কবি শামসুর রাহমানের মৃত্যুর পর কলকাতা থেকে প্রকাশিত দ্বি-মাসিক “পথিকৃৎ”-এর পক্ষ থেকে প্রয়াত কবির উপর একটি বিশ্লেষণধর্মী লেখা ছাপাবার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। লেখাটি চাওয়া হয়েছিল বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল – বাসদ-এর আহ্বায়ক কমরেড খালেকুজ্জামানের কাছে। কমরেড জামান-কৃত কবির মূল্যায়নটি পড়তে হলে এই লিংক থেকে ডাউনলোড করে নিন। সুন্দরভাবে টাইপ করা তথ্যসমৃদ্ধ মূল্যায়নটি পড়ে আমার মনে কিছু প্রশ্ন জেগেছে, যে কারণে এই ব্লগ লেখা। শুরুতে বুঝতে পারিনি যে লেখাটি এত দীর্ঘ হয়ে যাবে; তাই পাঠকের কাছে অগ্রিম ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি তাঁদের অনেকটা সময় নিয়ে নেয়ার জন্য।
আমার জানা নেই কমরেড খালেকুজ্জামানের সাহিত্য সমালোচনার কোনো প্রশিক্ষণলব্ধ যোগ্যতা (যেমন: সাহিত্যে উচ্চতর ডিগ্রি), কিংবা প্রাতিষ্ঠানিক অভিজ্ঞতা (যেমন: দীর্ঘদিন কোনো পত্রিকার সাহিত্য পাতা সম্পাদনার সাথে সম্পৃক্ততা), কিংবা একজন সাহিত্যিক বা সাহিত্য সমালোচক হিসেবে সর্বজনগ্রাহ্যতা আছে কিনা। ধরে নিতে হচ্ছে, এই তিন দলের অন্তত যে-কোনো একটির মধ্যে তিনি পড়েন; আর তা নাহলে কেনই-বা “পথিকৃৎ” নামের এই সাহিত্য পত্রিকাটি তাঁর কাছেই কবি শামসুর রাহমানের মূল্যায়ন চাইবে ? আর যদি তিনি এই তিনটি দলের কোনোটির ভেতরই না পড়েন, তখন পুরো বিষয়টিকেই একটু অন্যভাবে দেখার অবকাশ থাকে বৈকি। এ প্রসঙ্গে বলে রাখা দরকার, “পথিকৃৎ” পত্রিকার এই মূল্যায়ন চাওয়ার বিষয়টিও কিছুটা কৌতূহলোদ্দীপক। কেন একটি সাহিত্য পত্রিকা একজন অসাহিত্যিকের কাছ থেকে শামসুর রাহমানের মূল্যায়ন চাইবে, সে বিষয়টা আমার এবং আরো অনেকের কাছেই পরিষ্কার নয়। একজন কবি, তা-ও শামসুর রাহমানের মাপের একজন কবি কোনো দেশ, কাল বা সীমানার মধ্যে আবদ্ধ থাকেন না; কোনো দল বা মতাদর্শের মধ্যে তো নয়ই। তাঁর মতো কবিরা পৃথিবীর সম্পদ। তাঁকে নিয়ে মূল্যায়নধর্মী কাজ দাঁড় করানোর মতো প্রয়োজনীয় মাল-মশলা-তথ্যাদি পশ্চিমবঙ্গে দুর্লভ নয়। আমার জানা মতে, পশ্চিমবঙ্গে শামসুর রাহমানের প্রায় সমস্ত কবিতার বই-ই পাওয়া যায়। “পথিকৃৎ” পত্রিকা যদি নিউ ইয়র্ক কিংবা ব্রাসেলসের হতো, তাহলেও কথা ছিল। এও ধরে নিতে পারি যে, “পথিকৃৎ”-এর সদস্যরা পড়তে লিখতে পারেন এবং সাহিত্য বিষয়ে যথেষ্ট আগ্রহ-ও ধারণ করেন। সুতরাং এত কিছু থাকতে কেন যে তারা জনৈক অসাহিত্যিক রাজনৈতিক নেতার মতামত জানতে এত আগ্রহী হলেন, সে বিষয়ে যত ভাবি, ততই বিস্মিত হই।
যাই হোক, মূল্যায়নটিকে একটু কাছ থেকে দেখার চেষ্টা করা যাক। আলোচনার সুবিধার্থে ব্লগপোস্টটিকে দুই ভাগে বিভক্ত করে নিচ্ছি। প্রথমভাগের আলোচনাটি কমরেড জামানের মূল্যায়নটির সুনির্দিষ্ট বক্তব্যনির্ভর, পাঠকের সুবিধার্থে মূল্যায়নটির কিছু কিছু অংশ সেখানে সরাসরি উদ্ধৃত। পাশাপাশি, যেখানে প্রাসঙ্গিক মনে হয়েছে, সেখানে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে সাম্প্রতিক কিছু উদাহরণ তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। দ্বিতীয় অংশটি বৃহত্তর দৃশ্যপট নিয়ে, যেখানে চেষ্টা করেছি সমাজতান্ত্রিক দল এবং আদর্শকে ঘিরে আবর্তিত “পার্টি সাহিত্যে”র ধারণা এবং আনুষঙ্গিক কিছু বিষয়ের ওপর আলোকপাত করার।
এক.
কমরেড খালেকুজ্জামান তাঁর নিবন্ধের এক জায়গায় লিখেছেন:
বিনীত, মার্জিত, মৃদুভাষী কবি শামসুর রাহমান বিশ্বাস করতেন ‘কবিতা মানুষের মনকে পরিশীলিত করে।’ এটা ঠিক যে কবিতার ছন্দ মানুষের মনকে দোলায়িত করে। কিন্তু কবিতার গাঁথুনির মধ্যে যে কাব্যভাব লুকিয়ে থাকে এবং যে ভাব-চেতনা পাঠক শ্রোতাদের মনে আবেগ-আবেশ, অনুভূতি-প্রেরণা, শিক্ষা ও সংস্কৃতি সুরের দ্যোতনা সৃষ্টি করে – শ্রেণীতে ভাগ করা সমাজে কবি কিংবা পাঠক কেউ-ই কাব্যভাবের আড়ালে লুকিয়ে থাকা ওই শ্রেণীপ্রভাব থেকে মুক্ত থাকতে পারেন না। এ বিষয়ের সঠিক উপলব্ধি যে খুব জরুরি তাঁর লেখায় সেটি তেমন তীক্ষ্ণভাবে ফুটে ওঠেনি। [গুরুত্বারোপ লেখকের]
আধুনিক কবি হিসেবে শামসুর রাহমানের কবিতা যে ছন্দনির্ভর নয়, সে কথা না-ই বা তুললাম। [১৮ নং মন্তব্যের বিপরীতে লেখকের প্রত্যুত্তর দ্রষ্টব্য]। আর আধুনিক কবিতার পাঠকের কাছে কবিতার আবেদনের পেছনে যে ছন্দই প্রধান নয়, কমরেড খালেকুজ্জামানের মতো একজন বোদ্ধা পাঠককে সেটি মনে করিয়ে দেয়া হয়তো একটু ধৃষ্টতাই হয়ে যাবে। সুতরাং সে চেষ্টাও করবো না। কিন্তু যে বিষয়টা আমাদের অবাক করে, তা হল, একজন ক্ষমতাবান কবি হিসেবে শামসুর রাহমানের মানব মনোজগতে অবদান কমরেড জামানের কাছে যথেষ্ট নয়। কারণ, তিনি মনে করেন কাব্যভাবনার অন্তরালে শামসুর রাহমানের বুকের খাঁচায় শেষ পর্যন্ত একটি বুর্জোয়া-হৃদয়ই স্পন্দিত হয়।
অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, বন্ধুমহলের সমাজতন্ত্রীদের কাছে এই “শ্রেণীপ্রভাব” শব্দটি খুব প্রিয়। এটি তাঁরা প্রায়শই একটি মোক্ষম অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে থাকেন। তাঁদের অমোঘ বিচারে কখন যে কে শ্রেণীদোষে দুষ্ট হয়ে যাবেন, সেটা বলা খুব মুশকিল। তাত্ত্বিক নই, সুতরাং আমার কাছে পুরো বিষয়টিই একটু গোলমেলে ও ধোঁয়াটে ঠেকে বৈকি। যাই হোক, যখন দেখি কবি শামসুর রাহমানের মত মানুষও কোনো কোনো মূল্যায়নকারীর রায়ে শ্রেণীদোষে দুষ্ট হন তখন স্বাভাবিকভাবেই মনে প্রশ্ন জাগে — কী এই “শ্রেণীপ্রভাব” ? কিসের ভিত্তিতে এর নিরূপণ হয়? যিনি রায় দিচ্ছেন, তিনি নিজে কোন শ্রেণীর মাঝে দাঁড়িয়ে কোন অধিকার বলে দিচ্ছেন সে রায় ? তাতে কতটা বস্তুনিষ্ঠতা আর কতটাই-বা গোঁড়ামিপ্রসূত পক্ষপাতদুষ্টতা? কতটা আদর্শের তাগিদ আর কতটা দলীয়কর্মী ও অনুসারীদের মন মানস নিয়ন্ত্রণের ধান্দাবাজি ? কতটা সততা আর কতটা ফন্দিবাজি ?
অপর এক স্থানে কমরেড খালেকুজ্জামান লিখেছেন:
(শামসুর রাহমান) বলতেন, “আমি ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যে বিশ্বাস করি, আর ব্যক্তির বিকাশ, তার সৃজনশীল বিকাশের প্রতিও আমি বিশ্বাসী, এবং এ পৃথিবীর সব মানুষের কল্যাণ হোক এবং মানুষ প্রগতির দিকে এগিয়ে যাক — এ বিশ্বাস আমার আছে।” তিনি আরও বলেছেন, “আমি তেমন একটি সমাজে স্বস্তি বোধ করবো যেখানে মানুষকে অনাহারে থাকতে হবে না, মানুষের পরার কাপড় থাকবে, খাবারের নিশ্চয়তা থাকবে এবং তার ব্যাক্তিত্ব ক্ষুণ্ন হবে না – এরকম সমাজে আমি থাকতে পছন্দ করবো যে সমাজ শোষণহীন এবং যেখানে দারিদ্র্যের নিপীড়নে মানুষ মারা যাবে না, এবং তার ব্যক্তিসত্তাটা ক্ষুণ্ন হবে না।” কবির এই সুন্দর চাওয়টা মহৎ। কিন্তু এ নিয়মশাসিত জগতে নিয়মের অনুশাসনের বাইরে কোন কামনা তা যত মহৎই হোক – বাস্তবে রূপ নেবার কোন পথ নেই। [গুরুত্বারোপ লেখকের]
মূল্যায়নকারীকে ধন্যবাদ জানাতে হচ্ছে শামসুর রাহমানের উক্তিটি তুলে ধরার জন্য। ব্যক্তি শামসুর রাহমানের সাধারণ মানুষের প্রতি অকপট ভালোবাসাই স্পষ্ট হয় এতে। এতে একদিকে যেমন অভুক্ত বস্ত্রহীন মানুষের জন্য প্রকাশ পেয়েছে কবির শোষণহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন, তেমনি রয়েছে তাদের ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য ও ব্যক্তিত্বের বিকাশ কামনা করার মতো যথেষ্ট শ্রদ্ধা ও মানবতাবোধ, যা দিন দিন বিরল থেকে বিরলতর হয়ে উঠছে এদেশের সৃজনশীল মানুষদের মধ্যে; একালের লেখকদের মধ্যে তো বটেই।
আজ বাংলাদেশের চরম দুর্দিনের কথাটাই ধরা যাক। সরকারের অব্যবস্থার কারণে সাধারণ মানুষ নিত্য-প্রয়োজনীয় চাল ডালটুকু পর্যন্ত কিনতে পারছে না। ছোট্ট শিশুরা স্কুল ফেলে চালের জন্য লাইনে; দিনমজুর তার জীবিকা ফেলে রেখে খাবারের জন্য লাইনে — যদি সস্তায় দু’মুঠো অন্ন জোটে (একেবারে আক্ষরিক অর্থেই), সে আশায়। মাঝে মাঝে মনে হয়, এমন দিনে কবি হয়তো চুপ থাকতে পারতেন না; যেমনটি তিনি থাকেননি তাঁর সারাজীবন। দুঃখের বিষয় হল, এমন দুর্দিনে কমরেড খালেকুজ্জামান কিংবা তাঁর দলের পক্ষ থেকে দেশবাসীর পাশে অর্থবহভাবে দাঁড়ানোর কোনো লক্ষণ আমাদের চোখে পড়েনি। উল্টো তাঁদের দেখেছি এই সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদ জুগিয়ে যেতে গত দেড়টি বছর ধরে। (এ বিষয়ে আরো বিস্তারিত একটা পোস্ট লিখবো সময় পেলে)। তাঁর দলের অনেকেই শুনি আজ খুশিতে আত্মহারা — কারণ, বুর্জোয়ারা নাকি এ যাত্রায় বাকি বুর্জোয়াদের কেটে-ছেঁটে নিশ্চিহ্ন করে দিচ্ছে এবং এতে করে নাকি তাঁদের দলের খুব লাভ হচ্ছে – কারণ, বিভিন্ন জেলায় নাকি আজ হাজার হাজার নতুন কর্মী বাসদে নাম লেখাচ্ছে। সে কর্মীদের আদর্শিক চেতনার মান, কিংবা স্থিরতা কতটুকু, সে প্রশ্ন না হয় না-ই বা তুললাম। আসল ঘটনা কী ঘটছে সেখানে, তা দলের নেতা কমরেড জামান নিশ্চয়ই জানেন; আমারাও যে তা কম-বেশি জানি না তা কিন্তু নয়। আর এই নীরবতা এবং সেনা সমর্থনের রহস্য যে সাধারণ মানুষ অনুমান করতে পারে না, তাও নয়। কারো মতে এটা ক্ষমতার লোভ। আবার কেউ মনে করেন এটা দলের দিক থেকে হঠাৎ উপলব্ধি, যে, এ যাত্রায় কোরেশীদের সাথে লেগে থাকতে পারলে ভাগ্যের ফেরে ক্ষমতার শিকেটা ছিঁড়ে তার কিছু ভাগ পাওয়া গেলেও যেতে পারে। [‘আঁতাত’ এবং ‘কোরেশী’ বিষয়ে লেখকের মন্তব্য-প্রত্যুত্তর ৭ এবং ৪৩ দ্রষ্টব্য; আরো দেখুন ৩৪, ৩৮-৪০ এর বিপরীতে লেখকের প্রত্যুত্তর]।
আরেক স্থানে খালেকুজ্জামান লিখেছেন:
এক্ষেত্রে শোষণমুক্ত কল্পনার রাজ্য তথা কাল্পনিক সমাজতন্ত্রের অসার অসংগতিপূর্ণ ধারণার বদলে ইতিহাস নির্ধারিত বিজ্ঞানসম্মত বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের ভাবাদর্শের মাধ্যমে কীভাবে সত্যিকার মানবমুক্তি, শোষণমুক্তির পথ রচিত হয়ে আছে সে বিষয়ে শামসুর রাহমানের সঠিক উপলব্ধির ঘাটতির কারণে তিনি বর্তমান সময়ের দুঃখ-জ্বালা, শাসকশ্রেণীসহ সকল প্রতিক্রিয়াশীল শ্রেণীর শোষণ-পীড়ন-নির্যাতনে ক্ষত-বিক্ষত হলেও, মানবিক প্রেমে-আবেগে নৈসর্গিক সৌন্দর্যে সকলকে উদ্বেলিত করতে পারলেও, সকল শোষণ-পীড়ন থেকে মুক্তির আরও সুন্দর ভবিষ্যতের সঠিক দিশা তুলে ধরতে অসমর্থ হয়েছেন। . . . যথার্থ গণমুক্তির জন্য বুর্জোয়া ব্যবস্থার বিরুদ্ধে গণবিপ্লবের প্রয়োজনীয়তা তাঁর উপলব্ধিতে ধরা পড়েনি। [গুরুত্বারোপ লেখকের]
কাউকে কোনো কাজে ব্যর্থ আখ্যা দেয়ার আগে যে বিষয়টা সর্বাগ্রে বিবেচ্য তা হল — সে কাজটা তার ওপর অর্পিত দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত ছিল কিনা। যতদূর বুঝি, জবাবদিহিতার ব্যাকরণে সেটাই হল প্রথম পাঠ। সুতরাং প্রশ্ন হল, ‘সুন্দর ভবিষ্যতের সঠিক দিশা’ তুলে ধরা কি কবি শামসুর রাহমানের নিয়মিত দায়িত্বের অংশ ছিল যে তাঁকে সে দায়িত্বে ব্যর্থতার জন্য দায়ী করা হচ্ছে আজ ? সবকিছু, এমনকি সমাজ পরিবর্তনের সঠিক ‘দিশা’-টুকুও যদি কবিকেই দিয়ে যেতে হয়, তাহলে কমরেড খালেকুজ্জামানের মতো বিচক্ষণ ও ত্যাগী নেতারা এবং তাঁদের বিপ্লবী দল কী করবে? এখানে মনে রাখতে হবে কমরেড জামানের দল বাসদের নেতাদের ভরণপোষণ থেকে শুরু করে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার অর্থ আসে জনগণের কাছ থেকে, গণচাঁদার আকারে। সুতরাং অজান্তেই জনগণের ট্রাস্টির ভূমিকায় কমরেড খালেকুজ্জামান ও তাঁর দল অধিষ্ঠিত হয়ে আছেন, প্রয়াত কবি শামসুর রাহমান নন। আর জনগণ থেকে অর্থ নিয়ে সেই ট্রাস্টির দায়িত্ব বাসদের মতো বড় একটি সমাজতান্ত্রিক দল গত দেড় বছরে কতটুকু পালন করেছে জনগণের দুর্দিনে পাশে দাঁড়িয়ে ‘সঠিক দিশা’ দেয়ার ক্ষেত্রে, তার বিচারও জনগণ সময়মতো করবে, সে বিশ্বাস আমাদের আছে। সুতরাং অন্যের দায়িত্বের মূল্যায়নের আগে নিজেদের দায়িত্বে অবহেলা বা ব্যর্থতাগুলো কি একটু খতিয়ে দেখার সময় আসেনি কমরেড খালেকুজ্জামানের মতো একজন তীক্ষ্ণধী মূল্যায়নকারীর ?
অনেকটা বলতে বাধ্য হচ্ছি, বাসদের মতো দলের “ইতিহাস নির্ধারিত বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের ভাবাদর্শের” পথে চলার নমুনা যদি হয় স্বৈর-সামরিক সমর্থনপুষ্ট আমলানির্ভর সরকারের তাঁবেদারি — যে সরকার কিনা শুরু থেকেই জনবিরোধী, গণতন্ত্র ও রাজনীতি বিরোধী, রাজনৈতিক প্রক্রিয়াবিরোধী, মানবাধিকার বিরোধী, প্রতিক্রিয়াশীল, সংবিধানবিরোধী এবং সর্বোপরি উন্নয়নবিরোধী — তখন বুঝি আমাদের অবাক হবার ক্ষমতাও লোপ পায় ! জামান সাহেব এবং তাঁর দলের সমর্থনপুষ্ট এই সরকারের বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলো এইমাত্র করলাম তার পক্ষে অগুনতি উদাহরণ দাঁড় করাতে পারি, নিকট অতীত থেকেই। যেমন: এই সরকার অজুত শ্রমিককে পথে বসিয়েছে; তাদের হাতে পাট ও গার্মেন্ট শ্রমিকদের নীপিড়ন-নির্যাতনের কথা না হয় বাদই দিলাম। এই সরকার মত প্রকাশের স্বাধীনতার টুঁটি চেপে ধরেছে (ডিজিএফআই কর্তৃক তাসনীম খলিলের উপর নির্যাতন, ইন্টারনেট, পত্রিকা ও টিভি চ্যানেলগুলোর উপর সরকারের খবরদারি)। এই সরকার মৌলবাদী শক্তির সাথে আপোস করেছে (আরিফের কার্টুন, নারীনীতি)। এই সরকার সংখ্যালঘু জাতিসত্তার ন্যূনতম বাঁচার এবং জীবিকার অধিকারটুকুও কেড়ে নিয়েছে (মধুপুর বনের গারো নেতা চলেশ রিচিল হত্যা, পার্বত্য চট্টগ্রামের ‘সাজেক’ -এ অনাচার, অলকেশ চাকমা এবং আরো চারজনের অপহরণ)। দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক ঊর্ধ্বগতি, রেকর্ড মুদ্রাস্ফীতি, খাদ্য ও বিদ্যুৎ সংকট — সব মিলিয়ে এই সরকারের সময় মানুষের খেয়েপরে বেঁচে থাকাই এক কঠিন অস্তিত্বের সংগ্রামে পরিণত হয়েছে। আর যে যতই মিথ্যা এবং আইনি তত্ত্বের প্রলেপ দেয়ার চেষ্টা করুক না কেন, এই সরকারের না আছে সাংবিধানিক বৈধতা, না আছে আইনের শাসন, মানবাধিকার এবং সংবিধানের প্রতি কোনো শ্রদ্ধাবোধ। দেশের সাধারণ মানুষ মাত্রেই দেখেছেন হাই কোর্টের রায়গুলো কি বিচিত্র ফর্মুলায় সুপ্রীম কোর্টে গিয়ে একের পর এক উল্টে গেছে গত দেড়টি বছর। ইদানীং আবার তারেক জিয়াদের মতো বড় বড় দুর্নীতিবাজদের নিরাপদে বিদেশে পাচার করার জোর পাঁয়তারা চলছে। এ নিয়ে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা লেখা যেতে পারে। প্রশ্ন হল, বাসদের মতো দলটির কি এসব বিষয় অজানা ? আমার বিশ্বাস তাঁরা এ বিষয়গুলো আমাদের মতো সাধারণ নাগরিকদের চেয়ে অনেক ভালো জানেন এবং বোঝেন। কে জানে, তাঁদের “ইতিহাস নির্ধারিত বিজ্ঞানসম্মত বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের ভাবাদর্শের” শিক্ষা হয়তো এভাবেই ‘জনগণের রাজনীতি’ চালিয়ে যাবার দিক নির্দেশনা দেয় আজকাল (যার মোদ্দা কথা সামরিক সরকারের তাঁবেদারি এবং জনগণের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা )। প্রয়াত কবি শামসুর রাহমান অন্তত, যতদূর জানি, জীবনে কোনোদিন জনগণের বিপরীতে দাঁড়িয়ে স্বৈর সামরিক সরকারের তাঁবেদারি করেননি। সন্ত জন-এর গসপেল-এ একটি কথা আছে : let him who is without sin cast the first stone. সেই বিচারে কমরেড খালেকুজ্জামানের কতটুকু নৈতিক ঊর্ধ্বাবস্থান আছে কবি শামসুর রাহমানের সমাজ-রাজনৈতিক মানস বিচারের, সে বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহের অবকাশ থাকে। আমি জানি, কমরেড জামানের নেতৃত্বাধীন বাসদের গত দেড় বছরের রাজনৈতিক ভূমিকার এই বয়ান কারো কারো কাছে প্রসঙ্গবহির্ভূত মনে হতে পারে। কিন্তু এই তুলনামূলক আলোচনাটির দরকার ছিল কবির রাজনৈতিক ভূমিকার মূল্যায়নকারীদের দলীয় রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট এবং স্বীয় অবস্থান আরো ভালোভাবে বোঝার জন্য।
আরেকটা বিষয় না বললেই নয়। কবি শামসুর রাহমানের মতো একজন মানবতাবাদী সংবেদনশীল মানুষ যখন শোষণহীন সমাজের আবেগ ও স্বপ্নকে লালন করেন, তার মধ্যে একধরণের সারল্য এবং সততা থাকে। তাঁর নির্জলা চিন্তা এবং চাওয়ার মধ্যে আমাদের চেনাজানা বহু তত্ত্ববাগীশদের চর্চিত বাগাড়ম্বরি ভেক নেই। কে জানে, হয়তো সেটাই হয়েছে শামসুর রাহমানের মতো মানুষদের সবচাইতে বড় অপরাধ — যার জন্য তাঁর সহজসরল স্বপ্নগুলোও আজ আখ্যায়িত হয় “শোষণমুক্ত কল্পনার রাজ্য” কিংবা “কাল্পনিক সমাজতন্ত্রের অসার অসংগতিপূর্ণ ধারণা” হিসেবে।
দুই.
অন্যদের কথা জানি না , তবে আমার কেন জানি মনে হয়, এই পুরো মূল্যায়নপ্রচেষ্টার মধ্যেই কোথায় যেন একধরণের ধৃষ্টতারও আভাস রয়েছে; সাধারণ শিষ্টাচারবোধের অভাব তো বলাই বাহুল্য। এ কারণেই জরুরি হয়ে পড়ে আরেকটু গভীর বিশ্লেষণ। সেই সঙ্গে খুঁজে দেখতে হয় পুরো ব্যাপারটার মধ্যে ধৃষ্টতার বাইরেও সমাজতান্ত্রিক আদর্শের বদহজমজনিত কোনো জটিলতর রোগের লক্ষণ রয়েছে কিনা। ভেবে দেখতে হয় এর মধ্যে কোনো সাধারণ ছক বা প্যাটার্নের পুনরাবৃত্তি ঘটছে কিনা যা বহুদিন ধরে চলে আসা কোনো অচলায়তন কর্ম ও চিন্তাপদ্ধতিকে প্রতিফলিত করে। ভাবতে ভাবতে মনের কোণে কয়েকটি উদাহরণ ভেসে উঠল; তার কোনো কোনোটা নিকট অতীতের, কোনোটা অর্ধ শতকেরও বেশি আগের।
সোভিয়েত লেখক মিখাইল শলোখভ এর কথাই ধরা যাক, যিনি ১৯৬৫ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন তাঁর কালজয়ী উপন্যাস “ধীরে বহে ডন”- এর জন্য। সারা পৃথিবী যখন তাঁর প্রতিভায় শ্রদ্ধাবনত, তাঁর নিজের দেশে তখন তিনি সম্মুখীন হয়েছেন একের পর এক হয়রানির। তাঁর অপরাধ হল : ডন নদীতীরের মানুষদের নিয়ে লেখা এ উপন্যাসের মূল চরিত্র “গ্রিগরি মেলেখভ” — যাকে শলোখভ সৃষ্টি করেছেন গভীর মমতা ও যত্ন নিয়ে — একজন অকমিউনিস্ট কসাক। কমিউনিস্ট পার্টির কর্তাব্যক্তিরা এতে অত্যন্ত নাখোশ হন। এর পেছনে তাঁরা শলোখভের সাম্যবাদী আদর্শের প্রতি নিষ্ঠার অভাব দেখতে পান। ফলতঃ জীবদ্দশায়ই তাঁর উপন্যাস সোভিয়েত কর্তৃপক্ষের সেন্সরশিপের জাঁতাকলে পিষ্ট হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে এমনও অপবাদ ছড়ানো হয়েছে যে পুরো উপন্যাসটিই শলোখভ আসলে অন্যের কাছ থেকে চুরি করেছেন। সবচেয়ে বিস্ময়কর ব্যপার হল, কোনো এক স্থানীয় বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পরিচালককে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল তাঁর লেখার সাহিত্যিক এবং আদর্শিক মান বিচার করে (!) তাঁর বিরুদ্ধে “প্রয়োজনীয়” ব্যবস্থা গ্রহণের। সব প্রচেষ্টা যখন ব্যর্থ হয়েছে, তখন এমনকি শলোখভকে বিষ খাইয়ে হত্যা করারও চেষ্টা হয়েছে; হয়েছে শল্য চিকিৎসার সাজানো নাটকের মাধ্যমে অপারেশন টেবিলে হত্যার ষড়যন্ত্র; হয়েছে নিরাপত্তা-গোয়েন্দা সদস্যদের দিয়ে তাঁকে গ্রেফতারের সময় “পালানোর চেষ্টার অভিযোগ” তুলে গুলি করে মেরে ফেলার ষড়যন্ত্র। ভাগ্যক্রমে, কিছু উচ্চপদস্থ শুভানুধ্যায়ী (যাঁদের একজন ছিলেন যোসেফ স্তালিন) থাকাতে শলোখভ শেষ পর্যন্ত প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন। কিন্তু এতো আজ কারো অজানা নয় যে সে সময়ের বাকি অজস্র লেখক-কবি-সাহিত্যিকদের সবার সেই সৌভাগ্য হয়নি। আদর্শিক শুদ্ধি অভিযানের নামে তাদেরকে দেয়া হয়েছে সাইবেরিয়ায় যাবজ্জীবন সশ্রম নির্বাসন, কারণ কর্তৃপক্ষের বিচারে তাদের লেখা যথেষ্ট “লাল” ছিল না। আগের কথায় ফিরে আসি। কোনোমতে প্রাণে বেঁচে গেলেও সারাজীবন শান্তি পাননি শলোখভ। সমাজতান্ত্রিক আদর্শের ধ্বজাধারী কিছু পার্টি কর্মকর্তা তাড়া করে ফিরেছে তাঁকে সোভিয়েত রাষ্ট্রের এ প্রান্ত থেকে সে প্রান্ত — যারা আদপে ছিল গোঁড়া, কূপমণ্ডুক, মৌলবাদী, এবং বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই সাহিত্যের মান বিচারের ক্ষমতা ও যোগ্যতাহীন। এসব দেখে মনে হয়, কবি শামসুর রাহমানের সাত পুরুষের ভাগ্য যে তিনি সোভিয়েত রাশিয়ায় জন্মাননি; সম্ভবত এটাও কবির পরম ভাগ্য — তিনি কোনো “সমাজতান্ত্রিক” বাংলাদেশে জন্মাননি যার রাষ্ট্রক্ষমতায় কমরেড জামানের মত মূল্যায়নকারীরা।
কাছের বন্ধুদের অনেকেই এ ধারার রাজনীতির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত থাকায় কিছু জিনিস খুব কাছ থেকে দেখার সৌভাগ্য হয়েছে। পেছন ফিরে দেখলে এখন বুঝতে পারি, পরিচিত অনেকের মধ্যেই একচোখা “সমাজতান্ত্রিক মূল্যায়নের” এসব লক্ষণ কমবেশি সবসময়ই ছিল। অন্যান্য দলগুলোর কথা জানি না, তবে পরিচিতদের অনেকেই সদস্য ছিল কমরেড জামানের বাসদ ও এর ছাত্র সংগঠন সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের। ওদের কাছ থেকেই শুনেছি কীভাবে দলের বিভিন্ন পাঠচক্র থেকে শুরু করে সাধারণ আলোচনায় এক ধরণের সীমিত এবং একপেশে দৃষ্টিভঙ্গির চর্চা চলে আসছিল বহুদিন ধরে। যেমন সাহিত্যের কথাই ধরা যাক — দলের চোখে রবীন্দ্রনাথের চেয়ে শরৎচন্দ্র অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ লেখক ছিলেন। কারণ, দু’জনেই পেটি বুর্জোয়া হলেও প্রথমজন দলের চোখে আপোসকামী ধারার প্রতিনিধি এবং পরের জন সংগ্রামী ধারার। এই পক্ষপাতের মূল কারণ হিসেবে শরৎচন্দ্রের “পথের দাবী” উপন্যাসটি প্রায়ই আলোচনায় আসতো, যেটির অবস্থান ছিল পার্টির সুপারিশকৃত পাঠ্যতালিকায় উপরের দিকে। যতদূর শুনি, সেই তালিকার কোনো মৌলিক পরিবর্তন হয়নি এতদিন পরও। প্রিয় পাঠক, আপনারা যদি উপন্যাসটি না পড়ে থাকেন, তবে অনুরোধ করব চট করে পড়ে নেবার। ছোট্ট একটি সূত্র দিচ্ছি — এক গেলাস মাসুদ রানা ( কাজী আনোয়ার হোসেনের “দূর্দান্ত দুঃসাহসী স্পাই,” যে কিনা “গোপন মিশন নিয়ে ঘুরে বেড়ায় দেশ দেশান্তরে”!), এক মুঠো কবির চৌধুরী (একই লেখকের সৃষ্ট পাগল বৈজ্ঞানিকের চরিত্র), সেইসাথে এক চিমটি বনহুর (রোমেনা আফাজের সৃষ্ট রমণীমোহন সেই দস্যুচরিত্র) - এই সবগুলো উপাদানকে যদি একপাত্রে মিশিয়ে নিতে পারেন তাহলে যে অদ্ভুত জগাখিচুড়িটি পাবেন সব মিলিয়ে তা “পথের দাবী”র মতো তথাকথিত এই সংগ্রামী উপন্যাসটির চেয়ে দূরবর্তী কিছু নয়। উপন্যাসটির মান কিংবা এতে সৃষ্ট চরিত্রগুলো নিয়ে আমি আর কোনো মন্তব্য করতে চাই না। বিচিত্র এই সংমিশ্রণটির সাহিত্যিক গুণাগুণ বিচারের ভার আমি বরং বোদ্ধা পাঠকের হাতেই ছেড়ে দিচ্ছি। সাহিত্য হিসেবে সাধারণ বিচারের পাশাপাশি এমনকি শরৎচন্দ্রেরও অন্যান্য লেখার বিপরীতে “পথের দাবী” উপন্যাসটির মান কী দাঁড়ায় তুলনামূলক বিচারে তাও বিবেচনা করার অনুরোধ ও আহ্বান রইলো পাঠকের প্রতি।
প্রশ্ন সেখানে নয়। প্রশ্ন হল, কোনো সাহিত্যে সমাজতন্ত্রের কথা কিংবা সশস্ত্র সংগ্রামের কথা থাকলেই কি তা উন্নত সাহিত্য হয়ে যায়? “গ্রহণযোগ্য” হয়ে যায়? আর সে সব না থাকলেই কি সে সাহিত্য “শ্রেণী সীমাবদ্ধতার” দোষে দুষ্ট হয়ে যায়? অসম্পূর্ণ হয়ে যায়? কে ঠিক করেছে সাহিত্য বিচারের এমন অদ্ভুত মাপকাঠি? একজন সাহিত্যিক যখন লেখেন তখন তিনি নিশ্চয়ই কোনো স্লোগান কিংবা মেনিফেস্টো সামনে রেখে লিখতে বসেন না। অতীতে যে-সব সাহিত্যিক সেভাবে লিখেছেন (যেমন করেছেন অনেকেই সোভিয়েত ইউনিয়নে, বাধ্য হয়ে কিংবা আপোস করে), তাঁদের সাহিত্যকর্মটিই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সবার আগে। এ বিষয়ে সততা, স্বতঃস্ফূর্ততা কিংবা সৃষ্টিমৌলিকতার বিষয়গুলোর কথা যদি বাদও দিই।
শামসুর রাহমানের বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের চেতনার অভাবের কথা লিখেছেন কমরেড খালেকুজ্জামান। “পথের দাবী” উপন্যাসের সব্যসাচী’র চরিত্র কতখানি বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র ধারণ করে, কিংবা তাত্ত্বিক বিচারে লেখক শরৎচন্দ্রই বা কতখানি “সমাজ পরিবর্তনের দিশা” আমাদের দেন, কিংবা বর্তমান সমাজ প্রেক্ষাপটে শরৎ আদৌ প্রাসঙ্গিক কিনা, কই কমরেড জামান কিংবা তার দল তো কখনো সেসব বিষয়ে সমালোচনাধর্মী নিবন্ধ লেখেন না ! যে-কোনো সাহিত্যকে প্রথমে তো অন্তত সাহিত্যের মাপকাঠিতে উত্তীর্ণ হতে হবে, তার পর তার তত্ত্ব বিচারের প্রশ্ন, নিতান্তই যদি করতে হয়। স্বীকার করে নিতে বাধা নেই — সাহিত্য বিচারের অধিকার হয়তো পাঠকমাত্রেরই কমবেশি রয়েছে। তবে বিচারের প্রশ্ন যখন ওঠে, তখন অনেকটা অবশ্যম্ভাবীভাবেই বিচারকের যোগ্যতাটাও বিবেচনার মধ্যে আনতে হয়।
দুঃখজনক হলেও সত্যি, অন্যান্য সাহিত্য বিচারের ক্ষেত্রেও এধরণের দ্বৈতনীতির প্যাটার্ন লক্ষ করেছি পরিচিত অনেক সমাজতন্ত্রীর মধ্যে। প্রায়ই তাঁরা এরকম অদ্ভুত সরলীকৃত একধরণের তুলনা করে থাকেন কবি জীবনানন্দ দাশ ও সুকান্ত ভট্টাচার্যের মধ্যেও, এমনকি রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের মধ্যেও। সেসব ক্ষেত্রে কার বা কাদের ব্যপারে পার্টির পক্ষপাত একটু বেশি, তা বুদ্ধিমান পাঠক সহজেই অনুমান করতে পারেন। এখানে বলে রাখা দরকার — পার্টিকর্মীদের যদিও রবীন্দ্রনাথ কিংবা জীবনানন্দ পড়তে সরাসরি নিষেধ করা হয় না কখনো, একধরণের অসম্পূর্ণ এবং ত্রুটিপূর্ণ মূল্যায়নের চশমা তাদের হাতে ঠিকই ধরিয়ে দেয়া হয় নানা পার্টি কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে। তদুপরি, পার্টির অভ্যন্তরে প্রতিটি কর্মীর ভেতর বাকি কমরেডদের কাছে সমালোচিত না হবার তাগিদ তো রয়েছেই; রয়েছে গ্রহণযোগ্যতা লাভের তাগিদ — পাছে তাদের আদর্শিক নিষ্ঠা নিয়ে অন্যরা প্রশ্ন তোলে! এসবের মাঝেই জন্ম নেয় “অন্তর্গত-সমালোচনা-বিমুখ” এক আত্মবিধ্বংসী সংস্কৃতির। কেউ আর তখন “অপ্রিয়” কিংবা কঠিন কোনো প্রশ্ন করতে চায় না। অতীতে যারা প্রশ্ন তুলেছে, তারা সবাই কালে কালে ছিটকে পড়েছে দলের পরিমণ্ডলের বাইরে; অনেক উদাহরণ আছে তার।
স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ ছেলেমেয়েরা “গণমুখী” সমাজতান্ত্রিক রাজনীতির ঐতিহাসিক ন্যায়বিচারের দিকটির দ্বারা আকৃষ্ট হয়ে দলটির কাছে আসে। অবক্ষয়ী রাজনীতির বিপরীতে নিবেদিতপ্রাণ সমাজতান্ত্রিক নেতাকর্মীদের আদর্শমুখী অতি-সাধারণ জীবনযাপনের দৃষ্টান্ত নিজের চোখে দেখে তাদের সেই প্রাথমিক আকর্ষণ বা মোহ পরিণত হয় শ্রদ্ধা ও নির্ভরতায়। পত্তন হয় এক ধরণের mentorship বা বুদ্ধিবৃত্তিক গুরুশিষ্যের সম্পর্কের। (আমি জানি বাসদের নেতারা এর সাথে দ্বিমত পোষণ করবেন; তাঁরা দাবি করবেন এ সম্পর্কের ধরণ নিতান্তই যুক্তি ও আদর্শভিত্তিক)। আর তরুণ সে-সব পার্টিকর্মীদের অপরিপক্ব মনের ওপর যখন গোঁড়ামিনির্ভর আধাসত্য তাত্ত্বিক দিকনির্দেশনা চাপিয়ে দেয়া হয় শিল্প-সাহিত্য বিচারের অজুহাতে, তখন এর কি সুদূরপ্রসারী ক্ষতিকর প্রতিক্রিয়া হতে পারে তাদের সার্বিক মনন বিকাশে, সে নিশ্চয়ই বলে দেবার প্রয়োজন হয় না। আমার নিজের চারপাশেই অন্তত কয়েক ডজন উদাহরণ রয়েছে আজ — কেমন করে একের পর এক আদর্শবাদী বুদ্ধিমান সব তরুণ-তরুণীর মনমানসকে পঙ্গু করে দেয়ার আয়োজন চলেছে সেখানে (ইচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায়), স্রেফ আদর্শের নামে। বিশ্বাস এবং নির্ভরতার অবস্থানে থাকা কেউ যখন কাউকে ভুল দিকনির্দেশনা দেয়, ভুল দৃষ্টিভঙ্গিতে বিচার করতে শেখায়, মনোজগৎকে সীমাবদ্ধ করতে শেখায় — তখন তাকে কী বলে?
কার্ল মার্কসের একটি উক্তি দিয়ে শেষ করবো। দ্বান্দ্বিক ও ঐতিহাসিক বস্তুবাদ তথা বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের জনক মার্কস-এঙ্গেলস আশা করেছিলেন, তাঁদের দর্শন পথ রচনা করবে এমনই এক মুক্তচিন্তার সংস্কৃতির, যার ভিত্তি হবে বিতর্ক গবেষণা এবং প্রতিটি বিষয়ে প্রশ্ন করতে পারার মতো পরিবেশ। কিন্তু নিজের জীবদ্দশাতেই অত্যুৎসাহী অনেক কমিউনিস্ট নেতার তত্ত্বের প্রতি গোঁড়ামি ও কূপমণ্ডুক দৃষ্টিভঙ্গি দেখে হতাশ কার্ল মার্কস নিজেই বলতে বাধ্য হয়েছিলেন: “thank God, I am not a Marxist !” কমরেড খালেকুজ্জামানকৃত কবি শামসুর রাহমানের এই মূল্যায়নটি পড়ে আমার এ উক্তিটিই মনে পড়ে গেল।
[যুগপৎ প্রকাশ: ওয়ার্ডস এন্ড বাইটস | প্রাসঙ্গিক: ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮, ৯, ১০, ১১, ১২, ১৩]
ইনসিডেন্টাল ব্লগার
মূল ধারার সংবাদ মাধ্যমগুলোর বেশীরভাগের ভূমিকায় অনেকটা নিরাশ হয়েই লিখতে শুরু করেন "ইনসিডেন্টাল ব্লগার" ছদ্মনামে।
১১৮ comments
Pingback: ওয়ার্ডস এন্ড বাইটস
মাসুদ করিম - ১২ জুলাই ২০০৮ (৬:৪০ অপরাহ্ণ)
যত মন্তব্য হবে ততই বিষয়টি আরো আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে।দেখা যাক কতগুলো মন্তব্য পাওয়া যায়।
প্রলয় - ১২ জুলাই ২০০৮ (৯:৩৬ অপরাহ্ণ)
@ মাসুদ করিমঃ
একবার হল কি, এক জমিদার ঠিক করলেন তার একটি দুধের পুকুর চাই। পুকুর খনন করা হল । ঢোল সহরত করে আদেশ দেয়া হল যে, কোন এক শুভদিনে জমিদারের ঐ পুকুরে গ্রামবাসীদের প্রত্যেককেই এক কলসী করে দুধ ঢেলে দিতে হবে । নিজ নিজ বাড়ী থেকে এ দুধ আনতে হবে । তবেই হবে দুধের পুকুর । গ্রামবাসীদের প্রত্যেকেই ভাবল, “বাকী সবাই তো দুধের কলসী নিয়ে যাবে, ফলে, আমি এক কলসী পানি নিয়ে পুকুরে ঢাললে তাতে দুধের পুকুরের কোন ক্ষতি হবে না।” বেশীরভাগই এই চিন্তা করে পানির কলসী নিয়ে গেল। দুধের পুকুর আর হল না ।
ইনসিডেন্টাল ব্লগার - ১২ জুলাই ২০০৮ (১০:০৬ অপরাহ্ণ)
কিছুটা প্রসঙ্গের বাইরে হলেও বেশ জমে উঠছে মনে হয়। প্রলয়, আপনার গল্পের অন্তর্নিহিত বক্তব্য মনে হয় কিছুটা ধরতে পারছি; মাসুদ করিমও পেরেছেন সন্দেহ নেই। তবে কথা হল, পুকুরে আপনি হলে কি নিয়ে হাজির হতেন? আমার (এবং বাকী সবার) বেশী আগ্রহ সেটা জানার।
Pingback: শলোকভ থেকে শামসুর: সমাজতান্ত্রিক অবমূল্যায়ন | আমারব্লগ
রেজাউল করিম সুমন - ১৪ জুলাই ২০০৮ (১০:৩৯ পূর্বাহ্ণ)
জামান সাহেবের এই লেখাটির কথা জানা ছিল না। পুস্তিকাটি দেখিনি; এখন ইনসিডেন্টাল ব্লগারের দেয়া লিংক থেকে ডাউনলোড করে নিয়ে পিডিএফ ফরম্যাটে লেখাটা পড়লাম। একটু সময় নিয়ে পরে মন্তব্য করব। পোস্ট-লেখক কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গ উত্থাপন করেছেন।
শান্ত - ১৪ জুলাই ২০০৮ (১২:৪৮ অপরাহ্ণ)
বাসদের কোন কর্মসূচী কোন অবস্থানে আপনার মনে হয়েছে- এই সেনা সমর্থিত সরকারের সাথে তাদের আঁতাত রয়েছে?
কোথায় পেলেন যে- বাসদ কর্মীরা এই সরকারের পদক্ষেপে দারুন খুশী????
এ ধরণের সাহিত্য আলোচনায় অহেতুক মিথ্যা ভাষণ এবং বানোয়াট অভিযোগ আনয়ন আপনার উদ্দেশ্য সম্পর্কেই সন্দিহান করে।
আলমগীর কবির - ১৪ জুলাই ২০০৮ (৩:২১ অপরাহ্ণ)
রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন!
