থার্ড পারসন সিংগুলার নাম্বার : 'সে' — নারী, পুরুষের হাওয়াই মিঠাই

তিনি যে নারী চরিত্র দাঁড় করিয়েছেন ‘থার্ড পার্সন সিঙ্গুলার নাম্বার’-এ তাতে আপাতভাবে একটি প্রগতিশীল সমাধানে পৌছাচ্ছি মনে হলেও শেষ পর্যন্ত কর্পোরেট নৈতিকতায়, সতীত্বের নিগড়ে, প্রেমহীন-ভাবনাহীন দেনা-পাওনার সম্পর্কে, ‘ভোগ্যা’ হিসেবেই রুবার রূপান্তর ঘটেছে [..]

শুনছিলাম সারোয়ার ফারুকী একটা চলচ্চিত্র ‘বানিয়েছেন’ ; সেইটা নাকি পুরুষতান্ত্রিক সমাজের ‘জেলে’ আবদ্ধ এক নারীর বাস্তবতা দেখা। হলে গিয়ে দেখি, প্রায় পুরোটা সময় জুড়ে দর্শক থেকে থেকে হাসে, শিষ দেয়, হাতে তালি লাগায়। ছবিতে একটা সংলাপ আছে, ‘তুমি জেলে যাবার পর থেকে পুরো পৃথিবীটা আমার কাছে জেলখানা হয়ে গেছে।’ ঢাকার ‘খোলা জেলখানার’ বাস্তবতায় এক নারীর বিপদ দেখে দর্শক সারিতে এতো শিস বাজে কেন, আমোদের হাসি কেন? পুরুষ দর্শক বেশী বলে? নাকি নারীর কষ্ট যেভাবে দেখালে পুরুষ-চোখ-মন মজা পায়, হাততালি দিতে পারে তেমন ছবিই ফারুকী বানিয়েছেন? তিনি তাহলে পুরুষতান্ত্রিক চৈতন্যে শান দিছেন, কাতুকুতু মারছেন — দর্শক তাই হাসে। তাতে তিনি সফল হইছেন। ছবি তো তাইলে সুপার হিট! অস্বীকার করে কে?

একজন নারী দর্শক হিসেবে চলচ্চিত্র শুরুর কিছুক্ষণ পরই আবিস্কার করলাম, প্রেক্ষাগৃহের অন্য দর্শক থেকে তো আমি আলাদা হয়ে পড়ছি। হাসতে পারছি না। বলতে পারছি না যে নির্মাতা নারীর দৃষ্টিরূপ থেকে ছবি বানাইছেন। কেন পারছি না? নারীর দৃষ্টিরূপ থেকে ছবি হলে মূল চরিত্র রুবার যাতনা আমিও নারী হিসেবে বোধ করতাম। কিন্তু তা বোধ হচ্ছে না, আবার নির্মাতা যে হাসি হাসাইতে চাচ্ছেন সেই হাসিও হাসা সম্ভব না। তাহলে কি তিনি রুবার যাতনার উপর এমন মালমসলা ফালাইছেন এমন সিনেমাটিক রং-লেপা দিছেন যে, রুবার বেদনায় পুরুষ দর্শকের মনে সমবেদনার উদয় হতে না হতেই সেটা কৌতুক আর তরুণী নারীকে বিভিন্নভাবে দেখার আমোদে পরিণত হয়! আসেন তাহলে দেখি ফারুকী কি করছেন?

থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার-এ চারটি বিষয় তুলে আনার চেষ্টা আছে:
১. পুরুষতান্ত্রিক-পিতৃতান্ত্রিক সমাজে নারীর নিরাপত্তার প্রশ্ন।
২. আধুনিক সমাজে নারী-পুরুষ সম্পর্কের গোলযোগ ও টানাপোড়েন।
৩. মধ্যবিত্ত পুরুষ ও নারীর মনস্তাত্ত্বিক-চারিত্রিক পোষ্টমর্টেম।
৪. প্রচলিত মূল্যবোধের সাথে নতুন মূল্যবোধের দ্বন্দ্ব।

ছবিতে শেষ পর্যন্ত যে তিনজনের সম্পর্ক জট পাকাতে ও বদলে যেতে দেখি, তারা হলো রুবা, মুন্না ও তপু। মুন্নার সঙ্গে রুবার ‘লিভ টুগেদার’ ছিল, কিন্তু সে এখন খুনের দায়ে জেলবাসী। তপু রুবার ছোটো বেলার বন্ধু, বিপদে পড়ে তার সহায়তা চায় রুবা। এই ছবিতে মূল চরিত্র রুবা একজন মধ্যবিত্ত বা নিম্নমধ্যবিত্ত তরুণী। তাকে ঘিরে ছবির ‘কাহিনী’ একটু একটু করে এগিয়েছে।

রুবার সংকটের শুরু মুন্নার জেলে যাওয়া থেকে। এর আগে রুবাকে শ্বশুরবাড়ীর রক্ষণশীলতার মাঝে ‘লিভ টুগেদার’ করা নিয়ে সমস্যাগ্রস্থ হতে হয়, মায়ের দ্বিতীয় বিবাহজাত দাম্পত্যকে সে মানতে পারে না, অথচ সে নিজে ‘লিভ টুগেদার’ করবার মতো সংস্কারহীন (তার এ স্ববিরোধের কথা মনে রাখা জরুরি।)। একাকী নারী হিসেবে প্রতিকূল পুরুষ-পরিবেষ্টিত জীবনে রুবা নিজের পায়ে দাঁড়াতে চায়। রুবা কোন ভয় পাওয়া, পুতুপুতু নারী নয়। ছবির শুরু থেকে আমরা তাকে দেখি একজন সাহসী ও চৌকষ নারী হিসেবে।

রাতে একা বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়া, থানায় পুলিশের জেরাকে বুদ্ধিমত্তা ও ব্যক্তিত্বের সঙ্গে মোকাবেলা করা, চাকরির প্রয়োজনে কোন এক চাকুরীদাতা বিত্তশালীর বাগানবাড়িতে একাই চলে যাওয়া এবং তাকে মোকাবেলা করে পালিয়ে আসা; এসব তার সাহস ও শক্তির প্রমাণ। ছবির একটি বড় অংশ জুড়েই রুবাকে ক্রমাগত পুরুষের সুযোগসন্ধানী ফাঁদের সঙ্গে লড়াই চালাতে দেখা যায়। এবং সর্বত্রই অনায়াসে সে রক্ষা পায়। কিন্তু কীভাবে সে আত্মরক্ষা করে, তার ব্যাখ্যা মেলে না। এক কথায় তাকে চূড়ান্ত যৌন নিপীড়নের হাত থেকে বাঁচিয়ে রাখা হয়।

কেন রুবা বারবার বেঁচে যায়, কীসের গুণে কীসের জোরে?
পুলিশ-মাস্তান-বস-নারী লোভী কোটিপতি থেকে শুরু করে এই ছবির সব পুরুষই মোলায়েম ধরনের সুযোগসন্ধানী। রাতের পুরুষরা দলবেধে বা কখনো একা রুবার হাত ধরে টানাটানি করে, ধাওয়া করে। কিন্তু পরের শটে আকস্মিকভাবেই তারা কোথায় যেন মিলিয়ে যায়। বাগানবাড়ী থেকে কোন কৌশলে রুবা পালায়, তা-ও এক রহস্য। এরকম অবস্থায়ই সীমা চৌধুরী বা ইয়াসমিনরা বাঁচেনি, বাঁধন লাঞ্ছিত হয়েছে, শিশু তানিয়া কিংবা সিমি-দের ‘আÍহত্যা’ করতে হয়েছে। এসবের ইঙ্গিত ছবিতেই আছে। তাহলে বিরাট ঝুঁকি নিয়েও রুবা কেন পার পাচ্ছে? কে তাকে বাঁচিয়ে দিচ্ছে? কেন বাঁচিয়ে দিচ্ছে? নাকি জীবনটা একটা গেম, যেখানে হার আছে কিন্তু সত্যিকার আঘাত নেই?
নাকি চলচ্চিত্র নির্মাতা দেখাতে চাইছেন যে, বাস্তবে নিপীড়ক পুরুষরা অতটা নিপীড়ক নয়Ñ অন্তত সব নারীর কাছে নয়। নাকি পুরুষরাই শেষ পর্যন্ত নারীদের বাঁচিয়ে দেয়? একদিকে চলচ্চিত্রকার দেখাচ্ছেন, পুরুষমাত্রই নারীলোভী ও সুযোগসন্ধানী হলেও কার্যত ‘অক্ষম’। এফডিসির ফিল্মে নায়ক নাজিল হয়ে নায়িকাকে বাঁচায়। এই ছবির সেই অদৃশ্য নায়ক কে? পরিচালক স্বয়ং এবং ‘জীবন নাটকের নাট্যকার’ স্ক্রিপ্ট লেখক সাহিত্যিক আনিসুল হক?

অথবা তাঁরা কি মাথায় রাখছিলেন যে রুবাকে ‘অক্ষত’ রাখা (সতী?) দরকার। যাতে অন্তত সব ধরনের দর্শকের কাছে ‘সতী’ হিসেবে রুবার গ্রহণযোগ্যতা অটুট থাকে। যাতে সব পুরুষই তাকে প্রেমিকার জায়গায় বসিয়ে ভাবতে পারে। রুবাকে সীমা বা ইয়াসমিন বা অন্য কোনো নারীর বাস্তবতায় নিয়ে গিয়ে ফেললে ছবিটি আর নিটোল থাকে না। তাতে করে কাহিনী যে সিরিয়াস দিকে মোড় নিতে পারে, তাতে মজা দেওয়ার উদ্দেশ্য একেবারে মাঠে মরবার কথা। চলচ্চিত্রে নির্মিত পুরুষ চরিত্রের পোষ্টমর্টেম শেষবিচারে পুরুষের ‘ইমেজ’কে রক্ষা করতে এবং নতুন গজিয়ে উঠা কর্পোরেট মধ্যবিত্তের নৈতিকতার ফাঁকিকে ঢাকতে সমর্থ হয়।

দুই জগতের টানাপড়েন: পুরান ঢাকা বনাম বসুন্ধরা সিটি
ছবির দুই জগতের একটি হলো পুরান ঢাকা থেকে মীরপুরের নিুমধ্যবিত্ত বসতি অন্যদিকে বসুন্ধরা সিটির মতো উচ্চমধ্যবিত্ত থেকে বিত্তবানদের আবাস। পুরান ঢাকার পরিবেশে সেখানকার পুরুষদের দমবন্ধ করা বাস্তবতার পাহারাদার করা হয়েছে। বিপরীতে ঢাকার গুলশান-বনানী-বসুন্ধরার জগতকে করা হয়েছে উদার, রোমান্টিক, সংগীতময় এবং বিলাসী এক ফ্যান্টাসিওয়ার্ল্ড। ফলত একই স্থান-কালে পৌঢ় বাড়ীওয়ালার (আবুল হায়াত) মতো নৈতিকতার টানাপোড়েন বিবর্জিত কামুক, মুন্নার মতো নৈতিক দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভোগা যুবক, মুন্নার বাবার মতো সামন্তীয় মেজাজের দাপুটে পুরুষদের আমরা প্রদর্শিত হতে দেখি। এসব থেকে ধারণা দেওয়া হয় যে, পুরনো ঢাকার সমাজ পিছিয়ে পড়া এবং এলাকাটি অরুচিকর ও ঘিঞ্জি।

একই বাস্তবতা থেকে উঠে আসা রুবাকে এই সমাজের কোন কিছুই যেন টানে না। ফলে ওই সমাজের সব কিছু থেকে বেরিয়ে আসাই যেন গোটা চলচ্চিত্রে রুবার ‘যুদ্ধ’_এমন ধারনা দর্শকের সামনে হাজির করা হয়। কিন্তু রুবা বা মুন্না নিজেদের মনের বা পকেটের জোরে পারে না। তাদের ধরতে হয় তপুর হাত, যে তপু উদার, ধনী, সৌখীন ও সরল। সে রাজধানীর আধুনিক উদীয়মান অংশের সদস্য। তারকা গায়ক তপু ও তার ঝলমল দুনিয়া দিয়ে এভাবে পুরান ঢাকা+রুবার পুরাতন প্রেমিক মুন্নার বিপরীতে চলে আসে নতুন ঢাকার নতুন প্রেমিক মুন্না। মুন্না অস্থির, কিন্তু তপু শান্ত। দামী গাড়ি, ল্যাপটপ, আইপড, স্টুডিও, দামী অ্যাপার্টমেন্ট, দামী ফার্নিচারসমেত তাকে আমরা চলচ্চিত্রে ‘হিরো’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেতে দেখি। কেবল টাকার জোরেই সে সব সমস্যা সমাধান করতে জানে। বাজার অর্থনীতির নিরিখে উত্তীর্ণ এক কর্পোরেট জগতের সফল পুরুষ সে। এমনকি রুবার প্রেমও তার টাকার জোরের কাছে ‘কৃতজ্ঞ’। শেষ পর্যন্ত তপুর মূল্যবোধই ছবিতে জয়ী হয় — যে জয় ‘আধুনিকতার, বিত্তের উদারতার, কর্পোরেট নৈতিকতার এবং দায়হীন বহুগামী যৌন সম্পর্কের। তপু পুরোনো মূল্যবোধের টানাপড়েন বিবর্জিত, অন্যের মূল্যবোধকে সে যেমন প্রশ্ন করে না, তেমনি জোর করা বা চাপিয়ে দেয়ার প্রবণতাও তার নেই। সম্পর্ক নিয়ে সে ভাবনা-দুর্ভাবনার উর্দ্ধে। ‘ব্যাপার না, ব্যাপার না’ বলে হালকা চালে সব কিছু উড়িয়ে দেয়া, কোন ‘ইন্টারেস্ট’ নেই বলে যৌনাকাংখাকে চাপা রাখা, আবার খুবই হিসাব কষে পা ফেলা এবং যোগাযোগ ও টাকার জোরে সব ধরনের পরিস্থিতি সামাল দেয়া তার ‘যোগ্যতা’। মুন্নার যেমন এক মন আছে, আছে মূল্যবোধের কামড়ানি, আছে রাগ-ক্ষোভ-ভালবাসা ও ক্ষুদ্রতা, তেমন কোনো মনের খোঁজ তপুর বেলায় মেলে না। রুবা ক্রমাগত মুন্নার কাছ থেকে সরে যেতে যেতে মনে-দেহে হয়ে উঠে তপুর দুনিয়ার বাসিন্দা, তপুর দয়া/বন্ধুত্বের প্রশ্রয়েই। সেটাই ধরা পড়ে কক্সবাজার যাওয়া প্রসঙ্গে চলচ্চিত্রের শেষ দিকে রুবার সংলাপে, ‘আমি কি যাচ্ছি, তপু আমাকে নিয়ে যাচ্ছে’।

