স্বাধীনতার ঘোষক জিয়া, লও লও লও লাল সালাম। কে এই ঘোষক জিয়া? সিপাহি-জনতার বিপ্লবের মধ্য দিয়ে বন্দীদশা থেকে মুক্তি পেয়ে বেরিয়ে আসা জিয়া? কে এই বাংলাদেশের প্রথম প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক, তারপর বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি? তাকে যেভাবে বর্ণনা করা হয় সচরাচর তাতে তাকে এক অলৌকিক চরিত্র ছাড়া কিছুই মনে হয় না। যখন কোথাও কেউ নেই বাঙালি হতবুদ্ধি তখন রেডিওতে ভেসে আসে এক অলৌকিক কণ্ঠস্বর, বাঙালি যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে, দেশ স্বাধীন হয়ে যায়। তারপর তৎকালীন রাজনীতিবিদরা জিয়ার অর্জন চুরি করে নিয়ে যায়, যেমনটি রাজনীতিবিদরা সবসময়ই বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অর্জন চুরি করেন, কিন্তু বেশিদিন ধরে রাখতে পারেন না, তাই ইতিহাসের অমোঘ নিয়মে আবার জিয়ার আর্বিভাব হয় সিপাহি-জনতার বিপ্লবের মধ্য দিয়ে; তারপর আবার রাজনীতিবিদরা জিয়ার অর্জন চুরি করে নিয়ে যায়, এরপর তার সহ্যের বাঁধ ভেঙে যায়—তাকে বাধ্য হয়েই কঠোর হতে হয়, তিনি হন বাংলাদেশের প্রথম প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক। তারপর ২১ এপ্রিল ১৯৭৭ জিয়াকে হতে হয় বাংলাদেশের ৮ম রাষ্ট্রপতি।
“This is Shadhin Bangla Betar Kendro. I, Major Ziaur Rahman, on behalf of Bangobondhu Sheikh Mujibur Rahman, hereby declare that the independent People’s Republic of Bangladesh has been established. I have taken command as the temporary Head of the Republic. I call upon all Bengalis to rise against the attack by the West Pakistani Army. We shall fight to the last to free our Motherland. By the grace of Allah, victory is ours.”
২৭ মার্চ ১৯৭১-এ বলা সেই অযাচিত ‘Head of the Republic’-ই হলেন ১৯৭৭-এ এসে, আরেক অযাচিত পন্থায়; কিন্তু যাই হোক না কেন, তার প্রতিটিই আর্বিভাব, এবং প্রতিটিই চমকপ্রদ। কিন্তু কী তার কীর্তি? ইতিহাসের জায়গাটা কোথায় তার? শুধু ঘটনাচক্র নয় যা, তার চেয়ে বড় কিছু, তার যুগান্তকারী কর্মকাণ্ড, যার জন্য জিয়া আজো প্রাসঙ্গিক। কীর্তিগুলো তাহলে একে একে বলি। ১ সেপ্টেম্বর ১৯৭৮ ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল’ প্রতিষ্ঠা, বাংলাদেশে জামাতের রাজনীতির অনুমতি প্রদান, সংবিধানে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রহিম’-এর অনুপ্রবেশ ঘটানো। এবং এ তিনটি কীর্তি তাকে উপমহাদেশে জিন্নাহ্র পরে সবচেয়ে প্রভাববিস্তারকারী মুসলিম নেতায় পরিণত করেছে। এবং আজো বাংলাদেশের মুসলমানেরা ‘বাংলাদেশীরা’ তাকে মনে করে তাদের অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে, তার উত্তরাধিকার বহন করে এই বাংলাদেশ আর বাঙালির দেশ হতে পারবে না, যেমন জিন্নাহ্কে মনেপ্রাণে জড়িয়ে রাখলে ‘পূর্ব পাকিস্তান’ কোনোদিন ‘বাংলাদেশ’ হতে পারত না। তাই আজ বাংলাদেশের আবার বাঙালির দেশ হতে হলে সবার আগে যার বিরুদ্ধাচরণ করতে হবে সে জিয়ার বিরুদ্ধাচরণ, এবং তা যদি না হয়, এক জিয়া লোকান্তরে, লক্ষ জিয়া ঘরে ঘরে, এই যদি হয়, তাহলে আমরা যেখানে আছি, সেখানেই থাকব, কোনোদিন আর কখনো স্বতঃস্ফূর্তভাবে বলতে পারব না ‘জয় বাংলা’, স্বাধীনতার সেরা কবিতা ৭ই মার্চের ভাষণ আর কখনো স্পন্দন জাগাবে না বাংলার মানুষের স্বাধীনতার উৎসবে। আছি এবং থাকব প্রতিক্রিয়াশীলতার দীর্ঘ ছায়ার নিচে : রাজাকারের রাজনীতির স্থপতি জিয়াউর রহমান জিন্দাবাদ।
মাসুদ করিম
লেখক। যদিও তার মৃত্যু হয়েছে। পাঠক। যেহেতু সে পুনর্জন্ম ঘটাতে পারে। সমালোচক। কারণ জীবন ধারন তাই করে তোলে আমাদের। আমার টুইট অনুসরণ করুন, আমার টুইট আমাকে বুঝতে অবদান রাখে। নিচের আইকনগুলো দিতে পারে আমার সাথে যোগাযোগের, আমাকে পাঠের ও আমাকে অনুসরণের একগুচ্ছ মাধ্যম।
Have your say
You must be logged in to post a comment.
৭৪ comments
শাহীন ইসলাম - ২১ মার্চ ২০০৯ (৫:৩৪ পূর্বাহ্ণ)
আমার মনে হয় লেখাটি খুব বেশি rhetorical।
মাসুদ করিম - ২১ মার্চ ২০০৯ (২:৩৪ অপরাহ্ণ)
Rhetorical মানে কি? বাংলার মাঝখানে ধুপ করে ইংরেজী শব্দ ব্যবহার করলে অর্থ ধরতে কষ্ট হয়। আমাদের শব্দগুলো যখন আমরা বাক্যে ব্যবহার করি তখন আমরা শব্দার্থ শুধু খুঁজি না বাক্যার্থও খুঁজি। এখন আমার মনে হয় আপনি হয়তো বলতে চেয়েছেন খুব বেশিই অলংকারপূর্ণ/খুব বেশিই অসার। লেখাটিতে মোটেই অলংকার ব্যবহৃত হয়নি, আর লেখা যেহেতু কৃষিকাজ নয় সার দেবার প্রশ্নই ওঠে না।
নাগরিক - ২১ মার্চ ২০০৯ (৫:৩৬ অপরাহ্ণ)
আপনি দেশকে দুটি ভাগে ভাগ করেছেন এখানে – ‘বাঙালী’ ও ‘বাংলাদেশী’। আবার ধর্মীয়ভাবেও ভাগ করে বলেছেন – ‘মুসলমানরা বাংলাদেশী’। তাহলে ধরে নিচ্ছি অন্য ধর্মালম্বীরা সবাই ‘বাঙালী’। এখানে এতসব বিভক্তির উদ্দ্যেশ্য কি দয়া করে বলবেন? আমার জানামতে স্বাধীনতার আগে যেহেতু এই দেশের (পূর্ব বাংলার) কোন নাম প্রতিষ্ঠিত হয়নি, তাই বাংলাভাষী হিসেবে আমরা ‘বাঙালী’ শব্দটি ব্যবহার করতাম। কিন্তু স্বাধীনতার পরে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হওয়াতে জাতি হিসেবে আমরা বাংলাদেশী হব এটাই স্বাভাবিক এবং এই জাতি সব ধর্মের মানুষকে নিয়ে। অথচ আপনি শুধু মুসলমানদের ফেলে অন্যদের নিয়ে আবার বাঙালীত্ত্ব ফিরে পেতে চাইছেন? আপনিতো মশাই আমাদের ভয়ের মধ্যে ফেলে দিলেন। তাহলে বলুনতো দেশের সমস্ত অরাজকতাগুলো কি আপনাদের এ সুপ্ত পরিকল্পনার অংশ?
জিজ্ঞাসু - ২২ মার্চ ২০০৯ (২:০৭ পূর্বাহ্ণ)
@ নাগরিকঃ আপনি লিখেছেন;
না। এটাই স্বাভাবিক নয়। জাতীয়তাঃ বাংলাদেশী। জাতি হিসেবেঃ বাংগালী। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
মাসুদ করিম - ২২ মার্চ ২০০৯ (১০:০২ পূর্বাহ্ণ)
আপনার মন্তব্যের উপরের অংশটা সত্যিই চমৎকার। জ্ঞানের এমন পরিসর, লেখার এমন হাত, সত্যিই চোখ খুলে দিলেন আমার।
শাহীন ইসলাম - ২১ মার্চ ২০০৯ (৬:১৫ অপরাহ্ণ)
শুরুতে ক্ষমা চাইছি আমার বাংলার জন্য (এটি মুলত টেকনিক্যাল কারণে)।
Rhetorical-er …. (Sorry, despite my sincere efforts, I can no more write in Bangla; and this seems to be a technical fault with the present blog, so I prefer to write in English rather than writing Bangla in Roman Alphabet, যতক্ষণ না কম্পিউটারের কৃপায় বাংলা আসে — এখন যেভাবে আসল)
I’m not sure whether there is a nice term for “rhetoric” or “rhetorical” in Bangla (the noun might be somewhat captured by ” বাগ্মিতা” — কিন্তু তা মনে হচ্ছে সঠিক নয়)। সাদামাটা ভাবে “রিটোরিক্যাল” বলতে আমি বোঝাতে চেয়েছি — যুক্তি দ্বারা বিশ্লেষণের চেয়ে পাঠককে অন্যভাবে প্রভাবিত করার প্রয়াসটা বেশি এখানে।
আপনি বলেছেন :
“লেখা যেহেতু কৃষিকাজ নয় সার দেবার প্রশ্নই ওঠে না”
আমি ঠিক একমত হতে পারলাম না। লেখার মধ্যে অবশ্যই সার দেওয়ার প্রয়োজন আছে; আমার মনে হয় যথেষ্ট চিন্তা করতে হয় — সেটিকে “সার” ধরা যেতে পারে।শশুরুতে ক্ষমা চাইছি আমার বাংলার জন্য (এটি মুলত টেকনিক্যাল কারণে)।
Rhetorical-er …. (Sorry, despite my sincere efforts, I can no more write in Bangla; and this seems to be a technical fault with the present blog, so I prefer to write in English rather than writing Bangla in Roman Alphabet, যতক্ষণ না কম্পিউটারের কৃপায় বাংলা আসে — এখন যেভাবে আসল)
I’m not sure whether there is a nice term for “rhetoric” or “rhetorical” in Bangla (the noun might be somewhat captured by ” বাগ্মিতা” — কিন্তু তা মনে হচ্ছে সঠিক নয়)। সাদামাটা ভাবে “রিটোরিক্যাল” বলতে আমি বোঝাতে চেয়েছি — যুক্তি দ্বারা বিশ্লেষণের চেয়ে পাঠককে অন্যভাবে প্রভাবিত করার প্রয়াসটা বেশি এখানে।
আপনি বলেছেন :
“লেখা যেহেতু কৃষিকাজ নয় সার দেবার প্রশ্নই ওঠে না”
আমি ঠিক একমত হতে পারলাম না। লেখার মধ্যে অবশ্যই সার দেওয়ার প্রয়োজন আছে; আমার মনে হয় যথেষ্ট চিন্তা করতে হয় — সেটিকে “সার” ধরা যেতে পারে।
রায়হান রশিদ - ২১ মার্চ ২০০৯ (১১:২৮ অপরাহ্ণ)
বাংলা একাডেমীর ইংরেজী থেকে বাংলা অভিধান (১৯৯৩ সংস্করণ, পৃ. ৬৬১) অনুযায়ী:
The Concise Oxford Dictionary (tenth edition, p.1227) অনুযায়ী:
শাহীন ভাইয়ের সাথে একমত। rhetoric এর ভাল বাংলা সম্ভবত নেই। মূলতঃ বাংলা ভাষাভাষীদের জন্য লেখা একাডেমীর অভিধানে শব্দটির অনুবাদ পড়তে গিয়ে একটা কথাই মনে এসেছে। অলন্কার এবং আবেগ বিবর্জন সংক্রান্ত বিবর্তনের (অথবা আধুনিকায়নের) যে স্তরগুলো ইংরেজী ভাষা পেরিয়েছে, বাংলা ভাষা সম্ভবত সেই পথে এগোয়নি (হয়তো চেষ্টাও করেনি)। সেই অর্থে বাংলা ভাষার গুনগত চরিত্রই ইংরেজী থেকে আলাদা, যেমন আলাদা অলন্কারবহুল ধ্রুপদী উর্দু। ভাষার সাথে জড়িয়ে থাকে একটি নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর প্রথা, আবেগ, ভাব এবং তা প্রকাশের ধরণ। একটা ভাল উদাহরণ হতে পারে বাংলা শব্দ “অভিমান”, যার কোন ইংরেজী প্রতিশব্দ আজ পর্যন্ত খুঁজে পাইনি, কারণ, ইংরেজী ভাষীরা সম্ভবত এই বিশেষ আবেগটির সাথে ততটা পরিচিত না। আমার ভুলও হতে পারে।
Shaheen - ২২ মার্চ ২০০৯ (৮:২১ পূর্বাহ্ণ)
@ রায়হান,
The etymology of “rhetorical” — which you have cited from OED — is quite helpful. (Thanks for that.) The word comes from Greek, but it must be Aristotle (and later Cicero) who had circulated/coined it so widely. He wrote a book on that notion, and more interestingly he wrote a letter to Alexander the Great — who was his student — on that topic. (You can find the letter in Aristotle’s complete works, vol 2, edited by Jonathan Barnes).
Lawyers must learn rhetoric and I think they do that. But why don’t they learn logic? Why can’t we see any formal course on logic for the lawyers? Or am I in a gap?
nizam uddin - ২১ মার্চ ২০০৯ (৯:১৫ পূর্বাহ্ণ)
saadhinotarr shera kobita’r kobi bonam bangladeshi musolmaner obishshonbhadito neta niye lekha to dhumpayir dhumpaner motoi hoye gelo.cigarette’er packet’er lebel porun, vabi projonnoy keo poran “songbidhiboddo sottorrkikoron:jatio dui neta r pokai kaata songbidhan theke shotorrkow hakun!”
মাসুদ করিম - ২১ মার্চ ২০০৯ (২:৩৯ অপরাহ্ণ)
ব্লগ প্রশাসককে জিজ্ঞাসা করুন অডিও মন্তব্য করার ব্যবস্থা করা যায় কি না, এতো ব্যবস্থার পরও যদি ইংরেজি অক্ষরে বাংলা মন্তব্য পড়তে হয়! আর যা মন্তব্য করেছেন তা নিয়ে যা বলার তা আমার পোস্টেই আছে। তবে এখানে আরেকটা কথা বলতে চাই, দ্বি-জাতি তত্ত্ব যেমন ভুল, দুনেতা/দুনেত্রীর সমীকরণও ভুল। জিয়াকে চিনুন, খালেদা জিয়াকে চিনুন—আলাদা করে, তাহলে চেনাটা সহজ হবে। যত মেশাবেন মুজিব/জিয়া, হাসিনা/খালেদা : বাংলাদেশের রাজনীতির সহজ পাঠ তৈরী করতে ভুল পাঠ তৈরী করবেন। বাংলাদেশের রাজনীতির মুক্তি সেদিনই হবে যেদিন জিয়া-খালেদা মুছে যাবে বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে। আর তখন যদি আসে নতুন সংগঠন যে সংগঠন বাংলাদেশের স্বাধীনতার পটভূমিকে ৭ই মার্চের ভাষণকে এর মুক্তিযুদ্ধকে হানাদারদের গণহত্যাকে অন্তরে ধারন করেও সামাজিক দুর্বৃত্তায়নের আওয়ামী ভূমিকার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে মানুষকে ধর্মমতনির্বিশেষে সংগঠিত করতে পারবে, তবে সেদিন থেকে বাঙালির বাংলাদেশ সার্থকতা পেতে শুরু করবে।
নাগরিক - ২১ মার্চ ২০০৯ (৭:৪৬ অপরাহ্ণ)
@ মাসুদ
আপনার এই বাঙালীর মধ্যে কি পশ্চিম বাংলার বাঙালীদেরকেও অন্তর্ভুক্ত করেছেন?
Shaheen - ২৩ মার্চ ২০০৯ (২:৫৯ পূর্বাহ্ণ)
@মাসুদ
“বাঙালির বাংলাদেশ ” কেন? চাকমা, মুরং, Anglo, উর্দু ভাষী — এদের বাংলাদেশ হতে পারে না?
শামীম ইফতেখার - ২১ মার্চ ২০০৯ (৭:৫৭ অপরাহ্ণ)
@ নাগরিক,
গত কয়েক দিন ধরেই নিয়মিতভাবে এই ব্লগের আলোচনাগুলো পড়ে যাচ্ছি। অংশগ্রহণ করা হয়ে ওঠেনি। এই ব্লগের পোস্ট এবং মন্তব্যের একটা সাধারণ মান বজায় রাখার চেষ্টা দেখেছি সব সময়। সে জন্যই অনেক আগ্রহ নিয়ে এখানে পড়তে আসি। কিন্তু রায়হান রশিদের “পিলখানা চিন্তাঝড়” সিরিজের পোস্টগুলো ছাপার পর থেকেই লক্ষ্য করছি কিছু নতুন মন্তব্যকারীর উদয় হয়েছে, যারা হয় এই ব্লগের আলোচনার মানের সাথে পরিচিত নন, কিংবা পরিচিত হতে চান না। নাগরিক, আপনার মন্তব্যগুলো আমার কাছে সেই গোত্রের মনে হয়েছে।
এই পোস্টে এবং পিলখানা পোস্টে (চিন্তাঝড় ৩) আপনার মন্তব্যগুলো ভাল করে পড়লাম। লক্ষ্য করলাম আপনি বার বার “আপনারা” “আপনাদের” এই শব্দগুলো ব্যবহার করছেন, কোন ধরণের সংযম, পরিমিতি বা ব্যাখ্যা ছাড়াই। কোন একজনের মন্তব্যের উত্তর দেয়ার সময় আপনার যেন চেষ্টা থাকে ঢালাওভাবে পুরো ব্লগকে এবং এখানকার সব লেখককে একটা ছকে ফেলে প্রচার করতে। সেই সাথে লক্ষ্য করেছি, যে আপনি খুব সচেতনভাবে চেষ্টা করেন নানা ধরনের ধুয়া তুলে যুক্তিতর্ক বা বিশ্লেষণ থেকে পালিয়ে বেড়িয়ে কিছু ‘উপর উপর’ মন্তব্য দিতে। আপনার কয়েকটা মন্তব্য পড়ার পর এখন কিছুটা ক্লান্তিই বোধ করছি।
ভাই, কোন বক্তব্য থাকলে দয়া করে ঝেড়ে কাশুন, সুনির্দিষ্টভাবে সুনির্দিষ্ট ব্যক্তিকে উদ্দেশ্য করে লিখুন। আর লেখার সময় সম্ভব হলে ঢালাও মন্তব্য না করে সেটি কেন বলছেন সুনির্দিষ্টভাবে বলুন, এবং তা কিসের ভিত্তিতে বলছেন সেটাও ব্যাখ্যা করুন। তাতে আমরা সবাই অংশগ্রহণে উৎসাহিত হই। যেমন, ‘আপনারা’ বলতে কাদের বুঝাচ্ছেন? ‘সুপরিকল্পিত’ বলতে কি বুঝাচ্ছেন? কোন্ ‘অরাজকতার’কথা এবং তার সাথে ঠিক কোন্ ধরনের ‘পরিকল্পনার’ কথা বুঝাতে চাচ্ছেন? গত কয়েক বছরে দেশের অরাজকতাগুলো কারা করেছে, কেন করেছে, এটা সবাই জানি। ধর্মকে এদেশের রাজনীতিতে কারা ব্যবহার করে তাও অজানা নেই। কিছু কিছু নাদান এখনো তা জানে না। নানা ধরনের ধুয়া তুলে আমাদের উল্টো সিধা বুঝাবার চেষ্টা করে। আবার এই কাপুরুষের দলের অতটুকু সৎসাহসও নেই স্পষ্ট করে নিজের যুক্তি বিশ্লেষণ তুলে ধরার। শুধু কথা দিয়েই এদের চিনে নেয়া যায়।
এই ব্লগে আমরা কেউ কেউ অনেক আশা নিয়ে আসি। বিশ্লেষণধর্মী কিছু পড়বার জন্য। সারবস্তুহীন ফালতু মন্তব্য পড়ার জন্য না। সে সবের জন্য অন্য ব্লগ সাইট আছে, সেগুলোর একটা বেছে নিন দয়া করে।
নাগরিক - ২১ মার্চ ২০০৯ (১১:৩৫ অপরাহ্ণ)
@শামীমঃ ‘আপনারা’ বলতে আমি বোঝাই এখনকার রাজনীতিবিদদের ও তাদের পৃষ্ঠপোষকদের যা কিনা এই ব্লগের সংকীর্ণ গন্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। আর খোলাসা করে লেখা বলতে কি আপনি কোন রাজনৈতিক দলের পক্ষ নিয়ে লেখার কথা বলছেন যাতে আক্রমণ করতে সুবিধা হয়? তাই যদি হয়, তবে আপনাকে হতাশ হতে হবে। কারণ আমি এখনকার রাজনীতিকে প্রচণ্ড রকম ঘৃণা করি।
আপনি লিখেছেনঃ
এর মানে এই দাঁড়ায়, মাসুদ করিমের লেখা আপনার কাছে বিশ্লেষণধর্মী মনে হয়েছে, আর সেই লেখার বিপক্ষে যারা লিখেছে তা আপনার কাছে সারবস্তুহীন ফালতু মনে হয়েছে। কিন্তু পরিতাপের বিষয় আমার কাছে তার লেখা স্ববিরোধী এবং খাপছাড়া মনে হয়েছে। xxxxxxxxxxxxxxxxxxx। তাহলে আপনি পাঠক হিসেবে আপনার ওজন কতটুকু অনুমাণ করে নিন।
এই ব্লগটির নাম মুক্তাঙ্গণ। তাই মুক্ত আলোচনাতে অভ্যস্ত হউন। শুধু আপনার পছন্দের লেখা আশা করা বোধ হয় ঠিক না। আর যদি আশাই করেন তবে আপনার জন্যও দরজা খোলা আছে বিকল্প পথের।
মাসুদ করিম - ২৫ মার্চ ২০০৯ (৮:২৭ পূর্বাহ্ণ)
হ্যাঁ, ঠিকই বলেছেন শামীম ইফতেখার, বেশ কয়েকজন মুক্ত হাওয়ার ধোঁয়াপন্থী মুক্তাঙ্গনের মন্তব্য ঘরে দমবন্ধ পরিবেশ তৈরি করছেন। আপনি যথার্থ স্মোক ডিটেক্টরের কাজ করেছেন। ফোরাম/চ্যাট সাইটের মানসিকতা নিয়ে অনেকেই আজকাল ওয়েবলগ করছেন এবং ব্লগে মন্তব্য করছেন। কথার পিঠে কথা বলা ছাড়া এদের আর কোনো গুণতো প্রকাশ পাচ্ছেই না, বরং মন্তব্য ঘরের সৌন্দর্যহানি হচ্ছে। আপনি তাদেরকে সঠিক দিক নির্দেশনাই দিয়েছেন।
মুক্তাঙ্গন - ২১ মার্চ ২০০৯ (১০:৪৬ অপরাহ্ণ)
@ শাহীন ইসলাম
ঠিক কি সমস্যা হচ্ছে একটু বিস্তারিত জানাবেন প্লীজ। কয়েকভাবে বাংলা কীবোর্ড সচল করা যায়। যেমন কমেন্ট এরিয়ার ঠিক নিচে সর্বডানের বোতামটি ক্লিক করে বাংলা এবং ইংরেজী কীবোর্ড সচল করা যায়। বাংলা সচল হলে এর পর যে কোন একটি বাংলা কীবোর্ড এর বোতাম ক্লিক করলেই সে কীবোর্ডটি সচল হবে।
বিকল্পভাবে, আপনি যদি উবুন্তু ব্যবহারকারী হয়ে থাকেন তাহলে ctrl+space চেপে বাংলা এবং ইংরেজীর মধ্যে কীবোর্ডের আউটপুট পরিবর্তন করে নেয়া যায়। কিন্তু তার আগে, উবুন্তুতে বাংলার জন্য প্রয়োজনীয় সেটাপ করে নিতে হবে। এখানে এবং এখানে ধাপগুলো দেয়া আছে।
আশা করি এতে সমস্যার সমাধান হবে। নাহলে ইমেইলে জানাতে দ্বিধা করবেন না।
ধন্যবাদ।
Shaheen - ২২ মার্চ ২০০৯ (৭:৩০ পূর্বাহ্ণ)
@ মুক্তাঙ্গন
(১) মনে হয় ইংরেজি থেকে বাংলায় শিফট করতে গিয়ে আর বাংলায় শিফট হয়নি । হয়তো টেকনিকটি এখনো ধরতে পারিনি। তবে এখানে একটি preview option এবং HTML option থাকা উচিত।
(২) মুক্তাঙ্গন যদি মুক্ত চিন্তার অঙ্গন হয়ে থাকে তাহলে ভাষার barricade এখানে থাকা উচিত নয়। বাংলায় লিখতে হবে এমনটি নীতি (policy) থাকা উচিত নয়। ভাষা আমাদের চিন্তায় সহায়ক বটে (even it might be essential for our thoughts), কিন্তু সে সঙ্গে এটি বাধাও হতে পারে। ভিন ভাষায় মানুষ লিখেছে, যেমন লাতিন, সংস্কৃত … (The problem has started, I can’t shift back to Bangla now)
মাসুদ করিম - ২২ মার্চ ২০০৯ (১০:১৩ পূর্বাহ্ণ)
চেষ্টা করুন, পারবেন। বাধা ভাবলে কোনোদিন পারবেন না। নিজের ভাষা, টাইপ করতে দিলেন আর কি কিছু মূল্যবান সময়। কত কত জ্ঞান আহরণ করতে কত সময় দিচ্ছেন, একটু টাইপ এমন কি হাঙ্গামা ঘটাবে। তবে একটা কথা জানবেন: সময়ের চেয়েও চিন্তার চেয়েও ভাষা মূল্যবান। আর তাই এতো বাঙালীর কথা বলছি। অসার হলে, বাগাড়ম্বর হলে, ফাঁপানো হলে ক্ষমা করবেন। rhetorical-এর সাধ্যমত তিনটা বাংলা দিলাম, ভালো লাগলে যথাযথ হলে ব্যবহার করবেন, খুব ভালো লাগবে। ভালো থাকবেন।
Shaheen - ২২ মার্চ ২০০৯ (৭:৩৪ অপরাহ্ণ)
বানানগুলও ঠিক করে দেওয়ার জন্য ওনেক ধন্যবাদ।
এবার একটি Theoretical problem’এ আসা যাক। এক ভাবে দেখলে আমার নিজের ভাষা বাংলা নয়, বরং চাটগাইয়া।
আপনি হয়ত বলবেন একটি language আরেকটি dialect। ধরে নিলাম language আর dialect এর মধ্যে বসতুনিষঠ পারথক্য আছে। তাহলে বেশ সমভাবনা থেকে যায়: চাটগাইয়া বাংলা ভাষার ডাইলেকট নয়।ড: মু: শহিদুললাহ নাকি চাটগাইয়া আর সিলেটি’কে বাংলার dialects হিসাবে গন্য করেননি।আর — আরো গোড়ার দিকে গেলে — language আর dialect এর মধ্যে বসতুনিষঠ পারথক্যের পরিবরতে যা আছে তা হলো মুলত historical — history of geopolitics। বলা হ্য় ” a language is a dialect with an army” — এবং ব্যাপারটি তাই।
এবার “historical” বিশেষণটির দিকে নজর দেওয়া ্যাক। এ বিশেষণটি ব্যাবহার করে আমি “accidental” বা “contingency” … (Gosh! The same old problem, I cannot switch back to English). ..”historical” means here something “being accidental” or “contingent” — and with that meaning it is far from what you meant by “ইতিহাসের অমোঘ নিয়মে”।
আমার উপরের যুকতি যদি ঠিক হয়ে থাকে, তাহলে বেশ কয়েকটি নি ..(same problem)
If I am right with my above argument then we have to think about a number of implications:
(1) If Bangla is not my own language (in certain sense of “own”) then why should I write in Bangla?
