দলটি দু’টুকরা হলো গতকাল। অন্যরকম একটা ভালোবাসা ও স্বপ্ন নিয়ে আমরা সবাই এই দলটা শুরু করেছিলাম। “সর্বহারার একক দল”// “জীবনের সর্বক্ষেত্রকে ব্যাপ্ত করে মার্ক্সবাদের চর্চ্চা”// “কেন আমরা সঠিক এবং একমাত্র বাম দল” // এই শ্লোগানগুলো মনে পড়ে। সত্যিই কিন্ত আমাদের চিন্তাজগতে এই বক্তব্যগুলো ঝড় তুলেছিলো। এগুলোর দারুন একটা দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব আমাদের ব্যক্তিগত জীবনেও পড়েছিলো। এখনো তার অনেক প্রভাব প্রবল ভাবেই আছে। একসময় বিপ্লবী জীবন বেছে নেয়ার চেষ্টাও করেছিলাম। যদিও পারিনি, কিন্ত যারা ধরে রেখেছিলো তাদেরকে মন থেকে উৎসাহ দিয়েছিলাম। যারা দল করতো সর্বক্ষন, তাদের সততা-নিষ্টার প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা-ভালোবাসা-আশা ছিল প্রশ্নাতীত।
দল করার সময় শেষের দিকে এসে (৯৬-৯৭ সালে) মাঝে মাঝেই ক্ষোভ প্রকাশ করতাম। সে সময় হায়দার ভাইকে বলেছিলাম, দেখেন হায়দার ভাই, গত ৯ বছর ধরে পত্রিকা বিক্রি করছি। কিন্ত এখন ভ্যানগার্ড বিক্রি করতে ভাল্লাগে না। তিনি জিজ্ঞেস করেছিলেন কেন? বলেছিলাম, অনেক শিক্ষিত-রাজনীতি সচেতন মানুষও পত্রিকা নিয়ে প্রশ্ন করেন। তারা বলেন যে, তোমরা কি বলতে চাও তা সহজ করে বল। বক্তব্যটা আরেকটু সাবলীল কর। তোমরা দেশের পরিস্থিতি বিশ্লেষন করতে গিয়ে, রাশিয়া-চীন কিংবা এস ইউ সি আই এর রেফারেন্স দিয়ে যে কথাগুলো বলো, তা জটিল মনে হয়। মানুষকে তোমরা কানেক্ট করতে পারছো না। এটা খুব জরুরী। হায়দার ভাই শুনেছেন মনযোগ দিয়ে। তবে একটু চিন্তা করে বলেছিলেন, তুমি তাদেরকে বলবে, সমাজ বিপ্লবের পথ সহজ নয়। আমাদের বক্তব্যগুলোতে আমরা একটা সমাজের বিশ্লেষন করছি একটা এগিয়ে থাকা রাজনৈতিক তত্ত্বের আলোকে আমাদের এই পত্রিকা। এই পত্রিকা পড়তে গেলে কিছুটা কষ্টতো সবার হবেই। উনার কথাটা একেবারে উড়িয়ে দেই নি। কিন্ত মন খারাপ করেছিলাম এই কারনে যে, উনি আমার মত মাঠ পর্যায়ের একজন কর্মীর এই ফিডব্যাকটা সেভাবে গুরুত্ব দিয়ে সেদিন ভাবেন নাই।
‘৯৭ সালে আমরা ইউনিভার্সিটির অনার্স ফাইনাল ইয়ারে। পরের বছর সক্রিয় কর্মি থেকে সমর্থকে পরিনত হলাম। ২০০০ সালের শুরুর দিকে হাইকোর্টে আইন পেশা শুরু করলাম। মনে আছে, আমাদের পত্রিকার টিম হাইকোর্টেও যেত। একদিন একটা চেম্বারে দেখলাম, আমাদের কর্মিদের শুনছেন, আমাদেরই একজন সিনিয়র আইনজীবী। বিষয়বস্ত ছিল কাকতালীয়ভাবে সেটাই। পত্রিকার বক্তব্য। ভাষা। সহজবোধ্যতা ইত্যাদি। একযুগ পরেও ভাষার/বিষয়বস্ত উপস্থাপনের ক্ষেত্রে এতটুকু পরিবর্তন কি হয়নি? হয়েছে হয়তো, কিন্ত সিনিয়র আইনজীবি বোধ করি ধরতে পারেননি!!
