Tore Janson-এর সুইডিশ ভাষায় রচিত Latin: Kulturen, historien, språket গ্রন্থের Merethe Damsgård Sørensen ও Nigel Vincet-কৃত ইংরেজি অনুবাদ A Natural History of Latin-এর বাংলা ভাষান্তর
কিমিয়া, ডাকিনীবিদ্যা ও হ্যারি পটার
যদিও কেবল-ই কয়েকশ বছর আগে রসায়ন তার আধুনিক রূপে আবির্ভূত হয়েছিল, কিন্তু এটার একটি গুরুত্বপূর্ণ পূর্বসূরী ছিল, যা উদ্ভূত হয়েছিল সেই প্রাচীনযুগে। প্রাচীন মিশরীয়রা ধাতুর কাজে অত্যন্ত পারদর্শী ছিল এবং গ্রীকরা কখনোই তাদের গোপন পদ্ধতির রহস্যভেদ করতে পারেনি, যদিও অনেকেই সে-চেষ্টা করেছিলেন, আর সম্ভবত তার ফলেই কিমিয়ার সুদীর্ঘ ঐতিহ্যের সৃষ্টি হয়েছিল। এর একটি প্রধান উদ্দেশ্য ছিল অপেক্ষাকৃত কম মূল্যের বস্তু থেকে স্বর্ণ তৈরি, যা কিনা, বলাই বাহুল্য, যথেষ্ট লাভের সম্ভাবনাসম্পন্ন একটি প্রকল্প। মৌলগুলোর সঙ্গে অন্যান্য বস্তুর মৌলিক পার্থক্য সম্পর্কে মানুষের মধ্যে তখনো যেহেতু পরিষ্কার কোনো ধারণা গড়ে ওঠেনি – যেটা ঘটেছিল ১৮০০ খৃষ্টাব্দের দিকে – তাই চিন্তাটা এমন কিছু উদ্ভট ছিল না মোটেই। হেলেনিস্টিক সময়ে গ্রীকরাও বিপুল শক্তি ও সময় খরচা করেছিল বিষয়টা নিয়ে, এবং, স্বভাবত-ই তারা তাদের মোক্ষে পৌঁছুতে পারেনি, কিন্তু সে-চেষ্টা করার পথে বিভিন্ন রাসায়নিক বস্তু আর সেগুলোর মধ্যে বিক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তর জ্ঞানলাভ ঘটে তাদের। অবশ্য, এই বিষয়টি নিয়ে যাঁরা কাজ করেছিলেন তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গীর সঙ্গে অন্যান্য গ্রীক প্রাকৃতিক বিজ্ঞানীদের দৃষ্টিভঙ্গীর প্রভেদ ছিল বেশ। তাঁরা মনে করতেন তাঁদের শিল্পটি মুসা বা খিওপ্সের ফেরাউনদের মতো দূর অতীতের প্রাচীন দেবতা বা বিখ্যাত চরিত্রদের দ্বারা অনুপ্রাণিত, এবং তাঁরা তাঁদের কাজে জ্যোতির্বিদ্যা, সাধারণ্যে প্রচলিত কুসংস্কার এবং আরো বিচিত্র সব উৎস থেকে পাওয়া ধ্যান-ধারণা অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। তার মানে, গোড়া থেকেই কিমিয়া ছিল বরং বিজ্ঞানের এক অশিষ্ট জ্ঞাতি।
রোমকরা কিন্তু কিমিয়ার এই ঐতিহ্যর পেছনে ছোটেনি খুব একটা, তবে এরিস্টটলের দর্শন যেমন আরবদের মাধ্যমে ইউরোপে পৌঁছেছিল, কিমিয়া সংক্রান্ত ধারণাগুলো-ও একই পথ ধরে মধ্যযুগের ইউরোপে পৌঁছেছিল। ১২০০ খৃষ্টাব্দের দিকে কিমিয়ার ওপর লাতিনে রচিত বেশ কিছু প্রবন্ধ বের হয়, বিখ্যাত সব আরব বিশেষজ্ঞদের তত্ত্ব আর নীতি ইত্যাদি নিয়ে। সেই থেকে কিমিয়া হয়ে দাঁড়ায় ইউরোপের বুদ্ধিবৃত্তিক ঐতিহ্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ। টমাস একুইনাস, রজার বেকন আর আইযাক নিউটনের মতো বিশাল মাপের ব্যক্তিত্বসহ অসংখ্য বিখ্যাত মানুষ এর পেছনে সময় ব্যয় করেছেন, যদিও তাতে কাজের কাজ প্রায় কিছুই হয়নি।