এভাবে ‘তপু’ চরিত্রের জয়গান করে তাকে, তার শ্রেণীটিকে সহজ-সুন্দর-সৌখীন জীবনের প্রতীক হিসেবে হাজির করার মাধ্যমে আসলে তপুর মতো কর্পোরেট দুনিয়ার ‘বীর’দের প্রতিষ্ঠা করা, যুব সমাজের মডেল হিসেবে দাঁড় করানোর চেষ্টাই ‘থার্ড পারসন…’ করে। এতে করে নির্মাতা নিজে কোন সমাজ ও জীবনদর্শনের প্রতিনিধি ও মুখপাত্র তা প্রমাণ হয়।

নারী ছলনাময়ী আর তার প্রেম কেবল দেওয়া-নেওয়ার লীলা?
পুরুষের হাত থেকে বাঁচার জন্য পুরুষের কাছেই যেতে হয় নারীকে এটাই পিতৃতান্ত্রিক সমাজের বাস্তবতা। রুবাও সেই নিয়মে পা বাড়ায় কিন্তু চলচ্চিত্রের জোড়া দেওয়া একটা একটা সিক্যুয়েন্স দেখতে পাই: দিনে দিনে পুরুষকে ব্যবহার করাই রুবার চরিত্রের প্রধান দিক হয়ে উঠে। বাধ্য হয়ে একে-ওকে-তাকে কৌশলে কাজে লাগিয়ে শেষ পর্যন্ত — একজন তারকা তরুণকে ব্যবহার করা এবং কৃতজ্ঞতা কিংবা অন্য কোনা অস্পষ্ট কারণে তার প্রতি এক ধরনের ভালবাসার বোধ তৈরী হয় রুবার। মোবাইল কোম্পানির তৈরি করা ফ্যান্টাসি ‘ডিজ্যুস’ দুনিয়ার পুরুষের প্রতিনিধি ‘তপু’র দেওয়া ফ্ল্যাটে থাকতে শুরু করে রুবা। আবার জেল ফেরত মুন্না যখন রুবার সথে সম্পর্ক ছিন্ন করে চলে যাবার কথা বলে তখন রুবা জানায়, তাকে তাহলে এই ফ্লাট ছাড়তে হবে, একা পুরো ভাড়া দিতে পারবে না সে। মুন্নাও একটা পর্যায়ে প্রেমহীন নতুন সম্পর্কের মধ্যে দিয়ে রুবাকে একসাথে থাকার প্রস্তাব দেয়, ভাড়া ভাগ করতে চায়। রুবা তাতে রাজি হয় ও মুন্নার ঘাড়ে মাথা রেখে কাঁদে ? এই কান্নার অর্থ কী? রুবা কি নতুন করে মুন্নাকে ফিরে পেল, নাকি তার নিরাপত্তার সমাধানে এটাও একটা ‘ডিল’? এইভাবে রুবার প্রেম-ভালোবাসার পুরাটাকেই কি দেনা-পাওনার ঝুড়িতে তুলে দেয়া হলো না?

তাহলে রুবা নামক এমন এক চরিত্রের নির্মাণ পরিচালক ফারুকি আর লেখক আনিসুল হকের হাতে হলো, যে এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজে আগে থেকেই নির্মিত হয়ে ছিল — ‘সুবিধাবাদী নারী, পুরুষকে ছলনায় ভোলানো নারী’ আদম-হাওয়ার মিথের গন্ধম খাওয়ানো নারী। সারওয়ার ফারুকী সেই ধারনায় চটুল ভাবে সুড়সুড়ি দিলেন আবার নারীর প্রতি সহানুভূতিশীল ‘হার্ট ফিল্ম’ বানিয়ে পুরস্কারও জিতলেন।
রুবা বা তপুদের কি মন নেই?

রুবার ‘লিভ টুগেদারের’ পার্টনার মুন্না জেল থেকে ছাড়া পাবার আগেই তার প্রতি রুবার প্রেম শুকিয়ে আসে। এর কারণ কি তপুর প্রতি ভালোবাসা, নাকি মুন্নার অবিশ্বাস, তা বোঝা যায় না। আবার দুজনকেও ভালবাসতে পারে না সে। তার তপুকে ভাল লাগার উৎস কি প্রেম না নির্ভরতা, নাকি নিছকই একাকী নারীর যৌনাকাঙ্খা? রাতে রুবা, তপু উভয়ই যখন দুজন দুজনার কাছে যেতে চায় তখন রুবার সামনে বাধা হয়ে আসে তার তের বছরের মন, যে মন তাকে নৈতিকভাবে বার বার বাধাগ্রস্থ করে, স্বামীর প্রতি সৎ থাকবার পরামর্শ দেয় এবং তাতে সে পিছিয়ে যায়। রুবা কি বহুগামী? এমন কোন ইঙ্গিত তো ছবিতে নেই বরং যা আছে তা হলো ‘কন্টিনিউ মনোগোমাস রিলেসনশিপে’ যেতে পারে অর্থাৎ একজনকে ছেড়ে অন্য এক জনের সাথে তার সম্পর্ক হতে পারে। তার নৈতিকতা তাকে অতোটুকুই অনুমোদন করছে বলে সে মুন্নাকেও আর নিতে পারছে না। কারণ সেটা প্রতারণা মনে হচ্ছে, আবার তপুকে গ্রহণ করবে করবে করেও করে না। তবু শেষ পর্যন্ত দুটো সম্পর্ককেই একসাথে জারি রাখে সে। সেটাও সেই নির্ভরতার যুক্তিতেই। রুবার যৌনতার আকাঙ্খার কথা আমরা জানি, তার নিরাপত্তার অভাবের কথা জানি, সৌখিনতায় গা ভাসানো দেখি। এই-ই কি রুবা? তার মনের অন্য কোনো দিক কি থাকতে নেই? কেবল মায়ের মৃত্যুর পর তার স্বপ্নে মা-কে নিয়ে তার হাহাকারে একজন সত্যিকার মানুষ হিসেবে তাকে পাওয়া যায়, এর বাইরে রুবা কোথায়?
নৈতিকতার টানাপড়েন থেকে কি সে বেরুতে পারলো? বেরুতে পারলো পুরুষের তৈরি করা ‘জেল’ থেকে? বরং শেষ পর্যন্তসম্পর্কের এমন স্তরে তাকে পৌছাতে দেখি, যেখানে মুন্না-তপু কারো সাথেই সে সম্পূর্ণ একাত্ম নয়। শেষ দৃশ্যে রুবা রয়ে যায় নিঃস্বঙ্গ। লেখার শুরুর দিকে রুবার যে ‘স্ববিরোধী চরিত্রে’র কথা বলছিলাম চলচ্চিত্রের শেষেও কিন্তু সেই একই স্ববিরোধে তাকে রাখা হলো।

‘অবৈধ’ প্রেমের আবহে ক্যামেরার চোখ-কান কোন পুরুষের?
রুবাকে প্রথম থেকেই হাজির করা হয় ‘শিকার’ ও ‘ভোগ্য’ হিসেবে। তার বিপন্নতা, তার একাকীত্ব, তার ভয়ের দৌড় ইত্যাদিকে ছাপিয়ে ওঠে তার তরুণী শরীরের আকর্ষণ। যাতে দর্শক তার বিপন্নতার মধ্যেও তার যৌনাবেদন এক মুহূর্তের জন্যও ভুলতে না পারে। এতেই শেষ হয় না; মধ্যরাতে ফ্লাইওভারের ওপর একা দাঁড় করিয়ে রাখা যাতে তাকে ‘পতিতার মতো’ ভাবা যায়, মধ্যরাতে থানায় পুলিশের ওসির কাছে তার যৌনজীবন নিয়ে কথা বলানোর মাঝখানে হঠাৎ ঘরে অন্ধকার নামিয়ে আনা, বাগানবাড়ীতে মাতাল পুরুষের সামনে বসানো, পুরান ঢাকার বাড়ীওয়ালার ‘রক্ষিতা’ হওয়ার প্রস্তাবে সাড়া দেওয়ার কৌশল করানো, নির্জন কাশবনের উঁচু ঘাসের মধ্যে দিয়ে তপুর সঙ্গে আরো ভেতরে চলে যাওয়া, তপুর অ্যাপার্টমেন্টে কিংবা ঢাকার বাইরে গেস্ট হাউসে থাকার পরিস্থিতি তৈরি করা। ছবির আহ্বান মানলে তখন দর্শককেও চলচ্চিত্রটির প্রতিটি পুরুষ চরিত্রের মতো হয়ে উঠতে হয় শিকারী-ভোক্তা। খেয়াল করুন; সব কিছু দিয়ে দর্শকের মনে উসকে দেয়া হচ্ছে এই কল্পনা: রুবার সম্ভাব্য যৌন নিপিড়িত হওয়া অথবা তার ও তপুর অচরিতার্থ কামকে তৃপ্ত করা। একটি ভায়োলেন্স অথবা একটি যৌনপ্রেমের আবহকে ঝুলিয়ে রেখে দর্শকের চিন্তা ও কল্পনার নাকে লাগাম লাগিয়ে ঘোরাতে পারাই এই ছবির বাণিজ্যিক সফলতার উৎস।
রুবা তপু-মুন্না দুজনকেই আশাহত করে বারবার। তাই তপু মুন্না উভয়ের প্রতি পক্ষপাত তৈরী হয় দর্শকের। কিন্তু রুবার প্রতি কি দর্শকের আদতে কোন বেদনার বোধ হয়? হয় না। রুবার পুতুল শরীরে মুন্নার তড়পানোতেও দর্শক হাসে। যে সব মুহূর্তে মনে হতে থাকে রুবা নিশ্চিতভাবেই একটি কঠিন পরিস্থিতিতে পড়তে যাচ্ছে, তেমন অবস্থায়ও দর্শককে কষ্টের কান ঘেষে আমোদের হল্লা করার সুযোগ দেওয়া হয়। তপুকে বাসায় আসতে বলে রুবার উক্তি, ‘ঋণ পরিশোধ করতে চাই’। এই সময় হলের প্রায় সব দর্শক এক যোগে হাতে তালি দেয়, উত্তেজনায় শিষও দিতে থাকে। বার বার ‘ঋণ’ পরিশোধের কোন পথের ইঙ্গিত আনা হয় ছবিতে? ‘ঋণ পরিশোধ করতে চাই’-এর জবাবে তপু বলে, ‘আমি তো তোর কাছে কিছুই চাই না, কিন্তু ভালোবেসে যদি কিছু পাই’; কথার সঙ্গে তপুর খুশিতে ডগমগ আদন্তবিকশিত হাসি। এর পরপরই অনেকক্ষণ ধরে অহেতুক ঘুরে ঘুরে তপুকে কনডম কিনতে দেখা যায়, সেটা কিনে ছুটতে দেখা যায়। ব্যাকগ্রাউন্ডে চলে কুচকাওয়াজের বাজনা — তাহলে শরীরের দখল পাওয়ার যুদ্ধ এটা?

নারীকে বধ করার এই যৌন-ডামাডোল পর্দা ছাপিয়ে হলের আলো-অন্ধকারকেও মাতিয়ে তোলে। দর্শক তখন (অবশ্যই পুরুষ) আবারো শিস দেয়। হয়তো কেউ কেউ পরের দৃশ্য কল্পনা করতে শুরু করে। যে রুবার শরীরের নড়াচড়াকে এতক্ষণ ক্যামেরার চোখ লোভাতুর ভাবে দেখিয়েছে, সেই শরীরকে কল্পনা করার জন্য দর্শককে উস্কানো হয়। ঝিলের সামনে বসে তপুর অস্থিরতা, এর আগে রুবার উচাটন, তপুকে বাসায় ডাকার অর্থ দর্শকের কাছে ‘ইশারায় কাছে ডাকা’ ছাড়া আর কী হতে পারে? এই পুরো সিকোয়েন্সে রুবার প্রতি তপুর মনোভাবের রগরগে যৌনরসাত্মক দৃশ্যায়ন কিন্তু কী সুন্দর ‘স্লীলতার’ মোড়কে মোড়া!

ক্যামেরার এঙ্গেল গুলো মনে হয় বহিরাগত পর্যবেক্ষকের: হাই, ভীষন লো, ফলো শট, ভিষণ টেলি ইত্যাদি। যে রুবা ফিল্মের প্রথম অর্ধেকে এমন এক অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে যায় সেখানে তার মনের অবস্থা বোঝানোয় তেমন কোন পয়েন্ট অফ ভিউ শট আমরা দেখি না। প্রথম অর্ধেকের পর রুবাকে (একজন প্রায় নিম্নবিত্ত্ব নারীকে) নিয়ে ফেলা হয় কর্পোরেট চাকুরী, ঝকমকে ফ্লাটের চার দেয়ালের মাঝে। তার প্রথম জীবন যদি রিয়েল হয় এটা তবে আনরিয়েল। কিংবা যেন এক ‘রিয়েল’ জীবন থেকে ‘আনরিয়েল’ ফ্যান্টাসির জীবনে এসে পড়ে সে। কিন্তু এই অবাস্তব জীবনকে বাস্তব মনে করাতে-বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে সিনেমাটোগ্রাফিতে ‘পর্যবেক্ষক’ সুলভ দৃশ্যায়নের ভঙ্গি খুবই কার্যকর হয়। ‘ভিস্যুয়াল প্রেজেন্টেশন’, শট নির্বাচন, ছবির ন্যারেটিভ-মিউজিক প্রতি মূহুর্তে টের পাইয়ে দেয় একটা পুরুষ মন-মস্তিস্ক-চোখ রুবাকে দেখছে _দেখাচ্ছে। ঘটনা যেভাবে ঘটে, তাতে রুবা পুরুষকে বাইরের প্রাপ্তি-অপ্রাাপ্তি দিয়ে হিসাব করে মুচকি হাসে, নপুংসক বলে এবং আমরা ‘ভিস্যুয়ালি’ তাকে ওভাবেই প্রদর্শিত হতে দেখি। পুরুষের কামোত্তজিত দশা বেঝাতে মিউজিকের ব্যাবহার দর্শককেও রুবার প্রতি যৌনভাবে উদ্দীপ্ত করে। যে দর্শক এই ছবি দেখে হাসে, শিষ দেয়, বাংলা ছবির সেই দর্শকের প্রতি অনেকের বিরাগ রয়েছে। সুশীল দর্শক ও সংবাদপত্রের মানদণ্ডে যে দর্শক রুচিহীন, বিকারগ্রস্থ ও অস্লীলতার পূজারি, সেই দর্শকের এহেন অবস্থার কারণ কি শুধুমাত্র দর্শক নিজে? সারওয়ার ফারুকীর মতো মধ্যবিত্তীয় নির্মাতারা বড় গলায় রুচিশীল ছবির কথা বলে আসলে কর্পোরেট রুচির জীবন ও পুরুষতান্ত্রিক যৌনতা নির্ভর চলচ্চিত্রই নির্মান করছেন। ‘হার্ট’ ফিল্মের নামে আসলে হৃদয়হীন-সমাজহীন এক জীবনকে মহিমান্বিত করে ‘হৃদয়হীন’ দর্শক সৃষ্টির কারখানা বসিয়েছেন। তাঁর ছবিগুলো তাই ‘পুরুষের ফ্যান্টাসি’ হয়ে ধরা দেয়।

