সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ: নিম্নবর্ণিত কাহিনী সর্বসাধারণ প্রকাশকের বেলায় প্রযোজ্য নয়।
আপনি একজন বিশ্বাসপালক বা বিশ্বাসঘাতক (পড়ুন, লেখক বা অনুবাদক)। পৃষ্ঠপোষক (পড়ুন, প্রকাশক) আপনাকে বললেন, একটি কিতাব তর্জমার জন্য আপনি এই পরিমাণ টংকা লাভ করবেন। আপনি তাঁর আজ্ঞা পালন করলেন। কার্যত দেখা গেল, প্রতিশ্রুত টংকালাভ করতে গিয়ে আপনার প্রায় স্বর্গলাভের জোগাড় হচ্ছে, কারণ আপনি দেখলেন:
প্রকাশক চলে যান লবেজান ক’রে,
ধরেন না ফোন, চেনেন না পরে।
আর চিনিলেও ক’ন,
কপি সব পড়ে আছে, ইঁদুরের তরে।
ওদিকে,
চেকনাই কিন্তু তার বাড়ে দিনে দিনে,
গাড়ি-বাড়ি সব হয়, বই-বিক্রি বিনে।
এহ বাহ্য। আপনি ভিন্ন সূত্রে আরো জানতে পারলেন, আপনার তর্জমাকৃত গ্রন্থের জন্য প্রকাশক-প্রবর প্রচুর পরিমাণ অর্থ অনুদান হিসেবে লাভ করেছেন মুখ্যত অনুবাদক নামক বিশ্বাসঘাতককে পারিশ্রমিক হিসেবে দেবার জন্য। অথচ তিনি আপনাকে তার বিন্দুবিসর্গ জানতে দেননি। মুষ্টিভিক্ষার মতো কিছু অর্থ প্রদান করেছেন অনেক দেন-দরবারের পর। পাঠক, অধমের কথা আপনার বিশ্বাস হলে কিছু বলার নেই; বিশ্বাস না হলে এ-সময়ের একজন নিবেদিত প্রাণ, জনপ্রিয়, বহুপ্রজ অথচ বিশ্বস্ত অনুবাদক শওকত হোসেন বর্ণিত সত্য ঘটনাটি শুনুন (মানে, পড়ুন)। ঘটনাক্রমে, এ-ঘটনার এক সাক্ষী আমি। রোদেলা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত/প্রকাশিতব্য শওকত হোসেনের অতি সাম্প্রতিক অনুবাদ গ্রন্থের (ক্যারেন আর্মস্ট্রং-এর ব্যাটল ফর গড : আ হিস্ট্রি অভ্ ফান্ডামেন্টালিযম-এর অনুবাদ স্রষ্টার জন্য লড়াই: মৌলবাদের ইতিহাস) ভূমিকায় তিনি কথাগুলো পাঠকের সামনে তুলে ধরেছেন। আমি, তাঁর অনুমতি নিয়ে সেটির প্রাসঙ্গিক অংশ এখানে ব্যবহার করেছি। আর, তাঁকে আমার ধন্যবাদ জানিয়ে রাখছি।
আরেকটি কথা, এসব কথা অনেক আগেই সর্বসাধারণের সামনে তুলে ধরা উচিত ছিল। কিন্তু, প্রথমত ভেবেছি নিজেকে সংশোধন ক’রে নেবেন ভদ্রলোক। দ্বিতীয়ত, শত হলেও, এটা নিতান্তই ঘরের কথা। রাষ্ট্র করতে চাইনি আমরা। না, নিজের কান খোয়ানোর লজ্জাকর খবর চাউর করতে চাইনি বলে নয়, কাক কাকের মাংস খায় না বলে। কিন্তু বায়স-মাংসভক্ষণ বায়সের অদৃষ্টলিখন ছিল বলেই মানতে হলো এখন।
আর বিলম্ব নয়। পড়ুন, শওকত হোসেন-এর বর্ণনায় ‘সন্দেশ’ সমাচার।