(2) Historically Chittagong had been a part of Myanmar (until a war between Burma and British). Culturally we the Chittagongians had more in common with the Burmese. Our language is different, our girls used to wear “thamis” instead of “saris”, we have “shampans”, and we like sticky rice. And so forth; we may find more similarities or commonalities if we keep on digging. Capitalizing on this observation a movement may grow up in future : “Have an independent Chaittagong” (I would not surprise if SKC ever argues in this vein). Will that be a “separatist” movement or a “nationalist” movement? Is there really a difference — other than “I like it” or “I don’t like it” — between “separatism” and “nationalism” ?
(3) Are we not suppressing our tribal minorities in the name of “Bangalitto”? Perhaps our atrocities have sometime far surpassed what the Pakistanis did to us? Haven’t we broken the Geneva Convention by forcefully migrating plain landers into the hill tracts (like Israel with Palestine)? This was of course done during Zia’s rule. But Sheikh Mujib has to bear some responsibility for that too. It is him who denied their distinctive identities at the outset (The story has it that Mujib told Shantu Larma “tora’o to Bangali”).
Shaheen - ২৩ মার্চ ২০০৯ (১২:০৭ পূর্বাহ্ণ)
আমার আগের মনতব্যে (২২ মার্চ ২০০৯, রবিবার; সময়: ৭:৩৪ অপরাহ্ণে লেখা) আর একটি জিনিষ পরিষকার করে দেওয়া উচিত ছিল। এখানে দেখি বাংগালি আর বাংলাদেশি — তথা A (=AL) বনাম B (=BNP) — নিয়ে একটি ঝগড়া চলছে।আমি লিখেছিলাম
আমি “Bangalitto”পরিবরতে “Bangladeshi” লিখতে পারতাম , তাতে আমার মনে হয়’না আমার মুল ্যুকতির কোনো উললেখজোগ্য হেরফের হতও। ওতএব “Bangladeshi”-র জন্য প …(same problem)… So I would like to ask similar question to Bs
Let us not forget that though Mujib had sowed the problem it was Zia who went for Israel like move: let us push some settlers from plain land in the hilltracts.
রায়হান রশিদ - ২৩ মার্চ ২০০৯ (১২:১৯ পূর্বাহ্ণ)
১.
মাসুদ ভাইয়ের লেখার সাথে আমরা যারা পরিচিত তারা তাঁর আগের লেখাগুলো এবং সেগুলোর স্বকীয় ধরণ দেখে একেক বার চমকে উঠেছি, যেভাবে তিনি প্রতিবারই (লেখার স্টাইল নিয়ে) আমাদের প্রচলিত ধারণার গন্ডীকে একটু একটু করে বাইরের দিকে ঠেলেছেন তা দেখে। মনে পড়ে ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে মাসুদ ভাইয়ের লেখাটার কথা। অনেকেই পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা লিখেছি আমরা বিষয়টি নিয়ে, আর মাসুদ ভাই লিখেছেন চারটি শব্দ: “বাঁচায় ঋণ, মারে কিস্তি”।
২.
মাসুদ ভাই একটা গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার অবতারণা করেছেন। সংক্ষিপ্ত, কিংবা অতি সংক্ষিপ্তই হয়তো হয়ে গেছে সেটা কারও কারও মতে। কিন্তু এই বিষয়টি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে হয়। পক্ষ কিংবা বিপক্ষ চিহ্নিত করে নয়, বরং সত্যানুসন্ধানের উদ্দেশ্য মাথায় রেখে। মাসুদ ভাই এর লেখার মাধ্যমে সে সুযোগটি কিন্তু তৈরী হয়েছে। আর সত্যানুসন্ধানের এই প্রক্রিয়ায় আমরা যেটা করতে পারি তা হল একে একে ইতিহাস এবং রাজনীতির সবগুলো মীথ এবং প্রচারণার প্যাটার্ণকে তুলে এনে যুক্তি-তথ্য-বিশ্লেষণের অনুবীক্ষণের নিচে রাখতে। এবং সে প্রক্রিয়া দল মত ব্যক্তি নির্বিশেষে সকল রাজনৈতিক দল এবং নেতার ক্ষেত্রেই প্রয়োগ করতে হবে। মাসুদ ভাইয়ের এই পোস্টের সব বক্তব্যের সাথে সবাইকে যে একমত হতে হবে, তেমন তো নয়। এখানকার অনেক উক্তি, দাবীই অনেকের কাছে সরলীকৃত মনে হতে পারে, এমনকি অন্যায্যও মনে হতে পারে কারো কারো কাছে। কিন্তু তাতে এই বিষয়গুলোর প্রাসঙ্গিকতা এবং তা নিয়ে আরও গভীর আলোচনা বিশ্লেষণের প্রয়োজনীয়তা তো শেষ হয়ে যায়না।
৩.
রাজনীতি আমাদের বাস্তবতা, আমরা চাই বা না চাই। সেই বাস্তবতাকে আমরা কুৎসিত বলতে পারি, তার থেকে দুরে দুরে পালিয়ে বেড়াতে পারি। কিন্তু তাতে তো আর রাজনীতির বাস্তবতা আমাদের কাউকে ছেড়ে যাবে না! বরং মনে করি রাজনৈতিক বোধ, চেতনা এবং অংশগ্রহণের অবর্তমানে যা গড়ে ওঠে তা হল এক ধরণের স্যাঁত স্যাঁতে পরিবেশ। কোন একটা জায়গা আমরা হয়তো বিচ্ছিন্নতার বিলাসিতায় ছেড়ে দেয়ার কথা ভাবতে পারি, কিন্তু তাতে সে জায়গাটা যে খালি থাকবে সেটার মনে হয় কোন নিশ্চয়তা নেই। অভিজ্ঞতা বলে, এই জায়গাগুলো কখনো খালি থাকেনি!
৪.
শাহীন ভাই সম্ভবত rhetoric শব্দটার অবতারণা করে উত্থাপিত বিষয়গুলোর আরও ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের (analytical rigour) প্রয়োজনীয়তার দিকটি বোঝানোর চেষ্টা করেছেন। আমরা এমন এক বাংলাদেশে বাস করি, যেখানকার বাতাস পর্যন্ত ভারী হয়ে রয়েছে ৩৮ বছরের নিরবচ্ছিন্ন প্রচারণায়। সত্য-মিথ্যার সীমারেখাগুলো ক্রমশ ঝাপসা হতে হতে প্রায় মিলাতে বসেছে। এখন আমাদের টিভি খুললেই নিজামী-কামরুজ্জামানদের রক্তে আগুন ধরানো সব দম্ভোক্তি শুনতে হয়। এখন জনৈক জেনারেলের আকাশকুসুম মতলবী প্রচারণাকেও (ইমেইলকেও) সময় ব্যয় করে খন্ডন করতে হয়! তাই ভাবি, এটা হয়তো ‘দুই যোগ দুই চারকে’ নতুন করে প্রমাণ করার যুগ; হয়তো চাকাকেও নতুন করে আবিস্কার করার যুগ। দুঃখজনক, কিন্তু সত্যি!
সেটাই না হয় এবার করে দেখাবে এই দেশের মানুষেরা।
শাহীন - ২৪ মার্চ ২০০৯ (১২:১৪ পূর্বাহ্ণ)
@ রায়হান
আমি “rhetorical” বিশেষণটি ব্যবহার করেছিলাম। আরো যুতসই হতো যদি “empty rhetoric” ব্যবহার করতাম।
অবিশ্রুত - ২৪ মার্চ ২০০৯ (১২:০২ পূর্বাহ্ণ)
ইতিহাসে জিয়ার অবস্থানের সূত্রে আলোচনায় বাঙালি, বাঙালি মুসলমান, বাংলাদেশী ইত্যাদি প্রসঙ্গ আসছে।
নাগরিকত্বের দিক থেকে আমরা বাংলাদেশী, এতে কোনও সংশয় নেই। একইভাবে আমাদের কেউ যদি এখন আমেরিকা বা ইউরোপের কোনও দেশে নাগরিকত্ব নেন, তা হলে তিনি নাগরিকত্বের দিক থেকে আমেরিকান বা অন্য কিছু হবেন, কিন্তু জাতীয়তা পাল্টাবে না, বরং জাতীয়তার সূত্রে তিনি ওই দেশের এথনিক গোষ্ঠীভুক্ত হয়ে যাবেন। ব্রিটিশ হওয়া আর ব্রিটিশ সিটিজেন হওয়ার মধ্যে যোজন-যোজন তফাৎ।
এই হিসেবে, বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে, আমরা অবশ্যই বাংলাদেশী। কিন্তু তা আমাদের নাগরিকতার দিক থেকে; জাতীয়তার দিক থেকে নয়। এখন, এই নাগরিকতাকেই আমাদের জাতীয়তা করে তোলা হয়েছে। এই জাতীয়তার পরিপ্রেক্ষিত তৈরি করা হয়েছে একটি যুক্তি টেনে,- আমাদের দেশে চাকমা, মারমা প্রভৃতি জাতিগোষ্ঠী রয়েছে এবং সবাইকে নিয়ে আমাদের একটি জাতীয়তাবোধ,- বাংলাদেশী জাতীয়তাবোধ। এইভাবে আসলে কেবল বাঙালির জাতিসত্বাকেই হত্যা করা হচ্ছে না, তাদের জাতিসত্বাকেও হত্যা করা হচ্ছে। দীর্ঘদিন থেকে আমাদের এক শ্রেণীর বুদ্ধিজীবী বলে আসছেন, বাঙালি জাতীয়তাবাদের মাধ্যমে আদিবাসীদের জাতিত্ববোধকে খর্ব করা হচ্ছে। কিন্তু এরও চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো, অনেক আগে থেকেই আদিবাসীদের ধর্মান্তকরণের মাধ্যমে, তাদের ওপর ধর্মজ আগ্রাসন চালানোর মাধ্যমে তাদের জাতিসত্বা ও সংস্কৃতিকে নষ্ট করা হচ্ছে। এই ক্ষেত্রে বাঙালী জাতীয়তাবাদের কোনও ভূমিকাই নেই। শেখ মুজিবুর রহমান রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে তাদের বাঙালি জাতীয়তার সঙ্গে সম্মিলিত হতে বলেছিলেন এবং সেখান থেকে ঘটনা অন্যদিকে মোড় নেয়। এইভাবে রাষ্ট্রের একটি অতিরাষ্ট্র হয়ে ওঠার প্রবণতার বহিঃপ্রকাশ দেখি আমরা রাজনীতিতে, যার ফলে চাকমা ও অন্যান্য জাতিসত্বার মানুষরা জাতীয়তা বিকাশের প্রশ্নে সংগঠিত হতে থাকেন। কিন্তু আমাদের আদিবাসীদের দীর্ঘদিন থেকেই যেভাবে মগজ ধোলাই করে খ্রিস্ট্রান বানানো হয়, যেভাবে মুসলমান বানানো হয় এবং তারপর ধর্মজ সংস্কৃতি চাপিয়ে আদিবাসী সংস্কৃতির মর্মবস্তু নষ্ট করা হয়, সেভাবে কেউ তাদের কখনও বাঙালি সংস্কৃতি শেখাতে গেছেন কি? আর জিয়াউর রহমান এই প্রশ্নে কি করেছেন, তা আমরা সবাই জানি। তিনি তাদের বাংলাদেশী বানিয়েছেন, তাদের বাংলাদেশী বানানোর জন্যে সামরিক বাহিনীকে ব্যবহার করেছেন এবং এভাবে আমাদের সামরিক বাহিনী একটি নির্যাতক বাহিনী হিসেবে ইতিহাসে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। আর বাংলাদেশী হওয়ার মধ্যে দিয়ে তারা,- আদিবাসীরা তাদের সংস্কৃতি, ধর্ম, ভূগোল সব কিছুর ওপরেই অধিকার হারাতে বসেছে।
অনেকে সর্বভারতীয় জাতীয়তার কথা টেনে আনেন, বলেন সে দেশের মানুষ তো তাদের জাতীয়তা ভারতীয় বলে, তা হলে আমাদের জাতীয়তা বাংলাদেশী হতে অসুবিধা কোথায়?
প্রশ্ন হলো, তারা যে জোড়াতালি দিয়েছে, আমরাও কি সেই জোড়াতালি দিতে যাব? এই জোড়াতালির ফসল ভারতের বিভিন্ন বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন। আরও একটি প্রশ্ন, কেবল এই জাতীয়তার প্রশ্ন এলেই কেন জিয়াপন্থীরা ভারতীয় রাষ্ট্রতত্ত্ব অনুসরণ করতে উৎসাহী হয়ে ওঠেন? বাংলাদেশের বিদ্যমান রাষ্ট্রীয় কাঠামোর মধ্যে আমরা যদি সকল জাতিসত্বাকেই স্বীকৃতি দেই, তা হলে অসুবিধা কোথায়?
মাসুদ করিম জিয়াউর রহমানকে নিয়ে একটি সংক্ষিপ্ত স্কেচ একেছেন, বলতে পারি। এই স্কেচে একটি বিষয় (নিশ্চয়ই তাঁর জানা আছে, সংক্ষেপনের কারণে হয়তো বিভিন্ন দিক বাদ পড়েছে) সংযোজিত হলে ভালো হতো। যেমন, মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন স্মৃতিচারণ ও তথ্যগ্রন্থ আমাদের জানাচ্ছে, মুক্তিযুদ্ধের সমরপতি কর্নেল ওসমানী শৃঙ্ক্ষলা ভঙ্গের দায়ে জিয়াউর রহমানকে কয়েকবার বহিষ্কার করার উদ্যোগ নেন, কিন্তু মুক্তিযুদ্ধে এ সিদ্ধান্তের তাৎক্ষণিক নেতিবাচক প্রভাব চিন্তা করে সে সিদ্ধান্ত আর কার্যকর করা হয়নি। কর্নেল ওসমানী ছিলেন সুশৃঙ্ক্ষল ব্রিটিশ সামরিক বাহিনীর প্রশিক্ষণে প্রশিক্ষিত, তাই জিয়াউর রহমান যখন জেড ফোর্স গঠন করেন তখন তা একদমই মেনে নিতে পারেননি। প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন ও তাঁর মন্ত্রিসভা এ পরিস্থিতি সামাল দেয়ার জন্যে পাশাপাশি এস ফোর্স ও কে ফোর্স গড়ে তোলার জন্যে শফিউল্লাহ ও খালেদ মোশাররফকে নির্দেশ দেন। এইভাবে সামরিক বাহিনীর একাংশকে ব্যক্তিবাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার যে অপচেষ্টা জিয়া করেছিলেন, তা ঠেকানো হয়।
যুদ্ধকালে প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকার কারণেই বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে জিয়াউর রহমান সিনিয়র হওয়ার পরও সেনাপ্রধান হতে পারেননি; সেনাপ্রধান করা হয় শফিউল্লাহকে।
এই জিয়াউর রহমান এবং একাত্তরের আরেক বিতর্কিত ব্যক্তি মুশতাক আহমেদ দু’জনের সম্মিলনে স্বাধীন বাংলাদেশে আমরা কি বাঙালি, কি আদিবাসী সবাই যার যার জাতীয়তা হারিয়ে বাংলাদেশীর খাতায় নাম লেখাই! মানিকে মানিক চেনে, তাই জিয়াউর রহমান খোন্দকার মোশতাককে চিনতে পেরেছিলেন, যেমন মোশতাকও চিনতে পেরেছিলেন জিয়াউরকে।
মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন। ধন্যবাদ মাসুদ করিম, এসব মনে করিয়ে দেয়ার জন্যে। এইসব আমাদের বার বার মনে হওয়া দরকার, মনে করা দরকার।
শাহীন ইসলাম - ২৪ মার্চ ২০০৯ (৭:৩৫ অপরাহ্ণ)
লালন শাহীর গানটি দিয়ে শুরু করা যাক,
লালন জাত কি তা দেখেন’নি। তাহলে কি জাতের অস্তিত্ব নিয়ে লালন সন্দিহান ছিলেন? না তিনি জাতিতে জাতিতে ভেদাবেদের চেয়ে আরও বড় রকমের ভেদাভেদের দিকে ইংগীত করেছিলেন? না একজন mystic হিসাবে সব ভেদাভেদের দিকে কটাক্ষ করেছিলেন? হয়ত তিনি সব কিছু বুঝিয়ে ছিলেন।
শাহীন ইসলাম - ২৫ মার্চ ২০০৯ (১:০৩ পূর্বাহ্ণ)
লালন শাহীর গান থেকে আপাতত অবিশ্রুেতর লিখার (২৪ মার্চ ২০০৯, মঙ্গলবার; সময়: ১২:০২ পূর্বাহ্ণ) দিকে ফেরা যাক।দুটি ভুল প্রথমে চোখে পরে। প্রথমটি তেমন বড় ভুল নয়, হয়তবা একটা খটকা। তিনি লিখলেন,
ব্রিটিশ বলতে আমরা সচারাচর ব্রিটিশ নাগরিক বুঝি। ব্রিটিশ জাতি কথাটা’র চালু নেই, এমন কি তা হ্য়তো ভুল; এর পরিবরতে যা শুনি তা হলও: English, Scottish, Irish, …ইত্যাদি। সালমান রুশদীকে “Briton” বলা হয় — যার মানে ব্রিটিশ নাগরিক; তা্নকে an Indian Briton’ও বলা যেতে পারে; পাশাপাশি Canadian Bangladeshi, Afro-American ইত্যাদি শোনা যায়।
অবিশ্রুতের আরেকটি ভুল, এবার তা খুব একটা গৌন না। তিনি লিখলেন,
এখানে সুরটি এ রকম: “ক’এর চেয়ে খ’এর দোষ বেশী, অতএব ক’কে দোষ দেওয়া যাবে না”।
এরকম যুক্তিতে প্রচছন্ন ভাবে যে ক’এর দোষটি ধরা পরে তা যেন তার্কিক বুঝতে পারছে না (আমাদের সামরিক অফিসাররা অনেক সময় এ রকম যুক্তি দিয়ে থাকেন)।
এরকম আর একটি কাছাকাছি সুর: “না না তিন লাখ নয়, (মাত্র) তিরিশ হাজার লোক স্বাধিনতা যুদ্ধে মারা হয়েছে”। যেন সংখ্যা কমলে আর দোষ থাকে না। অন্তত পক্ষে — ৈনতিক বিবেচনায় এ ধরনের যুক্তি গ্রহনীয় নয়।
অভিশ্রুতের যুক্তিতে আরেকটি সমস্যা,এক ধরনের conceptual problem। যদি আমি একজন বাংগালী হিন্দু ইসলাম ধর্ম গ্রহন করি তবে আমার বাংগালীত্বের কোন পরিবর্তন হবে না। তা হলে কি আমি একজন মুরং খ্রীষ্টান ধর্ম গ্রহন করি আমি কি অমুরং হয়ে যাব?