সময় সময় প্রশ্ন করেছি। প্রকাশ্যে লিখেছিও অল্প বিস্তর। দলের বক্তব্যগুলোও পড়েছি, নানা সময়ের সংকট মূহুর্তে। দলের কিছু নেতা কর্মী অংশগ্রহনও করেছেন। কেউ দলের পক্ষে সিরিয়াস অবস্থান নিয়েছেন বুঝে না বুঝেই। নিজের গোঁয়ার্তুমির কারনে কি বলতে চাইছি, সেটা ঠিক মতো পড়ে দেখারও ধৈর্য দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন। আজ দল ভাগ হয়েছে।
এখন কোথায় যাব আমরা! আমাদের রাজনৈতিক পরিচয় কি? আমাদের সামনের পথ কি জানা আছে?
Have your say
You must be logged in to post a comment.
১০ comments
রায়হান রশিদ - ৯ এপ্রিল ২০১৩ (৮:৫৮ পূর্বাহ্ণ)
স্বপ্নের মৃত্যু? নাকি স্বপ্নের বদল? নাকি নতুন স্বপ্নের সূচনা? যাকগে, ওয়াকিবহালদের আলোচনায় নিশ্চয়ই অনেক বিষয় জানতে পারবো আমরা। তবে আশা করবো এখন দু’টি পৃথক অংশেরই অত্যন্ত সক্রিয় ভূমিকা থাকবে রাজপথে, বিশেষ করে সেক্যুলারিজম এবং যুদ্ধাপরাধ বিচারের আন্দোলন ইস্যুতে।
যাযাবর - ৯ এপ্রিল ২০১৩ (১২:৩১ অপরাহ্ণ)
আমাদের দেশের সমাজতান্ত্রিক কিংবা বামপন্থী দলগুলো কখনো সাধারণ মানুষগুলোর কাছে পৌছাইতে পারেনা, হতে পারে তাদের উপস্থাপিত বিষয়গুলো সাধারণের জন্য দুর্বোধ্য। উনারা যদি সমাজ বিপ্লবই করতে চান, তবে এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে বাদ দিয়ে কিভাবে তা সম্ভব !!! উনারা যদি সত্যি সমাজ বিপ্লব ঘটাতে চান তবে,সাধারণের কাছে পৌছানোর কোন বিকল্প নেই।
মাসুদ করিম - ৯ এপ্রিল ২০১৩ (৩:৩১ অপরাহ্ণ)
এদল ভাঙ্গলেও কী না ভাঙ্গলেও কী। ৫০।৫০ ৬০।৪০ ৭০।৩০ যেঅনুপাতেই ভাঙ্গুক তাতে মোর্চায় একটা নতুন দল ছাড়া আর কিছুই হবে না, ও হ্যাঁ, কয়েকজন নতুন নেতা বাড়বে, এই তো। আর একবারেই ভিন্ন কিছু হলে ওই কয়েকজনের বড় কোনো দলে ঠাঁই মিলতে পারে, এই যা।
মুজাহিদ ইসলাম সেলিম যেরকম শুরু করেছেন — সাধারণ সম্পাদক যখন ছিলেন, এখন যখন সভাপতি, একাই দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন, তার দলের নতুন সাধারণ সম্পাদকটাকে ঠিক কয়জনের চোখে পড়েছে? ওই সিপিবিও ভাঙ্গবে — লাভালাভ ওই একই, মোর্চায় আরো একটা নতুন দল, কিছু নতুন নেতা ও কেউ কেউ বড় কোনো দলের উঠোনে।
MAMUN - ১০ এপ্রিল ২০১৩ (২:৫৭ অপরাহ্ণ)
জামাত-হেফাজতের ঐক্য দেখে হাহুতাশ করুন সবাই। সবাই গুরু গম্ভীরভাবে বলুন-জাতি সঠিক পথেই চলছে এবং চলবে, জনতার বিজয় হবেই।
জয় - ১১ এপ্রিল ২০১৩ (১২:৩৫ পূর্বাহ্ণ)
আমরা এখন কি করব ?