বইটি আরও আগে বের হওয়ার কথা ছিল। দেরি হবার কারণ প্রসঙ্গে পাঠকদের জ্ঞাতার্থে এখানে কিছু কথা বলা প্রয়োজন মনে করছি। এই বইটিসহ আমার অনূদিত আরও কিছু বই বের হওয়ার কথা ছিল আজিজ সুপার মার্কেটের সন্দেশ নামক প্রকাশনা সংস্থা থেকে। পাণ্ডুলিপিও জমা দিয়েছিলাম। এমনি এক সময় সহসা সুপ্রিয় অনুবাদক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ও বিশিষ্ট অনুবাদক জনাব জি. এইচ. হাবীরের কাছে জানতে পারি সন্দেশের স্বত্বাধিকারী লুৎফর রহমান চৌধুরীর অপকর্মের ফিরিস্তি। জনাব লুৎফর রহমান অনুবাদকদের প্রতারিত করে বিভিন্ন বিদেশী সংস্থা থেকে অনূদিত গ্রন্থের বিপরীতে অনুবাদকদের নামে বরাদ্দ ও প্রেরিত প্রচুর অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন। এ খবর জানতে পেরে আমি নরওয়ের নরলা, কানাডিয়ান কাউন্সিল ফর ট্রান্সলেশন, ডাচ ফাউন্ডেশন ফর ট্রান্সলেশন ইত্যাদি বিভিন্ন সংস্থার সাথে যোগাযোগ করে জনাব লুৎফর রহমানের অপকর্মের জ্বলন্ত প্রমাণ যোগাড় করি। তাতে জানা যায় এই তথাকথিত সাহিত্যসেবী আসলে একজন নিম্নশ্রেণীর তস্কর ছাড়া আর কিছুই নন। তিনি বিভিন্ন বিদেশী প্রকাশনা সংস্থা ও লেখকদের এজেন্টদের সাথে নামী-অনামী লেখকদের বাংলাদেশের পাঠকদের সাথে পরিচিত করিয়ে দেওয়ার নামে খুবই সামান্য অর্থের বিনিময়ে লাইসেন্স (স্বত্ব নয়) হাতিয়ে নেন। তারপর অনুবাদকদের সাথে নামমাত্র অর্থের বিনিময়ে সংশ্লিষ্ট বইটি অনুবাদ করানোর জন্যে নামকাওয়াস্তে চুক্তি সম্পাদন করেন। কিন্তু সেই চুক্তির কথা গোপন করে তিনি উল্লেখিত বিদেশী সাহিত্য সংস্থাগুলোর কাছে অনুবাদকের সত্যিমিথ্যার মিশেল জীবনবৃত্তান্ত ও জাল স্বাক্ষরসহ সম্পূর্ণ ভিন্ন মিথ্যা চুক্তিপত্রের অনুলিপি জমা দিয়ে অনূদিত গ্রন্থের বিনিময়ে অনুবাদকের নামে বরাদ্দ অর্থের জন্যে আবেদন করেন এবং অনুবাদককে কিছুই না জানিয়ে সেই অর্থ বেমালুম তছরুপ করেন। এভাবে এপর্যন্ত তিনি বহু লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে এই ঘৃণ্য কাজ করে আসছেন। তাঁর এমনি প্রতারণার ফাঁদ থেকে বাংলাদেশের কোনও অনুবাদক রেহাই পাননি। নদে উপন্যাসের অনুবাদক আনিস পারভেজ, সোফির জগৎ ও শত বর্ষের নিঃসঙ্গতা’র নন্দিত অনুবাদক জি এইচ হাবীব, একটি অপহরণ সংবাদ ও বাগদাদে একশ দিন-এর অনুবাদক সিলেট মেট্রপলিটন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক সুরেশ রঞ্জন বসাক, লাইফ অভ পাই ও টিন রঙা শাড়ীর অনুবাদক শিবব্রত বর্মণ, তাশ রহস্য-এর অনুবাদক দ্বিজেন্দ্রনাথ বর্মণ, ক্যালি গ্যাংয়ের আসল ইতিহাস-এর অনুবাদক সালেহা চৌধুরীসহ কেউই বাদ যাননি। অথচ প্রকাশ্যে নিজেকে তিনি সাহিত্যসেবী হিসাবে পরিচয় দিয়ে থাকেন, ভান করেন সাহিত্যের সেবা করতে গিয়ে নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন। এছাড়া, ভারতীয় পূর্বপ্রকাশিত বিভিন্ন অনুবাদও তিনি তাঁর নিকটাত্মীয়দের নামে প্রকাশ করে বর্ণিত সংস্থাগুলো থেকে অনুদানের অর্থ আদায় করে নিয়েছেন। সম্পূর্ণ বিষয়টি অনুবাদকদের মাঝে জানাজানি হওয়ার পরও এবং প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও (বর্ণিত সংস্থাসমূহের ওয়েব সাইটে অনুসন্ধান করলেই এই অভিযোগের সত্যতার প্রমাণ মিলবে) তিনি বিষয়টি অস্বীকার করে গেছেন। অনেক চেষ্টা করেও আমি ও অন্য অনুবাদকগণ প্রাপ্য অনুদানের টাকা তো বটেই অন্যান্য অনূদিত গ্রন্থের বিনিময়ে চুক্তিমাফিক প্রতিশ্রুত অর্থও পাইনি। তিনি চুক্তিভঙ্গ ও প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছেন বলে পূর্বপ্রকাশিত অনূদিত গ্রন্থ প্রত্যাহারের কথা লিখিতভাবে জানানো সত্ত্বেও তিনি সেগুলোর বিপণন অব্যাহত রেখেছেন এবং দাখিল করা পাণ্ডুলিপি ফেরত চাইলেও ফেরত দেননি; যে কারণে অত্যন্ত পরিশ্রমসাপেক্ষ হলেও এ বইটি দ্বিতীয়বার অনুবাদ করতে হয়েছে। আমার আরও কয়েকটি অনূদিত গ্রন্থের পাণ্ডুলিপি এখনও অন্যায়ভাবে আটকে রেখেছেন, বারবার তাগিদ দেওয়া সত্ত্বেও তাতে কান দেননি। বাংলাদেশের সুনাম অক্ষুণ্ন রাখা এবং প্রতারণা থেকে দেশের অনুবাদকদের বাঁচাতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এগিয়ে আসবেন এটাই কাম্য। আমি আন্তরিকভাবে আশাবাদী যে, সংশ্লিষ্ট সংস্থা যথা-ব্যবস্থা গ্রহণ করে বাংলাদেশের সাহিত্য জগৎকে লুৎফর রহমান চৌধুরীর মতো নিম্নশ্রেণীর তস্করের কবল থেকে উদ্ধার করে নিবেদিতপ্রাণ লেখক ও অনুবাদকদের প্রতারণার হাত থেকে রায় এগিয়ে আসবেন। পাঠক, লেখক ও অনুবাদকগণকে এই প্রকাশককে সামাজিকভাবে বর্জন করার আহ্বান জানাই। পাঠকদের একটি অন্যায় সম্পর্কে অবহিত করার জন্যেই এখানে এত কথা বলতে হলো। কারও ধৈর্যচ্যুতি ঘটার হলে আমি সেজন্যে ক্ষমাপ্রার্থী। প্রসঙ্গত, এই বক্তব্যের জন্যে রোদেলার প্রকাশক দায়বদ্ধ নন।
ধন্যবাদ।
শওকত হোসেন।
মালিবাগ, ঢাকা।
e-mail: saokot_nccbl@yahoo.com
Have your say
You must be logged in to post a comment.
