১. বারাক ওবামা, আপনাকে অভিনন্দন জনাব। গতকাল পর্যন্ত আপনার জীবনের সবচেয়ে বড় সাফল্য ছিল সুপারপাওয়ারের মনোনীত সিজার হওয়া। নোবেল শান্তি পুরস্কার এর থেকে বড় অর্জন নয়, কারণ প্রেসিডেন্ট না হলে আপনি এ পুরস্কার পেতেন না। পাশাপাশি সাম্রাজ্যের ক্রান্তিকালীন প্রেসিডেন্ট হিসেবে আপনাকে বলবান করতেই হতো স্বঘোষিত বিশ্ববিবেক নোবেল কমিটিকে। আমেরিকার ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারে প্রয়োজন ছিল একজন বিনয়ী সম্রাট ও একটি নোবেল। দুটো আজ এক দেহে লীন হলো।
২. রাজনীতিতে আপনার মহত্তম অবদান আশার পুনর্জন্ম ঘটানো। আপনি আশার ফেরিওয়ালা হয়েও একে একে ফিরিয়ে নিয়েছেন সেইসব প্রতিশ্রুতি যা আশাকে জাগিয়েছিল। আপনি বুশের বেইল আউটকে আরো বাড়িয়ে ওয়ালস্ট্রীটের লুটেরাদের নবযৌবন দিয়েছেন। আপনি বুশের হেরে যাওয়া যুদ্ধকে জেতাতে আগে সতের হাজার এখন আরো চল্লিশ হাজার সৈন্য আফগানিস্তানে পাঠাতে বদ্ধপরিকর। আপনি গুয়ানতানামো বে-র দোজখ এখনো বন্ধ তো করেনইনি, বাড়তি তৃতীয় দুনিয়ার গোপন কারাগারে নির্যাতন চালাবার বন্দোবস্ত করেছেন। আপনি মার্কিন দেশে নতুন স্বাস্থ্যবীমা কর্মসূচিকে অবহেলায় পরাজিত হতে দিয়েছেন। আপনি বুশের দলের সব দাবি আপসে মেনে নিয়ে নেকড়ের গায়ে হরিণের ছাল জড়িয়েছেন। আপনাকে ও নোবেল কমিটিকে তাই অভিনন্দন।
৩. আপনার শান্তির সন্ত্রাসের সশস্ত্র আহ্বান না ইরান, না তালেবান, না উত্তর কোরিয়া গ্রহণ করেছে। রুশ ভালুক পুতিন আপনার বন্ধুত্ব নেননি। নেতানিয়াহু ফিলিস্তিনে জবরদখল বসতি স্থাপন ও হত্যা বন্ধ করেনি। আপনি তার উপহাসের পাত্র। আপনি ইরান-ভেনেজুয়েলা-হন্ডুরাস ও মেক্সিকোয় অস্থিতিশীলতা সৃষ্টিতে আপনার প্রশাসনের ভূমিকাকে থামাননি। আপনি দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের পারমানবিক বোমা তৈরিকে বৈধ করেছেন, সহযোগিতার জন্য চুক্তি করেছেন। পাকিস্তান ও বার্মার সামরিক জান্তা আপনার কাছ থেকে ছাড় পেয়ে আসছে। যখন বিশ্বে সত্যিই আরো মেরু দাঁড়িয়ে গেছে, তখন আপনি মাল্টিপোলার বিশ্বের নেতা হতে লেগেছেন। নোবেল কমিটি আপনার যে যোগ্যতার তালিকা দিয়েছে, সেসব আপনার গুণ নয় পরাশক্তির ব্যর্থতাজাত আপাত আপসপন্থা। আপসের আড়ালে ছুরির শান আপনার অবদান।
৪. জনতার আশাকে আহত করলেও আপনি পতনমুখী সাম্রাজ্যের আশাকে চাঙ্গা করেছেন। আমেরিকার একাধিপত্য আবার আসবে বলে আপনাকে নেতা করেছে পাশ্চাত্য। আপনি তাদের দিয়েছেন বাস্তব ভরসা আর এশিয়-আফ্রিকীয়-ল্যাটিনো এবং আরব মুসলিমদের সামনে দিয়েছেন রংদার বক্তৃতা। আপনার হাসিকে বিশ্বাস করতে ইচ্ছা হয় মানুষের, আপনার হাত নাড়ায় তারা তবু অভয় পেতে চায়। কারণ, তারা সত্যিকার আশা করার সাহস ভুলে গেছে। তারা বিজ্ঞাপন ও রাজনীতির ভেদ হারিয়ে ফেলেছে। তাদের চোখে এই শতাব্দীর প্রথম রাজনৈতিক বিশ্বনায়ক তো আপনিই! ধন্য আশা কুহকিনী!
