|| কিমিয়া, ডাকিনীবিদ্যা ও হ্যারি পটার || যদিও কেবল-ই কয়েকশ বছর আগে রসায়ন তার আধুনিক রূপে আবির্ভূত হয়েছিল, কিন্তু এটার একটি গুরুত্বপূর্ণ পূর্বসূরী ছিল, যা উদ্ভূত হয়েছিল সেই প্রাচীনযুগে। [. . .]

Tore Janson-এর সুইডিশ ভাষায় রচিত Latin: Kulturen, historien, språket গ্রন্থের Merethe Damsgård Sørensen ও Nigel Vincet-কৃত ইংরেজি অনুবাদ A Natural History of Latin-এর বাংলা ভাষান্তর   কিমিয়া, ডাকিনীবিদ্যা ও হ্যারি পটার যদিও কেবল-ই কয়েকশ বছর আগে রসায়ন তার আধুনিক রূপে আবির্ভূত হয়েছিল, কিন্তু এটার একটি গুরুত্বপূর্ণ পূর্বসূরী ছিল, যা উদ্ভূত হয়েছিল সেই প্রাচীনযুগে। প্রাচীন মিশরীয়রা ধাতুর কাজে অত্যন্ত পারদর্শী ছিল এবং গ্রীকরা কখনোই তাদের গোপন পদ্ধতির রহস্যভেদ করতে পারেনি, যদিও অনেকেই সে-চেষ্টা করেছিলেন, আর সম্ভবত তার ফলেই কিমিয়ার সুদীর্ঘ ঐতিহ্যের সৃষ্টি হয়েছিল। এর একটি প্রধান উদ্দেশ্য ছিল অপেক্ষাকৃত কম মূল্যের বস্তু থেকে স্বর্ণ তৈরি, যা কিনা, বলাই বাহুল্য, যথেষ্ট লাভের সম্ভাবনাসম্পন্ন একটি প্রকল্প। মৌলগুলোর সঙ্গে অন্যান্য বস্তুর মৌলিক পার্থক্য সম্পর্কে মানুষের মধ্যে তখনো যেহেতু পরিষ্কার কোনো ধারণা গড়ে ওঠেনি – যেটা ঘটেছিল ১৮০০ খৃষ্টাব্দের দিকে – তাই চিন্তাটা এমন কিছু উদ্ভট ছিল না মোটেই। হেলেনিস্টিক সময়ে গ্রীকরাও বিপুল শক্তি ও সময় খরচা করেছিল বিষয়টা নিয়ে, এবং, স্বভাবত-ই তারা তাদের মোক্ষে পৌঁছুতে পারেনি, কিন্তু সে-চেষ্টা করার পথে বিভিন্ন রাসায়নিক বস্তু আর সেগুলোর মধ্যে বিক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তর জ্ঞানলাভ ঘটে তাদের। অবশ্য, এই বিষয়টি নিয়ে যাঁরা কাজ করেছিলেন তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গীর সঙ্গে অন্যান্য গ্রীক প্রাকৃতিক বিজ্ঞানীদের দৃষ্টিভঙ্গীর প্রভেদ ছিল বেশ। তাঁরা মনে করতেন তাঁদের শিল্পটি মুসা বা খিওপ্সের ফেরাউনদের মতো দূর অতীতের প্রাচীন দেবতা বা বিখ্যাত চরিত্রদের দ্বারা অনুপ্রাণিত, এবং তাঁরা তাঁদের কাজে জ্যোতির্বিদ্যা, সাধারণ্যে প্রচলিত কুসংস্কার এবং আরো বিচিত্র সব উৎস থেকে পাওয়া ধ্যান-ধারণা অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। তার মানে, গোড়া থেকেই কিমিয়া ছিল বরং বিজ্ঞানের এক অশিষ্ট জ্ঞাতি। রোমকরা কিন্তু কিমিয়ার এই ঐতিহ্যর পেছনে ছোটেনি খুব একটা, তবে এরিস্টটলের দর্শন যেমন আরবদের মাধ্যমে ইউরোপে পৌঁছেছিল, কিমিয়া সংক্রান্ত ধারণাগুলো-ও একই পথ ধরে মধ্যযুগের ইউরোপে পৌঁছেছিল। ১২০০ খৃষ্টাব্দের দিকে কিমিয়ার ওপর লাতিনে রচিত বেশ কিছু প্রবন্ধ বের হয়, বিখ্যাত সব আরব বিশেষজ্ঞদের তত্ত্ব আর নীতি ইত্যাদি নিয়ে। সেই থেকে কিমিয়া হয়ে দাঁড়ায় ইউরোপের বুদ্ধিবৃত্তিক ঐতিহ্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ। টমাস একুইনাস, রজার বেকন আর আইযাক নিউটনের মতো বিশাল মাপের ব্যক্তিত্বসহ অসংখ্য বিখ্যাত মানুষ এর পেছনে সময় ব্যয় করেছেন, যদিও তাতে কাজের কাজ প্রায় কিছুই হয়নি। মূল উদ্দেশ্যটা ছিল স্বর্ণ…

|| পদার্থবিদ, রসায়নবিদ এবং অন্যান্যরা || মধ্যযুগের পাঠ্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত ছিল পাটিগণিত, জ্যামিতি আর জ্যোতির্বিদ্যা, এই তিন artes libereles। [. . .]