৯ comments
মাসুদ করিম - ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১১ (১২:১৫ পূর্বাহ্ণ)
একে প্রাণহরা কেন বলছেন একবারে প্রাণঘাতীই বলুন। এটি কঠিন শ্রমের ফল আত্মসাৎ। এই সন্দেশ বিষাক্ত নয় এই সন্দেশ মারণাস্ত্র। একে লেখার জগতে শ্রমের মূল্যই নেই, মানুষ মনে করে গায়ে হাওয়া লাগিয়ে লেখকেরা পৃষ্টার পর পৃষ্টা কলঙ্কিত করেন — আবার এর মধ্যে এইসব প্রাণঘাতী প্রতারক প্রকাশক! শ্রমিক লেখকের শ্রমের মূল্য আদায়ে সোচ্চার হোক লেখক সমাজ।
জি এইচ হাবীব - ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১১ (১:৩৮ পূর্বাহ্ণ)
মাসুদ ভাই, ধন্যবাদ। নিজেকে আমি ভদ্রলোকের অন্যান্য শিকারের চাইতে খানিকটা ভাগ্যবান বিবেচনা করতে পারি। কিন্তু ব্যতিক্রম নিয়ম নয় তা আমরা জানি।
‘সোফির জগৎ’ অনুবাদ সূত্রে আমার সঙ্গে ‘সন্দেশ’-এর এই মর্মে লিখিত চুক্তি হয়েছিল যে অনুবাদস্বত্ব প্রকাশনা সংস্থাটির কাছে বিক্রির বিনিময়ে আমাকে বই প্রকাশের (যতদূর মনে পড়ছে) ৪ (চার) মাসের মধ্যে ৫০,০০০ (পঞ্চাশ হাজার)টাকা এককালীন দেয়া হবে।
আমি সেই অর্থ পেয়েছিলাম।
তবে, দুই বছরে, চার কিস্তিতে। এবং প্রতিবারই নানান টালবাহানা এবং আমার যখন প্রয়োজন তার অনেক পর ভদ্রলোক একেকটি কিস্তি আমার হাতে তুলে দিয়েছিলেন।
অথচ — আমার নিজের অনূদিত বই বলে খুবই সংকোচের সঙ্গে বলছি — বইটির বিষয়বস্তু (দর্শন), আকার (৫৪০ পৃষ্ঠা) এবং মূল্য (৪০০ টাকা, এখন সম্ভবত ৫০০ বা ৫৫০), প্রায় সবই পাঠক-পরিপন্থী হওয়া সত্ত্বেও, বিক্রির দিক থেকে বাংলাদেশের প্রকাশনা জগতে এটি একটি ব্যতিক্রম।
যাই হোক, বই প্রকাশের চার-পাঁচ বছর পর একটি রোমহর্ষক সংবাদ জানতে পারি ভদ্রলোকেরই আত্মীয়, দীর্ঘদিন নরওয়ে প্রবাসী (বর্তমানে বাংলাদেশে বাসরত), আনিস পারভেজের মাধ্যমে। (শওকত ভাই উল্লেখ করেছেন যে পারভেজ সাহেব ‘নদে’ নামে একটি নরওয়েজীয় উপন্যাস অনুবাদ করেছিলন ‘সন্দেশ’-এর জন্য। পারভেজ সাহেব জানান যে, অনেকটা আকস্মিকভাবেই তিনি অবগত হয়েছেন যে ‘নদে’ এবং ‘সোফির জগৎ’-এর জন্য ভদ্রলোক ‘অনুবাদকের অনুদান বা ট্রান্সলেটর্স গ্র্যান্টস হিসেবে প্রচুর অর্থ পেয়েছেন (আমার ক্ষেত্রে, পরিশোধিত অর্থের তিন গুণের-ও বেশি) এবং আমাদের, অর্থাৎ অনুবাদকদের তথা বিশ্বাসঘাতকদের, সই জাল ক’রে ভদ্রলোক গ্র্যান্ট প্রদানকারী সংস্থা ‘নোরলা’কে জানিয়েছেন যে