৫. আপনি কিছু করেছেন বলে নয়, করবেন বলে পুরস্কৃত হয়েছেন। নোবেল কমিটি বলেছে, আমরা পুরস্কার দিয়েছি: ‘ইট ওয়াজ বিকজ উই উড লাইক টু সাপোর্ট হোয়াট হি ইজ ট্রাইং টু অ্যাচিভ।…ইট ইজ এ ক্লিয়ার সিগনাল দ্যাট ইউ ওয়ান্ট টু অ্যাডভোকেট দা সেম অ্যাজ হি হ্যাজ ডান।’ আন্তর্জাতিক রীতিনীতির জয়গান আপনি, আর নোবেল কমিটি অতীতের জন্য নয়, পুরস্কার দিচ্ছে ভবিষ্যতের জন্য। আপনি শপথ নিলেন ২০ জানুয়ারি আর নোবেলের মনোনয়ন জমা পড়ার শেষ তারিখ ১ ফেব্রুয়ারি। মাত্র দুই সপ্তাহেই আপনি নোবেলের যোগ্য হয়েছেন কমিটির কাছে। সাবাশ নোবেল কমিটির তেলেসমাতি!
৬. আপনি এ মুহূর্তে সবচেয়ে অমূল্য বিনিয়োগ। পরের বছর যখন আপনার ব্যর্থতাগুলো স্পষ্ট হবে, তার আগেই ‘ওবামাকাল্ট’ কে তুমুল করতে আপনাকে পুরস্কার দেওয়া হলো, কেননা পরের বছর আপনাকে নোবেল দেওয়া সত্যিই কঠিন হবে। ঠিক যে মুহূর্তে হেলথ সিস্টেম বিতর্কে আপনি পরাজিত, যে মুহূর্তে মার্কিন মুলুকে অলিম্পিক আয়োজন আপনার হাতছাড়া হওয়ায় জনপ্রিয়তা পড়তির দিকে, সেই মুহূর্তে নোবেল শান্তি পদক ইব্রাহিমের ঈশ্বরের অলৌকিক বর। আপনি দুর্ভাগা বিশ্বে সৌভাগ্যের বরপুত্র. আপনাকে কুর্ণিশ সম্রাট।
৭. আর আমরা আবিষ্কার করলাম, ইরানের কোনো ব্লগার নন, গাজা গণহত্যার বিরুদ্ধে সোচ্চার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতি মিগুয়েল ব্রকমান, কিংবা তৃতীয় দুনিয়ার কোনো সংগ্রামী নন, নাইজেরিয়ার কোনো পরিবেশবাদী কিংবা বার্মার কোনো সংগ্রামী পুরোহিত নন, নন মেধা পাটেকার কিংবা ইউঘুর নেত্রী রাবিয়া কাদির। পুরস্কার পেলেন বিশ্বসম্রাট স্বয়ং। বিশ্বে কি সত্যিই শান্তির চেষ্টা ফুরিয়ে গেছে? সত্যিই শান্তি কেবল যুদ্ধবণিকেরই রক্ষিতা আজ!
আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ তবুও কম। কিন্তু আপনি যে আশার সমাধির খাদেম হতে চলেছেন, সেই সমাধিতে ইরাক-ফিলিস্তিন-আফগানিস্তানসহ অনেক দুর্মর আশার জলপাই বৃক্ষ শুকিয়ে কাঠ হচ্ছে। বুশ-ব্লেয়ার তাদের কুড়ালে কেটেছে আর আপনি বুশের দেওয়া মুকুটে পরলেন সেই মরাবৃক্ষের একমাত্র সবুজ পাতাটি_ যার নাম ছিল আশা।
আশার ব্যাপারি, আমরা কি তবে আশার অধিকারও হারালাম?
Have your say
You must be logged in to post a comment.
২১ comments
রায়হান রশিদ - ১০ অক্টোবর ২০০৯ (৭:০০ অপরাহ্ণ)
অসংখ্য ধন্যবাদ লেখাটার জন্য। যে কথাগুলো প্রায় সবার মাথার ভেতরই ঘুরপাক খাচ্ছিল তার সবটা আপনিই লিখে ফেলেছেন। আর কলমের শল্য-আঁচড়ে কিছুই বাকি না রেখে যেভাবে প্রতিটা বিষয়ই তুলে এনেছেন, তার জন্য অভিনন্দন।
গতকাল থেকেই মুখের ভেতরটা তিক্ত। একারণে নয় যে নোবেল কমিটির স্বীকৃতিতে আমাদের কিছু যায় আসে। একারণে নয় যে এই কমিটির বিবেচনার ওপর আস্থার আর কিছু অবশিষ্ট ছিল বা আছে। তিক্ততা এই কারণে যে লাজ লজ্জার শেষ আবরণটুকু খসিয়ে ফেলে নর্তকেরা এখন মঞ্চে নেমেছেন; যেন সেই নৃত্য দেখিয়েই ছাড়বেন তারা। আমাদেরও দেখতে হবে আর বাজাতে হবে তালিয়া – সাবাশ ওবামা, সাবাশ নোবেল!