স্বপ্ন ও দুঃস্বপ্ন
সম্পর্ক নিয়ে টানাপড়েন এখানে প্রায় সকল শ্রেণীর মধ্যে তৈরী হয়ে গেছে। প্রেমে, দাম্পত্যে, যৌনতায় আরো স্বাধীনতা আরো মুক্ততার চাপা দাবি তৈরি হয়েছে। বহুগামিতা কোনো নতুন বিষয় না, একগামী সম্পর্কের অনুশীলন বিয়ে নামক প্রতিষ্ঠানের ভেতরে ও বাইরে জারি রয়েছে। বিয়ের বাইরে একসাথে থাকা_যাকে পাশ্চাত্যের মধ্যবিত্ত কেতায় নাম দিয়েছি, ‘লিভ টুগেদার’_ বলা বাহুল্য সেরকম সম্পর্ক উত্তর উত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। শ্রেণীগত অবস্থানের ওপর তার প্রকাশ বা লুকিয়ে-ছাপিয়ে রাখা অনেকটুকু নির্ভর করে। তবে সামাজিক ভাবে সবাই স্বীকৃতি দাবি করতে বা আদায়ে সক্ষম হয়নি বলে বিষয়গুলো নিয়ে খোলসা করে বলার চাপ সমাজে বিদ্যমান। সারওয়ার ফারুকী এ ব্যাপারে গুমোট ভাব কাটানোয় ভুমিকা নিয়েছেন, তাতে তাঁকে বাহবা দিতেই হয়। তবে এই বলতে গিয়ে তিনি যে নারী চরিত্র দাঁড় করিয়েছেন ‘থার্ড পার্সন সিঙ্গুলার নাম্বার’-এ তাতে আপাতভাবে একটি প্রগতিশীল সমাধানে পৌছাচ্ছি মনে হলেও শেষ পর্যন্ত কর্পোরেট নৈতিকতায়, সতীত্বের নিগড়ে, প্রেমহীন-ভাবনাহীন দেনা-পাওনার সম্পর্কে, ‘ভোগ্যা’ হিসেবেই রুবার রূপান্তর ঘটেছে। এই রূপান্তরই মার্কিন কায়দার ‘যৌন-বিপ্লব’, নারীকে পণ্য করার বাজার এবং কালচার-ব্যবসা চায়। যৌনতাকে নারীর সামগ্রিক অস্তিত্বের অংশ না করে, কেবলই মোহ বা ভোগ আকারে দেখা ও দেখানোর যে ডিজুস দুনিয়া, সেই দুনিয়ায় সাধারণ নিম্নবিত্ত রুবার উত্তরণ (নাকি পতন?) ঘটে এই ছবিতে। এই স্বপ্নই আজকের মধ্যবিত্ত ঘরের তরুণ-তরুণীকে দেখানো হচ্ছে। এটা হয়তো সারওয়ার ফারুকী ও তাঁর ভাই-বেরাদরদেরও স্বপ্ন। তারই সার্থক রূপায়ন ‘থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার’। নারী এই ছবিতে আর ‘আমি’ হয়ে ওঠে না, হয়ে থাকে ‘সে’ — থার্ড পারসন এবং সিঙ্গুলার নাম্বার।

ফারজানা ববি

আমরা এসেছিলাম দলে দলে, অযুত অযুত মাইল দুর থেকে। এসেছিলাম ল্যাম্পপোষ্টের ঝুলন্ত আলোয়, ইতিহাস আর পূর্বনারী-পুরুষের আত্মার খোঁজে।

৩২ comments

  1. কামরুজ্জমান জাহাঙ্গীর - ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১০ (৭:২০ পূর্বাহ্ণ)

    ফারজানা ববিকে অশেষ শুভেচ্ছা, চমৎকার (যদিও এরই মধ্যে সাপ্তাহিক বুধবার-এর মাধ্যমে তা আমরা বিস্তৃতভাবে অলরেডি জেনেছি) আপনার ফিল্মিম বিশ্লেষণ, দেখার ধরন। তবে এই ছবিটি নিয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে বেশ লেখালেখি হয়েছে, সেসবের রেফারেন্স বা লিঙ্ক দিয়ে দিলে পাঠক আরও উপকৃত হতেন।
    আপনি নিশ্চয়ই খেয়াল করেছেন, এই ছবিটি ব্যবসায়িক সাফল্যও পেয়েছে। এর মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ আপনার লেখায় থাকতে পারত। এক্ষেত্রে আমি ফরহাদ মজহার কর্তৃক বেদের মেয়ে জোসনা-এর চমৎকার আলোচনা স্মরণ করব, যা আর্টস‌বিডিনিউজে দেয়া আছে। আমি এও বিশ্বাস করতে চাই, একটা ছবির দর্শক কখনও কখনও ছবিটিকে পুনর্নিমাণ করেন। এও হয়ত আপনার নজরে এসেছে, মোস্তফা সরয়ার ফারুকি, আনিসুল হক এবং তাদের ভাই-বেরাদরদের নাবালক ভক্তকুলও আছেন, তারাও ছবির অংশ। সবদিক নিয়ে আপনার সক্রিয় অংশগ্রহণ এখানে আশা করছি।

    • ফারজানা ববি - ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১০ (১০:৫০ অপরাহ্ণ)

      এই ছবি নিয়ে অনেক অনেক আলোচনাই হতে পারে। শুধুমাত্র ছবি হিসেবে নয় (ছবি হিসেবে এটা কিছুই নয়) এতে ফারুকী গং-এর মাধ্যমে যে নতুন কর্পোরেট মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মন-মানসিকতা, সম্পর্ক, প্রেমে ধারণাসহ অনেক কিছুর প্রকাশ ঘটেছে, সেকারণেই এটা নিয়ে অনেক কথাই হওয়া উচিত। এখানে আমি লিমিটেড স্পেসের মধ্যে এক দফায় কিছু কথা বলতে চেয়েছি।
      অন্য দিকগুলো নিয়ে পরে কথা বলা যায়। কিংবা আপনারাও বিষয়টিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন।

    • মুহম্মদ শিহাব জহির - ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১০ (১১:০২ অপরাহ্ণ)

      কোন সিনেমা নিয়ে যে এত ফালতু আলোচনা করা যায়, এটা এই ব্লগ গুলাতে না ঢুকলে বোঝার কোন উপায় নাই…আমাদের দেশের কতিপয় তথাকথিত ফিল্ম ক্রিটিক আছে যারা ভাবে একটা সিনেমা নিয়ে খারাপ কথা না বললে তাদের জ্ঞান নিয়ে লোকের সংশয় জাগবে…আসলে, মূল ব্যাপার হলো, আমাদের দেশের সিনেমা দেখার দর্শকের অবস্থা এত খারাপ যে এইসব কতিপয় লোকের কথায় ভাল আর এক্সপেরিমেন্টাল সিনেমাও মার খাচ্ছে…ফারজানা ববি নামক এই মহিলার লেখা পড়ে যা বোঝা যায় তা হলো, উনি আগে কোন NGO তে চাকরি করতেন যে কারণে উনি সিনেমা দেখার আগে ও পরে সমাজের কি এলো আর গেল এই হিসাবে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। ওনার ক্ষুদ্র মস্তিস্কে এইরকম কোন ধারনা নাই যে, একজন পরিচালকের সাধীনতা আছে নিজের মত করে ছবি বানানোর। আপনাদের মত মুখস্থ করা তথাকথিত সমালোচকদের বাহবা পাওয়ার জন্য নয়। সাফল্য হল তারপরেও পয়সা খরচ করে সিনেমাটা দেখেছেন।ফারজানা ববির প্রতি মায়াই লাগছে কারণ দুনিয়ার অনেক ভাল ভাল সিনেমাই উনি উপভোগ করতে পারেননি, ভবিষ্যতেও পারবেন কিনা জানিনা কারণ লেখা পড়ে বুঝলাম উনি সিনেমা দেখার দিক দিয়েও অনেক পিছিয়ে আছেন। ওনার সিনেমার সমালোচনা পড়ে এখানে অনেকেই প্রশংসায় অষ্টরম্ভা হয়ে নিজেদেরকেও ওই দলে ভিড়িয়েছেন আর মনে মনে ভাবছেন “আহা!! আমি তো বিশিষ্ট একজন”। এদের সকলের জন্য আমার সমবেদনা রইল…
      সিনেমা হলে নাকি উনি দর্শক প্রতিক্রিয়া দেখেছেন যে দর্শক হাসে, শিস বাজায়…তারকোভস্কির “মিরর” দেখালে তো এই দর্শক হলে ঘুমাবে। তাই বলে কি তারকোভস্কির সিনেমা খারাপ??? আরেকজনের নাকি মাথায় পোলান্সকি, গদার, ফেলিনি দিয়ে ভরা…হাসি কোথায় রাখি?? আরে, পোলান্সকির “Bitter Moon” কে তাহলে উনি কি বলবেন??? উনার তো তাহলে সেটাও ভাল লাগেনি। আমি শিওর উনি শুধুমাত্র এই নামগুলোই জানেন। পোলান্সকির ছবি উনি কয়টা দেখেছেন সন্দেহ…

      আরো কিছু মন্তব্য পড়ে তো হাসবো না কাদব বুঝলাম না। ছবিটা দেখে নাই তারাও এই ছবিকে গাল পারতে পারতে মাথা খারাপ করে ফেলছে। এই যদি হয় দর্শক আর এই যদি হয় সমালোচক তাহলে আমাদের দেশের ফিল্মের কি হবে এটাই আলোচনার বিষয়।
      আপনার ফিল্ম সমালোচনা পড়ে মনে হয় ক্লাস এইটের সামাজিক বিজ্ঞানের কোন চ্যাপ্টার পড়ছি।আরে আপু, সিনেমা দেখতেই শিখলেন না, আর ৫ পাতার সমালোচনা লিখে ফেললেন!!! ভাল হয় এই লেখাটা কোন NGO কে দান করে দিলে তাহলে তারা অন্তত আমাদের সমাজ সম্পর্কে একটু ঝাপ্সা ধারণা পেলেও পেতে পারে। ফিল্মের সমালোচনা আপনাকে দিয়ে করানো আর জামাতে ইসলাম কে দিয়ে ১৬ই ডিসেম্বরে বিজয় দিবস উদবোধন করা আমার কাছে এক বস্তু মনে হচ্ছে। যাদের কাছ থেকে এই লেখার প্রশংসা পেয়েছেন তাদের এবং আপনার ছোট্ট জগতটা নিয়ে আপনি সুখি হোন এটাই আমার কামনা…আর দয়া করে সিনেমা জিনিশটা একটু বেশি বেশি দেখার অভ্যাস করেন।

      • মুক্তাঙ্গন - ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১০ (১২:৫১ পূর্বাহ্ণ)

        @ মুহম্মদ শিহাব জহির,

        আপনার মন্তব্যে ব্যক্তিগত আক্রমণের সুরটি স্পষ্ট, যা আপনার মূল বক্তব্য উপস্থাপনের জন্য অপরিহার্য ছিল না। সবাই সব বিষয়ে একমত হবেন এমন কোন কথা নেই। যে কোন সৃষ্টিশীল কাজের ক্ষেত্রে সে ঐকমত্য অর্জন তো আরও কঠিন। আমরা বিশ্বাস করি, লেখকের অধিকার আছে স্বাধীনভাবে তার বক্তব্য পেশ করার। মন্তব্যকারীদেরও অধিকার আছে যুক্তির বিরুদ্ধে পাল্টা যুক্তি দেয়ার। কিন্তু সেই আদান-প্রদান স্বাভাবিক সৌজন্যের সীমা ছাড়িয়ে ব্যক্তি আক্রমণের পর্যায়ে গেলে আলোচনার পরিবেশ ব্যাহত হয়, যা নিশ্চয়ই আমাদের কারোরই কাম্য নয়।

        মন্তব্য মডারেশনের ক্ষেত্রে মুক্তাঙ্গন ন্যূনতম হস্তক্ষেপ নীতিতে বিশ্বাসী, মুক্ত আলোচনার এ পরিবেশ বজায় রাখতেই। এ কারণে এই ব্লগে সাধারণভাবে সব মন্তব্য মডারেশন ছাড়াই প্রকাশিত হয়। এই উম্মুক্ত নীতিটি যেন আমরা বহাল রাখতে পারি, সে বিষয়ে আপনার সহযোগিতা কামনা করি। প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখি, পোস্ট-লেখকদেরও নিজ নিজ পোস্টে মন্তব্য মডারেশনের অধিকার রয়েছে।

        ধন্যবাদ।

      • ফারুক ওয়াসিফ - ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১০ (২:২৪ অপরাহ্ণ)

        কোন সনিমো নয়িে যে এত ফালতু আলোচনা করা যায়, এটা এই ব্লগ গুলাতে না ঢুকলে বোঝার কোন উপায় না

        এত বুঝে কী লাভ ভাই, যে গাড্ডায় ছিলেন, সেখানেই থাকুন না কেন? এখানে এসেছেন কোন দুঃখে? বরং নিজেই লিখুন না থার্ড পারসনের মহত্বের একটি বন্দনানামা? সমালোচনা বা মূল্যায়ন নিরীহ কোনো ব্যাপার নয়, যেমন নিরীহ নয় আপনার পূজ্যবাদ ছবি ও তার নির্মাতা গং। সমালোচনায় বিষোদগার কাঙ্খিত নয়, কিন্তু যুক্তির ধার ও ঝাঁঝ থাকতেই পারে। ক্রিটিসিজমের অর্থই তাই।

        আমাদরে দশেরে সনিমো দখোর র্দশকরে অবস্থা এত খারাপ যে এইসব কতপিয় লোকরে কথায় ভাল আর এক্সপরেমিন্টোল সনিমোও মার খাচ্ছে

