জিয়ার ইতিহাসের জায়গা

স্বাধীনতার ঘোষক জিয়া, লও লও লও সালাম। কে এই ঘোষক জিয়া ? সিপাহি-জনতার বিপ্লবের মধ্য দিয়ে বন্দী দশা থেকে মুক্তি পেয়ে বেরিয়ে আসা জিয়া ? কে এই বাংলাদেশের প্রথম প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক, তারপর বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি ? তাকে যেভাবে বর্ণনা করা হয় সচরাচর তাতে তাকে এক অলৌকিক চরিত্র ছাড়া কিছুই মনে হয় না [...]

স্বাধীনতার ঘোষক জিয়া, লও লও লও লাল সালাম। কে এই ঘোষক জিয়া? সিপাহি-জনতার বিপ্লবের মধ্য দিয়ে বন্দীদশা থেকে মুক্তি পেয়ে বেরিয়ে আসা জিয়া? কে এই বাংলাদেশের প্রথম প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক, তারপর বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি? তাকে যেভাবে বর্ণনা করা হয় সচরাচর তাতে তাকে এক অলৌকিক চরিত্র ছাড়া কিছুই মনে হয় না। যখন কোথাও কেউ নেই বাঙালি হতবুদ্ধি তখন রেডিওতে ভেসে আসে এক অলৌকিক কণ্ঠস্বর, বাঙালি যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে, দেশ স্বাধীন হয়ে যায়। তারপর তৎকালীন রাজনীতিবিদরা জিয়ার অর্জন চুরি করে নিয়ে যায়, যেমনটি রাজনীতিবিদরা সবসময়ই বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অর্জন চুরি করেন, কিন্তু বেশিদিন ধরে রাখতে পারেন না, তাই ইতিহাসের অমোঘ নিয়মে আবার জিয়ার আর্বিভাব হয় সিপাহি-জনতার বিপ্লবের মধ্য দিয়ে; তারপর আবার রাজনীতিবিদরা জিয়ার অর্জন চুরি করে নিয়ে যায়, এরপর তার সহ্যের বাঁধ ভেঙে যায়—তাকে বাধ্য হয়েই কঠোর হতে হয়, তিনি হন বাংলাদেশের প্রথম প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক। তারপর ২১ এপ্রিল ১৯৭৭ জিয়াকে হতে হয় বাংলাদেশের ৮ম রাষ্ট্রপতি।

“This is Shadhin Bangla Betar Kendro. I, Major Ziaur Rahman, on behalf of Bangobondhu Sheikh Mujibur Rahman, hereby declare that the independent People’s Republic of Bangladesh has been established. I have taken command as the temporary Head of the Republic. I call upon all Bengalis to rise against the attack by the West Pakistani Army. We shall fight to the last to free our Motherland. By the grace of Allah, victory is ours.”

২৭ মার্চ ১৯৭১-এ বলা সেই অযাচিত ‘Head of the Republic’-ই হলেন ১৯৭৭-এ এসে, আরেক অযাচিত পন্থায়; কিন্তু যাই হোক না কেন, তার প্রতিটিই আর্বিভাব, এবং প্রতিটিই চমকপ্রদ। কিন্তু কী তার কীর্তি? ইতিহাসের জায়গাটা কোথায় তার? শুধু ঘটনাচক্র নয় যা, তার চেয়ে বড় কিছু, তার যুগান্তকারী কর্মকাণ্ড, যার জন্য জিয়া আজো প্রাসঙ্গিক। কীর্তিগুলো তাহলে একে একে বলি। ১ সেপ্টেম্বর ১৯৭৮ ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল’ প্রতিষ্ঠা, বাংলাদেশে জামাতের রাজনীতির অনুমতি প্রদান, সংবিধানে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রহিম’-এর অনুপ্রবেশ ঘটানো। এবং এ তিনটি কীর্তি তাকে উপমহাদেশে জিন্নাহ্‌র পরে সবচেয়ে প্রভাববিস্তারকারী মুসলিম নেতায় পরিণত করেছে। এবং আজো বাংলাদেশের মুসলমানেরা ‘বাংলাদেশীরা’ তাকে মনে করে তাদের অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে, তার উত্তরাধিকার বহন করে এই বাংলাদেশ আর বাঙালির দেশ হতে পারবে না, যেমন জিন্নাহ্‌কে মনেপ্রাণে জড়িয়ে রাখলে ‘পূর্ব পাকিস্তান’ কোনোদিন ‘বাংলাদেশ’ হতে পারত না। তাই আজ বাংলাদেশের আবার বাঙালির দেশ হতে হলে সবার আগে যার বিরুদ্ধাচরণ করতে হবে সে জিয়ার বিরুদ্ধাচরণ, এবং তা যদি না হয়, এক জিয়া লোকান্তরে, লক্ষ জিয়া ঘরে ঘরে, এই যদি হয়, তাহলে আমরা যেখানে আছি, সেখানেই থাকব, কোনোদিন আর কখনো স্বতঃস্ফূর্তভাবে বলতে পারব না ‘জয় বাংলা’, স্বাধীনতার সেরা কবিতা ৭ই মার্চের ভাষণ আর কখনো স্পন্দন জাগাবে না বাংলার মানুষের স্বাধীনতার উৎসবে। আছি এবং থাকব প্রতিক্রিয়াশীলতার দীর্ঘ ছায়ার নিচে : রাজাকারের রাজনীতির স্থপতি জিয়াউর রহমান জিন্দাবাদ।

মাসুদ করিম

লেখক। যদিও তার মৃত্যু হয়েছে। পাঠক। যেহেতু সে পুনর্জন্ম ঘটাতে পারে। সমালোচক। কারণ জীবন ধারন তাই করে তোলে আমাদের। আমার টুইট অনুসরণ করুন, আমার টুইট আমাকে বুঝতে অবদান রাখে। নিচের আইকনগুলো দিতে পারে আমার সাথে যোগাযোগের, আমাকে পাঠের ও আমাকে অনুসরণের একগুচ্ছ মাধ্যম।

৭৪ comments

  1. শাহীন ইসলাম - ২১ মার্চ ২০০৯ (৫:৩৪ পূর্বাহ্ণ)

    আমার মনে হয় লেখাটি খুব বেশি rhetorical।

    • মাসুদ করিম - ২১ মার্চ ২০০৯ (২:৩৪ অপরাহ্ণ)

      Rhetorical মানে কি? বাংলার মাঝখানে ধুপ করে ইংরেজী শব্দ ব্যবহার করলে অর্থ ধরতে কষ্ট হয়। আমাদের শব্দগুলো যখন আমরা বাক্যে ব্যবহার করি তখন আমরা শব্দার্থ শুধু খুঁজি না বাক্যার্থও খুঁজি। এখন আমার মনে হয় আপনি হয়তো বলতে চেয়েছেন খুব বেশিই অলংকারপূর্ণ/খুব বেশিই অসার। লেখাটিতে মোটেই অলংকার ব্যবহৃত হয়নি, আর লেখা যেহেতু কৃষিকাজ নয় সার দেবার প্রশ্নই ওঠে না।

      • নাগরিক - ২১ মার্চ ২০০৯ (৫:৩৬ অপরাহ্ণ)

        আপনি দেশকে দুটি ভাগে ভাগ করেছেন এখানে – ‘বাঙালী’ ও ‘বাংলাদেশী’। আবার ধর্মীয়ভাবেও ভাগ করে বলেছেন – ‘মুসলমানরা বাংলাদেশী’। তাহলে ধরে নিচ্ছি অন্য ধর্মালম্বীরা সবাই ‘বাঙালী’। এখানে এতসব বিভক্তির উদ্দ্যেশ্য কি দয়া করে বলবেন? আমার জানামতে স্বাধীনতার আগে যেহেতু এই দেশের (পূর্ব বাংলার) কোন নাম প্রতিষ্ঠিত হয়নি, তাই বাংলাভাষী হিসেবে আমরা ‘বাঙালী’ শব্দটি ব্যবহার করতাম। কিন্তু স্বাধীনতার পরে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হওয়াতে জাতি হিসেবে আমরা বাংলাদেশী হব এটাই স্বাভাবিক এবং এই জাতি সব ধর্মের মানুষকে নিয়ে। অথচ আপনি শুধু মুসলমানদের ফেলে অন্যদের নিয়ে আবার বাঙালীত্ত্ব ফিরে পেতে চাইছেন? আপনিতো মশাই আমাদের ভয়ের মধ্যে ফেলে দিলেন। তাহলে বলুনতো দেশের সমস্ত অরাজকতাগুলো কি আপনাদের এ সুপ্ত পরিকল্পনার অংশ?

        • জিজ্ঞাসু - ২২ মার্চ ২০০৯ (২:০৭ পূর্বাহ্ণ)

          @ নাগরিকঃ আপনি লিখেছেন;

          কিন্তু স্বাধীনতার পরে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হওয়াতে জাতি হিসেবে আমরা বাংলাদেশী হব এটাই স্বাভাবিক

          না। এটাই স্বাভাবিক নয়। জাতীয়তাঃ বাংলাদেশী। জাতি হিসেবেঃ বাংগালী। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

        • মাসুদ করিম - ২২ মার্চ ২০০৯ (১০:০২ পূর্বাহ্ণ)

          আমার জানামতে স্বাধীনতার আগে যেহেতু এই দেশের (পূর্ব বাংলার) কোন নাম প্রতিষ্ঠিত হয়নি, তাই বাংলাভাষী হিসেবে আমরা ‘বাঙালী’ শব্দটি ব্যবহার করতাম। কিন্তু স্বাধীনতার পরে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হওয়াতে জাতি হিসেবে আমরা বাংলাদেশী হব এটাই স্বাভাবিক এবং এই জাতি সব ধর্মের মানুষকে নিয়ে।

          আপনার মন্তব্যের উপরের অংশটা সত্যিই চমৎকার। জ্ঞানের এমন পরিসর, লেখার এমন হাত, সত্যিই চোখ খুলে দিলেন আমার।

      • শাহীন ইসলাম - ২১ মার্চ ২০০৯ (৬:১৫ অপরাহ্ণ)

        শুরুতে ক্ষমা চাইছি আমার বাংলার জন্য (এটি মুলত টেকনিক্যাল কারণে)।

        Rhetorical-er …. (Sorry, despite my sincere efforts, I can no more write in Bangla; and this seems to be a technical fault with the present blog, so I prefer to write in English rather than writing Bangla in Roman Alphabet, যতক্ষণ না কম্পিউটারের কৃপায় বাংলা আসে — এখন যেভাবে আসল)

        I’m not sure whether there is a nice term for “rhetoric” or “rhetorical” in Bangla (the noun might be somewhat captured by ” বাগ্মিতা” — কিন্তু তা মনে হচ্ছে সঠিক নয়)। সাদামাটা ভাবে “রিটোরিক্যাল” বলতে আমি বোঝাতে চেয়েছি — যুক্তি দ্বারা বিশ্লেষণের চেয়ে পাঠককে অন্যভাবে প্রভাবিত করার প্রয়াসটা বেশি এখানে।

        আপনি বলেছেন :

        “লেখা যেহেতু কৃষিকাজ নয় সার দেবার প্রশ্নই ওঠে না”

        আমি ঠিক একমত হতে পারলাম না। লেখার মধ্যে অবশ্যই সার দেওয়ার প্রয়োজন আছে; আমার মনে হয় যথেষ্ট চিন্তা করতে হয় — সেটিকে “সার” ধরা যেতে পারে।শশুরুতে ক্ষমা চাইছি আমার বাংলার জন্য (এটি মুলত টেকনিক্যাল কারণে)।

        Rhetorical-er …. (Sorry, despite my sincere efforts, I can no more write in Bangla; and this seems to be a technical fault with the present blog, so I prefer to write in English rather than writing Bangla in Roman Alphabet, যতক্ষণ না কম্পিউটারের কৃপায় বাংলা আসে — এখন যেভাবে আসল)

        I’m not sure whether there is a nice term for “rhetoric” or “rhetorical” in Bangla (the noun might be somewhat captured by ” বাগ্মিতা” — কিন্তু তা মনে হচ্ছে সঠিক নয়)। সাদামাটা ভাবে “রিটোরিক্যাল” বলতে আমি বোঝাতে চেয়েছি — যুক্তি দ্বারা বিশ্লেষণের চেয়ে পাঠককে অন্যভাবে প্রভাবিত করার প্রয়াসটা বেশি এখানে।

        আপনি বলেছেন :

        “লেখা যেহেতু কৃষিকাজ নয় সার দেবার প্রশ্নই ওঠে না”

        আমি ঠিক একমত হতে পারলাম না। লেখার মধ্যে অবশ্যই সার দেওয়ার প্রয়োজন আছে; আমার মনে হয় যথেষ্ট চিন্তা করতে হয় — সেটিকে “সার” ধরা যেতে পারে।

        • রায়হান রশিদ - ২১ মার্চ ২০০৯ (১১:২৮ অপরাহ্ণ)

          বাংলা একাডেমীর ইংরেজী থেকে বাংলা অভিধান (১৯৯৩ সংস্করণ, পৃ. ৬৬১) অনুযায়ী:

          rhetoric: n. ১. অলন্কার (শাস্ত্র)। ২. অলন্কারবহুল (ও আন্তরিকতাবিহীন) ভাষা।

          rhetorical: adj. অলন্কারবহুল; বাগাড়ম্বরপূর্ণ।

          The Concise Oxford Dictionary (tenth edition, p.1227) অনুযায়ী:

          rhetoric: n. the art of effective or persuasive speaking or writing. > language with a persuasive or impressive effect, but often lacking sincerety or meaningful content. [Origin: Greek rhetor].

          rhetorical: adj. 1. of, relating to, or concerned with rhetoric. > expressed in terms intended to persuade or impress. 2. (of a question) asked for effect or to make a statement rather than to elicit information.

          শাহীন ভাইয়ের সাথে একমত। rhetoric এর ভাল বাংলা সম্ভবত নেই। মূলতঃ বাংলা ভাষাভাষীদের জন্য লেখা একাডেমীর অভিধানে শব্দটির অনুবাদ পড়তে গিয়ে একটা কথাই মনে এসেছে। অলন্কার এবং আবেগ বিবর্জন সংক্রান্ত বিবর্তনের (অথবা আধুনিকায়নের) যে স্তরগুলো ইংরেজী ভাষা পেরিয়েছে, বাংলা ভাষা সম্ভবত সেই পথে এগোয়নি (হয়তো চেষ্টাও করেনি)। সেই অর্থে বাংলা ভাষার গুনগত চরিত্রই ইংরেজী থেকে আলাদা, যেমন আলাদা অলন্কারবহুল ধ্রুপদী উর্দু। ভাষার সাথে জড়িয়ে থাকে একটি নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর প্রথা, আবেগ, ভাব এবং তা প্রকাশের ধরণ। একটা ভাল উদাহরণ হতে পারে বাংলা শব্দ “অভিমান”, যার কোন ইংরেজী প্রতিশব্দ আজ পর্যন্ত খুঁজে পাইনি, কারণ, ইংরেজী ভাষীরা সম্ভবত এই বিশেষ আবেগটির সাথে ততটা পরিচিত না। আমার ভুলও হতে পারে।

          • Shaheen - ২২ মার্চ ২০০৯ (৮:২১ পূর্বাহ্ণ)

            @ রায়হান,

            The etymology of “rhetorical” — which you have cited from OED — is quite helpful. (Thanks for that.) The word comes from Greek, but it must be Aristotle (and later Cicero) who had circulated/coined it so widely. He wrote a book on that notion, and more interestingly he wrote a letter to Alexander the Great — who was his student — on that topic. (You can find the letter in Aristotle’s complete works, vol 2, edited by Jonathan Barnes).

            Lawyers must learn rhetoric and I think they do that. But why don’t they learn logic? Why can’t we see any formal course on logic for the lawyers? Or am I in a gap?

  2. nizam uddin - ২১ মার্চ ২০০৯ (৯:১৫ পূর্বাহ্ণ)

    saadhinotarr shera kobita’r kobi bonam bangladeshi musolmaner obishshonbhadito neta niye lekha to dhumpayir dhumpaner motoi hoye gelo.cigarette’er packet’er lebel porun, vabi projonnoy keo poran “songbidhiboddo sottorrkikoron:jatio dui neta r pokai kaata songbidhan theke shotorrkow hakun!”

    • মাসুদ করিম - ২১ মার্চ ২০০৯ (২:৩৯ অপরাহ্ণ)

      ব্লগ প্রশাসককে জিজ্ঞাসা করুন অডিও মন্তব্য করার ব্যবস্থা করা যায় কি না, এতো ব্যবস্থার পরও যদি ইংরেজি অক্ষরে বাংলা মন্তব্য পড়তে হয়! আর যা মন্তব্য করেছেন তা নিয়ে যা বলার তা আমার পোস্টেই আছে। তবে এখানে আরেকটা কথা বলতে চাই, দ্বি-জাতি তত্ত্ব যেমন ভুল, দুনেতা/দুনেত্রীর সমীকরণও ভুল। জিয়াকে চিনুন, খালেদা জিয়াকে চিনুন—আলাদা করে, তাহলে চেনাটা সহজ হবে। যত মেশাবেন মুজিব/জিয়া, হাসিনা/খালেদা : বাংলাদেশের রাজনীতির সহজ পাঠ তৈরী করতে ভুল পাঠ তৈরী করবেন। বাংলাদেশের রাজনীতির মুক্তি সেদিনই হবে যেদিন জিয়া-খালেদা মুছে যাবে বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে। আর তখন যদি আসে নতুন সংগঠন যে সংগঠন বাংলাদেশের স্বাধীনতার পটভূমিকে ৭ই মার্চের ভাষণকে এর মুক্তিযুদ্ধকে হানাদারদের গণহত্যাকে অন্তরে ধারন করেও সামাজিক দুর্বৃত্তায়নের আওয়ামী ভূমিকার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে মানুষকে ধর্মমতনির্বিশেষে সংগঠিত করতে পারবে, তবে সেদিন থেকে বাঙালির বাংলাদেশ সার্থকতা পেতে শুরু করবে।

      • নাগরিক - ২১ মার্চ ২০০৯ (৭:৪৬ অপরাহ্ণ)

        @ মাসুদ

        তবে সেদিন থেকে বাঙালির বাংলাদেশ সার্তকতা পেতে শুরু করবে।

        আপনার এই বাঙালীর মধ্যে কি পশ্চিম বাংলার বাঙালীদেরকেও অন্তর্ভুক্ত করেছেন?

      • Shaheen - ২৩ মার্চ ২০০৯ (২:৫৯ পূর্বাহ্ণ)

        @মাসুদ

        “বাঙালির বাংলাদেশ ” কেন? চাকমা, মুরং, Anglo, উর্দু ভাষী — এদের বাংলাদেশ হতে পারে না?

  3. শামীম ইফতেখার - ২১ মার্চ ২০০৯ (৭:৫৭ অপরাহ্ণ)

    @ নাগরিক,

    তাহলে বলুনতো দেশের সমস্ত অরাজকতাগুলো কি আপনাদের এ সুপ্ত পরিকল্পনার অংশ?

    গত কয়েক দিন ধরেই নিয়মিতভাবে এই ব্লগের আলোচনাগুলো পড়ে যাচ্ছি। অংশগ্রহণ করা হয়ে ওঠেনি। এই ব্লগের পোস্ট এবং মন্তব্যের একটা সাধারণ মান বজায় রাখার চেষ্টা দেখেছি সব সময়। সে জন্যই অনেক আগ্রহ নিয়ে এখানে পড়তে আসি। কিন্তু রায়হান রশিদের “পিলখানা চিন্তাঝড়” সিরিজের পোস্টগুলো ছাপার পর থেকেই লক্ষ্য করছি কিছু নতুন মন্তব্যকারীর উদয় হয়েছে, যারা হয় এই ব্লগের আলোচনার মানের সাথে পরিচিত নন, কিংবা পরিচিত হতে চান না। নাগরিক, আপনার মন্তব্যগুলো আমার কাছে সেই গোত্রের মনে হয়েছে।

    এই পোস্টে এবং পিলখানা পোস্টে (চিন্তাঝড় ৩) আপনার মন্তব্যগুলো ভাল করে পড়লাম। লক্ষ্য করলাম আপনি বার বার “আপনারা” “আপনাদের” এই শব্দগুলো ব্যবহার করছেন, কোন ধরণের সংযম, পরিমিতি বা ব্যাখ্যা ছাড়াই। কোন একজনের মন্তব্যের উত্তর দেয়ার সময় আপনার যেন চেষ্টা থাকে ঢালাওভাবে পুরো ব্লগকে এবং এখানকার সব লেখককে একটা ছকে ফেলে প্রচার করতে। সেই সাথে লক্ষ্য করেছি, যে আপনি খুব সচেতনভাবে চেষ্টা করেন নানা ধরনের ধুয়া তুলে যুক্তিতর্ক বা বিশ্লেষণ থেকে পালিয়ে বেড়িয়ে কিছু ‘উপর উপর’ মন্তব্য দিতে। আপনার কয়েকটা মন্তব্য পড়ার পর এখন কিছুটা ক্লান্তিই বোধ করছি।

    ভাই, কোন বক্তব্য থাকলে দয়া করে ঝেড়ে কাশুন, সুনির্দিষ্টভাবে সুনির্দিষ্ট ব্যক্তিকে উদ্দেশ্য করে লিখুন। আর লেখার সময় সম্ভব হলে ঢালাও মন্তব্য না করে সেটি কেন বলছেন সুনির্দিষ্টভাবে বলুন, এবং তা কিসের ভিত্তিতে বলছেন সেটাও ব্যাখ্যা করুন। তাতে আমরা সবাই অংশগ্রহণে উৎসাহিত হই। যেমন, ‘আপনারা’ বলতে কাদের বুঝাচ্ছেন? ‘সুপরিকল্পিত’ বলতে কি বুঝাচ্ছেন? কোন্ ‘অরাজকতার’কথা এবং তার সাথে ঠিক কোন্ ধরনের ‘পরিকল্পনার’ কথা বুঝাতে চাচ্ছেন? গত কয়েক বছরে দেশের অরাজকতাগুলো কারা করেছে, কেন করেছে, এটা সবাই জানি। ধর্মকে এদেশের রাজনীতিতে কারা ব্যবহার করে তাও অজানা নেই। কিছু কিছু নাদান এখনো তা জানে না। নানা ধরনের ধুয়া তুলে আমাদের উল্টো সিধা বুঝাবার চেষ্টা করে। আবার এই কাপুরুষের দলের অতটুকু সৎসাহসও নেই স্পষ্ট করে নিজের যুক্তি বিশ্লেষণ তুলে ধরার। শুধু কথা দিয়েই এদের চিনে নেয়া যায়।

    এই ব্লগে আমরা কেউ কেউ অনেক আশা নিয়ে আসি। বিশ্লেষণধর্মী কিছু পড়বার জন্য। সারবস্তুহীন ফালতু মন্তব্য পড়ার জন্য না। সে সবের জন্য অন্য ব্লগ সাইট আছে, সেগুলোর একটা বেছে নিন দয়া করে।

    • নাগরিক - ২১ মার্চ ২০০৯ (১১:৩৫ অপরাহ্ণ)

      @শামীমঃ ‘আপনারা’ বলতে আমি বোঝাই এখনকার রাজনীতিবিদদের ও তাদের পৃষ্ঠপোষকদের যা কিনা এই ব্লগের সংকীর্ণ গন্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। আর খোলাসা করে লেখা বলতে কি আপনি কোন রাজনৈতিক দলের পক্ষ নিয়ে লেখার কথা বলছেন যাতে আক্রমণ করতে সুবিধা হয়? তাই যদি হয়, তবে আপনাকে হতাশ হতে হবে। কারণ আমি এখনকার রাজনীতিকে প্রচণ্ড রকম ঘৃণা করি।
      আপনি লিখেছেনঃ

      এই ব্লগে আমরা কেউ কেউ অনেক আশা নিয়ে আসি। বিশ্লেষণধর্মী কিছু পড়বার জন্য। সারবস্তুহীন ফালতু মন্তব্য পড়ার জন্য না। সে সবের জন্য অন্য ব্লগ সাইট আছে, সেগুলোর একটা বেছে নিন দয়া করে।

      এর মানে এই দাঁড়ায়, মাসুদ করিমের লেখা আপনার কাছে বিশ্লেষণধর্মী মনে হয়েছে, আর সেই লেখার বিপক্ষে যারা লিখেছে তা আপনার কাছে সারবস্তুহীন ফালতু মনে হয়েছে। কিন্তু পরিতাপের বিষয় আমার কাছে তার লেখা স্ববিরোধী এবং খাপছাড়া মনে হয়েছে। xxxxxxxxxxxxxxxxxxx। তাহলে আপনি পাঠক হিসেবে আপনার ওজন কতটুকু অনুমাণ করে নিন।
      এই ব্লগটির নাম মুক্তাঙ্গণ। তাই মুক্ত আলোচনাতে অভ্যস্ত হউন। শুধু আপনার পছন্দের লেখা আশা করা বোধ হয় ঠিক না। আর যদি আশাই করেন তবে আপনার জন্যও দরজা খোলা আছে বিকল্প পথের।

    • মাসুদ করিম - ২৫ মার্চ ২০০৯ (৮:২৭ পূর্বাহ্ণ)

      হ্যাঁ, ঠিকই বলেছেন শামীম ইফতেখার, বেশ কয়েকজন মুক্ত হাওয়ার ধোঁয়াপন্থী মুক্তাঙ্গনের মন্তব্য ঘরে দমবন্ধ পরিবেশ তৈরি করছেন। আপনি যথার্থ স্মোক ডিটেক্টরের কাজ করেছেন। ফোরাম/চ্যাট সাইটের মানসিকতা নিয়ে অনেকেই আজকাল ওয়েবলগ করছেন এবং ব্লগে মন্তব্য করছেন। কথার পিঠে কথা বলা ছাড়া এদের আর কোনো গুণতো প্রকাশ পাচ্ছেই না, বরং মন্তব্য ঘরের সৌন্দর্যহানি হচ্ছে। আপনি তাদেরকে সঠিক দিক নির্দেশনাই দিয়েছেন।

      সে সবের জন্য অন্য ব্লগ সাইট আছে, সেগুলোর একটা বেছে নিন দয়া করে।

  4. মুক্তাঙ্গন - ২১ মার্চ ২০০৯ (১০:৪৬ অপরাহ্ণ)

    @ শাহীন ইসলাম

    I can no more write in Bangla; and this seems to be a technical fault with the present blog, so I prefer to write in English rather than writing Bangla in Roman Alphabet, যতক্ষণ না কম্পিউটারের কৃপায় বাংলা আসে — এখন যেভাবে আসল)

    ঠিক কি সমস্যা হচ্ছে একটু বিস্তারিত জানাবেন প্লীজ। কয়েকভাবে বাংলা কীবোর্ড সচল করা যায়। যেমন কমেন্ট এরিয়ার ঠিক নিচে সর্বডানের বোতামটি ক্লিক করে বাংলা এবং ইংরেজী কীবোর্ড সচল করা যায়। বাংলা সচল হলে এর পর যে কোন একটি বাংলা কীবোর্ড এর বোতাম ক্লিক করলেই সে কীবোর্ডটি সচল হবে।
    বিকল্পভাবে, আপনি যদি উবুন্তু ব্যবহারকারী হয়ে থাকেন তাহলে ctrl+space চেপে বাংলা এবং ইংরেজীর মধ্যে কীবোর্ডের আউটপুট পরিবর্তন করে নেয়া যায়। কিন্তু তার আগে, উবুন্তুতে বাংলার জন্য প্রয়োজনীয় সেটাপ করে নিতে হবে। এখানে এবং এখানে ধাপগুলো দেয়া আছে।
    আশা করি এতে সমস্যার সমাধান হবে। নাহলে ইমেইলে জানাতে দ্বিধা করবেন না।
    ধন্যবাদ।

  5. Shaheen - ২২ মার্চ ২০০৯ (৭:৩০ পূর্বাহ্ণ)

    @ মুক্তাঙ্গন

    (১) মনে হয় ইংরেজি থেকে বাংলায় শিফট করতে গিয়ে আর বাংলায় শিফট হয়নি । হয়তো টেকনিকটি এখনো ধরতে পারিনি। তবে এখানে একটি preview option এবং HTML option থাকা উচিত।

    (২) মুক্তাঙ্গন যদি মুক্ত চিন্তার অঙ্গন হয়ে থাকে তাহলে ভাষার barricade এখানে থাকা উচিত নয়। বাংলায় লিখতে হবে এমনটি নীতি (policy) থাকা উচিত নয়। ভাষা আমাদের চিন্তায় সহায়ক বটে (even it might be essential for our thoughts), কিন্তু সে সঙ্গে এটি বাধাও হতে পারে। ভিন ভাষায় মানুষ লিখেছে, যেমন লাতিন, সংস্কৃত … (The problem has started, I can’t shift back to Bangla now)

    • মাসুদ করিম - ২২ মার্চ ২০০৯ (১০:১৩ পূর্বাহ্ণ)

      চেষ্টা করুন, পারবেন। বাধা ভাবলে কোনোদিন পারবেন না। নিজের ভাষা, টাইপ করতে দিলেন আর কি কিছু মূল্যবান সময়। কত কত জ্ঞান আহরণ করতে কত সময় দিচ্ছেন, একটু টাইপ এমন কি হাঙ্গামা ঘটাবে। তবে একটা কথা জানবেন: সময়ের চেয়েও চিন্তার চেয়েও ভাষা মূল্যবান। আর তাই এতো বাঙালীর কথা বলছি। অসার হলে, বাগাড়ম্বর হলে, ফাঁপানো হলে ক্ষমা করবেন। rhetorical-এর সাধ্যমত তিনটা বাংলা দিলাম, ভালো লাগলে যথাযথ হলে ব্যবহার করবেন, খুব ভালো লাগবে। ভালো থাকবেন।

      • Shaheen - ২২ মার্চ ২০০৯ (৭:৩৪ অপরাহ্ণ)

        বানানগুলও ঠিক করে দেওয়ার জন্য ওনেক ধন্যবাদ।

        এবার একটি Theoretical problem’এ আসা যাক। এক ভাবে দেখলে আমার নিজের ভাষা বাংলা নয়, বরং চাটগাইয়া।
        আপনি হয়ত বলবেন একটি language আরেকটি dialect। ধরে নিলাম language আর dialect এর মধ্যে বসতুনিষঠ পারথক্য আছে। তাহলে বেশ সমভাবনা থেকে যায়: চাটগাইয়া বাংলা ভাষার ডাইলেকট নয়।ড: মু: শহিদুললাহ নাকি চাটগাইয়া আর সিলেটি’কে বাংলার dialects হিসাবে গন্য করেননি।আর — আরো গোড়ার দিকে গেলে — language আর dialect এর মধ্যে বসতুনিষঠ পারথক্যের পরিবরতে যা আছে তা হলো মুলত historical — history of geopolitics। বলা হ্য় ” a language is a dialect with an army” — এবং ব্যাপারটি তাই।
        এবার “historical” বিশেষণটির দিকে নজর দেওয়া ্যাক। এ বিশেষণটি ব্যাবহার করে আমি “accidental” বা “contingency” … (Gosh! The same old problem, I cannot switch back to English). ..”historical” means here something “being accidental” or “contingent” — and with that meaning it is far from what you meant by “ইতিহাসের অমোঘ নিয়মে”।

        আমার উপরের যুকতি যদি ঠিক হয়ে থাকে, তাহলে বেশ কয়েকটি নি ..(same problem)
        If I am right with my above argument then we have to think about a number of implications:

        (1) If Bangla is not my own language (in certain sense of “own”) then why should I write in Bangla?

        (2) Historically Chittagong had been a part of Myanmar (until a war between Burma and British). Culturally we the Chittagongians had more in common with the Burmese. Our language is different, our girls used to wear “thamis” instead of “saris”, we have “shampans”, and we like sticky rice. And so forth; we may find more similarities or commonalities if we keep on digging. Capitalizing on this observation a movement may grow up in future : “Have an independent Chaittagong” (I would not surprise if SKC ever argues in this vein). Will that be a “separatist” movement or a “nationalist” movement? Is there really a difference — other than “I like it” or “I don’t like it” — between “separatism” and “nationalism” ?

        (3) Are we not suppressing our tribal minorities in the name of “Bangalitto”? Perhaps our atrocities have sometime far surpassed what the Pakistanis did to us? Haven’t we broken the Geneva Convention by forcefully migrating plain landers into the hill tracts (like Israel with Palestine)? This was of course done during Zia’s rule. But Sheikh Mujib has to bear some responsibility for that too. It is him who denied their distinctive identities at the outset (The story has it that Mujib told Shantu Larma “tora’o to Bangali”).

  6. Shaheen - ২৩ মার্চ ২০০৯ (১২:০৭ পূর্বাহ্ণ)

    আমার আগের মনতব্যে (২২ মার্চ ২০০৯, রবিবার; সময়: ৭:৩৪ অপরাহ্ণে লেখা) আর একটি জিনিষ পরিষকার করে দেওয়া উচিত ছিল। এখানে দেখি বাংগালি আর বাংলাদেশি — তথা A (=AL) বনাম B (=BNP) — নিয়ে একটি ঝগড়া চলছে।আমি লিখেছিলাম

    Are we not suppressing our tribal minorities in the name of “Bangalitto”?

    আমি “Bangalitto”পরিবরতে “Bangladeshi” লিখতে পারতাম , তাতে আমার মনে হয়’না আমার মুল ্যুকতির কোনো উললেখজোগ্য হেরফের হতও। ওতএব “Bangladeshi”-র জন্য প …(same problem)… So I would like to ask similar question to Bs

    Are we not suppressing our tribal minorities in the name of “Bangaladeshi”?

    Let us not forget that though Mujib had sowed the problem it was Zia who went for Israel like move: let us push some settlers from plain land in the hilltracts.

  7. রায়হান রশিদ - ২৩ মার্চ ২০০৯ (১২:১৯ পূর্বাহ্ণ)

    ১.
    মাসুদ ভাইয়ের লেখার সাথে আমরা যারা পরিচিত তারা তাঁর আগের লেখাগুলো এবং সেগুলোর স্বকীয় ধরণ দেখে একেক বার চমকে উঠেছি, যেভাবে তিনি প্রতিবারই (লেখার স্টাইল নিয়ে) আমাদের প্রচলিত ধারণার গন্ডীকে একটু একটু করে বাইরের দিকে ঠেলেছেন তা দেখে। মনে পড়ে ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে মাসুদ ভাইয়ের লেখাটার কথা। অনেকেই পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা লিখেছি আমরা বিষয়টি নিয়ে, আর মাসুদ ভাই লিখেছেন চারটি শব্দ: “বাঁচায় ঋণ, মারে কিস্তি”

    ২.
    মাসুদ ভাই একটা গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার অবতারণা করেছেন। সংক্ষিপ্ত, কিংবা অতি সংক্ষিপ্তই হয়তো হয়ে গেছে সেটা কারও কারও মতে। কিন্তু এই বিষয়টি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে হয়। পক্ষ কিংবা বিপক্ষ চিহ্নিত করে নয়, বরং সত্যানুসন্ধানের উদ্দেশ্য মাথায় রেখে। মাসুদ ভাই এর লেখার মাধ্যমে সে সুযোগটি কিন্তু তৈরী হয়েছে। আর সত্যানুসন্ধানের এই প্রক্রিয়ায় আমরা যেটা করতে পারি তা হল একে একে ইতিহাস এবং রাজনীতির সবগুলো মীথ এবং প্রচারণার প্যাটার্ণকে তুলে এনে যুক্তি-তথ্য-বিশ্লেষণের অনুবীক্ষণের নিচে রাখতে। এবং সে প্রক্রিয়া দল মত ব্যক্তি নির্বিশেষে সকল রাজনৈতিক দল এবং নেতার ক্ষেত্রেই প্রয়োগ করতে হবে। মাসুদ ভাইয়ের এই পোস্টের সব বক্তব্যের সাথে সবাইকে যে একমত হতে হবে, তেমন তো নয়। এখানকার অনেক উক্তি, দাবীই অনেকের কাছে সরলীকৃত মনে হতে পারে, এমনকি অন্যায্যও মনে হতে পারে কারো কারো কাছে। কিন্তু তাতে এই বিষয়গুলোর প্রাসঙ্গিকতা এবং তা নিয়ে আরও গভীর আলোচনা বিশ্লেষণের প্রয়োজনীয়তা তো শেষ হয়ে যায়না।

    ৩.
    রাজনীতি আমাদের বাস্তবতা, আমরা চাই বা না চাই। সেই বাস্তবতাকে আমরা কুৎসিত বলতে পারি, তার থেকে দুরে দুরে পালিয়ে বেড়াতে পারি। কিন্তু তাতে তো আর রাজনীতির বাস্তবতা আমাদের কাউকে ছেড়ে যাবে না! বরং মনে করি রাজনৈতিক বোধ, চেতনা এবং অংশগ্রহণের অবর্তমানে যা গড়ে ওঠে তা হল এক ধরণের স্যাঁত স্যাঁতে পরিবেশ। কোন একটা জায়গা আমরা হয়তো বিচ্ছিন্নতার বিলাসিতায় ছেড়ে দেয়ার কথা ভাবতে পারি, কিন্তু তাতে সে জায়গাটা যে খালি থাকবে সেটার মনে হয় কোন নিশ্চয়তা নেই। অভিজ্ঞতা বলে, এই জায়গাগুলো কখনো খালি থাকেনি!

    ৪.
    শাহীন ভাই সম্ভবত rhetoric শব্দটার অবতারণা করে উত্থাপিত বিষয়গুলোর আরও ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের (analytical rigour) প্রয়োজনীয়তার দিকটি বোঝানোর চেষ্টা করেছেন। আমরা এমন এক বাংলাদেশে বাস করি, যেখানকার বাতাস পর্যন্ত ভারী হয়ে রয়েছে ৩৮ বছরের নিরবচ্ছিন্ন প্রচারণায়। সত্য-মিথ্যার সীমারেখাগুলো ক্রমশ ঝাপসা হতে হতে প্রায় মিলাতে বসেছে। এখন আমাদের টিভি খুললেই নিজামী-কামরুজ্জামানদের রক্তে আগুন ধরানো সব দম্ভোক্তি শুনতে হয়। এখন জনৈক জেনারেলের আকাশকুসুম মতলবী প্রচারণাকেও (ইমেইলকেও) সময় ব্যয় করে খন্ডন করতে হয়! তাই ভাবি, এটা হয়তো ‘দুই যোগ দুই চারকে’ নতুন করে প্রমাণ করার যুগ; হয়তো চাকাকেও নতুন করে আবিস্কার করার যুগ। দুঃখজনক, কিন্তু সত্যি!

    সেটাই না হয় এবার করে দেখাবে এই দেশের মানুষেরা।

    • শাহীন - ২৪ মার্চ ২০০৯ (১২:১৪ পূর্বাহ্ণ)

      @ রায়হান

      আমি “rhetorical” বিশেষণটি ব্যবহার করেছিলাম। আরো যুতসই হতো যদি “empty rhetoric” ব্যবহার করতাম।

  8. অবিশ্রুত - ২৪ মার্চ ২০০৯ (১২:০২ পূর্বাহ্ণ)

    ইতিহাসে জিয়ার অবস্থানের সূত্রে আলোচনায় বাঙালি, বাঙালি মুসলমান, বাংলাদেশী ইত্যাদি প্রসঙ্গ আসছে।
    নাগরিকত্বের দিক থেকে আমরা বাংলাদেশী, এতে কোনও সংশয় নেই। একইভাবে আমাদের কেউ যদি এখন আমেরিকা বা ইউরোপের কোনও দেশে নাগরিকত্ব নেন, তা হলে তিনি নাগরিকত্বের দিক থেকে আমেরিকান বা অন্য কিছু হবেন, কিন্তু জাতীয়তা পাল্টাবে না, বরং জাতীয়তার সূত্রে তিনি ওই দেশের এথনিক গোষ্ঠীভুক্ত হয়ে যাবেন। ব্রিটিশ হওয়া আর ব্রিটিশ সিটিজেন হওয়ার মধ্যে যোজন-যোজন তফাৎ।
    এই হিসেবে, বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে, আমরা অবশ্যই বাংলাদেশী। কিন্তু তা আমাদের নাগরিকতার দিক থেকে; জাতীয়তার দিক থেকে নয়। এখন, এই নাগরিকতাকেই আমাদের জাতীয়তা করে তোলা হয়েছে। এই জাতীয়তার পরিপ্রেক্ষিত তৈরি করা হয়েছে একটি যুক্তি টেনে,- আমাদের দেশে চাকমা, মারমা প্রভৃতি জাতিগোষ্ঠী রয়েছে এবং সবাইকে নিয়ে আমাদের একটি জাতীয়তাবোধ,- বাংলাদেশী জাতীয়তাবোধ। এইভাবে আসলে কেবল বাঙালির জাতিসত্বাকেই হত্যা করা হচ্ছে না, তাদের জাতিসত্বাকেও হত্যা করা হচ্ছে। দীর্ঘদিন থেকে আমাদের এক শ্রেণীর বুদ্ধিজীবী বলে আসছেন, বাঙালি জাতীয়তাবাদের মাধ্যমে আদিবাসীদের জাতিত্ববোধকে খর্ব করা হচ্ছে। কিন্তু এরও চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো, অনেক আগে থেকেই আদিবাসীদের ধর্মান্তকরণের মাধ্যমে, তাদের ওপর ধর্মজ আগ্রাসন চালানোর মাধ্যমে তাদের জাতিসত্বা ও সংস্কৃতিকে নষ্ট করা হচ্ছে। এই ক্ষেত্রে বাঙালী জাতীয়তাবাদের কোনও ভূমিকাই নেই। শেখ মুজিবুর রহমান রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে তাদের বাঙালি জাতীয়তার সঙ্গে সম্মিলিত হতে বলেছিলেন এবং সেখান থেকে ঘটনা অন্যদিকে মোড় নেয়। এইভাবে রাষ্ট্রের একটি অতিরাষ্ট্র হয়ে ওঠার প্রবণতার বহিঃপ্রকাশ দেখি আমরা রাজনীতিতে, যার ফলে চাকমা ও অন্যান্য জাতিসত্বার মানুষরা জাতীয়তা বিকাশের প্রশ্নে সংগঠিত হতে থাকেন। কিন্তু আমাদের আদিবাসীদের দীর্ঘদিন থেকেই যেভাবে মগজ ধোলাই করে খ্রিস্ট্রান বানানো হয়, যেভাবে মুসলমান বানানো হয় এবং তারপর ধর্মজ সংস্কৃতি চাপিয়ে আদিবাসী সংস্কৃতির মর্মবস্তু নষ্ট করা হয়, সেভাবে কেউ তাদের কখনও বাঙালি সংস্কৃতি শেখাতে গেছেন কি? আর জিয়াউর রহমান এই প্রশ্নে কি করেছেন, তা আমরা সবাই জানি। তিনি তাদের বাংলাদেশী বানিয়েছেন, তাদের বাংলাদেশী বানানোর জন্যে সামরিক বাহিনীকে ব্যবহার করেছেন এবং এভাবে আমাদের সামরিক বাহিনী একটি নির্যাতক বাহিনী হিসেবে ইতিহাসে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। আর বাংলাদেশী হওয়ার মধ্যে দিয়ে তারা,- আদিবাসীরা তাদের সংস্কৃতি, ধর্ম, ভূগোল সব কিছুর ওপরেই অধিকার হারাতে বসেছে।
    অনেকে সর্বভারতীয় জাতীয়তার কথা টেনে আনেন, বলেন সে দেশের মানুষ তো তাদের জাতীয়তা ভারতীয় বলে, তা হলে আমাদের জাতীয়তা বাংলাদেশী হতে অসুবিধা কোথায়?
    প্রশ্ন হলো, তারা যে জোড়াতালি দিয়েছে, আমরাও কি সেই জোড়াতালি দিতে যাব? এই জোড়াতালির ফসল ভারতের বিভিন্ন বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন। আরও একটি প্রশ্ন, কেবল এই জাতীয়তার প্রশ্ন এলেই কেন জিয়াপন্থীরা ভারতীয় রাষ্ট্রতত্ত্ব অনুসরণ করতে উৎসাহী হয়ে ওঠেন? বাংলাদেশের বিদ্যমান রাষ্ট্রীয় কাঠামোর মধ্যে আমরা যদি সকল জাতিসত্বাকেই স্বীকৃতি দেই, তা হলে অসুবিধা কোথায়?
    মাসুদ করিম জিয়াউর রহমানকে নিয়ে একটি সংক্ষিপ্ত স্কেচ একেছেন, বলতে পারি। এই স্কেচে একটি বিষয় (নিশ্চয়ই তাঁর জানা আছে, সংক্ষেপনের কারণে হয়তো বিভিন্ন দিক বাদ পড়েছে) সংযোজিত হলে ভালো হতো। যেমন, মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন স্মৃতিচারণ ও তথ্যগ্রন্থ আমাদের জানাচ্ছে, মুক্তিযুদ্ধের সমরপতি কর্নেল ওসমানী শৃঙ্ক্ষলা ভঙ্গের দায়ে জিয়াউর রহমানকে কয়েকবার বহিষ্কার করার উদ্যোগ নেন, কিন্তু মুক্তিযুদ্ধে এ সিদ্ধান্তের তাৎক্ষণিক নেতিবাচক প্রভাব চিন্তা করে সে সিদ্ধান্ত আর কার্যকর করা হয়নি। কর্নেল ওসমানী ছিলেন সুশৃঙ্ক্ষল ব্রিটিশ সামরিক বাহিনীর প্রশিক্ষণে প্রশিক্ষিত, তাই জিয়াউর রহমান যখন জেড ফোর্স গঠন করেন তখন তা একদমই মেনে নিতে পারেননি। প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন ও তাঁর মন্ত্রিসভা এ পরিস্থিতি সামাল দেয়ার জন্যে পাশাপাশি এস ফোর্স ও কে ফোর্স গড়ে তোলার জন্যে শফিউল্লাহ ও খালেদ মোশাররফকে নির্দেশ দেন। এইভাবে সামরিক বাহিনীর একাংশকে ব্যক্তিবাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার যে অপচেষ্টা জিয়া করেছিলেন, তা ঠেকানো হয়।
    যুদ্ধকালে প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকার কারণেই বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে জিয়াউর রহমান সিনিয়র হওয়ার পরও সেনাপ্রধান হতে পারেননি; সেনাপ্রধান করা হয় শফিউল্লাহকে।
    এই জিয়াউর রহমান এবং একাত্তরের আরেক বিতর্কিত ব্যক্তি মুশতাক আহমেদ দু’জনের সম্মিলনে স্বাধীন বাংলাদেশে আমরা কি বাঙালি, কি আদিবাসী সবাই যার যার জাতীয়তা হারিয়ে বাংলাদেশীর খাতায় নাম লেখাই! মানিকে মানিক চেনে, তাই জিয়াউর রহমান খোন্দকার মোশতাককে চিনতে পেরেছিলেন, যেমন মোশতাকও চিনতে পেরেছিলেন জিয়াউরকে।
    মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন। ধন্যবাদ মাসুদ করিম, এসব মনে করিয়ে দেয়ার জন্যে। এইসব আমাদের বার বার মনে হওয়া দরকার, মনে করা দরকার।

    • শাহীন ইসলাম - ২৪ মার্চ ২০০৯ (৭:৩৫ অপরাহ্ণ)

      লালন শাহীর গানটি দিয়ে শুরু করা যাক,

      সব লোকে কয় লালন কি জাত সংসারে
      লালন কয় জাতের কি রূপ দেখলাম এ নজরে
      সুননত দিলে হ্য় মুসলমান
      নারীর তবে কি হয় বিধান?
      বামন পরে পঐতে প্রমাণ
      বামনী চিনবি কোন প্রকারে?

