পদ্মার পলিদ্বীপ: দ্বীপদেশের মহাকাব্য

শাস্ত্র মতে উপন্যাস মহাকাব্যের বংশধর। মহাকাব্যকে বলা যায় সাহিত্যের মাতৃক্রোড়। একদা মহাকাব্য চারণ কবিগণ মুখে মুখে আওড়াতেন। রাজা ও প্রজা যাকে নিয়েই রচিত হোক, মহাকাব্যগুলোতে একটা ব্যাপার লক্ষ্যণীয়- মাত্রাঐক্য। একই আবহের মধ্যে দিয়ে যেন ঘটনাপ্রবাহ এগিয়ে যায়। কোথাও এতটুকু বেতাল হচ্ছে না। সন্দেহ নাই সুর কেটে গেলে সেটা মহাকাব্য হিসাবে অসফল।

ধারাবাহিকতা, কাহিনীর সমন্বিত বিস্তার, সময়োপযোগী ডিটেল ও ভাষার ব্যবহারই মূলত একই লয়ে তাকে ধরে রাখে। শালোকভের বয়ানে-উপন্যাসিকদের সঙ্গীত জ্ঞান জরুরী। সব সফল মহৎ উপন্যাস গুলোতে এই মহাকাব্যের গভীরতা বিদ্যমান। মহাত্মা বালজাক এই কারণে তার উপন্যাসমালার নাম রাখেন হিউম্যান কমেদিয়া। এই উপন্যাসমালার প্রতিটি উপন্যাস মিলে যেন একটা মহাকাব্য। ফরাসী সমাজের সব ধরনের চরিত্র তাতে বিদ্যমান। শালোকভের বৃহৎ উপন্যাস প্রশান্ত দনে শত চরিত্রের ঘনঘঠা বহু ঘটনার বিস্তার। বলা যায় প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ,দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, রুশীয় গৃহযুদ্ধ থেকে অক্টোবর বিপ্লব পর্যন্ত, কিন্তু পুরা উপন্যাসের পরতে পরতে যেন একই ধারার সঙ্গীত বেজে চলেছে। কখনোই কেন্দ্রচ্যুত হয়ে ছিটকে পড়তে হয়না পাঠককে।
তলস্তয়ের মহাকাব্যিক উপন্যাসসমূহ আনা কারেনিনা, পুনরুজ্জীবন। দস্তয়েভস্কির কারামাজভ ভাইয়েরা, অপরাধ ও শাস্তি অথবা স্তাদালের লাল ও কালো। মহাকাব্যর একটা পর্যায় ছিল যখন তা লিখিত হতো  দেব দেবীদের নিয়ে। নিদেন পক্ষে রাজা বাদশা আমির ওমরাহদের নিয়ে।
কেননা রাজাবাদাশাহরাই ছিলেন তৎকালে কবিদের  পৃষ্টপোষক।
কিন্তু ইতোমধ্যে মানুষ যুদ্ধে, ভূমিকম্প,অগ্ন্যুৎপাত, রোগে, মহামারীতে নিজের অভিজ্ঞতাতো সম্মৃদ্ধ করলোই তদোপরি নিজের সীমাটাকে সে নির্ধারণ করতে পারলো। চিহ্নিত করতে পারলো তার অসহায়ত্বকে। এমনকি তলস্তয়ের চরিত্র সমূহ নেখলেয়ুদভ অথবা কনস্তানতিন লেভিন, ব্রনস্কি, কারেনিন অথবা পিটার, সুফিয়া প্রায় সব চরিত্র ধনতন্ত্রের প্রতিনিধি বইতো নয়! প্রলেতারিয়েত চেতনা থাকা সত্বেও লেভিনও তাই। যাইহোক আধুনিক কালের উপন্যাসই মহাকাব্যের বংশধর হিসাবে উত্তম। বিশ্বসাহিত্যে সম্ভবত দস্তয়েভস্কিই সেই মহৎ উপন্যাসিক যার শুরু থেকেই চরিত্ররা একেবারে সাধারণ মানুষ।
দস্তয়েভস্কি গোগল সম্পর্কে বলেছিলেন গোগলের ওভারকোট এর পকেট থেকে আধুনিক রুশ সাহিত্যের জন্ম। দস্তয়েভস্তি সম্পর্কেও বলা যায় যে আধুনিক উপন্যাসেরও জন্ম তার রাসকলনিকভে। তার চরিত্র সমূহে। কার্যত দস্তয়েভস্কি ও বালজাকের পর উপন্যাস আর আগের মত থাকে নাই। ব্রাত্য অন্তর্মুখী অভাজনেরাই আধুনিক মহাকাব্য তথা উপন্যাসে প্রধান চরিত্র হয়ে আসতে লাগল। এবং উপন্যাসে সাধারণ মানুষের স্থান বলা যায় চিরস্থায়ী হয়ে গেল। যদিও এই সাধারনত্বের গোত্রভিত্তিক রূপ দিতে গিয়ে প্রকৃতিবাদি এমিল জোলা, কুপ্রিন, মপাসা প্রমুখ উপন্যাসকে প্রায় পর্ণের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিলেন।
মহৎ উপন্যাসিক সময় উপত্যাকার চারিদিকে আধ্যাত্বিক পরিভ্রমণরত। সমস্ত বিষয়টিকে, যে বিষয় নিয়ে সে কাজ করে, মানসচক্ষে দেখতে পায় বলে একটা মাত্র কাহিনীতে তাকে ধরে রাখতে পারে।

