আসলে 'শিল্প' বলতে কিছু নেই। আছেন কেবল শিল্পী। এক সময় তাঁরা ছিলেন এমন কিছু মানুষ যাঁরা রঙিন মাটি দিয়ে কোনো গুহার দেয়ালে বাইসনের অবয়ব আঁকতেন। আজ তাঁরা রঙ কেনেন এবং বিলবোর্ডের জন্যে পোস্টার ডিজাইন করেন; মাঝখানের সময়টাতে তাঁরা মেলা কিছু করেছেন। এই সব কর্মকাণ্ডকে শিল্প আখ্যা দেয়ায় কোনো ক্ষতি নেই, যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা মনে রাখছি যে [...]

[১. অনুবাদক ও রচয়িতার ভূমিকা] প্রা ক্ ক থ ন শিল্প ও শিল্পী প্রসঙ্গে আসলে 'শিল্প' বলতে কিছু নেই। আছেন কেবল শিল্পী। এক সময় তাঁরা ছিলেন এমন কিছু মানুষ যাঁরা রঙিন মাটি দিয়ে কোনো গুহার দেয়ালে বাইসনের অবয়ব আঁকতেন। আজ তাঁরা রঙ কেনেন এবং বিলবোর্ডের জন্যে পোস্টার ডিজাইন করেন; মাঝখানের সময়টাতে তাঁরা মেলা কিছু করেছেন। এই সব কর্মকাণ্ডকে শিল্প আখ্যা দেয়ায় কোনো ক্ষতি নেই, যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা মনে রাখছি যে এরকম একটি শব্দ বিভিন্ন সময় এবং স্থানে খুবই ভিন্ন ভিন্ন জিনিসকে বোঝাতে পারে, এবং যতক্ষণ আমরা উপলব্ধি করছি যে মহৎ কোনো শিল্পের অস্তিত্ব নেই। কারণ মহৎ শিল্প জিনিসটি হয়ে দাঁড়িয়েছে একটি বিরক্তিকর ব্যাপার, অন্ধ আসক্তির বিষয়। একজন শিল্পীকে আপনি এই বলে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিতে পারেন যে, তিনি সদ্য যে কাজটি সৃষ্টি করেছেন সেটি সেটার নিজস্ব ধরনে যথেষ্ট ভালো হতেই পারে, তবে কথা হচ্ছে সেটা 'শিল্প' নয় মোটেই। এবং একটি ছবি উপভোগরত কোনো ব্যক্তিকে আপনি এই বলে হতভম্ব করে দিতে পারেন যে সেটার মধ্যে যা তার ভালো লেগেছে তা শিল্প নয়, বরং ভিন্ন কিছু। আসলে, আমার মনে হয় না যে একটি মূর্তি বা একটি ছবি পছন্দ করার কোনো ভুল কারণ থাকতে পারে। বাড়ির কথা মনে হয় বলে কেউ একটি ল্যান্ডস্কেপ পেইন্টিং পছন্দ করতে পারে, কিংবা কোনো বন্ধুর কথা স্মরণ হয় বলে একটি প্রতিকৃতি। এতে দোষের কিছু নেই। কোনো চিত্রকর্ম দেখলে আমাদের সবারই একশো একটা জিনিস মনে পড়ে যেতে বাধ্য, এমন সব জিনিস যা আমাদের পছন্দ-অপছন্দকে প্রভাবিত করে। আমরা যা যা দেখি সেসব জিনিস উপভোগ করার ব্যাপারে যতক্ষণ পর্যন্ত এসব স্মৃতি আমাদের সাহায্য করছে ততক্ষণ আমাদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ নেই। কিন্তু যখন কোনো অপ্রাসঙ্গিক স্মৃতি আমাদেরকে পূর্বসংস্কারাচ্ছন্ন করে তোলে, পর্বতারোহণ আমাদের পছন্দ নয় বলে যখন স্বতঃপ্রবৃত্তভাবে আমরা আল্প্‌স্ পর্বতের কোনো অসাধারণ ছবি থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিই, কেবল তখনই আমাদের উচিত মনের ভেতর এই বীতরাগের কারণ অনুসন্ধান করা, যে-কারণে আমরা একটি আনন্দ উপভোগ করা থেকে বঞ্চিত হলাম। একটি শিল্পকর্ম অপছন্দ করার ভুল কারণ কিন্তু সত্যিই রয়েছে। বেশিরভাগ মানুষই ছবিতে ঠিক তাই দেখতে পছন্দ করে যা তারা বাস্তবেও দেখতে চায়। এটি একটি স্বাভাবিক…

