আমাদের দেশের মুসলিম মধ্যবিত্তের সমস্যার কোনো শেষ নেই, কিন্তু সবচেয়ে বড় সমস্যা হল দুটি শব্দ, জীবন ও শিল্প, এই সমাজ থেকে পুরোপুরিই বিদায় নিয়েছে : এরা বাঁচে না এবং কিছুই সৃষ্টি করে না, মহান আল্লাহতালার রহমতে এরা এ পৃথিবীতে আসে ও আখেরাতে চলে যায়। ইমাম খাদেম মোল্লা মৌলভিদের সাথে সখ্যতা ও সারাক্ষণ ইসলাম কী বলেছে এই আলোচনায় সময় কাটানো মুসলিম মধ্যবিত্ত চারপাশে এতই প্রকট হয়ে উঠেছে যে, এই সমাজে আমরা যারা এসবের বাইরে থেকে দিনের পর দিন বসবাস করছি, তারা প্রতিনিয়ত নিজের ভেতরে নিজের সমাজকে ঘৃণা করা ছাড়া আর কিছুই করছি না। সামাজিক সৌসাম্যের দিক থেকে যা খুবই মারাত্মক, এবং এই সামাজিক পীড়ন আমাদের জীবনের মহত্তম পথে এক চূড়ান্ত বৈরিতাই মনে হয় আজকাল। এক একটি মুসলিম পরিবার বিশেষত মধ্যবিত্তরা এতই ধর্ম দ্বারা শাসিত হচ্ছে যে, এখান থেকে দিনে দিনে সংষ্কৃতির সাহিত্যিক রূপগুলো একে একে উধাও হয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত সমাজ সম্ভবত সবচেয়ে সুখী বিকৃত সমাজ। কাপড়চোপড় খাওয়াদাওয়া এসবে প্রচণ্ড তৃপ্ত, তাই বলছি সুখী, কিন্তু একেবারেই কিছু সৃষ্টি করছে না, তাই বিকৃত এই সমাজ, আর খুব বেশিদিন এভাবে চললে—জীবনবোধ সম্পন্ন ও সৃষ্টিশীল মানুষেরা সত্যিই আর এখানে বসবাস করতে পারবে না। একটি উৎসবের জন্য এই সমাজ অপেক্ষা করছে, এবং মুসলিম সমাজের সবচেয়ে বড় উৎসবের জন্য কেনাকাটায় সবাই ব্যস্ত। বাজারে এরচেয়ে কম দামী সব জিনিসপত্র যদি থাকত, এবং দেখতে যদি সত্যিই উৎসবের উন্মাদনা পাওয়া যেত তাহলে আমি খুশীই হতাম। কিন্তু যে দামী কাপড়চোপড় এবং যে দৈন্যে ভরা রঙচঙে জিনিশপত্রের পাহাড় দেখছি—তাতে একথা বলা অত্যুক্তি হবে না, এ সমাজের ভেতরের মতো বাইরের দিকটাও পঁচে শুধু গন্ধই বের হচ্ছে। মুসলমানেরা বছরে দুটি উৎসব পালন করে—এবং এই দুটি উৎসবের মতো গ্লানিভরা উৎসব—পৃথিবীতে আর আছে কি না আমার সন্দেহ আছে। এবং এই দুই উৎসবের সবচেয়ে বড় শিকার মুসলিম মধ্যবিত্ত, তার অর্থ ও সময় দুইয়ের অপচয় ঘটিয়ে শেষ পর্যন্ত সে কী পায়, আমি জানি না—কিন্তু বিশ্ব উম্মাহর এক বায়বীয় সৌভ্রাতৃত্বের উপলব্দিতে নিজেকে সে সৌভাগ্যবান মনে করে—এমন ধর্মীয় মধ্যবিত্ত এখন কি আর পৃথিবীতে কোথাও পাওয়া যায়?