মূল উদ্দেশ্যটা ছিল স্বর্ণ তৈরির একটা পথ বের করা, কিন্তু যতোই দিন গেল ততোই দেখা গেল সেই লক্ষ্যে পৌঁছানোর উপায় হচ্ছে একটা রহস্যময় বস্তু করায়ত্ত করা যা কিনা সেই রূপান্তরকে প্রভাবিত করতে সক্ষম, এবং সেই সঙ্গে যেটার অন্য কিছু অসাধারণ ক্ষমতাও রয়েছে, যেমন অমরত্ব দান। লাতিনে এই বস্তুটির বেশ কিছু নাম দেয়া হয়েছিল, এবং উল্লেখ্য যে কিমিয়া নিয়ে বেশিরভাগ প্রবন্ধই লেখা হয়েছিল লাতিনে। তো, সেই নামগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘lapis philosophi’ (দার্শনিকের পাথর; the philosopher’s stone); ‘magisterium’ (কর্তৃত্ব, নিয়ন্ত্রণ)। প্রায়ই গুজব শোনা যেতো যে কেউ একজন পাথরটা পেয়ে গেছে এবং/বা সোনা বানিয়ে ফেলেছে, কিন্তু কোনো গুজবই শেষ অব্দি সত্য বলে প্রমাণিত না হওয়াতে এক সময় কিমিয়ার যাবতীয় খ্যাতি মিলিয়ে যায়।
আমরা আগেই বলেছি, অষ্টাদশ শতকে আধুনিক রসায়নের স্থপতিরা লাতিনে লেখেননি। তার কারণ কেবল এই নয় যে ভাষাটি তখন পিছু হঠছিল, বরং সেই সঙ্গে সম্ভবত এটাও যে এর মাধ্যমে তাঁরা কিমিয়ার সঙ্গে সব রকমের সম্পর্ক ছিন্ন করেছিলেন, প্রধানত যে সম্পর্ক রয়ে গিয়েছিল হাজারো লাতিন টেক্সটের মধ্যে।
কিমিয়াকে যেমন বেপথু বিজ্ঞান হিসেবে দেখা যেতে পারে, অন্যদিকে আবার জাদু বা ভোজবাজিকে অনেকেই ধর্মের একটি নীতিভ্রষ্ট রূপ বলে মনে করেন। গোড়া থেকেই বেশ আনুকূল্য পেয়েছিল ছিল এটি রোমে, বা, অবস্থাদৃষ্টে অন্তত সে রকমই মনে হয়। কৃষি নিয়ে রচিত তাঁর বইতে ক্যাটো বিভিন্ন পরিস্থিতি সামাল দেবার দেবার কিছু সহজ উপায় বাতলেছিলেন। তার মধ্যে একটি হচ্ছে শরীরের কোথাও মচকে গেলে বা হাড় ভেঙে গেলে কি করতে হবে সেই বিষয় সম্পর্কিত: Motas uaeta daris dardares astaries dissunapiter। শব্দগুলো দেখতে খানিকটা লাতিনের মতোই লাগে বটে। আর সত্যি বলতে, প্রথমটি খাঁটি লাতিন শব্দই, যার মানে, ‘মুগ্ধ’ বা ‘আলোড়িত’, কিন্তু পুরো জিনিসটা একটা অর্থহীন বাজে কথার ফুলঝুরি ছাড়া কিছু নয়। বা, বলা যেতে পারে, যার এসবের সাথে পরিচয় নেই তার কাছে এসবের কোনো মানে নেই, অন্যদিকে যেসব শক্তির উদ্দেশে কথাগুলো নিবেদিত, সেসব শক্তির এসবের অর্থ ভালো করেই বোঝার কথা বলেই ধরে নেয়া হয়। সেদিক থেকে, সাধারণ শব্দের চাইতে জাদুমন্ত্রগুলো হয়তো আরো বেশি অর্থপূর্ণ। ক্যাটোর সম্মোহন সম্ভবত খুব বেশি দূর অগ্রসর হয়নি, কিন্তু শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে কিছু জাদুমন্ত্র বিভিন্ন টেক্সটে ঘুরে ফিরে এসেছে। সেসবের মধ্যে দুটি হচ্ছে ‘abracadabra’ – যা কিনা সেই প্রাচীন গ্রীক ও লাতিন যুগ থেকেই পরিচিত – আর ষোড়শ শতকে প্রথম দেখা-মেলা ‘hocus pocus’।