Tore Janson-এর সুইডিশ ভাষায় রচিত Latin: Kulturen, historien, språket গ্রন্থের Merethe Damsgård Sørensen ও Nigel Vincet-কৃত ইংরেজি অনুবাদ A Natural History of Latin-এর বাংলা ভাষান্তর   পদার্থবিদ, রসায়নবিদ এবং অন্যান্যরা মধ্যযুগের পাঠ্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত ছিল পাটিগণিত, জ্যামিতি আর জ্যোতির্বিদ্যা, এই তিন artes libereles। ধ্রুপদী যুগে যে-জ্ঞান অর্জিত হয়েছিল সেই জ্ঞানের একটি অংশ হস্তান্তরের বেশি আর কিছুই ছিল না এটা একটা দীর্ঘ সময় ধরে। সত্যি কথা বলতে কি, ত্রয়োদশ শতকের আগ পর্যন্ত উন্নততর গণিতশাস্ত্র ও পদার্থবিদ্যার প্রতি নতুন করে আর কোনো আগ্রহ জন্মেনি কারো, এবং সেই অর্থে প্রকৃত উল্লেখ্যযোগ্য অগ্রগতি সাধিত হয় কেবল-ই এই সপ্তদশ শতকে। এবং সবচাইতে উল্লেখযোগ্য উন্নতি ঘটে জ্যোতির্বিদ্যার ক্ষেত্রে। গ্রীক এবং রোমকগণ মহাজাগতিক ঘটনাবলী সম্পর্কে অনেক কিছু জানতো, এবং তাঁদের পর্যবেক্ষণলব্ধ নানান কিছুর নাম-ও দিয়েছিল। রোমানরা ‘Mercury’, ‘Venus’, ‘Mars’, ‘Jupiter’ এসব গ্রহের যে নাম দিয়েছিল ঠিক সেই নামগুলোই এখনো ব্যবহার করি আমরা, যেগুলো কিনা সব-ই রোমক দেবতাদের নাম। আধুনিককালে যে তিনটি গ্রহ আবিষ্কৃত হয়েছে সেগুলোর নাম-ও একইভাবে অন্য তিন রোমক দেবতা ‘Uranus’, ‘Neptun’ ও ‘Pluto’-র নামে রাখা হয়েছে। প্রাচীন কালের মানুষজন নক্ষত্রগুলোকে নানান নক্ষত্রপুঞ্জের অন্তর্ভুক্ত করে সেগুলোর নামকরণ-ও করে গেছেন, এবং সেসব নামের অনেকগুলো এখনো ব্যবহার করি আমরা, যেমন ‘Leo’ (সিংহ), ‘Gemini’ (যমজ), ইত্যাদি। প্রাচীনকালে বিশ্বাস করা হতো পৃথিবী হচ্ছে মহাবিশ্বের কেন্দ্র, এবং সূর্য, চন্দ্র, এবং অন্যান্য গ্রহ-নক্ষত্র তার পাশে আবর্তিত হয়। সতর্ক পর্যবেক্ষণ ও যথার্থ গাণিতিক হিসেব-নিকেশের মাধ্যমে ধীরে ধীরে এই সিদ্ধান্তে আসা হয় যে আসলে পৃথিবী-ই সূর্যের চারদিকে ঘোরে, এর উল্টোটা নয়। ষোড়শ শতকের গোড়ার দিকে কোপার্নিকাসের জন্ম দেয়া এই ধারণাটিকে জ্যোতির্বিদ গ্যালিলিও গ্যালিলি তথাকথিত ‘ভূকেন্দ্রিক