ভারতকে বুঝতে গেলে বা ভারতের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক ঠিকভাবে নির্ধারণ করতে গেলে প্রথমে দুটো দৃষ্টিভঙ্গী বাতিল করতে হবে। এগুলো হল প্রথমত, যেহেতু ভারত ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে সহযোগিতা করেছিল সেহেতু ভারত কখনো বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী কোন অবস’ান গ্রহণ করতে পারে না। সুতরাং বাংলাদেশ সম্পর্কে ভারতের কোন ভুমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলা অকৃতজ্ঞতার শামিল। এবং দ্বিতীয়ত, ভারত একটি হিন্দুপ্রধান রাষ্ট্র সুতরাং সেই হিসেবে মুসলিমপ্রধান রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের উপর সে আধিপত্য বিস্তার করছে। ভারতকে মোকাবিলা অতএব একটি সাম্প্রদায়িক প্রশ্ন।
রাষ্ট্রের সাথে রাষ্ট্রের সম্পর্ক নৈব্যক্তিক। এখানে মহানুভবতা, দয়া দাক্ষিণ্য এমনকি সমপ্রদায়গত বিবেচনা কাজ করে না। রাষ্ট্র কাজ করে তার আভ্যন-রীণ শ্রেণীশক্তির বিন্যাস, তার চাহিদা, নীতি ও প্রতিষ্ঠান অনুযায়ী। অন্যান্য উপাদান এর অধীনস-। ব্যক্তির ভূমিকা সেখানে খুবই গৌণ, নিছক মুখপাত্রের।
ভারতকে বিবেচনা করতে হবে একটি বৃহৎ রাষ্ট্র হিসেবে, আশেপাশের সবগুলো দেশের তুলনায় যার অর্থনৈতিক, শারীরিক, সামরিক শক্তি অনেকগুণ বেশি। এটি এমন একটি রাষ্ট্র যেটি স্বাধীনতা লাভের পর থেকে ধারাবাহিকভাবে নির্বাচিত সরকার দ্বারা পরিচালিত হয়ে আসছে, কিন’ একইসঙ্গে যার এক তৃতীয়াংশ অঞ্চল এখন সামরিক বাহিনী দ্বারা পরিচালিত। ভারত এমন একটি রাষ্ট্র যেখানে কোটিপতির সংখ্যা পৃথিবীর সর্বোচ্চ, রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতায় বৃহৎ পুঁজিপতির একটি শক্তিশালী ভিত্তি তৈরি হয়েছে সেখানে যার চাহিদা বাজার সমপ্রসারণ, পুঁজিবিনিয়োগ, মূলধন সংবর্ধনে দখল বিস্তার। যুক্তরাষ্ট্রের সাথে কৌশলগত ঐক্য এই শ্রেণীর দাপট আরও বৃদ্ধি করেছে। আবার ৪০ কোটি মানুষেরও বেশি অর্থাৎ একদেশে পৃথিবীর সবচাইতে বৃহৎ সংখ্যক দরিদ্রের বাসও এই ভারতেই। একদিকে জাকজমক অনেক বৃদ্ধি পেলেও শ্রেণীগত জাতিগত লিঙ্গীয় বর্নগত আঞ্চলিক বৈষম্য খুবই প্রকট। সামপ্রদায়িকতা আর জাতপাতের সংঘাত সহিংসতা নানাভাবে জারী আছে। বৈষম্য, নিপীড়ন ও মূলধন সংবর্ধনের আদিম ও আধুনিক দুটো রূপই সেখানে এখনও প্রবলভাবে উপসি’ত। শাসক শ্রেনীর বাঁধ নির্মাণ সহ তথাকথিত উন্নয়ন উন্মাদনায় ভারতের বহু কোটি মানুষ এখন উদ্বাস’, ছিন্নভিন্ন। প্রতিরোধও নিচ্ছে নানা মাত্রা। অন্যদিকে যেসব অঞ্চলে খনিজ সম্পদ বেশি সেখানে নানা অজুহাতে সামরিকীকরণ বাড়ছে, বাড়ছে বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড।