যে যা-ই বলুন, দ্য স্টোরি অভ আর্ট-এর মতো বই অনুবাদে হাত দেয়া আমার জন্যে অপরাধের শামিল। কিন্তু আমি সেই অপরাধ না করে থাকতে পারিনি। কেন পারিনি সেটা বইটির সঙ্গে যাঁরা পরিচিত তাঁরা তো খানিকটা উপলব্ধি করতে পারবেনই, এমনকী যাঁরা পরিচিত নন কিন্তু আমার এই ব্যর্থ প্রয়াসের মধ্য দিয়ে পরিচিত হতে চাইবেন তাঁরাও বুঝতে পারবেন। [...]

গোড়াতেই নিজের কথা, অর্থাৎ, ব্যক্তিগত একটি সংকোচের কথা না বললে নিজের কাছেই আমাকে জড়োসড়ো হয়ে থাকতে হবে। যে যা-ই বলুন, দ্য স্টোরি অভ আর্ট-এর মতো বই অনুবাদে হাত দেয়া আমার জন্যে অপরাধের শামিল। কিন্তু আমি সেই অপরাধ না করে থাকতে পারিনি। কেন পারিনি সেটা বইটির সঙ্গে যাঁরা পরিচিত তাঁরা তো খানিকটা উপলব্ধি করতে পারবেনই, এমনকী যাঁরা পরিচিত নন কিন্তু আমার এই ব্যর্থ প্রয়াসের মধ্য দিয়ে পরিচিত হতে চাইবেন তাঁরাও বুঝতে পারবেন। তবে, এরকম একটি অপরাধের গুরুতর প্রভাব আছে বলেই পাঠকের দরবারে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। বাংলা অনুবাদের ক্ষেত্রে একটি সমস্যা হলো -- এটি নিতান্তই এ অভাজনের ব্যক্তিগত মত -- এ-ভাষায় অনুবাদ করার মতো এতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ বাকি রয়ে গেছে যে বিষয়বস্তু এবং আয়তন, দু দিক থেকেই ওজনদার একটি বইয়ের একাধিক অনুবাদ করাটা আপাতত আমাদের জন্য বিলাসিতার পর্যায়ে পড়ে (লেখা বাহুল্য, দ্য স্টোরি অভ আর্ট সেরকমই একটি কিতাব)। কাজেই, শিল্পকলা বিষয়ে আমার মতো আনপড় লোকের হাতে দ্য স্টোরি অভ আর্ট অনুবাদ না হওয়াই ভালো ছিল। তাহলে যোগ্য কোনো ব্যক্তির হাতে বইটির যথাযোগ্য সমাদর হতো। কিন্তু এখন আর সেটি হওয়ার উপায় থাকলো না, সম্ভবত। আমার ধারণা ভুল প্রমাণিত হলে আনন্দিত হওয়ার একটি উপলক্ষ পাবো। কথাগুলো বিনয় বলে মনে করলে, পাঠক, আপনারা আমার ওপর অবিচার করবেন। বাংলাদেশে এটা একটি মহামারী আকার ধারণ করেছে। যিনি যে কাজের জন্য উপযুক্ত তিনি তা না করে অন্য কাজ করেন। তাঁদের বেশিরভাগের সঙ্গেই আমার তফাৎ হচ্ছে তাঁরা সেজন্যে সংকোচ বোধ করেন না, আমি করি। বইটি সম্পর্কে আমার আপাতত বিশেষ কিছু বলার নেই, অনেক কারণেই; তার একটি হচ্ছে, সে চেষ্টা না করে অনুবাদটি পাঠযোগ্য করার ব্যাপারেই আমার উৎসাহ বেশি। আর, সেই ইংরেজি প্রবাদটি তো আপনাদের জানাই আছে: "the proof of the pudding is in the eating", তা সেটা অনুবাদের মাধ্যমে খাওয়া হলেও; মানে বলতে চাইছি, আরেকটি প্রবাদের শরণ নিয়ে, ধ্বংসাবশেষ দেখেই বোঝা যায় ইমারতটি একদা জাঁদরেল ছিল। কিছুদিন আগে খানিকটা কৌতূহলবশেই ইউটিউবে গিয়ে বইটির নাম লিখে অনুসন্ধান করেছিলাম। যা পেলাম তা অপ্রত্যাশিত। প্রথমে পাওয়া গেলো একটি অডিওবুক-এর খবর। সেটিও মহামতি গম্‌ব্রিখ্ বিরচিত: আ লিটল হিস্ট্রি অভ্ দ্য ওয়ার্লড। তার নিচে…