      লালন জাত কি তা দেখেন’নি। তাহলে কি জাতের অস্তিত্ব নিয়ে লালন সন্দিহান ছিলেন? না তিনি জাতিতে জাতিতে ভেদাবেদের চেয়ে আরও বড় রকমের ভেদাভেদের দিকে ইংগীত করেছিলেন? না একজন mystic হিসাবে সব ভেদাভেদের দিকে কটাক্ষ করেছিলেন? হয়ত তিনি সব কিছু বুঝিয়ে ছিলেন।

    • শাহীন ইসলাম - ২৫ মার্চ ২০০৯ (১:০৩ পূর্বাহ্ণ)

      লালন শাহীর গান থেকে আপাতত অবিশ্রুেতর লিখার (২৪ মার্চ ২০০৯, মঙ্গলবার; সময়: ১২:০২ পূর্বাহ্ণ) দিকে ফেরা যাক।দুটি ভুল প্রথমে চোখে পরে। প্রথমটি তেমন বড় ভুল নয়, হয়তবা একটা খটকা। তিনি লিখলেন,

      ব্রিটিশ হওয়া আর ব্রিটিশ সিটিজেন হওয়ার মধ্যে যোজন-যোজন তফাৎ।

      ব্রিটিশ বলতে আমরা সচারাচর ব্রিটিশ নাগরিক বুঝি। ব্রিটিশ জাতি কথাটা’র চালু নেই, এমন কি তা হ্য়তো ভুল; এর পরিবরতে যা শুনি তা হলও: English, Scottish, Irish, …ইত্যাদি। সালমান রুশদীকে “Briton” বলা হয় — যার মানে ব্রিটিশ নাগরিক; তা্নকে an Indian Briton’ও বলা যেতে পারে; পাশাপাশি Canadian Bangladeshi, Afro-American ইত্যাদি শোনা যায়।

      অবিশ্রুতের আরেকটি ভুল, এবার তা খুব একটা গৌন না। তিনি লিখলেন,

      দীর্ঘদিন থেকে আমাদের এক শ্রেণীর বুদ্ধিজীবী বলে আসছেন, বাঙালি জাতীয়তাবাদের মাধ্যমে আদিবাসীদের জাতিত্ববোধকে খর্ব করা হচ্ছে। কিন্তু এরও চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো, অনেক আগে থেকেই আদিবাসীদের ধর্মান্তকরণের মাধ্যমে, তাদের ওপর ধর্মজ আগ্রাসন চালানোর মাধ্যমে তাদের জাতিসত্বা ও সংস্কৃতিকে নষ্ট করা হচ্ছে।

      এখানে সুরটি এ রকম: “ক’এর চেয়ে খ’এর দোষ বেশী, অতএব ক’কে দোষ দেওয়া যাবে না”।
      এরকম যুক্তিতে প্রচছন্ন ভাবে যে ক’এর দোষটি ধরা পরে তা যেন তার্কিক বুঝতে পারছে না (আমাদের সামরিক অফিসাররা অনেক সময় এ রকম যুক্তি দিয়ে থাকেন)।
      এরকম আর একটি কাছাকাছি সুর: “না না তিন লাখ নয়, (মাত্র) তিরিশ হাজার লোক স্বাধিনতা যুদ্ধে মারা হয়েছে”। যেন সংখ্যা কমলে আর দোষ থাকে না। অন্তত পক্ষে — ৈনতিক বিবেচনায় এ ধরনের যুক্তি গ্রহনীয় নয়।
      অভিশ্রুতের যুক্তিতে আরেকটি সমস্যা,এক ধরনের conceptual problem। যদি আমি একজন বাংগালী হিন্দু ইসলাম ধর্ম গ্রহন করি তবে আমার বাংগালীত্বের কোন পরিবর্তন হবে না। তা হলে কি আমি একজন মুরং খ্রীষ্টান ধর্ম গ্রহন করি আমি কি অমুরং হয়ে যাব?

      • শাহীন ইসলাম - ২৫ মার্চ ২০০৯ (৫:৫৭ পূর্বাহ্ণ)

        না, এখানে কারো ভুল ধরা যবেনা দেখছি। এ ব্লগে দুটি বিভক্তি সুস্পষ্ট, এক দল A আর এক দল B। যুক্তির কথা বল্লে, যুক্তির ফাটল ধরিয়ে দিলে দেখি অনেকে অখুশী হচ্ছেন। এখানে লালনের স্থান নেই। এ যদি tip of the iceberg হয়ে থাকে তা হলে আমাদের সামনে আন্ধকার যুগ। (রবীন্দ্রনাথের “সবুজের অভিযান” এখানে কাজ করবে না মনে হচ্ছে।)

        তারপরও দেখি একটি পোসিটিভ একাউন্টের outline দেওয়া যায় কি না। (আমাকে এখন প্লেন বদলাতে হছ্ছে, তাড়াতাড়ি শেষ করতে পারলেই যেন বাচি)। কয়েকটি পয়েন্ট বা থিসিস :

        (১) বাংলাদেশ একটি Nation-state বা জাতি-রাষ্ট্র (A ও B উভয়ে কিন্তু তা সমর্থন করে)।কম বেশী পৃথিবীর সব রাষ্ট্র এখন জাতি-রাষ্ট্র, কিংবা জাতি-রাষ্ট্র হিসাবে পরিগনিত হতে চায়। একটি জাতি থেকে যে রকম রাষ্ট্র হয়, আবার একটি রাষ্ট্র থেকে একটির জাতির উদ্ভব হতে পারে। এক ধরনের চক্র অবশ্য এখানে বিরাজমান, অথবা প্রতীয়মান হতে পারে।আমি abstractly ব্যাপারটিকে এ ভাবে দেখছি,

        pre-state —-> State —–>post-state
        | |
        | |
        বাংগালী বাংলাদেশী

      • অবিশ্রুত - ২৫ মার্চ ২০০৯ (১১:৩২ পূর্বাহ্ণ)

        ধন্যবাদ শাহীন, ভুল ধরিয়ে দেয়ার জন্যে। আপনি জানেন, এখানে মন্তব্য পেশ করার আগে দেখে নেয়ার সুযোগ (প্রিভিউ) নেই। আর থাকলেও কখনও কখনও তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় এরকম ভুল হতে পারে। তবে বিষয়টির মূল সুর আশা করি আপনি ধরতে পেরেছেন।
        দ্বিতীয় প্রসঙ্গে আমি বলব, আমি ক-এর ব্যাপারকে খ-এর ব্যাপার দিয়ে ন্যায্যতা দিতে চাইনি। আমার মোটিভ ছিল বিষয়টি-যে অন্ধকারে আছে, সে ব্যাপারে ইশারা দেয়া। আপনি নিশ্চয়ই এ-বাক্যগুলি খেয়াল করেছেন :

        শেখ মুজিবুর রহমান রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে তাদের বাঙালি জাতীয়তার সঙ্গে সম্মিলিত হতে বলেছিলেন এবং সেখান থেকে ঘটনা অন্যদিকে মোড় নেয়। এইভাবে রাষ্ট্রের একটি অতিরাষ্ট্র হয়ে ওঠার প্রবণতার বহিঃপ্রকাশ দেখি আমরা রাজনীতিতে, যার ফলে চাকমা ও অন্যান্য জাতিসত্বার মানুষরা জাতীয়তা বিকাশের প্রশ্নে সংগঠিত হতে থাকেন।

        বলাবাহুল্য, এখানেও কিন্তু আমার শব্দগত ভুল রয়েছে। দ্বিতীয় বাক্যে ‘যার ফলে’ এই শব্দ দু’টির বদলে ‘এর প্রতিক্রিয়ায়’ পড়তে হবে। এবং এই বাক্যগুলি বাঙালি জাতীয়তাবাদ রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে কী বিপর্যয় ডেকে আনছে (রাষ্ট্রের অতিরাষ্ট্র হয়ে ওঠা), তাও সংক্ষেপে তুলে ধরেছে বলে আমার মনে হয়। বিস্তারিত আলোচনা করতে গেলে তো আরও অনেক ব্যাপারই আসবে। যেমন ধরুন পার্বত্য অঞ্চলের ক্ষুদ্র জাতিসত্বার আন্দোলনে কি চাকমা-রা অন্যান্য ক্ষুদ্র জাতিসত্বাগুলোর ওপর সূক্ষ্ম ও নীরব এক আধিপত্যবাদ প্রতিষ্ঠা করেনি? আমার তো মনে হয়, এসব বিষয়ও আলোচনা করার মতো।
        আর একজন মানুষ যখন সাধারণভাবে ধর্মান্তরিত হয় তখনকার সঙ্গে ক্ষুদ্র জাতিসত্বার এই মানুষদের ধর্মান্তকরণের (যা সংগঠিত, সংঘবদ্ধ এবং ক্ষেত্রবিশেষে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত) বেশ বড় তফাৎ রয়েছে বলেই আমি মনে করি। এবং তা তাদের সংস্কৃতিকে ছিন্নভিন্ন করছে। মুসলমান হওয়ার পর তাকে যদি কেউ ছবক দিতে আসে, শহীদ মিনারে ফুল দেয়া হারাম অথবা হিন্দুয়ানী, তা হলে সংস্কৃতিতে রক্তক্ষরণ হয় বৈকি। ইন্দোনেশিয়ার মুসলমানরা এখনও উলুধ্বনি দেয় ওটা তাদের সংস্কৃতিজাত বিষয় বলে, আমাদের ধর্মান্তরিত মুসলমানরা কিন্তু অনেক আগেই উলু দেয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। তারপরও এখনও কোনও কোনও রাজনৈতিক নেতাকে বলতে শোনা যায়, ‘অমুক’ ক্ষমতায় গেলে মসজিদে উলুধ্বনি শোনা যাবে। এইভাবে ধর্মজ সংস্কৃতিকে কাজে লাগানো হচ্ছে রাজনৈতিক আগ্রাসনে।
        সাধারণ বিবেচনায় আপনার কথাটায় কেউ দ্বিমত করবে না, কিন্তু আমি এটিকে দেখছি একটি রাজনৈতিক পরিপ্রেক্ষিতে দাঁড়িয়ে, এমন একটি রাষ্ট্রে দাঁড়িয়ে যেখানে রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রযন্ত্রের বিভিন্ন কাঠামোও ক্ষেত্রবিশেষে ধর্মজ রাজনীতির পৃষ্ঠপোষক। তাই আপনার কথাটি মানতে পারছি না বলে দুঃখিত।
        আর এ-ও মানতে পারছি না যে, এখানে কারও ভুল ধরা যাবে না। ধরা খাওয়ার জন্যেই আমরা এখানে এ-ব্লগে আসতে ভালবাসি। নিজের অজ্ঞতা দূর করাও তো একটি সম্মানজনক কাজ, না কি?
        তবে কথা হলো, সব সময় তো আর অনলাইনে কেউই থাকি না আমরা। তাই উত্তর পেতে, উত্তর দিতে অনেক সময় দেরি হয়ে যায়। সেজন্যেও দুঃখিত।

        • শাহীন ইসলাম - ২৫ মার্চ ২০০৯ (৪:৩৯ অপরাহ্ণ)

          শেষ প্রশ্ন

          @অবিশ্রুত,
          অনেক ধন্যবাদ আপনার উত্তরের জন্য। অনেক কিছু এখানে শুনতে হয়। যেমন ধরুন প্রথমে ভুল ধরিয়ে দিলে অনেকে প্রশ্ন করে “অমূক লেখায় বিশ্লেষণের অভাব, তমুক জায়গায় রেটরিক এর ছড়াছড়ি –“এ সব বলে কি কোন লাভ আছে? প্রশ্নকারী যেন সরাসরি একটি positive account খুঁজেন। positive account যেন হুট করে একটি মানুষের পাওয়ার বিষয়। এরকম একটি প্রত্যশার চাপের নিমিত্তে আমার শেষ মন্তব্যটি (২৫ মার্চ ২০০৯, বুধবার; সময়: ৫:৫৭ পূর্বাহ্ণ ), তাও — ভাগ্গিশ অনলাইনের — বদআওলেতে ডাইয়াগ্রামে শেষ হয়ে গেল (ডাইয়াগ্রামটি অবশ্য আশানুরূপ হয়’ নি)। তার উপর আপনি (যদি লালনের মত আপনার কোন মার্কা না থাকে) এক ধরনের threat শুনতে পাবেন : “সার দেয়ার বিপদ দেখতে পাচ্ছি, সার বুঝেশুনে দিতে হয়, কী যে দিচ্ছেন আল্লাই মালুম।” এসব বিবেচনায় আমি ভাবলাম এখান থেকে ইস্তফা দেওয়া উচিৎ। তবে আপনার সুন্দর উত্তরটি পেয়ে আবার লিখতে মন চাইল। … না থাক তাত্ত্বিক আলোচনায় যাওয়া দরকার নেই। একটু পর বাংলাদেশে ছাব্বিশে মার্চ। একাত্তর, রেডিও থেকে স্বাধীন বাংলা বেতার, মধ্য রাতে গুলির আওয়াজ: ট্যাট, ট্যাট, ট্যাট . . .।বাবা। সে বাবা আর নেই। এ মুহূর্তে আমি বাংলাদেশের প্রাতিপাদের কাছাকাছি একটি জায়গায়। চমত্কার স্ূর্য, ঝকঝকে দিন। আর কতদিন — হয়ত আর বেশীদিন না — মানুষ এত সুনদর আবহাওয়া পাবে? পন্চাশ হাজার বছর আগে আফ্রিকার কোন এক উপজাতির — সম্বভতা Sun Bushman — একটি অংশ নিজেদের বাপ দাদার ভিটা ছেড়ে বেরিয়ে আসলো।ধীরে ধীরে তারা চারিদিকে ছড়িয়ে পরলো। দশ হাজার বছর আগে হয়ত ধর্মের উদ্ভব ধরা যায়। সে সংেগ হয়ত সভ্যতা। আসল, আরো আনেক পরে, খ্রীষ্টান ধর্ম আর ইসলাম।এর পর ক্রসেড। আসল সাম্রাজ্য। তারপর উপনিবেশ।ভারতে আসলো William Carry, evangelism।
          তারপর আসল — প্রথমে ইওরোপে — জাতি-দেশ।জাতি-দেশ’এর পর্যায় এখন শেষ হয়ে আসছে। এখন বিকল্প কি? সেটিই আমার শেষ প্রশ্ন।

  9. শাহীন ইসলাম - ২৪ মার্চ ২০০৯ (৬:২০ অপরাহ্ণ)

    @মুক্তানগন/masud/sumon
    আমার অভra diye kichu likha pondashrom hoye gelo, hotath kore computer bondha, everything is lost then. ubuntu diye omni’r suggestione bangla set up ki bhabe kaj korbe bujhte parchina, karon omni’r suggestion mone hocche text-editor’e jete hobe. oboshsho ekhane unijoy, bijoy, phonetic, … diye hoito bangla lekha jabe, ami phonetic diye ceshta kori , kintu keno jani shob kichu bigre jay — ekhan jerokomti holo. তাও টাইপের কারসাজিগুলি ধরতে পারছি না।
    ekhane dekhi preview option nai. arekti shomossha save kora jacchena, na online’e na amar computere. save kora gele aro kichu guchiye লেখা jeto.
    লেখা আমার কাছে অনেক কিছু।

    (১)মাসুদের বিপরইতে, এটি আমার কাছে ক্বষিকাজ — হয়ত’বা তার চেয়ে বেশই;
    শ্রম দিতে হয়, সার দিতে হয় এবং সময় দিতে হয়।

    (২)আবার অনেক সময় এটি, আমার কাছে, দেবতাকে অর্ঘ্য দেয়ার মতো,
    যুক্তি ও কবিতা দুটি’ই থাকা চাই। (সে জন্য লিখি — পাবলিক্যাশন অর ্থে — কম)

    (৩)আবার অনেক সময় এটি একটি tool of explicating my thoughts as well as a mean of interaction and communication ।

    (লেখা আমি যা নই, তা)

    এ সব চাওয়া এক সংগে সবসময় হয়ত পুরণ করা সম্ভব নয়। আমি এখানে (৩) এর উপর জোর দিব (বাংলায় লিখটে হলে এ খেটরে … ).(২) থেকে আমি যুক্তি’র উপর জোর দিব; কবিতা , Style, presentation’ এর কিছু দিক একটু গঔন হয়ে যেতে পারে। এক সংেগ না লিখে piecemeal লিখবো (যেহেতু save করা যাচছেনা)।

    • মুক্তাঙ্গন - ২৪ মার্চ ২০০৯ (৭:১৫ অপরাহ্ণ)

      @ শাহীন

      ubuntu diye omni’r suggestione bangla set up ki bhabe kaj korbe bujhte parchina, karon omni’r suggestion mone hocche text-editor’e jete hobe.

      উবুন্তু বা যে কোন লিনাক্স ডিসট্রোতে এ ধরণের পরিবর্তনগুলো সাধন করার জন্য টার্মিনাল (টেক্সট এডিটর) ব্যবহারের কোন সহজ বিকল্প দেখছিনা। তবে যত দূর দেখতে পাচ্ছি, অমি আজাদের দেয়া ধাপগুলোর একটা উল্লেখযোগ্য অংশ তো “সিনাপটিক প্যাকেজ ম্যানেজার” দিয়েই স্বয়ংক্রিয়ভাবে করা যায়। লিনাক্স ব্যবহার করতে চাইলে এই প্রাথমিক প্রক্রিয়াগুলো ভালভাবে জেনে নেয়ার কোন বিকল্প নেই।

      ekhane dekhi preview option nai.

      প্রিভিউ অপশন ইচ্ছে করেই এখনো রাখা হয়নি, জেকোয়েরী স্ক্রিপ্টের কিছু জটিলতার কারণে। তবে এই অপশনটা আপনার ক্ষেত্রে কেবল তখনি কাজে লাগতো যদি আপনি আপনার মন্তব্যে কুইক ট্যাগ কিংবা এইচটিএমএল কোড ব্যবহার করতেন। দেখতে পাচ্ছি, আপনার মন্তব্যগুলোতে সে রকম কোড একটিও ব্যবহার করেননি। সুতরাং, কমেন্ট এরিয়ার টেক্সট বক্সে লেখার সময় যা দেখতে পাচ্ছেন এখন, প্রিভিউ থাকলে হুবহু সেটার বাইরে অন্য কোন কিছু আপনার দেখতে পাবার কথা না।

      arekti shomossha save kora jacchena, na online’e na amar computere. save kora gele aro kichu guchiye লেখা jeto.

      আমার জানা মতে মন্তব্য সরাসরি সেভ করার অপশন কোন ব্লগেই রাখা হয়না। “সেভ” বা “সংরক্ষণ” এর সুবিধা কেবল পোস্টের ক্ষেত্রেই। এসব ক্ষেত্রে:
      সমাধান ১: আপনার ইউজার আইডি এবং পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে সাইটে লগিন করুন। “পোস্ট লিখুন” অপশনে গিয়ে আপনার মন্তব্যটির খসড়া লিখে সেটাকে ‘সেভ’ করুন। এখানে আপনি প্রিভিউ ও পাবেন। লেখা হয়ে গেলে সেটাকে কপি করে কমেন্ট এরিয়াতে বসিয়ে দিন। ‘সেভ’ করা ড্রাফটটি মুছে ফেলুন যাতে ব্লগ প্রশাসক সেটাকে পোস্ট ভেবে ভুল না করেন।
      সমাধান ২: দীর্ঘ মন্তব্যের ক্ষেত্রে নোট প্যাড খুলে মূল লেখার কাজটি সেখানেই সম্পন্ন করতে পারেন এবং একটু পর পর সেটাকে ‘সেভ’ করতে পারবেন। এতে ওয়েবসাইটের “নিরাপত্তামূলক স্বয়ংক্রিয় টাইম আউট” এর কারণে সৃষ্ট সম্ভাব্য জটিলতা থেকে নিজেকে সহজেই রক্ষা করতে পারবেন। কাজ শেষে নোট প্যাড থেকে মন্তব্যটির খসড়া কমেন্ট টেক্সটবক্সে সেঁটে দিয়ে অনুমোদনের জন্য “পেশ করুন”।

      আমার অভra diye kichu likha pondashrom hoye gelo, hotath kore computer bondha, everything is lost then.

      বিষয়টা স্পষ্ট হল না। আপনি লিনাক্স-উবুন্তু ব্যবহারকারী হয়ে থাকলে অভ্র কীবোর্ড ব্যবহার করতে পারার কথা না, যেহেতু এখনো লিনাক্স উপযোগী অভ্রের কোন ভার্সন তেরী হয়নি (এখানে দেখুন)। আপনি হয়তো সে সময় লিনাক্সের পরিবর্তে উইন্ডোজ ব্যবহার করছিলেন, সেক্ষেত্রে উপরের দু’টো সমাধানই আপনার কাছে খোলা থাকার কথা।

      oboshsho ekhane unijoy, bijoy, phonetic, … diye hoito bangla lekha jabe, ami phonetic diye ceshta kori , kintu keno jani shob kichu bigre jay — ekhan jerokomti holo. তাও টাইপের কারসাজিগুলি ধরতে পারছি না।

      ধাপগুলো আগের মন্তব্যে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করা রয়েছে। আপনার নিশ্চয়ই ভুল হচ্ছে কোথাও। কিংবা আপনার পিসিতেও কোন সুনির্দিষ্ট সমস্যা থাকতে পারে, যেটা এখান থেকে আমাদের পক্ষে নিরূপণ করা কঠিন। এখানকার সিংহভাগ ব্যবহারকারীই সাইটে দেয়া ‘প্রভাত’ নয়তো ‘ফোনেটিক’ ব্যবহার করছে কোন সমস্যা ছাড়াই।

      সুনির্দিষ্ট তথ্যের অবর্তমানে এর বেশী আর কোন পরামর্শ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না আপাতত।

      ধন্যবাদ।

    • মাসুদ করিম - ২৫ মার্চ ২০০৯ (২:৩৬ পূর্বাহ্ণ)

      সার দেয়ার বিপদ দেখতে পাচ্ছি, সার বুঝেশুনে দিতে হয়, কী যে দিচ্ছেন আল্লাই মালুম। আর

      লেখা আপনার কাছে অনেক কিছু

      বুঝতে পারছি! লেখা ও কৃষিকাজ দুই-ই অনেক সাধনায় শিখতে হয়। এগুলো নাগরিক জীবনের নানা রকম ফর্ম পূরনের মতো সহজ কাজ নয়।

      গ্রামের বাড়ির সব উঠোনের মতো ‘মুক্তাঙ্গন’-এর উঠোনও ঠিকই আছে, উঠোনের দোষ দিয়ে লাভ নেই।

  10. আবু জুবায়ের - ২৪ মার্চ ২০০৯ (৭:১৯ অপরাহ্ণ)

    দেখুন আমি এই ব্লগে নতুন এসেছি।কিন্তু এই খানে একটা বিষয় আমার স্পষ্ট হচ্ছে যে এটি একটি উদ্দেশ্য প্রনীদিত লেখা।জিয়াউর রহমান বানহ্লাদেশী জাতীয়তাবাদকে প্রতিষ্ঠিত করেছে বলে যদি গাত্র দাহ হয় তবে অনেক কথায় ইতিহাসে আছে।আমি জানিনা এই ব্লগের নীতিমালা শুধু এক কেন্দ্রিক নাকি।অর্থাত একটি পক্ষের আলোচনার জন্যি এটি নাকি।তাহলে আমার গবেষনার অনেক বিষয় আমি আলোচনা করতে পারব হয়তো।প্রথমে লেখাটি আক্রমনাত্নক।এই ধরনের লেখার মান কখনই স্বীক্রৃতি পায় না।
    ২।জিয়াউর রহমান কে খাটো করে দেখার সুজোগ বাংলাদেশের ইতিহাসে ঘটবে না।আর জিয়াকে নিয়ে দুই একটা এই ধরনের লেখা কাদাছুরা ছুরি শুরু হয়ে জাবে।
    ৩।শেখ মুজিবকে নিয়ে অনেক বিষয় আছে যেটা লেখা জেতে পারে।
    এই ধরনের সূত্র হীন লেখা না লেখাই ভাল।

    • নাগরিক - ২৬ মার্চ ২০০৯ (৫:৫৪ পূর্বাহ্ণ)

      @মুক্তাঙ্গনঃ জুবায়ের বলেছেন

      আমি জানিনা এই ব্লগের নীতিমালা শুধু এক কেন্দ্রিক নাকি।অর্থাত একটি পক্ষের আলোচনার জন্যি এটি নাকি?

      আমার ধারণা আপনারা সব লেখক এক কেন্দ্রিক এবং অন্যমতের কাউকে মোটেই উৎসাহিত করেননা। তাই বিদায়। আপনারা ৩৮ বছরের অতীত ইতিহাস চর্চা করে দেশকে উদ্ধার করতে থাকুন। আর এই দিকে Global warming এর জন্য আর্কটিকের বরফ গলা পানিতে দেখবেন কখন যেন তলিয়ে গেছেন সবাইকে নিয়ে। আমি নিরাপদেই আছি প্রেইরীর সুউচ্চ ও সুনিবিড় ছায়াতলে। ধন্যবাদ এবং দয়া করে এই শেষ লেখাটি মডারেশন নীতির বহির্ভূত হলেও অব্যাহতি দিলে বাধিত হব।

  11. রায়হান রশিদ - ২৪ মার্চ ২০০৯ (৮:৪৬ অপরাহ্ণ)

    @ শাহীন ইসলাম

    Lawyers must learn rhetoric and I think they do that. But why don’t they learn logic? Why can’t we see any formal course on logic for the lawyers? Or am I in a gap?

    শাহীন ভাই, এখানে সম্ভবত ভুল হচ্ছে একটু। আমার জানা মতে কোন ল’স্কুলের পাঠ্যক্রমেই rhetoric অন্তর্ভূক্ত নয়। একে উৎসাহিত তো করা হয়ই না, বরং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নিরুৎসাহিত করা হয়। জুরিসপ্রুডেন্স এর ক্লাসিকগুলোর (যেমন: HLA Hart এর লেখা) লেখার স্টাইল লক্ষ্য করলে সেটা আরও স্পষ্ট হয়, যেগুলোর মৌলিক গুণাবলীর মধ্যে precision এবং clarity উল্লেখযোগ্য। মান সম্মত যে কোন লিগ্যাল টেক্সট এ rhetoric তো দূরের কথা, এমনকি যে কোন ধরণের modifier ও (যেমন: adjective, যা noun এবং pronoun কে মডিফাই করে; adverb, যা verb, adjective এবং অন্যান্য adverb দের মডিফাই করে) অত্যন্ত সতর্কতার সাথে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। কেবলমাত্র ট্রায়াল লইয়ারিং এর ক্ষেত্রে, যাতে বাগ্মীতা একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ, কেউ কেউ rhetoric এর ব্যবহার করে থাকেন আদালতের/বিচারকের মনযোগ আকর্ষণ করার লক্ষ্যে। তবে: এক, প্রকৃত ট্রায়াল লইয়ারদের সংখ্যা খুব বেশী না, এবং, দুই, তাঁদের মধ্যেও উপরের দিকে যাঁরা তাঁদের খুব সংখ্যকই rhetoric প্রেমী।

    অভিজ্ঞতা থেকে জানি, আইন বিভাগগুলোতে “আলাদাভাবে” আইন শিক্ষার অংশ হিসেবে Logic (দর্শন শাস্ত্রের একটি আনুষ্ঠানিক/formal বিষয় হিসেবে) শেখানো হয় না। সেটির হয়তো কোন প্রয়োজনও পড়ে না, কারণ, বিকল্প হিসেবে analytical reasoning সব আইন কোর্সেরই অবিচ্ছেদ্য অংশ। এমনকি আইন বিভাগে নতুন ছাত্রছাত্রী গ্রহণ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ভর্তি পরীক্ষা এবং ইন্টারভিউতেও এই বিষয়টিই (reasoning) গুরুত্ব পেয়ে থাকে। এতে হয়তো Logic এর মত অত্যন্ত বিস্তৃত একটি বিষয়ের সব দিক উঠে আসে না, তবে আইনবিদ হবার জন্য যতটুকু জানা জরুরী ততটুকু ঠিকই উঠে আসে বলে মনে করি।

    এটা ঠিক যে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়েই (যেমন: চট্টগ্রাম) আইন শিক্ষার্থীদের দর্শনশাস্ত্র এবং রাজনীতি বিজ্ঞানের সাধারণ পাঠও দেয়া হয়ে থাকে। তবে পশ্চিমের উন্নত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কোনটাতেই ‘স্নাতক পর্যায়ে’ আইনের Core Course এ বিষয়গুলো (দর্শন ইত্যাদি) আলাদাভাবে অন্তর্ভূক্ত নয়। কারণ জুরিসপ্রুডেন্স, সাংবিধানিক আইন, মানবাধিকার আইন, আন্তর্জাতিক আইন, তুলনামূলক আইন বিষয়গুলোর ব্যাপ্তি এতটাই যে আলাদা করে “দর্শন শাস্ত্র” বা “রাজনীতি বিজ্ঞান” পড়াবার প্রয়োজন পড়ে না। এবং এর ফলে আইন পেশায় নতুন রিক্রুটদের সার্বিক মান কোন অংশে ব্যাহত হচ্ছে বলেও প্রমাণ মেলেনি।

    ধন্যবাদ।

  12. অস্মিতা - ২৪ মার্চ ২০০৯ (৯:১৪ অপরাহ্ণ)

    শাহীন সাহেব,
    অমূক লেখায় বিশ্লেষণের অভাব, তমুক জায়গায় রেটরিক এর ছড়াছড়ি, নমুক (তমুকের পর কোন শব্দ খুঁজে পাচ্ছিনা বিধায় ব্যবহৃত) জায়গায় বাংলা লিখতে হেনতেন এর অভাব – এই সমস্ত অভিযোগের তালিকা ক্রমেই বড় হচ্ছে, কিন্তু পোস্ট বিষয়ক আপনার বিশ্লেষণ এখনো পেলামনা, যার আশায় আমরা আম জনতা মাঝে মাঝে এই পাড়ায় হানা দিই। মুনসী বাদক যেমন তবলায় ঠুক ঠাক করে সাসপেনস তৈরী করেন তেমনই কিছু হচ্ছে কিনা বুঝলামনা। তবে নাটকের প্রস্তাবনা অযথা দীর্ঘায়িত হলে আসল পরিবেশনার প্রতি দর্শকদের (এক্ষেত্রে পাঠকদের) আগ্রহ কমতে পারে, এই সাবধানবাণীটিও মনে হয় জানিয়ে রাখা দরকার। আমরা যারা রাজনৈতিক সামাজিক ইত্যাদি জরুরী বিষয়ে কিছু বিশ্লেষণ পড়ার তাগিদ থেকে এখানে আসি তারা লজিক, রেটরিক, আইনবিদ্যা বনাম দর্শনবিদ্যা ইত্যাদি নিয়ে কূটতর্ক কিংবা টেকনিক্যাল বিষয়াদি নিয়ে অযথা ফোড়ন কাটাকুটির এই প্রবণতায় মোটামুটি তিতি বিরক্ত। ক্ষমা করবেন, তবে আপনার প্রথম মন্তব্য থেকে ধরে নিয়েছিলাম যে পোস্টটির বিষয়ে (ইতিহাসে জেনারেল জিয়ার জায়গা, বাঙ্গালী বনাম বাংলাদেশীত্ব) বিশ্লেষণধর্মী কোন বিতর্ক বা আলোচনার সুযোগ বুঝি তৈরী হতে যাচ্ছে। দিগন্তে গুড়ে বালির সম্ভাবনা দেখেও সে আশা এখনো ছাড়িনি।
    আশান্বিতা,
    অস্মিতা

    • শাহীন ইসলাম - ২৫ মার্চ ২০০৯ (২:৪৮ পূর্বাহ্ণ)

      @অস্মিতা
      আপনি বললেন

      অমূক লেখায় বিশ্লেষণের অভাব

      না ভাই আমি তা মনে হ্য় বলি’নি — হ্য়ত rhetorical’এর বিপরীতে এরকম কিছুর ব্যান্জনা থাকতে পারে। আর “মুনসী বাদক” হোয়ার মোটেও ইচ্ছে নেই আমার ।তারপরও, ভাবছিলাম, আপনার উপামাটি খারাপ না। তবলায় হ্য়ত ঠুক ঠাক করছি, তবে তা –যদি করে থাকি — আমার জন্যে, কিংবা –একটু মারফতি শুনাবে হয়ত — ঈশ্বরের জন্য। সাসপেনস তৈরী করার চিন্তা একেবারেই মাথায় নেই।

  13. মাসুদ করিম - ২৫ মার্চ ২০০৯ (৩:০৬ পূর্বাহ্ণ)

    রাস্তায় দুজন লোক একটা ছাতা নিয়ে টানাটানি করছে। যার ছাতা এবং যে চোর দুজনেই ‘আমার ছাতা’ ‘আমার ছাতা’ বলে চিৎকার করছে।একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলছেন

    একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠার ৩৭ বছর পর এখনো আওয়ামী লীগ ও বিএনপি কর্তৃক ‘স্বাধীনতার ঘোষক’ বিতর্ক চালিয়ে যেতে কোনো অসুবিধা আথবা লজ্জাবোধ নেই। বাংলাদেশের জনগণের জীবনে এটা যে এক মস্ত ট্র্যাজেডি এতে আর সন্দেহ কী?”

    প্রত্যক্ষদর্শী আর কেউ নন বাংলাদেশের বিখ্যাত বাম বুদ্ধিজীবি বদরুদ্দীন উমর। তাই যখন রায়হান রশিদ বলেন

    আমরা এমন এক বাংলাদেশে বাস করি, যেখানকার বাতাস পর্যন্ত ভারী হয়ে রয়েছে ৩৮ বছরের নিরবচ্ছিন্ন প্রচারণায়। সত্য-মিথ্যার সীমারেখাগুলো ক্রমশ ঝাপসা হতে হতে প্রায় মিলাতে বসেছে।

    তখন বড় দুঃখে বড় অমোঘ সত্যই বলেন।

    এখন জনৈক জেনারেলের আকাশকুসুম মতলবী প্রচারণাকেও (ইমেইলকেও) সময় ব্যয় করে খন্ডন করতে হয়!

    হ্যাঁ কখনো কখনো মনে হয় আমরা, যারা দেখতে পায়, সে গোত্রের কেউ নই, আমরা অন্ধ! আমাদের স্বাধীনতা অন্ধ!, শুধু প্রতিক্রিয়াশীলেরা চক্ষুষ্মান।

    আর ‘জেড ফোর্স’-এর ঘটনাটি জানা ছিল না। তাহলে ব্যাপারটি Forceful-ই ছিল। খটকা ছিল অনেকদিন থেকে, সেক্টর কমান্ড থাকার পরও আবার নামাঙ্কিত ফোর্স কেন, বুঝতে পারলাম ‘ঘোষক’-এর আবদার ও ষড়যন্ত্রের অভ্যাস অনেক পুরোনো। খুব ভালো হতো জেড সাহেবের একাডেমির দিনগুলো সম্বন্ধে যদি জানা যেত। আরো ভাল হতো সেই বহুশ্রুত ১৯/২১ টি ক্যু নিয়ে যদি আরো জানা যেত, যে ক্যুগুলো ঘটেছিল জিয়ার রাজত্বকালে, এবং যে ক্যুগুলোর মাধ্যমে পিলখানার চেয়েও সংখ্যায় অনেক বেশি সামরিক জওয়ান অফিসার নিহত হয়েছিলেন।
    জিয়াকে তথ্যের আয়নায় স্পষ্ট করতে আরো আরো কাজ হওয়া উচিত। তিনি বাংলাদেশের প্রতিক্রিয়াশীলদের রাজা, তাকে জানলে অন্যদের জানতে বেশি সময় লাগবে না।

  14. মাসুদ করিম - ২৬ মার্চ ২০০৯ (৩:৪০ পূর্বাহ্ণ)

    গতকালের জনকণ্ঠে মমতাজ লতিফে কলামের এ অংশটি আমাদের এ পোস্টের মন্তব্যও হতে পারত।
    কথিত আছে ‘৭৭ সালে বিমানবাহিনীর বিদ্রোহ ছিল জিয়ার যুদ্ধাপরাধী এবং বঙ্গবন্ধু, জাতীয় চার নেতা, কর্ণেল তাহের সহ অজানাসংখ্যক মুক্তিযোদ্ধা হত্যাকারীদের প্রতি পক্ষপাতমূলক আচরণের প্রতিবাদস্বরূপ। যাতে বলা হয় অন্তত আড়াই হাজারের মতো মুক্তিযোদ্ধা সেনাকে ফায়ারিং স্কোয়াডে হত্যা করা হয়। এছাড়াও কথিত আছে, ‘৭৫ থেকে ‘৮১ পর্যন্ত জিয়ার শাসনকালে প্রায় তিন তেকে চার হাজার সেনা কর্মকর্তা প্রায় বিশটি ক্যু-এর নামে ফাঁসিতে বা ফায়ারিং স্কোয়াডে নিহত হন। সে সময় একটি কথা গুজব হিসেবে শোনা যেত, গ্রামেগঞ্জে ভোররাতে পরিবারের কাছে পৌঁছত মৃত সেনার লাশ! জনগণ আজো জানে না এ সময়ে কত সংখ্যক সেনা পুলিশ সদস্য কিভাবে, কেন নিহত হয়েছিল!

  15. মাসুদ করিম - ৩ সেপ্টেম্বর ২০০৯ (৮:৫৭ পূর্বাহ্ণ)

    অভিন্দন! অভিনন্দন!! অভিন্দন!!!
    এমন করে কে আর বলতে পারতেন, জিয়ার কথা, জিয়ার বিএনপির কথা। লেখক খালেদা উৎপাদনের রাজনীতির কথা মনে রেখে লেখার জগতেও উৎপাদনশীল হবেন এই কামনা করি, নিন্দুকেরা বলছেন লেখার জগতে তিনি ‘কাকবন্ধ্যা’ হবেন, তাও যদি হন এই একটি লেখা আমাদের সারাজীবনের পাথেয় হয়ে থাকবে। তিনি লিখেছেন

    বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে জিয়াউর রহমান এসেছিলেন আকস্মিকভাবে।…কোনো চোরাগোপ্তা পথে নয়, রাতের অন্ধকারে ষড়যন্ত্র করে নয়, ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর ভোরের আলোয় সর্বস্তরের লাখো কোটি মানুষ ও দেশপ্রমিক সৈনিকদের মুহুর্মুহু স্লোগান ও পুষ্পবর্ষণের মধ্য দিয়ে রাজনীতিতে জিয়াউর রহমানের অভিষেক হয়েছিল। দেশের নেতৃত্ব চলে এসেছিল তার হাতে।

    আহা! মানুষগুলো শুধু সর্বস্তরের আর সৈনিকেরা দেশপ্রেমিক!! চিয়ার্স!!!

    পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে মুসলিম লীগ নেতৃত্ব দিয়েছিল, কিন্তু পরে তারা যুগের চাহিদা মেটাতে পারে নি। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পুরোভাগে আওয়ামী লীগ ছিল। কিন্তু পরে তারা রাজনৈতিক দল হিসেবে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়। সেই ব্যর্থতার পটভূমিতেই বিএনপির জন্ম।

    আহা! কত ব্যর্থতার ইতিহাসের পর জন্ম হয় এমন একটি দলের!! আজো অব্যর্থ শুধুই বিএনপি!!!

    আমাদের অবস্থান কেন্দ্রে এবং এদেশের রাজনীতির কেন্দ্র আমরাই। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলই এদেশের মূলধারা। বিএনপিই বাংলাদেশের জাতীয় রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান।

    শাপলা! শালিক!! বাঘ!!! বিএনপি?