গতকাল থেকেই তাকিয়ে আছি নির্বাচন পূর্ববর্তী ব্লগমন্ডলের ওবামা-ভক্তদের দিকে; এবার তাদের মেসাইয়াহ-কে কি অমূল্যবাণী প্রেরণ করবেন তারা সেটা দেখার জন্য।
পৃথিবীতে এখন দুই শ্রেণীর কর্মী/পদধারী/বিখ্যাত মানুষ। তার একভাগে যারা নোবেল পেয়েছেন তারা। আরেক ভাগে রয়েছেন যারা পাননি এখনো কিংবা পাওয়ার কোন সম্ভাবনাই নেই তারা। রাবিয়া কাদির, মেধা পাটকার, নাইজেরিয়ার পরিবেশবাদী আর ইরান-ইরাকি ব্লগাররা সেদিক থেকে – ‘belong in a better company!’ [উক্তিটি জাঁদরেল এক অধ্যাপক (পিটার বার্কস্) থেকে ধার করা (যদিও অন্য প্রসঙ্গে), দুরারোগ্য ক্যান্সার যাঁকে নিয়ে গেছে বছর কয় আগে।]
রম্য আইজি নোবেল নিয়ে আহমেদ মুনির কিছু দিন আগেই লিখেছেন। এখন তো মনে হচ্ছে রম্য-টির সাথে আসলটির তফাত সত্যিই কমে আসছে দ্রুত গতিতে!
কোনটা তামাশা আর কোনটা সিরিয়াস সেটা ধরতে আজকাল বেশ অসুবিধায় পড়তে হয়!
মাসুদ করিম - ১০ অক্টোবর ২০০৯ (১১:০৫ অপরাহ্ণ)
bailout for peace হয়ে গেল, এবার bailout for economics-এর জন্য অপেক্ষা, আগামী সোমবার তাও হয়ে যাবে। মহামন্দার কালে পুরষ্কার কৃতকর্মের স্বীকৃতি নয়, কিছু করে দেখানোর প্রণোদনা। কিন্তু কিছু করে দেখানো না গেলে আমরা কি পুরষ্কারটা ফেরত নিতে পারব? মন্দায় সমস্যাক্রান্ত ব্যাংকগুলোও কি বেইল আউটের টাকা আর ফেরত দেবে না? সব কেমন গুলিয়ে যাচ্ছে, ঠিক বুঝতে পারছি না, কাজ আগে না পুরষ্কার আগে?
তবে এটা আমার খুব পছন্দ হয়েছে যে শান্তির পুরষ্কারটা আমেরিকার প্রেসিডেন্ট পেয়েছেন। আমার মতে নোবেল শান্তি পুরষ্কার সব সময়ের জন্য আমেরিকার প্রেসিডেন্টের জন্য বরাদ্দ করে দেয়া হোক। কারণ সারা পৃথিবীর অশান্তির কারবার যার হাতে তার পায়ে তেল মালিশ করেই তো শান্তির ব্যবস্থা করতে হবে, না কি? আর পাশাপাশি এটাও বলা হোক কোনোবার কোনো প্রেসিডেন্টের পুরষ্কারটা নিতে ইচ্ছে না হলে, তার পছন্দের কাউকে পুরষ্কারটি উপহার দেয়া যেতে পারে। সে হিসেবে আমরা দাবি করতে চাই, আগামী তিন বছরও এই পুরষ্কার ওবামাকে দেয়া হোক। আল্লাহ তাকে হায়াত দারাজ করুন। আমিন।
ফারুক ওয়াসিফ - ১১ অক্টোবর ২০০৯ (১২:১৮ পূর্বাহ্ণ)
এবং দ্যাখেন বুশ এনেছিল প্র্রিঅ্যাম্পটিভ অ্যাটাকের থিওরি, ওবামার জন্য এলো প্রিঅ্যাম্পটিভ পুরস্কার।
ওবামা পুরস্কার পেয়েছেন কী কারণে? না, কারণ নাই। কারণ আসবে পরে, পুরস্কার দিলে ছেলে যদি ভাল কাজ করে। কার্যকারণ সম্পর্ক উল্টে যাচ্ছে। ফল আগে আসছে, কারণ আসছে পরে। অর্থাৎ ঝিয়ের পেটে মায়ের জন্ম হচ্ছে।
এখন যদি তিনি ভাল না করেন তো বলা হবে, নানান কারণে করা যায় নাই। ঠিক মার্কিন প্রিঅ্যাম্পটিভ যুদ্ধের মতো। ইরান আক্রমণ করতে পারে এই জন্য তাকে ইরাকের মতো আগাম ঠেকাও। আর আক্রমণের পরে যেহেতু আর বিপদের সম্ভাবনা থাকে না, অতএব রিয়েলিটি নিয়ন্ত্রণে। এভাবে রিয়েলিটিকে ইচ্ছামতো সাজানো ও ব্যাখ্যা করার অধিকার জন্মাচ্ছে যুদ্ধ ও স্বীকৃতির কর্তৃত্ব থাকার কারণে।
এই দুই প্রবণতাই হলো বর্তমান বিশ্বের অ্যাবসলিউটিজম-এর উদাহরণ।
মাসুদ করিম - ১১ অক্টোবর ২০০৯ (৮:০৯ পূর্বাহ্ণ)
ঝিয়ের পেটে মায়ের জন্ম হচ্ছে, এরপর প্রাসঙ্গিকভাবেই বলতে হবে, আমরা ভেবে করব কী? পুরস্কার শেষ পর্যন্ত পুরস্কারই, আশা করি তিনি কাজে মন দেবেন এবং আমরাও কাজে মন দিই। জলবায়ু নিয়ে আল গোরের পুরস্কারের মতো এটিও যেন অলসতায় পর্যবসিত না হয়। অন্তত ভাল হোক খারাপ হোক, ওবামাবাবু যেন একটু কাজে নামেন, তার কথার চার বছর অসহ্য হবে, শুধু ফুল ফুটিয়ে গেলে তো হবে না, হয় হুল ফোটান, না হয় ফল দিন।
রায়হান রশিদ - ১১ অক্টোবর ২০০৯ (৭:২১ পূর্বাহ্ণ)
ওবামা-নোবেল নিয়ে আটলান্টিকের দু’দিকে:
১।
ফিদেল কাস্ত্রোর মতে নোবেল কমিটির এই সিদ্ধান্ত -‘was a positive step’ (সূত্র: টেলিগ্রাফ – Cuba’s Fidel Castro hails Barack Obama’s Nobel peace prize )
২।
‘Giving Barack Obama the Nobel peace prize so early in his presidency could hinder rather than help his diplomatic efforts…’
(সূত্র: গার্ডিয়ান – Barack Obama’s Nobel prize: why now?)