শাহীন ইসলাম - ২৫ মার্চ ২০০৯ (৫:৫৭ পূর্বাহ্ণ)
না, এখানে কারো ভুল ধরা যবেনা দেখছি। এ ব্লগে দুটি বিভক্তি সুস্পষ্ট, এক দল A আর এক দল B। যুক্তির কথা বল্লে, যুক্তির ফাটল ধরিয়ে দিলে দেখি অনেকে অখুশী হচ্ছেন। এখানে লালনের স্থান নেই। এ যদি tip of the iceberg হয়ে থাকে তা হলে আমাদের সামনে আন্ধকার যুগ। (রবীন্দ্রনাথের “সবুজের অভিযান” এখানে কাজ করবে না মনে হচ্ছে।)
তারপরও দেখি একটি পোসিটিভ একাউন্টের outline দেওয়া যায় কি না। (আমাকে এখন প্লেন বদলাতে হছ্ছে, তাড়াতাড়ি শেষ করতে পারলেই যেন বাচি)। কয়েকটি পয়েন্ট বা থিসিস :
(১) বাংলাদেশ একটি Nation-state বা জাতি-রাষ্ট্র (A ও B উভয়ে কিন্তু তা সমর্থন করে)।কম বেশী পৃথিবীর সব রাষ্ট্র এখন জাতি-রাষ্ট্র, কিংবা জাতি-রাষ্ট্র হিসাবে পরিগনিত হতে চায়। একটি জাতি থেকে যে রকম রাষ্ট্র হয়, আবার একটি রাষ্ট্র থেকে একটির জাতির উদ্ভব হতে পারে। এক ধরনের চক্র অবশ্য এখানে বিরাজমান, অথবা প্রতীয়মান হতে পারে।আমি abstractly ব্যাপারটিকে এ ভাবে দেখছি,
pre-state —-> State —–>post-state
| |
| |
বাংগালী বাংলাদেশী
অবিশ্রুত - ২৫ মার্চ ২০০৯ (১১:৩২ পূর্বাহ্ণ)
ধন্যবাদ শাহীন, ভুল ধরিয়ে দেয়ার জন্যে। আপনি জানেন, এখানে মন্তব্য পেশ করার আগে দেখে নেয়ার সুযোগ (প্রিভিউ) নেই। আর থাকলেও কখনও কখনও তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় এরকম ভুল হতে পারে। তবে বিষয়টির মূল সুর আশা করি আপনি ধরতে পেরেছেন।
দ্বিতীয় প্রসঙ্গে আমি বলব, আমি ক-এর ব্যাপারকে খ-এর ব্যাপার দিয়ে ন্যায্যতা দিতে চাইনি। আমার মোটিভ ছিল বিষয়টি-যে অন্ধকারে আছে, সে ব্যাপারে ইশারা দেয়া। আপনি নিশ্চয়ই এ-বাক্যগুলি খেয়াল করেছেন :
বলাবাহুল্য, এখানেও কিন্তু আমার শব্দগত ভুল রয়েছে। দ্বিতীয় বাক্যে ‘যার ফলে’ এই শব্দ দু’টির বদলে ‘এর প্রতিক্রিয়ায়’ পড়তে হবে। এবং এই বাক্যগুলি বাঙালি জাতীয়তাবাদ রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে কী বিপর্যয় ডেকে আনছে (রাষ্ট্রের অতিরাষ্ট্র হয়ে ওঠা), তাও সংক্ষেপে তুলে ধরেছে বলে আমার মনে হয়। বিস্তারিত আলোচনা করতে গেলে তো আরও অনেক ব্যাপারই আসবে। যেমন ধরুন পার্বত্য অঞ্চলের ক্ষুদ্র জাতিসত্বার আন্দোলনে কি চাকমা-রা অন্যান্য ক্ষুদ্র জাতিসত্বাগুলোর ওপর সূক্ষ্ম ও নীরব এক আধিপত্যবাদ প্রতিষ্ঠা করেনি? আমার তো মনে হয়, এসব বিষয়ও আলোচনা করার মতো।
আর একজন মানুষ যখন সাধারণভাবে ধর্মান্তরিত হয় তখনকার সঙ্গে ক্ষুদ্র জাতিসত্বার এই মানুষদের ধর্মান্তকরণের (যা সংগঠিত, সংঘবদ্ধ এবং ক্ষেত্রবিশেষে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত) বেশ বড় তফাৎ রয়েছে বলেই আমি মনে করি। এবং তা তাদের সংস্কৃতিকে ছিন্নভিন্ন করছে। মুসলমান হওয়ার পর তাকে যদি কেউ ছবক দিতে আসে, শহীদ মিনারে ফুল দেয়া হারাম অথবা হিন্দুয়ানী, তা হলে সংস্কৃতিতে রক্তক্ষরণ হয় বৈকি। ইন্দোনেশিয়ার মুসলমানরা এখনও উলুধ্বনি দেয় ওটা তাদের সংস্কৃতিজাত বিষয় বলে, আমাদের ধর্মান্তরিত মুসলমানরা কিন্তু অনেক আগেই উলু দেয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। তারপরও এখনও কোনও কোনও রাজনৈতিক নেতাকে বলতে শোনা যায়, ‘অমুক’ ক্ষমতায় গেলে মসজিদে উলুধ্বনি শোনা যাবে। এইভাবে ধর্মজ সংস্কৃতিকে কাজে লাগানো হচ্ছে রাজনৈতিক আগ্রাসনে।
সাধারণ বিবেচনায় আপনার কথাটায় কেউ দ্বিমত করবে না, কিন্তু আমি এটিকে দেখছি একটি রাজনৈতিক পরিপ্রেক্ষিতে দাঁড়িয়ে, এমন একটি রাষ্ট্রে দাঁড়িয়ে যেখানে রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রযন্ত্রের বিভিন্ন কাঠামোও ক্ষেত্রবিশেষে ধর্মজ রাজনীতির পৃষ্ঠপোষক। তাই আপনার কথাটি মানতে পারছি না বলে দুঃখিত।
আর এ-ও মানতে পারছি না যে, এখানে কারও ভুল ধরা যাবে না। ধরা খাওয়ার জন্যেই আমরা এখানে এ-ব্লগে আসতে ভালবাসি। নিজের অজ্ঞতা দূর করাও তো একটি সম্মানজনক কাজ, না কি?
তবে কথা হলো, সব সময় তো আর অনলাইনে কেউই থাকি না আমরা। তাই উত্তর পেতে, উত্তর দিতে অনেক সময় দেরি হয়ে যায়। সেজন্যেও দুঃখিত।
শাহীন ইসলাম - ২৫ মার্চ ২০০৯ (৪:৩৯ অপরাহ্ণ)
শেষ প্রশ্ন
@অবিশ্রুত,
অনেক ধন্যবাদ আপনার উত্তরের জন্য। অনেক কিছু এখানে শুনতে হয়। যেমন ধরুন প্রথমে ভুল ধরিয়ে দিলে অনেকে প্রশ্ন করে “অমূক লেখায় বিশ্লেষণের অভাব, তমুক জায়গায় রেটরিক এর ছড়াছড়ি –“এ সব বলে কি কোন লাভ আছে? প্রশ্নকারী যেন সরাসরি একটি positive account খুঁজেন। positive account যেন হুট করে একটি মানুষের পাওয়ার বিষয়। এরকম একটি প্রত্যশার চাপের নিমিত্তে আমার শেষ মন্তব্যটি (২৫ মার্চ ২০০৯, বুধবার; সময়: ৫:৫৭ পূর্বাহ্ণ ), তাও — ভাগ্গিশ অনলাইনের — বদআওলেতে ডাইয়াগ্রামে শেষ হয়ে গেল (ডাইয়াগ্রামটি অবশ্য আশানুরূপ হয়’ নি)। তার উপর আপনি (যদি লালনের মত আপনার কোন মার্কা না থাকে) এক ধরনের threat শুনতে পাবেন : “সার দেয়ার বিপদ দেখতে পাচ্ছি, সার বুঝেশুনে দিতে হয়, কী যে দিচ্ছেন আল্লাই মালুম।” এসব বিবেচনায় আমি ভাবলাম এখান থেকে ইস্তফা দেওয়া উচিৎ। তবে আপনার সুন্দর উত্তরটি পেয়ে আবার লিখতে মন চাইল। … না থাক তাত্ত্বিক আলোচনায় যাওয়া দরকার নেই। একটু পর বাংলাদেশে ছাব্বিশে মার্চ। একাত্তর, রেডিও থেকে স্বাধীন বাংলা বেতার, মধ্য রাতে গুলির আওয়াজ: ট্যাট, ট্যাট, ট্যাট . . .।বাবা। সে বাবা আর নেই। এ মুহূর্তে আমি বাংলাদেশের প্রাতিপাদের কাছাকাছি একটি জায়গায়। চমত্কার স্ূর্য, ঝকঝকে দিন। আর কতদিন — হয়ত আর বেশীদিন না — মানুষ এত সুনদর আবহাওয়া পাবে? পন্চাশ হাজার বছর আগে আফ্রিকার কোন এক উপজাতির — সম্বভতা Sun Bushman — একটি অংশ নিজেদের বাপ দাদার ভিটা ছেড়ে বেরিয়ে আসলো।ধীরে ধীরে তারা চারিদিকে ছড়িয়ে পরলো। দশ হাজার বছর আগে হয়ত ধর্মের উদ্ভব ধরা যায়। সে সংেগ হয়ত সভ্যতা। আসল, আরো আনেক পরে, খ্রীষ্টান ধর্ম আর ইসলাম।এর পর ক্রসেড। আসল সাম্রাজ্য। তারপর উপনিবেশ।ভারতে আসলো William Carry, evangelism।
তারপর আসল — প্রথমে ইওরোপে — জাতি-দেশ।জাতি-দেশ’এর পর্যায় এখন শেষ হয়ে আসছে। এখন বিকল্প কি? সেটিই আমার শেষ প্রশ্ন।
শাহীন ইসলাম - ২৪ মার্চ ২০০৯ (৬:২০ অপরাহ্ণ)
@মুক্তানগন/masud/sumon
আমার অভra diye kichu likha pondashrom hoye gelo, hotath kore computer bondha, everything is lost then. ubuntu diye omni’r suggestione bangla set up ki bhabe kaj korbe bujhte parchina, karon omni’r suggestion mone hocche text-editor’e jete hobe. oboshsho ekhane unijoy, bijoy, phonetic, … diye hoito bangla lekha jabe, ami phonetic diye ceshta kori , kintu keno jani shob kichu bigre jay — ekhan jerokomti holo. তাও টাইপের কারসাজিগুলি ধরতে পারছি না।
ekhane dekhi preview option nai. arekti shomossha save kora jacchena, na online’e na amar computere. save kora gele aro kichu guchiye লেখা jeto.
লেখা আমার কাছে অনেক কিছু।
(১)মাসুদের বিপরইতে, এটি আমার কাছে ক্বষিকাজ — হয়ত’বা তার চেয়ে বেশই;
শ্রম দিতে হয়, সার দিতে হয় এবং সময় দিতে হয়।
(২)আবার অনেক সময় এটি, আমার কাছে, দেবতাকে অর্ঘ্য দেয়ার মতো,
যুক্তি ও কবিতা দুটি’ই থাকা চাই। (সে জন্য লিখি — পাবলিক্যাশন অর ্থে — কম)
(৩)আবার অনেক সময় এটি একটি tool of explicating my thoughts as well as a mean of interaction and communication ।
(লেখা আমি যা নই, তা)
এ সব চাওয়া এক সংগে সবসময় হয়ত পুরণ করা সম্ভব নয়। আমি এখানে (৩) এর উপর জোর দিব (বাংলায় লিখটে হলে এ খেটরে … ).(২) থেকে আমি যুক্তি’র উপর জোর দিব; কবিতা , Style, presentation’ এর কিছু দিক একটু গঔন হয়ে যেতে পারে। এক সংেগ না লিখে piecemeal লিখবো (যেহেতু save করা যাচছেনা)।
মুক্তাঙ্গন - ২৪ মার্চ ২০০৯ (৭:১৫ অপরাহ্ণ)
@ শাহীন
উবুন্তু বা যে কোন লিনাক্স ডিসট্রোতে এ ধরণের পরিবর্তনগুলো সাধন করার জন্য টার্মিনাল (টেক্সট এডিটর) ব্যবহারের কোন সহজ বিকল্প দেখছিনা। তবে যত দূর দেখতে পাচ্ছি, অমি আজাদের দেয়া ধাপগুলোর একটা উল্লেখযোগ্য অংশ তো “সিনাপটিক প্যাকেজ ম্যানেজার” দিয়েই স্বয়ংক্রিয়ভাবে করা যায়। লিনাক্স ব্যবহার করতে চাইলে এই প্রাথমিক প্রক্রিয়াগুলো ভালভাবে জেনে নেয়ার কোন বিকল্প নেই।
প্রিভিউ অপশন ইচ্ছে করেই এখনো রাখা হয়নি, জেকোয়েরী স্ক্রিপ্টের কিছু জটিলতার কারণে। তবে এই অপশনটা আপনার ক্ষেত্রে কেবল তখনি কাজে লাগতো যদি আপনি আপনার মন্তব্যে কুইক ট্যাগ কিংবা এইচটিএমএল কোড ব্যবহার করতেন। দেখতে পাচ্ছি, আপনার মন্তব্যগুলোতে সে রকম কোড একটিও ব্যবহার করেননি। সুতরাং, কমেন্ট এরিয়ার টেক্সট বক্সে লেখার সময় যা দেখতে পাচ্ছেন এখন, প্রিভিউ থাকলে হুবহু সেটার বাইরে অন্য কোন কিছু আপনার দেখতে পাবার কথা না।
আমার জানা মতে মন্তব্য সরাসরি সেভ করার অপশন কোন ব্লগেই রাখা হয়না। “সেভ” বা “সংরক্ষণ” এর সুবিধা কেবল পোস্টের ক্ষেত্রেই। এসব ক্ষেত্রে:
সমাধান ১: আপনার ইউজার আইডি এবং পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে সাইটে লগিন করুন। “পোস্ট লিখুন” অপশনে গিয়ে আপনার মন্তব্যটির খসড়া লিখে সেটাকে ‘সেভ’ করুন। এখানে আপনি প্রিভিউ ও পাবেন। লেখা হয়ে গেলে সেটাকে কপি করে কমেন্ট এরিয়াতে বসিয়ে দিন। ‘সেভ’ করা ড্রাফটটি মুছে ফেলুন যাতে ব্লগ প্রশাসক সেটাকে পোস্ট ভেবে ভুল না করেন।
সমাধান ২: দীর্ঘ মন্তব্যের ক্ষেত্রে নোট প্যাড খুলে মূল লেখার কাজটি সেখানেই সম্পন্ন করতে পারেন এবং একটু পর পর সেটাকে ‘সেভ’ করতে পারবেন। এতে ওয়েবসাইটের “নিরাপত্তামূলক স্বয়ংক্রিয় টাইম আউট” এর কারণে সৃষ্ট সম্ভাব্য জটিলতা থেকে নিজেকে সহজেই রক্ষা করতে পারবেন। কাজ শেষে নোট প্যাড থেকে মন্তব্যটির খসড়া কমেন্ট টেক্সটবক্সে সেঁটে দিয়ে অনুমোদনের জন্য “পেশ করুন”।
বিষয়টা স্পষ্ট হল না। আপনি লিনাক্স-উবুন্তু ব্যবহারকারী হয়ে থাকলে অভ্র কীবোর্ড ব্যবহার করতে পারার কথা না, যেহেতু এখনো লিনাক্স উপযোগী অভ্রের কোন ভার্সন তেরী হয়নি (এখানে দেখুন)। আপনি হয়তো সে সময় লিনাক্সের পরিবর্তে উইন্ডোজ ব্যবহার করছিলেন, সেক্ষেত্রে উপরের দু’টো সমাধানই আপনার কাছে খোলা থাকার কথা।
ধাপগুলো আগের মন্তব্যে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করা রয়েছে। আপনার নিশ্চয়ই ভুল হচ্ছে কোথাও। কিংবা আপনার পিসিতেও কোন সুনির্দিষ্ট সমস্যা থাকতে পারে, যেটা এখান থেকে আমাদের পক্ষে নিরূপণ করা কঠিন। এখানকার সিংহভাগ ব্যবহারকারীই সাইটে দেয়া ‘প্রভাত’ নয়তো ‘ফোনেটিক’ ব্যবহার করছে কোন সমস্যা ছাড়াই।
সুনির্দিষ্ট তথ্যের অবর্তমানে এর বেশী আর কোন পরামর্শ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না আপাতত।
ধন্যবাদ।
মাসুদ করিম - ২৫ মার্চ ২০০৯ (২:৩৬ পূর্বাহ্ণ)
সার দেয়ার বিপদ দেখতে পাচ্ছি, সার বুঝেশুনে দিতে হয়, কী যে দিচ্ছেন আল্লাই মালুম। আর
বুঝতে পারছি! লেখা ও কৃষিকাজ দুই-ই অনেক সাধনায় শিখতে হয়। এগুলো নাগরিক জীবনের নানা রকম ফর্ম পূরনের মতো সহজ কাজ নয়।
গ্রামের বাড়ির সব উঠোনের মতো ‘মুক্তাঙ্গন’-এর উঠোনও ঠিকই আছে, উঠোনের দোষ দিয়ে লাভ নেই।
আবু জুবায়ের - ২৪ মার্চ ২০০৯ (৭:১৯ অপরাহ্ণ)
দেখুন আমি এই ব্লগে নতুন এসেছি।কিন্তু এই খানে একটা বিষয় আমার স্পষ্ট হচ্ছে যে এটি একটি উদ্দেশ্য প্রনীদিত লেখা।জিয়াউর রহমান বানহ্লাদেশী জাতীয়তাবাদকে প্রতিষ্ঠিত করেছে বলে যদি গাত্র দাহ হয় তবে অনেক কথায় ইতিহাসে আছে।আমি জানিনা এই ব্লগের নীতিমালা শুধু এক কেন্দ্রিক নাকি।অর্থাত একটি পক্ষের আলোচনার জন্যি এটি নাকি।তাহলে আমার গবেষনার অনেক বিষয় আমি আলোচনা করতে পারব হয়তো।প্রথমে লেখাটি আক্রমনাত্নক।এই ধরনের লেখার মান কখনই স্বীক্রৃতি পায় না।
২।জিয়াউর রহমান কে খাটো করে দেখার সুজোগ বাংলাদেশের ইতিহাসে ঘটবে না।আর জিয়াকে নিয়ে দুই একটা এই ধরনের লেখা কাদাছুরা ছুরি শুরু হয়ে জাবে।
৩।শেখ মুজিবকে নিয়ে অনেক বিষয় আছে যেটা লেখা জেতে পারে।
এই ধরনের সূত্র হীন লেখা না লেখাই ভাল।
নাগরিক - ২৬ মার্চ ২০০৯ (৫:৫৪ পূর্বাহ্ণ)
@মুক্তাঙ্গনঃ জুবায়ের বলেছেন
আমার ধারণা আপনারা সব লেখক এক কেন্দ্রিক এবং অন্যমতের কাউকে মোটেই উৎসাহিত করেননা। তাই বিদায়। আপনারা ৩৮ বছরের অতীত ইতিহাস চর্চা করে দেশকে উদ্ধার করতে থাকুন। আর এই দিকে Global warming এর জন্য আর্কটিকের বরফ গলা পানিতে দেখবেন কখন যেন তলিয়ে গেছেন সবাইকে নিয়ে। আমি নিরাপদেই আছি প্রেইরীর সুউচ্চ ও সুনিবিড় ছায়াতলে। ধন্যবাদ এবং দয়া করে এই শেষ লেখাটি মডারেশন নীতির বহির্ভূত হলেও অব্যাহতি দিলে বাধিত হব।
রায়হান রশিদ - ২৪ মার্চ ২০০৯ (৮:৪৬ অপরাহ্ণ)
@ শাহীন ইসলাম
শাহীন ভাই, এখানে সম্ভবত ভুল হচ্ছে একটু। আমার জানা মতে কোন ল’স্কুলের পাঠ্যক্রমেই rhetoric অন্তর্ভূক্ত নয়। একে উৎসাহিত তো করা হয়ই না, বরং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নিরুৎসাহিত করা হয়। জুরিসপ্রুডেন্স এর ক্লাসিকগুলোর (যেমন: HLA Hart এর লেখা) লেখার স্টাইল লক্ষ্য করলে সেটা আরও স্পষ্ট হয়, যেগুলোর মৌলিক গুণাবলীর মধ্যে precision এবং clarity উল্লেখযোগ্য। মান সম্মত যে কোন লিগ্যাল টেক্সট এ rhetoric তো দূরের কথা, এমনকি যে কোন ধরণের modifier ও (যেমন: adjective, যা noun এবং pronoun কে মডিফাই করে; adverb, যা verb, adjective এবং অন্যান্য adverb দের মডিফাই করে) অত্যন্ত সতর্কতার সাথে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। কেবলমাত্র ট্রায়াল লইয়ারিং এর ক্ষেত্রে, যাতে বাগ্মীতা একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ, কেউ কেউ rhetoric এর ব্যবহার করে থাকেন আদালতের/বিচারকের মনযোগ আকর্ষণ করার লক্ষ্যে। তবে: এক, প্রকৃত ট্রায়াল লইয়ারদের সংখ্যা খুব বেশী না, এবং, দুই, তাঁদের মধ্যেও উপরের দিকে যাঁরা তাঁদের খুব সংখ্যকই rhetoric প্রেমী।
অভিজ্ঞতা থেকে জানি, আইন বিভাগগুলোতে “আলাদাভাবে” আইন শিক্ষার অংশ হিসেবে Logic (দর্শন শাস্ত্রের একটি আনুষ্ঠানিক/formal বিষয় হিসেবে) শেখানো হয় না। সেটির হয়তো কোন প্রয়োজনও পড়ে না, কারণ, বিকল্প হিসেবে analytical reasoning সব আইন কোর্সেরই অবিচ্ছেদ্য অংশ। এমনকি আইন বিভাগে নতুন ছাত্রছাত্রী গ্রহণ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ভর্তি পরীক্ষা এবং ইন্টারভিউতেও এই বিষয়টিই (reasoning) গুরুত্ব পেয়ে থাকে। এতে হয়তো Logic এর মত অত্যন্ত বিস্তৃত একটি বিষয়ের সব দিক উঠে আসে না, তবে আইনবিদ হবার জন্য যতটুকু জানা জরুরী ততটুকু ঠিকই উঠে আসে বলে মনে করি।
এটা ঠিক যে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়েই (যেমন: চট্টগ্রাম) আইন শিক্ষার্থীদের দর্শনশাস্ত্র এবং রাজনীতি বিজ্ঞানের সাধারণ পাঠও দেয়া হয়ে থাকে। তবে পশ্চিমের উন্নত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কোনটাতেই ‘স্নাতক পর্যায়ে’ আইনের Core Course এ বিষয়গুলো (দর্শন ইত্যাদি) আলাদাভাবে অন্তর্ভূক্ত নয়। কারণ জুরিসপ্রুডেন্স, সাংবিধানিক আইন, মানবাধিকার আইন, আন্তর্জাতিক আইন, তুলনামূলক আইন বিষয়গুলোর ব্যাপ্তি এতটাই যে আলাদা করে “দর্শন শাস্ত্র” বা “রাজনীতি বিজ্ঞান” পড়াবার প্রয়োজন পড়ে না। এবং এর ফলে আইন পেশায় নতুন রিক্রুটদের সার্বিক মান কোন অংশে ব্যাহত হচ্ছে বলেও প্রমাণ মেলেনি।
ধন্যবাদ।
অস্মিতা - ২৪ মার্চ ২০০৯ (৯:১৪ অপরাহ্ণ)
শাহীন সাহেব,