শান্ত - ১৪ জুলাই ২০০৮ (৫:৫৪ অপরাহ্ণ)
ভাই আলমগীর কবির,
হারজিতের তো কোন ব্যাপার নেই এখানে। শামসুর রাহমানকে নিয়ে বাসদ তথা খালেকুজ্জমানের একটি মূল্যায়ন পথিকৃৎ পত্রিকায় ছাপা হয়েছে। সেই মূল্যায়নের সাথে অনেকেরই দ্বিমত থাকতে পারে- থাকাটাই স্বাভাবিক।
যেকোন মূল্যায়ন অনেক ডাইমেনশন থেকেই হয়ে থাকে; শিল্প-বোদ্ধাদের মধ্যেই সাহিত্য-শিল্পের মূল্যায়ন নিয়ে নানামত দেখা যায়- মার্ক্সীয় ঘরানার মূল্যায়নও আরেক ডাইমেনশন থাকে- থাকাটাই স্বাভাবিক।
এখন সেই মূল্যায়ন নিয়ে যদি দ্বিমত বা আপত্তি থেকে থাকে কারো- তবে সেগুলোকে খণ্ডন করে একটি আলোচনা আসতেই পারে, তবে এরকম অভিযোগমূলক আলোচনা একটি সাহিত্য সমালোচনার সাথে খাপ খায় না। আর, অভিযোগ যখন আসে, তখন সেগুলোর স্বপক্ষে যথেস্ট তথ্য প্রমাণ থাকাটাই কাম্য। নাহলে তা হয়ে যায় ভিত্তিহীন গালিগালাজ।
একটি সাহিত্য আলোচনা পড়তে এসে এমন গালিগালাজ দেখে একটু রাগ হতেই পারে- সেখানে সমস্যা দেখি না। হারজিত প্রসঙ্গ এখানে অবান্তর। কেননা- খালেকুজ্জামানের লেখাও আমার পড়া এবং আমি জানি এই দলটি কেমন। ফলে এটাও জানি যে, ওনার কোন অভিযোগ সত্য নয়।
ধন্যবাদ।
ইনসিডেন্টাল ব্লগার - ২২ জুলাই ২০০৮ (৬:০২ অপরাহ্ণ)
একটি সাহিত্য আলোচনা পড়তে এসে এমন গালিগালাজ দেখে একটু রাগ হতেই পারে
>>এটি স্রেফ একটি “সাহিত্য আলোচনা” সে ধারণা আপনি কোথা থেকে পেলেন? স্পষ্টতই এই পোস্টটি তালিকাভূক্ত করা হয়েছে “রাজনীতি”, “সমাজতন্ত্র” এবং “সাহিত্য” – এই তিনটি বিষয়বস্তুর আওতায় (পোস্টের উপরে দেখুন)। বিষয়বস্তু নিয়ে এক্সপেকটেশানটা একটু কি মনগড়া হয়ে গেল না আপনার দিক থেকে?
ইনসিডেন্টাল ব্লগার - ১৪ জুলাই ২০০৮ (৫:৪৮ অপরাহ্ণ)
@ শান্ত # ৬
-আপনি লিখেছেন: “কোথায় পেলেন যে- বাসদ কর্মীরা এই সরকারের পদক্ষেপে দারুন খুশী????”
– আমার লেখার ঠিক কোথায় পেলেন এ বক্তব্য, বুঝলাম না। কর্মীদের সম্বন্ধে তো এমন কিছুই বলিনি আমি। বলার মানেও হয়না। সবাই জানি, বাসদের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ “টপ ডাউন”, “বটম আপ” নয় (“ডেমোক্র্যাটিক সেনট্রালিজম”!)। সুতরাং কিছু যদি বলেই থাকি, বোঝাতে চেয়েছি বাসদের নেতৃত্বকে। কর্মীদের বোঝাতে চাইনি। ভালো করে না পড়ে কল্পনাপ্রসূত মন্তব্য করবেননা প্লীজ।
-আপনি জানতে চেয়েছেন “বাসদের কোন্ কর্মসূচী কোন্ অবস্থানে মনে হয়েছে- এই সেনা সমর্থিত সরকারের সাথে তাদের আঁতাত রয়েছে?”
–পোস্টে লিখেছি এ বিষয়ে ভবিষ্যতে সময় পেলে বিস্তারিত কিছু লিখবো। যাই হোক, আপনাকে ধন্যবাদ জানাতে হচ্ছে আমাকে বিষয়টা আপাতত এই স্বল্প পরিসরে অবতারণার সুযোগ করে দেয়ার জন্য।
সমালোচনা করি কারণ বাসদ নিজেকে আদর্শিক রাজনীতি ও বিপ্লবী চেতনার ধারক বলে দাবী করে। এবং আমার মত আরো অনেকেই এখনো তা বিশ্বাস করতে চায়। বিএনপি, আওয়ামী লীগ, জামায়াত কিংবা খেলাফত মজলিসকে এ ধরণের সমালোচনার যোগ্যও মনে করিনা আমরা। সমালোচনা করছি কারণ আজ আমরা বাসদের ভূমিকায় বিভ্রান্ত। ১/১১ অভ্যুত্থানের পূর্বাপর ডিসেম্বর ‘০৬ থেকে মার্চ ০৭ পর্যন্ত চার মাস পার্টির মূখপত্র “ভ্যানগার্ড” এর প্রকাশনা যখন বন্ধ ছিল, তখন তার পেছনে কি বিপ্লবী চিন্তা কাজ করছিল? অগ্রসর রাজনীতির ধারক বলে দাবীদার হয়েও যখন বাসদ এই সরকারকে “সামরিক” হিসেবে চিহ্নিত করেনি এবং এর অপসারণ আন্দোলনের ডাক দেয়া থেকে বিরত ছিল – তখন তার পেছনে কোন বিপ্লবী চিন্তা কাজ করেছিল?
এই সরকারের সাংবিধানিক বৈধতাকে প্রশ্ন করে বাসদ প্রকাশ্যে কি কি প্রতিবাদী কর্মসূচী নিয়েছে গত দেড় বছর বলতে পারেন? সম্ভব হলে অন্যকে “মিথ্যাবাদী” বলে গাল না দিয়ে সে সব কর্মসূচীর একটা তালিকা দেবেন দয়া করে। আমরা তা জানতে চাই।
কিসের ভিত্তিতে বাসদ বৈধতাহীন এ সরকারের তথাকথিত দূর্নীতিবিরোধী অভিযানকে শুরু থেকে প্রচ্ছন্ন সাধুবাদ জানিয়ে এসেছে ? কিসের ভিত্তিতে এই বৈধতাহীন সরকারের কাছেই দূর্নীতিগ্রস্তদের বিচারের দাবী নিয়ে গেছে বাসদ? [প্রিয় পাঠক, গত দেড় বছরের “ভ্যানগার্ড” পত্রিকা পড়ে দেখুন]। গত বিএনপি সরকারের সময় ক্রসফায়ার নিয়ে মাঝে মাঝেই বাসদকে আওয়াজ তুলতে দেখেছি। কই গত দেড় বছরের ১৬৬ ক্রসফায়ার, ডিজিএফআই RAB এর নির্যাতন নিপীড়নের বিপরীতে বাসদের তেমন কোন প্রকাশ্য কর্মসূচী চোখে পড়েনি। ছিল কি কিছু আদৌ? বাসদ নিজেকে সংখ্যালঘু জাতিসত্তার বন্ধু বলে দাবী করে। অথচ চলেশ রিচিলকে যখন হত্যা করা হল, সে সময় বাসদ কই ছিল? বাসদের কি কোন অর্থবহ কর্মসূচী আছে বা ছিল সে বিষয়ে? কিংবা দাবীনামা ? তাসনীম খলিল একা একজন সাংবাদিক হয়ে যে পরিমাণ সাহসিকতার সাথে প্রতিবাদ করে নির্যাতন বরণ করে নিয়ে দেশ ছেড়েছেন , এতো বড় একটা দল হয়েও বাসদ কি এর সিকিভাগও করতে পেরেছে মানবাধিকার রক্ষার আন্দোলনে গত দেড়টি বছর? তাসনিম-চলেশদের জন্য সারা বিশ্ব আজ তাও কিছুটা জানে কি হয়েছে গত দেড় বছরের বাংলাদেশে। বাসদের মত এত বড় একটা দল তার সমস্ত সাংগঠনিক শক্তি নিয়ে কি অবদান রেখেছে সারা বিশ্বের সামনে এসব অন্যায়-অবিচার-অত্যাচারের ঘটনা তুলে ধরার ব্যপারে?
আমরা অবাক এবং হতাশ হয়ে দেখেছি কিভাবে একটি বিপ্লবী গণতান্ত্রিক শক্তি হয়েও এসব অন্যায়ের বিপরীতে বাসদ কোন সুস্পষ্ট এবং অর্থবহ দিক নির্দেশনা দিতে ব্যর্থ হয়েছে গত দেড়টি বছর। দেখেছি ভ্যানগার্ডের পাতায় পাতায় কেমন এক ধরণের মিউ মিউ করা ভারসাম্যরক্ষার সুর; সামরিক সরকারকে চটাতে না চাওয়ার চেষ্টা। দেখেছি কিভাবে সংলাপের আহ্বান পেয়ে গদ গদ বাসদ নেতারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাথে আলোচনার টেবিলে। আমার প্রশ্ন, তারা কি দ্ব্যর্থহীন কন্ঠে ১৬৬ ক্রসফায়ারের প্রতিবাদ ও বিচার দাবী করেছে সে বৈঠকে? করেনি। তারা কি চলেশের মৃত্যুর প্রতিবাদ করেছে সে বৈঠকে? করেনি। তারা কি সরকারের সাংবিধানিক বৈধতা নিয়ে কোন প্রশ্ন তুলেছে সে বৈঠকে? তুলেনি। বাসদ নেতারা আসলে মিউ মিউ সুরে কিসব অস্পষ্ট/ধোঁয়াটে দাবী তুলেছিল সে বৈঠকে, তা জানতে হলে এই লিন্কটি দেখুন। অথচ বাসদ নেতাদের আলোচনাকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার সংবিধান পর্যালোচনা করার মত ধৃষ্টতাও দেখিয়েছে। এ বিষয়ে রাশেদ খান মেনন এবং সাংবাদিক সমাজ বাসদের যে সব কঠোর সমালোচনা করেছেন, তা আমরা সবাই জানি। দুঃখের বিষয় হল, বাসদের এসব বিষয়ে অবস্থান এতই ধোঁয়াটে হয়ে পড়েছে ইদানিং যে আজ তাদের সংবাদ সম্মেলন করে বৈঠকের আলোচনার জবাবদিহি করতে হয়। একটি বিপ্লবী দলের কি এ ধরণের অস্পষ্টতা মানায়? জনগণের কাছেও দলটির ভূমিকা এতই অস্পষ্ট এখন যে আজ তাদের সংবাদ সম্মেলন করে সাফাই গাইতে হয়।
শান্ত, আপনি আমার উদ্দেশ্যের ব্যপারে “সন্দিহান” শব্দটি ব্যবহার করেছেন। ব্যপার হল, সন্দিহান আমরাও, ভীষণ ! বিশ্বাস করুন কিংবা না করুন, আমরা এই সন্দেহটুকু করতে চাইনা ; তাহলে যে সবকিছুই “নষ্টদের দখলে চলে যায় . . .!”
সবশেষে বলতে হয়–এতো কথা লিখেছেন আপনি, কিন্তু আমার পোস্টটির অপর বক্তব্য “সাহিত্যিক অবমূল্যায়নের মৌলবাদী প্রবণতা” সম্বন্ধে আপনাকে কিছুটা নিরবই মনে হল! আমার ভুলও হতে পারে।
শান্ত - ১৬ জুলাই ২০০৮ (১০:৫৯ পূর্বাহ্ণ)
@ইনসিডেন্টাল ব্লগার,
1। আপনি বলেছেন, ….”-আপনি লিখেছেন: “কোথায় পেলেন যে- বাসদ কর্মীরা এই সরকারের পদক্ষেপে দারুন খুশী????”
– আমার লেখার ঠিক কোথায় পেলেন এ বক্তব্য, বুঝলাম না। কর্মীদের সম্বন্ধে তো এমন কিছুই বলিনি আমি। ….”
=======>
আপনার মূল আর্টিকেলের এই অংশটির কথা কি ভুলে গেছেন? নাকি আড়াল করতে চাইলেন? ==>>”…………তাঁর দলের অনেকেই শুনি আজ খুশিতে আত্মহারা — কারণ, বুর্জোয়ারা নাকি এ যাত্রায় বাকি বুর্জোয়াদের কেটে-ছেঁটে নিশ্চিহ্ন করে দিচ্ছে এবং এতে করে নাকি তাঁদের দলের খুব লাভ হচ্ছে – কারণ, বিভিন্ন জেলায় নাকি আজ হাজার হাজার নতুন কর্মী বাসদে নাম লেখাচ্ছে। …..”
আমার প্রশ্নটিতে আমি এই লাভের কথা বা খুশিতে আত্মহারা হবার কথাটি আপনি কোথায় পেলেন সেটি জিজ্ঞেস করেছিলাম। কোন আলোচনা করতে গেলে – অভিযোগনামা হাজির করতে গেলে যথেস্ট তথ্যপ্রমাণ নিয়েই করতে হয়। তা নাহলে সেটা হয়ে যায় গালিগালাজ সে কথাই বলার চেস্টা করেছি….
2। বাসদের কোন্ কর্মসূচী কোন্ অবস্থানে মনে হয়েছে- এই সেনা সমর্থিত সরকারের সাথে তাদের আঁতাত রয়েছে? আমার প্রশ্নের জবাবে আপনি যে আলোচনা করলেন সত্য-মিথ্যার মিশেল দিয়ে- সেখানেও কি আতাতের বিষয়টি পরিষ্কার করতে পারা গেলো?? এই সরকারের বিরুদ্ধে উল্লেখযোগ্য-বড়-দৃশ্যমান কোন আন্দোলন-লড়াই-সংগ্রাম গড়ে তুলতে না পারা মানে কি সরকারের প্রতি সমর্থন প্রদান?
3। আপনি লিখেছেন,
“…..১/১১ অভ্যুত্থানের পূর্বাপর ডিসেম্বর ‘০৬ থেকে মার্চ ০৭ পর্যন্ত চার মাস পার্টির মূখপত্র “ভ্যানগার্ড” এর প্রকাশনা যখন বন্ধ ছিল, তখন তার পেছনে কি বিপ্লবী চিন্তা কাজ করছিল? অগ্রসর রাজনীতির ধারক বলে দাবীদার হয়েও যখন বাসদ এই সরকারকে “সামরিক” হিসেবে চিহ্নিত করেনি এবং এর অপসারণ আন্দোলনের ডাক দেয়া থেকে বিরত ছিল – তখন তার পেছনে কোন বিপ্লবী চিন্তা কাজ করেছিল?”
========>>>>>>>>
সেই 4 মাস কেন ভ্যানগার্ড প্রকাশ বন্ধ ছিল- এটা দিয়ে কি প্রমাণ করতে চাইলেন। জরুরী অবস্থার শুরুর কয়েক মাস কোন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার মত কি কোন অবস্থা বিরাজ করছিল দেশে? এমনকি জাতীয় দৈনিক ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াতেও কি সরকার নিয়ে কোন বক্তব্য-মন্তব্য পেশ করার কোন উপায় ছিল? সে সময় রাজনৈতিক দলগুলোকে কিরূপ নজরদাড়ির মধ্যে রাখা হয়েছিল জানা আছে কি? বাসদ-সিপিবির-বিপ্লবী সংহতির মত দলগুলোর কার্যালয়েও সরকারী টিকটিকির উৎপাত ছিল সেটা জানেন?
এখন কথা হলো- বাসদ এই প্রতিবন্ধকতা ভাঙ্গেনি- ভাঙ্গতে পারেনি। এটা কি মনে করেন যে, বাসদ চাইলেই এই প্রতিবন্ধকতার দেয়াল ভাঙ্গতে পারতো- সে পরিমাণ শক্তি-সামর্থ্য তার আছে? আপনার কি ধারণা যে বাসদের ক্ষমতা-শক্তি সামর্থ্য থাকার পরেও সরকারের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে সে সরকারকে ছাড় দিয়ে গেছে??!!!!!!!!
আপনার এসব পাগলের প্রলাপের মত শোনাচ্ছে!!!
সেই শক্তি-সামর্থ্য থাকলে আর 1/11 এর উদ্ভবই হতো না- তার আগেই বাসদ রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলের ডাক দিয়ে নেমে পড়তো!!!!!!!
আর, হুম এমন বিরত থাকার পেছনে, সেনা সমর্থিত সরকার অপসারণের ডাক না দেয়ার পেছনে চিন্তা তো ছিলই- সেটা হলো হটকারী না হওয়া- সেই সময়কার জনগণের অবস্থান কেমন কি ছিল সেটা চিন্তা করে দেখুন!
ইনসিডেন্টাল ব্লগার - ২০ জুলাই ২০০৮ (৮:০৯ অপরাহ্ণ)
“কোথায় পেলেন যে- বাসদ কর্মীরা এই সরকারের পদক্ষেপে দারুন খুশী????”
===
>> যত জনের সাথে কথা বলেছি (মূলত নেতৃত্ব পর্যায়ে) খুব তো বেজার হতেও দেখেছি কাউকে বলে মনে পড়েনা।
প্রথম যখন এই কোট টাই পরা সামরিক সরকার ক্ষমতায় এলো, তখন থেকেই লক্ষণ বোঝা যাচ্ছিল – এই সরকার এবার সমাজ থেকে রাজনীতির বংশ নির্মূল করে দেবে। বিরাজনীতিকরণের এক অসভ্য প্রক্রিয়া তারা চালু করবে; নিশ্চিত করবে এক ধরণের ফ্যাসিবাদী শাসন। এসবের সমস্ত লক্ষনই দেখা যাচ্ছিল একেবারে প্রথম দিন থেকেই। উত্তরপাড়ার শাসন এবং তার ফলশ্রুতিতে আমাদের দেশ এবং পাকিস্তানের যে হাল হয়েছে, সে বিষয়ে সচেতনতা হয়তোবা সেদিন অনেককেই বিষয়টা অনুধাবন করতে সাহায্য করেছিল।
দেখলাম ‘তাঁরা’ এল, এবং এসেই আয়ুবীয় পুরনো কায়দায় লোকদেখানো তথাকথিত cleansing অভিযান শুরু করে দিল। ধান্দাবাজিটা কোথায় তখনই বুঝতে পারছিল সবাই, সুশীলদের এক শ্রেনী ছাড়া, যারা বুঝেও না বোঝার ভান করে গেছে এবং যাচ্ছে। নিয়মিত কোন রাজনৈতিক সরকারের উপস্থিতিতে যে সব গণবিরোধী, সভ্যতাবিরোধী, গণতন্ত্র মানবাধিকার ও সংবিধান পরিপন্থী পদক্ষেপ নেয়া সম্ভবপর হোতো না, তার সবটুকু বাস্তবায়ন করে তবেই যে তারা ক্ষান্ত দেবেন এটাও খুবই পরিস্কার বোঝা যাচ্ছিল।
এভাবে জঙ্গলের শাসন এলো। ১১ জন জনবিচ্ছিন্ন মানুষ বসলো দেশ শাসনে তথাকথিত সুশীলদের আশীর্বাদ নিয়ে। সামরিক শাসন এলো নতুন এক ছদ্মবেশে। অত্যন্ত দুঃখ এবং বেদনার সাথে লক্ষ্য করলাম (দূর্নীতিবাজ দলগুলোর কথা বাদ) গণমানুষের আন্দোলনের সাথে আপনারাসহ অন্য অনেক বামপন্থী দলগুলোর কেউই যেন এই সামরিক শাসনের প্রকৃত রূপটি ধরতেই পারলেন না। আমরা দেখেছি আপনারা ভিন্নভাবে (বিজ্ঞান মেলা, সাহিত্য কর্মকান্ড ইত্যাদি) রাজনৈতিক দলটা পরিচালনা করার চেষ্টা করেছেন সেই দিনগুলোতে। কিন্তু সেই সময়ের জন্য প্রয়োজনীয় রাজনীতিটা কিংবা তখনকার পরিস্থিতি অনুধাবন করতে পেরে যে দীর্ঘমেয়াদি বিপদ জনজীবনে নেমে আসছিল, সে বিষয়ে জনগণকে একটুও সতর্ক সচেতন করার চেষ্টা আপনাদের কর্মসূচীর মধ্যে ছিলনা। জরুরী অবস্থা ভেঙ্গে কোন অর্থবহ রাজনৈতিক কর্মসূচী দিয়েছেন এমনটা চোখে পড়েনি (ভুল হলে তথ্যসহ জানান)। অথচ, এটা আমরা সবাইই জানি – দূর্নীতিবাজদের কোন তালিকায় আপনাদের নেতাদের নাম কোনদিনই আসার কথা না। সুতরাং এত সব দ্বিধাদ্বন্দ কেন ছিল? রাজনীতির এই বিপদ সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করে দিয়ে কারাবরণ করলে আজকে সবাই অন্তত জানতো নীতির প্রশ্নে আপনারা জনগণের বিপদে যে কোন নিপীড়ন বরণ করতে প্রস্তুত। প্রতীকি অর্থে হলেও সেটা করার দরকার ছিল বলে আমরা মনে করি।
কিন্তু তার পরিবর্তে যখনই আপনাদের কোন কর্মীর সাথে কথা বলেছি তাদের চোখেমুখে জাতির এ বিপদের কোন সত্যিকারের অভিব্যক্তি (বা এর প্রতিফলন) দেখেছি বলে মনে পড়েনা। শুধু দু’একজনকে ব্যতিক্রম দেখেছি যারা অন্তত ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় হলেও এই সরকারের চরম ফ্যাসিবাদী চরিত্রের ব্যাপারে কোন সন্দেহ পোষণ করতেন না। কিন্তু দলীয় কর্মসূচীর কোন সংকল্পের প্রকাশ তাদের মধ্যেও দেখিনি।
ফলে কর্মীদের দেখেছি সমসাময়িক রাজনীতি পরিস্থিতি বিষয়ে একরকম উদাসীন এবং complacent থাকতে। এমনকি বিভিন্ন apolitical blog site গুলো পর্যন্ত অনেক বেশী সচেতন ও sharp observation দিয়ে যাচ্ছিল এই সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে। সে সময়কার কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্লগে এবিষয়ের লেখাগুলো পড়ে দেখবেন। [এটা যখন করবেন তখন আপনাদের ভ্যানগার্ডের সমসাময়িক লেখাগুলোর সাথে চট করে এই ব্লগগুলোর তুলনামূলক বিচার করে নিতে ভুলবেন না যেন!]। মনে করেছি আপনাদের অন্তত তাদের চেয়ে আরো বেশী sharp হওয়া দরকার ছিল। সেই অর্থেই, দেশ জাতির এত বড় বিপদের দিনেও আপনাদের নেতাকর্মীদের খুব “অখুশী” দেখেছি বলে তো মনে হয়না। বিষয়টা পুরোপুরিই রাজনৈতিক উপলদ্ধির। সুতরাং, এটা কি আইন আদালতের মত করে প্রমাণ করতে হবে? তবে এর জন্য আমি এখনো আপনাদের সাধারণ কর্মীদের দায়ী করবো না। আগের মন্তব্যে ব্যাখ্যা করেছি কেন।
ইনসিডেন্টাল ব্লগার - ২০ জুলাই ২০০৮ (৮:৪৬ অপরাহ্ণ)
2। বাসদের কোন্ কর্মসূচী কোন্ অবস্থানে মনে হয়েছে- এই সেনা সমর্থিত সরকারের সাথে তাদের আঁতাত রয়েছে?
>>আঁতাত শব্দটা গায়ে লেগে গেল? সদ্ভাবও না হয় না বললাম। “অসদ্ভাবের অভাব” বললে কি আপনার আপত্তি কিছু কম হবে? শুনুন, Officially আপনারা সরকারের সাথে আঁতাত করেছেন এমনটি কেউই বলছে না। ব্লগে শব্দটির ব্যবহার হয়তো যথার্থ হয়নি। আপনি আমার কথার content এর দিকে তাকান। যে সরকার রাজনীতি করার মত আপনার মৌলিকতম অধিকারটুকুও কেড়ে নিতে চায় তার ভন্ডামীপূর্ণ সকল কর্মসূচীই যে একটি নির্দিষ্ট নীল নকশার অংশ, যা কিনা একসময় আপনাদের মত ছোট দলগুলোর অস্তিত্ব ধরে টান দেবে – তার সবটাই বুঝতে পেরেও আপনাদের মধ্যে কি কোন তীব্র প্রতিবাদের ভাষা ছিল? আজকে দেখুন “গণ প্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ ২০০৮”। এখন তো ঠিকই আপনাদের টনক নড়েছে (সাম্প্রতিক লিফলেটের ভাষা থেকে মনে হল)! এটা আরো আগে হয়নি কেন?
ইনসিডেন্টাল ব্লগার - ২০ জুলাই ২০০৮ (৯:০৫ অপরাহ্ণ)
“সেই 4 মাস কেন ভ্যানগার্ড প্রকাশ বন্ধ ছিল”- এটা দিয়ে কি প্রমাণ করতে চাইলেন??
ভ্যানগার্ডের টেকনিক্যাল লজিসটিক্স এর ব্যাপারগুলো আমার জানা নেই। কিন্তু কোন্ কালে কোন্ repressive সরকার পেরেছে এ ধরণের প্রকাশনা সফলভাবে পুরোপুরি বন্ধ করতে? মুক্তভাবে বের না করতে পারলে underground থেকে বের হোতো। ইন্টারনেটের এই যুগে তা কি আরো বেশী সহজ হয়ে যায়নি? আমরা হয়তো আপনাদের লেখা পড়ে দেশের রাজনৈতিক গতিধারার একটা বস্তুনিষ্ঠ এবং bold analysis পেতাম। অতটুকু risk কি বাসদ নিতে পারতো না দলীয় ভাবে? সুতরাং, আপনিই বলুন এ থেকে কি উপসংহার টানা উচিত?
সরকারী টিকটিকির উৎপাত ছিল সেটা জানেন?
সেটা কবে একটি বিপ্লবী দলকে নিরস্ত করতে পেরেছে? দল হিসেবে ২৮ বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে আপনার। চাইলে সেটা কি সত্যিই মোকাবিলা করা যেতো না? একথা এখানে লিখছেন, ঠিক আছে, তাতে খুব ক্ষতিবৃদ্ধির আশংকা নেই। অন্য কোথাও বলবেন না যেন! লোকে আপনাদের ভুল বুঝবে; সুবিধাবাদী এবং ভীরু মনে করবে। আর তাছাড়া, এখন কি সে সব টিকটিকির উৎপাত নেই আপনাদের আশেপাশে? তাহলে সব তো এখানে লিখেই জানিয়ে দিলেন তাদের (তোপখানায় আর যেতে হলনা কষ্ট করে)!
সেই সময়কার জনগণের অবস্থান কেমন কি ছিল সেটা চিন্তা করে দেখুন!
জনগণ এখনো শ্রেনীচেতনা বোঝেনা। শ্রেনীশোষণ পূঁজিবাদ, সাম্রাজ্যবাদ এবং তার বিপদ সে বোঝেনা। কিন্তু তারপরও প্রতিটা আলোচনায় শেষের দিকে আপনারা বলেন “সমাজতন্ত্র ছাড়া মুক্তির উপায় নাই”। এটা কেন বলেন? কারণ হল জনগণকে বলতে বলতেই একদিন তারা একটি উপলদ্ধির জায়গায় পৌছাবে, তাইতো? সেদিন যখন কেউই ডাক দেয়নি তখন আপনারা যদি ডাক দিতেন বহু দূর থেকে সেই ডাক শোনা যেত বলে আমরা মনে করি। সেই ডাক দিয়ে আপনারা গ্রেফতার বরণ করলেও আজকের প্রেক্ষাপটে এসে দেশের মানুষ এবং অন্যান্য গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক শক্তি জানতো বুঝতো যে রাজনীতির প্রকৃত বিপদ আপনারাই (বাসদ) একমাত্র আঁচ করতে পেরেছিলেন সময়মতো। জনগণের ভ্যানগার্ড বা অগ্রসর শক্তি হিসেবে জনগণের চেতনার চেয়ে আপনাদের চেতনা কিছুটা তো অন্তত এগিয়ে থাকা উচিত ছিল (disproportionately এগিয়ে থাকার পক্ষে আমিও নই) ! এবং সেইসাথে তার manifestation থাকাও দরকার ছিল আপনাদের কাজেকর্মে। এগুলোর সবকিছুই আপনারা অন্তত প্রতীকি অর্থে হলেও করতে পারতেন। পারতেন না?
তার পরিবর্তে আপনি যে হঠকারীতার যুক্তিটি দেখালেন তা নিতান্তই পুঁথিগত এবং formal.
রায়হান রশিদ - ২১ জুলাই ২০০৮ (১:৪০ অপরাহ্ণ)
সরকারের হাবভাব দেখে ভয় হয় আগামী দিনগুলোতে ব্যাপক হারে কালো আইনগুলোর প্রয়োগ হতে পারে। অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোকে যেহেতু জিজ্ঞেস করার সুযোগ নেই, কেউ বলতে পারেন এ বিষয়ে বাসদ কি ভাবছে ? কোন তথ্য বা লিনক্ দিতে পারেন কেউ ?
mosharrof - ২২ জুলাই ২০০৮ (৮:০৩ পূর্বাহ্ণ)
would you please visit http://www.vanguardonline.info to know about the position of Socialist Party of Bangladesh?
শান্ত - ১৬ জুলাই ২০০৮ (১১:২৯ পূর্বাহ্ণ)
4.আপনি বলেছেন, …..কিসের ভিত্তিতে বাসদ বৈধতাহীন এ সরকারের তথাকথিত দূর্নীতিবিরোধী অভিযানকে শুরু থেকে প্রচ্ছন্ন সাধুবাদ জানিয়ে এসেছে ? কিসের ভিত্তিতে এই বৈধতাহীন সরকারের কাছেই দূর্নীতিগ্রস্তদের বিচারের দাবী নিয়ে গেছে বাসদ?
=========>>>>>>>>
আপনি বাসদের কোন আলোচনায়-বক্তব্যে দেখলেন যে দুর্নীতিবিরোধী অভিযানকে সাধুবাদ জানিয়ে এসেছে??? এ ধরণের মনগড়া অভিযোগের মানে কি?
সংলাপে যাওয়া ঠিক হয়েছে কি না সেটি নিয়ে আলোচনা হতে পারে- তবে সেখানে গিয়ে দুর্নীতিগ্রস্তদের বিচারের দাবী নিয়ে গিয়েছে এমন কথা আপনি কোথায় পেলেন। এই লিংক দেখুন- পুরো সংলাপে বাসদের লিখিত আলোচনা আছে:http://www.vanguardonline.info/vanguard/Jun-2008/1.pdf, ভালো করে পড়ে দেখুন- এবং আমাদের দেখিয়ে দিন। বাসদের দুর্নীতি বিষয়ে আলোচনার শুরুই হয়েছে এভাবে যে, “সাম্রাজ্যবাদ নির্ভর শোষণনির্ভর পুঁজিবাদী ব্যবস্থা বহাল রেখে দুর্নীতির মূলোচ্ছেদ করা সম্ভব না”। এবং সেখানে বাসদ সরকারের দুর্নীতিবিরোধী কর্মসূচীর সমালোচনাও করেছে।
হুম, বাসদের আলোচনায় বিগত 37 বছরে যে দুর্নীতির কালোপাহাড় গড়ে তুলেছে বুর্জোয়ারা সে কথা উল্লেখ করেছে। সেটা তো বাসদ সহ অন্যান্য বামেরা সবসময়ই বলে।
বরং প্রশ্ন হতে পারে এমন যে, এই সেনা সমর্থিত বুর্জোয়া সরকারের সাথে এসব কথা বলার কি দরকার- কি লাভ একটি বিপ্লবী শক্তির। এ প্রশ্ন করলে বরং অনেক যৌক্তিক হতো। বুর্জোয়া নির্বাচনে অংশ নেয়া- এ ধরণের সংলাপে অংশ নেয়া প্রভৃতি নিয়ে এ দেশের বামপন্থীদের মধ্যে বেশ বিপরীত অবস্থান দেখা যায়। উমর-সাকী-মিশু প্রমুখেরা নির্বাচন বিরোধী, বাসদ-সিপিবি নির্বাচনবিরোধী নয়, এবং মাঝে মধ্যে এরকম সংলাপেও অংশ নিতেও তাদের দেখা যায়। এ বিষয়ে বাসদের যুক্তি সম্ভবত অনেকটা এরকম যে- এই নির্বাচন বা সংলাপে অংশ নেয়া তাদের কৌশলগত অংশ মাত্র- এই নির্বাচনের মাধ্যমে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল সম্ভব বলে তারা মনে করে না- কিন্তু যেহেতু এখনো জনগণের মধ্যে নির্বাচন/সংলাপ প্রভৃতি নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ-উদ্দীপনা বিরাজমান সেহেতু এই মাধ্যমকে ব্যবহার করে জন গণের কাছাকাছি হওয়ার একটা কৌশল হিসাবেই নির্বাচন/সংলাপে অংশ নেয়া। সম্ভবত বাসদ মনে করে, এসমস্ত বুর্জোয়া নির্বাচন-সংলাপের বিরুদ্ধে ব্যাপক মাত্রায় জনমত/জনসচেতনা তৈরী করেই কেবল এসব থেকে বিরত থাকা যায়; শুধু বিরত নয়- জনগণকে সাথে নিয়ে সেগুলোকে পণ্ড করেও দেয়া দরকার। কিন্তু জনগণ যতক্ষণ এ ধরণের অনুষ্ঠানগুলোর প্রতি আস্থাশীল সেই সময়ে সেগুলো থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখাটা জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ারই নামান্তর।
অস্মিতা - ২১ জুলাই ২০০৮ (১১:৩২ অপরাহ্ণ)
@শান্ত
এই নির্বাচন বা সংলাপে অংশ নেয়া তাদের কৌশলগত অংশ মাত্র- . . . . . কিন্তু জনগণ যতক্ষণ এ ধরণের অনুষ্ঠানগুলোর প্রতি আস্থাশীল সেই সময়ে সেগুলো থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখাটা জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ারই নামান্তর।
========
. . .কি অসাধারন যুক্তি !! এই সেনা সমর্থিতদের সাথে নির্বাচন সংলাপ করে জনগণের “কাছাকাছি” যাওয়া যাবে !! এত বছর রাজনীতি করে এই শিখলেন? সত্যি? এই সেনা সরকারের অধীনে নির্বাচনে জনগন “আস্থাশীল” এই তথ্য আপনাদের কে দিল? সত্যি বড় অবাক হলাম , চিন্তিতও হলাম। বহুমূখী প্রতিভার অধিকারী জনাব কমরেড খালেকুজ্জামান জনসমর্থনের কোন প্রত্যক্ষ পরীক্ষায় কখনো উত্তীর্ণ হয়েছেন কিনা আমার জানা নেই। যতদূর জানি বাসদ আদর্শের রাজনীতি করে – তথাকথিত ভোটের রাজনীতি নয়। তাই যদি সত্যি হয়, তবে কোন আদর্শের ভিত্তিতে সেনা সমর্থিত সরকারের সাথে এক টেবিলে হাসি হাসি মুখে বসে গেলেন আলোচনা করতে? দাওয়াত পেলেই কি স্যালুট ঠুকে ছুটে যেতে হবে? এত দৈন্য কেন? যে ফর্দটি নিয়ে গিয়েছিলেন তা কি সংবাদ সম্মেলন করে জনগণের কাছে পৌঁছাতে পারতেন না? রাজপথে না হয় নাই নামলেন।
মন্তব্য-২৮-থেকে
অলকেশ - ১৩ আগস্ট ২০০৮ (১১:৫৪ অপরাহ্ণ)
@ শান্তঃ
বাসদের কোন আলোচনায়-বক্তব্যে দেখলেন যে দুর্নীতিবিরোধী অভিযানকে সাধুবাদ জানিয়ে এসেছে???
=======
একটু পেছন ফিরে দেখি । ২২ জানুয়ারীর পাতানো নির্বাচনে ১৪ দল যখন প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছিলেন তখন আপনারা ও মনোনয়ন দিয়েছিলেন আলাদা ভাবে । তখন এটা পরিস্কার যে, একটা পাতানো নির্বাচন হতে যাচ্ছে । দেশবাসী বুঝেছিল । আওয়ামী লীগ ক্ষমতার উদগ্র বাসনায় অস্থির ছিল । তারা যে কোন কিছুর বিনিময়ে খেলাফত মজলিসের সাথে হাত মিলিয়ে হলেও ক্ষমতায় যেতে চেয়েছিল । তারা বুঝে ও বুঝতে চায় নি । সেই সময় স্ট্যান্ড নিতে পারেন নি । শক্ত ভাবে । বলতে পারেন নি যে, আমরা যাব না । ১৪ দল মনোনয়ন প্রত্যাহার করলো । আপনারা ও করলেন । কিন্ত বিবেচনা কি ছিল? মাত্র দু’দিন আগেই প্রার্থী দিয়েছিলেন । ঐ সময় সে বিবেচনা কাজ করেনি কেন? এই কথা বলছি এই কারনে যে, জনগনের নার্ভ বুঝাটা ও একটা রাজনীতি । যদি ও জনগন যখন যা চায় বা যা ভাবে তার সাথে সবসময় সাঁয় দেয়া আবার সুবিধাবাদের নামান্তর । হাসিনা – খালেদার arrest নিয়ে টু শব্দটি করলেন না । গভীর ভাবে ভেবে দেখলে বুঝতেন এটা (arrest) একটা নীতি নির্ধারনী সিদ্ধান্ত । বিশেষ করে এঁদের দুজনের বিষয়টি । কারন যে সব অভিযোগ গুলি আনা হয়েছে তার বিচার এরা করার ক্ষমতা রাখেনা । এই কারনে নীতি নির্ধারনী এখতিয়ার তাদের দেয়া ও হ্য় নি । নাগরিক সচেতনতার মাধ্যমে একমাত্র কোন গনতান্ত্রিক সরকারের তত্ত্বাবধানে এ জাতীয় উদ্যোগ কল্পনা করা যেতে পারে । যখনই এরা এই arrest গুলি শুরু করল তখনই criticize করতে পারতেন এই সব angle থেকে । দেখাতে পারতেন কি ভাবে জাতির সাথে ওরা প্রতারনা করছে । জাতির ইমোশন কে ব্ল্যাক মেইল করছে । দুর্নীতি বিরোধীতার নাম করে কি ভাবে প্রকৃত দুর্নীতির বিরুদ্ধে মানুষের সংগ্রাম কে নষ্ট -বিভ্রান্ত করছে । সেই লাইনে গেলেন না । “পুঁজিবাদ-সাম্রাজ্যবাদ যতদিন থাকবে ততদিন এর বাস্তব কোন সমাধান নাই”- এই কথা বলে ঘটমান বর্তমানকে আড়াল বা অস্বীকার করলেন । একটা কথা বলেছেন যে ‘এরা অতীত সরকারেরই ধারাবাহিকতা রক্ষা করবে’ , এরা নিয়মতান্ত্রিক শোষণকে পাকাপোক্ত করতে এসেছে’-‘এরা সাময়িক উপশম দেবে কিন্ত তা টেকসই করতে পারবে না’। রাজনৈতিক বাস্তবতা উপলব্ধি করতে পারলে এবং এই সরকারের চারিত্র্য (characteristics) বুঝতে পারলে এভাবে আপনারা subjective conclusion draw করতে পারতেন না । একটা প্রশ্ন করতে চাই । সাময়িক কি উপশম ওরা দিতে পেরেছে বলে মনে হয় আপনার? কোন উদাহরন? মনে রাখতে হবে একটা Capitalist Society’র মধ্যেই আপনি থাকেন । তার রাজনৈতিক টানা পোড়ন, গতি পথ ইত্যাদি বোঝার চেষ্টা না করলে নিজের রাজনীতিটা ও যে পথ হারাবে তা জানেন?