জাদুকরদের (লাতিনে ‘magi’) অন্যতম প্রধান কাজ হচ্ছে জাদুমন্ত্র আওড়ানো, এবং তারা জাদুশিল্প বা ‘ars magica’-র চর্চা করে। প্রাচীন লাতিন সাহিত্যে ভূরি ভূরি জাদুকর ও ডাইনীর দেখা মেলে, এবং এরা মাঝে মাঝে মানুষের রোগ-বালাই সারিয়ে তোলে বটে কিন্তু সেই সঙ্গে তারা লোকজনের ওপর এমন সম্মোহন বিস্তার করতে পারে যে তার ফলে তারা অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে বা এমনকি মারাও যেতে পারে। কখনো কখনো তারা লতা-গুল্ম ব্যবহার করে, সেই সঙ্গে নানান জিনিস দিয়ে বানানো ওষুধ-পত্রও, কিন্তু অনেক সময় কেবল ঠিক ঠিক জাদুমন্ত্র আউড়েই কাজ সারতে পারে তারা। এসবের কিছু কিছু জ্যান্ত প্রাণীকে অন্য কোনো প্রাণীতেও রূপান্তরিত করে ফেলতে পারে। প্রাচীন যুগের একমাত্র যে ‘উপন্যাসটি’ (উদ্ধৃতি চিহ্ন অনুবাদকের) সংরক্ষিত রয়েছে তার নাম ‘Metamorphoses’ (রূপান্তর), এবং সেটার প্লট এক যুবককে নিয়ে যে কিনা এক দুষ্টু ডাইনীর মন্ত্রবলে গাধায় পরিণত হয়েছে। রচনাটি সব ধরনের ডাকিনী বিদ্যার কাহিনীতে ভর্তি, আর সেটার রচয়িতা খোদ আপুলিউয়াসেরই (Apuleius) প্রসিদ্ধি ছিল জাদুকর হিসেবে।
দেখা যেতো, জাদুকরী শক্তিগুলো কাল্পনিক কিছু প্রাণী যেমন ওয়্যারউলফ ও ড্রাগন আর সেন্টর ও ইউনিকর্ন এসব প্রাণীর সঙ্গে বিভিন্নভাবে সম্পর্কিত – যেসব কিনা যথাক্রমে অশুভ বা মন্দ আর উপকারী। ইন্দ্রজালের গোটা জগৎটা আসলে পুরাণ আর উপকথার সঙ্গে জড়িয়ে আছে; কাজেই কোনটা ইন্দ্রজাল বা জাদু আর কোনটা স্রেফ খেয়ালি গল্পকথন তা বলা সর্বদা সহজ নয়।
খৃষ্টধর্মের উত্থানের সময়ে ডাকিনীবিদ্যা চর্চাকারীরা ভীষণ বৈরিতার মুখোমুখি হয়। খৃষ্টীয় কর্তৃপক্ষ বিশ্বাস করতো কেবল প্রকৃত খৃষ্টানদের পক্ষেই অলৌকিক ঘটনা ঘটানো সম্ভব, এবং তা যীশুখৃষ্টের নামে। অন্য যেকোনো ধরনের অতিপ্রাকৃত ঘটনার উৎস একমাত্র শয়তান। নীতিগতভাবে খৃষ্টীয় গির্জার কাছে ডাকিনীবিদ্যা আদৌ গ্রহণযোগ্য ছিল না। তাতে কিন্তু জাদুবিদ্যায় বিশ্বাস করা এবং ইউরোপের গোটা ইতিহাস জুড়ে তা চর্চা করা থেকে মানুষকে বিরত রাখা যায়নি। প্রাচীন যুগের কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া ধ্যান-ধারণার সঙ্গে নতুন চিন্তা-ভাবনা যুক্ত হয়েছে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে। আর এসব ধারণার একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস ছিল কেল্টিক বিদ্যা, দ্বাদশ শতক থেকে যা জনপ্রিয় হতে শুরু করে ইউরোপ জুড়ে। পূর্বোল্লেখিত, ওয়েলশ-এর বাসিন্দা মনমাউথের জিওফ্রে রচিত ‘Historia regum Britanniae’-র মাধ্যমে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর মাঝে সেটা ছড়িয়ে পড়ে, যে রচনায় জাদুকর মার্লিনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান রয়েছে।
