আদিম শিল্পের একটা বড় অংশ যে দেখতে একেবারেই অদ্ভুত তার কারণ তাহলে কী হতে পারে? সম্ভবত, এ-প্রশ্নের জবাব পেতে আমাদেরকে আরো একবার ফিরে আসতে হবে আমাদেরই কাছে, এবং আমরা সবাই যেসব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে পারি সেসবের কাছে। [...]

[১. অনুবাদক ও রচয়িতার ভূমিকা, ২. প্রাক্‌কথন-এর সূচনাংশ, ৩. প্রাক্‌কথন-এর মধ্যাংশ, ৪. প্রাক্‌কথন-এর শেষাংশ, ৫. প্রথম অধ্যায়ের সূচনাংশ] (পূর্বানুসৃতি) ১ প্রা র ম্ভ বি স্ম য় ক র প্রাগৈতিহাসিক এবং আদিম জনগোষ্ঠী সমূহ; প্রাচীন আমেরিকা [শেষাংশ] আদিম শিল্পের একটা বড় অংশ যে দেখতে একেবারেই অদ্ভুত তার কারণ তাহলে কী হতে পারে? সম্ভবত, এ-প্রশ্নের জবাব পেতে আমাদেরকে আরো একবার ফিরে আসতে হবে আমাদেরই কাছে, এবং আমরা সবাই যেসব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে পারি সেসবের কাছে। এক টুকরো কাগজ নিয়ে সেটার ওপর হিজিবিজি করে কোনোরকমে একটা মুখ আঁকা যাক। তেমন কিছু না, মাথা বোঝাতে একটা বৃত্ত, নাকের জন্যে একটা টান, আরেকটা টান মুখের জন্যে। এবারে সেই চক্ষুবিহীন হিজিবিজিটার দিকে তাকানো যাক। অসহনীয় রকমের বিষণ্ণ বলে মনে হচ্ছে না ওটাকে? বেচারা দেখতে পায় না। আমরা ভাবতে থাকি, তাহলে তো দুটো চোখ দিতেই হচ্ছে ওটাকে। আর, যখন দুটো ফুটকি বসিয়েই ফেলি, এবং শেষ পর্যন্ত ওটা যখন তাকাতে পারে আমাদের দিকে, তখন যে কী স্বস্তি আমাদের! এর সবটাই আমাদের কাছে একটা তামাশা ছাড়া কিছু না হলেও একজন আদিবাসীর কাছে কিন্তু ব্যাপারটা মোটেই তা নয়। কাঠের একটা খুঁটিতে সে যে সাদামাটা একটা মুখের ছবি এঁকে দিয়েছে তাতে করেই, তার কাছে, সেটা পুরোপুরি বদলে গেছে; মুখটা তার মধ্যে যে প্রভাব সৃষ্টি করেছে সেটাকে লোকটি মুখটার জাদুকরী ক্ষমতার একটি চিহ্ন বলেই ধরে নিয়েছে। দেখার জন্যে সেটার দুটো চোখ থাকলেই হলো, মুখটাকে এর চাইতে বাস্তবসম্মত করে তৈরি করার কোনো প্রয়োজন নেই। ২৪ নম্বর চিত্রে পলিনেশীয় 'যুদ্ধ দেবতা' ওরো-র একটি ছবি দেখা যাচ্ছে। পলিনেশীয়রা খোদাই কাজে তুখোড়, কিন্তু তারপরেও এটাকে মানুষের একটা সঠিক প্রতিরূপ হিসেবেই দেখাতে হবে এমনটি মনে হয়নি তাদের কাছে। আমরা শুধু দেখতে পাই, এক টুকরো কাঠকে বোনা কিছু আঁশ দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়েছে। সেটার দু'চোখ আর দু'বাহুরই শুধু আভাস দেয়া হয়েছে এই আঁশের বেনী দিয়ে, কিন্তু একবার সেগুলো লক্ষ করলেই খুঁটিটি আমাদের সামনে আবির্ভূত হয় অশুভ শক্তির একটা চেহারা নিয়ে। এখনো আমরা ঠিক শিল্পরাজ্যে প্রবেশ করিনি, কিন্তু আমাদের হিজিবিজি পরীক্ষাটার কাছে সম্ভবত আরো কিছু শেখার আছে আমাদের। আঁকিবুকি-কাঁটা মুখের আদলটা সম্ভাব্য সব রকম উপায়ে বদলে দেয়া যাক। চোখের আকৃতিটাকে…

সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ: নিম্নবর্ণিত কাহিনী সর্বসাধারণ প্রকাশকের বেলায় প্রযোজ্য নয়। [...]

সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ: নিম্নবর্ণিত কাহিনী সর্বসাধারণ প্রকাশকের বেলায় প্রযোজ্য নয়। আপনি একজন বিশ্বাসপালক বা বিশ্বাসঘাতক (পড়ুন, লেখক বা অনুবাদক)। পৃষ্ঠপোষক (পড়ুন, প্রকাশক) আপনাকে বললেন, একটি কিতাব তর্জমার জন্য আপনি এই পরিমাণ টংকা লাভ করবেন। আপনি তাঁর আজ্ঞা পালন করলেন। কার্যত দেখা গেল, প্রতিশ্রুত টংকালাভ করতে গিয়ে আপনার প্রায় স্বর্গলাভের জোগাড় হচ্ছে, কারণ আপনি দেখলেন: প্রকাশক চলে যান লবেজান ক'রে, ধরেন না ফোন, চেনেন না পরে। আর চিনিলেও ক'ন, কপি সব পড়ে আছে, ইঁদুরের তরে। ওদিকে, চেকনাই কিন্তু তার বাড়ে দিনে দিনে, গাড়ি-বাড়ি সব হয়, বই-বিক্রি বিনে। এহ বাহ্য। আপনি ভিন্ন সূত্রে আরো জানতে পারলেন, আপনার তর্জমাকৃত গ্রন্থের জন্য প্রকাশক-প্রবর প্রচুর পরিমাণ অর্থ অনুদান হিসেবে লাভ করেছেন মুখ্যত অনুবাদক নামক বিশ্বাসঘাতককে পারিশ্রমিক হিসেবে দেবার জন্য। অথচ তিনি আপনাকে তার বিন্দুবিসর্গ জানতে দেননি। মুষ্টিভিক্ষার মতো কিছু অর্থ প্রদান করেছেন অনেক দেন-দরবারের পর। পাঠক, অধমের কথা আপনার বিশ্বাস হলে কিছু বলার নেই; বিশ্বাস না হলে এ-সময়ের একজন নিবেদিত প্রাণ, জনপ্রিয়, বহুপ্রজ অথচ বিশ্বস্ত অনুবাদক শওকত হোসেন বর্ণিত সত্য ঘটনাটি শুনুন (মানে, পড়ুন)। ঘটনাক্রমে, এ-ঘটনার এক সাক্ষী আমি। রোদেলা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত/প্রকাশিতব্য শওকত হোসেনের অতি সাম্প্রতিক অনুবাদ গ্রন্থের (ক্যারেন আর্মস্ট্রং-এর ব্যাটল ফর গড : আ হিস্ট্রি অভ্ ফান্ডামেন্টালিযম-এর অনুবাদ স্রষ্টার জন্য লড়াই: মৌলবাদের ইতিহাস) ভূমিকায় তিনি কথাগুলো পাঠকের সামনে তুলে ধরেছেন। আমি, তাঁর অনুমতি নিয়ে সেটির প্রাসঙ্গিক অংশ এখানে ব্যবহার করেছি। আর, তাঁকে আমার ধন্যবাদ জানিয়ে রাখছি। আরেকটি কথা, এসব কথা অনেক আগেই সর্বসাধারণের সামনে তুলে ধরা উচিত ছিল। কিন্তু, প্রথমত ভেবেছি নিজেকে সংশোধন ক'রে নেবেন ভদ্রলোক। দ্বিতীয়ত, শত হলেও, এটা নিতান্তই ঘরের কথা। রাষ্ট্র করতে চাইনি আমরা। না, নিজের কান খোয়ানোর