৩।
হোয়াইট হাউসের গোলাপ বাগানে ওবামা’র প্রথম প্রতিক্রিয়া:
(সূত্র: ওয়াশিংটন পোস্ট)
ফারুক ওয়াসিফ - ১১ অক্টোবর ২০০৯ (৭:০৯ অপরাহ্ণ)
খোদ নিউইয়র্ক টাইমসও বিষ্মিত। বড় বিরোধিতা হয়নি সত্য, তবে হালকা করে নিয়েছেন বেশিরভাগই।
সৈকত আচার্য - ১১ অক্টোবর ২০০৯ (৭:১১ অপরাহ্ণ)
@ ফারুক ওয়াসিফঃ
আপনার পোষ্ট একেবারেই টু দি পয়েন্ট। ৭ টি প্যারাগ্রাফে বিভক্ত দারুন একটি আলোচনা। বিশ্বের অনেক নামজাদা মানূষ থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের মধ্যেও এই পুরস্কার প্রাপ্তির যথার্থতা এবং নোবেল কমিটির ইনটিগ্রীটি নিয়ে সন্দেহ আরো দানা বেঁধে উঠছে।
রায়হান রশিদের মন্তব্যের সূত্র ধরে, টেলিগ্রাফের ওই রিপোর্টে চোখ বুলিয়ে দেখলাম, প্রবীন কমিউনিষ্ট বিপ্লবী ফিদেল ক্যাষ্ট্রো এই পুরস্কার প্রাপ্তিকে একটি ইতিবাচক দিক হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তাঁর এই মন্তব্য কি কোন কৌশলগত কারনে করা বলে মনে হয়, নাকি সত্যিই উনি মনে করছেন, ওবামাকে দিয়ে বিশ্ব শান্তির অভিযাত্রার মিশনে কিছুটা হলেও এগুনো সম্ভব! কিংবা, হয়তো এ দু’টোর কোনটিই নয়।
আপনার একটি আলোচনার প্রত্যাশায় থাকলাম।
প্রণব আচার্য্য - ১১ অক্টোবর ২০০৯ (৯:১১ অপরাহ্ণ)
আপনি এ মুহূর্তে সবচেয়ে অমূল্য বিনিয়োগ।
এটাই মুল কথা। আপনাকে ধন্যবাদ ফারুক ভাই।
অবিশ্রুত - ১২ অক্টোবর ২০০৯ (৫:১০ পূর্বাহ্ণ)
ওবামা সবচেয়ে অমূল্য বিনিয়োগ; কিন্তু এই কথা ঠিক হতে না-ও পারে যে, ব্যর্থতা স্পষ্ট হওয়ার আগেই তাকে পুরস্কার দেয়া হচ্ছে, কেননা পরের বছর তাকে নোবেল দেওয়া সত্যিই কঠিন হবে। যে ওবামা-কাল্ট নির্মাণের মধ্যে দিয়ে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদকে এগুতে হচ্ছে, তা সত্যিকার অর্থে নির্মাণ হওয়া সম্ভব কেবলমাত্র ওবামার বিয়োগান্তক পরিণতির মধ্যে দিয়ে এবং এই বিয়োগান্তক পরিণতি মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের জন্যেও অর্থনৈতিকভাবে রাজনৈতিকভাবে অবশ্য প্রয়োজনীয়। কেবলমাত্র এই পরিণতিই পারে আবারও নিরাপত্তা-হুমকিকে জাগ্রত করে মার্কিনীদের ঐক্যবদ্ধ করতে, পারে ডলারের মূল্যকে বাড়াতে, পারে সমরাস্ত্রভিত্তিক অর্থনীতির মাহেন্দ্রক্ষণ আবারও ফিরিয়ে আনতে।
আর নোবেল কমিটি কী করে বলে যে, তারা এখনও ওবামার মধ্যে আশা খুঁজে পাচ্ছে? ফাজলামোর একটা সীমা থাকা দরকার। আমরা কি দেখিনি, এর মধ্যেই ওবামার মধ্যপ্রাচ্য নীতি ব্যর্থ হতে? যে ওবামা নির্বাচনের আগে ১৯১৫ সালের আরমেনিয়ার হত্যাযজ্ঞকে অটোম্যান তুরস্কের গণহত্যা হিসেবে অভিহিত করেছিল, সে এখন কি না আরমেনিয়দের ওপর চাপ দিচ্ছে কোনওরকম পূর্বশর্ত ছাড়াই তুরস্কের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরের জন্যে। যে ওবামা প্যালেস্টাইনে শান্তিপ্রতিষ্ঠার হামবড়া ভাব দেখিয়েছিল, সে এখন কি না প্যালেস্টাইনী নেতাদের বলে গোল্ডস্টোনের রিপোর্ট প্রত্যাখ্যান করতে, কেননা ওই রিপোর্ট নাকি শান্তি আলোচনার পথকে রুদ্ধ করতে পারে। ইসরাইলের কাছে পাঠানো ওবামার বিশেষ দূতকে শুনে আসতে হয়েছে, আরব-ইসরাইল শান্তি সম্পন্ন হতে নাকি আরও অনেক বছর লাগবে!