দূর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান নিয়ে আর্টিকেলটির (এপ্রিল ‘০৭ ) উপস্থাপনার ধরন দেখে মনে হয় এটা একটি অনুযোগ । আমরা যখন কিছু লিখি আমাদের দৃষ্টিভংগী লেখার সাথে যায় । ফলে কোন দৃষ্টিকোন থেকে তা লেখা হয়েছে তা কিছুটা আঁচ করা যায় । এই লেখাটা কোন গনতন্ত্রমনা মানুষ পড়লে বুঝবে যে আপনারা সামরিক সরকারকে তার অবৈধ কাজ গুলো করার লাইসেন্স দিচ্ছেন এবং আরো কিছু ফর্দ ধরিয়ে দিয়ে তা দ্রুত বাস্তবায়ন করার বায়না ধরছেন । এটা হয়েছে এই জন্য যে, আপনারা এবারের পরিস্থিতি উপলব্ধি করতে পারেন নি । মনে করেছেন এভাবে বললে জনগনের কাছাকাছি থাকা যাবে । কারন আপনারা পত্রিকায় বার বার বলার চেষ্টা করছেন যে জনগন এই সরকার কে সাধুবাদ জানিয়েছে প্রথম দিন থেকেই । প্রেক্ষাপট হিসেবে বলেছেন মানুষ অসম্ভব বিরক্ত হয়েছিল দ্বি-দলীয় পালটা পাল্টির কারনে । ঠিক কথা । এই সরকারকে আপনারা কি ভাবে নিয়েছেন তা কোথাও কিন্ত দেখতে পাই নি । পত্রিকার ভাষা দেখে বুঝতে হলো । যা হোক, এই প্রেক্ষাপটের সুযোগে সমাজ থেকে রাজনীতি নির্মূলের চক্রান্ত যে শুরু হয়ে গিয়েছিল তা কি আপনারা ধরতে পারেন নি । এ রকম একটা চরম অগনতান্ত্রিক পন্থা কে যদি জনগন সাময়িক মেনে ও নেয় আপনাদের দায়িত্ব কি ছিল? দায়িত্ব ছিল এর দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির দিকটি তুলে ধরা । আচ্ছা একটা উদাহরন দিই । RAB কে তো একই ভাবে সাধুবাদ দিয়েছিল জনগন। কারন,জনগন মাস্তানদের কারনে অতিষ্ট ছিল। তখন তো সমর্থন দেন নি বা নমনীয় আচরন করেন নি । জনগন আশু প্রতিকার চায় কিন্ত দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতিটা তার চোখে পড়ে না । এখানেই রাজনৈতিক দলের ভূমিকা । ক্ষতিটা কি তা বোঝানোর দায়িত্ব ছিল আপনাদের । দেখলাম, জনগন বুঝে গেল আপনাদের আগেই । তারা যখন একটু একটু প্রতিবাদ করা শুরু করল আপনারা tone change করতে থাকলেন । মনে হ্ল খুব মেপে মেপে কথা বলা হচ্ছে । পান থেকে চুন খসলে যদি সামরিক নজরদারি শুরু হয়ে যায় ? মানে সবসময় একটা আতংক কাজ করে যাচ্ছিল । যে জন্য “একুশের চেতনা ও গনতন্ত্রের ভবিষ্যৎ” (এপ্রিল ‘০৭) আলোচনায় দেশের গনতন্ত্র নিয়ে বলতে গিয়ে আমেরিকা ও বৃটেনের সামাজিক অস্থিরতার দু’এক টা ভাসা ভাসা উদাহরন দিলেন । বুর্জোয়ারা দেশে দেশে কতটা বিফল তা বললেন । আপত্তি নেই । কিন্ত একই সময়ে সামরিক গোয়েন্দা বিভাগের অধীন অবৈধ ও বে আইনী ভাবে পরিচালিত ‘Black hole’ গুলোতে কি ভাবে হাজার হাজার মানুষ কে গেষ্টাপো কায়দায় নির্যাতন করা হচ্ছিল তা বলতে পারেন নি কেন? তাদের সাথে বৈঠকে গেলেন ই যখন কেন DGFI’র রাজনৈতিক অংগনে খবরদারীর প্রতিবাদ করে আসলেন না ? কেন এই সরকারের সময়ে ঘটে যাওয়া প্রশাসনিক সামরিকীকরনের বিরুদ্ধে কথা তুললেন না । কেন EPR এর ১৬ (২) বাতিল করার স্পেসিফিক পয়েণ্ট তুললেন না ? অথচ সেই গতবাঁধা কথা গুলো বলে গেলেন -সেই পুরোনো ধারা গুলো বাতিল চাইলেন । বিশেষ পরিস্থিতি কে address করার কথা ভুলে গেলেন । সাম্রাজ্যবাদ পুঁজিবাদ নিয়ে মুখস্ত কথা গুলি খুবই বিরক্তিকর,একঘেঁয়ে ও ক্লান্তিকর মনে হয় যখন দেখি প্রতিদিন যা ঘটে চলে তার সাথে relate করে ঐ তত্ত্ব গুলি উপলব্ধি করতে পারেন না ।
সমালোচনার tone টা খুব গুরুত্বপুর্ন এখানে । যেমন শুধু কিছু বুর্জোয়া রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ গ্রেফতার হওয়াতে অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়েছে এই বলে যে বড় ব্যবসায়ী ও আমলারা কেন বাদ যাবে ? কেন এই কাজ গুলোর ভার তাদের দিচ্ছেন ।তার বিপদ বোঝেন আপনারা ? যেদিন আপনার কাছ থেকে রাজনীতি করার জন্য Tax দাবী করবে তার আগে বুঝবেন না । কোন কিছু দমন করা না করা ফকরুদ্দিন সাহেবের ক্ষমতার আওতায় পরে না যদি না তা নির্বাচন সংশ্লিষ্ট না হয় । বে আইনী ভাবে গ্যাস ব্লক বরাদ্ধ কেউ দিয়ে থাকলে তার দেখভাল করার দায়িত্ব ও তাদের নয় । দুদক প্রতিষ্টা, (সাবেক ইসলামী ছাত্র সংঘ কর্মী যার প্রধান) পাবলিক সার্ভিস কমিশন সংস্কার তার দায়িত্বের মধ্যে নয় । বিচার বিভাগ ও তাদের হাত দিয়ে স্বাধীন হয়ে আর স্বাধীনতার স্বাদ পেল না । অসংখ্য উদাহরন চারপাশে আছে । ভাল করে দেখুন, ভাবুন । আজ বিচার বিভাগ স্বাধীন অথচ কত ব্যর্থ । এইটা উদাহরন হয়ে রইল Successive সরকার গুলোর জন্য । অথচ এগুলোকে ‘সংস্কার -মেরামত’ বলে যাচ্ছেন দিব্যি পজিটিভ টোন দিয়ে ।এই তথাকথিত দুর্নীতি দমন অভিযান থেকে শুরু করে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা পর্যন্ত সবগুলোই হয়েছে অত্যন্ত অসচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যেখানে দৈব বাণীর মত কিছু নির্দেশ কোথা থেকে যেন জারী হয়েছে এবং রকেট গতিতে তা কি করে যেন কার্যকর হয়ে গিয়েছে । জনগনের অংশগ্রহন ও প্রতিনিধিত্ব না থাকলে যে কোন ভাল কাজের ফল জনগন ভোগ করতে পারে না । ফালু ধরা পড়ে । বাবর ধরা পড়ে। তারেক-মামুনরা ও বন্দী হয় । জনতা তালি দেয় । বাপের বেটারা এল বুঝি এবার !! সাবাস দেয় ফকরু -মইন ভাই দের।
আপনারা ও এসব সস্তা লোক দেখানো সুচতুর রাজনৈতিক ভণ্ডামিতে ভোলেন । একি রাজনৈতিক দেউলিয়াত্ব না এটাই রাজনৈতিক লাইন ? প্রশ্ন জাগে । কিন্ত খেলারাম (ফখর-মইন) খেলে যায় । আর পেছন ফেরে তাকায় না । চট্টগ্রামে বন্দরে অনিয়ম বন্ধের নাম করে সেখানকার খেটে খাওয়া সাধারন মেহনতি শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার টুকু কেড়ে নেয়ার ষড়যন্ত্র চলে । খুলনা অঞ্চলে পাটকল বন্ধ হয় । ধানচাষীরা সারের দাবীতে হাহাকার করে উঠে । তবু বিক্ষোভ করতে পারে না । বিশ্ববিদ্যালয়ের সায়ত্ত্বশাসন নিয়ে সরকারের মাথা ব্যাথা শুরু হয় । বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল শিক্ষক ছাত্রদের লাঞ্চিত করা হয় । রাজনীতিতে,সরকারী-বেসরকারী প্রশাসন যন্ত্রে, বিচার বিভাগে, আইনজীবি-সাংবাদিক ও পেশাজীবিদের মধ্যে এবং সিভিল সোসাইটির একটি বড় অংশের মধ্যে নতুন দালাল-মোসাহেব তৈরীর সংঘবদ্ধ পরিকল্পনা নেয়া হয় । দালাল সংস্কার পন্থীরা তো বটেই, বামরা ও তাদের পেয়ে দাবী দিয়ে বসে । এদিকে এখন ও চোখ দিলেন না ও দিকে ও সর্বনাশ হয়ে যাবে, যদি কিছু না করেন ।
পরের দৃশ্যপটে দেখা যায় জলিল ও সেলিম সাহেব জবানবন্দী দেন । সব স্বীকার করলেন প্রচন্ড শারীরিক ও মানষিক নির্যাতনের পর । বুর্জোয়া নেতার ক্ষেত্রে বুঝি আইনের যথাযথ প্রয়োগ অনুসরনের দরকার নেই ? রা-টি করলেন না । মানে, বিপদ কি ভাবে আপনার উপর চলে আসতে পারে তা বোঝার রাজনৈতিক বিবেচনা টুকুও ছিল না । যেমন দেখুন, এই সময়ে অফিসে বসতে পারেন নি, স্বাধীন মতামত রাখতে পারেন নি । কথা বলতে পারেন নি । অন্যায় হলে প্রতিবাদ করতে পারেন নি । মিছিল মিটিং তো পরের কথা । সারাক্ষন আতংক ও ভয়ে অস্থির থেকেছেন । আপনাদের কোন চির শত্রু ও আপনাদের বিরুদ্ধে দূর্নীতির অপবাদ দেবে না । তাহলে আপনারা কেন রাজনীতির অধিকার থেকে বঞ্চিত হলেন? ভেবে দেখুন আবার । সরকারের এটিচিউড দেখে মনে হয়েছে রাজনীতিকে সমাজ থেকে নির্বাসনে পাঠাতে না পারলে এ দেশের আর কোন ভবিষ্যত নেই । প্রশ্ন হ্ল, এপ্রোচ কি হবে তাদের সাথে ? কি এপ্রোচ নিয়েছেন ? এক বছর পরে এসে আপনাদের পত্রিকার ফেব্রুয়ারী সংখ্যা‘০৮ বলছে যে “এখন আর কারো সন্দেহ নাই সামরিক বাহিনীর কারনেই এ সরকার টিকে আছে ।“ মইন ইউ সাহেব যখন ট্রেনের সাথে তুলনা দিয়ে কথা বলেন তাকে স্মরন করিয়ে দিতে পারতেন যে ভাই আপনি একজন সরকারী কর্মচারী । আপনার সার্ভিস রুল অনুযায়ী এ সব রাজনীতির কথা আপনার বলতে মানা । ট্রেন পড়ে গেল কি থাকল সে চিন্তা রাজনীতিবিদদের হাতেই ছেড়ে দিন । সার্ভিস রুলের প্রাসংগিক ধারা গুলো ছাপিয়ে দিয়ে জনগনকে সাক্ষী রেখে বলতে পারতেন যে, যেহেতু বর্তমান সরকার আইনের শাসনে বিশ্বাসী বলে দাবী করছেন তাই আইন অনুযায়ী সবাইকে বিহেইভ করতে হবে । সামরিক খবরদারীর বিরুদ্ধে ছোট একটা নোট অব ডিসেন্ট দেয়া হয়ে যেত । তা না বলে বলা হচ্ছে ,’পরিস্থিতি দেখে বোঝা যায় সেনাপ্রধানের বক্তব্যের গুরুত্ব প্রশ্নাতীত’ । এ গুলো তো সাধারন রাজনৈতিক চেতনার অভাব যাদের তাদের ভাষা । এই রাজনৈতিক লাইন নিয়ে নতজানু হয়ে চলেছেন বলেই হয়তো ইন্সিডেনটাল ব্লগার আঁতাত বা কোরেসীদের সাথে জোট করার কথা বলেছে । এটাকে বার বার গালাগালি বা অভব্য, কুরুচিপূর্ন ও অসংস্কৃত বলার মানে হল অতি ভাল মানুষির পিউরিটাণ্ট লেবেল নিজের গায়ে সেঁটে দেয়া।
আর একটা বিষয় বলে নেই । এ সব সমালোচনা করার পিছনে উদ্দ্যেশ্য আছে । তা হলো,প্রগতির কথা যারা বলেন তাদের মধ্যে এখনও আপনাদের উপর ভরসা রাখতে চাই বলে দু’কলম লিখা । যে দিন মনে হবে আপনারা আর পারবেন না, সেদিন এত সময় আপনাদের পেছনে দেয়ার বিলাসিতা দেখাবো না । সমালোচনা করেছি বলে শত্রু ভাবতে পারেন,তবে অন্ধ স্তাবক হয়ে যারা তার্কিক সাজেন তাদের সংখ্যা ভারী হলে বিপদ অনেক বেশী ,বরং শত্রুর নির্মম অথচ সত্যনিষ্ট সমালোচনা অনেক সময় মোহ মুক্তি ঘটায়,বাস্তবে ফিরিয়ে আনে ।
শান্ত - ১৬ জুলাই ২০০৮ (১১:৪৭ পূর্বাহ্ণ)
5। আপনি বলেছেন, …..দেখেছি ভ্যানগার্ডের পাতায় পাতায় কেমন এক ধরণের মিউ মিউ করা ভারসাম্যরক্ষার সুর; সামরিক সরকারকে চটাতে না চাওয়ার চেষ্টা। ……
=======>>>>>>>>>
ভ্যানগার্ডের এই আর্টিকেলটি পড়েন- তাহলে সরকার সম্পর্কে বাসদের অবস্থান বুঝতে পারবেনঃ http://www.vanguardonline.info/vanguard/Feb-2008/1.pdf
ইনসিডেন্টাল ব্লগার - ২৯ জুলাই ২০০৮ (১১:০০ পূর্বাহ্ণ)
@শান্ত
মনে হচ্ছে “মিউ মিউ করা ভারসাম্যরক্ষার সুর” কথাটি বুঝতে আপনাদের ভীষণ অসুবিধা হচ্ছে। আমি ভেবেছিলাম এ ধারার (বিপ্লবী!?) রাজনীতিতে সিদ্ধ আপনাদেরকে আমার আর যাই হোক ‘মিউ মিউ’ করার মানে অন্তত ভেঙ্গে বুঝিয়ে বলতে হবেনা! সুতরাং এখন চেষ্টা করবো “মিউ মিউ”-এই আপাত মিষ্টি expression টি দিয়ে কি বোঝাতে চেয়েছি তা একটু ব্যাখ্যা করার। “মিউ মিউ” বলতে কি বোঝাতে চেয়েছি তা বুঝতে হলে প্রথমেই বুঝতে হবে “মিউ মিউ না করা” বলতে আমি কি বোঝাই। মিউ মিউ এর বিপরীত হল তেমন স্পষ্ট দিকনির্দেশনামূলক precise বক্তব্য যা অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন পেশ করেছিলেন ঢাকা সি এম এম আদালতের সামনে, সেটা কোন বক্তৃতার মঞ্চ নয় জেনেও। [এই লিন্কটি থেকে ভাষণটি পড়ে এবং শুনে নিন। এখান থেকে ভাষণটি শুনেও নিতে পারেন চট করে]
‘মিউ মিউ না করা’ হল সে ধরণের লেখা যা লিখবার জন্য (বা যাতে অংশগ্রহণের জন্য) তাসনীম খলিলের মত সাংবাদিকদের পড়তে হয় সামরিক গোয়েন্দা বাহিনীর ‘নেক নজরে’। ‘মিউ মিউ না করা’ হল সে ধরণের সম্পাদনা নীতি যা গত দেড়টি বছর অনুসরণ করেছে The New Age এর মত পত্রিকাগুলো, Daily Star কিংবা “প্রথম আলো”-র বিপরীতে। মিউ মিউ না করা বলতে বোঝায় কিছু কিছু বাংলা-ইংরেজী ব্লগ যেভাবে যে ভাষায় বৈধতাহীন এ সরকারের প্রতিটি রাজনৈতিক পদক্ষেপের সমালোচনা ও বিশ্লেষণ করে গেছে গত দেড় বছর। আপনিই পড়ে একটা তুলনামূলক বিচার করে দেখুন না!
মিউ মিউ না করা বলতে আমি বুঝি স্পষ্ট কথন (clarity), সুনির্দিষ্ট কথন (precision), সহজ কথন (comprehensibility), সুনির্দিষ্ট বিষয়ভিত্তিক কথন (issue focus)। মিউ মিউ না করা বলতে আমি বুঝি সুনির্দিষ্ট বিষয়ের সুনির্দিষ্ট আলোচনা/বিশ্লেষণ, তাকে আর দশটা আধা প্রাসঙ্গিক বিষয়ের সাথে না মিশিয়ে উপস্থাপন; এবং উপস্থাপনের শেষে স্পষ্ট ভাষায় বলা এখন কি করণীয় এবং কিভাবে তা করা যেতে পারে। ‘মিউ মিউ না করা’ বলতে বোঝায় কোন ভনিতা বা দ্বিধা ছাড়া spade কে spade বলতে পারা, যা আপনারা ভ্যানগার্ডের কোথাও করেননি গত দেড় বছর (ইদানিং অবশ্য একটু সুর পাল্টাচ্ছেন বলে মনে হয়েছে যদিও!)। সামরিকচরিত্রের এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের “মৃদু সমালোচনা” কিংবা তার ব্যার্থতা তুলে ধরে “মৃদু অনুযোগ” (যা আপনারা করে গেছেন ভ্যানগার্ডে) যদি আপনাদের ভাষায় হয় “বাঘের গর্জন” তাহলে আর কিছু বলার নেই।
তথাকথিত বিপ্লবী রাজনীতির কর্মী হিসেবে বরং আপনারাই দিননা আরো ডজনখানেক উদাহরণ এই মিউমিউহীনতার? যাতে আমরা সবাই পড়তে পারি এবং ‘আলোকিত’ হতে পারি! ভ্যানগার্ডের যে আর্টিকেল আপনি refer করেছেন উপরে, সেটা আমি পড়েছি এবং সে বিষয়েও আমার কিছু বলার আছে। আগাম জানিয়ে রাখি – আপনার দেয়া আর্টিকলটা কিন্তু আমার মূল proposition-কে খন্ডন (disprove) করেনা। বিস্তারিত পরে লিখবো।
ইনসিডেন্টাল ব্লগার - ১৩ আগস্ট ২০০৮ (৯:৫৭ অপরাহ্ণ)
শান্ত বলেছেনঃ ….ভ্যানগার্ডের এই আর্টিকেলটি পড়েন- তাহলে (সামরিক) সরকার সম্পর্কে বাসদের অবস্থান বুঝতে পারবেনঃ
>>ভ্যানগার্ডের “মিউ মিউ সুর” মন্তব্যের প্রতিবাদে শান্ত ভ্যানগার্ডের একটি প্রতিবেদনের লিন্ক দিয়ে দিয়েছেন, যাতে আমরা সেটি পড়ে ভ্যানগার্ডের ও তার দলের প্রতিবাদী ভূমিকার ব্যপারে একটা ধারণা পেতে পারি। লিন্কে দেয়া প্রতিবেদনটি পড়েছি যেদিন প্রথম ছাপানো হয়েছিল সেদিনই। শান্ত বলার পর আবারও পড়লাম। সংক্ষেপে বলি: অত্যন্ত অস্পষ্ট, ধোঁয়াটে আর conceptually problematic মনে হয়েছে জগাখিচুড়ি ধরণের এই প্রতিবেদনটি । চিন্তিত হলাম এই দেখে যে প্রতিবেদনটির কি সমস্যা তা শান্ত’র মত কর্মীরা পড়েও ধরতে পারেনি। সুতরাং, ব্যাখ্যা করেই বলতে হচ্ছে।
প্রতিবেদনটির প্রথম অনুচ্ছেদে বলা হচ্ছে: “জেনারেল মইন উ আহমেদ বলেছিলেন, লাইনচ্যু ̈ত ট্রেনটিকে লাইনে তুলে দিতেই এ সরকার এসেছে। সম্প্রতি সরকারের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, ট্রেনটি লাইনে উঠেছে, এখন ‘ভাল’ চালক দরকার। তাঁর এ বক্তব্যে সচেতন মহলে বেশ কৌতূহল সৃষ্টি করেছে। দেশ কি তাহলে জনগণের প্রত্যাশিত পরিবর্তনের পথে চলতে শুরু করেছে?”
তাহলে আপনারা মনে করেন এটা শুধু একটা কৌতুহলেরই ব্যাপার সচেতন মহলের কাছে! তার চেয়ে বেশী কিছু না? আপনারাও কি তাদের মত স্রেফ কৌতুহলীই ছিলেন? এই সামরিক সরকার ক্ষমতাগ্রহণের ১৩ মাস পরও (প্রতিবেদনটি প্রকাশের সময়কাল অনুযায়ী) তখনও শুধুই ‘কৌতুহল’? একটি প্রতিবেদনের প্রথম অনুচ্ছেদ পড়েই পাঠকের কাছে প্রতিবেদক গোষ্ঠির attitude স্পষ্ট হয়ে যাওয়া উচিত। আমার কাছে অন্তত তা স্পষ্ট হয়নি; জনগণের কাছেই বা ঠিক কি কতটা স্পষ্ট করতে পেরেছেন তা কি ভেবেছেন কখনো? এতে সবকিছু ছাপিয়ে যে ইঙ্গিতটি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে তা হল বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্বন্ধে এক ধরণের “নমনীয় দ্বিধাদ্বন্দ”। এতো গেল আপনার এই “অসাধারণ” প্রতিবেদনটির inherent message এর কথা।
সোজা সাপটা ভাবে কি হচ্ছে, কেন হচ্ছে, কি করনীয়, কেন তা করণীয়, কিভাবে তা করা যেতে পারে- সে সব সংক্ষেপে সহজ বাংলায় লিখে প্রতিবেদনটা শুরু করলে কি কোন ক্ষতি ছিল? যদি মনে হয় দুতিন লাইনে সে সব আনা যাচ্ছেনা সেক্ষেত্রে একটা broad overview তো অন্তত দেয়া যেত। আমার এক শিক্ষক প্রায়ই বলতেন - ‘ওভারভিউ দিতে হলে ওভারভিউ থাকতে হয়’। যেভাবে আলোচনাটা শুরু করেছেন তাতে মনে হয়েছে ভ্যানগার্ড সম্পাদকের সেটি (overview) ছিলনা। মনে হয়েছে, যেনতেনভাবে পৃষ্ঠা ভরাট করাই যেন ছিল প্রতিবেদনটির মূল উদ্দেশ্য; কিছু ছাপাতে হয় বলেই ছাপানো!
এরপর ধরা যাক দ্বিতীয় অনুচ্ছেদের কথা। “চর্বিত চর্বন”বলেও ১/১১ র পুরো কাসুন্দি ঘাঁটা হয়েছে সেখানে। তার কি খুব দরকার ছিল? সম্পাদনার এমন মান কেন? নাকি সমস্যাটা অন্যখানে? (এতদিন জানতাম বড় দায়িত্ববোধ মানুষকে আরো যোগ্য করে; ভ্যানগার্ড সম্পাদকদের ক্ষেত্রে যে সেটি ঘটেনি তা বেশ পরিস্কার)। সেখানে ১/১১’র আগের সাথে পরের শাসনের তুলনা করা হয়েছে। এখন প্রশ্ন করি, যদি পরিবর্তনটা ইতিবাচক হোতো, তাহলে আপনারা কি করতেন? এখানে বিষয়টা কি পরিবর্তন হওয়া আর না হওয়ার ? আপনার কি মনে হয়না প্রতিবেদনটি সঠিক যুক্তি পদ্ধতি কিংবা জলপাই শাসনের বিরুদ্ধে সঠিক চিন্তার প্রচারে বিশেষভাবে ব্যার্থ হচ্ছে ঠিক এখানটাতেই? এতো নিশ্চয়ই মানবেন যে সঠিক উত্তর পাওয়ার প্রথম ধাপ হল সঠিক প্রশ্ন জিজ্ঞেস করা। তা কি আপনারা করেছেন কোথাও? কোথাও কি সঠিক যুক্তিপদ্ধতিটি তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন এই প্রতিবেদনে? জলপাই শাসন যদি আপনাদের চোখে খারাপ হয়ে থাকে তা কি শুধু এই জন্য যে আগের শাসনগুলোর থেকে এটি better perform করতে ব্যার্থ হচ্ছে? নাকি, এই জন্য যে – যে কোন সামরিক সরকারই reprehensible? সবচেয়ে নিকৃষ্ট গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার সাথে তুলনাতেও সামরিক শাসন যে অধম সেকথাটি স্পষ্টভাবে কোথাও বলা হয়েছে কি? বলতে কি কোন ক্ষতি হোতো? সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি বা যুক্তিপদ্ধতি তুলে ধরার ব্যার্থতাটি খুব স্পষ্ট। একে কি আপনারা জনগণকে নেতৃত্ব দেয়া বলেন? শুধুমাত্র অযোগ্য (কিংবা আধা যোগ্য) ভ্যানগার্ড সম্পাদনাই কি এজন্য দায়ী? নাকি সমস্যার বীজ বাসদের দলগত রাজনীতির আরো গভীরে প্রোথিত? সে আপনারাই বুঝবেন, আমাদের কাছে সাফাই গাওয়ার কিছু নেই।
এরপর তৃতীয় অনুচ্ছেদ। প্রথম লাইন: “এ নিয়ে এখন আর আর কোনো তর্ক নেই যে আওয়ামী লীগ-বিএনপি’র পাল্টাপাল্টির অসুস্থ রাজনীতির প্রতি জনমনে প্রচন্ড বিরক্তির প্রেক্ষাপটে . . “।
>>দেশে যখন সর্ব অর্থে সর্ব স্তরে একটি বিরাজনীতিকরণের ষড়যন্ত্র চলছে, তখন কি যৌক্তিকতা এই বিষয়টিকেই সামনে নিয়ে আসার? তাতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের legitimacyকে জনগণের সামনে প্রশ্নবিদ্ধ করার ক্ষেত্রে কোন উপকার হয় কি? নাকি সেটি কখনোই ভ্যানগার্ডের লক্ষ্য ছিলনা? রাজনৈতিক সরকারের বিরুদ্ধে পরোক্ষভাবে সন্দেহ আর হতাশাই কি ছড়ানো হয়না তাতে? সামরিক সরকারের প্রয়োজনীয়তা বা অনিবার্যতার message ই কি দেয়া হয়না তাতে?
সামরিক শাসনের আমলে ক্ষমতার কেন্দ্রিকরণের বিষয়টাতে আসতেই তিনটি অনুচ্ছেদ লেগে গেল তবে শেষ পর্যন্ত সংক্ষেপে হলেও কিছু কাজের কথা এসেছে: “বর্তমান সরকার টিকেই আছে সেনাসমর্থনের ওপর . . . বর্তমান সময়ে রাষ্টধীয় নীতি-সংক্রান্ত সেনাপ্রধানের যে কোনো বক্তব্যের গুরুত্ব প্রশ্নাতীত।” বুঝলাম, কিভাবে পর্দার অন্তরালে আসলে সামরিক বাহিনীই দেশ পরিচালনা করছে। কিন্তু তাতে ক্ষতিটা কোথায় সে ব্যাখ্যা নেই। আলোচনা করা যেত মিডিয়ার স্বাধীনতা, মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতি, তথ্যলাভের অসম্ভাব্যতা, জবাবদিহিতার সংকট, বিচারব্যবস্থার ওপর নির্বাহীসামরিক আগ্রাসন ইত্যাদি ইস্যুগুলো। ইস্যুগুলোকে সংযুক্ত করা যেত ব্যাক্তি ও সংগঠনের স্বাধীনতা এবং জনজীবনে সেসবের তাৎপর্যের সাথে। করা হয়নি। তা না করে প্রতিবেদনটা কি করলো এর পর চতুর্থ অনুচ্ছেদে? করলো এক দীর্ঘ আলোচনার সূচনা যাতে এলো কালোটাকা, সন্ত্রাস থেকে শুরু করে সাম্প্রদায়িকতা, দুর্নীতি, নির্বাচন – এক কথায় বাংলাদেশের রাজনীতিতে যা কিছু সমস্যা আছে, ছিল এবং হতে পারে তার সবকিছুর আলোচনা, তাও একরকম বুড়ি ছুঁয়ে যাবার মত করে, একটির সাথে অন্যটিকে এবং সবগুলোর সাথে সামরিক শাসন, গণতন্ত্রের সংকট ও আগামী দিনগুলোর কঠিনতর পরিস্থিতি যুক্ত না করেই। বলুন, অনুচ্ছেদ হিসেবে এই আলোচনাটা কি আসলেই কোন অর্থ বহন করে? দিকনির্দেশনা দেয়? নাকি এসব আলোচনা মানুষের মনে হতাশার বাণীই পৌঁছে দেয়, যে, কোন কিছুরই আসলে পরিবর্তন হয়না, হবেনা? message দেয় – বাংলাদেশের আকাশের নিচে সবকিছু আসলে একইরকম থাকে, থাকবে চিরদিন!
শান্ত’র ভাষায় অনবদ্য এই প্রতিবেদনটি শেষ হল এই লিখে:
কি বোঝাতে চাইলেন প্রতিবেদন লেখক এখানে? যেহেতু সবসমস্যার মূল হল পূঁজিবাদী বুর্জোয়া ব্যবস্থা সুতরাং এর উৎখাতই হচ্ছে সর্বরোগের মহৌষধ, তাইতো? আর আমাদের সবার উচিত বসে থাকা সেই মাহেন্দ্রক্ষনটির অপেক্ষায়, তাই তো? সবশেষে, প্রতিবেদনটিতে প্রেসক্রিপশন দেয়া হয়েছে আরো বড় “অপারেশনের”। অসাধারণ! কে করবে সে অপারেশন ? মঈন ফখরুদ্দিন গং? নাকি আপনারা করবেন? কি হবে সেই অপরাশেনের লক্ষ্য শুনি? তার মানে কি জেনারেল মঈনের প্রেসক্রিপশনের সাথে আপনাদের প্রেসক্রিপশনের পার্থক্য শুধু dosage বা মাত্রার (অপারেশন বনাম মলম!)? তুলনাটা কি আদৌ যথার্থ হল? আর বড় “অপারেশন”ই যদি ভ্যানগার্ডের প্রস্তাবিত সমাধান হয়ে থাকে, তাহলে তার বিস্তারিত দিকনির্দেশনা কই?
এখনো জিজ্ঞেস করবেন আমাদের মত নিন্দুকেরা কোন দুঃখ থেকে “আঁতাত” (এ বিষয়ে বিস্তারিত মন্তব্য প্রত্যুত্তর ৪৩ এ দেখুন) শব্দটি ব্যবহার করতে বাধ্য হয়? এতো vagueness এর পরও কি দাবী করবেন আপনাদের মুখপত্র ভ্যানগার্ডে মিউ মিউ করা ভারসাম্যরক্ষার সুর নেই? বরং স্বীকার করেই নিন না, আপনাদের নেতারা সরাসরি স্পষ্ট কথা বলতে ভয় পাচ্ছিলেন। দলের আদর্শিক ও চেতনাগত অধঃপতনটা যদি নাও মানতে পারি, আমরা অন্তত আপনাদের মানবিক সীমাবদ্ধতাজনিত ভয়ভীতিটা বোঝার চেষ্টা করবো!
শান্ত - ১৬ জুলাই ২০০৮ (১১:৫৭ পূর্বাহ্ণ)
1/11 পট পরিবর্তনের পরে জরুরী অবস্থার খবরদারীর মধ্যে 4 মাস পর ভ্যানগার্ড প্রকাশিত হয় এপ্রিলে। সেই সংখ্যাতেই সরকারের দুর্নীতিবিরোধী অভিযান সম্পর্কে একটি লিড আর্টিকেল একটু পড়ুনঃ লিংকঃ http://www.vanguardonline.info/vanguard/Apr-2007/1.pdf
এটা পড়ার ক্ষেত্রে এ বিষয়টিও মনে রাখবেন সে সময়ে গোটা দেশ সরকারের দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে দারুন খুশী- দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদদের একের পর এক ধরা হচ্ছিল, সেই খবর ফলাও করে সমস্ট মিডিয়াতে ছাপা হচ্ছিল। বাসদ/ ভ্যানগার্ড ই প্রথম সেই অভিযান নিয়ে ভিন্ন আলোচনা হাজির করেছিল!!!
শান্ত - ১৬ জুলাই ২০০৮ (১২:১০ অপরাহ্ণ)
খালিশপুর, সিরাজগঞ্জ, চট্টগ্রাম এ পাটশিল্প ধংস করে একের পর এক যখন মিলগুলো বন্ধ করা হচ্ছিল, গীতি আরা সাফিয়া যখন 18 জুলাই রোডম্যাপ ঘোষণা করে, যখন 14 হাজার শ্রমিকেরো বেশী শ্রমিক ছাটাই করা হয়েছিল- এবং আরো অনেক শ্রমিককে ছাটাইএর প্রক্রিয়া চলছিল- তখন বাসদ সহ বামরাই এর প্রতিবাদ করেছিল। ভ্যানগার্ডের আগস্ট সংখ্যার এই আর্টিকেল পড়ে দেখুনঃ http://www.vanguardonline.info/vanguard/Aug-2007/2.pdf
ভ্যানগার্ড তার সীমিত শক্তি নিয়ে দেশবাসীর কাছে ঘটনাগুলো তুলে দেয়ার চেস্টা করেছিল। সিরাজগঞ্জ সহ কয়েকজায়গায় বাসদ ভিতরে ভিতরে শ্রমিকদের মধ্যে আন্দোলনও সংগঠিত করার চেস্টা চালিয়েছে।
শান্ত - ১৬ জুলাই ২০০৮ (১:১৬ অপরাহ্ণ)
এমনকি দেখুন- বন্যার সময়েও ভ্যানগার্ডের যে রিপোর্ট- সেখানেও সরকারের ভূমিকা-পদক্ষেপের নানা সমালোচনা করে উপসংহারে জানাচ্ছেঃ
“….বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ঘোষণা দিয়েছেন তার সরকার দেশের জনগণকে বন্যার আক্রণ থেকে বাচাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবে। কিন্তু গত 7 মাসে এদের কার্যক্রম যারা লক্ষ করেছেন তারা বুঝবেন, এ সরকার অন্যদের মতই দেশী-বিদেশী পুঁজিপতিদের স্বার্থরক্ষাই তাদের কর্তব্য বলে স্থির করেছে। বন্যায় তো মরে হতদরিদ্র অসহায় মানুষেরা, ক্ষতিগ্রস্তও হয় কৃষক ক্ষেতমজুর সহ বিত্তহীন মানুষেরা। শিল্পের দিক দিয়েও বিচার করলেও বন্যায় আক্রান্ত হয় ক্ষুদ্র ও মাঝারী শিল্পের মালিকেরা। বৃহৎ পুঁজিপতিরা সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। আর কিছু যদি হয়ও, তবে মোটা অংকের ব্যাংক ঋণ, বোনাস ভাউচার, কর-শুল্ক মওকুফ ইত্যাদি তো আছেই। ফলে বন্যা নিয়ে ভাবনা করাটা তাদের খুব একটা প্রয়োজনীয় না। তাহলে তাদের সরকার এ ব্যাপারে উদ্বিগ্ন হবে কেন? ফলে বর্তমান সরকারের কাছে বন্যা নিরোধের ব্যাপারে কার্যকর কোন পদক্ষেপ আশা করাটা বাতুলতারই নামান্তর।”
লিংকঃ http://www.vanguardonline.info/vanguard/Aug-2007/3.pdf
ফলে- আশা করি বুঝতে পারছেন যে, বাসদ এই সরকারের কাছে কতখানি কি আশা করে!!!!
মুক্তাঙ্গন - ১৫ জুলাই ২০০৮ (১২:৪৭ অপরাহ্ণ)
এ বিষয়ে এখানেও কিছু আলোচনা হয়েছে। আগ্রহী হলে পড়ে দেখতে পারেন।
watcher - ১৫ জুলাই ২০০৮ (৭:৫৪ অপরাহ্ণ)
i think the comments and the way of judgement of Incidental is one sided. I think he has some pre-conceptions and he is guided by them.
Because there are more some points which are not mentioned on his writings.
watcher - ১৫ জুলাই ২০০৮ (৮:০৯ অপরাহ্ণ)
To Incidental:
You have questions about democratic centralism.
what do u think about it? Have you ever practiced it?
You have a question with “Koreshi”.what do u know about the relation between koreshi and SPB?
In this time, what do u think which one was the biggest and which one was the most important movement of Bangladesh?Where was SPB then?I think u must know that at first as a political party who broke the “Joruri obostha”?
We know the total primary number of SPB.Do u think in the last 1/1.5 years thousands of worker of SPB have increased?We dont think so because it has no evidence.
Have Patience freind.dont be hurry may be u ll loose ur way.
অলকেশ - ১৬ জুলাই ২০০৮ (১২:৪১ পূর্বাহ্ণ)
@ ওয়াচারঃ আপনি অবশ্যই চাইবেন যে, আপনার লিখা আমরা সবাই পড়ি। বুঝি । ফলে, বাংলায় লিখলে বোধ হয় ভাল করতেন । কারন, আপনার কষ্ট হয়েছে বোঝাতে এবং আমাদের কষ্ট হয়েছে বুঝতে —–।
pothik - ১৬ জুলাই ২০০৮ (১২:৪২ পূর্বাহ্ণ)
prthomei khoma chaschi, bangrejite likhchi bole. amar unicode jhamela korche bole, r english-e thik thik moner vab-ta prokasher khomota nei bole….
shomalochok j ei eki dol korten besh bujhte parchi. vai netritto cheye panni kina tao bujhchi na. tobe gayer jhal vai ja mitaichen ta bolar na.
she apnader bepar apnarai shamlaben. shudhu ekta bishoy ullekh korte chai. amar mone hoy shomalochona korbar odhikar shobar ache jodi tar shotti shotto janar agroho-ta thake. she krishoki hok, methori hok r rajniti bidi hok. borong ek jon rajnitibid ei bishoye kotha bolchen shetai amar kache odvud legeche. amar jana chilo na j ek jon rajniti bid eto tuku pore abar ekta nirikkha dhormi lekha likhechen. jai hok beparta democratic out look theke dekhle amar mone hoyeche prothomei jodi keu (she lekhoki hon r tar ondho shomorthoki hon) jiggesh kore boshen- vai apni k? apnar joggota ki amar shomalochona korar? taholeto bipod. eta to vai kono democratic kotha hote pare na. kono pokkhoi ekhane bolte pare na- amar right ache, tomar nei. adote to manusher jonnoi lekha hoy, manushi ta pore. r ta jodi nai hobe tahole r chapano hoy keno?
abar kono ekta bishoye ekta valid shomalochona thakle ami ontoto take jiggesh korte jabo na, vai apni ki ki korlen. jeta incidental vai korechen. bashod ki ki korlo, sheta ki ekhankar bibechcho bishoy? naki amra ektu dekhe nibo adeto ja bola hosche ta thik ki bethik. r ei khanei khotka ta lagche. shei alochonatei jaoa holo na. incidental vai gie porlen bashoder gharer upore. baps!! ki raag.
r bashod namta eto kore shunlam aj prothom. eto boro dol, hajar hajar kormi jukto hoyeche jana chilo na, ba koreshider shatheo nam tam kokhono shunini. ibrahimer nam porjonto shona hoyeche. ajo to prothom alote bashodke nam shorboshsho dol hishebe chinhito koreche dekhlam.
jak ar boro korbo na. bodhoy ei doler lok jono achen ekhanei. tader kache kichu shunte chai. tobe proshongoto bole rakhi. zaman shaheber lekhata valo laglo. bishesh kore oi ghotonatar ullekh, j khane shamsur rahman nijei char pasher rajniti birodhi bera jal vangchen. ghotonata jantam na, shamsur rahmanke aro beshi kore valo lege gelo. onar ek jonmo dine uposthit chilam, shedin ba porer dike onar upore ektu birokto hoye uthechilam, bishesh kore onar awami-priti dekhe dekhe. aj onar shedin kar upolobdhir kotha pore valo laglo. incidental k dhonno bad ei ghotonata janar upolokkho hobar jonno. ullekh korar jonno zaman shaheb-keo dhonnobad. abar dhonnobad incidental-k. apnar kache ektu dhir isthir r bekti goto khob nirepekkho lekha asha korbo shamne.
মুক্তাঙ্গন - ১৬ জুলাই ২০০৮ (৩:২৮ অপরাহ্ণ)
অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়ে আলোচনা চলছে। আমরা সবাই তা উপভোগ করছি, অনেক কিছু জানতেও পারছি। ব্লগারদের এবং মন্তব্যকারীদের সবার প্রতি সনির্বন্ধ অনুরোধ:
১। আলোচনাকে পোস্টের বিষয়বস্তুর (যথা: সমাজতান্ত্রিক সাহিত্য বিচার) নিরিখে প্রাসঙ্গিক রাখার চেষ্টা করুন; এবং
২। ব্যক্তিগত আক্রমণ করা থেকে বিরত থাকুন। এত সব বিচক্ষণ এবং যৌক্তিক মানুষের সমাবেশে তার মনে হয় কোন প্রয়োজন নেই।
এই ব্লগ মডারেট করা হয়না। যার অর্থ প্রত্যেকে স্বাধীনভাবে মন্তব্য করতে পারেন এখানে কারো সম্মতির অপেক্ষায় না থেকে। সাহায্য করুন সেটিই যেন বজায় রাখতে পারি এখানে সবসময়।
শান্ত - ১৬ জুলাই ২০০৮ (৩:৪৬ অপরাহ্ণ)
আপনি বলেছেন, “…সবশেষে বলতে হয়–এতো কথা লিখেছেন আপনি, কিন্তু আমার পোস্টটির মূল বক্তব্য “সাহিত্যিক অবমূল্যায়নের মৌলবাদী প্রবণতা” সম্বন্ধে আপনাকে কিছুটা নিরবই মনে হল! আমার ভুলও হতে পারে।”
==>>>>>
আপনার পোস্টের মূল বক্তব্য কি “সাহিত্যিক অবমূল্যায়নের মৌলবাদী প্রবণতা”?? “সাহিত্যিক অবমূল্যায়নের মৌলবাদী প্রবণতা” মানে কি???
bilal - ১৭ জুলাই ২০০৮ (১:২৬ অপরাহ্ণ)
কমরেড #রামায়ন পড়াবার মধ্যিখানে সীতা যেন কার বাবা সেটাও একটু বইলেন,,,
শান্ত - ১৭ জুলাই ২০০৮ (৭:২৪ অপরাহ্ণ)
রামায়ন পাঠ করে এমন প্রশ্ন যেমন অনেকে করে যে, “সীতা কার বাবা”- তেমনি সপ্ত খণ্ড রামায়ন পড়ে কেউ কেউ দাবী করে ফেলে রামায়নের মূল ঘটনাক্রম ভরতকে কেন্দ্র করে আবর্তিত- তথা ভরতই রামায়নের মূল চরিত্র!!!
একটি প্রমাণহীন, অসত্য, মনগড়া, ব্যক্তিগত রাগ-ক্ষোভ-আক্রোশ ও অভিযোগে ভরা প্রবন্ধকে শেষে জোর গলায় “সাহিত্যিক অবমূল্যায়নের মৌলবাদী প্রবনতা” মূলবক্তব্য বলে দাবী করলেই কি তা হয়ে যায়??
ইনসিডেন্টাল ব্লগার - ১৭ জুলাই ২০০৮ (১:০৪ পূর্বাহ্ণ)
@ শান্ত:
ধন্যবাদ মন্তব্য#৭ এর বিপরীতে লিন্ক এবং আপনার দলের অবস্থান ব্যাখ্যা করে যুক্তি উপস্থাপনের জন্য। এমূহুর্তে কিছু ব্যক্তিগত ও পেশাগত কাজে অত্যন্ত ব্যস্ত থাকায় এখনই উত্তর দিতে পারছিনা। আপনার উত্থাপিত বিষয়গুলো আরো গভীর মনোযোগের দাবীদার তাই অসম্পূর্ণ উত্তর দেয়া থেকে বিরত থাকছি। একটু ধৈর্য ধরতে অনুরোধ করবো।
মন্তব্য#১৪-তে আপনি যে প্রশ্নটি করেছেন তার উত্তর আমি দেবোনা বলে ঠিক করেছি। কারণ, সমাজতান্ত্রিক বিচারের নামে “সাহিত্যিক অবমূল্যায়নের মৌলবাদী প্রবণতা” বোঝাতে প্রায় ৩০০০ শব্দের এই পোস্টটি লেখা হয়েছে। আমার ধারণা সেখানে তা যথেষ্ট পরিস্কারভাবেই ব্যাখ্যা করা হয়েছে। আপনার দিক থেকে এই বিষয়বস্তুর উপর কোন বিশ্লেষনধর্মী আলোচনা থাকলে কেবল তখনই অংশ নেবো।
শান্ত - ১৭ জুলাই ২০০৮ (৪:০৮ পূর্বাহ্ণ)
[b]সমাজতান্ত্রিক বিচারের নামে “সাহিত্যিক অবমূল্যায়নের মৌলবাদী প্রবণতা” বোঝাতে প্রায় ৩০০০ শব্দের এই পোস্টটি লেখা হয়েছে।[/b]
====>>>>>>>
আপনি একজায়গায় লিখেছেন এই পোস্টের মূল বক্তব্য “সাহিত্যিক অবমূল্যায়নের মৌলবাদী প্রবণতা” এবং এখন বললেন 3000 শব্দের এই পোস্টটি লিখেছেন “সাহিত্যিক অবমূল্যায়নের মৌলবাদী প্রবণতা”বোঝাতেই!!!!
আপনার এই পোস্ট আদ্যপান্ত কয়েকবার পরেও সেটা না বুঝতে পারার অক্ষমতা স্বীকার করে নিয়েই আপনার কাছে অনুরোধ করছি- এই “সাহিত্যিক অবমূল্যায়নের মৌলবাদী প্রবণতা” বিষয়টি কি আরেকটু বিস্তারিত বইলেন!!!!
শান্ত - ১৭ জুলাই ২০০৮ (৪:৩৬ পূর্বাহ্ণ)
আপনার পোস্টের শিরোনাম এবং শুরুর কয়েক লাইন পড়ে প্রথমে ভেবেছিলাম- একটি সাহিত্যালোচনা পড়তে যাচ্ছি- যেটি মূলত খালেকুজ্জামান কর্তৃক শামসুর রাহমানের উপর মূল্যায়নকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হবে এবং সেই আলোচনা/মূল্যায়নের সীমাবদ্ধতা, সমস্যা-সংকটগুলো উঠে আসবে। কিন্তু আপনার পোস্ট যতই এগিয়েছি- ততই হতাশ হয়েছি, সেখানে সাহিত্য সমালোচনার বাইরে গিয়ে মিথ্যা-ভিত্তিহীন অভিযোগের বন্যা বইয়ে দিয়েছেন সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক ভাবে!! ফলে, আপনার 3000 শব্দের এই কথামালায় সাহিত্যালোচনা খুজে পেতে পরে অণুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে খুঁজতে হয়!!!
কিছু কিছু আলোচনা অবশ্য পাওয়া যায়- তবে সেই এক দুলাইন আলোচনার পরপরেই শুরু হয় আবার সাহিত্যালোচনার বাইরের অহেতুক অভিযোগের পাহাড়!!!
এবং যতই পড়েছি, আপনার পোস্ট যতই এগিয়েছে- ততই আপনার মৌলবাদী চিন্তাধারাটি স্পষ্ট হয়েছে- আপনার লেখার ছত্রে-ছত্রে। সেখানে আসছি একটু পরে।
আপনি শুরুই করেছেন এভাবে- “….. আমার জানা নেই কমরেড খালেকুজ্জামানের সাহিত্য সমালোচনার কোনো প্রশিক্ষণলব্ধ যোগ্যতা (যেমন: সাহিত্যে উচ্চতর ডিগ্রি), কিংবা প্রাতিষ্ঠানিক অভিজ্ঞতা (যেমন: দীর্ঘদিন কোনো পত্রিকার সাহিত্য পাতা সম্পাদনার সাথে সম্পৃক্ততা), কিংবা একজন সাহিত্যিক বা সাহিত্য সমালোচক হিসেবে সর্বজনগ্রাহ্যতা আছে কিনা।”
এই যখন একজন আপনার অবস্থান হয়- তখন বুঝতে সমস্যা হয় না এই সাহিত্যালোচনার পরিণতি কি দাঁড়াবে!! সাহিত্যে সাহিত্য সমালোচনার প্রশিক্ষণলব্ধ যোগ্যতা তথা উচ্চতর ডিগ্রি,প্রাতিষ্ঠানিক অভিজ্ঞতা অথবা সাহিত্যিক বা সাহিত্য সমালোচক হিসাবে সর্বজনগ্রাহ্যতা না থাকলে যে কোন সাহিত্য আলোচনা করা যাবে না- এমন সংকীর্ণ ও মৌলবাদী যার দৃষ্টিভঙ্গী, তার সাথে সাহিত্য নিয়ে আলোচনায় যেতে একটু ভয়ই লাগে- কেননা কখন যে তিনি আমারেও একই প্রশ্ন তুলে থামিয়ে যে দিবেন না তার নিশ্চয়তা কি? কেননা, আমার এসবের কোন কিছুর কানাকড়িই নেই।
আর, বিপরীতক্রমে পোস্টদাতার যোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন উত্থাপন করছি না কারণ ধরে নিচ্ছি তিনি যথেস্ট যোগ্য, উপরিউক্ত যোগ্যতাসমূহ ওনার না থাকলে নিশ্চয়ই তিনি এমনভাবে বলতেন না!!!
শান্ত - ১৭ জুলাই ২০০৮ (৫:০৫ পূর্বাহ্ণ)
এরপরে পথিকৃৎ পত্রিকা নিয়ে কিছু কথা বলেছেন- এই পত্রিকা কেন খালেকুজ্জামানের কাছ থেকে এই লেখাটি/মূল্যায়নটি আহবান করেছে- সেটি আপনার কাছে যথেস্ট কৌতুহলোদ্দীপক!!!
এই কৌতুহলোদ্দীপনের পেছনে যে একজন রাজনীতিবিদের, বিশেষ করে একজন সমাজতন্ত্রীর সাহিত্যালোচনা নিয়ে আপনার একধরণের এলার্জী আছে- সেটি বুঝতে বেগ পাওয়া যায় না। সেটা পরবর্তীতে আপনার “শ্রেণীপ্রভাব” নিয়ে ব্যঙ্গবিদ্রুপ এবং পরবর্তীতে সোভিয়েত স্থানীয় বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পরিচালককে সাহিত্য বিচারের দায়িত্ব দেয়ায় নাখোশ হওয়ার ঘটনায় বুঝা যায়!!!!