আমাদেরকে সেই অর্থ দেয়া হয়েছে। ভদ্রলোককে সেকথা জানালে নানান ওজর-অজুহাতের পর তিনি আংশিক অর্থ পরিশাধ করেন বেশ সময় নিয়ে, দুই কিস্তিতে। এবং বাকি অর্থ প্রদান করতে সরাসরি অস্বীকার করেন। শওকত ভাই এবং অন্যান্য অনুবাদক আমার সৌভাগ্যে রীতিমত ঈর্ষা বোধ করতে পারেন। কারণ আমার তুলনায় তাঁদের বঞ্চনার পরিমাণ অনেক অনেক বেশি। ভদ্রলোককে তাই আমি একটি ধন্যবাদ তো জানাতেই পারি, কারণ ন্যায্য পাওনা ‘সবারই’ প্রাপ্য।
daudrony - ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১১ (৩:০৯ পূর্বাহ্ণ)
লেখাটি পড়ে খুবই কষ্ট পেলাম।
এদের ধরে জনসম্মুখে পিটানো উচিৎ।
নুর নবী দুলাল - ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১১ (১১:৫৩ অপরাহ্ণ)
এটি অমার্জনীয় অপরাধ। প্রতারনার যদি কোন শ্রেনীভেদ থাকে, এটি সর্বনিম্নশ্রেণী পর্যায়ের। সৃজনশীলতার নাম বিকিয়ে এই ধরনের জ্ঞান দশ্যুতার মুখোশ উন্মোচন করে যথাযথ শাস্তির মুখোমুখি করা উচিৎ।
সুমাদ্রি শেখর - ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১১ (১১:০১ অপরাহ্ণ)
সন্দেশ এর মত অন্য প্রকাশনীগুলো ও যে লেখকদের ঠকাচ্ছে না তার প্রমাণ তো আমাদের হাতে নেই।তবে এসব ব্যাপারে কোনো আইনি পদক্ষপ নেওয়া দরকার লেখকদের।
মোহাম্মদ মুনিম - ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১১ (১১:১১ অপরাহ্ণ)
এই পোস্টে যেমন বলা হয়েছে সন্দেশের প্রকাশক ‘নামমাত্র অর্থের বিনিময়ে’ অনুবাদকদের সাথে চুক্তি করেন। অনুবাদের মত বিপুল শ্রমসাধ্য কাজের জন্য এত স্বল্প মূল্যে প্রকাশকের সাথে চুক্তি সম্পাদনের কারণ কি? ব্যাপারটা কি এমন যে কোন কোন অনুবাদক গ্র্যান্টের ব্যাপারটা জেনেও চুক্তি করেছেন? ইউরোপীয় কোন গ্রান্টদাতা যদি একটি বইয়ের বাংলা অনুবাদের জন্য ৩০০০ ডলারও (শ-দুয়েক পৃষ্ঠার একটি বই অনুবাদের জন্য ইউরোপীয় মূল্যমানে এটা বড় কোন অঙ্ক
নয়) দেন, আর অনুবাদক যদি এই অর্থের এক তৃতীয়াংশ নিয়েই খুশি থাকেন (বাকিটা প্রকাশকের, যেহেতু তিনি গ্র্যান্ট ম্যানেজ করছেন), তাহলে জনাব লুৎফর রহমান এই জোচ্চুরির মধ্যে কোন দোষ নাও দেখতে পারেন। গার্মেন্টস ব্যবসায়ীরা যেমন প্রতিটি শার্ট সেলাইয়ের মজুরি ৫ টাকা দিয়ে সেই শার্ট ৫ ডলারে রপ্তানি করে কর্মসংস্থানে ‘বিরাট’ অবদান রাখছেন, লুৎফর রহমানও নিজেকে এই জাতীয় মহৎ কিছু ভাবছেন নাতো?