লজ্জাকর খবর চাউর করতে চাইনি বলে নয়, কাক কাকের মাংস খায় না বলে। কিন্তু বায়স-মাংসভক্ষণ বায়সের অদৃষ্টলিখন ছিল বলেই মানতে হলো এখন। আর বিলম্ব নয়। পড়ুন, শওকত হোসেন-এর বর্ণনায় 'সন্দেশ' সমাচার। বইটি আরও আগে বের হওয়ার কথা ছিল। দেরি হবার কারণ প্রসঙ্গে পাঠকদের জ্ঞাতার্থে এখানে কিছু কথা বলা প্রয়োজন মনে করছি। এই বইটিসহ আমার অনূদিত আরও কিছু বই বের হওয়ার কথা ছিল আজিজ সুপার মার্কেটের সন্দেশ নামক প্রকাশনা সংস্থা থেকে। পাণ্ডুলিপিও জমা দিয়েছিলাম।…

প্রথম অধ্যায় [প্রা র ম্ভ বি স্ম য় ক র/ প্রাগৈতিহাসিক এবং আদিম জনগোষ্ঠী সমূহ; প্রাচীন আমেরিকা] ভাষার সূত্রপাত কীভাবে সে-সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান যতটুকু তার চেয়ে শিল্পের শুরু কীভাবে সে-বিষয়ে আমাদের জ্ঞান বেশি নয়। [...]

[১. অনুবাদক ও রচয়িতার ভূমিকা, ২. প্রাক্‌কথন-এর সূচনাংশ, ৩. প্রাক্‌কথন-এর মধ্যাংশ, ৪. প্রাক্‌কথন-এর শেষাংশ] ১ প্রা র ম্ভ বি স্ম য় ক র প্রাগৈতিহাসিক এবং আদিম জনগোষ্ঠী সমূহ; প্রাচীন আমেরিকা [সূচনাংশ] ভাষার সূত্রপাত কীভাবে সে-সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান যতটুকু তার চেয়ে শিল্পের শুরু কীভাবে সে-বিষয়ে আমাদের জ্ঞান বেশি নয়। শিল্প বলতে আমরা যদি মন্দির এবং বাড়িঘর নির্মাণ, ছবি এবং মূর্তি তৈরি বা নকশা আঁকার মতো কর্মকাণ্ডকে বুঝি তাহলে সারা দুনিয়ায় এমন কোনো জনগোষ্ঠী পাওয়া যাবে না যাদের মাঝে শিল্পকর্ম অনুপস্থিত ছিল। আবার অন্যদিকে, শিল্প বলতে আমরা যদি এক ধরনের চমৎকার বিলাসকে বুঝিয়ে থাকি, এমন কিছু যা জাদুঘরে বা প্রদর্শনীতে গিয়ে উপভোগ করা যায়, বা বিশেষ কিছু যা সেরা কোনো বৈঠকখানায় দামী কোনো সজ্জা হিসেবে ব্যবহার করা যায়, তাহলে একথা আমাদের অবশ্যই উপলব্ধি করতে হবে যে শব্দটির এই প্রয়োগ খুবই সাম্প্র্রতিক একটি ঘটনা, এবং মহত্তম নির্মাতা, চিত্রকর বা ভাস্করদের অনেকেই কখনো স্বপ্নেও একথা ভাবেননি। স্থাপত্যকলার কথা চিন্তা করলেই পার্থক্যটি সবচেয়ে ভালো করে বুঝতে পারি আমরা। একথা আমরা