অবশেষে নির্বাচনের তারিখ ঘোষিত হলো। ১৮ ডিসেম্বর সংসদ নির্বাচন। ২৪ ও ২৮ উপজেলা নির্বাচন। চ্যানেল আই তে দেখলাম দুনেত্রী এই সংবাদে মোটামোটি আশ্বস্ত । তারা সংলাপেও নাকি বসছেন। ব্যা: রফিক উল হক এ বিষয়ে বেশ দৃঢ়তা দেখাচ্ছেন । ফলাফল কি হবে, তা দেখার বিষয়।
তবে এটা নিশ্চিত দুনেত্রী নিশ্চিত, ক্ষমতা নিজেদের মাঝে রাখতে হবে। কামড়া -কামড়ি করা যাবে পরে। পটপরিবর্তনের পর। কিন্তু কথা হচ্ছে , ওয়ান – ইলেভেন তো আবারও আসতে পারে বাংলাদেশে! রাজনীতিতে প্রতিদিন নতুন নতুন ঘটনা ঘটছে। তারেক রহমানের মুক্তির পর খালেদা জিয়ার জামিনও সম্পন্ন হলো। এখন চলছে শেখ হাসিনা কে স্থায়ী মুক্তি ডেবার প্রক্রিয়া। ওয়াশিংটন সফররত বানিজ্য উপদেষ্টা ড হোসেন জিল্লুর রহমান ,শেখ হাসিনার সাথে বৈঠক করবেন বলে ও শোনা যাচ্ছে।
বিএনপিতে এখন নতুন প্রাণের পরশ। বেগম জিয়া বিশেষ কারগার থেকে বেরিয়ে অফিসে যান। সেখানে তাকে ঘিরে রেখেছিল সেসব নেতারা যারা এতোদিন আত্মগোপন করে ছিল। একটা বিষয় বেশ স্পষ্ট বুঝা গেলো বেগম জিয়ার মুক্তির মাধ্যমে পলাতক থাকা ইলিয়াস আলীরা আবার সামনে চলে এসেছে। অথচ দুদকের তালিকায় এসব নেতাদের নাম ছিল। তাহলে কি দুদকের সেই তালিকাও এখন ক্রমশ ফ্যাকাশে হতে চলেছে? হাসান মশহুদ চৌধুরীর সেই সব হুংকার ভেদ করে এখন হারিছ চৌধুরীরাও বেরিয়ে আসবে আত্মগোপন থেকে? আবার দখল নেবে সেসব তস্কর রাজনীতিকরা? অবস্থা এখন অনেকটা তেমনই মনে হচ্ছে। সরকার খেলছে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে। আর রাজনৈতিক দলগুলোও খেলে যাচ্ছে সমান তালে। আরো একটা বিষয় আমরা লক্ষ্য করলাম। তারেক রহমান বিদেশ যাওয়ার আগে তাকে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব পদটি ছেড়ে যেতে হলো। তার বিদেশ যাত্রা থামিয়ে দেওয়া হয়েছিল। খালেদা জিয়া বেরিয়ে এসে তারেকের অব্যাহতি নেওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পরই তারেককে সপরিবারে প্লেনে ওঠার অনুমতি দেয় সরকারি মহল। বেগম জিয়া বলেছেন, যেহেতু বিদেশে চিকিৎসার জন্য দুই-তিন বছর লাগতে পারে তাই তিনি অব্যাহতি নিয়েছেন। বুঝতে কারো বাকি থাকার কথা নয়, দলের ওপর যে ধকল নেমে এসেছিল তা সামাল দিতেই বেগম জিয়া একটি সমোঝতায় পৌঁছুতে সম্মত হন ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে। সেই সমঝোতার ধারাবাহিকতা অনুযায়ী কোকো ও তারেকের জামিনের পরই জামিন নেন তিনি। এরমধ্য দিয়ে চুপসে যায় অনেক কিছুই। সম্পদের বিবরণ দিতে গরমিলের যে অভিযোগ ডা. জোবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে উঠেছিল তাও চাপা পড়ে যায় ফাইলের নিচে। জামাত নেতা আলী আহসান মুজাহিদ, ঢাকার মেয়র সাদেক হোসেন খোকা প্রমুখের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাও ক্রমশ স্থবির হয়ে পড়লো। বিদেশে লুকিয়ে থাকা নেতারাও উড়ে আসতে থাকলো!