নিজ দেশেই সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ যেখানে রাজনৈতিক অর্থনৈতিক ও সামরিক নিপীড়নের শিকার সেই ভারত তার আশেপাশের তুলনামূলক দুর্বল দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক স্থাপনে কাদের স্বার্থের প্রতিনিধিত্ব করবে তা বুঝতে অসুবিধা হবার কথা নয়। বাংলাদেশের সাথে ভারতের যেসব সমস্যা জটিল আকার ধারণ করেছে সেগুলো তাই নিছক ভুল বোঝাবুঝি বা সরকার বিশেষের বাংলাদেশ বিদ্বেষ প্রসূত নয়। এর কারণ একদিকে ভারতের শাসক শ্রেনীর পাশ্ববর্তী তুলনামূলকভাবে দুর্বল দেশগুলোর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গী এবং তার এজেন্ডা বাস্তবায়নে পরিকল্পিত পদক্ষেপ এবং অন্যদিকে বাংলাদেশের সরকারগুলোর বা নির্দিষ্টভাবে শাসকশ্রেণীর অবনত অবস্থান থেকে সৃষ্ট।
তালপট্টি ইস্যু ও ফারাক্কা বাঁধ বাংলাদেশের একটি অনেক পুরনো বোঝা। কোন সরকার এগুলো নিয়ে নিজেদের অবস্থান নিজদেশে ও আন-র্জাতিক পর্যায়ে প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। আর তার ফলে এখন আরও অনেক বিপদ তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশের সমুদ্র সীমার দুই তৃতীয়াংশ এখন ভারত ও মায়ানমার দাবি করছে। ভারত, মায়ানমার আর সেইসঙ্গে চীন ও যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গোপসাগরকে ভাগাভাগি করে নেবার আয়েজনে ব্যস্ত, বাংলাদেশের সরকারগুলো এই বিষয়ে তাদের বিভিন্নমাত্রায় সুযোগ ও সেবাদান ছাড়া আর কিছু করেনি। নদীর পানি বন্টন এখন আরও বড় ঝুঁকির মুখে। টিপাইমুখ বাঁধ ও সেইসঙ্গে ফুলেরতল ব্যারেজ বাংলাদেশের জন্য একটি বড় বিপদ হিসেবে হাজির হতে যাচ্ছে। সরকারের অবস্থান একেবারইে নাজুক। ভারত বাংলাদেশের সীমান- জুড়ে একদিকে কাঁটাতারের বেড়া দিচ্ছে, গুলি করে প্রায় প্রতিদিন তারা মানুষ মারছে আবার অন্যদিকে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে তার এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে যাবার নিরাপদ রাস্তা তৈরির প্রকল্প তৈরি করছে। এসব বিষয়ে সরকারের অবস্থান খুবই দুর্বল কিংবা ভারতের প্রতিধ্বনি ছাড়া আর কিছু নয়।
বাংলাদেশের সরকার যদি জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে তাহলে এই মুহূর্তে ভারতের সাথে অন্য যেকোন আলোচনার আগে তিনটি বিষয় স্পষ্টভাবে উপস্থাপন ও নিশ্চিত করতে হবে: ১. সীমান্তে মানুষ হত্যা অবিলম্বে বন্ধ করা এবং এযাবতকালের হত্যাকান্ডের আন্তর্জাতিক বিচার। ২. টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণের সব কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করে যৌথ সমীক্ষা শুরু। এবং ৩. সমুদ্র সীমায় বাংলাদেশের ন্যায্য অবস্থানের স্বীকৃতি। প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভারত সফরে এবিষয়গুলো কীভাবে উপসি’ত করেন তা থেকেই তাঁর অবস্থান পরিষ্কার হবে।
Have your say
You must be logged in to post a comment.