    আর লেখাটির শিরোনাম ‘ডানপন্থীদের বামে, বামপন্থীদের ডানে’, এখানেই লুকিয়ে আছে বিএনপির আসল চেহারা : বাম ডান বাম বাম ডান বাম–বুঝতে পারছেন LEFT RIGHT LEFT LEFT RIGHT LEFT… …

    (খালেদার লেখার লিন্কটি দেখছি ফায়ার ফক্সে খুলছে না, কষ্ট করে এক্সপ্লোরারের পড়ুন:
    http://www.dailynayadiganta.com/2009/09/01/fullnews.asp?News_ID=165275&sec=1)

  16. মোহাম্মদ মুনিম - ৫ সেপ্টেম্বর ২০০৯ (১১:৪৮ অপরাহ্ণ)

    আলোচনাটি ‘rhetoric’ এর তাত্ত্বিক বিশ্লেষণে মূল বিষয় থেকে খানিকটা দূরে সরে গিয়েছিল। ১৯৯১ সালে বিএনপির বিজয়ের পরে ‘বাংলাদেশী’ এবং ‘বাঙ্গালী’ এই নিয়ে কিছু বিশ্লেষণ হয়েছিলো। আমাদের (বেশীরভাগের) নৃতাত্ত্বিক পরিচয় ‘বাংগালী’ এবং আমাদের সবার জাতীয় পরিচয় ‘বাংলাদেশী’ এটাই বোধহয় সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা। মার্কিন স্বাধীনতা যুদ্ধের নায়কেরা প্রায় সবাই নৃতাত্ত্বিকভাবে ইংরেজ ছিলেন, কিন্তু নিজেদের আলাদা একটি জাতীয়তাবাদ (মার্কিন জাতীয়তাবাদ) তৈরী করেছিলেন। সেই জাতীয়তাবাদ এখনো আছে, অভিবাসীদের এবং তাদের বংশধরদের নৃতাত্ত্বিক পরিচয় যাই হোক না কেন, তাঁরা নিজেদের মার্কিন বলেই পরিচয় দেন, একই সাথে তাঁরা নিজেদের নৃতাত্তিক পরিচয় নিয়েও গর্বিত। সেটা হয়েছে কারণ মার্কিন রাষ্ট্র এবং সমাজ তাঁদের নৃতাত্ত্বিক এবং ধর্মীয় পরিচয় দিয়ে স্বাধীনভাবে থাকার অধিকার দিয়েছে। বাংলাদেশের রাষ্ট্রযন্ত্রের কাছে এটিই কাম্য। বাংলাদেশে যেন বাঙ্গালী, অবাঙ্গালী, মুসলিম এবং অমুসলিম নিজেদের পরিচয় এবং ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান নিয়ে স্বাধীনভাবে বাঁচতে পারেন। রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম করাটাও যেমন বাড়াবাড়ি, আবার এদেশ কেবল বাঙ্গালীর দেশ, এই দাবী করাটাও বাড়াবাড়ি।
    জিয়াউর রহমান আমাদের জাতীয় জীবনে কিছু দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতি করেছেন, আমার মতে সেটি তিনি শুধু সংবিধানে বিসমিল্লাহ যোগ করেছেন বলে নয়, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের প্রতিষ্ঠিত করা এবং জামাতীদের রাজনৈতিকভাবে পুনর্বাসন করাটাই তাঁর সবচেয়ে বড় অপরাধ (বা ভুল?)। আমাদের জাতীয় এবং রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে ইসলামের অনুপ্রবেশ তাঁর আমলেই শুরু হয়, এরশাদের আমলে সেটা পরিপক্কতা লাভ করেছে। পুরো পাকিস্তানে আমলেও সম্ভবত এতটা ইসলামীকরণ হয়নি। জিয়াউর রহমান তার নিজের কোন রাজনৈতিক ভিত্তি না থাকায়, ইসলামী জাতীয়তাবাদ কাজে লাগিয়ে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের সমর্থন পেতে চেয়েছিলেন, এটাই আমার ধারণা। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলে জনশক্তি রপ্তানীর কারণে কিছু লোকজন সচ্ছলতার মুখ দেখেছিল, প্রাকৃতিক দুর্যোগ কম থাকায় সে কয় বছর ফসল ভালো হয়েছিল, হাজার হাজার সৈনিক আর অফিসারকে হত্যা করে বেশকিছু ক্যু সফলভাবে দমন করা হয়েছিল, যার কারণে দেশে কিছুটা রাজনৈতিক স্থিরতা ছিল। জিয়াউর রহমানের ব্যক্তিগত সততার কিছু গল্পও শোনা যায়। ঢাকা ল্যাবরেটরী (যদ্দূর মনে পড়ে) স্কুলে পড়া তাঁর পুত্র কোকো পরীক্ষায় ফেল করায় তাঁকে স্কুল থেকে বের করে দেয়া হয়েছিল, জিয়াউর রহমান তাতে বাঁধা দেন নি। যে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ খলিফা উমরের নিজ হাতে পুত্রকে দোররা মারা বা খলিফা হারুন আল রশিদের নিজের কাঁধে ময়দা নিয়ে বিধবাকে দিয়ে আসার গালগল্পগুলো গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে, সে দেশে জিয়াউর রহমানের এই জাতীয় রা্জনৈতিক স্টান্ট খুব কাজে লাগাই স্বাভাবিক। খলিফা উমরীয় সততার এই মহান রাষ্ট্রনায়কের দুই পুত্রের কার্যকলাপ তো আমরা সকলেই জানি। সবকিছু মিলিয়ে তাঁর কালো চশমা পরে কর্দমাক্ত শরীরে খালের ধারে বসে থাকা ছবিটির একটি তীব্র আবেদন আছে। সেই আবেদন আর কয়দিন থাকবে, সেটাই দেখার বিষয়।

    • মাসুদ করিম - ৬ সেপ্টেম্বর ২০০৯ (১২:৪২ পূর্বাহ্ণ)

      সবকিছু ঠিকই আছে, শুধু মার্কিন ইংরেজ আর বাংলাদেশে বাঙালি কোনো অর্থেই এক নয়। বাঙালিরা এই বাংলাদেশের হাজার বছরের অধিবাসী আর ইংরেজরা আমেরিকায় সেটলার। কাজেই আমার বাঙালিত্ব শুধু নৃতাত্ত্বিকতা নয়, আমি ভূমিপুত্র, বহুবছর ধরে আছি আদিবাসীদের মতো নিজের ভূমিতেই। পাকিস্তান আমাকে দ্বিধান্বিত করেছে, সেই পাকিস্তানি মনোভাব থেকে বাংলাদেশি বলা, মানুষের পূরণ করতে হয় এমন সব ফর্মে ‘জাতীয়তা’ যদি বাঙালি লিখি, চাকমা লিখি আর ‘দেশ’ যদি বাংলাদেশ লিখি–তাহলে তো আমাকে আর ‘বাংলাদেশী’ লিখতে হয় না। বাংলাদেশ স্বাধীন হল, চার/পাঁচ বছর চলে গেল তারপর ‘বাংলাদেশী’ কোত্থেকে এল। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম যদি পাকিস্তান হওয়ার পরপরই শুরু হয়েছে ধরি, তাহলে আমাদের সংগ্রামে কখন আমরা নিজেদের ‘বাংলাদেশী’ ভেবেছি। আর একটি দেশের স্বাধীনতার অগ্রণী সেনানি, মুখ্য নেতৃত্ব যা ভাবেনি, সেরকম কিছু নিয়ে আমরা কেন হঠাৎ বিভাজন শুরু করলাম? আর আজো রাস্তাঘাটে হাজার কোটি সংলাপ সাক্ষী সেখানে সহজাতভাবে যে শব্দটি ব্যবহৃত হয় তা ‘বাঙালি’–‘বাংলাদেশী’ নয়। বাংলাদেশে ‘পাকিস্তান’ যেমন ইতিহাসের অংশ, হৃদয়ের নয়, বাংলাদেশে ‘জিয়া’ তেমনি ইতিহাসের অংশ, গণমানুষের নয়। আর বাংলাদেশের মুসলমানেরা ধর্মীয়ভাবে মুসলিম ছিল ‘মুসলিম লীগ’-এর দোর্দণ্ড প্রতাপের কালেও, কিন্তু বাংলাদেশের মুসলিমরা ‘রাজনৈতিক মুসলিম’ হয়েছে জিয়ার হাত ধরে : তাই আমাদের দাদা বাবাদের মধ্যে যে রাজনৈতিক ইসলামের প্রভাব আমরা দেখতে পাই না, তাই দেখতে পাই আমাদের প্রজন্মের মধ্যে, আমার যারা প্রজন্ম একাত্তর। ইমতিয়ার শামীম তার কিছুদিন আগের পোস্টের মন্তব্যে যাকে উল্লেখ করেছেন ‘৮০র দশকের শিবিরকে যারা দেখেনি’–হ্যাঁ এখান থেকেই বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইসলামের শুরু, এবং এখানেই ‘জিয়ার আদর্শ’ বিপদজনক, এবং এখানেই আমাদের দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠরা ‘অহিফেনবিষে’ আক্রান্ত। আমি ভূমিপুত্র, আমার প্রতিবেশী আদিবাসী : এইতো সংস্থান, এখানে ফিরতে হবে, এখানে না ফিরলে আমি কী করে হবো চর্যাপদের, হাজার বছরের।

    • মাসুদ করিম - ৫ অক্টোবর ২০১৪ (৫:৫০ অপরাহ্ণ)

      এশিয়ার এই দরিদ্র অঞ্চলটায় জনজাতি রাষ্ট্র দেখতে চাই

      বার্মা যদি ব্যাপারটাকে এভাবে দেখে বাংলাভাষী রোহিঙ্গারা বাঙালি, রাখাইনরা রাখাইন, শানরা শান, বর্মনরা বর্মন এবং এরা সবাই বার্মার নাগরিক তাতে আমার কোনোই আপত্তি নেই বরং শক্ত সমর্থন আছে, এবং বলার আছে বাংলাদেশও বার্মাকে অনুসরণ করুক বাঙালিরা বাঙালি, চাকমারা চাকমা, গারোরা গারো হয়েই বাংলাদেশের নাগরিক হোক। তামিলরা তামিল হয়ে বাঙালিরা বাঙালি হয়ে ভারতীয় হোক। জাতিরাষ্ট্র বিদায় নিক এশিয়ার এই দরিদ্র অঞ্চলটায় জনজাতি রাষ্ট্রের পত্তন হোক।

  17. মাসুদ করিম - ৩১ মে ২০১০ (১:৫১ পূর্বাহ্ণ)

    প্রথম আলোর বিশেষ আয়োজনে সোহরাব হাসান লিখছেন

    ইতিহাসে জিয়াউর রহমান কীভাবে মূল্যায়িত হবেন? রাজনীতিক জিয়ার অবস্থানই বা কী হবে? জিয়াউর রহমান একজন সাহসী মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, পাকিস্তানের নিয়মিত বাহিনীর কর্মকর্তা হয়েও তিনি সেই বাহিনীর বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করেছিলেন, দেশবাসীকে অস্ত্র ধারণ করতে আহ্বান জানিয়েছিলেন। স্বাধীনতা-পরবর্তী আওয়ামী লীগ সরকার তাঁর এই কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বীর-উত্তম উপাধিও দিয়েছে; কিন্তু সে সময় জিয়ার বিভিন্ন কার্যক্রমেও তাঁর উচ্চাভিলাষের কিছু কিছু প্রমাণ পাওয়া যায়। জিয়াউর রহমান সীমিত আকারে হলেও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা দিয়েছেন, বহুদলীয় অথচ নিয়ন্ত্রিত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছেন। আবার তাঁর শাসনামলেই সিভিলিয়ান শাসনের মোড়কে সর্বত্র সামরিক বাহিনীর কর্তত্ব প্রতিষ্ঠা করা হয়, রাষ্ট্রীয় নীতি ও রাজনীতিতে গোয়েন্দাদের কর্তৃত্ব বাড়তে থাকে, যা থেকে এখনও আমরা মুক্ত নই। জিয়া বাকশালের কড়া সমালোচনা করলেও একদলীয় শাসনব্যবস্থার অনেক উপাদান ব্যবহার করেছেন নিজের অবস্থানকে সংহত করতে। ব্যক্তিগতভাবে তিনি সৎ ও অনাড়ম্বর জীবন যাপন করতেন, আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে এর মূল্য কম নয়। কিন্তু জিয়া ক্ষমতার স্বার্থে রাজনীতিকে দুর্নীতিগ্রস্ত করেছেন; অর্থ দিয়ে, পদ দিয়ে অন্য দল থেকে লোক ভাগিয়ে এনেছেন, আবার প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে ছুড়েও ফেলেছেন। সেই বিবেচনায় বাংলাদেশের রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের দায়ও তাঁকে নিতে হবে

    বিস্তারিত পড়ুন এখানে

  18. মাসুদ করিম - ৩১ মে ২০১০ (২:৩৪ পূর্বাহ্ণ)

    শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ২৯তম শাহাদাত বার্ষিকীতে বিএনপির ক্রোড়পত্র ২০১০-এ এক সজারু ডক্টরের দেখা মিলল : তালুকদার মনিরুজ্জামান। তিনি শেখ মুজিবের উল্লেখ করতে গিয়ে লেখেন :

    বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি নেতা শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতীয়তাবাদের নামে আমাদের জনগণের মাঝে বিভক্তির সূত্রপাত ঘটান। … জিয়া বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের তত্ত্ব রচনা করেন। এই বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ জনমনে ব্যাপক সাড়া জাগায়। বাংলাদেশের জাতীয় চরিত্রের সঙ্গে তা বিশেষভাবে মিলে যায়। জিয়ার তত্ত্ব, ভাষা, ভূগোল এবং সব বংশ-গোত্রের অনুমোদন পায়। ধর্মীয় মূল্যবোধ পালনের ঘোষণা জনগণের ইসলামপ্রীতি-লালনকেও স্বীকৃতি দেয়

    কী ভয়ংকর ডক্টর, কী তার ভাষা। জিয়াউর রহমান তার ভাষায় সুদক্ষ রাষ্ট্রনায়ক, একজন দার্শনিক সৈনিক। কী হাস্যকর, কী হাস্যকর।

    শমসের মবিন চৌধুরী স্মৃতিচারণে বলছেন
    ১. জাতির উদ্দেশ্যে জিয়া ৩০ মার্চ ১৯৭১-এ ভাষণ দেন : এদিন তিনি নিজেকে ভারপ্রাপ্ত সরকার প্রধান হিসেবে ঘোষণা দিয়েছিলেন। সার্থক উচ্চাভিলাষ, এভাবে বলতে পারা লোকদেরই হয়
    ২. শমসের মবিন চৌধুরী বন্দি থাকার সময় তার পাশের রুমে পাকিস্তানি সেনা অফিসাররা প্রায়ই জিয়াউর রহমানকে নিয়ে আলোচনা করত। তারা বলাবলি করত , জিয়াউর রহমানকে যদি আটকানো যায় তাহলেই বাঙালিদের মনোবল ভেঙ্গে যাবে অনেকটা। কী গুরুত্বপূর্ণ ও ভয়ংকর যোদ্ধা ছিলেন জিয়া, অথচ নিজেদের মুদ্রা দোষে কখনোই ওই লোকটাকে আমরা সম্মান করি না

  19. মাসুদ করিম - ১৪ জুন ২০১০ (২:৩২ অপরাহ্ণ)

    অনিরুদ্ধ আহমেদ খুব সংক্ষেপে জিয়ার ইতিহাসের জায়গা নিয়ে লিখছেন

    জেনারেল জিয়ার ব্যক্তিক সততা নিয়ে যদিও প্রশ্ন তোলার অবকাশ কম, কিন্তু রাজনৈতিকভাবে জেনারেল জিয়া যে সৎ নন, শঠ ছিলেন সেই প্রমাণ তার উত্থান থেকে শুরু করে পতন পর্যন্ত প্রতিটি মুহূর্তে লক্ষ্য করা গেছে। জিয়ার নিষ্ঠুর শঠতার প্রথম প্রমাণ যে তাকে কথিত সিপাহি-জনতা বিপ্লবের মাধ্যমে যে দল এবং তার নেতা ক্ষমতায় আসতে একশ’ শতাংশ সাহায্য করেছিলেন, ক্ষমতায় আসার অল্প দিনের মধ্যেই সেই দলকে তিনি কার্যত নিষিদ্ধ করেন এবং এর নেতা, মুক্তিযোদ্ধা প্রতিবন্ধী কর্নেল তাহেরকে তিনি সেনাবাহিনীতে শৃঙ্খলা আনার নামে ফাঁসির মঞ্চে ঝুলিয়ে দেন। সেনাবাহিনীর শৃঙ্খলাকে জিয়া যদি এতটাই গুরুত্ব দিতেন তা হলে তিনি কীভাবে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের বিশৃঙ্খলাকারী এবং ঘাতক সাবেক সেনা কর্মকর্তাদের কার্যত পুরস্কৃত করেছিলেন? প্রকৃত সত্য হচ্ছে এই যে, নিজের ক্ষমতাকে সুসংহত করার জন্য জেনারেল জিয়া সব ধরনেরই দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছেন, অর্থনৈতিক যতটা, তার চেয়ে কোনোভাবেই কম ছিল না তার নৈতিক দুর্নীতি। তারুণ্য শক্তিকে লোভ ও উৎকোচের মাধ্যমে দলে ভেড়ানোর প্রয়াস যেভাবে জিয়া শুরু করেছিলেন, তার কুখ্যাত হিজবুল বাহার ভ্রমণের মাধ্যমে, সেই সস্তা প্রয়াস তরুণ সম্প্রদায়কে আদর্শিক রাজনীতি থেকে সরিয়ে নিয়ে এসেছিল নিজেদের আখের গোছানো রাজনীতির দিকে। রাজনীতিকে কঠিন করার যে চ্যালেঞ্জ জিয়াউর রহমান রাজনীতিকদের ছুড়ে দিয়েছিলেন তার খেসারত রাজনীতিকদের এখনও দিতে হচ্ছে। এমনকি বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের যে তত্ত্ব তিনি দাঁড় করিয়েছিলেন, মোশতাকপন্থি সাংবাদিক খন্দকার আবদুল হামিদের সাহায্যে তার পেছনে তিনি কয়েকজন তরুণকে কাজে লাগিয়েছিলেন, দলেও স্থান দিয়েছিলেন এবং পরে দল থেকে বহিষ্কারও করেছিলেন।
    অনেকেই জেনারেল জিয়াকে আবার বহুদলীয় গণতন্ত্র চালু করার যে কৃতিত্ব দিয়ে থাকেন তা আপাতদৃষ্টিতে সত্যি হলেও কেউ এ কথা বলেন না যে, সেনাবাহিনীর ছত্রছায়ায় তার নিজস্ব একটি রাজনৈতিক দল গঠনের পরই কেবল তিনি অন্যান্য দলকে রাজনীতি করার অধিকার দিয়েছিলেন। জিয়াউর রহমানের বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের মধ্যে একটি সাম্প্রদায়িক চিত্র ছিল অত্যন্ত পরিষ্কার। বাংলাদেশের ইতিহাসের জন্য তো বটেই, জিয়াউর রহমানকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে উপস্থাপন করার ক্ষেত্রেও এটি রীতিমতো বিব্রতকর ব্যাপার যে, তিনি তার দল গড়ার জন্য এবং সরকার পরিচালনার জন্য ৯ কোটি মানুষের মধ্যে বেছে বেছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধবিরোধীদের কিংবা নিদেনপক্ষে সদ্য সাবেক মুসলিম লীগারদেরই বেছে নিলেন। জিয়াউর রহমান, বলাই বাহুল্য, রাষ্ট্রের চরিত্রে চতুরতার সঙ্গে যে পরিবর্তন আনলেন যার অনেকটাই তিনি এনেছিলেন সামরিক একনায়ক হিসেবে, তখনই দেশের আদর্শিক বিভাজন নিশ্চিত হলো। পরিহাসের বিষয়, এ দৃষ্টিকোণ থেকেও জিয়া বাংলাদেশের রাজনীতিকে এতটাই কঠিন করে গেলেন যে, দেশের মানুষের এই বিভাজন একটা স্থায়ী চরিত্র গ্রহণ করল। গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে রাজনীতি করেও তিনি বঙ্গবন্ধুকে জাতির জনকের মর্যাদা দিতে পারতেন। এই ব্যর্থতার সবটুকু দায় কিন্তু জিয়াউর রহমানের। সে সময় তিনি এসব পদক্ষেপ নিলে প্রশংসিত হতেন সর্বমহলে। তার হীনম্মন্যতা বোধের পরিবর্তে উদারতাই প্রকাশ পেত।

    বিস্তারিত পড়ুন, ১৩ জুন ২০১০-এর সমকালের মুক্তমঞ্চে : বাস্তবের জিয়া, কিংবদন্তির জিয়া

  20. মাসুদ করিম - ১৩ ডিসেম্বর ২০১১ (৬:১৪ অপরাহ্ণ)

    ‘বাংলাদেশি’ এই পরিচয়ের উৎস নিয়ে যতীন সরকার বলছেন

    একপর্যায়ে তারা উপলব্ধি করে যে ‘মুসলিম বাংলা’ কথাটি বাংলাদেশের বিপুল জনগোষ্ঠীর কাছে গৃহীত হবে না। তাই তারা গ্রহণ করে ‘বাংলাদেশি’ শব্দটি। এই ‘বাংলাদেশি’ শব্দটির উদ্ভাবক ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারভুক্ত কায়েমি স্বার্থবাদী গোষ্ঠীর সহযোগী পশ্চিমবঙ্গের এক বাঙালি সন্তান। এ সম্পর্কে আমার এক ধীমান বন্ধু ‘জামান মাহফুজ’ ছদ্মনামে ১৯৯১ সালে ‘আজকের কাগজ’ পত্রিকায় একটি চিঠি প্রকাশ করেন। ওই বন্ধু নিজে যেহেতু তাঁর আসল নামটি কাউকে জানাননি, তাই আমিও আর সেটি ফাঁস করে দিলাম না। চিঠিতে তিনি লিখেছিলেন_
    “বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ভুট্টো একে ‘মুসলিম বাংলা’ বলতেন। সেই সময় ভারতীয় সাংবাদিক শ্রীবসন্ত চ্যাটার্জি ‘ইনসাইড বাংলাদেশ টুডে’ (১৯৭৪) নামে একটি বই লেখেন। তাতে তিনি বলেন, ‘মুসলিম বংলা’ স্লোগান এই মুহূর্তে অর্থাৎ এত বাঙালির মৃত্যুর পর বাংলাদেশের বাঙালিরা নেবে না। তবে খুব লাগসই শব্দ হবে ‘বাংলাদেশি’, যা অর্থের (কনটেন্টের) দিক থেকে মুসলিম বাংলাই। ওই ‘বাংলাদেশি’ কথাটি সাধারণ ও স্বল্প শিক্ষিত মানুষ দ্রুত গ্রহণ করবে বলে শ্রী চ্যাটার্জির মনে হয়। এই আইডিয়া দ্রুত লুফে নেয় বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী সাংবাদিক ও বিএনপির সাবেক মন্ত্রী মরহুম খন্দকার আবদুল হামিদ ও তাঁরই উপদেশে জেনারেল জিয়া।

    বিস্তারিত পড়ুন আজকের কালের কণ্ঠে যতীন সরকারের কলাম : বাঙালিত্বের প্রতি ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি ও বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রাম

  21. মাসুদ করিম - ৫ জানুয়ারি ২০১২ (১:২২ অপরাহ্ণ)

    জিয়ার ইতিহাসের জায়গা নিয়ে বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর লিখছেন

    রাজনীতি বিকিকিনির বিষয় হওয়ার দরুন মানুষের স্বরূপও বিকিকিনির বিষয় করে তুলেছেন জিয়াউর রহমান। সেখান থেকে মানুষের স্বরূপে সরে আসার সম্ভাবনা কমেছে। জিয়াউর রহমান, এভাবে মানুষের স্বরূপের মধ্যে অজ্ঞতা, মানসিক অলসতা, কুসংস্কার, ফ্যান্টাসি ঢুকিয়েছেন, রাজনীতি থেকে বিদায় দিয়েছেন -এথিকস, ‘আয় আয়’ করে ডেকে এনেছেন অযৌক্তিক এবং নির্যাতনমূলক আইনী ব্যবস্থা এবং অর্থনৈতিক পলিসি, বিদায় দিয়েছেন যুক্তির শাসন, শক্তিশালী করেছেন রাজনৈতিক ও নৈতিক ইনজাস্টিস ও রাজনৈতিক ও ধর্মজ সন্ত্রাস। (আরব বসন্ত যেন আসবে বাংলাদেশে, কখন আসবে?)
    জিয়াউর রহমান আর একটি অন্যায় করেছেন। বাংলাদেশের মানুষকে ইতিহাসের আশ্রয় থেকে ও নিরাপত্তা থেকে বার করার ষড়যন্ত্র করেছেন। এই ষড়যন্ত্রের ফলশ্রুতিতে পাকিস্তানি ইতিহাসের কাছে বাংলাদেশের ইতিহাসকে তিনি টেনে এনেছেন এবং টেনে আনার দায়িত্ব অর্পণ করেছেন জামায়াতে ইসলামীকে এবং সশস্ত্র শক্তির একাংশকে। এখান থেকে শুরু বিএনপির রাজনীতি চর্চা, ইতিহাস চর্চা ও রাষ্ট্রচর্চা। বিএনপির রাজনীতি চর্চার মধ্যে দায়বদ্ধতা নেই (খালেদা জিয়া বিএনপির রাজনীতি চর্চার আপাতত শেষ সংস্করণ, এই সংস্করণে দায়বদ্ধতা নেই), ইতিহাস চর্চার মধ্যে কদর্য সাম্প্রদায়িকতা আছে এবং রাষ্ট্রচর্চার মধ্যে ৰমতার জবরদসত্মি আছে। তিনটির মধ্যে যুক্ত ৰমতা : প্রথম বিশেস্নষণ থেকে শেষ বিশেস্নষণ পর্যনত্ম ৰমতা। ৰমতার জন্য আকুতি, ৰমতার জন্য ষড়যন্ত্রের পর ষড়যন্ত্র জিয়াউর রহমানের চরিত্র নষ্ট করেছে, তেমনি তাঁর স্ত্রীর চরিত্রও ভ্রষ্ট হয়েছে।
    এ জন্য জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধের মধ্যে থেকেও মুক্তিযুদ্ধ করেননি এবং একই কারণে খালেদা জিয়া মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিসত্মানীদের ক্যান্টনমেন্টে জীবনযাপন করতে দ্বিধা করেননি। এ দুটি তিক্ত তথ্যের বিশেস্নষণের ওপর নির্ভর করছে একদিকে জিয়াউর রহমানের চরিত্র, অন্যদিকে খালেদা জিয়ার চরিত্র। চরিত্রহীনতার কারণে তাঁদের প্রণীত জাতীয়তাবাদের মধ্যে একটা মিথ্যা ঘণ্টা অনবরত বাজতে থাকে। কি তাদের বক্তব্য, কি তাঁরা বলতে চান, কোথায় তাঁদের গনত্মব্য : কোনকিছু স্পষ্ট নয়। তাঁরা ধর্মপরায়ণ নন, কিন্তু ৰমতার স্বার্থে ধর্ম ব্যবহার করেছেন। নিজেদের রাজনীতির নিরাপত্তার কারণে ধর্ম নিয়ে খেলেছেন।

    লিন্ক : প্রেতাত্মার হাত থেকে মুক্ত হওয়ার সময় এসেছে

  22. মাসুদ করিম - ১০ জানুয়ারি ২০১২ (৬:৪২ অপরাহ্ণ)

    অলি জিয়াকে দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি তো বলবেই — জিয়াই তো বলেছিল

    “This is Shadhin Bangla Betar Kendro. I, Major Ziaur Rahman, on behalf of Bangobondhu Sheikh Mujibur Rahman, hereby declare that the independent People’s Republic of Bangladesh has been established. I have taken command as the temporary Head of the Republic. I call upon all Bengalis to rise against the attack by the West Pakistani Army. We shall fight to the last to free our Motherland. By the grace of Allah, victory is ours.”

  23. মাসুদ করিম - ২১ মে ২০১৩ (৫:৫৫ অপরাহ্ণ)

    জিয়ার ইতিহাসের জাযগায় একটা বড় ঘটনা নিশ্চয়ই কর্নেল তাহের হত্যা। গতকাল হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায়ে তাহেরের গোপন বিচার অবৈধ ও বেআইনি ঘোষণাই শুধু করা হয়নি সেসাথে এই বিচারের নামে কর্নেল তাহেরেকে যে ঠাণ্ডা মাথায় খুন করা হয়েছে এবং জিয়াই যে ছিলেন সেই হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী তা স্পষ্ট করে বলা হয়েছে। এখন কথা হচ্ছে জিয়ার ইতিহাসের জায়গায় এরকম খুন তো আরো অনেক ছিল, এসব খুনগুলোর বিচার বিভাগীয় তদন্তের কাজও শুরু করা উচিত দ্রুততম সময়ে — জিয়ার ইতিহাসের জাযগা নিয়ে ধুম্রজাল যত কমবে তত বাংলাদেশের ইতিহাসের ধুম্রজালও কমবে। সেসাথে জিয়ার খুনের বিচারটাও যেন হয়, সেটাও খুবই দরকার বাংলাদেশ ও জিয়ার ইতিহাসের ধুম্রজাল কাটাতে ।

    তাহেরকে ফাঁসি দিতে জিয়া আগেই মনস্থির করেন

    সামরিক আদালতে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার কর্নেল আবু তাহেরের গোপন বিচার অবৈধ ও বেআইনি ঘোষণা করে দেওয়া হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়েছে। বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেন গতকাল সোমবার ১৯৮ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়ে স্বাক্ষর করেছেন। এরপরই তা প্রকাশ করা হয়। অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এম কে রহমান গতকাল সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। এর আগে ২০১১ সালের ২২ মার্চ হাইকোর্ট ওই রায় ঘোষণা
    করেছিলেন। দুই বছর ২০ দিনের মাথায় পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হলো। সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে রায়টি প্রকাশ করা হয়েছে। রায়ে বিভিন্ন ঐতিহাসিক দিক তুলে ধরা হয়।
    পূর্ণাঙ্গ রায়ে আদালত বলেছেন, তাহের পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের শিকার। ঠাণ্ডা মাথায় এর পরিকল্পনাকারী ছিলেন জিয়াউর রহমান। তাহেরের মৃত্যুদণ্ড ‘ঠাণ্ডা মাথায় খুন’ বলে চিহ্নিত করতে সরকারের প্রতি নির্দেশ দেন আদালত। এ ছাড়া দণ্ডিত ব্যক্তির তালিকা থেকে রিটকারীদের নাম মুছে ফেলারও নির্দেশ দেওয়া হয়। রায়ে বলা হয়, সামরিক ট্রাইব্যুনাল গঠনের অনেক আগেই জেনারেল জিয়াউর রহমান কর্নেল তাহেরের মৃত্যুদণ্ড দিতে মনস্থির করেছিলেন। এ ছাড়া যেহেতু জেনারেল জিয়া বেঁচে নেই, আইন অনুযায়ী তার বিচার সম্ভব নয়। তারপরও সরকারের উচিত হবে এই হত্যার জন্য দায়ী কেউ জীবিত থাকলে তাকে খুঁজে বের করে অভিযুক্ত করা। ‘গণতন্ত্র এবং উন্নয়নের চ্যালেঞ্জ, প্রেক্ষাপট বাংলাদেশের রাজনীতি ও সামরিক শাসন’ নামে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ রচিত বই প্রসঙ্গে আদালত বলেন, এ বইয়ে তাহের এবং তথাকথিত সামরিক আদালতে বিচার বিষয়ে যা তুলে ধরা হয়েছে তাতেও প্রমাণ হয়, জিয়া ছিলেন ক্ষমতালিপ্সু। মওদুদ বইটিতে উল্লেখ করেছেন, ‘জিয়ার ওপর প্রচ চাপ ছিল, অন্য কোনো উপায় ছিল না।’ পাকিস্তানিদের খুশি করতে এই রায় দেওয়া হয়েছে। এসব কথা জিয়ার মুখ থেকে শুনেছেন বলে বইয়ে উল্লেখ করেছেন ব্যারিস্টার মওদুদ।
    রায়ে কর্নেল তাহেরকে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও দেশের গৌরব উল্লেখ করে আদালত বলেন, তার হত্যাকাণ্ড দেশের ইতিহাসের একটি কলঙ্কময় অধ্যায়। তাহেরের ফাঁসিকে ‘নিরঙ্কুশ খুন’ বলে অভিহিত করেছেন আদালত। রায়ে বলা হয়, যে অপরাধে তাহেরকে অভিযুক্ত করা হয়েছিল, সেই অপরাধে মৃত্যুদণ্ডের কোনো বিধান ছিল না। সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ডের বিধান ছিল। তথাকথিত বিচারকে কোনো অবস্থাতেই বিচার বলে বিবেচনা করা যায় না। বিচারক যে রায় দিয়েছেন, তা ছিল নেহাতই প্রভুদের কণ্ঠস্বর। এখানে আসামিদের আইনজীবী নিয়োগের কোনো সুযোগ দেওয়া হয়নি। আত্মপক্ষ সমর্থন ও সাক্ষীদের জেরা করার সুযোগও দেওয়া হয়নি।
    রায়ে আদালত আরও বলেন, অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কী অভিযোগ তা শোনা হয়নি, তাদের জিজ্ঞাসাও করা হয়নি তারা দোষ স্বীকার করেন কি-না। তাদের সাফাই সাক্ষীরও সুযোগ দেওয়া হয়নি। আত্মীয়-পরিজন ও আইনজীবীদের সঙ্গে দেখা ও কথা বলার সুযোগ দেওয়া হয়নি। মামলার এফআইআর ও চার্জশিটের কপিও দেওয়া হয়নি। ফৌজদারি মামলায় যেসব প্রক্রিয়া অনুসরণ করার কথা ছিল, তা অনুসরণ করা হয়নি। বিচারক এখতিয়ারের বাইরে গিয়ে রায় দিয়েছেন।
    তাহেরের বিচারের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা চারটি রিটের নিষ্পত্তি করে ২০১১ সালের ২২ মার্চ হাইকোর্ট এ রায় দেন। আদালত একই সঙ্গে তাহেরসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে ১৯৭৬ সালে গঠিত সামরিক আদালতকে অবৈধ ও অসাংবিধানিক হিসেবে ঘোষণা করেন। এদিকে আদালতের রায়ে কৃতজ্ঞতা ও সন্তোষ প্রকাশ করেছে তাহেরের পরিবার। তারা বলেন, দীর্ঘ ৩৭ বছর পর কলঙ্ক মোচন হয়েছে। পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের কথা শুনে আদালতে ছুটে আসেন তাহেরের স্ত্রী ও ভাই। তাহেরের স্ত্রী লুৎফা তাহের রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে সাংবাদিকদের বলেন, তাহেরের স্ত্রী হিসেবে আমিও দীর্ঘদিন পর ন্যায়বিচার পেয়েছি। এতদিন ধরে কলঙ্ক বয়ে বেড়িয়েছি। আজ আমি গর্বিত ও আনন্দিত। রায়ে প্রমাণ হলো, তাহের একজন মহান দেশপ্রেমিক ছিলেন। তাহেরের ভাই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, এটি একটি যুগান্তকারী রায়। রায়ে প্রমাণিত হয়েছে, বাংলাদেশ কোনো বর্বর দেশ নয়। এ রায় মাইলফলক।
    প্রেক্ষাপট : রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে ১৯৭৫ সালের ২৪ নভেম্বর কর্নেল তাহেরকে গ্রেফতার করা হয়। পরে সামরিক আদালতে গোপনে বিচার শুরু হলে ১৯৭৬ সালের ১৭ জুলাই ৩৩ আসামির মধ্যে ১৭ জনের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়। তাদের মধ্যে দুই সেক্টর কমান্ডার কর্নেল তাহের, মেজর এমএ জলিল ও তাহেরের ভাই আবু ইউসুফ খানকে মৃত্যুদ দেওয়া হয়েছিল। পরে ‘মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে’ মেজর জলিল ও আবু ইউসুফের দণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন করা হয়। এছাড়া বিচারের রিট আবেদনকারী আনোয়ার হোসেনকে ১০ বছর ও ফ্লাইট সার্জেন্ট আবু ইউসুফ খানকে যাবজ্জীবন কারাদ দেওয়া হয়। এছাড়া আরও ১৪ জন বিভিন্ন মেয়াদে দলাস দেন সামরিক আদালত।
    সামরিক আদালতের রায় ঘোষণার মাত্র তিন দিনের মাথায় ২১ জুলাই ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে কর্নেল তাহেরের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদনও করেননি তাহের। তার পরিবার দাবি করেছে, বিচার বা দ ের বিষয়ে ওই সময় তাদের জানানো হয়নি। এমনকি রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার সুযোগও দেওয়া হয়নি। সেই গোপন বিচারের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০১০ সালের আগস্ট মাসে তাহেরের ভাই ড. আনোয়ার হোসেন, কর্নেল আবু তাহেরের স্ত্রী লুৎফা তাহের এবং একই বিচারে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত তাহেরের আরেক ভাই ফ্লাইট সার্জেন্ট আবু ইউসুফ খানের স্ত্রী ফাতেমা ইউসুফ হাইকোর্টে প্রথমে একটি রিট আবেদন করেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট তাহেরের গোপন বিচারের নথি তলব করেন। একই সঙ্গে তাহেরের বিচারের জন্য সামরিক আইনের মাধ্যমে জারি করা আদেশ এবং এর আওতায় গোপন বিচার ও ফাঁসি কার্যকর করা কেন অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না তা জানাতে সরকারের প্রতি রুল জারি করেন। পরে ওই গোপন বিচারের মুখোমুখি অন্য ছয়জনের করা তিনটি রিটের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত একই রুল জারি করেন। ওই ছয়জন হলেন জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, সহ-সভাপতি রবিউল আলম, মেজর (অব.) জিয়াউদ্দিন, হাবিলদার আবদুল হাই মজুমদার, করপোরাল শামসুল হক ও আবদুল মজিদ।
    রায়ে সামরিক আদালতে বিচারকে প্রহসনের ‘নাটক’ উল্লেখ করে তাহেরকে শহীদের মর্যাদা এবং অন্য যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন তাদের দেশপ্রেমিক হিসেবে চিহ্নিত করতে সরকারকে নির্দেশ দেওয়া হয়। এ ছাড়া গোপন বিচারে ক্ষতিগ্রস্তদের পদোন্নতি, অবসর ভাতাসহ বিভিন্ন আর্থিক সহায়তার ব্যাপারে সরকারকে পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে বলা হয়। বঙ্গবন্ধু হত্যাকা ে জিয়াউর রহমানের সম্পৃক্ততা ছিল কি-না, তাও খতিয়ে দেখতে বলেন আদালত। পাশাপাশি জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতাবিরোধী উল্লেখ করে পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং এরপর বিভিন্ন ঘটনায় কয়েক হাজার মুক্তিযোদ্ধা ও সেনা কর্মকর্তা হত্যার ঘটনা তদন্তে উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করতে নির্দেশ দেন আদালত। এছাড়া সামরিক আদালতে বিচারের সহযোগী হিসেবে তৎকালীন ম্যাজিস্ট্রেট আবদুল আলীর বিরুদ্ধে ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী হত্যা মামলা দায়ের ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়।
    রায়ের পর্যবেক্ষণ :আদালতের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের একটি ইচ্ছা জিয়াউর রহমানের মধ্যে সবসময়ই ছিল। এ ইচ্ছা বাস্তবায়নে যারা তার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন তাদের মধ্যে কর্নেল তাহের অন্যতম। তাই ১৯৭৬ সালে তাহেরসহ ১৭ জনকে সামরিক আদালতে বিচারের সম্মুখীন করা হয়। মার্কিন সাংবাদিক লিফশুলজ ও অ্যামিকাস কিউরি ড. কামাল হোসেন, ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম, ড. এম জহিরসহ অন্যরা এবং গোপন বিচারে দ প্রাপ্তরা আদালতে বিচার সম্পর্কিত বিষয় তুলে ধরেন। এতে দেখা যায়, এটি ছিল একটি প্রহসন, প্রতারণা ও ভুয়া বিচার। সংবিধান অনুযায়ী ওই আদালত গঠন এবং বিচারের কোনো এখতিয়ার ছিল না। তাই ধরে নিতে হবে এ ধরনের কোনো বিচার হয়নি।

  24. মাসুদ করিম - ৩০ জুলাই ২০১৩ (১২:৪৪ অপরাহ্ণ)

    প্রদীপ চৌধুরী: স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র কীভাবে স্থাপন করলেন এবং বঙ্গবন্ধুর দেওয়া স্বাধীনতার ঘোষণা কীভাবে জাতির কাছে পৌঁছে দিলেন সেটা একটু আমাদের বলবেন।

    বেলাল মোহাম্মদ: মুক্তিযুদ্ধের সূচনা লগ্নে ২৬ শে মার্চ স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র স্বতঃস্ফূর্তভাবে চট্টগ্রামের কালুরঘাটে প্রতিষ্ঠিত হয়। তখন দখলদার বাহিনী আগের রাতে অর্থাৎ ২৫শে মার্চ দিবাগত রাতে হঠাৎ করে নিরস্ত্র জনতাকে আক্রমণ করে। ঢাকায় বিশেষ বিশেষ কি-পয়েন্ট স্টেশনগুলো দখল করে নেয়। তার মধ্যে রেডিও স্টেশনও ছিল। রেডিওতে গিয়ে তারা বিভিন্ন প্রচার শুরু করে।

    এদিকে অসহযোগ আন্দোলনের সময় আমাদের মহান নেতা বঙ্গবন্ধু যে অসহযোগ আন্দোলন ডেকে ছিলেন তার প্রভাবে বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণ দলমত নির্বিশেষে সবাই উদ্বুদ্ধ হয়েছিল। কতিপয় কুলাঙ্গার, রাজাকার, আলবদর যারা ছিল তারা ছাড়া বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের মুখে একটি স্লোগান ছিল ‘জয় বাংলা’ এবং ‘জয় বঙ্গবন্ধু’। একক স্লোগান, একক নেতৃত্ব।

    সেই সময় রেডিওতে রেডিওর লোক যারা ছিল তারাও উদ্বুদ্ধ ছিল এবং ৭ই মার্চের বক্তৃতায় সুস্পষ্টভাবে রেডিওর কর্মচারীদের উপরও নির্দেশ ছিল, যদি রেডিওতে বাঙালিদের স্বার্থে কথা বলতে না দেওয়া হয় তাহলে কোনও বাঙালি যেন রেডিও অফিসে না যায়।

    ২৬শে মার্চ সকাল বেলা স্বাভাবিক ভাবে আমরা লক্ষ করলাম, ঢাকা কেন্দ্র থেকে সামরিক বাহিনীর কথা বলা হচ্ছে। ওদের বক্তব্যই শুধু বলা হচ্ছে। কাজেই আমরা আর যাইনি রেডিওতে। আমি আর আমার সমমনা যারা আছি তারা চিন্তা ভাবনা করছি, যে কী করা যায়। এখন ঢাকা কেন্দ্র হলো ১০০ কিলোওয়াট ট্রান্সমিটার আর চট্টগ্রাম মাত্র ১০ কিলোওয়াট। আমাদের ৫০ মাইল ব্যসার্ধ রেডি আছে, ঐ ১০ কিলোওয়াট দিয়েই একটা কাউন্টার প্রোগ্রাম করার উদ্যোগ নেওয়া যায়।

    প্রস্তুতি যখন নেওয়া হচ্ছিল প্রথমে আমি ছিলাম এনায়েতগঞ্জে, দাদা ডা. শফির বাড়িতে, সেখান থেকে আওয়ামী লীগের একটা অফিস ছিল জহুর হকার্স মার্কেটে, সেখানে গেলাম আমি। তিন দিনই তার সঙ্গে দেখা করার জন্য গেলাম, কিন্তু তার দেখা পেলাম না। ওখানে তরুণ যারা আমাকে একটা জীপ গাড়ি দিলেন, গাড়িটা নিয়ে প্রস্তুতি পর্বে সর্ব প্রথম কেন্দ্রকে পাহারা দেওয়ার জন্য গেলাম ক্যাপ্টেন রফিকুল ইসলামের কাছে। তাকে পাওয়া গেল। তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ আমি পাহারার ব্যবস্থা করছি। আপনি কাজ আরম্ভ করেন।’

    তো এক পর্যায়ে ব্রটকাস্টিং হাউজের সামনে পেলাম গোসাইলডাঙ্গা আওয়ামীলীগ ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট ডা. আনোয়ার আলীকে। তিনি বললেন, ‘রেডিও যে চালু করবেন তাতে কী প্রচার করবেন?’ আমি বললাম, ‘কী আর প্রচার করবো বঙ্গবন্ধু আর স্বাধীনত

    তিনি আমার হাতে একটা কাগজ ধরিয়ে দিলেন। কাগজটা হলো ২৬শে মার্চ সকাল বেলা স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা মাইকিং করেছে চট্টগ্রামের প্রধান প্রধান সড়কে যে ঢাকায় আক্রমণ হয়েছে। এই প্রেক্ষিতে আমাদের মহান নেতা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন। এই বক্তব্যটুকু তার বার্তা আকারে গিয়েছিল ডা. আনোয়ার আলী বললেন।

    তিনি সেটাকে বাংলায় অনুবাদ করে… তখনকার দিনে হাতে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে রেকর্ড করা হতো এবং সেটা দিয়েই আমরা শুরু করেছি। আমরা সন্ধ্যা ৭ টা ৪০ মিনিটে চালু করতে পেরেছি এবং বিভিন্ন কণ্ঠে নাম ছাড়া ওই বক্তব্যটুকু প্রচার করেছি।

    কিছুক্ষণ পর ওখানে এলেন এম এ হান্নান। তাকে আমি চিনতাম না। ডা. জাফর ছিলেন তখন জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ। তিনি আমাকে পরিচয় করে দিলেন যে ইনি আমদের হান্নান ভাই। হান্নান ভাই বললেন, ‘আমার নাম অ্যানাউন্স করো না, আমি একটা ভাষণ দেবো।’

    আমি বললাম, ‘আপনার নাম অ্যানাউন্স করবো না। আপনি এমনি ভাষণ দেবেন কারণ আমরা ঘোষণা করেছি আগামী কাল, পরশু ও তরশু এমনি ভাবে প্রচার করবো। ধারাবাহিক ভাবে আমাদের পরিচিত নাম প্রচার হলে শত্রুপক্ষ বুঝে ফেলবে যে এটা কোথা থেকে হচ্ছে। আপনার কণ্ঠস্বরটাই যথেষ্ট।

    উনি বললেন, ‘যে দুপুর বেলা আমি কিন্তু আপনার এই কেন্দ্র থেকে ছোট্ট আকারে একটি ঘোষণা প্রচার করেছিলাম।’ সেটা আমি জানি না। অর্থাৎ সেই একই দিন ২৬ শে মার্চ দুপুর বেলা উনি (এম এ হান্নান) রেডিওর কয়েক জন পরিচিতকে নিয়ে… যারা অনিচ্ছুক ছিল এই রকম কয়েকজনকে নিয়ে রেডিও অন করিয়ে। ওটাকে বলা হবে চট্টগ্রাম বেতারের বিক্ষিপ্ত একটা অধিবেশন। সেখানে বঙ্গবন্ধু দেশের স্বাধীনতা করেছেন এই মর্মে একটা বক্তব্য রয়েছে।

    একই বক্তব্য তখন একটু বড় করে লিখে এনেছেন উনি। সেটা আবার দ্বিতীয় বার প্রচার করলেন। এবারও নাম ছাড়া। এম এ হান্নান সাহেব ২৬ তারিখে দুই বার আসার পরে আর আসতে পারেন নি। এর পর উনি অন্য কাজে ব্যস্ত ছিলেন।

    অন্যদিকে রফিকুল ইসলাম সাহেবকে আমি যে বলে ছিলাম সৈন্য পাঠিয়ে পাহারার ব্যবস্থা করার জন্য কিন্তু তিনি পাঠান নাই। যার ফলে অত্যন্ত অসহায় বোধ করেছিলাম। রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত অনুষ্ঠান শেষ করার পর দেখা গেল ওখানে কেউ নেই। যে দুইজন ইঞ্জিনিয়ারকে জোর করে কাজ করিয়ে ছিলাম তারা চলে গেছে। লিসেনারদের বলেছি, আপনারা আগামী দিন সকাল ৯টায় আমাদের অনুষ্ঠান শুনবেন। যদি পর্যাপ্ত সংখ্যক সহকর্মী না আসে তাহলে তো প্রচার করা যাবে না।

    এখন দুঃশ্চিন্তা হলো প্রথমত কালুর ঘাট থেকে এনায়েত বাজার পর্যন্ত আমরা হেঁটে পার হয়ে গেছি, আগামী কাল প্রোগ্রাম কীভাবে করবো। এদিক সেদিক টেলিফোন করেছি টেলিফোন দেওয়ার পর চন্দনপুরের তাহের সোবাহান নামে আমার এক বন্ধু ছিল, তিনি বললেন, ‘রফিকুল ইসলাম ক্যাপ্টেন কেন যে কথা দিয়ে কথা রাখলেন না জানি না। তার চেয়ে বড় একজন উচ্চ পদের মেজরের সন্ধান আমি জানি, তবে নাম জানি না। তিনি পটিয়াতে আছেন। তিনি হেড কোয়ার্টারের বাইরে এসেছিলেন বাবর এবং সোয়াত জাহাজের অস্ত্র খালাশের জন্য। তিনি আজ রাতে, মানে ২৬ শে মার্চ দিবাগত রাতে সিচুয়েশন অবজার্ভ করার জন্য পটিয়াতে আছেন।’

    আমাকে উনি অ্যাডভাইজ করলেন, ২৭ তারিখ যদি পটিয়াতে যেতে পারেন নিশ্চয়ই ওনাকে ওখানে পাবেন। যেহেতু বাইরে আছেন নিশ্চয়ই উনি বঙ্গবন্ধুর সাপোর্টার হবেন। আমার আর এক বন্ধুর সাহায্যে আমরা একটা গাড়ির ব্যবস্থা করে পরের দিন সকাল বেলা রওনা হয়েছি পটিয়ায়। আর আমার সহকর্মীদের বলে দিয়েছি কালুর ঘাটের দিকে আস্তে আস্তে যাবে। আমি পটিয়া থেকে আসার পর প্রোগ্রাম শুরু হবে।

    পটিয়ায় পৌঁছেই দেখা গেল আর্মি গিজ গিজ করছে। ওখানকার দারোগা আমার পরিচিত মানিক মিয়া। ওনাকে জানলাম।

    এখানে যে আর্মি অফিসার আছে তার নাম মেজর জিয়াউর রহমান। তার সঙ্গে দেখা হলো। তাকে বললাম, ‘আপনি তো এখানে ব্রটকাস্ট শুনেছেন।’

    তিনি বললেন, আমরা যে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা প্রচার করেছি তা শুনেছেন এবং খুশি হয়েছেন।

    আমি বললাম, ‘আপনি যদি দয়া করে আপনার এই ছাউনিটা এখান থেকে সরিয়ে কালুর ঘাটে নিয়ে যেতেন তা হলে বাড়িটা প্রটেক্ট হবে। আমরাও ওখানে স্থায়ীভাবে থাকতে পারবো। স্থায়ীভাবে না থাকতে পারলে কোনো কমিটমেন্ট করা যাবে না। ঠিক টাইমে রেডিওতে প্রোগ্রাম দেওয়া অ্যাডভেঞ্চার নয়। বেশ কিছু লোক লাগে। সব রকমের পয়েন্টে লোক বসে থাকা লাগে।’

    তার পর উনি আর দেরি করেন নাই। সৈন্যদেরকে রওনা করিয়ে দিলেন। নিজেও একটা জীপে করে রওনা হলেন। আমাদের গাড়িটা ওনার গাড়ির পেছনে পেছনে চললো। পথে যেখানেই উনি বেশি মানুষের জটলা দেখেছেন, যারা কর্মস্থল ছেড়ে পোটলা-পাটলি নিয়ে চলে যাচ্ছে সেখানে তিনি দাঁড়িয়ে একটা বক্তৃতা দিলেন। ‘আপনারা যার যার কাজের জায়গায় চলে যান। ইনশাল্লাহ দু’এক দিনের মধ্যে আমরা পাঞ্জাবিদের খতম করে দেবো। আর উর্দু ভাষায় যারা কথা বলে তারা সব আমাদের দুশমন। তাদেরকে শেষ করে দেন।’

    এটাই ছিল ওনার বক্তব্য। এই দশ জায়গায় থেমে থেমে যাওয়ার জন্য আমাদের কালুর ঘাটে পৌঁছতে সন্ধ্যা হয়ে গেল। গিয়ে দেখলাম কালুর ঘাটে পাহাড়ার ব্যবস্থা হয়ে গেছে। হুইসেল পড়লো, একজন সেন্ট্রি হাত বাড়িয়ে দিল। আমাদের দুটো গাড়ি ঢুকলো।

    ২.