        এইটা একদম খাঁটি কথা বলেছেন। আমাদের দেশের দর্শকের অবস্থা এত খারাপ না হলে কর্পোরেটের বিজ্ঞাপন বানাতে বানাতে কেউ চলচ্চিত্রকার বনার খায়েশ করতে পারতো না, সেলিব্রেটি হতো না, ছবির মধ্যে বসুন্ধরা আবাসিকের বিজ্ঞাপন পুরে দিতে পারতো না। থার্ড পারসন যদি হয় এক্সপেরিমেন্টাল তাহলে একদিন ঘোড়ারও মিউজিক ভিডিও বেরুবে।
        অনুকরণ করত্ও মেধা লাগে ভায়া।

        ফারজানা ববি নামক এই মহলিার লখো পড়ে যা বোঝা যায় তা হলো, উনি আগে কোন NGO তে চাকরি

        খোঁজ নিয়ে দেখেন, এনজিও-রা এই ছবিকে প্রমোট করবে নারীর অধিকার, স্বাধীনতা ও মতায়নের ফাঁকা বুলিতে। যা বোঝেন না তা নিয়ে কথা বলাটা বাহাদুরি নয়, আহাম্মকি।

        তারকোভস্করি “মরির” দখোলে তো এই র্দশক হলে ঘুমাব।ে তাই বলে কি তারকোভস্করি সনিমো খারাপ??? আরকেজনরে নাকি মাথায় পোলান্সক,ি গদার, ফলেনিি দয়িে ভরাৃহাসি কোথায় রাখ?ি? আর,ে পোলান্সকরি “ইরঃঃবৎ গড়ড়হ” কে তাহলে উনি কি বলবনে??? … এই যদি হয় র্দশক আর এই যদি হয় সমালোচক তাহলে আমাদরে দশেরে ফল্মিরে কি হবে এটাই আলোচনার বষিয়।
        উনি কী বলবেন তা উনি জানেন। আমি বলতে চাই, আপনার সিনেমা দেখার বহর চানাচুর মাখার কৌটার ঝাঁকুনি-বিদ্যার বেশি নয়। মিরর, পোলনস্কি, গদার ও ফারুকী আপনার কাছে সমান। আপনার হাসি দেখে তাই হাসি এবং কাশি একসঙ্গে আসি আসি করে।
        সমালোচনার ’স’ নিয়েও কথা বলতে পারলেন না, গালি পারতে পারতে কোনটা কথা আর কোনটা প্রলাপ তাও যখন ভুলে গেছেন, তখন আপনাকে দিয়েই বাংলা ফিল্ম উদ্ধার হবে বলে আশা রাখছি।

        তবে আপনার কাছে একটি কারণে আমরা কৃতজ্ঞ। আপনার বাগবিস্তারের বহর-কে এবার আমরা ডিজুস দুনিয়ার এক প্রতিনিধির কালচারের নমুনা হিসেবে দেখাতে পারবো। সেই কালচার এবং তাদের নবী ফারুকীর থার্ড পারসন নারীর প্রতি কীরকম অশ্রদ্ধা প্রকাশ করতে পারে, সমালোচনার নামে উদ্ধত ব্যাটাগিরিতে তারা কতটা বেপরোয়া তা আপনার এই মন্তব্যের পরতে পরতে ছড়িয়ে আছে। ফারুকীর ছবির নারীরা কেউ খিটখিটে শাশুরী, কেউ চরম অসুখী মা, কেউ ভীতু গৃহবধু, কেউ বাড়ীওয়ালার অসুস্থ রগচটা স্ত্রী, কেউ তারকার ফোন নং পাওয়ার জন্য পাগলপারা। আর রুবাকে দেখানো হয় সুযোগসন্ধানী দুই পুরুষের ভোগ্যা নারী হিসেবে, যার নিজের চাওয়ার খবর তার নিজের কাছেই নেই। নারীকে এইভাবে দেখা ও দেখানোকে বলে মিসোজিনি বা নারী-বিদ্বেষ। কর্পোরেট কালচারে নারীর এই অবস্থার বড় প্রমাণ নারীকে পণ্য করা, তার সৌন্দর্যকে অফিসের শোভাবর্ধনে ব্যবহার করা, নারীর গায়ের রং-অবয়ব-পোশাক-মন-রুচি সবকিছুকেই কালচার ইন্ডাস্ট্রির ঢালাই মেশিনে এমনভাবে গড়েপিটে তোলার চেষ্টা করা যাতে, নারীর নিজস্ব বলে কিছু আর থাকে না। সেকারণেই গ্রামীণ ফোনের (এখন টেলিনর) এক বড় পদের নারী কর্মকর্তাকে নিয়ে ভার্চুয়াল জগতে যত ইতরামি হয়েছে তা প্রমাণ করে, এই সংষ্কৃতি নারীকে প্রথমে উন্মুক্ত করতে চায়, তারপর চায় দশপুরুষে মিলে ভোগ করতে।
        বাস্তবে এই প্রজন্মের নারীরা রুবার থেকে বেশি সাহসী, বেশি স্বাধীনচেতা এবং বেশি আÍসম্মান রাখেন। দূরে যাওয়ার দরকার নেই, ঢাকার বস্তিতে, গার্মেন্ট কারখানার নারী-শ্রমিকদের মধ্যে, এমনকি অনেক এনজিওতে কাজ করা নারীদের মধ্যেও এর থেকে এগিয়ে থাকা নারীকে পাবেন।

        থার্ড পারসন বা আপনার কমেন্টের ভাষা আসলে আপনারই আয়না, দয়া করে তাতে নিজের মুখটা দেখে নিন।

  2. ফারুক ওয়াসিফ - ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১০ (২:০৪ অপরাহ্ণ)

    বিশ্লেষণ ও সমালোচনা প্রাপ্য ছিল থার্ড পারসনের।

    আপাতভাবে একটি প্রগতিশীল সমাধানে পৌছাচ্ছি মনে হলেও শেষ পর্যন্ত কর্পোরেট নৈতিকতায়, সতীত্বের নিগড়ে, প্রেমহীন-ভাবনাহীন দেনা-পাওনার সম্পর্কে, ‘ভোগ্যা’ হিসেবেই রুবার রূপান্তর ঘটেছে। এই রূপান্তরই মার্কিন কায়দার ‘যৌন-বিপ্লব’, নারীকে পণ্য করার বাজার এবং কালচার-ব্যবসা চায়। যৌনতাকে নারীর সামগ্রিক অস্তিত্বের অংশ না করে, কেবলই মোহ বা ভোগ আকারে দেখা ও দেখানোর যে ডিজুস দুনিয়া, সেই দুনিয়ায় সাধারণ নিম্নবিত্ত রুবার উত্তরণ (নাকি পতন?) ঘটে এই ছবিতে। এই স্বপ্নই আজকের মধ্যবিত্ত ঘরের তরুণ-তরুণীকে দেখানো হচ্ছে। এটা হয়তো সারওয়ার ফারুকী ও তাঁর ভাই-বেরাদরদেরও স্বপ্ন। তারই সার্থক রূপায়ন ‘থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার’। নারী এই ছবিতে আর ‘আমি’ হয়ে ওঠে না, হয়ে থাকে ‘সে’ — থার্ড পারসন এবং সিঙ্গুলার নাম্বার।

    লেখার এই অংশটা সবচেয়ে ভাবিয়েছে। ধন্যবাদ।

    ২।
    শরতচন্দ্র ‘গৃহদাহ’ উপন্যাসে দুজনকেই ভালবাসা ও কামনা করার দ্বন্দ্বের নিরসন ঘটিয়েছিলেন সংসার ভাঙ্গার মুখে গৃহটাকেই জ্বালিয়ে দিয়ে। আর আনিসুল হক-ফারুকী করলেন দুজনের কাউকেই সত্যিকার অর্থে না ভালবেসে দুজনকেই নিজের দিকে টেনে এবং দুজনের ওপরই নির্ভরশীল থেকে। রুবার আকর্ষণের ধরনটা ঊনিশ শতকী ‘র‌ক্ষিতা’র মতো, যাকে দাসীর থেকে কিছুটা ওপরে এবং স্ত্রীর থেকে নীচে স্থান দেওয়া হয়। আজকে গ্ল্যামারের ব্যবহার রক্ষিতা হিসেবে হয় না, হয় উন্নতির মইয়ে ওঠার রসদ হিসেবে, সুন্দরী হিসেবে বাজারের ক্ষমতায়ন হিসেবে এবং নিজের প্রেম-ভালবাসার ওপর নিজের ছদ্ম নিয়ন্ত্রণের শক্তি হিসেবে। রুবা কাউকে বেছে নিয়েছে বলে মনে হয় না, বরং অন্যরাই রুবাকে বেছে নিতে চায়। নতুন সেক্চুয়ালাইজড-কালচারের উচ্চকিত ম্যানিফেস্টেশন হিসেবে থার্ড পারসন তাই সফল।

    ৩।
    এই ছবি একারণেও সফল যে, উঠতি নিম্ন ও মধ্যবিত্ত তরুণ-তরুণীদের অর্থহীন জীবনযাপনের মধ্যে যৌনতাকে ঘিরে জীবনের একটা অর্থ অর্জনের স্বপ্ন এই ছবি দেখায়। কালচার ইন্ডাস্ট্রি এই স্বপ্ন তার গান-নাটক-বিজ্ঞাপন-তারকাপূজা ইত্যাদির মধ্যে দিয়ে তারুণ্যের মনে ঢুকিয়ে দেয়। আমাদের সমাজে যেখানে সামাজিকতা শেষ, যেখানে নর-নারীর মেলামেশার সুযোগ কেবল উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শপিং মল, রাস্তায় আর কাজের ক্ষেত্রে এবং সেখান থেকে চাইনিজ-ফাস্টফুড, বোটানিক্যাল ইত্যাদি জায়গায়, সেখানে তাদের সেই অবরূদ্ধ বাসনা এই ছবিতে বিচরণের কিছুটা সুযোগ পায়, তারা তাদের জীবনই একভাবে এখানে দেখে। দেখে ভাবে এই ছবি ‌’বাস্তব’। পুরুষ হিসেবে সেও চায় একজন রুবার বন্ধুত্ব, রুবারাও চায় একজন সর্বত্র বিচরণকারী তপু। মুন্নারা ভাবে বদলে ওদের মতো হয়ে যাই। এভাবে ছদ্ম স্বপ্ন পুরে দেওয়া হয়, কর্পোরেট-নৈতিকতা (দেওয়া নেওয়া) জায়গা নেয় সাবেকি রক্ষণশীল যৌন নৈতিকতার। এটা প্রলুব্ধ করে, তাই থার্ড পারসনের জীবন মোহময়। এভাবে বাস্তব স্বপ্নে পালাতে চায় আর স্বপ্ন জায়গা নেয় বাস্তবের। কিন্তু স্বপ্নটা অন্যের, আর অন্যের স্বপ্নে বাস করা একধরনের বন্দীত্ব। রুবা-তপু-মুন্নার জীবন তাই একধরনের বন্দীত্বেরই জীবন। এবং বন্দীর বাসনার তীব্রতা আর পথ না পেয়ে যৌনতার শটকার্ট তৃপ্তিতে মোক্ষ খোজে।
    ফারুকী এবং মার্কেট-নবীরা অবদমনজাত যৌনতামাখা প্রতীক ও বাহার ভালই বেচতে পারেন, প্রেমটা কেবল বোঝেন না। তারা পণ্য বানাতে পারেন সৃষ্টি জানেন না। সৃষ্টি, তা প্রেমেরই হোক আর বন্ধুত্বেরই হোক কোম্পানিতে ফলে না, পুৎজিতে জন্মে না। সমানে সমানে প্রেমহীন যৌনতার শর্টকাট রাস্তায় এরা এক লাফে পৌৎছাতে চায় মার্কিন যৌনবিপ্লবে। এদের থেকে সাবধান।

    • ফারজানা ববি - ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১০ (১০:৫০ অপরাহ্ণ)

      অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

  3. আহমেদ শামীম - ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১০ (৮:৪৫ অপরাহ্ণ)

    ছবিটা দেখে আমার মনে হয়েছে এতোদিন পর আলোচনা করার মতো একটা ছবি বানিছেন ফারুকী। ছবিটা গুরুত্বপূর্ণ এই কারণে যে, প্রভাবশালী করপোরেট কালচারের সাফল্যের উপর একটা রিপোর্ট তৈরি করেছেন লেখক-নির্মাতা গং। রিপোর্টটা পড়ে মনে হল, ছবির কাহিনীকার ও নির্মাতা ঐ করপোরেটেরই পদন্নোতি পিয়াসী মাঠকর্মী। এই ছবি চলাকালে সিনেমাহলগুলো মাঠপর্যায়ের মিটিংরুম হয়ে যায়। দর্শকের উল্লাস করপোরেট-মতাদর্শকেই সমর্থন যোগাবে এমন খত দিয়েই ছবিটা বানানো। দর্শক খুশী, দর্শকের ধর্ষকও খুশি। এমন কাজের জন্য অবশ্যই পদন্নোতি পাবেন ঐ মিডলম্যানরা। ফারজানা ববি ছবিটার সমাচনায় সেসব মিডলম্যানদের স্বরূপ উদ্ঘাটনের কাজটা করেছেন সাফল্যের সাথে। তাকে অশেষ ধন্যবাদ।

    • ফারজানা ববি - ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১০ (১০:৫১ অপরাহ্ণ)

      এই ছবি চলাকালে সিনেমাহলগুলো মাঠপর্যায়ের মিটিংরুম হয়ে যায়। দর্শকের উল্লাস করপোরেট-মতাদর্শকেই সমর্থন যোগাবে এমন খত দিয়েই ছবিটা বানানো। দর্শক খুশী, দর্শকের ধর্ষকও খুশি। এমন কাজের জন্য অবশ্যই পদন্নোতি পাবেন ঐ মিডলম্যানরা।

      ভাল বলেছেন। ধন্যবাদ।

  4. মনজুরাউল - ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১০ (১০:২৪ অপরাহ্ণ)

    স্বাগতম ফারজানা ববি।
    আপনার সুলিখিত চলচ্চিত্র সমালোচনা/ প্রিভিউ পুরোটা পড়িনি। আমি পড়িনা। শুনতে একটু বেখাপ্পা লাগতে পারে, সে কারণে আগেই মাফ চেয়ে নিলাম।এই সকল বিষয়ে আমার দর্শন হচ্ছে মগজের ধারণক্ষমতাকে এনলার্জ করানো যায় বটে বটে খুব বেশি না। মগজে কিছু ফাঁকা জায়গা রাখতে হয়, সেটুকু এই ফারুকিগংদের ক্যারিকেচার দিয়ে ভরে ফেলাটা পাপের পর্যায়ে পড়ে।মগজেরই বা দোষ কি! সেখানে ঋত্ত্বিক, ফেলিনি, গদার, পোলনস্কি, আব্বাস,উৎপলেন্দু এমন ভাবে সেঁদিয়ে আছে যে ফাঁকফোকড়ে আর কিছু প্রবেশের সাধ্যি নেই।