একজন সমাজতন্ত্রবিরোধী মানুষের কাছ থেকে এ আচরণ অবশ্য অপ্রত্যাশিত নয়। তাই আপনার জ্ঞাতার্থে এটুকু জানানো যেতে পারে যে, পথিকৃৎ পত্রিকাটি মার্ক্সীয় ঘরানার একটি সাহিত্য-সংস্কৃতি ভিত্তিক পত্রিকা। তারা সাহিত্যালোচনা করে মার্ক্সবাদী দৃষ্টিভঙ্গীর আলোকেই। ফলে- সেখানকার সমস্ত নিবন্ধই/ সাহিত্যালোচনাই লিখেন সমাজতন্ত্রীরাই- বামনেতাদের লেখাই সেখানে পাবেন। সেখানকার প্রতিটি নিবন্ধের প্রতিটি ছত্রে ছত্রে শ্রেণী প্রভাব, শ্রেণীদ্বন্দ্ব একথাগুলো আপনি পাবেন।
শান্ত - ১৭ জুলাই ২০০৮ (৫:৩৯ পূর্বাহ্ণ)
আপনি লিখেছেন, “…আধুনিক কবি হিসেবে শামসুর রাহমানের কবিতা যে ছন্দনির্ভর নয়, সে কথা না-ই বা তুললাম। আর আধুনিক কবিতার পাঠকের কাছে কবিতার আবেদনের পেছনে যে ছন্দই প্রধান নয়, কমরেড খালেকুজ্জামানের মতো একজন বোদ্ধা পাঠককে সেটি মনে করিয়ে দেয়া হয়তো একটু ধৃষ্টতাই হয়ে যাবে। সুতরাং সে চেষ্টাও করবো না।”
খালেকুজ্জামানের যে আলোচনার প্রেক্ষিতে এটি বলেছেন- সেটি হলোঃ “বিনীত, মার্জিত, মৃদুভাষী কবি শামসুর রাহমান বিশ্বাস করতেন ‘কবিতা মানুষের মনকে পরিশীলিত করে।’ এটা ঠিক যে কবিতার ছন্দ মানুষের মনকে দোলায়িত করে। কিন্তু কবিতার গাঁথুনির মধ্যে যে কাব্যভাব লুকিয়ে থাকে এবং যে ভাব-চেতনা পাঠক শ্রোতাদের মনে আবেগ-আবেশ, অনুভূতি-প্রেরণা, শিক্ষা ও সংস্কৃতি সুরের দ্যোতনা সৃষ্টি করে – শ্রেণীতে ভাগ করা সমাজে কবি কিংবা পাঠক কেউ-ই কাব্যভাবের আড়ালে লুকিয়ে থাকা ওই শ্রেণীপ্রভাব থেকে মুক্ত থাকতে পারেন না। এ বিষয়ের সঠিক উপলব্ধি যে খুব জরুরি তাঁর লেখায় সেটি তেমন তীক্ষ্ণভাবে ফুটে ওঠেনি।”
পোস্টদাতাকে বিনীতভাবে প্রশ্ন করি ছন্দ মানে কি একটু বিস্তারিত বলবেন কি????
আর, খালেকুজ্জামানের উপরের আলোচনায় আপনি কোথায় পেলেন যে,আধুনিক কবিতার পাঠকের কাছে কবিতার আবেদনের পেছনে যে ছন্দই প্রধান??? ওনার “কবিতার গাঁথুনির মধ্যে যে কাব্যভাব লুকিয়ে থাকে এবং যে ভাব-চেতনা পাঠক শ্রোতাদের মনে আবেগ-আবেশ, অনুভূতি-প্রেরণা, শিক্ষা ও সংস্কৃতি সুরের দ্যোতনা সৃষ্টি করে” এই আলোচনা কি আপনার চোখে আড়ালে ছিল?? যে দাবী খালেকুজ্জামান করেনি সেটি ওনার উপর চাপিয়ে দিয়ে ওনাকে না মনে করিয়ে দিয়ে ধৃস্টতা করা থেকে বিরত থাকার কথা বলাটা ধৃস্টতাই মনে হলো। আপনার ধৃস্টতায় কারো কিছু যায় আসে না- তবে আপনাকে বিনীত অনুরোধ করবো- কোন লেখা নিয়ে আলোচনা করার আগে লেখাটি ভালো করে পড়ুন- কয়েকবার পড়েন, লেখক কি বলতে চেয়েছেন, কোন প্রেক্ষিতে কি বুঝাতে চেয়েছেন- সে সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা নিয়েই আপনার আলোচনাটি তৈরী করবেন।
তা নাহলে, এমন পূর্বতন স্থির ধারণাজাত সিদ্ধান্ত/আলোচনাই প্রসব করবেন- আর কিছু দাঁড় করাতে পারবেন না।
ইনসিডেন্টাল ব্লগার - ১৯ জুলাই ২০০৮ (৩:৩২ পূর্বাহ্ণ)
শান্ত#১৮: “পোস্টদাতাকে বিনীতভাবে প্রশ্ন করি ছন্দ মানে কি একটু বিস্তারিত বলবেন কি????
সুব্রত#২৪:”বেশ কয়েকটা কবিতা নিয়ে যাচাই করে দেখলাম। না কোথাও ছন্দের ব্যাতয় ঘটেনি।”
নাঈম#২২:”আর যাই হোক তিনি কবিতা বা ছন্দের যে কিছুই বোঝেন না আমি সে বিষয়ে পুরোপুরি নিশ্চত।
মন্তব্যকারীদের আলোচনায় যুক্তি আছে। আর নাঈম এর বক্তব্যের সাথে দ্বিমত করা অর্থহীন। কারণ, নিজেকে আমি কবিতার একজন সাধারণ পাঠক বলেই বিবেচনা করি – যখন যা পাই পড়ি তাদেরই মধ্যে কেউ কেউ হয়তো বাকীদের চেয়ে অধিক প্রিয় – বোদ্ধা পাঠক হওয়া তো অনেক দূরের কথা। শামসুর রাহমানের বেশীর ভাগ কবিতাই অক্ষরবৃত্তে, খুবই ঠিক। মাত্রাবৃত্ত ও স্বরবৃত্তও ছিল কিছু কিছু যতদূর মনে পড়ে। আর ছিল কিছু গদ্য কবিতা। ছন্দ বিষয়ে আমার আগ্রহ বরাবরই খুব কম, জ্ঞান তো আরো কম – কিছুটা অলৌকিক মনে হলেও নাঈম সেটা ধরে ফেলেছেন কিভাবে যেন।
একেকজন একেকভাবে কবিতা পড়েন; আমার একটা অভ্যাস (কিংবা বদভ্যাস বলতে পারেন) হল সবসময় ছন্দটাকে overlook করে পড়ার চেষ্টা করি; মাথার ভেতর সচেতনভাবে acknowledge না করার চেষ্টা করি। কেন যেন ছন্দের অস্তিত্বের ব্যপারে সচেতন হলেই আমার কাছে মনে হয় কবিতাপাঠের ভেতরকার মজাটাই বুঝি নষ্ট হয়ে গেল। এ অনেকটা এরকম – সুন্দর মানুষ দেখতে চাই, ভালো লাগে, তাদের হাড় গোড় দেখতে চাইনা। তার অবশ্য ব্যতিক্রম আছে কারো কারো কবিতার (বিশেষ করে ছড়ার) বেলায়। জানিনা আপনাদের কারো এমন হয় কিনা।
হাতের কাছে এমুহুর্তে খুব বেশী কবিতা নেই শামসুর রাহমানের। সুতরাং বলতে পারবো না ঠিক কোন ছন্দের কবিতা কত ভাগ ছিল তাঁর কবিতা সমগ্রে। তবে সুব্রত যা বলছেন আমার কাছেও মনে হচ্ছে তেমনই হয়তো হবে।
বিষয় সেখানে নয়। কমরেড খালেকুজ্জামানের যে উদ্ধৃতিটি নিয়ে উপরের মন্তব্যগুলো করা হয়েছে তার কথাতেই ফিরে আসি। জামান সাহেব লিখেছেন “কবিতার ছন্দ মানুষের মনকে দোলায়িত করে।” এই ‘দোলায়িত করা’ নিয়েই আমার যত আপত্তি, যেটা আসলে বলতে চেয়েছি আমার আলোচনায়। খুব সফল হয়েছি বলে মনে হচ্ছেনা আপনাদের মন্তব্য থেকে। বুঝিয়ে বলি কি বলতে চেয়েছি। শামসুর রাহমানের বেশীর ভাগ কবিতাই অক্ষরবৃত্তে, এবং সমস্যাটা হয়ে দাঁড়ায় সেখানেই। কারণ অক্ষরবৃত্ত ব্যবহার করে প্রায় বাকস্পন্দনের কাছাকাছি চলে আসা যায় ফলে অনেকসময় মনে হতে পারে কবিতাটি বুঝি গদ্যে লেখা। আমার সে পরিস্থিতির ব্যপারে কোন অভিযোগ তো নেইই, বরং তাই হয়তো মনের কোন কোণে খুঁজে বেড়াই কবিতার মধ্যে। সুতরাং বুঝতে পারছেন একেকজনের কাছে কবিতার একেকটি জিনিস আবেদনময়। কারো ক্ষেত্রে ছন্দ, কারো ক্ষেত্রে এর অনুপস্থিতি, কারো ক্ষেত্রে চিত্রকল্প, শব্দবিন্যাস, বিষয়বস্তু ইত্যাদি এমন হাজারটা বিষয় হতে পারে। সে বিচারে জামান সাহেবের বিশ্লেষণটা একটু সরলীকৃত মনে হয়েছে। কারণ গদ্যের মত দেখতে শুনতে (নাঈমের ভাষায় একেবারে “বকলম” সাধারণ পাঠকের অবস্থান থেকে বলছি) শামসুর রাহমানের অনেক অক্ষরবৃত্তের কবিতা (গদ্যকবিতাগুলো তো বটেই) পড়ার সময় অনেক বিষয়েই মজা পাওয়া যেতে পারে তবে তাদের “ছন্দে দোলায়িত” হওয়া আমার কাছে একটু কঠিনই মনে হয়েছে। কেউ কেউ হয়তো পারেন বাজনা ছাড়াই নিজে নাচতে বা অন্যের নাচ দেখতে; দুর্ভাগ্যবশত সবাই তাদের দলে পড়েননা। সৌভাগ্যবানদের মনের ভেতর বাজনা বাজে; আমার এবং আরো অনেকেরই বাজেনা। কতটুকু ব্যাখ্যা করতে পারলাম জানিনা।
সুব্রত (২৪ নং) মন্তব্য পড়ে এখন মনে হচ্ছে লেখাটির মূল আলোচনায় “ছন্দের” এই পুরো আলোচনাটা না আনলেও হয়তো খুব একটা ক্ষতি হোতোনা। এনেছিলাম একটা passing reference হিসেবে – উদ্ধৃতি ধরে ধরে বিতর্কের একধরণের সূচনা (warm up) হিসেবে বলতে পারেন। শুধু শুধুই হয়তো তা আলোচনাটায় কিছু বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেছে লেখক এবং পাঠকের মধ্যে যা হয়তো খুব সহজেই এড়ানো যেত।
শান্ত - ১৭ জুলাই ২০০৮ (১০:৪৫ পূর্বাহ্ণ)
খালেকুজ্জামানের 7পৃষ্ঠার আর্টিকেল থেকে আপনি শেষের দিকের 3টি প্যারা তুলে দিয়ে খালেকুজ্জামান কৃত অবমূল্যায়ন দেখাতে চেয়েছেন!! আপনার দেয়া 3টি প্যারার মধ্যে 1টি প্যারার আলোচনার জন্য আবার ধন্যবাদও জানিয়েছেন। সুতরাং, এই আলোচনায় আপনি মূলত তুলে ধরেছেন 2টি প্যারা- যেদুটিতে আপনি আপত্তি খুজে পেয়েছেন। কিন্তু আপনার আপত্তিও যখন জানিয়েছেন- সেটি কিন্তু সঠিক পন্থায় নয়, কোন সাহিত্য মূল্যায়নকে অবমূল্যায়ন হিসাবে প্রতিপন্ন করতে হলে সেই মূল্যায়নের কোন কোন জায়গায় কি সমস্যা- কোথায় দ্বিমত, সেগুলো তুলে ধরাই শ্রেয়; কিন্তু তা না করে- যে আলোচনা/সমালোচনা করছে- তার কি যোগ্যতা, সে কি করে – তার দল কি করেছে এ ধরণের ফিরিস্তি (মিথ্যায় ভরা) তুলে ধরাকে আর যাই বলেন- সাহিত্যালোচনা বলা যায় না।
একজন সাহিত্যিকের সাহিত্য কর্ম কোন পাঠকের কাছে যেভাবে যায়- সে তো সে ভাবেই সেটাকে পর্যালোচনা করবে। কোন পাঠকের কাছে যদি মনে হয় কোন লেখকের লেখায় কোন কিছুর ঘাটতি বা অভাব আছে, তখন সেই পাঠককে ব্যক্তিগতভাবে জিজ্ঞেস করা কি সাজে যে তার মধ্যে সে উপাদান কতখানি আছে? শরৎ সম্পর্কে একটি সমালোচনায় দেখেছিলাম- তিনি শুধু সমাজের সমস্যা দেখিয়েছেন- সমাধান নির্দেশ করেননি; এখন এই সমালোচনা যিনি করলেন, তাকে কি পাল্টা প্রশ্ন করবো, ভাই আপনি সমাজের সমস্যাগুলোর কি সমাধান দেখাচ্ছেন? তাকে কি প্রশ্ন করবো, আপনি শরৎ সাহিত্যের সমালোচনা করার কি যোগ্যতা রাখেন??… ইত্যাদি।
নাকি, শরৎ সম্পর্কিত সে সমালোচনার সাথে একমত না হলে কোন জায়গাটিতে একমত নই- সেটি তুলে ধরবো??? (উদাহরণ দিলাম)
খালেকুজ্জামানের “..সকল শোষণ-পীড়ন থেকে মুক্তির আরও সুন্দর ভবিষ্যতের সঠিক দিশা তুলে ধরতে অসমর্থ হয়েছেন। . . . যথার্থ গণমুক্তির জন্য বুর্জোয়া ব্যবস্থার বিরুদ্ধে গণবিপ্লবের প্রয়োজনীয়তা তাঁর উপলব্ধিতে ধরা পড়েনি” আলোচনাটির প্রেক্ষিতে আপনি লিখেছেনঃ
“কাউকে কোনো কাজে ব্যর্থ আখ্যা দেয়ার আগে যে বিষয়টা সর্বাগ্রে বিবেচ্য তা হল — সে কাজটা তার ওপর অর্পিত দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত ছিল কিনা। যতদূর বুঝি, জবাবদিহিতার ব্যাকরণে সেটাই হল প্রথম পাঠ। সুতরাং প্রশ্ন হল, ‘সুন্দর ভবিষ্যতের সঠিক দিশা’ তুলে ধরা কি কবি শামসুর রাহমানের নিয়মিত দায়িত্বের অংশ ছিল যে তাঁকে সে দায়িত্বে ব্যর্থতার জন্য দায়ী করা হচ্ছে আজ ? সবকিছু, এমনকি সমাজ পরিবর্তনের সঠিক ‘দিশা’-টুকুও যদি কবিকেই দিয়ে যেতে হয়, তাহলে কমরেড খালেকুজ্জামানের মতো বিচক্ষণ ও ত্যাগী নেতারা এবং তাঁদের বিপ্লবী দল কী করবে?”
এভাবে কি খালেকুজ্জামানের বক্তব্য খণ্ডন করা গেলো?? খালেকুজ্জামান বা তার দল কি করলো- বা কি করে- সে প্রসঙ্গের সাথে শামসুর রাহমানের লেখনী নিয়ে ওনার বা ওনার দলের মনোভাব তথা মূল্যায়নের সম্পর্ক কি?? তারচেয়ে বরং অনেক প্রাসঙ্গিক হতো- খালেকুজ্জামানের বক্তব্যের অসারতা তুলে ধরে দেখালে। আপনি দেখিয়ে দিতেন, ধরে ধরে দেখিয়ে দিতেন – শামসুর রাহমানের লেখায় সকলপ্রকার শোষণ-মুক্তির জন্য বুর্জোয়া ব্যবস্থার বিরুদ্ধে গণবিপ্লবের প্রয়োজনিয়তা ছত্রে ছত্রে উপলব্ধ হয়েছে।
হুম একজায়গায় আপনি লিখেছেন- সে দায়িত্ব নাকি শামসুর রাহমানের না- আপনার ভাষায় এমনকি সমাজ পরিবর্তনের সঠিক ‘দিশা’-টুকুও যদি কবিকেই দিয়ে যেতে হয়, তাহলে কমরেড খালেকুজ্জামানের মতো বিচক্ষণ ও ত্যাগী নেতারা এবং তাঁদের বিপ্লবী দল কী করবে?” – এখানেই আপনার মতো তথাকথিত সাহিত্যপ্রেমীদের সাথে সমাজতন্ত্রীদের পার্থক্য। সমাজে জন্মগ্রহণকারী ও বেড়ে ওঠা প্রতিটি মানুষেরই সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা আছে বলে একজন সমাজতন্ত্রী মনে করে। সে মানুষ একজন কবি-সাহিত্যিক-কর্মজীবি যেই হোক না কেন।
আর, একজন কবির লেখায় “দিক নির্দেশনা” থাকলে বিপ্লবী দল কি করবে- এই আলোচনায় আপনার চিন্তার দৈন্যই ফুটে ওঠে, বিপ্লবী দলের কর্মকাণ্ড কি সে সম্পর্কে আপনার জানাবোঝার ঘাটতিই প্রকাশিত হয়; এবং কবি-সাহিত্যিক-শিল্পীর শিল্পকর্মের উদ্দেশ্য কি হবে সে ব্যাপারেও আপনার একধরণের জনবিমুখ দৃষ্টভঙ্গীর কথা ফুটে ওঠে। শিল্প-সাহিত্য-সঙ্গীত সমাজ মননকে নাড়া দেয়ার ক্ষমতা রাখে- যেটি কখনো কখনো জনগণের লড়াই-সংগ্রাম-আন্দোলনকে দারুন একটি মাত্রা দিতে পারে। এভাবে যুগে যুগে শিল্পী-সাহিত্যিকেরা সমাজ পরিবর্তনে বড় ভূমিকা রেখেছেন- জনগণের লড়াই সংগ্রামে মানুষকে দিশা দেখিয়েছেন। রাজনৈতিক দল- ও দলের নেতা-কর্মীরা মাঠে ময়দানে সরাসরি লড়াই সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়, নেতৃত্ব দেয়, জনগণকে সংগঠিত করে; আর শিল্পী-সাহিত্যিকেরা তার সৃষ্টির মাধ্যমে জনগণের সেই মানস তৈরী করতে সহায়তা করে। শিল্পী-সাহিত্যিকের এই ভূমিকাকে আপনি অস্বীকার করতে চান?
আপনার আলোচনায় আপনি বলেছেন, “যে-কোনো সাহিত্যকে প্রথমে তো অন্তত সাহিত্যের মাপকাঠিতে উত্তীর্ণ হতে হবে, তার পর তার তত্ত্ব বিচারের প্রশ্ন, নিতান্তই যদি করতে হয়”। শরৎ সাহিত্য প্রসঙ্গে একথা বললেও শরৎ প্রসঙ্গে পরে আসছি। যেহেতু শামসুর রাহমানের জামান কৃত মূল্যায়ন নিয়েই কথা হচ্ছে- সেহেতু আপনার এই বাক্যটি সেই মূল্যায়নের ক্ষেত্রে কি প্রযোজ্য হয়নি? খালেকুজ্জামানের 7/8 পৃষ্ঠার আপনার উল্লেখিত 2/3 টি প্যারা বাদে পুরো আলোচনায় কি করেছেন?? সেখানে সাহিত্যের মাপকাঠিতে মূল্যায়ন করা হয় নি?? আপনার মত তথাকথিত সাহিত্যবোদ্ধাদের কাছে সাহিত্যের মাপকাঠির তুলনায় তত্তবিচার যতই কম গুরুত্ব বহন করুক না কেন- অন্যদের বেলাতেও একই হবে- এমন আশা করেন কি করে??
আর, একজন সমাজতন্ত্রীর কাছে সবসময়ই অবশ্যই কনটেন্টের গুরুত্ব অধিক (তার মানে এই না যে- ফর্ম তার কাছে গুরুত্বহীন!!)।
ইনসিডেন্টাল ব্লগার - ১৯ জুলাই ২০০৮ (২:১৪ অপরাহ্ণ)
শান্ত#১৯:. . . “খালেকুজ্জামানের ৭ পৃষ্ঠার আর্টিকেল থেকে আপনি শেষের দিকের ৩ টি প্যারা তুলে দিয়ে খালেকুজ্জামান কৃত অবমূল্যায়ন দেখাতে চেয়েছেন!! আপনার দেয়া ৩ টি প্যারার মধ্যে ১ টি প্যারার আলোচনার জন্য আবার ধন্যবাদও জানিয়েছেন। সুতরাং, এই আলোচনায় আপনি মূলত তুলে ধরেছেন ২ টি প্যারা- যেদুটিতে আপনি আপত্তি খুজে পেয়েছেন।”
. . . “যেহেতু শামসুর রাহমানের জামান কৃত মূল্যায়ন নিয়েই কথা হচ্ছে- সেহেতু আপনার এই বাক্যটি সেই মূল্যায়নের ক্ষেত্রে কি প্রযোজ্য হয়নি? খালেকুজ্জামানের ৭ / ৮ পৃষ্ঠার আপনার উল্লেখিত ২ / ৩ টি প্যারা বাদে পুরো আলোচনায় কি করেছেন?? সেখানে সাহিত্যের মাপকাঠিতে মূল্যায়ন করা হয় নি?? আপনার মত তথাকথিত সাহিত্যবোদ্ধাদের কাছে সাহিত্যের মাপকাঠির তুলনায় তত্তবিচার যতই কম গুরুত্ব বহন করুক না কেন- অন্যদের বেলাতেও একই হবে- এমন আশা করেন কি করে??“
. . . “আর, একজন সমাজতন্ত্রীর কাছে সবসময়ই অবশ্যই কনটেন্টের গুরুত্ব অধিক (তার মানে এই না যে- ফর্ম তার কাছে গুরুত্বহীন!!)।”
—————
কত পৃষ্ঠা, কত শব্দ, কত প্যারা ? সে সব বিষয়ে যে অত্যন্ত বিশ্লষণধর্মী ফলপ্রসু আলোচনা হতে পারেনা, তা বলবো না। তবে আপনার আলোচনায় কেন যেন ব্যাপারটা তোলা নিক্তি পাই আনার হিসেব চাওয়ার মত শোনাচ্ছে আমার কানে। গবেষণার পরিভাষায় কোয়ান্টিটেটিভ (সংখ্যাগত বা পরিমাণগত) সমীক্ষার গুরুত্ব অস্বীকার করার স্পর্ধা বা যোগ্যতা নেই আমার, তার বিরুদ্ধে আপত্তি তো নেইই। তবে আলোচনাটির (কমরেড জামানের মূল্যায়ন এবং আমার পোস্ট দু’টোর ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য) কোয়ালিটেটিভ বা গুণগত দিকটাতে মননিবেশ করলে হয়তো আরেকটু ভাল হত এ ক্ষেত্রে। আপনি দ্বিমত করতেই পারেন। তবে মনে হচ্ছিল বিষয়টা যেহেতু সাহিত্য আলোচনার (এমনকি তার রাজনৈতিক বিশ্লেষণের অর্থেও) মত একটি জিনিস – যার অনেকটুকুই বিমূর্ত, ধারণাজাত, রুচিজনিত পছন্দ-অপছন্দজাত, এবং উচিত অনুচিতের প্রশ্নজাত – হয়তো, কোয়ালিটেটিভ আলোচনাই বেশী যথার্থ হতো এ ক্ষেত্রে। ভেবে দেখবেন একটু।
আর যদি মনে করেন আমার উপরের কথায় যুক্তি আছে, তাহলে মানবেন আশা করি – কয় ছত্রে কি বলেছেন কমরেড জামান এবং তার মধ্যে কয় ছত্র ব্লগ লেখকের বিশ্লেষণের আওতায়, তার চাইতেও বেশী জরুরী কোন্ ধরণের ছত্রে “ঠিক কি” বলছেন তিনি (জামান সাহেব) এবং “কি ভাষায়” বলছেন। সেক্ষেত্রে কি ধরনের শব্দ ব্যবহার করেছেন বক্তব্য উপস্থাপনে এবং তাদের অন্তর্নিহিত বক্তব্য কি সেটাতে মননিবেশ করলে আলোচনাটা হয়তো আমাদের দিক থেকে আরো সমৃদ্ধ এবং ফলদায়ক হবে। এবিষয়ে আমার একটা উপলদ্ধির কথা আপনার সাথে শেয়ার করি। আমার সবসময়ই মনে হয়েছে - ভাষা একটি শক্তিশালী জিনিস; এর যথার্থ প্রয়োগ ও ব্যবহার প্রায় নিখুঁত শিল্পের পর্যায়ে পড়ে। এবং স্বীকার করতে দ্বিধা নেই দক্ষতার দিক থেকে সে বিষয়ে আমার নিজের অন্তত অনেক অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে, কালে কালে যার কিছু হয়তো কাটিয়ে উঠতে পারবো অধ্যবসায় দিয়ে। নতুন লেখালিখি করছি তো, খুব একটা অভ্যাস নেই; তার ওপর বাংলার মত এমন একটি আবেগী কিন্ত বহুমূখী ভাষায়। তাই ভুল হয়ে যায় বেশীর ভাগ সময়; একটা বোঝাতে গিয়ে অন্যটা বুঝিয়ে বসি, মানুষকে রাগিয়ে বসি না চাইলেও। এভাবেই হয়তো পক্ষের মানুষদের কখনো কখনো ভুল করে বৈরিতার বার্তা (message) দিয়ে বসি আর বিপক্ষের মানুষদের পাঠিয়ে বসি ভাষার গোলাপ-রজনীগন্ধা। বোঝেন অবস্থা! মন্তব্যকারী ‘পথিক’ (মন্তব্য#১২) ক্ষমা চেয়েছেন ইংরেজীতে ভাবপ্রকাশের সীমাবদ্ধতার জন্য, দরকার ছিলনা কোনো। আমার তো বাংলাতেও সমস্যা বলে প্রায়ই ভাবি।
আপনার প্রশ্নে যুক্তি আছে। ৭-৮ পৃষ্টার একটি প্রবন্ধে মাত্র ৩টি অনুচ্ছেদ নিয়েই আমি আলোচনা করেছি ব্লগে। তাহলে পুরো প্রবন্ধের কি হল? বাকি সব পৃষ্ঠা কিংবা অনুচ্ছেদেরা কি দোষ করলো? আমার একটা ব্যাখ্যা দেয়ার চেষ্টা করি বরং। ধরুন আমার দিক থেকে ব্যপারটা যদি এভাবে দেখি যে – পুরো প্রবন্ধটাই (বাকি সব পৃষ্ঠা অনুচ্ছেদ) আসলে লেখা হয়েছে ঐ তিনটি অনুচ্ছেদের বক্তব্যের উপস্থাপনকে justify করার জন্যে? আমার কিন্তু তেমনই মনে হয়েছে পড়ে; (ভুলও বুঝে থাকতে পারি)। বলি কেন এমন মনে হয়েছে। পুরো প্রবন্ধে শুরু থেকে যত আলোচনা হয়েছে তাকে কি আপনি মার্কসীয় আলোচনা বলবেন? আমি কিন্তু বলবো না। কারণ তাতে কবি শামসুর রাহমান সম্বন্ধে কিছু সাধারণ বর্ণনামূলক (descriptive) তথ্য ও বিষয় উপস্থাপন করে কবির সাথে পাঠককে পরিচয় করিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছেন কমরেড জামান (কবে কিভাবে কবি লেখা শুরু করলেন, তার স্বীকৃতিসমূহ ইত্যাদি)। মূল ব্লগ পোস্টটিতে বলা হয়ে ওঠেনি কিছু তবে জামান সাহেবের এই অংশগুলো পড়ে সত্যিই আনন্দ পেয়েছি। তাঁর কল্যানে অনেক অজানা বিষয় জানার সুযোগ হয়েছে শামসুর রাহমানের ব্যাপারে; অথচ তার জন্য ধন্যবাদটুকু আর দেয়া হয়ে ওঠেনি, যা তার প্রাপ্য ছিল হয়তো। সেজন্য এ বিষয়ে ‘পথিক’ (মন্তব্য#১২ দেখুন) এর জামান সাহেবকে লেখা সংক্ষিপ্ত কৃতজ্ঞতাবার্তাটি পড়ে মনে মনে কিছুটা লজ্জিতও হয়েছি। কেন এমন হল? কারণ মার্কসবাদী আলোচনার/বিশ্লেষণের সেই তিনটি অনুচ্ছেদ জামান সাহেবের বাকী সব বক্তব্যকে ছাপিয়ে উঠেছিল আমার চোখে, আমার মনে। দেখেছেন সে বিশ্লেষণের এমনই ক্ষমতা যে তা মানুষের সুন্দর সুকুমার ভাবনাগুলোকেও কেমন ভোঁতা করে দেয়ার ক্ষমতা রাখে ? overcome করার ক্ষমতা রাখে? অন্তত আমার দিক থেকে তো রাখলোই, কিভাবে অস্বীকার করি সেই সত্য? আপনাদের কারো বেলায় এমনটি কোনদিন ঘটেনি তা কি সত্যিই জোর দিয়ে বলতে পারেন?
কিন্তু অন্যভাবে দেখতে গেলে এই তিনটি অনুচ্ছেদ ছাড়া প্রবন্ধের বাকি সব descriptive বক্তব্য উপস্থাপনের জন্য আমি মনে করি একজন মার্কসবাদী নেতার দরকার হয়না। যেভাবে প্রবন্ধের বাকিটুকু লেখা হয়েছে তার উপর ভিত্তি করে একথা আমার মনে হয়েছে। শামসুর রাহমানের বিষয়ে আগ্রহ আছে এমন যে কেউই (মার্কসীয়, অমার্কসীয় নির্বিশেষে) হয়তো সে কাজটি করতে পারতেন। তবে হ্যাঁ, একজন আলোকিত, অগ্রসর এবং মেধাবী মানুষ হিসেবে জামান সাহেব হয়তো সে কাজটি বাকী অন্য অনেকের থেকে তুলনামূলকভাবে বেশী গুছিয়ে করতে পারবেন; পেরেছেন। আবার তাঁর চেয়েও (অন্তত এবিষয়ে) মেধাবী কোন মানুষ হয়তো কাজটা আরো বেশী ভালোভাবে করতে পারতেন - যেমন ধরুন হুমায়ুন আজাদের মত কেউ। কি হতে পারতো সে আলোচনায় বরং আর না এগোই; কারণ, আমার মত কারো জন্য (যাকে নাঈম#২২ একজন “বকলম” মনে করেন) অবশ্য জামান সাহেবের আলোচনাটাই যথেষ্ট তৃপ্তিদায়ক ছিল। তবে এর সিংহভাগের সাথেই মার্কসবাদের কোন সম্পর্ক ছিলনা বলে আমার বিশ্বাস – যা হয়তো একজন অমার্কসবাদী বিশ্লেষকও কমবেশী একইভাবে উপস্থাপন করতেন বলে আমার ধারণা। প্রবন্ধটিতে জামান সাহেবের বেশীর ভাগ আলোচনাই আমার মনে হয়েছে মার্কসবাদী আলোচনা নয়, বরং যেন মার্কসবাদী আলোচনা উপস্থাপনের পুরো প্রবন্ধবিস্তৃত এক দীর্ঘ ভূমিকা মাত্র। এ আমার সাধারণ জ্ঞান থেকে বললাম; কোনটা মার্কসবাদী আলোচনা আর কোনটা নয়, সে নিশ্চয়ই আপনি আমার থেকে অনেক বেশী ভালো বুঝবেন। অনুরোধ করি – আমার ভুল থাকলে ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দেবেন যাতে আমরা সবাই জানতে পারি সে বিষয়ে।
সুতরাং এখন আমি যদি জামান সাহেবের আমার মতে সবচেয়ে crucial তিনটি অনুচ্ছেদকে বেছে নিই পুরো প্রবন্ধের মধ্য থেকে তাতে কি আমার দোষ হয়? তাকে কি সত্যিই যাকে বলে out of context তা বলা যায়? কি জানি, আমার কিন্তু মনে হয় যায়না। ধরুন, আজ যদি এই প্রবন্ধটি কঠোর সম্পাদনা নীতির কোন একাডেমিক জার্ণালে পাঠাতে হোতো, তাহলে ঐ দুই-তিন অনুচ্ছেদের মূল বক্তব্যই কি জামান সাহেবকে জার্ণাল আর্টিকল এর Abstract হিসেবে সম্পাদকমন্ডলীর কাছে পাঠাতে হোতো না বিবেচনার জন্য? আমার কিন্তু মনে হয় প্রবন্ধের বাকী বিষয়গুলো সংক্ষেপে abstract হিসেবে লিখে পাঠালে কোন উন্নত জার্ণালে তা ছাপানো হয়তো একটু কঠিনই হোতো। কারণ খুবই সহজ। পুরো লেখাটির বেশির ভাগই বিবরণমূলক এবং এর বেশীর ভাগই বিভিন্ন ফর্মে (খবরের কাগজ, সাহিত্যের মুখবন্ধ) বিরাজ করছে বিভিন্ন স্থানে। সে সব তথ্য এক জায়গায় জড় করা নিঃসন্দেহে প্রশংসার কাজ, তবে সত্যিকারের সিরিয়াস কোন জার্ণালের বাছাই criteria হিসেবে বেশী আগ্রহী হওয়ার কথা লেখাটির বিশ্লেষনী প্রচেষ্টা (analytical rigour) তাত্ত্বিক নির্যাস (theoretical conclusion) এবং কিভাবে তাতে কোন থিওরী বা বিতর্ককে (argument) উপস্থাপন করা হয়েছে তার অরিজিনালিটির বা মৌলিকত্বের বিষয়টির উপর। এটাই আমি বুঝি সাধারণভাবে, বিনীতভাবে বলার চেষ্টা করলাম।
উপরোক্ত আলোচনার ভিত্তিতে এখন যদি বলি জামান সাহেবের পুরো লেখাটির সিংহভাগই ছিল আপনার ভাষায় ফর্মের প্রয়োজনে? যদি বলি ঐ ২-৩ টি crucial অনুচ্ছেদই জামান সাহেবের লেখার (তথা তাঁর মার্কসবাদী আলোচনার) সারবস্তু, substance বা content? তাহলে ব্লগপোস্টের কোথায় ভুল করেছি বলতে পারেন?
ভুল করে থাকলে একটা হয়তো করেছি আমার মতে। আর তা হল – ঐ দু’তিনটি অনুচ্ছেদকে এবং তাদের ভেতরের প্রতিটি লাইন আর শব্দকে হয়তো আরো বেশী বিস্তারিতভাবে ব্যবচ্ছেদ বা বিশ্লেষণ করা যেত। এবং সে বিশ্লেষণও হয়তো একশো ভিন্ন ভিন্ন উপায়ে/ফর্মে করা যেতে পারতো। করতে পারিনি, সে আমার সীমাবদ্ধতা। আর হয়তো তা ব্লগ মাধ্যমটিরই অন্তর্নিহিত সীমাবদ্ধতা। তবে এই যে এখন এত সব আলোচনা চলছে, এই যে এখন বিভিন্ন ধরণের বিশ্লেষণের সুযোগ তৈরী হয়েছে, তা তো বিষয়গুলো আমার ব্লগে সংক্ষিপ্তভাবে উত্থাপনের কারণেই (যত ভুলভাবেই তা করে থাকি না কেন)। সে কথা নিশ্চয়ই স্বীকার করবেন? আজ যদি লেখাটি কোন পত্রিকায় ছাপা হোতো, তাহলে কি পারতেন এভাবে প্রতিটি বিষয়ে আলোচনায় ডেকে আনতে সবাইকে? এ-ও নিশ্চয়ই স্বীকার করবেন যে ব্লগ নামের মাধ্যমটি এভাবেই কাজ করে; এটাই তার লক্ষ্য, তাইনা? আর তা নাহলে প্রবন্ধ বা গবেষণা প্রকাশনার (journal) সাথে এর কোন পার্থক্য থাকে কি?
আর যেভাবে আপনি ব্লগপোস্টটিতে কি লিখা হয়নি, কিভাবে লিখা হয়নি এসব টেকনিক্যাল এবং ফর্মাল বিষয়গুলো উত্থাপন করে সমালোচনা করছেন (যা অবশ্যই আপনার করার অধিকার রয়েছে) তাতে কিছুটা বিব্রতই হতে হচ্ছে আমার। কারণ ব্লগ নামের এই আপাত নতুন মাধ্যমটিতে বিশ্বময় এখনো চলছে এর shape, size, form, content, style, methodology, বিষয়বস্তু ইত্যাদি নিয়ে নানা এক্সপেরিমেন্ট আর টানাপোড়েন। এসব তো আপনারও অজানা নয়। আর সে হিসেবে বাংলা ব্লগ তো মাত্র তার আঁতুড়ঘর থেকে শৈশবে পদার্পন করেছে। বিশ্বাস না হলে এই ব্লগসাইটটিরই অন্যান্য ব্লগপোস্টগুলো একে একে খুলে দেখুন প্লীজ, আপনিও একমত হবেন বলে আমার ধারণা। বাংলা ব্লগের ক্রিস্টালাইজড একটা নিরেট আকার পেতে আরো কিছুটা সময় লাগতে পারে বলে সবাই মনে করছে। মানা না মানা অবশ্যই আপনার ব্যাপার।
আহমেদ মুনির - ১৭ জুলাই ২০০৮ (১২:৩৬ অপরাহ্ণ)
লেখাটা পড়লাম । জানিনা কে এই লেখক । তবে মনেহয় বাসদকে তার ভালই জানা । মুখোশ খুলে গেছে বাসদের।
শান্ত - ১৭ জুলাই ২০০৮ (৭:৩৭ অপরাহ্ণ)
আহমেদ মুনির,
আমিও জানিনা কে এই লেখক, জানিনা কে আপনি, কারা আপনারা, কাদের এই ব্লগ??
শুধু এটুকু বুঝলাম- আপনাদের কেউ কেউ বাসদের পেছনে উঠে পড়ে লেগেছেন, আর কেউ কেউ সমানে বাহবা দিচ্ছেন ! যেমন বাসদের কল্পিত মুখোশ খুলতে পেরে আপনার কত উল্লাস!!!
এটা আমিও মনে করি না যে, বাসদকে নিয়ে কোন সমালোচনা করা যাবে না। যেকোন দলকে নিয়ে, যে কাউকে নিয়েই সমালোচনা হতে পারে। কিন্তু সমালোচনা এক জিনিস আর কুৎসা রটানো আরেক!!
আর এটা নিশ্চয়ই জানা আছে যে, যেকোন অভাব অভিযোগ হাজির করার সময় যথেস্ট তথ্য-প্রমাণ সহকারেই করতে হয়- তা না হলে সেটা হয়ে ফাপা বুলির মত- অনেক সময় একসাথে অনেক শেয়ালের রো একত্রে ধ্বনিত হলে হুক্কা-হুয়াই শুধু শোনা যায় ঠিকই- তারপরেও সেটা হুক্কা হুয়াই!!!
আশা করি আপনারা, আপনাদের গ্রুপটি হুক্কা-হুয়া করা বাদ দিয়ে যৌক্তিক ও গঠনমূলক কিছু করবেন।
ধন্যবাদ।
এহসানুল হক - ৬ আগস্ট ২০০৮ (১০:০৭ পূর্বাহ্ণ)
শুধু এটুকু বুঝলাম- আপনাদের কেউ কেউ বাসদের পেছনে উঠে পড়ে লেগেছেন [শান্ত ২০]
স্বভাবতই বুঝতে কঠিন হয় না, এখানে এরা কারা, এই সংঘবদ্ধ গ্রুপটির উদ্দেশ্য কি? [শান্ত ৩৪]
এখানকার সবার কাছেই খুব পরিস্কার কারা কাদের বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লেগেছে । যেভাবে একজন ব্লগ লেখকের একটি মাত্র পোস্টকে কেন্দ্র করে আপনারা বাসদের লোকজন সদলবলে তার বিরুদধে কুতসা রটনা করতে লেগে গেছেন, তাতে আসলে এখানে কি ঘটছে বুঝতে আর কারো বাকী নাই । এই ব্লগারকে আমিও চিনিনা তবে তার অন্য কিছু ব্লগ এবং আলোচনা আমি পড়েছি অন্য সাইট গুলোতে । সে সব মাথায় রেখে আপনাদেরকেই কুতসা রটনাকারী মনে হচ্ছে । আপনাদের একজনও ইনসিডেনটলের অন্য পোস্ট গুলার আলোচনার রেফারেন্স আনলেন না কোথাও । সে সব পড়লে হয়তো Postwriter’s position বুঝে তার সাথে আরো গঠনমূলক বিতর্কে অবতিরন হতে পারতেন । তা না করে আপনারা এই পোস্টের পাঠকদেরও বঞ্চিত করেছেন । একজন ব্লগ লিখেছে তার অবস্থান থেকে । আপনারা যেভাবে সে বিষয়ে বিতর্ক করছেন তা মুক্তমনের পরিচয় দেয়না আপনার ও বাসদের লোকজনের পকKH থেকে । উলটো মনে হয়েছে আপনারা একজন ব্লগারের কন্ঠরোধ করে ধরার চেষ্টা করছেন । পাঠকরা কিন্তু ততটা বোকা না যতটা আপনি মনে করছেন।
অলকেশ - ১৭ জুলাই ২০০৮ (৭:১৭ অপরাহ্ণ)
@ আহমেদ মূনিরঃ
আমার কাছে মনে হয়েছে বাসদ আমাদের দেশের প্রগতিশীল ও গণতান্ত্রিক শক্তির সামনের সারির একটি নিবেদিত দল । স্বৈর-শাসন বিরোধী আন্দোলনে এর অসাধারন প্রকাশ ঘটেছিল । মৌলবাদ বিরোধীতা এবং অসাম্প্রদায়িক সমাজ গঠনে এই দলের আন্দোলন এবং কর্মসূচী অনেক বেশি এবং অনেকের চেয়ে বেশী স্পষ্ট ও সুনির্দ্দিষ্ট বলে মনে হয়েছে ।
আমার বিশ্বাস বলছে আপনি এই প্রগতির শক্তিকেই হয়তো অন্য কোন প্লাটফর্ম থেকে এগিয়ে নিতে চান ।
ইনসিডেণ্টাল ব্লগার ও নিশ্চয় এই ধারার একজন শক্তিশালী প্রতিনিধি । তিনি সাহিত্য সমালোচনায় সমাজতান্ত্রিক দৃষ্টিভংগীর সমালোচনা করতে চেয়েছেন কঠোর ভাবে । এই অধিকার তার রয়েছে বটে । মনে হয়েছে, প্রাসংগিক ভাবেই রাজনীতি এসেছে । কিছু অভিযোগ আবেগতাড়িত মনে হয়েছে যদিও, কিন্ত অনেক গুরুত্বপূর্ন প্রসংগ এসেছে। এগুলো অর্থহীন নয় । যে যাই বলুক । একটা গঠন মূলক আলোচণা করবেন কি ? সাহিত্য বা রাজনীতি বিষয়ে ? আমাদের সামনে শত্রু পথ আগলে দাঁড়িয়ে । আমরা গৃহ বিবাদ কি থামাতে পারি ? সবচেয়ে খুশী হব যদি আগে প্রগতির শত্রুদের মুখোশ খূলে দিতে পারি ।
নাঈম - ১৮ জুলাই ২০০৮ (৫:৪৬ পূর্বাহ্ণ)
আমরা এমন একজন সমালোচকের লেখা ধরে তর্ক-বিতর্ক করছি, যিনি (১) সাহিত্য, কবিতা, ছন্দ ইত্যাদি সম্পর্কে বকলম। যিনি নির্দ্বিধায় বলতে পারেন _ আধুনিক কবি হিসেবে শামসুর রাহমানের কবিতা যে ছন্দ নির্ভর নয়, …. …. আর আধুনিক কবিতা পাঠকের কাছে কবিতার আবেদনের পেছনে যে ছন্দই প্রধান নয় … … ইত্যাদি ইত্যাদি_ আর যাই হোক তিনি কবিতা বা ছন্দের যে কিছুই বোঝেন না আমি সে বিষয়ে পুরোপুরি নিশ্চত।
শামসুর রাহমান বেঁচে থাকলে বলতেন, ‘থ্যাংক গড, আমি আধুনিক কবিতা লিখি না।’
আর আমরাও বেঁচে গেছি, আমাদের আধুনিক কবিতা পড়তে হয় না।
অন্যের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলবার আগে নিজের যোগ্যতাটা একটু মাথায় রাখা দরকার।
ইনি আবার শিষ্টচার ধৃষ্টতা ইত্যাদি নানা শব্দ-ও বেশ ব্যবহার করেছেন।
শরৎ সাহিত্য সম্পর্কে ওর যে মন্তব্য _ কোনো সাহিত্য-বিশারদও এভাবে বলবেন কিনা সন্দেহ। তবে কথায় বলে, ‘অল্প বিদ্যা ভয়ঙ্করী, জুতারে কয় আলমারি’। এনার দশা অনেকটা সেরকম।
রাজনীতির প্রসঙ্গে আপাতত ঢুকলাম না। কারণ, গালিগালাজ নিয়ে লেখার কিছু নাই। তারপর-ও ওনার মিথ্যাচারের প্রতিটি পয়েন্ট ধরে ধরে আলোচনা করতে অনেকটা সময় লাগবে।
শুধু এটুকু বলি, বাইবেলের যে বহুল ব্যবহৃত আপ্তবাক্যটি উনি ব্যবহার করেছেন, সেটা কি অন্যের জন্য? না কি উনি নিজে তা বিশ্বাস করেন? আমার জানতে ইচ্ছে হচ্ছে, গত দেড় বছরে, বা উনার বয়স-কালে (বয়স জানার উপায় নেই) জনগণের কোন কোন আন্দোলন-সংগ্রামে উনি শামিল হয়েছেন?
