আজকে যে প্রক্রিয়ায় জামায়াতিদের ফেইসবুক ব্লগ নিষিদ্ধ করতে বলা হচ্ছে, কালকে তো সেই একই প্রক্রিয়ায় আমার ফেইসবুক ব্লগও সরকার নিষিদ্ধ করতে পারে। তাই আমি প্রথমেই জানান দিয়ে রাখি, নির্বাহী আদেশ, কিংবা মত প্রকাশের অধিকার নিষিদ্ধ করবার দাবি আমার নাই। তবে এই যে রুমী স্কোয়াড আওয়াজ তুলেছে, জামায়াত শিবিরকে নিয়ে আওয়ামী লীগকে আর রাজনীতি করতে দেবে না তারা, নিজেরাই তাদের বাপারে সিদ্ধান্ত নেবে — এটা ভীষণ আশাবাদী হবার মতো দিক। আমি এই স্পিরিটের প্রতি আমার নিরঙ্কুশ সমর্থন জানাচ্ছি। [...]

এবার কিন্তু ফেঁসে গেছে আওয়ামী লীগ। সত্যিই ফেঁসে গেছে। তাদের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার কিন্তু ধরেই নিয়েছিলো; তাদের ভাষ্য অনুযায়ী তরুণ প্রজন্মের সূর্যসন্তান যারা, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিদার যেসব ছেলেমেয়ে দেশব্যাপী শাহবাগ বানিয়ে তুলেছে, সেই তারা সবাই আওয়ামী লীগের স্বার্থের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নরম নরম কর্মসূচিই দিতে থাকবে। সরকারের সাথে সুর মিলিয়ে চলবে। সবমিলে এদের সবাইকে ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচার’জনিত নির্বাচনী ইস্যুর মধ্যে গিলে খাওয়া যাবে। মোটকথা, দেশব্যাপী গণজাগরণ মঞ্চের সব তরুণদের নিজেদের ভোটের রাজনীতির অঙ্গীভূত করবার স্বপ্ন দেখেছিলো আওয়ামী-নেতৃত্বাধীন জোট। ব্যাপারটা এমন; সরকার আন্তজাতিক চাপ-ঠাপ দেখবে, দেশের মধ্যেকার রাজনৈতিক অবস্থা দেখবে, ভোটের রাজনীতির পক্ষ-বিপক্ষ দেখবে আর সেই মাফিক সিদ্ধান্ত নেবে; ওদিকে শাহবাগ-সহ দেশব্যপী যারা জড়ো হয়েছে, তারা সরকারের সাথেই তাল মিলিয়ে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী পারপাজ সার্ভ করবে। এমনটাই চেয়েছিলো তো সরকার। কে না জানে, যুদ্ধাপরাধীরা সরকারের এখনকার নির্বাচনী অঙ্গীকার পূরণের একমাত্র রাজনৈতিক হাতিয়ার, যুদ্ধাপরাধীদের কাঙ্ক্ষিত বিচারটা এইখানে আওয়ামী লীগের কাছে ভোটের রাজনীতির থেকে বেশি কিছু নয়। কিন্তু রাজনীতির বাইরে থাকা হাজারো তরুণতো যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কিংবা জামায়াত নিষিদ্ধকরণের দাবিকে নিছক ভোট উৎরাবার হাতিয়ার হিসেবে দেখে না। এটা সত্যিইতো তাদের প্রাণের দাবি। সে-কারণেই আবির্ভাব রুমী স্কোয়াডের আমরণ অনশনের। সে-কারণেই আমার ফেইসবুক বন্ধু স্টেটাস লেখেন: নির্বাচনের আগে `যুদ্ধাপরাধ‘ নামে একটি সেনসেশনাল প্রোডাক্ট বাজারে ছেড়েছে মুক্তিযুদ্ধ ব্যবসায়ী আওয়ামী লীগ, তবে রুমী স্কোয়াডের জন্য সুবিধা করতে পারছে না। জয় শাহবাগ, জয় বাংলা!-- সাঈফ ইবনে রফিক একটা বিভেদ তবে শুরু হয়েছে এবার সত্যিই। শুরু হয়েছে এমন না। প্রকট হয়েছে। দৃশ্যমান হয়েছে। এই বিভেদ আগে থেকেই ছিলো। সেটা হলো, যুদ্ধাপরাধের বিচার ও জামায়াতি রাজনীতি নিষিদ্ধের প্রাণের দাবির সাথে যুদ্ধাপরাধ ইস্যুতে রাজনীতির বিভেদ। এই বিভেদই দৃশ্যমান হয়ে রুমি স্কোয়াডের আমরণ অনশনের নামে হাজির হয়েছে দৃশ্যপটে। রুমী স্কোয়াডের সোজা কথা, ভোটের রাজনীতিতে জামায়াত-নিষিদ্ধের হিসেব-নিকেশ করার সুযোগ তারা দেবে না সরকারকে, জামায়াতকে নির্বাহী আদেশে নিষিদ্ধ করতে হবে এটাই তাদের দাবি। নইলে তারা অনশন করেই মরে যাবে! এখানে রাজনীতির নামগন্ধও নেই। এখানে ভোট জেতা-হারার হিসেব-নিকেশও নেই। এখানে আছে পরিচ্ছন্ন আবেগ। মানবতাবিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে আপাত-মানবিক এক আবেগ। এই আবেগের তাৎপর্য যাই হোক না কেন, এই আবেগের গুরুত্ব বিশাল। এই আবেগ সোজা কথায় ঘোষণা করেছে, সরকারকে আর…