মাসুদ করিম
লেখক। যদিও তার মৃত্যু হয়েছে। পাঠক। যেহেতু সে পুনর্জন্ম ঘটাতে পারে। সমালোচক। কারণ জীবন ধারন তাই করে তোলে আমাদের। আমার টুইট অনুসরণ করুন, আমার টুইট আমাকে বুঝতে অবদান রাখে। নিচের আইকনগুলো দিতে পারে আমার সাথে যোগাযোগের, আমাকে পাঠের ও আমাকে অনুসরণের একগুচ্ছ মাধ্যম।
Have your say
You must be logged in to post a comment.
১১ comments
আহমেদ মুনির - ৫ সেপ্টেম্বর ২০০৯ (১২:০৮ অপরাহ্ণ)
লেখাটি খুব সময়োপযোগী । তবে সব সমাজই কম-বেশী এই রকম নয় কি? এটা তো বর্তমান ভোগবাদী পৃথিবীর প্রবণতা। আপনি যেখানে সৃষ্টির আনন্দ পান অন্য কেউ তাতে আগ্রহ বোধ না-ও করতে পারে। সাধারণ মানুষের সমাজ বিকৃত নয় । বিকৃত হল ক্ষমতাবানদের সমাজ ।
মুয়িন পার্ভেজ - ৫ সেপ্টেম্বর ২০০৯ (২:৩২ অপরাহ্ণ)
‘একেবারেই কিছু সৃষ্টি করছে না, তাই বিকৃত এই সমাজ’ — এই তত্ত্ব সরলীকরণের দিকে যাচ্ছে না? এ-কথা সত্যি যে, জৈবিক তৃপ্তিতে ম’জে থাকা বা ভোগসর্বস্বতা (রোকেয়া বেগমের মতে ‘রসনাবিলাস’) এখনও পীড়াদায়কভাবে বর্তমান আমাদের সমাজে, কিন্তু তা শুধু মুসলিম মধ্যবিত্ত সমাজেই নয়, হিন্দু মধ্যবিত্ত সমাজেও দ্রষ্টব্য। পৃথিবীর গরিষ্ঠাংশ সমাজের মানুষই থাকা-খাওয়া-পরা-বেড়ানো-পরচর্চা — এসব আপাতস্থূল কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত। সামর্থ্যভেদে মাত্রার হেরফের হচ্ছে। তাহলে কেবল মুসলিম মধ্যবিত্ত সমাজের ঘাড়েই খড়্গ তোলা হবে কেন?
আবার, ধরা যাক, যারা মধ্যবিত্ত সমাজে বাস ক’রেও এই অস্বস্তিকর প্রবণতার বাইরে আছেন অথচ ‘কিছুই সৃষ্টি’ করেন না, তাঁদেরকে কীভাবে সংজ্ঞায়িত করা যাবে?
nizam udin - ৫ সেপ্টেম্বর ২০০৯ (১১:৪৪ অপরাহ্ণ)
“ইমাম খাদেম মোল্লা মৌলভিদের সাথে সখ্যতা ও সারাক্ষণ ইসলাম কী বলেছে এই আলোচনায় সময় কাটানো মুসলিম মধ্যবিত্ত চারপাশে এতই প্রকট হয়ে উঠেছে যে, এই সমাজে আমরা যারা এসবের বাইরে থেকে দিনের পর দিন বসবাস করছি, তারা প্রতিনিয়ত নিজের ভেতরে নিজের সমাজকে ঘৃণা করা ছাড়া আর কিছুই করছি না।”sudhu ai kothatite asei jeno chok’ta attkey gelo amar.