অমূক লেখায় বিশ্লেষণের অভাব, তমুক জায়গায় রেটরিক এর ছড়াছড়ি, নমুক (তমুকের পর কোন শব্দ খুঁজে পাচ্ছিনা বিধায় ব্যবহৃত) জায়গায় বাংলা লিখতে হেনতেন এর অভাব – এই সমস্ত অভিযোগের তালিকা ক্রমেই বড় হচ্ছে, কিন্তু পোস্ট বিষয়ক আপনার বিশ্লেষণ এখনো পেলামনা, যার আশায় আমরা আম জনতা মাঝে মাঝে এই পাড়ায় হানা দিই। মুনসী বাদক যেমন তবলায় ঠুক ঠাক করে সাসপেনস তৈরী করেন তেমনই কিছু হচ্ছে কিনা বুঝলামনা। তবে নাটকের প্রস্তাবনা অযথা দীর্ঘায়িত হলে আসল পরিবেশনার প্রতি দর্শকদের (এক্ষেত্রে পাঠকদের) আগ্রহ কমতে পারে, এই সাবধানবাণীটিও মনে হয় জানিয়ে রাখা দরকার। আমরা যারা রাজনৈতিক সামাজিক ইত্যাদি জরুরী বিষয়ে কিছু বিশ্লেষণ পড়ার তাগিদ থেকে এখানে আসি তারা লজিক, রেটরিক, আইনবিদ্যা বনাম দর্শনবিদ্যা ইত্যাদি নিয়ে কূটতর্ক কিংবা টেকনিক্যাল বিষয়াদি নিয়ে অযথা ফোড়ন কাটাকুটির এই প্রবণতায় মোটামুটি তিতি বিরক্ত। ক্ষমা করবেন, তবে আপনার প্রথম মন্তব্য থেকে ধরে নিয়েছিলাম যে পোস্টটির বিষয়ে (ইতিহাসে জেনারেল জিয়ার জায়গা, বাঙ্গালী বনাম বাংলাদেশীত্ব) বিশ্লেষণধর্মী কোন বিতর্ক বা আলোচনার সুযোগ বুঝি তৈরী হতে যাচ্ছে। দিগন্তে গুড়ে বালির সম্ভাবনা দেখেও সে আশা এখনো ছাড়িনি।
আশান্বিতা,
অস্মিতা
শাহীন ইসলাম - ২৫ মার্চ ২০০৯ (২:৪৮ পূর্বাহ্ণ)
@অস্মিতা
আপনি বললেন
না ভাই আমি তা মনে হ্য় বলি’নি — হ্য়ত rhetorical’এর বিপরীতে এরকম কিছুর ব্যান্জনা থাকতে পারে। আর “মুনসী বাদক” হোয়ার মোটেও ইচ্ছে নেই আমার ।তারপরও, ভাবছিলাম, আপনার উপামাটি খারাপ না। তবলায় হ্য়ত ঠুক ঠাক করছি, তবে তা –যদি করে থাকি — আমার জন্যে, কিংবা –একটু মারফতি শুনাবে হয়ত — ঈশ্বরের জন্য। সাসপেনস তৈরী করার চিন্তা একেবারেই মাথায় নেই।
মাসুদ করিম - ২৫ মার্চ ২০০৯ (৩:০৬ পূর্বাহ্ণ)
রাস্তায় দুজন লোক একটা ছাতা নিয়ে টানাটানি করছে। যার ছাতা এবং যে চোর দুজনেই ‘আমার ছাতা’ ‘আমার ছাতা’ বলে চিৎকার করছে।একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলছেন
প্রত্যক্ষদর্শী আর কেউ নন বাংলাদেশের বিখ্যাত বাম বুদ্ধিজীবি বদরুদ্দীন উমর। তাই যখন রায়হান রশিদ বলেন
তখন বড় দুঃখে বড় অমোঘ সত্যই বলেন।
হ্যাঁ কখনো কখনো মনে হয় আমরা, যারা দেখতে পায়, সে গোত্রের কেউ নই, আমরা অন্ধ! আমাদের স্বাধীনতা অন্ধ!, শুধু প্রতিক্রিয়াশীলেরা চক্ষুষ্মান।
আর ‘জেড ফোর্স’-এর ঘটনাটি জানা ছিল না। তাহলে ব্যাপারটি Forceful-ই ছিল। খটকা ছিল অনেকদিন থেকে, সেক্টর কমান্ড থাকার পরও আবার নামাঙ্কিত ফোর্স কেন, বুঝতে পারলাম ‘ঘোষক’-এর আবদার ও ষড়যন্ত্রের অভ্যাস অনেক পুরোনো। খুব ভালো হতো জেড সাহেবের একাডেমির দিনগুলো সম্বন্ধে যদি জানা যেত। আরো ভাল হতো সেই বহুশ্রুত ১৯/২১ টি ক্যু নিয়ে যদি আরো জানা যেত, যে ক্যুগুলো ঘটেছিল জিয়ার রাজত্বকালে, এবং যে ক্যুগুলোর মাধ্যমে পিলখানার চেয়েও সংখ্যায় অনেক বেশি সামরিক জওয়ান অফিসার নিহত হয়েছিলেন।
জিয়াকে তথ্যের আয়নায় স্পষ্ট করতে আরো আরো কাজ হওয়া উচিত। তিনি বাংলাদেশের প্রতিক্রিয়াশীলদের রাজা, তাকে জানলে অন্যদের জানতে বেশি সময় লাগবে না।
মাসুদ করিম - ২৬ মার্চ ২০০৯ (৩:৪০ পূর্বাহ্ণ)
গতকালের জনকণ্ঠে মমতাজ লতিফে কলামের এ অংশটি আমাদের এ পোস্টের মন্তব্যও হতে পারত।
কথিত আছে ‘৭৭ সালে বিমানবাহিনীর বিদ্রোহ ছিল জিয়ার যুদ্ধাপরাধী এবং বঙ্গবন্ধু, জাতীয় চার নেতা, কর্ণেল তাহের সহ অজানাসংখ্যক মুক্তিযোদ্ধা হত্যাকারীদের প্রতি পক্ষপাতমূলক আচরণের প্রতিবাদস্বরূপ। যাতে বলা হয় অন্তত আড়াই হাজারের মতো মুক্তিযোদ্ধা সেনাকে ফায়ারিং স্কোয়াডে হত্যা করা হয়। এছাড়াও কথিত আছে, ‘৭৫ থেকে ‘৮১ পর্যন্ত জিয়ার শাসনকালে প্রায় তিন তেকে চার হাজার সেনা কর্মকর্তা প্রায় বিশটি ক্যু-এর নামে ফাঁসিতে বা ফায়ারিং স্কোয়াডে নিহত হন। সে সময় একটি কথা গুজব হিসেবে শোনা যেত, গ্রামেগঞ্জে ভোররাতে পরিবারের কাছে পৌঁছত মৃত সেনার লাশ! জনগণ আজো জানে না এ সময়ে কত সংখ্যক সেনা পুলিশ সদস্য কিভাবে, কেন নিহত হয়েছিল!
মাসুদ করিম - ৩ সেপ্টেম্বর ২০০৯ (৮:৫৭ পূর্বাহ্ণ)
অভিন্দন! অভিনন্দন!! অভিন্দন!!!
এমন করে কে আর বলতে পারতেন, জিয়ার কথা, জিয়ার বিএনপির কথা। লেখক খালেদা উৎপাদনের রাজনীতির কথা মনে রেখে লেখার জগতেও উৎপাদনশীল হবেন এই কামনা করি, নিন্দুকেরা বলছেন লেখার জগতে তিনি ‘কাকবন্ধ্যা’ হবেন, তাও যদি হন এই একটি লেখা আমাদের সারাজীবনের পাথেয় হয়ে থাকবে। তিনি লিখেছেন
আহা! মানুষগুলো শুধু সর্বস্তরের আর সৈনিকেরা দেশপ্রেমিক!! চিয়ার্স!!!
আহা! কত ব্যর্থতার ইতিহাসের পর জন্ম হয় এমন একটি দলের!! আজো অব্যর্থ শুধুই বিএনপি!!!
শাপলা! শালিক!! বাঘ!!! বিএনপি?
আর লেখাটির শিরোনাম ‘ডানপন্থীদের বামে, বামপন্থীদের ডানে’, এখানেই লুকিয়ে আছে বিএনপির আসল চেহারা : বাম ডান বাম বাম ডান বাম–বুঝতে পারছেন LEFT RIGHT LEFT LEFT RIGHT LEFT… …
(খালেদার লেখার লিন্কটি দেখছি ফায়ার ফক্সে খুলছে না, কষ্ট করে এক্সপ্লোরারের পড়ুন:
http://www.dailynayadiganta.com/2009/09/01/fullnews.asp?News_ID=165275&sec=1)
মোহাম্মদ মুনিম - ৫ সেপ্টেম্বর ২০০৯ (১১:৪৮ অপরাহ্ণ)
আলোচনাটি ‘rhetoric’ এর তাত্ত্বিক বিশ্লেষণে মূল বিষয় থেকে খানিকটা দূরে সরে গিয়েছিল। ১৯৯১ সালে বিএনপির বিজয়ের পরে ‘বাংলাদেশী’ এবং ‘বাঙ্গালী’ এই নিয়ে কিছু বিশ্লেষণ হয়েছিলো। আমাদের (বেশীরভাগের) নৃতাত্ত্বিক পরিচয় ‘বাংগালী’ এবং আমাদের সবার জাতীয় পরিচয় ‘বাংলাদেশী’ এটাই বোধহয় সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা। মার্কিন স্বাধীনতা যুদ্ধের নায়কেরা প্রায় সবাই নৃতাত্ত্বিকভাবে ইংরেজ ছিলেন, কিন্তু নিজেদের আলাদা একটি জাতীয়তাবাদ (মার্কিন জাতীয়তাবাদ) তৈরী করেছিলেন। সেই জাতীয়তাবাদ এখনো আছে, অভিবাসীদের এবং তাদের বংশধরদের নৃতাত্ত্বিক পরিচয় যাই হোক না কেন, তাঁরা নিজেদের মার্কিন বলেই পরিচয় দেন, একই সাথে তাঁরা নিজেদের নৃতাত্তিক পরিচয় নিয়েও গর্বিত। সেটা হয়েছে কারণ মার্কিন রাষ্ট্র এবং সমাজ তাঁদের নৃতাত্ত্বিক এবং ধর্মীয় পরিচয় দিয়ে স্বাধীনভাবে থাকার অধিকার দিয়েছে। বাংলাদেশের রাষ্ট্রযন্ত্রের কাছে এটিই কাম্য। বাংলাদেশে যেন বাঙ্গালী, অবাঙ্গালী, মুসলিম এবং অমুসলিম নিজেদের পরিচয় এবং ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান নিয়ে স্বাধীনভাবে বাঁচতে পারেন। রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম করাটাও যেমন বাড়াবাড়ি, আবার এদেশ কেবল বাঙ্গালীর দেশ, এই দাবী করাটাও বাড়াবাড়ি।
জিয়াউর রহমান আমাদের জাতীয় জীবনে কিছু দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতি করেছেন, আমার মতে সেটি তিনি শুধু সংবিধানে বিসমিল্লাহ যোগ করেছেন বলে নয়, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের প্রতিষ্ঠিত করা এবং জামাতীদের রাজনৈতিকভাবে পুনর্বাসন করাটাই তাঁর সবচেয়ে বড় অপরাধ (বা ভুল?)। আমাদের জাতীয় এবং রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে ইসলামের অনুপ্রবেশ তাঁর আমলেই শুরু হয়, এরশাদের আমলে সেটা পরিপক্কতা লাভ করেছে। পুরো পাকিস্তানে আমলেও সম্ভবত এতটা ইসলামীকরণ হয়নি। জিয়াউর রহমান তার নিজের কোন রাজনৈতিক ভিত্তি না থাকায়, ইসলামী জাতীয়তাবাদ কাজে লাগিয়ে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের সমর্থন পেতে চেয়েছিলেন, এটাই আমার ধারণা। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলে জনশক্তি রপ্তানীর কারণে কিছু লোকজন সচ্ছলতার মুখ দেখেছিল, প্রাকৃতিক দুর্যোগ কম থাকায় সে কয় বছর ফসল ভালো হয়েছিল, হাজার হাজার সৈনিক আর অফিসারকে হত্যা করে বেশকিছু ক্যু সফলভাবে দমন করা হয়েছিল, যার কারণে দেশে কিছুটা রাজনৈতিক স্থিরতা ছিল। জিয়াউর রহমানের ব্যক্তিগত সততার কিছু গল্পও শোনা যায়। ঢাকা ল্যাবরেটরী (যদ্দূর মনে পড়ে) স্কুলে পড়া তাঁর পুত্র কোকো পরীক্ষায় ফেল করায় তাঁকে স্কুল থেকে বের করে দেয়া হয়েছিল, জিয়াউর রহমান তাতে বাঁধা দেন নি। যে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ খলিফা উমরের নিজ হাতে পুত্রকে দোররা মারা বা খলিফা হারুন আল রশিদের নিজের কাঁধে ময়দা নিয়ে বিধবাকে দিয়ে আসার গালগল্পগুলো গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে, সে দেশে জিয়াউর রহমানের এই জাতীয় রা্জনৈতিক স্টান্ট খুব কাজে লাগাই স্বাভাবিক। খলিফা উমরীয় সততার এই মহান রাষ্ট্রনায়কের দুই পুত্রের কার্যকলাপ তো আমরা সকলেই জানি। সবকিছু মিলিয়ে তাঁর কালো চশমা পরে কর্দমাক্ত শরীরে খালের ধারে বসে থাকা ছবিটির একটি তীব্র আবেদন আছে। সেই আবেদন আর কয়দিন থাকবে, সেটাই দেখার বিষয়।
মাসুদ করিম - ৬ সেপ্টেম্বর ২০০৯ (১২:৪২ পূর্বাহ্ণ)
সবকিছু ঠিকই আছে, শুধু মার্কিন ইংরেজ আর বাংলাদেশে বাঙালি কোনো অর্থেই এক নয়। বাঙালিরা এই বাংলাদেশের হাজার বছরের অধিবাসী আর ইংরেজরা আমেরিকায় সেটলার। কাজেই আমার বাঙালিত্ব শুধু নৃতাত্ত্বিকতা নয়, আমি ভূমিপুত্র, বহুবছর ধরে আছি আদিবাসীদের মতো নিজের ভূমিতেই। পাকিস্তান আমাকে দ্বিধান্বিত করেছে, সেই পাকিস্তানি মনোভাব থেকে বাংলাদেশি বলা, মানুষের পূরণ করতে হয় এমন সব ফর্মে ‘জাতীয়তা’ যদি বাঙালি লিখি, চাকমা লিখি আর ‘দেশ’ যদি বাংলাদেশ লিখি–তাহলে তো আমাকে আর ‘বাংলাদেশী’ লিখতে হয় না। বাংলাদেশ স্বাধীন হল, চার/পাঁচ বছর চলে গেল তারপর ‘বাংলাদেশী’ কোত্থেকে এল। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম যদি পাকিস্তান হওয়ার পরপরই শুরু হয়েছে ধরি, তাহলে আমাদের সংগ্রামে কখন আমরা নিজেদের ‘বাংলাদেশী’ ভেবেছি। আর একটি দেশের স্বাধীনতার অগ্রণী সেনানি, মুখ্য নেতৃত্ব যা ভাবেনি, সেরকম কিছু নিয়ে আমরা কেন হঠাৎ বিভাজন শুরু করলাম? আর আজো রাস্তাঘাটে হাজার কোটি সংলাপ সাক্ষী সেখানে সহজাতভাবে যে শব্দটি ব্যবহৃত হয় তা ‘বাঙালি’–‘বাংলাদেশী’ নয়। বাংলাদেশে ‘পাকিস্তান’ যেমন ইতিহাসের অংশ, হৃদয়ের নয়, বাংলাদেশে ‘জিয়া’ তেমনি ইতিহাসের অংশ, গণমানুষের নয়। আর বাংলাদেশের মুসলমানেরা ধর্মীয়ভাবে মুসলিম ছিল ‘মুসলিম লীগ’-এর দোর্দণ্ড প্রতাপের কালেও, কিন্তু বাংলাদেশের মুসলিমরা ‘রাজনৈতিক মুসলিম’ হয়েছে জিয়ার হাত ধরে : তাই আমাদের দাদা বাবাদের মধ্যে যে রাজনৈতিক ইসলামের প্রভাব আমরা দেখতে পাই না, তাই দেখতে পাই আমাদের প্রজন্মের মধ্যে, আমার যারা প্রজন্ম একাত্তর। ইমতিয়ার শামীম তার কিছুদিন আগের পোস্টের মন্তব্যে যাকে উল্লেখ করেছেন ‘৮০র দশকের শিবিরকে যারা দেখেনি’–হ্যাঁ এখান থেকেই বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইসলামের শুরু, এবং এখানেই ‘জিয়ার আদর্শ’ বিপদজনক, এবং এখানেই আমাদের দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠরা ‘অহিফেনবিষে’ আক্রান্ত। আমি ভূমিপুত্র, আমার প্রতিবেশী আদিবাসী : এইতো সংস্থান, এখানে ফিরতে হবে, এখানে না ফিরলে আমি কী করে হবো চর্যাপদের, হাজার বছরের।
মাসুদ করিম - ৫ অক্টোবর ২০১৪ (৫:৫০ অপরাহ্ণ)
মাসুদ করিম - ৩১ মে ২০১০ (১:৫১ পূর্বাহ্ণ)
প্রথম আলোর বিশেষ আয়োজনে সোহরাব হাসান লিখছেন
বিস্তারিত পড়ুন এখানে।
মাসুদ করিম - ৩১ মে ২০১০ (২:৩৪ পূর্বাহ্ণ)
শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ২৯তম শাহাদাত বার্ষিকীতে বিএনপির ক্রোড়পত্র ২০১০-এ এক সজারু ডক্টরের দেখা মিলল : তালুকদার মনিরুজ্জামান। তিনি শেখ মুজিবের উল্লেখ করতে গিয়ে লেখেন :
কী ভয়ংকর ডক্টর, কী তার ভাষা। জিয়াউর রহমান তার ভাষায় সুদক্ষ রাষ্ট্রনায়ক, একজন দার্শনিক সৈনিক। কী হাস্যকর, কী হাস্যকর।
শমসের মবিন চৌধুরী স্মৃতিচারণে বলছেন
১. জাতির উদ্দেশ্যে জিয়া ৩০ মার্চ ১৯৭১-এ ভাষণ দেন : এদিন তিনি নিজেকে ভারপ্রাপ্ত সরকার প্রধান হিসেবে ঘোষণা দিয়েছিলেন। সার্থক উচ্চাভিলাষ, এভাবে বলতে পারা লোকদেরই হয়।
২. শমসের মবিন চৌধুরী বন্দি থাকার সময় তার পাশের রুমে পাকিস্তানি সেনা অফিসাররা প্রায়ই জিয়াউর রহমানকে নিয়ে আলোচনা করত। তারা বলাবলি করত , জিয়াউর রহমানকে যদি আটকানো যায় তাহলেই বাঙালিদের মনোবল ভেঙ্গে যাবে অনেকটা। কী গুরুত্বপূর্ণ ও ভয়ংকর যোদ্ধা ছিলেন জিয়া, অথচ নিজেদের মুদ্রা দোষে কখনোই ওই লোকটাকে আমরা সম্মান করি না।
মাসুদ করিম - ১৪ জুন ২০১০ (২:৩২ অপরাহ্ণ)
অনিরুদ্ধ আহমেদ খুব সংক্ষেপে জিয়ার ইতিহাসের জায়গা নিয়ে লিখছেন
বিস্তারিত পড়ুন, ১৩ জুন ২০১০-এর সমকালের মুক্তমঞ্চে : বাস্তবের জিয়া, কিংবদন্তির জিয়া।
মাসুদ করিম - ১৩ ডিসেম্বর ২০১১ (৬:১৪ অপরাহ্ণ)
‘বাংলাদেশি’ এই পরিচয়ের উৎস নিয়ে যতীন সরকার বলছেন
বিস্তারিত পড়ুন আজকের কালের কণ্ঠে যতীন সরকারের কলাম : বাঙালিত্বের প্রতি ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি ও বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রাম।
মাসুদ করিম - ৫ জানুয়ারি ২০১২ (১:২২ অপরাহ্ণ)
জিয়ার ইতিহাসের জায়গা নিয়ে বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর লিখছেন
লিন্ক : প্রেতাত্মার হাত থেকে মুক্ত হওয়ার সময় এসেছে।
মাসুদ করিম - ১০ জানুয়ারি ২০১২ (৬:৪২ অপরাহ্ণ)
অলি জিয়াকে দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি তো বলবেই — জিয়াই তো বলেছিল
মাসুদ করিম - ২১ মে ২০১৩ (৫:৫৫ অপরাহ্ণ)
জিয়ার ইতিহাসের জাযগায় একটা বড় ঘটনা নিশ্চয়ই কর্নেল তাহের হত্যা। গতকাল হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায়ে তাহেরের গোপন বিচার অবৈধ ও বেআইনি ঘোষণাই শুধু করা হয়নি সেসাথে এই বিচারের নামে কর্নেল তাহেরেকে যে ঠাণ্ডা মাথায় খুন করা হয়েছে এবং জিয়াই যে ছিলেন সেই হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী তা স্পষ্ট করে বলা হয়েছে। এখন কথা হচ্ছে জিয়ার ইতিহাসের জায়গায় এরকম খুন তো আরো অনেক ছিল, এসব খুনগুলোর বিচার বিভাগীয় তদন্তের কাজও শুরু করা উচিত দ্রুততম সময়ে — জিয়ার ইতিহাসের জাযগা নিয়ে ধুম্রজাল যত কমবে তত বাংলাদেশের ইতিহাসের ধুম্রজালও কমবে। সেসাথে জিয়ার খুনের বিচারটাও যেন হয়, সেটাও খুবই দরকার বাংলাদেশ ও জিয়ার ইতিহাসের ধুম্রজাল কাটাতে ।
মাসুদ করিম - ৩০ জুলাই ২০১৩ (১২:৪৪ অপরাহ্ণ)
মাসুদ করিম - ৫ আগস্ট ২০১৩ (৯:৪১ পূর্বাহ্ণ)
এপ্রসঙ্গটি দেখি বেলাল মোহাম্মদের সাক্ষাৎকারে আসেনি। মিজানুর রহমান খানের একটি লেখায় অবশ্য এপ্রসঙ্গটি পাওয়া গেল
কেন গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা মেলে না মিজানুর রহমান খানের কাছে? কারণ
মাসুদ করিম - ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৩ (১১:১৮ অপরাহ্ণ)
মাসুদ করিম - ২৬ মার্চ ২০১৪ (১০:১৭ অপরাহ্ণ)
যেমন বাপ তেমন ছাওয়াল।
বাপ
ছাওয়াল
মাসুদ করিম - ২৭ মার্চ ২০১৪ (২:৩২ অপরাহ্ণ)
মাসুদ করিম - ২৭ মার্চ ২০১৪ (৮:৪০ অপরাহ্ণ)
খালি জিয়া জিয়া করলে হবে? প্যাকেজ পূর্ণ করুন — জিয়া প্রথম রাষ্ট্রপতি, খালেদা প্রথম প্রধানমন্ত্রী কাম মুক্তিযোদ্ধা, তারেক প্রথম গেরিলা, কোকো প্রথম যুদ্ধশিশু।
মাসুদ করিম - ৩১ মার্চ ২০১৪ (৫:৩৫ অপরাহ্ণ)
মাসুদ করিম - ১৫ এপ্রিল ২০১৪ (১১:৫৪ অপরাহ্ণ)
মাসুদ করিম - ১৩ এপ্রিল ২০১৫ (৩:১১ অপরাহ্ণ)
মাসুদ করিম - ২৭ আগস্ট ২০১৫ (১০:২৮ পূর্বাহ্ণ)
মোহাম্মদ মুনিমের ফেসবুক পাতা থেকে এই স্ট্যাটাস ও মন্তব্য পড়তে লিন্ক ক্লিক করুন।
মাসুদ করিম - ৭ নভেম্বর ২০১৫ (১০:২৩ পূর্বাহ্ণ)
মাসুদ করিম - ৮ নভেম্বর ২০১৫ (৬:৫৮ অপরাহ্ণ)
মাসুদ করিম - ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ (১১:৩৭ অপরাহ্ণ)
মাসুদ করিম - ১৯ এপ্রিল ২০১৭ (৭:৩৯ অপরাহ্ণ)
মাসুদ করিম - ১৬ আগস্ট ২০১৭ (৯:১৯ পূর্বাহ্ণ)
মাসুদ করিম - ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ (৪:৫৭ অপরাহ্ণ)
মাসুদ করিম - ২৯ এপ্রিল ২০১৯ (৪:৩৯ পূর্বাহ্ণ)
মাসুদ করিম - ২২ আগস্ট ২০১৯ (৪:১১ পূর্বাহ্ণ)
মাসুদ করিম - ২৫ আগস্ট ২০১৯ (৪:১৯ পূর্বাহ্ণ)
মাসুদ করিম - ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৯ (৪:২২ পূর্বাহ্ণ)
মাসুদ করিম - ৫ মার্চ ২০২৩ (৪:৫৬ অপরাহ্ণ)
কীসের বিনিময়ে কর্নেল অলির মিথ্যাচার?
