লাতিন ভাষার কথা : ৪৮

|| ধার-নেয়া শব্দসকল ও নব্যশব্দরাজি || ইংরেজি এবং অন্য সব ইউরোপীয় ভাষায় লাতিন থেকে এবং লাতিন হয়ে গ্রীক থেকে আসা শব্দ বিস্তর। [. . .]

Tore Janson-এর সুইডিশ ভাষায় রচিত Latin: Kulturen, historien, språket গ্রন্থের Merethe Damsgård Sørensen ও Nigel Vincet-কৃত ইংরেজি অনুবাদ A Natural History of Latin-এর বাংলা ভাষান্তর

 

ধার-নেয়া শব্দসকল ও নব্যশব্দরাজি

ইংরেজি এবং অন্য সব ইউরোপীয় ভাষায় লাতিন থেকে এবং লাতিন হয়ে গ্রীক থেকে আসা শব্দ বিস্তর। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পথ ধরে প্রবেশ করেছে সেগুলো। হয়ত ভাবছেন এসবের বেশিরভাগই মেলা আগে এসেছে, যখন অনেক বেশি মানুষ লাতিন ভাষায় কথা বলত, কিন্তু এর উল্টোটাই বরং সত্যি। গত একশো বছরে আমরা এই উৎস থেকে যত শব্দ নিয়েছি বিগত অন্যান্য সব বছরগুলোতেও তা নিইনি। আর সত্যি বলতে কি, হারটা বাড়ছে বই কমছে না।

আমরা কি স্যাটেলাইট না কেবলভিত্তিক ডিজিটাল চ্যানেল চাই? এটি ২০০৪ সালের একটি প্রাসঙ্গিক বিষয়। (উল্লেখ্য, ২০০২ খৃষ্টাব্দে প্রকাশিত মূল সুইডিশ বইটির – Latin: Kulturen, historien, språket – ইংরেজি সংস্করণ বের হয়েছিল ২০০৪-এ: অনুবাদক)। বিশ বছর আগে ডিজিটাল সম্প্রচারের কোনো অস্তিত্ব ছিল না, পঞ্চাশ বছর আগে ছিল না কোনো স্যটেলাইট বা উপগ্রহ, আর, একশ বছর আগে টেলিভিশন (television) শব্দটাই ছিল না। একশ বছর আগে পুরো বিষয়টাই একেবারে ধারণাতীত বলে মনে হতো, কিন্তু যে শব্দগুলো দিয়ে আমরা সেটার কথা বলছি লাতিন-জানা যে কারো কাছে সেটা কিছুটা হলেও বোধগম্য হতো তাতে সন্দেহ নেই।

‘Digital’ এসেছে লাতিন ‘digitus’ বা ‘আঙুল’ থেকে, কালের পরিক্রমায় যেটা দ্বিতীয় একটি অর্থ – ‘digit’ (সংখ্যা) – পরিগ্রহ করেছে, এই সাক্ষ্য দিতে যে ইংরেজি ‘digit’ একটি ধার নেয়া শব্দ এবং সেটা কেবল ওই দ্বিতীয় অর্থেই ব্যবহৃত। এখানে সংযোগটা স্পষ্টতই এই যে, সংখ্যা গোনার জন্য আমরা আমাদের আঙুল ব্যবহার করি। ডিজিটাল সম্প্রচারে নিরন্তর তরঙ্গ পরিবর্তনের বদলে এক আর শূন্য সম্প্রচার করা হয়। ‘television’-এ রয়েছে লাতিন শব্দ ‘visio’ বা ‘sight’-এর শব্দমূল, যার আগে যুক্ত হয়েছে গ্রীক ‘tele’ (দূরবর্তী)। ১৯৫০-এর দশকের আগে একরকম অপরিচিতই ছিল ‘satellite’, যা কিছু কিছু গ্রহ প্রদক্ষিণ-করা উপগ্রহগুলোর ক্ষেত্রে জ্যোতির্বিদেরা আর কল্প-বিজ্ঞান কাহিনীর অদ্ভুত লেখকরাই কেবল ব্যবহার করতেন। যেহেতু মহাশূন্যে আমরা কিছু বস্তু পাঠিয়ে সেগুলোকে পৃথিবী প্রদক্ষিণ করার ব্যবস্থা করতে পেরেছি, তাই শব্দটা – যা কিনা এসেছে লাতিন ‘satélles’ (সম্বন্ধপদীয় কারকে বা genitive case-এ ‘satéllitis’) বা, ‘সঙ্গী’, ‘আনুষঙ্গিক’ থেকে – একটি নতুন মানেতে অভিষিক্ত হয়েছে।