মনজুরাউল - ৬ সেপ্টেম্বর ২০০৯ (৩:২৩ পূর্বাহ্ণ)
বাঙালি মধ্যবিত্তের আর একটি চরম অপ্রাপ্তি হচ্ছে তাদের সত্যিকারের কোন সার্বজনীন উৎসব নেই! দু’দুটি ধর্মীয় উৎসবকে আরও খানিকটা ধর্মের লেবাস পরানোর কারণে বাঙালি তার হিপোক্র্যাসিকে আরও বৃদ্ধিই করেছে শুধু।
সাহসী লেখা। অভিনন্দন।
বিনয়ভূষণ ধর - ৬ সেপ্টেম্বর ২০০৯ (১০:৪৭ পূর্বাহ্ণ)
@মনজুরাউল! ‘পহেলা বৈশাখ’ উৎসবটাকে আপনি তাহলে কি বলবেন?
জাহেদ সরওয়ার - ৬ সেপ্টেম্বর ২০০৯ (৪:৪০ অপরাহ্ণ)
সময়োপযোগী লেখা। বাঙালী মুসলমান মধ্যবিত্তের তো তেমন কোনো বিনোদন ছিলনা। দেখেছি গ্রামে ওয়াজ মাহফিল হলেও কিশোর কিশোরী তরুণ তরুণী থেকে শুরু করে সকল বয়সের নারী পুরুষ মাহফিলের আশেপাশে প্রায় সারারাত কাটিয়ে দিত। কিন্তু এখন তো তাদের ঘরে ঘরে বিনোদন আছে। ভারতীয় চ্যানেলগুলো আছে। হলিউড আছে। নিদেন পক্ষে বাংলাদেশের ভাঙ্গাচোরা চ্যানেলগুলো আছে। অবশ্য বাংলাদেশের চ্যানেলগুলোতেও সবসময় নামাজ সুরা আজান এই সব। ইসলামিক টিভির মত প্রতিক্রিয়াশীল টিভি চ্যানেল যে কিনা সারাক্ষণ অন্যান্য রিলিজিয়াসদের মুসলমান হবার মত আপত্তিকর প্রোগ্রাম আর জঙ্গি ঘেষা সংবাদে ব্যস্ত। দেখা যাবে যে মধ্যবিত্ত গৃহিণীরা সিরিয়ালের পাশাপাশি মাথায় কাপড় দিয়ে ঠিকই ইমলামিক টিভি দেখছে। জিনের প্রভাব আর কাকে বলে।
লেখাটার জন্য অভিনন্দন।
মনজুরাউল - ৭ সেপ্টেম্বর ২০০৯ (১:৩৩ পূর্বাহ্ণ)
@বিনয়ভূষণ ধর। পহেলা বৈশাখ এখন আর বাঙালির উৎসব নেই! ওটা নয়া কর্পোরেট বেনিয়াদের দখলে চলে গেছে। দরিদ্র জনতা ওখানে এখন অচ্ছুৎ।
Pingback: মুক্তাঙ্গন
মোহাম্মদ মুনিম - ২০ সেপ্টেম্বর ২০০৯ (৮:৩৬ অপরাহ্ণ)
মার্কিন প্রবাসী বাংলাদেশীদের দেখলে ধর্মের প্রভাবটি আরও বেশী চোখে পড়ে। দেশে যারা তেমন ধর্মকর্ম করতেন না, তাঁরাও এখানে মসজিদ কেন্দ্রিক জীবনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েন। আরবদের দেখাদেখি মাথায় হিজাব পড়া, এদেশে জন্মানো বাচ্চাদের আরবী নাম রাখা এই ব্যাপারগুলো বেশ চোখে পড়ে। মসজিদের পাশে বাড়ি কিনে অন্যান্য দেশের মুসলিমদের কাছাকাছি থাকার ব্যাপক আগ্রহ আছে কিছু কিছু বাংলাদেশীর। এ দেশে অভিবাসী সকলকেই খানিকটা আত্নপরিচয়ের সংকটে পড়তে হয়, কিন্তু সেটা কাটানোর জন্য এতটা ধর্মের আশ্রয় নেয়া অমুসলিম দেশের অভিবাসীদের মাঝে চোখে পড়েনি। একজন চীনা বা কোরিয়ান অভিবাসীর নিজের শেকড় নিয়ে প্রবল অহঙ্কার আছে, বাংলাদেশীদের প্রধানতম পরিচয় বাংগালী না হয়ে ইসলাম কেন হয়ে যায়, সেটাই প্রশ্ন।
