‘‘Man first sees and recognizes himself in other men’.
…………Karl Marx
খুবই গুরুত্বপূর্ণ খবর! ‘সবজিও মধ্যবিত্তের আওতার বাইরে’-দৈনিক আমার দেশ। সর্বদাই যে তা নিম্নবিত্তের আওতার বাইরে ছিল? তা খবর নয়, তা ‘বাস্তবতা’। ‘বাস্তবতা’ খবর হয় না। মিডিয়ায়, রাষ্ট্রের দরবারে, শপিং মলে আর টেলিভিশনে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আঙিনায়, মধ্যবিত্ত নিজেকে নিয়েই মত্ত। আত্মপ্রেম এর ‘ধর্ম’। অধিকারগুলো তার, নীতিগুলো তার, সুখ-দুঃখগুলোও তার।
সে শাসক নয়, কিন্তু মেকানিক্যালি রিপ্রোডিউসড selfএর বাজারে, নানান ক্ষমতাচক্রের ‘ডীপ পলিটিকসের’ গণতন্ত্রে সে-ই আজ রাজা। মধ্যবিত্ত ‘জনগণ’ নামক অদেখা-অধরা জনসমষ্টিকে তার ‘আমিত্বের’ ধামার নীচে ফেলে জনগণ সেজে বসে গেছে। জনগণের মধ্যে শ্রেণী আছে, শ্রেণীসংহতির মধ্যে নারী-পুরুষের নিজস্ব শ্রেণী আছে, জাত-পাত-সম্প্রদায় আছে, আঞ্চলিকতা আছে। এসব সরিয়ে মধ্যবিত্তের খোদায়ী প্যানঅপটিকন-সবখানে নিজের ছায়া দেখে, নিজেকেই জাতি ভাবে। সে পুরুষ বলে কেবলই ‘নিজের’ নারীর অধিকার নিয়ে চিন্তিত হয়। তাকে কেবলই ‘যৌন’ করে দিয়ে মুক্ত করতে চায়। আর ক্ষমতার এপার ওপার ভেদ মুছে দিয়ে যে ভেদে ‘আত্ম’র বাসনা খুশি হয় এমন সব ভেদ খাড়া করে। খালি বর্গ করে, বর্গের বর্গমূলে ‘আমি’ নামক প্রত্যয় খুঁজে পায়। আদিতে ঈশ্বর ছিলেন, আর এখন আছেন সর্বভূতেসু ‘আমি’। তাই ‘আমরা’ কেবল ‘আমি’র কথাই বলি।
এই ‘আমি’ ও ‘আমরা’র সীমার ওপারে বাস করে কোনো এক ‘রসু খাঁ’। আমি ও আমরা নিশ্চিত, কোনো মহতাদর্শ দিয়ে আমাদের বলয়ে সিরিয়াল খুনী ‘রসু খাঁ’-কে নেব না মানব না। সবজির আওতার বাইরের নিম্নবিত্তের মানবেতর জীবন এবং তাদের থেকে আসা খুনীর বিকারগ্রস্থতা তাহলে কোথায় জন্মালো? সমাজ-রাজনীতি-ইতিহাসের বাইরে তো সে নয়। ‘এই গোকুলে শ্যামের প্রেমে, কে না মজেছে সখী!’ সবারে বধিল যে, সে কি আমাদের গোকুলেরই সন্তান নয়?
এই প্রশ্নের সিবিল মীমাংসা নাই। তাই রসু খাঁ-কে আমরা ফুকো সাহেবের ক্ষমতার আকার-বিকারের ব্যকরণে আর সবজির দামকে মার্কসের সংগ্রামী দুনিয়ায় পাঠিয়ে পরস্পরের চোখে নিশ্চিন্তে তাকাব। কিন্তু অজস্র নারীদের খুন ও ধর্ষণের পর সে যে নারীকে বউ করেছে, তার দিকে তাকাতে পারবে কি আমাদের সর্বদ্রষ্টা চোখ? তা পারবো না বলেই বাস করবো সেইসব গডফাদার, নেতা, শিল্পপতি, মিডিয়াশেঠ ও জেনারেলদের রাজত্বে। মিডিয়ায় তারা নায়ক বা খলনায়ক কখনো হন বটে, তাঁদের মানবত্তোর ঊর্ধ্বতনের আরশ কদাচ টলে না।
রসু খাঁ-র কাহিনী উপভোগ শেষে, মনের ধর্ষকাম-মর্ষকাম চরিতার্থতার পর রসু খাঁ-কে সরাসরি সম্প্রচারিত ফাঁসি দেওয়া যায়। আর ক্ষমতাবিত্তমত্তদের আইনী-বেআইনী ওপেন আর ক্রসখুনের সিরিয়াল দিয়ে বানানো যায় একটা মহিমান্বিত গণকবর। শোকের মহিমা উপভোগের মতো এমন গণখুনের গণকবর অনেক পশ্চিমা দেশেরই নাই।
Have your say
You must be logged in to post a comment.
২ comments
ফারুক ওয়াসিফ - ১৩ অক্টোবর ২০০৯ (১০:৪৩ অপরাহ্ণ)
শুরুর উদ্ধৃতিটায় ভুল ছিল। ‘ম্যান ফার্স্ট সি-ইজ এন্ড রিকগনাইজেস হিমসেলফ ইন আদার মেন’ হবে। পার্থক্যটি সামান্য নয়, কিন্তু স্মৃতি থেকে এবং অস্বাভাবিক তাড়াহুড়ার কারণে আর মেলানো হয়নি। বন্ধু রায়হান রশীদ টোকা দেওয়ায় হুশ হলো। তাঁকে অশেষ ধন্যবাদ।
বানানও কিছু ভুল আছে। লেখা হয়ে যাবার পর আরেকবার পড়া নিজের কাছেই প্রায়শ দুর্বহ লাগে।
কামরুজ্জামান জাহাঙ্গীর - ১৭ অক্টোবর ২০০৯ (১১:২৩ অপরাহ্ণ)
ফারুক এক সামাজিক কাঠামোকে চিহ্নিত করেছেন। বলা যায়, তিনি নিজেকেই অনবরত রক্তাক্ত করেছেন। আমাদের মিডিয়াসমূহের কল্যাণে(!) কতরকমের বীভৎস উৎসব যে ঘটে। এভাবেই আমরা বহুকাল হয়ত রসু খাঁকে প্রত্যক্ষ করে যাবো।