আমাদের আলোচ্য বিষয়ের সকল প্রধান শব্দের উৎস লাতিন। একই কথা খাটে ‘channel’ শব্দটার ক্ষেত্রেও। শব্দটা ইংরেজি ভাষায় আছে তা বেশ কয়েক শতাব্দী হবে, কিন্তু আদতে সেটা লাতিন ‘canalis’ থেকে এসেছে, ফরাসি হয়ে (যদিও ইংরেজি ‘canal’ এসেছে সরাসরি লাতিন থেকে)। এখানে, বিষয়টা ধরা পড়ে যাবে প্রারম্ভিক ‘cha’ দেখে, ‘ca’-এর বিপরীতে। অনেক লাতিন শব্দ যেগুলো ‘ca’ দিয়ে শুরু হয়েছে সেগুলো প্রাচীন ফরাসিতে এমনভাবে বদলে গেছে যে সেটার প্রারম্ভিক ধ্বনি ‘ch’ দিয়ে প্রকাশ করা হয়। বহু ক্ষেত্রে ফরাসি রূপটি-ই ইংরেজিতে পর্যবসিত হয়, যেমন, ‘chapel’, ‘chart’, ‘chapter’, লাতিন ‘capella’ (chapel), ‘charta’ (document, দলিল), ‘capitulum’ (শিরোনাম)-এর পাশে; কিন্তু মাঝে মাঝে আমরা দুটোই পেয়ে যাই, যেমন, ‘channel’ ও ‘canal’, বা ‘enchant’-এর পাশাপাশি ‘incantation’, যেখানে দুটোই এসেছে ‘in’ (in) + ‘cantare’ (sing) থেকে।

একের পর এক নানান বিষয়ের ক্ষেত্রেই একই ব্যাপার লক্ষণীয়। আপনি যদি স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী খাদ্যাভ্যাস চর্চায় রত থাকেন, (অর্থাৎ, আমরা যাকে ‘diet’-এ থাকা বলি – অনুবাদক) এবং প্রতিদিন কি পরিমাণ প্রোটিন (protein) ও ক্যালরি (calorie) গ্রহণ করছেন সে-ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করেন, তাহলেও কিন্তু আপনি ছদ্মবেশে-থাকা প্রাচীন শব্দাবলী ব্যবহার করছেন। ‘Diaeta’ (জীবনযাপনের চিকিৎসক প্রস্তাবিত / প্রদত্ত ধরন বা ব্যবস্থা) চিকিৎসাশাস্ত্রীয় একটি প্রাচীন লাতিন শব্দ যা কিনা গ্রীক থেকে এসেছে। আর, ‘calorie’ শব্দটা ঊনবিংশ শতকের গোড়ার দিকে তৈরি করা হয় লাতিন ‘calor’ (উত্তাপ) থেকে, মূলত শক্তি মাপার একটি একক হিসেবে। অন্যদিকে, গ্রীক শব্দ ‘proteion’ (প্রারম্ভ) আর লাতিন বিভক্তি ‘-in’ থেকে তৈরি করা হয় ‘protein’ শব্দটি, যেটা কিনা বস্তুর বিভিন্ন নামের মধ্যে বিদ্যমান। সুইডেনের বিখ্যাত রসায়নবিদ Jon Jacob Berzelius উনবিংশ শতকের তিরিশের দশকে প্রথম ব্যবহার করেন শব্দটি, সম্ভবত এমন এক শ্রেণীর বস্তু বোঝাতে যেগুলো জীবকুলের (living organism) জন্য অত্যাবশ্যকীয়। ইউরোপের প্রধান প্রধান সব ভাষায় শব্দটির দেখা মেলে (এবং সম্ভবত আরো অনেক ভাষাতেও), যেখানে এক অর্থে সেটাকে সুইডিশ থকে ধার-নেয়া একটি শব্দ হিসেবেও দেখা হয়। এটা আধুনিক বৈজ্ঞানিক শব্দের একটি বিশাল গোত্রভুক্ত, যে শব্দগুলো তৈরি হয়ে যাওয়ার পর দেশে দেশে ছড়িয়ে পড়তে থাকে, এবং যেগুলোকে আসলেই আন্তর্জাতিক বলা চলে, স্রেফ এই কারণে যে শব্দমূলগুলো হয় লাতিন বা প্রাচীন গ্রীক থেকে আসা, এমন কোনো ভাষা থেকে নয় যে-ভাষায় এখন লোকে কথা বলে।