আরো একধাপ এগিয়ে সবাইকে অবাক করে দিয়ে বর্তমান সরকারের উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেছেন, বর্তমান সরকার চায় দু নেত্রী এক টেবিলে বসে আলোচনা করবেন। প্রায় একই কথা বলেছেন, দু নেত্রীর প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিকুল হক। প্রবীণ এই আইনজীবী বলেছেন, দুর্নীতি-মারামারি বন্ধ করে দুই নেত্রী যদি আলোচনায় না বসেন তবে আরো ওয়ান ইলেভেন আসতে পারে। ব্যারিস্টার রফিকুল হক এবং ড. হোসেন জিল্লুর রহমানের কথায় একই সঙ্গতি খুঁজে পাচ্ছে বাংলাদেশের মানুষ।
কিন্তু কথা হচ্ছে এভাবে চাপ প্রয়োগ করে দুই নেত্রীকে এক টেবিলে বসানো যাবে কি? আমার মনে হয় তা এই বাংলাদেশে সম্ভব নাও হতে পারে। আর বসাতে পারলেও তা জাতীয় স্বার্থে কোনো কাজে নাও আসতে পারে। বরং হিংসা-বিদ্বেষের মাত্রা বাড়তে পারে কোনো কোনো ক্ষেত্রে।
দুই.
একটি দৃশ্য ক্রমশ বেশ স্পষ্ট হতে শুরু করেছে। তা হচ্ছে বর্তমান কেয়ারটেকার সরকারকে একটি প্রধান দলের হাতে ক্ষমতা দিয়েই বিদায় নিতে হতে পারে। তাদের প্রধান কাজ কি ছিল, তারা তা কতোটা সম্পন্ন করতে পেরেছেন, তা যদিও স্পষ্ট নয়, তবু বুঝা যাচ্ছে তারা বিএনপি-আওয়ামী লীগের ভারসাম্যতা রক্ষা করেই একটি নিরাপদ এক্সিট চাইছে। আর সে জন্য তাদের পছন্দ মতো কোনো দলের হাতে ক্ষমতা দিয়ে বিদায় নিতে চান তারা।
বাংলাদেশের বৃহৎ একটি জনগোষ্ঠীর মতে, ওয়ান-ইলেভেন পরবর্তী, শেখ হাসিনা-খালেদা জিয়া বাংলাদেশে বরং আরো জনপ্রিয় হয়েই উঠেছেন। কারণ সরকার খুব শক্তভাবে তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি। আর সেটাই যদি প্রকৃত সত্য হয়, তবে ওয়ান ইলেভেনের ইউটার্নের প্রকৃত বেনিফিশিয়ারি কে বা কারা সে প্রশ্নও দেখা দিচ্ছে পাশাপাশি।
এ কথা মনে রাখতে হবে, তারেক রহমানের রাজনীতি করার অধিকার বাংলাদেশে আছে। দুবছর পরে হোক আর ছ মাস পরে হোক তার দলে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা তার জন্য কোনো কঠিন বিষয় নয়। কিন্তু কথা হচ্ছে তারেক রহমানসহ ‘হাওয়া ভবনের’ অনেক হোতার বিরুদ্ধে যে এন্তার অভিযোগ শোনা গেলো সেগুলো এখন কোথায়? সাব্বির হত্যা মামলায় একুশ কোটি টাকা ঘুষের মামলাটিও কি শেষ পর্যন্ত ধামাচাপা পড়তে শুরু করলো? বাবর-মামুনরাও ধুয়া তুলশি হয়ে যাবে?
এই সুবাদে একাত্তরের পরাজিত শক্তি জামাত আবারো জেঁকে বসছে বিএনপির ঘাড়ে। মুক্তি পেয়ে প্রথমে দলীয় কার্যালয়ে গিয়েই খালেদা জিয়া বলেছেন, তার দলে কোনো অনৈক্য নেই। সবাইকে নিয়েই তিনি কাজ করবেন। দলে কিছুটা স্নায়ুচাপ থাকলেও বহিষ্কার কাউকে করা হবে না সেটা প্রায় নিশ্চিত। মেজর জেনারেল মীর শওকত আলীর মতো বীর নেতাকেও তো দলে নিষ্ক্রিয় করে রেখেছিল বিএনপি। তা হলে আজ মান্নান ভুঁইয়া, জেড এ খান, মাহবুবুর রহমান, মোফাজ্জল করিমদেরকে কর্নারে রাখতে বেগম জিয়ার তেমন অসুবিধা কোথায়? শেষ পর্যন্ত সেটাই হতে পারে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মেজর জেনারেল আব্দুল মতিনের ভাষায়, রাঘববোয়াল নিয়ে তদারকি খেলা দেখলো বাংলাদেশের মানুষ। যে খেলার ফলাফল শূন্যই থেকে যাচ্ছে। যেভাবে গণহারে জেলে নেওয়া হয়েছিল- সেভাবেই বারোটি মামলার জামিনও হচ্ছে দু-তিন দিনে। এসব ঘটনা বিশ্বের সভ্য কোনো সমাজে নজিরবিহীন। মোট কথা হচ্ছে, ওয়ান ইলেভেনের অর্জন থেকে যাচ্ছে শূন্যের কোঠায়। ক্রমশ দুর্নীতিবাজদের জয়োল্লাসই দেখছে দেশের মানুষ।