এই প্যালেস্টাইনে শান্তি প্রতিষ্ঠার নামে ১৯৯৪ সালে ইয়াসের আরাফাত, আইজাক রবিন আর পেরেজকে পুরস্কার দেয়া হয়েছে। কিন্তু তারপর? কি হয়েছে তারপর? পেরেজ ইসরাইলের নির্বাচনে জিততে পারেননি; ইয়াসের আরাফাতকে হত্যা করা হয়েছে (আহ্, কী শান্তি! …মরণও হয় না আমাদের, আমরা বেচেঁ থাকি এই শান্তি দেখতে)এবং এখনও রক্ত ঝরছে প্যালেস্টাইনে। শান্তি প্রতিষ্ঠার নামে এই পুরস্কার দেয়া হয়েছিল ১৯৭৩ সালে যুদ্ধাপরাধী হেনরি কিসিঞ্জারকে, যার তত্ত্বাবধানে যুক্তরাষ্ট্র যাবতীয় যুদ্ধাপরাধ করেছে ভিয়েতনাম, লাওস আর কম্বোডিয়াতে। আর তখন টম লেহরার-এর কাছ থেকে বেরিয়ে এসেছিল একটি বিখ্যাত উক্তি :
এই যে চরম ফাজলামিটা আবারও করা হলো, নিশ্চয়ই তার গূঢ় কোনও উদ্দেশ্য আছে। তবে আপাতত এইটুকু বলা যায়, এর ফলে ড. ইউনূসের নোবেলপ্রাপ্তি অন্তত ওবামার চেয়ে মহীয়ানতা পেলো!
ধন্যবাদ আপনাকে, তাৎক্ষণিকভাবেই এত সুন্দর প্রতিক্রিয়া লিখবার জন্যে। আমি তো রাগের চোটে কথাই বলতে পারছি না, লেখা তো দূরের ব্যাপার!
আহমেদ মুনির - ১২ অক্টোবর ২০০৯ (৮:১৬ অপরাহ্ণ)
ভবিষ্যতে ভলো কিছু করবেন এই কারনে যদি ওবামাকে নোবেল দেয়া হয় তবে একই কারণে লাদেনও নোবেল পেতে পারতেন। তাতে অন্তত লাদেন জঙ্গি হামলা বন্ধে প্রতিশ্রুতিব্ধ থাকতেন ।
ফারুক ওয়াসিফ - ১২ অক্টোবর ২০০৯ (৯:০৪ অপরাহ্ণ)
মুনীর এ লেখার আরেকটা আদল ছাপা হয়েছে আজকের প্রথম আলোয়, সেখান থেকে তুলে দিচ্ছি,
”নোবেল কমিটি বলেছে, পুরস্কার দিয়েছি ‘এ কারণে যে তিনি যা অর্জন করতে চাইছেন আমরা তাতে সমর্থন দিতে আগ্রহী। …আমরা পরিষ্কার সংকেত দিচ্ছি যে, তিনি যা কিছুর পক্ষে আমরা তারই পক্ষে।’ তাহলে কি নোবেল কমিটি নতুন সম্রাটের অসীম ক্ষমতাকেই অভিষিক্ত করছে? আপনার আমলনামায় বড় কোনো সুকৃতি এখনো লেখা হয়নি। মাত্র আট মাসে সেটা সম্ভবও নয়। তাহলে এ পুরস্কারের কী কারণ? কারণ ছাড়া যদি কার্য না-ই হয় পুরস্কার তাহলে ফলল কীভাবে? ঝিয়ের পেটে মায়ের জন্ম যা, আপনার নোবেলপ্রাপ্তিও তা। জর্জ বুশ আগাম আক্রমণের ধারা চালু করেছিলেন। নোবেল কমিটি দিল আগাম পুরস্কার। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের মতোই এ পুরস্কারও যখন অহেতুক ও ব্যর্থ বলে প্রমাণ হবে, তখন দেওয়া হবে পরিবর্তিত বাস্তবতার দোহাই। বাস্তবতাকে ইচ্ছামতো সাজানো ও ব্যাখ্যা করার ক্ষমতা আছে বলেই যুদ্ধ করে আসার পর উড্রো উইলসন, টেডি রুজভেল্ট, হেনরি কিসিঞ্জার, শিমন পেরেজদের মতো মার্কিন-ইসরায়েলি প্রেসিডেন্টরা শান্তির শিরোপা জিততে পারেন! সাবাস নোবেল কমিটির তেলেসমাতি!”