মিখাইল শলোখভ নোবেল পেলেন ১৯৬৫। স্তালিন মারা গেলেন ১৯৫৩ সালে। স্তালিন কি মারা যাবার আগে শলোখভের প্রাণ রক্ষা করেছিলেন? তথ্য ভালভাবে জেনে তারপর লিখুন।
তারপর-ও আপনার শুভ কামনা করি।
ভবিষ্যতে লিখবার আশায় শেষ করছি।
ইনসিডেন্টাল ব্লগার - ২২ জুলাই ২০০৮ (১২:০৮ পূর্বাহ্ণ)
@নাঈম#২২ এবং ২৫ এর উত্তরে
এই যুগে এমন মানুষ সত্যিই বিরল যারা এত আত্মবিশ্বাসের সাথে অন্যকে বকলম মূর্খ বলতে পারেন [মন্তব্য: “আমরা এমন একজন সমালোচকের লেখা ধরে তর্ক-বিতর্ক করছি, যিনি . . . বকলম”]। সেই হিসেবে আমরা ভাগ্যবান যে আমাদের মাঝে নাঈম নামের তেমনই একজন মন্তব্যকারী যোগ দিয়েছেন তাঁর মূল্যবান মতামত দেয়ার জন্য। বকলম হিসেবে নিজেকে মেনে নিতে আমার কোন আপত্তি নেই, তিনি যখন এভাবেই বলছেন, হয়তো ঠিকই বলছেন। যিনি এ ধরণের কথা বলার ক্ষমতা রাখেন, তার উপর সবার আশাবাদও স্বাভাবিকভাবেই বেশী হয়ে যায়। এখন আমরা মনে হয় আশা করতে পারি যে উনি বিষয়গুলোর উপর সত্যিকার বস্তুনিষ্ঠ আলোচনা করে সবাইকে যারপরনাই তাক লাগিয়ে দিয়ে অশেষ ‘কৃতজ্ঞতাপাশে’ আবদ্ধ করবেন। নাঈম সাহেবের উপর তার দলের অপর মন্তব্যকারীদেরও খুব আস্থা দেখে [সুব্রত যেভাবে বললেন (মন্তব্য#২৪) “নাঈম ভাই ভালো বলতে পারবেন”] কিছুটা আশার সঞ্চার হয়েছিল মনে। তখন থেকে আশায় ছিলাম যে এবার হয়তো কিছু শিখতে পারবো। ভেবেছিলাম হয়তো তিনি তার দলের বাকী সহযোগীদের (শান্ত, ওয়াচার, পথিক, মোশাররফ) মত করে আলোচনায় অংশগ্রহণের নামে পোস্টলেখককে গালিগালাজ, পোস্টটিকে “প্রলাপ”, “বাসদ বিরোধী উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রচারণা বলে” চালানোর চেষ্টা করে আলোচনাকে পাশ কাটাবার চেষ্টা না করে সৎসাহস ও সততার দৃষ্টান্ত স্থাপন করবেন তার বাকী সহযোগীদের সামনে – সত্যিকার যুক্তি উপস্থাপনের মাধ্যমে। আশা করেছিলাম এত আস্থা যার ওপর তার দলের লোকের তিনি নিশ্চয়ই এ ব্লগের পাঠকদের হতাশ করবেন না। এটা খুবই পরিস্কার যে তিনি এবং তার সহযোগীরা সবাই (‘শান্ত’, ‘পথিক’, ‘সুব্রত’, ‘ওয়াচার’, ‘মোশাররফ’) এ দলের ভক্ত। সুতরাং নাঈম সাহেবের মত একজন বোদ্ধা ও জ্ঞানী ব্যক্তি হয়তো আমাদের এই নগন্য আলোচনার ক্ষেত্রটিতে কিছু ‘মৌলিক’ অবদান রাখতে পারবেন।
‘গালিগালাজ’ (তাঁর মতে পোস্ট লেখকের লেখাটি গালিগালাজসর্বস্ব) সম্পর্কে তিনি মন্তব্য করতে চাননা, আবার দেখা যাচ্ছে নিজে তিনি গালিগালাজ খুব একটা অপছন্দও করেননা, অন্তত নিজে যখন দিয়ে থাকেন অন্যদের। মন্তব্য না করতে চাইলে ইনসিডেন্টালের বিরাট ক্ষতি তো বটেই, ক্ষতি জ্ঞান জগতেরও। কেউ কিন্তু তাঁকে বাধ্য করছে না এই পোস্টে মন্তব্য করতে তবু যে তিনি মন্তব্য করছেন (এখানে এবং ইনসিডেন্টালের আরেকটি ব্লগে) তাতে আমরা সবাই আহ্লাদিত। একটু হতাশ হয়েছি তাঁর শিষ্টাচারের মান দেখে (কারণ মন্তব্য পড়ে তাকে এ বিষয়ে একজন মান নির্ধারণকারী বিশেষজ্ঞ মনে হয়েছিল প্রথমটায়)। পরক্ষনেই ভেবেছি জ্ঞানী ব্যক্তিদের তো কত রকমই খেয়াল খুশী থাকে। ইনসিডেন্টাল কৃতজ্ঞ নাঈম সাহেব তার জ্ঞানের ডালি খুলেছেন শেষ পর্যন্ত।
এখানে যে জিনিসটি বোঝার আছে তা হল, যে আচরণ ইনসিডেন্টাল ব্লগার করলে তাকে দেখতে হবে superiority complex এর রোগী হিসেবে, নাঈম কিংবা সুব্রত (সুব্রত#২৪, অলকেশের জবাবে) করলে তা কিন্তু হবে moral high ground এ বিচরণকারী কিছু আদর্শবাদী জ্ঞানী মানুষের আচরণ ! কারণ এ ধরণের জাজমেন্ট দেয়ার অধিকার শুধুমাত্র তাদেরই কারণ “সভ্যতা” জিনিসটা শুধু তাঁদেরই হাতে ধরে শেখানো হয়েছে (সুব্রত#২৪, অলকেশের জবাবে); বাকী দুনিয়ার তাবৎ মানুষ (যাদের একজন ইনসিডেন্টাল) যাদের সেই সৌভাগ্য হয়না, তাদের তো নিতান্তই ‘অসংস্কৃত, অভব্য ও কুরুচিপূর্ন’ থেকে যাওয়াই স্বাভাবিক। জ্ঞান, আদর্শ, নৈতিকতা এবং প্রগতির সোল এজেন্সী বলেও তো একটা কথা আছে সে কথা ভুলে গেলে চলবে কি করে! আর কোন অবস্থাতেই কিন্তু একে “সমষ্টিগত পিঠচাপড়াচাপড়িজনিত নেতাকর্মীনির্বিশেষ মেগালোম্যানিয়া” হিসেবে চিহ্নিত করাটা ঠিক হবেনা; সেটি হবে অত্যন্ত গর্হিত অপরাধ। কেউ যদি ঘুণাক্ষরেও সে চেষ্টা করেন এমনকি ‘পার্টি সাহিত্য’ আলোচনার ছলেও, তাহলে তেমন পরিস্থিতিতে অন্যায়কারীকে একাধিক বিশেষ্য ও বিশেষণে আখ্যায়িত করাটাই হবে শ্রেয় এবং যুক্তিযুক্ত। Moral High Ground পাড়ায় জেঁকে বসা বাসিন্দা হিসেবে সেটা করার অধিকার কিন্তু তাদের রয়েছে। আর শুধু কি অধিকার? মহান সেই দায়িত্ব পালন করার আর তো কেউ নেই এই দেশে! আর কি নিষ্ঠার সাথেই না সেই দায়িত্ব তারা পালন করে চলেন, গভীর সমবেদনা এবং সমষ্টির মঙ্গলের স্বপ্ন বুকে নিয়ে, তা আর বলার না!
জ্ঞানী নাঈম সাহেবের কথায় ফিরে আসি। যখন তিনি অন্য কিছু করেন না, তখন নাঈম সাহেব “অবিদ্যার ভয়াবহতা এবং পাদুকার আত্মপরিচয় সংকট” [তাঁর উদ্ধৃতিতে ‘অল্প বিদ্যা ভয়ঙ্করী, জুতারে কয় আলমারি’] বিষয়ে একমাত্র জীবিত বিশেষজ্ঞ হিসেবে একটি one man গণশিক্ষা কর্মসূচী পরিচালনা করে থাকেন ইন্টারনেটে। সেটি করে কত মানুষকে (ইনসিডেন্টাল যাদের একজন) যে তিনি চিরঋনে আবদ্ধ করেছেন, তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। কোন স্বীকৃতি ও পুরস্কারের অপেক্ষা না করেই তা তিনি করে যান নিষ্ঠার সাথে, সংকল্পবদ্ধ একাকী সৈনিকের মতো। এই তথ্যটিতে কিঞ্চিত ভুলও থাকতে পারে কারণ একই ধরণের ‘দায়িত্ববোধ’ ধারণকারী তার সহযোগীদের হয়তো আমরা ভুলে যাচ্ছি!
অনাহুত হয়েও নিজ গুণে তিনি ইনসিডেন্টালের ব্লগসাইটে পদধূলি দিয়ে এই পোস্টের শেষ লাইনে ব্যবহারকৃত মার্কসের উক্তিটির (যা নাঈমের মতে আসলে এঙ্গেলসের উক্তি) ব্যপারে ভুল ধরিয়ে দিয়েছেন। এ নিয়ে মন্তব্য#২৫ এ এখানে আরো লিখেছেন তিনি, কিছুতেই পিছপা হবেন না এমনই এক সংকল্প নিয়ে। ইনসিডেনটালের ব্লগে গিয়ে তিনি কিছুটা শাসিয়েই এসেছেন এধরণের ভুল ভবিষ্যতে না করবার জন্য। এখন হয়েছে কি, পোস্ট লেখক ইনসিডেন্টাল যেহেতু ‘বকলম’, সেহেতু নিজের জ্ঞানের ওপর নির্ভর না করে নগন্য ইন্টারনেটের এক নগন্যতর লিন্ক শুরু থেকেই উক্তিটির সাথে লাগিয়ে রেখেছিল, পাছে নীতিবাগীশ মাস্টাররা ভুল ধরে শাসিয়ে যান! তারপরও শেষ রক্ষা বুঝি হলনা। নাঈম সাহেব ভুল ধরিয়ে দিলেন। ইনসিডেন্টালের কাছে (এবং বাকী দুনিয়ার কাছে) সাধারণ ইংরেজীতে লেখা ওয়েবসাইটটিতে এঙ্গেলসের চিঠির জবানীতে উক্তিটি দৃশ্যত মার্কসের বলেই মনে হয়েছে। [চিঠিটি C. Schmidt এর কাছে লেখা ফ্রিডরিখ এঙ্গেলসের ৫ আগস্ট ১৮৯০ এ লেখা। এঙ্গেলস এতে মার্কসের উক্তিটি এবং এর পটভূমিই ব্যাখ্যা করেছেন!]। নাঈম সাহেবের ভাষায় তা “ভুল, ভুল, ভুল,” কারণ তার পেছনে কি এক খটমট তাত্ত্বিক ব্যপার নাকি আছে (‘মার্কসবাদ’ শব্দটি এঙ্গেলসের ইত্যাদি)! কি কেলেন্কারী বলুন তো! ইনসিডেন্টাল এখন ভাবছেন এত সাধারণ একটা তথ্য পড়তেও এমন একটি ভুল কিভাবে কেউ করতে পারে? এ বিষয়ে মার্কস-এঙ্গেলস আর্কাইভের এই নগন্য লিন্কটিও পড়ে দেখুন যেখানে বিখ্যাত এই চিঠিটির একটি সংক্ষিপ্ত অনুবাদ দেয়া আছে (প্রথম অনুচ্ছেদের শেষে দেখুন)। সেখানে এঙ্গেলস ফরাসী কমিউনিস্ট নেতাদের নিয়ে মার্কসের এ বিখ্যাত উক্তিটি উদ্ধৃত করেছেন: “All I know is that I am not a Marxist.” মনে হচ্ছে উক্তিটি মার্কসেরই, নাঈম সাহেব, এঙ্গেলসের উদ্ধৃতিতে, আপনি যাই পড়ে থাকুন না কেন! হতে পারে তিনি sarcasm করেছেন কিন্তু উক্তিটি এভাবেই মার্কসের উক্তি হিসেবে এঙ্গেলস উপস্থাপন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁর চিঠিতে। ভুল করেছিলেন হয়তো, তার উচিত ছিল আপনার সাথে একটু আলাপ করে নেয়া এমন একটি কাজ করার আগে। একে বলে QUOTATION, নাঈম সাহেব। একটু পড়তে শিখুন, প্লীজ (এখন যা করছি তাকে বলে spelling out, আপনার সুবিধার্থে করলাম)। এতদিন গুরুজনরা বলতেন সস্তা নোট কিংবা চটি বই পড়া নাকি বদভ্যাস। এখন বুঝতে পারছি কেন তারা একথা বলতেন। তাই আপনাকেও উপদেশ দেব (এখন যা করছি, তাকে বলে “ধৃষ্টতা”!) অন্তত “সমাজতন্ত্রের অআকখ” সিরিজের বাইরেও কিছু পড়ুন। আর ইন্টারনেট তো রয়েছেই। চেষ্টা করলে একদিন আপনারও হবে!
আপনি যে আপনার #২৫ এর আওতায় নতুন মন্তব্যটিতে লিখলেন: “মার্কস নিজের সম্পর্কে কোনোদিন ‘মার্কসবাদী’ শব্দটি ব্যবহার করেননি” – ঠিক কি বোঝাতে চেয়েছেন সেখানে আপনি? তার চেয়েও জরুরী নিজে কি বুঝেছেন? কোথাও কি আমি বলেছি যে মার্কস নিজেকে মার্কসবাদী বলেছেন? এমনকি উক্তিটির আক্ষরিক অনুবাদও (অন্তর্নিহিত বক্তব্যের কথা যদি বাদও দিই, যা বুঝবেন না বলে পণ করেছেন বলে মনে হচ্ছে আপনারা সবাই) তো এর উল্টোটাই ইঙ্গিত দেয়! যে দু’টো লিন্ক এখন দিলাম দু’টোই একটু ভালোভাবে পড়ে দেখবেন। সত্যি বলতে কি, প্রথমেই যদি মূল পোস্টে আমার দেয়া লিন্কটি একটু কষ্ট করে পড়ে নিতেন তাহলে হয়তো এই blunder টা করতেন না। আমার পোস্টের অন্তর্নিহিত বক্তব্যে কোন সত্যের সুর আছে কিনা সেটি বোঝার চেষ্টা না করে শুরু থেকেই যে একটা prejudiced অবস্থান নিয়ে রেখেছেন, তাই এমনটি হয়েছে। ভয় হয় – আপনার মত মার্কসবাদ আর সাহিত্য বিশারদরা বাকী আর সব কিছুও এভাবেই পড়েন এবং বোঝেন কিনা! বেশ বুঝতে পারছি, আপনার সহযোগীদের কাছ থেকে আশ্বাস পেয়ে বই হাতে সুসজ্জিত হয়ে আর্কিমিডিসের মত আপনার একটি ‘ইউরেকা মুহুর্ত’ এসেছিল; সেটি পন্ড করতে আমি চাইনি। সেজন্য দুঃখিত। আর জানার কি কোন শেষ আছে? এই যে কত কিছু শিখছি আমরা সবাই আপনার কাছ থেকে!
নাঈম সাহেব স্তালিনের মৃত্যুর সন (১৯৫৩) এবং শলোখভের নোবেল প্রাপ্তির বছর (১৯৬৫) নিয়ে কি যেন বোঝাতে চেয়েছেন তা ঠিক ধরতে পারিনি। অথচ তিনি আমাকে বিষয়টি নিয়ে ধমকে উপদেশ দিলেন: “তথ্য ভালভাবে জেনে তারপর লিখুন”। কি ভালভাবে না জেনে লিখেছি তা ব্যাখ্যা করলেন না। বড়ই হেঁয়ালি। প্রিয় পাঠক, আপনারাও পারলে আমাকে একটু সাহায্য করুন এই অসম্ভব জ্ঞানী মানুষটির প্রশ্নটি বুঝতে। এমন কি হতে পারে যে তিনি বোঝাতে চেয়েছেন যে স্তালিন যদি ১৯৫৩ তে মারা গিয়ে থাকেন তাহলে শলোখভকে ১৯৬৫ তে নোবেল দিল কে? খুবই জটিল জিজ্ঞাসা। সুতরাং, তিনি তা বোঝাতেই পারেন না। যতদূর জানি, নোবেল পুরস্কার স্তালিনের হাতে ছিলনা তখন এবং কখনই। নাকি তিনি বোঝাতে চেয়েছেন ‘৫৩ তে মরে গিয়ে থাকলে মৌলবাদী কুপমন্ডুক সমাজতন্ত্রী সাহিত্য বিশারদদের হাত থেকে শলোখভকে তাহলে কে বাঁচালো? এ যে দেখি আরো জটিলতর জিজ্ঞাসা! নাকি নাঈম সাহেব বোঝাতে চাইলেন – মহামতি স্তালিন আসলে সময়মত ভূত হয়ে এসে সোভিয়েত দেশে শলোখভকে বাঁচিয়ে গিয়েছেন? জানিনা, হলেও হতে পারে তা। কারণ ভূত হয়ে স্তালিন যে পৃথিবীর দেশে দেশে অনেক সমাজতন্ত্রী নেতার ঘাড়ে চড়ে বসতেই পারেন সে সম্ভাবনাটাও একদম উড়িয়ে দিতে পারছিনা স্তালিনোত্তর বিশ্বে কবি সাহিত্যিকদের উপর মার্কসবাদী বিশ্লেষণের আপদ/উতপাত দেখে।
যাই হোক, নাঈম সাহেবের সাথে কিছু তথ্য বরং শেয়ারই করি, তাতে যদি তিনি তার প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পান এবং আমাকে রেহাই দেন! যতদূর জানি, শলোখভ নোবেল পেয়ে বিখ্যাত হননি, বরং খ্যাতির শীর্ষে থাকা অবস্থায় নোবেল পেয়েছেন। সুতরাং স্তালিনের মৃত্যুর সনটা এখানে অবান্তর ও অপ্রাসঙ্গিক (আমি অন্তত তাই মনে করি; যদিও নাঈম সাহেবের ধারণা ভিন্ন!)। কারণ ৩০ দশকের শেষের (১৯৩৯ সালে) দিকেই শলোখভের ‘প্রশান্ত দন’ বইটির সব খন্ডের প্রকাশ সম্পন্ন হয়ে যায়। ততদিনে বেশ কয়েকটি ভাষাতেও তা অনুবাদ হয়ে গিয়েছে, যার মধ্যে ইংরেজী ছিল একটি। শলোখভের খ্যাতি তখন বিশ্বজোড়া। ১৯৩৪ সালের ১৫ জুলাই The New York Times এ ‘প্রশান্ত দন’ এর ইংরেজী অনুবাদ সংস্করণ Quiet Flows the Don নিয়ে একটি Book Review পর্যন্ত ছাপানো হয়েছে। বিশ্বাস না হলে সেটা দেখে নিতে পারেন। এ বিষয়ে আরো জানতে হলে ২০০৫ সালে পশ্চিম বঙ্গের বাংলা আকাদেমী থেকে প্রকাশিত অরুণ সোম-এর “রুশ সাহিত্যের ইতিহাস” বইটিও পড়ে দেখবেন। উপকৃত হতে পারেন।
আমার সম্ভাব্য বয়স এবং গণ আন্দোলনের অভিজ্ঞতা নিয়েও কি যেন একটা বোঝাতে চাইলেন নাঈম সাহেব, ঠিক বুঝলাম না। এই হল সমস্যা এঁদের কারো কারোকে নিয়ে। সবসময় সবকিছু কেমন হেঁয়ালি করে বলেন এবং হালকাভাবে নেন।
নাঈম সাহেব, আপনি তো দেখছি খুবই entertaining ! এমনটিই থাকবেন যেন চিরকাল।
[বি: দ্র: এই মন্তব্যটি বক্রভাবে লেখা হয়েছে; একে বলে sarcasm; cutting jest ও বলতে পারেন। আর কোন কিছু পড়তে বা বুঝতে সমস্যা হলে জানাতে দ্বিধা করবেন না যেন। কি পড়তে কি পড়ে আর কি বুঝে “ইউরেকা” বলে লাফিয়ে ওঠেন আবার, সেই ভয়ে আমি অস্থির!]
[বি:বি:দ্র: আমার আবার কলম দিয়ে খুব একটা লেখা হয়না আজকাল, বাজারের ফর্দে নাম সই করা ছাড়া। বেশীর ভাগ সময়ই কম্পিউটারের কীবোর্ড ব্যবহার করি কিনা! তাই জানতে চাচ্ছিলাম ‘বকলম’ বলতে আপনি আবার অন্য কিছু বুঝিয়েছেন কিনা? প্লীজ, “হ্যাঁ” বলুন। আপনার প্রথম মন্তব্যটি পড়ার পর থেকেই খুব মনকষ্টে আছি।]
মাসুদ করিম - ১৮ জুলাই ২০০৮ (৫:৪৬ পূর্বাহ্ণ)
খুব সম্ভবত ‘পথিকৃৎ’পত্রিকাটি পশ্চিম বাংলার ‘এস ইউ সি’র সাহিত্যিক মুখপত্র। ‘এস ইউ সি’ ও ‘বাসদ’এর রাজনৈতিক মতাদর্শিক মিল রয়েছে,কাজেই এটা খুবই স্বাভাবিক যে পত্রিকাটি খালেকুজ্জামানের কাছেই লেখা চাইতে পারে।আর খালেকুজ্জামানের লেখাটির নাম ‘শামসুর রাহমান স্মরণ’ এবং লেখাটি পড়ে আমার মনে হয়েছে খালেকুজ্জামান সঙ্গতভাবেই বাংলাদেশের এই মহান কবিকে স্মরণ করেছেন। রাহমানের যেসব কবিতার উল্লেখ তিনি করেছেন,আর তিনি আসলে রাহমানের কবিতার অনবরত উল্লেখের মাধ্যমেই তার লেখাটি তৈরি করেছেন,সেসব কবিতা রাহমানের মনোযোগী পাঠক অবশ্যই স্বীকার করবেন, তার সেরা ও জনপ্রিয় কবিতার মধ্য থেকেই খালেকুজ্জামান উদ্ধৃত করেছেন।এদিক থেকে আমি বলব লেখাটি তৈরি করতে গিয়ে খালেকুজ্জামান বুদ্ধিমত্তা ও সংবেদনশীলতার পরিচয় দিয়েছেন। রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব যখন কবি বা কবিতা নিয়ে লেখেন তখন রাজনীতিই চরম ভূমিকা নেয়,এটা খুবই স্বাভাবিক,মোজাফফর আহমেদ, আমার মনে হয় না রাজনৈতিক বিবেচনা ছাড়া নজরুল ইসলাম সম্বন্ধে কিছু লিখেছেন। আবার অন্নদাশংকর রায় শেখ মুজিবের মধ্যে এক অবিকল্প কবিকেই দেখেছিলেন। হ্যাঁ শ্রেণীপ্রভাব আছেই,এবং শ্রেণীবিশ্লেষন ছাড়া মানুষকে বুঝতে গেলে সে বোঝা কোনোদিন সম্পূর্ণ হতে পারে না।কিন্তু তাই বলে সামন্ত রবীন্দ্রনাথ এবং বুর্জোয়া শামসুর রাহমান কে অস্পৃশ্য করে তুলতে হবে তা কী করে হয়। আর খালেকুজ্জামানের লেখাটিতে শামসুর রাহমানের বুর্জোয়া প্রভাব হিসেবে তিনি চিহ্নিত করেছেন রাহমানের বিএনপি ও আওয়ামী লীগকে এক করে না দেখার অবস্থানকে। আর এখানেই সম্ভবত ব্লগারের কাছে ‘শ্রেণীপ্রভাব’ বিষয়টি গুলিয়ে গেছে।
আর ব্লগারের দিক থেকে খালেকুজ্জামানকে প্রথমেই শামসুর রাহমানকে নিয়ে লেখার উনি কে এই মনোভাব সত্যিই আপত্তিকর। আমার মনে হয় কারোই কারো বিষয়ে লেখার কোনো বাধা থাকা উচিত নয়।আর সাহিত্যের অবমূল্যায়ন বিষয়ে বলতে চাই,প্রতিটি সমাজেই এটা ঘটে,এটা ঘটবেই, জীবনানন্দ যেমন আত্মহত্যা করেন মায়াকভস্কিও করেন।
সুব্রত - ১৮ জুলাই ২০০৮ (১০:৫৫ অপরাহ্ণ)
শান্তর এত বিস্তারিত আলোচনার পরেও মুনির ভাইয়ের মনে হল- বাসদের মুখোশ খুলে গেছে? বিষয়টা কি- ঊট পাখির বালিতে মুখ গুঁজে নিজকে লুকনোর মতো হয়ে গেল না? অথবা সেই বোকা কাকটা, যে নিজের চোখ বুজেঁ চুরির মাল লুকিয়ে ভাবে অন্য কেউ দেখতে পেল না। তাতে এখন মনে হচ্ছে শান্তর পুরো শ্রমটাই পণ্ড। তবুও আমারও দু ছত্র লিখতে ইচ্ছে করছে।
একটা মানুষের সাথে আমার মতের বিরোধতো থাকতেই পারে তাই বলে এরকম চোখ বন্ধ হয়ে আসা মানুষ দেখলে কষ্ট লাগে। তাও এমন দারুন মানুষটারও এই অবস্থা দেখলে। ব্যক্তিগত ক্ষোভ বিক্ষোভ কি এতটাই শক্তিশালী, যে মানুষের সুক্ষ্মতম যুক্তিবোধকেও অকেজ করে দেয়।
অথচ দারুন একটা বিতর্ক হতেই পারত। যে চিন্তাটা এই লেখাটার পেছনের মূল সেটা পিছনেই রয়ে গেল। সামনে আর আসল না। ব্যক্তিগত ক্ষোভ মিশ্রিত কিছু অহেতুক অভিযোগ পুরো লেখাটা ভাসিয়ে নিয়ে গেল। আসল আলোচনায় আলো পড়ল না।
আমারতো মনে হয় কয়েকটা লাইনে যা ছিটে ফোঁটা এসেছে ক্ষোভের ফাঁক গলে, তাই নির্যাস।
এক. সমালোচকের যোগ্যতা। (বিশেষ করে সে আর যেই হোন রাজনীতিবিদ হতে পারবেন কি পারবেন না)
দুই. শিল্পীর দায়িত্বের সীমা।
তিন. শিল্পের শ্রেণী বিচার হতে পারে কি পারে না।
কি জানি, আমার যা মনে হয়েছে, আমি তাই গুছিয়ে আনলাম। বিচক্ষণ মানুষরা আরও ভালো বলবেন। খুব দারুন হতো এভাবে ধরে ধরে আলোচনা এগুলে। অন্ধ ক্ষোভ সব গুবলেট করে দিল।
তা ছাড়া বাকি যা কিছু তার সব কটার জবাবতো শান্ত দিয়েই দিয়েছে। দ্বিরুক্তি করব না। শুধু একটু যোগ করব।- আমি মনে করি না, আমাদের সমস্যা নেই। অবশ্যই আছে। মনে করি না, আমাদের ঘাটতি নেই। অবশ্যই আছে। সত্যি খুব খুশী হতাম যদি জলপাই শাসন উল্টে দেওয়া যেত এই মূহুর্তেই। ক্ষোভটা রক্তে ঢুকে গেছে। জলপাই আর হলুদ দেখলেই রক্তটা লাফ দিয়ে ওঠে। কিন্তু আবার নিজেকেই প্রশ্ন করি, আগের শাসন গুলো জলপাই নিয়ন্ত্রিত নয়? জলপাই স্বার্থ লঙ্ঘিত হয়, এমন কোন সিদ্ধান্ত কি গত সকল তথাকথিত গণতান্ত্রিক সরকার নিয়েছে। আরো গভীরে ঢুকে যদি প্রশ্ন করি- বুর্জোয়া স্বার্থ লঙ্ঘন করে এমন কোন সরকার? আসলে কি সব একই ছক্কার এপিঠ ওপিঠ না? উচ্ছেদ করলে কি পুরো বুর্জোয়া শাসনের উচ্ছেদ এই মূর্হুতেই জরুরি না? আরো দশ বছর আগেও কি তাই জরুরি ছিল না? বা বিশ বছর আগে? তা কি আমরা পারছি? পারছি না বলেই কি তা ষঢ়যন্ত্র? ক্ষমতার সাথে হাত মেলানো?
হুম!! অবশ্যই এই নব্য জলপাই শাসনের শরুতেই একে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়াটাই উচিৎ ছিল। আমরা পারিনি সেটা। আরো বহুকাল এরকম অনেক না পারা নিয়ে আমাদের চলতে হবে। ভুলে যায়েন না, এই সরকারের থেকে অনেক কম জনপ্রিয়তা নিয়ে ক্ষমতায় এসেও এরশাদ টিকে ছিল দশ বছর। তার মানে, সেই দশ বছরের প্রতিটা দিন এমন অনেক না পারার গল্পতে পরিপূর্ণ। নাকি সেই দশ বছরের না পারাও ষঢ়যন্ত্র?
আমাদেরও তো অনেক না পারা আছে মুনির ভাই!! আমি সুব্রত আর মিছিলে নামি না। শান্ত তার মান অপমানের অনিশ্চয়তাকে challange করে জোর করে ঘরে ঢুকে পড়ে না। আপনার অনেক পরিচিত নাম এভাবে বলে যেতে পারব। এই দায়টুকু চাপাব কার ঘাড়ে? আপনি না পারার দায় নিবেন না মুনির ভাই? নাকি সাহিত্যিক বলে দায় মুক্তি চাইবেন? আমাদের না পাড়ার সব দায় এই দলটার? যে দলটা তার অনেক ঘাটতি নিয়েও একটু একটু করে এগুনোর সংগ্রামটা করে যাচ্ছে। পাল্টে নিচ্ছে নিজেকে।
এর বাইরে যদি তবুও একটু আশার আলো দেখাতে পারতেন। বামপন্থী রাজনীতির হাল হকিকত কি নিজ চোখে দেখছেন না? আপনার আমার কি দায়িত্ব পড়ে না? না কি সব দায়িত্ব কমরেড খালেকুজ্জামানের?
তার চেয়ে আসেন- আমরা বরং আপনাদের মূল আলোচনায় ঢুকি। ক্ষোভটা রেখে একটু ঠান্ডা হয়ে বসুন।
শেষে কয়েকটা বিষয় আমার চোখে লেগেছে। একটু জানাই।-
*ইন্সিডেন্টালের অভিযোগের পর আমি আবার বেশ কয়েকটা কবিতা নিয়ে যাচাই করে দেখলাম। না কোথাও ছন্দের ব্যাতয় ঘটেনি। প্রায় সবগুলো অক্ষরবৃত্ত ছন্দে লেখা। কোনটা আঠার মাত্রার, কোনটা চৌদ্দ মাত্রার। কিছু আছে মুক্তক। আমি স্বরবৃত্তটা ভালো চিনতে পারি না। ফলে ওটা আছে কিনা বুঝছি না। তবে কিছু গদ্যছন্দ চোখে পড়েছে। (নাঈম ভাই ভালো বলতে পারবেন)। ছন্দের বাইরে আসলে খুব কম ভালো কবিতাই আছে। এবং আধুনিক কবিতার সাথে ছন্দ থাকা না থাকার কোন সম্পর্কই নেই। বোধহয় শিল্প সাহিত্য বিচারের সোল এজেন্ট মহাশয় অন্তমিলকেই এতদিন ছন্দ হিসেবে জানতেন। জানি না এর পরেও জানবেন কিনা। তবে পুরো বিষয়টা দেখে মনে হয়েছে- লেখকের কবি বা কবিতা কোনটা নিয়েই মাথা ব্যথা নেই। না form নিয়ে না content নিয়ে। উপর উপর শিল্প সম্পর্কিত কিছু superiority complex থেকে লেখা। আর মূলত বাসদ-এর প্রতি ক্ষোভ-বিদ্দেষ।
দুই. আমি সত্যি মুগ্ধ কবির এ লাইন কটা পড়ে- “যখন প্রথম কবিতা লিখতে শুরু করি, তখন চতুর্দিকে কড়া পাহাড়া বসিয়ে দিয়েছিলাম যাতে আমার কাব্যক্ষেত্রে রাজনীতির অনুপ্রবেশ না ঘটে। …আইয়ুব খানের সামরিক শাসনামলে আমার কাব্যপ্রয়াস একটা নতুন বাঁক নেয় বলে মনে করি। যে আমি ছিলাম পুরোপুরি বিবরবাসী অন্তর্জীবনে সমর্পিত, সে-আমি ক্রমান্বয়ে উঠলো বহির্জীবনের মনযোগী এবং রাজনীতিমনস্ক।” কি অদ্ভুদ সুন্দর কটা লাইন। আমি আবেগ মথিত এই লাইন কটা পড়ে। ইন্সিডেন্টাল ব্লগার শামসুর রহমানের এই আবেগটুকুকে যদি ভালোবাসেন, তাহলে বুঝবেন কত বড় মাপের মানুষ ছিলেন উনি। আমরা তারই উত্তরসূরী, রাজনীতিটাকেই একটু ব্যখ্যা করে বোঝার চেষ্টা করি। ফেঁসে যেতে চাই না। আর তাই শামসুর রহমানের প্রতি আমাদের অভিমান- উনি শ্রেণীটাকে আলাদা করতে পারলেন না। এটা অপমান না।
তিন. আপনি নিজেও যে এই সরকারের প্রপাগান্ডা থেকে মুক্ত মানুষ না খেয়াল করেছেন? আপনার আর এক লেখায় লিখছিলেন- ‘অন্য সব দল যখন সংস্কারের কথা ভাবছে, তখন বাসদ কি করছে?’
আমি ব্যপক হেসেছি আপনার ওই প্রশ্ন পড়ে। আপনি আসলেই নাদান। যে সরকারের বিরোধীতা করছেন বড় গলায়, সে সরকারের স্বাস্ব্য বটিকা গিলে বসে আছেন। ভাই গলায় হাত-টা ঢোকান। না হলে হজম হয়ে যেতে পারে।
ইনসিডেন্টাল ব্লগার - ১৯ জুলাই ২০০৮ (৪:৩৯ পূর্বাহ্ণ)
সুব্রত বলেছেন: “অথচ দারুন একটা বিতর্ক হতেই পারত।”
এখনো তা সম্ভব বলেই মনে করি। মানতে রাজী নই আমাদের অবস্থান এতটাই বিপরীতে!
অলকেশ - ১৯ জুলাই ২০০৮ (৭:৩১ অপরাহ্ণ)
@ সুব্রতঃ
আপনার লেখাটা এক কথায় অপূর্ব । তার কারন হিসেবে বলতে হয়, আপনার আবেগের সংযম । প্রকাশ ভংগীমায় মনের সারল্য ও বিনয় । ইন্সিডেন্টাল ব্লগার কি ভাবে কি বলেছে, তার চাইতেও কি বলতে চেয়েছে তার উপর জোর দিয়ে কিছু গঠনমূলক সাহিত্যিক-রাজনৈতিক আলোচনার সূত্রপাত করে অন্যদেরকে পথ দেখিয়েছেন । যা হোক, নিজের মতটা বলি। ইন্সিডেন্টাল ব্লগারের আলোচনায় একটা বিষয়ের ইঙ্গিত আছে । এটা আমার নিজের উপলদ্ধি । সেটা হল যখন কেউ কারো সম্পর্কে কোন বিষয়ে তার ‘উপলদ্ধির বা বোধের ঘাটতি’ আছে বলে দাবী করেন তখন প্রথমে দেখতে হবে আসলে তারা একই ডিসিপ্লিনের মানুষ কিনা । তাদের দৃষ্টিভঙ্গীগত ও দর্শনগত মিল আছে কিনা । যদি তা হয়, তাহলে বোধের ঘাটতির অভিযোগটি এক রকম শোনায় । ধরা যাক, বাম পন্থায় বিশ্বাসী কোন দল/ব্যক্তি/লেখক’র বিরুদ্ধে এই অভিযোগ যতটা মানানসই বাকিদের বিষয়ে এটা ততটাই বেমানান । মানে “উপলদ্ধির ঘাটতি’’র অভিযোগটি অন্যদের “বুদ্ধিবৃত্তির দৈন্যের” ইঙ্গিতই পরোক্ষভাবে দেয়। এতে করে মানুষের ব্যক্তিগত যোগ্যতা, ক্ষমতা, ভাবনা ইত্যাদি বিষয়ে অনধিকার প্রবেশ হয়। তখন অনেকে বিষয়টি অফেন্সিভ হিসেবে নেয় । কারো কারো মনে বেদনা জাগে । কেউ ক্ষুদ্ধ হয় । কেউ ক্ষুদ্ধ হয়ে অসুন্দর বা কটু কথা বলে । যদিও, হয়তো উদ্দেশ্য, ঐ শব্দদুটির (“উপলদ্ধির ঘাটতি’’) প্রতিবাদ করা । ফলে কটূ কথাটিই কারো কারো কাছে মূখ্য হয়ে যায়, মুখ্য বিষয়টা হয়ে যায় গৌণ । তাদের কাছে প্রতিবাদকারীর উদ্দ্যেশ্যের সততা নিয়ে সন্দেহ জাগে । যেমনটি ইন্সিডেন্টাল ব্লগার কে নিয়ে মুলতঃ শান্ত ও নাঈমের লেখায় প্রকাশ পেয়েছে । ই ব্লগার এর বক্তব্য কিছু কিছু জায়গায় আমার কাছেও আবেগতাড়িত মনে হয়েছে । ফলে আলোচনার সৌন্দর্যহানি ঘটেছে । তবে এখন মনে হছে সবাই একটা সুন্দর তত্ত্বগত আলোচনার দিকে যাচ্ছে । এ উদ্যোগকে সাধুবাদ দিই।
উপরোল্লিখিত বিষয়ে আমি মনে করি, যদি সম্ভব হয় “উপলদ্ধির ঘাটতি’’ – এই expression টি পরিবর্তন করে অন্য কোন পরিভাষা ব্যাবহার করা। এতে অন্ততঃ কোনো ভুল মেসেজ যায়না।
যে কোন কথা কেবল ভাল হলেই লোকে গ্রহণ করে না । যেমন তসলিমা নাসরীন নারী স্বাধীনতায় বিশ্বাসী । পুরুষতন্ত্রের কর্তৃত্ব তার চরম অপছন্দ । তার কথাও ন্যায্য । কিন্ত প্রকাশভংগী কিছু ক্ষেত্রে অসুন্দর । বেপরোয়া । ফলে বেগম রোকেয়া যে ভাবে স্বপ্ন দেখান তসলিমা সেভাবে পারেন না । এখন কেউ যদি বলে বুর্জোয়া ব্যবস্থার বিরুদ্ধে শামসুর রাহমান গণমুক্তির ও বিপ্লবের কথা বলতে পারেননি । আমার এটা বোধগম্য হ্য়নি যে এটা কবির কাছে আশা করা কেন । কবি নিজ অবস্থান থেকে কিভাবে সমাজের কথা বলেছেন তা খালেকুজ্জামানের আলোচনায় এসেছে । কিন্ত দিন বদল করার মার্ক্সীয় ঘরানার সৈনিকেরা তার কাব্য থেকে কি শিক্ষা নিতে পারে, কেন পারে বা কি ভাবে তিনি প্রাসংগিক, এই ঘরানার কবিদের মার্ক্সবাদী বিশ্লেষণ অনুযায়ী কি ভাবে বিচার করতে হয়, সেই বিচারের কোন সার্বজনীন মান আছে কি না, থাকলে কিভাবে সেটা নির্ণীত হয়েছে, কারা করেছে বা তুলনামূলক কোন আলোচনা নিয়ে আসা যাতে করে মার্ক্সীয় ও অ-মার্ক্সীয় কবিদের সমাজ চেতনার গুনগত পারতথক্য বুঝতে পারা যায় , সেসব কোন বিষয়ই আলোচনায় উঠে আসেনি। এভাবে আলোচনা আসলে আরও প্রাণবন্ত হতে পারত । এছাড়া উপলব্ধির শ্রেনীগত সীমাবদ্বতার সীমা অতিক্রম করতে পারলে শামসুর রাহমান কাদের মত হতে পারতেন তার কিছু দৃষ্টান্ত তুলে ধরলে আরো উপভোগ্য হত । ফলে কেবল শ্রেনীগত সীমাবদ্ধতার কথা যদি বলা হয় বাকী আলোচনা তখন খাপছাড়া মনে হয় । ফলে তা অনেকেরই বোধগম্য না হবার কথা । এ দিকটা আমার চোখে পড়েছে । জানালাম তাই । আপনাকে আবারও সাধুবাদ জানাই সুন্দর আলোচনার জন্য ।
সুব্রত - ২০ জুলাই ২০০৮ (১২:১০ পূর্বাহ্ণ)
বিনয়ী হয়ে থাকতেই ইচ্ছে করছে। কিন্তু কথা হচ্ছে- আমি বিনয়ী না। ইন্সিডেন্টাল ব্লগারের কোন কথারই জবাব দেয়ার প্রয়োজন আমি বোধ করিনি। এরকম অসংস্কৃত, অভব্য এবং কুরুচিপূর্ণ লেখার জবাব দেয়ার প্রয়োজন আমি কখনই বোধ করিনি। কিছু কথা বলতে চেয়েছি শুধু আরো দশজন যারা পড়তে ঢুকবে তাদের সাথে যেন অন্তত একটা সত্যিকার অর্থেই বিতর্ক হতে পারে সেটুকু মাথায় রেখে।
কোন সন্দেহ নেই আপনি ইন্সিডেন্টাল ব্লগারের থেকে অনেক দক্ষ মানুষ। একই কথা ঘুরিয়ে আরো গ্রহণযোগ্য করে বলার সামর্থ আপনি যে রাখেন সেটা স্পষ্ট। কিন্তু দাঁড়ালেন ওই অভব্য আলোচনার পক্ষেই। আপনার এই কথাটা আমি বারবার পড়লাম- “মানে “উপলদ্ধির ঘাটতি’’র অভিযোগটি অন্যদের “বুদ্ধিবৃত্তির দৈন্যের” ইঙ্গিতই পরোক্ষভাবে দেয়। এতে করে মানুষের ব্যক্তিগত যোগ্যতা, ক্ষমতা, ভাবনা ইত্যাদি বিষয়ে অনধিকার প্রবেশ হয়। তখন অনেকে বিষয়টি অফেন্সিভ হিসেবে নেয় । কারো কারো মনে বেদনা জাগে । কেউ ক্ষুদ্ধ হয় । কেউ ক্ষুদ্ধ হয়ে অসুন্দর বা কটু কথা বলে । যদিও, হয়তো উদ্দেশ্য, ঐ শব্দদুটির (“উপলদ্ধির ঘাটতি’’) প্রতিবাদ করা । ফলে কটূ কথাটিই কারো কারো কাছে মূখ্য হয়ে যায়, মুখ্য বিষয়টা হয়ে যায় গৌণ ।”
কি নিপুণভাবে ওর অভব্য আলোচনাটাকে জায়েজ করে আনার চেষ্টাটা করলেন। অথচ আমি ইন্সিডেন্টাল ব্লগারের কোথাও বেদনা জাগবার মতো কোন লক্ষণ দেখতে পেলাম না। আমি আমার করা একটা কথা বরং ফের বলি- “লেখকের কবি বা কবিতা কোনটা নিয়েই মাথা ব্যথা নেই। না form নিয়ে না content নিয়ে। উপর উপর শিল্প সম্পর্কিত কিছু superiority complex থেকে লেখা। আর মূলত বাসদ-এর প্রতি ক্ষোভ-বিদ্দেষ।” এবং এর প্রমাণ শান্ত প্রত্যেক লাইন ধরে ধরে করেছে মাথা ঠান্ডা রেখেই।
আমার মনে হয় সত্য জানার যে তর্ক তা দুজন সৎ মানুষের মাঝেই হতে পারে। । সেটাই আমি আশা করছিলাম মুনির ভাইদের থেকে। যদি সে রকম তর্কের অবকাশ দেখি, তো দারুন। তাই ওই তিনটা বিষয় তুলে দিয়েছিলাম যা অস্পষ্ট চিন্তার আকারে পুরো আলোচনা জুড়ে অস্পষ্টই ছিল।
আমিও এই দলটা করতাম এক সময়। যদি সভ্যতার কোন স্পর্শ পেয়ে থাকিতো এই দলটার কাছেই পেয়েছি। না পেয়ে থাকলে সেটা আমার ব্যর্থতা, আমি নিতে পারিনি। কিন্তু প্রক্রিয়ার অর্থেও একটা জিনিস বুঝে ছিলাম। –
-সত্যকে জানতে ব্যক্তি নিরপেক্ষ থাকা।
-সামষ্টিক ঘাটতি পূরণ করতে নিজেকে উজাড় করা।
আরও কিছু বিষয় হয়ত পরে আলোচনা করা যেতে পারে। আশা রাখি আসলেই আমরা সত্য যা, তা ব্যক্তি নিরেপেক্ষভাবে গ্রহণ করার সামর্থ লাভ করব।
ইনসিডেন্টাল ব্লগার - ২০ জুলাই ২০০৮ (৬:৫৭ অপরাহ্ণ)
সুব্রত (#২৪, অলকেশের উত্তরে যা লিখেছেন সে বিষয়ে আলোকপাত)
আলোচনাটা সুব্রতর জন্য একটু মনে হয় কঠিনই হয়ে পড়ছে তাই তিনি নানা ফন্দিফিকির অজুহাত তুলে আলোচনার বক্তব্যকে (কিংবা দায়দায়িত্বকে) পাশ কাটাবার চেষ্টা করছেন বলে মনে হল। অলকেশ তাকে কিছু অত্যন্ত জরুরী প্রশ্ন (মার্কসীয় সাহিত্য বিচার বিষয়ক) জিজ্ঞেস করেছিল – কিন্তু তিনি সেসব পাশ কাটিয়ে যেতে চাইলো আমার (এবং অলকেশের) বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত আক্রমণ চালিয়ে যাবার মাধ্যমে, প্রসঙ্গ পাশ কাটানোর কৌশল হিসেবে। এতবছর এ ধারার রাজনীতি করেও এ-ই যদি হয় তার সততা ও সংস্কৃতি, তাহলে কি আর বলার থাকে!