    আমার সহকর্মী যারা উপস্থিত ছিল, তারা প্রোগ্রাম শুরু করলো। একসময় জিয়াউর রহমান ও আমি একটা রুমে বসেছি। আমার এক সহকর্মী আমাকে কিছু কাগজপত্র দেখাচ্ছে। আমি কী মনে করে বললাম, “আচ্ছা মেজর সাহেব, এখানেতো আমরা সবাই মাইনর আপনিই একমাত্র মেজর। আপনি কি নিজের কণ্ঠে কিছু বলবেন?”

    উনি বললেন, “হ্যাঁ সত্যিই তো, কী বলা যায়?”

    একটা কাগজ এগিয়ে দেওয়া হলো। তার প্রতিটি শব্দ তিনিও উচ্চারণ করেছেন এবং আমিও উচ্চারণ করেছি। এইভাবে লেখা শুরু হলো।

    “আই মেজর জিয়া অন বিহাফ অব আওয়ার গ্রেট ন্যাশনাল লিডার বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান ডু হেয়ার বাই ডিক্লেয়ার ইন্ডিপেনডেন্স অব বাংলাদেশ।”

    তারপরে লেখা হলো পাঞ্জাবিরা যেসব অস্ত্র ব্যবহার করছে। তাদের দমন করতে আমাদের দুই দিন কি তিন দিনের বেশি সময় লাগবে না। তার পরে শেষ করা হলো ‘খোদা হাফেজ জয় বাংলা’ বলে।

    এই ঘোষণাটির খসড়াও তৈরি হলো আমার সঙ্গে আলাপ করে। আমি সঙ্গে সঙ্গে অনুবাদও লিখলাম। আর আমার সহকর্মীদের বলে দিলাম একটা ঘোষণা দিতে থাকো, “মেজর জিয়াউর রহমান একটি জরুরি ভাষণ দেবেন। জিয়াউর রহমান বলবেন না, মেজর জিয়া বলবেন।”

    কিছুক্ষণের মধ্যে মেজর জিয়া একটা জরুরি ভাষণ দেবেন – এভাবে দুই তিনবার অ্যাডভান্স অ্যানাউন্সমেন্ট করা হলো। তারপর তিনি নিজের কণ্ঠে ইংরেজিটা পড়েছেন। বাংলাটা আমার সহকর্মী আব্দুল্লাহ আল ফারুকের কণ্ঠস্বর ভাল, তাকে দিয়ে শুনিয়েছি। এইভাবেই হলো। কোন রকম পূর্বপ্রস্তুতি ছিল না, পরিকল্পনা ছিল না এবং এটা স্বাধীনতা ঘোষণা না। এটা হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর পক্ষ থেকে একই কথার পুনরুক্তি করা।
    রাষ্ট্রপতি জিয়া কোনোদিন নিজেকে স্বাধীনতার ঘোষক বলেননি। ২৬ তারিখও বলেননি, উনি সবসময় ২৭ তারিখই বলেছেন। এবং ৭ই মার্চের বক্তব্যকে তিনি একটা প্রবন্ধে একটা পত্রিকায়, সম্ভবত বিচিত্রায়, জাতির জনকের গ্রিন সিগন্যাল বলেছেন। পরবর্তী সময় যে ঘোষক-টোষক বলা হয়েছে এগুলো তৈরি করা। রাষ্ট্রপতি জিয়া এগুলো ক্লেইম করেননি।

    আমি এখন যে কথাটুকু বললাম যে ওনাকে ঠাট্টার মতো প্রস্তাব দিয়েছি, ওনার জীবদ্দশায় আমি এ নিয়ে প্রবন্ধ লিখেছি। সে সব প্রবন্ধ উনি পড়েছেন। উনি কোনো আপত্তি করেননি। যেমন আমি ওনাকে ডেকে নিয়ে গিয়েছি, কিন্তু এক জায়গায় উনি বলছেন, “উই ক্যাপচার্ড রেডিও অন টোয়েন্টি সেভেন,” এই ‘ক্যাপচার্ড’, এটা সামরিক ভাষা। আর্মিকে আমি ডেকে নিয়ে গেলেও তারা পজেশন নিলেই তারা তাদের ভাষায় বলবে আমরা ক্যাপচার করেছি। এতে মাইন্ড করি না।

    প্রদীপ চৌধুরী: জিয়াউর রহমানই স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন – এই বিষয়ে আপনার বক্তব্য?

    বেলাল মোহাম্মদ: এটা সম্পূর্ণ মতলবি এবং রাজনৈতিক। প্রকৃতপক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা এটা ছেলে খেলা নয়, এটা যে কেউ দিতে পারে না। বাংলাদেশে স্মরণকালের ইতিহাসে নবাব সিরাজ-উদদৌলার পর থেকে যদি ধরি, অনেক বড় নেতার উদ্ভব হয়েছে। নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন রায়, শেরেবাংলা একে ফজলুল হক এরা কেউই স্বাধীনতার ঘোষণার পরিবেশ পাননি। একমাত্র ১৯৭১ সালে বঙ্গদেশের একটা খণ্ডিত অংশ পূর্ববঙ্গের বাঙালীরা বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের একচ্ছত্র নেতৃত্বে বাঙালী জাতীয়তাবাদের পূর্ণ বিকাশ ঘটাতে পেরেছিল।

    আমাদের স্মরণকালের ইতিহাসে বঙ্গবন্ধুই একমাত্র সব রকমের ক্রাইটেরিয়া পূরণ করে স্বাধীনতা ঘোষণার পরিবেশ পেয়েছিলেন। স্বাধীনতার ঘোষণা তো ছেলেখেলা নয়। সেই স্বাধীনতা ঘোষণা করতে পারে যার জনপ্রতিনিধিত্ব থাকে ব্যাপক। সেই স্বাধীনতা ঘোষণা করতে পারে যার আন্তর্জাতিক পরিচিতি থাকে, সামরিক বাহিনীর সাপোর্ট থাকে এবং সেই মুহূর্তে শ্যাডো গভর্নমেন্ট ফর্ম করার প্রস্তুতি থাকে।

    এই সবগুলো ক্রাইটেরিয়ার একমাত্র ষোলকলা পূর্ণ হয়েছিল ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে। কাজেই স্বাধীনতার ঘোষণা আমি তো বললাম নেতাজীও করতে পারেননি, দেশবন্ধুও করতে পারেননি। আমাদের স্মরণকালের ইতিহাসে ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের নেতৃত্বে সর্ব প্রথম বাঙালীর একটি স্বাধীন রাষ্ট্র তৈরি হয়েছিল বাংলাদেশের খণ্ডিত অংশে ।

    আমি দাবি করে থাকি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র হলো বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সর্ব প্রথম সাংগঠনিক তৎপরতা। আমরা ক্ষুদ্র একটি দল যখন সংগঠিত হয়েছিলাম তখনও আমাদের প্রধান দল যে সামরিক বাহিনী তাও সংগঠিত হয়নি। আমরা বরং স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে বলেছি মুক্তিবাহিনী গঠন করার জন্য, দলে দলে মুক্তিবাহিনীতে যোগ দেওয়ার জন্য এবং এটা শত্রুপক্ষ ঠিকই ধরে নিয়েছিল। তাই শত্রুপক্ষের প্রথম বোম্বিংয়ের লক্ষ্য ছিল স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র। ৩০শে মার্চ কালুরঘাটের ওপরই বোমা বর্ষণ হয়েছিল এবং সেটাই ছিল হানাদার পাকিস্তান বাহিনীর সর্ব প্রথম বিমান হামলা। অর্থাৎ তারা আমাদের ধরে নিয়েছিল তাদের সেই মূহূর্তের প্রধানতম শত্রু।

    স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র, আমি আগেই বলেছি বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের সুস্পষ্ট নির্দেশনার দ্বারা অভিভূত বা উদ্বুদ্ধ বেতার কর্মীরাই গঠন করেছে। রাজনৈতিক নেতারা রেডিও চালু করতে কেন আসবে? তারা এসে পার্টিসিপেট করতে পারে। সামরিক বাহিনী রেডিও চালু করবে কেন? তারা পাহারার ব্যবস্থা করতে পারে।

    ৩.

    প্রদীপ চৌধুরী: কালুরঘাটে যে আপনারা রেডিও স্টেশনটা স্থাপন করেছিলেন ওটা তো চট্টগ্রাম রেডিওতে আপনারা যারা ছিলেন তারাই এটা করেছিলেন?

    বেলাল মোহাম্মদ: আমরা মুষ্টিমেয় কয়েকজন ছিলাম। এই নামটা আমার দেওয়া। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে আমার সঙ্গে পেয়েছি আবুল কাশেম সন্দীপকে। ইনি বেতারের বহিরাগত। আমার সঙ্গে থাকতেন ফ্যামিলি মেম্বারের মতো। তিনি একটা কলেজে অধ্যাপনা করতেন। আর আব্দুল্লাহ আল ফারুক রেডিওর জুনিয়ার অফিসার ছিলেন। এই দুইজনকে আমি প্রথম দিন পেয়েছি। আর যারা এসেছিল তারা কাজে সহায়তা করে ইচ্ছা করে চলে গেছে রাখতে পরিনি।

    তার পরের দিন (২৭ মার্চ) এসেছেন কাজী হাবীবউদ্দিন, আর একজন কর্মী এবং রেডিওর ইঞ্জিনিয়ার বিভাগের কর্মী আমিনুর রহমান। ২৮ তারিখে এসেছেন সারফুজ্জামান ও রাসিদুল হোসেন, ২৯ তারিখে এসেছেন সৈয়দ আব্দুর সাগির, মোস্তফা আনোয়ার ও রেজাউল করিম চৌধুরী। এই কজন হলাম আমরা স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের স্থপতি। রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে একমাত্র এম এ হান্নান একদিন এসেছেন, পরে আর কোনোদিন আসেননি। তিনি ছাড়া অন্য কোনো রাজনৈতিক নেতাও আসেননি।

    প্রদীপ চৌধুরী: তাহলে কি কেন্দ্রটি আপনারাই চালিয়েছিলেন?

    বেলাল মোহাম্মদ: হ্যাঁ, আমরাই চালিয়েছি। রেডিও আমাদের কাজ, ওরা আসবে কেন? ওদের অন্য কাজ, রাজনৈতিক নেতাদের তো অন্য রোল। তারা আর সামরিক বাহিনী তো বেতার প্রতিষ্ঠা করে নাই। সামরিক বাহিনীকে অনুরোধ করে নিয়ে আসা হয়েছে। নিয়ে আসার পর পাহারার ব্যবস্থা উনি করেছেন এবং ওদের সঙ্গে যিনি মেজর ছিলেন তিনি আমার তাৎক্ষণিক একটি প্রস্তাবে ঘোষণাটি পাঠ করেছেন। এর জন্য উনার কোনোরকম পূর্বপ্রস্তুতি ছিল না। উনি রেডিওতে কিছু বলবেন – এমন কোনো আভাসও উনি দেন নাই। আমি ওনাকে ঠাট্টার মধ্যে মেজর ও মাইনর বলেছিলাম বলেই তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিয়ে বক্তব্য দিলেন। আর উনি আরো কিছু বক্তব্য দিলেন। দ্বিতীয় তৃতীয় বক্তব্য আছে, প্রথম বক্তব্যটার কথা আমরা বলি যেটা বঙ্গবন্ধুর নামে। এখন নানান রকমের উদ্ভট কথাবার্তা বলা হয় প্রত্যক্ষদর্শীদের কথাটা উপেক্ষা করে।
    অনেকেই, আমাদের অনেক বুদ্ধিজীবীদের বলতে দেখি প্রথমে নাকি জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর নাম বলেন নাই। তখন প্রেশার দিয়ে নাম দেওয়া হয়েছে। কেউ কেউ বলে তারা নিজেদের উদ্যোগে নিয়ে এসেছে। আপনারা যদি নিজেরাই নিয়ে আসেন, তা হলে বঙ্গবন্ধুর নাম বলেন না কেন? উনি তো বঙ্গবন্ধুর অনুসারী হিসাবে আমাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। আমরা লক্ষ করেছি তো তার কথাবার্তা। বাঙালী একজন মেজর, বঙ্গবন্ধুর অনুসারী হবে না কেন?

    হ্যাঁ, ওনার আদর্শগত অন্যকিছু যেটা, সেটা উনি যখন পাওয়ারে এসেছেন, তখন হয়তো আমরা সেটা লক্ষ করেছি। উনি যখন সংবিধানের ওপর হাত দিয়েছেন তখন আমরা বুঝতে পেরেছি উনি বাঙালী জাতীয়তার প্রতি বিশ্বাস করেন না। এর আগে তো বুঝতে পারিনি। ওই সময় তো আমরা ওনাকে অনুগত দেখেছি। ওই সময় তো উনি-আমরা অভিন্ন ছিলাম। উনি যুদ্ধ করেছেন এবং ওনার ভাষণের একটা গুরুত্ব ছিল সেটা অস্বীকার করা যাবে না। অন্য যত কণ্ঠস্বর একটা যুদ্ধক্ষেত্রে এক্স, ওয়াই, জেডের কণ্ঠস্বর ওগুলো। কারণ সামরিক বাহিনীর দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে একটা দেশ। সামরিক বাহিনীর লোকও এই দলে আছে, বঙ্গবন্ধুর দলে একজন মেজর থাকা মানে একটা গ্রুপ আছে। এটা মানুষের মনোবল অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। মেজর জিয়াউর রহমানের কণ্ঠস্বর ওই সময়, মুক্তিযুদ্ধের সময় ২৭ শে মার্চ, জনগণকে নৈতিক সাহস দিয়েছে এইভাবে যে, আমরা আক্রান্ত হলেও ভয়ের কিছু নাই। আমাদের দলেও আর্মি আছে। এটা বিরাট কাজ হয়েছে। এটা কাকতালীয়ভাবে হয়েছে, কিন্তু এটা করার জন্যই যে জিয়াউর রহমানকে আনা হয়েছে বা তিনি করেছেন তা নয়, এটা আকস্মিকভাবে হয়েছে।

    আর রেডিও যদি চালু নাও হতো তাহলে কি মুক্তিযুদ্ধ হতো না? ৭ই মার্চের বক্তব্যেই পরিষ্কারভাবে মুক্তিযুদ্ধের সব ধরনের নির্দেশনা আছে। তারপর যার হাতে যা আছে তা নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করার কথা আছে। সব কিছুই বলা আছে, একেবারে ভবিষ্যৎ বাণীর মতো মনে হয়। আর কাব্যিক ভঙ্গিতে বলা হয়েছে, কারণ একেবারে স্বাধীনতা ঘোষণা করা হলে ওনাকে রাষ্ট্রদ্রোহী বলে ঘোষণা করা হবে আন্তর্জাতিক বিচারে। কাজেই তখন কায়দা করে বলা হয়েছে। সেটা বঙ্গবন্ধুর পক্ষেই সম্ভব হয়েছে। যেহেতু উনি রাজনৈতিক নেতা। তার পক্ষেই এটা সম্ভব হয়েছে, “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম” কাব্যিক ভঙ্গিতে বলা। আমি এই মুহূর্তে স্বাধীনতা ঘোষণা করলাম। আমরা চাইলাম, এটা আমরা চাইছি – এমন বললে সে দিন এই লক্ষ লক্ষ লোককেও মেরে ফেলতো ওরা। বঙ্গবন্ধুকে মেরে ফেলত ওরা। আন্তর্জাতিক বিচারে বলত একটা রাষ্ট্র কাঠামোর মধ্যে থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করেছে – এসব বলতো। কাজেই সেদিন স্বাধীনতা ঘোষণা করলেন না কেন এগুলো সব আজে-বাজে কথা। আর বঙ্গবন্ধু ছাড়া অন্য কাউকে স্বাধীনতার ঘোষক বলা – এত নীচতা কোনোভাবেই বিজ্ঞানে ফেলা যায় না।

    বঙ্গবন্ধু যে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন জিয়াউর রহমান সেটা পাঠ করেছিলেন। অবিকল সেটা পাঠ করেনি। বঙ্গবন্ধুই হলেন একমাত্র ঘোষক স্মরণকালের ইতিহাসে। স্বাধীনতা ঘোষণা করার অধিকার উনিই একমাত্র পেয়েছিলেন। আর রেডিওতে যারা জয়েন করেছে তারা সব বেতার ঘোষক। বেতার ঘোষকদের তখনকার সময় ফি ছিল ১৫ টাকা, এখন কত আমি জানি না। আমরা সবাই বেতার ঘোষক। তো সেই বেতার ঘোষক ২৬ মার্চ থেকে হিসাব করলে আমি, আমার সহকর্মীদের নামগুলো সব যদি বলতে থাকি তাহলে ২৭ তারিখে জিয়াউর রহমানের অবস্থান হল ৯ নম্বর বেতার ঘোষক।

    প্রদীপ চৌধুরী: আপনি তো এবার স্বাধীনতা পদক পেয়েছেন, আপনার অনুভূতিটা জানতে চাচ্ছি।

    বেলাল মোহাম্মদ: স্বাধীনতা পদক আমাকে দেওয়া হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের জন্য। আমি এতক্ষণ যে কথাগুলো বলেছি তা আমি একা করিনি। আমি যে কাজটা করেছি ইট ওয়াজ এ জয়েন্ট ভেঞ্চার। রেডিও একা কেউ চালাতে পারে না। আমি দশজন সহকর্মীর নাম বলেছি ইতিমধ্যে। আমাদের এই দশজনকেই জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৫ সালের ২৫ শে মার্চ ‘বঙ্গবন্ধু স্বর্ণপদক’ ঘোষণা করেছিলেন একটা সার্কুলারে। তার কয়েক মাস পরেই অভিশপ্ত দিন ১৫ আগস্ট। মানব জাতির ইতিহাসে সবচেয়ে নির্মমতম হত্যাকাণ্ডের দিনটি এসে যাওয়ায় ওই পুরস্কার আর কার্যকর হয়নি। আমার মনে হয় আমরা সেই পুরস্কারই পেয়ে গিয়েছিলাম। ওই পুরস্কারটাকেই আমি অনেক বড় করে দেখি।

    প্রদীপ চৌধুরী: আপনাদের কত জনের নামে ওই পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছিল?

    বেলাল মোহাম্মদ: সেই পুরস্কার মোট ২২ জনের নামে ঘোষণা হয়েছিল। তো ওটা আমরা পেয়েছি মনে করি। একটা স্বর্ণপদক হাতে ঝুলানোর চেয়ে বঙ্গবন্ধুর সময় ওনার স্বাক্ষরে ঘোষণা করা হয়েছে – এটা আমাদের বড় পাওয়া। এর চেয়ে আর বড় পাওয়া কিছু নেই। এর পরে যত পুরস্কারই আসুক, আমরা অনেক বড় করে দেখি বঙ্গবন্ধুর স্বর্ণপদককে।

    প্রদীপ চৌধুরী: বেলাল মোহাম্মদ আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আমরা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম, পাঠক ও শ্রোতাদের পক্ষ থেকে আপনাকে কৃতজ্ঞতা এবং অভিনন্দন জানাই।

    বেলাল মোহাম্মদ: আমি আমার বক্তব্যে সর্বশেষে সবসময় যা উচ্চারণ করি তাই করছি, ‘জয় বাংলা’।

    • মাসুদ করিম - ৫ আগস্ট ২০১৩ (৯:৪১ পূর্বাহ্ণ)

      ২৭ মার্চ ১৯৭১-এ বলা সেই অযাচিত ‘Head of the Republic’

      এপ্রসঙ্গটি দেখি বেলাল মোহাম্মদের সাক্ষাৎকারে আসেনি। মিজানুর রহমান খানের একটি লেখায় অবশ্য এপ্রসঙ্গটি পাওয়া গেল

      কেন গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা মেলে না মিজানুর রহমান খানের কাছে? কারণ

  25. মাসুদ করিম - ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৩ (১১:১৮ অপরাহ্ণ)

    Ferdaush Ahmed Faisal

    মৌদুদের বইয়ে সত্যভাষণের কারনে তার কুশপুত্তলিকার গলায় জুতার মালা জুটেছিলো তাদের দলীয় কর্মিদের হাতেই। যুবরাজকে নিয়ে সত্যভাষণের পর যুবদলের নেতা কর্মীদের ঝাটা মিছিল দেখেছি আমারা সেদিন। এখন অলি সাহেবের এই সত্যকথন এর পর দলীয় নেতা কর্মীরা কি একশনে যায় দেখার জন্য মুখিয়ে আছি! — with Masud Karim.

    https://www.facebook.com/photo.php?fbid=10151595486041300&set=a.409011746299.191970.654386299&type=1

  26. মাসুদ করিম - ২৬ মার্চ ২০১৪ (১০:১৭ অপরাহ্ণ)

    যেমন বাপ তেমন ছাওয়াল।

    বাপ

    “This is Shadhin Bangla Betar Kendro. I, Major Ziaur Rahman, on behalf of Bangobondhu Sheikh Mujibur Rahman, hereby declare that the independent People’s Republic of Bangladesh has been established. I have taken command as the temporary Head of the Republic. I call upon all Bengalis to rise against the attack by the West Pakistani Army. We shall fight to the last to free our Motherland. By the grace of Allah, victory is ours.”

    ছাওয়াল

    “এইখানে লাল অক্ষরে লেখা আছে- ‘বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি এবং স্বাধীনতার ঘোষক জিয়া’। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি ছিলেন আমাদের নেতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান।”

  27. মাসুদ করিম - ২৭ মার্চ ২০১৪ (২:৩২ অপরাহ্ণ)

    ‘‘ওই লোকের পুরো নাম মাহমুদ হাসান। ‘৭০ এর নির্বাচনের পর থেকেই সে চট্টগ্রাম হোটেল আগ্রাবাদে স্থায়ী আবাস নেয়। লন্ডনে পড়াশোনার সুবাদে মোররাজী দেশাইর ভাতিজির সঙ্গে প্রেম ও বিয়ে। বাংলাদেশের লোকসঙ্গীতের উপর গবেষণা ও তথ্য চিত্র নির্মাণের কথা বলে সে স্থানীয় মহলে বেশ খাতির জমিয়ে তোলে। তার গুণমুগ্ধদের মধ্যে ছিলেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র খ্যাত বেলাল মোহাম্মদসহ অনেকেই। বেগম মুশতারী শফির স্মৃতিকথায়ও উল্লেখ আছে মাহমুদের। কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে মেজর জিয়াকে স্বাধীনতার ঘোষণায় উদ্বুদ্ধ করার ব্যাপারে অগ্রগণ্যদের একজন ছিলেন মাহমুদ। জিয়া বেশ কয়েকবারই বিভিন্ন উপলক্ষে এই গল্প করেছেন তার অধীনস্থদের কাছে।”

    নুরুন্নবীর ভাষ্য অনুযায়ী, মাহমুদ জিয়াকে হাস্যকর যুক্তিতে কনভিন্স করেন এই বলে যে পূর্ব পাকিস্তানে সিআইএর দায়িত্ব পালন করছেন তিনি এবং জিয়া যদি একটি বিপ্লবী পরিষদ গঠন করেন এবং নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দেন তাহলে ফিলিপাইন থেকে একদিনের মধ্যে ৭ম নৌবহরকে তার সাহায্যে নিয়ে আসবেন মাহমুদ। ২৭ মার্চ জিয়ার প্রথম ঘোষণাটার এটা অন্যতম রহস্য। যদিও উপস্থিতদের চাপে এরপর তিনি ঘোষণা পাল্টান।

    মাহমুদ জিয়ার ছাড়পত্র, আগ্রাবাদ হোটেলের পিআরও এবং ক্যাশিয়ার ফারুক ও গনি এবং ইস্ট বেঙ্গলের দুজন সিপাই নিয়ে কক্সবাজার রওয়ানা দেন জনৈক উকিলের সঙ্গে দেখা করতে। এরমধ্যে মীর শওকত এবং খালেকুজ্জামানও রওয়ানা হন। পথে দুলহাজারায় একটি ব্যারিকেডে না থেমে এগিয়ে যায় মাহমুদের মরিস মাইনর। পরের ব্যারিকেডে উত্তেজিত জনতা চড়াও হয় তাদের ওপর। মাহমুদ বাংলা বলতে পারতেন না, তাকে বিহারী বলে হত্যা করে উন্মত্ত স্থানীয়রা। মাত্র একজন সিপাই প্রাণ নিয়ে কোনো মতে পালিয়ে আসে। কিন্তু জিয়ার দেখা পাননি, কারণ ২৮ মার্চ জিয়া অলি আহমেদকে নিয়ে নিজেই কক্সবাজার যান। বাংলা ভালো বলতে পারেন না বলে তারও একই সমস্যা হয়, কিন্তু চট্টগ্রামের স্থানীয় অলি সে যাত্রা পার করিয়ে নেন তাকে। কক্সবাজার পৌছে সপ্তম নৌবহরের কোনো দিশা পাননি জিয়া। খোঁজ মেলেনি শওকতেরও। যিনি রিপোর্ট করেন ৭ এপ্রিল।
    বিস্তারিত : রহস্যময় মাহমুদ হোসেন ও কালুরঘাট | অমি রহমান পিয়াল

  28. মাসুদ করিম - ২৭ মার্চ ২০১৪ (৮:৪০ অপরাহ্ণ)

    খালি জিয়া জিয়া করলে হবে? প্যাকেজ পূর্ণ করুন — জিয়া প্রথম রাষ্ট্রপতি, খালেদা প্রথম প্রধানমন্ত্রী কাম মুক্তিযোদ্ধা, তারেক প্রথম গেরিলা, কোকো প্রথম যুদ্ধশিশু।

  29. মাসুদ করিম - ৩১ মার্চ ২০১৪ (৫:৩৫ অপরাহ্ণ)

  30. মাসুদ করিম - ১৫ এপ্রিল ২০১৪ (১১:৫৪ অপরাহ্ণ)

  31. মাসুদ করিম - ১৩ এপ্রিল ২০১৫ (৩:১১ অপরাহ্ণ)

    বাংলাদেশের জন্মের পর থেকে সম্প্রতি কামারুজ্জামানের ফাঁসি এপর্যন্ত মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে ৪৩০টি, এরমধ্যে ১৯৭৭ সালেই ২৪৭…

    Posted by Masud Karim on Sunday, April 12, 2015

    বাংলাদেশের জন্মের পর থেকে সম্প্রতি কামারুজ্জামানের ফাঁসি এপর্যন্ত মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে ৪৩০টি, এরমধ্যে ১৯৭৭ সালেই ২৪৭টি মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ঘটনা ঘটেছে – আজ যখন কোনো সুশীল বা কোনো বামাত বা কোনো আঁতাত বা কোনো ইসলামবাদী বা কোনো প্রাত্যহিক বিপ্লবী বা কোনো জামাত বা কোনো অবিভক্ত বিএনপি বা কোনো হেফাজত বা কোনো মানবাধিকার কর্মী যখন দণ্ডিত যুদ্ধাপরাধী বা আন্তর্জাতিক অপরাধীর মৃত্যুদণ্ডের বিরোধিতা করেন তখন কামারুজ্জামানের মতো ‘ভাববেন’ ১৯৭৭ সালে তাদের সামূহিক পাকপন্থীছাহাবা জেনারেল জিয়া একাই ২৪৭টি মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ঘটনা ঘটিয়েছেন।

  32. মাসুদ করিম - ২৭ আগস্ট ২০১৫ (১০:২৮ পূর্বাহ্ণ)

    মোহাম্মদ মুনিমের ফেসবুক পাতা থেকে এই স্ট্যাটাস ও মন্তব্য পড়তে লিন্ক ক্লিক করুন

    শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান aka magor gia কি নামাজ পড়তেন? উনার নামাযররত অবস্থায় ছবি দেখেছি বলে মনে পড়ছে না। এ বিষয়ে কারও কোন বক্তব্যও মনে পড়ছে না। অবশ্য এটাও ঠিক যে ইসলামের খেদমতে রাজনীতি করলে আল্লাহ নামাযের requirement waive করলেও করতে পারেন। জিন্নাহ সাহেব যেমন জীবনে এক ওয়াক্ত নামাজ না পড়েও উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠ মুসলমান হয়ে বসে আছেন।

  33. মাসুদ করিম - ৭ নভেম্বর ২০১৫ (১০:২৩ পূর্বাহ্ণ)

    আজ ৭ নভেম্বর, বিএনপি প্রতিবছর এই দিনটিকে ‘বিপ্লব ও সংহতি’ দিবস হিসেবে পালন করে থাকে। দিবসটি উপলক্ষে আজ দিনব্যাপী কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি। এই দিবস উপলক্ষে দেওয়া এক বিবৃতিতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘স্বাধীনতার পর তত্কালীন সরকার একদলীয় বাকশাল কায়েম করেছিল। এমনই এক প্রেক্ষাপটে মতাদর্শগত কোন্দলে আওয়ামী লীগেরই একটি বৃহত্ অংশ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সামরিক অভ্যুত্থান করে ক্ষমতা দখল করে।
    এরই ধারাবাহিকতায় ৩ নভেম্বর সেনাবাহিনীর একটি অংশ জিয়াউর রহমানকে সপরিবারে ক্যান্টনমেন্টে বন্দি করে।’
    তিনি বলেন, ‘জিয়াকে বন্দি করার পর দেশবাসী ও সশস্ত্র বাহিনীর দেশপ্রেমিক সদস্যরা উপলব্ধি করেন দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে ভূলুণ্ঠিত করার জন্য চক্রান্ত চলছে।
    ফলশ্রুতিতে এই চক্রান্ত রুখতে সিপাহী জনতা ঐক্যবদ্ধ হয়ে জিয়াকে বন্দিদশা থেকে মুক্ত করেন। এরপর ঐতিহাসিক পট পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়।’

    খালেদা জিয়া আরও বলেন, ‘দেশ যখন অপশাসনে নিপতিত হয়, তখন গণতন্ত্র, স্বাধীনতা যুদ্ধের মূল্যবোধ হুমকির সম্মুখীন হয়। সরকার দমন-নিপীড়নের মাধ্যমে জনগণের কণ্ঠরোধ করে এবং দেশের স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে শুধুই ক্ষমতায় থাকতে এখন বিভোর হয়ে উঠেছে। এই দুঃশাসনের অবসান হওয়া জরুরি।’ দলের মুখপাত্র ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন স্বাক্ষরিত ওই বিবৃতিতে ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বর উপলক্ষে দেশের জনগণকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন খালেদা জিয়া।
    ১৯৭৫ সালের এই দিনে জাতীয় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সৈনিক-জনতা ঐক্যবদ্ধভাবে রাজপথে নেমে এসেছিলেন সব ষড়যন্ত্র রুখে দিতে। তাই ৭ নভেম্বরের চেতনা আমাদের জাতীয় জীবনে প্রেরণার উত্স। ৭ নভেম্বরের চেতনায় সব জাতীয়তাবাদী দেশপ্রেমিক শক্তির ঐক্যবদ্ধ হওয়া প্রয়োজন বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করেন তিনি।

  34. মাসুদ করিম - ৮ নভেম্বর ২০১৫ (৬:৫৮ অপরাহ্ণ)

    স্মৃতির পাতায় ৭ নভেম্বর

    শহীদ মেজর জেনারেল খালেদ মোশাররফ বীর উত্তম এবং ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর সম্পর্কে কিছু লিখতে বসেছি। চার দশক আগের এ দিনে আগে ঘটে যাওয়া ঘটনাবলী আমার স্মৃতিতে যেভাবে গেঁথে আছে তা-ই বলতে চাই। তখন আমি ৮ কী ৯ বছরের শিশু মাত্র। তবু সে দুঃসময়ের অনেক ঘটনা আমার মনে থেকে যাওয়াই স্বাভাবিক। কারণ দুর্দিনের কথা ভোলা যায় না। তখন বাবাকে কাছ থেকে দেখে এবং পরে মা ও অন্যান্যদের কাছ থেকে ইতিহাসের অনেক কথা জেনেছি। অনেক লেখক তাদের গ্রন্থে সে সব ইতিহাসের উল্লেখ করছেন।

    তবে আজকে আমার কলম ধরার কারণ এটাই যে, ইতিহাস লেখকদের কেউ কেউ সত্য তুলে ধরলেও, মিথ্যা ও বানোয়াট ইতিহাস বলছেন অনেকে। তারা এভাবে দেশ ও জাতিকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন। তাই আমি মনে করি, খালেদ মোশাররফের সন্তান হিসেবে সেদিনের যতটুকু স্মৃতি আমার মানসপটে আঁকা রয়েছে তা সবার সামনে প্রকাশ করা উচিত।

    খালেদ মোশাররফ ও ৭ নভেম্বর সম্পর্কে বলতে হলে একটু পিছনের ঘটনা, অর্থাৎ ১৫ আগস্টের ভয়াবহ নির্মম হত্যাকাণ্ড থেকে শুরু করতে হবে। কারণ খালেদ মোশাররফকে হত্যা ও ৭ নভেম্বরের ভয়াবহতার সঙ্গে ১৫ আগস্টের ঘটনাবলীর যোগসূত্র রয়েছে।

    ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করে ক্ষমতা দখল করে বিশ্বাসঘাতক খুনি মোশতাক-চক্র। এ দিন খুব ভোরে রেড ফোনে একটি কল আসে। আমরা সবাই তখন ঘুমিয়ে। ফোনটি ধরেন বাবা। শুনলাম, ওপাশ থেকে সেনাবাহিনী প্রধান কে এম সফিউল্লাহ কথা বলছেন বাবার সঙ্গে। আরও জানলাম, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িতে আক্রমণ করেছে আমাদেরই সেনাবাহিনীর কিছুসংখ্যক অফিসার। তাই তখনই তাড়াতাড়ি বাবাকে তাঁর বাসায় যেতে বললেন শফিউল্লাহ।

    ফোনটি রেখে স্তম্ভিত হয়ে গেলেন বাবা। অস্থির হয়ে ঘরজুড়ে পায়চারি করতে লাগলেন। আর বারবার বলতে থাকলেন, ‘সর্বনাশ হয়ে গেল… দেশের এখন কী হবে? না, এটা মেনে নেওয়া যায় না।’

    কথা বলতে বলতেই তিনি আবার তৈরি হয়ে নিজে গাড়ি চালিয়ে চলে গেলেন সেনাপ্রধানের বাড়ি। সারাদিন আর ফিরলেন না বাসায়। এলেন সেই অনেক রাতে। দেখলাম মহাচিন্তিত শুধু নন তিনি, ছটফট করছেন বলা চলে। শুধু বললেন, ‘‘এটা মেনে নেওয়া যায় না যে, যিনি আমাদের একটা স্বাধীন দেশ প্রতিষ্ঠা করে দিলেন তাঁকে এভাবে হত্যা করা হল। এটা মেনে নেওয়া উচিতও নয়। এর প্রতিকার করতে হবে। তা না হলে আমাদের দেশ ধ্বংস হয়ে যাবে, জাতি শেষ হয়ে যাবে। দেশ ও জাতিকে রক্ষার জন্য আমাদের খুব তাড়াতাড়ি বিশ্বাসঘাতক মীর জাফরদের প্রতিহত করতে হবে। এদের চরম শাস্তির ব্যবস্থা করা দরকার।’’

    বাবা যখন অস্থির চিত্তে এভাবে কথা বলছেন, তখন আমরা বোনেরা বাবার সামনে যাওয়ার সাহস পেলাম না। তাই ওই সময়গুলোতে তাঁর সঙ্গে তেমন একটা কথা বলারও সুযোগ হয়নি আমার।

    বেশ কিছুদিন পর বাবাকে বলতে শুনলাম, ‘‘কী ভয়াবহ ব্যাপার! খুনিরা আইন করেছে যে, মুজিব হত্যার বিচার করা যাবে না, দেশটা কি মগের মুল্লুক হয়ে গেল? এটা হতে দেওয়া যাবে না। এর অবশ্যই একটা বিহিত করতে হবে। একটি দেশের প্রতিষ্ঠাতাকে হত্যা করা হয়েছে, তার বিচার হবে না, এটা কোনো সভ্য জাতি মেনে নিতে পারে না। কাজেই জাতির মুখ উজ্জল করার জন্য আমাদের দেশপ্রেমিক প্রত্যেক সৈনিক ও মুক্তিযোদ্ধার উচিত খুনিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য এগিয়ে আসা। স্বাধীনতার আদর্শে বিশ্বাসী প্রত্যেক নাগরিককে আজ সোচ্চার হতে হবে।’’

    বঙ্গবন্ধুকে হত্যার কদিন পরই সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল কে এম সফিউল্লাহকে সরিয়ে উপপ্রধান জেনারেল জিয়াকে সেনাপ্রধান করা হয়। তাঁর কাছেও বাবা সেনাবাহিনীতে চেইন অব কমান্ড এবং বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান। কিন্তু জিয়া বাবার কথায় কর্ণপাত করেননি। তিনি খুনি মোশতাক ও মেজরদের পরামর্শ বা নির্দেশে চলতে থাকেন। এমনকি খুনি-চক্রকে সাহায্য-সহযোগিতা করেন।

    বাবা কিন্তু এসব মেনে নিতে পারেননি। তাই বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসীদের সংগঠিত করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। এ সময় রক্ষীবাহিনীর প্রধান নুরুজ্জামান, ৪৬ বিগ্রেডের প্রধান শাফায়াত জামিল ও মেজর হাফিজ উদ্দিনসহ অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ করেন বাবা। এঁরাও সবাই বাবার সঙ্গে ঐকমত্য পোষণ করে দ্রুত খুনিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণসহ সেনাবাহিনীতে চেইন অব কমান্ড ফিরিয়ে আনার পরামর্শ দেন। এঁদের সবাইকে তখন আমাদের বাসায় এসে বাবার সঙ্গে আলোচনা করতে দেখেছি।

    সবার সঙ্গে আলোচনা ও মতবিনিময়ের পর বাবা এ উদ্যোগে নেতৃত্ব দেবার সিদ্ধান্ত নেন। সে মোতাবেক ৩ নভেম্বর ঘাতকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের তারিখ নির্ধারিত হয়। বাবার সঙ্গে তখন অন্যদের আলোচনা ও সেনাবাহিনীর লোকজনের আসা-যাওয়া ও কথাবার্তায় বুঝতে পারতাম, বড় কিছু করতে যাচ্ছেন তাঁরা। কিন্তু আমরা তো তখন নিতান্তই শিশু। সেটি বোঝার ক্ষমতা আমাদের ছিল না।

    এদিকে ২ নভেম্বর মাসহ আমাদেরকে গুলশানে নানির বাসায় পাঠিয়ে দেওয়া হল। ৩ নভেম্বর ভোরে হেলিকপ্টার ও মিগ ফাইটারের প্রচণ্ড শব্দে ঘুম ভাঙল আমাদের। তখন লোকজন বলাবলি করছিল, ‘দেশে সামরিক অভ্যুত্থান হচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ক্ষমতা থেকে সরানো হবে।’ এ সময় আমাদের বাসায় লোকজনের আনাগোনাও বেড়ে গেল। সবাইকে দেখতাম খুব হাসিখুশি উৎফুল্ল।

    লোকজনের কথাবার্তায় আমরা এটা জানতে পারলাম যে, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল জিয়াকে গৃহবন্দি করে বাবাকে মেজর জেনারেল পদে উন্নীত করে সেনাপ্রধান করা হয়েছে। পরদিন বেশ কয়েকটি পত্রিকায় বাবার ছবি দেখলাম– তাঁকে ব্যাজ পরিয়ে দিচ্ছেন নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনীর প্রধান দুজন। আমরা, তাঁর সন্তানরা তখন পদোন্নতি কী জিনিস বা সেনাপ্রধান হওয়ার কী মর্ম তা বুঝতাম না। কেবল দেখতাম, বাসায় বেড়াতে আসা সেনাবাহিনীর লোকেরা খুব উৎফুল্লতার সঙ্গে বলছিলেন, খালেদ মোশাররফের প্রমোশন হয়েছে, তাঁকে দেশের সেনাপ্রধান করা হয়েছে।

    লোকের কাছ থেকেই এমনতর স্বস্তির কথাও শুনতাম যে, এখন দেশ রক্ষা পেল, জাতি মুক্তির স্বাদ পেল আবার। মানুষকে এ বিষয়ে আশাবাদী দেখতাম যে, এবার মুজিব-হত্যার বিচার হবে, এবার খুনিদের রক্ষা নেই।

    এমন সময় এল ভয়াবহ এক দুঃসংবাদ: জেলখানায় আটক চার জাতীয় নেতাকে হত্যা করা হয়েছে। সংবাদটি প্রচার হওয়ার পরপর সেনাবাহিনীর লোকজনের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছিল। সবাইকে এ নিয়ে মাতম করতে দেখেছি। এ দিনই আরেকটি খবর প্রচারিত হল, বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের দিকে গিয়েছে একটি শোক মিছিল। মিছিলটির অগ্রভাগে ছিলেন আমার দাদি জামিলা আক্তার ও আমার চাচা আওয়ামী লীগ নেতা রাশেদ মোশাররফ। এ সময় কেউ কেউ বলতে থাকেন, মিছিলটি খালেদ মোশাররফের জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে।

    সত্যি, খুব অস্থির সময়। ওদিকে প্রচার হতে থাকে যে, নভেম্বরেই সেনাবাহিনীতে আরেকটি অভ্যুত্থানের চেষ্টা চালাতে পারে বিপ্লবী সৈনিক সংস্থার লোকজন। এ ধরনের কোনো সংস্থার নাম আগে কখনও শোনা যায়নি। হঠাৎ গজিয়ে ওঠা সংস্থাটি বিভিন্ন ধরনের অপতৎপরতা শুরু করেছে দেশে। শহরে তারা কিছু লিফলেট ছেড়েছে যাতে সাধারণ সৈনিকদের উস্কানি দেওয়া হয়েছে। এভাবেই ডালপালা মেলছিল নানা গুজব, যার একটি ও ভয়াবহতমটি হল, বাবা ও শাফায়াত জামিলকে হত্যা করা হতে পারে।

    আমরা তিন বোন তো তখনও মায়ের সঙ্গে নানির বাসায়। কদিন ধরে আমাদের সঙ্গে বাবার দেখা-সাক্ষাৎ বা কথাবার্তা কিছুই হয়নি। তাই ৬ নভেম্বর সকালে মা আমাদের নিয়ে ক্যান্টনমেন্টের বাসায় যান বাবার সঙ্গে দেখা করতে। সন্ধ্যা ৭টার দিকে বাবা আমাদের সঙ্গে দেখা করতে পারলেন। তখন বহু লোক ভিড় করলেন সেখানে। বাবার সঙ্গে দেখা করতে চান তারা। বাবাকে দেখলাম খুব হাসিখুশি, উৎফুল্ল। গত কদিনের অনেক ঘটনাই বাবার কাছ থেকে মা শুনে নিলেন। রাতে একসঙ্গে খাবার খেলেন ওঁরা। তখনও কি জানতাম, ওটাই হবে মা-বাবার একসঙ্গে বসে শেষবারের মতো খাওয়া!