অস্মিতা - ১২ অক্টোবর ২০০৯ (৯:৫৯ অপরাহ্ণ)
এই পোস্টে গত কয়েকদিনের আলোচনা পড়ে ভারী দুঃখ পেলাম। এই বেলাতেই “হিংসুটিদের গান” ধরার কোন মানে হয় না। বরং, একজন কালো মানুষ নোবেল পেয়েছেন তাতে আমাদের সুখী হওয়াই উচিত বলে মনে করি। আমার কিন্তু ওবামাকে একরকম ভালোই লাগে। কেমন ভাঁজ দিয়ে কথা বলেন লোকটি। শুনলেই প্রাণ জুড়ায়।
ভাল কিছু করবার আগেই পুরষ্কার দিয়ে দেয়ার বিষয়টিতে নোবেল কমিটির এমনকি বিচক্ষণতার প্রকাশ ঘটেছে বলেই আমি মনে করি। হোজ্জা নাসিরউদ্দিনের সেই গল্পটি নিশ্চয়ই সবার মনে আছে। হোজ্জা-কন্যা একটি মূল্যবান ফুলদানী হাতে দুলতে দুলতে হেঁটে যাচ্ছিল। এমন সময় অতর্কিতে হোজ্জা তাকে ডেকে কষে দু’খানা চড় দিলেন। হতভম্ব কন্যা কাঁদো কাঁদো মুখে কারণ জানতে চাইলে হোজ্জা দার্শনিক ভঙ্গিতে উত্তর দিয়েছিলেন – “ফুলদানী ভেঙ্গে ফেললে আর চড় দিয়ে কি লাভ? তাই আগেই দিয়ে রাখলাম যাতে তুই সাবধানে থাকিস।” এক্ষেত্রে আরও মনে রাখা উচিত যে ভাল মানুষ পুরস্কারের জন্য কাজ করেন না। কাজেই যিনি ভাল কাজ করবেনই করবেন তাঁকে আর পুরস্কার দিয়ে লাভ কি? বরং যার ভবিষ্যত কার্যকলাপ নিয়ে সংশয়ের অবকাশ আছে, তাকে পুরস্কার দিয়ে গভীর কৃতজ্ঞতাপাশে আবদ্ধ করার চেয়ে বুদ্ধির ব্যাপার আর কি হতে পারে?
জনাব ওবামাকে যে ক্রাইটেরিয়াগুলো মাথায় রেখে পুরস্কার দেয়া হল (সবগুলো জানি না তাই অনুমানে বলছি) – সেগুলোকে স্মরণে রেখে বরং আমার প্রস্তাব হল এই শাখায় পরবর্তীতে পুরস্কৃত করা উচিত দেশরত্ন তারেক জিয়াকে। কারণ, এক- তিনি কালো; দুই- তিনি তৃতীয় বিশ্বের বংশোদ্ভুত; তিন- তিনি দেশের ১৫ কোটি মানুষের জান এবং মাল রক্ষার্থে বর্তমানে বিদেশে নির্বাসিত জীবনযাপন করছেন। তবে “ভবিষ্যতে তিনি যে ভাল কিছু করবেনই করবেন” সেটা প্রায় নিশ্চিতভাবেই বলা যায় যদি তিনি এই মর্মে মুচলেকা দেন যে তিনি ভবিষ্যতে যে পারসেন্টেজ সংগ্রহ করবেন তা জনস্বার্থে ব্যয় করবেন। তাঁর আজীবন কর্মলব্ধ জ্ঞান এবং যোগাযোগ দিয়ে পাক-বাংলা-দুবাই এর মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক এবং লেনদেন আরও শক্তিশালী এবং বেগবান করবেন। তাঁর স্নেহধন্য দাউদ ইব্রাহিম গং ইত্যাদিরা তাঁর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে শান্তির পতাকা তলে সামিল হবেন, রাতারাতি যে বিত্ত-বৈভবের মালিক হওয়া সম্ভব, এ বিষয়ে যুব সমাজের মাঝে একজন রোল-মডেল হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন। আর আজ যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে সারা দেশে যে অশান্তির বিষবাষ্প ছড়িয়ে যাচ্ছে, সেটি চিরতরে নির্মূল করতে তিনি অবশ্যই অবশ্যই কার্যকর ভূমিকা রাখবেন।
পরবর্তী মনোনয়নের জন্য আমি খুব গভীরভাবে চিন্তা করছি জননেত্রী শেখ হাসিনার কথা। অবশ্য শান্তি-পুরস্কার নিয়ে যে ধরণের অশান্তি হচ্ছে (এই পোস্টই যার প্রমাণ), তাতে শান্তি-শাখায় না দিয়ে শেখ হাসিনাকে পদার্থ বিজ্ঞান শাখায় নোবেল দেয়া যেতে পারে – অপদার্থদেরকে নিয়ে রাজনীতি করার এবং দেশ পরিচালনার যে অভূতপূর্ব দৃষ্টান্ত তিনি স্থাপন করেছেন সেটিকে যথোপযুক্ত স্বীকৃতি দেয়ার জন্য!