সৈকত আচার্য - ২১ সেপ্টেম্বর ২০০৯ (১২:২০ পূর্বাহ্ণ)
@ মোহাম্মদ মুনিমঃ
একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন প্রশ্ন করেছেন, আপনি। অনেকদিন ধরেই এই প্রশ্নটি মাথায় আছে। দেখছি, ইংল্যান্ডেও একই অবস্থা। শুনেছি, অষ্ট্রেলিয়া ও কানাডাতেও তাই।
মূসলমান পরিবারে জন্মগ্রহন করেছে এ রকম বন্ধু’র সংখ্যাই তো বেশি ছিল আমার। দেশে আমাদের বাসায় কিংবা গ্রামের বাড়িতে যে কোন অনুষ্ঠানে বা নিমন্ত্রনে কিংবা নানা অনানুষ্ঠানিক খাওয়া দাওয়ার পর্বে ইসলামী রীতি অনুসারে মুরগী কিংবা ছাগল ইত্যাদি প্রানী জবাই করা হতো না। গ্রামের মুসলমান সম্প্রদায়ের অনেকেই নিমন্ত্রিত হতেন এবং ভোজন পর্বে অংশ নিতেন। আর বন্ধুদের কথাতো বলাই বাহুল্য। হালাল হারাম প্রশ্নটা এত প্রকট হয়ে দেখতে কখনও দেখিনি।
বিদেশের মাটিতে পুরো ব্যাপারটাই যেন অন্যরকম। আমার কয়েকজন বন্ধুর কথা জানি, যারা ইংল্যান্ডে অনেকদিন বসবাস করছেন। কে এফ সি কিংবা ম্যাকডোনাল্ডের বার্গার একদিনের জন্যও স্পর্শ করে দেখেননি। এদের মধ্যে কেউ কেউ আমার বাসায় খেয়েছিলেন এক সময় নিয়মিত, অনেকদিন ধরেই, কোন প্রশ্ন না করেই। ইংল্যান্ডে এসে তারা যেন নতুন মানুষ। বাসে বা ট্রেনে পোষা কুকুর নিয়ে ভ্রমন করা বিদেশী/নী দেখলেই এদের এখন গা গুলিয়ে বমি আসে। অল্প পরিচিত কারো বাসায় বা রেঁস্তোরায় খেতে গেলেই খাবার হালাল কিনা অসংখ্যবার জিজ্ঞাসা করে নিশ্চিত হতে চায়। যারা দেশে দু’একটা রোজা রাখত কিনা সন্দেহ, তারা কিন্ত এখানে দিনে ১৬/১৭ ঘন্টা রোজা রাখে, (সূর্য দেরীতে অস্তমিত হওয়ার কারনে) তাও ফাষ্ট ফূডের দোকানে এবং সুপার মার্কেটে সারাদিন হাঁড় ভাংগা পরিশ্রম করে। এ এক কঠিন পণ। ভাবতে থাকি, বিদেশের মাটিতে এসে কোন অন্তর্গত শক্তি সে লাভ করে, যা তাকে, এমনভাবে পরিবর্তন করে দেয়! খাবার হালাল না হারাম, এই প্রশ্ন যেন তাকে, তাড়া করে ফিরতে থাকে প্রতিনিয়ত, সর্বক্ষন।
কেঊ কি লিখবেন এ বিষয়ে? আমি অনেকদিন ধরেই এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছি।।
মাসুদ করিম - ৫ অক্টোবর ২০১৪ (৮:১০ অপরাহ্ণ)