আবু ইসহাকের পদ্মার পলিদ্বীপ বইটির আলোচনা করতে গিয়ে উর্ধ্বাংশর ভুমিকাটুকুর অবতারণা করতে হল কেননা এই বইটি মহাকাব্যের লক্ষনাক্রান্ত। বইটি পড়তে পড়তে শালোকভের  প্রশান্ত দনের কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল বারবার। একজন মহৎ ও পাক্কা ঔপন্যাসিকের সবগুণে আবু ইসহাক গুণান্বিত।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নির্বাচিত অধিকাংশ গল্পই অরুচিকর নিম্নমানের হয়। আবু ইসহাকে জোক গল্পটি মাধ্যমিকে পাঠ্য ছিল একসময় কিন্তু সিলেবাসভূক্ত ছিল না। কৈশোরে এই গল্পটি পড়েই বুঝতে পেরেছিলাম আবু ইসহাকের লেখনীরে শক্তি।
আবু ইসহাকের সাহিত্যকর্ম মোট পাঁচটি বইয়ে সীমাবদ্ধ। মহাপতঙ্গ, হারেম, সূর্যদীঘল বাড়ি, পদ্মার পলিদ্বীপ ও জাল।
পদ্মাপারের জেগে উঠা চরের মতই দ্বীপাঞ্চলের অনিশ্চিত মানুষের গল্প লেখেন তিনি। পদ্মাপারের মাটির মানুষ আর তাদের ভাষা আর তাদের ভেতর দিয়ে উপনিবেশবাদের অক্টোপুশি চেহারাকেই তিনি উন্মোচিত করেন। এ উপন্যাসের নায়ক ফজলের মতই যেন তৃতীয় বিশ্ববাসি।
ফজল একদিন মাছ ধরতে গিয়ে দেখতে পায় তাদের পুরানা দখলকৃত খুনের চর আবার জেগে উঠেছে। সে তার বাবা মাতব্বরকে খবর দেয়। কোলশরিকদের নিয়ে মাতব্বর চরটি পুন:দখল করে।
কিন্তু উপনিবেশবাদি জাঙ্গরুল্লা চরটি দখল করার পায়তারা করে। তার অভিনব কৌশলের কাছে সহজেই পরাস্ত হয় ফজলরা। চরের পাশে একটি ডাকাতি হয়েছে এই মর্মে থানায় এজাহার দেয় জাঙ্গরুল্লা। জাঙ্গরুল্লার পয়সা খাওয়া পুলিশ বাহিনী মিথ্যা মামলার আসামী করে ফজলকে। ফজলরা পালিয়ে গেলে দ্রুত চরটির দখল নেয় জাঙ্গরুল্লা। অন্যান্য উপনিবেশবাদিদের মতই জাঙ্গরুল্লা এক পিরকে ধরে এনে ধর্ম প্রচারের আস্তানা গড়তে চায় এই চরে।

আবু ইসহাক পদ্মার পলিদ্বীপ রচনা করেন ১৯৮৬ সালে। ততদিনে মার্কিন সাম্রাজ্য বিকশিত হয়ে ডালপালা গজিয়েছে। তিনি জানেন সাম্রাজ্যবাদীরা নব নব পন্থায় সাম্রাজ্য বিস্তারের পায়তারা করে। আবার এই জুলুম কে জায়েজ করার জন্য তাদের দরকার হয় ধর্মীয় নৈতিকতার আধার। হিংসার চরমতম রূপ যুদ্ধকে তারা নাম দেয় ক্রুসেড। তারা লুন্ঠনকে করে তোলে ধর্মপ্রচারের সফর। চিরদিন এই দুটি ব্যাপার একই মুদ্রার এপিট ওপিট হিসেবে চলে আসছে।  লেখকের অন্তর্দৃষ্টির গভীরতা বয়ানের সত্যতা এ উপন্যাসের জাঙ্গরুল্লা চরিত্রটি বিশ্লেষণ করলে মেলে। বুঝা যায় উপনিবেশ বাদিতা অশেষ। উপনিবেশবাদিতা প্রজাতির রক্তিম বৈশিষ্ট। প্রতিটি মানুষের ভিতর রয়েছে রাজত্ব করবার  বৈশিষ্ট। দখলপ্রবৃত্তি মানুষের অতি পুরাতন বাসনা। যা কিছু আনন্দ দেয়, শৌর্য দেয়, বীর্যবান করে সবই তার দখলে চায়। জাঙ্গরুল্লার দখলে অনেক চর। তার অনেক লাঠিয়াল, অনেক শক্তি। বহু মিত্র, কোলশরিক। তবু যেই শুনেছে খুনের চরে ভাল ধান হচ্ছে। খুনের চর থেকে মাছ ধরে সহজে দুই পয়সা কামাই করা যায়। তখনই তার মাথায় ঝিলিক দিয়ে ওঠে লোভ, তার ঘুম হারাম হয়ে যায়। কী উপায়ে এই দ্বীপ দখল করা যায়। এটাই তো সাম্রাজ্যের মন। যখন মানুষের দখলসত্তা জেগে ওঠে তখন সে একটার পর একটা পরিকল্পনা করে, কিভাবে সে তা দখল করতে পারে। এই জন্য সে মিছা ডাকাতির মামলা সাজায়। ফজল ধরা পড়ে জেলে যায়। সাক্ষী জাঙ্গরুল্লার লোকজন আর তার মতা আর তার টাকা।