বিরহকে যতোদিন নৈকট্যের বাসনা আকারে ধারণ করা যায় ততোদিনই তা সুন্দর। ততোদিনই তা অর্থবহ। তবে বিরহ প্রেমহীনও হতে পারে। হতে পারে অনাকাঙ্ক্ষিত আর অনাহূত। যাপনের বাসনাহীন, কামনার তীব্রতাহীন, আকাঙ্ক্ষাহীন-বিশ্বাসহীন, স্বপ্নের প্রেরণাহীন সেই বিরহ ভর করে যখন, তখন এমনকী হারিয়ে যায় কষ্টবোধও! [...]

…… বিরহকে যতোদিন নৈকট্যের বাসনা আকারে ধারণ করা যায় ততোদিনই তা সুন্দর। ততোদিনই তা অর্থবহ। তবে বিরহ প্রেমহীনও হতে পারে। হতে পারে অনাকাঙ্ক্ষিত আর অনাহূত। যাপনের বাসনাহীন, কামনার তীব্রতাহীন, আকাঙ্ক্ষাহীন-বিশ্বাসহীন, স্বপ্নের প্রেরণাহীন সেই বিরহ ভর করে যখন, তখন এমনকী হারিয়ে যায় কষ্টবোধও! …… বিরহ মানেই অনাত্মীয়তা নয়; তবে বিরহ অনাত্মীয়ও হতে পারে। অন্তর্যাত দৃশ্যকল্পে; স্মৃতিহীনতার একপ্রস্থ স্থায়ী সাদা রঙ-তুলিতে বিরহীর মুছে দিতে সাধ জাগতে পারে ক্যানভাসের বিগত দৃশ্যকল্প! …… যাকে ভুল বলে চিনে নিতে পারলেই স্বস্তি হয়, যাকে অনাকাঙ্ক্ষিত আর অপরিণত কাল বলে ভাবতে আরাম হয়, যাকে স্মৃতিহীনতার অতলে তলিয়ে দিতে সচেতন প্রচেষ্টা জারি থাকে সারাক্ষণ; সেই বিরহী বাস্তবতার সাথে বাসনার যোগ না থাকলেও কী যেন একটা থেকে যায়, এড়ানো যায় না তাকে! …… একেই কি বলে চিরায়ত-শাশ্বত-সহজাত প্রেমবোধ? নইলে কেন সব ছেড়ে, সব ফেলে, সেই অনাহূতের ডাকে সাড়া দেয়া? জগত ফেলে, জীবন আর জীবিকা ফেলে, প্রতিশোধের রাজনীতি ফেলে, প্রতিশোধী সমাজ-দেহে বেড়ে ওঠা তারুণ্যের আপাত-মানবিক প্রতিশোধস্পৃহা ফেলে, প্রতিদিনকার রাজনৈতিক সহিংসতা আর নির্মিত সংখ্যালঘুত্বের বলি মানুষদের ফেলে, একদা বন্ধুর মাতৃমূর্তি মায়ের মৃত্যুসংবাদ ফেলে, প্রেম আর প্রেমিকার ভালোবাসার প্রতীক্ষা ফেলে কেন তবে সেই বিরহেরই দৃশ্যকল্প রচনা? …… শেষাবধি বিরহ তবে কি বিষয়-বিষয়ীর সম্পর্কহীনতার বাইরে এসে নৈর্ব্যক্তিক হতে পারে? …… হায় খোদা, শেষপর্যন্ত তবে কি বিরহ মাত্রেই প্রেমবোধ!

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.