১৬ comments
প্রণব আচার্য্য - ৮ জানুয়ারি ২০১০ (২:২৭ অপরাহ্ণ)
ভারত তার ভুরাজনৈতিক সুবিধা ব্যবহার করে শোষন করছে বাংলাদেশকে। বানিজ্যিক ভাবে ভারত গ্রাস করে চলছে আমাদের; আমাদের নদী সম্পদ ছিনতাই করছে ভারত। এবঙ এভাবেই ভারতীয় সাম্রাজ্যবাদ বিভিন্ন ভাবে আমাদেরকে গ্রাস করে চলছে। সেই দিকে আমাদের কোন খেয়াল নেই। আমরা রাত জেগে পাহারা দিচ্ছি ভারত আমাদের দেশ দখল করবে বলে। সামনের নিঃছিদ্র নিরাপত্তায় যখন আমরা ব্যস্ত ভারত তখন আমাদের পেছন দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে অতিকায় হাতি। কারন শত্রুপক্ষের অস্ত্র চিনতে আমরা ভুল করছি। আমরা ভুল অস্ত্রের দিকে বর্ম তাক করে বসে আছি।
বিনয়ভূষণ ধর - ১৩ জানুয়ারি ২০১০ (৬:৩৯ অপরাহ্ণ)
আপনি পুরো ব্যাপারটা যদি সতথ্য একটু গুছিয়ে সুন্দরভাবে উপস্হাপন করেন মানে ভারত কি কি বিষয়ে আমাদের ক্ষতি সাধন করে যাচ্ছে আমাদের জ্ঞাত বা অজ্ঞাতসারে তাহলে আমাদের মতো সাধারন পাঠকদের পুরো ব্যাপারটা সম্পূর্নরুপে বুঝতে সুবিধা হতো…আপনার প্রতি শুভেচ্ছা রইল!!!…
কামরুজ্জামান জাহাঙ্গীর - ৮ জানুয়ারি ২০১০ (৯:১৬ অপরাহ্ণ)
ফারুফ ওয়াসিফ কর্তৃক প্রদানকৃত যথার্থ মূল্যায়নের জন্য ধন্যবাদ।
মাসুদ করিম - ৯ জানুয়ারি ২০১০ (১:২৬ পূর্বাহ্ণ)
লেখাটি আমি ৬ জানুয়ারি ২০১০-এর নূরুল কবীর সম্পাদিত ‘বুধবার’ পত্রিকায় পড়েছি। আমার মনে হয়, লেখকের উচিত ছিল আনু মুহাম্মদের লেখাটি এখানে প্রকাশ করার সময় তথ্যটি জানানো এবং তার চেয়েও প্রয়োজনীয় ছিল এর সাথে নিজের সংক্ষিপ্ত মতামত বা একটা ভূমিকা দেয়া।
বর্তমান পৃথিবীতে কেউ কারো বন্ধু নয়, আমরা বলতে পারি আন্তরাষ্ট্রীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে প্রত্যেকটি রাষ্ট্রই আসলে একে অপরের এজেন্ট, To manage the affairs of other people in politics & business, কাজেই একই রাষ্ট্র অনেকের এজেন্ট হতে পারে যেমন একই রাষ্ট্রের অনেক এজেন্ট থাকতে পারে। আর এই এজেন্টশিপগুলোও একেক সময় একেক ভাবে কাজ করে, এবং সেখানে ব্যক্তির ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে, রাষ্ট্রের সঙ্গে রাষ্ট্রের সম্পর্ক নৈর্ব্যাক্তিক ঠিক কথা কিন্তু রাষ্ট্রকে সচল রাখে একটি সরকার, সরকার ব্যাক্তিরই সমষ্টি। হাসিনার এবারের ভারত সফরে কী পাব কী হারাব জানি না, কিন্তু কিছু মিথ্যা কথা উভয়দিক থেকেই শুনব এটা নিশ্চিত, যার প্রধান মিথ্যাটি বাংলাদেশ-ভারত বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র। আমি খুশি হব বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়নে ভারত যে ৫০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করতে চায় তা যেন পাওয়া যায় এবং সেসাথে ভারতের আরো বিনিয়োগ যেন আমরা আকর্ষণ করতে পারি। আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত ভারতের সাথে আমাদের বিভিন্ন এজেন্টশিপের মাধ্যমে আমরা Hub of the East হিসেবে যেন নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতে পারি। জাতীয়তাবাদী ও বামপন্থী প্রচারণা শুনে বিনিয়োগ আকর্ষণের দিক থেকে পিছু হটা ভুল হবে। কারণ জাতীয়তাবাদী শক্তি ক্ষমতায় থাকলে যে একই কাজ করত এটা আমরা জানি, আর বাংলাদেশে বামপন্থীদের সামান্যতম গণসমর্থন আছে কোনো দিন শুনিনি এবং খুব সহসাই যে তারা শক্তি অর্জন করবে তার কোনো লক্ষণও কোথাও দেখা যাচ্ছে না। বিনিয়োগ ভাবনা ও এর সঞ্চালনই হওয়া উচিত আমাদের প্রধান লক্ষ্য ‘বিনিয়োগ বান্ধব’ চীন আজ পৃথিবীর এক নম্বর রপ্তানিকারক দেশ।
বিনয়ভূষণ ধর - ১৩ জানুয়ারি ২০১০ (৬:৪১ অপরাহ্ণ)
মাসুদ ভাই!!! আমারও আপনার মতো একই মত এই বিষয়ে…
মনজুরাউল - ১৬ জানুয়ারি ২০১০ (১২:৫৩ পূর্বাহ্ণ)
বিনিয়োগের প্রশ্নে এটি দরকারী কথা।
কিন্তু……
এই প্রসঙ্গে মাসুদ করিম বরাবরই সোজাসাপ্টা!মানতেই হবে বাংলাদেশের বামপন্থীরা সব অর্থেই “এলডিসি”। তারপরও ‘সামান্যতম’ গণসমর্থন না থাকলে একটি ঐতিহ্যবাহী বৃহৎ দল তাদের জোটে নেয়ার ‘ভুলটা’ কেন করেছে বলে আপনার মনে হয়?