    রাতের খাবারের পর নানা কথাবার্তা শেষে বাবা মাকে বললেন, ‘খুবই ব্যস্ত আছি, এখনই বঙ্গভবনে যেতে হবে।’ কথাটা বলেই বাবা একটি গাড়িতে এ টি এম হায়দারকে সঙ্গে নিয়ে বঙ্গভবনের দিকে চলে গেলেন। মাসহ আমাদেরকেও আরেক গাড়িতে করে গুলশানে নানির বাসার দিকে রওনা করিয়ে দেন।

    বাবা যখন গাড়িতে উঠতে যান তখন আমার ছোট বোন তাইরিন মায়ের কোলে। গাড়ির শব্দ শোনার সঙ্গে সঙ্গে সে কেঁদে ওঠে। ওর কান্নার শব্দ শুনে বাবা তাঁর গাড়ি থেকে নেমে এসে তাইরিনকে কোলে তুলে নিলেন। তারপর বুকে জড়িয়ে ধরে আদর করলেন অনেকক্ষণ। পরে মা স্মৃতিচারণ করে বলেছেন, তাইরিনের সে কান্নার উৎস তখন তিনি খুঁজে পাননি। আমার অবুঝ বোনটি কি তখনই জেনেছিল যে, বাবার আদর আর কোনো দিনই পাবে না সে!

    সে রাতে বিদায়ের সময় বাবা মাকে বলেছিলেন, ‘তোমরা যাও, আমি আগামীকাল আসব’। বাবা কথা রেখেছিলেন। কদিন পর এসেছিলেন বাসায়। তবে জীবিত অবস্থায় নয়, লাশ হয়ে।

    বাসায় ফেরার কিছুক্ষণের মধ্যেই আমরা সবাই ঘুমোতে যাই। মধ্যরাতে ঘুম ভাঙে প্রচণ্ড গোলাগুলির শব্দে। ওগুলো আসছিল ক্যান্টনমেন্টের দিক থেকে। ভয়ে মা, নানা, নানি স্তব্ধ হয়ে ছিলেন। নানা-নানির বেশ বয়স হয়েছে তখন। তাঁরা আতঙ্কে কাঁপছিলেন। আমাদের তিন বোনের অবস্থাও একই।

    এ সময় আমার এক মামা বললেন, এ বাড়ি আমাদের জন্য নিরাপদ নয়। কাজেই তাড়াতাড়ি এখান থেকে আমাদের সরে যেতে হবে। তখন আমরা ও বাড়ি ছেড়ে মায়ের খালার বাড়িতে আশ্রয় নিলাম। এরপর মা বাবার সঙ্গে ফোনে কথা বলার চেষ্টা করলেন। তখন বঙ্গভবনে মিটিং চলছিল। মা বাবাকে বললেন, ‘আমার মনে হয় অরাজক পরিস্থিতি শুরু হয়েছে। প্রচণ্ড গোলাগুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে। তাই বাবার বাসা ছেড়ে আমরা সবাই এখন খালার বাড়িতে চলে এসেছি।’

    বাবা মাকে বললেন, ‘তোমরা ওখানেই থাক, আমি এদিকে দেখছি।’ এটাই বাবার সঙ্গে মায়ের শেষ কথা।

    রাতে ওভাবে ঘুম ভাঙার পর আর ঘুমাতে পারিনি আমি। ৭ তারিখ সকাল থেকেই বাসার সবাইকে চিন্তিত, অস্থির দেখছিলাম। মাকে তাই জিজ্ঞেস করলাম, ‘মা, কী হয়েছে?’ মা শুধু বললেন, ‘না, কিছুই হয়নি। তোমরা আল্লাহকে ডাক, আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে বল, তোমার বাবাকে আর আমাদের সবাইকে যেন ভালো রাখে।’

    মার কথা শুনে মনে হল, আমাদের কোনো বিপদ হচ্ছে।

    এদিকে সকালের নাশতার সময় হয়ে এসেছে, কিন্তু বাসায় তার কোনো আয়োজন দেখছি না। আমার দেড় বছরের ছোট বোনটি খাওয়ার জন্য কান্না শুরু করে দিয়েছে। ওর দুধের বোতল, খাবার ও কাপড়-চোপড় আনতে নানি নিজেদের বাসায় যান সকাল ১০টার দিকে। রাতে ও বাসা ছেড়ে আসার সময় কিছুই নিয়ে আসতে পারিনি আমরা। নানি সে বাসায় পৌঁছুনোর সঙ্গে সঙ্গেই সেখানে কিছু সেনা গাড়ি নিয়ে এসে হাজির হয়। তারা গাড়ি থেকে নেমে নানিকে জিজ্ঞেস করে, ‘খালেদ মোশাররফের স্ত্রী কোথায়?’

    মাকে না পেয়ে ওরা তখন নানিকে ধরে নিয়ে যেতে চেষ্টা করে। তিনি বহু কষ্টে পাশের বাসায় গিয়ে আত্মরক্ষা করেন। সেনারা তখন একদিকে মাকে খুঁজতে শুরু করে, আরেক দিকে বাসার ভেতরে গিয়ে লুটপাট করতে থাকে। আলমারি ভেঙে মা ও নানির গয়নাসহ সব লুটে নেয়।

    সেদিন যদি ঘাতকরা আমাদের ও বাড়িতে পেত, তবে আজ হয়তো আমরা বেঁচেও থাকতাম না। নানি কোনো মতে ওখান থেকে ফিরে সব কথা জানান। তখন আতঙ্ক আরও বেড়ে গেল সবার। মা বারবার বলতে থাকেন, ‘হে আল্লাহ, এখন আমাদের কী হবে। আল্লাহ, তুমি আমাদের রক্ষা কর। আমার স্বামীকে রক্ষা কর।’

    দুপুরের দিকে এল সেই ভয়াবহ দুঃসংবাদ। মায়ের চাচা খবরটা নিয়ে এলেন। বাবাসহ হুদা ও হায়দারকে হত্যা করা হয়েছে। খবরটা শুনে মা যেভাবে চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করলেন, তাতে আমার শিশুমনের অবস্থা ভয়ানক হয়ে উঠল। আমিও চিৎকার করে কাঁদতে থাকি। আমাদের সান্তনা দেওয়ার মতো কেউ ছিল না তখন। আমাদের সামনে আসতে কেউ সাহস পাচ্ছিলেন না। তাই সব কিছু অন্ধকার লাগছিল।

    ৪ দিন পর বাবার লাশ আনা হল। মায়ের মুখে তখন যেন কোনো ভাষা নেই। আমি বাবার লাশের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে পাগলের মতো কাঁদছি। বাবাকে গোসল করানো হল। তারপর কবর দিতে নিয়ে যাবার সময় আমার ছোট বোন বলল, ‘মা, বাবাকে কোথায় নিয়ে যায়? বাবাকে ওভাবে নিয়ে যাচ্ছে কেন?’ ওর কথায় কেউ চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি।

    আমার ছোট বোনটির তো তখনও বাঝার বয়স হয়নি যে, মৃত্যু কী জিনিস। ও অনেক দিন পর্যন্ত জিজ্ঞেস করত, ‘মা, বাবা কোথায় আছে? বাবা কি আর কোনো দিন আসবে না?’

    মা আমাদের তিন বোনকে নিয়ে খুবই অসহায় হয়ে পড়েছিলেন। খড়কুটোর সন্ধানে এদিকে সেদিকে দৌড়েছেন। পালিয়ে বেড়িয়েছেন প্রাণভয়ে। কোথাও আমাদের থাকার একটু জায়গা ছিল না। কীভাবে সেসব দিন আমাদের কেটেছে তা ভাবলে আজও গা কাঁটা দিয়ে ওঠে।

    মৃত্যুর সময় বাবা কিছ্ইু রেখে যাননি। বরং ১৪ হাজার টাকা ঋণ ছিল তাঁর। সে টাকা তাঁর বেতন থেকে কেটে নেওয়া হয়েছে। গুলশানে মায়ের নামে একটা অ্যালটমেন্ট ছিল, যেটি নিয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সরকার ষড়যন্ত্র করেছে। এসব ষড়যন্ত্রের মূল হোতা ছিলেন বেগম খালেদা জিয়া। শুধু বাবার পেনশনের সামান্য কটি টাকা এবং আত্মীয়-স্বজনদের সাহায্য-সহযোগিতায় আমাদের তিন বোনকে নিয়ে মা বেঁচে থাকার চেষ্টা করতে পেরেছেন।

    আমার পিতা, শহীদ মেজর জেনারেল খালেদ মোশাররফ আজ নেই। তাঁকে আর কোনো দিন আমরা পাব না। আমাদের সোনা দিয়ে মুড়িয়ে দেওয়া হলেও পিতৃস্নেহ দেওয়া যাবে না। তা বলে কি আমরা পিতার হত্যার বিচার থেকেও বঞ্চিত হব? প্রায় ৪ দশক ধরে পিতৃহত্যার বিচারের অপেক্ষায় রয়েছি আমরা তিন বোন। একটা সময় ছিল যখন বিচারের দাবিও করতে পারিনি আমরা। কারণ খালেদ মোশাররফের হত্যাকারী বা তাদের সহযোগীরাই এদেশের শাসন-ক্ষমতায় ছিল অনেক অনেক দিন। আজ এত দিন পরে হলেও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায়। তাই বাবার হত্যার বিচারের দাবি করার সুযোগ এসেছে আমাদের সামনে।

    চল্লিশ বছর আগের ৭ নভেম্বরে হত্যা করা হয়েছিল ২ নং সেক্টরের কমান্ডার, কে ফোর্সের অধিনায়ক, সমরবিশারদ ও যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা খালেদ মোশাররফকে। তাঁর সঙ্গে শহীদ হন আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল নাজমুল হুদা বীর বিক্রম এবং ২ নং সেক্টরের কমান্ডার লেফটেনেন্ট কর্নেল এ টি এম হায়দার বীর উত্তমসহ অসংখ্য সেনা কর্মকর্তা ও জোয়ানকে। এঁদের সবার হত্যার বিচার চাইব আজ।

    সে সঙ্গে দাবি করছি সেদিনের ঘটনা নিয়ে সকল বিতর্কের অবসানের জন্য ইতিহাসের সঠিক লিখন ও পঠন-পাঠন। বিশেষ করে খালেদ মোশাররফকে ‘ভারতীয় দালাল’ বলে যে অপপ্রচার চালানো হয়েছিল, তাতে আমাদের সেনাবাহিনী ও জাতি তখন বিভ্রান্ত হয়েছে। আজও এসব অপপ্রচার চলছে, চালানোর চেষ্টা করছে কেউ কেউ। যদিও এখন এটা প্রমাণিত যে, ষড়যন্ত্রকারীরাই এসব মিথ্যা বলেছে বাবাকে নিয়ে, তবু বলব, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তির এই সরকার তদন্ত করে দেখুক কোন যড়ষন্ত্রকারীরা এসবের সঙ্গে জড়িত। তারপর তাদেরও বিচারের আওতায় আনতে হবে।

    দাবি জানাব সেনাবাহিনীর সদর দপ্তরের আর্মি অ্যাওয়ার্ড বোর্ডের সেনাপ্রধানের তালিকায় বাবার নামটি যুক্ত করার। এ দাবি শুধু খালেদ মোশাররফের কন্যা হিসেবে একা আমার নয়, ২ নং সেক্টর এবং কে ফোর্সের সকল মুক্তিযোদ্ধার। এ দাবি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রত্যেক দেশপ্রেমিকের।

    আশা করছি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও হত্যার রাজনীতি বন্ধের লক্ষ্যে উত্থাপিত দাবিগুলো বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করবেন। তিনি ইতোমধ্যে ১৫ আগস্টের হত্যাকারীদের বিচারের আওতায় এনেছেন। যুদ্ধাপরাধীদের দণ্ড দেওয়া হচ্ছে। বিচার-কার্যক্রম হয়েছে জেলহত্যার।

    তাই ৭ নভেম্বরের খুনিদের বিচারের ব্যবস্থাও তিনিই করবেন বলে আ্স্থা রাখছি।

  35. মাসুদ করিম - ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ (১১:৩৭ অপরাহ্ণ)

    ‘পাকিস্তান কনফেডারেশনের ষড়যন্ত্রে ছিলেন জিয়া’

    বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর ক্ষমতায় আরোহনকারী জেনারেল জিয়াউর রহমান পাকিস্তানের সঙ্গে আবার একীভূত হয়ে ‘কনফেডারেশন করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন’ বলে দাবি করেছেন সরকারদলীয় একজন সাংসদ।

    মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার খালেদ মোশাররফের মেয়ে মেহজাবিন খালেদ জিয়াউর রহমানের মুক্তিযুদ্ধকালীন ও পরবর্তী কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেছেন, পাকিস্তানের গোয়েন্দা বাহিনী আইএসআই-এর ‘চর’ হিসেবে তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামে অনুপ্রবেশ করেছিলেন।

    একাত্তরে রণাঙ্গনে পরাজয়ের পর ‘পূর্ব পাকিস্তান পুনরুদ্ধারের জন্য’ পাকিস্তানিরা বাংলাদেশে চর নিয়োগ করে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “সেনাবাহিনীর মধ্যে মেজর জিয়া ছিলেন পাকিস্তানিদের একনিষ্ঠ বিশ্বস্ত অনুচর।”

    এ প্রসঙ্গে পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জুলফিকার আলী ভুট্টোর বক্তব্য উদ্ধৃত করেন মেহজাবিন।

    তিনি সংসদে বলেন, “ভুট্টো বলেছিলেন, তিনি (জিয়াউর রহমান) সেনাবাহিনীতে গোপনে গোপনে পাকিস্তান ফেরত সৈনিকদের নিয়ে বৈঠক করে সরকারবিরোধী তৎপরতা চালান।”

    বাঙালির সঙ্গে যুদ্ধে হারের পর জেনারেল ইয়াহিয়া খান পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট পদ ছাড়লে তার স্থলে আসেন পাকিস্তান পিপলস পার্টির নেতা ভুট্টো।

    বাংলাদেশে ক্ষমতা দখলের পর জিয়াউর রহমান দেশকে ‘পাকিস্তানে ফেরাতে চেয়েছিলেন’ অভিযোগ করে মেহজাবিন বলেন, “১৯৭৭ সালে পাকিস্তান সফরে গিয়ে জিয়া পাকিস্তানের সঙ্গে কনফেডারেশন করার ষড়যন্ত্র করেছিলেন।”

    ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের শেষদিকে দখলদার পাকিস্তানি বাহিনী ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার পর প্রবাসী সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী খন্দকার মোশতাকের তৎপরতায় যুদ্ধবিরতি এবং পরবর্তীতে পাকিস্তানের দুই অংশের মধ্যে একটি কনফেডারেশন গঠনের চেষ্টা ছিল বলে যুদ্ধকালীন ইতিহাসের নানা সূত্র থেকে জানা যায়।
    স্বাধীনতার পর দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া জামায়াতে ইসলামীর আমির গোলাম আযমের নেতৃত্বে ‘পূর্ব পাকিস্তান পুনরুদ্ধার কমিটি’ নামে একটি কমিটির কথা জানা যায়।

    জিয়াউর রহমানের আমলে পাকিস্তানি পাসপোর্ট নিয়ে বাংলাদেশে ফেরেন গোলাম আযম।

    ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর মোশতাককে সামনে রেখে দেশের ক্ষমতার নিয়ন্ত্রক হয় সেনাবাহিনী। সেনাপ্রধানের দায়িত্বে আসেন জিয়াউর রহমান।

    এর আড়াই মাস পর জিয়াকে গৃহবন্দি করে সেনাবাহিনীর দায়িত্ব নেন খালেদ মোশাররফ। ৭ নভেম্বর জাসদ নেতা কর্নেল তাহেরের নেতৃত্বে পাল্টা অভ্যুত্থানে আবারও ক্ষমতা কেন্দ্রে আসেন জিয়া।

    মুক্তিযুদ্ধের ২ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার খালেদ মোশাররফের মেয়ে মেহজাবিন সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর বক্তব্যে জিয়াউর রহমানকে ‘দেশবিরোধী সব ষড়যন্ত্রের হোতা’ আখ্যায়িত করেন।

    “যদিও তিনি (জিয়াউর রহমান) মুক্তিযোদ্ধা নামে পরিচিত ছিলেন, কিন্তু তার মনে-প্রাণে মুক্তিযুদ্ধের সামান্যতম চিন্তা-চেতনা, ধ্যান-ধারণা ও আদর্শের চিহ্ন ছিল না।

    “জিয়া প্রকৃতপক্ষে একজন পাকিস্তানি আইএসআই-এর চর হিসাবে মুক্তিযুদ্ধে অনুপ্রবেশকারী। তার যুদ্ধকালীন এবং পরবর্তীকালের কর্মকাণ্ড এই কথাই প্রমাণ করে।”

    ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ চট্টগ্রাম সেনানিবাসে সহস্রাধিক বাঙালি সৈনিক হত্যাকাণ্ডের জন্য জিয়াকে দায়ী করে তিনি বলেন, “জিয়ার নির্দেশে ২৫ মার্চ রাতে চট্টগ্রাম সেনানিবাসে বেঙ্গল রেজিমেন্টের ১৮০০ সৈনিক অস্ত্র জমা দেন। এর কিছুক্ষণ পরই পাকবাহিনী নিরস্ত্র বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈনিকদের ওপর আক্রমণ চালায়। এতে প্রায় ১২০০ বাঙালি সৈনিক নিহত হয়।

    “এই হত্যাকাণ্ডের দায় থেকে কোনোভাবেই জিয়া রেহাই পেতে পারে না।”

    ওই সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর চট্টগ্রামে অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড ছিলেন মেজর জিয়াউর রহমান।

    এর আগে পাকিস্তান সামরিক গোয়েন্দা বিভাগে জিয়াউর রহমানের কাজ করার কথা তুলে ধরে মেহজাবিন খালেদ বলেন, “১৯৫৮ সালে সামরিক শাসন জারির পর বাঙালি রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও ছাত্রদের গোপন রিপোর্ট প্রদানের দায়িত্বে জিয়াকে আইয়ুব খান বেছে নিতে ভুল করেননি।

    “তাই জিয়া আইয়ুবের পক্ষে কাজ করার দায়িত্ব নিয়ে সামরিক গোয়েন্দা বাহিনীর কর্মকর্তা হয়ে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানে পোস্টিং পান।”

  36. মাসুদ করিম - ১৯ এপ্রিল ২০১৭ (৭:৩৯ অপরাহ্ণ)

  37. মাসুদ করিম - ১৬ আগস্ট ২০১৭ (৯:১৯ পূর্বাহ্ণ)

    বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের তদন্ত ‘আটকেছিলেন’ জিয়া

    বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের তদন্তে যুক্তরাজ্যে যে অনুসন্ধান কমিশন গঠিত হয়েছিল, তার সদস্যদের বাংলাদেশে আসতে দেওয়া হয়নি।

    ১৯৮১ সালে বিদেশি এই কমিশনের সদস্যদের বাধা দেওয়ার সময় বাংলাদেশে রাষ্ট্রপতি ছিলেন জিয়াউর রহমান, যিনি বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর ক্ষমতার কেন্দ্রে চলে আসেন।

    যুক্তরাজ্যের এই কমিশন ১৯৮২ সালের ২০ মার্চ তাদের প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল, যার একটি অনুলিপি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম হাতে পেয়েছে।

    কমিশন তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের ক্ষেত্রে আইনি ও বিচার প্রক্রিয়াকে তার নিজস্ব পথে এগোতে দেওয়া হয়নি। আর এজন্য সরকারই দায়ী।

    বিচার পাওয়ার পথে প্রতিবন্ধকতা দূর করতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান রেখেছিল স্বাধীন এই অনুসন্ধান কমিশন, যদিও তাতে কান দেওয়া হয়নি।

    বাংলাদেশের স্বাধীনতার চার বছরের মাথায় ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট সপরিবারে হত্যা করা হয় জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানকে। একদল সেনাসদস্য এই হত্যাকাণ্ড ঘটালেও এর পেছনে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র ছিল বলে মনে করা হয়।

    বঙ্গবন্ধুর দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা তখন ইউরোপে থাকায় প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন।

    বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে বিচারের পথ আটকে দেওয়া হয়েছিল।

    তখন প্রবাসে থাকা বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্য এবং জেল হত্যাকাণ্ডের শিকার জাতীয় চার নেতার পরিবারের সদস্যদের আবেদনে যুক্তরাজ্যে এই কমিশন গঠিত হয়েছিল।

    এছাড়া বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ইউরোপের বিভিন্ন শহরে সমাবেশ থেকে ওঠা দাবিও কমিশন গঠনে ভূমিকা রেখেছিল।

    কমিশনের চেয়ারম্যান ছিলেন ব্রিটিশ পার্লামেন্ট সদস্য স্যার টমাস উইলিয়ামস, সদস্য ছিলেন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সাবেক প্রেসিডেন্ট, আয়ারল্যান্ডের সাবেক মন্ত্রী, শান্তিতে নোবেলজয়ী শন ম্যাকব্রাইড, ব্রিটিশ পার্লামেন্ট সদস্য জেফরি টমাস; সদস্য সচিবের দায়িত্বে ছিলেন অব্রে রোজ।

    ১৯৮০ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর কমিশন প্রথম বৈঠকে বসে, এরপর সদস্যরা সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া ঘটনাটির বিষয়ে অনুসন্ধান চালাবেন তারা।

    এরপর কমিশনের সদস্যরা বাংলাদেশে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন এবং ভিসার জন্য লন্ডনের বাংলাদেশ দূতাবাসের শরণ নেন।

    ১৯৮১ সালের জানুয়ারিতে কমিশনের পক্ষে বাংলাদেশে যেতে ভিসার আবেদন করেছিলেন জেফরি টমাস এবং তার এক সহকারী।

    প্রতিবেদনে বলা হয়, “ভিসা না পাওয়ায় এই সফর হয়নি। কেন ভিসা দেওয়া হয়নি, সে বিষয়ে দূতাবাসের পক্ষ থেকে কিছু জানানোও হয়নি। দূতাবাসে কয়েকবার চিঠি দিলেও তা গ্রহণ করা হয়নি।”

    ‘শেখ মুজিব মার্ডার ইনকোয়ারি: প্রিলিমিনারি রিপোর্ট অব দ্য কমিশন অব ইনকোয়ারি’ প্রতিবেদনটি পুস্তিকা আকারে লন্ডন থেকে প্রকাশিত হয়, যার মুখবন্ধ লিখেছিলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা, যিনি এখন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।

    যুক্তরাজ্যে গঠিত এই কমিশনের সদস্যদের প্রতি আস্থা রেখে তিনি লিখেছিলেন, “তাদের নামগুলো এই নিশ্চয়তা দেয় যে তাদের তদন্ত বিচার ব্যবস্থার সর্বোচ্চ মান অক্ষুণ্ন রেখেই হত।”

    ব্ঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের একুশ বছর পর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার পর বিচারের পথ খোলে।

    বিচারের রায় হওয়ার পর ক্ষমতার পালাবদলে জিয়ার দল বিএনপি সরকার গঠনের পর তা ঝুলে যায় আবার।

    ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ফের ক্ষমতায় যাওয়ার পর বিচার শেষ করে পাঁচ খুনির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে। এখনও বিদেশে পালিয়ে আছেন মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত ছয়জন।

  38. মাসুদ করিম - ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ (৪:৫৭ অপরাহ্ণ)

    জিয়া স্মৃতি জাদুঘর সামরিক বাহিনির অপকর্মের জাদুঘর হতে পারে।

  39. মাসুদ করিম - ২৯ এপ্রিল ২০১৯ (৪:৩৯ পূর্বাহ্ণ)

    জিয়ার আমলে সামরিক আদালতে দণ্ডের ক্ষতিপূরণ চেয়ে রিট আবেদন

    জিয়াউর রহমানের শাসনামলে বিমান বাহিনীর এক বিদ্রোহের ঘটনায় সামরিক আদালতে দণ্ডের ক্ষতিপূরণ চেয়ে হাই কোর্টে আবেদন হয়েছে।

    রোববার করা এই আবেদনে ১৯৭৭ সালের ২ অক্টোবর সামরিক আদালতে দণ্ডিতদের চাকরির স্বাভাবিক অবসর গ্রহণ পর্যন্ত বেতন, অন্য সব সুবিধা, পেনশন পাওয়ার নির্দেশনা চাওয়া হয়।

    ওই সামরিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বিমান বাহিনীর সার্জেন্ট সাইদুর রহমানের ছেলে মো. কামরুজ্জামান মিঞা লেলিনসহ বিমান বাহিনীর ১৪ মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত সেনা ও বিমান বাহিনীর কর্মকর্তাদের সন্তানসহ ৮৮ জনের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মতিউর রহমান রিট আবেদনটি দায়ের করেন।

    ১৯৭৫ সালের অগাস্ট ট্রাজেডির পর ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসা জিয়া সেনাপ্রধান হওয়ার পর ১৯৭৬ সালে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হিসেবে ক্ষমতা দখল করেন। তার পরের বছর তিনি রাষ্ট্রপতির পদও দখল করেন।

    সেনাপ্রধান জিয়া ক্ষমতা দখলের পর সামরিক বাহিনীতে অনেকগুলো বিদ্রোহ-অভ্যুত্থানের চেষ্টা চলেছিল, যাতে জড়িতদের সামরিক আদালতে বিচার করে মৃত্যুদণ্ডসহ নানা সাজা দেওয়া হয়েছিল।

    ১৯৭৬ সালে এই রকম এক বিচারে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত কর্নেল আবু তাহেরের বিচার অবৈধ বলে ইতোমধ্যে হাই কোর্ট থেকে রায় এসেছে।

    ছয় বছর আগে ওই রায় হওয়ার পর জিয়ার আমলে বিচারের নামে সংঘটিত সব হত্যাকাণ্ডের বিচারে কমিশন গঠনের দাবি তুলে তাহেরের ভাই আনোয়ার হোসেন বলেছিলেন, ওই সময় বেছে বেছে মুক্তিযোদ্ধা সেনাসদস্যদের হত্যা করা হয়েছিল।

    তার আগে আরেক রায়ে হাই কোর্ট বলেছিল, ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্টের পর খন্দকার মোশতাক আহমেদ, বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম, মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের ক্ষমতা গ্রহণ ছিল সংবিধান-বহির্ভূত ও বেআইনি।

    জিয়ার আমলে বিমান বাহিনীতে বিদ্রোহের ঘটনার পুনঃতদন্ত দাবি করে ২০১০ সালের ২ অক্টোবর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলনও করেছিলেন ওই ঘটনার শিকার ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের সদস্যরা।

    তবে সে বিষয়ে আর কোনো অগ্রগতি না হওয়ার মধ্যে রোববার রিট আবেদনটি হল, যাতে প্রতিরক্ষা সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, বিমান বাহিনীর প্রধানকে বিবাদী করা হয়েছে।

    রিট আবেদনকারীদের আইনজীবী মতিউর রহমান বলেন, জেনারেল জিয়াউর রহমানের মার্শাল ল ট্রাইব্যুনাল আইন, ১৯৭৭ -এর অধীনে সামরিক আদালতে অবৈধ দণ্ড এবং সাজাপ্রাপ্তদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে সেই অবৈধ দণ্ডাদেশের সময় থেকে চাকরির স্বাভাবিক অবসরের সময় পর্যন্ত পদ-পদবী অনুযায়ী তাদের চাকরির সমস্ত বকেয়া বেতন ও অন্যান্য সকল সুবিধাসহ পেনশন না দেওয়া কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের যোগ্যতা অনুযায়ী কেন সরকারি চাকরি দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হবে না, মর্মে রুল চাওয়া হয়েছে।

    তিনি বলেন, “মার্শাল ল রেগুলেশন অ্যাক্ট ১৯৭৭ দ্বারা সামরিক আদালতে জিয়াউর রহমান অন্যায়ভাবে বিচার করেছিল। সেই বিচারে যাদের ফাঁসি হয়েছিল, যাদের যাবজ্জীবনসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়েছিল এবং যারা চাকরিচ্যুত হয়েছিল সেসব ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারগুলোকে ক্ষতিপূরণের আওতায় আনার জন্য রিট আবেদনটি করা হয়েছে।

    “একই সঙ্গে বেআইনিভাবে যাদের সাজা দেওয়া হয়েছিল, তাদের যেন এই সাজা থেকে মাফ করে দেওয়া হয় এবং যারা মারা গেছেন তাদের ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পোষ্যদের যাতে সরকারি চাকরিতে অ্যাকোমোডেট করা হয়, মূলত এই কয়টা বিষয় চাওয়া হয়েছে রিটে।”

    বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাই কোর্ট বেঞ্চে শুনানির জন্য আবেদনটি উপস্থাপনে পরিকল্পনাও জানান এই আইনজীবী।

    রিট আবেদনে একটি সংবাদ প্রতিবেদন যুক্ত করা হয়; তাতে বলা হয়েছে, ১৯৭৭ সালের ২ অক্টোবর ভোররাতে বিমানবাহিনীতে সংঘটিত বিদ্রোহ কঠোরভাবে দমন করা হয়েছিল। তখন সামরিক আদালতে ফাঁসি দেওয়া হয় ১১ জন অফিসারসহ এক হাজার ৪৫০ জন বিমান সেনাকে। বরখাস্ত ও চাকরিচ্যুত হন আরও চার হাজার জন। নিখোঁজ হন অসংখ্য।

  40. মাসুদ করিম - ২২ আগস্ট ২০১৯ (৪:১১ পূর্বাহ্ণ)

    জিয়া কি বঙ্গবন্ধু হত্যার সাথে জড়িত?

    ১৫ অগাস্ট জাতীয় শোক দিবস। ওইদিন বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নৃশংসভাবে হত্যা করে সেনাবাহিনীর একদল সদস্য। হত্যাকাণ্ডের বিচার সম্পন্ন হয়েছে সে আজ দীর্ঘদিন। অপরাধীদের সাজা কার্যকর হয়েছে সেও বেশ অনেক বছর। সেখানে প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান বিচার বা অপরাধীদের তালিকায় নেই। তারপরও কেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত একবছরে অন্তত তিন বার বঙ্গবন্ধুর হত্যার সাথে জিয়ার জড়িত থাকার প্রসঙ্গ টেনেছেন? দ্বিধান্বিত না হয়ে তিনি সরাসরি বলেন- “(বঙ্গবন্ধুর) হত্যাকাণ্ডের সাথে জিয়া সম্পূর্ণভাবে জড়িত”। তিনি আরও বলেন, “জিয়া যে রাষ্ট্রপতি হল, সূত্রটা যদি খোঁজেন … জিয়া ১৫ অগাস্ট হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিল… আমিতো বলব, একটা এজেন্ট হিসেবেই কাজ করেছিল।” (সূত্র: বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)

    দেশী-বিদেশী অনেক বিশ্লেষকের দাবি- খন্দকার মোশতাক বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত। ১৯৭৫ এর ১৫ অগাস্ট পরবর্তী পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশের সাধারণ জনগণও একই মত পোষণ করে। তবে মোশতাককেও কখনো কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়নি, তার পূর্বেই তার মৃত্যু ঘটে। সেই সাথে বিশিষ্ট মার্কিন সাংবাদিক লরেন্স লিফশুলজ এর অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে যে ‘সিআইএ’ বঙ্গবন্ধু হত্যার সাথে জড়িত (Badhwar, Feb. 4, 2014, CIA’s Dacca Connection)। লিফশুলজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে, কিসিঞ্জারের ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের স্টাফ অ্যাসিস্টান্ট রজার মরিস বলেন, “it is absolutely plausible that Kissinger gave his nod to Mujib’s outer because Mujib was on Kissinger’s enemy list of the ‘three most hated men’ along with Allende and Thieu”. (Badhwar, Feb. 4, 2014, CIA’s Dacca Connection)। তবে লিফশুলজ এ বিষয়ে আরও অনুসন্ধান করা প্রয়োজন আছে বলে উল্লেখ করেন।

    তাহলে কি একদল জুনিয়র সেনাবাহিনী সদস্যের সাথে জিয়া, মোশতাক গং এবং সিআইএ বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত? বলা দুরূহ। তবে শুধু হাতে গোনা কয়েকজন জুনিয়র অফিসার এবং সৈনিক এই হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত তা ভাবা বোধ হয় বোকামি। ‘জিগ্‌-ছ’ পাজলের মত তারা সবাই হয়তো জড়িত। পুরো বিষয়টা ছিল ‘একটি নীলনকশার’ অংশ, যেখানে ভিন্ন ভিন্ন ব্যাক্তি ভিন্ন ভিন্ন অবস্থানে থেকে ভিন্ন ভিন্ন ভূমিকা পালন করে মাত্র।

    তবে আজকের এই প্রবন্ধে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে জিয়ার ভূমিকা কী, শুধু তা বোঝার চেষ্টা করেছি। আর জিয়া যুক্ত থাকলে, তার গুরুত্ব বা কতটুকু?

    জেনারেল জিয়াউর রহমান যে বঙ্গবন্ধু হত্যা চক্রান্তের বিষয়ে জ্ঞাত ছিলেন তা সম্ভবত প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশিত বা প্রচারিত হয় ১৯৭৬ সনে বিলাতের আইটিভি চ্যানেলের World in Action প্রোগ্রামে সাংবাদিক অ্যান্থনি মাসকারেনহাসকে দেওয়া লে. কর্নেল (অব.) সৈয়দ ফারুক রহমান এবং লে. কর্নেল (অব.) খন্দকার আব্দুর রশীদের সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে। এই সাক্ষাৎকারে ফারুক-রশীদ দাবি করে- যে বঙ্গবন্ধু হত্যা চক্রান্তের বিষয়ে ১৫ অগাস্টের বহু পূর্বেই জিয়াকে তারা অবহিত করে। ফারুক জানায়, “২০ শে মার্চ ১৯৭৫ সন্ধ্যা ৭:৩০ মিনিটের দিকে সে জিয়ার বাসায় জিয়ার সাথে দেখা করে এবং তাকে বলে- The country required a change।

    উত্তরে জিয়া বলেন, “Yes, yes, lets go outside and talk”। তখন জিয়া ফারুককে নিয়ে বাইরে বাড়ির লনে যায়। সেখানে ফারুক পুনরায় বলে, “We have to have a change. We, the junior officers, have already worked it out. We want your support and leadership”। জিয়ার প্রতিক্রিয়া ছিল অত্যন্ত স্পষ্ট।

    জিয়া বলে, “If you want to do something, you junior officers should do it yourself …” (Anthony Mascarenhas, Bangladesh – A Legacy of Blood, page 54, Hodder and Stroughton, London, 1986)

    আমরা অবশ্যই ভাবতে পারি বা প্রশ্ন করতে পারি– ফারুক-রশীদ বললো বলেই কি তা সত্য? এমনও তো হতে পারে যে, তারা তাদের দোষ কিছুটা লাঘব করার জন্য অন্যের ঘারে দোষ চাপাতে চেয়েছে। তবে প্রশ্ন হচ্ছে– কেন জিয়া? অন্য কোন সিনিয়র অফিসার নয় কেন? জিয়ার নামটা কি তারা হঠাৎ করে বা র‍্যান্ডমলি বলেছে? বিশ্লেষণে বোঝা যায় যে ব্যাপারটা মোটেই তা নয়। তার প্রমাণ পাওয়া যায় ১৯৭৬ সনে দেওয়া জিয়ার মাসকারেনহাস-কেই দেওয়া এক সাক্ষাৎকার থেকে। মাসকারেনহাস এর ভাষায়, “In July, 1976, while doing a TV programme in London on the killing of Sheikh Mujib I confronted Zia with what Farook had said ” (তাদের সাক্ষাৎকারে) । জিয়া এ ব্যাপারে উত্তর দেওয়া থেকে বিরত থাকেন। ফারুকের সাথে তার এমন কথোপকথনের বিষয়টি এসেছে এভাবে-

    “Zia did not deny it– nor did he confirm it” (Anthony Mascarenhas, Bangladesh– A Legacy of Blood, page 54, Hodder and Stroughton, London, 1986)।

    সাক্ষাৎকারে জেনারেল জিয়ার গড়িমসি বা পাশ কাটিয়ে যাওয়ার ভাব দেখে ধারণা করা যেতে পারে যে, ফারুকের সাথে জিয়ার এ কথোপকথন সত্য। এর সত্যতার আরও প্রমাণ মেলে আরও অনেক বছর পরে ১৯৯৭ সনে, যখন ফারুক জেলে আর রশীদ ইউরোপে। ১৯৯৭ সনে রশীদের সাথে মার্কিন সাংবাদিক লরেন্স লিফশুলজ এর সাক্ষাৎ হয় ইউরোপে। লিফশুলজের ভাষায়, “In 1997 I met Rashid for several hours in an European city… I went over with him exactly what he had told Mascarenhas about Zia’s involvement. Rashid confirmed to me the accuracy of his interview with Mascarenhas”।

    শুধু তাই নয় রশীদ লিফশুলজকে এ ব্যাপারে আরও বহু কিছু বিস্তারিত জানায়। রশীদ জোরালোভাবে বলে যে, “He (Rashid) had met General Zia numerous times prior to the coup and that Zia was fully in the picture (In Conversation with Lawrence Lifschultz– The Daily Star, December 4, 2014)।

    জিয়ার সাথে ফারুক-রশিদের সাক্ষাৎ এবং আলোচনা যে আরও অনেকবার হয়েছে তার প্রমাণ মেলে রশীদের স্ত্রী জোবায়দা রশীদের বক্তব্য থেকে। তিনি বলেন, “একদিন রাতে ফারুক জিয়ার বাসা থেকে ফিরে আমার স্বামীকে (রশীদ) জানায় যে, সরকার পরিবর্তন হলে জিয়া প্রেসিডেন্ট হতে চায়। শুধু তাই নয়। জিয়া আরও বলে- If it is a success then come to me. If it is a failure then do not involve me.” (আসাদুজ্জামান– বস সবকিছুর ব্যবস্থা নিচ্ছেন, প্রথম আলো, ১৫ অগাস্ট, ২০১৮)।

    একইভাবে, জিয়া বঙ্গবন্ধু হত্যা চক্রান্তের বিষয়ে অবহিত ছিলেন, কি ছিলেন না, তা বোঝার চেষ্টা করা যেতে পারে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের কয়েক ঘন্টা পর কর্নেল শাফায়েত জামিল এবং জিয়ার কথোপকথন থেকে। তবে বিষয়টা বুঝতে হবে মনস্তাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে। সেই সকালে শাফায়েত জামিল জিয়ার সাথে দেখা করতে গেলে তাকে শেইভ করতে দেখেন। জামিল জিয়াকে বলেন, “The President has been killed, Sir. What are your orders?

    উত্তরে জিয়া বলে, “If the President is no longer there, then the Vice President is there. Go to your headquarters and wait there”।

    তখন জামিলের দৃষ্টিতে জিয়াকে অনেক শান্ত দেখায়, “Evidently aware of what had happened” (Anthony Mascarenhas, Bangladesh– A Legacy of Blood, page 76, 1986)।

    উপরের বিশ্লেষণ থেকে কয়েকটি বিষয় এখানে পরিষ্কার– বঙ্গবন্ধু হত্যা চক্রান্তের বিষয়ে জিয়া পূর্বেই অবহিত ছিল; চক্রান্তকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত কোন ব্যবস্থা নেয়নি, বরঞ্চ চক্রান্তকারীদের উৎসাহিত করেছেন এবং সেই সাথে, আসন্ন পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন।

    এসব তথ্য এবং বিশ্লেষণ থেকে সন্দেহাতীতভাবে বলা যায় যে, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ড এবং একটি নির্বাচিত সরকারকে অবৈধভাবে উৎখাতে জিয়ার পূর্ণ সমর্থন ছিল। এ ব্যপারে লিফশুলজ এর অনুসন্ধান ও বিশ্লেষণের ফলাফল পরিষ্কার- “Had he (Zia) been against the coup, as Deputy Chief of the Army, Zia could have stopped it.”