তত্ত্বের’ বিরুদ্ধে দাঁড় করান ১৬৩২ খৃষ্টাব্দে প্রকাশিত তাঁর “Dialogue Concerning the Two Chief World Systems” বইটিতে। আমাদের জানা আছে, প্রবল উত্তেজনা ও তুমুল বিতর্কের সৃষ্টি করেছিল বইটি। গির্জা গ্যালিলিওকে ধর্মদ্বেষী বলে ঘোষণা করে, এবং জীবনের বাকিটা সময়কে বিজ্ঞানী মহাশয়কে গৃহবন্দী হয়েই থাকতে হয়। গির্জার কাছে গ্যালিলিও গ্যালিলি যেসব কারণে বিপজ্জনক ছিলেন তার একটির সঙ্গে কিন্তু ভাষার সম্পর্ক রয়েছে। সে-সময়কার অন্য পণ্ডিতজনেরা যা করতেন, গ্যালিলিও কিন্তু সেরকম সব সময় লাতিন ভাষায় লিখতেন না। তাঁর “Dialogue” ইতালীয় ভাষায় লেখা, আর তাছাড়া, অপেক্ষাকৃত সহজ-সরলভাবে…

|| লিনীয়াস ও লাতিন || উদ্ভিদবিদ্যা ও প্রাণীবিদ্যায় প্রতিটি প্রজাতিরই লাতিন নাম রয়েছে। আজ আমরা ওপরের ওরকম সাদামাটা ইংরেজি টেক্সটে নামগুলো ব্যবহার করি না বললেই চলে, কিন্তু উদ্ভিদ বিজ্ঞানী আর জীববিজ্ঞানীরা যে কোনো পরিস্থিতিতেই পরস্পরের সঙ্গে আলাপ বা যোগাযোগ করুন না কেন তাঁরা এই প্রজাতিগুলোর কথা বলতে গেলে সেগুলোর লাতিন নামই উল্লেখ করেন। [. . .]

Tore Janson-এর সুইডিশ ভাষায় রচিত Latin: Kulturen, historien, språket গ্রন্থের Merethe Damsgård Sørensen ও Nigel Vincet-কৃত ইংরেজি অনুবাদ A Natural History of Latin-এর বাংলা ভাষান্তর   লিনীয়াস ও লাতিন বনের মধ্যে ‘Anemóne nemorósa’ ভরা একটা ফাঁকা জায়গা দেখে আপনার হৃদয় উদ্বেলিত হয়ে উঠতে পারে। একটি ‘Motacilla alba’ দেখে আপনি হঠাৎ কেঁপে উঠতে পারেন, কিন্তু একেবারে আচমকা যদি আপনার সামনে একটা ‘Ursus arctos’ এসে উদয় হয়, সেক্ষেত্রে আপনার মানে মানে সরে পড়াই বোধ হয় ভালো হবে। এগুলো হচ্ছে, যথাক্রমে, বায়ু-পরাগী এক ধরনের বিশেষ ফুল, ল্যাজ নাচানে খঞ্জনা পাখি আর বাদামি ভল্লুকের লাতিন নাম। উদ্ভিদবিদ্যা ও প্রাণীবিদ্যায় প্রতিটি প্রজাতিরই লাতিন নাম রয়েছে। আজ আমরা ওপরের ওরকম সাদামাটা ইংরেজি টেক্সটে নামগুলো ব্যবহার করি না বললেই চলে, কিন্তু উদ্ভিদ বিজ্ঞানী আর জীববিজ্ঞানীরা যে কোনো