পেটের ভাত যোগানো আর কোনমতে বেঁচে থাকার লড়াইই আমাকে তৈরি করেছে। আমি অবশ্য এই লড়াইয়ে নিজেকে কাবু হতে, ধ্বংস হয়ে যেতে দিই নি।

প্রথম লেখার কাজ পেটের ভাত যোগানো আর কোনমতে বেঁচে থাকার লড়াইই আমাকে তৈরি করেছে। আমি অবশ্য এই লড়াইয়ে নিজেকে কাবু হতে, ধ্বংস হয়ে যেতে দিই নি। হায় যীশু! ক'খানা ফালতু ডলার জোগাড় করার জন্য আমাকে আর জুনকে কী দুঃস্বপ্নের ভেতর দিয়েই না যেতে হয়েছিল! আমরা আমার কিছু কবিতা ছাপিয়েছিলাম, আর জুন সেগুলো বার, কাফে ইত্যাদিতে গিয়ে বিক্রি করার চেষ্টা করতো, আমি তখন বাইরে অপেক্ষা করতাম। আমরা জানতাম আমি পাশে না থাকলেই বরং জুন বেশি টাকা যোগাড় করতে পারবে। কখনো কখনো সে কয়েক ঘন্টার মধ্যেও বারের ভিতর থেকে বেরিয়ে আসতে পারতো না। সে হয়তো কোন ব্যাটাছেলের সঙ্গে বসে কথা বলতো আর সেই ছেলে তাকে পানীয় কিনে দিত এবং স্রেফ তার কথা শোনার জন্যই তাকে টাকা দিত। সে কখনো কখনো হয়ত মাত্র পঞ্চাশ পয়সা নিয়ে বেরিয়ে আসতো, কালেভদ্রে হয়তোবা পঞ্চাশ ডলার নিয়ে, আর আমি দরজার পাশে গুটিশুটি মেরে দাঁড়িয়ে থেকে হাতে কবিতার বান্ডিল নিয়ে ঠাণ্ডায় জমে যেতাম। আমরা এমনকি একবার রেস্তোঁরায় রেস্তোঁরায় ঘুরে চমৎকার মোড়কে প্যাঁচানো চকলেট, ক্যান্ডি বিক্রি করার উদ্যোগও নিয়েছিলাম। আবারও জুনই যেত সেইসব জায়গায়, তার আগ্রহ ছিল, আমার ছিল না। লোকেরা হাসাহাসি করে আমাকে বার করে দিতো, আমি সেটা সহ্য করতে পারতাম না। জুন খুব সুন্দরী ছিল। আমি কখনো লেখার কাজ চাইতে গেলে জুনকে সঙ্গে নিয়ে যেতাম। আমি একা গেলে যতটা সহানুভূতি ও আনুকূল্য পেতাম তার সঙ্গে গেলে সচরাচর এর চেয়ে বেশিই পেতাম। আমরা একদিন লিবার্টি ম্যাগাজিন-এর প্রধানের সঙ্গে দেখা করি। আমি তাঁর কাছে সহকারি সম্পাদক পদের জন্য চাকরি প্রার্থনা করি। তিনি জুন ও আমার দিকে ভালো করে চেয়ে দেখে আমাকে বলেন, "শব্দ নিয়ে একটি রচনা লিখে নিয়ে আসো!" আমাকে ভালো চাকরি দিতে পারেন এমন একজনের কাছে নিজেকে প্রমাণ করার সুযোগ পেয়ে আমি লাফিয়ে উঠি, তাছাড়া বিষয়টাও ছিল অনেক ব্যাপক, আমি এ-নিয়ে অনেক কিছুই লিখতে পারতাম। গবেষণা করার জন্য আমি ফাঙ্ক অ্যান্ড ওয়াগনাল-এর অভিধানের দপ্তরে যাই। ফ্রাঙ্ক ভিজটেলী ছিলেন এর সম্পাদক, তিনি এমন একজন মানুষ যাঁকে কোনদিনই ভুলবো না আমি। তিনি গোটা অভিধানটিই তিনবার কি চারবার পড়েছেন! আমাদের মধ্যে খুবই উজ্জীবক একটি আলোচনা হয়। আমাদের সাক্ষাৎকারের পর, কয়েকদিনের মধ্যেই,…

লোকেরা যখন আনাইস-এর প্রশংসা করে একেবারে আসমানে তুলে দেয়, যেনবা সে একজন দেবদূতী, আমাকে তখন শয়তানিতে পেয়ে বসে। আমার মনে হয় না আমি শীতল আচরণ করছি, এটা শুধুমাত্র এই যে, আমি তার দেবীত্ব বিষয়ে শুনতে শুনতে অধৈর্য হয়ে পড়েছি। [...]