    তার মতে, “… Zia played perhaps the most crucial of all roles. He was the key ‘Shadow Man’. He (Zia) assured Rashid that he would make certain that the forces in the Army would not move against him and his men if they succeeded.” (In Conversation with Lawrence Lifschultz – The Daily Star, December 4, 2014)।

    এসব থেকে আমরা বলতে পারি যে, জিয়া জেনেশুনে এবং সজ্ঞানে উপ-সেনাপ্রধান হিসেবে দেশের সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করেনি। এ কারণে তার সাজা হতে পারে, তাই বলে কি বলা যাবে যে, জিয়া বঙ্গবন্ধু হত্যা চক্রান্তকারীদের একজন? যদি তাই হয়, তাহলে জিয়ার সাথে শুধু ফারুক-রশীদের নয়, হত্যা পরিকল্পনার অন্যান্যদের যেমন, খন্দকার মোশতাক গং এবং সিআইএ এর সাথে ১৫ অগাস্টের পূর্বে যোগাযোগ থাকা বাঞ্ছনীয়। তা কি ছিল? সত্য উৎঘাটনে এ বিষয়টা তলিয়ে দেখা জরুরি।

    সময়টা ১৯৭৪। দেশে তখন সেনাবাহিনী দ্বারা অস্ত্র উদ্ধারের অভিযান চলছে। সেই সময় জিয়ার ফারুকের বাসায় আসা যাওয়া ছিল। একদিন কথা প্রসঙ্গে জিয়া ফারুককে জিজ্ঞেস করেন- “তোমরা ট্যাংক টুং ছাড়া দেশের আর খবরাখবর রাখো কি?” সেই সাথে আলাপের মাধ্যমে ফারুককে করে জিয়া প্ররোচিত করতে যা বলেছিলেন তা অবাক করার মত। জিয়া বলেন, “দেশ বাচাঁনোর জন্য একটা কিছু করা দরকার” (আসাদুজ্জামান– বস সবকিছুর ব্যবস্থা নিচ্ছেন, প্রথম আলো, ১৫ অগাস্ট, ২০১৮)।

    তাহলে দেশকে নিয়ে জিয়ার ভাবনা নিদেনপক্ষে ১৯৭৪ সন থেকে। তবে কি জিয়ার কার্যকলাপ এবং গতিবিধি তখন থেকেই কোনো ষড়যন্ত্রের পথে এগুচ্ছিল? দেশে এত মেজর থাকতে, জিয়া কেন ফারুককে বেছে নিয়েছিল এত সব বলার জন্য? নেহায়েত তাদের পূর্ব পরিচয় ছিল বিধায়? নাকি, অন্য কিছু? উল্লেখ্য যে, ১৯৭১ সনের ১৬ ডিসেম্বরের মাত্র কয়েকদিন পূর্বে ফারুক তদানীন্তন পশ্চিম পাকিস্তান থেকে মধ্যপ্রাচ্য হয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেয়। এখানে কি দুজনের মাঝে কোন ধরনের পাকিস্তান কানেকশন আছে? ঘটনাটা গবেষণার দাবি রাখে।

    কেবল সেনাবাহিনীর মেজরদের সাথেই নয়, জিয়া ১৯৭৪ সনে বঙ্গবন্ধু সরকারের কর্মকর্তাদের সাথেও যোগাযোগ রেখে বিভিন্ন বিষয়ে তার মতামত পেশ করতেন। এমন একটি দৃষ্টান্ত হচ্ছে তৎকালীন বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশনের উপ-চেয়ারম্যান নূরুল ইসলাম। ১৯৭৪ এপ্রিল থেকে বাংলাদেশ সরকার ভারতের সীমান্তে দিয়ে খাদ্যশস্য (ধান-চাল) চোরাচালান বন্ধের জন্য সেনাবাহিনী মোতায়েন করে। উপ-সেনাপ্রধান হিসেবে এসব তত্বাবধানের দায়িত্বে ছিলেন জিয়া। ১৯৭৪’এর জুলাই-অগাস্টের কোনো একদিন জিয়া আসেন নূরুল ইসলামের কার্যালয়ে। উদ্দেশ্য, বাংলাদেশ থেকে ভারতে খাদ্যশস্যের চোরাচালানের পরিমাণ নিয়ে আলোচনার জন্য। আলোচনায় দেশ থেকে প্রচুর পরিমাণ খাদ্যশস্য চোরাচালান হচ্ছে বলে জিয়া মত পোষণ করেন এবং বলেন, “… there was a very large scale smuggling ranging anywhere from half a million to a million tons.” (Nurul Islam, Making of a Nation Bangladesh – An Economist’s Tale, The University Press Limited, Dhaka, 2003, page 225)। পরিসংখ্যানটা নূরুল ইসলামকে অবাক করে। রাস্তাঘাট ও যোগাযোগ ব্যবস্থা হিসাবে নিয়ে কি করে এত অল্প সময়ে (এপ্রিল-জুন, ১৯৭৪) এত বিপুল পরিমান খাদ্যশস্য চোরাচালান হয়েছে বলে তিনি বিস্ময় প্রকাশ করেন। তাতে জিয়া খুশি হতে পারেননি।

    নূরুল ইসলামের মতে, “Estimates of massive smuggling of rice that Zia conveyed appeared improbable, considering the limited time involved and the poor state of roads and transportation systems in the boarder and adjoining areas in the early days of Bangladesh” (page 226)।

    বলাবাহুল্য, চোরাচালানের প্রাধান্যের বিবেচনায় ধান-চাল ছিল ষষ্ঠ কিংবা সপ্তম স্থানে (page 224)। সেই সময়, মানে ১৯৭৪ সনে, কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্রায়ান রেডা্নওয়ে নামক এক অর্থনীতিবিদ Bangladesh Institute of Development Studies স্বল্প সময়ের জন্য ভিজিটে আসেন। সেই সময়ে বাংলাদেশ থেকে ভারতে চোরাচালানের উপর এক গবেষণা করছিলেন তিনি। এই গবেষণার উপর ভিত্তি করে তিনি উপসংহার টানেন এই বলে যে, “smuggling was not significant enough so as to run into hundreds of thousands of tons” (Nurul Islam, Making of a Nation Bangladesh – An Economist’s Tale, The University Press Limited, Dhaka, 2003, page 225)। তাহলে, খাদ্যশস্য চোরাচালানের পরিমাণ অতিরঞ্জিত করে বলার কারণ কী? পেছনে কি জিয়ার অন্য কোন উদ্দেশ্য ছিল? এবং তিনি তা করেন এমন একটা সময়, যখন মার্কিন প্রশাসন পিএল ৪৮০ অধীনে খাদ্য সামগ্রী সরবরাহ নানা অজুহাতে প্রায় নয় মাস ঝুলিয়ে রাখে। শেষে কিউবার সাথে পাটের ব্যাগের ব্যবসা করার দায়ে খাদ্য সরবরাহ চুক্তি বাতিল করে দেয়, আর যার ব্যাপক প্রভাব পড়ে ১৯৭৪ এর দুর্ভিক্ষের তীব্রতায়। কী হতে পারে জিয়ার সেদিনের সে উদ্দেশ্য?

    মজার বিষয় হলো, খাদ্যশস্য চোরাচালানের ব্যাপারে জিয়ার মতো তৎকালীন তথ্য ও বেতার মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী তাহের উদ্দিন ঠাকুরেরও একই বক্তব্য। তাহের ঠাকুর আখাউড়ার চোরাচালান সম্বন্ধে বঙ্গবন্ধুকে একটি রিপোর্ট দেন, তাতে বাংলাদেশ থেকে প্রচুর পরিমাণ ধান-চাল আগরতলা যাচ্ছে বলে উল্লেখ করেন।

    ঘটনাটা এমন। ১৯৭৪ সনে, মে মাসের কোন একদিন বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের কোন এক এলাকা পরিদর্শনে যাবেন। সঙ্গে যাবেন তাহের ঠাকুর। বাইরে হেলিকপ্টার অপেক্ষায়। ঠিক সেই সময় মেজর জেনারেল এম খলিলুর রহমান (মহাপরিচালক, বিডিআর) বাইরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিলেন বঙ্গবন্ধুকে অভিবাদন করবেন বলে। যাবার সময় জেনারেল খলিলকে দেখেই বঙ্গবন্ধু প্রশ্ন করেন, “হ্যাঁ, ভাল কথা খলিল, চোরাচালানের কী অবস্থা বর্তমানে?” (মেজর জেনারেল খলিলুর রহমান– কাছে থেকে দেখা ১৯৭৩-৭৫, প্রথমা প্রকাশন, ২০১৬, পৃষ্ঠা ১১৪)। উত্তরে জেনারেল খলিল বলেন, “নিয়ন্ত্রণেই আছে, স্যার”। শুনে বঙ্গবন্ধু প্রশ্ন করেন, “আখাউড়ার কাছে মুকুন্দপুর এলাকায় নাকি ট্রাকে ট্রাকে, গাড়িতে গাড়িতে ধান-চাল আগরতলা যাচ্ছে? যে এলাকার কথা বঙ্গবন্ধু উল্লেখ করেন, সে এলাকাটি নিচু। তখন মে মাসের শেষ দিক। জায়গায় জায়গায় পানি। আর রাস্তাঘাট নেই। সংক্ষেপে খলিল বলেন- “না স্যার, কথাটা ঠিক নয়”। উত্তরে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা তাহের ঠাকুর অত্যন্ত উত্তেজিত কণ্ঠে জেনারেল খলিলকে লক্ষ করে বলেন, “দেখুন জেনারেল সাহেব, আপনারা আমলারা যা বলবেন, তা সব ধ্রুব সত্য, আমরা রাজনীতিকরা যা বলব সবই মিথ্যা।” (মেজর জেনারেল খলিলুর রহমান– কাছে থেকে দেখা ১৯৭৩-৭৫, প্রথমা প্রকাশন, ২০১৬, পৃষ্ঠা ১১৪)। তাহের উদ্দিন ঠাকুরের কথা শুধু মিথ্যাই নয়, উদ্দেশ্য প্রণোদিতও বটে! আমাদের দুর্ভাগ্য, আমরা সেদিন বুঝতে পারিনি তার এসবের উদ্দেশ্য।

    তাহের ঠাকুরের বাংলাদেশ এবং বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র আর চক্রান্ত নতুন কিছু নয়। শুরু হয়েছে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় থেকে। ১৯৭১ সনের অগাস্ট-সেপ্টেম্বরে যারা গোপনে কোলকাতায় মার্কিন কনস্যুলেট জেনারেলের অফিসারের সাথে সাক্ষাৎ করেছিলেন, তাহের ঠাকুর তাদেরই একজন (মঈদুল হাসান, মূলধারা’৭১, ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড, ১৯৮৬, ঢাকা)। এই গোপন যোগাযোগের উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারকে পাশ কাটিয়ে অখণ্ড পাকিস্তানের অধীনে একটা রাজনৈতিক সমঝোতায় পৌঁছানো। খন্দকার মোশতাক, মাহবুব আলম চাষী, তাহের ঠাকুরসহ আরও তিন/চারজন সহযোগীদের এ ধরনের যোগাযোগের কথা পরবর্তীকালে হেনরি কিসিঞ্জার নিজেও স্বীকার করেন, “We establish contact with the Bangladesh people in Calcutta, and during August, September and October of this year <(1971)>, no fewer than eight such contacts took place (India-Pakistan, Background briefing with Henry A Kissinger on December, ’71, Congressional Record, December 9, 1971, page 45735)।

    খন্দকার মোশতাক, মাহবুব আলম চাষী, তাহের ঠাকুর যে কোনো ধরনের ষড়যন্ত্র বা চক্রান্তে জড়িত, তা বঙ্গবন্ধুর দৃষ্টিও এড়ায়নি। ঘটনাটি ঘটে ১৯৭৪ এর ডিসেম্বরের শেষের দিকে। অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী গফ হুইটলাম তখন বাংলাদেশ সফরে আসেন। তার সম্মানে এক নৌ-ভ্রমণের আয়োজন করে। খন্দকার মোশতাক এবং তাহের ঠাকুর সেই ভ্রমণের সফরসঙ্গী ছিলেন। দূর থেকে বঙ্গবন্ধু তাদের ফুসফাস করতে দেখেন। কাছে গিয়ে দু’জনের দিকে লক্ষ করে বলেন, “… what are you up to and why are you always huddle together and engage in whispering campaigns? (Nurul Islam, Making of a Nation Bangladesh– An Economist’s Tale, The University Press Limited, Dhaka, 2003, page 165)।

    জিয়ার আর তাহের ঠাকুরের খাদ্যশস্য চোরাচালানের পরিমাণ অতিরঞ্জিত করে বলার উদ্দেশ্য কি একই সূত্রে গাঁথা? তাহলে কি বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে খন্দকার মোশতাক গংদের সাথে জিয়ার যোগাযোগ ছিল?

    উল্লেখ্য, ১৯৭৫ সনের ১৪ অগাস্ট খন্দকার মোশতাক এবং তাহের ঠাকুরের সচিবালয়ে দেখা হয়। কথোপকথনের সময় মোশতাক তাকে বলেন, “এ সপ্তাহে জিয়া দুইবার এসেছিলেন। সে এবং তার লোকেরা তাড়াতাড়ি কিছু একটা করার জন্য অস্থির হয়ে উঠেছেন। বলপূর্বক মত বদলাইতে চায়, প্রয়োজনবোধে যে কোনো কাজ করতে প্রস্তুত।” (আসাদুজ্জামান- বস সবকিছুর ব্যবস্থা নিচ্ছেন, প্রথম আলো, ১৫ অগাস্ট, ২০১৮)। এসব কী প্রমাণ করে? খন্দকার মোশতাকের মতো জিয়াও কী বঙ্গবন্ধু হত্যার চক্রান্তকারীদের একজন? হতে পারে। তবে যুক্তিটা এতটা জোরালো নয়। আরও তথ্যের প্রয়োজন।

    জিয়া যে শুধু খাদ্যশস্য চোরাচালানের পরিমাণের হিসেব দেওয়ার জন্যই বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশনের তৎকালীন উপ-চেয়ারম্যান নূরুল ইসলাম সাথে দেখা করেন, তা নয়। জিয়া আরও একবার তার সাথে দেখা করেন। তবে তা গোপনে। আমার ধারণা এই সাক্ষাতের আলোচনার বিষয়বস্তু জিয়া বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত কি না, তা অনুধাবনে সহায়তা করবে। নূরুল ইসলাম নিজেও মনে করেন এই সাক্ষাৎ, “The most memorable meeting…”,? (Nurul Islam, Making of a Nation Bangladesh– An Economist’s Tale, The University Press Limited, Dhaka, 2003, page 167)। জিয়া এবং নূরুল ইসলামের সাক্ষাৎ ঘটে গোপনে, জিয়াউল হক নামে নূরুল ইসলামের এক বন্ধুর বাসায়। সাক্ষাতের সময় তারা দুজন ছাড়া বাসায় আর কেউ উপস্থিত ছিল না। ঘটনাটা ঘটে ১৯৭৪ এর শেষ দিকে, নূরুল ইসলামের বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশন ছেড়ে বিদেশ যাবার প্রাক্কালে। তিনি যে বিদেশে যাচ্ছেন, তা ইতিমধ্যে জানাজানি হয়ে গেছে। তাদের সাক্ষাতের বিষয়বস্তু ছিল খুবই সুংক্ষিপ্ত। জিয়াও জেনেছেন নূরুল ইসলামের দেশ ছেড়ে যাবার কথা, তাই তাকে না যাবার জন্য রাজি করানোই ছিল এ সাক্ষাতের মূল বিষয়। জিয়া বোঝানোর চেষ্টা করেন যে ‘নিকট ভবিষ্যতে’ দেশের অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক অবস্থা এমন থাকবে না। নূরুল ইসলামের ভাষায়, “He (Zia) was confident that in the not too distant a future, the situation would improve and the prevailing drift and uncertainty would disappear” (Nurul Islam, Making of a Nation Bangladesh– An Economist’s Tale, The University Press Limited, Dhaka, 2003, page 168)।

    নিঃসন্দেহে জিয়ার এই বক্তব্য অতীব তাৎপর্যপূর্ণ। জিয়া কিভাবে জানেন যে, ‘নিকট ভবিষ্যতে’ দেশে পরিবর্তন আসন্ন? জিয়ার এ মন্তব্য নূরুল ইসলামকেও বিস্মিত করে। তিনি বলেন, “I was surprised by the tenor of his talk and the confidence with which he spoke about the restoration of political and economic stability.…. particularly by his confidence that in not ‘too distant’ a future….” (Nurul Islam, Making of a Nation Bangladesh – An Economist’s Tale, The University Press Limited, Dhaka, 2003, pages 168-169)। এত দৃঢ়তার সাথে বলতে পারার উৎস কী? তাহলে জিয়া কি জড়িত বঙ্গবন্ধু হত্যার চক্রান্ত প্রক্রিয়ার সাথে? (আমার জানা মতে নূরুল ইসলাম এখনও জীবিত এবং সম্ভবত আমেরিকায় অবস্থানরত। অনুসন্ধানী সাংবাদিকরা তার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন ঘটনাটি যাচাইয়ের জন্য)।

    এই প্রবন্ধের শুরুতে বিশিষ্ট মার্কিন সাংবাদিক লরেন্স লিফশুলজ থেকে উদ্ধৃতি দিয়েছি। প্রবন্ধের শেষেও লিফশুলজ এর লেখা একটি ঘটনার অবতারণা করছি। ঘটনাটি ঢাকায় একটি ডিনারকে ঘিরে যা সংঘটিত হয় ১৫ অগাস্টের ৭ থেকে ১০ দিন পূর্বে। লিফশুলজ বলেন, “এই ডিনারে উপস্থিত ছিলেন মোট ছয়জন ব্যক্তি। ১৯৭৫ সনে ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসে অবস্থিত সিআইএ স্টেশন প্রধান ফিলিপ চেরি এবং তার স্ত্রী, জেনারেল জিয়া এবং তার স্ত্রী, এবং ডিনারের নিমন্ত্রণকর্তা (হোস্ট) এবং তার স্ত্রী। ঘটনার বিবরণের ভিত্তিতে লিফশুলজ দাবি করেন, “Zia and Cherry seems to know each other.” (Lawrence Lifschultz, A long road in search of the truth- August 15, 1975, Dhaka Tribute, 14th August, 2018)

    তার ভাষ্য মতে, সেই রাতে ডিনারের আগে এবং পরে দীর্ঘ সময় ধরে চেরি-জিয়ার মাঝে নিমন্ত্রণকর্তার বাসার বাগানে বসে কথোপকথন চলে। তাদের আলোচনার বিষয়বস্তু কী হতে পারে, তা বোঝা একজন সচেতন মানুষের কষ্ট হওয়ার কথা নয়। লিফশুলজ তার অনুসন্ধানের ভিত্তিতে মন্তব্য করেন, “The evidence increasingly points to the fact that Zia was one of the principal architects of the coup and played a much more significant role than Khondaker Mustaque Ahmed.” (Lawrence Lifschultz, A long road in search of the truth – August 15, 1975, Dhaka Tribute, 14th August, 2018)।

    উপরের বিভিন্ন তথ্য এবং ঘটনার বিশ্লেষণের ফলাফল বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সাথে জেনারেল জিয়ার জড়িত থাকার বিষয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মন্তব্যের সত্যতাই হয়তো প্রমাণ করে।

  41. মাসুদ করিম - ২৫ আগস্ট ২০১৯ (৪:১৯ পূর্বাহ্ণ)

    জিয়ার সই করা মৃত্যুদণ্ডাদেশ পড়তেন সামরিক আদালতের বিচারকরা: গবেষক

    পঁচাত্তর পরবর্তী সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের হত্যাকাণ্ডের ওপর গবেষণার জন্য পরিচিত সাংবাদিক জায়েদুল আহসান পিন্টু বলেছেন, তখনকার সামরিক আদালতের বিচারকরা আগে লেখা রায় পাঠ করতেন, যাতে জেনারেল জিয়াউর রহমানের স্বাক্ষর থাকত।

    ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডের পর সেনাবাহিনী প্রধান হন জিয়াউর রহমান, পরে তিনিই হন বাংলাদেশের প্রথম সামরিক শাসক। জিয়াউর রহমান সেনাবাহিনীতে থাকা অবস্থায় ১৯৭৮ সালে তার তত্ত্বাবধানেই বিএনপির প্রতিষ্ঠা হয়।

    ডিবিসি নিউজ টিভি চ্যানেলের সম্পাদকদের একজন পিন্টু বলেন, “জিয়ার আমলে সশস্ত্র বাহিনীকে মুক্তিযোদ্ধা শুন্য করতে ব্যাপক হারে হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়।”

    ‘অন্ধকারের ওই দিনগুলো’ আরও খতিয়ে দেখতে একটি কমিশন গঠনের প্রস্তাব করেন পিন্টু, তার এই প্রস্তাবে সমর্থন জানান সাবেক প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম ও শহীদ বুদ্ধিজীবী আব্দুল আলিম চৌধুরীর মেয়ে নুজহাত চৌধুরী।

    “সশস্ত্র বাহিনীর অন্ধকার দিনগুলো সম্পর্কে জানার অধিকার রয়েছে মানুষের,” বলেন এই গবেষক।

    শনিবার বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্ট অডিটোরিয়ামে সিআরআইয়ের আয়োজনে ‘ইতিহাসের অবরুদ্ধ অধ্যায়: ১৯৭৫-১৯৯৬’ শীর্ষক আলোচনা সভায় কথা বলেন তারা।

    প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী শাহ আলী ফরহাদের সঞ্চালনায় সভায় ঢাকা ট্রিবিউনের সম্পাদক জাফর সোবহান ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট মারুফ রসুলও বক্তব্য দেন। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যাকাণ্ডের পর জন্ম নেওয়া তরুণ-তরুণীরাই এই সভার দর্শক সারিতে ছিলেন।

    পঁচাত্তর পরবর্তী ঘটনাবলী নিয়ে ১৯৯৭ সালে একটি বই প্রকাশিত হয় জায়েদুল আহসান পিন্টুর।

    জিয়াউর রহমানের আমলে সামরিক আদালতের বিচার কার্যক্রম নিয়ে তিনি বলেন, “বিচারকরা বলেছেন, জিয়া আদেশে সই করতেন। তারা শুধু সেগুলো পড়ে যেতেন।”

    ওই সময় নিহতদের পরিবারের সদস্যরা এখনও তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন বলে জানান পিন্টু। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, হাসানুল হক ইনু সম্প্রতি সংসদে বক্তব্যে ওই সব হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে পিন্টু জানেন বলে উল্লেখ করার পর ৪২ বছর বয়সী এক ব্যক্তি তার অফিসে আসেন।

    “কিছু বলার আগে ১০-১২ মিনিট কান্নাকাটি করেন তিনি। তারপর বলেন, আমি আপনার কাছে এসেছি আমার বাবার মৃত্যুর তারিখটা জানতে। আমার গবেষণার সব নথিপত্র ঘেঁটে তাকে বললাম, এটা ছিল ২৭ নভেম্বর এবং আপনার বাবাকে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল। শুনে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন।

    “এটা শুধু একটা উদাহরণ মাত্র। আপনি ওই সব দিন কল্পনাও করতে পারবেন না।”

    পিন্টু বলেন, “প্রতি রাতে শহরে কারফিউ থাকত এবং কেন্দ্রীয় কারাগারে রাত ১২টা থেকে ভোর ৪টা পর্যন্ত ফাঁসি দেওয়া হত। তালিকা ছিল দীর্ঘ এবং সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে কাজ সারত তারা।

    “একজনকে ফাঁসি দিতে ৩০ মিনিট সময় নিত । এক রাতে তারা আটজনকে ফাঁসি দিতে পারত। সে কারণে অনেককে কুমিল্লা, বগুড়া ও রাজশাহী কারাগারে পাঠানো হয়েছিল। মৃত্যু ত্বরাণ্বিত করতে তারা রগও কেটে দিত। আমার কাছে প্রমাণও আছে, এটা নিছক গবেষণাই নয়।”

    তিনি বলেন, “কুমিল্লা কারাগারে ফাঁসি কার্যকরকারীর সঙ্গে আমি কথা বলেছি। তিনি বলেছেন, ৯২ জনকে ফাঁসি দিয়েছেন। বাংলাদেশে মোট ৪৮০টি ফাঁসির মধ্যে জিয়াউর রহমান ২৮০ জনকে ফাঁসি দিয়েছেন এবং তারা সবাই সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য।”

    পিন্টু বলেন, এত দ্রুত এই প্রক্রিয়া শেষ করা হত যে যাকে ফাঁসি দেওয়া হচ্ছে তার মৃত্যুদণ্ড হয়েছে কি না তাও যাচাই করার সময় থাকত না তাদের। যাবজ্জীবন দেওয়া একজনকেও ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল।

    “‘আমাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়নি…,’ বলে কাঁদতে থাকেন তিনি। কিন্তু তাদের যাচাই করারও সময় ছিল না।”

    তিনি বলেন, “একটি ট্রাইব্যুনাল গঠিত হয়েছিল ৮ অক্টোবর, কিন্তু রায় ঘোষণার তারিখ ছিল ৭ অক্টোবর। ওই রায় কার্যকর করা হয় ৯ অক্টোবর। আর ট্রাইব্যুনাল গঠনের গেজেট হয়েছিল ১৪ অক্টোবর।

    “প্রতিটি কর্মকর্তা আমাকে বলেছেন, জেনারেল জিয়া ডাইনিং টেবিলে এক হাতে কাঁটাচামচ নিয়ে আরেক হাতে মৃত্যুদণ্ডের আদেশে সই করতেন। এমনকি বিদেশে যাওয়ার পথে বিমানবন্দরেও তিনি স্বাক্ষর করতেন।

    “তিনি এটা করতেন দ্রুত ফাঁসি কার্যকর করার জন্য। এটা ছিল একটি নিয়মিত বিষয়।”

    পিন্টু বলেন, “বিএনপি নেতা মীর শওকত আলী তাকে বলেছেন, তারা সেনাবাহিনীর এক হাজার ১৩০ জনকে হত্যা করেছেন, যাদের ৯০ শতাংশের বেশি মুক্তিযোদ্ধা।

    “তার (জিয়া) মিশন ছিল, মুক্তিযোদ্ধা সৈন্যদের নিঃশেষ করা। মুক্তিযোদ্ধা নন এমন কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দিতেন তিনি।”

    নুজহাত চৌধুরীও অন্ধকার এই অধ্যায়ের বিস্তারিত জানতে একটি কমিশন গঠনের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

    তিনি বলেন, “১৯৭১ সালে যারা মুক্তিযুদ্ধকে সমর্থন করেছিলেন তাদের নিঃশেষ করতে চেয়েছিলেন জিয়া। এই ষড়যন্ত্র এখনও চলছে। প্রতিটি পেশায়ই তারা কৌশলে এই কাজ করে।

    “আমাদের দেখতে হবে, তিনি পাকিস্তানি বাহিনীর চর হিসেবে এখানে কাজ করেছিলেন কি না।”

    ১৯৭১ সালের বুদ্ধিজীবী হত্যা, ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্টের হত্যাকাণ্ড এবং পঁচাত্তর পরবর্তী সশস্ত্র বাহিনীতে হত্যাকাণ্ড খতিয়ে দেখার দায়িত্ব দিয়ে এই কমিশন করা যেতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

    “এটা করার জন্য এখন সুবর্ণ সুযোগ। পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস জানার জন্যই আমাদের এই কমিশন দরকার।”

    তারানা হালিম বলেন, জিয়াউর রহমান দালাল আইন বাতিল করেছিলেন এবং যুদ্ধাপরাধীদের পুনর্বাসন করেছিলেন।

    “তিনি ১২ হাজার বিচারাধীন মামলা বাতিল করেছিলেন এবং ৪৭৫ জন দণ্ডিত অপরাধীকে মুক্তি দিয়েছিলেন। যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমকে নাগরিকত্ব দিয়ে তাকে পাকিস্তান থেকে ফিরিয়ে এনেছিলেন।”

  42. মাসুদ করিম - ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৯ (৪:২২ পূর্বাহ্ণ)

    রিটা রহমান: বিএনপি-র ঋণ শোধের গল্প

    স্বৈরশাসক এরশাদের মৃত্যুর পর তার নির্বাচনী আসন (রংপুর-৩) শূন্য ঘোষিত হয়। শূন্য আসনে উপনির্বাচনের ঘোষণা এলে শুরু হয় একের পর এক নাটক ৷ কখনোবা এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এরশাদপুত্র এরিকের রাজনীতিতে অভিষেক, পালকপুত্র সা’দ এরশাদের নির্বাচনের ঘোষণা, আবার কখনো এরশাদের ভাতিজা আসিফ শাহরিয়ারের বিতর্কিত সব কার্যকালাপ৷

    একের পর এক খবরে যখন নির্বাচনের মাঠ সরগরম ঠিক তখনই গণমাধ্যমে খবর এলো এই উপনির্বাচনে বিএনপিও প্রার্থী দিচ্ছে। সংবাদ সম্মেলনে শীর্ষস্থানীয় নেতাদের উপস্থিতিতে মোট পাঁচজন মনোনয়নপ্রত্যাশীর মধ্যে চূড়ান্ত প্রার্থীর নাম ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা রাজনৈতিক দলটি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জাতীয় চার নেতা হত্যার পালাতক আসামি মেজর (অব.) খায়রুজ্জামানের স্ত্রী রিটা রহমানকে চূড়ান্ত প্রার্থী করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

    খবরটি অস্বাভাবিক কিছু না। চমকে যাওয়ার মতও কিছু হয়নি। জন্মের সময় থেকেই দলটি স্বাধীনতাবিরোধীদের প্রধান আশ্রয়স্থল৷ জামায়াতের সাথে রাজনীতির হিসেব বাদ দিলেও দলটি যুগ যুগ ধরে মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তি, সকল মৌলবাদী নেতা আর তাদের সন্তানদের আশ্রয়স্থল হিসেবে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করে আসছে৷

    কিন্তু রিটা রহমানের মনোনয়নের পেছনে আছে অন্য গল্প৷ নিজের দল পিপিরি-র জন্মের দশ মাসের মধ্যে বিলুপ্তি ঘোষণা করে বিএনপিতে বিলীন হয়ে মনোনয়ন পাওয়া রিটা-র বঙ্গবন্ধুর ও চারনেতার খুনির স্ত্রী হওয়া ছাড়াও আরো একটি পরিচয় আছে৷ নামের শেষে ‘রহমান’ শব্দটিতেই মিশে আছে ইতিহাসে আরেকটি অংশ।

    রিটা-র বাবা আর অন্য কেউ নন, রংপুর সরকারী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে আশ্রয়গ্রহণকারী, ৭২সালে দালাল আইনে গ্রেপ্তার, জিয়ার প্রধানমন্ত্রী সমমর্যাদার সিনিয়র মন্ত্রী মশিউর রহমান যাদু মিয়া৷ যাদু মিয়া মওলানা ভাসানীর অন্যতম রাজনৈতিক ভাবশিষ্য। ক্যান্টনমেন্টে বসে জিয়া যে রাজনৈতিক দল করেছিলেন, তার অন্যতম প্রধান বেসামরিক স্থপতি ছিলেন যাদু মিয়া।

    ২.

    ১৯৭৫ সালের ১১ নভেম্বর বেতার ও টেলিভিশন ভাষণে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান বলেছিলেন, “আমি রাজনীতিবিদ নই। আমি একজন সৈনিক।… রাজনীতির সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই এবং আমাদের সরকার সম্পূর্ণ নির্দলীয় ও অরাজনৈতিক।” সেই সৈনিক জিয়াকে রাজনীতিবিদ জিয়াতে রূপান্তর করতে সব থেকে বেশি ভূমিকা রেখেছেন রিটা রহমানের বাবা মশিউর রহমান যাদু মিয়া।

    জিয়াকে শুধু রাজনীতিবিদ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেই ক্ষান্ত হননি যাদু মিয়া, জিয়াকে জনপ্রিয় করে তুলতে অভিনব সব পদ্ধতি অবলম্বন করেছেন।

    মশিউর রহমান যাদু মিয়ার ভাই মোখলেসুর রহমানের (সিধু ভাই) একটি সাক্ষাতকারকে উদ্ধৃত করে মহিউদ্দিন আহমদ লিখেছেন, “জিয়া বাংলা লিখতে-পড়তে জানতেন না। প্রথম দিকে তিনি বাংলায় যে বক্তৃতা দিতেন, সেগুলো উর্দুতে লিখতেন। তারপর সেটি দেখে বক্তৃতা দিতেন। তিনি ভালো করে বক্তৃতা দিতে পারতেন না। দিতে গেলে খালি হাত-পা ছুঁড়তেন।”

    মোখলেসুর রহমানের সাক্ষাতকার গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ তাঁর বইতে এভাবে তুলে ধরেছেন, “এসব দেখেটেখে যাদু একদিন আমাকে বললো যে, এ রকম হলে কী করে তাঁকে আমি চালিয়ে নেব? আমি বললাম, দেখো জিয়া বক্তব্য দিতে পারেন না ঠিক আছে। তিনি সবচেয়ে ভালোভাবে কী করতে পারেন, সেটা খুঁজে বের করো। জবাবে যাদু বললেন, হাঁটতে পারেন এক নাগাড়ে ২০ থেকে ৩০ মাইল পর্যন্ত। আমি বললাম এইতো পাওয়া গেল সবচেয়ে ভালো একটা উপায়, তুমি তাকে সঙ্গে নিয়ে পাড়াগাঁয়ে হাঁটাও। গাঁও- গেরামের রাস্তা দিয়ে যাবে আর মানুষজনকে জিজ্ঞেস করবে, কেমন আছেন? প্রেসিডেন্ট দেশের মিলিটারি লিডার, তিনি গ্রামের বাড়ি বাড়ি গিয়ে কানাকানচি দিয়ে ঘোরাঘুরি করছেন আর লোকজনের ভালো-মন্দের খোঁজ খবর করছেন, তাতেই তিনি জনপ্রিয় হয়ে উঠবেন।”

    মোখলেসুর রহমানের ভাষ্য হচ্ছে, এভাবে দেখতে দেখতে জিয়াউর রহমান বক্তব্য দেয়াটাও রপ্ত করে ফেললেন। যেখানে কোনদিন ইউনিয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যানও যাননি, সেখানে খোদ দেশের প্রেসিডেন্ট যাচ্ছেন। সেটা এক বিশাল ব্যাপার।

    “এসব দেখে গ্রামের লোকজন ভাবল, জিয়াউর রহমান এমন লোক, যিনি আমাদের খোঁজ খবর রাখেন,” মোখলেসুর রহমানের সাক্ষাতকার এভাবেই উঠে এসেছে মহিউদ্দিন আহমদের বইতে।

    ৩.

    কিন্তু রাজনৈতিক যাদু মিয়ার সাথে সৈনিক জিয়ার মিলল কিভাবে? কিভাবে দুইজন একত্রিত হলেন! সেই ঘটনাটা আরো বেশি আগ্রহোদ্দীপক। আমার কাছে এই লেখার সব থেকে চুম্বক অংশ এই মিলে যাওয়া, ঘটনার পরম্পরা

    একদম শুরু থেকে শুরু করি।

    দেশভাগেরও আগের কথা। বর্তমান বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গ দিনাজপুর, রংপুর, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী তখন কৃষক আন্দোলনের আঁতুড়ঘর। রায়ত বিদ্রোহ, তোলাগন্ডি আন্দোলনের পর উত্তরের কৃষকেরা এবার ফুঁসেছে তেভাগার দাবিতে। আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছে কমিউনিস্ট পার্টি। স্থানীয় জোতদারেরা তেভাগার সংগ্রাম কঠোর হস্তে দমন করতে মরিয়া হয়ে ওঠেন। এদের নেতা ছিলেন মশিউর রহমান যাদু মিয়া। তেভাগার এক পর্যায়ে জোতদারদের অতর্কিত হিংস্র আক্রমণের শিকার হয়ে শহীদ হন তন্নারায়ণ রায়। এ সম্পর্কে কমরেড নৃপেণ ঘোষ বলেন, “সবচেয়ে শেষে কাটা হয় যাদুমিয়াদের ধান। যেদিন ধানকাটা হবে তার আগেরদিন রাতে স্থানীয় নেতা তন্নারায়ণ রায় এক বর্গাদারের বাড়িতে বর্গাদারদের নিয়ে একটি বৈঠক করেছিলেন। সে বাড়িটি ছিল যাদু মিয়ার বাড়ির খুব কাছে। বৈঠক চলাকালে যাদু মিয়ার নেতৃত্বে ২৫/৩০ জনের একটি দল অতর্কিতে বন্দুক নিয়ে বর্গাদারদের আক্রমণ করে এবং এলোপাতাড়ি গুলি ছুঁড়তে থাকে। জোতদারদের একজন ত্বরিৎ গতিতে যেয়ে তন্নারায়ণের বুকে বন্দুক লাগিয়ে গুলি করে সবশুদ্ধ পালিয়ে যায়। তন্নারায়ণ সাথে সাথে মারা যান।“

    কৃষক তন্নারায়ণ শহীদ হওয়া প্রসঙ্গে ওই অঞ্চলের তেভাগা আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক মণিকৃষ্ণ সেন বলেন, “সেদিন স্থানীয় কোন প্রোগ্রাম ছিল না। নেতারা বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে। সম্পূর্ণ সুস্থ না থাকায় আমাকে বিশ্রামে রাখা হয়েছে। সন্ধ্যাবেলা আমার ‘ডেন’ সংলগ্ন মাঠে পায়চারি করছিলাম একা একা। সে সময় গুলির আওয়াজ শোনা গেল, শব্দ শুনে মনে হলো প্রায় আধা মাইল দূরে। সংবাদের জন্য উদগ্রীব হয়ে আছি। কয়েক মিনিটের মধ্যে লাঠি হাতে জনৈক প্রৌঢ় মুসলিম কমরেড (নামটা স্মরণ নেই) এসে হাজির। জানালেন- ‘খুব খারাপ খবর। জোতদারেরঘর, যাদু মিয়া (মশিউর রহমান) বন্দুকের গুলিত তন্নারায়নোক খুন করিচে। বারান্দাত বসি আছিল, টারীর মানুষ বাজারোত ইতি উতি, পুরুষরা কাহই আছিল না। লাশ বারান্দাত পড়ি আছে। বাচ্চাইয়েরঘর আগোত গেছিল, তারঘরোকও গুলি করিচে। পুলিশ আসিছে। তোমাক খবর দিবার আনু।’

    পুলিশের প্রশ্রয়ে নিরস্ত্র তন্নারায়ণ রায়কে গুন্ডাবাহিনীর গুলি করে হত্যার ঘটনায় ক্ষুব্ধ জনগণ স্বতঃস্ফূর্ত বিক্ষোভ মিছিল বের করে ‘হত্যার বিচার চাই, যাদু মিয়ার কল্লা চাই’ শ্লোগানে আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে তুললো।”

    শহীদ তন্নারায়ণের সাথে প্রথম বেঈমানি তার তার কমরেডরাই। কিছুদিন বাদেই খুনি যাদু মিয়ার আশ্রয় হয় মওলানা ভাসানীর ন্যাপ। ১৯৫৬সালে মাওলানা ভাসানী গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি ঘাটের সর্দারের চরে বৃহৎ কৃষক সমাবেশ করেন। শুরু হয় পুনরায় কৃষক সমিতি পুনর্জীবিত করার চেষ্টা। রংপুরে কৃষক সমিতি পূনর্গঠনের উদ্যোগে যুক্ত হন তেভাগার অন্যতম নেতা মণিকৃষ্ণ সেন। ভাসানীর নির্দেশে মণিকৃষ্ণ সেনের হাত ধরে ন্যাপে যাদু মিয়ার প্রবেশ ঘটে।

    কমরেড শংকর বসু তার এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন- “রংপুর জেলা মুসলিম লীগের প্রভাবশালী নেতা মশিউর রহমান যাদু মিয়া-কে ন্যাপে নিয়ে আসার ক্ষেত্রে তার অগ্রজ মখলেসুর রহমান সিধু মিয়ার ন্যায় কমরেড মণিকৃষ্ণ সেনের ভূমিকাও ছিল প্রণিধানযোগ্য।”

    যাদু মিয়ার সাথে মণিকৃষ্ণ সেনের রাজনৈতিক বন্ধুত্বে তেভাগার কর্মীদের প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায় খোদ মণিকৃষ্ণ সেনের এক সাক্ষাতকারে- “সে সময় রংপুর জেলা বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন মশিউর রহমান যাদু মিয়া। তিনি মুসলিম লীগেরও একজন প্রথম সারির নেতা ছিলেন। একদিন তিনি আমাকে বললেন, আমার সঙ্গে তার আলাপ-আলোচনা আছে। ডোমারে তখন দুর্ভিক্ষাবস্থা চলছিল। আমাকে সঙ্গে করে নিয়ে যেতে চাইলে আমি রাজি হলাম। তার সাথে ডিমলায় ও ডোমারে গেলাম। সে সময় তিনি আমার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ হলেন। এরপরই তিনি ন্যাপে যোগদান করেন। ডোমারে দুইদিন অবস্থান করে এলাকার সামগ্রিক অবস্থা অবগত হলাম। ডিমলায় মশিউর রহমান যাদু মিয়া-র বাড়িতে যাওয়ায় ঐ এলাকার কৃষক কর্মীরা খুশি হতে পারেন নি।”

    ৪.

    এবার সমীকরণের পালা।

    একটা ছোট ঘটনা বলি, আমি একবার এক ন্যাপ নেতার সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম, ভাসানীর অন্যতম রাজনৈতিক কর্মী এই মানুষটি মাওলানা ভাসানীর মৃত্যুর দিন পর্যন্ত তার পাশেই ছিলেন। সাক্ষাৎকারের শেষে তাকে যখন প্রশ্ন করা হয়েছিল, ‘চাচা মাওলানা সাহেবের মৃত্যুর পর আপনারা জিয়াকেই কেন নেতা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন’- ভদ্রলোক আমাদের একটা ঘটনা বলেছিলেন সেদিন। ভাসানীর অন্তিম মুহূর্তে মেজর জিয়া তাকে দেখতে হাসপাতালে এসেছিলেন। দিনভর হাসাপাতালে নিরাপত্তা বেষ্টনী, জেনারেলের আসার অপেক্ষা, অবশেষে তিনি এলেন। হুজুরের পাশে বসলেন, হুজুর জেনারেল জিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলেছিলেন- ‘বাবা তুমি তোমার এই পোশাক খুলে ফেল, জনগণের কাছাকাছি পৌঁছাতে পারবে, জনগণের নেতা হয়ে উঠতে পারবে।’

    হুজুরের সেই মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়াকেই তার কর্মীরা হুজুরের খলিফা মনোনয়ন হিসেবে দেখেছিলেন। ভাসানীর মৃত্যুর পর তাই সবাই অলিখিতভাবে খলিফার একনিষ্ঠ কর্মী হয়ে গেলেন। (এই ব্যাখ্যাটা আমার নয়, উল্লেখিত সেই ভদ্রলোকের)

    ইংরেজি আর উর্দু ছাড়া অন্য কোনও ভাষা না বোঝা জিয়া হয়ত সেদিন হুজুরের নসিহত ঠিক বুঝে উঠতে পারেননি। বুঝলেও হুজুরের আধ্যাত্মিক বাণী কিভাবে প্রয়োগ করবেন তা বুঝতে পারেননি। হুজুরের হয়ে সেই বোঝানোর কাজটা করেছিলেন আলোচিত রিটা রহমানের বাবা, জিয়ার অন্যতম থিংক ট্যাংক মশিউর রহমান যাদু মিয়া।

    তাতে যাদু মিয়া ও জিয়াউর রহমান দুজনেরই লাভ ছিল। উল্লেখ্য যে, ১৯৭১ সালে মশিউর রহমান যাদু মিয়া ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৭৪ সালের ১৫ মে ভাসানী ন্যাপের অ্যাডহক কমিটি গঠন করা হয় এবং কেন্দ্রীয় ন্যাপ পুনরায় বিভক্ত হয়ে পড়ে। ১৫ জুলাই জাতীয় রিকুইজিশন কাউন্সিল অধিবেশন ডাকা হয়। দলের তরুণ বামপন্থী অংশ কাজী জাফর আহমদ ও রাশেদ খান মেননের নেতৃত্বে ১৯৭৪ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনাইটেড পিপলস পার্টি (ইউপিপি) গঠন করে। কাজী জাফর আহমদ ও রাশেদ খান মেনন ইউপিপি গঠন করলে মূল ন্যাপের দায়িত্ব মশিউর রহমান যাদু মিয়ার উপর ন্যাস্ত হয়। ১৯৭৪ কাউন্সিল অধিবেশনে মওলানা ভাসানী সভাপতি ও যাদু মিয়া সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৭৫ সালে বাকশাল গঠন করলে ন্যাপ মোজাফফর ন্যাপ বিলুপ্ত করে বাকশালে যোগ দেন। আর মাওলানা ভাসানি ও যাদু মিয়ার নেতৃত্বে ন্যাপের বাকি অংশ বাকশালের তীব্র বিরোধিতা করে। বাকশালের বাইরে থাকা ন্যাপের নিবন্ধন বাতিল হয়ে যায়।

    ১৯৭৬ সালে জিয়াউর রহমান একটি রাজনৈতিক দল গঠন করার উদ্যোগ নিলে সারা বাংলাদেশে ন্যাপের সকল নেতা কর্মী নিয়ে মশিউর রহমান যাদু মিয়া ও জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) গঠন করেন।

    উপরের সব কয়টি ঘটনা একবার পড়লে পাঠক হয়ত বুঝতে পারবেন বিএনপি-র গঠন থেকে প্রতিষ্ঠার প্রতি পরতে পরতে মিশে আছেন মশিউর রহমান যাদু মিয়া, এই মিশে যাওয়া এতটা গভীর আর সূক্ষ্ণ যে ইতিহাস সচেতন না হলে যাদু মিয়া-র রাজনৈতিক পরিচয় বুঝে ওঠা কঠিন হয়ে যায়। মশিউর রহমান যাদু মিয়ার প্রতি তাই বিএনপির ঋণের শেষ নেই। সেই ঋণ মেটাতেই বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় তিন নেতার হত্যার আসামী ও যাদু মিয়ার কন্যা রিটা রহমানকে মনোনয়ের ঘৃণিত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। নতুন প্রজন্মকে আরেকবার দেখিয়ে দিয়েছে নিজেদের ভেতরের রূপ!