পরিস্থিতিতেই পরস্পরের সঙ্গে আলাপ বা যোগাযোগ করুন না কেন তাঁরা এই প্রজাতিগুলোর কথা বলতে গেলে সেগুলোর লাতিন নামই উল্লেখ করেন। নামটাই যে কেবল লাতিন, তা নয়; প্রতিটি প্রজাতির আনুষ্ঠানিক বর্ণনাও হতে হবে লাতিনে। কেউ কোনো নতুন প্রজাতি আবিষ্কার করলে তাঁকে এরকম একটা বর্ণনা লিখে প্রকাশ করতে হবে। এসব বিজ্ঞানে লাতিনের এখনো একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহারিক উপযোগিতা রয়েছে। এই পরিস্থিতির ঐতিহাসিক ব্যাখ্যার সঙ্গে চিকিৎসাশাস্ত্রের ঐতিহ্যের একটা বড় সম্পর্ক রয়েছে, যা আমরা ইতিমধ্যে আলোচনা করেছি। বহু বছর ধরে ইউরোপীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এবং স্বারস্বত জগতের লোকজনের মধ্যে প্রাকৃতিক বিজ্ঞান সেরকম গুরুত্ব পায়নি। প্রাণী ও উদ্ভিদ নিয়ে চিকিৎসকেরা গবেষণা করতেন আসলে চিকিৎসাশাস্ত্র ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ক্ষেত্রে সেগুলোর সম্ভাব্য প্রয়োগের জন্য। কাজেই লাতিন ব্যবহারের ঐতিহ্য এসব বিজ্ঞানে ততোটাই শক্তিশালী হয়ে ওঠে যতোটা সেটা চিকিৎসাশাস্ত্রে শক্তিশালী হয়েছিল। সে যাই হোক, অষ্টাদশ শতকে, প্রাকৃতিক বিজ্ঞান সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে এবং চিকিৎসাশাস্ত্র নির্ভরতা কাটিয়ে উঠে আত্মপরিচয় খুঁজে পায়। এক্ষেত্রে যাঁরা পথিকৃৎ ছিলেন তাঁদের অন্যতম হচ্ছেন কার্ল ভন লিনে (Carl von Linné) নামে সুইডেনের এক অধিবাসী, যাঁর নাম গোটা বিশ্বে সাধারণত, এবং অত্যন্ত যথার্থভাবেই, সেটার লাতিন রূপ ‘লিনীয়াস’ (Linnaeus) হিসেবে সুপরিচিত, অন্তত তাঁদের কাছে যাঁরা এই ক্ষেত্রটির ব্যাপারে আগ্রহী। লিনীয়াস ছিলেন দক্ষিণ সুইডেনের স্মালান্ড-এর এক যাজকপুত্র। বিদেশে পা বাড়াবার আগে তিনি লুন্ড এবং উপসালা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেন। ১৭৩৫ খৃষ্টাব্দে তিনি হল্যান্ড যান, এবং…

|| চিকিৎসকবৃন্দ ও তাঁদের ভাষা || বিশেষ করে চিকিৎসকেরা যে গোঁয়ারের মতো লাতিনেই আটকে রইলেন এতোদিন, তার একটা সরল ঐতিহাসিক ব্যাখ্যা আছে। [. . .]

