কেন ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল এই বিকেন্দ্রীকরণ ও বিশেষজ্ঞতায় ঋদ্ধ সুপ্রাচীন ও সুবৃহৎ কুটিরশিল্প?[...]

পুরনো বইপ্রস্থ

বইপ্রস্থ ২৫ আগস্ট ২০০৯
বইপ্রস্থ ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১০
বইপ্রস্থ ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১০
বইপ্রস্থ ২৬ জুন ২০১২
বইপ্রস্থ ২৩ এপ্রিল ২০১৩
বইপ্রস্থ ১৮ নভেম্বর ২০১৩
বইপ্রস্থ ১১ মে ২০১৪
বইপ্রস্থ ৫ নভেম্বর ২০১৫
বইপ্রস্থ ২২ ফেব্রুয়ারী ২০১৬
বইপ্রস্থ ১২ মার্চ ২০১৬

Image

তাঁতির বাড়ি ব্যাঙের বাসা

পৃথিবীর তাঁতঘর বাংলার বস্ত্রশিল্প ও বাণিজ্য ১৬০০-১৮০০ ।। সুশীল চৌধুরী ।। প্রকাশক : আনন্দ ।। মূল্য : ২০০ ভারতীয় টাকা

বইটি হাতের কাছে পড়ে ছিল দুবছরের বেশি সময় ধরে একবার পাতা উল্টেও দেখা হয়নি। গতকাল সকালে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কবলে পড়ে যখন মাল্টিমিড়িয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছি তখন সংস্কৃত অভিধান পড়ব মনস্থির করে তা না পড়ে নিজের অজান্তেই এই বইটি হাতে নিয়ে পড়তেই বসে গেলাম। কয়েক লাইন পড়েই বুঝতে পারলাম এবই ছেড়ে ওঠা যাবে না এবং প্রায় দুশ পৃষ্টার বইটি আজ পড়া হয়ে গেল।

Image (3)

গার্হস্থ্য কুটিরশিল্প যে বিশেষজ্ঞতায় কোন পর্যায়ে যেতে পারে তার প্রমাণ বাংলার মসলিন শিল্প বাংলার রেশম শিল্প। এখানে প্রায় পুরো ভূখণ্ড জুড়ে বিস্তৃত কৃষক সমাজের ভেতরেই ছিল তাঁতের কাজের মুন্সিয়ানা তার বাড়িই ছিল তার কারখানা আর পুরো বাংলা জুড়ে জলপথে যাতায়াত ছিল পণ্য পরিবহনের অবাধ যোগাযোগের ভিত্তি। এটা অনস্বীকার্য বাংলার সনাতন দাদন ব্যবস্থা আর সনাতন বস্ত্র উৎপাদন ব্যবস্থার মিথষ্ক্রিয়ার মাধ্যমেই বাংলা হয়ে উঠেছিল পৃথিবীর তাঁতঘর। আভ্যন্তরীন চাহিদা এশীয় ও ইউরোপীয় চাহিদা মিলে তুলোর চাষ সুতো কাটা কাপড় বোনা এখানে বিস্তৃতিতে ও দক্ষতায় শিখর স্পর্শ করেছিল। কিন্তু শ্রমঘন কুটিরশিল্প থেকে বাংলার বস্ত্র উৎপাদন ও বাণিজ্য কোনোদিন বৃহৎশিল্পে রূপান্তরিত হতে পারেনি। রোম মোগল ইরান অটোমান আফ্রিকা ভেনিসের রাজপরিবারের পরিধেয় উৎপাদন করেছে, ইউরোপীয় ফ্যাশনের ভারত উন্মাদনা হয়ে উঠেছে, পূর্ব এশিয়ার রেশমের কাঁচামাল জুগিয়েছে তাদের মোটা কাপড়ের চাহিদা পূরণ করেছে – এই বাংলার মসলিন রেশম গারা এরকম দেড়শ রকমের কাপড় উৎপাদনে সক্ষম কুটিরশিল্প।

Image (2)

কেন ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল এই বিকেন্দ্রীকরণ ও বিশেষজ্ঞতায় ঋদ্ধ সুপ্রাচীন ও সুবৃহৎ কুটিরশিল্প? বহু উত্তর আছে এর কিন্তু কোনোটাতেই আমি প্রত্যয়ী হতে পারিনি।

আমার কাছে বারবার মনে হয়েছে শিল্পকে এখানে সম্মান করা হত না, এসব ছিল অন্তজদের কাজ, তাই দাদন হত বিনিয়োগ হত না, আর আরেকটি কথা সুতো কাটার কাজটি শুধু নারীরাই করত এবং শিল্পে নারীরা তো ছিল অন্তজদেরও অন্তজ, এইসব সামাজিক প্রতিবন্ধকতা ও অস্পৃশ্যতাই আমার মনে হয় ধ্বংসের মূল কারণ।

ভাস্কর্য শিল্প নেই, কাঠ শিল্প নেই, মাটির মন্দির শিল্প নেই – সব শিল্পীর বাড়ি এখানে যেরকম ব্যাঙের বাসা হয়েছে তাঁতির বাড়িও সেভাবেই ব্যাঙের বাসা হয়েছে।

মাসুদ করিম

লেখক। যদিও তার মৃত্যু হয়েছে। পাঠক। যেহেতু সে পুনর্জন্ম ঘটাতে পারে। সমালোচক। কারণ জীবন ধারন তাই করে তোলে আমাদের। আমার টুইট অনুসরণ করুন, আমার টুইট আমাকে বুঝতে অবদান রাখে। নিচের আইকনগুলো দিতে পারে আমার সাথে যোগাযোগের, আমাকে পাঠের ও আমাকে অনুসরণের একগুচ্ছ মাধ্যম।

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.