যে কোনো ভাষার যে কোনো সাহিত্যের প্রধান কাজ মুখের কথা লেখা। সেই লেখা যার মধ্যে জারিত হয়ে গেছে ভাষার কথা বলার চিন্তা ও আখ্যানের মূর্ত ও বিমূর্ত প্রকাশের পরিশ্রমের সব বিন্যাস এবং ভাষাশিল্পীর চলমানতার সমাবেশ। আমরা কাকে পেয়েছি সবার আগে? কে আধুনিক বাংলা ভাষার সবচেয়ে বড় শাব্দিক ও শিল্পী? সুনীতিকুমারের মতে ব্যাকরণিয়া ও বাকপতি শ্রীরবীন্দ্রনাথ। আমার কাছে পঁচিশে বৈশাখ তাই শুধু রবীন্দ্রনাথের জন্মদিন নয়, মুখের কথা লেখার জন্মদিন, আধুনিক বাংলা ভাষার জন্মদিন। আমি তাই রবীন্দ্রগান নিয়ে আমাদের বিকট উচ্ছ্বাসকে অনেক ছোট করে দেখি। আমার কাছে কবিতার ও ছোটগল্পের রবীন্দ্রনাথই সেরা, তারপর নাটকের রবীন্দ্রনাথ, এরপর উপন্যাসের রবীন্দ্রনাথ। আর যাকে সবচেয়ে শ্রদ্ধা করি সেই ব্যাকরণিয়া রবীন্দ্রনাথ আর সভ্যতার সংকটের ধারাভাষ্যকার রবীন্দ্রনাথের মধ্যে পাই ভাষাচিন্তার এক অনন্য ব্যক্তিত্বকে, পাই সমকালকে নিয়ে বিদীর্ণ এক চিরজাগ্রত সত্তাকে, সামন্ত থেকে লোকসত্তায় পরিণত এক অতিপ্রয়োজনীয় ব্যক্তিকে, যার মধ্য দিয়ে এক আধুনিক চিত্তের লেখককে দেখতে পাই, বলতে পারি বাংলা ভাষায় রাজনৈতিক লেখার জন্মদিনও পঁচিশে বৈশাখ। ০৮ মে ২০০৯ বাংলাদেশের ২৫ বৈশাখ ১৪১৬ চট্টগ্রাম। ****************************************************** গুরুদেবীয় রবীন্দ্রনাথ নানা রবীন্দ্রনাথের নিকৃষ্টতম মালা। গুরুদেব আমার কাছে রবীন্দ্রনাথকে সম্বোধনের এক ব্রাহ্মমিডিয়াবাজি। এই সম্বোধনকে আমি ঘৃণা করি। আমার এই ঘৃণার প্রকাশ আমি আজো সেভাবে ভাষায় ধরতে পারিনি। কিন্তু সন্দীপন চট্টোপাধ্যায় পেরেছেন, ডায়রিতে ১১ জানুয়ারি ১৯৯৬-এ তিনি লিখেছেন। রবীন্দ্রনাথ স্তন* নিয়ে কবিতা লিখেছেন। ‘কড়ি ও কোমল’ বাচ্চা বয়সে লেখা। তখন ব্রাহ্মদের, মানে অনুশাসনপ্রিয় ভাবালুতায় ভরা ব্রাহ্মনেতাদের হাতে পড়েননি। পড়তেই সর্বনাশ হল। উনি যে ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোর বুকে হাত দিয়েছিলেন(ওকাম্পোর ডায়রি বলছে) সে কথা হাজার হাজার গোপনকথা ইনিয়ে বিনিয়ে কবিতা গানে বললেও পুরোপুরি চেপে গিয়েছিলেন। অবশ্য এও হতে পারে রিয়ালকে নিতে পারেননি। অথবা গুরুভজ চেলাদের ইমেজ রক্ষায়—গুরুদেব তো অমন করতে পারেন না—তাঁর যে পাঁচটা আঙুল তা শুধু ‘গীতাঞ্জলী’ লেখবার জন্য, টেপার জন্য নয়—চ্যালাদের এই চীবরেই নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে দিলেন। তিনি স্তন নিয়ে অবসেশড ছিলেন কিনা বুঝতে দিলেন না। * স্তন নারীর প্রাণের প্রেম মধুর কোমল, বিকশিত যৌবনের বসন্তসমীরে কুসুমিত হয়ে ওই ফুটেছে বাহিরে, সৌরভসুধায় করে পরান পাগল। মরমের কোমলতা তরঙ্গ তরল উথলি উঠেছে যেন হৃদয়ের তীরে। কী যেন বাঁশির ডাকে জগতের প্রেমে বাহিরে আসিতেছে সলাজ হৃদয়,…