জি এইচ হাবীব - ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১১ (৯:৪৮ অপরাহ্ণ)
ধন্যবাদ মোহাম্মদ মুনিম।
প্রথমত, অনুবাদকরা জানতেন-ই না যে তাঁদের অনুবাদের জন্য ভদ্রলোক অনুদানপ্রদানকারী কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হতে যাচ্ছেন। তাই তাঁরা স্বল্প মূল্যে তাঁদের শ্রম বিকাতে রাজি হতেন, বিশেষত এই কারণে যে, বাংলাদেশে প্রকাশকের সঙ্গে লেখক/অনুবাদকের কোনো ধরনের চুক্তি-ই হয় না বললে চলে (সমস্যা হয়েছে, প্রতিষ্ঠানগুলো চুক্তি করে প্রকাশকের সঙ্গে, অনুবাদকের সঙ্গে নয়, এবং আশা করে, প্রকাশকের মাধ্যমে ‘অনুবাদকের অনুদান’ বা ‘ট্রান্সলেটর্স গ্র্যান্ট’ অনুবাদকের হাতে বা অ্যাকাউন্টে যাবে)। আর খেয়াল করুন, এখানে এসব চুক্তি হতো বাংলায়, যার কোনো মূল্য বিদেশে নেই। তাছাড়া, অনুদানপ্রদানকারী সংস্থা তো এই চুক্তি ইংরেজিতে হলেও মানবে না; কারণ চুক্তিতে উল্লেখিত পরিমাণের অনেক বেশি তারা অনুদান হিসেবে দিচ্ছে (যদিও, অনুদানের পরিমাণ ঘোষণার আগেই প্রকাশক-অনুবাদক চুক্তিটি জমা দিতে হয়, কিন্তু অনুমান করা যায় মোটামুটি কি পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ হতে পারে)। আবার, ভদ্রলোক সেই স্বল্প পরিমাণ অর্থ-ও তো ঠিক মতো দিচ্ছেন না অনুবাদকদের। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান অনুষদের সহযোগী অধ্যাপক এস এম মনিরুল হাসান Johan Bojer-এর উপন্যাস Den siste viking – The Last of the Vikings (1921) মূল নরওয়েজিয়ান থেকে ‘সন্দেশ’-এর জন্য অনুবাদ করেছিলেন। প্রায় আড়াই শতাধিক পৃষ্ঠার বইটি অনুবাদের জন্য প্রকাশক-ভদ্রলোক অনুবাদকের অনুদান পেলেও অনুবাদক পেয়েছিলেন সাকুল্যে দশ হাজার বঙ্গদেশীয় টাকা।
আমার জানামতে, প্রকাশক-ভদ্রলোক কোনো অনুবাদককেই আগে বা পরে (পরে, নিতান্ত বাধ্য না হলে) জানাননি যে, তিনি অনুবাদকের অনুদানের জন্য আবেদন করছেন বা অনুদান লাভ করেছেন। সুতরাং, অনুবাদকদের পক্ষে কিছুটা ছাড় দিয়ে তাঁর সঙ্গে ওসব চুক্তিতে আসার প্রশ্ন ওঠে না।
তাছাড়া, তিনি আরেকটি জালিয়াতি শওকত হোসেন, এস এম মনিরুল হাসান প্রমুখ অনুবাদক এবং আমার সঙ্গে করেছেন, যা কিনা, ইংরেজিতে যাকে বলে, ক্রিমিনাল অফেন্স। নিয়ম হচ্ছে, অনুদানলাভের আবেদনপত্রের সঙ্গে প্রকাশককে কিছু কাগজ-পত্র অনুদানপ্রদানকারী সংস্থার কাছে জমা দিতে হয়। সেসবের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ দুটো হচ্ছে: ১. মূল বইয়ের প্রকাশক-এর কাছ থেকে বইটি অনুবাদের স্বত্ব ক্রয়ের চুক্তিপত্র এবং ২. অনুবাদকের সঙ্গে ‘অনুবাদ-প্রকাশকের’ চুক্তিপত্র (অবশ্যই ইংরেজিতে বা বইটি মূল যে-ভাষায় রচিত সেই ভাষায় সম্পাদিত)। কই, আমরা তো সেরকম কোনো চুক্তি প্রকাশকের সঙ্গে করিনি? তার মানে কী? ভদ্রলোক যেহেতু অনুদান লাভ করেছিলেন, তাহলে সেরকম চুক্তিপত্র-ও নিশ্চয়ই তাঁকে পেশ করতে হয়েছিল। আর আমরা সবাই জানি, চুক্তিপত্রে দু’পক্ষেরই স্বাক্ষর দরকার। আমরা তো স্বাক্ষর করিনি। তাহলে অনুদানপ্রদানকারী সংস্থাটি কি এক পক্ষের স্বাক্ষর পেয়েই সন্তুষ্ট ছিল? সে-সম্ভাবনা কতটুকু আপনারাই বিচার করুন। আর, তারা যদি তা না করে থাকে তাহলে নিশ্চয়ই সেখানে ২য় পক্ষেরও স্বাক্ষর ছিল? আমরা যদি না করে থাকি, তাহলে কে আমাদের ভার লাঘব করল?
