কবিতা নিয়ে, তা যে বা যার কবিতাই হোক না কেন, কিছু লিখা বেশ বিপজ্জনক। আমার সবসময় মনে হয়েছে কবিতার গঠন এবং প্রকৃতিতে এত বেশি সম্ভাবনা, প্রতি-সম্ভাবনা এবং বিমূর্ততা রয়ে যায় যে কবিতাকে সুনির্দিষ্টায়িত এলাকাভিত্তিক করার চেষ্টা পন্ডশ্রম ছাড়া আর কিছুই নয়। কিন্তু সময়ে সময়ে এ-বোধটুকু থাকা সত্ত্বেও কবিতার মানে বের করে ফেলার একটা চেষ্টা থেকেই যায়। . . .
===
(দীর্ঘ পোস্ট; এক্কেরে সিরিয়াসলি সাহিত্য-সমালোচনা ও দর্শনে আগ্রহ না থাকিলে ভাল লাগিবে না; থাকিলেও লাগিবে, তাহাও নয়। তবুও সতর্ক করা হইলো।)
… ব্যসকূটে গাপ হচ্ছে …
অদৃশ্য শীকরে স্মৃতিরেণুর পলিনেশন; হতজোড় অর্বাচীন শ্যাম্পু,
কদলীবৃক্ষের কিউপিড – – বাদুর। অতঃপর সিক্সটি ওয়াট্ বাল্বে
ব্ল্যাকঅউটই সার হইল। শীত-বিম্বিত সিলিকা পিন্ডের বারো ইঞ্চি
ধড়ে তেরো কোটি মাংস শুধু মেঘের। (যা-ও একখান্ চেহারা!)
টিয়া টিয়া শ্যাওলায়, দৃষ্টি রবার্ট ব্রুসের জালিকা-গুরু : ঠাওরে
অস্তিত্বের কবর বাড়ি।
(এরশাদ আলমগীর)
কবিতা নিয়ে, তা যে বা যার কবিতাই হোক না কেন, কিছু লিখা বেশ বিপজ্জনক। আমার সবসময় মনে হয়েছে কবিতার গঠন এবং প্রকৃতিতে এত বেশি সম্ভাবনা, প্রতি-সম্ভাবনা(১) এবং বিমূর্ততা(২) রয়ে যায় যে কবিতাকে সুনির্দিষ্টায়িত এলাকাভিত্তিক করার চেষ্টা পন্ডশ্রম ছাড়া আর কিছুই নয়। কিন্তু সময়ে সময়ে এ-বোধটুকু থাকা সত্ত্বেও কবিতার মানে(৩) বের করে ফেলার একটা চেষ্টা থেকেই যায়। মানুষের জ্ঞানকাঠামো সবসময় ব্যাখ্যার দিকে আগ্রহী বলেই হয়তো আমরা ক্রমাগতঃ ‘মানে’-শুদ্ধু চিন্তা করে যাচ্ছি এবং এর আওতায় আনতে চাচ্ছি যা ‘মানে’-র মধ্যে পড়ে না, বা আমাদের ব্যাখ্যাবৃত্তিক ও সিদ্ধান্তমূলক চিন্তাকাঠামো যাকে এখনো স্পর্শ করেনি, তা এবং তাকেও। সুতরাং, পাঠ-পঠন ছাড়াও যেকোনোভাবেই আমরা সিদ্ধান্তমূলক। অর্থাত, কবিতা পড়ে আমি কোনো স্থির সিদ্ধান্তে পৌঁছুবো না বলেও আমরা আসলে অবচেতন বা চেতন অবস্থায় কোনো না কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছি এবং এই পুরো ব্যাপার বা প্রক্রিয়ার সম্বন্ধে অসতর্ক থেকে যাই। এখানে, সিদ্ধান্তমূলকতার ব্যাপারে আমার মন্তব্য গা-জোয়ারি মনে হয়ে থাকলে এই বিষয়ে আমার একটি লেখা পড়ে দেখবার অনুরোধ রইল(৪)। তবে সার-কথা এখানেই বলা হয়ে গেছে।