    আমি এই টাইপ পোস্ট-মডার্ণ গোছের কিছু দেখিনি। দেখতে চাইও না। তাই আপনার লেখা নিয়ে আলোচনার বদলে ‘শিবের গীত’ গেয়ে গেলাম। কাল (আজ রাত বাদে দিনে) আমার নমস্য ঋত্ত্বিক ঘটকের মৃত্যুবার্ষিকী। দেখি তার স্মৃতিতর্পণে কিছু লিখতে পারি কি-না।

    অঃ টঃ আপনি যেহেতু ছবি বানান তাই আপনাকে একটি ছবি দেখে সেটি নিয়ে লেখার অনুরোধ করছি(যদি আগেই দেখে থাকেন তাহলে মার্জনা করবেন) ছবিটি কেট উইন্সলেট এর JUDE

    • ফারজানা ববি - ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১০ (১১:০৩ অপরাহ্ণ)

      প্রিভিউ পুরোটা পড়িনি। আমি পড়িনা।

      ছবিও দেখেননি, রিভিউও পড়েননি। দু:খিত হলাম।

      মগজে কিছু ফাঁকা জায়গা রাখতে হয়, সেটুকু এই ফারুকিগংদের ক্যারিকেচার দিয়ে ভরে ফেলাটা পাপের পর্যায়ে পড়ে।মগজেরই বা দোষ কি! সেখানে ঋত্ত্বিক, ফেলিনি, গদার, পোলনস্কি, আব্বাস,উৎপলেন্দু এমন ভাবে সেঁদিয়ে আছে যে ফাঁকফোকড়ে আর কিছু প্রবেশের সাধ্যি নেই।

      এরা সবাই বড় মাপের নির্মাতা সন্দেহ নেই। কিন্তু তারা বুদ্ধিজীবীদের মগজের খোরাক হয়ে রয়েছেন। আবার ঋত্বিকের সঙ্গে পোলানস্কি এক কাতারে কীভাবে বসেন বা দুইকেই একইভাবে ভাল লাগে কীভাবে? যাই হোক, আমি এটিকে আলোচনার বিষয় হিসেবে নিয়েছি কারণ, অ-বুদ্ধিজীবী সাধারণ মানুষ কী খায় কী দেখে, কেন তারা আমাদের থেকে দূরে থাকে তা বোঝার জন্য এবং নিজেকেও বোঝার জন্য কী ঘটছে মেইনস্ট্রিমে তার খোজ নেওয়া দরকার। আর পাপ-পূণ্যের বিষয় হিসেবে ছবি দেখা বা জ্ঞান আহরণ বুঝি না। এই ছবি অজস্র তরুণ-তরুণী দেখছে ও প্রভাবিত হচ্ছে, তারা কি তাহলে পাপী? আমি সেভাবে দেখতে রাজি না। অন্ধ হলে তো আর প্রলয় বন্ধ থাকবে না।

      JUDE আমি দেখিনি।

      • মনজুরাউল - ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১০ (২:০৬ পূর্বাহ্ণ)

        আবার ঋত্বিকের সঙ্গে পোলানস্কি এক কাতারে কীভাবে বসেন বা দুইকেই একইভাবে ভাল লাগে কীভাবে? যাই হোক, আমি এটিকে আলোচনার বিষয় হিসেবে নিয়েছি কারণ, অ-বুদ্ধিজীবী সাধারণ মানুষ কী খায় কী দেখে, কেন তারা আমাদের থেকে দূরে থাকে তা বোঝার জন্য এবং নিজেকেও বোঝার জন্য কী ঘটছে মেইনস্ট্রিমে তার খোজ নেওয়া দরকার।

        অ-বুদ্ধিজীবী সাধারণ মানুষ কী খায় কী দেখে, কেন তারা আমাদের থেকে দূরে থাকে তা বোঝার জন্য এবং নিজেকেও বোঝার জন্য কী ঘটছে মেইনস্ট্রিমে তার খোজ নেওয়র জন্য সম্ভবত আরও অনেক মাধ্যম আছে।

        অন্ধ হলে প্রলয় বন্ধ হয়না ঠিক, তবে ইম্পোজড প্রলয় থেকে দূরে থাকা যায়। আপনি নিশ্চই জানেন এই তথাকথিত মেইনস্ট্রিমের সাথে কোন গতরখাটা মানুষের সম্পর্ক নেই। তারা ‘খাইছি তরে’ টাইপ ছবি দেখে আমোদ পায়। উঠতি পোস্ট মর্ডানিস্টদের এই ক্যারিক্যাচারে তাদের দাঁত বসানোর উপায় নেই।

      • মনজুরাউল - ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১০ (২:১৯ পূর্বাহ্ণ)

        স্বাগতম ফারজানা ববি।
        আপনার সুলিখিত চলচ্চিত্র সমালোচনা/ প্রিভিউ পুরোটা পড়িনি। আমি পড়িনা। শুনতে একটু বেখাপ্পা লাগতে পারে, সে কারণে আগেই মাফ চেয়ে নিলাম।

        এমন একটি অকপট ডিসক্লেইমার দিয়ে রাখার পরও রুষ্ঠ হলেন! মানুষ কি আজকাল মাফ চাওয়াটাকেও ক্ষমা করতে পারেনা! আমরা মনে হয় অস্বাভাবিকরকম অসহিঞ্চু হয়ে উঠছি।
        শুভ কামনা।

  5. তানবীরা - ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১০ (৫:৪৫ পূর্বাহ্ণ)

    ধন্যবাদ একটি সুলিখিত প্রবন্ধের জন্য ববি আপনাকে। সিনেমাটি নিয়ে অনেক আলোচনা শুনছি কিন্তু এখনো দেখার সুযোগ হয়নি। সম্ভবতঃ সিনেমাটির ব্যবসায়িক সাফল্য নিশ্চিত করতে এখনো ডিভিডি করার পারমিশন দেয়া হয়নি।

    কিন্তু অনেকের আলোচনা থেকে যা বুঝলাম যে লিভ টুগেদার বা বহুগামিতা বা বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক এই সিনেমাটির মূল বিষয়। শুধু এটুকু ধরতে পারছি না, এই জিনিসটাকে স্টাবলিশ করার জন্য নায়িকাকে ব্রোকেন ফ্যামিলির কেনো হতে হবে? সাধারন পরিবারের মেয়েদের মধ্যে এ জিনিসগুলো কি আসতে পারে না?

    আর পৃথিবীর যে সমস্ত দেশেই মেয়েরা লিভ টুগেদার করে কিংবা নিজের দ্বায়িত্ব নিজে নেয় সেখানে তারা সম্পর্ক ভেঙ্গে যেতে পারে যেকোন কারনে যেকোন সময় এটা জেনেই করে। তাতে নায়কের জেলে না গেলেও চলে। সম্পর্ক ভেঙ্গে গেলে কিভাবে অন্য আশ্রয় যোগাড় করতে হবে সেই গাটস না নিয়ে কোন মেয়েই লিভ টুগেদার করতে যায় না।

    আর লিভ টুগেদার করার মতো সাহসী মেয়ে এতো পুতু পুতু কি করে হতে পারে? একটা চাকুরী পর্যন্ত ম্যানেজ করতে পারে না সেটাও হাস্যকর। আর শারীরিক ব্যাপার নিয়ে কেনো এতো শুচিবায়ুতা সেটাও ধরতে পারলাম না।

    মনে হচ্ছে পশ্চিমের ধারনা পূর্বের মানুষের কাছে তাদের গ্রহনের ক্ষমতায় উপস্থাপন করতে যেয়ে ফারুকীকূল এবার ধরা খেয়েছেন।

    • ফারজানা ববি - ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১০ (১০:৫৩ অপরাহ্ণ)

      আপনার পর্যবেক্ষণ গুরুত্বপূর্ণ। তারপরো নির্মাতা যা দেখিয়েছেন তার মধ্যেই তাকে বোঝা ও সমালোচনা করা বেশি কাজের। কারণ, এভাবে তাদের উদ্দেশ্য আরো বেশি ধরা যায়। ধন্যবাদ তানবীরা।

  6. নাঈম মাহমুদ - ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১০ (৭:০৮ অপরাহ্ণ)

    ফারজানা ববি, আপনার সমালোচনা খুবই ভাল্লাগছে । আমার কাছে পুরো ব্যাপারটা গাজাখুরে মনে হয়ছে । এইটা যে ক্যামনে পুরুষ্কার পাইলো তাই বুঝলাম না।

  7. ফারজানা ববি - ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১০ (১০:৪৩ অপরাহ্ণ)

    ধন্যবাদ সবাইকে পড়ার জন্য। ধন্যবাদ যারা মন্তব্য করেছেন তাদেরও।

  8. প্রান্ত মন্ডল - ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১০ (৬:৫০ অপরাহ্ণ)

    সুশীল দর্শক ও সংবাদপত্রের মানদণ্ডে যে দর্শক রুচিহীন, বিকারগ্রস্থ ও অস্লীলতার পূজারি, সেই দর্শকের এহেন অবস্থার কারণ কি শুধুমাত্র দর্শক নিজে? সারওয়ার ফারুকীর মতো মধ্যবিত্তীয় নির্মাতারা বড় গলায় রুচিশীল ছবির কথা বলে আসলে কর্পোরেট রুচির জীবন ও পুরুষতান্ত্রিক যৌনতা নির্ভর চলচ্চিত্রই নির্মান করছেন। ‘হার্ট’ ফিল্মের নামে আসলে হৃদয়হীন-সমাজহীন এক জীবনকে মহিমান্বিত করে ‘হৃদয়হীন’ দর্শক সৃষ্টির কারখানা বসিয়েছেন। তাঁর ছবিগুলো তাই ‘পুরুষের ফ্যান্টাসি’ হয়ে ধরা দেয়।
    অসাধারন ।

  9. শামীম আহমেদ - ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১০ (৬:৫৯ অপরাহ্ণ)

    আমার যদিও ছবিটি দেখার সুযোগ হয়নি কিন্তু সমালোচনা পড়ে যা মনে হলো তাতে আমি মনে করি সমালোচনাটি পক্ষপাতদুষ্ট। সিনেমাটি লেখিকার ভাল নাই লাগতে পারে সে কারণ তার ব্যক্তিগত। সকল ব্যক্তিকে খুশি রেখে কোন নির্মাতার পক্ষেই সিনেমা নির্মাণ সম্ভব নয়। লেখিকার সমালোচনা যে প্রতিনিধিত্বশীল নয়, তা সিনেমাটির জনপ্রিয়তা ও পুরস্কার পাবার মাধ্যমেই প্রমাণিত।

    এর আগেই একজন মন্তব্যকারী বলেছেন যে, নির্মাতার কাজের স্বাধীনতা থাকা উচিত যদিও এই স্বাধীনতার পুরোপুরি ব্যবহার বিশ্বের কোথাও সম্ভব হয় না। একজন নির্মাতাকে যেমন বানিজ্যিক বিষয়টি মাথায় রাখতে হয় তেমনি সেন্সরবোর্ডের কাঁচির কথাও ভাবতে হয়। আবার নির্মাতা যেহেতু সামাজিক জীব তাকে সামাজিক প্রতিক্রিয়ার কথাও ভাবতে হয়। ছবি ভালো হোক, মন্দ হোক তাকে সমাজে বসবাস করতেই হয়, তাই প্রাইভেট ব্লগে বসে বিপ্লব করা যত সহজ সামাজিক একটি গনমাধ্যমে তা অত সহজ নয় (এই ব্যাপারে আমার নিজেরই তিক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে)। লেখিকা এবং অনেক মন্তব্যকারী বলেছেন গল্পটি এমন না হয়ে অমন হলে কি হত অর্থাৎ প্রচলিত ষ্টেরিওটাইপের বাইরে গেলে কি হত? কিন্তু সাধারণ দর্শকরা আদতেই সাধারণ। একটা ষ্টেরিওটাইপ দিয়ে একটা ঘটনা বুঝানো যত সহজ, একটা ব্যাতিক্রমী পরিস্থিতি বুঝাতে যে ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ প্রয়োজন হয় তা সাধারণ দর্শকের পক্ষে বোঝা মুস্কিল হয়ে যায়।
    লেখিকা কর্পোরেট স্বার্থের কথা বলে ছবিটির সাফল্যকে হেয় করতে চেয়েছেন, এটি একটি কমন আক্রমণ কিন্তু একলাফে সবাই কেন একটা আদর্শ ছবি প্রত্যাশা করছেন তা বোধগম্য নয়। যতটুকু হয়েছে তাকে একটা ইনক্রিমেন্ট হিসাবে আমরা কেন দেখিনা? ইনক্রিমেন্টের সাথে ইনক্রিমেন্ট যুক্ত হয়েই এই ধারার ছবি আমাদের প্রত্যাশার দিকে এগিয়ে যাবে।

    সমালোচনা করা অনেক সহজ কিন্তু যে জুতা পরে সেই বুঝে জুতা কোথায় লাগে। আমারতো মনে হয় লেখিকা নিজে নির্মাতা হলে এর চেয়ে বেশী কিছু করতে পারতেননা (বাস্তব সীমাবদ্ধতার কারনে)। তাই সমালোচনার সময় ফ্যান্টাসিকে প্রাধান্য দেয়ার চেয়ে বাস্তববাদী হওয়ার প্রত্যাশা জানাই।

    • মোহাম্মদ মুনিম - ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১০ (৩:২২ পূর্বাহ্ণ)

      পৃথিবীর সকল সমালোচকই (চলচ্চিত্র, খেলাধুলা, রাজনীতি যে বিষয়েই হোক) তাঁর নিজস্ব মতামতই লিখেন, সমালোচনা কখনোই ‘পক্ষপাতহীন” হয় না। ছবিটা দেখে আপনার যদি ভাল লাগে তবে আপনিও ব্লগে বা অন্য কোন মাধ্যমে আপনার ভালো লাগার কথা জানাতে পারেন। ইতিমধ্যেই ছবিটির প্রশংসা করে বেশ কয়েকজন রিভিউ লিখেছেন।
      “সমালোচনা করা সহজ, পারলে নিজেই একটা ছবি বানিয়ে দেখান” এই ধরণের কথারও কোন মানে হয় না। আশরাফুল পর পর দু ম্যাচে গোল্লা মারলো, উৎপল শুভ্র সেটা নিয়ে কলাম লিখলেন, আশরাফুল তাঁকে নিশ্চয় বলতে পারে না, “সমালোচনা করা সহজ, পারলে নিজে খেলে দেখান”। ফিল্ম তৈরী করা আর ফিল্মের রিভিউ দুটোই গুরুত্বপূর্ণ কাজ। ফারজানা ববি যে এই ছবিটির রিভিও লিখেছেন, সেটা ফারুকির এই ছবিটির জনপ্রিয়তাকে স্বীকার করেই লেখা, নইলে তিনি রিভিও লিখবেন কেন।