আনাইস নিন লোকেরা যখন আনাইস-এর প্রশংসা করে একেবারে আসমানে তুলে দেয়, যেনবা সে একজন দেবদূতী, আমাকে তখন শয়তানিতে পেয়ে বসে। আমার মনে হয় না আমি শীতল আচরণ করছি, এটা শুধুমাত্র এই যে, আমি তার দেবীত্ব বিষয়ে শুনতে শুনতে অধৈর্য হয়ে পড়েছি। সে একেবারে খাঁটি চিনি দিয়ে তৈরী নয় এবং আমি এই কথা বলতে পেরে খুশি। আনাইস-এর দুর্বলতা ও অন্ধকার দিকগুলোই আমাকে তার প্রতি আকৃষ্ট করে সবচেয়ে বেশি। তার সেইসব স্বর্ণালী গুণগুলোর কথা বলার বেলায় আমিই যদিও সবার আগে থাকবো, তবু আমাকে বলতে হবে যে তার অন্য দিকটাই তাকে বেশি মানবিক ও নাজুক এবং সে-কারণে আদরণীয় করেছে আমার চোখে। পারী-তে যখন আমাদের প্রথম পরিচয় হয় তখন একেবারে বিস্ফোরক না হলেও একটা তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া হয়েছিল। আমরা প্রবলভাবে দুজন দুজনের প্রতি আকৃষ্ট হই। আনাইস তখন বাঁচার জন্য রীতিমত জ্বলছিল। সে তার উচ্চ-মধ্যবিত্ত জীবন ও একজন সজ্জন কিন্তু রক্ষণশীল ব্যবসায়ীর সঙ্গে বিবাহিত জীবনের ক্লান্তিতে একেবারে শুকিয়ে যাচ্ছিল। আমার বউ জুন অনিয়মিতভাবে পারী-তে আসতো আমার কাছে বেড়াতে, যদিও আমাদের সম্পর্কটা ছিল তখন একেবারে তার শেষ পর্যায়ে। আমরা চেষ্টা করেছিলাম জোড়াতালি দিয়ে চালিয়ে দিতে, কিন্তু সেটা এতই ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ ছিল যে কিছুতেই টিকছিল না। আমরা দুজন দুজনকে পাগল করে তুলছিলাম। আর তখনই এল এই সুন্দরী নারী, আনাইস নিন, যে ক্রমেই আমার নতুন জীবন, আমার পারী-জীবনের অংশ হয়ে উঠছিল, আর সে পানির অভাবে শুকিয়ে যাওয়া একটি ফুলের মত আবার ধীরে ধীরে পাতা মেলছিল। আমার কাছে জুন-এর প্রয়োজন ফুরিয়ে গিয়েছিল, যদিও সে তার উল্টোটাই সত্যি বলে দাবী করছিল। সে আমার কাছে এলেই আমার মনোযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়তো, আমার কাজের ক্ষতি হতো। আনাইস-এর সঙ্গে আমি নিশ্চিত ও নিরাপদ বোধ করতাম। সে সবকিছু সুন্দর করে গুছিয়ে রাখতো যেন আমি লেখা চালিয়ে যেতে পারি। সে সত্যি ছিল একজন অভিভাবক-দেবীর মত, আমার লেখার ব্যাপারে উৎসাহী ও সহমর্মী; তখন সেটাই আমার সবচেয়ে বেশি দরকার ছিল। সে খুব দয়াশীলও ছিল। আমাকে ছোটখাটো উপহারে ভরিয়ে রাখতো -- হাতখরচ, সিগারেট, খাবার এইসবের যোগান দিত। আমি লেখক হয়ে ওঠার আগেই সে জগতের কাছে আমার প্রশংসার গান গাইতো। সত্যি বলতে কী, আনাইস-ই আমার ট্রপিক অফ ক্যান্সার বইয়ের প্রথম মুদ্রণের…