সমস্যা হচ্ছে – কিছু কবিতা এমন হয়, যা প্রথমে পাঠককে নিরুতসাহিত করে তোলে ভাষার কারণে; অর্থাত, এমনতরো কবিতাসমূহে পাঠক প্রাথমিক বাধা যেখানটায় পান – সেটা হলো ভাষা। অপ্রচলিত শব্দের প্রচলিতকরণ, দুর্বোধ্যতার পরপর দেয়াল, এবং পাঠকের শেষাবধি কোথাও পৌঁছুতে পারার পূর্ব-ইচ্ছা এবং ব্যর্থতা এই সমস্ত কবিতায় পাঠককে বিমূঢ়, হতাশ ও কবিতাটিকে শিল্পের ‘বিমূর্ত’ বা ‘অর্থহীন’ বা ‘উদ্ভট’ শাখায় পতিত করে প্রত্যাখ্যান করতে উতসাহিত করে তোলে। এক্ষেত্রে আমাদের ব্যাখ্যাবৃত্তিক জ্ঞানকাঠামো শুরুতে বিপুল জটিলতার মুখোমুখি হলেও বিচলিত হয়না, বরঞ্চ এদের জন্যে, যদিও এরা প্রকরণ ও প্রকৃতিতে ভিন্ন হতে পারে, নতুন নতুন শাখার উদ্ভব ঘটায়, এবং এই নামকরণের ও বিভক্তিকরণের ক্ষেত্রে ব্যাখ্যাবৃত্তিক মাত্রা থেকে কবিতাটি ঠিক যেমনটি দেখা গেছে, সেই চেহারাটিই তুলে ধরে। নামকরণের ও বিভক্তি-উপবিভক্তিকরণের এই ইতিহাস সুপ্রাচীন কালের এবং এখনো তীব্রভাবে প্রসারিত হচ্ছে – যে কারণে সুনির্দিষ্টিকীকরণ ও নির্দিষ্ট বিষয়ভিত্তিক দক্ষতা অর্জন বর্তমান আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে এত গুরুত্বপূর্ণ এবং আমাদের ব্যখ্যাবৃত্তিক জ্ঞানকাঠামো এই গুরুত্ব নির্মাণে সর্বাধিক ভূমিকা পালন করে। শরীরবৃত্ত, প্রাক-রাষ্ট্রিক কাঠামো, সম্পদক্ষত্রে মানুষের মনোজাগতিক গঠনও এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। যাই হোক, এইসব কবিতার ক্ষেত্রে বা এ-ধরণের শিল্পের ক্ষেত্রে(৫) হয় ভাষা নয় শব্দ-বিন্যাস বা বাক্যগঠনে থাকে সম্পূর্ণ নতুন বা ভিন্নতর রূপকাঠামো যা আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক এবং ক্ষেত্রবিশেষে অপ্রাতিষ্ঠানিক বুদ্ধিবৃত্তিকে সংশয়াচ্ছন্ন ও চিন্তিত করে তোলে; এমনকি দৃষ্টির একটি নবতর মাত্রা সৃষ্টির চেষ্টাও থাকে সময়ে সময়ে; ভাষাসৃষ্ট এই প্রাচীরের কারণে কবিতার বিষয়বস্তু বা উদ্দেশ্য বা বিষয়বস্তু-উদ্দেশ্যহীনতা পাঠকের লক্ষ্যের মধ্যে থাকে না; এখন এইসব কারসাজি বা চেষ্টার সাফল্য বা অসাফল্য বিচারের মানদন্ড কি বা কি হওয়া উচিত, সেটা তর্কের বিষয়, কিন্তু যেটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা হলো সংজ্ঞায়ীতকরণ ব্যতীত বা নির্দিষ্টিকীকরণ ছাড়া আমরা কোনো কিছু বোঝার চেষ্টাও করতে পারি না যেটা কাঠামোবাদীদের ভাষায় একটু ভিন্নতর মাত্রায় হলেও কেন্দ্র হিশেবে কাজ করে এবং এর ফলে যেকোনো কবিতা ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে পূর্বজ্ঞানের পরিকাঠামো আমরা কখনোই অস্বীকার করতে পারিনা; এই দীর্ঘ কথনের কারণ এরশাদ আলমগীরের ‘…ব্যসকূটে গাপ হচ্ছে…’ কবিতাটিকে কোনো দলে ফেলার ইচ্ছে যদি না-ও থাকে, তবুও কাঠামোকে অস্বীকার সম্ভব হবে না। এবং দলভুক্তি হবেই।