https://bangla.bdnews24.com/opinion/h9nexzdnv6
মেজর রফিক, কর্নেল অলির লেখনির জবাবে সংসদে দাঁড়িয়েই দিয়েছেন, সমস্ত তথ্য উপাত্তসহ প্রমাণ করেছেন যে কর্নেল অলিই বেয়াদবি এবং মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছে।
২০১২ সালের এক সকালে ডেইলি স্টার পত্রিকা খুলেই এর প্রথম পৃষ্ঠার অর্ধেক জুড়ে ছবিসহ এক বিরক্তিকর খবর চোখে পড়েছিল, যাতে উল্লেখ ছিল কর্নেল অলি নামক এক মুক্তিযোদ্ধা কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে কয়েক একর জমি দখল করে সেখানে স্থাপনা গড়েছেন।
তখনই স্বপ্রণোদিত রুল জারি করায় কর্নেল অলি আমাদের আদেশক্রমে আমার নেতৃত্বের বেঞ্চে হাজির হন। তার মুখে কোনো লজ্জার ভাব ছিল না। মনে হচ্ছিল, মনে মনে ভাবছেন কত লোকই তো সরকারি ভূমি দখল করে, আমিও তাই করেছি, তাতে কী এমন হয়েছে? হয়তো এ-ও ভাবছিলেন এই বিচারপতি বেশি বাড়াবাড়ি করছেন। প্রথম আধাবেলা কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থেকে বিরতির পর কার্যক্রম শুরু হলে বুঝতে পারলাম তখন তিনি বেশ লজ্জাকাতর, সম্ভবত বহু লোকের উপস্থিতিতে আধাবেলা অভিযুক্তের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকার কারণে। প্রথমেই জিজ্ঞেস করেছিলাম ডেইলি স্টার পত্রিকায় প্রকাশিত ছবিসহ প্রতিবেদনটি সত্যি কিনা? জবাব না দিয়ে তিনি মাথা নিচু করে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর দ্বিতীয়বার বলেছিলাম জবাব না পেলে ধরে নেব সংবাদটি সত্য এবং ভূমি দখলের দায়ে তাকে জেলে পাঠানো হবে। এবার ভয়ার্ত মুখেই বলেছিলেন শিগগির তার স্থাপনা ভেঙ্গে জমি থেকে সরে যাবেন। তিনি মুক্তিযোদ্ধা কিনা, সে প্রশ্নের জবাবে সগর্বে বলেছিলেন ‘নিশ্চয়ই’। ভূমিদস্যু হিসাবে অভিযুক্ত হয়ে মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দিতে তার লজ্জা হচ্ছে কিনা, সে প্রশ্নের জবাব না দিয়ে বললেন তিনি এখনই স্থাপনা ভাঙ্গার নির্দেশ দেবেন। আমি বলেছিলাম তার এই সিদ্ধান্ত আমাকে একজন মুক্তিযোদ্ধাকে জেলে পাঠানোর দায় থেকে রক্ষা করল। পরবর্তীতে কক্সবাজারের ডেপুটি কমিশনার এবং পুলিশ সুপার আমাদের জানিয়েছিলেন কর্নেল অলি তার বেআইনি দখল এবং স্থাপনা গুড়িয়ে ফেলেছেন। ডিসি এবং পুলিশ সুপারকে ভর্ৎসনা করেছিলাম এই বলে যে তারা কেন আগে ব্যবস্থা নেননি? তারা বলেছিলেন আদালতের আদেশ না পেলে কর্নেল অলির স্থাপনা ভাঙ্গা কঠিন হতো। তারা যা বলতে চেয়েছিলেন, কিন্তু মুখ খুলে বলেননি, তা হলো কর্নেল অলি অত্যন্ত প্রভাবশালী লোক, যার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া তাদের জন্য সহজ ছিল না।
সম্প্রতি বীরউত্তম খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর রফিক পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে বলেছেন যে ১৯৭১-এ চট্টগ্রামে কর্মরত তৎকালীন মেজর জিয়া ২৫ মার্চ তারিখের রাত ১১.৪৫ মিনিটে যখন ‘সোয়াত’ নামক জাহাজ থেকে পাকিস্তানি সমরাস্ত্র খালাসের জন্য পাকিস্তানি সামরিক জিপে করে এগুচ্ছিলেন, তখন মেজর রফিক তাকে সে পথ থেকে বিরত থাকতে বললে জিয়া মেজর রফিককে ভয় দেখিয়ে বলেছিলেন তিনি (জিয়া) অবশ্যই পাকিস্তানি অস্ত্র খালাস করবেন কেননা তার ওপর কর্নেল জানজোয়ার নির্দেশ রয়েছে। এর পর জিয়া সোয়াত জাহাজের দিকে ছুটে গিয়েছিলেন, যদিও তার ইচ্ছা পূরণ হয়নি, কারণ পথিমধ্যে বাঙালি সৈন্যরা জিয়ার পথ রুদ্ধ করেছিলেন।
মেজর রফিক ১৯৭২ সালেই ‘পিপলস ভিউ’ নামক একটি সাময়িকীতে এই কথাগুলো লিপিবদ্ধ করেছিলেন। পরবর্তীতে ১৯৭৪ সালে তিনি বই আকারে সেগুলো লিখেন। ১৯৮১ সালে মেজর রফিকের বইয়ের দ্বিতীয় সংস্করণেও একই কথা লিপিবদ্ধ করা হয়।
১৯৮১ সালে জেনারেল এরশাদ জিয়াকে স্বাধীনতার ঘোষক বলে আইন প্রণয়ন করতে চাইলে মেজর রফিকের পুস্তকের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছিল যে ব্যক্তি ২৫ মার্চ রাত্রিতে পাকিস্তানি সমরাস্ত্র উদ্ধারে যাচ্ছিল, তাকে কী করে স্বাধীনতার ঘোষক বলা যায়? জিয়ার সাফাই গেয়ে মেজর রফিককে মিথ্যাচারী হিসাবে আখ্যায়িত করেছিলেন, কুখ্যাত রাজাকার শাহ আজিজ এবং কর্নেল আকবর, জিয়া যাদের প্রধানমন্ত্রী এবং মন্ত্রী পদে বসিয়ে মুক্তিযুদ্ধকে অবমাননা করেছিলেন।
এরপর মুক্তিযুদ্ধকালের সেনাপ্রধান কর্নেল ওসমানী বলেছিলেন শাহ আজিজ এবং আকবর মিথ্যা বলছে, মেজর রফিক যা বলেছেন সেটাই সত্য। সংসদে মেজর রফিকের ভাষণ কর্নেল অলির গাত্রদাহের কারণ ঘটিয়েছিল বলে তিনি মেজর রফিককে মিথ্যাবাদী আখ্যায়িত করেছেন। মেজর রফিক, কর্নেল অলির লেখনির জবাবে সংসদে দাঁড়িয়েই দিয়েছেন, সমস্ত তথ্য উপাত্তসহ প্রমাণ করেছেন যে কর্নেল অলিই বেয়াদবি এবং মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছে। বঙ্গবন্ধু কর্তৃক স্বাধীনতা ঘোষণার পরেও যে জিয়া সোয়াত জাহাজ থেকে, পাকিস্তানি সমরাস্ত্র খালাসের জন্য এগুচ্ছিলেন এবং বাঙালি সৈন্যদের বাধার মুখেই সে যাত্রা পরিহার করেছিলেন, সে কথা কে না জানেন?
কুখ্যাত রাজাকারদ্বয় শাহ আজিজ এবং কর্নেল আকবরের বক্তব্যে অবাক হওয়ার কারণ নেই কেননা এদের মুক্তিযুদ্ধবিরোধী ভূমিকার কথা সকলেই জানেন। ‘চোরের সাক্ষী মাতাল’ই হয়ে থাকে।
১৯৮৮ সালে আমি যখন যুক্তরাজ্য ইমিগ্রেশন অ্যাডভাইজারি সার্ভিসের আইন বিষয়ক উপ-পরিচালক তখন একদিন প্রয়াত গাফফার চৌধুরী সাহেব জেনারেল মীর শওকত আলিকে নিয়ে আমার দফতরে এসেছিলেন, আমি যাতে জেনারেল শওকতকে পরিবারসহ বিলেতে থাকার অনুমতির ব্যবস্থা করি। যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শওকত সাহেবের শংকা ছিল দেশে গেলে জেনারেল এরশাদ তাকে জেলে ঢুকাবেন। সেদিন জেনারেল শওকত রাখঢাক না রেখেই বলেছিলেন জিয়াউর রহমান কখনো মন থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা চাননি, বাঙালি সৈন্যদের ভয়ে তিনি ওপার যেতে বাধ্য হয়েছিলেন। আলাপকালে গাফফার চৌধুরী সাহেব ছাড়াও আমাদের সংস্থার তখনকার পরিচালক মাইকেল বার্নস (প্রাক্তন এমপি) সাহেবও ছিলেন।
জিয়াউর রহমান যে সোয়াত জাহাজ থেকে পাকিস্তানি অস্ত্র খালাসের জন্য যাত্রা করেছিলেন, সে ব্যাপারে বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা কাদের সিদ্দিকী, বীর উত্তম, তার ‘স্বাধীনতা ৭১’ নামক পুস্তকের ৪৩৪-৪৩৮ পৃষ্ঠায় যা লিপিবদ্ধ করেছেন, নিম্নে তা হুবহু ছাপানো হলো। বইটি কাদের সিদ্দিকী যিনি বাঘা সিদ্দিকী নামেই বেশি পরিচিত ছিলেন, কোলকাতায় বসে ১৯৮৫ সালের জানুয়ারি মাসে প্রথম প্রকাশ করেছিলেন। দেজ পাবলিশিং হাউজ, ১৩ বঙ্কিম চ্যাটার্জি স্ট্রিট, কোলকাতা-৭০০০০৬, এর পক্ষে প্রকাশক ছিলেন সুধাংশু শেখর দে। বর্তমানে দুষ্প্রাপ্য এই বইটি আমি অবশেষে একুশে পদকপ্রাপ্ত জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক স্বদেশ রায়ের নিকট থেকে সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছি।
“শোনা যায়, ১৯৬৫ সালের পর চট্টগ্রামে মিজো বিদ্রোহীদের প্রশিক্ষণের জন্য চীনের সহায়তায় আইউব খান যে ‘মিজো গেরিলা সাহায্য ক্যাম্প’ খুলেছিলেন তাতে প্রায় এক বৎসর ক্যাপ্টেন জিয়াউর রহমান ‘প্রশিক্ষক’ হিসাবে কর্মরত ছিলেন। ৬৫ সাল থেকে ৭০-এর জানুয়ারি, এ সুদীর্ঘ সময় তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা বিভাগের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন।
৭০ সালের গোড়ার দিকে, চট্টগ্রামের বেঙ্গল রেজিমেন্ট ট্রেনিং সেন্টারে ৮ নম্বর বেঙ্গল রেজিমেন্টের গোড়াপত্তন হয়। প্রায় পাঁচ বছর পর ৮ম বেঙ্গল রেজিমেন্টের (ব্যাটেলিয়ন) সহঅধিনায়ক হিসাবে আবার মেজর জিয়াউর রহমানকে বদলি করা হয়। তিনি সত্যিকার অর্থেই ৮ম বেঙ্গল রেজিমেন্টের গঠন ও শ্রীবৃদ্ধির জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করেছিলেন।
১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ পর্যন্ত এই ৮ম বেঙ্গল রেজিমেন্ট অসম্পূর্ণ ছিল। পাঁচটি কোম্পানি নিয়ে একটি পদাতিক বাহিনী গঠিত হয়। ৭১ সালের ২৫শে মার্চ পর্যন্ত নবগঠিত ৮ম বেঙ্গল রেজিমেন্টে সাড়ে তিনটি কোম্পানি ছিল। ৭০-এর ডিসেম্বরে সাধারণ নির্বাচনের পর, পাকিস্তানের ইতিহাসে যখন এক চরম রাজনৈতিক উত্থান পতনের সূচনা হলো, তখন পর্যন্ত জিয়াউর রহমান তার রেজিমেন্ট গঠনের কাজে পুরোপুরিভাবে আত্মনিয়োগ করেছিলেন। ৭১-এর মার্চের ১৫-১৬ তারিখে জিয়াউর রহমানের ব্যাটেলিয়ানের দুটি কোম্পানি চট্টগ্রাম জেটি ও আরেকটি কোম্পানিকে কালুরঘাট সেতু পাহারার দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। এই সময় কাজের সুবিধার জন্য জিয়াউর রহমান কালুরঘাটের কাছে বিএন কোয়ার্টার ও কন্ট্রোল রুম বসান।
২৪শে মার্চ পর্যন্ত জিয়াউর রহমান নিরুত্তাপেই কাটান। কিন্তু ২৫শে মার্চের মধ্য রাতে ব্যাটেলিয়নের বেশ কয়েকজন সদস্য জিয়াউর রহমানের কাছে নানা ধরনের কঠিন ও ভীতিপ্রদ খবর পৌঁছে দিতে থাকেন। ঐ সময়কার চরম রাজনৈতিক উত্তেজনা ও সামরিক বিভাগের আভ্যন্তরীণ সন্দেহ, অবিশ্বাস, অসদ্ব্যবহার ও আক্রমণের প্রেক্ষিতে তাদের করণীয় কি, তা জানতে জিয়াকে বারবার অনুরোধ করতে থাকেন। ২৫শে মার্চের রাত প্রচণ্ড উত্তেজনা ও উদ্বেগের মধ্যে কাটলো। ২৬শে মার্চ সকালে ব্রিগেড হেডকোয়ার্টার থেকে জিয়াকে ডেকে পাঠানো হলো। নানা কিছু ভেবে জিয়া ব্রিগেড হেড কোয়ার্টারে যাওয়া স্থির করেন। কিন্তু তার কিছু সহকর্মী তাকে ব্রিগেড হেডকোয়ার্টারে যেতে পুনঃ পুনঃ নিষেধ করেছিলেন।
এত অনুরোধ ও নিষেধ উপেক্ষা করেও তিনি একখানা জীপে ইবিআরসি ক্যান্টনমেন্টের দিকে এগিয়ে যেতে থাকেন। তার বেরিয়ে যাওয়ার সময় ৮ম রেজিমেন্টের কোয়ার্টার মাস্টার ক্যাপ্টেন অলি আহমেদ শিবিরে ছিলেন না। তিনি শিবিরে এসেই কমান্ডার কোথায় জানতে চান। কমান্ডার ইবিআরসি হেডকোয়ার্টারের দিকে গেছেন বলে সৈনিকরা তাকে জানালে, ক্যাপ্টেন অলি উন্মাদের মতো একটা মিলিটারি মোটর সাইকেলে ঊর্ধ্বশ্বাসে ক্যান্টনমেন্টের দিকে ছোটেন। টাইগার পাসের কাছে তিনি জিয়ার জীপের গতিরোধ করে দাঁড়ান। জিয়ার গাড়ির সামনে অলি তার মোটর সাইকেলটি ফেলে দিয়ে চালকের আসনে বসা জিয়াকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘স্যার, আপনি কোথায় যাচ্ছেন?’ জিয়া স্বাভাবিকভাবেই বললেন, ‘ক্যান্টনমেন্টে যাচ্ছি। ব্রিগেডিয়ার ডেকে পাঠিয়েছেন।’ অলি চিৎকার করে উঠেন, ‘আপনি এখনও ক্যান্টনমেন্টে যাচ্ছেন? গেলেই আপনাকে গুলি করবে। আপনি জানেন কি, গতকাল চারশ’ বাঙালি রিক্রুটকে গুলি করে হত্যা করেছে? কুমিল্লা বেঙ্গল রেজিমেন্ট লাইন জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। কুর্মীটোলা ও জয়দেবপুর বেঙ্গল রেজিমেন্টের লাইনের উপর ট্যাংক থেকে গোলাবর্ষণ করা হয়েছে। এই সমস্ত জানার পরও কোন সাহসে আপনি ক্যান্টনমেন্টে যাচ্ছেন?’