সে সব প্রশ্নের উত্তর জানা থাকলে তিনি নিশ্চয়ই দিতেন। মনে হয় নেই। তিনি বলার চেষ্টা করলেন তার আরেক সহযোগী শান্ত নাকি অন্যান্য প্রশ্নগুলোর উত্তর দিয়ে দিয়েছে। কিন্তু শান্ত সে সবের উত্তর দেননি, সেটাই হল মূল কথা, তা তার সহযোগীরা যতই চিল্লিয়ে সেকথা আমাদের অন্যভাবে বোঝানোর চেষ্টা করুক না কেন।
সুব্রতের ব্যক্তিগত রাগ ক্ষোভ ego গোঁড়ামীজাত বক্তব্য থেকে এটা খুবই স্পষ্ট – যারাই তার মতের সাথে দ্বিমত পোষণ করবে (কিংবা দ্বিমতকারীদের কোনভাবে সমর্থন করবে) – তারাই “অভব্য,” অসভ্য ইত্যাদি। জর্জ বুশের you are either with us or against us - নীতি মনে হচ্ছে সুব্রতর মত মানুষদের চিন্তা পদ্ধতি। এদিক থেকে তাদের সাথে মোল্লাদেরও খুব একটা অমিল দেখছিনা। সব মুক্তচিন্তার মুখোশ খসে পড়ে ভেতরের আসল মানুষটি বুঝি বেরিয়ে আসছে এখন। সন্দেহ ছিল, সেইসাথে ছিল কিছু প্রমাণ ও উদাহরণ সবসময় চোখের সামনে; তবে পোস্টটি না লিখলে হয়তো এদের যে এমন হাল তা হয়তো এমনভাবে কোনদিন জানা/বোঝা হয়ে উঠতো না।
সুব্রতর একটা কথার সাথে একমত আমি – আলোচনা হতে পারে দু’জন সৎ মানুষের মধ্যে। একইভাবেই জরুরী সে মানুষদের মুক্তচিন্তার মুক্তমনের মানুষ হওয়া – যারা কিনা মুক্তালোচনার পরিবেশ রক্ষায় committed । সুব্রত ও তার চারজন সহচর যারা তার পক্ষে এখানে লিখছে গত কয়েকদিন ধরে, তাদের তেমন মানুষ মনে হয়নি; দুঃখজনক হলেও সেটাই এখন বাস্তবতা। কারণ তারা শুরু থেকেই ইনসিডেন্টাল ব্লগারের উদ্দেশ্য সম্বন্ধে সবকিছু বুঝে ফেলে রায় দিয়ে দিয়েছেন, ব্লগারের বক্তব্যের ব্যাখ্যা ও প্রসঙ্গ না শুনেই, না বুঝেই। সেদিক থেকে এখন মনে হচ্ছে আমি বুঝি সময়ই নষ্ট করছি blocked headed এই মানুষগুলোর সাথে আলোচনার চেষ্টা করে।
ব্লগে যাকে বলেছি কিছু কিছু সমাজতান্ত্রিক দলের ভেতর “অন্তর্গত সমালোচনা বিমূখ আত্মবিধ্বংসী সংস্কৃতি” – এঁরা তাদের আলোচনা ও আচরণ দিয়ে তাই আবার প্রমাণ করলেন। ব্লগে লিখেছিলাম, এখন তার চাক্ষুস প্রমাণ দেখলাম। সেই সাথে দেখতে পাচ্ছি এ ধরণের সংস্কৃতি তাদের সংকীর্ণ পরিমন্ডলের বাইরের আর সব মানুষদের প্রতিও বিস্তৃত। বিশেষ করে সেই মানুষেরা যদি কোন প্রশ্ন করার ধৃষ্টতা দেখায়। সুব্রতের মত মানুষদের ক্ষেত্রে – সমালোচকদের deal করার strategy হচ্ছে তাদের চরিত্রহনন, উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন উত্তোলন, মানসিক সুস্থতা নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন, সততা নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন – এভাবেই সারা শক্তি দিয়ে চেষ্টা করা মূল আলোচনার ধারে কাছেও না গিয়ে, তাকে পাশ কাটিয়ে, মন্তব্যকারীদের বা প্রশ্নকারীদের সহজ কোন প্রশ্নের সহজ সোজাসাপটা জবাব না দিয়ে পুরো বিষয়টাকে সবার কাছে ধোঁয়াটে করা এবং সবার কাছ থেকে লুকিয়ে রাখা।
সুব্রতের মন্তব্য পড়ে মনে হয়েছে কথার ধুম্রজাল ছড়িয়ে আক্রমণের এসব কৌশলে তারা নিঃসন্দেহে অনেক এগিয়ে আছেন। খুব কম দিন তো হলনা এসবের চর্চা করছেন তাঁরা! ইতিহাস তার সাক্ষী। তবে মানুষ এতো বোকা বা অবুঝ না যতটা তারা ধরে নিয়েছেন। এই ব্লগের আলোচনা পড়লে সে সব যে কারো কাছেই পরিস্কার হবে বলে আমার বিশ্বাস।
অলকেশ - ২১ জুলাই ২০০৮ (৬:১০ অপরাহ্ণ)
@ সুব্রতঃ আপনি আমার প্রশ্নের উত্তর দেন নি ।
আপনি যা ভাবেন তা একই ভাবে আরেকজন ভাববে এটা কেন আশা করছেন ? মুক্ত মন নিয়ে আলোচণা করলে আপনি এই ভাবে সিদ্ধান্ত টানতে পারতেন না । এখন মনে হচ্ছে আপনি জাজমেন্টাল হয়ে গেছেন । এতে বুদ্ধি ঘুলিয়ে যায় । পক্ষে বিপক্ষের লোক খুজতে গিয়ে আপনি আলোচণার মূল সুর থেকে সরে এসেছেন ।
কেবল ভাবাবেগ দিয়ে মূল প্রসংগ আড়াল করার চেষ্টা করেছেন । এটা ভাল লক্ষন নয় । আপনি দেখেছেন যে এই আলোচণায় একটা সুন্দর ডিবেটের সুযোগ ছিল । এইসব একপেশে ভাবনা আপনার চিন্তা দখল করে থাকায় আপনি ও একটা ছকে আটকে গেলেন । আসুন আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখি ।
রেজাউল করিম সুমন - ২০ জুলাই ২০০৮ (১:০৭ অপরাহ্ণ)
১২ জুলাই তারিখে প্রকাশিত ‘শলোখভ থেকে শামসুর : সমাজতান্ত্রিক অবমূল্যায়ন’ শিরোনামে ইনসিডেন্টাল ব্লগার-এর একটি লেখাকে ঘিরে গত এক সপ্তাহ ধরে মুক্তাঙ্গনে তর্ক-বিতর্ক জমে উঠেছে। কলকাতার ‘পথিকৃৎ’ সাময়িকপত্রে (বর্ষ ৪৪ সংখ্যা ১, সেপ্টেম্বর ২০০৬) মুদ্রিত এবং পরবর্তীকালে ঢাকা থেকে চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র কর্তৃক প্রকাশিত (প্রথম প্রকাশ : ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০০৭, দ্বিতীয় মুদ্রণ : ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৭) খালেকুজ্জামানের ‘শামসুর রাহমান স্মরণে’ শীর্ষক লেখাটির পাঠ-প্রতিক্রিয়া হিসেবে ইনসিডেন্টাল ব্লগার এই পোস্টটি লিখেছেন। তবে তাঁর এই প্রয়াস কেবল ওই লেখাটির সমালোচনায় সীমাবদ্ধ থাকেনি। তারই সূত্র ধরে তিনি বাসদ তথা তার অঙ্গ-সংগঠনের সাহিত্য-বিষয়ক পাঠচক্রের পাঠ্যক্রমের উল্লেখ ক’রে মার্কসীয় সাহিত্য-বিচারের নামে একটি সংকীর্ণ সাহিত্য-মূল্যায়নের ধারার প্রতি আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। প্রসঙ্গত রুশ কথাশিল্পী শলোখভের কথাও উঠেছে। সেই সঙ্গে একটি বামপন্থী দল হিসেবে বর্তমান পরিস্থিতিতে বাসদ-এর অবস্থান নিয়েও তিনি প্রশ্ন তুলেছেন।
খালেকুজ্জামান সাহিত্যের ডিগ্রিধারী বা সেই বিষয়ের অধ্যাপক নন, সাহিত্য-সমালোচক হিসেবেও তাঁর কোনো পরিচিতি নেই। কিন্তু শামসুর রাহমানের মৃত্যুর পর তাঁর কাছ থেকে লেখা চেয়ে ‘পথিকৃৎ’ আদৌ কোনো অন্যায় করেছে — আমি অন্তত তা মনে করি না। যে-কোনো সাহিত্যিককে নিয়ে মন্তব্য করার বা প্রবন্ধ লেখার অধিকার যে-কোনো পাঠকেরই থাকার কথা। খালেকুজ্জামানেরও আছে। যোগ্যতা-অযোগ্যতার প্রশ্নটা এখানে অবান্তর। আর পত্রিকা মাত্রেরই অধিকার আছে তার পছন্দমতো লেখক নির্বাচনের।
আমি যতদূর জানি ‘পথিকৃৎ’ এস.ইউ.সি.আই.-এর মুখপত্র। বাসদ ও এস.ইউ.সি.আই. অনাত্মীয় নয়। বাসদ-এর সঙ্গে যুক্ত বন্ধুদের মাধ্যমে জেনেছি–তাদের দলের সদস্যদের অনেকে ওই সাময়িকপত্রটির নিয়মিত গ্রাহক। চারণ-এর পাঠচক্রে ওই পত্রিকায় প্রকাশিত বিভিন্ন লেখা পঠিত হওয়ার সংবাদও তাদের মাধ্যমেই নানা সময়ে পেয়েছি। এরকম সিদ্ধান্তে আসা হয়তো অসংগত হবে না যে, বাসদ তথা ছাত্রফ্রন্ট তথা চারণ-এর কর্মীদের সাহিত্য-রুচি নির্মাণের ক্ষেত্রে ‘পথিকৃৎ’-এর উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে।
শিবদাস ঘোষ শরৎচন্দ্রের লেখা পছন্দ করতেন। মানিক মুখোপাধ্যায়ও করেন। খালেকুজ্জামানও করেন। করেন মবিনুল হায়দার চৌধুরীও। আর তাই তাঁদের দলের আর সকলেও করেন! রুচির এই বিস্ময়কর ঐক্য কি নিতান্তই কাকতালীয়, না কি কোনো বিশেষ প্রক্রিয়ার মধ্যে প’ড়ে তাঁরা সমরুচির ধারক হয়ে ওঠেন? ‘পথের দাবী’ কি সত্যিই উচ্চাঙ্গের উপন্যাস? এ কালের বিপ্লবীদের অনুপ্রাণিত করার মতো আর কোনো উপন্যাস বাংলা সাহিত্যে নেই? দূরবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে খুঁজেও কি একজন বামপন্থী লেখক খুঁজে বের করা গেল না এত দিনেও?
বাসদ-এর সব কর্মীই কি তাঁদের ‘অফিসিয়াল’ সাহিত্য-রুচিকে নির্বিচারে মেনে নিয়েছেন? এই দলটির সঙ্গে যুক্ত যে-সব তরুণের পাঠ-পরিধি ব্যাপক (আমার ঘনিষ্ঠজনদের মধ্যেই আছে এরকম কয়েকজন), তারা কীভাবে এর সঙ্গে নিজেকে অভিযোজিত করে? তাদের এই পাঠাভ্যাসকে পার্টি কি গুরুত্ব দিয়েছে কখনো? তাদের কাছ থেকে কখনো শিল্প-সাহিত্যের জগতের হালফিলের খবর জানতে চেয়েছেন প্রবীণ নেতারা? তরুণদের সংস্পর্শে এসে তাঁরা নিজেদের সাবেকি ধ্যান-ধারণাকে নবীকরণের কথা ভেবেছেন? ‘কলাকৈবল্যবাদী’ ও বিমূর্ত শিল্পের মুণ্ডপাত করার আগে শিল্পকলার ইতিহাসের নিবিড় পাঠ নেয়ার কথা এই দলভুক্ত কেউই আজ অবধি ভাবেননি?
দলের শিল্প-সাহিত্যপ্রেমী কর্মীদের জন্য মার্কস-এঙ্গেলস-লেনিন-প্লেখানভ-ত্রোৎস্কি-লুনাচার্স্কি-গোর্কি-লু স্যুন প্রমুখের শিল্প-সাহিত্য-বিষয়ক রচনা নিয়ে কোনো পাঠ্যক্রম প্রণয়নের কথা ভাবা হয়েছে কি? জ্দানভ্ আর ইয়ের্মিলভ্-এর ভূত ঘাড় থেকে নামানোর সময় আসেনি?
২.
শামসুর রাহমানকে নিয়ে খালেকুজ্জামানের অনেকটাই প্রতিবেদনসুলভ ওই লেখায় যে-সব তথ্য পরিবেশিত হয়েছে, কবির মৃত্যুর পর বিভিন্ন পত্রপত্রিকা মারফত ততদিনে আগ্রহী পাঠকদের অনেকেরই সে-সব জেনে যাবার কথা। তবে লেখাটির শেষ পাঁচ-ছয় অনুচ্ছেদে যে-বক্তব্য উঠে এসেছে তা অন্যত্র লভ্য ছিল না। আর মূলত সেই অংশের মূল্যায়ন নিয়েই আপত্তি তুলেছেন ইনসিডেন্টাল ব্লগার। আমি নিজে অবশ্য প্রবন্ধটির প্রথম বাক্য নিয়েও খানিকটা ধন্দে পড়েছি। কিন্তু থাক সে প্রসঙ্গ।
যে-কোনো সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রেই কি তথাকথিত ‘পার্টি সাহিত্যে’র যান্ত্রিক ধারণার দৌরাত্ম্য অনিবার্য? ইনসিডেন্টাল ব্লগারের লেখা থেকে কি আমরা ধরে নেব যে, সোভিয়েত ইউনিয়নে প্রতিভাবান লেখকরা কেবল নিগৃহীতই হতেন? এ ধরনের অতিসরলীকরণের দিকে নিশ্চয়ই ঝুঁকব না আমরা কেউ। তিনি লিখেছেন, ‘সোভিয়েত লেখক মিখাইল শলোখভ-এর কথাই ধরা যাক, যিনি ১৯৬৫ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন তাঁর কালজয়ী উপন্যাস “ধীরে বহে ডন”-এর জন্য। সারা পৃথিবী যখন তাঁর প্রতিভায় শ্রদ্ধাবনত, তাঁর নিজের দেশে তখন তিনি সম্মুখীন হয়েছেন একের পর এক হয়রানির।’
‘ধীরে বহে ডন’ বা ‘প্রশান্ত দন’ চার খণ্ডের (সর্বমোট আট পর্বের) একটি বৃহদায়তন উপন্যাস। ১৯২৮ সালে ‘অক্টোবর’ সাময়িকপত্রে এই উপন্যাসের প্রথম খণ্ডের ধারাবাহিক প্রকাশ শুরু হয়। কিন্তু তার আগেই ওই সাময়িকপত্রের সম্পাদক কথাসাহিত্যিক আলেক্সান্দর্ সেরাফিমোভিচ পত্রিকার দপ্তরে দেশী-বিদেশী লেখকদের সামনে সাড়ম্বরে ঘোষণা দিয়েছিলেন, ‘প্রিয় বন্ধুরা! অনুরোধ করছি, নামটা মনে রাখবেন — ‘প্রশান্ত দন’। আর লেখকের নাম — মিখাইল শলোখভ। … এবারে শুনুন, আমি আপনাদের বলে রাখছি, অচিরেই সারা রাশিয়ায় পরিচিত হবে এই নাম, আর দু-তিন বছরের মধ্যেই সারা দুনিয়ায়।…’ আর সত্যিই ঘটেছিল তা-ই।
উপন্যাসের প্রথম ও দ্বিতীয় খণ্ড ১৯২৮ সালেই রুশভাষায় গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। ১৯৩৪ সালে স্টিফেন গ্যারি-কৃত ওই দুই খণ্ডের সংক্ষেপিত ইংরেজি অনুবাদ ব্রিটেনে ও আমেরিকায় বেস্টসেলারের মর্যাদা পায়। উপন্যাসটির তৃতীয় ও চতুর্থ খণ্ড মূলভাষায় গ্রন্থাকারে বেরোয় প্রথম দুই খণ্ড প্রকাশের এক দশকেরও বেশি সময় পরে — ১৯৩৯ সালে। উপন্যাসটির দ্বিতীয়ার্ধের অনুবাদও অল্প সময়েই প্রকাশিত হয়। আসলে, ১৯৬৫ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পাওয়ার সিকি শতাব্দী আগেই নানা ভাষায় ‘প্রশান্ত দন’-এর অনুবাদ প্রকাশের সুবাদে শলোখভ পরিণত হয়েছিলেন বিশ্ববন্দিত এক লেখকে।
ইনসিডেন্টাল ব্লগারের লেখাটি সম্পর্কে একজন প্রসঙ্গক্রমে প্রশ্ন করেছেন (২২ নং মন্তব্য) : ‘মিখাইল শলোখভ নোবেল পেলেন ১৯৬৫। স্তালিন মারা গেলেন ১৯৫৩ সালে। স্তালিন কি মারা যাবার আগে শলোখভের প্রাণ রক্ষা করেছিলেন?’ হ্যাঁ, ঠিক তা-ই। মৃত্যুর পরে কেউ কি অন্যের প্রাণ রক্ষা করতে পারে? এমনকী ইয়োসিফ জুগাশভিলি-র পক্ষেও তা সম্ভব নয়!
৩.
অনেকদিন আগে “পথের দাবী : রাজনীতি ও শরৎচন্দ্র” নামে একটি কৌতূহলোদ্দীপক প্রবন্ধ লিখেছিলেন তানভীর মোকাম্মেল। প্রবন্ধটি তাঁর ‘মার্কসবাদ ও সাহিত্য’ (প্রথম প্রকাশ : ১৯৮৫) গ্রন্থে সংকলিত হয়েছে। ইনসিডেন্টাল ব্লগার ও মন্তব্যকারী বন্ধুরা হয়তো দেখে থাকবেন।
ওই বইয়েরই অন্য একটি প্রবন্ধে ‘ফর্ম’ ও ‘কনটেন্ট’ নিয়ে আলোচনা আছে। এ বিষয়ে পৃষ্ঠা দুয়েক আলোচনার পর তানভীর মোকাম্মেল সেখানে লিখেছিলেন : ‘… এ প্রসঙ্গে শেষ কথাটি এটাই বলতে চাই যে শিল্পী যদি মৌলিক প্রতিভার অধিকারী হন, ইতিহাসের গতিশীলতা সম্পর্কে তিনি যদি থাকেন সচেতন, “ফর্ম” নিয়ে তিনি খুব একটা মাথা ঘামাবেন না। প্রয়োজনে নিজের “ফর্ম” নিজেই তৈরী করে নেবেন। কারণ সংস্কৃতির ইতিহাসের এই সত্যটা তো সব বিতর্কের ঊর্ধ্বে যে, আগে সৃষ্টি হয়েছে ভাষা — পরে ব্যাকরণ।’
‘শলোখভ থেকে শামসুর : সমাজতান্ত্রিক অবমূল্যায়ন’-এর ১৯ নং মন্তব্য-প্রতিক্রিয়ায় পাওয়া গেল প্রায় কাছাকাছি মত : ‘…একজন সমাজতন্ত্রীর কাছে সবসময়ই অবশ্যই কনটেন্টের গুরুত্ব অধিক (তার মানে এই না যে — ফর্ম তার কাছে গুরুত্বহীন!!)।’ সমাজতন্ত্রী হবার যোগ্যতা আমার নেই; কিন্তু জানতে ইচ্ছে করে, একজন সত্যিকার সমাজতন্ত্রীর কি এ ধরনের খণ্ডিত ধারণা পোষণ করা সাজে? আগ্রহী পাঠক এ বিষয়ে প্রাসঙ্গিক আলোচনা পাবেন সোভিয়েত নন্দনতাত্ত্বিক আভনের জিস ও হিস্পানি নন্দনতাত্ত্বিক আদোল্ফো সাঞ্চেজ ভাজকেজ-এর রচনায়।
খুব প্রাসঙ্গিক কি না জানি না, তবে গত ক’দিনে কোনো কোনো মন্তব্য পড়তে গিয়ে বারে বারেই মনে পড়েছে ৮৮ বছর আগে উচ্চারিত লেনিনের একটি সাবধানবাণী: ‘… কেবলমাত্র কমিউনিস্ট স্লোগান আয়ত্ত করা শুরু করলে হবে আরো বেশি বিপদ। সময় থাকতে এই বিপদ হৃদয়ঙ্গম না করলে, যে পাঁচ কি দশ লাখ তরুণ-তরুণী এইভাবে কমিউনিজম শিখে নিজেদের কমিউনিস্ট বলবে, তারা কমিউনিজমের প্রভূত ক্ষতিই করত কেবল।’ (“যুব লীগের কর্তব্য”, ‘সাহিত্য প্রসঙ্গে’, পৃ. ৮৪)।
সময়স্বল্পতার কারণে অনেকগুলো প্রসঙ্গে যাওয়াই হলো না। আমার আঙুলগুলোরও এখন খানিকটা বিশ্রাম দরকার। বন্ধুগণ, ধন্যবাদ সবাইকে।
আহমেদ মুনির - ২০ জুলাই ২০০৮ (৩:৫৮ অপরাহ্ণ)
ইনিসডেন্টাল ব্লগারের ‘শলোখভ থেকে শামসুর : সমাজতান্ত্রিক অবমূল্যায়ন’ পড়ে গত ১৭ জুলাই আমি যে-মন্তব্য করেছি অনেকেই তাতে হতাশ হয়েছেন। কয়েকজন বন্ধুর মন্তব্য পড়ে তেমনটাই মনে হলো।
বাসদের মুখোশ উন্মোচনের ব্যাপারে আমি যে-মন্তব্য করেছি তাতে সংগত কারণেই আমাকে ভুল বুঝবার যথেষ্ট কারণ আছে। আসলে বাসদের সাহিত্য-রুচি যে এমনই আমি সেটাই বলতে চেয়েছি।
ইনসিডেন্টাল ব্লগারের সব মন্তব্যের সাথে আমি একমত নই। তবে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে জানি, প্রগতিশীল সাহিত্য বলতে বাসদের উপরের স্তরের নেতৃবৃন্দ যা বোঝেন তা অনেকটা খণ্ডিতই। হায়দার ভাইকে বহুবার বলতে শুনেছি আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের লেখা তিনি পড়তে পারেন না। কারণ তাঁর উপন্যাস, বিশেষ করে ‘চিলেকোঠার সেপাই’-তে সবর্হারার জীবনের একেবারে হুবহু প্রতিফলন পাওয়া যায়, যেটাকে হায়দার ভাই আদৌ সাহিত্য বলতে নারাজ। আমি একবার প্রশ্ন করেছিলাম, কেন ‘চিলেকোঠার সেপাই’ প্রলেতারীয় সাহিত্যের অন্তর্গত হবে না? তিনি উত্তর দিয়েছিলেন, বইটা কয়েক পাতার পর আর পড়া যায় না; কারণ ওতে ছরছর করে পেচ্ছাপ করার কথা আছে। আছে অশালীন গালিগালাজ।
খুব মন খারাপ হয়েছিল শুনে। হায়দার ভাইয়ের মতো সংবেদনশীল মানুষ খুব কমই দেখেছি। তাঁর ক্লাসিকাল গান শোনার রুচির কথা জানি, জানি তাঁর নাটক-উপন্যাস-চলচ্চিত্র ও সাহিত্য-সমালোচনার বিষয়ে অগাধ পাণ্ডিত্যের কথা। কিন্তু নতুন সাহিত্য বোঝার ক্ষেত্রে কোথাও যে একটা ভুল হচ্ছে এটা বারবার মনে হলেও পার্টিতে প্রতিষ্ঠিত করতে পারিনি।
নাঈম - ২০ জুলাই ২০০৮ (১০:০৩ অপরাহ্ণ)
ইতোমধ্যে শান্ত, মাসুদ করিম, অলকেশ, পথিক, আহমেদ মুনির, ওয়াচার, সুব্রত, রেজাউল করিম সুমন — অনেকে মিলে অনেক কথা বলেছেন।
ইনসিডেন্টাল নামে যিনি লিখছেন, তিনিও আমার 22 নং প্রতিক্রিয়ার জবাবে কিছু কথা লিখেছেন।
শান্ত মূলত বাসদের রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে এবং সুব্রত সাহিত্য-বিষয়ে দীর্ঘ বিতর্ক করেছেন। সবশেষে অলকেশ ও রেজাউল করিম সুমন সাহিত্য-বিচার-সম্পকে বেশ কিছু প্রশ্ন তুলেছেন।
প্রথমেই বলে রাখি, আলোচনার সূত্রপাত সাহিত্য-বিচার। কিন্তু রাজনীতি এসে গেছে। সাহিত্যের আলোচনায় রাজনীতি আসতেই হবে — এটা আমার নিজের মত এবং পৃথিবীর তাবৎ মার্কসবাদী-ই এ-মত পোষণ করেন। এ-নিয়ে বিতর্ক হতে কোনো অসুবিধা নেই। কিন্তু ইনসিডেন্টাল নামধারী সমালোচক সাহিত্য-কে উছিলা করে আক্রমণ করে বসলেন বাসদকে এবং এর নেতা খালেকুজ্জামানকে। উনার আসল উদ্দেশ্য যে এটাই, তা আরো পরিষ্কার হয়েছে যখন দেখেছি — (এক)উনি কবিতা (একজন কবি-র প্রসঙ্গ ধরে যেহেতু আলোচনা) এবং সাধারণভাবে সাহিত্য বোঝেন না। এ-কথা আমি বলেছি আমার আগের মন্তব্যে। আমার এ কথায়, দেখা যাচ্ছে, ইনি গোস্বা করেছেন। — “ছন্দ বিষয়ে আমার আগ্রহ বরাবরই খুব কম, জ্ঞান তো আরো কম – কিছুটা অলৌকিক মনে হলেও নাঈম সেটা ধরে ফেলেছেন কিভাবে যেন।” অথচ উনি নিজেই উনার মূল লেখায় বলছেন — “আধুনিক কবি হিসেবে শামসুর রাহমানের কবিতা যে ছন্দনির্ভর নয়”। এ কথার পর কোনো অলৌকিক জ্ঞান লাগে কি — ছন্দ, কবিতা সম্পর্কে এর জ্ঞানের অন্তঃসারশূন্যতা ধরে ফেলতে?
এবং তিনি যে কবিতা কিছুটা হলেও বোঝেন, (আসলে ছন্দ-সম্পর্কে নিজের জ্ঞানের দুর্বলতা ঢাকতে)লিখছেন —
“কেন যেন ছন্দের অস্তিত্বের ব্যপারে সচেতন হলেই আমার কাছে মনে হয় কবিতাপাঠের ভেতরকার মজাটাই বুঝি নষ্ট হয়ে গেল।” … “একেকজনের কাছে কবিতার একেকটি জিনিস আবেদনময়। কারো ক্ষেত্রে ছন্দ, কারো ক্ষেত্রে এর অনুপস্থিতি, কারো ক্ষেত্রে চিত্রকল্প, শব্দবিন্যাস, বিষয়বস্তু ইত্যাদি এমন হাজারটা বিষয় হতে পারে।”
উনি টেরও পেলেন না, পরে উনি যা বলছেন, উনার অজ্ঞতার ছাপ সেখানেও রয়েছে — যা বোঝার জন্য অলৌকিক জ্ঞানের অধিকারী হতে হয় না। বলার অপেক্ষা রাখে না কবিতার শরীর গঠিত হয় শব্দ দিয়ে এবং শব্দবিন্যাসের যে বৈচিত্র্য তৈরি হয় তার ভিত্তি হচ্ছে ছন্দ। আবার ছন্দই চিত্রকল্পকে পরিপূর্ণতা দেয়। আর কবিতার বিষয়বস্তু যে মানুষকে/পাঠককে প্রভাবিত করে, সেটাও ছন্দের অস্ত্র দিয়েই। একই বিষয়ে লেখা কোনো একটা প্রবন্ধ, বা কারো বক্তৃতায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান থাকার পরও তার আবেদন — আর ওই বিষয়ে রচিত একটি স্বার্থক কবিতার আবেদন ভিন্ন হয় — কারণ কবিতার ছন্দের শক্তি। পাঠকের মাত্রাভেদে কেউ হয়ত সে ছন্দ ধরতে পারেন, কেউ পারেন না। ছন্দের কাঠামোটি যিনি ধরতে পারেন — তার রস-গ্রহণের মাত্রা বেড়ে যায়, তা বলাই বাহুল্য।
আমার বিশ্বাসের দ্বিতীয় কারণ : এই ইনসিডেন্টাল সাহেব, মার্কসবাদ সম্পর্কেও খুব একটা জ্ঞান-গম্যি রাখেন না। দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিত এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে মার্কসবাদে বিশ্বাসী, শ্রমিক-শ্রেণীর রাজনীতি করে — এমন একটি দল বা দলগুলোর কি করণীয়, এখন সে দল বা দলগুলোর লাইন-অব-একশন কি হওয়া উচিত — সে সম্পর্কে এক বিন্দু আলোচনা করলেন না। শুধু বাসদের বিরুদ্ধে কতগুলো অভিযোগ, অনুযোগের ফিরিস্তি এবং সর্বোপরি “স্বৈর-সামরিক সমর্থনপুষ্ট আমলানির্ভর সরকারের তাঁবেদারি”,এবং “কোরেশীদের সাথে লেগে থাকতে পারলে ভাগ্যের ফেরে ক্ষমতার শিকেটা ছিঁড়ে তার কিছু ভাগ পাওয়া”-র অভিযোগ তুলে বিরাট লেখা লিখেছেন। তবে আমাদের সৌভাগ্য যে বাসদের তহবিলে সেনাবাহিনী কিংবা সরকারের কোনো গোপন সহযোগিতার বিষয় তিনি আবিষ্কার করতে পারেননি। তার ভাষায়, এখনো “কমরেড জামানের দল বাসদের নেতাদের ভরণপোষণ থেকে শুরু করে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার অর্থ আসে জনগণের কাছ থেকে,গণচাঁদার আকারে।”
উনার লেখটা শেষ করেছেন কার্ল মার্কস-কে টেনে এনে। “নিজের জীবদ্দশাতেই অত্যুৎসাহী অনেক কমিউনিস্ট নেতার তত্ত্বের প্রতি গোঁড়ামি ও কূপমণ্ডুক দৃষ্টিভঙ্গি দেখে হতাশ কার্ল মার্কস নিজেই বলতে বাধ্য হয়েছিলেন: “thank God, I am not a Marxist !” ” ..
যারা মার্কসবাদের অ-আ-ক-খ জানেন, তারা নিশ্চয়ই জানেন যে মার্কস নিজের সম্পর্কে কোনোদিন ‘মার্কসবাদী’ শব্দটি ব্যবহার করেননি। ‘মার্কসবাদ’ শব্দটি সর্বপ্রথম ব্যবহার করেছেন ফ্রেডরিখ এঙ্গেলস। উক্তিটিও তাঁর। কবে, কোথায়, কি প্রসঙ্গে বলেছেন — প্রয়োজনে পরে উল্লেখ করব।
বামপন্থী দল বা মার্কসবাদী দল বা বিপ্লবী দল হিসাবে শুধু বাসদ-ই একমাত্র দাবিদার নয়। ফলে, দেশের আজকের পরিস্থিতিতে শুধু বাসদ নয়, যে কোনো বামপন্থী দলের করণীয় কি হওয়া উচিত — এটা নির্ধারিত হবে কেমন করে? শুধু মাত্র জনগণের দুর্ভোগ আগের তুলনায় কতটা বেড়েছে তা দিয়ে? অথবা এই সরকার সংবিধান সম্মত কিনা তা দিয়ে? নাকি সরকার সেনা-সমর্থিত কিনা তা দিয়ে?
এ সরকারকে টান মেরে গদি থেকে ফেলে দেওয়ার কথা জামাত বেশ জোর গলায় বলছে,(নিজামী গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে) যা বাসদ বলেনি। নয়া দিগন্ত পত্রিকার উপসম্পাদকীয় পাতায় ফরহাদ মজহার (যিনি তারেক জিয়ার বন্ধু হিসাবে নাম কুড়িয়েছেন), সাবেক জ্বালানি উপদেষ্টা মাহমুদুর রহমান (নাইকো, ফুলবাড়ী ইত্যাদি ঘটনায় সাম্রাজ্যবাদী বহুজাতিক কোম্পানির পক্ষাবলম্বনকারী)এ সরকার সম্পর্কে খুব কড়া কড়া কথা (সাম্রাজ্যবাদের তাঁবেদার, পুতুল সরকার, অসাংবিধানিক, মানবাধিকার-গণতন্ত্রের দুশমন)বলে চলেছেন। ইনসিডেন্টালের ভাষ্য অনুযায়ী,সে তুলনায় বাসদ ‘মিউ মিউ’ করছে। তাহলে এখন দেশের সবচেয়ে জনদরদী বা বিপ্লবী শক্তি জামাত বা ফরহাদ-মাহমুদুররা!
এখানে বলে রাখি, আমার এ আলোচনা ইনসিডেন্টালের গালিগালাজের জবাব দেওয়ার জন্য নয়। ইতোমধ্যে বেশ কিছু মানুষ এখানে আলোচনায় শামিল হয়েছেন। ব্লগে কোনো মন্তব্য লেখেননি, কিন্তু ওনার এ লেখাটা পড়েছেন, আবার বাসদ সম্পর্কে কাছ থেকে জানেন না, এমন পাঠকও আছেন। ফলে সকলের কাছে একটা জবাব, প্রেসকনফারেন্স করে না হলেও, আমি ব্যক্তিগতভাবে দেওয়ার তাগিদ অনুভব করছি।
আমি রাজনৈতিক দিক থেকে বিবেচ্য যে প্রশ্নগুলো তুললাম, এ সম্পর্কে আমার পরবর্তী লেখায় ব্যাখ্যা দেয়ার চেষ্টা করব। আজকে শুধু এটুকু বলে শেষ করি, বাসদের ‘সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাব’- যা আদৌ বাসদ করেনি, সে প্রসঙ্গে ইনসিডেন্টাল রাশেদ খান মেনন সাহেবের কথা উল্লেখ করেছেন। মেনন সাহেব একজন বামপন্থী রাজনীতিবিদ, কিন্তু গত তিন বছর ধরে তারা কি রাজনীতি করছেন? বাসদের দেড় বছরের ভূমিকায় যিনি ‘হতাশ’ ‘বিভ্রান্ত’ এবং ‘ক্ষুব্ধ’– মেনন সাহেবের সমালোচনা সম্ভবত উনাকে খানিকটা মলম দিয়েছে।
খুব সহসাই আপনাদের সাথে দেখা হবে। সবাই ভাল থাকুন।
ইনসিডেন্টাল ব্লগার - ২২ জুলাই ২০০৮ (১০:২৩ পূর্বাহ্ণ)
নাঈম:
উপরে মন্তব্য ২২ এর আওতায় আপনার এ দু’টি মন্তব্যেরই (২২ এবং ২৫) প্রত্যুত্তর দেয়া হয়েছে IB এর পক্ষ থেকে। বাকী বিষয়গুলোর উপর আলোকপাত করেছেন Ashmita মন্তব্য#২৮ এ এবং এই পোস্টের আলোচনায় অন্যান্য ব্লগাররা। উপর থেকে প্রতিটি ধরে ধরে পড়ে নিচে scroll করুন।
-ib
ইনসিডেন্টাল ব্লগার - ২২ জুলাই ২০০৮ (৩:২৩ অপরাহ্ণ)
নাঈম:
দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিত এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে মার্কসবাদে বিশ্বাসী, শ্রমিক-শ্রেণীর রাজনীতি করে — এমন একটি দল বা দলগুলোর কি করণীয়, এখন সে দল বা দলগুলোর লাইন-অব-একশন কি হওয়া উচিত — সে সম্পর্কে এক বিন্দু আলোচনা করলেন না। শুধু বাসদের বিরুদ্ধে কতগুলো অভিযোগ, অনুযোগের ফিরিস্তি . . .
===
‘এক বিন্দুর’ চেয়ে বোধ করি কিছু বেশীই আলোচনা করা হয়েছে উপরে। অন্তত মন্তব্য#৭ এর আওতায় বেশ অনেকটা তো লেখার চেষ্টা করেছিই, শান্ত’র যুক্তির প্রত্যুত্তরে! আপনার চোখে পড়েনি বোধহয়।
সহজ কথন - ২১ জুলাই ২০০৮ (৬:২২ পূর্বাহ্ণ)
সুমনকে ধন্যবাদ তাঁর সুন্দর মন্তবের জন্য। বাসদ এর সাহিত্য রুচির ধারা ও এর মৌলবাদী চিন্তা প্রবণতা নতুন না। জ্দানভ্ এদের গুরু। ইতিহাসে নজির আছে, এরা কিভাবে কালজয়ী কবিতা, উপন্যাস, চলচ্চিত্র ইত্যাদি শ্রমিক শ্রেণির বিপক্ষে, রাষ্ট্রের বিপক্ষে গণ্য করে বাতিল করেছে, অত্যাচার করেছে। এ উপমহাদেশে এদের গুরু শিবদাস ঘোষ। কোনো রকম ব্যাখ্যা, যুক্তি ছাড়াই যিনি বলেছেন, রবীন্দ্রনাথ বাজে কথার ফুলঝুড়ি চাষ করেছেন, শরৎচন্দ্রের শিল্পশৈলী গোকির চেয়ে উন্নত ইত্যাদি ইত্যাদি। এদের আরেকটি গুণ– সব সময় ষড়যন্ত্রের গন্ধ খুঁজে বেড়ায়, সমালোচনা, ভিন্নমত সহ্য করতে পারে না (শান্তর মন্তব্য- আহমেদ মুনির,
আমিও জানিনা কে এই লেখক, জানিনা কে আপনি, কারা আপনারা, কাদের এই ব্লগ??
শুধু এটুকু বুঝলাম- আপনাদের কেউ কেউ বাসদের পেছনে উঠে পড়ে লেগেছেন, আর কেউ কেউ সমানে বাহবা দিচ্ছেন ! যেমন বাসদের কল্পিত মুখোশ খুলতে পেরে আপনার কত উল্লাস!!!)
প্রতিক্রিয়াশীলদের চিনতে আমাদের কষ্ট হয় না, কিন্তু প্রগতির নামধারী প্রতিক্রিয়াশীলদের চিনতে আমাদের অনেক দেরি হয়। ধন্যবাদ।
সুব্রত - ২১ জুলাই ২০০৮ (১০:০১ পূর্বাহ্ণ)
“কোনো রকম ব্যাখ্যা, যুক্তি ছাড়াই যিনি বলেছেন, রবীন্দ্রনাথ বাজে কথার ফুলঝুড়ি চাষ করেছেন”
আমার যতদূর মনে পড়ে শিবদাস ঘোষ শেষের কবিতার সমালোচনা করতে গিয়ে সেখানকার চরিত্র, তাদের সম্পর্কের ধরণ এবং পরিণতির আলোচনা সেরে, যুক্তি উত্থাপন করে- “বাজে কথার ফুলঝুড়ি চাষ করেছেন” এমন উক্তি করেছেন। কোন রকম ব্যাখ্যা, যুক্তি ছাড়াই বলেছেন এমন নয়।
কিন্তু আপনারাও যে দলভেদে মিথ্যে বলছেন, তারই বা কারণ কি? মিথ্যা প্রমাণ হয়ে গেলে সুর পাল্টে ফেলছেন। ইন্সডেন্টাল ব্লগারও তাই করছেন অহরহ। মুনির ভাইতো মাত্রই পাল্টালেন।
আরও বলেছেন- “এদের আরেকটি গুণ– সব সময় ষড়যন্ত্রের গন্ধ খুঁজে বেড়ায়, সমালোচনা, ভিন্নমত সহ্য করতে পারে না (শান্তর মন্তব্য- আহমেদ মুনির”
মিথ্যাচারকে সমালোচনা বলে না জনাব সহজ কথন। তা ষড়যন্ত্রই। এক কথা বার বার বলতে ইচ্ছে করছে না। আপনি উপরের একটা উদাহরণ দেখে নিন।-
7. ইনসিডেন্টাল ব্লগার ~ লিখেছেন:
জুলাই 14th, 2008 তারিখ, সময়: 5:48 অপরাহ্ণ
@ শান্ত # ৬
আরো চাইলে বলুন উপরের আলোচনা থেকে তুলে এনে এনে দেখাই। কারো চোখ না থাকলে তাকে সহযোগীতা করতে আপত্তি নাই।
রেজাউল করিম সুমন এবং আহমেদ মুনির, আপনাদের কাছ থেকে এমন আলোচনাই আশা করছিলাম। আশা করি আপনাদের আবেগটুকু আরও ভালোভাবে বোঝার সুযোগ হবে। নিজের বুঝটাও আর একবার ঝালিয়ে নেয়া যাবে। ধন্যবাদ সবাইকে।
সহজ কথন - ২১ জুলাই ২০০৮ (১:০৩ অপরাহ্ণ)
কোনো রকম ব্যাখ্যা, যুক্তি ছাড়াই যিনি বলেছেন, রবীন্দ্রনাথ বাজে কথার ফুলঝুড়ি চাষ করেছেন, শরৎচন্দ্রের শিল্পশৈলী গোকির চেয়ে উন্নত ইত্যাদি ইত্যাদি।–
আপনার কাছ থেকেও কোন ব্যাখ্যা নেই, সুব্রত সাহেব। আমাদের সুবিধার জন্য আপনার নেতার বিশ্লেষণ কি তুলে ধরবেন। গোকি নিয়ে দেখি আপনার কোনো মন্তব্য নেই!!!
মিথ্যাচার কারা করে, এখানে কারা করছে তা পরিষ্কার আমাদর কাছে। পরিষ্কার না হলে, চেষ্টা করব পরিষ্কার করার জন্য, ষড়যন্ত্রের গন্ধ খুঁজব না।
মুনির সাহেব পাল্টালেন– এটি আপনার কিভাবে মনে হলো? উনিতো আপনাদের সাহিত্য রুচির একটা মাত্র উদাহরণ দিলেন (মুখোশ উন্মোচণ)।
সুমন সাহেবের মন্তব্য — ” শিবদাস ঘোষ শরৎচন্দ্রের লেখা পছন্দ করতেন। মানিক মুখোপাধ্যায়ও করেন। খালেকুজ্জামানও করেন। করেন মবিনুল হায়দার চৌধুরীও। আর তাই তাঁদের দলের আর সকলেও করেন! রুচির এই বিস্ময়কর ঐক্য কি নিতান্তই কাকতালীয়, না কি কোনো বিশেষ প্রক্রিয়ার মধ্যে প’ড়ে তাঁরা সমরুচির ধারক হয়ে ওঠেন? ‘পথের দাবী’ কি সত্যিই উচ্চাঙ্গের উপন্যাস? এ কালের বিপ্লবীদের অনুপ্রাণিত করার মতো আর কোনো উপন্যাস বাংলা সাহিত্যে নেই? দূরবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে খুঁজেও কি একজন বামপন্থী লেখক খুঁজে বের করা গেল না এত দিনেও?”
এই একটি প্যারা বলে দেয়, কিভাবে আপনাদের সাহিত্য রুচি ও মনন নিয়ন্ত্রিত হয়।
@ পথিক
আমাকে একটু বলবেন কি, কেন বাসদ এর সবাই (?) শরৎচন্দ্রের লেখা পছন্দ করে? ” মৌলবাদী চিন্তা প্রবণতা” সম্পকে এর পরে লিখব, যদিও সুমন সাহেবের লিখায় অনেক চলে এসেছে। ধন্যবাদ।
ইনসিডেন্টাল ব্লগার - ২১ জুলাই ২০০৮ (২:০১ অপরাহ্ণ)
ADMIN এর দৃষ্টি আকর্ষণ:
আমার কমেন্ট রেকর্ডে দেখা যাচ্ছে যে এই পোস্টে মন্তব্যকারী পথিক এবং মন্তব্যকারী সুব্রত দু’জন একই ব্যাক্তি।
মুক্তাঙ্গনের এ সংক্রান্ত নীতিমালা স্পষ্ট করার অনুরোধ জানাচ্ছি। আমি মনে করি এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনায় এধরনের অসৎ ও সন্দেহজনক আচরণ আলোচনার অবাধ প্রবাহকে ব্যাহত করে একে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে manipulate করার কাজে ব্যবহার করা হতে পারে, যা ব্লগের সুস্থ ও মুক্ত আলোচনার পরিবেশের অন্তরায়। ২৬ ও ২৭ নম্বর ঘরের আলোচনাকারী ‘পথিক’, ‘সুব্রত’, এবং ‘সহজকথন’ এর মধ্যে আলোচনার দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করছি (মন্তব্যের সময়কাল লক্ষ্য করুন)। সেইসাথে দৃষ্টি আকর্ষণ করছি সংশ্লিষ্ট ইমেইল এবং আই পি এড্রেসের প্রতি।
এটি স্পষ্ট নয় প্রশ্নকারী ‘পথিক’ একই ব্যাক্তির (‘সহজকথনের’) সাথে আলোচনায় কেন দু’টি ভিন্ন ভিন্ন পরিচয় (‘পথিক’ এবং ‘সুব্রত’) ব্যাবহার করছেন ! উল্লেখ্য, সুব্রত ওরফে পথিক হচ্ছেন উচ্চাঙ্গ নৈতিকতার অধিকারী সেই মন্তব্যকারী যিনি সম্প্রতি উক্তি করেছেন (মন্তব্য#২৫ অলকেশের প্রত্যুত্তরে):
১। “এরকম অসংস্কৃত, অভব্য এবং কুরুচিপূর্ণ লেখার জবাব দেয়ার প্রয়োজন আমি কখনই বোধ করিনি”, [ব্লগপোস্ট সম্বন্ধে] যেটিকে তিনি অভিহিত করেছেন “অভব্য আলোচনা” হিসেবে।
২। “যদি সভ্যতার কোন স্পর্শ পেয়ে থাকিতো এই দলটার কাছেই পেয়েছি”। [বাসদ তথা সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট প্রসঙ্গে ]
সুব্রত - ২২ জুলাই ২০০৮ (৪:৪৯ পূর্বাহ্ণ)
ভালোই নোংরামি শুরু হয়েছে দেখছি। 27 এর পথিক আমি হই কি করে? আমিও ADMIN এর দৃষ্টি আকর্ষণ করিছ। আপনি আমাকে মেইল করে জানিয়েছেন, এখানে দেয়া ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশ করা হয় না। তাহলে আমার মেইলিং আইডি 27 নং-এর উত্তরকারী পেলেন কি করে? আর ইন্সিডেন্টাল বব্লগারই বা তা আগাম জানতে পারলেন-ই কি করে? আমিতো এই তথ্য পাচ্ছি না, যে আমার মেইল আই ডি ব্যবহার করে 27 নং-এর জন উত্তর করেছেন। ইন্সিডেন্টাল ব্লগার কি আপনার কাছের জন? আমিতো আমার আর পথিকের সময়ের দিকে তাকিয়েও কোন clue পাচ্ছি না।
মুক্তাঙ্গন - ২২ জুলাই ২০০৮ (১০:৫২ পূর্বাহ্ণ)
সুব্রত:
>ইন্সিডেন্টাল ব্লগার কি আপনার কাছের জন?