মাসুদ করিম - ১২ এপ্রিল ২০১৩ (১১:৫৬ অপরাহ্ণ)
পড়ে তো মনে হচ্ছে নতুন দলটি আগেরটির চেয়ে বেশি কট্টর কমিউনবাদী হবে। সৈকত আচার্য মনে হয় এই মুবিনুল হায়দার চৌধুরীকেই তার লেখায় হায়দার ভাই বলে সম্বোধন করেছেন। জানি না, সৈকত আচার্য ভাল বলতে পারবেন, কিন্তু যতটুকু পড়লাম তাতে তো আমার মুবিনুল হায়দার চৌধুরীকে ‘পিউরিটান’ মনে হচ্ছে। অতিমাত্রায় গড্ডল সুকঠোর আদর্শ চর্চা বড় করুণ পরিণতি ডেকে আনে। অবশ্য আমরা ভবিষ্যতের দিকেই তাকিয়ে দেখব, এখন যা বলছি তা ভাবনার ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্যের জায়গা থেকে বলছি, ভবিষ্যৎ আমাদেরকে আরো ভালভাবে মুবিনুল হায়দার চৌধুরীকে চিনিয়ে দেবে।
লিন্ক : বাসদে ফের ভাঙন।
মোহাম্মদ মুনিম - ১৪ এপ্রিল ২০১৩ (১:৫৫ পূর্বাহ্ণ)
হায়দার ভাইয়ের ৪০ পয়েন্টের জবাবে বাসদ যা বলছে।
অবিশ্রুত - ১৮ এপ্রিল ২০১৩ (২:০৫ পূর্বাহ্ণ)
সবচেয়ে ভালো হতো, যদি এখানে বাসদ বা তার সহযোগী সংগঠনগুলোর সক্রিয় কর্মী-নেতারাই যদি অংশগ্রহণ করতেন। তা হলে অন্তত ছিটকে পড়া নেতাকর্মীদের সঙ্গে রাজনীতির মাঠে সক্রিয় থাকা ব্যক্তিদের অভিজ্ঞতাজনিত দূরত্বগুলি ধরা যেত।
তবে মোহাম্মদ মুনিমের দেয়া লিংক থেকে অন্তত ভাঙনের খানিকটা আঁচ করা যাচ্ছে। এসব থেকে কয়েকটি কথা বোধকরি বলা যায়, শিবদাস ঘোষ সাম্যবাদ কিংবা সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের আন্তর্জাতিক কর্তৃত্ব নন খালেকুজ্জামান ও অন্যান্য নেতারা যদি এই কথাটি ১৯৮২ সালেই ধরতে পারতেন, তা হলে হয়তো দলটিতে বড় ধরণের কোনও ভাঙন আসত না এবং হয়তো আ ফ ম মাহবুবুল হককে স্মৃতিভ্রষ্ট হয়ে এখন বিদেশের মাটিতে নির্জীব হয়ে পড়ে থাকতে হতো না।
বিতর্কের আরেকটি দিক দেখতে পাচ্ছি, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গ। তো এই ব্যাপারে আমরা যারা বিচার চাই, দেখা যাচ্ছে তাদের সঙ্গে খালেকুজ্জামানদের আদর্শগত মিল রয়েছে। অর্থনৈতিক আন্দোলন নয়, শ্রমিক শ্রেণির আন্দোলন নয় এই বিবেচনায় মোবিনুল হায়দাররা বোধকরি একে পাশ কাটিয়ে যাচ্ছেন। দুঃখ হয় এ কথা ভেবে যে, শুধু মোবিনুল সাহেবরা কেন, সকল বামসংগঠনই তাদের সাংগঠনিক তৎপরতাকে কাজে লাগিয়ে আরো শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারতো এই গণদাবিকে নিয়ে আন্দোলনের মাঠে সক্রিয় থেকে। বাসদ-সিপিবি’র এক হরতাল থেকেই টের পাওয়া গেছে, এ দেশের মানুষের প্রত্যাশা এখনো নষ্ট হয়নি বামদের ওপর থেকে এবং জনগণ এ-ও মনে করে, সরকারের দোদুল্যমানতা দূর করার ক্ষেত্রে ও বিচারিক প্রক্রিয়াকে নির্বিঘ্ন নিরাপদ করতে বামরা একটি বড় ধরণের ভূমিকা রাখতে পারে। বামদের পক্ষে সম্ভব ছিল, এ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত করার মধ্যে দিয়ে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের নিজস্ব দাবিদাওয়াভিত্তিক আন্দোলনকেও এগিয়ে আনা। গণজাগরণ মঞ্চে যদি জুটমিল শ্রমিকরা, গার্মেন্টস শ্রমিকরা এসে সংহতি প্রকাশ করতেন, তা হলে শাহবাগের চেহারা অন্যরকম হতে পারত, গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠকরাও হয়তো আরও দায়বোধ অনুভব করতেন। সেখানে হয়তো তাদের নিজেদের দাবিগুলো উচ্চারিত করার সুযোগ ছিল না, কিন্তু নিজেদের সংঘবদ্ধ হিসেবে প্রদর্শন করে নিশ্চয়ই তারা নিজেদের দাবিকে অন্য কোনও মঞ্চ থেকে উচ্চারণের জন্যে প্রস্তুত করতে পারতেন।
মাসুদ করিম - ২৪ নভেম্বর ২০১৪ (৮:২৩ অপরাহ্ণ)
মাসুদ করিম - ২৪ নভেম্বর ২০১৪ (৮:৩৭ অপরাহ্ণ)