‘কি করবো? ক্যান্টনমেন্টে না গেলে যে কোর্ট মার্শাল হবে।’ এবার ক্যাপ্টেন অলি আহমেদ আরও উত্তেজিত হয়ে বললেন, ‘আপনি পাগল হয়ে গেছেন নাকি? কিসের কোর্ট মার্শাল? গুলি, গুলি করে মারবে ওরা। আপনি কিছুতেই ক্যান্টনমেন্টে যেতে পারবেন না,’ বলেই ক্যাপ্টেন অলি তার রিভলভার উঁচিয়ে বলেন, ‘আপনাকে এখনও কমান্ডার হিসাবে মানি। কিন্তু আপনি যদি ক্যান্টনমেন্টে যেতে চান তাহলে আমিই আপনাকে গুলি করবো। পশ্চিমাদের হাতে গুলি খেয়ে মরার চেয়ে বাঙালির হাতে গুলি খেয়ে মরে অনেক শান্তি পাবেন।’ অতিশয় আতঙ্কিত ও উত্তেজিত ক্যাপ্টেন অলি এই কথা বলেই জীপের সামনের সীটে বসে পড়েন। এবার অনুরোধ নয়। আদেশের সুরে বললেন, ‘গাড়ি ঘুরান।’ মেজর জিয়া ক্যাপ্টেন অলি আহমেদের কথামতো গাড়ি ঘুড়িয়ে নেন। তারপর তারা শহরের মধ্যে এসে কালুরঘাট ও চট্টগ্রামের রাস্তার এক পাশে একটি গাছের নিচে বসে পরবর্তী পরিকল্পনা সম্পর্কে ভাবতে শুরু করেন। এই সময় সেখানে আরো দু’জন ক্যাপ্টেন ও একজন লেফটেন্যান্ট এসে উপস্থিত হন। বেশ কয়েকজন বাঙালি সামরিক অফিসারদের দেখে খবরের কাগজের জনৈক হকার চট্টগ্রাম সংগ্রাম পরিষদ অফিসে ছুটে গিয়ে খবর দেয়। খবর পেয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও গণপরিষদ সদস্য আবদুল হান্নান, ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি মোহাম্মদ শাহজাহান ও আরো কয়েকজন এসে প্রচুর সমাদর করে তাদের সংগ্রাম পরিষদ অফিসে নিয়ে যান।
বাঙালি সামরিক অফিসাররা তখন সংগ্রামী বাঙালিদের কাছে মহামূল্যবান। চট্টগ্রাম বেতর কেন্দ্র তখন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সংগ্রাম পরিষদের নিয়ন্ত্রণে। ইতিমধ্যেই ‘স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র’ নামে চট্টগ্রাম রেডিও স্টেশন থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণা বারবার প্রচার করা হচ্ছিল। জহুর আহমেদ চৌধুরী, এম আর সিদ্দিকী, আবদুল হান্নান, এম এ মান্নান ও অন্যান্য বেশ কয়েকজন নেতা স্বাধীনতার পক্ষে হানাদারদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে দেশবাসীকে অনুরোধ জানিয়েছেন। সেই সময় প্রভাবশালী কোন লোক পাওয়া গেলেই তাকে দিয়ে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান প্রচার করা হচ্ছিল। দু’তিনজন আনসার অ্যাডজুট্যান্ট, পুলিশের সাবেক ডিআইজি এ ধরনের কিছু লোকের আবেদনও প্রচার করা হয়েছে। এর ঠিক পরেই বেঙ্গল রেজিমেন্টের অফিসারদের পেয়ে সংগ্রাম পরিষদ নেতৃবৃন্দ যেন হাতে স্বর্গ পেয়ে যান। হান্নান সাহেব সামরিক অফিসারদের অনুরোধ করেন। ‘আপনাদের নেতা বেঙ্গল রেজিমেন্টকে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়ে একটা আবেদন প্রচার করুন।’ তখন একজন সামরিক অফিসারের আবেদন দেশবাসীর জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা বারবার সামরিক অফিসারদের বুঝিয়ে বলা হচ্ছিল। এত বুঝিয়ে বলা ও অনুরোধ করা সত্ত্বেও পাকিস্তান নামক রাষ্ট্র ও পাক-সামরিক বাহিনীর প্রতি তখন পর্যন্ত অকুণ্ঠ সমর্থক মেজর জিয়াউর রহমানের মধ্যে কোন ভাবান্তর ঘটলো না। বাঙালি সামরিক অফিসারদের মধ্যে সিনিয়র হওয়া সত্ত্বেও তিনি কোন বিবৃতি বা আবেদন প্রচারে ঘোর আপত্তি জানান। এখানেও ক্যাপ্টেন অলি আহমেদ এগিয়ে আসেন। তিনি জিয়াকে জোরের সাথে বলেন, ‘আপনি বাঙালি সৈনিকদের যুদ্ধে অংশ নেয়ার আবেদন না জানালে আমাদের মধ্যে যিনি সিনিয়র, তিনিই আবেদন রাখবেন। তবে আপনার আবেদন না জানানোর কোন কারণ খুঁজে পাই না। আমরা তো আর ক্যান্টনমেন্টে ফিরে যেতে পারছি না। আমাদের সামনে এখন দুটি পথ খোলা, হয় জয়, নয় মৃত্যু। এর মাঝামাঝি কি কোন পথ আছে? জিয়া এবারও অলি আহমেদ ও অন্য দু-তিন জন সহকর্মীর চাপাচাপিতে বিবৃতি প্রচারে রাজী হলেন। সাথে সাথে তার বক্তৃতা রেকর্ড করার জন্য একটি টেপ রেকর্ডার আনা হলো। এখানে তিনি প্রথম নিজেকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঘোষণা করে বক্তব্য রাখেন। তার ঘোষণার শুরুটা ছিল এই রকম, ‘আমি মেজর জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট হিসাবে স্বাধীনতা ঘোষণা করছি এবং যুদ্ধে অংশগ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছি।’ রেকর্ড করার সময় প্রবল উত্তেজনায় কেউ খেয়াল করেন নি জিয়া সাহেব কি বলছেন। রেডিও সেন্টারে যখন সম্প্রচার করা শুরু হলো, তখন ত্রুটিটা ধরা পড়লো। সঙ্গে সঙ্গে সম্প্রচার বন্ধ করা হলো। এ কি বলছেন? কে বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট? কে স্বাধীনতার ঘোষক? টেপ রেকর্ডার নিয়ে বেতারের লোক আবার সংগ্রাম পরিষদ অফিসে ছুটে এলো। সংগ্রাম পরিষদের নেতারাও রেডিওতে জিয়ার বক্তৃতার প্রথম লাইনটি শুনে ‘থ’ বনে যান। সাথে সাথে রেডিও স্টেশনে ফোন করা হয়, কি ব্যাপার, এটা বন্ধ কর। রেডিও স্টেশন থেকে উত্তর এলো ‘আমরা আগেই বন্ধ করে দিয়েছি। টেপ নিয়ে আপনাদের কাছে আমাদের লোক চলে গেছে।’ এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে জিয়া সাহেব বলেন, ‘আমি ব্যাপারটা ঠিক বুঝে উঠতে পারিনি, আপনারা একটা খসড়া করে দিন।’
এবার সংগ্রাম পরিষদের নেতারা চিন্তাভাবনা করে পাঁচ/ছ লাইনের একটি খসড়া বক্তৃতা লিখে দিলেন। জিয়া বললেন, ‘আমি বেঙ্গল রেজিমেন্টের মেজর জিয়াউর রহমান বাঙালি সৈনিক ও দেশবাসীর উদ্দেশ্যে আহ্বান জানাচ্ছি। আপনারা পাক হানাদারদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। সংগ্রাম পরিষদের নেতৃত্বে বাঙালি সৈনিক যারাই আছেন, তারা অস্ত্র ধারণ করুন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান সুস্থ আছেন। তিনি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সব নির্দেশ দিয়ে চলছেন। বিশ্ববাসীর কাছে আমি আবেদন জানাচ্ছি, আপনারা আমাদের সাহায্য করুন। আল্লাহ আমাদের সহায়। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।’
বেতারে মেজর জিয়াউর রহমানের বক্তৃতা প্রচারের পর অন্যান্য অফিসারদের নিয়ে তিনি সোজা কালুরঘাট চলে যান। সেখান থেকে কোম্পানির লোকজন নিয়ে আবার চট্টগ্রামে ফিরে এসে চট্টগ্রাম-ঢাকা সড়ক ধরে এগুতে থাকেন। ঐ সময় চট্টগ্রাম জেটিতে অবস্থানরত তার দু কোম্পানি বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈন্যদেরও উইথড্র করে সাথে নিয়ে নেন। ঢাকার দিকে এগুতে দেখে সেই সময় হয়তো চট্টগ্রামের অনেকে ভেবেছিলেন, জিয়ার নেতৃত্বে সৈন্যরা ঢাকা থেকে এগিয়ে আসা পাক বাহিনীকে বাধা দিতে এগিয়ে যাচ্ছে। আদতে কিন্তু তা হয়নি। তারা চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার দিকে কিছুদূর এগিয়ে শুভপুর ব্রিজের কাছ দিয়ে ত্রিপুরা সীমান্তের শ্রীনগর বিওপি হয়ে ভারতে প্রবেশ করে। ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়কের উপর বিখ্যাত শুভপুর ব্রিজ ভারতীয় সীমান্ত থেকে বড় জোড় তিনশ গজ। চট্টগ্রাম-ঢাকা রাস্তা এইখানেই ভারতীয় সীমান্তর সবচেয়ে কাছ দিয়ে গেছে। অফিসার ও অন্যান্য সাজ-সরঞ্জামসহ মেজর জিয়া ভারতের ভিতরে অবস্থান নেন। শুধু সাধারণ সৈনিকরা ব্রিজটি আগলে বসে থাকে। ত্রিপুরা সীমান্তের শ্রীনগর বিএসএফ অবজারভেশান পোস্ট এরিয়াতে মেজর জিয়া তার সেনাদের নিয়ে প্রায় সপ্তাহ দুই ছিলেন। এই শুভপুর ব্রিজে মেজর জিয়ার দলের সাথে হানাদারদের বেশ কয়েক বার সংঘর্ষ হয়। প্রথম দিকে দু’একবার মেজর জিয়ার দলই জয়ী হয়। কিন্তু পরবর্তী পর্যায়ে রাস্তা মুক্ত করতে হানাদাররা যখন ট্যাংক ও ভারী অস্ত্র নিয়ে হামলা করে তখন জিয়ার নেতৃত্বাধীন সৈন্যরা ভারত সীমান্ত অতিক্রম করতে বাধ্য হন।
২৫শে মার্চের পর এই শুভপুর ব্রিজ ছাড়া মেজর জিয়াকে আর কোথাও প্রতিরোধ কিংবা সংঘর্ষের সম্মুখীন হতে হয়নি। এইখান থেকে জিয়ার দলকে মেঘালয়ের তেলঢালা ক্যাম্পে নিয়ে আসা হয়। তেলঢালাতে তারা অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত ছিলেন। ১৯৭১ সালের এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত তেলঢালা ক্যাম্পে জিয়াউর রহমান তার নেতৃত্বে প্রায় চার হাজার সৈন্যের একটি দল গঠন করেন। যার নাম তার নামানুসারে ‘জেড’ ফোর্স রাখেন।
অক্টোবর মাসে তেলঢালা ক্যাম্প থেকে প্রায় তিন শ’ মাইল পূর্বে সিলেটের ডাউকি সীমান্তে আবার তারা ঘাঁটি গাড়েন। এখান থেকেই পরিকল্পনা তৈরি করা হয় যে, জিয়ার নেতৃত্বাধীন দলটি শেষ যুদ্ধের সময় ওখান দিয়েই বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঢুকবে। এবং তারা সিলেট জেলা দখল নেবেন।”
বইয়ের ৪৩৮ পৃষ্ঠায় বাঘা সিদ্দিকী বীর উত্তম যা লিখেছেন, তা নিম্নরূপ;
“মেজর জিয়া ২৮-২৯শে মার্চ চার-পাঁচশ সৈনিক নিয়ে ভারতের শ্রীনগর বিওপিতে পৌঁছে ছিলেন। নয় মাস পর ১৯৭১ সালের ১৮ই ডিসেম্বর চার-সাড়ে চার হাজার সৈন্যসহ স্বাধীন বাংলার সিলেটে অবস্থান নেন। এর মাঝেও দুচারটি ঘটনা নিশ্চয়ই রয়েছে। এটা প্রমাণিত সত্য যে, তিনি ২৫ শে মার্চ রাত পর্যন্ত পাক সেনাবাহিনীর একজন অনুগত অফিসার ছিলেন। যার পুরস্কার হিসাবে তিনি বিদেশে নানা স্থানে পাক সেনাবাহিনীর ‘গোপনীয় ব্যাপার সংক্রান্ত’ বিষয়ে প্রতিনিধিত্ব করতে পেরেছিলেন। আরও একটি ঘটনা উল্লেখ না করলেই নয়। মেজর জিয়া যখন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে প্রচার ও যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন তার দু’সন্তান ও স্ত্রী ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে ছিলেন। বেঙ্গল রেজিমেন্টের অসংখ্য অফিসার ও জোয়ানদের স্ত্রী-পুত্র-পরিজনদের উপর হানাদাররা অকথ্য অত্যাচার চালিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করলেও জিয়ার স্ত্রী ও দু’সন্তান কুর্মীটোলা ক্যান্টনমেন্টে অত্যন্ত সম্মানজনক অবস্থায় ছিলেন।”
একটি কৌতুহলী বিষয় হলো এই যে, জিয়াউর রহমানকে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের হিরো হিসাবে চিহ্নিত করতে ধিকৃত রাজাকার শাহ আজিজ এবং কর্নেল আকবরসহ তারাই অতি আগ্রহী ছিল যারা মুক্তিযুদ্ধ তথা পাকিস্তান ভেঙ্গে ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশ সৃষ্টির বিরুদ্ধে ছিল। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তারা সব পালিয়েছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধু হত্যার পর জিয়াউর রহমানকে ত্রাণকর্তা হিসাবে পেয়ে তার ছত্রছায়ায় এক হয়েছিল দেশকে আবার পাকিস্তানে রূপান্তরিত করতে।
যারা জিয়াকে হিরো বানাতে চায় তারা কি বলতে পারবে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে ক্ষমতা দখল করার সাথে সাথেই কেন জিয়া মুক্তিযুদ্ধের স্লোগান জয় বাংলাকে দেশান্তরিত করেছিল, কুখ্যাত রাজাকার শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রীর পদ দিয়েছিল, কেন কর্নেল মোস্তাফিজ, সোলেমান, কর্নেল আকবর, বিচারপতি সাত্তার, জাদু মিঞা, রহমান বিশ্বাসসহ একঝাক পরিচিত রাজাকার দিয়ে তার অবৈধ মন্ত্রীসভা গঠন করেছিল, কেন জিয়া সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের নাম এবং বৈশিষ্ট্য পাল্টে দিয়েছিল, কেন বাংলাদেশ বেতার, বিমান প্রভৃতি বাংলা শব্দের পরিবর্তে অ-বাংলা শব্দ বসিয়ে ছিল?
যে ব্যক্তি রাষ্ট্রের জমি দখল করতে পারে, সে মিথ্যাচারী হবে, এটা তো অস্বাভাবিক নয়। ১৯৭১-এ তার ভূমিকা যাই ছিল না কেন, লোভের তাড়নায় সে সবই করতে পারে, তা তার ভূমি দখল কাণ্ডই প্রমাণ করেছে। প্রশ্ন হলো, জিয়ার পক্ষে মিথ্যাচার চালানোর জন্য সে কী পেয়েছিল জিয়া বা তার অনুসারীদের কাছ থেকে?
মুক্তিযুদ্ধ গবেষক অধ্যাপক মুনতাসির মামুন বলে থাকেন মুক্তিযোদ্ধারা রাজাকার হয়েছে, কিন্তু রাজাকার মুক্তিযোদ্ধা হয়নি। কর্নেল অলির ’৭৫ পরবর্তী অবস্থান তারই এক বড় প্রমাণ। তাছাড়া সমস্ত পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনায় এটা পরিস্কার যে কর্নেল অলি আদর্শগত কারণে মুক্তিযুদ্ধে যায়নি, গিয়েছিল পাকিস্তানি সৈন্যদের হাতে মৃত্যুবরণ এড়াতে।
মাসুদ করিম - ৩১ মে ২০২৩ (৪:১১ পূর্বাহ্ণ)
A General, A Referendum . . . and the Dismantling of A State
https://theconfluence.blog/a-general-a-referendum-and-the-dismantling-of-a-state/
by Syed Badrul Ahsan
Ziaur Rahman, Bir Uttam was appointed as army chief of staff, after K M Shafiullah resigned on 15th August, 1975 when Bangabandhu was killed by some military officers. Later he became Chief Martial Law Administrator on 6 November 1975.
On 30 May 1977, political illegitimacy dug deeper roots in Bangladesh. Less than two years after the assassination of Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman and his family and the murder of the Mujibnagar leaders in prison, General Ziaur Rahman was on his way to tightening his grip on power.
On the day, a so-called referendum Zia had earlier called in order to gain public approval of his seizure of the presidency a month earlier resulted in an improbable outcome. But, again, it was no surprise that Zia and his acolytes claimed that Bangladesh’s first military ruler had obtained 98.8 percent of support from the electorate.
And it was no surprise because the general was simply following in the footsteps of earlier dictators in other countries. Dictators then and later have always had a way of reassuring themselves, through applications of the machinery of disinformation, machinery operated by their sycophants, that they enjoy huge public support.
As the regime was to claim, Zia obtained the support of 33,400, 870 voters. In other words, to the question, ‘Do you have confidence in President Major General Ziaur Rahman BU and the policies and programmes adopted by him?’, all this large segment of the electorate said yes. And the ‘no’ box garnered no more than 378,898 votes, or a mere 1.1 per cent of the vote.
A Field Day Manufacturing Public Support
The surprising bit in the story is that the results of the referendum were placed in the public domain against a background of voting centres remaining predictably empty. No enthusiasm was observed in the country about the vote. Besides, with little opportunity for supporters of the No vote to campaign against the measure, the regime had a field day manufacturing public support for itself.
On 30 May 1977, therefore, Bangladesh was pushed into an area of darkness that was to leave the nation reeling from the wounds inflicted on it by a regime which had already demonstrated a sinister determination to undermine the ethos of the country.
General Zia, having turfed out Justice Abu Sadat Mohammad Sayem from the presidency on 21 April – thereby taking a leaf out of the book of Pakistan’s General Ayub Khan, who had removed President Iskandar Mirza at gunpoint in October 1958 before claiming the presidency for himself – needed to acquire some sort of legitimacy for his seizure of power.
The referendum was his way of informing himself that his hold on power had attained a formal structure. But, then again, Zia had exercised power as deputy martial law administrator since 7 November 1975 when his loyalists in the army manoeuvred his rise to the top through the murder of General Khaled Musharraf and two other military officers.
The Power Structure Shaping Up
In the power structure shaping up, though President Sayem was nominally the head of state and chief martial law administrator and the chiefs of the air force and navy served as deputy martial law administrators along with Zia, it was Zia who became the public face of a regime that would soon go into the task of dismantling Bangladesh as it had come about in December 1971.
Observe the steps to regression, indeed to the decline of the secular Bengali state. On Zia’s watch, the Collaborators Order of 1972 was repealed in December 1975. In February 1976, the right-wing journalist Khondokar Abdul Hamid, who was to play a prominent role in the Zia regime, for the first time publicly spelt out the regime’s intention to impose ‘Bangladeshi nationalism’ on the country in direct contravention of Bengali nationalism. Hamid floated the idea at the Ekushey February programme organised by the Bangla Academy.
The country was on a slide, with the values associated with the War of Liberation coming under increasing assault by the dictatorship. The principles of socialism and secularism, two of the four fundamental pillars of the state, were prised out of the constitution by dictatorial fiat.
In early 1976, in a clear blow to the secular underpinnings of the state, a seerat conference, presided over by air force chief M.G. Tawab, who had been parachuted in from retirement in Germany days after the 15 August coup, opened at Suhrawardy Udyan. Every indication of the country being pushed into a direction at variance with its ideology was there.
It is against such a background of political regression resting on illegitimacy that the 30 May 1977 referendum needs to be analysed. Following on the murder and mayhem of November 1975, the referendum was but Zia’s second move to consolidate his hold on the state. Along the way he had had Colonel Abu Taher, who had engineered his rise to power through liquidating Khaled Musharraf, court-martialled and put to death in July 1976.
An Era of Unbridled Authoritarianism
And all the while his regime had busied itself in the odious job of pushing Bangladesh’s history under the rug and through that process airbrushing Bangabandhu, the Mujibnagar administration, indeed the principles associated with the War of Liberation out of the picture.
The 30 May referendum was a carefully crafted measure to strengthen Zia’s hold on politics. Nothing of even the remotely democratic characterised the move. The hope that under President Sayem, who had been installed in office by General Khaled Musharraf a mere day before darkness descended on the nation on 7 November 1975, the country could slowly but surely make its way back to democracy was belied.
In effect, the yes-no vote and a conscious pushing aside of genuine public perceptions about the regime were the very first step toward the imposition of an era of unbridled authoritarianism in the country. Worse, General Zia would preside over, after May 1977, a process of rehabilitation of the political collaborators of the 1971 Pakistan occupation army and have them make their cheerful way into the political landscape of a country they had virulently and violently opposed in 1971.
If in 1971 the people of Bangladesh were engaged in a life and death struggle against the Pakistan occupation army, in the Zia years it was a ceaseless struggle for them to prevent the regime from undermining the state through its dictatorial measures. Zia would, after May 1977, seek newer means of strengthening his grip on the country.
Ziaur Rahman’s Presidential Election in June 1978
And that process would be a presidential election in June 1978, when the state machinery would assist Zia and the junta in helping to defeat General M.A.G. Osmany, the opposition candidate, at the ballot box. And then would come the formation of the Bangladesh Nationalist Party, based on a brand of politics that was a wholesale repudiation of the spirit of 1971.
Zia’s objectives were revealed page by page as time went by. He had parliament, elected in February 1979 and in which his BNP held the majority, rubber stamp the notorious Indemnity Ordinance, aimed at giving immunity from prosecution to the assassins of the Father of the Nation and so have the rule of law subverted, into the fifth amendment to the constitution.
Nowhere in the world had a law been enacted and made part of the constitution to provide protection to assassins, but here was the Zia regime doing precisely that. Worse, a good number of Bangabandhu’s assassins were sent off abroad to serve as diplomats at various Bangladesh missions abroad.
In the Zia years, Bangladesh made its way back to Pakistan-era politics minus the Pakistan state. Through a systematic process of historical distortion, through paving the way for the country to pass under long-term and dictatorial rule by the military, General Zia ensured a retreat of democratic forces.
Additionally, his regime carefully prepared the ground for a sidelining of freedom fighter officers in the armed forces and the rise of officers repatriated from Pakistan after the war. Again, in a style reminiscent of the Ayub Khan era in Pakistan, the Zia regime sponsored the emergence of a civil-military bureaucratic structure in state administration, to the detriment of national politics.
Making Politics Difficult for the Politicians
Bangladesh, as history has demonstrated all too well, existed in shaky form in the Zia years. General Zia once arrogantly exclaimed that he would make politics difficult for politicians. He did something more grievous: he struck down the ideals associated with democratic politics.
Promise of power and pelf was a weapon the regime liberally employed in luring leftist as well as right-wing politicians into the BNP. The rise of the political turncoat became an embarrassing national reality in the Zia years.
On 30 May 1977, General Ziaur Rahman rounded out his ambition, in questionable manner, of commandeering the state of Bangladesh through imposing himself on the country.
Four years to the day, on 30 May 1981, his life came to a violent end in a putsch in Chittagong. In between, much blood had flowed, many lives had come to a sudden end, state principles had been turned on their head and democratic politics had become fugitive.
That referendum initiated an egregious trend . The corruption of politics, the process of voting being made a mockery of, the undermining of fundamental rights and the flouting of the rule of law — all of this was set in motion on that day in May forty-six years ago.