  43. মাসুদ করিম - ৫ মার্চ ২০২৩ (৪:৫৬ অপরাহ্ণ)

    কীসের বিনিময়ে কর্নেল অলির মিথ্যাচার?
    https://bangla.bdnews24.com/opinion/h9nexzdnv6
    মেজর রফিক, কর্নেল অলির লেখনির জবাবে সংসদে দাঁড়িয়েই দিয়েছেন, সমস্ত তথ্য উপাত্তসহ প্রমাণ করেছেন যে কর্নেল অলিই বেয়াদবি এবং মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছে।

    ২০১২ সালের এক সকালে ডেইলি স্টার পত্রিকা খুলেই এর প্রথম পৃষ্ঠার অর্ধেক জুড়ে ছবিসহ এক বিরক্তিকর খবর চোখে পড়েছিল, যাতে উল্লেখ ছিল কর্নেল অলি নামক এক মুক্তিযোদ্ধা কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে কয়েক একর জমি দখল করে সেখানে স্থাপনা গড়েছেন।

    তখনই স্বপ্রণোদিত রুল জারি করায় কর্নেল অলি আমাদের আদেশক্রমে আমার নেতৃত্বের বেঞ্চে হাজির হন। তার মুখে কোনো লজ্জার ভাব ছিল না। মনে হচ্ছিল, মনে মনে ভাবছেন কত লোকই তো সরকারি ভূমি দখল করে, আমিও তাই করেছি, তাতে কী এমন হয়েছে? হয়তো এ-ও ভাবছিলেন এই বিচারপতি বেশি বাড়াবাড়ি করছেন। প্রথম আধাবেলা কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থেকে বিরতির পর কার্যক্রম শুরু হলে বুঝতে পারলাম তখন তিনি বেশ লজ্জাকাতর, সম্ভবত বহু লোকের উপস্থিতিতে আধাবেলা অভিযুক্তের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকার কারণে। প্রথমেই জিজ্ঞেস করেছিলাম ডেইলি স্টার পত্রিকায় প্রকাশিত ছবিসহ প্রতিবেদনটি সত্যি কিনা? জবাব না দিয়ে তিনি মাথা নিচু করে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর দ্বিতীয়বার বলেছিলাম জবাব না পেলে ধরে নেব সংবাদটি সত্য এবং ভূমি দখলের দায়ে তাকে জেলে পাঠানো হবে। এবার ভয়ার্ত মুখেই বলেছিলেন শিগগির তার স্থাপনা ভেঙ্গে জমি থেকে সরে যাবেন। তিনি মুক্তিযোদ্ধা কিনা, সে প্রশ্নের জবাবে সগর্বে বলেছিলেন ‘নিশ্চয়ই’। ভূমিদস্যু হিসাবে অভিযুক্ত হয়ে মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দিতে তার লজ্জা হচ্ছে কিনা, সে প্রশ্নের জবাব না দিয়ে বললেন তিনি এখনই স্থাপনা ভাঙ্গার নির্দেশ দেবেন। আমি বলেছিলাম তার এই সিদ্ধান্ত আমাকে একজন মুক্তিযোদ্ধাকে জেলে পাঠানোর দায় থেকে রক্ষা করল। পরবর্তীতে কক্সবাজারের ডেপুটি কমিশনার এবং পুলিশ সুপার আমাদের জানিয়েছিলেন কর্নেল অলি তার বেআইনি দখল এবং স্থাপনা গুড়িয়ে ফেলেছেন। ডিসি এবং পুলিশ সুপারকে ভর্ৎসনা করেছিলাম এই বলে যে তারা কেন আগে ব্যবস্থা নেননি? তারা বলেছিলেন আদালতের আদেশ না পেলে কর্নেল অলির স্থাপনা ভাঙ্গা কঠিন হতো। তারা যা বলতে চেয়েছিলেন, কিন্তু মুখ খুলে বলেননি, তা হলো কর্নেল অলি অত্যন্ত প্রভাবশালী লোক, যার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া তাদের জন্য সহজ ছিল না।

    সম্প্রতি বীরউত্তম খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর রফিক পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে বলেছেন যে ১৯৭১-এ চট্টগ্রামে কর্মরত তৎকালীন মেজর জিয়া ২৫ মার্চ তারিখের রাত ১১.৪৫ মিনিটে যখন ‘সোয়াত’ নামক জাহাজ থেকে পাকিস্তানি সমরাস্ত্র খালাসের জন্য পাকিস্তানি সামরিক জিপে করে এগুচ্ছিলেন, তখন মেজর রফিক তাকে সে পথ থেকে বিরত থাকতে বললে জিয়া মেজর রফিককে ভয় দেখিয়ে বলেছিলেন তিনি (জিয়া) অবশ্যই পাকিস্তানি অস্ত্র খালাস করবেন কেননা তার ওপর কর্নেল জানজোয়ার নির্দেশ রয়েছে। এর পর জিয়া সোয়াত জাহাজের দিকে ছুটে গিয়েছিলেন, যদিও তার ইচ্ছা পূরণ হয়নি, কারণ পথিমধ্যে বাঙালি সৈন্যরা জিয়ার পথ রুদ্ধ করেছিলেন।

    মেজর রফিক ১৯৭২ সালেই ‘পিপলস ভিউ’ নামক একটি সাময়িকীতে এই কথাগুলো লিপিবদ্ধ করেছিলেন। পরবর্তীতে ১৯৭৪ সালে তিনি বই আকারে সেগুলো লিখেন। ১৯৮১ সালে মেজর রফিকের বইয়ের দ্বিতীয় সংস্করণেও একই কথা লিপিবদ্ধ করা হয়।

    ১৯৮১ সালে জেনারেল এরশাদ জিয়াকে স্বাধীনতার ঘোষক বলে আইন প্রণয়ন করতে চাইলে মেজর রফিকের পুস্তকের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছিল যে ব্যক্তি ২৫ মার্চ রাত্রিতে পাকিস্তানি সমরাস্ত্র উদ্ধারে যাচ্ছিল, তাকে কী করে স্বাধীনতার ঘোষক বলা যায়? জিয়ার সাফাই গেয়ে মেজর রফিককে মিথ্যাচারী হিসাবে আখ্যায়িত করেছিলেন, কুখ্যাত রাজাকার শাহ আজিজ এবং কর্নেল আকবর, জিয়া যাদের প্রধানমন্ত্রী এবং মন্ত্রী পদে বসিয়ে মুক্তিযুদ্ধকে অবমাননা করেছিলেন।

    এরপর মুক্তিযুদ্ধকালের সেনাপ্রধান কর্নেল ওসমানী বলেছিলেন শাহ আজিজ এবং আকবর মিথ্যা বলছে, মেজর রফিক যা বলেছেন সেটাই সত্য। সংসদে মেজর রফিকের ভাষণ কর্নেল অলির গাত্রদাহের কারণ ঘটিয়েছিল বলে তিনি মেজর রফিককে মিথ্যাবাদী আখ্যায়িত করেছেন। মেজর রফিক, কর্নেল অলির লেখনির জবাবে সংসদে দাঁড়িয়েই দিয়েছেন, সমস্ত তথ্য উপাত্তসহ প্রমাণ করেছেন যে কর্নেল অলিই বেয়াদবি এবং মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছে। বঙ্গবন্ধু কর্তৃক স্বাধীনতা ঘোষণার পরেও যে জিয়া সোয়াত জাহাজ থেকে, পাকিস্তানি সমরাস্ত্র খালাসের জন্য এগুচ্ছিলেন এবং বাঙালি সৈন্যদের বাধার মুখেই সে যাত্রা পরিহার করেছিলেন, সে কথা কে না জানেন?

    কুখ্যাত রাজাকারদ্বয় শাহ আজিজ এবং কর্নেল আকবরের বক্তব্যে অবাক হওয়ার কারণ নেই কেননা এদের মুক্তিযুদ্ধবিরোধী ভূমিকার কথা সকলেই জানেন। ‘চোরের সাক্ষী মাতাল’ই হয়ে থাকে।

    ১৯৮৮ সালে আমি যখন যুক্তরাজ্য ইমিগ্রেশন অ্যাডভাইজারি সার্ভিসের আইন বিষয়ক উপ-পরিচালক তখন একদিন প্রয়াত গাফফার চৌধুরী সাহেব জেনারেল মীর শওকত আলিকে নিয়ে আমার দফতরে এসেছিলেন, আমি যাতে জেনারেল শওকতকে পরিবারসহ বিলেতে থাকার অনুমতির ব্যবস্থা করি। যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শওকত সাহেবের শংকা ছিল দেশে গেলে জেনারেল এরশাদ তাকে জেলে ঢুকাবেন। সেদিন জেনারেল শওকত রাখঢাক না রেখেই বলেছিলেন জিয়াউর রহমান কখনো মন থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা চাননি, বাঙালি সৈন্যদের ভয়ে তিনি ওপার যেতে বাধ্য হয়েছিলেন। আলাপকালে গাফফার চৌধুরী সাহেব ছাড়াও আমাদের সংস্থার তখনকার পরিচালক মাইকেল বার্নস (প্রাক্তন এমপি) সাহেবও ছিলেন।

    জিয়াউর রহমান যে সোয়াত জাহাজ থেকে পাকিস্তানি অস্ত্র খালাসের জন্য যাত্রা করেছিলেন, সে ব্যাপারে বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা কাদের সিদ্দিকী, বীর উত্তম, তার ‘স্বাধীনতা ৭১’ নামক পুস্তকের ৪৩৪-৪৩৮ পৃষ্ঠায় যা লিপিবদ্ধ করেছেন, নিম্নে তা হুবহু ছাপানো হলো। বইটি কাদের সিদ্দিকী যিনি বাঘা সিদ্দিকী নামেই বেশি পরিচিত ছিলেন, কোলকাতায় বসে ১৯৮৫ সালের জানুয়ারি মাসে প্রথম প্রকাশ করেছিলেন। দেজ পাবলিশিং হাউজ, ১৩ বঙ্কিম চ্যাটার্জি স্ট্রিট, কোলকাতা-৭০০০০৬, এর পক্ষে প্রকাশক ছিলেন সুধাংশু শেখর দে। বর্তমানে দুষ্প্রাপ্য এই বইটি আমি অবশেষে একুশে পদকপ্রাপ্ত জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক স্বদেশ রায়ের নিকট থেকে সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছি।

    “শোনা যায়, ১৯৬৫ সালের পর চট্টগ্রামে মিজো বিদ্রোহীদের প্রশিক্ষণের জন্য চীনের সহায়তায় আইউব খান যে ‘মিজো গেরিলা সাহায্য ক্যাম্প’ খুলেছিলেন তাতে প্রায় এক বৎসর ক্যাপ্টেন জিয়াউর রহমান ‘প্রশিক্ষক’ হিসাবে কর্মরত ছিলেন। ৬৫ সাল থেকে ৭০-এর জানুয়ারি, এ সুদীর্ঘ সময় তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা বিভাগের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন।

    ৭০ সালের গোড়ার দিকে, চট্টগ্রামের বেঙ্গল রেজিমেন্ট ট্রেনিং সেন্টারে ৮ নম্বর বেঙ্গল রেজিমেন্টের গোড়াপত্তন হয়। প্রায় পাঁচ বছর পর ৮ম বেঙ্গল রেজিমেন্টের (ব্যাটেলিয়ন) সহঅধিনায়ক হিসাবে আবার মেজর জিয়াউর রহমানকে বদলি করা হয়। তিনি সত্যিকার অর্থেই ৮ম বেঙ্গল রেজিমেন্টের গঠন ও শ্রীবৃদ্ধির জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করেছিলেন।

    ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ পর্যন্ত এই ৮ম বেঙ্গল রেজিমেন্ট অসম্পূর্ণ ছিল। পাঁচটি কোম্পানি নিয়ে একটি পদাতিক বাহিনী গঠিত হয়। ৭১ সালের ২৫শে মার্চ পর্যন্ত নবগঠিত ৮ম বেঙ্গল রেজিমেন্টে সাড়ে তিনটি কোম্পানি ছিল। ৭০-এর ডিসেম্বরে সাধারণ নির্বাচনের পর, পাকিস্তানের ইতিহাসে যখন এক চরম রাজনৈতিক উত্থান পতনের সূচনা হলো, তখন পর্যন্ত জিয়াউর রহমান তার রেজিমেন্ট গঠনের কাজে পুরোপুরিভাবে আত্মনিয়োগ করেছিলেন। ৭১-এর মার্চের ১৫-১৬ তারিখে জিয়াউর রহমানের ব্যাটেলিয়ানের দুটি কোম্পানি চট্টগ্রাম জেটি ও আরেকটি কোম্পানিকে কালুরঘাট সেতু পাহারার দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। এই সময় কাজের সুবিধার জন্য জিয়াউর রহমান কালুরঘাটের কাছে বিএন কোয়ার্টার ও কন্ট্রোল রুম বসান।

    ২৪শে মার্চ পর্যন্ত জিয়াউর রহমান নিরুত্তাপেই কাটান। কিন্তু ২৫শে মার্চের মধ্য রাতে ব্যাটেলিয়নের বেশ কয়েকজন সদস্য জিয়াউর রহমানের কাছে নানা ধরনের কঠিন ও ভীতিপ্রদ খবর পৌঁছে দিতে থাকেন। ঐ সময়কার চরম রাজনৈতিক উত্তেজনা ও সামরিক বিভাগের আভ্যন্তরীণ সন্দেহ, অবিশ্বাস, অসদ্ব্যবহার ও আক্রমণের প্রেক্ষিতে তাদের করণীয় কি, তা জানতে জিয়াকে বারবার অনুরোধ করতে থাকেন। ২৫শে মার্চের রাত প্রচণ্ড উত্তেজনা ও উদ্বেগের মধ্যে কাটলো। ২৬শে মার্চ সকালে ব্রিগেড হেডকোয়ার্টার থেকে জিয়াকে ডেকে পাঠানো হলো। নানা কিছু ভেবে জিয়া ব্রিগেড হেড কোয়ার্টারে যাওয়া স্থির করেন। কিন্তু তার কিছু সহকর্মী তাকে ব্রিগেড হেডকোয়ার্টারে যেতে পুনঃ পুনঃ নিষেধ করেছিলেন।

    এত অনুরোধ ও নিষেধ উপেক্ষা করেও তিনি একখানা জীপে ইবিআরসি ক্যান্টনমেন্টের দিকে এগিয়ে যেতে থাকেন। তার বেরিয়ে যাওয়ার সময় ৮ম রেজিমেন্টের কোয়ার্টার মাস্টার ক্যাপ্টেন অলি আহমেদ শিবিরে ছিলেন না। তিনি শিবিরে এসেই কমান্ডার কোথায় জানতে চান। কমান্ডার ইবিআরসি হেডকোয়ার্টারের দিকে গেছেন বলে সৈনিকরা তাকে জানালে, ক্যাপ্টেন অলি উন্মাদের মতো একটা মিলিটারি মোটর সাইকেলে ঊর্ধ্বশ্বাসে ক্যান্টনমেন্টের দিকে ছোটেন। টাইগার পাসের কাছে তিনি জিয়ার জীপের গতিরোধ করে দাঁড়ান। জিয়ার গাড়ির সামনে অলি তার মোটর সাইকেলটি ফেলে দিয়ে চালকের আসনে বসা জিয়াকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘স্যার, আপনি কোথায় যাচ্ছেন?’ জিয়া স্বাভাবিকভাবেই বললেন, ‘ক্যান্টনমেন্টে যাচ্ছি। ব্রিগেডিয়ার ডেকে পাঠিয়েছেন।’ অলি চিৎকার করে উঠেন, ‘আপনি এখনও ক্যান্টনমেন্টে যাচ্ছেন? গেলেই আপনাকে গুলি করবে। আপনি জানেন কি, গতকাল চারশ’ বাঙালি রিক্রুটকে গুলি করে হত্যা করেছে? কুমিল্লা বেঙ্গল রেজিমেন্ট লাইন জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। কুর্মীটোলা ও জয়দেবপুর বেঙ্গল রেজিমেন্টের লাইনের উপর ট্যাংক থেকে গোলাবর্ষণ করা হয়েছে। এই সমস্ত জানার পরও কোন সাহসে আপনি ক্যান্টনমেন্টে যাচ্ছেন?’

    ‘কি করবো? ক্যান্টনমেন্টে না গেলে যে কোর্ট মার্শাল হবে।’ এবার ক্যাপ্টেন অলি আহমেদ আরও উত্তেজিত হয়ে বললেন, ‘আপনি পাগল হয়ে গেছেন নাকি? কিসের কোর্ট মার্শাল? গুলি, গুলি করে মারবে ওরা। আপনি কিছুতেই ক্যান্টনমেন্টে যেতে পারবেন না,’ বলেই ক্যাপ্টেন অলি তার রিভলভার উঁচিয়ে বলেন, ‘আপনাকে এখনও কমান্ডার হিসাবে মানি। কিন্তু আপনি যদি ক্যান্টনমেন্টে যেতে চান তাহলে আমিই আপনাকে গুলি করবো। পশ্চিমাদের হাতে গুলি খেয়ে মরার চেয়ে বাঙালির হাতে গুলি খেয়ে মরে অনেক শান্তি পাবেন।’ অতিশয় আতঙ্কিত ও উত্তেজিত ক্যাপ্টেন অলি এই কথা বলেই জীপের সামনের সীটে বসে পড়েন। এবার অনুরোধ নয়। আদেশের সুরে বললেন, ‘গাড়ি ঘুরান।’ মেজর জিয়া ক্যাপ্টেন অলি আহমেদের কথামতো গাড়ি ঘুড়িয়ে নেন। তারপর তারা শহরের মধ্যে এসে কালুরঘাট ও চট্টগ্রামের রাস্তার এক পাশে একটি গাছের নিচে বসে পরবর্তী পরিকল্পনা সম্পর্কে ভাবতে শুরু করেন। এই সময় সেখানে আরো দু’জন ক্যাপ্টেন ও একজন লেফটেন্যান্ট এসে উপস্থিত হন। বেশ কয়েকজন বাঙালি সামরিক অফিসারদের দেখে খবরের কাগজের জনৈক হকার চট্টগ্রাম সংগ্রাম পরিষদ অফিসে ছুটে গিয়ে খবর দেয়। খবর পেয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও গণপরিষদ সদস্য আবদুল হান্নান, ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি মোহাম্মদ শাহজাহান ও আরো কয়েকজন এসে প্রচুর সমাদর করে তাদের সংগ্রাম পরিষদ অফিসে নিয়ে যান।

    বাঙালি সামরিক অফিসাররা তখন সংগ্রামী বাঙালিদের কাছে মহামূল্যবান। চট্টগ্রাম বেতর কেন্দ্র তখন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সংগ্রাম পরিষদের নিয়ন্ত্রণে। ইতিমধ্যেই ‘স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র’ নামে চট্টগ্রাম রেডিও স্টেশন থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণা বারবার প্রচার করা হচ্ছিল। জহুর আহমেদ চৌধুরী, এম আর সিদ্দিকী, আবদুল হান্নান, এম এ মান্নান ও অন্যান্য বেশ কয়েকজন নেতা স্বাধীনতার পক্ষে হানাদারদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে দেশবাসীকে অনুরোধ জানিয়েছেন। সেই সময় প্রভাবশালী কোন লোক পাওয়া গেলেই তাকে দিয়ে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান প্রচার করা হচ্ছিল। দু’তিনজন আনসার অ্যাডজুট্যান্ট, পুলিশের সাবেক ডিআইজি এ ধরনের কিছু লোকের আবেদনও প্রচার করা হয়েছে। এর ঠিক পরেই বেঙ্গল রেজিমেন্টের অফিসারদের পেয়ে সংগ্রাম পরিষদ নেতৃবৃন্দ যেন হাতে স্বর্গ পেয়ে যান। হান্নান সাহেব সামরিক অফিসারদের অনুরোধ করেন। ‘আপনাদের নেতা বেঙ্গল রেজিমেন্টকে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়ে একটা আবেদন প্রচার করুন।’ তখন একজন সামরিক অফিসারের আবেদন দেশবাসীর জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা বারবার সামরিক অফিসারদের বুঝিয়ে বলা হচ্ছিল। এত বুঝিয়ে বলা ও অনুরোধ করা সত্ত্বেও পাকিস্তান নামক রাষ্ট্র ও পাক-সামরিক বাহিনীর প্রতি তখন পর্যন্ত অকুণ্ঠ সমর্থক মেজর জিয়াউর রহমানের মধ্যে কোন ভাবান্তর ঘটলো না। বাঙালি সামরিক অফিসারদের মধ্যে সিনিয়র হওয়া সত্ত্বেও তিনি কোন বিবৃতি বা আবেদন প্রচারে ঘোর আপত্তি জানান। এখানেও ক্যাপ্টেন অলি আহমেদ এগিয়ে আসেন। তিনি জিয়াকে জোরের সাথে বলেন, ‘আপনি বাঙালি সৈনিকদের যুদ্ধে অংশ নেয়ার আবেদন না জানালে আমাদের মধ্যে যিনি সিনিয়র, তিনিই আবেদন রাখবেন। তবে আপনার আবেদন না জানানোর কোন কারণ খুঁজে পাই না। আমরা তো আর ক্যান্টনমেন্টে ফিরে যেতে পারছি না। আমাদের সামনে এখন দুটি পথ খোলা, হয় জয়, নয় মৃত্যু। এর মাঝামাঝি কি কোন পথ আছে? জিয়া এবারও অলি আহমেদ ও অন্য দু-তিন জন সহকর্মীর চাপাচাপিতে বিবৃতি প্রচারে রাজী হলেন। সাথে সাথে তার বক্তৃতা রেকর্ড করার জন্য একটি টেপ রেকর্ডার আনা হলো। এখানে তিনি প্রথম নিজেকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঘোষণা করে বক্তব্য রাখেন। তার ঘোষণার শুরুটা ছিল এই রকম, ‘আমি মেজর জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট হিসাবে স্বাধীনতা ঘোষণা করছি এবং যুদ্ধে অংশগ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছি।’ রেকর্ড করার সময় প্রবল উত্তেজনায় কেউ খেয়াল করেন নি জিয়া সাহেব কি বলছেন। রেডিও সেন্টারে যখন সম্প্রচার করা শুরু হলো, তখন ত্রুটিটা ধরা পড়লো। সঙ্গে সঙ্গে সম্প্রচার বন্ধ করা হলো। এ কি বলছেন? কে বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট? কে স্বাধীনতার ঘোষক? টেপ রেকর্ডার নিয়ে বেতারের লোক আবার সংগ্রাম পরিষদ অফিসে ছুটে এলো। সংগ্রাম পরিষদের নেতারাও রেডিওতে জিয়ার বক্তৃতার প্রথম লাইনটি শুনে ‘থ’ বনে যান। সাথে সাথে রেডিও স্টেশনে ফোন করা হয়, কি ব্যাপার, এটা বন্ধ কর। রেডিও স্টেশন থেকে উত্তর এলো ‘আমরা আগেই বন্ধ করে দিয়েছি। টেপ নিয়ে আপনাদের কাছে আমাদের লোক চলে গেছে।’ এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে জিয়া সাহেব বলেন, ‘আমি ব্যাপারটা ঠিক বুঝে উঠতে পারিনি, আপনারা একটা খসড়া করে দিন।’

    এবার সংগ্রাম পরিষদের নেতারা চিন্তাভাবনা করে পাঁচ/ছ লাইনের একটি খসড়া বক্তৃতা লিখে দিলেন। জিয়া বললেন, ‘আমি বেঙ্গল রেজিমেন্টের মেজর জিয়াউর রহমান বাঙালি সৈনিক ও দেশবাসীর উদ্দেশ্যে আহ্বান জানাচ্ছি। আপনারা পাক হানাদারদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। সংগ্রাম পরিষদের নেতৃত্বে বাঙালি সৈনিক যারাই আছেন, তারা অস্ত্র ধারণ করুন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান সুস্থ আছেন। তিনি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সব নির্দেশ দিয়ে চলছেন। বিশ্ববাসীর কাছে আমি আবেদন জানাচ্ছি, আপনারা আমাদের সাহায্য করুন। আল্লাহ আমাদের সহায়। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।’

    বেতারে মেজর জিয়াউর রহমানের বক্তৃতা প্রচারের পর অন্যান্য অফিসারদের নিয়ে তিনি সোজা কালুরঘাট চলে যান। সেখান থেকে কোম্পানির লোকজন নিয়ে আবার চট্টগ্রামে ফিরে এসে চট্টগ্রাম-ঢাকা সড়ক ধরে এগুতে থাকেন। ঐ সময় চট্টগ্রাম জেটিতে অবস্থানরত তার দু কোম্পানি বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈন্যদেরও উইথড্র করে সাথে নিয়ে নেন। ঢাকার দিকে এগুতে দেখে সেই সময় হয়তো চট্টগ্রামের অনেকে ভেবেছিলেন, জিয়ার নেতৃত্বে সৈন্যরা ঢাকা থেকে এগিয়ে আসা পাক বাহিনীকে বাধা দিতে এগিয়ে যাচ্ছে। আদতে কিন্তু তা হয়নি। তারা চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার দিকে কিছুদূর এগিয়ে শুভপুর ব্রিজের কাছ দিয়ে ত্রিপুরা সীমান্তের শ্রীনগর বিওপি হয়ে ভারতে প্রবেশ করে। ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়কের উপর বিখ্যাত শুভপুর ব্রিজ ভারতীয় সীমান্ত থেকে বড় জোড় তিনশ গজ। চট্টগ্রাম-ঢাকা রাস্তা এইখানেই ভারতীয় সীমান্তর সবচেয়ে কাছ দিয়ে গেছে। অফিসার ও অন্যান্য সাজ-সরঞ্জামসহ মেজর জিয়া ভারতের ভিতরে অবস্থান নেন। শুধু সাধারণ সৈনিকরা ব্রিজটি আগলে বসে থাকে। ত্রিপুরা সীমান্তের শ্রীনগর বিএসএফ অবজারভেশান পোস্ট এরিয়াতে মেজর জিয়া তার সেনাদের নিয়ে প্রায় সপ্তাহ দুই ছিলেন। এই শুভপুর ব্রিজে মেজর জিয়ার দলের সাথে হানাদারদের বেশ কয়েক বার সংঘর্ষ হয়। প্রথম দিকে দু’একবার মেজর জিয়ার দলই জয়ী হয়। কিন্তু পরবর্তী পর্যায়ে রাস্তা মুক্ত করতে হানাদাররা যখন ট্যাংক ও ভারী অস্ত্র নিয়ে হামলা করে তখন জিয়ার নেতৃত্বাধীন সৈন্যরা ভারত সীমান্ত অতিক্রম করতে বাধ্য হন।

    ২৫শে মার্চের পর এই শুভপুর ব্রিজ ছাড়া মেজর জিয়াকে আর কোথাও প্রতিরোধ কিংবা সংঘর্ষের সম্মুখীন হতে হয়নি। এইখান থেকে জিয়ার দলকে মেঘালয়ের তেলঢালা ক্যাম্পে নিয়ে আসা হয়। তেলঢালাতে তারা অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত ছিলেন। ১৯৭১ সালের এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত তেলঢালা ক্যাম্পে জিয়াউর রহমান তার নেতৃত্বে প্রায় চার হাজার সৈন্যের একটি দল গঠন করেন। যার নাম তার নামানুসারে ‘জেড’ ফোর্স রাখেন।

    অক্টোবর মাসে তেলঢালা ক্যাম্প থেকে প্রায় তিন শ’ মাইল পূর্বে সিলেটের ডাউকি সীমান্তে আবার তারা ঘাঁটি গাড়েন। এখান থেকেই পরিকল্পনা তৈরি করা হয় যে, জিয়ার নেতৃত্বাধীন দলটি শেষ যুদ্ধের সময় ওখান দিয়েই বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঢুকবে। এবং তারা সিলেট জেলা দখল নেবেন।”

    বইয়ের ৪৩৮ পৃষ্ঠায় বাঘা সিদ্দিকী বীর উত্তম যা লিখেছেন, তা নিম্নরূপ;

    “মেজর জিয়া ২৮-২৯শে মার্চ চার-পাঁচশ সৈনিক নিয়ে ভারতের শ্রীনগর বিওপিতে পৌঁছে ছিলেন। নয় মাস পর ১৯৭১ সালের ১৮ই ডিসেম্বর চার-সাড়ে চার হাজার সৈন্যসহ স্বাধীন বাংলার সিলেটে অবস্থান নেন। এর মাঝেও দুচারটি ঘটনা নিশ্চয়ই রয়েছে। এটা প্রমাণিত সত্য যে, তিনি ২৫ শে মার্চ রাত পর্যন্ত পাক সেনাবাহিনীর একজন অনুগত অফিসার ছিলেন। যার পুরস্কার হিসাবে তিনি বিদেশে নানা স্থানে পাক সেনাবাহিনীর ‘গোপনীয় ব্যাপার সংক্রান্ত’ বিষয়ে প্রতিনিধিত্ব করতে পেরেছিলেন। আরও একটি ঘটনা উল্লেখ না করলেই নয়। মেজর জিয়া যখন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে প্রচার ও যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন তার দু’সন্তান ও স্ত্রী ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে ছিলেন। বেঙ্গল রেজিমেন্টের অসংখ্য অফিসার ও জোয়ানদের স্ত্রী-পুত্র-পরিজনদের উপর হানাদাররা অকথ্য অত্যাচার চালিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করলেও জিয়ার স্ত্রী ও দু’সন্তান কুর্মীটোলা ক্যান্টনমেন্টে অত্যন্ত সম্মানজনক অবস্থায় ছিলেন।”

    একটি কৌতুহলী বিষয় হলো এই যে, জিয়াউর রহমানকে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের হিরো হিসাবে চিহ্নিত করতে ধিকৃত রাজাকার শাহ আজিজ এবং কর্নেল আকবরসহ তারাই অতি আগ্রহী ছিল যারা মুক্তিযুদ্ধ তথা পাকিস্তান ভেঙ্গে ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশ সৃষ্টির বিরুদ্ধে ছিল। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তারা সব পালিয়েছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধু হত্যার পর জিয়াউর রহমানকে ত্রাণকর্তা হিসাবে পেয়ে তার ছত্রছায়ায় এক হয়েছিল দেশকে আবার পাকিস্তানে রূপান্তরিত করতে।

    যারা জিয়াকে হিরো বানাতে চায় তারা কি বলতে পারবে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে ক্ষমতা দখল করার সাথে সাথেই কেন জিয়া মুক্তিযুদ্ধের স্লোগান জয় বাংলাকে দেশান্তরিত করেছিল, কুখ্যাত রাজাকার শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রীর পদ দিয়েছিল, কেন কর্নেল মোস্তাফিজ, সোলেমান, কর্নেল আকবর, বিচারপতি সাত্তার, জাদু মিঞা, রহমান বিশ্বাসসহ একঝাক পরিচিত রাজাকার দিয়ে তার অবৈধ মন্ত্রীসভা গঠন করেছিল, কেন জিয়া সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের নাম এবং বৈশিষ্ট্য পাল্টে দিয়েছিল, কেন বাংলাদেশ বেতার, বিমান প্রভৃতি বাংলা শব্দের পরিবর্তে অ-বাংলা শব্দ বসিয়ে ছিল?

    যে ব্যক্তি রাষ্ট্রের জমি দখল করতে পারে, সে মিথ্যাচারী হবে, এটা তো অস্বাভাবিক নয়। ১৯৭১-এ তার ভূমিকা যাই ছিল না কেন, লোভের তাড়নায় সে সবই করতে পারে, তা তার ভূমি দখল কাণ্ডই প্রমাণ করেছে। প্রশ্ন হলো, জিয়ার পক্ষে মিথ্যাচার চালানোর জন্য সে কী পেয়েছিল জিয়া বা তার অনুসারীদের কাছ থেকে?

    মুক্তিযুদ্ধ গবেষক অধ্যাপক মুনতাসির মামুন বলে থাকেন মুক্তিযোদ্ধারা রাজাকার হয়েছে, কিন্তু রাজাকার মুক্তিযোদ্ধা হয়নি। কর্নেল অলির ’৭৫ পরবর্তী অবস্থান তারই এক বড় প্রমাণ। তাছাড়া সমস্ত পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনায় এটা পরিস্কার যে কর্নেল অলি আদর্শগত কারণে মুক্তিযুদ্ধে যায়নি, গিয়েছিল পাকিস্তানি সৈন্যদের হাতে মৃত্যুবরণ এড়াতে।

  44. মাসুদ করিম - ৩১ মে ২০২৩ (৪:১১ পূর্বাহ্ণ)

    A General, A Referendum . . . and the Dismantling of A State
    https://theconfluence.blog/a-general-a-referendum-and-the-dismantling-of-a-state/
    by Syed Badrul Ahsan

    Ziaur Rahman, Bir Uttam was appointed as army chief of staff, after K M Shafiullah resigned on 15th August, 1975 when Bangabandhu was killed by some military officers. Later he became Chief Martial Law Administrator on 6 November 1975.

    On 30 May 1977, political illegitimacy dug deeper roots in Bangladesh. Less than two years after the assassination of Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman and his family and the murder of the Mujibnagar leaders in prison, General Ziaur Rahman was on his way to tightening his grip on power.

    On the day, a so-called referendum Zia had earlier called in order to gain public approval of his seizure of the presidency a month earlier resulted in an improbable outcome. But, again, it was no surprise that Zia and his acolytes claimed that Bangladesh’s first military ruler had obtained 98.8 percent of support from the electorate.

    And it was no surprise because the general was simply following in the footsteps of earlier dictators in other countries. Dictators then and later have always had a way of reassuring themselves, through applications of the machinery of disinformation, machinery operated by their sycophants, that they enjoy huge public support.

    As the regime was to claim, Zia obtained the support of 33,400, 870 voters. In other words, to the question, ‘Do you have confidence in President Major General Ziaur Rahman BU and the policies and programmes adopted by him?’, all this large segment of the electorate said yes. And the ‘no’ box garnered no more than 378,898 votes, or a mere 1.1 per cent of the vote.
    A Field Day Manufacturing Public Support

    The surprising bit in the story is that the results of the referendum were placed in the public domain against a background of voting centres remaining predictably empty. No enthusiasm was observed in the country about the vote. Besides, with little opportunity for supporters of the No vote to campaign against the measure, the regime had a field day manufacturing public support for itself.

    On 30 May 1977, therefore, Bangladesh was pushed into an area of darkness that was to leave the nation reeling from the wounds inflicted on it by a regime which had already demonstrated a sinister determination to undermine the ethos of the country.

    General Zia, having turfed out Justice Abu Sadat Mohammad Sayem from the presidency on 21 April – thereby taking a leaf out of the book of Pakistan’s General Ayub Khan, who had removed President Iskandar Mirza at gunpoint in October 1958 before claiming the presidency for himself – needed to acquire some sort of legitimacy for his seizure of power.

    The referendum was his way of informing himself that his hold on power had attained a formal structure. But, then again, Zia had exercised power as deputy martial law administrator since 7 November 1975 when his loyalists in the army manoeuvred his rise to the top through the murder of General Khaled Musharraf and two other military officers.

    The Power Structure Shaping Up

    In the power structure shaping up, though President Sayem was nominally the head of state and chief martial law administrator and the chiefs of the air force and navy served as deputy martial law administrators along with Zia, it was Zia who became the public face of a regime that would soon go into the task of dismantling Bangladesh as it had come about in December 1971.

    Observe the steps to regression, indeed to the decline of the secular Bengali state. On Zia’s watch, the Collaborators Order of 1972 was repealed in December 1975. In February 1976, the right-wing journalist Khondokar Abdul Hamid, who was to play a prominent role in the Zia regime, for the first time publicly spelt out the regime’s intention to impose ‘Bangladeshi nationalism’ on the country in direct contravention of Bengali nationalism. Hamid floated the idea at the Ekushey February programme organised by the Bangla Academy.

    The country was on a slide, with the values associated with the War of Liberation coming under increasing assault by the dictatorship. The principles of socialism and secularism, two of the four fundamental pillars of the state, were prised out of the constitution by dictatorial fiat.

    In early 1976, in a clear blow to the secular underpinnings of the state, a seerat conference, presided over by air force chief M.G. Tawab, who had been parachuted in from retirement in Germany days after the 15 August coup, opened at Suhrawardy Udyan. Every indication of the country being pushed into a direction at variance with its ideology was there.

    It is against such a background of political regression resting on illegitimacy that the 30 May 1977 referendum needs to be analysed. Following on the murder and mayhem of November 1975, the referendum was but Zia’s second move to consolidate his hold on the state. Along the way he had had Colonel Abu Taher, who had engineered his rise to power through liquidating Khaled Musharraf, court-martialled and put to death in July 1976.
    An Era of Unbridled Authoritarianism

    And all the while his regime had busied itself in the odious job of pushing Bangladesh’s history under the rug and through that process airbrushing Bangabandhu, the Mujibnagar administration, indeed the principles associated with the War of Liberation out of the picture.

    The 30 May referendum was a carefully crafted measure to strengthen Zia’s hold on politics. Nothing of even the remotely democratic characterised the move. The hope that under President Sayem, who had been installed in office by General Khaled Musharraf a mere day before darkness descended on the nation on 7 November 1975, the country could slowly but surely make its way back to democracy was belied.

    In effect, the yes-no vote and a conscious pushing aside of genuine public perceptions about the regime were the very first step toward the imposition of an era of unbridled authoritarianism in the country. Worse, General Zia would preside over, after May 1977, a process of rehabilitation of the political collaborators of the 1971 Pakistan occupation army and have them make their cheerful way into the political landscape of a country they had virulently and violently opposed in 1971.

    If in 1971 the people of Bangladesh were engaged in a life and death struggle against the Pakistan occupation army, in the Zia years it was a ceaseless struggle for them to prevent the regime from undermining the state through its dictatorial measures. Zia would, after May 1977, seek newer means of strengthening his grip on the country.
    Ziaur Rahman’s Presidential Election in June 1978

    And that process would be a presidential election in June 1978, when the state machinery would assist Zia and the junta in helping to defeat General M.A.G. Osmany, the opposition candidate, at the ballot box. And then would come the formation of the Bangladesh Nationalist Party, based on a brand of politics that was a wholesale repudiation of the spirit of 1971.

    Zia’s objectives were revealed page by page as time went by. He had parliament, elected in February 1979 and in which his BNP held the majority, rubber stamp the notorious Indemnity Ordinance, aimed at giving immunity from prosecution to the assassins of the Father of the Nation and so have the rule of law subverted, into the fifth amendment to the constitution.

    Nowhere in the world had a law been enacted and made part of the constitution to provide protection to assassins, but here was the Zia regime doing precisely that. Worse, a good number of Bangabandhu’s assassins were sent off abroad to serve as diplomats at various Bangladesh missions abroad.

    In the Zia years, Bangladesh made its way back to Pakistan-era politics minus the Pakistan state. Through a systematic process of historical distortion, through paving the way for the country to pass under long-term and dictatorial rule by the military, General Zia ensured a retreat of democratic forces.

    Additionally, his regime carefully prepared the ground for a sidelining of freedom fighter officers in the armed forces and the rise of officers repatriated from Pakistan after the war. Again, in a style reminiscent of the Ayub Khan era in Pakistan, the Zia regime sponsored the emergence of a civil-military bureaucratic structure in state administration, to the detriment of national politics.
    Making Politics Difficult for the Politicians

    Bangladesh, as history has demonstrated all too well, existed in shaky form in the Zia years. General Zia once arrogantly exclaimed that he would make politics difficult for politicians. He did something more grievous: he struck down the ideals associated with democratic politics.

    Promise of power and pelf was a weapon the regime liberally employed in luring leftist as well as right-wing politicians into the BNP. The rise of the political turncoat became an embarrassing national reality in the Zia years.

    On 30 May 1977, General Ziaur Rahman rounded out his ambition, in questionable manner, of commandeering the state of Bangladesh through imposing himself on the country.

    Four years to the day, on 30 May 1981, his life came to a violent end in a putsch in Chittagong. In between, much blood had flowed, many lives had come to a sudden end, state principles had been turned on their head and democratic politics had become fugitive.

    That referendum initiated an egregious trend . The corruption of politics, the process of voting being made a mockery of, the undermining of fundamental rights and the flouting of the rule of law — all of this was set in motion on that day in May forty-six years ago.