      • শামীম আহমেদ - ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১০ (৮:৫৩ অপরাহ্ণ)

        সমালোচকের সমালোচনা ভালো লাগতেই হবে তেমন নিশ্চয়ই কোন বাধা ধরা নিয়ম নেই (আমরা সম্ভবত এটাকে ব্যক্তিগত অনুভূতি না বলে সমালোচনা বলেই ধরে নিয়েছি, যেমন আপনি বলেছেনঃ পৃথিবীর সকল সমালোচকই তাঁর নিজস্ব মতামতই লিখেন)। সমালোচকের সমালোচনার, সমালোচনা করা যাবেনা তেমনও নিশ্চই কোন নিয়ম নেই। সমালোচকদের কাছে ব্যক্তিগত অনুভূতির চেয়ে আমরা “পেশাদার” সমালোচনা প্রত্যাশা করি। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়েছে সমালোচনার চেয়ে লেখিকার ‘ছবিটি কেন ভালো লাগেনি’ এই জাতীয় লেখা লিখেছেন। ছবিটির কিছু ভালো দিক নিশ্চই ছিল কিন্তু লেখিকার লেখাতে তা স্পষ্ট নয়।

        এটা সত্য যে “সমালোচনা করা সহজ, পারলে নিজেই একটা ছবি বানিয়ে দেখান” এভাবে বলা ঠিক নয় কিন্তু নিজের ফ্যান্টাসীকেও অন্যের উপরে চাপানো ঠিক নয়। লেখিকা ছবিটির জনপ্রিয়তা অস্বীকার করেছে আমি তা বলিনি কিন্তু ঐ কর্পোরেট স্বার্থ নামক শব্দ ব্যবহার করে জনপ্রিয়তাকে ছোট করতে চেয়েছেন।

        লেখিকার ব্যক্তিগত অনুভূতি হিসাবে মানানসই হলেও সমালোচনা হিসাবে ব্যালান্সড হয়নি সেটা বলাই আমার উদ্দেশ্য।

        • মোহাম্মদ মুনিম - ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১০ (৯:২৭ অপরাহ্ণ)

          আপনার সাথে একমত, সমালোচনাতে খানিকটা objectivity থাকা আবশ্যক। আর সমালোচনার সমালোচনা করার অধিকারও আমাদের আছে। দেখা যাক লেখিকা আপনার মন্তব্যের জবাবে কি বলেন।

    • ফারুক ওয়াসিফ - ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১০ (২:২৮ অপরাহ্ণ)

      সিনেমাটি লেখিকার ভাল নাই লাগতে পারে সে কারণ তার ব্যক্তিগত।

      যতদূর বুঝেছি, কোনো ব্যক্তিগত কারণের থেকে রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মানদণ্ডেই আলোচনা হয়েছে। ব্যক্তিগত কারণ কোথায় দেখলেন? ব্যক্তির আপত্তির অধিকার রয়েছে সত্য কিন্তু সেটা সমালোচনার কেন্দ্র হতে হতে পারে না, হয়ওনি বলে মনে হয়।

  10. মুক্তাঙ্গন - ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১০ (৪:৫৬ অপরাহ্ণ)

    মডারেশন আপডেট:
    গত চারদিনের চলমান মডারেশনে এই পোস্টের অধীন সর্বমোট ১০ টি মন্তব্য প্রকাশের অযোগ্য বিবেচনায় ব্লক করা হল।
    ধন্যবাদ।

  11. কল্লোল মোস্তফা - ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১০ (১০:৪৭ অপরাহ্ণ)

    সর্বশেষ মন্তব্যটি লেখা হয়েছে ৯ ই ফেব্রুয়ারি। আর আজকে ১৪ তারিখ। এত দেরীতে হলেও কিছু মন্তব্য করা জরুরী মনে করছি যত না মূল লেখাটি বিষয়ে তার চেয়ে বেশি লেখাটি নিয়ে করা মন্তব্য গুলো বিষয়ে। মূল লেখাটি সাপ্তাহিক বুধবারের বদৌলতে আগেই পড়া হয়েছিল। লেখাটি এক কথায় অসাধারণ। লেখাটি নিয়ে আর প্রশংসা না করে বরং বিপক্ষ মত পোষণকারী দুজনের মন্তব্য বিষয়ে কিছু কথা বলা যাক।

    ১) মুহাম্মদ শিহাব জহিরের মন্তব্যটি পড়ে, ফারজানা ববির সমালোচনার মান সম্পর্কে (যেমন সমালোচনাটি ফালতু) এবং তার সূত্র ধরে ব্যক্তি ফারজানা ববির পেশা, চলচ্চিত্র দর্শনের অভিজ্ঞতা, চলচ্চিত্র জ্ঞান ইত্যাদি সম্পর্কে শিহাব সাহেবের মন্তব্য পড়ে আমার তীব্র কৌতুহল হচ্ছে জানতে যে তিনি এই লেখার কোন কোন বিষয় বা বাক্য থেকে এই সিদ্ধান্তগুলোতে পৌঁছলেন এবং কি করেই বা তিনি নিশ্চিত হলেন ফারজানা ববি একজন এনজিও কর্মী, তিনি শিহাব সাহেবের থেকে কম চলচ্চিত্র দর্শন করেছেন, তিনি “সিনেমা দেখতেই শিখেননি”, তিনি কেবল রোমান পোলনেস্কির নামটাই জানেন ইত্যাদি ইত্যাদি! আমার খুব লোভ হচ্ছে দেখার জন্য তার এই অমূলক ও অহেতুক ধারণাগুলো একে একে ভেঙে দেয়া হলে শিহাব সাহেবের চেহারাটা কেমন হয়! কিন্তু আপাতত সেদিকে যাওয়ার লোভ সামলাতেই হচ্ছে- কারণ ব্যক্তিগত আক্রমণের মতোই ব্যক্তিগত প্রশস্তিও কোন লেখার সমালোচনার ক্ষেত্রে অপ্রাসংঙ্গিক।

    ২) খুব প্রিয় কোন কিছুকে খুব খারাপ বললে এবং সেই খারাপ বলার যুক্তিগলোকে খন্ডন করতে না পারলে আমরা অনেক সময় ভীষণ রেগে উঠি, কথা আটকে যায়, কথা যখন বের হয় তখন প্রলাপের মত মনে হয়- শিহাব জহির সাহেবের বেলাতেও বোধ হয় তাই ঘটেছে- এরকম একটি অনুমানের পেছনে আমার যুক্তি হলো তিনি পুরো মন্তব্য জুড়েই ব্যাক্তি ফারজানা ববির বিরুদ্ধে কথা বলে গিয়েছেন কিন্তু তার লেখার কোন যুক্তিটি কিংবা কোন লাইনটি ভুল বা অসংগত তা দেখানোর চেষ্টাও করেন নি- চেষ্টা করলেও পারতেন কি-না সে সন্দেহ নাহয় নাই করলাম!

    ৩) শিহাব জহির সাহেবের মন্তব্যটিতে লেখাটি সম্পর্কে কোন সুনির্দিষ্ট সমালোচনা না থাকলেও চলচ্চিত্র কিংবা শিল্প সম্পর্কে তার কিছু সাধারণ(বিশেষ নয় এই অর্থে) মন্তব্য আছে। আর কিছু না পেয়ে অগত্যা চলুন ঐ মন্তব্যগুলো থেকেই শিহাব সাহেবের এমন ক্ষেপে উঠার মাজেজা বোঝার চেষ্টা করা যাক। শিহাব সাহেব মনে করেন-
    “একজন পরিচালকের সাধীনতা আছে নিজের মত করে ছবি বানানোর” কিন্ত একজন দর্শক যিনি পয়সা খরচ করে সেই পরিচালকের ছবিটি দেখতে গিয়েছেন তার বোধহয় সেই “সিনেমা নিয়ে খারাপ কথা”বলার স্বাধীনতা নেই- থাকলে কি আর শিহাব সাহেবের ক্রোধের শিকার হতেন ফারজানা ববি!
    আমরা মনে করি নিজের দেখার জন্য-ভোগ করার জন্য কোন পরিচালক শিল্পী যত খুশি তার স্বাধীনতার ব্যবহার করুন তাতে আমাদের কোন আপত্তি নাই কিন্তু সেই চলচ্চিত্র বা যেকোন শিল্পকর্ম যখনই জনগণের সামনে আসবে তখন জনগণ-সমাজ-জীবনের উপর তার প্রভাব ইত্যাদির নিরিখেই তার স্বাধীনতা বিচার করতে হবে- ফারজানা ববি খুব সফল ভাবেই ফারুকী-আনিসুল হক দের শিল্পচর্চার ব্যাপারে সেই হিসেব নিকেশটিকে সামনে এনেছেন বলে মনে করি।

    ৪) শিহাব সাহেবের এরকম ক্ষেপে উঠার আরেকটি কারণ বোধ হয় পুরস্কার প্রাপ্তির সংবাদ, মিডিয়ায় ফারুকীর গুণগাণ এমনকি আব্বাস কিয়োরস্তামির মুখ থেকে ফারুকীর প্রশংসা ঝরার বিজ্ঞাপন ইত্যাদি দেখে (কিংবা বলা যায়না তিনি হয়তো তারকোভস্কি কিংবা পোলানাস্কির কোন শটের বা টেকনিকের ছায়া ফারুকীর মাঝে আবিস্কার করেছেন- আমাদের জন্য সুবিধা হতো যদি তিনি সেগুলো একটু হাজির করতেন! সাহস করে একটা কথা এখানে বলেই ফেলি- জীবনকে দেখার যে দৃষ্টি ভঙ্গি ফারুকী কিংবা আনিসুল হক গং আয়ত্ব করেছেন- সেটা যদি আগাগোড়া না পাল্টায়- তাহলে তারকোভস্কি কিংবা পোলানাস্কিদেরকে বেটে-গুলিয়ে খাইয়ে দি‌লেও একটা সিঙ্গেল চলচ্চিত্র মূহুর্ত তৈরী করতে পারবেনা ফারুকীর মতো লোকেরা! কারণ শিল্প কেবল কোন টেকনিক বা কলাকৌশলের দক্ষযজ্ঞ নয়, শিল্পের মূল হলো একটা জীবন বোধ- বাণিজ্যবোধ নয়….) মনে মনে তারকোভস্কি, পোলনস্কি এরকম রথি মহারথিদের কাতারে ফারুকীকে দাঁড় করিয়ে ফেলার পর ফারজানা ববির মতো (তার কাছে)অপরিচিত কেউ যখন তার মনে ফারুকীর এই আসন ধুলায় মিশিয়ে দেয়ার মতো একটা সমালোচনা হাজির করলেন, যখন ধরে ধরে দেখালেন নারীর সংগ্রামের কথা দেখানোর নাম করে উল্টো তাকে কেমন করে পণ্য বানানো হলো, পুরুষতন্ত্রের সমালোচনার নামে কেমন করে একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের পুরুষদেরকে পচিয়ে উল্টো বসুন্ধরা মার্কা কর্পোরট পুরুষতন্ত্রের জয়গান গাওয়া হলো…. তখন, বোঝা শক্ত নয়, শিহাব সাহেব কেন ক্ষেপে উঠেছেন।

    শিহাব সাহেব, আপনাকে বলছি, আপনি শত্রু চিনতে ভুল করেছেন ফলে ভুল মানুষের দিকে নিশানা করেছেন- আপনার ক্ষেপা উচিত ছিল( এখনও সময় আছে- শুভস্ব শীঘ্রম!) সেই মিডিয়া তন্ত্রের বিরুদ্ধে যারা আপনাকে এমন ভাবে বোকা বানানোর সমস্ত আয়োজন সম্পন্ন করেছে এবং এখনও করেই যাচ্ছে!

    • মুহম্মদ শিহাব জহির - ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১০ (১০:৩০ পূর্বাহ্ণ)

      জনাব ফারুক ওয়াসিফ এবং জনাব কল্লোল মোস্তফা দুজনকেই জানাচ্ছি আমার বিশেষ শুভেচ্ছা। শুভেচ্ছা না জানালে আমার লেখাটা হয়ত ছাপা নাও হতে পারে। একসাথেই দুজনকে বলছি কারণ একই কথা বারবার বলতে ভাল লাগেনা। হ্যা, ফারজানা ববির লেখাটি পড়ে মেজাজ খারাপ না হয়ে উপায় ছিলনা। এজন্য হয়তো সিনেমাটি সম্পর্কে তেমন কোন কথা না বলে আমি কেবল ওনার বদনাম করেছি। আমি কখনই ফারুকিকে তারকোভস্কির সাথে তুলনা করিনি। আমার বক্তব্য ছিল, সিনেমা হলে দর্শক প্রতিক্রিয়া দিয়ে সিনেমার বিচার হয়না। কিন্তু ফারজানা ববি সেটা দিয়েই শুরু করেছেন। তখন আমি বলেছি, আমাদের দেশের দর্শক সিনেমা হলে তারকোভস্কির সিনেমা চালালেও ঘুমাবে। সুতরাং দর্শক সিনেমা হলে শিষ বাজালো কিনা এটা আলোচনায় আসা অবান্তর। অবশ্য আপনাদের মত বিদগ্ধ দর্শক হলে আলাদা ব্যপার।
      আমি এখানে সিনেমা নিয়ে আলোচনা করার মত রুচি পাই নাই। কারণ এই জায়গায় সিনেমা নিয়ে গঠন মুলক কিছু লিখতে গিয়ে আমার উলুবনের কথা মনে পড়েছে। উল্লেখ্য, মুক্তাঙ্গনকে আক্রমন করে কিছু বলছিনা। এখানে যারা লিখেছেন, তাদের সম্পর্কে আমার এই ধারণা।
      আপনারা আমাকে সমালোচনা করে দেখাতে বলেছেন। খুবই ভাল কথা, আপনাদের জন্য নিচের লিঙ্কটি দিয়ে দিলাম।
      http://www.imdb.com/title/tt1514446/

      আশা করি সিনেমাটি সম্পর্কে আমার ধারণা জানতে পারবেন। আর সেই সাথে কিভাবে সিনেমা নিয়ে আলাপ করতে হয় তাও একটু হলেও শিখবেন। আমার ব্যক্তিগত আক্রমনাত্বক কথা ভুলে যাবেন। এখানে যারা আছেন তাদের সবাইকে বলছি, যদি কখনো এমন কোন সিনেমা লাগে যা কোথাও পাননি বা দেখতে চান কিন্তু সাধ্যের মধ্যে নাই, এমন কোন দুর্লভ সিনেমা যা আপনি এখনো দেখতে পারেন নাই, একবারের জন্য হলেও আমার দরজায় টোকা দেবেন। আমার সংগ্রহে সেটা থাকার সম্ভাবনা প্রচুর। আমার এই আমন্ত্রন সবার জন্যেই, বিশেষ করে ফারজানা ববি আপা,ফারুক ওয়াসিফ ভাই এবং কল্লোল মোস্তফা ভাইয়ের জন্য। এনাদের আমার বিশেষ শুভেচ্ছা আমার অবসরকে এত আনন্দঘন করে তোলার জন্য। সবাই ভাল থাকবেন।