পৃথিবীতে এ পর্যন্ত যত সাম্রাজ্যবাদীদের উত্থান ঘটেছে। ইতিহাস সাক্ষী দেয় প্রত্যেক দখলদারিত্বের আগে তারা মিথ্যাচারের জন্য নগ্নভাবে মিড়িয়াকে ব্যবহার করে। এডওয়ার্ড সাঈদের কাভারিং ইসলাম ও আফটার দ্যা লাস্ট স্কাই বইসমূহ  এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ। বিবিসি, সি এন এন এর মত নিউজ ব্রডকাস্টিংগুলোকে নিজেদের স্বার্থে পশ্চিমারা কি জঘন্যভাবে ব্যবহার করে বইগুলো তার সাক্ষ্য দেয়। এই কিছুদিন আগেও নিউজ এজেন্সিগুলোর বরাতে সাদ্দাম হোসেনকে মনে হত বিশ্বত্রাস। যে কোনো মুহূর্তে দুনিয়াকে নরকে নিয়ে যাবার মতা যেন তার রয়েছে। ভাবখানা ছিল এমন। কত সহজেই না মার্কিনিরা ইদুরের মত লেজ ধরে গর্ত থেকে তুলে এন লটকে দিল ফাঁসিতে।  এই যে ওসামা বিল লাদেন কে খোঁজার নামে কাবুলকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে প্রস্তর যুগে। সন্দেহ হয় আসলে ওসামা বিল লাদেন বলে কেউ আছে কি ? যে মার্কিনিদের বোমা বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে পাহাড়ে খানাখন্দে তেলাপোকার মত বেঁচে আছে। এই সবই কি উপনিবেশ বিস্তারের বা বিস্তারিত উপনিবেশকে পোক্ত করার জন্য অভিনব কৌশল নয়? আসলে ঘঠনা পরম্পরা বিবেচনা করলে দেখা যায় সবকিছুর মুলে চরদখল।

মাছ ধরতে গিয়ে নদীতে মরে যায় জরিনার স্বামী অসুস্থ চোর মতলব। এতবড় ইস্যু কি ছাড়তে পারে জাঙ্গরুল্লা। সে রটায় ফজলই খুন করেছে মতলবকে। উপন্যাসের শেষার্ধে যদিও উপন্যাসিক ফজলকে দিয়ে পুনরায় দখল করায় খুনের চর। কিন্তু মানুষকি আদৌ এত আশাবাদি হতে পেরেছে? জাঙ্গরুল্লার কোলশরিক ফজলের শ্বশুর যখন ফজলের বউ রূপজানকে বিভিন্ন ছুতোয় আটকে রাখে নিজের বাড়ীতে। তখন ফজলই বুদ্ধি করে জাঙ্গরুল্লার লোক সেজে রূপজানকে তুলে নিয়ে আসে। এটাই আসলে টিকে থাকার মেটাফর। ফজল-জরিনা-রূপজান কেন্দ্রিক প্রেম কাহিনীটা এ উপন্যাসকে আরো বেশি চিরন্তন করে তোলে।

প্রসঙ্গত জাল উপন্যাসে আবু ইসহাক একটা  ভুমিকা লেখেন। তার ভাষায় আমার প্রথম উপন্যাস সুর্যদীঘল বাড়ি লেখা শেষ হয় ১৯৪৮ সালের আগষ্ট মাসে। তারপর চার-চারটে বছর প্রকাশকের সন্ধানে কলকাতা ও ঢাকায় ঘোরাঘুরি করেও বইটির প্রকাশক পাইনি। এত আহত হয়ে তিনি ভাবলেন মৌলিক উপন্যাস যখন কেউ ছাপেনা  ডিটেকটিভ উপন্যাস লিখবেন। এরই ফলশ্রুতিতে তিনি জাল লেখেন। কিন্তু পাঁচবছরের মাথায় তিনি সুর্যদীঘল বাড়ির প্রকাশক পান এবং এটার সফলতা দেখে জাল এর পান্ডুলিপি বাক্সবন্দি করেন। প্রায় ৩৪ বছর জাল এর পান্ডুলিপি বাক্সবন্দি অবস্থায় ছিল। বাংলাদেশের প্রকাশকদের মত অশিক্ষিত কোনো সম্প্রদায় নাই। এদের কারণে বলা যায় ব্যবসা চিন্ত আর নোংরা মানসিকতা আর সস্তা রুচির কারণে এ দেশিয় সাহিত্য এখনো আতুড় ঘরেই রয়ে গেল। এখনো যে দেশে বই ছাপা হবার যোগ্যতা হচ্ছে আমলা হওয়া, পত্রিকার সম্পাদক হওয়া অথবা প্রকাশকের বউয়ের ভাই হওয়া। এদের হাতেই বন্দি এ দেশিয় সাহিত্য। মেলা আসলেই দেখা যায় এই মুর্খ অশিক্ষিত প্রকাশকদের কুরুচিপুর্ণ নিম্নমানের অপন্যাসে ভরে যায় বটতলার বইয়ের স্টলগুলো। এদের দৌরাত্ব্য ও নিষ্ঠুরতার বলি হয় আবু ইসহাকের মত মৌলিক অর্ন্তদৃষ্টি সম্পন্ন লেখকরা।