সবাই জানি যে, জগতে চমৎকার সব দালান-কোঠা রয়েছে, আর সেগুলোর কিছু কিছু সত্যিকারের শিল্পকর্মই বটে। কিন্তু, বিশেষ কোনো উদ্দেশ্যে নির্মিত হয়নি এমন ভবন জগতে নেই বললেই চলে। এসব ভবন যাঁরা পুজো বা বিনোদন বা বসবাসের স্থান হিসেবে ব্যবহার করেন, তাঁরা সেগুলোকে প্রথমত উপযোগিতার মানদণ্ডেই বিচার করেন। কিন্তু সেকথা বিবেচনায় না এনেও বলা যায়, তাঁরা হয়তো ভবনটির নকশা বা কাঠামোর অনুপাতটি পছন্দ করেন বা করেন না, এবং সেটাকে কেবল ব্যবহারিকই নয় বরং 'সঠিক' হিসেবে তৈরি করার ক্ষেত্রে দক্ষ স্থপতিটির প্রচেষ্টার তারিফ করেন। অতীতকালে চিত্রকর্ম এবং মূর্তিকে প্রায় একই রকম দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখা হতো। সেগুলোকে নিছক শিল্পকর্ম হিসেবে দেখা হতো না, বরং দেখা হতো এমন বস্তু হিসেবে যার নির্দিষ্ট কোনো কাজ রয়েছে। বাড়ি-ঘরগুলো কী উদ্দেশ্যে নির্মিত হয়েছে সেকথা কারো জানা না থাকলে তাকে সে-সবের খুব একজন ভালো বিচারক হিসেবে গণ্য করা হতো না। ঠিক একইভাবে, অতীতের শিল্প কোন উদ্দেশ্য সাধনের জন্যে সৃষ্টি করা হয়েছিল সে-সম্পর্কে একেবারে অজ্ঞ থাকলে হয়তো সে-শিল্প বুঝে ওঠা আমাদের পক্ষে সম্ভব হবে না। ইতিহাসের পথ ধরে আমরা যতোই পিছিয়ে যাবো, দেখব যে, শিল্পটি কোন…

আমার মনে হয় আমরা যদি আমাদের নিজস্ব অভিজ্ঞতার সাহায্য নিই তাহলেই কেবল ব্যাপারটা বোঝার আশা করতে পারি। আমরা অবশ্য শিল্পী নই; হয়তো কখনোই কোনো ছবি আঁকার চেষ্টা করিনি আমরা, কখনো যে করবো সে-রকম ইচ্ছেও নেই হয়তো। [...]

[১. অনুবাদক ও রচয়িতার ভূমিকা, ২. প্রাক্‌কথন-এর সূচনাংশ, ৩. প্রাক্‌কথন-এর মধ্যাংশ] প্রা ক্ ক থ ন শিল্প ও শিল্পী প্রসঙ্গে (পূর্বানুসৃতি) আমার মনে হয় আমরা যদি আমাদের নিজস্ব অভিজ্ঞতার সাহায্য নিই তাহলেই কেবল ব্যাপারটা বোঝার আশা করতে পারি। আমরা অবশ্য শিল্পী নই; হয়তো কখনোই কোনো ছবি আঁকার চেষ্টা করিনি আমরা, কখনো যে করবো সে-রকম ইচ্ছেও নেই হয়তো। কিন্তু তার মানে এই নয় যে শিল্পীর জীবন যেসব সমস্যায় পরিকীর্ণ সে-ধরনের সমস্যার মুখোমুখি আমরা কখনোই