      • মুহম্মদ শিহাব জহির - ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১০ (১:৫৫ অপরাহ্ণ)

        আর ভাল কথা, কোন কারণে IMDB যদি তাদের ফ্রন্ট পেজ থেকে লেখাটি সাময়িকভাবে সরিয়ে থাকে তাহলে লেখাটি আমার ব্লগে পড়তে পারেন।
        http://chobi-ghor.blogspot.com/

      • কল্লোল মোস্তফা - ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১০ (৫:৩৬ অপরাহ্ণ)

        “হ্যা, ফারজানা ববির লেখাটি পড়ে মেজাজ খারাপ না হয়ে উপায় ছিলনা। এজন্য হয়তো সিনেমাটি সম্পর্কে তেমন কোন কথা না বলে আমি কেবল ওনার বদনাম করেছি।“

        আপনাকেও শুভেচ্ছা এবং সেই সাথে ধন্যবাদ আপনার এই সরল স্বীকারোক্তির জন্য।

        “আমি কখনই ফারুকিকে তারকোভস্কির সাথে তুলনা করিনি। আমার বক্তব্য ছিল, সিনেমা হলে দর্শক প্রতিক্রিয়া দিয়ে সিনেমার বিচার হয়না। কিন্তু ফারজানা ববি সেটা দিয়েই শুরু করেছেন। তখন আমি বলেছি, আমাদের দেশের দর্শক সিনেমা হলে তারকোভস্কির সিনেমা চালালেও ঘুমাবে। সুতরাং দর্শক সিনেমা হলে শিষ বাজালো কিনা এটা আলোচনায় আসা অবান্তর। অবশ্য আপনাদের মত বিদগ্ধ দর্শক হলে আলাদা ব্যপার।”

        ধরে নিলাম আপনি ফারুকিকে তারকোভস্কির সাথে তুলনা করেননি কিন্তু যে সিনেমা দেখলে ঘুম আসে আর যে সিনেমা দেখলে দর্শক শিষ বাজায় সেদুটোকে একপাল্লায় মেপেছেন- এই টুকু তো আপনার এই কথা থেকেও পরিস্কার তাই না? আমরা এই দুটোকে একই ধরনের বিষয় বলে মনে করিনা। কারণ- কোন সিনেমার বিষয় এবং ফর্ম যদি দর্শকের কাছে এলিয়েন মনে হয়, দর্শক যদি সেই সিনেমার বিষয় এবং পরিপ্রেক্ষিতের সাথে একাত্ন হতে না পারে বা একাত্ম হওয়ার সুযোগ যদি নির্দিষ্ট বাস্তব কারণেই দর্শকের না থাকে তাহলে সেই সিনেমা যত মহান শিল্পকর্মই হোক না কেন দর্শকের তাতে ঘুম আসতেই পারে- এটা যতটুকু ব্যাক্তি দর্শকের সীমাবদ্ধতা তার চেয়ে বেশি হলো যে বাস্তবতা দর্শকের মধ্যে এই সীমাবদ্ধতা আরোপকরে সেই বাস্তবতার সমস্যা। অন্যদিকে যে বাস্তবতা দর্শককে তারকোভস্কির সিনেমা কনটেন্ট, নন লিনিয়ার ন্যারেটিভ স্টাইল, তার প্রেক্ষিত ইত্যাদির সাথে সম্পর্ক যুক্ত হতে বাধা দেয়, সেই বাস্তবতাই কিন্তু আবার ফারুকীর থার্ড পারসন সিংগুলার নাম্বারের মত একটা সিনেমার একটা নির্দিশ্ট শ্রেণীর ও বয়সের দর্শকের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠার প্রেক্ষাপট তৈরী করে, সে সিনেমার প্রোটাগনিষ্টের দু:খ যন্ত্রণাকে তাদের কাছে “ফান” এ পরিণত করে এবং একপর্যায়ে তাদের সিটি বাজাতেও উতসাহিত করে। ঠিক এই কারণেই যে দর্শক তারকোভস্কির সিনেমা দেখে ঘুমিয়ে পড়ে সেই দর্শক কেন ফারুকীর ছবি দেখে শিষ বাজায় সেটা আলোচনায় আসাটা শুধু যে সঠিক তাই না, একেবারে অবশ্যম্ভাবী ছিল- কারণ এ আলোচনা একটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ছুড়ে দেয়- যে ছবি এক জন্য মধ্যবিত্ত নারীর জীবন সংগ্রাম এবং তার সাথে সম্পর্কিত সমাজের পুরুষতান্ত্রিকতার চেহারা হাজির করবে বলে দাবী করছে- সে ছবি এই রিপ্রেজেন্টেশন কেমন ভাবে করছে- এই ছবি দেখে কি দর্শকের মধ্যে ঐ নারীর প্রতি শ্রদ্ধা বোধ তৈরী হচ্ছে নাকি সেই নারীকে ফ্লাট এবং স্টেরিওটাইপিক্যালি হাজির করার কারণে এবং শুরুতে রিয়েলিটির টাচ দেয়ার পর ফ্যান্টাসির গোলাপি ডানায় তাকে ভাসিয়ে দেয়ার কারণে তাকে খাটো করছে এবং তাকে পুরুষতন্ত্রের ভোগের সামগ্রী হিসেবেই হাজির করা হয়েছে?- এই প্রশ্নগুলো ছুড়ে তার জবাব অনুসন্ধানের জন্যই ফারজানা ববিকে দর্শকের প্রতিক্রিয়া থেকে শুরু করতে হয়েছে- আমি কি বিষয়টি পরিস্কার করতে পেরেছি- পরিস্কার না হলে বলবেন আবারও চেষ্টা করবো কিন্তু দয়া করে আমাদেরকে একবার “বিদগ্ধ দর্শক” আর তার ঠিক পরক্ষণেই আবার “আমি এখানে সিনেমা নিয়ে আলোচনা করার মত রুচি পাই নাই। কারণ এই জায়গায় সিনেমা নিয়ে গঠন মুলক কিছু লিখতে গিয়ে আমার উলুবনের কথা মনে পড়েছে।”- জাতীয় বিদ্বেষমূলক বিশেষণ ব্যাবহার করবেন না—কারণ এরকম বাক্য আপনি যতই ব্যাবহার করুন না কেন, সঠিক যুক্তি দিয়ে আমাদের ভুল ধরিয়ে দিতে না পারলে কখনই আপনার বক্তব্য আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না।

        এবার আসা যাক আপনার করা সমালোচনা টি প্রসংগে। আইএমডিবিতে করা একটি সমালোচনার লিংক দি‌য়ে আপনি এতটাই গর্ব ও আত্মবিশ্বাসের সাথে বলেছেন যে “আশা করি সিনেমাটি সম্পর্কে আমার ধারণা জানতে পারবেন। আর সেই সাথে কিভাবে সিনেমা নিয়ে আলাপ করতে হয় তাও একটু হলেও শিখবেন।”- তাতে আমি আসলেই কিছু শেখার আসা নিয়ে লেখাটি পড়লাম কিন্তু দু:খের সাথে বলতে হচ্ছে- “এই ভাবে স্রেফ কতগুলো মন্তব্যের সমষ্টি এবং ব্যাক্তির ভালো লাগার প্রকাশ দিয়ে চলচ্চিত্র সমালোচনা হয়না ”- এই শিক্ষাটুকু ছাড়া আর কোন কিছু শিখতে পারলাম না! কেন, তার কারণ ব্যাখ্য করার জন্য( অন্য পাঠকদের সুবিধার জন্য) আপনার আলোচনাটি নীচে তুলে দিয়ে কিছু কথা বলার চেষ্টা করবো-

        User Reviews
        Revolution in Bangladeshi cinema once again, 8 February 2010
        Author: sjahir_888 from Bangladesh
        Mostafa Sarwar Farooki is one of the rising big shots and a veteran in Bangladesh TV and film media. I don’t doubt his genius and eccentric creativity for which he is specially acclaimed. But again, being a popular television drama director and a film director are totally two different things. His television dramas are fantastically unique and sometimes weirdly funny. When every other television dramas are full of monotonous cliché and disgusting imitation of Indian soap operas, Sarwar Farooki always comes with a promise of completely different sets of entertainment. When he first came up with his first film “Bachelor”, it was an unbelievably successful film in Bangladesh considering the response from the youngsters. And this film was made for youngsters. I would say, the film has done revolution in contemporary Bangladeshi films. But when he came up with the second film (“Made in Bangladesh”) it was unrealistically and unexpectedly an out of class film. Actually, there is nothing to talk about this one. This time, Sarwar Farooki came up with his third film which was long awaited “3rd Person Singular Number”. I had a chance to watch the film a few days ago. I don’t care what others have to say…but I put my hat off to Mr. Farooki. He is indeed a master and a potential hope in our hopeless film industry.

        The story circles about a lone girl who has been misfortunate, exhausted and manipulated by the male dominated society of ours where every woman searches for physical and mental security. The protagonist is completely homeless and deserted her family as her husband remains in the jail for murdering someone and her mother stays with her second husband. The film starts with a real kick from the very beginning with dark and tensed sequences and keeps it intact. I am not a feminist but I shared the pain, misery and irony of the central character. There are fun and also disturbance in a good ratio. Some of the sequences are absolute cliché and average. In the character of the “husband”, Mosharraf Karim provides another very “into the character” performance. Topu also delivered an enjoyable and amusing role which was humorous and interesting. Cinematography was good as expected.

        Some of the very bitter truths are exposed in the films as good films always do. The psychological and moral dilemma of the central character which Tisha played was gripping and sometimes suffocating. According to our society, ‘living together is not supported at all. Some viewers complained about it but I think there was nothing to complain about this issue because the film also does not support living together without marriage and it shows the evil outcomes of doing it in a conservative society like ours. But I didn’t like the ending part that much. It reminded me of watching “Jules and Jim” and other European films which does not match with our socio-cultural and psychological structure. But a director should always have the right to escape to his imagination where reality ends. The most engaging factor is, the film has nothing sinister or shocking plot-line but simple yet meaningful way of showing things. That’s the fact I liked most.

        To me, it was a film for matured viewers. You will not like the film if you are always looking for funny sequences like Farooki’s previous works. This is unlike his other works…with more depth, messages and reality. In a nutshell, it is a sensible and worth watching film.

        ফারজানা ববির লেখাটি এই ব্লগে প্রকাশিত হয়েছে ৪ঠা ফেব্রুয়ারি আর আপনার লেখাটি আইমডিবিতে প্রকাশিত হয়েছে দেখা যাচ্ছে ৮ই ফেব্রুয়ারি- ফলে তারিখটি দেখেই প্রত্যাশা জেগেছিল যাক আমাদের মতো আলোচকদের জন্য উলুবনে মুক্তা না ছড়ালেও আইএমডিবিতে হয়তো আপনি স্বচ্ছন্দ বোধ করবেন কিছু মুক্তা ছড়াতে অর্থাত ৪ঠা ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত লেখাটিতে ফারূকীর ছবিটি সম্পর্কে যে সব অভিযোগ ববি তুলেছেন সেগুলোর একটা সমালোচলক সুলভ জবাব দেবেন কিংবা নিদেন পক্ষে ছবিটি আপনার কেন এত ভালো লেগেছে যে আপনি এটাকে বাংলাদেশী সিনেমার জন্য একটা রেভ্যুলেশন বলে দাবী করছেন সে বিষয়ে কিছু যুক্তি তর্ক হাজির করবেন কিন্তু আপনার আলোচনাটি পরে যারপরনাই হতাশ হতে হলো- কারণ এক জায়গায় “I don’t care what others have to say…but I put my hat off to Mr. Farooki. He is indeed a master and a potential hope in our hopeless film industry.” কথাগুলো বলা ছাড়া বিচার-বিশ্লেষনের কোন চেষ্টাই তো দেখলাম না। ধরলাম ববির সমালোচনা আপনার কাছে care করার মতো বিষয় না তাই আপনি সে দিকে যান নি কিন্তু কেন আপনার কাছে ছবিটি রেভ্যুলুশনারি কিংবা কেন আপনার কাছে ফারুকী সাহেবকে একজন মাস্টার মনে হলো- সে দিকেও একবারের জন্য গেলেন না আপনি।(এ বিষয়ে খুব ভালো হয় অন্যান্য পাঠক দের মতামত পেলে, বলা তো যায় না আমি পক্ষদুষ্টও তো হতে পারি…)

        আপনি আপনার লেখাটির প্রথম প্যারায় ফারূকীর থার্ড পারসন সিংগুলার নাম্বার ছবির আগের দুটি ছবি “Bachelor”, এবং “Made in Bangladesh” এর প্রসংগ উল্লেখ করে ফারূকীর ব্যাপক গুণ গান গাইলেও, তাকে আমাদের hopeless film industry এর potential hope বলে উল্লেখ করলেও ঠিক কি কি গুণের কারণে আপনার এই ধারণা গজালো সেটা কিন্ত একেবারেই পরিস্কার করেন নি। ফলে প্রথম প্যারাটিকে আপনির আলোচনার ভূমিকা এবং কিছু প্রশংসাসূচক মন্তব্য ছাড়া আর কিছুই নাই যেখান থেকে চলচ্চিত্র সমালোচনা শেখা যেতে পারে।

        দেখা যাক দ্বিতীয় প্যারা থেকে শিক্ষামূলক কিছু পাওয়া যায় কি-না। দ্বিতীয় প্যারায় আপনি মূলত ছবিটির কাহিনীর একটা ধারণা দেয়ার চেষ্টা করেছেন এবং ছবির শুরুতে কিছু “dark and tensed sequences” এবং সেই সিকোয়েন্স থেকে কেন্দ্রিয় চরত্রের জন্য আপনার “pain, misery and irony” এর অনুভুতি হওয়ার কথা বলেছেন, কিছু “absolute cliché and average” সিকোয়েন্স থাকার কথা বলেছেন কিন্তু শুরুর দিককার “pain, misery and irony” যে ঠিক তার পর থেকেই একবারে শিষ দেয়ার উপাদানে পরিণত হলো সেই বিষয়টা আশ্চর্যজনক ভাবেই আপনার পর্যবেক্ষণের বাইরে থেকে গেল- শুধু তাই না ফারজানা ববি বিষয়টি তার আলোচনায় ধরিয়ে দেয়ার পরও আপনি সে বিষয়টির কোন ব্যাখ্যা হাজির করার চেষ্টা করলেন না! শুধু তাই না “dark and tensed sequences” গুলোর ডার্ক এবং টেন্স হয়ে উঠার শানে নযুল, সিনেমা ভেরিটে স্টাইলে হ্যান্ড-হেল্ড ক্যামেরার ব্যাবহার ইত্যাদির কোন বিচার বিশ্নেষণও নাই(শুধু Cinematography was good as expected কথাটি বলা ছাড়া!) এমনকি কোন কোন সিকোয়েন্স তার কাছে “absolute cliché and average” মনে হয়েছে এবং কি কারণে সেবিষয়ে আলোচনা করারও কোন চেষ্টা দেখলাম না- চলচ্চিত্র সমালোচনার কি শিখব ভাই আপনার কাছ থেকে? স্রেফ কিছু ভালো লাগা/মন্দ লাগার মন্তব্য করা?