প্রতিটি বিনিয়োগ শ্রম খোঁজে। শ্রমের কাছ থেকেই বিনিয়োগ সবচেয়ে বেশি খরচ বাঁচাতে চায়। তাই সস্তা শ্রমের এত কদর বাজারে। আবার বিনিয়োগ আক্রান্ত হলেও সবার আগে সে যাকে ছেঁটে ফেলতে চায় সেও শ্রম। বিনিয়োগ আর শ্রমে কেন এই বিরোধ? তাহলে আমরা এই তৃতীয় বিশ্বের মানুষ বাঁচব কী করে? বিশেষ করে এই আগুয়ান মহামন্দায়, আমাদেরকে কি শ্রমশোষনের নতুন ফাঁদে ফেলবে পৃথিবীর জি-৮,জি-২০... এরকরম আরো আরো ধনী-জি-রা? আমরা তো আমাদের দেশের বৃহৎ দর্জি শক্তিকেই বাগে আনতে পারছি না। বাইরের ওই আরো লোলুপ শক্তিকে কিভাবে মোকাবেলা করব? প্রতিদিন ৬টি হারে লাশ এসেছে ঢাকা বিমান বন্দরে, বলা হয়েছে গুরুতর অসুস্থতার কারণে মৃত্যু হয়েছে, বিদেশে শ্রম দিতে যাওয়া আমাদের এই লোকগুলোর,কিন্তু আসলে কী হয়েছে আমরা আজো জানতে পারিনি। আমাদের শ্রমিকরা কি কোনোভাবেই প্রথাগত ট্রেড ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে নিজেদের শ্রমের বিকাশ ঘটাতে পারবে না? কেন আমাদের দেশের সমাজতান্ত্রিক দলগুলো কৃষক শ্রমিক আন্দোলনে নিজেদের সম্পৃক্ততা বাড়াতে পারছে না? কেন আজো আওয়ামী লীগ বিএনপির হাতে পড়ে আছে শ্রমিকেরা? তার চেয়েও উদ্বেগজনক গার্মেন্টস শ্রমিকদের মধ্যে জামায়াত শক্তিশালী অবস্থান নিয়েছে গত বেশ কয়েক বছর, বিশেষ করে ২০০৭-২০০৮ সামরিক সমর্থিত তত্ত্ববধায়ক সরকারের আমলে প্রতিটি গার্মেন্টস শ্রমিক আন্দোলনে জামায়াতের শ্রমিক কল্যাণ ইউনিয়নের তৎপরতা ছিল খুবই আশঙ্কাজনক। গণতন্ত্র আপনাকে সবার অধিকার সংরক্ষণের কথা বলে কিন্তু গণতান্ত্রিক দলগুলোর হাতে শ্রমিক স্বার্থ নিরাপদ নয়, আর সাম্প্রদায়িক ধর্মীয় দলগুলোর হাতে তো অবশ্যই নয়। আজ নিরুপায়ভাবে এই আশা নিয়ে ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে আছি, যেহেতু শ্রমই কৃষি শিল্প ও সেবার একমাত্র নির্ণায়ক শক্তি, কাজেই এই শক্তির ভেতর থেকেই নতুন সমাজতান্ত্রিক শক্তির উন্মেষ অবশ্যই হবে, আমাদের বাংলাদেশে তেমন দিনের আবাহন জানাতেই প্রতিটি পহেলা মে অন্তরে এক শ্রমঘন দিনযাপন করি। পহেলা মে ২০০৯ চট্টগ্রাম