কার্যত, গির্জা কর্তৃপক্ষ ডাকিনীবিদ্যা নিয়ে দীর্ঘদিন খুব একটা উচ্চবাচ্য করেনি, কিন্তু পঞ্চদশ শতক থেকে শুরু হয় ব্যাপক ডাইনী শিকারের যুগ; হাজার হাজার মানুষ, বিশেষ করে নারীকে, ডাইনী এবং অশুভ শক্তির সহযোগী হিসেবে পুড়িয়ে মারা হয়। এই কাজের তাত্ত্বিক ভিত্তি ছিল পেপাল ইনকুইযিশনের দুই সদস্যের লেখা একটি বই: ‘Malleolus maleficrum’ বা ‘ডাইনী মুগুর’। কিন্তু গির্জার তরফ থেকে এমন নিষ্ঠুরতার পরেও জাদুর প্রতি লোকবিশ্বাস নির্মূল করা যায়নি। জাদুটোনার প্রতি আগ্রহটা থেকেই গিয়েছিল মানুষের।
আরো সাম্প্রতিক সময়ে, বিজ্ঞানের নানা অগ্রগতি এবং যুক্তিবাদের প্রতি একটি স্বাভাবিক প্রবণতা জাদুর প্রতি সমর্থন বেশ কিছুটা হ্রাস করেছে। যাঁরা বিষয়টি চর্চা করেন তাঁরা এটাকে কিমিয়া, জ্যোতিষবিদ্যা এবং অন্যান্য কিছু বিষয় যেগুলো সম্মানজনক বিজ্ঞান ও বিদ্যাচর্চা থেকে সরে এসেছে সেসব থেকে পাওয়া ধ্যান-ধারণার সঙ্গে যুক্ত করেন। কিন্তু তাই বলে জাদুর প্রতি মানুষের এখন আর কোনো আগ্রহ নেই এমন সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া বড্ড ভুল হবে।
বরং এর উল্টোটাই যে সত্য তার প্রমাণ হচ্ছে হ্যারি পটারের বইগুলোর আশ্চর্য রকমের সাফল্য। আজ অব্দি পাঁচটি খণ্ড প্রকাশিত হয়েছে, এবং আক্ষরিকভাবেই কোটি কোটি কপি বিক্রি হয়েছে। বইগুলোর লেখক জে কে রাওলিংস লাতিন অধ্যায়ন করেছেন। এবং বইগুলোয় তিনি কিভাবে তার এই লাতিনের জ্ঞানকে কাজে লাগিয়েছিলেন সেটা জানলে মন্দ হয় না। এমনকি, ভাষাটির সাধারণ অবস্থার দিক থেকেও ব্যাপারটার খানিকটা গুরুত্ব রয়েছে, কারণ লাতিন রয়েছে এমন খুব কম বইই এতো বেশি সংখ্যক মানুষের হাতে পৌঁছেছে। প্রতিটি বইয়ের টাইটেল পেজে একটি কোট অভ আর্মস রয়েছে, ‘Draco dormiens nunquam titillanus’ এই মোটোসহ, যা কিনা রীতিমতো চমৎকার নিখুঁত লাতিন, যার অর্থ ‘ঘুমন্ত ড্রাগনকে কখনোই বিরক্ত করা উচিত নয়’। এই লাতিন শব্দবন্ধ আর কুলমর্যাদাসূচক চিহ্ন জাদুবিদ্যার মধ্যযুগীয় উৎস ও হগোয়ার্টস স্কুল সম্পর্কে – অর্থাৎ যেখানে সমস্ত ঘটনা ঘটে – মানুষকে উৎসুক করে তোলে। বইটিতে লাতিন খুব বেশি না থাকলেও সেটা খুবই বিশেষভাবে ব্যবহার করা হয়েছে।
অনেক চরিত্রেরই প্রথম নামে এমন সব লাতিন শব্দ রয়েছে যেগুলো তাদের গুণবাচক। Albus (শাদা) Dumbledore এক খাঁটি আত্মা এবং শুভর পক্ষের শক্তি, অন্যদিকে Draco (ড্রাগন) Malfroy ও Severus (কঠোর) Snape নীচ ও অস্বস্তিকর। Sirius (Dogstar) Black কখনো কখনো পেল্লায় এক কালো কুকুরের ছদ্মবেশে এসে হাজির হয়। যারা লাতিন জানে তাদের জন্য নামগুলো গুপ্ত সংবাদ বহন করে।
