……
বিরহকে যতোদিন নৈকট্যের বাসনা আকারে ধারণ করা যায় ততোদিনই তা সুন্দর। ততোদিনই তা অর্থবহ। তবে বিরহ প্রেমহীনও হতে পারে। হতে পারে অনাকাঙ্ক্ষিত আর অনাহূত। যাপনের বাসনাহীন, কামনার তীব্রতাহীন, আকাঙ্ক্ষাহীন-বিশ্বাসহীন, স্বপ্নের প্রেরণাহীন সেই বিরহ ভর করে যখন, তখন এমনকী হারিয়ে যায় কষ্টবোধও!
……
বিরহ মানেই অনাত্মীয়তা নয়; তবে বিরহ অনাত্মীয়ও হতে পারে। অন্তর্যাত দৃশ্যকল্পে; স্মৃতিহীনতার একপ্রস্থ স্থায়ী সাদা রঙ-তুলিতে বিরহীর মুছে দিতে সাধ জাগতে পারে ক্যানভাসের বিগত দৃশ্যকল্প!
……
যাকে ভুল বলে চিনে নিতে পারলেই স্বস্তি হয়, যাকে অনাকাঙ্ক্ষিত আর অপরিণত কাল বলে ভাবতে আরাম হয়, যাকে স্মৃতিহীনতার অতলে তলিয়ে দিতে সচেতন প্রচেষ্টা জারি থাকে সারাক্ষণ; সেই বিরহী বাস্তবতার সাথে বাসনার যোগ না থাকলেও কী যেন একটা থেকে যায়, এড়ানো যায় না তাকে!
……
একেই কি বলে চিরায়ত-শাশ্বত-সহজাত প্রেমবোধ? নইলে কেন সব ছেড়ে, সব ফেলে, সেই অনাহূতের ডাকে সাড়া দেয়া? জগত ফেলে, জীবন আর জীবিকা ফেলে, প্রতিশোধের রাজনীতি ফেলে, প্রতিশোধী সমাজ-দেহে বেড়ে ওঠা তারুণ্যের আপাত-মানবিক প্রতিশোধস্পৃহা ফেলে, প্রতিদিনকার রাজনৈতিক সহিংসতা আর নির্মিত সংখ্যালঘুত্বের বলি মানুষদের ফেলে, একদা বন্ধুর মাতৃমূর্তি মায়ের মৃত্যুসংবাদ ফেলে, প্রেম আর প্রেমিকার ভালোবাসার প্রতীক্ষা ফেলে কেন তবে সেই বিরহেরই দৃশ্যকল্প রচনা?
……
শেষাবধি বিরহ তবে কি বিষয়-বিষয়ীর সম্পর্কহীনতার বাইরে এসে নৈর্ব্যক্তিক হতে পারে?
……
হায় খোদা, শেষপর্যন্ত তবে কি বিরহ মাত্রেই প্রেমবোধ!