৫ comments

  1. রায়হান রশিদ - ২৭ জুলাই ২০০৯ (১১:৫৮ পূর্বাহ্ণ)

    মুক্তাঙ্গনে স্বাগতম; এবং ধন্যবাদ পোস্টটির জন্য। অনেকগুলো বিষয় জানতে পারলাম।

    আবু ইসহাকের পদ্মার পলিদ্বীপ বইটির আলোচনা করতে গিয়ে উর্ধ্বাংশর ভুমিকাটুকুর অবতারণা করতে হল কেননা এই বইটি মহাকাব্যের লক্ষনাক্রান্ত। বইটি পড়তে পড়তে শালোকভের প্রশান্ত দনের কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল বারবার।

    ‘পদ্মার পলিদ্বীপ’ বইটি পড়া নেই বলে খুব আফসোস হচ্ছে, সেই সাথে আগ্রহ। গুণ এই পোস্টটির। শলোখভের প্রশান্ত দন আমারো প্রিয় বইগুলোর একটি, তবে বেশী ভাল লেগেছিল লেখকের Virgin Soil Upturned বইটি, যদিও সেটি আবার বেশীর ভাগের অপছন্দ কিছুটা (কিংবা অনেকটাই) প্রোপাগান্ডাধর্মী হওয়ার কারণে। আপনি যে মহাকাব্যের লক্ষণের কথা বললেন, সেটা বোধ হয় কিছুটা উপলদ্ধি করতে পারছি; প্রশান্ত দনে সেই সুরটা যেন সর্বত্র ছড়িয়ে ছিল। ধোঁয়াটে উপলদ্ধি থেকে লিখলাম; এই লক্ষণগুলো যদি ব্যাখ্যা করতে বলে কেউ তাহলে বিপদে পড়ে যাবো। ‘পদ্মার পলিদ্বীপ’ বইটিতে সতত বহমান নদী অববাহিকায় জীবনের যে বিস্তৃত পটভূমি, তার সাথে দন পাড়ের আখ্যানের নিবিড় যোগাযোগটা বেশ বুঝতে পারছি। আলোচনার সুবিধার্থে কেউ যদি উপন্যাসে মহাকাব্যিক উপাদানগুলোর একটা taxonomy (শব্দটির ভাল বাংলা কি হতে পারে?) এখানে উল্লেখ করতেন, তাহলে পড়ে জানতে পারতাম।

    দস্তয়েভস্কি গোগল সম্পর্কে বলেছিলেন গোগলের ওভারকোট এর পকেট থেকে আধুনিক রুশ সাহিত্যের জন্ম। দস্তয়েভস্তি সম্পর্কেও বলা যায় যে আধুনিক উপন্যাসেরও জন্ম তার রাসকলনিকভে।

    হয়তো একেবারেই প্রাথমিক ধরণের প্রশ্ন হয়ে যাচ্ছে এটা। প্রায়ই সবাই বলেন এটা, আর বাকীরা হয়তো বোঝেনও। কিন্তু বিষয়টা আমার কাছে সবসময়ই কিছুটা অধরা রয়ে গেছে। তাই জানতে ইচ্ছে করছে – সাহিত্যে আধুনিকতা বস্তুটি আসলে কি? ঠিক কি কি উপাদান থাকলে বা কি কি উপাদান অনুপস্থিত হলে আমরা কোন সাহিত্যকে আধুনিক বলবো? অনুমান করছি, এর সাথে দর্শন শাস্ত্রের কোন একটি নির্দিষ্ট যুগের বা ঘরানার যোগাযোগ ছিল হয়তো। কোনভাবে সেই ঘরানার প্রতিনিধিত্বকারী মানুষগুলোর সাথে একটু পরিচিত হতে পারি কি? তাহলে আমরা চিন্তাজগতের বিকাশের সূত্রগুলোকে এক করে একটা সাধারণ মানচিত্র তৈরী করতে পারতাম, নিজেদের বোঝার সুবিধার্থে। শুনেছি, উনবিংশ শতাব্দীর জার্মান দার্শনিক ফ্রিডরিখ নিটশের সাথে নাকি দস্তয়েভস্কির বেশ ভাল যোগাযোগ ছিল; ব্যক্তিগত না, পরস্পরের লেখনীর মাধ্যমে পরোক্ষ যোগাযোগ। জানতে ইচ্ছে করে এদের একজনের কাজের ওপর অন্যজনের আদৌ কোন প্রভাব ছিল কি না। কারণ, দস্তয়েভস্কির রাসকোলনিকভের সাথে একদিকে আলবেয়ার কামুর চরিত্রগুলোর মিল যেমন আছে অমিলও কিন্তু খুব কম নেই; আবার অন্যদিকে নৈতিকতা-নিরপেক্ষ (বিবর্জিত বলতে চাই না) রাসকোলনিকভ কিন্তু শেষ বিচারে নিটশের Overman হয়ে উঠতে পারেনি, কিংবা সেটা হয়তো দস্তয়েভস্কির লক্ষ্যও ছিল না। এটা অবশ্য আমার নিজের অভিমত, জানি না কতটুকু সঠিক। তুলনাগুলো আনলাম ‘আধুনিকতা’ বিষয়টিকে জানতে এবং বুঝতে চাই বলে। কেউ বুঝিয়ে বলতে পারলে অত্যন্ত কৃতজ্ঞ হবো।
    দূরবর্তী আরেকটি বিষয়: অপরাধ বিজ্ঞানে অপরাধীর প্রোফাইলিং বলে একটা ব্যাপার নাকি আছে। কোথায় যেন পড়েছিলাম সাহিত্যে নাকি প্রথম ক্রিমিনাল প্রোফাইলিং হয়েছিল দস্তয়েভস্কির ‘ক্রাইম এন্ড পানিশমেন্ট’ উপন্যাসেই, সম্ভাব্য অপরাধী হিসেবে রাসকোলনিকভকে চিহ্নিত করতে।

    শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নির্বাচিত অধিকাংশ গল্পই অরুচিকর নিম্নমানের হয়।

    একদম অরুচিকর হয়তো বলবো না। তবে পাঠ্যবইয়ে তালিকাভুক্ত বেশীর ভাগ লেখাই কেমন যেন প্রেরণাহীন রসহীন মনে হয়েছে। ঠিক কেন হয় এমন? কারা এসব বাছাই করেন? নাকি বিষয়গুলো পাঠ্যতালিকাভুক্ত বলেই আমাদের অন্তঃস্থিত প্রতিরোধটা কিছুটা বেশীই এই লেখাগুলোর প্রতি?

  2. জাহেদ সরওয়ার - ২৭ জুলাই ২০০৯ (১:৪২ অপরাহ্ণ)

    রায়হান রশিদকে ধন্যবাদ।
    আপনার মন্তব্যটা পড়ে খুব ভাল লাগলো। এবং যে প্রশ্নসমূহ আপনি করেছেন তা নিজের ভেতরও উপলব্ধি করতে পারলাম। পদ্মার পলিদ্বীপ আর প্রশান্ত দন বই দুটি তুলনা করতে গিয়ে আমার যে বিষয়টার কারনে দুটি উপন্যাসকেই একই কাতারে স্মরণ করেছি তা হলো মাটি সংলগ্নতা। সাধারণ মানুষদের কথা এত সত্য ও সহজভাবে বইদুটাতে বলা হয়েছে যে। পটভূমি আলাদা হলেও মাত্রাগত দিক দিয়ে তারা কাছাকাছি। পুঙ্খানুপুঙ্খ মহাকাব্যের লক্ষণ বিচার হয়তো শিক্ষকরা করবেন। আমরাতো সাধারণ পাঠক। সবিশেষ রস আস্বাদনই আমাদের দৌরাত্ব্যের সীমানা।
    আর অন্যকেউ বলেছেন কিনা জানিনা আমার কাছে দস্তয়েভস্কির অপরিহাযতার যে কারণ তা হলো সাধারণের অংশগ্রহণ। প্রতিটি মানুষইতো বুদ্ধকে যেমন লালন করেন তেমনি শয়তানকেও লালন করেন। মানে স্বভাবের দুই বিপরীত দিক বুঝানোর চেষ্টা করছি। পরিস্থিতি মানুষকে ঘঠমান বরতমানানুগ করে তোলে। দস্তয়েভস্কির পরের আমাদের চেনা লেখককুলের মধ্যে কামু,কাফকা, কুন্দেরা, জেলিনেক, কোয়েতসি, কারতেশ, সারামাগো, গ্রাস, মান, হেসে , কোয়েল হো ইত্যাকার এবং এ মুহুতে মনে না পড়া আরো ঢের লেখকের চরিত্রদের সামাজিক প্রভাবে ব্যক্তিক অন্তরমুখিন যাত্রার যে সবশেষ প্রক্রিয়ার দেখা মেলা সেটাকে মনে হয় দস্তয়েভস্কির আধ্যাত্বিক প্রভাব বললে বেশি বলা হয়না। এই সব লেখক কুলের স্বরচিত দস্তয়েভ্সকি সম্পকে লেখা সমূহ পাঠেও তা জানা যায়। আধুনিকতা আমার কাছেও প্রশ্নচিহ্ন। আমি অন্তত এ নিবন্ধে এ শব্দটা ব্যবহার করেছি ক্ষুদ্র ব্যক্তি মানুষের আত্মসচেতন কিংবা অধিকার সচেতনতার পর তার সাথে রাষ্ট্রের দ্বন্ধের শুরুকে।

    • রায়হান রশিদ - ২৭ জুলাই ২০০৯ (২:৫৭ অপরাহ্ণ)