        তৃতীয় প্যারায় আপনি ছবিটির কেন্দ্রীয় চরিত্রের “psychological and moral dilemma” তীব্র হওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন, লিভ টুগেদারের চলচ্চিত্রায়ন এবং আমাদের মতো রক্ষণশীল সমাজে তার “evil outcomes” দেখানো হয়েছে বলে দাবী করেছেন এবং ট্রুফোর জুল এন্ড জিম ছবির মতো এর সমাপ্তি বিষয়ে তার অসুন্তষ্টি প্রকাশ করেছেন এই যু্ক্তিতে যে ইউরোপীয়ান ছবি আমাদের “socio-cultural and psychological structure” এর সাথে খাপ খায়না যদিও তিনি মনেকরেন পরিচালকের অধিকার রয়েছে “escape to his imagination where reality ends”। যে বিষয়টি তার সবচেয়ে ভালো লেগেছে তা হলো:” the film has nothing sinister or shocking plot-line but simple yet meaningful way of showing things”- এই প্যারাতেও সেই একই ব্যাপার- সমালোচনা হয়ে ওঠার বেশ ভালো সম্ভাবনা থাকলেও ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ, ইমেজের বা সিকোয়েন্সের প্রয়োজনীয় উদাহরণসহকারে সে মন্তব্যগুলোকে প্রতিষ্ঠা করার কোন প্রয়োজনীয়তা বোধ না করা ইত্যাদি কারণে সে সম্ভাবনা একে বারেই মাঠে মারা গেছে। যেমন: ঠিক কোন কোন সিকোয়েন্স বা ইমেজ থেকে তার মনে হয়েছে ছবিটিতে লিভ টুগেদারের ইভিল আউটকাম দেখানো হয়েছে, ছবির শেষ দৃশ্যের সাথে জূল এন্ড জিমের ঠিক কোন বিষয়টির তিনি মিল খুজে পেলেন ইত্যদির কোন উপযুক্ত উদাহরণ ছবির মধ্য থেকে দেখানোর কোন প্রয়োজনীয়তাই তিনি বোধ করেননি কেবল অসীম ক্ষমতাবানের মতো মতামত দিয়ে গেছেন- ভাব খানা এমন- তার মতো একজন সমালোচক যেহেতু এগুলো বলছেন তাই এগুলোকে সত্যি বলে বিশ্বাস করে নেয়া পাঠকের কর্তব্য। সবচেয়ে বড় কথা হলো উদাহরণ ও বিচার বিশ্লেষণ না করার সুবিধা হলো ইচ্ছে মত অনেক গুণাবলী যেমন আরোপ করা যায় তেমনি অনেক দোষ ঢাকাও যায়। যেমন: তিনি দাবী করেছেন এ ছবি তে নাকি কোন “sinister or shocking plot-line” নাই! অথচ পুরো ছবি জুড়েই রুবার সাথে তপুর সম্ভাব্য যৌন মিলনের বিষয়টিকে কেন্দ্র করে যে আবহ তৈরী করা হয়েছিল এবং সেই আবহকে জোরদার করার জন্য একলা বাসায় রুবা ও তপুর শারীরিক তাড়নার চিত্রায়ণ, ভাদ্র মাসের কুকুরের মতো তপুর অস্থিরতা প্রদর্শন, শারীরিক তাড়না দমন করার জন্য তপুর বুক ডন দেয়া কিংবা শারীরিক তাড়ানার চোটে রুবার দরজায় বার বার টোকা দেয়া কিংবা দরজার ফাক দিয়ে উকি দেয়া ইত্যাদির সাথে নজরুলের রণ সঙ্গীত “চল চল” এর ব্যবহার কিংবা তপুর কনডম কেনার দৃশ্যায়নের ট্রিটমেন্ট ইত্যাদি তার কাছে সিনিস্টার বা শকিং মনে হয়নি- অবশ্য হতেই পারে- আজকালকার নয়া মধ্যবিত্তের নয়া কর্পোরেট সংস্কৃতিতে এগুলো হরহামেশায় ঘটে- ফলে তার কাছে এগুলো খুবই স্বাভাবিক এবং “simple yet meaningful way of showing things” বলে মনে হয়েছেন এবং ফলে এগুলোর জাস্টিফিকেশানের কোন প্রয়োজনীয়তা বোধ করেননি।

        শেষ প্যারতেও তিনি একই ভাবে এই ছবি কেবল “matured viewers” দের জন্য এবং এই ছবি “ unlike his other works…with more depth, messages and reality” বলে দাবী করে এটাকে দেখার মতো একটি ছবি বলে ঘোষণা করেছেন। হতেই পারে এইটা “matured viewers”(কথাটি কি তিনি ম্যাচিউরড বা পরিণত দর্শক বোঝানোর জন্য ব্যাবহার করেছিলেন নাকি adult বা প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য বোঝাতে চেয়েছিলেন!) কিন্তু কোথায় তিনি ডেপথ পেয়েছেন এবং কি মেসেজ তিনি খুজে পেয়েছেন তা বলার কোন প্রয়োজন বোধ করেননি।

        এসকল কারণেই আইমডিবিতে প্রকাশিত আপনার এই সমালোচনাটিকে আমার এমন কোন সমালোচনার জাত মনে হয়নি যেটাকে ফারজানা ববির এই সামালোচনার সাথে তুলনা করা যেতে পারে কিংবা যেটা থেকে “কিভাবে সিনেমা নিয়ে আলাপ করতে হয় তাও একটু হলেও” শেখা যায়!

        সবশেষে আপনি আপনার মন্তব্যের শে‌ষে কোন ছবি কোথাও খুজে না পেলে আপনার কাছে যাওয়ার যে আমন্ত্রণ আমাদের জানিয়েছেন সে আমন্ত্রণের মধ্যে নির্লজ্জ অহংবোধ ফুটে উঠলেও আপনার সে আমন্ত্রণ সাদরে গ্রহণ করছি এই সম্ভাবনায় যে আর কিছু না হোক ফারুকী টাইপের ছবি নির্মাতাদের ছবি তো আপনার কাছে পাবোই!

  12. কল্লোল মোস্তফা - ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১০ (১১:৩০ অপরাহ্ণ)

    এবার আসা যাক শামীম আহমেদ এর করা মন্তব্য প্রসংগে। শামীম আহমেদের মন্তব্যটি গুণে মানে শিহাব জহিরের তুলনায় বেশ গোছানো হলেও শিহাব সাহেবের মতো শামীম সাহেবও বোধ হয় কিছু অনুমানের উপর ভর করে আলোচনা করতে নেমেছিলেন। যেমন তিনি বলেছেন প্রাইভেট ব্লগে বসে বিপ্লব করা যত সহজ, সামাজিক একটি গণমাধ্যমে অত সহজ নয় – অর্থাত তিনি নিশ্চিত হয়ে বসে আছেন ফারজানা ববির এ অভিজ্ঞতা নেই কিংবা ফারজানা ববি সামাজিক গণমাধ্যমে কাজ করেনি। সবচেয়ে অবাক হওয়ার বিষয় হলো ছবিটি না দেখেই তার ফারজানা ববির লেখাটিকে পক্ষপাতদুষ্ট মনে হওয়াটা- কসম বলছি, তার এই মন্তব্য পড়ে আমার চোয়াল ঝুলে পড়েছিল, আমি অনেকক্ষণ হা হয়েছিলাম- শামীম আহমেদ কি করে না ভেবে পারলেন যে মূল বিষয়ের সাথে সম্যক পরিচিত না হয়েই সেই বিষয়ের উপর করা সমালোচনাকে পক্ষদুষ্ট বলাটা উল্টো তাকেই পক্ষপাত দুষ্ট প্রমাণিত করে দেবে কি-না!!! ধরা যাক, আমি শামীম সাহেব কে ভালো ভাবে চিনিনা। এখন শামীম সাহেবের সম্পর্কে কেউ যদি বেশ কিছু যুক্তি উদাহরণ দিয়ে আমাকে সাবধান করে বলে যে, ভাই দেইখেন উনি কিন্তু লোক সুবিধার না- তখণ আমি যদি কোন কিছু যাচাই বাছাই না করেই ঐ ব্যাক্তিকে বলে বসি- “দেখেন, আপনি শামীম সাহেবের সমালোচনা করেছেন, আপনি তাকে কর্পোরেটের দালাল বলেছেন ফলে আপনি পক্ষপাত দুষ্ট” তখন ঐ ব্যাক্তিটি আমাকে স্রেফ ভোদাই কিংবা আমাকে উল্টো পক্ষপাত দুষ্ট বললে আমার কিছু বলার থাকবে কি?

    তারপর শামীম সাহেব বলেছেন: “লেখিকার সমালোচনা যে প্রতিনিধিত্বশীল নয়, তা সিনেমাটির জনপ্রিয়তা ও পুরস্কার পাবার মাধ্যমেই প্রমাণিত।“ বেশ! বেশ! বোঝা গেল শামীম সাহেব প্রতিনিধিত্ব বলতে আসলে কি বুঝেন – আমাদের যেরকম মনে হচ্ছে, সেই মতো, তিনি প্রতিনিধিত্বশীল বলতে যদি প্রিন্ট এবং ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়াকেই বুঝে থাকেন, জনপ্রিয়তা বলতে যদি কেবল মধ্যবিত্ত-উচ্চমধ্যবিত্তের একটি নির্দিষ্ট বয়সের দর্শকের “ফান” এর খোরাক হওয়াকেই বুঝে থাকেন তাহলে তিনি ঠিকই বলেছেন- ফারজানা ববি সেই অর্থে আসলেই প্রতিনিধিত্বশীল নয়- আর তার লেখা পড়ে আমার মনেও হয়নি যে তিনি সেই “প্রতিনিধিত্বশীল” হওয়ার জন্য উন্মুখ হয়ে আছেন!

    শামীম সাহেবের মনে হয়েছে “লেখিকা কর্পোরেট স্বার্থের কথা বলে ছবিটির সাফল্যকে হেয় করতে চেয়েছেন, এটি একটি কমন আক্রমণ কিন্তু একলাফে সবাই কেন একটা আদর্শ ছবি প্রত্যাশা করছেন তা বোধগম্য নয়। যতটুকু হয়েছে তাকে একটা ইনক্রিমেন্ট হিসাবে আমরা কেন দেখিনা? ইনক্রিমেন্টের সাথে ইনক্রিমেন্ট যুক্ত হয়েই এই ধারার ছবি আমাদের প্রত্যাশার দিকে এগিয়ে যাবে।” তার এ মন্তব্য থেকে আমরা কি বুঝবো- ছবিটি আসলে কর্পোরেট স্বার্থের প্রতিনিধিত্ব করে নি, ফারজানা ববি স্রেফ অপবাদ দেয়ার জন্য এ বিষয়টি ব্যাবহার করছেন? শামীম সাহেব ছবিটি না দেখেই কি ভাবে শিউর হলেন ফারজানা তার আলোচনায় বসুন্ধরা গ্রুপের গুণগাণ গাওয়া থেকে শুরু করে কর্পোরেট সংস্কৃতির বয়ান ছবিটির পরতে পরতে থাকার যে অভিযোগ করেছেন তা মিথ্যে বা বানোয়াট? কিভাবে তিনি এত নিশ্চিত হলেন যে “যা হয়েছে তা একটা ইনক্রিমেন্ট”, ডিক্রিমেন্ট নয়? কিভাবে নিশ্চিত হলেন যেটাকে তিনি ইনক্রিমেন্ট ভাবছেন সেটা আসলে আমাদের সাংস্কৃতিক জীবনের উপর একটার পর একটা ক্ষয়কারী উপাদানের সমাহার নয়?

    দু:খজনক হলেও বলতেই হচ্ছে, আপাত অর্থে বেশ গোছানো মনে হলেও শামীম সাহেব, আপনিও বোধ হয়, ফারজানা ববির এই লেখার মধ্যে আপনার কল্পনার ইনক্রিমেন্টের একেবারে উল্টো চেহারা দেখে, সঠিক বিচার বিবেচনার উপর ভর করে মন্তব্যগুলো করতে পারেননি!!

  13. সায়েমা খাতুন - ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১০ (২:১৮ অপরাহ্ণ)

    প্রিয় ববি,
    মজা পেলাম তোমার লেখার এত রকম প্রতিক্রিয়া পড়ে। অসাধারণ লেখা। বিশ্লষণ ক্ষুরধার। একেবারে আঁতে ঘা লেগে গেছে। ভালবাসা জানালাম।
    সায়েমা আপা

  14. ফৌজিয়া খান - ৬ মার্চ ২০১০ (৮:৫৯ পূর্বাহ্ণ)

    ববি,
    আমি অনেকদিন পরে লেখাটি পড়লাম।
    লেখা পড়তে পড়তে ফারুকী গঙদের আক্রমণের হূল কল্পনা করছিলাম।
    লেখা শেষে দেখি, আমার কল্পনা বাস্তবসমম্মত!!!

    লেখা খুব সুন্দর হয়েছে।
    আরো লেখা আশা করছি।

  15. রাসেল আহমেদ - ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১০ (২:১৯ পূর্বাহ্ণ)

    শিহাব জহিরের ‘নিজের ঢোল পেটানো ‘ এবং সেই ঢোলের ‘ঢিলা চামরা’ দেখে লজ্জা পেলাম । আমার গ্রামের বাড়ীতে একটি প্রবাদ আছে ” হাগন্তির লাজ নাই , দেহন্তীর লাজ( অর্থাত্‍ যে রাস্তার পাশে পায়খানা করে তার লাজ নাই , বরং যে দেখে সে লজ্জা পায়)”। লেখিকা কে ধন্যবাদ এরকম চমত্‍কার একটি লেখা লিখবার জন্যে ।

Have your say

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.