১৪ ডিসেম্বর ২০১২ তারিখে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের সোয়াস-এ (SOAS) “ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস ট্রাইব্যুনালস বাংলাদেশ: জাস্টিস ইন পারস্পেকটিভ” শীর্ষক একটি আলোচনা অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়েছে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় ঘটিত নৃশংসতা ও অপরাধের বিচারের দাবিতে সক্রিয় বিভিন্ন সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত প্ল্যাটফর্ম ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস স্ট্র্যাটেজি ফোরাম (আইসিএসএফ) এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে মূলত মানবতাবিরোধী অপরাধ, শান্তিবিরোধী অপরাধ, যুদ্ধাপরাধ ও গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের চলমান বিচার প্রক্রিয়ার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করা হয়। দু’টি পর্বে অনুষ্ঠানটি বিভক্ত ছিলো। প্রথম পর্বে ছিলো বিচার প্রক্রিয়া সম্পর্কে পরিচিতি, এর ইতিহাস ও বর্তমান নিয়ে উপস্থাপনা এবং দ্বিতীয় পর্বে ছিলো দর্শক-শ্রোতাদের প্রশ্নোত্তর, যেখানে চলমান বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে নানা প্রশ্নের সদুত্তর দিয়ে সংশয় দূর করার চেষ্টা করা হয়েছে।
উল্লেখ্য যে তিনজন বিচারক নিয়ে ২০১০ সালে ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন ১৯৭৩’ এর সংশোধিত সংস্করণের অধীনে একটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয় এবং পরবর্তীকালে বিচার প্রক্রিয়াকে বেগবান করার জন্যে দ্বিতীয় আরেকটি ট্রাইব্যুনাল গঠিত হয়।
আলোচনা অনুষ্ঠানটি লন্ডন সময় সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় শুরু হয়। স্থানীয় মিডিয়ার পাশাপশি বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে আগ্রহীদের বিপুল সমাগম ঘটে এ অনুষ্ঠানে। রানা ইয়াসমিনের উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানের শুরুতেই আয়োজকরা অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্য ও প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন। এরপর একটি প্রামাণ্যচিত্রের মাধ্যমে ১৯৭১ সালে সংঘটিত বর্বরতা ও অপরাধের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস তুলে ধরা হয়। ড. নওরীন তামান্না “১৯৭১: অপরাধী, আক্রান্ত, উদ্দেশ্য ও অপরাধ” শীর্ষক এক সংক্ষিপ্ত বক্তৃতায় চলমান বিচার প্রক্রিয়ার প্রেক্ষাপট বর্ণনা করেন। নোরা শরিফ “বিচারের জন্য চার দশকের আন্দোলন” শিরোনামে এক বক্তৃতায় ১৯৭১ সালে সংঘটিত অপরাধের বিচারের জন্য আন্দোলনের ইতিহাস তুলে ধরেন। আইনজীবী সৈকত আচার্যি বিচার প্রক্রিয়ার কাঠামো ও প্রকৃতি তুলে ধরার পাশাপাশি ট্রাইব্যুনালের ক্ষমতা ও কার্যপরিধি, বিচারে প্রযুক্ত আইন ও জুরিসপ্রুডেন্স বর্ণনা করেন। আরিফুর রহমান বিচার প্রক্রিয়ায় জড়িত বিভিন্ন পক্ষের ভূমিকা, রাজনীতির ওপর বিচারের প্রভাব এবং ন্যায়বিচারের স্বার্থ নিয়ে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন।
প্রাণবন্ত প্রশ্নোত্তর পর্বে দর্শক-শ্রোতাবৃন্দের সঙ্গে রায়হান রশিদ এবং নোরা শরিফ এর স্বতস্ফূর্ত আলোচনায় অনেক তথ্য ও আলোচনার অবতারণা হয়, যার মাধ্যমে চলমান বিচার প্রক্রিয়ার নানা দিক স্পষ্টতর হয়।
আইসিএসএফ এর পক্ষ থেকে একটা অফিশিয়াল স্টেটমেন্ট পড়ে শোনানো হয়, পূর্ণ তদন্ত দাবী করা হয় বাংলাদেশ সরকারের কাছে, সে তদন্তে বাংলাদেশ এবং যুক্তরাজ্যের কর্তৃপক্ষকে আইসিএসএফ এর পক্ষ থেকে সম্পূর্ণ সহায়তা প্রদানের আশ্বাস দেয়া হয়।
আইনজীবী সওগাতুল আলম বাংলাদেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতির অবসানের জন্য অপরাধীদের বিচার সাধনের জন্য সকলকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়ে অনুষ্ঠান লন্ডন সময় সন্ধ্যা সাড়ে আটটায় অনুষ্ঠান সমাপ্ত ঘোষণা করেন।
উল্লেখ্য, এই অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে আইসিএসএফ একটি ই-বুকও প্রকাশ করেছে যা এখান থেকে ডাউনলোড করা যাবে। আইসিএসএফ যে তথ্যচিত্রটি প্রদর্শন করেছে সেটিও ইতিমধ্যে আপলোড করা হয়েছে ইউটিউবে। ভিডিওটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস স্ট্র্যাটেজি ফোরাম (ICSF)
১৯৭১ এ সংঘটিত আন্তর্জাতিক অপরাধসমূহের বিচারের মাধ্যমে বিচারহীনতার সংস্কৃতির নিরসন এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গঠিত স্বাধীন বিশেষজ্ঞ, কর্মী এবং সংগঠনসমূহের আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস স্ট্র্যাটেজি ফোরাম (ICSF)। বাংলাদেশে বর্তমানে চলমান বিচার প্রক্রিয়াকে পর্যবেক্ষণ, অনুশীলন এবং প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যেই এই নেটওয়ার্কের প্রতিষ্ঠা। এই সব উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল এবং এর বিভিন্ন অঙ্গসমূহকে দালিলিক, আর্কাইভ এবং গবেষণা সহায়তা প্রদান করা ছাড়াও ট্রাইবুনালের সাথে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান এবং দফতরসমূহের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ, মতামত এবং পরামর্শ বিনিময়, এবং ক্ষেত্রবিশেষে সরাসরি পদক্ষেপ গ্রহণ এই নেটওয়ার্কের উল্লেখযোগ্য কার্যক্রমের অংশ। আইসিএসএফ এর কার্যক্রম, এর প্রকল্পসমূহ, এর সাংগঠনিক ইউনিটসমূহ এবং সাংগঠনিক নীতিমালাসমূহ সম্বন্ধে আরও বিস্তারিত জানতে ঘুরে আসুন: http://icsforum.org
You must be logged in to post a comment.