      পুঙ্খানুপুঙ্খ মহাকাব্যের লক্ষণ বিচার হয়তো শিক্ষকরা করবেন। আমরা তো সাধারণ পাঠক। সবিশেষ রস আস্বাদনই আমাদের দৌরাত্ম্যের সীমানা।

      একই নৌকোতে আমিও। তবুও জানতে ইচ্ছে করে। জানলে হয়তো নিজের চিন্তাগুলো আরও গুছিয়ে চিহ্নিত করতে পারতাম। এমন কি আপনার হয় যে কোন একটা জিনিস পড়তে গিয়ে মনের ভেতর বেশ বুঝতে পারছেন, কিন্তু শব্দভান্ডারে ঘাটতি থাকায় অন্য কাউকে সেটা বোঝাতে খুব সমস্যা হচ্ছে? আমার সবসময়ই হয়।

      আর অন্যকেউ বলেছেন কিনা জানিনা আমার কাছে দস্তয়েভস্কির অপরিহাযতার যে কারণ তা হলো সাধারণের অংশগ্রহণ। প্রতিটি মানুষইতো বুদ্ধকে যেমন লালন করেন তেমনি শয়তানকেও লালন করেন। মানে স্বভাবের দুই বিপরীত দিক বুঝানোর চেষ্টা করছি।

      এমনই কিছু একটা মনে হয় পড়েছিলাম ম্যানিশিজম এ। দস্তয়েভস্কি পড়তে গিয়ে আপনার কখনো অস্বস্তিবোধ হয়েছে? বইটা পড়তে যন্ত্রণা হচ্ছে আবার রেখে দিতেও পারছেন না? কি জানি, এটাই হয়তো যাকে আমরা ‘আধুনিক লেখা’ (নাকি উত্তর-আধুনিক বলা উচিত?) বলি তার অনেকগুলো বৈশিষ্ট্যের একটি।

      দস্তয়েভস্কির পরের আমাদের চেনা লেখককুলের মধ্যে কামু,কাফকা, কুন্দেরা, জেলিনেক, কোয়েতসি, কারতেশ, সারামাগো, গ্রাস, মান, হেসে , কোয়েল হো ইত্যাকার এবং এ মুহুতে মনে না পড়া আরো ঢের লেখকের চরিত্রদের সামাজিক প্রভাবে ব্যক্তিক অন্তরমুখিন যাত্রার যে সবশেষ প্রক্রিয়ার দেখা মেলা সেটাকে মনে হয় দস্তয়েভস্কির আধ্যাত্বিক প্রভাব বললে বেশি বলা হয়না।

      প্রথম তিনজন ছাড়া বাকিদের কাজের সাথে প্রত্যক্ষ যোগাযোগের সুযোগ ঘটেনি। ধন্যবাদ নামগুলোর জন্য। এখন থেকে খুঁজবো। আচ্ছা, নিতান্ত অ-তাত্ত্বিক (laymen অর্থে) গোছের একটা চিন্তাঝড় শুরু করলে কেমন হয়? [তাত্ত্বিক মতামতও পরিত্যাজ্য নয় এখানে]। দেখা যাক কিছু বিষয় আলাদা করতে পারি কিনা সবাই মিলে। অংশগ্রহণের জন্য কিছু প্রাথমিক প্রশ্ন আলাদা করছি। সবার প্রতি বিনীত আহ্বান এবং অনুরোধ থাকলো একে সংশোধন, পরিবর্ধন, পরিমার্জন করার জন্য:

      ১) কোন একটি নির্দিষ্ট সময়ের নির্দিষ্ট ধরণের চিন্তাকে (যেমন: রোমান্টিক ঘরানার বিপরীতে) একক ধরে নিয়ে তাকে ‘আধুনিক’ আখ্যা দেয়াটা কতোটা যুক্তিযুক্ত?

      ২) আধুনিক সাহিত্য কি আধুনিক মানুষ নিয়ে? নাকি আধুনিক চিন্তা নিয়ে? নাকি দুটোর যে কোন একটা থাকলে তাকেও আধুনিক বলা যায়?

      ৩) আধুনিক মানুষের বৈশিষ্ট্য কি? তাকে কি অন্তর্মূখীন, বিচ্ছিন্ন এবং চিন্তায়-আবেগে জটিল হতেই হবে? প্রান্তের মানুষও কি সে অর্থে সমান আধুনিক কিংবা জটিল হতে পারে না? গ্রাম বাংলার মানুষের এবং তাদের জীবনযাপনের যে ধরণের ‘সহজ সরল অতিথিপরায়ন’ ন্যারেটিভ নিয়মিত প্রচার করা হয়, কোন ধরণের সুপিরিয়রিটি কমপ্লেক্স তার উৎস নয় তো?

      ৪) আধুনিক চিন্তা কাকে বলে? এই আধুনিকতা কি সময়ের বিচারে (সাম্প্রতিক অর্থে) নির্ধারিত হবে, নাকি চিন্তার গুণগত মান বিচারে? কোনটা হওয়া উচিত?