বিপ্লব রহমান - ৯ জানুয়ারি ২০১০ (৪:৫১ অপরাহ্ণ)
উহু…অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, সম্ভবত এর কোনোটিই শেষ পর্যন্ত হচ্ছে না। এ সরকার জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে কি না, সে বিতর্কের বাইরে ভারতের শীর্ষ স্থানীয় বাংলা দৈনিক আনন্দবাজার গত ৩ জানুয়ারি ‘হাসিনাকে বিব্রত করতে নারাজ সাবধানী দিল্লী’ শিরোনামে একটি বিশেষ প্রতিবেদনে এক আগাম জানাচ্ছে,
আনু মুহাম্মদ বলছেন:
বাংলাদেশকে ভারত সরকার ৫০ কোটি ডলার প্যাকেজ সাহায্য করতে রাজী রয়েছে-এমন আগাম খবর জানিয়ে একই প্রতিবেদনে আনন্দবাজার আরো জানাচ্ছে:
তবে শেষ পর্যন্ত এই বৈঠক কতোটুকু সাফল্য বয়ে আনবে, নাকী এর ফলাফল ‘থোড় বড়ি খাড়া, খাড়া বড়ি থোর’ই রয়ে যাবে, তা শেখ হাসিনার চারদিনের ভারত সফরে পরিস্কার হবে শিগগিরই।
সবাইকে ধন্যবাদ।
বিপ্লব রহমান - ৯ জানুয়ারি ২০১০ (৪:৫৪ অপরাহ্ণ)
পুনশ্চ: প্রথম উদ্ধৃত অংশটি আনু মুহাম্মদের। শেষ দুটি উদ্ধৃতি আনন্দবাজার থেকে নেওয়া।
Ali Md. Abu Nayeem - ১১ জানুয়ারি ২০১০ (৮:৩৯ অপরাহ্ণ)
শ্রদ্ধেয় আনু মুহাম্মদ ভারত রাষ্ট্রের চরিত্র বিচার নিয়ে কি বললেন?
তিনি অর্থনীতির অধ্যাপক এবং মার্কসবাদে বিশ্বাস। রাষ্ট্রের চরিত্র বোঝাতে বিশেষ কিছু শব্দ বা পরিভাষা ব্যবহার করা হয়। সেগুলো উনি জানেন।
মাস তিনেক আগে সামহোয়ারে একটা লেখা লিখেছিলাম, হয়ত দুর্বল লেখা, তারপরও এ আলোচনার সাথে সম্পর্কিত। কারো কারো কাজে লাগতে পারে।
আগের ওই আলোচনার সাথে আরো দু-একটা তথ্য যুক্ত করে দিচ্ছি —
বর্তমানে ১২২টি দেশে ভারতের পুঁজি খাটছে। ২০০৮ সাল পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ৪৬ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার সম পরিমাণ ভারতীয় মুদ্রা বিনিয়োগ হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে কারখানা স্থাপন করছে। ওদের বন্ধ হয়ে যাওয়া কারখানা কিনে নিচ্ছে। শুধু এক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই ভারতীয় কারখানায় কাজ করছে ৩ লক্ষ মার্কিন শ্রমিক।
আমার লেখাঃ
http://www.somewhereinblog.net/blog/Nayeem76/28986341
niravoron - ১২ জানুয়ারি ২০১০ (৩:২৮ পূর্বাহ্ণ)
১
আনু মোহাম্মদের এই লেখা সম্পর্কে ফারুক ভাইয়ের নিজস্ব মতামত কি তা জানার আগ্রহ বোধ করছি।
২
দক্ষিন এশিয়ার সামগ্রিক যেই ভূরাজনৈতিক অবস্থান এবং সেক্ষেত্রে বাকি দেশগুলোর সাথে বাংলাদেশের এবং বাংলাদেশের সম্পর্কের তুলনামূলক অবস্থা কি এই টানাপোড়েনে কোন ভূমিকা রাখতে পারে?