Tore Janson-এর সুইডিশ ভাষায় রচিত Latin: Kulturen, historien, språket গ্রন্থের Merethe Damsgård Sørensen ও Nigel Vincet-কৃত ইংরেজি অনুবাদ A Natural History of Latin-এর বাংলা ভাষান্তর   চিকিৎসকবৃন্দ ও তাঁদের ভাষা আজ অব্দি কতবার আপনাকে চিকিৎসকের কাছে গিয়ে এ-কথা শুনতে হয়েছে যে, ‘ও কিছু না, সামান্য ভাইরাস। দু’চারদিনের মধ্যে না সারলে একবার এসে দেখিয়ে যাবেন আমাকে’, অথবা, কপাল মন্দ হলে চিকিৎসক হয়ত বলেছেন: ‘আপনার এপেন্ডিসাইটিয হয়েছে, খুব দ্রুত অপারেশন করা দরকার।’ অথবা আপনার চিকিৎসক হয়ত কোনো ধরনের নিউরালজিয়া-র নিদান দিয়েছেন, এবং এনালজেসিকের শরণ নিতে বলেছেন? এসব কথায় এবং এরকম শত শত মন্তব্যে – যা কিনা প্রতিদিন হাসপাতালে এবং শল্যচিকিৎসায় শোনা যায় – ধ্রুপদী ভাষাগুলো থেকে নেয়া হাজারো শব্দ নিহিত রয়েছে। ‘Virus’ এসেছে লাতিন থেকে, যেখানে সেটির মানে কোনো প্রাণী যেমন সাপ বা কাঁকড়াবিছের বিষ, বা কোনো প্রাণী বা উদ্ভিদের নিঃসরণ যার ভেতর কোনো জাদুর বা ভেষজ গুণ রয়েছে বলে মনে করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, প্লিনি বলছেন নেকড়ের শরীর থেকে একটি ‘virus amatorium’ বা ‘প্রেমসুধা’ নিঃসরিত হয়। ‘Appendix’-এর মানে স্রেফ ‘appendage’ বা ‘বাড়তি জিনিস’ বা ‘উপাঙ্গ’, এবং সেটা ক্রিয়া ‘appendo’ বা ‘ঝুলে থাকা’-র সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হলেও চিকিৎসাবিজ্ঞানের পরিপ্রেক্ষিতে এখন সেটা বিশেষ করে সেই মূল্যহীন অঙ্গটিকে বোঝায় যেটায় মাঝে মাঝে প্রদাহ হতে পারে, যেটা প্রবল যন্ত্রণার সৃষ্টি করতে পারে শরীরে এবং শল্যচিকিৎসার সাহায্যে সেটাকে অপসারণ করতে হতে পারে। ‘Neuralgia’, যার মানে ‘nerve pain’ বা, স্নায়ুর যন্ত্রণা, সেটা এসেছে গ্রীক দুই শব্দ ‘neuron’ বা ‘স্নায়ু’ এবং ‘algia’ মানে ‘যন্ত্রণা’ থেকে। আর, গ্রীক ভাষায় উপসর্গ a-/an- নেতিবাচক অর্থ বহন করে, যেমন ‘amoral’; কাজেই একটি ‘analgesic’ তাই যা যন্ত্রণা দূর করে। আসলে, চিকিৎসা বিজ্ঞানের প্রায় সমস্ত সমস্ত শব্দই এসেছে লাতিন বা গ্রীক থেকে। অবশ্য বিজ্ঞানের আরো অনেক পরিসরের ক্ষেত্রেও কথাটা সত্যি হলেও আমরা দেখবো যে চিকিৎসাশাস্ত্রের বিষয়টা বিশেষ উল্লেখের দাবি রাখে, কারণ সেখানে অগুনতি অপরিবর্তিত লাতিন শব্দ রয়েছে, যেমন ‘appendix’ ও ‘virus’। এই কিছুদিন আগেও ‘deménetia senilis’ বা ‘বার্ধক্যজনিত স্মৃতিভ্রংশ’ জাতীয় কথা ব্যবহার ক’রে রোগের নিদান লাতিনে লেখা খুব-ই সাধারণ একটি ব্যাপার ছিল চিকিৎসকদের জন্য। লাতিনে ‘senilis’ হচ্ছে স্রেফ বার্ধক্যর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি বিশেষণ, যা কিনা ইতিবাচক বা…

|| রেনেসাঁ || প্রায় অর্ধশতাব্দী ধরে ইউরোপের ইতিহাসকে সাধারণত তিনটে কালপর্বের পরম্পরা হিসেবে দেখা হয়: প্রাচীন যুগ, মধ্যযুগ, আর আধুনিক যুগ। রেনেসাঁ নামে অভিহিত একটি বিষয় দিয়ে আধুনিক যুগের সূচনা হয়। [. . .]