আমরা আমাদের প্রতিনিয়তের গ্লানি নিয়ে উৎসবে আক্রান্ত হই। অংশগ্রহণ থেকে অনেক দূরে আমাদের অবস্থান। এতই দূরে যে আর কিছুই আমাদের উৎসবের উদযাপিত দিনের কাছে নিয়ে যেতে পারে না। মৃত, এই মৃত্যু, আমরা আমাদের ভেতর বয়ে বেড়াচ্ছি, কেউই নেই আর আমাদের ফেরাতে পারে। ভুলেও আমরা ফিরব না, ভুলেও আমরা দেখব না, আমাদের যা কিছু, পণ্যতার বিবরণ ছাড়া তাতে আর কিছুই খুঁজে পাওয়া যাবে না। যত বিভৎস হতে পারে লালসাদা, যত কল্পনাহীন হতে পারে সাদাকালো, যত অন্বয়হীন হতে পারে রংবেরং—এই নিয়ে এখন আমাদের উৎসবের দিনযাপন। আমরা নাগরিকতাহীন সব শহুরে বিদঘুটে পরিজন, আমাদের পরিমণ্ডল আমাদের দিনাতিপাতকেই শুধু বহন করে, আমাদের নেই কোনো URBAN CENTRE যা না থাকলে নাগরিক সংষ্কৃতি তার প্রকাশ খুঁজে পায় না, লাইব্রেরি নেই, মিউজিয়াম নেই, সঙ্গীত কেন্দ্র নেই, নৃত্যকেন্দ্র নেই, ওই দিনাতিপাত আমাদের কুরে কুরে খাচ্ছে, উৎসবে তার দগদগে ঘা দেখতে পাচ্ছি। পহেলা বৈশাখ ডিসিহিল সিআরবি দামপাড়া চট্টগ্রাম।
আজ ২৫ চৈত্র ১৪১৫, ০৮ এপ্রিল ২০০৯, রাত ৯-৪১ পূর্ণিমা লেগেছে। চৈতি পূর্ণিমা আমার ব্যক্তিগত বিশেষ রাত। বছরের শেষ পূর্ণিমায় আগামী বছরের উল্লেখযোগ্য কোনো আশঙ্কা বা আশা আমাকে ভাবিত করে। এবছর আশঙ্কা। ভাবছি এই প্রায় একঘণ্টা ধরে। ভাবছি এমন একটি ভাবনা পোস্টে দেব কি না, চন্দ্রাহত ভাবনা কি এটা, বুঝে উঠতে পারছি না। তবে মনে হচ্ছে এই আশঙ্কার কথা সবাইকে বলা যায়, ব্লগ তো এক অর্থে দিনপঞ্জি, তবে বলি : আওয়ামী লীগ ভাঙবে আগামী বছরে, হতে পারে আষাঢ়-শ্রাবণে (জুলাই-অগাস্ট ২০০৯) বা বাংলার রাজনৈতিক ঋতুতে অগ্রহায়ণ-পৌষে (নভেম্বর-ডিসেম্বর ২০০৯)। নতুন দলের চরিত্র হতে পারে মধ্যপন্থার, ডান নয় বামও নয়। আগের মতো বিছিন্ন দু-একজনের ভাঙন নয়—বড় সফল ভাঙন। শেক্সপিয়রের ‘চৈতালি রাতের স্বপ্ন’ আমার পড়া নেই, কিন্তু জানি এ নাটকের অভিকরণ (performance) লন্ডনে আমেরিকায় সফল মিউজিকাল, নাচে গানে ভরপুর দুর্দান্ত শো। চৈতি পূর্ণিমা এলেই আমার Midsummer Night’s Dream পড়তে ইচ্ছে করে, কিন্তু এতগুলো চৈতি পূর্ণিমা পার হয়ে গেল, কেন যেন আজো পড়া হলো না! চৈতি পূর্ণিমা ১৪১৫ সমুদ্রবন্দরচট্টগ্রাম।
কবি শঙ্খ ঘোষ অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি অল্প কয়েক দিনের জন্য ঢাকায় যাবেন -- খবরটা শান্তিনিকেতনে থাকতেই পেয়েছিলাম। ঢাকায় দেখাও হয়েছিল, তাঁর কলকাতায় ফিরে যাবার দিন -- ১৯ অক্টোবর তারিখে। সেদিন তাঁকে ঘিরে গল্পে-আড্ডায়-গানে মেতে উঠেছিলেন অনেকে। ছবি তোলার কোনো পূর্বপরিকল্পনা ছিল না। এক ফটোগ্রাফারকে ছবি তুলতে দেখে আমিও নিজের ক্যামেরাটা বের করেছিলাম। সেদিনের কয়েকটা ছবি দিয়েই মুক্তাঙ্গন-এ আমার এই প্রথম পোস্ট। (more…)