হই না। সত্যি বলতে কী, এধরনের সমস্যার -- তা সে যতোই সাধারণ হোক না কেন -- অন্তত খানিকটা আভাসও পায়নি এমন লোক যে নেই বললেই চলে সেটাই বরং প্রমাণ করতে উৎসুক আমি। যিনি একগুচ্ছ ফুল সাজিয়ে রাখার চেষ্টা করেছেন, রঙে অদল-বদল ঘটাতে চেয়েছেন, এখানে খানিকটা যোগ করে ওখান থেকে খানিকটা সরিয়ে নেবার প্রয়াস পেয়েছেন তিনিই আকার এবং রঙের মধ্যে ভারসাম্য আনার এই অদ্ভুত সংবেদনটি উপলব্ধি করেছেন, যদিও ঠিক কোন ধরনের ঐকতান তিনি অর্জন করার চেষ্টা করছেন সেটা বলতে পারেননি। আমাদের শুধু মনে হয় এখানে লালের একটা ছোপই হয়তো বিরাট একটা পরিবর্তন এনে দেবে। কিংবা, এমনিতে নীল রঙটা ঠিকই আছে, কিন্তু ওটা অন্য রঙগুলোর সঙ্গে ঠিক 'যাচ্ছে' না, এবং হঠাৎ সবুজ পাতাঅলা ছোট্ট একটা ডালই মনে হয় যেন ব্যাপারটাকে 'ঠিক' বলে মনে হতে সাহায্য করে। 'আর হাত দিয়ো না ওটায়,' বলে উঠি আমরা। 'একেবারে নিখুঁত আছে ওটা এখন।' স্বীকার করছি, প্রত্যেকেই ফুল সাজানোর ব্যাপারে এতোটা সতর্ক নয়, কিন্তু প্রায় প্রত্যেকেরই এমন কিছু বিষয় রয়েছে যেটাকে তিনি 'ঠিক ঠিক মতো' দেখতে চান; হতে পারে সেটা স্রেফ একটা বিশেষ পোশাকের সঙ্গে মানানসই একটা কোমরবন্ধনী খুঁজে পাওয়া, বা এই যেমন কারো প্লেটে কাস্টার্ড বা পুডিং-এর ভাগটা ঠিকমতো পড়ল কিনা এরকম কোনো মামুলি বিষয় নিয়ে উৎকণ্ঠা। এ-ধরনের প্রতিটি ক্ষেত্রে, তা সে যতোই তুচ্ছাতিতুচ্ছ হোক না কেন, আমাদের মনে হয় স্রেফ একটা অতি বেশি বা খুব কম শেড পুরো ভারসাম্যটাই নষ্ট করে দেয়, এবং মাত্র একটাই সম্পর্ক রয়েছে যেটা আসলে সঠিক, অন্য কোনোটি নয়। যেসব মানুষ ফুল, পোশাক বা খাবার নিয়ে এরকম উৎকণ্ঠায় ভোগেন তাদেরকে আমরা হয়তো খুঁতখুঁতে বলতে পারি, কারণ আমাদের মনে…

কাজেই, কোনো ছবির নিখুঁতত্বে দোষ খুঁজে পেলে সব সময়ই দুটো কাজ করা উচিত আমাদের। তার একটি হচ্ছে, শিল্পী যা দেখেছিলেন সেটার বাহ্যিক রূপ বদলে দেবার পেছনে কোনো কারণ রয়েছে কিনা এই প্রশ্ন করা। আমাদের এই শিল্পকথার ক্রমন্মোচনের সঙ্গে সঙ্গে এ-ধরনের কারণ সম্পর্কে আমরা আরো জানতে পারবো। [...]

