা জিয়া আবার ক্ষমতায় এলে হবে। কই মাছের প্রাণ, তুমি বেঁচে থাক।
মাসুদ করিম - ৭ মে ২০১৪ (৯:০৪ পূর্বাহ্ণ)
এবার খালেদাকে খুনি বললেন এরশাদ।
মাসুদ করিম - ১১ ডিসেম্বর ২০১৩ (৯:১৫ অপরাহ্ণ)
মাসুদ করিম - ২৬ এপ্রিল ২০১৪ (৩:০৩ অপরাহ্ণ)
শুনলাম বিএনপি নেতা রফিকুল ইসলাম মিঞা জনসমক্ষে বলেছেন, এরশাদ জিয়া হত্যার সাথে সরাসরি জড়িত, তাহলে দেরি কেন? জিয়া পরিবারকে বলে আজই কেসটা কেন ঠুঁকে দেয়া হচ্ছে না?
মাসুদ করিম - ১২ মে ২০১৪ (৭:০৮ অপরাহ্ণ)
মাসুদ করিম - ১৪ ডিসেম্বর ২০১৪ (৯:৩৫ অপরাহ্ণ)
মাসুদ করিম - ৩১ মে ২০১৬ (৮:০০ পূর্বাহ্ণ)
মাসুদ করিম - ২ অক্টোবর ২০২১ (৪:১১ পূর্বাহ্ণ)
বিদ্রোহ দমনের নামে স্বজন হত্যায় জিয়ার বিচার দাবি
https://samakal.com/todays-print-edition/tp-last-page/article/2110123482/%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A7%8B%E0%A6%B9-%E0%A6%A6%E0%A6%AE%E0%A6%A8%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A7%87-%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A6%9C%E0%A6%A8-%E0%A6%B9%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A7%9F-%E0%A6%9C%E0%A6%BF%E0%A7%9F%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%9A%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%A6%E0%A6%BE%E0%A6%AC%E0%A6%BF
বিদ্রোহ দমনের নামে মুক্তিযোদ্ধা সেনা ও বিমানবাহিনীর শত শত সদস্যকে ফাঁসি দেওয়ার ঘটনায় তৎকালীন সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের বিচার চেয়েছেন তাদের স্বজনরা। ওই সময়ে ঘটনার শিকার পরিবারের সদস্যরা গতকাল শুক্রবার সকালে রাজধানীর নাজিমুদ্দিন রোডে পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে মানববন্ধন থেকে এ দাবি তোলেন।
ভুক্তভোগী সেনা ও বিমানবাহিনীর সদস্যদের পরিবারের সদস্যরা পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে অস্থায়ী বেদি বানিয়ে সেখানে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। পাশাপাশি প্রহসনের ওই বিচারে জড়িতদের প্রতি ধিক্কারও জানান তারা।
স্বজনরা বলছেন, ১৯৭৭ সালের ২ অক্টোবর তথাকথিত বিদ্রোহ দমনের নামে সামরিক স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমান মুক্তিযোদ্ধা সেনা ও বিমানবাহিনীর সদস্যসহ অন্তত ১৪শ জনকে ফাঁসি এবং ফায়ারিং স্কোয়াডের নামে হত্যা করে লাশ গুম করেছিলেন। এক দিনের সামরিক আদালতে বিচারের নামে সেই রাতেই ঢাকা, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, রংপুর, যশোর ও বগুড়া কেন্দ্রীয় কারাগারে ফাঁসি সম্পন্ন করা হয়। রাতের আঁধারে কারফিউর মধ্যে কোনো ধরনের ধর্মীয় সৎকার ছাড়াই লাশগুলো আজিমপুর কবরস্থান এবং কুমিল্লার টিক্কারচর কবরস্থানে মাটিচাপার ব্যবস্থা করেন জিয়া। মূলত নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য জিয়ার নির্দেশে তখন বেছে বেছে বীর মুক্তিযোদ্ধা সেনা ও বিমানবাহিনীর সদস্যদের হত্যা করা হয়। একই সময়ে অনেক মুক্তিযোদ্ধা সদস্য ও কর্মকর্তাদের কারাদণ্ড দেওয়া হয় এবং চাকরিচ্যুতও করা হয়।
গতকালের কর্মসূচিতে ফাঁসির শিকার পরিবারের সদস্যরা ছাড়াও ওই সময়ে সামরিক আদালতে কথিত বিচারে কারাদণ্ড পাওয়া ও চাকরিচ্যুত হওয়া অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। সেখানে তারা ‘১৯৭৭ সালের ২ অক্টোবর খুনি জিয়া সেনা ও বিমানবাহিনীর যেসব সদস্যকে অন্যায়ভাবে ফাঁসি দিয়েছে তাদের আংশিক তালিকা’ শিরোনামে একটি ব্যানারও টানান।
ওই সময় ফাঁসির নামে হত্যার শিকার হন বিমানবাহিনীর সার্জেন্ট বীর মুক্তিযোদ্ধা সাইদুর রহমান মিঞা। তার ছেলে কামরুজ্জামান মিঞা লেলিন জানান, তারা তৎকালীন কেন্দ্রীয় কারাগারের ফাঁসির মঞ্চে ফুল দিয়ে ওই সময়ের শহীদদের স্মরণ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ভেতরে ঢোকার অনুমতি না পেয়ে ফটকের সামনে অস্থায়ী বেদি বানিয়ে তাতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেছেন।
তিনি বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তড়িঘড়ি করে ফাঁসি দেওয়ার আগে আত্মপক্ষ সমর্থন বা আইনজীবী নিয়োগের সুযোগ দেওয়া হয়নি। পরিবারগুলোকেও কিছু জানানো হয়নি তখন। আমরা জানি না আমাদের বাবার কবর কোথায়। তাই হতভাগ্য সন্তানেরা-স্বজনেরা ৪৪ বছর পর একত্র হয়ে হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করছেন। পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় ওই হত্যাকাণ্ডের শিকার মানুষগুলোকে নির্দোষ হিসেবে দায়মুক্তি দেওয়ারও দাবি জানান তারা। এসব দাবিতে আজ শনিবার সকাল ১০টায় জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে আলোচনা সভার আয়োজন করেছেন তারা।
Pingback: রাজনৈতিক বিরতি | প্রাত্যহিক পাঠ