মাসুদ করিম - ৩১ মে ২০২৩ (২:৪৬ অপরাহ্ণ)
সত্য কখনও চাপা থাকে না
https://www.banglatribune.com/columns/801397/%E0%A6%B8%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%AF-%E0%A6%95%E0%A6%96%E0%A6%A8%E0%A6%93-%E0%A6%9A%E0%A6%BE%E0%A6%AA%E0%A6%BE-%E0%A6%A5%E0%A6%BE%E0%A6%95%E0%A7%87-%E0%A6%A8%E0%A6%BE
আবদুল মান্নান
বিয়াল্লিশ-চল্লিশ বছর আগে ১৯৮১ সালের ৩০ মে বাংলাদেশের প্রথম সেনা শাসক বিএনপি নামক দলটির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান এক সামরিক অভ্যুত্থানে চট্টগ্রামে নিহত হন। যে কোনও অনভিপ্রেত মৃত্যুই দুঃখজনক, জিয়ারটাও তাই। একজন মানুষের মৃত্যুর পর তার গুণমুগ্ধরা তার স্মৃতি তর্পন করে অনেক ভালো ভালো কথা বলবেন তাতেও কোনও আপত্তি নেই। এই সব মানুষদের মধ্যে নিজের অনুসারিরা থাকবেন তাও প্রত্যাশিত। তবে সেই অনুসারিরা যদি দেশের একটি বড় মাপের প্রগতিশীল ঝাণ্ডাধারি মিডিয়াকে বেশ সাচ্ছন্দের সঙ্গে ব্যবহার করতে পারেন তাহলে তো কথা উঠবেই। মিডিয়াটি শুধু প্রগতিশীলের দাবিদারই নয় তারা বেশ গর্ব করে বলে তারা সব সময় নিরপেক্ষ ও সত্য প্রকাশের জন্য অঙ্গিকারবদ্ধ। যে মিডিয়ার কথা বলছি তা একটি প্রিন্ট মিডিয়া; যার পাঠক অসংখ্য। তাদের রাজনৈতিক দর্শন হচ্ছে শেখ হাসিনা ছাড়া যে কেউ দেশ শাসন করুক তাতে তাদের কোনও আপত্তি নেই।
এক এগারোর পর তারা তাদের এই মতবাদ প্রতিষ্ঠা করার জন্য বেশ প্রচার চালিয়েছে। এতদিনেও তাদের দৃষ্টিভঙ্গির কোনও হেরফের হয়নি।
‘সৈনিক জিয়া’ আর ‘রাজনীতির জিয়া’ কেমন মানুষ ছিলেন তা নিয়ে পণ্ডিতজনেরা অনেক লেখালেখি করেছেন। কারও মতে তিনি একজন ফেরেস্তা ছিলেন আর কেউ কেউ মনে করেন তিনি বাংলাদেশে সব কিছু ধ্বংস করে দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে যারা চর্চা করে তারাও এমন কথা বলেন বা লেখেন। বঙ্গবন্ধুর সাথে জিয়া কোনোভাবেই তুলনীয় নয়। বঙ্গবন্ধুর তাঁর কর্মের ফলে বিশ্বের ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন। যেমন আছেন থমাস জেফারসন, নেলসন ম্যান্ডেলা বা মহাত্মা গান্ধী। বাস্তব কারণেই জিয়ার পক্ষে তা সম্ভব নয়। জিয়া তো মৃত, অনেক মানুষ জীবদ্দশায় তাদের কর্মের কারণে বিশ্বের মানুষের কাছে নিন্দিত হয়ে পড়েন। গত ২৭ তারিখ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এক সময়ের দাপুটে জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা ও পররাষ্ট্র সচিব হেনরি কিসিঞ্জার তার একশতম জন্ম দিবস পালন করেছেন। যে মানুষটি একশত বছর বেঁচে থাকেন তার এমন একটি জন্মদিনে দুনিয়া জুড়ে না হোক তার দেশে অন্তত অনেক ভালোভাবে চর্চিত হতো। তার বদলে কী হলো? সেদিন বা তারও কয়েকদিন আগে হতে সারা বিশ্বে চর্চা হতে শুরু করলো কিসিঞ্জার কত বড় ‘বদমানুষ’ ছিলেন, তিনি কত কত দেশে সরকার উৎখাতের সাথে জড়িত ছিলেন, কতজন সরকার প্রধান হত্যার জন্য তিনি দায়ী আর এশিয়া, আফ্রিকা আর লাটিন আছে তাজ্জবের কথা বটে। তবে জিয়া আর কিসিঞ্জারকে এক পাল্লায় মাপা ঠিক হবে না।
যে প্রিন্ট মিডিয়ার কথা দিয়ে শুরু করেছি তার অনলাইন ভার্সনে ৩০ মে প্রকাশিত হয়েছে জিয়া কেন অমর হয়ে থাকবেন সেই প্রসঙ্গে একজন জিয়া ভক্তের লেখা। লেখক লিখেছেন জিয়া তার খাল কাটা আর বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির জন্য নাকি মানুষের হৃদয়ে অমর হয়ে থাকবেন। তিনি আরও লিখেছেন ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ জিয়া চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন।
ওই মিডিয়ার প্রিন্ট ভার্সনে এমন একটা ‘গুরুত্বপূর্ণ’ লেখার স্থান হয়নি। স্থান হয়েছে অন্য আর একটি লেখা যার বিষয় হচ্ছে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হলেও তা গ্রহণযোগ্য হয়নি কারণ তাতে বিএনপি অংশগ্রহণ করেনি।
প্রয়াত জিয়াকে খাটো না করেও কিছু সত্য কথাতো বলাই যায়। জিয়া ১৯৭১ সালের ২৫/২৬ তারিখ রাত পর্যন্ত পাকিস্তান সেনা বাহিনীর একজন অনুগত কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি বাঙালি নিধনের জন্য পাকিস্তান সেনাবাহিনীর জন্য চট্টগ্রাম বন্দরে সোয়াত জাহাজে আনা অস্ত্রশস্ত্র খালাসের জন্য বেশ তৎপর ছিলেন। এরই মধ্যে ইপিআর-এ দায়িত্ব পালনরত ক্যাপ্টেন রফিক (পরবর্তীকালে মেজর রফিক, বীর উত্তম) পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে চট্টগ্রামের রেলওয়ে পাহাড়ের ওপর অবস্থান নিয়েছেন। জিয়া রাত এগারোটার কিছু পর চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে বাঙালিদের দেওয়া ব্যারিকেড সরাতে ব্যস্ত। এমন সময় লে. অলি আহম্মদ (পরবর্তীকালে কর্নেল, বীর বিক্রম) এসে জিয়াকে খবর দেন ঢাকায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষিত হয়েছে সুতরাং তিনি যেন ফিরে আসেন। জিয়া ষোলশহরে অবস্থানরত তার ইউনিট ৮ম ইস্ট বেঙ্গলে ফিরে আসেন। এসে তিনি তার কমান্ডিং অফিসার কর্নেল জানজুয়াকে গ্রেফতার করে নিজে বাঙালি সৈনিকদের নিয়ে বের হয়ে পড়েন এবং কালুর ঘাট সেতু পার হয়ে ফটিকছড়ির করেলডেঙ্গা পাহাড় পার হয়ে ভারতে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। জানজুয়া পরবর্তীকালে পাকিস্তানের সেনা প্রধান হয়েছিলেন। এসব তথ্য ইতিহাসে লিপিবদ্ধ আছে।
রফিকুল ইসলামের (বীর উত্তম) বই ‘লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে’ এই সব কথা বিস্তারিতভাবে উল্লেখিত আছে। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ দুপুর বেলা আওয়ামী লীগ নেতা এম এ হান্নান চট্টগ্রাম বেতারের কালুর ঘাট কেন্দ্র থেকে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণাটি পড়ে শোনান। পরদিন, ২৭ তারিখ জিয়াকে করেলডেঙ্গা পাহাড় হতে অনেকটা জোর পূর্বক ধরে এনে বেতার হতে এই ঘোষণা পাঠ করান আওয়ামী লীগ নেতা আতাউর রহমান খান কায়সারের নেতৃত্বে কয়েকজন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ। এই সব তথ্য আছে একাত্তরের শব্দ সৈনিক বেলাল মোহাম্মদের ‘স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র’ গ্রন্থে।
জিয়া প্রথমে নিজের পক্ষে এই ঘোষণা দেন। এর পরপরই চট্টগ্রামের বিশিষ্ট শিল্পপতি এ কে খান চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগের নেতাদের ফোন করে জানতে চান কে এই জিয়া? তিনি এভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়ার কে? কে দিলো এই অধিকার? এমন একটা ঘোষণা দেওয়ার একমাত্র অধিকার আছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের। এর কিছু পর জিয়া বঙ্গবন্ধুর পক্ষে পুনরায় এই ঘোষণা পাঠ করেন। জিয়ার পুরো ঘোষণাই ছিল ইংরেজিতে। জিয়া বাংলা পড়তে পারতেন না।
বাংলাদেশ স্বাধীন হলে বঙ্গবন্ধু জিয়ার জন্য সেনা বাহিনীতে একটি উপ-সেনা প্রধানের পদ সৃষ্টি করেন। ওই পদে তিনি প্রথম ও শেষ পদায়িত ব্যক্তি। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ৮২ দিনের মাথায় জিয়া খন্দকার মোশতাক আহমেদকে ক্ষমতাচ্যুত করে নিজে ক্ষমতা দখল করেন। ‘সাক্ষী গোপাল’ রাষ্ট্রপতি হিসেবে অধিষ্ঠিত করেন বঙ্গবন্ধু কর্তৃক নিয়োগকৃত দেশের প্রথম প্রধান বিচারপতি এ এস এম সায়েমকে। বঙ্গবন্ধুর ঘাতকদের কোনও আদালতে বিচার করা যাবে না মর্মে মোশতাক কর্তৃক জারিকৃত অধ্যাদেশ আইনটি সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী হিসেবে পরবর্তীকালে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করে এক ন্যাক্কারজনক অধ্যায়ের সূচনা করেন জিয়া। এরপর বঙ্গবন্ধুকে হত্যাকারি সকল খুনিদের বিদেশে বাংলাদেশের মিশনে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করেন।
জিয়া বহুদলীয় রাজনীতি প্রবর্তনের নামে দেশে স্বাধীনতা বিরোধী সকল রাজনৈতিক দলকে রাজনীতি করার সুযোগ করে দেন। দেশের সংবিধানের চার মূলনীতির ধর্মনিরপেক্ষতাকে সংবিধান থেকে বাতিল করে ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময় অর্জিত একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে পরিণত করেন।
‘বঙ্গবন্ধ’ বা ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেওয়া নিষিদ্ধ হয় জিয়ার আমলে। ১৯৭৭ সালে জিয়া রাষ্ট্রপতি সায়েমকে বন্দুকের নলের মুখে পদত্যাগ করতে বাধ্য করে নিজেই রাষ্ট্রপতির পদটি দখল করেন। সাথে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও সেনা প্রধান। বিশ্বে একই সঙ্গে রাষ্ট্রের তিনটি পদ গ্রহণ করে তিনি নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেন। একই বছরের ৩০ মে তিনি আরও এক নজিরবিহীন ‘হ্যাঁ’ ‘না’ ভোটের ব্যবস্থা করে দেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে তছনছ করে দেন। ১৯৭৯ সালে আর এক তামাশার সংসদ নির্বাচনের ব্যবস্থা করে একাত্তরের ঘাতকদের সংসদে প্রবেশ করার সুযোগ করে দেন জিয়া। সেই সংসদে শাহ আজিজকে দেশের প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন। এই শাহ আজিজ মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানের পক্ষে কথা বলতে একটি দলের নেতৃত্ব দিয়ে জাতিসংঘে গিয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কথা বলতে। জয়পুরহাটের কসাই আবদুল আলিম জিয়ার মন্ত্রী সভায় ঠাঁই পেয়েছিলেন। একাত্তরে ঘাতকদের শিরোমনী জামায়াতের আমিরকে জিয়া বাংলাদেশে প্রবেশ করার অনুমতি দিয়ে জামায়াতের অঘোষিত আমিরের দায়িত্ব পালন করার সুযোগ করে দেন জিয়া।
১৯৭৭ সালের অক্টোবর মাসে ঢাকা সেনানিবাস ও তেজগাঁও বিমান বন্দরে সেনা ও বিমান বাহিনীর কিছু সদস্য এক অভ্যুত্থানের চেষ্টা করে যা জিয়ার অনুগত সেনারা তা ব্যর্থ করে দেয়। এরপর শুরু হয় সেনা ও বিমান বাহিনীতে এক ভয়াবহ গণহত্যা। এই অভ্যুত্থানের সঙ্গে জড়িত বলে অভিযুক্ত করে বিচারের নামে গোপন ট্রাইব্যুনাল বসিয়ে প্রাপ্ত হিসাব মতে প্রায় এগারশত সেনা ও বিমান বাহিনীর সদস্যকে জিয়া নির্মমভাবে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করেন। আরও মর্মান্তিক হচ্ছে এই হতভাগ্যদের লাশগুলো পর্যন্ত তাদের পরিবারবর্গ ফেরত পায়নি। তাদের কোথায় কবর দেওয়া হয়েছে তাও জানানো হয়নি। যাদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়েছে তাদের আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনও সুযোগ ছিল না। এসব তথ্য মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের নথিতে লিপিবদ্ধ আছে। সেই হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে সে সময়ের বিশ্বের অনেক গণমাধ্যমে সংবাদ হিসেবে প্রচারিত ও প্রকাশিত হয়েছিল।
আজকের এই রচনা জিয়ার আমলে তার কূকীর্তির ফিরিস্তি দেওয়ার জন্য নয় বরং জিয়াকে কেন এই দেশের সচেতন মানুষ মনে রাখবে তা তুলে ধরা। জিয়াকে মানুষ তার খাল কাটার বা বৃক্ষ রোপণের জন্য মনে রাখবে না। মনে রাখবে এই দেশের রাজনীতিকে বিষাক্ত করার জন্য, তার অপকর্মের জন্য যেভাবে মানুষ এক সময়ের যুক্তরাষ্ট্রের ডাকসাইটে পররাষ্ট্র মন্ত্রীকে তাঁর শততম জন্মদিনে মনে রেখেছে। সত্য কখনও চাপা থাকে না।
মাসুদ করিম - ৩১ মে ২০২৩ (৫:০৭ অপরাহ্ণ)
রহস্যময় মাহমুদ হোসেন ও কালুরঘাট
https://bangla.bdnews24.com/opinion_bn/archives/16312
অমি রহমান পিয়াল
কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রের (ইটস জাস্ট আ ট্রান্সমিটার) উদ্যোক্তা এবং জিয়াকে এতে সম্পৃক্ত করার পেছনে আছেন একজন অবাঙালি! অবিশ্বাস্য, তাই না? রহস্যময় এই চরিত্রের নাম মাহমুদ হোসেন। তিনি নায়ক না খলনায়ক তা মূল্যায়িত হওয়ার আগেই মৃত্যুবরণ করেছেন; তবে তাতে রহস্যটা মেটেনি। বাস্তবতা হচ্ছে, ২৬ মার্চ রাত দশটায় ‘হ্যালো ম্যানকাইন্ড’ বলে ভরাট কণ্ঠের উচ্চারণে কালুরঘাট ট্রান্সমিটারটি আবারও সচল করেছিলেন মাহমুদ হোসেন। মৃত্যুর আগপর্যন্ত তার তৎপরতায় বোঝা গেছে, তিনি আসলে সাহায্য করতে চেয়েছিলেন বাঙালিদের। তবে ঠিক কীভাবে সেটি রহস্যই রয়ে গেছে।
শুরু হোক মাহমুদ হোসেনের রহস্যময়তার। আরম্ভ করছি কালুরঘাটে সে সময় উপস্থিত এবং জিয়ার অন্যতম সহচর মীর শওকত আলীর স্মৃতিচারণ দিয়ে—
”…কক্সবাজার যাওয়ার পথে কালুরঘাট ব্রিজ পেরুলেই রাস্তাটা একটা ঢালের তীক্ষ্ম বাঁক নিয়েছে। তারপর এগিয়ে গেছে সোজা পটিয়া, দুলাহাজরা এবং কক্সবাজার হয়ে মূল ভুখণ্ডের সর্বদক্ষিণের প্রান্ত টেকনাফের দিকে। ঢালের শেষ মাথায়, যেখানে রাস্তাটা আবার সোজা হয়েছে, একটা পেট্রোল পাম্প আছে। পাম্পটা ইতোমধ্যে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল, অন্ধকারে ডুবে ছিল জায়গাটা। একপাশে কিছু গাছের গুঁড়ি স্তূপাকারে রাখা, কিছু খালি বাসও ছিলও এখানে। পলায়নপর ড্রাইভাররা ফেলে রেখে গিয়েছিল। পাম্প স্টেশনের আশেপাশে গোটাকতক গাড়ি আর পিকআপও ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা ছিল। ক্রমশ রাত ঘনিয়ে এল।
রাত তখন আটটা। একটা গুঁড়ির উপর বসে কথা বলছিলাম আমি আর অলি। একটা বাসের ভেতর বসে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন জিয়া। হঠাৎ একটা লোককে এগিয়ে আসতে দেখলাম আমরা। মোটামুটি দীর্ঘকায়, চমৎকার চেহারা, মাথায় লম্বা চুল, বয়স মধ্য ত্রিশের মতো হবে। আগন্তুক আমাদের কাছে এসে জানালেন, জিয়ার খোঁজ করছেন তিনি। মুখ চাওয়াচাওয়ি করলাম আমি আর অলি। কারণ ওই অবস্থায় ব্যাপারটা কেমন যেন রহস্যময় মনে হচ্ছিল।
যাহোক, আমরা তার পরিচয় জানতে চাইলাম; জিয়াকে তিনি চেনেন কীভাবে। কিন্তু পরিচয় বা উদ্দেশ্য জানাতে রাজি হলেন না ভদ্রলোক। জিয়ার সঙ্গে দেখা করার জন্য জোর করলেন। আমি চমৎকার আমেরিকান উচ্চারণ ভঙ্গীতে আলাপরত আগন্তুককে নিয়ে ব্যস্ত। ঠিক তখন ক্যাপ্টেন অলি গিয়ে জিয়াকে নবাগতের উপস্থিতির কথা জানালেন। একটু বাদেই অলি ফিরে এসে বললেন, ভদ্রলোককে বাসের ভেতর নিয়ে যেতে বলেছেন জিয়া।
আগন্তুককে নিয়ে আমরা বাসে অপেক্ষারত জিয়ার কাছে এলাম। জিয়া আমাদের দুজনকে বেরিয়ে যেতে ইশারা করলেন। আগন্তুককে আগেই তল্লাশি করা হয়েছিল, জিয়ার একখানা ফটোগ্রাফ ছাড়া আর কিছু পাওয়া যায়নি তার কাছে। আগন্তুকের সঙ্গে জিয়াকে একা রেখে বেরিয়ে এলাম আমরা।…”
(মুক্তিযুদ্ধের সূচনায় প্রথম প্রতিরোধ: লে.জে মীর শওকত আলী; গোলাম মোস্তফা সম্পাদিত ‘অনন্য জিয়াউর রহমান’, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, আগস্ট ২০০৪)
২৭ মার্চের সে রাতের ঘণ্টাখানেক একান্ত আলাপচারিতার পর আগন্তুক যখন বেরিয়ে গেলেন, জিয়া তার পরিচয় দিলেন সঙ্গীদের। লোকটা আমাদের বন্ধু, আমাদের একটা উপকার করতে চায়। কী উপকার, কী তার ধরন সে আলোচনায় একটু পরেই আসছি। কিন্তু মীর শওকতের লেখায় বা আর কোথাও সেই ফটোগ্রাফের রহস্য মেলে না। কীভাবে একজন বিদেশির বুকপকেটে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একজন অফিসারের ছবি এল তা জানা হয় না আমাদের। তার আগেই অবশ্য বিপ্লবী স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে জিয়া বঙ্গবন্ধুর পক্ষে তার স্বাধীনতার প্রথম ঘোষণাটা পড়ে ফেলেছেন।
তবে জিয়াই প্রথম নন। চট্টগ্রাম শহরে প্রতিরোধ লড়াইটা ঢাকার ঘণ্টাকয়েক আগেই শুরু হয়ে গিয়েছিল। এর নেতৃত্বে ছিলেন ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলসের ক্যাপ্টেন রফিক। ২৫ মার্চ রাতে জিয়া যখন পরিস্থিতি আরও ভালো করে বোঝার জন্য ৮ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈন্যদের নিয়ে পটিয়ার দিকে সরে গেছেন (চট্টগ্রাম থেকে প্রায় দুই ঘণ্টার পথ), রফিক তাঁর সীমিত লোকবল ও সামর্থ্য নিয়েই জোর লড়াই লড়ছেন। সেদিন রাত দুটোয় রেলওয়ে হিলে রফিকের ট্যাকটিকাল হেডকোয়ার্টারে আমরা একই আগন্তুকের দেখা পাই।
আগন্তুকের নাম বা পরিচয় রফিক দেননি। মুক্তিযুদ্ধের ওপর লেখা তাঁর ‘লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে’ বইতে আমরা জানতে পারি, একটি বিদেশি রাষ্ট্রের তরফে তাঁকে সামরিক সাহায্যের প্রস্তাব দেন ব্যক্তিটি। শর্ত তার সঙ্গে কক্সবাজার যেতে হবে। ‘আমি যেতে পারব না, আমি ছাড়া এখানে আর কোনো অফিসার নেই’– রফিকের প্রত্যাখ্যানের পর অপরিচিত লোকটি তাঁকে বিকল্প প্রস্তাব দেন রেডিওতে ভাষণ দেওয়ার। আগের গ্রাউন্ডে এবারও প্রত্যাখ্যান করলেন রফিক। বরং একটি টেপরেকর্ডার এনে তাঁর ভাষণ রেকর্ড করে নেওয়ার পাল্টা প্রস্তাব দিলেন।
রফিক লিখেছেন:
”…. এরপরেও অপরিচিত আগন্তুক তার সঙ্গে যাওয়ার জন্য আমার উপর এত চাপ সৃষ্টি করতে থাকেন যে আমি খুবই সন্দিহান হয়ে পড়লাম। পুরা বিষয়টা পাকিস্তানিদের ফাঁদ হওয়া বিচিত্র নয়– আমি ভাবলাম। আমাকে রাজি করাতে না পেরে তিনি রেকর্ডিং যন্ত্রপাতি নিয়ে আবার আসার প্রতিশ্রুতি দিয়ে চলে গেলেন। কিন্তু ভদ্রলোক আর কখনও ফিরে আসেননি। পরে আমি জানতে পেরেছিলাম যে তিনি বাঙালি সামরিক বাহিনীর সদস্যদের অন্য একটি দলের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং তাদেরকে কক্সবাজারের দিকে যাওয়ার জন্য প্রলুব্ধ করেছিলেন। হয়তো কক্সবাজারের দিকে যাওয়ার উদ্দেশ্য ছিল যুদ্ধের স্থান থেকে বাঙালি সৈন্যদেরকে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া। শেষ পর্যন্ত জনগণ অবশ্য তাকে সন্দেহজনক কার্যকলাপের কারণে মেরে ফেলে। তবে তার এসব কার্যকলাপের পেছনে আসল উদ্দেশ্য কী ছিল সেটা হয়তো আর কখনও-ই জানা যাবে না।”
এ পর্যন্ত সবাই ‘আগন্তুক’ হিসেবেই তার পরিচয় দিয়েছেন; সেটা আরও রহস্যময় করে তুলেছেন বেলাল মোহাম্মদ নিজে তার পরিচয় গোপন করে। অবশ্য ‘মাহমুদ হোসেন’ নামে আমাদের আলোচিত রহস্যপুরুষটির জাতীয়তা ও পরিচিতি সম্পর্কে পরস্পরবিরোধী তথ্য রয়েছে। মীর শওকত তার চোস্ত আমেরিকান ইংরেজিতে মুগ্ধ; রফিকের মনেই হয়নি তিনি বাঙালি। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সফল রূপকার বেলাল মোহাম্মদ নিশ্চিত করেছেন, তিনি বাঙালি। কিন্তু বেগম মুশতারী শফি তাকে উল্লেখ করেছেন ‘ভারতীয়’ বলে। বাংলাদেশে কবে থেকে আছেন এবং কী উদ্দেশ্যে এটা নিয়েও দুজনের মন্তব্য দু’ধরনের।
এখানে না বললেই নয়, সে সময় এনায়েতবাজারে ডাক্তার শফির বাসা কেন্দ্র করে চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের লোকদের একটি আড্ডা গড়ে উঠেছিল এবং বেলাল মোহাম্মদ ছিলেন সেখানকার নিয়মিত অতিথি। এটাও বলতে হবে যে, স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে বেলাল মোহাম্মদ যে ক’টি সাক্ষাতকার দিয়েছেন তাতে তিনি মিথ্যে না বললেও সত্য গোপন করে গেছেন। কৌশলে আড়াল করেছেন ‘মাহমুদ এপিসোড’। কখনও তাঁর লেখায় এসেছে ‘গাড়ি চালাচ্ছিলেন আমার এক বন্ধু’।
এমনকি বিডিনিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকমে দেওয়া সর্বশেষ সাক্ষাতকারটিতেও একবারই মাহমুদের উল্লেখ ছিল তাঁর মুখে। সেখানে তাকে ‘আগ্রাবাদ হোটেলের প্রোমোটার জাতীয়’ কিছু বলা হয়েছে। ভিডিওতে তার নাম বলা হলেও যিনি সেটি শুনে শুনে লিখেছেন, তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ ঠেকেনি মাহমুদ হোসেনকে, তাই বাদ দিয়েছেন!