[১. অনুবাদক ও রচয়িতার ভূমিকা, ২. প্রাক্‌কথন-এর সূচনাংশ] প্রা ক্‌ ক থ ন শিল্প ও শিল্পী প্রসঙ্গে (পূর্বানুসৃতি) কাজেই, কোনো ছবির নিখুঁতত্বে দোষ খুঁজে পেলে সব সময়ই দুটো কাজ করা উচিত আমাদের। তার একটি হচ্ছে, শিল্পী যা দেখেছিলেন সেটার বাহ্যিক রূপ বদলে দেবার পেছনে কোনো কারণ রয়েছে কিনা এই প্রশ্ন করা। আমাদের এই শিল্পকথার ক্রমন্মোচনের সঙ্গে সঙ্গে এ-ধরনের কারণ সম্পর্কে আমরা আরো জানতে পারবো। যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা পুরোপুরি নিশ্চিন্ত না হচ্ছি যে আমরাই ঠিক, চিত্রশিল্পী নন, ততক্ষণ পর্যন্ত কখনোই কোনো চিত্রকে অশুদ্ধভাবে চিত্রিত বলে দোষারোপ করা আমাদের উচিত নয়। আমরা সবাই এরকম একটা রায় দিতে প্রায় মুখিয়েই থাকি যে, 'জিনিসগুলো দেখতে ঠিক ওরকম নয়'। যেসব ছবি দেখতে আমরা অভ্যস্ত, প্রকৃতি সবসময় অতি অবশ্যই সেগুলোর মতো দেখাবে -- এরকম একটি অদ্ভুত ধরনে চিন্তা করতেই অভ্যস্ত আমরা। অল্প কিছুদিন পূর্বের একটি অত্যাশ্চর্য আবিষ্কারের সাহায্যে সহজেই এর প্রমাণ দেয়া সম্ভব। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে লোকে ঘোড়াকে টগবগিয়ে ছুটতে দেখেছে, ঘোড়দৗড় আর শিকারে অংশ নিয়েছে, এমন সব চিত্রকর্ম আর স্পোর্টিং প্রিন্ট দেখে নয়ন জুড়িয়েছে যেখানে দেখা গেছে অশ্ববাহিনী শত্রুবাহিনীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ছে কিংবা কুকুরের পশ্চাদ্ধাবন করছে; কিন্তু সম্ভবত এঁদের মধ্যে একজনও লক্ষ করে দেখেননি ঘোড়া যখন দৌড়োয় তখন সেটাকে 'আসলে ঠিক কেমন দেখায়'। ছবি এবং স্পোর্টিং প্রিন্টে সেগুলোকে সাধারণত শূন্যে পুরোপুরি পা ছড়িয়ে দেয়া অবস্থাতেই দেখানো হয়েছে -- ঠিক যেমনটি দেখিয়েছিলেন উনবিংশ শতকের মহান ফরাসী চিত্রকর জেরিকো (Théodore Géricault), এপসম-এর ঘোড়দৌড়ের একটি বিখ্যাত ছবিতে (চিত্র ১৩)। এর পঞ্চাশ বছর পরে যখন দ্রুতবেগে ধাবমান অশ্বের স্থিরচিত্র গ্রহণের মতো যথেষ্ট দক্ষ ফটোগ্রাফিক ক্যামেরা তৈরি হল তখন এসব স্থিরচিত্র প্রমাণ করল যে চিত্রকরেরা এবং জনসাধারণ উভয় পক্ষই এতোদিন ভুল করে এসেছেন। ছুটন্ত কোনো ঘোড়াই আমাদের কাছে যেটাকে এতো স্বাভাবিক বলে মনে হয় তেমন করে দৌড়োয় না। ঘোড়ার পা যখন মাটি ছেড়ে ওঠে তখন ঘোড়াটি সেগুলোকে ভেতরের দিকে টেনে নেয় (চিত্র ১৪)। খানিকটা চিন্তা করলেই আমরা বুঝতে পারবো যে এরকমটি না হলেই বরং সেটার পক্ষে এগোনো অসম্ভব। কিন্তু তারপরেও চিত্রকরেরা যখন এই নতুন আবিষ্কারটি প্রয়োগ করতে শুরু করলেন এবং ছুটন্ত ঘোড়া আসলে যেভাবে দৌড়োয় সেভাবেই সেগুলোর ছবি আঁকলেন,…

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.