একই ধরনের অপরাধ ভদ্রলোক দ্বিতীয় বার করেন অনুদান লাভ করার পর। তখন তিনি অনুদানপ্রদানকারী সংস্থাটির কাছে আমাদের স্বাক্ষর জাল করে এই মর্মে পত্র (হার্ড কপি অথবা হার্ড কপির স্ক্যানড কপি) প্রেরণ করেন যে আমরা সংস্থাটি প্রদত্ত অনুদানের প্রতিটি পাই-পয়সা-পেনী-হালালা যথাসময়ে লাভ করেছি (বলুন, ‘সুবহানাল্লাহ্’ বা গান ধরুন, ‘আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে, অ্যাকাউন্টে ক্রোনার ডাকে, কত ইউরো অট্ট হাসে…’)
আরো দুঃখের কথা হলো, ভদ্রলোকের এই জালিয়াতির খবর এখন প্রকাশক-পাড়া, বাংলা একাডেমী, এবং সাংবাদিক মহলের অনেকই অবগত (এর মধ্যে সর্বাধিক প্রচারিত কাগজের দাবিদার এমন শীর্ষস্থানীয় সংবাদপত্রের সাংবাদিকরাও আছেন, আছেন ইলেকট্রনিক মিডিয়ার-ও অনেক সাংবাদিক)। কিন্তু কী এক আশ্চর্য কারণে আমরা অনেক চেষ্টা করেও, তাঁদের কাছে তথ্য প্রমাণ সমস্ত কিছু জমা দিয়েও এখন পর্যন্ত এক কলম লেখা-ও আদায় করতে পারিনি। কী জানি, হয়ত আমরাই, অনুবাদক নামের বিশ্বাসঘাতকেরাই, আমাদের মীরজাফরীর, গোলাম আযমীর, খন্দকার মোস্তাকীর সাজা লাভ করছি। আমিন।
5th in the alfabet - ২ মার্চ ২০১১ (৭:১৯ পূর্বাহ্ণ)
ওই লোক সমাজের কলঙ্ক ; তাকে ধরে লেখকদের সামনে প্রকাশ্যে শাস্তি দেয়া উচিত ।
ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া - ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ (১:৫৪ পূর্বাহ্ণ)
রাখাল রাহা’র সাথে বন্ধুত্ব হেতু এই লেখা পর্যন্ত এসে পৌঁছেছি। লেখাটা পড়লাম, কিছু মন্তব্যও। একটা বিষয় বুঝলাম না- আপনারা যারা প্রতারিত হচ্ছে এসব প্রকাশকদের মাধ্যমে, তারা প্রথমেই আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার কথা কেন ভাবেন না। কেউ কেউ তাঁকে ধরে পেটানর কথা বলছেন, প্রকাশ্যে শাস্তির কথা বলছেন, কিন্তু তিনি যা করেছেন তা দেওয়ানী অপরাধ, ফৌজদারি নয়। তাই তাঁকে ধরে পেটানো নয় উপযুক্ত পাওনা এবং ক্ষতিপুরণ আদায় করাই হবে যথাযথ পদক্ষেপ। সেটি করার প্রক্রিয়া শুরু করলে ভাল ফল পাওয়া যাবে বলে মনে করি।