১ম পর্ব | ২য় পর্ব | ৩য় পর্ব | ৪র্থ পর্ব | ৫ম পর্ব (পূর্ব প্রকাশিতের পর . . .) আগেই উল্লেখ করেছি যে, ৩ নভেম্বর-এর অভ্যুত্থানের পর থেকে অস্বাভাবিক দ্রুততায় ঘটনাবলী ঘটতে থাকে। ইতিপূর্বে ১৫ আগস্ট সামরিক বাহিনীর মুষ্টিমেয় কয়েকজন অফিসার বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে ক্ষমতা করায়ত্ত করার মতো অসম্ভব কর্মটি সম্পাদন করেছে। ঘটে যাওয়া এসব নাটকীয় দৃশ্যপট হয়তো জাসদ নেতৃবৃন্দকে কিংকর্তব্যবিমূঢ় করে থাকবে। মূল পরিকল্পনায় ছিল অভ্যুত্থান শুরুর পর সৈন্যরা বাধাদানকারী অফিসারদের গ্রেফতার করে টু ফিল্ড আর্টিলারীতে নিয়ে রাখবে। একমাত্র জিয়াকে নিয়ে আসা হবে ক্যান্টনমেন্টের বাইরে, কর্নেল তাহেরের কাছে। সে অনুযায়ী এলিফ্যান্ট রোডে ইউসুফ ভাইয়ের বাসায় তাহের ও ইনু অপেক্ষা করতে লাগলেন। আমিও ছিলাম সেখানে। রাত দেড়টার দিকে নায়েক সিদ্দিকের নেতৃত্বে এক ট্রাক সৈন্য গুলি ছুঁড়তে ছুঁড়তে সেখানে এলেন। তাহের প্রথমেই তাদের জিজ্ঞাসা করলেন ‘জিয়া কোথায়’? উত্তরে সিদ্দিক বললো, ‘স্যার আপনাকে এখনি ক্যান্টনমেন্ট যেতে হবে। জিয়াকে মুক্ত করেছি। কিন্তু তিনি আসেন নি। আপনাকে যেতে বলেছেন’। এই বলে সিদ্দিক যা জানালেন তা সংক্ষেপে এরকম - সিপাহীরা জিয়াকে বন্দী অবস্থা থেকে মুক্ত করার পর জানায়, দেশে সিপাহী-জনতার বিপ্লব শুরু হয়েছে। কর্নেল তাহের হলেন তাদের নেতা এবং তার কাছে জিয়াকে যেতে হবে এখনি। জিয়া সব শুনে সৈন্যদের আবেগে জড়িয়ে ধরে বললেন, ‘তাহের শুধু তোমাদের নেতা হবে কেন, সে আমারও নেতা। সে ক্যান্টনমেন্টে এসে বিপ্লবের নেতৃত্ব দিলেই তো ভাল হয়। তাকে তোমরা এখানে নিয়ে আস’। একথা শুনে সৈন্যরা দ্বিধান্বিত হয়ে পড়ে। একদিকে তারা জানে জাসদ জিয়াকে অভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তি হিসাবেই দেখছে। পাশাপাশি তাহের সম্পর্কে জিয়ার এ বক্তব্যে সৈন্যরা জিয়াকে এলিফেন্ট রোড নিয়ে যাবার নির্দেশ বিস্মৃত হয়। সিপাহীদের এই গ্র“পের নেতৃত্বে একজন অফিসার থাকলে এই ভুল হতো না। সব শুনে কর্নেল তাহের সে মুহূর্তে তাৎপর্যপূর্ণ একটি মন্তব্য করেছিলেন, ‘আমরা হেরে গেছি’। তারপর তিনি এবং হাসানুল হক ইনু রওনা হলেন ক্যান্টনমেন্টের উদ্দেশ্যে। অভ্যুত্থানী সৈন্য বোঝাই ট্রাকের পেছনে ইউসুফ ভাইয়ের গাড়িতে। আমাকে বলা হলো সিরাজুল আলম খানের সাথে যোগাযোগ করার জন্যে। ইউসুফ ভাইয়ের বাসার পাশেই সেসময় সাংবাদিক কে বি এম মাহমুদ থাকতেন। তার বাসা থেকে সিরাজুল আলম খানকে ফোন করলাম। তিনি ইতিমধ্যে অভ্যুত্থান সম্পর্কে জেনেছেন। সেনানিবাসের…
চার নেতার জেল হত্যাকান্ড এবং ৩ নভেম্বর-এর অভ্যুত্থানের পর থেকে অস্বাভাবিক দ্রুততায় ঘটনাবলী ঘটতে থাকে। ইতিপূর্বে ১৫ আগস্ট সামরিক বাহিনীর মুষ্টিমেয় কয়েকজন অফিসার বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে ক্ষমতা করায়ত্ত করার মতো অসম্ভব কর্মটি সম্পাদন করেছে। ঘটে যাওয়া এসব নাটকীয় দৃশ্যপট হয়তো জাসদ নেতৃবৃন্দকে কিংকর্তব্যবিমূঢ় করে থাকবে। সৈনিকরা অভ্যুত্থান ঘটিয়ে ফেলার পর জাসদ নেতারা বুঝতে পারলেন যে, কি বিশাল কর্মযজ্ঞে তারা হাত দিয়েছিলেন এবং কি পাহাড় পরিমাণ তাদের গাফিলতি।