>>মনে হচ্ছে আপনি site admin এর সাথে individual post writer দের গুলিয়ে ফেলছেন। মুক্তাঙ্গন একটি community blog platform (eg, shachalayatan, somewherein, drishtipat),,,,,কোন একক ব্লগারের personal blog না [যেমন mash, shadakalo, dhaka shohor]। তাই যে কোন পোস্টের বক্তব্য পোস্ট লেখকদের নিজের, দায়দায়িত্বও তাদের,,,,মুক্তাঙ্গন সেখানে responsibility share করেনা বা বাধ্য না হলে interfere করেনা। বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ,,,, free speech এর স্বার্থে।
>27 এর পথিক আমি হই কি করে? আমিও ADMIN এর দৃষ্টি আকর্ষণ করিছ।
>>IP address, email, host, location ইত্যাদি তথ্য অনুযায়ী ১২ এর “pothik”, ২৬ এর “সুব্রত” এবং ২৭ এর “পথিক” কে একই ব্যাক্তি মনে করার কারণ: (i) ১২ এবং ২৬ এর ইমেইল আইডি এক (ii) ১২ এবং ২৭ এর নাম এক, কেবল ভিন্ন ভাষার হরফে লেখা, (iii) ১২, ২৬, ২৭ তিনজনেরই আই পি এড্রেস একই সিরিজের এবং তাদের physical location এক, যা কাকতালীয় ভাবে মিলে যাবার সম্ভাবনা কয়েক বিলিয়নে একবার। [এ বিষয়ে অবশ্য আসল pothik নীচে একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন, সেটি দ্রষ্টব্য]।
>আপনি আমাকে মেইল করে জানিয়েছেন, এখানে দেয়া ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশ করা হয় না।
>>হয়নি, এবং এ বিষয়ে আমরা অত্যন্ত serious। আপনার sensitive ব্যাক্তিগত তথ্য মুছে ফেলে তবেই IB এর complaint রিলিজ করা হয়েছে। আপনার মত তিনিও এবিষয়ে Site Admin থেকে email পেয়েছেন।
>তাহলে আমার মেইলিং আইডি 27 নং-এর উত্তরকারী পেলেন কি করে?
>>২৭ এর উত্তরকারী আপনার (“সুব্রত”) মেইলিং আইডি ব্যবহার করেনি, তবে তিনি আপনার বন্ধু pothik এর নাম ব্যবহার করেছেন ‘পথিক’ হিসেবে। তবে তিনি এ বিষয়ে সচেতন ছিলেন না যে, এভাবে আই পি এড্রেস বা physical location লুকোনো যায়না। কারণ মন্তব্য ২৬ এবং ২৭ “পথিক” এবং “সুব্রত”কে একই আই পি location এ দেখাচ্ছে আমাদের রেকর্ডে, যার details আপনাকে ইতোমধ্যে ইমেইল করে পাঠানো হয়েছে।
>আর ইন্সিডেন্টাল বব্লগারই বা তা আগাম জানতে পারলেন-ই কি করে?
>>উপরের উত্তর দেখুন। আগাম জানেন নি। আপনি মন্তব্য করার পরই শুধু জেনেছেন। ব্লগ প্লাটফর্ম যেভাবে কাজ করে ঃ flooding, harassment এবং নিরাপত্তার স্বার্থে মন্তব্যকারীদের ব্যপারে কিছু কিছু তথ্য (IP address, email address, hostname, address, location) দু’ধরণের user পারেন access করতে : তারা হলেন site administrator এবং পোস্ট লেখক নিজে। পোস্ট লেখকদের জানার অধিকার আছে কারা তাদের লেখায় কমেন্ট করছেন।
>আমিতো এই তথ্য পাচ্ছি না
>>মন্তব্যকারীদের এসব তথ্যে access নেই, যুক্তিসঙ্গত কারণেই।
আশা করি আপনার প্রশ্নের উত্তর পেয়েছেন। আরো কিছু জিজ্ঞেস করার থাকলে ইমেইল করুন। ঠিকানা:nirman.admin@gmail.com
ধন্যবাদ।
pothik - ২২ জুলাই ২০০৮ (৩:৫৪ অপরাহ্ণ)
blog admin vai apni bodhoy gulie flechen. ami pothik(choddo nam). ami apnake ei mail id theke mail korchi, namta check kore neben.
ami r subrata bondhu, class met, business partner, eki office-e boshi, ebong oder rajniti kinchit jani. amader mailing id-r nick ek(valo kore kheyal koren, vinno kichu paben) amader others partner-dero, eta amader business indentification. amra eki shathe thaki fole bujhtei parchen ip ek hobe, (you are welcome here to visit us).
tobe 27 no. er bangla pothik r ami ek na. er majhe ekhane ami kichui likhini ar ami banglay likhte asholei jhamelay porchi, fole banglay lekharo prosno ashe na, jeta 27 no.-e lekha hoyeche. please check it. ebong asha kori ekhanei porishkar korben, karon eta maan haanikor (apni chaile aro proof nite paren.)
পথিক - ২১ জুলাই ২০০৮ (৯:২৯ পূর্বাহ্ণ)
“বাসদ এর সাহিত্য রুচির ধারা ও এর মৌলবাদী চিন্তা প্রবণতা নতুন না।”বাসদ এর মৌলবাদী চিন্তা প্রবণতা গুলো বিস্তারিত বলবেন কি?
অস্মিতা - ২১ জুলাই ২০০৮ (১:৫০ অপরাহ্ণ)
প্রথমেই মুক্তাঙ্গনকে ধন্যবাদ দেবো এরকম সময়োপযোগী একটি বিষয়ে আলোচনা-সমালোচনার সূত্রপাত করার জন্য। দ্বিতীয় ধন্যবাদটি ইনসিডেনটাল ব্লগারের প্রাপ্য। যে কথাগুলো অনেকদিন ধরে মনে মনে ভেবে ক্ষুব্ধ এবং ব্যথিত হয়েছি, তার কয়েকটি অত্যন্ত স্পষ্ট ভাষায় সাহসের সাথে উচ্চারনের জন্য। নানা কারনেই এই পোস্টটি লিখতে হচ্ছে একটু ভয়ে ভয়ে। কেন ভয় পাচ্ছি তা খোলাসা করে বলি। আমাদের এই দুর্ভাগা দেশে কোনো রাজনৈতিক দল সম্পর্কে যে কোন ধরনের সমালোচনায় অংশগ্রহণ করা প্রায় সবসময়ই বিপদজনক। রাজনৈতিক পান্ডাদের হুমকি ধামকি, নানা পদের, রঙের, এবং দর্শনধারী মৌলবাদীদের আক্রমন এবং সেই সঙ্গে নতুন অনুষঙ্গ হিসেবে যোগ হয়েছে জলপাইধারীদের দৌরাত্ম। এই সময় হয়তো নিরবতাই অনেক বেশী স্বাস্থ্যকর বিশেষ করে আমাদের জন্য যারা সরাসরি কোন রাজনৈতিক দলের লেজুড় ধরবার সৌভাগ্য এখনো অর্জন করে উঠতে পারিনি। যাই হোক – শুরুতেই ইনসিডেনটাল ব্লগার এর একটি সমালোচনা না করে পারছিনা। তিনি জনাব কমরেড খালেকুজ্জামান এর সাহিত্য সমালোচনার যোগ্যতা এবং অধিকার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন । একেবারেই উচিত হয়নি। রাজনীতিবিদদের সাহিত্য অনুরাগ থাকতে পারবেনা এমন কোনো নিয়ম নেই। এমনকি আমাদের চেনাজানার মধ্যেই এমন উদাহরণ বিরল নয়। আমাদের সাবেক প্রেসিডেন্ট হো মো এরশাদের “প্রবল” সাহিত্য অনুরাগ ছিলো বলে জানি। এমনকি বুশ মোশাররফ ইত্যাদিও যে গোপনে দু’ একটি কবিতা পড়েন না এমন কথা হলফ করে কেই বা বলতে পারে? আর সে বিচারে কমরেড খালেকুজ্জামান তো নিঃসন্দেহেই অনেক বেশী যোগ্যতাসম্পন্ন। তিনি তো একাধারে দার্শনিক, সমাজবিদ, চিন্তাবিদ, শিক্ষাবিদ। এহেন মাথাভারী (প্রশংসা অর্থে) বহুমুখী প্রতিভার (রবীন্দ্রনাথের পরে দ্বিতীয়) অধিকারী বিজ্ঞ ব্যাক্তির যোগ্যতা সম্পর্কে প্রশ্ন তোলা নিশ্চয়ই ধৃষ্টতারই নামান্তর। তাঁর কাছ থেকে (এবং তার শিষ্যদের কাছ থেকেও) কবিরা ছন্দ এবং আনুষঙ্গিক বিষয়ে দীক্ষা নেবেন , নিজের চিন্তাভাবনা মেধা ও মননকে তাঁর আদর্শের ধারায় সিক্ত করে খাঁটি কবি, খাঁটি মানুষ , খাঁটি সমাজতন্ত্রী হিসেবে গড়ে উঠবেন এতে আর অস্বাভাবিক কি আছে?
জনাব কমরেড খালেকুজ্জামান এর শিষ্যদের একজনকে দেখলাম লিখেছেন ঃ
এটি পড়ে সত্যিই ভারী চিন্তা হল। ছত্রে ছত্রে “গণবিপ্লবের” রণহুন্কার না দেওয়া যদি কবির অপরাধ (কিংবা ঘাটতি) হয়ে থাকে তবে রবীন্দ্রনাথ এবং জীবনানন্দ সম্পর্কে এই প্রতিভাধারীদের মূল্যায়ন কি হবে তা ভাবতেও ভয় হয়। অবশ্য এই বিষয়ে আমার আরেক প্রিয় লেখক আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের সম্পর্কে এই দলের নেতাদের ধারনা আহমদ মুনির এর মন্তব্য থেকে খানিকটা স্পষ্ট হয়েছে।
আমার মনে হয়, সবচাইতে ভাল হোতো যদি জনাব কমরেড খালেকুজ্জামান বাসদ কর্তৃক প্রকাশিত তাঁর দীর্ঘ চটিসিরিজের তালিকায় “সমাজতন্ত্রবান্ধব সাহিত্য লিখিবার অ আ ক খ” শীর্ষক আরেকটি সুচিন্তিত ও সুলিখিত চটি যুক্ত করতেন। সেখানে তিনি “ধরে ধরে দেখিয়ে দিতে পারতেন” কিভাবে লিখলে একজন কবি সত্যিকারের সমাজতন্ত্রের “পুল সেরাত” পার হতে পারবেন কিংবা তার লেখায় কোন “উপলদ্ধির ঘাটতি” থাকবেনা। তাতে যে শুধু তাদের অবস্থানটিই স্পষ্ট হোতো তা নয়, আমরাও জানতাম কোন কবিতাটি কিভাবে লেখা উচিত বা পড়া উচিত সমাজতান্ত্রিক বিবেকের “বাসদীয় দংশন” ছাড়া। এমনকি, সম্ভবত আরো ভালো হোতো যদি চারণ এর একটি সেল খোলা যেত যেখানে ধরুন কবি সাহিত্যিকেরা (নতুন এবং পুরনো) তাদের লেখা পাঠাতেন বাসদের “হ্যাঁ না” সীলের জন্য। শ্রেষ্ঠ বাসদীয় সমাজতন্ত্রী কবিকে দেওয়া হোতো “মার্কসীয় সাহিত্য পদক”।
আজকাল কে কতটুকু মুসলমান তার পরীক্ষা দিতে হয় জামায়াতী ইসলামের কাছে। আমাদের সৃজনশীল মানুষেরা না হয় সমাজতন্ত্রী হওয়ার পরীক্ষা দেবেন বাসদের কাছে। আমি কোনো বিচারেই সাহিত্যবিশারদের পর্যায়ে পড়িনা তবে রাজনৈতিক বিষয়ে অন্য দশজন সাধারন মানুষের মতো যতটুকু বুঝি তা থেকে বিনীতভাবে কিছু প্রশ্ন তুলতে চাই।
আপনাদের একজন লিখেছেন (শান্ত:৭)) সরকারের বর্তমান ভূমিকায় নেতাকর্মীরা আত্মহারা নন। এমনকি একজন (সুব্রত:২৪) এই দাবীও করেছেন যে সবচাইতে নাকি ভালো হয় জলপাই শাসনকে এই মুহুর্তে উল্টে ফেলতে পারলে। সেই জলপাই সমর্থিতদের কাছে তবে দাবী দাওয়ার ফর্দ নিয়ে উপস্থিত হয়েছিলেন কিসের আশায়? আপনাদের এই পদক্ষেপটি কি এই অসভ্য অগণতান্ত্রিক শাসনকে পরোক্ষ বৈধতা দেয়না? একধরনের acceptance দেয়না? যাদের কাছে নাকি এমনকি “বন্যা নিরোধের ব্যাপারেও কার্যকর কোন পদক্ষেপ আশা করাটা বাতুলতারই নামান্তর” (শান্তঃ ৭) তাদের কাছে দাবী দাওয়া উপস্থাপনের সময় কি প্রত্যাশা করেছিলেন? এই বিষয়ে অত্যন্ত কৌতুককর একটি যুক্তি দিয়েছেন শান্ত (৭):
কি অসাধারন যুক্তি !! এই সেনা সমর্থিতদের সাথে নির্বাচন সংলাপ করে জনগণের “কাছাকাছি” যাওয়া যাবে !! এত বছর রাজনীতি করে এই শিখলেন? সত্যি? এই সেনা সরকারের অধীনে নির্বাচনে জনগন “আস্থাশীল” এই তথ্য আপনাদের কে দিল? সত্যি বড় অবাক হলাম , চিন্তিতও হলাম। বহুমূখী প্রতিভার অধিকারী জনাব কমরেড খালেকুজ্জামান জনসমর্থনের কোন প্রত্যক্ষ পরীক্ষায় কখনো উত্তীর্ণ হয়েছেন কিনা আমার জানা নেই। যতদূর জানি বাসদ আদর্শের রাজনীতি করে – তথাকথিত ভোটের রাজনীতি নয়। তাই যদি সত্যি হয়, তবে কোন আদর্শের ভিত্তিতে সেনা সমর্থিত সরকারের সাথে এক টেবিলে হাসি হাসি মুখে বসে গেলেন আলোচনা করতে? দাওয়াত পেলেই কি স্যালুট ঠুকে ছুটে যেতে হবে? এত দৈন্য কেন? যে ফর্দটি নিয়ে গিয়েছিলেন তা কি সংবাদ সম্মেলন করে জনগণের কাছে পৌঁছাতে পারতেন না? রাজপথে না হয় নাই নামলেন।
অবশ্য জনাব নাঈম ইংগিত দিয়েছেন (নাঈমঃ ২৫) তা করলে ফরহাদ মযহার, মেনন ইত্যাদির সাথে তাদের বক্তব্য নাকি মিলে যেতো । কি আশ্চর্য ! মেনন বলেছেন বলে খালেকুজ্জামান বলবেন না – হায় রে ! তবুও নাীম সাহেবকে ধন্যবাদ অন্তত আমাদের কৌতুকের অভাব খানিকটা মিটিয়েছেন বলে। আমি এই আলোচনাটিতে সম্তবত কোনদিনই অংশগ্রহন করতাম না। করতে বাধ্য হলাম একটি বিশেষ কারনে। আমার অত্যন্ত প্রিয় কিছু মানুষ একসময় এই দলটির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন, যাদের প্রত্যেকেই এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের সেই দিনগুলোতে ছিলেন রাজপথে সকল বিপদ নিপীড়নকে উপেক্ষা করে। বাসদ যখন এই বিবেকহীন সরকারের সাথে স্মিতমুখে আলোচনার টেবিলে, তখন সেই প্রিয় মানুষগুলোর চেহারায় যে বেদনা গ্লানি আর লজ্জার ছায়া দেখেছি তা সম্ভবত দীর্ঘদিন আমার সংগে থাকবে। তাদের সেই বেদনার কথাটি জানানো আমার দায়িত্ব বলে মনে করেছি। নেত্ৃত্বের ব্যার্থতায় ত্যাগী নেতা কর্মীদের যে গভীর বেদনা তার খানিকটা কাছ থেকে দেখবার দুর্ভাগ্য হয়েছিল বলেই এই মন্তব্যটি দিলাম।
দেশের বড় দলগুলোর নেতৃত্বের ভূল ত্রুটি নিয়ে সমালোচনা আপনারা রোজ দু বেলা আনন্দের সাথে করেন অথচ নিজেদের নেতৃত্বের সমালোচনাটুকু নিতে পারলেন না – “বিশেষ উদ্দেশ্য” আবিস্কার করে ফেললেন, দুঃখটা সেখানেই । আমি বিশ্বাস করি জনাব কমরেড খালেকুজ্জামান সাহিত্য সমালোচনা করতেই পারেন । কিন্তু তার এই নিতান্ত ব্যাক্তিগত অভিমতের চশমাটি যখন অবশ্যম্ভাবীভাবে তাঁর কর্মীরা প্রায় বেদবাক্য বলে প্রায় সবসময় ধারণ করে তখন শলখভ এর অভিজ্ঞতাটি আবারো মনে পড়ে যায়।
আপনাদের ব্যাক্তিগত জীবনের জন্য রইল অজস্র শুভকামনা । এ দফায় রাজনৈতিক জীবনের শুভকামনা করতে পারছিনা বলে আন্তরিকভাবে দুঃখিত।
mosharrof - ২২ জুলাই ২০০৮ (৯:২৫ পূর্বাহ্ণ)
(লেখার ফন্ট ঠিক করা হলো।)
কিছুদিন ধরে উপরোক্ত আলোচনা চলছে। সকলে যেহেতু একই চিন্তার নন এবং মুক্ত চিন্তার সেহেতু এখানে পক্ষ বিপক্ষ আসার কথা ছিল না।
কিন্তু বাস্তবতা এমন একটি জায়গায় দাঁড় করিয়েছে আমাদের যে আমরা কোন না কোনভাবে একটা পক্ষে পড়ে যেতে পারি।
তবে আমার মতো আরো কয়েকজন ইতিমধ্যে বাসদ কর্মী হিসেবে অপবাদ নিয়েছেন! তবে বাকীদের একটা সুবিধে আছে তাদের সকেল একই চিন্তার ধারক নন। আলোচনায় অনেকে তাদের বাসদ বিরোধী কিংবা বিদ্বেষী হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। কিন্তু আমাদের দেশের বাস্তবতায় তাদের কেহ ধনীর শাসন চান বা ধনীর দলের সমর্থক এমন আমার মনে হয় নি। ফলে আলোচনার ভারকেন্দ্র হতে পারে কোন একজনের আলোচনায় যে এসেছে, ”আমরা প্রতিক্রিয়াশীলদের বিরুদ্ধে প্রগতির লড়াইয়ের প্রয়োজন বোধ করি।” এটা মনে হয় আলোচনার ভিত্তি হতে পারে।
আর সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা নিয়ে যারা স্বপ্ন দেখেন তাদের সাথে যারা দেখেন না তাদের একটা মৌলিক তফাৎ তো থাকবেই! ফলে শুরুতে যে বিষয় নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে তার কী কী বিষয় ইতিমধ্যে মীমাংসা হয়েছে তা আমরা দেখতে পারি।
প্রথমত বাসদের পক্ষ থেকে কমরেড খালেকুজ্জামান যে বিষয়ে লিখেছেন তা নিয়ে যে আপত্তির সুর উঠে এসেছিল সে বিষয়ে সবাই একমত যে এ ধরনের আলোচনা করার গণতান্ত্রিক অধিকার তার আছে। আরেকটু ভাল হতো যদি আমরা একমত হতে পারতাম রাজনীতি যারা করেন তাদের সাহিত্য, সংস্কৃতি সম্পর্কে আলোচনাকে সবাই সাগ্রহে গ্রহণ করতে পারতেন। স্বৈরাচারী এরশাদ এমন কি বুশ এর সাহিত্য প্রীতি বা আলোচনা করার উদাহরণ দিয়ে একজন লেখক কমরেড খালেকুজ্জামানের সাহিত্য নিয়ে আলোচনা করার অধিকার আছে, এভাবে অবতারণা করার মধ্য দিয়ে সকল ধরনের রাজনীতিকে তিনি একভাবে দেখেন কি না সে প্রশ্ন আসতে পারে। যেহেতু মুক্তাঙ্গণ নামের সাথে রাজনীতির সরাসরি সম্পর্ক আছে সেক্ষেত্রে ধরে নিতে পারি মানুষের সার্বিক মুক্তির আকাংখার রাজনীতি আর লুটপাটের রাজনীতিকে এখানে পৃথক করে দেখা হবে।
ফলে বাংলাদেশে সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনে যে সব রাজনৈতিক দল কাজ করে সেখানে বাসদ সাহিত্য সংস্কৃতি বিষয়ে সচেতনভাব কাজ করার প্রয়োজন বোধ করে। যদিও যেভাবে বাসদ কাজ করে তা নিয়ে বিতর্ক অবশ্যই প্রাসিঙ্গক।
আলোচনায় আর একটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে এসেছে তা হলো অনেকের চিন্তাকে আমরা ব্যক্তিগত চিন্তা হিসেবে দেখছি। আসলে এ ধরনের চিন্তা আরো অনেকের আছে।
ধরুন শরৎ সম্পর্কে বাংলাদেশের সাহিত্য পাঠকদের মধ্যে সাধারণ ভাবনা কি এ রকম যা ইনসিডেনটাল পথের দাবী সম্পর্কে করেছেন। এ বিষয়ে আপনারা হয়তো একমত হবেন বাংলাদেশের সাহিত্য পাঠকদের কাছে শরতের গ্রহণযোগ্যতা যেটুকু আছে তা বাসদ তৈরি করেনি। বরং শরৎ সাহিত্য তার স্বমহিমায় তৈরি করেছে আর কমেরড শিবদাস ঘোষের শরৎ মূল্যায়ণ যা বাসদের কর্মীদের পড়ার জন্য উৎসাহিত করা হয় তা পড়ে কতজন সে মতের সাথে একমত হোন তার কোন জরীপ বাসদ রাখে এমন নয়। আবার অনেক আলোচক পথের দাবী ছাড়া আর কোন পাঠ্য বাসদের কর্মীদের নেই এ ধরনের অজ্ঞতাপ্রসূত ধারণা নিয়ে যে বিতর্ক করছেন এটাও আলোচনা করায় বাধা তৈরি করছে। এটা আপনারা নিঃসন্দেহ হতে পারেন যে রবীন্দ্র-নজরুল, আখতারুজ্জামান ইলিয়াসসহ আরো কিছু দেশি-বিদেশি লেখকের নানা বিষয়ের বই পাঠ্যতালিকায় আছে এবং এমন নয় যে এর বাইরের লেখা বাসদ কর্মীরা পড়েন না।
আপনাদের অনেকেই হয়তো অবগত যে, 1980 সালে বাসদের প্রতিষ্ঠা। ফলে পারিবারিকভাবে এ দলের সাথে সম্পৃক্ত হয়েছেন এমন সদস্যও বিরল। ফলে যারা বাসদ করছেন তারা জন্ম থেকে এমন কোন পরিবেশ পান নি যা তাদেরকে একই চিন্তার অন্ধত্তে পতিত করবে। আবার দলের সাথে যুক্ত শিক্ষার অধিকার বঞ্চিত কৃষক-শ্রমিকদের কোন ধরনের সাহিত্য পড়ার অবকাশ প্রায় ঘটেই না। ফলে শিক্ষার সাথে সম্পর্কিত বাসদ কর্মীদেরই এ বিষয়ে একটা ধারণা গড়ে ওঠার বাস্তবতা আছে।
আর প্রধানত কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসেই নানা আন্দোলনে তাদের সাথে এ দলের পরিচয় ঘটে। তার পূর্বে তারা অন্যদের মতোই রাজনীতিবমুখ কিংবা সাধারণ একজন ছাত্র হিসেবেই নিজেকে পরিচয় দেয়। তাহলে দল করতে এসে যারা সাহিত্য নিয়ে দলের চিন্তাকে ঠিক মনে করেন তা একটা যুক্তিবোধের ভেতরেই গড়ে ওঠে। আর একটা সুযোগ থাকতো যদি দলের নেতাদের কাছে সুবিধা নিয়ে আমরা কর্মী হতাম তাহলেও হয়তো আমরা তাদের তোষামোদী করতাম। সম্মানিত আলোচকদের অনেকই এ বিষয়ে আশা করি একমত হবেন।
তাহলে যে কর্মীরা বাসদের চিন্তা গ্রহণ করেছেন সে চিন্তা আপনারা যারা দল করেন না তাদের চিন্তার মতোই একটি চিন্তা। আপনাদের চিন্তাও কী সমাজ থেকে উদগাত নয়? না কি সেটা আপনাদের কারো কারো আবিস্কার? অবশ্য কারো যে নতুন কোন কথা থাকতে পারে না তা নয় কিন্তু তেমন কাউকে এখানে পেয়েছি বলে মনে হয় নি। আর একটি কারণ এ বিষয়গুলো ছাত্রদের মাঝে কাজ করতে গিয়ে প্রায় ওঠে আসে। যদিও এখানে কেহ কেহ অনেক রেফারেন্স দিয়ে যেভাবে আলোচনা করেছেন সেভাবে সবসময় আলোচনা আসে না, কিন্তু সমাজতন্ত্রের রাজনীতি নিয়ে আলোচনা করতে গেলেই এ আলোচনা চলেই আসে। এবং যেমনিভাবে শরৎ পাঠক মাত্রই বাসদ করেন না তেমনি এ প্রশ্ন যারা করেন তারা সমাজতন্ত্র বিরোধী এমন ভাবার কোন কারণ নেই। কিন্তু এ চিন্তা সমাজে অবস্থান করে বলেই নানাজনের বাচনে এটা ওঠে আসে। তাই কোন আলোচনা সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে কাজে লাগানোতে আবার কোন আলোচনা জানবার বোঝবার আগ্রহ নিয়েই আসবে, এটাই স্বাভাবিক।
এ সব বিষয়ে আলোচনা না করে আলোচনা আর এগুবে কি না এটা দেখার অবকাশ রাখছি।
শান্ত - ২২ জুলাই ২০০৮ (১১:২১ পূর্বাহ্ণ)
আপনি কি ফোনেটিকে লেখার চেস্টা করেছেন?
ফোনেটিকে লিখতে চাইলে কিছু টিপসঃ
আ-কার (a), ই-কার (i), ঈ-কার (ii), ঐ-কার (oi), ঔ-কার (ou), এ-কার (e) এসব অক্ষর টাইপ করার পরে টাইপ করেন। zemn =যেমন,: কীবোর্ড ঠিকভাবে কাজ না করায় কিছু শব্দ বুঝতে সংকটে পড়তে পারেন, সেজন্য দুঃখিত= kiibor+d thikvabe kaj na kray kiCu shb+D bujhTe sngkte pRTe paren sejnY DuHkhiT.
মুক্তাঙ্গন - ২২ জুলাই ২০০৮ (১১:৫৫ পূর্বাহ্ণ)
thanks শান্ত। মোশাররফ, আপনি বাংলা কীবোর্ড লেআউট help পাতাটাও দেখতে পারেন। আমরাও বিষয়গুলো আরেকটু সহজ করার চেষ্টা করছি।
সৈকত আচার্য - ২২ জুলাই ২০০৮ (৮:০৯ অপরাহ্ণ)
মোশারফ
আপনার লেখাটা ভাল ভাবে পড়তে পারছি না । কোন ভাবে কি আবার চেষ্টা করা যায়। তাহলে সবাই পড়তে পারবে ।ব্লগ এডমিনের হেল্প নিতে পারেন মনে হয়। আর কেউ কি হেল্প ক রতে পারেন?
সৈয়দ তাজরুল হোসেন - ২১ জুলাই ২০০৮ (১:৫৪ অপরাহ্ণ)
রেজাউল করিম সুমনকে অনেক ধন্যবাদ তার চমৎকার মন্তব্যের জন্য। এ থেকে মনে হয় অনেকেই পাঠ নিতে পারেন একজন লেখক পাঠককে জোর করে তেতো বড়ি গেলানোর চেষ্টার মতো না করেও কি ভাবে বলিষ্ঠভাবে নিজের মত প্রকাশের পাশাপাশি অন্যের মতের বিরোধিতা করতে পারেন।
ইন্সিডেন্টাল ব্লগারের শলোকভ থেকে শামসুরঃ সমাজতান্থিক অবমুল্যায়ন, লেখাটি পড়ে দু’একটি জায়গায় আমারও খটকা লেগেছে, সবজায়গায় লেখকের মতের সঙ্গে একমতও হতে পারিনি। লেখাটির শুরুতেই তিনি সমালোচক হিসেবে জনাব খালেকুজ্জামানের যোগ্যতার ব্যাপারে প্রশ্ন তুলেছেন। আমি মনে করি যে কোন বিষয়ে অভিমত দেয়ার স্বাধীনতা সকলেরই আছে। কিন্তু বিচায্য বিষয় হবে কারা, কোন প্রেক্ষিতে, কি উদ্দ্যেশ্যে অভিমতটি চাইছেন। কামারকে দিয়ে কেউ যদি সোনারুর কাজ করিয়ে নেন সেটা তিনি নিতেই পারেন। ব্যাপারটা নির্ভর করে একান্তই ফরমায়েশ দাতার রুচি এবং উদ্দ্যেশ্যের উপর।
ইন্সিডেন্টাল ব্লগার তার লেখায় বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বাসদ’র কর্মকান্ড এবং ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন/ সমালোচনা করেছেন। সেটার বিষয়ে অনেকেরই (বাসদের নেতা-কর্মীদের তো বটেই) ভিন্ন মত ও যুক্তি থাকতে পারে। একজনের একটা মন্তব্যের বিপরীতে আরেকজনের প্রতি মন্তব্য থকাতেই পারে এবং বোধ করি সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু অত্যন্ত পীড়াদায়ক যে বিষয়টি, তা হল সংশ্লিষ্ট আলোচনাগুলোয় কিছু কিছু ক্ষেত্রে এখন আর যুক্তির কোন বালাই থাকছে না। অনেকেই যেন দাঁত খিঁচিয়ে তাদের হিংস্র চোয়াল দেখানোতে ব্যাস্ত হয়ে পড়েছেন। যেন বলতে চাইছেন, যা বলছি তা-ই মেনে নে শীগগীর, কার সংগে লাগতে এসেছিস জানিস বেটা? একে অন্যের প্রতি সামান্যতম সৌজন্যতাবোধ ও প্রদর্শন করতে চাইছেন না বা পারছেন না। একজন আরেকজনকে “বকলম” বলছেন, “মূর্খ” বলছেন কিংবা একজন যে “কবিতা বা ছন্দের কিছুই বোঝেন না সে বিষয়ে”- আরেকজন “পুরোপুরি নিশ্চিত” হয়ে যাচ্ছেন, কেউতো আবার বলছেন “বিনয়ী হয়ে থাকতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু আমি বিনয়ী না” (যেন বিনয়ী হওয়াটা ঘোর অপরাধ!), এভাবে একে অন্যকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্ল্য করছেন।– অত্যন্ত বেদনাদায়ক। আমার স্থির বিশ্বাস মন্তব্যকারীদের কেঊই ব্যক্তিগতভাবে এতটা সৌজন্যতাবোধহীন নন।
শেষ করার আগে শুধু এটাই বলবো, যুক্তির বিরুদ্ধে শুধু যুক্তি নিয়ে দাড়ান, ব্যক্তি নয় শুধুমাত্র তার কলমের বিরুদ্ধেই লিখুন। সবাইকে ধন্যবাদ।
মাসুদ করিম - ২২ জুলাই ২০০৮ (৪:২৬ অপরাহ্ণ)
একটি বিশেষ অনুরোধ প্রবীর পালের হুমায়ুন আহমেদের সাক্ষাৎকার বিষয়ক লেখাটি নিয়ে মন্তব্য করুন না একটু। অসুন না একজন জীবিত লেখকের বিচার করি। সবাই আসলে খুশী হব।
ইনসিডেন্টাল ব্লগার - ২২ জুলাই ২০০৮ (৯:৫২ অপরাহ্ণ)
@মোশাররফ (অস্মিতা#২৮ এর প্রত্যুত্তর প্রসঙ্গে):
মোশাররফকে ধন্যবাদ। আশা করি তার এ মন্তব্যটি বেশ কিছুদিন ধরে চলমান এ বিতর্কটিকে একটি বিশ্লেষনমূলক দিকে প্রবাহিত করবে।
বিভিন্ন কথার তোড়ে কিছু জিনিস আর কখনোই ব্যাখ্যা করা হয়ে ওঠেনি। মূলতঃ এই পোস্টটি লেখার উদ্দেশ্য ছিল কিছু বিষয়ে আলোচনার সূত্রপাত করা; চলমান কিছু বিতর্কের বিষয় যা অনেকেরই মনে ঘুরপাক খাচ্ছিল তাকে নির্দিষ্ট আবদ্ধ গন্ডীর বাইরে টেনে এনে সকলের আলোকপাতের জন্য মুক্ত এক পরিবেশে উপস্থাপন করা। কিছু মন্তব্যকারী লেখকের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, যা তারা তুলতেই পারেন। লেখকের রাজনৈতিক অবস্থান আর মূল্যবোধ বিষয়ক কিছু উত্তর আশা করি তারা খুঁজে পাবেন লেখকের পুরনো কিছু ব্লগে। উদাহরণ হিসেবে: ড. ইউনুস ও ক্ষুদ্র ঋণের সমালোচনা নিয়ে এখানে, পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে এখানে, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়ে এখানে; নতুন প্রজন্মের রাজনীতি বিমূখতা আদর্শ বিমূখতা নিয়ে এখানে দেখুন।
ব্লগের কিছু সাধারণ বিষয় নিয়ে আমি এই নতুন পোস্টটি লিখেছি, একরকম তাড়াহুড়ো করেই। যদি সম্তব হয় চট করে এতে একটু চোখ বুলিয়ে নিতে অনুরোধ করবো। তাতে পরবর্তী আলোচনাগুলোকে একটি সুন্দর এবং গঠনমূলক খাতে প্রবাহিত করা হয়তো আরো সহজ হবে আমাদের সবার জন্য।
ইমতিয়ার - ৩০ জুলাই ২০০৮ (১০:৩৩ পূর্বাহ্ণ)
খালেকুজ্জামানের সঙ্গে বিতর্কের অবকাশ থাকলেও তাঁকে ধন্যবাদ জানাই এজন্যে যে, অন্তত একজন রাজনীতিক পাওয়া গেল যিনি শামসুর রাহমানের জীবন ও কবিতা নিয়ে চিন্তা করেছেন এবং এত বড় একটি রচনা দাঁড় করিয়েছেন। তা ছাড়া সামগ্রিকতার দিক থেকে তিনি শামসুর রাহমানকে অবমূল্যায়ন করেছেন বলে তো মনে হচ্ছে না!
পথিকৃৎ পত্রিকাটি আমারও কোনও সময় দেখা হয়নি। তবে কোলকাতার দ্বি-মাসিক পত্রিকা জেনে অনুমান করছি, এটি সেখানকার এসইউসিআই রাজনৈতিক দলটির প্রভাবযুক্ত কোনও সাহিত্য পত্রিকা হতে পারে।
এই সূত্রে মনে পড়ছে, আশির দশকে সাপ্তাহিক বিচিত্রায় রাজনীতিকদের শিল্পসংস্কৃতিবিষয়ক ভাবনা নিয়ে একটি সিরিয়াল হয়েছিল। তা পড়ে জেনেছিলাম, কোনও কোনও বামনেতার প্রিয় লেখক আশুতোষ! এর বিপরীতে জামাতনেতার ভাষ্য ছিল, প্রিয় লেখক বঙ্কিম, মানিক! বুঝুন অবস্থা!
আপনার লেখাটি খুবই যৌক্তিক, কেননা সাহিত্যকে বিভিন্ন ‘তান্ত্রিক’ মানদণ্ডে ফেলার চেষ্টা সাহিত্যকে জোলো করে ফেলে। অনেক আগে একটি মজার ঘটনা পড়েছিলাম। লেনিন অসুস্থ হওয়ার পর তাকে স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা দেখতে গিয়েছিল। লেনিন তাদের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, তোমরা কার কবিতা পড়তে ভালোবাসো? সবাই চিৎকার করে জবাব দিয়েছিল, মায়কোভস্কির… মায়কোভস্কির…
লেনিন মৃদু হেসে জিজ্ঞেস করেছিলেন, তোমরা পুশকিন পড়ো না?
হ্যা, পড়ি-ই-ই… থতমত খেতে খেতে বলেছিল কেউ কেউ। আর লেনিন তাদের দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে বলেছিলেন, মায়কোভস্কি ভালো, তবে পুশকিন আরও ভালো। নিশ্চয়ই বাংলাদেশের রাজনীতিকরাও একদিন না একদিন এই ব্যাপারটা বুঝতে পারবেন, শামসুর রাহমান কেন জরুরি।
(“আমার ব্লগ” থেকে মন্তব্যটি কপিকৃত)
রেজাউল করিম সুমন - ৩১ জুলাই ২০০৮ (৪:০১ অপরাহ্ণ)
নাদেজদা ক্রুপস্কায়া-র ‘কোন্ সাহিত্য ইলিচের ভালো লাগত’ থেকে প্রাসঙ্গিক অংশ :
“একবার সন্ধ্যায় ইলিচের ইচ্ছা হলো দেখবেন কমিউন করে যুবজনেরা কীভাবে থাকে। ঠিক হলো উচ্চ শিল্প-টেকনিক স্টুডিও-র ছাত্রী ভারিয়া আর্মান্দের কাছে হাজির হব। মনে হয় সেটা ১৯২১ সালে ক্রপোৎকিনের সৎকারের দিন। দুর্ভিক্ষের বছর, কিন্তু তরুণদের মধ্যে উদ্দীপনা প্রচুর। কমিউনে তারা শোয় অনাবৃত তক্তার ওপর, রুটি তাদের নেই, ‘তবে খুদ আছে’, জ্বলজ্বলে মুখে ঘোষণা করলে কমিউন-সভ্য ডিউটি-রত ছেলেটি। নুন না থাকলেও সেই খুদ দিয়ে ইলিচের জন্য রান্না হলো খাসা মণ্ড। তরুণদের দিকে চেয়ে দেখলেন ইলিচ, চারপাশ থেকে তাঁকে ঘিরে ধরা তরুণতরুণী শিল্পীদের জ্বলজ্বলে মুখের দিকে; তাদের আনন্দে তাঁর মুখও জ্বলজ্বল করে উঠল। নিজেদের কাঁচা হাতের ছবি দেখাল তারা, ছবির মর্মার্থ বুঝিয়ে বললে, শুরু হলো প্রশ্নের পর প্রশ্ন। ইলিচ কিন্তু জবাব না দিয়ে হাসলেন, উত্তর দিলেন পাল্টা প্রশ্ন করে : ‘কী পড়ো তোমরা? পুশকিন পড়ো?’ — ‘একদম না,’ বলে উঠল কে একজন, ‘পুশকিন তো বুর্জোয়া, আমরা পড়ি মায়াকোভস্কি।’ ইলিচ মৃদু হাসলেন, ‘আমার মনে হয় পুশকিন আরো ভালো।’ …”
সেদিন ক্রুপস্কায়া ও লেনিনের সঙ্গে ছিলেন ভার্ভারা (ভারিয়া) আর্মান্দের বোন আই. এ. আর্মান্দ — যাঁকে আদর করে ডাকা হতো ‘ছোট্ট ইনেসা’। তাঁর লেখায় লেনিনের সঙ্গে তরুণ শিল্প-শিক্ষার্থীদের ওই কথোপকথনের বিস্তারিত ও যথাযথ বিবরণ আছে।
Mosharrof - ৩১ জুলাই ২০০৮ (৭:৩১ অপরাহ্ণ)
গত কয়েকদিন যে কয়েকটি লেখা এসেছে তাতে আলোচনার ভারকেন্দ্রটি বেশ স্পস্ট হয়ে উঠছে। যারা লিখছেন তারা সাহিত্যপ্রেমী ও সাহিত্যপাঠক এবং সাহিত্য নিয়ে মার্কসবাদী বিচারধারা সম্পর্কে এক ধরনের ধারণা নিয়ে তাদের মতামত স্পস্ট করে চলেছেন।
সাহিত্য বিষয়ে খুবই অল্প ধারণা আছে বলে যারা জানেন তাদের লেখা পড়েই তা বোঝার চেষ্টা করবো ভেবেছি। কিন্তু প্রাসঙ্গিক কিছু বিষয় নিয়ে যেটুকু ধারণা রাখি সেখান থেকে কয়েকটি কথা তুলে ধরার চেষ্টা করছি।
বারে বারে শ্রেণী দৃষ্টিভঙ্গির কথা আসছে।
সেখানে বুর্জোয়া ও সর্বহারা এ দুইটি ধারা যে আছে তা অনেকে কী অস্বীকার করছেন?
আবার এর সাথে সমাজ বিকাশের যে ধারণা মার্কসবাদীরা তুলে ধরেন তাকে কারা কীভাবে দেখেন তাও গুরুত্বপূর্ণ। ইতিহাসে বুর্জোয়া দর্শণের প্রবক্তা হিসেবে যারা পরিচিত তারা সাম্য, মৈত্রীর ধারণা, মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার, সকল ধরণের কুসংস্কারের বিরুদ্ধে মানবতার জয়গান গেয়েছেন। পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা পত্তনের পূর্বশর্ত ছিল সামন্তীয় ব্যবস্থা উচ্ছেদ। কারণ, কল-কারখানা প্রতিষ্ঠা করতে যে শ্রমিক দরকার তারা সামন্তীয় ব্যবস্থায় মুক্ত-স্বাধীন ছিল না। ফলে পুঁজিবাদী উৎপাদন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনে একটা সময়ে মালিক শ্রেণী দর্শণ হিসেবে যা প্রচার করেছে তা বুর্জোয়া দর্শণ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। পুঁজির বিকাশ আর শ্রম শোষণ একই সূত্রে গাঁথা থাকলেও সমাজ বিকাশের স্তর হিসেবে তার আবির্ভাব ছিল অপরিহার্য। কিন্তু মার্কস দেখিয়েছেন কীভাবে এটি মানুষের বিকাশের পথে অন্তরায় হিসেবে পথ আগলে দাঁড়িয়েছে। আর একে উচ্ছেদ করে সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করে সাম্যবাদে উত্তরণের পথ দেখিয়ে সর্বহারা শ্রেণীর হাতে একটা সঠিক হাতিয়ার তুলে দিয়েছিলেন। যে সাম্য, মৈত্রী, স্বাধীনতার তথা মানবতার জয়গান সেদিন বুর্জোয়ারা গেয়েছিল তা একটা সময়ে এসে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।
বুর্জোয়া চিন্তার দু’টি দিক একটি উৎপাদনের ক্ষেত্রে মালিকানা আর একটি তার মানুষের অধিকার সম্পর্কিত তত্ত্ব। কিন্তু আজ মালিকানা ব্যবস্থা জারি রেখে দেশে দেশে বুর্জোয়া শাসকদের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণের নজিরের অন্ত নেই।
শিল্প-সাহিত্যে গণতান্ত্রিক চিন্তাধারার প্রতিফলন আগে যেমন ছিল এখনো কদাচিৎ তা দেখা যায়। একজন লেখকের লেখায় যখন মানব সমাজের ঘটনাবলী বিবৃত হয় তখন তার প্রগতিশীলতার বিচার নিশ্চয় হয়ে থাকে। কারণ মাকর্সবাদী না হয়েও সচেতন পাঠক তা করে থাকেন। হুমায়ুন আহমেদের সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকারের কথাই ধরুন। সেখানে কী প্রতিক্রিয়াশীলতার পক্ষ তিনি অবলম্বন করেন নি? দেশের সচেতন অংশের মাঝে এর প্রতিক্রিয়াও আছে। এখন হুমায়ুন আহমেদের চিন্তার সাথে শামসুর রাহমানের চিন্তাধারার একটা তফাৎ কমরেড খালেকুজ্জামানের আলোচনা থেকে নিশ্চয় পাওয়া যায়। যে উন্নত সমাজের আকাঙ্খা কবি পোষণ করতেন তা আজকের পুঁজিবাদী সমাজে বাস্তবায়ন অসম্ভব বলে যারা বিশ্বাস করেন তারা কী এটা জোর গলায় দাবি করতে পারেন না? না কী এটা অন্যায়? একজন লেখককে একটা সমাজ পরিবর্তনে নেতৃত্ব দিতে হবে তা অবাস্তব, কিন্তু লেখক সমাজের অবদান ব্যতীত সমাজ প্রগতি কীভাবে সম্ভব? আর সেক্ষেত্রে সমাজের বৈপ্লবিক পরিবর্তনের প্রয়োজনকে কেহ স্বীকার করবেন কেহ করবেন না – এটাই বাস্তবতা। একটা নির্দিষ্ট সময়ে সমাজের মানুষের গণতান্ত্রিক আশা-আকাঙ্খার প্রতিফলন যে সাহিত্য ধারণ করবে তা সাধারণভাবে প্রগতিশীল সাহিত্য হিসেবে বিবেচিত হবে। অসহায় মানুষের জীবনচিত্র সাহিত্য হয়ে নির্যাতিত মানুষের শোষণমুক্তির সংগ্রামে অণুপ্রেরণা যোগাবে, এটা কী লেখকের কাছে প্রত্যাশা হবে না? যে কোন লেখকের সাহিত্য মূল্যায়নে এ প্রত্যাশা কি অপ্রাসঙ্গিক? সেক্ষেত্রে তো সমাজ পরিবর্তনে শ্রেণী সংগ্রামের সাথে লেখক-সাহিত্যিকদের দ্বন্দ্ব থেকে থাকলে তা উঠে আসাই বাঞ্ছনীয়। এতে লেখকের মর্যাদা খাটো করা হয় কী? তাহলে বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে বড় বড় লেখক-সাহিত্যিকদের উপর যারা বাগাড়ম্বর করেন অথচ নিজেদের জীবনধারণে কোন প্রতিফলন রাখেন না, তাদের মূল্যায়নের বাইরে আর কোন মূল্যায়ন আশা করা যায় কি?
bilal - ৬ আগস্ট ২০০৮ (১২:৫০ পূর্বাহ্ণ)
কমরেড – এত বইয়ের ভাষায় আপনেরা কথা বলেন কেন? আর গালি গালাজ কোথায় হইছে বুজলাম তো না। আপনেরা কোথয় দেখলেন? গালি গালাজ দেখতে হয় তো অন্্ন কোন বলগে গিয়া দেখেন, তািলে বুজবেন কুনটা গালি গালাজ আর কোনটা নর্মাল কথাবার্তা। একটু ভািবেন।
শান্ত - ৪ আগস্ট ২০০৮ (৪:২৩ পূর্বাহ্ণ)
আমার শেষ কমেন্ট টির পরে আরো অনেকেই অনেক আলোচনা করেছেন- অনেক যুক্তি- পাল্টা যুক্তিও এসেছে দেখলাম। এখানে আর আলোচনা করার ইচ্ছা ছিল না, তবে এমন কিছু কথা এসেছে সেগুলোর ব্যাপারে না বললেই নয় বিধায় আবার বসলাম….