উপরোক্ত কবিতাটিকে প্রথমে আমরা সাধারণভাবে শব্দ থেকে বাক্যে আর্থ-রূপ দেয়ার চেষ্টা করব। সাধারণ পঠনে এটি কী দাঁড়ায় সেটিই আমাদের প্রাথমিক বিবেচ্য বিষয় হবে:
সেমিকোলনে শেষ হওয়া প্রথম চারটি শব্দের একত্রিত অর্থ – অদৃশ্য বাতাসের জলকণায় স্মৃতির পরাগের বা কণা বা ধূলির পরাগায়ন ঘটছে; এখানে ‘স্মৃতিরেণু’ শব্দটি দুটি বা তিনটি অর্থ বোঝাতে পারে – স্মৃতির রেণু বা পরাগ বা ধূলি অথবা স্মৃতির মতো রেণু বা পরাগ বা ধূলি; এক্ষেত্রে রেণু শব্দের অর্থ পরাগ হিশেবে সবচেয়ে ভাল যায়; পরাগায়ন এরপরেই বলে বলছি। কিন্তু ধূলি যে এখানে অপ্রযোজ্য তা-ও নিশ্চিত করে বলা যায়না। অর্থাৎ, অদৃশ্য বাতাসের জলকণায় স্মৃতির পরাগের পরাগায়ন ঘটছে; যদ্দূর মনে হয় -স্মৃতির সংযোগসূত্রিতা কিরকম তা আমাদের কাছে অজানা – এই ব্যাপারটিই বোঝানো হচ্ছে। সেমিকোলনের পর বাকি অংশটি দাড়ি দিয়ে শেষ হয়েছে; এর অর্থ দাঁড়ায় এরকম – হতজোড় কোনো অর্বাচীন শ্যাম্পু, অর্বাচীন এখানে নতুন বা আধুনিকের চেয়ে অব্যবহৃত অর্থেই বেশি ব্যবহৃত হয়েছে বলে মনে হয়, এবং কলাগাছের পাখাবিশিষ্ট প্রেমের প্রতীক বাদুর; কিউপিড সাধারণত রোমান পুরাণের শব্দ- পলিবিয়াস-এর রোমান পুরাণে এর উল্লেখ আছে- যা প্রেমের প্রতীক হিশেবেই ব্যবহৃত হয়। কিউপিডের পর দুটি ড্যাশ-এর আলাদা কোনো মানে কি আছে? যা মনে হয় – নেই। এরপরের বাক্যটির একটিই অর্থ দাঁড়ায় আপাততঃ – সিক্সটি ওয়াটের কোনো বাল্ব নিষ্প্রদীপ হয়ে গেল; রূপকার্থে এই বাক্যটি কোনো কিছু বোঝানোর সম্ভাবনা কম, যদিও ব্ল্যাকআউট শব্দটির বিভিন্ন অর্থ নিয়ে বাক্যটির বিভিন্ন অর্থ করা যায়, কিন্তু বাকিগুলো বাক্য হিশেবে অপ্রাসঙ্গিক। এটি একটি পূর্ণবাক্য। এরপরের বাক্যটি বেশ জটিল।’শীত-বিম্বিত’ বলতে এখানে ঠিক কি বোঝানো হয়েছে – তা স্পষ্ট নয়। ‘শীত’ শব্দটির মানে কাল হিশেবে পৌষ ও মাঘ-কে বোঝায; এছাড়াও পানি, কর্পূর হিশেবেও এর ব্যবহার আছে। ‘শীত-বিম্বিত সিলিকা পিন্ডের বারো ইঞ্চি ধড়ে তেরো কোটি মাংস শুধু মেঘের’ হয়তো শীতকালে সিলিকার তৈরি কাঁচের কোনো খন্ডে মেঘের ছায়া পড়েছে, তা-ই ইঙ্গিত করছে, যদিও তেরো কোটি মাংস যা কিনা মেঘের তা পরিমাণবচক বিশেষ্যের ক্ষেত্র হিশেবে অপ্রযোজ্য। কবিতার খাতিরে এইসমস্ত অপ্রচলন মেনে নেয়া যায়, কিন্তু সমস্যা হচ্ছে ‘বারো ইঞ্চি’ বা ‘তেরো কোটি’ সংখ্যাগুলো। বারো ইঞ্চি হচ্ছে স্কেলের হিশেব, যা একটি একক। আর তেরো কোটি কোনো সাংখ্যিক তাতপর্য বহন করে কি-না তা জানা নেই, যদিও তেরো কোটি সংখ্যাটি আমাদের কাছে বাংলাদেশের একসময়কার জনসংখ্যা হিশেবে বেশ সুপরিচিত। এরপরেই ব্র্যাকেট বন্দী বিস্ময়বোধক চিহ্ন নিয়ে শেষ হওয়া একটি বাক্য – (যা-ও একখান্ চেহারা!) এর পূর্ববর্তী বাক্যকে নাকি এর পরবর্তী বাক্যকে ব্র্যাকেট-বন্দী বাক্য-বিশেষণ হয়ে বিশেষায়িত করছে, বোঝা যায়না। এর আগের লাইনের সাথে এটি বেশি যায়। অথবা এটি আলাদা, সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র অবস্থান নিয়েও থাকতে পারে। পরবর্তী বাক্যটি, মাঝখানে একটি কোলন নিয়ে যা শেষ হয়েছে, সত্যিকার অর্থে কোনো বাক্যই নয়। ‘টিয়া টিয়া শ্যাওলায়’ এবং এর পরে একটি কমা, কমার সাথে সঙ্গতিহীন ‘দৃষ্টি রবার্ট ব্রসের জালিকা-গুরু’ ও এরপর কোলন দিয়ে বাক্যসমাপ্তি – এই বাক্যটির অর্থ-সংগঠনই ভুল বা অর্থহীন। কমার পূর্ববর্তী অংশের তেমন করে কোনো অর্থই হয়না, কিন্তু পরবর্তী অংশ বা বাকিটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয়। জালিকা শব্দটির উদ্ভব জালিক থেকে, এর বিভিন্ন অর্থ থাকলেও রবার্ট ব্রুসের উল্লেখ এক্ষেত্রে মাকড়শা ছাড়া আর কিছুই বোঝায় না; যদিও ভিন্ন অর্থসমূহ আলোচনা আরও চিত্তাকর্ষক করে তুলত বলে ধারণা। এই লাইনের আক্ষরিক অর্থ করলে যা দাঁড়ায় তা হচ্ছে – কোনো একটি মাকড়শাকে দেখা যাচ্ছে যা ‘অস্তিত্বের কবর বাড়ি’ ঠাওরে বেড়াচ্ছে, বা বলা যায় মাকড়শাটি এর ‘অস্তিত্বের কবর বাড়ি’ বা মৃত্যুকে খুঁজে বেড়াচ্ছে।
পুরো কবিতাটি পড়ে যে কেউ বিমূঢ় বোধ করতে পারেন এবং এতে তাকে দোষ দেয়া যায়না।
সিম্বলিস্ট মুভমেন্টের পরের দিকের কবিতার মূলতঃ সমস্যা(!!!) হলো কবিতার সাথে পাঠকের বিযুক্তিকরণের প্রক্রিয়া তখন থেকেই শুরু। ইন্ডাস্ট্রিয়াল সোসাইটির ত্রমশঃ অস্তিত্ববাদী হয়ে ওঠা ব্যক্তি তার অভিজ্ঞতার যে ডিমেনশন অ্যবসার্ড-এর মধ্যে দিয়ে নিয়ে এসেছে সেটার কারণে এবং বর্তমানে চরম ডিস্ইন্টিগ্রেশানের কালে কবিতা হয়তো তার আপাত নৈর্বত্যিক অবস্থান(৬) আর ফিরে পাবেনা (৭); যা অনেকাংশেই শিল্পের (চিত্রশিল্প ব্যতীত) অন্যান্য স্তরে এখনো সম্ভবপর এবং বিদ্যমান।
সম্পর্কহীনতার উপাখ্যানই তাই আজ কাব্যালচোনার মুখ্য বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।
*********************************************************
পরবর্তী আলোচনায় আমি চারটি বিশ্লেষণে এই কবিতাটির পরপর ব্যবচ্ছেদ ঘটাতে চাই: উইলিয়াম জেমসের ‘স্ট্রীম অফ কনশাসনেস’-এর পারস্পেকটিভ থেকে, কাঠামোবাদী ও উত্তর-কাঠামোবাদী সাহিত্যপাঠ, হেনরি জেমসের ব্যবহৃত ‘ইন্টিরিয়র মনোলগ’ এবং জয়েসের ‘এপিফ্যানি’ থেকে। এই চারটির বাইরেও বেশ কিছু ক্রিটিসিজম টুল আছে যার মধ্যে অধুনান্তিকতা, সুররিয়ালিস্টিক ফ্রি-এসোশিয়েটিভ রাইটিং ও ফেনোমেনোলজি খুবই গুরুত্বপূর্ণ; তবে আমি অন্য কোনো আলোচনায় এইগুলা আনতে চাই এবং এও মনে করি যে লিটারেরী ক্রিটিসিজমের মেথডোলজিক্যাল টুল বেছে নেওয়ার অধিকার আলোচকের আছে।