এধরনের বেশ কিছু শব্দ দৈনন্দিন ব্যবহারের ক্ষেত্রে এতো সাধারণ হয়ে গেছে যে, শনাক্ত-অযোগ্যভাবে সংক্ষিপ্তকরণ করা হয়েছে সেগুলোর। এই যেমন, ‘bus’ শব্দটা এসেছে ‘omnibus’ থেকে, যার মানে ‘সবার জন্য’। শব্দ সংক্ষিপ্তকরণের এই পদ্ধতি দেখলে অবাক-ই হতো রোমকরা। কারণ ডেটিভ বা সম্প্রদান (?) কারকের বহুবচনের কেইস এন্ডিং হচ্ছে ‘-ibus’, এবং আক্ষরিক অর্থেই হাজার হাজার শব্দের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা একই। বাইসাইকেলের দুটো চাকা, কাজেই ‘bicycle’ নামের ব্যাপারটা – ‘bi-‘ দুই, ‘cycle’ (ঘূর্ণন) – সহজেই বোঝা যাচ্ছে। কিন্তু শব্দটার সংক্ষিপ্ত রূপ ‘bike’-এ এসে এই স্বচ্ছতাটা হারিয়ে যাচ্ছে। ইংরেজিতে সম্প্রতি একটি শব্দ গঠিত হয়েছে: ‘burb’, প্রথমে যেটা ‘suburb’-এর সংক্ষিপ্ত রূপ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল, পরে, কোনো এলাকা বা স্থান বোঝাতে, বিশেষ করে ইন্টারনেট-এর, যেখানে বিশেষ স্বার্থ বা আগ্রহ সংশ্লিষ্ট গোষ্ঠী বা দল খবরাখবর ও চিন্তাভাবনা একে অন্যের সাথে ভাগ করে নেবার জন্য সেই ‘burb’ প্রতিষ্ঠা করেছে। স্পষ্টতই, লাতিন উপসর্গ ‘sub’ (নিচ) আর ‘urbs’ (শহর) থেকেই ‘suburb’ এসেছে, কিন্তু সেটার ছেঁটে-ফেলা রূপ ‘burb’ তৈরি হয়েছে উপসর্গটির শেষ ব্যঞ্জনবর্ণটিকে শব্দমূলটির (urbs) সঙ্গে জুড়ে দিয়ে পুরোপুরি অস্বচ্ছ একটি রূপ সৃষ্টি হওয়ার মাধ্যমে, যেটার আগে কিনা ফের উপসর্গ যোগ করা করা যায়, যেমন আমরা দেখতে পাই ১৯৮০-র দশকে তৈরি করা শব্দ ‘technoburb’-এ।

প্রয়োজন তৈরি হলে এধরনের শব্দসংক্ষেপ খুব দ্রুতই গ্রহণযোগ্যতা পায়। এর সাম্প্রতিক একটি উদাহরণ হলো ‘mobile telephone’, আক্ষরিকভাবে যার মানে ‘চলমান দূরবর্তী শব্দ/ধ্বনি’ (গ্রীক ভাষায় ‘phone’ মানে ‘শব্দ’ বা ‘ধ্বনি’)। কিন্তু শব্দবন্ধটা দীর্ঘ, এবং কার্যত, ইদানীং ‘mobile’ ছাড়া কেউই কিছু বলেন না।