যে-মানুষ গান শুনে সাড়া দেয় না, যার হৃদয়ে সঙ্গীত নেই, তাকে বিশ্বাস করা যায় না। এরকম মানুষ শীতল ও শূন্য, একেবারে মর্মমূল অবধি শূন্য।

সঙ্গীত আমার বয়স যখন আঠারো কি উনিশ তখন আমার বাবার এক খদ্দের, আলফ্রেড পাক নামধারী একজন ক্ষ্যাপাটে আলোকচিত্রশিল্পীর সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হয় যিনি টাকার বিনিময়ে কোনকিছু কিনতে পছন্দ করতেন না। তিনি বরং তাঁর কোন আলোকচিত্র কী কোন ধরণের সেবার বিনিময়ে তাঁর প্রয়োজন মেটাতেন। তিনি যখন শুনলেন আমি গান খুব ভালোবাসি, এতটাই যে ভালো কোন অপেরা কী সিম্ফনী শোনার জন্য আমি লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কিনতেও দ্বিধা করি না, তখন তিনি আমাকে পছন্দ করতে শুরু করলেন। তিনি আমাকে বললেন যে আমি যখনই কোন গানের অনুষ্ঠান দেখতে যাই তিনি নিশ্চিত করবেন যেন আমি ভালো সীট পাই। অপেরা থেকে শুরু করে জনপ্রিয় সঙ্গীতে আমি আমার সময়ের সবচেয়ে ভালো গায়ক ও সঙ্গীতজ্ঞদের অনুষ্ঠান দেখেছি: কারুসো, মেলবা, গালি-কুর্চি, শুমান-হাইন্ক, জেরাল্ডিন ফারার, জন ম্যাক্করমক, অল্প কজনের নাম মাত্র বললাম। বিস্ময়কর হলেও সত্যি এদের মধ্যে সবচেয়ে বড় শিল্পী ছিলেন কান্টর সিরোটা। যতবারই আমি তাঁর গান শুনেছি ততবারই আমি অশ্রু সংবরণ করতে ব্যর্থ হয়েছি। তাঁর কন্ঠ একাই আমাকে ইহুদিধর্মে দীক্ষিত করার জন্য যথেষ্ট ছিল। ওস্তাদ বেহালাবাদক জাচা হাইফেজ ও জনি কুবেলিক-এর বাজনা শোনার সৌভাগ্য হয়েছে আমার। এবং পাদেরিউস্কি, রুবিনস্টাইন ও কর্তোর মত গুরু পিয়ানোবাদকদেরও শুনেছি আমি। তারপর রয়েছেন চেলোবাদক পাবলো কাসাল যিনি আমার মনে শুধু একজন ভালো সঙ্গীতজ্ঞ হিসাবেই নন, একজন অতি উত্তম মানুষ হিসাবেও আসীন আছেন। ধ্রুপদী সঙ্গীতের ক্ষেত্রে আমার সুনির্দিষ্ট পছন্দ-অপছন্দ রয়েছে। লোকেরা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায় যখন আমি বলি যে বিথোভেন কিংবা বাখ-কে নিয়ে আমার কোন মাথাব্যথা নেই। ভাগনার, শোপাঁ, স্ট্রাভিন্সকি, রাভেল কিংবা স্ক্রিয়াবিন-এর মত সঙ্গীত রচয়িতাদের কাছে তাঁরা নিতান্তই ফ্যাকাশে । আমি আপনাদের শুধু এটুকুই বলতে পারি যে বিথোভেন-এর মুনলাইট সোনাটা শ'দুয়েকবার শোনার পর আমি সঙ্গীতের সঙ্গে সংযোগ হারিয়ে ফেলি। আর বাখের ব্যাপারে বলি, তিনি আমার পছন্দের কাছাকাছিও আসতে পারেন নি। আমি এ-কথা বলতে দ্বিধা করি না যে তাঁর সঙ্গীতকে আমার কাছে আঙুলের কসরত বলে মনে হয়, যেখানে অধিকাংশ মানুষ তাঁকে মনে করে শুদ্ধতার পরাকাষ্ঠা বলে। আমার প্রিয় সঙ্গীতরচয়িতা স্ক্রিয়াবিন, আধুনিক ধ্রুপদীদের মধ্যে যাঁকে এক নম্বর বলা যেতে পারে। তাঁর সঙ্গীতই শুধু বৈপ্লবিক ছিল না মানুষ হিসাবেও তিনি ছিলেন ক্ষ্যাপাটে ধরণের, তাঁর বন্ধুরা যাঁকে বেমানান…

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.