  45. মাসুদ করিম - ৩১ মে ২০২৩ (২:৪৬ অপরাহ্ণ)

    সত্য কখনও চাপা থাকে না
    https://www.banglatribune.com/columns/801397/%E0%A6%B8%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%AF-%E0%A6%95%E0%A6%96%E0%A6%A8%E0%A6%93-%E0%A6%9A%E0%A6%BE%E0%A6%AA%E0%A6%BE-%E0%A6%A5%E0%A6%BE%E0%A6%95%E0%A7%87-%E0%A6%A8%E0%A6%BE
    আবদুল মান্নান

    বিয়াল্লিশ-চল্লিশ বছর আগে ১৯৮১ সালের ৩০ মে বাংলাদেশের প্রথম সেনা শাসক বিএনপি নামক দলটির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান এক সামরিক অভ্যুত্থানে চট্টগ্রামে নিহত হন। যে কোনও অনভিপ্রেত মৃত্যুই দুঃখজনক, জিয়ারটাও তাই। একজন মানুষের মৃত্যুর পর তার গুণমুগ্ধরা তার স্মৃতি তর্পন করে অনেক ভালো ভালো কথা বলবেন তাতেও কোনও আপত্তি নেই। এই সব মানুষদের মধ্যে নিজের অনুসারিরা থাকবেন তাও প্রত্যাশিত। তবে সেই অনুসারিরা যদি দেশের একটি বড় মাপের প্রগতিশীল ঝাণ্ডাধারি মিডিয়াকে বেশ সাচ্ছন্দের সঙ্গে ব্যবহার করতে পারেন তাহলে তো কথা উঠবেই। মিডিয়াটি শুধু প্রগতিশীলের দাবিদারই নয় তারা বেশ গর্ব করে বলে তারা সব সময় নিরপেক্ষ ও সত্য প্রকাশের জন্য অঙ্গিকারবদ্ধ। যে মিডিয়ার কথা বলছি তা একটি প্রিন্ট মিডিয়া; যার পাঠক অসংখ্য। তাদের রাজনৈতিক দর্শন হচ্ছে শেখ হাসিনা ছাড়া যে কেউ দেশ শাসন করুক তাতে তাদের কোনও আপত্তি নেই।

    এক এগারোর পর তারা তাদের এই মতবাদ প্রতিষ্ঠা করার জন্য বেশ প্রচার চালিয়েছে। এতদিনেও তাদের দৃষ্টিভঙ্গির কোনও হেরফের হয়নি।

    ‘সৈনিক জিয়া’ আর ‘রাজনীতির জিয়া’ কেমন মানুষ ছিলেন তা নিয়ে পণ্ডিতজনেরা অনেক লেখালেখি করেছেন। কারও মতে তিনি একজন ফেরেস্তা ছিলেন আর কেউ কেউ মনে করেন তিনি বাংলাদেশে সব কিছু ধ্বংস করে দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে যারা চর্চা করে তারাও এমন কথা বলেন বা লেখেন। বঙ্গবন্ধুর সাথে জিয়া কোনোভাবেই তুলনীয় নয়। বঙ্গবন্ধুর তাঁর কর্মের ফলে বিশ্বের ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন। যেমন আছেন থমাস জেফারসন, নেলসন ম্যান্ডেলা বা মহাত্মা গান্ধী। বাস্তব কারণেই জিয়ার পক্ষে তা সম্ভব নয়। জিয়া তো মৃত, অনেক মানুষ জীবদ্দশায় তাদের কর্মের কারণে বিশ্বের মানুষের কাছে নিন্দিত হয়ে পড়েন। গত ২৭ তারিখ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এক সময়ের দাপুটে জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা ও পররাষ্ট্র সচিব হেনরি কিসিঞ্জার তার একশতম জন্ম দিবস পালন করেছেন। যে মানুষটি একশত বছর বেঁচে থাকেন তার এমন একটি জন্মদিনে দুনিয়া জুড়ে না হোক তার দেশে অন্তত অনেক ভালোভাবে চর্চিত হতো। তার বদলে কী হলো? সেদিন বা তারও কয়েকদিন আগে হতে সারা বিশ্বে চর্চা হতে শুরু করলো কিসিঞ্জার কত বড় ‘বদমানুষ’ ছিলেন, তিনি কত কত দেশে সরকার উৎখাতের সাথে জড়িত ছিলেন, কতজন সরকার প্রধান হত্যার জন্য তিনি দায়ী আর এশিয়া, আফ্রিকা আর লাটিন আছে তাজ্জবের কথা বটে। তবে জিয়া আর কিসিঞ্জারকে এক পাল্লায় মাপা ঠিক হবে না।

    যে প্রিন্ট মিডিয়ার কথা দিয়ে শুরু করেছি তার অনলাইন ভার্সনে ৩০ মে প্রকাশিত হয়েছে জিয়া কেন অমর হয়ে থাকবেন সেই প্রসঙ্গে একজন জিয়া ভক্তের লেখা। লেখক লিখেছেন জিয়া তার খাল কাটা আর বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির জন্য নাকি মানুষের হৃদয়ে অমর হয়ে থাকবেন। তিনি আরও লিখেছেন ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ জিয়া চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন।

    ওই মিডিয়ার প্রিন্ট ভার্সনে এমন একটা ‘গুরুত্বপূর্ণ’ লেখার স্থান হয়নি। স্থান হয়েছে অন্য আর একটি লেখা যার বিষয় হচ্ছে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হলেও তা গ্রহণযোগ্য হয়নি কারণ তাতে বিএনপি অংশগ্রহণ করেনি।

    প্রয়াত জিয়াকে খাটো না করেও কিছু সত্য কথাতো বলাই যায়। জিয়া ১৯৭১ সালের ২৫/২৬ তারিখ রাত পর্যন্ত পাকিস্তান সেনা বাহিনীর একজন অনুগত কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি বাঙালি নিধনের জন্য পাকিস্তান সেনাবাহিনীর জন্য চট্টগ্রাম বন্দরে সোয়াত জাহাজে আনা অস্ত্রশস্ত্র খালাসের জন্য বেশ তৎপর ছিলেন। এরই মধ্যে ইপিআর-এ দায়িত্ব পালনরত ক্যাপ্টেন রফিক (পরবর্তীকালে মেজর রফিক, বীর উত্তম) পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে চট্টগ্রামের রেলওয়ে পাহাড়ের ওপর অবস্থান নিয়েছেন। জিয়া রাত এগারোটার কিছু পর চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে বাঙালিদের দেওয়া ব্যারিকেড সরাতে ব্যস্ত। এমন সময় লে. অলি আহম্মদ (পরবর্তীকালে কর্নেল, বীর বিক্রম) এসে জিয়াকে খবর দেন ঢাকায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষিত হয়েছে সুতরাং তিনি যেন ফিরে আসেন। জিয়া ষোলশহরে অবস্থানরত তার ইউনিট ৮ম ইস্ট বেঙ্গলে ফিরে আসেন। এসে তিনি তার কমান্ডিং অফিসার কর্নেল জানজুয়াকে গ্রেফতার করে নিজে বাঙালি সৈনিকদের নিয়ে বের হয়ে পড়েন এবং কালুর ঘাট সেতু পার হয়ে ফটিকছড়ির করেলডেঙ্গা পাহাড় পার হয়ে ভারতে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। জানজুয়া পরবর্তীকালে পাকিস্তানের সেনা প্রধান হয়েছিলেন। এসব তথ্য ইতিহাসে লিপিবদ্ধ আছে।

    রফিকুল ইসলামের (বীর উত্তম) বই ‘লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে’ এই সব কথা বিস্তারিতভাবে উল্লেখিত আছে। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ দুপুর বেলা আওয়ামী লীগ নেতা এম এ হান্নান চট্টগ্রাম বেতারের কালুর ঘাট কেন্দ্র থেকে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণাটি পড়ে শোনান। পরদিন, ২৭ তারিখ জিয়াকে করেলডেঙ্গা পাহাড় হতে অনেকটা জোর পূর্বক ধরে এনে বেতার হতে এই ঘোষণা পাঠ করান আওয়ামী লীগ নেতা আতাউর রহমান খান কায়সারের নেতৃত্বে কয়েকজন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ। এই সব তথ্য আছে একাত্তরের শব্দ সৈনিক বেলাল মোহাম্মদের ‘স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র’ গ্রন্থে।

    জিয়া প্রথমে নিজের পক্ষে এই ঘোষণা দেন। এর পরপরই চট্টগ্রামের বিশিষ্ট শিল্পপতি এ কে খান চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগের নেতাদের ফোন করে জানতে চান কে এই জিয়া? তিনি এভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়ার কে? কে দিলো এই অধিকার? এমন একটা ঘোষণা দেওয়ার একমাত্র অধিকার আছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের। এর কিছু পর জিয়া বঙ্গবন্ধুর পক্ষে পুনরায় এই ঘোষণা পাঠ করেন। জিয়ার পুরো ঘোষণাই ছিল ইংরেজিতে। জিয়া বাংলা পড়তে পারতেন না।

    বাংলাদেশ স্বাধীন হলে বঙ্গবন্ধু জিয়ার জন্য সেনা বাহিনীতে একটি উপ-সেনা প্রধানের পদ সৃষ্টি করেন। ওই পদে তিনি প্রথম ও শেষ পদায়িত ব্যক্তি। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ৮২ দিনের মাথায় জিয়া খন্দকার মোশতাক আহমেদকে ক্ষমতাচ্যুত করে নিজে ক্ষমতা দখল করেন। ‘সাক্ষী গোপাল’ রাষ্ট্রপতি হিসেবে অধিষ্ঠিত করেন বঙ্গবন্ধু কর্তৃক নিয়োগকৃত দেশের প্রথম প্রধান বিচারপতি এ এস এম সায়েমকে। বঙ্গবন্ধুর ঘাতকদের কোনও আদালতে বিচার করা যাবে না মর্মে মোশতাক কর্তৃক জারিকৃত অধ্যাদেশ আইনটি সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী হিসেবে পরবর্তীকালে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করে এক ন্যাক্কারজনক অধ্যায়ের সূচনা করেন জিয়া। এরপর বঙ্গবন্ধুকে হত্যাকারি সকল খুনিদের বিদেশে বাংলাদেশের মিশনে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করেন।

    জিয়া বহুদলীয় রাজনীতি প্রবর্তনের নামে দেশে স্বাধীনতা বিরোধী সকল রাজনৈতিক দলকে রাজনীতি করার সুযোগ করে দেন। দেশের সংবিধানের চার মূলনীতির ধর্মনিরপেক্ষতাকে সংবিধান থেকে বাতিল করে ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময় অর্জিত একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে পরিণত করেন।

    ‘বঙ্গবন্ধ’ বা ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেওয়া নিষিদ্ধ হয় জিয়ার আমলে। ১৯৭৭ সালে জিয়া রাষ্ট্রপতি সায়েমকে বন্দুকের নলের মুখে পদত্যাগ করতে বাধ্য করে নিজেই রাষ্ট্রপতির পদটি দখল করেন। সাথে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও সেনা প্রধান। বিশ্বে একই সঙ্গে রাষ্ট্রের তিনটি পদ গ্রহণ করে তিনি নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেন। একই বছরের ৩০ মে তিনি আরও এক নজিরবিহীন ‘হ্যাঁ’ ‘না’ ভোটের ব্যবস্থা করে দেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে তছনছ করে দেন। ১৯৭৯ সালে আর এক তামাশার সংসদ নির্বাচনের ব্যবস্থা করে একাত্তরের ঘাতকদের সংসদে প্রবেশ করার সুযোগ করে দেন জিয়া। সেই সংসদে শাহ আজিজকে দেশের প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন। এই শাহ আজিজ মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানের পক্ষে কথা বলতে একটি দলের নেতৃত্ব দিয়ে জাতিসংঘে গিয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কথা বলতে। জয়পুরহাটের কসাই আবদুল আলিম জিয়ার মন্ত্রী সভায় ঠাঁই পেয়েছিলেন। একাত্তরে ঘাতকদের শিরোমনী জামায়াতের আমিরকে জিয়া বাংলাদেশে প্রবেশ করার অনুমতি দিয়ে জামায়াতের অঘোষিত আমিরের দায়িত্ব পালন করার সুযোগ করে দেন জিয়া।

    ১৯৭৭ সালের অক্টোবর মাসে ঢাকা সেনানিবাস ও তেজগাঁও বিমান বন্দরে সেনা ও বিমান বাহিনীর কিছু সদস্য এক অভ্যুত্থানের চেষ্টা করে যা জিয়ার অনুগত সেনারা তা ব্যর্থ করে দেয়। এরপর শুরু হয় সেনা ও বিমান বাহিনীতে এক ভয়াবহ গণহত্যা। এই অভ্যুত্থানের সঙ্গে জড়িত বলে অভিযুক্ত করে বিচারের নামে গোপন ট্রাইব্যুনাল বসিয়ে প্রাপ্ত হিসাব মতে প্রায় এগারশত সেনা ও বিমান বাহিনীর সদস্যকে জিয়া নির্মমভাবে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করেন। আরও মর্মান্তিক হচ্ছে এই হতভাগ্যদের লাশগুলো পর্যন্ত তাদের পরিবারবর্গ ফেরত পায়নি। তাদের কোথায় কবর দেওয়া হয়েছে তাও জানানো হয়নি। যাদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়েছে তাদের আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনও সুযোগ ছিল না। এসব তথ্য মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের নথিতে লিপিবদ্ধ আছে। সেই হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে সে সময়ের বিশ্বের অনেক গণমাধ্যমে সংবাদ হিসেবে প্রচারিত ও প্রকাশিত হয়েছিল।

    আজকের এই রচনা জিয়ার আমলে তার কূকীর্তির ফিরিস্তি দেওয়ার জন্য নয় বরং জিয়াকে কেন এই দেশের সচেতন মানুষ মনে রাখবে তা তুলে ধরা। জিয়াকে মানুষ তার খাল কাটার বা বৃক্ষ রোপণের জন্য মনে রাখবে না। মনে রাখবে এই দেশের রাজনীতিকে বিষাক্ত করার জন্য, তার অপকর্মের জন্য যেভাবে মানুষ এক সময়ের যুক্তরাষ্ট্রের ডাকসাইটে পররাষ্ট্র মন্ত্রীকে তাঁর শততম জন্মদিনে মনে রেখেছে। সত্য কখনও চাপা থাকে না।

  46. মাসুদ করিম - ৩১ মে ২০২৩ (৫:০৭ অপরাহ্ণ)

    রহস্যময় মাহমুদ হোসেন ও কালুরঘাট
    https://bangla.bdnews24.com/opinion_bn/archives/16312
    অমি রহমান পিয়াল

    কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রের (ইটস জাস্ট আ ট্রান্সমিটার) উদ্যোক্তা এবং জিয়াকে এতে সম্পৃক্ত করার পেছনে আছেন একজন অবাঙালি! অবিশ্বাস্য, তাই না? রহস্যময় এই চরিত্রের নাম মাহমুদ হোসেন। তিনি নায়ক না খলনায়ক তা মূল্যায়িত হওয়ার আগেই মৃত্যুবরণ করেছেন; তবে তাতে রহস্যটা মেটেনি। বাস্তবতা হচ্ছে, ২৬ মার্চ রাত দশটায় ‘হ্যালো ম্যানকাইন্ড’ বলে ভরাট কণ্ঠের উচ্চারণে কালুরঘাট ট্রান্সমিটারটি আবারও সচল করেছিলেন মাহমুদ হোসেন। মৃত্যুর আগপর্যন্ত তার তৎপরতায় বোঝা গেছে, তিনি আসলে সাহায্য করতে চেয়েছিলেন বাঙালিদের। তবে ঠিক কীভাবে সেটি রহস্যই রয়ে গেছে।

    শুরু হোক মাহমুদ হোসেনের রহস্যময়তার। আরম্ভ করছি কালুরঘাটে সে সময় উপস্থিত এবং জিয়ার অন্যতম সহচর মীর শওকত আলীর স্মৃতিচারণ দিয়ে—

    ”…কক্সবাজার যাওয়ার পথে কালুরঘাট ব্রিজ পেরুলেই রাস্তাটা একটা ঢালের তীক্ষ্ম বাঁক নিয়েছে। তারপর এগিয়ে গেছে সোজা পটিয়া, দুলাহাজরা এবং কক্সবাজার হয়ে মূল ভুখণ্ডের সর্বদক্ষিণের প্রান্ত টেকনাফের দিকে। ঢালের শেষ মাথায়, যেখানে রাস্তাটা আবার সোজা হয়েছে, একটা পেট্রোল পাম্প আছে। পাম্পটা ইতোমধ্যে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল, অন্ধকারে ডুবে ছিল জায়গাটা। একপাশে কিছু গাছের গুঁড়ি স্তূপাকারে রাখা, কিছু খালি বাসও ছিলও এখানে। পলায়নপর ড্রাইভাররা ফেলে রেখে গিয়েছিল। পাম্প স্টেশনের আশেপাশে গোটাকতক গাড়ি আর পিকআপও ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা ছিল। ক্রমশ রাত ঘনিয়ে এল।

    রাত তখন আটটা। একটা গুঁড়ির উপর বসে কথা বলছিলাম আমি আর অলি। একটা বাসের ভেতর বসে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন জিয়া। হঠাৎ একটা লোককে এগিয়ে আসতে দেখলাম আমরা। মোটামুটি দীর্ঘকায়, চমৎকার চেহারা, মাথায় লম্বা চুল, বয়স মধ্য ত্রিশের মতো হবে। আগন্তুক আমাদের কাছে এসে জানালেন, জিয়ার খোঁজ করছেন তিনি। মুখ চাওয়াচাওয়ি করলাম আমি আর অলি। কারণ ওই অবস্থায় ব্যাপারটা কেমন যেন রহস্যময় মনে হচ্ছিল।

    যাহোক, আমরা তার পরিচয় জানতে চাইলাম; জিয়াকে তিনি চেনেন কীভাবে। কিন্তু পরিচয় বা উদ্দেশ্য জানাতে রাজি হলেন না ভদ্রলোক। জিয়ার সঙ্গে দেখা করার জন্য জোর করলেন। আমি চমৎকার আমেরিকান উচ্চারণ ভঙ্গীতে আলাপরত আগন্তুককে নিয়ে ব্যস্ত। ঠিক তখন ক্যাপ্টেন অলি গিয়ে জিয়াকে নবাগতের উপস্থিতির কথা জানালেন। একটু বাদেই অলি ফিরে এসে বললেন, ভদ্রলোককে বাসের ভেতর নিয়ে যেতে বলেছেন জিয়া।

    আগন্তুককে নিয়ে আমরা বাসে অপেক্ষারত জিয়ার কাছে এলাম। জিয়া আমাদের দুজনকে বেরিয়ে যেতে ইশারা করলেন। আগন্তুককে আগেই তল্লাশি করা হয়েছিল, জিয়ার একখানা ফটোগ্রাফ ছাড়া আর কিছু পাওয়া যায়নি তার কাছে। আগন্তুকের সঙ্গে জিয়াকে একা রেখে বেরিয়ে এলাম আমরা।…”

    (মুক্তিযুদ্ধের সূচনায় প্রথম প্রতিরোধ: লে.জে মীর শওকত আলী; গোলাম মোস্তফা সম্পাদিত ‘অনন্য জিয়াউর রহমান’, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, আগস্ট ২০০৪)

    ২৭ মার্চের সে রাতের ঘণ্টাখানেক একান্ত আলাপচারিতার পর আগন্তুক যখন বেরিয়ে গেলেন, জিয়া তার পরিচয় দিলেন সঙ্গীদের। লোকটা আমাদের বন্ধু, আমাদের একটা উপকার করতে চায়। কী উপকার, কী তার ধরন সে আলোচনায় একটু পরেই আসছি। কিন্তু মীর শওকতের লেখায় বা আর কোথাও সেই ফটোগ্রাফের রহস্য মেলে না। কীভাবে একজন বিদেশির বুকপকেটে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একজন অফিসারের ছবি এল তা জানা হয় না আমাদের। তার আগেই অবশ্য বিপ্লবী স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে জিয়া বঙ্গবন্ধুর পক্ষে তার স্বাধীনতার প্রথম ঘোষণাটা পড়ে ফেলেছেন।

    তবে জিয়াই প্রথম নন। চট্টগ্রাম শহরে প্রতিরোধ লড়াইটা ঢাকার ঘণ্টাকয়েক আগেই শুরু হয়ে গিয়েছিল। এর নেতৃত্বে ছিলেন ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলসের ক্যাপ্টেন রফিক। ২৫ মার্চ রাতে জিয়া যখন পরিস্থিতি আরও ভালো করে বোঝার জন্য ৮ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈন্যদের নিয়ে পটিয়ার দিকে সরে গেছেন (চট্টগ্রাম থেকে প্রায় দুই ঘণ্টার পথ), রফিক তাঁর সীমিত লোকবল ও সামর্থ্য নিয়েই জোর লড়াই লড়ছেন। সেদিন রাত দুটোয় রেলওয়ে হিলে রফিকের ট্যাকটিকাল হেডকোয়ার্টারে আমরা একই আগন্তুকের দেখা পাই।

    আগন্তুকের নাম বা পরিচয় রফিক দেননি। মুক্তিযুদ্ধের ওপর লেখা তাঁর ‘লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে’ বইতে আমরা জানতে পারি, একটি বিদেশি রাষ্ট্রের তরফে তাঁকে সামরিক সাহায্যের প্রস্তাব দেন ব্যক্তিটি। শর্ত তার সঙ্গে কক্সবাজার যেতে হবে। ‘আমি যেতে পারব না, আমি ছাড়া এখানে আর কোনো অফিসার নেই’– রফিকের প্রত্যাখ্যানের পর অপরিচিত লোকটি তাঁকে বিকল্প প্রস্তাব দেন রেডিওতে ভাষণ দেওয়ার। আগের গ্রাউন্ডে এবারও প্রত্যাখ্যান করলেন রফিক। বরং একটি টেপরেকর্ডার এনে তাঁর ভাষণ রেকর্ড করে নেওয়ার পাল্টা প্রস্তাব দিলেন।

    রফিক লিখেছেন:

    ”…. এরপরেও অপরিচিত আগন্তুক তার সঙ্গে যাওয়ার জন্য আমার উপর এত চাপ সৃষ্টি করতে থাকেন যে আমি খুবই সন্দিহান হয়ে পড়লাম। পুরা বিষয়টা পাকিস্তানিদের ফাঁদ হওয়া বিচিত্র নয়– আমি ভাবলাম। আমাকে রাজি করাতে না পেরে তিনি রেকর্ডিং যন্ত্রপাতি নিয়ে আবার আসার প্রতিশ্রুতি দিয়ে চলে গেলেন। কিন্তু ভদ্রলোক আর কখনও ফিরে আসেননি। পরে আমি জানতে পেরেছিলাম যে তিনি বাঙালি সামরিক বাহিনীর সদস্যদের অন্য একটি দলের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং তাদেরকে কক্সবাজারের দিকে যাওয়ার জন্য প্রলুব্ধ করেছিলেন। হয়তো কক্সবাজারের দিকে যাওয়ার উদ্দেশ্য ছিল যুদ্ধের স্থান থেকে বাঙালি সৈন্যদেরকে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া। শেষ পর্যন্ত জনগণ অবশ্য তাকে সন্দেহজনক কার্যকলাপের কারণে মেরে ফেলে। তবে তার এসব কার্যকলাপের পেছনে আসল উদ্দেশ্য কী ছিল সেটা হয়তো আর কখনও-ই জানা যাবে না।”

    এ পর্যন্ত সবাই ‘আগন্তুক’ হিসেবেই তার পরিচয় দিয়েছেন; সেটা আরও রহস্যময় করে তুলেছেন বেলাল মোহাম্মদ নিজে তার পরিচয় গোপন করে। অবশ্য ‘মাহমুদ হোসেন’ নামে আমাদের আলোচিত রহস্যপুরুষটির জাতীয়তা ও পরিচিতি সম্পর্কে পরস্পরবিরোধী তথ্য রয়েছে। মীর শওকত তার চোস্ত আমেরিকান ইংরেজিতে মুগ্ধ; রফিকের মনেই হয়নি তিনি বাঙালি। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সফল রূপকার বেলাল মোহাম্মদ নিশ্চিত করেছেন, তিনি বাঙালি। কিন্তু বেগম মুশতারী শফি তাকে উল্লেখ করেছেন ‘ভারতীয়’ বলে। বাংলাদেশে কবে থেকে আছেন এবং কী উদ্দেশ্যে এটা নিয়েও দুজনের মন্তব্য দু’ধরনের।

    এখানে না বললেই নয়, সে সময় এনায়েতবাজারে ডাক্তার শফির বাসা কেন্দ্র করে চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের লোকদের একটি আড্ডা গড়ে উঠেছিল এবং বেলাল মোহাম্মদ ছিলেন সেখানকার নিয়মিত অতিথি। এটাও বলতে হবে যে, স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে বেলাল মোহাম্মদ যে ক’টি সাক্ষাতকার দিয়েছেন তাতে তিনি মিথ্যে না বললেও সত্য গোপন করে গেছেন। কৌশলে আড়াল করেছেন ‘মাহমুদ এপিসোড’। কখনও তাঁর লেখায় এসেছে ‘গাড়ি চালাচ্ছিলেন আমার এক বন্ধু’।

    এমনকি বিডিনিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকমে দেওয়া সর্বশেষ সাক্ষাতকারটিতেও একবারই মাহমুদের উল্লেখ ছিল তাঁর মুখে। সেখানে তাকে ‘আগ্রাবাদ হোটেলের প্রোমোটার জাতীয়’ কিছু বলা হয়েছে। ভিডিওতে তার নাম বলা হলেও যিনি সেটি শুনে শুনে লিখেছেন, তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ ঠেকেনি মাহমুদ হোসেনকে, তাই বাদ দিয়েছেন!

    আর বেলাল মোহাম্মদের ব্যাপারটা হল, উনি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র নিয়ে একটি বই লিখেছেন। এরপর ‘স্বাধীনতার ঘোষক বিতর্ক’ নিয়ে বিডিনিউজের আগে ডয়চেভেলেও তাঁর একটি সাক্ষাতকার রয়েছে। সব ক্ষেত্রেই তিনি বইয়ের বক্তব্যটি ধরে রেখেছেন– কালুরঘাট ট্রান্সমিশন সেন্টারটি চালু করা, সেটার প্রতিরক্ষার জন্য রফিককে না পেয়ে পটিয়া থেকে জিয়াকে নিয়ে আসা। তারপর কৌতুকছলে বলা– ‘এখানে তো সবাই মাইনর, আপনিই একমাত্র মেজর, আপনি আপনার নামে একটি ঘোষণা পড়ুন না’। কোনো পূর্বপ্রস্তুতি ছাড়াই জিয়া তাঁর অনুরোধে সাড়া দিয়ে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেছেন।

    সুস্পষ্টভাবেই এসবের কৃতিত্ব বেলাল নিজের বলেই দাবি করছেন। এমনকি আঙুলে গুনে জিয়া স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠকারী নবম ঘোষক, সম্মানী হিসেবে ১৫ টাকার ভাতা পেতেন তখনকার ঘোষকরা– এ জাতীয় রসিকতাও আছে তাঁর বয়ানে।

    চারদিনের ওই শব্দ-লড়াইয়ে (প্রোপোগাণ্ডমূলক প্রচারণা অর্থে) বেলাল মোহাম্মদদের কৃতিত্ব কোনোভাবেই অস্বীকার করা যাবে না। কিন্তু একটু ঘাঁটাঘাটি করলেই ছায়া এবং কায়াকে আলাদা করে ফেলা যাচ্ছে। রফিকের মুখেই আমরা শুনেছি, ২৫ মার্চ রাত দুটোয় তাঁর কাছে এসেছিলেন মাহমুদ, রেডিওতে ঘোষণা পাঠের আবদার নিয়ে। বেলালরা কালুরঘাটের ওই ট্রান্সমিশন সেন্টারটি মূল বেতারের বিকল্প হিসেবে চালু করার পেছনে মূল মন্ত্রণাটিও ক্ষুরধার মাহমুদ হোসেনের মাথা থেকে বেরিয়েছে ধরলে, অনেক হিসেবই দুয়ে দুয়ে চারের মতো মিলে যায়। মিলিয়ে দেন বেলাল নিজেই।

    ২৬ মার্চ সন্ধ্যার পর তাঁরা ওই বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র চালু করে অনুষ্ঠান সম্প্রচার শুরু করেন। রাতে যখন আওয়ামী লীগের মোহাম্মদ হান্নান সেখানে গেলেন, তিনি বললেন এই ট্রান্সমিটার দিয়ে তিনি সেদিন দুপুরেই একদফা ঘোষণা পাঠ করে গেছেন (বিডিনিউজে বেলাল মোহাম্মদের সাক্ষাতকার ২য় পর্ব)। বইয়ে মূল বেতারের কথা বলে এড়িয়ে গেলেও, সাক্ষাতকারে আর সেটা অস্বীকার করেননি।

    কথা হচ্ছে, হান্নান কীভাবে এই ট্রান্সমিশন সেন্টারটি ব্যবহার করলেন, কে তাকে দিয়ে ঘোষণা পাঠ করাতে সাহায্য করেছেন? বেলাল মোহাম্মদ এড়িয়ে গেছেন; আমার ধারণা উত্তরটা তাঁর জানা। মুশতারী শফিই আমাদের জানিয়ে দেন যে, ২৭ মার্চ সকালে তাঁর বাসা থেকেই গাড়ি করে বেলালকে নিয়ে পটিয়া রওনা দেন মাহমুদ। অথচ বেলাল মোহাম্মদ স্মৃতিচারণে এই যাত্রাকে ‘এক বন্ধুর গাড়িতে’ বলে চালিয়ে দিয়ে নিজেকে বসিয়ে রেখেছেন ‘ড্রাইভারের পাশের আসনে’।

    আসা যাক বেলাল কীভাবে মাহমুদকে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন। মাহমুদ হোসেন নিজেকে মূখ্য চরিত্রে রেখে ‘অরিজিন অব হিপ্পিজম’ নামে একটা ছবি তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছিলেন যার প্রেক্ষাপট ভারতবর্ষ। পাশাপাশি তুলে ধরেছেন তার বিপ্লবী চরিত্র। লন্ডনে আইউব খানের এক সভায় নাকি বোমা হামলা চালিয়েছিলেন ভাইয়ের সঙ্গে মিলে। আর মুশতারী শফির বইয়ে ঠিক উল্টো চিত্র পাই আমরা। এখানেই আমরা জানতে পারি সাবেক ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মোরারজি দেশাইয়ের ভাতিজি ভাস্করপ্রভার স্বামী মাহমুদ হোসেন।

    ২৭ মার্চের রোজনামচায় মুশতারী লিখেছেন:

    ”… এ সময় মাহমুদ হোসেন নামে একজন লোক এল আমার বাসায় বেলাল ভাইকে কোথায় যেন নিয়ে যেতে। মাহমুদ হোসেন ভারতীয় লোক। থাকে কখনও লন্ডন, কখনও আমেরিকার বিভিন্ন জায়গায়। তার স্ত্রী নাকি ভারতের জনতা পার্টির নেতা মোরারজী দেশাইর ভাইঝি। নাম ভাস্করপ্রভা। তিনি প্রায় মাসকয়েক হল বাংলাদেশে এসেছেন। উদ্দেশ্য, বাংলাদেশের পল্লীগীতি ও বাউল সঙ্গীতের উপর ধারাবর্ণনা সহকারে লং প্লের রেকর্ড বের করবেন। বেলাল ভাইয়ের সাথে তার চুক্তি সংগৃহীত গানের ধারাবর্ণনা লিখে দেবার। উঠেছেন আগ্রাবাদ হোটেলে। চট্টগ্রাম রেডিওর সঙ্গীত প্রযোজক রামদুলাল দেবের সাথেও তার সখ্যতা গড়ে উঠেছে। উনি শিল্পীদের সংগ্রহ করে গানের রিহার্সেল করেন, রিহার্সাল হয় আগ্রাবাদ হোটেলেই। বেলাল ভাইও সেখানে যেতেন।

    প্রায় ৬ ফিটেরও ওপর লম্বা কালো লোক, মাথাভর্তি কোকড়া ঝাঁকড়া চুল। দেখলে ভয় লাগে। আজ এসেছেন একটা কালো মরিস মাইনর গাড়ি নিয়ে। গাড়িতে দুজন ইপিআর জোয়ান, গাড়ির দুপাশে বন্দুকের নল বের করে। তার সাথে আরও এসেছেন আগ্রাবাদ হোটেলের সহকারী ম্যানেজার ফারুক চৌধুরী। কেন এসেছেন মাহমুদ হোসেন? কোথায় নিয়ে যেতে চান বেলাল ভাইকে? ডাক্তার শফিকে আড়ালে ডেকে নিয়ে বেলাল ভাই বললেন, ‘মাহমুদ হোসেন এসেছেন আমাকে নিয়ে যেতে চান, সীমান্তের ওপারে অস্ত্র-সাহায্যের জন্য’।

    আমিও কথাটা শুনলাম। শফি আঁতকে উঠে অনেকটা ধমকের সুরেই বলল, ‘খবরদার বেলাল, এ কাজে তুমি কিছুতেই যাবে না ওর সাথে’।

    বেলাল ভাই বলল, ‘ঠিকাছে, সীমান্তের ওপারে যাব না, তবে পটিয়া পর্যন্ত যাই। শুনেছি বাঙালি সৈন্যরা এখন নাকি ক্যান্টনমেন্ট এবং শহর ছেড়ে পটিয়ার দিকে গেছে। সেখান থেকে কিছু আর্মড গার্ড নিয়ে আসি। কারণ কালুরঘাট ট্রান্সমিটার ভবনটি এখন নিরাপদ নয়’।

    ও আর এই কাজে বাধা দিল না। বেলাল ভাই চলে গেল মাহমুদ হোসেনের সাথে।”

    (‘স্বাধীনতা আমার রক্তঝরা দিন’, পৃষ্ঠা- ১০৪)

    বেগম মুশতারী শফির ভাষ্যটাই সমর্থন করেছেন সাবেক সামরিক কর্মকর্তা ও মুক্তিযোদ্ধা লে. কর্ণেল নুরুন্নবী বীরবিক্রম। মাহমুদ হোসেন সম্পর্কে যাবতীয় খোঁজখবরের সূত্রপাতও তিনিই। তাঁর লেখা ‘জীবনের যুদ্ধ: যুদ্ধের জীবন’ (কলম্বিয়া প্রকাশনী) নামে একটি বই আছে। সেখানেই ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর রামগড় জেডফোর্স হেডকোয়ার্টারে জিয়ার সঙ্গে মদ্যপানের (রাম) ফাঁকে ফাঁকে নানা আলাপচারিতার উল্লেখেই আমি প্রথম পাই মাহমুদ হোসানকে। মিসিং লিংকগুলো জোড়া দেওয়ার প্রয়াসও তখন থেকেই।

    মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে এক অনুষ্ঠান শেষে নুরুন্নবীকে আমি ধরেছিলাম কথাগুলোর ব্যাখ্যা চেয়ে। আমার সঙ্গী ছিলেন সাংবাদিক ও তথ্যচিত্র নির্মাতা (সামরিক বাহিনীতে গণহত্যাখ্যাত) আনোয়ার কবীর। নুরুন্নবী আমাকে রেকর্ড করতে দেননি, তবে জানিয়েছেন শিগগিরই তার একটি বই বেরোবে যাতে এ ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ থাকবে। তিনি যা বলেছিলেন তাই স্মৃতি থেকে হুবহু তুলে দিচ্ছি:

    ”ওই লোকের পুরো নাম মাহমুদ হাসান (নুরুন্নবী তাকে ‘মাহমুদ হাসান’ বলে উল্লেখ করেছেন; আর তাঁর লেখায় বলেছেন শুধু ‘মাহমুদ’; আমরা অন্য সব জায়গা থেকে জেনেছি তার নাম ‘মাহমুদ হোসেন’)। সত্তরের নির্বাচনের পর থেকেই সে চট্টগ্রাম হোটেল আগ্রাবাদে স্থায়ী আবাস নেয়। লন্ডনে পড়াশোনার সুবাদে মোররাজী দেশাইর ভাতিঝির সঙ্গে প্রেম ও বিয়ে। বাংলাদেশের লোকসঙ্গীতের উপর গবেষণা ও তথ্যচিত্র নির্মাণের কথা বলে সে স্থানীয় মহলে বেশ খাতির জমিয়ে তোলে। তার গুণমুগ্ধদের মধ্যে ছিলেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রখ্যাত বেলাল মোহাম্মদসহ অনেকেই। বেগম মুশতারী শফির স্মৃতিকথায়ও উল্লেখ আছে মাহমুদের। কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে মেজর জিয়াকে স্বাধীনতার ঘোষণায় উদ্বুদ্ধ করার ব্যাপারে অগ্রগণ্যদের একজন ছিলেন মাহমুদ। জিয়া বেশ কয়েকবারই বিভিন্ন উপলক্ষে এই গল্প করেছেন তার অধীনস্তদের কাছে।”

    নুরুন্নবীর ভাষ্য অনুযায়ী– মাহমুদ জিয়াকে জানান যে, তিনি পূর্ব পাকিস্তানে সিআইএর দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি নাকি এ রকম একটি হাস্যকর যুক্তিতে জিয়াকে কনভিন্স করেন যে, জিয়া যদি একটি বিপ্লবী পরিষদ গঠন করে নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেন তবে তার সাহায্যের জন্য একদিনের মধ্যে ফিলিপাইন থেকে সপ্তম নৌবহরকে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করে দেবেন তিনি। ২৭ মার্চ জিয়ার প্রথম ঘোষণাটার এটা অন্যতম রহস্য। যদিও উপস্থিতদের চাপে এরপর তিনি ঘোষণা পাল্টান।

    মাহমুদ জিয়ার ছাড়পত্র, আগ্রাবাদ হোটেলের পিআরও এবং ক্যাশিয়ার ফারুক ও গনি এবং ইস্ট বেঙ্গলের দুজন সিপাই নিয়ে কক্সবাজার রওয়ানা দেন জনৈক উকিলের সঙ্গে দেখা করতে। এর মধ্যে মীর শওকত ও খালেকুজ্জামানও রওয়ানা হন। পথে দুলহাজারায় একটি ব্যারিকেডে না থেমে এগিয়ে যায় মাহমুদের মরিস মাইনর। পরের ব্যারিকেডে উত্তেজিত জনতা চড়াও হয় তাদের ওপর। মাহমুদ বাংলা বলতে পারতেন না, তাকে বিহারী ভেবে হত্যা করে উন্মত্ত স্থানীয়রা।

    মাত্র একজন সিপাই প্রাণ নিয়ে কোনোমতে পালিয়ে আসে। কিন্তু জিয়ার দেখা পাননি; কারণ ২৮ মার্চ জিয়া অলি আহমেদকে সঙ্গে নিয়ে নিজেই কক্সবাজারে যান। বাংলা ভালো বলতে পারেন না বলে তারও একই সমস্যা হয়, কিন্তু চট্টগ্রামের স্থানীয় লোক অলি সে যাত্রা তাকে পার করিয়ে নেন। কক্সবাজারে পৌছে সপ্তম নৌবহরের কোনো দিশা পাননি জিয়া। খোঁজ মেলেনি শওকতেরও, যিনি রিপোর্ট করেন ৭ এপ্রিল।

    খানিকটা ফাঁক রয়েছে নুরুন্নবীর বক্তব্যে। প্রথমত, জিয়া ২৭ মার্চ যে ভাষণটি দেন তাতে নিজেকে তিনি সরকারপ্রধান দাবি করেননি। করেছেন ২৮ মার্চের ভাষণে (যা লে. শমসের মুবিন চৌধুরী বেশ কয়েকবার পাঠ করেন), তৃতীয় দফা ভাষণে (মাহমুদের মৃত্যুর পর আবার পাল্টে দেন ভাষা)। আবার মীর শওকতের ভাষ্য অনুযায়ী, রাত ৮টার দিকেই জিয়ার সঙ্গে প্রথম সাক্ষাত মাহমুদের। তার অর্থ, পটিয়ায় তিনি এ বিষয়টি নিয়ে মুখোমুখি হননি জিয়ার। আর জিয়ার প্রথম ভাষণটি প্রচার হয় ৭টা ২০ মিনিটে (বেলাল মোহাম্মদের সাক্ষাতকার)। সে ক্ষেত্রে পরদিন জিয়ার ভাষণ এবং মাহমুদের কক্সবাজার যাত্রার যোগসূত্র ওই দ্বিতীয় ভাষণ।

    জিয়া মাহমুদকে কেন বিশ্বাস করলেন এটা একটা রহস্যই বটে। কারণ সপ্তম নৌবহর ফুল থ্রটলে চললেও পাঁচ দিনের আগে বঙ্গোপসাগরে ঢোকার কোনো সুযোগ ছিল না। পাশাপাশি বিকল্প হিসেবে ভারত সরকারের সঙ্গে যোগাযোগের অপশনও রেখেছিলেন মাহমুদ। সে ক্ষেত্রে হেলিকপ্টার যোগাড়ের একটা ব্যাপার ছিল। মাহমুদ নিশ্চয়ই সে জন্য কক্সবাজার যাচ্ছিলেন না।

    ফেরা যাক মাহমুদের সিআইএ পরিচয় দান নিয়ে (যা জিয়া নিজের মুখে বলেছেন নুরুন্নবীকে)। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় মোররাজী দেশাই সিআইএ-র চর হিসেবে কাজ করেছেন বলে প্রমাণ মিলেছে। তার ছেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে বাবার হয়ে পাচার করা তথ্যের পেমেন্ট আনার। কাকতালীয়ভাবে জিয়ার শাসনামলে ভারতের প্রধানমন্ত্রী পদে দ্বিতীয় দফা আসীন হয়েছিলেন মোরারজী। তখন মার্কিন ছাতার তলে উপমহাদেশেও বেশ একটা ‘শান্তি শান্তি’ ভাব চলে এসেছিল।

    তবে বেলাল মোহাম্মদ বন্ধু মাহমুদের সম্মান রেখেছেন তার মৃত্যুর ব্যাপারটি বিস্তারিত জানিয়ে। অলি আহমেদের মুখেই তিনি খবরটা পেয়েছেন। বেলাল মোহাম্মদের ভাষ্যে:

    ”সেই ২৭ মার্চ রাতেই তারা ভারতের উদ্দেশে যাত্রা করেছিলেন। পার্বত্য চট্টগ্রামের দিকে এগিয়েছিল তাদের গাড়ি। পথে পুলিশ ফাঁড়িগুলোর সামনে সামনে প্রহরা। একটা লম্বা বাঁশ রাস্তার এপাশ ওপাশ পাতা। সেখানে গাড়ি থামাতে হয়, পরিচয় বলতে হয়। তারপর ছাড়া পাওয়া যায়। বাঁশের একপ্রান্ত উপরে ঠেলে দিয়ে গাড়ি গলিয়ে নেবার পথ করে দেওয়া হয়। ফাঁড়িতে ফাঁড়িতে এমনি যাত্রাবিরতিতে সময় নষ্ট হয়।

    মাহমুদ হোসেনের জন্য হয়তো এ ছিল অসহ্য। তিনি তাই জোরে গাড়ি হাঁকিয়ে দিয়েছিলেন। এপাশে ওপাশে পাতা বাঁশ ভেঙে এগিয়ে গিয়েছিল গাড়ি। পরের ফাঁড়িতে টেলিফোনে খবর চলে গিয়েছিল। মাহমুদ হোসেনের পুষ্ট শরীর ও দীর্ঘ চুল চকিতে দেখা গিয়েছিল। সন্দেহ হয়েছিল তিনি অবাঙালি বলে। পরের ফাঁড়ি হারবাংয়ে আটক করা হয়েছিল তাদেরকে। তারপর জিজ্ঞাসাবাদ। গাড়ির মধ্যে পাওয়া গিয়েছিল অনেক টাকাকড়ি। বিদেশি মুদ্রাও। মেজর জিয়াউর রহমানের দেওয়া পরিচয়পত্র হয়েছিল উপেক্ষিত।

    ওখানে স্থানীয় রাজনৈতিক কর্মীরাও উপনীত হয়েছিলেন। মাহমুদ হোসেনকে দালাল ঘোষণা করা হয়েছিল। গুলি করা হয়েছিল তিনজনকে। মাহমুদ হোসেন, ফারুক চৌধুরী ও ওসমান গনি। সিভিল পোশাকধারী রাইফেলধারী দুজনকে এবং ড্রাইভারকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল।

    তিনটি লাশ দু’দিন শঙ্খ নদীতে ভাসমান ছিল। স্থানটির নাম ‘বুড়ো মৌলবীর ট্যাক’। দুদিন পর বুড়ো মৌলবী সাহেব দাফনের ব্যবস্থা করেছিলেন। ১৯৭৩ সালের প্রথমদিকে মাহমুদ হোসেনে পরিবারের সদস্যরা চট্টগ্রামে এসেছিলেন; তাদের নিয়ে আমি গিয়েছিলাম হারবাং এলাকায়। বুড়ো মৌলভী সাহেব তখন গত হয়েছিলেন। তার ছেলে কবরের স্থানটি দেখিয়েছিলেন। শঙ্খ নদীতে ভাঙনের ফলে স্থানটি তখন জলমগ্ন।”

    শামসুল হুদা চৌধুরীর ‘একাত্তরের রণাঙ্গন’-এ সংযোজন হিসেবে মাহমুদ হোসেনের নাম স্বাধীন বাংলা বেতারের চ্যাপ্টারে আছে (৭৫ নং পৃষ্ঠা)। সেখানে তাকে সদ্য লন্ডন থেকে প্রত্যাগত তরুণ ব্যবসায়ী বলে পরিচয় দেওয়া হয়েছে। এ সূত্রমতে, ২৬ মার্চ রাত ১০ টার পর স্বাধীন বাংলা বেতার থেকে এনার উদ্যোগে একটি অতিরিক্ত অধিবেশন প্রচারিত হয়। সহযোগী ছিলেন ফারুক চৌধুরী, রঙ্গলাল দেব চৌধুরী ও আরও কিছু কলাকুশলী। ২৭ মার্চ রাতেই মাহমুদ ও ফারুক নিহত হন অজ্ঞাতনামা আততায়ীদের গুলিতে।

    এত কিছুর পরও রহস্যই থেকে যান মাহমুদ এবং তার অভিপ্রায়। স্রেফ অস্থিরতার কারণে ‘ক্যাজুয়ালটি অব ওয়ার’ হয়ে যান দুজন নির্দোষ মানুষকে সঙ্গী করে।

  47. মাসুদ করিম - ২৮ মার্চ ২০২৪ (১:৫২ পূর্বাহ্ণ)

    Did Zia fight for Pakistan or Bangladesh?
    https://today.thefinancialexpress.com.bd/last-page/did-zia-fight-for-pakistan-or-bangladesh-1711562991

    Prime Minister Sheikh Hasina on Wednesday once again questioned Ziaur Rahman’s loyalty during the 1971 Liberation War of Bangladesh.

    “(Mirza) Aslam Beg (who was an army officer at that time in Bangladesh) wrote a letter to Ziaur Rahman during the Liberation War expressing satisfaction about his activities,” she said, reports UNB.

    This raised the question whether Zia had fought for Bangladesh or Pakistan, she said while addressing a discussion meeting at Awami League office in city’s Tejgaon, organised by the AL on the occasion of the Independence and National Day celebrated on Tuesday.

    In that letter, she claimed, Mirza Aslam Beg also said that wife and sons of Ziaur Rahman were fine in Dhaka Cantonment.

    “The question is if the person had proclaimed the independence then why the Pakistanis took care of the wife and sons of that person in cantonment, and wrote a letter stating satisfaction over his job,” she said.

    The ruling Awami League chief said that the war was fought in the eleven sectors of the country during the Liberation War, but the sector led by Zia saw the most killings of the freedom fighters.

    “The most casualties were in there,” she said.

    She said that during any operation Ziaur Rahman used to keep himself in a safe place pushing the freedom fighters to the action field which caused huge casualties as he could not take decision based on ground reality.

    “The casualties happened due to the lack of proper leadership by him (Ziaur Rahman),” she said.

    She mentioned that the successful operation in any battle means attaining desired goal through fewer casualties. “Zia could not do that, as a result Aslam Baig expressed satisfaction,” she said.

    General Beg served as the third Chief of Army Staff of the Pakistan Army from 1988 until his retirement in 1991. His appointment as the chief of army staff came when his predecessor, President General Muhammad Zia-ul-Haq, died in an air crash on August 17, 1988.

    Regarding the proclamation of the Independence on the night of March 25 (early of March 26), she said that Bangabandhu’s proclamation was relayed through wireless, But after the assassination of the Father of the Nation, the history was distorted.

    “In the distorted history it was said that one major standing on a drum blew the whistle and Bangladesh got independence. A country can not attain independence this way. If this could be done then the history of Bangladesh would have written differently,” she said.

    She said that nowadays BNP leaders are searching for democracy, and one BNP leader claimed that on March 25 Awami League leaders fled from Bangladesh. If that is true who then fought the fight and who brought the victory.

    She said that the elected public representatives of the 1970 elections formed the first ever government of independent Bangladesh with Father of the Nation Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman as the president and Syed Nazrul Islam the vice-president and Tajuddin Ahmed as the prime minister.

    After forming this government on April 17 of 1971 they took oath at Meherpur and carried out the Liberation War, she said.

    She said that Ziaur Rahman was a sector commander of that government as a salaried person under the Awami League government.

    “They (BNP leaders) must not forget this fact. They must not forget that after the Independence Ziaur Rahman was promoted from Major to Major General. These ungrateful persons forget that also.”

    Hasina ridiculed a BNP leader’s act of burning his shawl calling for boycott of Indian goods.

    She asked BNP leaders to search the indian sarees under the possession of their wives and burn those and also stop using indian species in their kitchen.

    The prime minister said that people rejected BNP for their arson terrorism and killing of people.

    “Those who were rejected by people, could not win election in democratic system, now they are searching for democracy,” she said.

    Awami League Advisory Council Members Amir Hossain Amu, Presidium Members Sheikh Fazlul Karim Selim, Engineer Mosharraf Hossain, Abdur Razzaque, and Shajahan Khan, Health Affairs Secretary and State Minister for Health Dr Rokeya Sultana, Dhaka District President Benzir Ahmed, Dhaka City South General Secretary Humayun Kabir, and Dhaka City North General Secretary SM Mannan Kochi.

    AL publicity and publication secretary Abdus Sobhan Golap and his deputy Syed Abdul Awal Shameem moderated the discussion.

Have your say

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.