প্রধানত অবশ্য ভাষাটি ব্যবহৃত হয়েছে জাদুর কারণে। জাদুমন্ত্র আর শাপশাপান্ত যা আওড়ানো হয় তার সব-ই লাতিনে। এসবের অনেকগুলোই সাধারণ লাতিন ক্রিয়াপদ যেগুলো শেষ হয়েছে প্রথম পুরুষ বাচক ‘-o’ দিয়ে, যেমন ‘Accio!’ (আমি আহ্বান করছি!) বা, ‘Reparo!’ (আমি মেরামত করছি)। অন্যগুলো বিশেষ্য, যেমন ‘Impedimenta’ (বাধাবিঘ্নসমূহ, ‘Impediments’) বা, বিশেষণ, যেমন ‘Impervius’ (অভেদ্য, Impervious, হ্যারির চশমা যাতে পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়)। রয়েছে এমনকি কিছু কিছু হ্রস্ব বাক্য-ও: ‘Expecto Patronum’ ‘আমি পেত্রনাসের জন্য অপেক্ষা করছি’, যেখানে পেত্রনাস হচ্ছে লাতিন নামধারী এক উপকারী শক্তি। কিন্তু বেশ কিছু স্পেল বা জাদুমন্ত্র ‘Reducio!’ (মাকড়সাকে শুকিয়ে ফেলার জন্য ব্যবহৃত) দেখতে লাতিনের মতো হলেও আসলে কিন্তু তা নয়। নিশ্চিতভাবেই সেটা ইংরেজি ‘reduce’ এবং শেষ অব্দি লাতিন ‘reduco’-এর সঙ্গে সম্পর্কিত, যার মানে ‘আই লিড ব্যাক’, যদিও জাদুমন্ত্রটার অর্থের সঙ্গে সেটা খাপ খায় না। কাজেই এই জাদুমন্ত্রটি ইংরেজিভিত্তিক ছদ্ম-লাতিন।
সত্যি বলতে কি, এসব জাদুমন্ত্র – তা সে লাতিনই হোক বা ছদ্ম-লাতিন – ইংরেজি (এবং খানিকটা ফরাসি) জানা কল্পনাপ্রবণ পাঠকের জন্য কম-বেশি বোধগম্য। সেগুলো লাতিন এবং ইংরেজি শব্দমূল থেকে তৈরি, এবং সেগুলোর সঙ্গে লাতিন শেষাংশ জুড়ে দেয়া হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, কারো বিরোধীপক্ষকে নিরস্ত করার জন্য যে জাদুমন্ত্র তা হলো ‘Expelliarmus’, যার মধ্যে রয়েছে লাতিন expelli/ইংরেজি expel, লাতিন arma/ইংরেজি ‘arms’, এবং লাতিন শেষাংশ ‘-us’। তাহলে দেখা যাচ্ছে, হ্যারি পটার উপন্যাসগুলোতে যে লাতিন রয়েছে তার বেশিরভাগই হচ্ছে ছদ্মবেশী ইংরেজি। লেখকের উদ্দেশ্য মনে হচ্ছে বুড়ো ক্যাটোর উদ্দেশ্যের মতোই, কিছু জাদুকরী শব্দ ব্যবহার করা যা লাগসই অনুষঙ্গ সরবরাহ করবে, কিন্তু পুরোপুরি বোঝা যাবে না। এভাবে লাতিন ব্যবহার করার করার দুটো ভালো কারণ আছে। এটা সেখানে একটা সম্মানজনক ভাষা হিসেবে বিদ্যমান, বিশেষ করে প্রাচীন বইগুলোতে পাওয়া গুপ্তবিদ্যার প্রেক্ষাপটে। দ্বিতীয়ত, লাতিন শব্দমূলগুলো ইংরেজীভাষীদের কাছে মোটামুটি বোধগম্য। শেষ তথ্যটি বেশ মজার, যা আমাদেরকে মায়াবিদ্যার অন্ধকার জগৎ থেকে আধুনিক জীবনে লাতিনের সাধারণ প্রভাবের দিকে ফিরিয়ে আনে, যার একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে ইংরেজি ও অন্যান্য ইউরোপীয় ভাষা স্পষ্টতই হাজার হাজার লাতিন শব্দ ধারণ করে।
পরবর্তী অধ্যায় : ধার-নেয়া শব্দসকল ও নব্যশব্দরাজি
Have your say
You must be logged in to post a comment.
১ comment
Pingback: লাতিন ভাষার কথা : ৪৬ | জি এইচ হাবীব