আর বেলাল মোহাম্মদের ব্যাপারটা হল, উনি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র নিয়ে একটি বই লিখেছেন। এরপর ‘স্বাধীনতার ঘোষক বিতর্ক’ নিয়ে বিডিনিউজের আগে ডয়চেভেলেও তাঁর একটি সাক্ষাতকার রয়েছে। সব ক্ষেত্রেই তিনি বইয়ের বক্তব্যটি ধরে রেখেছেন– কালুরঘাট ট্রান্সমিশন সেন্টারটি চালু করা, সেটার প্রতিরক্ষার জন্য রফিককে না পেয়ে পটিয়া থেকে জিয়াকে নিয়ে আসা। তারপর কৌতুকছলে বলা– ‘এখানে তো সবাই মাইনর, আপনিই একমাত্র মেজর, আপনি আপনার নামে একটি ঘোষণা পড়ুন না’। কোনো পূর্বপ্রস্তুতি ছাড়াই জিয়া তাঁর অনুরোধে সাড়া দিয়ে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেছেন।
সুস্পষ্টভাবেই এসবের কৃতিত্ব বেলাল নিজের বলেই দাবি করছেন। এমনকি আঙুলে গুনে জিয়া স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠকারী নবম ঘোষক, সম্মানী হিসেবে ১৫ টাকার ভাতা পেতেন তখনকার ঘোষকরা– এ জাতীয় রসিকতাও আছে তাঁর বয়ানে।
চারদিনের ওই শব্দ-লড়াইয়ে (প্রোপোগাণ্ডমূলক প্রচারণা অর্থে) বেলাল মোহাম্মদদের কৃতিত্ব কোনোভাবেই অস্বীকার করা যাবে না। কিন্তু একটু ঘাঁটাঘাটি করলেই ছায়া এবং কায়াকে আলাদা করে ফেলা যাচ্ছে। রফিকের মুখেই আমরা শুনেছি, ২৫ মার্চ রাত দুটোয় তাঁর কাছে এসেছিলেন মাহমুদ, রেডিওতে ঘোষণা পাঠের আবদার নিয়ে। বেলালরা কালুরঘাটের ওই ট্রান্সমিশন সেন্টারটি মূল বেতারের বিকল্প হিসেবে চালু করার পেছনে মূল মন্ত্রণাটিও ক্ষুরধার মাহমুদ হোসেনের মাথা থেকে বেরিয়েছে ধরলে, অনেক হিসেবই দুয়ে দুয়ে চারের মতো মিলে যায়। মিলিয়ে দেন বেলাল নিজেই।
২৬ মার্চ সন্ধ্যার পর তাঁরা ওই বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র চালু করে অনুষ্ঠান সম্প্রচার শুরু করেন। রাতে যখন আওয়ামী লীগের মোহাম্মদ হান্নান সেখানে গেলেন, তিনি বললেন এই ট্রান্সমিটার দিয়ে তিনি সেদিন দুপুরেই একদফা ঘোষণা পাঠ করে গেছেন (বিডিনিউজে বেলাল মোহাম্মদের সাক্ষাতকার ২য় পর্ব)। বইয়ে মূল বেতারের কথা বলে এড়িয়ে গেলেও, সাক্ষাতকারে আর সেটা অস্বীকার করেননি।
কথা হচ্ছে, হান্নান কীভাবে এই ট্রান্সমিশন সেন্টারটি ব্যবহার করলেন, কে তাকে দিয়ে ঘোষণা পাঠ করাতে সাহায্য করেছেন? বেলাল মোহাম্মদ এড়িয়ে গেছেন; আমার ধারণা উত্তরটা তাঁর জানা। মুশতারী শফিই আমাদের জানিয়ে দেন যে, ২৭ মার্চ সকালে তাঁর বাসা থেকেই গাড়ি করে বেলালকে নিয়ে পটিয়া রওনা দেন মাহমুদ। অথচ বেলাল মোহাম্মদ স্মৃতিচারণে এই যাত্রাকে ‘এক বন্ধুর গাড়িতে’ বলে চালিয়ে দিয়ে নিজেকে বসিয়ে রেখেছেন ‘ড্রাইভারের পাশের আসনে’।
আসা যাক বেলাল কীভাবে মাহমুদকে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন। মাহমুদ হোসেন নিজেকে মূখ্য চরিত্রে রেখে ‘অরিজিন অব হিপ্পিজম’ নামে একটা ছবি তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছিলেন যার প্রেক্ষাপট ভারতবর্ষ। পাশাপাশি তুলে ধরেছেন তার বিপ্লবী চরিত্র। লন্ডনে আইউব খানের এক সভায় নাকি বোমা হামলা চালিয়েছিলেন ভাইয়ের সঙ্গে মিলে। আর মুশতারী শফির বইয়ে ঠিক উল্টো চিত্র পাই আমরা। এখানেই আমরা জানতে পারি সাবেক ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মোরারজি দেশাইয়ের ভাতিজি ভাস্করপ্রভার স্বামী মাহমুদ হোসেন।
২৭ মার্চের রোজনামচায় মুশতারী লিখেছেন:
”… এ সময় মাহমুদ হোসেন নামে একজন লোক এল আমার বাসায় বেলাল ভাইকে কোথায় যেন নিয়ে যেতে। মাহমুদ হোসেন ভারতীয় লোক। থাকে কখনও লন্ডন, কখনও আমেরিকার বিভিন্ন জায়গায়। তার স্ত্রী নাকি ভারতের জনতা পার্টির নেতা মোরারজী দেশাইর ভাইঝি। নাম ভাস্করপ্রভা। তিনি প্রায় মাসকয়েক হল বাংলাদেশে এসেছেন। উদ্দেশ্য, বাংলাদেশের পল্লীগীতি ও বাউল সঙ্গীতের উপর ধারাবর্ণনা সহকারে লং প্লের রেকর্ড বের করবেন। বেলাল ভাইয়ের সাথে তার চুক্তি সংগৃহীত গানের ধারাবর্ণনা লিখে দেবার। উঠেছেন আগ্রাবাদ হোটেলে। চট্টগ্রাম রেডিওর সঙ্গীত প্রযোজক রামদুলাল দেবের সাথেও তার সখ্যতা গড়ে উঠেছে। উনি শিল্পীদের সংগ্রহ করে গানের রিহার্সেল করেন, রিহার্সাল হয় আগ্রাবাদ হোটেলেই। বেলাল ভাইও সেখানে যেতেন।
প্রায় ৬ ফিটেরও ওপর লম্বা কালো লোক, মাথাভর্তি কোকড়া ঝাঁকড়া চুল। দেখলে ভয় লাগে। আজ এসেছেন একটা কালো মরিস মাইনর গাড়ি নিয়ে। গাড়িতে দুজন ইপিআর জোয়ান, গাড়ির দুপাশে বন্দুকের নল বের করে। তার সাথে আরও এসেছেন আগ্রাবাদ হোটেলের সহকারী ম্যানেজার ফারুক চৌধুরী। কেন এসেছেন মাহমুদ হোসেন? কোথায় নিয়ে যেতে চান বেলাল ভাইকে? ডাক্তার শফিকে আড়ালে ডেকে নিয়ে বেলাল ভাই বললেন, ‘মাহমুদ হোসেন এসেছেন আমাকে নিয়ে যেতে চান, সীমান্তের ওপারে অস্ত্র-সাহায্যের জন্য’।
আমিও কথাটা শুনলাম। শফি আঁতকে উঠে অনেকটা ধমকের সুরেই বলল, ‘খবরদার বেলাল, এ কাজে তুমি কিছুতেই যাবে না ওর সাথে’।
বেলাল ভাই বলল, ‘ঠিকাছে, সীমান্তের ওপারে যাব না, তবে পটিয়া পর্যন্ত যাই। শুনেছি বাঙালি সৈন্যরা এখন নাকি ক্যান্টনমেন্ট এবং শহর ছেড়ে পটিয়ার দিকে গেছে। সেখান থেকে কিছু আর্মড গার্ড নিয়ে আসি। কারণ কালুরঘাট ট্রান্সমিটার ভবনটি এখন নিরাপদ নয়’।
ও আর এই কাজে বাধা দিল না। বেলাল ভাই চলে গেল মাহমুদ হোসেনের সাথে।”
(‘স্বাধীনতা আমার রক্তঝরা দিন’, পৃষ্ঠা- ১০৪)
বেগম মুশতারী শফির ভাষ্যটাই সমর্থন করেছেন সাবেক সামরিক কর্মকর্তা ও মুক্তিযোদ্ধা লে. কর্ণেল নুরুন্নবী বীরবিক্রম। মাহমুদ হোসেন সম্পর্কে যাবতীয় খোঁজখবরের সূত্রপাতও তিনিই। তাঁর লেখা ‘জীবনের যুদ্ধ: যুদ্ধের জীবন’ (কলম্বিয়া প্রকাশনী) নামে একটি বই আছে। সেখানেই ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর রামগড় জেডফোর্স হেডকোয়ার্টারে জিয়ার সঙ্গে মদ্যপানের (রাম) ফাঁকে ফাঁকে নানা আলাপচারিতার উল্লেখেই আমি প্রথম পাই মাহমুদ হোসানকে। মিসিং লিংকগুলো জোড়া দেওয়ার প্রয়াসও তখন থেকেই।
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে এক অনুষ্ঠান শেষে নুরুন্নবীকে আমি ধরেছিলাম কথাগুলোর ব্যাখ্যা চেয়ে। আমার সঙ্গী ছিলেন সাংবাদিক ও তথ্যচিত্র নির্মাতা (সামরিক বাহিনীতে গণহত্যাখ্যাত) আনোয়ার কবীর। নুরুন্নবী আমাকে রেকর্ড করতে দেননি, তবে জানিয়েছেন শিগগিরই তার একটি বই বেরোবে যাতে এ ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ থাকবে। তিনি যা বলেছিলেন তাই স্মৃতি থেকে হুবহু তুলে দিচ্ছি:
”ওই লোকের পুরো নাম মাহমুদ হাসান (নুরুন্নবী তাকে ‘মাহমুদ হাসান’ বলে উল্লেখ করেছেন; আর তাঁর লেখায় বলেছেন শুধু ‘মাহমুদ’; আমরা অন্য সব জায়গা থেকে জেনেছি তার নাম ‘মাহমুদ হোসেন’)। সত্তরের নির্বাচনের পর থেকেই সে চট্টগ্রাম হোটেল আগ্রাবাদে স্থায়ী আবাস নেয়। লন্ডনে পড়াশোনার সুবাদে মোররাজী দেশাইর ভাতিঝির সঙ্গে প্রেম ও বিয়ে। বাংলাদেশের লোকসঙ্গীতের উপর গবেষণা ও তথ্যচিত্র নির্মাণের কথা বলে সে স্থানীয় মহলে বেশ খাতির জমিয়ে তোলে। তার গুণমুগ্ধদের মধ্যে ছিলেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রখ্যাত বেলাল মোহাম্মদসহ অনেকেই। বেগম মুশতারী শফির স্মৃতিকথায়ও উল্লেখ আছে মাহমুদের। কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে মেজর জিয়াকে স্বাধীনতার ঘোষণায় উদ্বুদ্ধ করার ব্যাপারে অগ্রগণ্যদের একজন ছিলেন মাহমুদ। জিয়া বেশ কয়েকবারই বিভিন্ন উপলক্ষে এই গল্প করেছেন তার অধীনস্তদের কাছে।”
নুরুন্নবীর ভাষ্য অনুযায়ী– মাহমুদ জিয়াকে জানান যে, তিনি পূর্ব পাকিস্তানে সিআইএর দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি নাকি এ রকম একটি হাস্যকর যুক্তিতে জিয়াকে কনভিন্স করেন যে, জিয়া যদি একটি বিপ্লবী পরিষদ গঠন করে নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেন তবে তার সাহায্যের জন্য একদিনের মধ্যে ফিলিপাইন থেকে সপ্তম নৌবহরকে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করে দেবেন তিনি। ২৭ মার্চ জিয়ার প্রথম ঘোষণাটার এটা অন্যতম রহস্য। যদিও উপস্থিতদের চাপে এরপর তিনি ঘোষণা পাল্টান।
মাহমুদ জিয়ার ছাড়পত্র, আগ্রাবাদ হোটেলের পিআরও এবং ক্যাশিয়ার ফারুক ও গনি এবং ইস্ট বেঙ্গলের দুজন সিপাই নিয়ে কক্সবাজার রওয়ানা দেন জনৈক উকিলের সঙ্গে দেখা করতে। এর মধ্যে মীর শওকত ও খালেকুজ্জামানও রওয়ানা হন। পথে দুলহাজারায় একটি ব্যারিকেডে না থেমে এগিয়ে যায় মাহমুদের মরিস মাইনর। পরের ব্যারিকেডে উত্তেজিত জনতা চড়াও হয় তাদের ওপর। মাহমুদ বাংলা বলতে পারতেন না, তাকে বিহারী ভেবে হত্যা করে উন্মত্ত স্থানীয়রা।
মাত্র একজন সিপাই প্রাণ নিয়ে কোনোমতে পালিয়ে আসে। কিন্তু জিয়ার দেখা পাননি; কারণ ২৮ মার্চ জিয়া অলি আহমেদকে সঙ্গে নিয়ে নিজেই কক্সবাজারে যান। বাংলা ভালো বলতে পারেন না বলে তারও একই সমস্যা হয়, কিন্তু চট্টগ্রামের স্থানীয় লোক অলি সে যাত্রা তাকে পার করিয়ে নেন। কক্সবাজারে পৌছে সপ্তম নৌবহরের কোনো দিশা পাননি জিয়া। খোঁজ মেলেনি শওকতেরও, যিনি রিপোর্ট করেন ৭ এপ্রিল।
খানিকটা ফাঁক রয়েছে নুরুন্নবীর বক্তব্যে। প্রথমত, জিয়া ২৭ মার্চ যে ভাষণটি দেন তাতে নিজেকে তিনি সরকারপ্রধান দাবি করেননি। করেছেন ২৮ মার্চের ভাষণে (যা লে. শমসের মুবিন চৌধুরী বেশ কয়েকবার পাঠ করেন), তৃতীয় দফা ভাষণে (মাহমুদের মৃত্যুর পর আবার পাল্টে দেন ভাষা)। আবার মীর শওকতের ভাষ্য অনুযায়ী, রাত ৮টার দিকেই জিয়ার সঙ্গে প্রথম সাক্ষাত মাহমুদের। তার অর্থ, পটিয়ায় তিনি এ বিষয়টি নিয়ে মুখোমুখি হননি জিয়ার। আর জিয়ার প্রথম ভাষণটি প্রচার হয় ৭টা ২০ মিনিটে (বেলাল মোহাম্মদের সাক্ষাতকার)। সে ক্ষেত্রে পরদিন জিয়ার ভাষণ এবং মাহমুদের কক্সবাজার যাত্রার যোগসূত্র ওই দ্বিতীয় ভাষণ।
জিয়া মাহমুদকে কেন বিশ্বাস করলেন এটা একটা রহস্যই বটে। কারণ সপ্তম নৌবহর ফুল থ্রটলে চললেও পাঁচ দিনের আগে বঙ্গোপসাগরে ঢোকার কোনো সুযোগ ছিল না। পাশাপাশি বিকল্প হিসেবে ভারত সরকারের সঙ্গে যোগাযোগের অপশনও রেখেছিলেন মাহমুদ। সে ক্ষেত্রে হেলিকপ্টার যোগাড়ের একটা ব্যাপার ছিল। মাহমুদ নিশ্চয়ই সে জন্য কক্সবাজার যাচ্ছিলেন না।
ফেরা যাক মাহমুদের সিআইএ পরিচয় দান নিয়ে (যা জিয়া নিজের মুখে বলেছেন নুরুন্নবীকে)। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় মোররাজী দেশাই সিআইএ-র চর হিসেবে কাজ করেছেন বলে প্রমাণ মিলেছে। তার ছেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে বাবার হয়ে পাচার করা তথ্যের পেমেন্ট আনার। কাকতালীয়ভাবে জিয়ার শাসনামলে ভারতের প্রধানমন্ত্রী পদে দ্বিতীয় দফা আসীন হয়েছিলেন মোরারজী। তখন মার্কিন ছাতার তলে উপমহাদেশেও বেশ একটা ‘শান্তি শান্তি’ ভাব চলে এসেছিল।
তবে বেলাল মোহাম্মদ বন্ধু মাহমুদের সম্মান রেখেছেন তার মৃত্যুর ব্যাপারটি বিস্তারিত জানিয়ে। অলি আহমেদের মুখেই তিনি খবরটা পেয়েছেন। বেলাল মোহাম্মদের ভাষ্যে:
”সেই ২৭ মার্চ রাতেই তারা ভারতের উদ্দেশে যাত্রা করেছিলেন। পার্বত্য চট্টগ্রামের দিকে এগিয়েছিল তাদের গাড়ি। পথে পুলিশ ফাঁড়িগুলোর সামনে সামনে প্রহরা। একটা লম্বা বাঁশ রাস্তার এপাশ ওপাশ পাতা। সেখানে গাড়ি থামাতে হয়, পরিচয় বলতে হয়। তারপর ছাড়া পাওয়া যায়। বাঁশের একপ্রান্ত উপরে ঠেলে দিয়ে গাড়ি গলিয়ে নেবার পথ করে দেওয়া হয়। ফাঁড়িতে ফাঁড়িতে এমনি যাত্রাবিরতিতে সময় নষ্ট হয়।
মাহমুদ হোসেনের জন্য হয়তো এ ছিল অসহ্য। তিনি তাই জোরে গাড়ি হাঁকিয়ে দিয়েছিলেন। এপাশে ওপাশে পাতা বাঁশ ভেঙে এগিয়ে গিয়েছিল গাড়ি। পরের ফাঁড়িতে টেলিফোনে খবর চলে গিয়েছিল। মাহমুদ হোসেনের পুষ্ট শরীর ও দীর্ঘ চুল চকিতে দেখা গিয়েছিল। সন্দেহ হয়েছিল তিনি অবাঙালি বলে। পরের ফাঁড়ি হারবাংয়ে আটক করা হয়েছিল তাদেরকে। তারপর জিজ্ঞাসাবাদ। গাড়ির মধ্যে পাওয়া গিয়েছিল অনেক টাকাকড়ি। বিদেশি মুদ্রাও। মেজর জিয়াউর রহমানের দেওয়া পরিচয়পত্র হয়েছিল উপেক্ষিত।
ওখানে স্থানীয় রাজনৈতিক কর্মীরাও উপনীত হয়েছিলেন। মাহমুদ হোসেনকে দালাল ঘোষণা করা হয়েছিল। গুলি করা হয়েছিল তিনজনকে। মাহমুদ হোসেন, ফারুক চৌধুরী ও ওসমান গনি। সিভিল পোশাকধারী রাইফেলধারী দুজনকে এবং ড্রাইভারকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল।
তিনটি লাশ দু’দিন শঙ্খ নদীতে ভাসমান ছিল। স্থানটির নাম ‘বুড়ো মৌলবীর ট্যাক’। দুদিন পর বুড়ো মৌলবী সাহেব দাফনের ব্যবস্থা করেছিলেন। ১৯৭৩ সালের প্রথমদিকে মাহমুদ হোসেনে পরিবারের সদস্যরা চট্টগ্রামে এসেছিলেন; তাদের নিয়ে আমি গিয়েছিলাম হারবাং এলাকায়। বুড়ো মৌলভী সাহেব তখন গত হয়েছিলেন। তার ছেলে কবরের স্থানটি দেখিয়েছিলেন। শঙ্খ নদীতে ভাঙনের ফলে স্থানটি তখন জলমগ্ন।”
শামসুল হুদা চৌধুরীর ‘একাত্তরের রণাঙ্গন’-এ সংযোজন হিসেবে মাহমুদ হোসেনের নাম স্বাধীন বাংলা বেতারের চ্যাপ্টারে আছে (৭৫ নং পৃষ্ঠা)। সেখানে তাকে সদ্য লন্ডন থেকে প্রত্যাগত তরুণ ব্যবসায়ী বলে পরিচয় দেওয়া হয়েছে। এ সূত্রমতে, ২৬ মার্চ রাত ১০ টার পর স্বাধীন বাংলা বেতার থেকে এনার উদ্যোগে একটি অতিরিক্ত অধিবেশন প্রচারিত হয়। সহযোগী ছিলেন ফারুক চৌধুরী, রঙ্গলাল দেব চৌধুরী ও আরও কিছু কলাকুশলী। ২৭ মার্চ রাতেই মাহমুদ ও ফারুক নিহত হন অজ্ঞাতনামা আততায়ীদের গুলিতে।
এত কিছুর পরও রহস্যই থেকে যান মাহমুদ এবং তার অভিপ্রায়। স্রেফ অস্থিরতার কারণে ‘ক্যাজুয়ালটি অব ওয়ার’ হয়ে যান দুজন নির্দোষ মানুষকে সঙ্গী করে।
মাসুদ করিম - ২৮ মার্চ ২০২৪ (১:৫২ পূর্বাহ্ণ)
Did Zia fight for Pakistan or Bangladesh?
https://today.thefinancialexpress.com.bd/last-page/did-zia-fight-for-pakistan-or-bangladesh-1711562991
Prime Minister Sheikh Hasina on Wednesday once again questioned Ziaur Rahman’s loyalty during the 1971 Liberation War of Bangladesh.
“(Mirza) Aslam Beg (who was an army officer at that time in Bangladesh) wrote a letter to Ziaur Rahman during the Liberation War expressing satisfaction about his activities,” she said, reports UNB.
This raised the question whether Zia had fought for Bangladesh or Pakistan, she said while addressing a discussion meeting at Awami League office in city’s Tejgaon, organised by the AL on the occasion of the Independence and National Day celebrated on Tuesday.
In that letter, she claimed, Mirza Aslam Beg also said that wife and sons of Ziaur Rahman were fine in Dhaka Cantonment.
“The question is if the person had proclaimed the independence then why the Pakistanis took care of the wife and sons of that person in cantonment, and wrote a letter stating satisfaction over his job,” she said.
The ruling Awami League chief said that the war was fought in the eleven sectors of the country during the Liberation War, but the sector led by Zia saw the most killings of the freedom fighters.
“The most casualties were in there,” she said.
She said that during any operation Ziaur Rahman used to keep himself in a safe place pushing the freedom fighters to the action field which caused huge casualties as he could not take decision based on ground reality.
“The casualties happened due to the lack of proper leadership by him (Ziaur Rahman),” she said.
She mentioned that the successful operation in any battle means attaining desired goal through fewer casualties. “Zia could not do that, as a result Aslam Baig expressed satisfaction,” she said.
General Beg served as the third Chief of Army Staff of the Pakistan Army from 1988 until his retirement in 1991. His appointment as the chief of army staff came when his predecessor, President General Muhammad Zia-ul-Haq, died in an air crash on August 17, 1988.
Regarding the proclamation of the Independence on the night of March 25 (early of March 26), she said that Bangabandhu’s proclamation was relayed through wireless, But after the assassination of the Father of the Nation, the history was distorted.
“In the distorted history it was said that one major standing on a drum blew the whistle and Bangladesh got independence. A country can not attain independence this way. If this could be done then the history of Bangladesh would have written differently,” she said.
She said that nowadays BNP leaders are searching for democracy, and one BNP leader claimed that on March 25 Awami League leaders fled from Bangladesh. If that is true who then fought the fight and who brought the victory.
She said that the elected public representatives of the 1970 elections formed the first ever government of independent Bangladesh with Father of the Nation Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman as the president and Syed Nazrul Islam the vice-president and Tajuddin Ahmed as the prime minister.
After forming this government on April 17 of 1971 they took oath at Meherpur and carried out the Liberation War, she said.
She said that Ziaur Rahman was a sector commander of that government as a salaried person under the Awami League government.
“They (BNP leaders) must not forget this fact. They must not forget that after the Independence Ziaur Rahman was promoted from Major to Major General. These ungrateful persons forget that also.”
Hasina ridiculed a BNP leader’s act of burning his shawl calling for boycott of Indian goods.
She asked BNP leaders to search the indian sarees under the possession of their wives and burn those and also stop using indian species in their kitchen.
The prime minister said that people rejected BNP for their arson terrorism and killing of people.
“Those who were rejected by people, could not win election in democratic system, now they are searching for democracy,” she said.
Awami League Advisory Council Members Amir Hossain Amu, Presidium Members Sheikh Fazlul Karim Selim, Engineer Mosharraf Hossain, Abdur Razzaque, and Shajahan Khan, Health Affairs Secretary and State Minister for Health Dr Rokeya Sultana, Dhaka District President Benzir Ahmed, Dhaka City South General Secretary Humayun Kabir, and Dhaka City North General Secretary SM Mannan Kochi.
AL publicity and publication secretary Abdus Sobhan Golap and his deputy Syed Abdul Awal Shameem moderated the discussion.