এগুলো লাতিন ও গ্রীক ভাষা থেকে আসা হাজার হাজার আধুনিক ইংরেজি শব্দের কয়েকটি মাত্র। সবগুলোর তালিকা করতে পেল্লায় একটা বইয়ের দরকার পড়বে। নির্দিষ্ট কোনো শব্দের উৎস সম্পর্কে জানতে কেউ আগ্রহী হলে শব্দের উৎস সম্পর্কিত অভিধানগুলোতে নজর বোলাতে পারেন। প্রাচীন ভাষাগুলো জানা না থাকলে কোনো শব্দের উৎস বের করা প্রায়-ক্ষেত্রেই কঠিন বলে মনে হতে পারে, তবে কিছু কিছু বৈশিষ্ট্যর ব্যপারে অবহিত থাকলে আপনি কিছু সূত্র পেয়ে যাবেন। লাতিন থেকে ধার নেয়া শব্দগুলো প্রায়ই এসব উপসর্গ দিইয়ে শুরু হয়: ‘in-’, (in-), ‘de-’ (from), ‘ex-’ (out), ‘con-’ (with); কাজেই ‘consume’ আর ‘industry’ যে লাতিন থেকে এসেছে সেটা বোঝা বেশ সহজ। এবং প্রায়ই তারা লাতিন-থেকে-আসা কোনো বিভক্তি দিয়ে শেষ হয়, যেমন, ‘-(at)ion’, ‘-ant’ বা ‘-ent’ এবং ‘-ator’, যেমন, ‘explosion’, ‘gestation’, ‘mutant’, ‘absorbent’, ‘vector’, ‘generator’ এবং আরো অনেক কিছু। গ্রীক থেকে আসা শব্দগুলোকে ধ্বনি বা ধ্বনির সংযুক্তি দেখে প্রায়ই শনাক্ত করা যায়, কারণ এ সব ধ্বনি বা ধ্বনির সংযুক্তি লাতিন বা ইংরেজিতে সচরাচর দেখা যায় না। যেসব বিদেশী শব্দে ‘y’ আছে বা যেগুলো ‘ps’ দিয়ে শুরু হয় সেসব গ্রীক থেকে এসেছে, যেমন, ‘psychology’, (‘psyke’ – মন বা আত্মার বিদ্যা), বা, ‘analysis’ – ‘ana’ (up, উপর) এবং ‘lysis’ (detaching – বিচ্ছিন্ন করা)। মজার ব্যাপার হচ্ছে, ইংরেজিতে আমরা যখন কোনো কিছু বিশ্লেষণ করার কথা বলি তখন কিন্তু যাই স্কেলের নিচের দিকে – breaking something down to its constituent parts। এছাড়া, ‘epi-’ (on), ‘en-’ (in), বা ‘peri-’ (around) এসব উপসর্গ দেখেও চেনা যেতে পারে সেগুলোকে, যেমন, ‘epigraphic’, ‘entropy’ বা ‘periphery’।

এপর্যন্ত আমরা ইউরোপীয় সব আধুনিক ভাষা নিয়ে একসঙ্গে কথা বলেছি। কিন্তু যেভাবে তারা ধার-নেয়া (বা আহরিত – অনুবাদক) শব্দগুলোকে আত্মীকৃত করে সেই জায়গাটায় মজার মজার সব পার্থক্য রয়েছে, যা আমরা পরবর্তী অধ্যায়ে দেখবো।

 

পরবর্তী অধ্যায় : লাতিন ও জার্মান

জি এইচ হাবীব

জন্ম ১০ই মার্চ ১৯৬৭। পেশা: শিক্ষকতা।

১ comment

  1. Pingback: লাতিন ভাষার কথা : ৪৭ | জি এইচ হাবীব

Have your say

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.