সুইডেনের নোবেল কমিটির অপেক্ষায় বসে না থেকে আমাদেরও কিছু জনগুরুত্বপূর্ণ (!) পদক্ষেপ অবিলম্বে গ্রহণ করা উচিত। প্রস্তাব করছি নিম্নলিখিত বস্তুগুলো রাষ্ট্রীয় কোষাগারের অর্থ থেকে দ্রুত কিনবার জন্য –
এক— বড় সড় একটা টেলিস্কোপ, বাংলাদেশের বিদগ্ধ আলেম সমাজের জন্য যেন তারা চাঁদ দেখতে পারেন (অনেকদিন ধরেই বিষয়টি নিয়ে আমি একা একাই চেঁচিয়ে যাচ্ছি, কেউ কান দিচ্ছেন না!!)।
দুই— লেস-ফিতা-চুড়ি-হিলতোলা জুতো, বাংলাদেশের মিডিয়ার অকুতোভয় হর্তাকর্তাদের জন্য।
তিন— যুতসই পাজামার ফিতে, বিএনপির মান্যবর মহাসচিবের জন্য।
চার— চোখের সুরমা, দাড়ির মেহেদী, এক ডিব্বে নূরাণী জর্দা এবং স্বয়ংক্রিয় চাপাতি শাণানো যন্ত্র – জনাব নিজামী এবং তার মজলিসে শুরার সহকর্মীবৃন্দের জন্য, যাতে তাঁরা বিচার-ইত্যাদি নিমিত্তে সৃষ্ট যাবতীয় অশান্তি এবং “গন্ডগোল” কার্যকরভাবে দমন করতে পারেন (ঠিক যেমন চেষ্টা করেছিলেন ১৯৭১ এ)।
পাঁচ— এক কৌটা মস্তিষ্ক বলবর্ধক টনিক, মাননীয়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর জন্য।
ছয়— চোখে লাগানোর স্পেয়ার ঠুলি, মাননীয়া প্রধানমন্ত্রীর জন্য, এই শর্তে যে তিনি মাননীয়া বিরোধী দলীয় নেত্রীর সাথে তা মিলেমিশে ব্যবহার করবেন।
সাত— গরুর মুখে একটি বস্তু লাগানো হয়ে থাকে যাতে তারা যত্রতত্র মুখ খুলতে না পারে (নাম মনে পড়ছে না)। সেই একই বস্তু প্রচুর পরিমাণে কেনা হোক মাননীয় বানিজ্য মন্ত্রীর জন্য।
আট— গরুর খুঁটি, সাকাচৌ-এর জন্য।
নয়— স্লেট-পেন্সিল, বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবি সমাজের জন্য, যেন তাঁরা আবার নতুন করে লিখতে শেখেন।
এই আমার নয় দফা (আপাতত) দাবী, মুক্তাঙ্গনের মাধ্যমে দেশবাসী সমীপে।
ফারুক ওয়াসিফ - ১৩ অক্টোবর ২০০৯ (৮:৩৯ অপরাহ্ণ)
একটি জিনিষ বাদ গেছে, শাইনিং ইন্ডিয়ার থেকে নিয়মিত পালিশ পাওয়ার জন্য চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করা এবং বাৎসরিক ভাবে পালিশ হওয়ার জন্য বন্ধুত্বের নিদশর্ন হিসেবে শাইনার-উপহার আদায় করা।
ধন্যবাদ।
মোহাম্মদ মুনিম - ১২ অক্টোবর ২০০৯ (১০:৪০ অপরাহ্ণ)
এই শান্তি পুরস্কারটি ওবামার জন্য একটি অস্বস্তির ব্যাপারই হয়েছে। তিনি এই পুরস্কারটি পাওয়ার কয়েক ঘন্টার মধ্যে এই নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়ে গেছে। তিনি বড় বড় কথা বলে ক্ষমতায় এসেছেন, কিন্তু এই নয় মাসে তাঁর অর্জন মোটামুটি শূন্যের কোঠায়। বুশের আমলে যুদ্ধ এবং অর্থনীতি দুটো মিলিয়ে মার্কিনীরা এতটাই নাজেহাল ছিল যে ওবামাকে পয়গম্বরের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, নির্বাচিত হবার সময় থেকে শপথ গ্রহনের মাঝের দুমাসে (lame duck period) তিনি কার্যত রাষ্ট্রপতিই ছিলেন।
