স্মৃতি হাতড়ে বেড়ানোর মতো কষ্টকর বিষয় আর নেই, আর তা যদি হয় বেইজিং-এর মতো শহরে। কারণ এই শহর এতটাই বদলে গেছে যে এক যুগ আগে যিনি এই শহরে এসেছেন তাঁর জন্য অপেক্ষা করছে এক কঠিন ধাঁধা। নিজের চোখকে বিশ্বাস করা কঠিন। যাকে বলে খোলনলচে পালটে যাওয়া। অবশ্য এর একটি প্রধান কারণ হতে পারে দু’ হাজার আটের অলিম্পিক আয়োজন। পৃথিবীর কাছে একটি ঝকঝকে শহর উপহার দেয়ার বাসনা। সে চেষ্টায় চীনারা যেন অনেকটাই সফল, অলিম্পিকে আগত বিদেশী অতিথিরা সত্যিই মুগ্ধ হয়ে দেখলো বেইজিং-এর এই নব রূপ। অলিম্পিক একটি উপলক্ষ মাত্র, এমনিতে চীনাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বিস্ময়কর, তারই প্রতিফলন রাজধানী বেইজিং-এ। চীনাদের আয় উন্নতি যে যথেষ্ট হয়েছে তার ছাপ সর্বত্র। আজ থেকে বিশ বছরের বেশি সময় আগে বেইজিং শহরে এসেছিলাম। তখন বেইজিং-এর সাইকেলের যুগ, শহর জুড়ে শুধু সাইকেল আর সাইকেল। বড় বড় রাস্তাগুলো যেন খাঁ খাঁ করতো। কিছু ট্যাক্সি, পাবলিক বাস আর সরকারি গাড়ি -- এই ছিল পথের সাথী। বরং সাইড লেন-ই ছিল জমজমাট, সারি সারি সাইকেলের মিছিল। তখন এটিই ছিল একমাত্র সমাজতান্ত্রিক বাহন। উঁচু-নিচু ভেদাভেদ নেই, সবারই এক বাহন -- সাইকেল। আর এই সাইকেলের কত গুণগান। আমার মনে আছে, আমাদের চীনা ভাষা শিক্ষা ক্লাসে সাইকেল চালানোর সুফল নিয়ে একটি প্রবন্ধ ছিল। তাতে শরীরচর্চা থেকে শুরু করে পরিবেশ-বান্ধব হিসাবে সাইকেলের নানান গুণপনার বিবরণ ছিল। এখনো অবশ্য কিছু লোককে সাইকেল চালাতে দেখা যায় কায়ক্লেশে, যারা প্রথম সুযোগটি কাজে লাগাতে পারেনি, ধরতে পারেনি সম্ভাবনার প্রথম ট্রেনটি। প্রায় পনেরো বছর পর বেইজিং-এ এসে যখন এক চীনা বন্ধুর সাথে দেখা করতে গেলাম তখন তার আচার-আচরণে দেখি বিশাল পরিবর্তন, চালচলনে বন্ধুটি এখন পুরো বুর্জোয়া, গাড়ি ছাড়া এক পা-ও চলতে পারে না, অথচ আগে দেখেছি তার সর্বক্ষণের সঙ্গী ছিল একটি ভাঙাচোরা সাইকেল। যে-বিশ্ববিদ্যালয়ে একসময় অধ্যয়ন করেছি তার সামনে মোটরগাড়ির সারি, আগে যেখানে শোভা পেত শুধু সাইকেল আর সাইকেল। চীনারা যে-দিকে ঝোঁকে একেবারে বিপ্লব করেই ছাড়ে, এখানেও ঘটে গেছে এক মোটরগাড়ি বিপ্লব । চীনারা তাদের উন্নতির যে-তরিকা, তার নামকরণ করেছে সমাজতান্ত্রিক বাজার অর্থনীতি। অর্থাৎ পুঁজিবাদি ঘুড়ি যত উপরেই উঠুক তা নিয়ন্ত্রিত হবে সমাজতান্ত্রিক লাটাইয়ে। এক দেশ দুই নীতি – সমাজতন্ত্র আর…
স্মৃতিকে হাতড়ে বেড়ানো্র মতো কষ্টকর বিষয় আর নেই, আর তা যদি হয় বেইজিং-এর মতো শহরে। কারণ এই শহর এতটাই বদলে গেছে যে এক যুগ আগে যিনি এই শহরে এসেছেন তাঁর জন্য অপেক্ষা করছে এক কঠিন ধাঁধা। নিজের চোখকে বিশ্বাস করা কঠিন। যাকে বলে খোলনলচে পালটে যাওয়া। অবশ্য এর একটি প্রধান কারণ হতে পারে দু’ হাজার আটের অলিম্পিক আয়োজন। পৃথিবীর কাছে একটি ঝকঝকে শহর উপহার দেয়ার বাসনা। সে চেষ্টায় চীনারা যেন অনেকটাই সফল, অলিম্পিকে আগত বিদেশী অতিথিরা সত্যিই মুগ্ধ হয়ে দেখলো বেইজিং-এর এই নব রূপ। অলিম্পিক একটি উপলক্ষ মাত্র, এমনিতে চীনাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বিস্ময়কর, তারই প্রতিফলন রাজধানী বেইজিং-এ। চীনাদের আয় উন্নতি যে যথেষ্ট হয়েছে তার ছাপ সর্বত্র। আজ থেকে বিশ বছরের বেশি সময় আগে বেইজিং শহরে এসেছিলাম। [...]