      ৫) কোন প্রাচীন কিংবা লোকজ সাহিত্যেও যখন কেউ আধুনিকতার উপাদান খুঁজে পান বলে দাবী করেন, অথবা কোন উপকথা/মিথ যখন প্রচলিত বিচারের আধুনিক সাহিত্যেও নতুনভাবে ব্যবহৃত হয়, তখন তাদের ঠিক কোন গুণগত বৈশিষ্ট্যকে নির্দেশ করার চেষ্টা করা হয়? এই আধুনিকতা সাহিত্যিক ঘরানা অর্থে আধুনিকতা থেকে ঠিক কোন্ অর্থে আলাদা?

      দুঃখিত, “পদ্মার পলিদ্বীপ” নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে বিষয়বস্তু থেকে অনেক দূরে সরে গিয়েছি। আজকাল কেবল একটা আশংকাই মনে বাজে। নদী, নদী তীরের মানুষ, নদী তীরে গড়ে ওঠা সভ্যতা – এসব ঘিরে এই উপন্যাসগুলো একদিন হয়তো উপকথা কিংবা কল্পকাহিনীতে পরিণত হবে। অনেকটাই হয়তো অপ্রাসঙ্গিক ফ্যান্টাসি হয়ে পড়বে। কারণ, নদীরা বিলীন হয়ে যাচ্ছে, যাবে। সেই সাথে শেষ হয়ে যাবে পৃথিবীর নদীযুগ। মহাদেশে মহাদেশে নদীযুদ্ধের পূর্বাভাস (দ্রষ্টব্য: টিপাইমুখ-সাংপো, বাইহেতান এবং মুখোমুখি ভারত-চীন)। আমাদের বুড়ো বয়সে একদিন হয়তো আমরা কেবল নাতি পুতিদের কাছে গল্প করবো – ‘জানিস, এখানে একসময় অনেক নদী ছিল’, কিংবা ‘আমাদের শহরতলিটা ছিল কর্ণফুলী নদীর তীরে’, কিংবা ‍‍‘তোদের দাদা বাড়ীতে যেতে হতো দুই নদী এক খাল ডিঙ্গিয়ে, লঞ্চ এবং নৌকায় চড়ে’ !
      ছিল “তিন নাওয়ের দেশ পেরিয়ে তিন দশের রাজ্য”! (সূত্র: রুশ দেশের উপকথা)
      [সংশোধিত]

  3. জাহেদ সরওয়ার - ২৮ জুলাই ২০০৯ (১২:১৪ অপরাহ্ণ)