Tore Janson-এর সুইডিশ ভাষায় রচিত Latin: Kulturen, historien, språket গ্রন্থের Merethe Damsgård Sørensen ও Nigel Vincet-কৃত ইংরেজি অনুবাদ A Natural History of Latin-এর বাংলা ভাষান্তর   রেনেসাঁ প্রায় অর্ধশতাব্দী ধরে ইউরোপের ইতিহাসকে সাধারণত তিনটে কালপর্বের পরম্পরা হিসেবে দেখা হয়: প্রাচীন যুগ, মধ্যযুগ, আর আধুনিক যুগ। রেনেসাঁ নামে অভিহিত একটি বিষয় দিয়ে আধুনিক যুগের সূচনা হয়। একথার সুস্পষ্ট মর্মার্থ হচ্ছে প্রাচীন যুগ ছিল উন্নত সভ্যতার একটি সময়, যেখানে মধ্যযুগ ছিল পতনের বা অবক্ষয়ের একটি কাল যার পরিসমাপ্তি ঘটে শেষ অব্দি রেনেসাঁ অর্থাৎ ধ্রুপদী সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের পুনর্জন্মের মাধ্যমে। এতে অবাক হবার কিছু নেই যে এই ধারণাটি আবিষ্কার এবং সেটার প্রসার ঘটিয়েছিলেন রেনেসাঁ আন্দোলনের পুরোধা প্রতিনিধিবৃন্দ, যাঁরা ছিলেন চতুর্দশ, পঞ্চদশ ও ষোড়শ শতকের ইতালীয় লেখক শিল্পী এবং অন্যান্য বুদ্ধিজীবী। অবশ্যই, এই কালপর্বে ইতালির সংস্কৃতির পরিমণ্ডলে যে অসাধারণ সব সাফল্য অর্জিত হয়েছিল তাতে কোনো সন্দেহ নাই: সাহিত্যাঙ্গনে পেত্রার্ক ও বোক্কাচিও, এবং চিত্রকলার ক্ষেত্রে লিওনার্দো দা ভিঞ্চি ও রাফায়েলের নাম উল্লেখ-ই বোধ হয় যথেষ্ট হবে। এই মানুষগুলো ধ্রুপদী প্রাচীনযুগ সম্পর্কে তাঁদের উল্লেখযোগ্য প্রবল আগ্রহের কারণেই এতো বিখ্যাত বা অসাধারণ বা মহৎ হয়ে উঠেছিলেন কিনা সেটা ভিন্ন প্রসঙ্গ। এবং সে-প্রশ্নটা আমরা এখানে অনায়াসে একপাশে সরিয়ে রাখতে পারি। এ-সময়ে লাতিন কতটা ব্যবহৃত হয়েছিল সে-প্রসঙ্গে এ-কথা বলতে হয় যে রেনেসাঁ এক্ষেত্রে কোনো বাঁক ফেরানো মুহূর্তের সৃষ্টি করেনি। আমরা দেখেছি, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ত্রয়োদশ শতক থেকে একেবারে বিংশ শতক পর্যন্ত সংঘটিত এই পরিবর্তনগুলো ছিল ধীর, দীর্ঘ মেয়াদী এবং লাতিনের জন্য ক্ষতিকারক। যদিও রেনেসাঁর সঙ্গে সঙ্গে যা এলো তা হচ্ছে শুদ্ধতার প্রতি একটি ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি। প্রাচীন যুগের পর কেটে যাওয়া বহু শতাব্দীতে লাতিন শব্দ ভাণ্ডার যথেষ্টই সম্প্রসারিত হয়েছিল, এবং গড়ে উঠেছিল ভাষা ব্যবহারের নতুন স্বভাব ও শৈলী। রেনেসাঁ সময়ের অগ্রগণ্য অসংখ্য ব্যক্তিত্বই বিদ্বান মানবতাবাদী ছিলেন; ধ্রুপদী প্রাচীন যুগের সাহিত্যিক টেক্সটগুলো যে সেসবের বিষয়বস্তু ও অনুকরণযোগ্য ভাষা এই দুইয়ের কারণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সে-বিষয়ে নিঃসন্দেহ ছিলেন তাঁরা। কাজেই অ-ধ্রুপদী শব্দাবলী এবং অভিব্যক্তি অপসারণ করার জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছিলেন তাঁরা; মোটের ওপর চেষ্টা করেছিলেন তাঁদের সময়ের লিখিত এবং বাচিক বা কথ্য লাতিনের মানোন্নয়ন করবার। সেটা যে একেবারে নতুন ব্যাপার ছিল তা কিন্তু নয়; আমরা…

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.