পাদটীকাসমূহ:
১. একটু লক্ষ্য করলে বোঝা যাবে – কবিতায় এক একটি শব্দ কী বিপুল পরিমাণ সম্ভাবনাকে নস্যাৎ করে দিচ্ছে; একটি শব্দের পরে আরেকটি শব্দের অবস্থান এবং তার আকৃতিলাভ আসলে আরও প্রচুর কিন্তু সুনির্দিষ্ট সংখ্যক শব্দের অবস্থান এবং আকৃতিলাভ এবং ফলতঃ ভিন্ন ভিন্ন শরীরকাঠামো অসম্ভাবনার দিকে নিয়ে যায়; যে আপাত অসম্ভাব্যতাগুলো নিয়ে চিন্তা করা অত্যন্ত কৌতূহল উদ্দীপক।
২ কবিতার উৎস এত বেশি অজানা, এবং এর কোনো নির্দিষ্ট দৈহিক রূপ বের করা এত বেশি অসম্ভব যে বিমূর্ততার সাথে কবিতা প্রায় প্রতিশাব্দিক ভাবে যায়; একটু সহজ ভাবে বললে, ব্যাপারটা অনেকটা এরকম – মানুষ কেন কবিতা লিখে? কবিতার কোনো নির্দিষ্ট রূপ আছে কি? কোনটি কবিতা এবং কোনটি নয়, এর সীমারেখা আদৌ টানা যাবে? বা করলে সেটা কি সঙ্গত হবে? ইত্যাদি প্রশ্নগুলোর উত্তর দেয়াটা বেশ মুশকিলের কাজ বলে চিহ্নিত এখনো।
৩ ‘মানে’ শব্দটা অবশ্য বেশ গোলমেলে, এ-নিয়েই ভাষাতত্বে একটি শাখা খুলে গেছে।
৪ “শব্দ ও শাব্দিক রূপ : সীমাবদ্ধতা” – পুরাই একটা দার্শনিক প্রবন্ধ; ভাষা ও চিন্তনক্রিয়া কিভাবে আমাদের মধ্যেকার সীমাবদ্ধতার ধারণা তৈয়ার করে এবং সংখ্যার যে রূপ আমাদের ভাষাচিন্তায় বিদ্যমান, তার প্রভাব নিয়েই এই আলোচনা।
৫. এদের যেহেতু সুনির্দিষ্টভাবে ব্যাখ্যা করা যায়না, বা করলেও তাতে অসম্পূর্ণতা অনেক বেশি থাকে অনুমান-নির্ভরতার কারণে এবং বিমূর্ততার কোনো বিভাগও নেই যার ফলে ‘এ-ধরণের’ শব্দটি ব্যবহৃত হল।
৬. আপাত-নৈর্বক্তিক-অবস্থান এমন একটি অবস্থান যেখানে পাঠক বা অডিয়েন্স শিল্পীর রিপ্রেসেন্টেশনের ক্ষেত্রে একটি কালেকটিভ-সাবজেক্টিভ পারস্পেকটিভে পৌঁছেন, যা শিল্পের সাবস্টেন্স নিয়ে অন্ততঃ বিমূর্ততার আখ্যান শুরু করতো না; শিল্পীরও পাঠকের সাথে বিযুক্তিকরণের মধ্যে দিয়ে যেতে হতো না। লক্ষণীয়, ঊনিশ শতকের গোড়া থেকেই কিন্তু আসলে পূর্ববর্তী শতকের সাহিত্যের ভিন্ন ভিন্ন পাঠ ও ব্যাখ্যা শুরু।
৭. ব্রাউনিং, আর্নল্ডরা যা উপভোগ করে যেতে পেরেছিলেন, কিন্তু এজরা পাউন্ডরা যা স্বেচ্ছায় বিসর্জন দিয়েছিলেন।

কবি। বঙ্গভাষাহীন কবি যদিও। দর্শন, যুক্তিবিদ্যা ও চিরায়ত পদার্থবিদ্যায় দিনানিপাত করি। আর নিজেকে দেখে দেখে হাসি, হাসতে থাকি, মায়া লাগে, মায়ায় ভাসি।