তাঁর শপথ গ্রহন থেকে নোবেল মনোনয়নের মাঝের মোটে দুসপ্তাহের ফারাকটি মার্কিন মিডিয়াতে বার বারই আসছে। ওবামা এই দুসপ্তাহে কি করেছেন, শপথ গ্রহনের পর লোকজনের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় আর কিছু বাগাড়ম্বর। এই করে কি নোবেল পুরস্কার পাওয়া যায়, Fox News এর টমি ডি সেনোর প্রশ্ন। আরেকজন রক্ষনশীল কলামিস্ট বলছেন, ওবামা ক্ষমতায় আসার পর যা করেছেন তা হলো সারা দুনিয়াতে ঘুরে ঘুরে আমেরিকার হয়ে মাফ চেয়েছেন, গুয়ানতানামোর জন্য, জাতিসংঘের পাওনা না মেটানোর জন্য, হিরোশিমার জন্য। নোবেল পুরষ্কার হলো এই মাফ চাওয়ার পুরষ্কার। যারা এই পুরষ্কারের ব্যাপারটি সমর্থন করছেন তাঁদের একজন বলছেন এটি মুলত বুশ না হবার পুরষ্কার। আর একজন বলছেন এটা স্রেফ একজন ভাল মানুষ হবার পুরষ্কার।
ওবামা নোবেল শান্তি পুরষ্কারের খবর পাওয়ার একটু পরেই আফগানিস্তানে আরও ৩০ হাজার সৈন্য পাঠালেন, এই irony টির কথা উল্লেখ করেছেন প্রাক্তন নোবেল বিজয়ী জোডি উইলিয়ামস (যিনি স্থলমাইন নিষিদ্ধ করতে কাজ করেছেন)। নোবেল কমিটি সক্রিয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে পুরষ্কার দিয়ে আগেও বিতর্কিত হয়েছে, যেমন হেনরী কিসিঞ্জার (১৯৭৩), ইয়াসির আরাফাত এবং সিমন পেরেজ (১৯৯৪), দক্ষিন আফ্রিকার প্রাক্তন বর্ণবাদী রাষ্ট্রপতি ডি ক্লার্ক (১৯৯৩)। এরা চরমপন্থা বা দক্ষিনপন্থা অবলম্বন করলেও এক পর্যায়ে নিজেদের পুর্বের অবস্থান পরিবর্তন করে সমঝোতার পথে এসেছিলেন। এঁদের সবারই হাত রক্তে ভেজা থাকলেও রক্তপাত বন্ধের প্রতিশ্রুতি দেয়ায় তারা পুরষ্কৃত হয়েছিলেন। হিটলার যদি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মাঝামাঝি এসে মিত্রপক্ষের সাথে সন্ধি করতো, তবে তাকেও হয়তো এই পুরষ্কার দেয়া হতো।
ফারুক ওয়াসিফ - ১৩ অক্টোবর ২০০৯ (৮:৪৩ অপরাহ্ণ)
তারা সবভাবেই সফল, ইতিহাসকে কেমন ব্যক্তিকেন্দ্রিক করে ফেলতে পেরেছে।
নীড় সন্ধানী - ১৩ অক্টোবর ২০০৯ (১০:৪৩ পূর্বাহ্ণ)
পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী ও মারাত্মক অস্ত্রভান্ডারের তালাচাবি যার কাছে, তাকে নোবেল শান্তিপুরস্কার দেয়া যুক্তিযুক্ত এই কারনে তিনি ঐ সকল অস্ত্রভান্ডার মানবজাতির বিরূদ্ধে ব্যবহারে সংযত থাকবেন। থাকবেন তো? থাকতেই পারেন অন্ততঃ রিপাবলিকানদের তুলনায়।
সেই হিসেবে আগাম নোবেলের দাবীদার সকল পারমানবিক শক্তিধর রাষ্ট্রযন্ত্র। যারা এখনো পারমানবিক অস্ত্র কখনো মানবজাতির বিরূদ্ধে ব্যবহার করে নি।
সবচেয়ে মজার সমীকরনটা হলো শান্তিতে সবচেয়ে বেশী নোবেলপ্রাপ্ত যেই দেশের রাষ্টপ্রধানগন, সেই দেশটিই মানবজাতির বিরূদ্ধে সবচেয়ে ভয়ংকর অস্ত্রগুলো, হামলাগুলো চালিয়েছে।
শান্তিতে নোবেলের দাবীদার কিন্তু সেই বাঘটিও, যে বাঘটির গলায় হাড় ফুটিয়াছিল, বক মশাইকে তিনি নির্বিঘ্নে কাটাটা উদ্ধার করতে সুযোগ দিয়েছিলেন!
ফারুক ওয়াসিফ - ১৩ অক্টোবর ২০০৯ (৮:৪১ অপরাহ্ণ)
ঈশ্বর নাকি পাপ আর পূণ্যের একটা ভারসাম্য রাখেন জগতে, আমেরিকার যুদ্ধগুলোর ভারসাম্য রাখার জন্য শান্তির মেডেল তাদেরই বেশি দরকার।
স্নিগ্ধা - ১৫ অক্টোবর ২০০৯ (৮:৩২ অপরাহ্ণ)
চমৎকার পোস্ট!
ফারুক ওয়াসিফ - ১৬ অক্টোবর ২০০৯ (১২:৪০ পূর্বাহ্ণ)
ধন্যবাদ।
আহমেদ হোসেন - ১৩ মার্চ ২০১০ (৪:১৬ অপরাহ্ণ)
Godfrey Hodgson-এর নিবন্ধ : ‘Barack Obama and America’
ফারুক ওয়াসিফ - ১৫ মার্চ ২০১০ (৫:১০ অপরাহ্ণ)
শেষ লাইনে ‘আশার ব্যাপারই’ আসলে হবে ‘আশার ব্যাপারি’। ঠিক করে দিলাম।
> আহমেদ হোসেন> ভাল লেখা। ধন্যবাদ।