    মানব মস্তিস্কের দুই ধরনের কর্ট্রেক্সের প্রাধান্য লক্ষ্য করেন মহাত্মা কার্ল সাগান। তিনি সে সবের নামকরন করেন যথাক্রমে সেরিব্রল কর্টেক্স ও আর কমপ্লেক্স। জীব মাত্রেই যেহেতু তাকে খাদ্য ও নিরাপত্তার কথা ভাবতে হয়। মোটকথা জৈবীক অর্জনের পথে যে ধরনের চিন্তামালা মস্তিস্কের কর্টেক্স সমূহকে বিকশিত করেছে তাদের তিনি আর কমপ্লেক্স বা রয়াল কমপ্লেক্স নামে ডাকেন। যাযাবর মানুষের বিচ্ছিন্নতা কেন্দ্রিক নস্টালজিয়া, প্রেমবোধ, মানবিক হওয়ার দিকে যাত্রার ফলে যে কমপ্লেক্সের বিকাশ তার নাম সেরিব্রল কর্টেক্স।
    খাদ্য বাসস্থান নিরাপত্তা জীবের প্রধান চিন্তাত্রে। কেননা উপোসী মানুষ ধীরে ধীরে মৃত্যুকেই আলিঙ্গন করে, বিকশিত হতে পারেনা।
    তাহলে দেখা যাচ্ছে এই শিকার প্রবৃত্তি মানুষের মজ্জাগত। চিরকালীন এবং এটাই তার গতি প্রকাশের পথ। মনে হয় খাদ্য নিরাপত্তা ইত্যাদিও মজুদচিন্তা থেকেই পুজি ও রাস্ট্রের উৎপত্তি। প্রাচীন প্রায়ই অমানবিক শাষকদের দেখা যায় রাজ্যজয় যুদ্ধ হত্যার পাশাপাশি আনন্দ লাভের জন্য বিভিন্ন পন্থা আবিস্কার করতে। এই বিনোদনাস্কিকারের হাত ধরে বাশি, কিচ্ছাপাঠ(যেহেতু তখন সব কিছু স্মৃতি থেকেই বলতে হতো) উল্লম্পন নাচ ইত্যাদিও সৃষ্টি।
    অন্ধ কবি হোমার ছিলেন একজন কথক। অনেকটা আমাদেও গ্রামের কবিয়ালদেও মতো। প্রাচীন গ্রীসের অধিকাংশ প্রাচীন কবি তাই। আর নাট্যকারগন। তারা মুখে আর খোলা মঞ্চে কাহিনী গেয়ে লোকের বা সভার মনোরঞ্চন করতেন।
    যেহেতু জগতে তাবত জিনিসই বিবর্তিত সেহেতু সব কিছুই কোনো না কোনো সময়ে সুনির্দিষ্ট গ্রন্থনা লাভ করে। আধুনিকতাকেও সেক্ষেত্রে বলা যেতে পারে ক্লাসিসিজম বা রোমান্টিসিজমের বিবর্তিত রূপ।
    সুদীর্ঘকাল ধরে মধ্যযুগের ইউরোপীয় পোপদের শাষন কালে বিভিন্ন বিষয়ের ওপর ধর্মীয় নিষেধাজ্ঞা বা সেন্সর ও ইশ্বরের দোহাই দিয়ে প্রকাশের প্রক্রিয়াগুলোকে প্রায় সীমাবদ্ধ করে ফেলেছিলো। চিন্তা আর তার প্রকাশ হয়ে উঠেছিলো যেন উচ্চবংশীয় ব্যাপার। মেটাফিজিক্সই হয়ে ওঠেছিলো তাদের প্রকাশের প্রক্রিয়া। দান্তে বেকন গ্যোতে তলস্তয় রবীন্দ্রনাথ ( রোমান্টিক যুগের দার্শনিক কবি ও চিন্তকেরা)।
    বিজ্ঞানের নতুন নতুন আবিস্কার, অজস্র গৃহযুদ্ধ, খন্ডযুদ্ধ, সর্বোপরি ২য় মহাযুদ্ধ মানুষের মনে অনেক প্রশ্নের মুখোমুখি দাড় করায়। মার্কেস পুজি, ফ্রয়েডের স্বপ্নের অনুবাদ, ডারউইনের প্রজাতির উৎপত্তি বই তিনটিকেও ধরা যায় চিন্তার বাক পরিবর্তন কারী হিসাবে।
    পুজি ও গীর্জার যৌথ কারাগারের প্রভাবে মানুষ ঐশ্বরিক দৃষ্টিকোন থেকে মানবিক দৃষ্টিকোন থেকে দেখা শুরু করল সবকিছু। সে দেখতে পেলো সমস্ত শৃংখলই মানুষের সৃষ্টি। মানুষই এটম বোমা বানায় আবার তা মানুষের ওপর বর্ষন করে। মানুষ তাকে শক্তির কেন্দ্রে স্থাপন করলো এবং নিজের সব অবদমিত বাসনার বাস্তবায়ন কামনা করলো। সে আবিস্কার করলো ব্যক্তির সাথে সমাজ তথা রাষ্ট্রেও সম্পর্কেও জটিলতা। এই জন্য বলা যায় আধুনিকতা ভুইফোড় কিছু না। এই সময়টাকে আধুনিকতা না বলে অন্য নামেও অবিহিত করা যেতো। মনে হয় স্কুলের মাস্টারদেও প্রয়োজনেই এ নামকরন।
    কেননা মানুষের এমন কিছু বিষয় আছে যা চিরকালীন। সে বিষয়গুলো হোমারে যেমন ছিল আজও আছে প্রকাশের ত্রে যতদিন থাকবে ততদিন থাকবে। আর যেহেতু মানুষী জটিলতা ও সংগ্রামের প্রক্রিয়া সমূহ একইরকম আবেগ দ্বারা তাড়িত তখন ঘুরে ফিরে প্রয়োজনীয় মিথ সমূহ তার লেখায় দেখা দেবে এ আর আশ্চর্য কি।

  4. ইমতিয়ার - ৩০ জুলাই ২০০৯ (১১:৩০ অপরাহ্ণ)

    পদ্মার পলিদ্বীপ ব্যক্তিগতভাবে আমার খুবই পছন্দের উপন্যাস। সবাই আবু ইসহাককে চেনেন সূর্যদীঘল বাড়ি দিয়ে, কিন্তু আমার প্রিয় পদ্মার পলিদ্বীপ। খুবই সঙ্গত যে এ বইটি নিয়ে কোথাও না কোথাও আলোচনা হয়েছে, তবে বিস্ময়কর হলেও সত্য, সেসব আমার চোখে পড়েনি। সেই অর্থে, এটিই আমার প্রথম পদ্মার পলিদ্বীপ-এর প্রতিক্রিয়া পড়া।
    অনেকদিন হয়ে গেছে, জাহেদ সরওয়ার বলতে গেলে আমার স্মৃতি খুঁড়ে জানান দিলেন, কোনও কোনও লেখা বার বার ফিরে আসে।
    জাহেদ-এর এই লেখার সূত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা শুরু হয়েছে। ভবিষ্যতে, পদ্মার পলিদ্বীপ আবারও পড়ার পরে, এইখানে ফিরে আসার ইচ্ছা রাখি। নদী ও নদীকেন্দ্রিক মানুষদের নিয়ে যে-সব গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্য আমাদের রয়েছে,- পদ্মা নদীর মাঝি, তিতাস একটি নদীর নাম, ইছামতি, কর্ণফুলী থেকে শুরু করে হালের দেবেশ রায়ের তিস্তাপাড়ের বৃত্তান্ত,_ এসবের পাশে পদ্মার পলিদ্বীপকে রেখে কথা বলতে বলতে নিশ্চয়ই আমরা সাহিত্যে আধুনিকতার মতো বিষয়টি থেকে শুরু করে মানুষের আধুনিকতাবোধেরও প্রাচীন কিংবা সমকালীন নানা প্রকরণ খুঁজে পাব।
    জাহেদ সরওয়ারকে ধন্যবাদ পদ্মার পলিদ্বীপ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই লেখাটির জন্যে।

Have your say

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.