৩
বাংলাদেশ যে বারবার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জনিত টানাপোড়েনে পিছিয়ে থাকছে এখানে মূল কারন কি? সদিচ্ছার অভাব? রাজনৈতিক দুরদর্শিতার অভাব? নাকি বিষয়গুলো রাজনৈতিক ভাবে কিছুটা স্পর্শকাতর বলে গনতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সরকারের সিদ্ধান্তহীনতা?
নিরাভরণ - ১২ জানুয়ারি ২০১০ (৪:০১ পূর্বাহ্ণ)
*বাংলাদেশ আর ভারতের বুঝাতে চেয়েছি
মোহাম্মদ মুনিম - ১৪ জানুয়ারি ২০১০ (১:২৩ পূর্বাহ্ণ)
ভারত বাংলাদেশকে স্বাধীন হতে সাহায্য করেছে বলে বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী কোন পদক্ষেপ নিবে না এই জাতীয় চিন্তা কোন বাংলাদেশী করেন কিনা সন্দেহ আছে। আবার একই সাথে ভারত হিন্দুপ্রধান দেশ বলেই বাংলাদেশের শত্রু এটাও বাড়াবাড়ি রকমের সাম্প্রদায়িক চিন্তা, এমন চিন্তাও খুব বেশী লোক করেন না। বাংলাদেশের লোকজনের মাঝে ভারতবিরোধী মনোভাব খুব একটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। একটি বড় দেশের প্রতিবেশী দেশে এমন মানসিকতা থাকাই স্বাভাবিক, মেক্সিকানদের মাঝে যেমন মার্কিন বিরোধী মনোভাব আছে।
বাংলাদেশকে এক ধরনের উন্নাসিক দৃষ্টিতে দেখার প্রবণতা ভারতীয় নেতৃবৃন্দের আছে। একই ভাবে ‘দেশ নেপাল ভুটান হয়ে যাবে’ এই জাতীয় ফালতু কথা বলে দেশবাসীকে বিভ্রান্ত করার প্রবণতাও আমাদের নেতাদের আছে। পাকিস্তানের সাহায্যপুষ্ট মুসলিম জঙ্গী এবং আসামের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ঘাঁটি হিসাবে বাংলাদেশের ভুমিকে ব্যবহার করতে দেবার গুরুতর অভিযোগ ভারত দীর্ঘদিন ধরে করে আসছে। অভিযোগগুলো খুব একটা মিথ্যাও নয়। ভারত বাংলাদেশের মধ্যে স্বাভাবিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে এই ব্যাপারগুলোও পরিষ্কার হওয়া প্রয়োজন।
বাংলাদেশের যমুনা সেতু নির্মাণের সময় যে পাথরের প্রয়োজন ছিল, তা নেপাল থাকে ভারতীয় করিডোর দিয়ে স্বল্প খরচে আনা যেত। ভারতের সাথে করিডোরের ব্যাপারে সমঝোতা না হওয়াতে সে পাথর সুদূর ইন্দোনেশিয়া থেকে আনতে হয়। বর্ধিত মুল্যের এই পাথরের ব্যবসাতে ইন্দোনেশিয়া লাভবান হয়েছে, আর হয়েছে পাথর সরবরাহকারী। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাংলাদেশ। নেপাল পাথর সরবরাহের ব্যবসা থেকে বঞ্চিত হয়েছে,করিডোরের টোলের ব্যবসা থেকে ভারত বঞ্চিত হয়েছে।
ভারত একটি গ্লোবাল পর্যায়ের অর্থনৈতিক শক্তি হওয়া সত্ত্বেও ভারতে বাংলাদেশ থেকে রপ্তানীর পরিমাণ অতি অল্প, বাংলাদেশেও সে পরিমান ভারতীয় বিনিয়োগ নেই, যেটা আছে ভারতীয় পণ্যে সয়লাব বাংলাদেশের বাজার। টাটা কোম্পানীর তিন বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগের প্রস্তাব ভেস্তে যায় ‘পলিটিক্যাল সেনসিটিভ’ এই অজুহাতে, অথচ ভারতীয় গরু ছাড়া বাংলাদেশে কোরবানি হ্য় না। বাংলাদেশ ভারতের সম্পর্ক স্বাভাবিকিকরনের পুর্বশর্ত হচ্ছে দুদেশের মধ্যে দৃঢ় অর্থনৈতিক সম্পর্ক, দুদেশের মধ্যে informally (চোরাচালান, হুন্ডি ইত্যাদি) বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা থাকলেও সরকারী পর্যায়ে সে পরিমান লেনদেন নেই। সমুদ্র সীমা বা টিপাইমুখীর ব্যাপারে আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শক্ত মেরুদন্ড নিয়ে কথা বলতে পারেন না, কারণ তাঁর কোন leverage নেই। Leverage একটাই আছে, সেটা হচ্ছে বাড়াবাড়ি করলে উলফাকে আরও অস্ত্র পাওয়ার ব্যবস্থা করে দেব, না হলে ISI এর বাংলাদেশের ঘাঁটি আরও শক্ত হবে। এই leverage দিয়ে কিছুই হয় না, অর্থনৈতিক leverage এর চেয়ে আরো অনেক বেশী শক্তিশালী হবে।
বিনয়ভূষণ ধর - ১৪ জানুয়ারি ২০১০ (১:২৪ অপরাহ্ণ)
মুনিম!!! তোমার লেখার অনেকগুলো বিষয়ের সাথে আমি সরাসরি একমত পোষণ করলেও সর্বশেষ এই কয়েকটি লাইনের সাথে দ্বিমত প্রকাশ করছি। বর্তমান মহাজোট সরকার এই ধরনের শিশুসুলভ কথা বলবে বা আচরন করবে তা আমার কখনো বিশ্বাস হয়না। যেখানে বর্তমান সরকার ভারতের সাথে একটি অর্থনৈতিক উন্নয়নমূলক সম্পর্ক সৃষ্টি করতে চাচ্ছে সেখানে আমার মনে হয় এধরনের কথা বলার বোধহয় আর কোন সুযোগ নেই। চারদলীয় জোট সরকার তাদের সময়ে দেশটাকে কোন পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিলো তা আমরা যারা এই দেশে বাস করি তারা জানি। তোমার প্রতি শুভেচ্ছা রইল…
মনজুরাউল - ১৬ জানুয়ারি ২০১০ (১২:৪৪ পূর্বাহ্ণ)
পোস্ট উপস্থাপক অনুপস্থিত।পোস্ট। আনু মুহাম্মদ।বুধবার। ভারত।সব দেখি ঘোট পাকিয়ে আছে?কে কাকে বলছেন?
অবিশ্রুত - ২৯ জানুয়ারি ২০১০ (৫:০৯ পূর্বাহ্ণ)
গত ২৭ জানুয়ারি দৈনিক নয়া দিগন্তে একটি সংবাদ ছিল, যাতে বলা হয়েছে,
ভারতের সাথে যেসব চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে তাতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে। ভারত পণ্য পরিবহনের নামে সেভেন সিস্টার্সে অস্ত্র সরবরাহের জন্যই এসব চুক্তি করেছে। গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ মুসলিম লীগের উদ্যোগে ‘প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর : বাংলাদেশের লাভ-ক্ষতি’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে আলোচকরা এ কথা বলেছেন।
গত ২৮ জানুয়ারি দৈনিক আমার দেশ-এ বদরুদ্দীন উমর লিখেছেন, এই চুক্তির ফলে বাংলাদেশ আরেকটি পাকিস্তানে পরিণত হবে; কেননা এখান দিয়ে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে অস্ত্র সরবরাহ করা হবে আন্দোলন দমনের জন্যে। তা ছাড়া চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ভারী পণ্য ওঠা-নামা করার শর্ত রয়েছে, আর অস্ত্রও ভারী পণ্য হতে পারে! (লিংকটা দিতে চেয়েছিলাম, কিন্তু এই মুহূর্তে আমার দেশ-এর সার্ভার কাজ করছে না বলে মনে হচ্ছে। তবে পরে দেবার আশা রাখি)।
মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন।
মাসুদ করিম - ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১০ (৪:০৫ অপরাহ্ণ)
সাপ্তাহিক বুধবার ওয়েবে আসছে। এখনো সম্ভবত পরীক্ষামূলক পর্যায়ে আছে। পড়ে দেখুন ভারতীয় সেনাবাহিনীর হবু প্রধানের বাংলাদেশ সফর, ওয়েব থেকে। যদি লিন্ক কাজ না করে, তাহলে সরাসরি সাইটে http://www.budhbar.com ঢুকে পড়ুন।