আমার এই কমেন্টের কয়েক কমেন্ট আগে সৈয়দ তাজরুল ইসলাম পুরো আলোচনা নিয়ে ওনার মতামত জানিয়েছেন। জানাতে গিয়ে বলছেন, “…কিন্তু অত্যন্ত পীড়াদায়ক যে বিষয়টি, তা হল সংশ্লিষ্ট আলোচনাগুলোয় কিছু কিছু ক্ষেত্রে এখন আর যুক্তির কোন বালাই থাকছে না। অনেকেই যেন দাঁত খিঁচিয়ে তাদের হিংস্র চোয়াল দেখানোতে ব্যাস্ত হয়ে পড়েছেন। যেন বলতে চাইছেন, যা বলছি তা-ই মেনে নে শীগগীর, কার সংগে লাগতে এসেছিস জানিস বেটা? একে অন্যের প্রতি সামান্যতম সৌজন্যতাবোধ ও প্রদর্শন করতে চাইছেন না বা পারছেন না। …” এই সৌজন্যতাবোধের ঘাটতি তিনি দেখেছেন- যারা এই পোস্টের বক্তব্যের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন শুধু তাদের আলোচনাতেই!! পোস্টদাতাকে বকলম বলা, “আমি বিনয়ী নই” এসবকে ওনার কাছে খুব আপত্তিকর মনে হয়েছে। কিন্তু আলোচ্য পোস্টটির ব্যাপারে – পোস্টের আলোচনা; উপস্থাপনা এসব নিয়ে ওনার কোন রা-ই নেই!!! কেন? যখন একজন ছন্দ নিয়ে যৎকিঞ্চিত ধারণা নিয়ে (ছন্দ বিষয়ে আমার আগ্রহ বরাবরই খুব কম, জ্ঞান তো আরো কম – পোস্টদাতা, ) আরেকজনের সাহিত্য সমালোচনা সম্পর্কে বলেন “আধুনিক কবি হিসেবে শামসুর রাহমানের কবিতা যে ছন্দনির্ভর নয়, সে কথা না-ই বা তুললাম। আর আধুনিক কবিতার পাঠকের কাছে কবিতার আবেদনের পেছনে যে ছন্দই প্রধান নয়, কমরেড খালেকুজ্জামানের মতো একজন বোদ্ধা পাঠককে সেটি মনে করিয়ে দেয়া হয়তো একটু ধৃষ্টতাই হয়ে যাবে। সুতরাং সে চেষ্টাও করবো না। “- তখন এই আলোচনা সৈয়দ তাজরুল ইসলামের কাছে খুব সৌজন্যতার আধার হয়ে যায়!!!
একটি সাহিত্য সমালোচনা নিয়ে আলোচনা উপস্থাপন করতে গিয়ে মিথ্যা অভিযোগের ভাণ্ডার খুলে বসাটাও তাজরুল ইসলাম সাহেবের কাছে কখনোই সৌজন্যতাহীন মনে হবে না, “এ যাত্রায় কোরেশীদের সাথে লেগে থাকতে পারলে ভাগ্যের ফেরে ক্ষমতার শিকেটা ছিঁড়ে তার কিছু ভাগ পাওয়া গেলেও যেতে পারে”- এমন নির্লজ্জ গালিগালাজ ওনার কাছে খুব স্বাভাবিক মনে হবে…., , আর সুব্রত যখন এহেন হীন লেখার প্রতিক্রিয়ায় ” আমি বিনয়ী নই”- এটা জানায় তখন সেটা হয়ে যায়- পীড়াদায়ক!!!! স্বভাবতই বুঝতে কঠিন হয় না, এখানে এরা কারা, এই সংঘবদ্ধ গ্রুপটির উদ্দেশ্য কি? যেটি আগেও একবার উল্লেখ করেছিলাম..
ইনসিডেন্টাল ব্লগার - ৬ আগস্ট ২০০৮ (৫:১০ অপরাহ্ণ)
“এ যাত্রায় কোরেশীদের সাথে লেগে থাকতে পারলে ভাগ্যের ফেরে ক্ষমতার শিকেটা ছিঁড়ে তার কিছু ভাগ পাওয়া গেলেও যেতে পারে”- এমন নির্লজ্জ গালিগালাজ” . . .
>>এক কথা আপনাদেরকে বারবার বলা ক্লান্তিকর। সেই তখন থেকে ঘ্যান ঘ্যান করে চলেছেন নাকি সুরে ভাঙ্গা রেকর্ডের মতো। নীচে ৪৩ নং এ আমার প্রত্যুত্তরটি ভালো করে পড়ে নিন। সেইসাথে পড়ুন ৩৮, ৩৯, ৪০ নং এ দেয়া আমার প্রত্যুত্তর। এরপরও যদি না বোঝেন কিছু আর এভাবে ভাঙ্গা রেকর্ডের মত বাজতে থাকেন, তাহলে বুঝতে হবে আপনার (ও আপনার বাসদের সহযোগীদের) উদ্দেশ্য সৎ না। বুঝতে হবে এখানে মুক্তমনে বিতর্ক করতে আসেননি; এসেছেন একটা নির্দিষ্ট এজেন্ডা নিয়ে (যেমন: পোস্টলেখককে harrass করতে, বা মুক্তাঙ্গন ব্লগের পরিবেশ নষ্ট করতে), এবং কিছু বুঝবেন না বলে আগে থেকেই সিদ্ধান্ত নিয়ে এসেছেন। তারপরও আপনার সুবিধার্থে এখানে ৪৩ এ আমার প্রত্যুত্তরের অংশবিশেষ উদ্ধৃত করছি:
ইনসিডেন্টাল ব্লগার - ৬ আগস্ট ২০০৮ (৫:২৭ অপরাহ্ণ)
@শান্ত
>শান্তঃপোস্টের আলোচনা; উপস্থাপনা এসব নিয়ে ওনার কোন রা-ই নেই!!! কেন? যখন একজন ছন্দ নিয়ে যৎকিঞ্চিত ধারণা নিয়ে (ছন্দ বিষয়ে আমার আগ্রহ বরাবরই খুব কম, জ্ঞান তো আরো কম – পোস্টদাতা, )
>>ধরুন আপনি কোন বিতর্ক সভায় বক্তব্য দিতে গিয়ে বললেন: “এখানে যারা উপস্থিত আছেন তারা সবাই অনেক বেশী জ্ঞানীগুনী এবং যোগ্য মানুষ আমার চেয়ে”। এখন কথাটা শুনে বাকী বক্তাদের কেউ যদি ‘ইউরেকা’ বলে লাফ দিয়ে উঠে সভায় বলে বসেন: “দেখলেন তো, তিনি নিজেই স্বীকার করছেন যে তিনি কম জানেন, সুতরাং আসুন আমরা তার কথা না শুনি”। আপনার এবং নাঈম সাহেবের (২৫ প্রত্যুত্তর) আমাকে আমার কথাই উদ্ধৃত করে (ছন্দ বিষয়ে আমার আগ্রহ বরাবরই খুব কম, জ্ঞান তো আরো কম – ১৮ প্রত্যুত্তর) সেটিকে যুক্তি/খন্ডন হিসেবে ব্যবহার করার আপনাদের এই চেষ্টা শুধু যে হাস্যকর তা-ই না, কিছুটা pathetic ও বটে। শুনে রাখুন, একে বলে প্রাচ্যদেশীয় ভদ্রতা বা বিনয়বোধ। আপনি কোন্ মহাদেশে বড় হয়েছেন যে এ ব্যপারে এমন অজ্ঞ থেকে গেলেন? অবশ্য বিনয় হিসেবে ব্যবহার ছাড়াও কখনো কখনো সুক্ষ বিদ্রুপ আকারেও এর প্রয়োগ হতে পারে, যেটা আবার ইংরেজীভাষী পশ্চিমা বাক রীতিতেই অধিক প্রচলিত (বাংলাতেও যে তার ব্যবহার নেই, তা কিন্তু নয়!)। এই আলোচনাটা এখন সত্যিই পরাবাস্তব (surreal) একটা চেহারা নিচ্ছে। স্বপ্নেও ভাবিনি ব্লগ লিখতে এসে কোনদিন এসব বিষয় কখগঘ এর মতো করে কাউকে ধরে ধরে বুঝিয়ে বলতে হবে। এ কোন্ জায়গায় এলাম রে বাবা!
>শান্তঃ“এ যাত্রায় কোরেশীদের সাথে লেগে থাকতে পারলে ভাগ্যের ফেরে ক্ষমতার শিকেটা ছিঁড়ে তার কিছু ভাগ পাওয়া গেলেও যেতে পারে”- এমন নির্লজ্জ গালিগালাজ ওনার কাছে খুব স্বাভাবিক মনে হবে….,
>>দেখুন মন্তব্য প্রত্যুত্তর ৪৩। আর কতবার না জানি একথা আপনাদেরকে বলতে হবে। এখন তো মনে হচ্ছে অনন্তকাল ধরে এই করতে হবে আমাকে। এ যে দেখছি প্রমিথিউসের সাজা, সমাজতন্ত্রের রুষ্ট বাসদীয় দেবতাদের তত্ত্বাবধানে! সম্ভব হলে একটা রেকর্ড কিনে পাঠিয়ে দিতাম আপনাকে যাতে সারাদিন কানের কাছে বাজতে থাকতো : “দেখুন মন্তব্য প্রত্যুত্তর ৪৩ . . . দেখুন মন্তব্য প্রত্যুত্তর ৪৩ . . .।”
>শান্তঃ
স্বভাবতই বুঝতে কঠিন হয় না, এখানে এরা কারা, এই সংঘবদ্ধ গ্রুপটির উদ্দেশ্য কি? যেটি আগেও একবার উল্লেখ করেছিলাম..
>>একবার নয়, বহুবার উল্লেখ করেছেন। এমনকি প্রায় প্রতিটি মন্তব্যেই উল্লেখ করেছেন। শুধু আপনিই নন, আপনার সহযোগীরাও তাই করেছেন এবং করে যাচ্ছেন। মনে হচ্ছে আপনাদের যেন আর দেয়ার মত কোন সত্যিকারের কোন যুক্তি নেই! এসব করে কি লাভ হবে? এভাবে সমালোচকদের গায়ে কল্পিত ও মিথ্যা লেবেল সেঁটে সত্যকে বিপথগামী করতে পারবেন বলে ভাবেন?
সৈয়দ তাজরুল হোসেন - ১১ আগস্ট ২০০৮ (১১:৫০ অপরাহ্ণ)
একটি সাহিত্য সমালোচনা নিয়ে আলোচনা উপস্থাপন করতে গিয়ে মিথ্যা অভিযোগের ভাণ্ডার খুলে বসাটাও তাজরুল ইসলাম সাহেবের কাছে কখনোই সৌজন্যহীন মনে হবে না, . . . গালিগালাজ ওনার কাছে খুব স্বাভাবিক মনে হবে…., , আর সুব্রত যখন এহেন হীন লেখার প্রতিক্রিয়ায় ” আমি বিনয়ী নই”– এটা জানায় তখন সেটা হয়ে যায় – পীড়াদায়ক!!!! স্বভাবতই বুঝতে কঠিন হয় না, এখানে এরা কারা, এই সংঘবদ্ধ গ্রুপটির উদ্দেশ্য কি? যেটি আগেও একবার উল্লেখ করেছিলাম..
বেশ কিছু দিন হলো ব্যক্তিগত ঝামেলার কারনে ব্লগে আসা হয়ে উঠেনি । এসে তো দেখছি একটা কুরুক্ষেত্র অবস্থা চলছে। কে এখানে বাসদের পক্ষে আর কে বিপক্ষে সে বিষয়ে আমি তেমন উৎসাহী ছিলাম না মোটেই নিজে কোন পক্ষাবলম্বন তো আরো পরের বিষয়। কিন্তু শান্ত’র কল্যাণে বুঝতে পারছি বাসদের বিরুদ্ধে যে বিশাল বুর্জোয়া চক্রান্ত চলছে, আমি ও তার অংশ । তার মন্তব্যে আমার কি প্রতিক্তিয়া হওযা উচিত বুঝতে পারছি না।
শান্ত, প্রথমেই বলি, আপনি যেখানে আমার নামটি পর্যন্ত ঠিকমতো বলার সাবধানতা বা সৌজন্য দেখাতে পারলেন না সেখানে আমার বক্তব্য অনুধাবনের ধৈর্য দেখাবেন সে আশা করাই বৃথা । এই পোষ্টটির পুরো আলোচনা পড়লে এটা বুঝতে কারোই অসুবিধা হওয়ার কথা নয় কে বা কারা দল বেঁধে অন্য সকলের বিরুদ্ধে লেগেছে । আমারতো মনে হয় আপনি এবং আপনার বাসদের বন্ধুগণ (সুব্রত, নাঈম, pothik, mosharrof ) এক ধরনের phobia’ য় আক্রান্ত । যে কারো যে কোন মন্তব্য যেটা সরাসরি আপনাদের পক্ষে নয়, সেটা আপনারা এমনকি শুনতে ও আগ্রহী নন, যুক্তির দ্ধন্দ্বতো অনেক দুরের ব্যাপার । এপর্যন্ত আপনাদেরকে খুব কমই দেখেছি যুক্তিকে যুক্তি দিয়ে খন্ডনের চেষ্টা করতে, বরং আপনাদর সম্মিলিত আচরণ পীরভক্ত অন্ধ মুরীদের মতোই মনে হয় ।
মার্কস, লেনিন, খালেকুজ্জামান আর বাসদ সম্পর্কিত যে কোন বিষয়ে আপনারা এতই touchy, যে এদের বিষয়ে যে কোন ধরনের কথাতেই আঁতকে উঠেন আর সেটা যদি কিঞ্চিত সমালোচনাধর্মী হয় তাহলেতো কথাই নেই। আপনাদের মতো রোমান্টিক সমাজতন্ত্রীদের অনেক দেখেছি তাই বিষয়টা এখন আর গায়ে লাগে না ।
বেশতো চিৎকার চেঁচামেচি করে যাচ্ছেন সেই শুরু থেকে, ইন্সিডেন্টাল আপনাদের নেতা সম্পর্কে কি বলেছেন তা নিয়ে প্রচুর মন্তব্য প্রতিমন্তব্য করে যাছেন, একে গুঁতো তাকে ঢুঁস মেরে যাছেন অনবরত; একটি কথা জিজ্ঞেস করি, আপনারাতো বাসদ/ ফ্রন্ট করে যাছেন গত ২৮ বছর ধরে, দলটি কেন এখনো মানুষের মনে ঠিক জায়গা করে নিতে পারছেনা সে বিষয়ে কি কখনো ভাবেন? কিংবা দলের কর্মকান্ড নিয়ে নিজেদের মধ্যেই কোন সমালোচনা করেন বা করেছেন? নাকি সাধারণ ‘মূর্খরা’ আপনাদের মতো ‘অসাধারণ’ দেরকে বুঝতে পারছে না ভেবে মনে মনে সোয়াস্তির ভাব নিয়ে ঘুরে বেড়ান? আপনাদের আচরন দেখে মনে হয় না যে আপনাদের মধ্যে নিজেদের নিয়ে critical thinking এর কোন ধরনের practice আছে । যদি থাকতো, তা হলে যে কোন সমালোচনাতেই নিজেদের তাসের ঘর উড়ে যাবে এই ভয়ে সন্ত্রস্ত থাকতেন না বরং argumentation এ সংযুক্ত হতে পারতেন।
আপনাদের এই অবস্থা দেখে বলতে হছে, ভ্রম রোধ করতে গিয়ে আপনারা যেভাবে মনের সমস্ত দরজা-জানালা বন্ধ করে রাখছেন, তাতে করে সত্যের উঁকি মারার সম্ভাবনাটিও চিরতরে নিষিদ্ধ করে দিছেন না কি? বাংলাদেশের তাবৎ দল-গোষ্ঠি সব নিয়েই আপনারা সমালোচনা করতে পারেন আর নিজেদের বেলায় সামান্য ইঙ্গিত ও সইতে পারলেন না? শুনুন, আত্ম-সমালোচনা আত্মশুদ্ধিরই পথ । আর যে আত্ম-সমালোচনা করতে জানে, সে নিজের সমালোচনা সইতেও পারে । বিষয়টা অভ্যেস করা অত্যন্ত জরুরী তা-নাহলে নিজেদের অবস্থানটা পরিক্ষীত যুক্তির উপর দাঁড়াবে না এবং তাতে এই যে আপনারা ক’জন পুরো দুনিয়াশুদ্ধ সকলকে বাসদের শত্রু ভাবছেন আর নিজেদের সমাজতন্ত্রের একমাত্র ত্রাতা ভাবছেন, তাদের রোমান্টিক কল্পনার ফানুসটা উবে যেতে বেশি দিন লাগবে না । বিশ্বাস না হলে সাধারণ কর্মী নয়, আপনাদের প্রাক্তন সেন্ট্রাল প্রেসিডেন্ট- সেক্রেটারীদের ব্যাপারেই খোঁজ নিয়ে জেনে নিন ।
আর একটি কথা বলতে পারেন, ছাত্রফ্রন্ট এর যত কর্মী-সমর্থক, তাদের কত শতাংশ পরবর্তীকালে বাসদের সংগে যুক্ত হন? সংখ্যাটি কি কোনভাবেই উৎসাহী হওয়ার মতো? কাজেই নিজেরা ভাবুন, নেতৃত্বকে ও ভাবতে বাধ্য করুন , তাতেই হয়তো কিছু লাভ হতে পারে । শুধু লম্প-ঝম্প আর কথার মার-প্যাঁচে কিছু ঘটে না । প্রশ্ন করতে শিখুন তা হলে সমাধান পাওয়া যেতেও পারে, তৎভিন্ন নয় ।
শান্ত - ৪ আগস্ট ২০০৮ (৬:৩৫ পূর্বাহ্ণ)
আমার 19 নং কমেন্টের জবাবে ইনসিডেন্টাল ব্লগার জানিয়েছেন আমার সে আলোচনা নাকি ওনার কাছে তোলা নিক্তি পাই আনার হিসেব চাওয়ার মত শুনিয়েছে!!!
অবাক হতেই হয়!!!
এই লোক কি আমার আলোচনা বুঝে নি, নাকি বুঝেও নিজের খুশী মত আমার আলোচনার একটা কাল্পনিক অর্থ দাঁড় করিয়ে নিজের মতামত চাপিয়ে দিচ্ছেন?? যাহোক, আমি আমার বক্তব্য বুঝাতে ব্যর্থ হয়েছি এটা ধরে নিয়েই আমার 19 নং কমেন্টে কি বলতে চেয়েছিলাম তা আবার বিবৃত করি…..
আমার সেখানকার আলোচনার অংশবিশেষ আবার তুলে দিচ্ছিঃ
“…..আপনার আলোচনায় আপনি বলেছেন, “যে-কোনো সাহিত্যকে প্রথমে তো অন্তত সাহিত্যের মাপকাঠিতে উত্তীর্ণ হতে হবে, তার পর তার তত্ত্ব বিচারের প্রশ্ন, নিতান্তই যদি করতে হয়”। শরৎ সাহিত্য প্রসঙ্গে একথা বললেও শরৎ প্রসঙ্গে পরে আসছি। যেহেতু শামসুর রাহমানের জামান কৃত মূল্যায়ন নিয়েই কথা হচ্ছে- সেহেতু আপনার এই বাক্যটি সেই মূল্যায়নের ক্ষেত্রে কি প্রযোজ্য হয়নি? খালেকুজ্জামানের 7/8 পৃষ্ঠার আপনার উল্লেখিত 2/3 টি প্যারা বাদে পুরো আলোচনায় কি করেছেন?? সেখানে সাহিত্যের মাপকাঠিতে মূল্যায়ন করা হয় নি?? আপনার মত তথাকথিত সাহিত্যবোদ্ধাদের কাছে সাহিত্যের মাপকাঠির তুলনায় তত্তবিচার যতই কম গুরুত্ব বহন করুক না কেন- অন্যদের বেলাতেও একই হবে- এমন আশা করেন কি করে??”
এটা বলার উদ্দেশ্য এই যে, আপনার পোস্ট এবং আলোচনা পড়ে এটাই মনে হয় যে, খালেকুজ্জামানের পুরো আলোচনাটিতে শামসুর রাহমানকে শুধু অপরাধের কাঠগড়াতেই দাঁড় করানো হয়েছে। সাহিত্যিক হিসাবে কবি হিসাবে শামসুর রাহমানকে যেন কোন স্বীকৃতিই দেয়া হয়নি!!! “সাহিত্যের মাপকাঠিতে উত্তীর্ণ হতে হবে, তার পর তার তত্ত্ব বিচারের প্রশ্ন”- শামসুর রাহমানকে নিয়ে খালেকুজ্জামানের আলোচনায় যেন শুধু তত্ত বিচারই হয়েছে এবং ওনাকে অপরাধি হিসাবে প্রতিপন্নই করা হয়েছে!! শেষে আসমিতা তো বললেনই “.. ছত্রে ছত্রে “গণবিপ্লবের” রণহুন্কার না দেওয়া যদি কবির অপরাধ (কিংবা ঘাটতি)……….”- অথচ কোথাও কেউ দাবী করেনি যে- শামসুর রাহমানের কবিতায় বুর্জোয়া ব্যবস্থার বিরুদ্ধে গণবিপ্লবের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধ না হওয়াটা তার অপরাধ!!
সেজন্যই প্রশ্ন তুলেছিলাম- খালেকুজ্জামানের বাকি আলোচনায় কি করা হয়েছে??
এ প্রশ্নটির আরেকটি উদ্দেশ্যও ছিল- সেটি দেখানো যে- একজন সমাজতন্ত্রীর সাহিত্যালোচনার ধরণটি কেমন হয়- সেটি দেখানোর জন্য।
পোস্টদাতার কাছে (এবং আরো একজনের কমেন্টেও মনে হলো) খালেকুজ্জামানের পুরো আলোচনা গদবাধা সাধারণ প্রতিবেদনমূলক আলোচনা! কিন্তু যে বিষয়টি ওনাদের দৃষ্টিগোচরে আনতে চাই- সেটি হলো, একজন সমাজতন্ত্রী বা মার্ক্সবাদী সংগ্রামে লিপ্ত ব্যক্তি সাহিত্য নিয়ে যখন আলোচনা করেন- তখন মূলত ঐ সাহিত্যিকটি যে সময়ে সাহিত্য করছেন-সেই সময়টি বা যুগটি, সে যুগের দ্বন্দ্ব, সে সময়ের ক্লাস স্ট্রাগল, রাষ্ট্রশক্তি, মানুষের প্রতি দরদের জায়গা প্রভৃতির আলোকেই ওনার আলোচনাটি সাজান- সাহিত্য গুণবিচার- ধরে ধরে সাহিত্যিক মানদণ্ডে তার বিচার- এসব আলোচনা পুরো কলেবরের তুলনায় অনেক কমই থাকে। ফলে, একজন নিখাদ সাহিত্যিক বা একজন নিখাদ সাহিত্য সমালোচকের আলোচনার সাথে একজন বাম রাজনীতিকের সাহিত্যালোচনায় বড় ধরণের পার্থক্য থাকে। একটু খেয়াল করলেই দেখবেন- খালেকুজ্জামানের আলোচনাতেও এই বিষয়টিই ফুটে উঠেছে। প্রশংসার সমস্তই হলো ওনার সমাজ মনস্কতার সাথে, শাসক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অবস্থানের সাথে সংশ্লিষ্ট; সমালোচনার জায়গাটিও (আপনার উল্লেখিত প্যারা 2টি) সেরকম বুর্জোয়া শ্রেণীর বিরুদ্ধে শক্ত ও পরিষ্কার অবস্থান না থাকা সম্পর্কিত! বরং এটিকে সমালোচনা না বলে খালকুজ্জামানের আক্ষেপ হিসাবে ধরলে ভালো হতো!! কিন্তু দেখা গেলো- পোস্টদাতা ও তার সঙ্গী-সাথীরা এটিকে শামসুর রাহমানের অপরাধ হিসাবে চিহ্নিত করার মহা অপরাধে খালেকুজ্জামানকে সাব্যস্ত করে ওনার এবং ওনার দলের চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধারে ব্রতী হলেন!!!! অবাক ব্যাপার!!! তখন আসলেই মনে হয়- এনারা আসলে কারা? এনাদের উদ্দেশ্যই বা কি???
অস্মিতা - ৫ আগস্ট ২০০৮ (৯:৩৯ পূর্বাহ্ণ)
#শান্ত-
শেষে আসমিতা তো বললেনই “.. ছত্রে ছত্রে “গণবিপ্লবের” রণহুন্কার না দেওয়া যদি কবির অপরাধ (কিংবা ঘাটতি)……….”- অথচ কোথাও কেউ দাবী করেনি যে- শামসুর রাহমানের কবিতায় বুর্জোয়া ব্যবস্থার বিরুদ্ধে গণবিপ্লবের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধ না হওয়াটা তার অপরাধ!!
>>>>শান্ত, নীচের এই বক্তব্য তো আপনারই। নাকি “আড়াল” করতে চাইলেন? IBকে সাহিত্য সমালোচনার বাসদীয় পাঠ দেয়ার এক স্থানে আপনি লিখেছেন
এ থেকে বাসদীয় প্রজ্ঞায় সিক্ত হননি যারা, আমাদের মত সে সব সাধারণ পাঠকেরা কি বুঝে নেবে? এভাবে কি নিজের কৃতকর্ম আড়াল করা যায়?
ইনসিডেন্টাল ব্লগার - ৬ আগস্ট ২০০৮ (১:০৩ পূর্বাহ্ণ)
@শান্ত
বরং এটিকে সমালোচনা না বলে খালকুজ্জামানের আক্ষেপ হিসাবে ধরলে ভালো হতো!! কিন্তু দেখা গেলো- পোস্টদাতা ও তার সঙ্গী-সাথীরা এটিকে শামসুর রাহমানের অপরাধ হিসাবে চিহ্নিত করার মহা অপরাধে খালেকুজ্জামানকে সাব্যস্ত করে ওনার এবং ওনার দলের চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধারে ব্রতী হলেন!!!!
>>কিছু কিছু সমাজতান্ত্রিক নেতার ভাবধারায় এই “আক্ষেপ” জিনিসটা খুব interesting. অসাধারণ একটা euphemism ব্যবহার করলেন। শব্দটির একটা নতুন মানে দাঁড়ালো আমার কাছে এখন থেকে, ঠিক আপনাদের “উপলদ্ধি” আর “ঘাটতি”র মতো। ভালো বলেছেন। এসব শুনলেই আমাদের আবার একটু সংশয় হয় কিনা, তাই এতো কথার অবতারণা।
আজ ‘আক্ষেপ’, কাল ‘লেখকদেরকে পথ প্রদর্শন’, পরশু ‘উপদেশ’ ‘ধমক ধামক’, তারপরদিন ‘নজরদারী’, আর তারও পরের দিন ‘সাইবেরিয়া’ ‘সশ্রম নির্বাসন’। আর তার পর সব শেষ – শিল্প, শিল্পী, জীবন এবং সমাজব্যবস্থা। বিশ্বনন্দিত লেখক আলেকজান্ডার সলঝেনিৎসিন গত ৪ আগস্ট শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন। সোভিয়েত শ্রমক্যাম্প নিয়ে তাঁর লেখা The Gulag Archipelago বইটা ১৯৭৩ সালে পশ্চিমা দুনিয়ায় প্রথম প্রকাশিত হয়। পড়ে নিতে পারেন। নানা বিষয়ে জানতে পারবেন – স্তালিনের সময়কাল, লেখক কবিদের উপর নজরদারী, দমন পীড়ন, লোকদেখানো অন্যায্য বিচার এবং সংশোধনমূলক নির্বাসনব্যবস্থা সম্বন্ধে। ভাবছি, আপনার দেয়া কমরেড খালেকুজ্জামানের এই “আক্ষেপ” তত্ত্বটি শুনলে সলঝেনিৎসিন কি বলতেন বেঁচে থাকলে?
কি জানি, আপনাদের অভিধানে তিনিও হয়তো আমাদেরই মতো কোন একটি ‘সংঘবদ্ধ ষড়যন্ত্রকারী গ্রুপের’ অংশ যেটি বাসদ/শিবদাস/স্তালিনীয় সমাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লেগেছিল সে সময়! সত্যিই, নিজেদের আপনারা ভাবেনটা কি?
রায়হান রশিদ - ৮ আগস্ট ২০০৮ (১:৩৭ অপরাহ্ণ)
সচলায়তনে আলেক্সান্ডার সলঝেনিৎসিনকে নিয়ে কিছু আলোচনা চলছে। আগ্রহীরা পড়ে দেখতে পারেন:
http://www.sachalayatan.com/shubinoymustofi/17341
রায়হান রশিদ - ৯ আগস্ট ২০০৮ (৮:০৬ পূর্বাহ্ণ)
Spectator এ প্রকাশিত ওয়েন ম্যাথ্যুস এর লেখা, সলঝেনিৎসিনকে নিয়ে:
http://www.spectator.co.uk/the-magazine/features/880626/russias-ignorant-still-hate-solzhenitsyn.thtml
ইনসিডেন্টাল ব্লগার - ৬ আগস্ট ২০০৮ (১১:৫২ অপরাহ্ণ)
@শান্ত
এই লোক কি আমার আলোচনা বুঝে নি, নাকি বুঝেও নিজের খুশী মত আমার আলোচনার একটা কাল্পনিক অর্থ দাঁড় করিয়ে নিজের মতামত চাপিয়ে দিচ্ছেন?? যাহোক, আমি আমার বক্তব্য বুঝাতে ব্যর্থ হয়েছি এটা ধরে নিয়েই আমার 19 নং কমেন্টে কি বলতে চেয়েছিলাম তা আবার বিবৃত করি…..
>>মনে হচ্ছে আমিও ব্যার্থ হয়েছি বোঝাতে আপনাকে। ভালো মতো পুরো মন্তব্য না পড়ে না বুঝে লেগে গেছেন আগের কথার পুনরাবৃত্তি করতে। কিছু না বুঝে থাকলে, বুঝিয়ে বলবো, যেমনটা চেষ্টা করেছি নাঈম সাহেবের বেলায়। কিন্তু একই জিনিস বারবার বলাকে যুক্তিতর্ক করা বলেনা শান্ত সাহেব। বলে ভাঙ্গা রেকর্ড বাজানো, যাতে আপনি আর আপনার সহচররা বিশেষ ব্যুৎপত্তি অর্জন করেছেন বলে মনে হচ্ছে। আর আপনার অপ্রয়োজনীয় কথার ফুলঝুরি, যা অল্প কয়েক কথায় গুটিকয় মন্তব্যের মধ্যেই বেশ ব্যক্ত করা যায়, তাকে ৩০ টি পৃথক মন্তব্য জুড়ে দেয়াকে বলে ফ্লাডিং, যুক্তিতর্ক নয়। এতগুলো মন্তব্য দিয়ে কি প্রমাণ করার চেষ্টা করছিলেন? ধারে না কেটে ভারে কাটার স্বপ্ন কেবল মূর্খরাই দেখে; আপনাকে আমি মূর্খ হিসেবে ভাবতে চাইনা।
আরেকটা জিনিস, আপনার এবং আপনার সহচরদের এসব ভন্ডামী কেন? কারণ, প্রতিটি মন্তব্যেই আপনাদের একটি নির্দিষ্ট pattern আছে লক্ষ্য করেছি:
প্রথমেই যেটা করেন তা হল পোস্ট লেখককে এক পশলা গালিগালাজ আর ব্যক্তিগত আক্রমণ করেন। ফিরিস্তি দেন কিভাবে ‘আপনাদের ভাষায় কুরুচিপূর্ণ পোস্টটি যে মিথ্যা আর কুৎসায় ভরপুর এবং আপনারা যে এ বিষয়ে কোন কথাই বলার যোগ্য মনে করেন না ইত্যাদি। এরকম পিউরিটান (puritan) এবং শুঁচিবাইগ্রস্ত প্রুডিশ (prudish) মানসিকতা কোথা থেকে পেয়েছেন আপনারা? যাই হোক, এসব ডজনখানেক ভনিতা করেও আপনি তো ৩০ টা মন্তব্য দিয়েছেন এই পোস্টে, যা আর বাকী সব মন্তব্যকারীদের (আমার প্রত্যুত্তরগুলো এবং আপনার সহযোগীদেরগুলো বাদ দিলে) সম্মিলিত মন্তব্যের চেয়েও সংখ্যায় বেশী। মানুষকে এতই বোকা মনে করেন যে ধরে নিয়েছেন তারা আপনার এসব ভান ভনিতা ধরতে পারবেনা? এক্ষেত্রে আপনার কমরেড সুব্রত’র ভাষায় বলতে হয়:
পরের ধাপে যেটা ধরেন তা হল ইনটেলেকচুয়াল ভড়ং। আপনি ধরেছেন, সুব্রত ধরেছেন, আর মহামতি নাঈম সাহেব ধরার ‘চেষ্টা’ করেছেন। থাক সে কথা।
এরপর ভড়ং ধরেন ভালোমানুষী আদর্শিক নৈতিকতার (‘চোখ বন্ধ হয়ে আসা মানুষ দেখলে কষ্ট লাগে’, ‘যেটুকু সভ্যতা শিখেছি তা এই দলটির কাছেই’ ইত্যাদি)। উপরে ২৬এর আওতায় আপনার সহযোগী নীতিবাগিশের ভেক ধরা সুব্রত সরকারের ভন্ডামী তো হাতে নাতে ধরাই পড়লো ব্লগারদের কাছে, যখন তিনি নামে বেনামে অংশগ্রহণ করার চেষ্টা করলেন, এবং ধরা পড়ে আবার বড় গলায় গিয়েছিলেন ব্লগ প্রশাসককে চ্যালেঞ্জ করতে (একমাত্র একজন নির্বোধই অন্যদের intelligence কে under estimate করে!)! হ্যাঁ, Pothik একটা ব্যাখ্যা দিয়ে তার বন্ধুকে একটু বাঁচাবার চেষ্টা করেছে, কিন্তু আমরা সবাই যা বোঝার বুঝে নিয়েছি। এই আপনাদের নীতিবাগিশদের সততা আর integrity’র মান ? হাতে নাতে তারা ধরা পড়ার পর সবই স্পষ্ট হল ব্লগ দুনিয়ার সামনে। আর নাঈম সাহেব যেভাবে মানুষজনকে ‘বকলম’ বলে বেড়ান আর তার বাকী সহচররাও তাতে সমর্থন দিয়ে যান তাতে আপনাদের সাংস্কৃতিক মানও কিছুটা বুঝতে পারছি। এত অবনতি হয়েছে বাসদ কর্মীদের ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক মানের গত কয়েক বছরে? দুঃখজনক।
এরপর যেটা করেন সেটা হল পোস্ট লেখক তো বটেই, এমনকি বাকী মন্তব্যকারীদেরও কিছুই না জেনে ঢালাও আক্রমণ করে যাওয়া। এবং তাদেরকে আপনাদের কল্পিত একটি “চক্রান্তকারী গ্রুপের” অংশ হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করা। এসব করে আর কতদিন চালাবেন? একটু সতভাবে রাজনীতিটা করা কিংবা নিজের আদর্শকে defend করা কি এতই কঠিন আপনাদের জন্য যে এসব কাপুরুষোচিত কৌশলের আশ্রয় নিচ্ছেন? একটু honourable হওয়া কি এতই কঠিন আপনাদের জন্য? হতেই পারেনা যে এসব আপনারা বাসদ থেকে শিখেছেন। কিভাবে সম্ভব সেটা?
লক্ষ্য করলাম যে বারবার আপনারা establish করার চেষ্টা করছেন যে পোস্টটি আসলে গালিগালাজে ভরা। সত্যি করে দেখান তো পোস্টের ঠিক কোন জায়গাটায় গালিগালাজ আছে আপনাদের দল ও নেতাদের বিরুদ্ধে? সত্যিকারের গালি এখনো খাননি তো, তাই এসব পুতু পুতু শুচিবাইগ্রস্ত আচরণ আপনাদের। যান অন্য কিছু পরিচিত বাংলা ব্লগে, তাহলেই বুঝবেন গালিগালাজ খিস্তি কাকে বলে এবং কত প্রকারের হয় সেটা। সে সব একবার দেখলে আপনাদের এসব বিলাসী আচরণ ছুটে যাবে।
এটা হয়তো বলতাম না, এখন বলতে বাধ্য হচ্ছি। আমার অনুরোধে ওয়েবমাস্টার আপনাদের নেতাদের আর দলকে উদ্দেশ্য করে বাইরে থেকে আসা যে ১২ টি মন্তব্য মডারেট করে কেটে বাদ দিয়েছেন এখন পর্যন্ত, তা যদি দেখতেন, তাহলে আর এসব নাকি কান্না কাঁদতেন না। কারণ সে সব ছিল “সত্যিকারের” খিস্তি খেউড়ে ভরা, আপনাদের নেতাদেরকে উদ্দেশ্য করে। ওয়েবমাস্টারকে সে সব আপত্তিকর এবং উস্কানীমূলক মন্তব্য ডিলিট করতে অনুরোধ করা হয়েছিল দু’টো কারণে:
এক. আমার পোস্টের উদ্দেশ্য কাউকে অপমান করা বা অপমানিত হতে দেয়া নয় (তবে মনে হয়না সেটা বুঝতে পারার ক্ষমতা বা সে অনুযায়ী আচরণ করার উদারতা বা মুক্ত মনমানসিকতা আপনাদের কারো আছে!)।
দুই. অন্য কাউকে ফায়দা লোটার সুযোগ তৈরী করে দিতে এই পোস্ট আর এ আলোচনার অবতারণা করা হয়নি (সেটা মানা না মানা আপনাদের অভিরুচি)।
শান্ত - ৪ আগস্ট ২০০৮ (৭:০২ পূর্বাহ্ণ)
রেজাউল করিম সুমনের একটি আলোচনা এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করছি, তিনি এক জায়গায় বলেছেন “,…‘শলোখভ থেকে শামসুর : সমাজতান্ত্রিক অবমূল্যায়ন’-এর ১৯ নং মন্তব্য-প্রতিক্রিয়ায় পাওয়া গেল প্রায় কাছাকাছি মত : ‘…একজন সমাজতন্ত্রীর কাছে সবসময়ই অবশ্যই কনটেন্টের গুরুত্ব অধিক (তার মানে এই না যে — ফর্ম তার কাছে গুরুত্বহীন!!)।’ সমাজতন্ত্রী হবার যোগ্যতা আমার নেই; কিন্তু জানতে ইচ্ছে করে, একজন সত্যিকার সমাজতন্ত্রীর কি এ ধরনের খণ্ডিত ধারণা পোষণ করা সাজে? আগ্রহী পাঠক এ বিষয়ে প্রাসঙ্গিক আলোচনা পাবেন সোভিয়েত নন্দনতাত্ত্বিক আভনের জিস ও হিস্পানি নন্দনতাত্ত্বিক আদোল্ফো সাঞ্চেজ ভাজকেজ-এর রচনায়।”
একজন সমাজতন্ত্রী কনটেন্টকে অধিক গুরুত্ব দেয়- এ ধারণাটি ওনার কাছে খণ্ডিত মনে হলো! সেটা ওনার কাছে মনে হতেই পারে। তবে, এরপরে তিনি লেনিন সহ অনেকের নাম কোট করায় এবং তারপরেই লেনিনের কোটেশন তুলে এমন একটি ধারণা তুলে ধরার চেস্টা করলেন যে, তাতে মনে হলো- লেনিন প্রমুখের সাহিত্যালোচনাতেও যেন কনটেন্ট অধিক গুরুত্ব পায়নি!!! আমি ওনার উপদেশটি ওনাকেই পালন করার অনুরোধ করছি।
অন্তত টলস্টয়কে নিয়ে লেনিনের আলোচনাটি, পুশকিনকে নিয়ে গোর্কির আলোচনাটি আশা করি পড়ে দেখতে পারেন। পড়ে আমাকে জানান- সেখানে সেগুলোর কতটুকু টলস্টয়ের সাহিত্যের সাহিত্যমান নিয়ে- পুশকিনের কাব্য-নাটকের সাহিত্যমান তথা ফর্ম নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে??? লেনিন যখন টলস্টয়কে নিয়ে আলোচনা করছেন- তখন তৎকালীন রাশিয়ার প্রেক্ষাপট- সমাজচিন্তা এসব বাদ রেখে আলোচনা কি আমরা কল্পনাও করতে পারি? না। স্বভাবতই লেনিন দুটি সময়কাল- যেটিকে সন্ধিকাল বলছেন – 1861 ও 1905 সাল- এ দুটিকে ধরে, সে সময়ের দ্বন্দ্ব গুলো কিভাবে টলস্টয়কে ভাবিত করেছে- কি করে তার লেখায় এসেছে, কিকরে রাশান কৃষক শ্রেণী তার লেখায় কোন অবস্থায় এসেছে- সেগুলোই আলোচনা করেছন। এর উল্টোদিকে- টলস্টয় লিখে সার্চ দিলে তাকে কেন্দ্র করে হাজার হাজার আলোচনা পাবেন- অনেক নামী দামী সাহিত্যিকেরও আলোচনা পাবেন- ফর্ম নিয়ে, আধুনিক উপন্যাস- সাইকো এনালাইসিস- নানারকম এনালাইসিস সেখানে পাবেন, কিন্তু লেনিনের আলোচনার সাথে সেগুলোর একটি মৌলিক পার্থক্যও সেখানে আশা করি দেখতে পাবেন।
একই ভাবে পুশকিনকে নিয়ে গোর্কির আলোচনাটিতেও দেখবেন- সেখানে পুশকিনের কাব্যের কাব্যময়তা-সাহিত্যবিচার এসব মূল না; বরং পুরো আলোচনা জুড়েই আপনি পাবেন এই পুশকিন কিভাবে শাসক যন্ত্রের বিপরীতে দাঁড়িয়েছেন? কিভাবে তিনি সংগ্রাম করেছেন? কিভাবে তার লেখা সেন্সরশীপের কোপে পড়েছে? কিভাবে তিনি সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন? গোর্কীর আলোচনা তাই শুরুই হয় এভাবে, “So long as Pushkin followed the beaten path of romanticism, so long as he emulated Byron, Batiushkov, Zhukovsky and the French bards, society, cognizant of his singular talent, appreciative of the music of his new verse, applauded him. But the moment he rose to his feet and spoke out in accents purely Russian and earthy, the moment he introduced folk motifs into literature, depicted life realistically, simply and candidly, society turned against him, adopting a sneering and hostile attitude, sensing in him a relentless judge, a dispassionate observer of Russian banality, ignorance and servility”।
আশা করি আমার বক্তব্য বুঝাতে পারছি….
ইনসিডেন্টাল ব্লগার - ৬ আগস্ট ২০০৮ (১:০৯ পূর্বাহ্ণ)
এমন একটি ধারণা তুলে ধরার চেস্টা করলেন যে, তাতে মনে হলো- লেনিন প্রমুখের সাহিত্যালোচনাতেও যেন কনটেন্ট অধিক গুরুত্ব পায়নি!!! আমি ওনার উপদেশটি ওনাকেই পালন করার অনুরোধ করছি।
>>রেজাউল করিম সুমনের মন্তব্যের ওই অনুচ্ছেদটা পড়েই আশংকা হয়েছে একেবারে অপাত্রে বুঝি দান করা হল এই অসাধারণ তথ্যবহুল মন্তব্যটা। কারণ তখনই সন্দেহ হয়েছে এটা আপনার মাথার ওপর দিয়েই যাবে! আমার আশংকাই সত্যি প্রমাণিত হল অবশেষে। তখনই আন্দাজ করেছি বুঝবেন তো নাই, বরং উল্টোটা বুঝে (বা না বুঝে) নাঈম সাহেবের মতো ‘ইউরেকা ইউরেকা’ করতে থাকবেন, আর চেষ্টা করবেন কিছু quotation তুলে ধরে বাকী ব্লগ দুনিয়াকে জ্ঞানদান করার। তাই হলো তো?
কতিপয় বাসদ কর্মীর এধরণের pretension এর নমুনা শান্তর এই নতুন মন্তব্যগুলো ছাড়াও (৩৩ এর পর থেকে দেখুন) আরো পাওয়া যাবে সুব্রত’র ২৪ নং মন্তব্যে। সেখানে pretension এর নির্লজ্জ display দেখতে হলে মন্তব্য ২৪ এর নীচ থেকে তৃতীয় অনুচ্ছেদ দেখুন। ভাই collectivism এর নামে আপনাদের সবাইকে কি এক ক্ষুরে মাথা মুড়িয়ে দীক্ষা দিয়েছেন আপনাদের নেতারা? Is it some kind of party ritual?
নাঈমের সহযোগী আপনাদের এই ‘ছোট্ট সংঘবদ্ধ গ্রুপটিকে’ যতই দেখছি আমরা, ততই হতাশ হচ্ছি। রেজাউল করিম সুমনের মন্তব্যটা আবারও একটু কষ্ট করে পড়ে দেখুন। চেষ্টা করলে এবার হয়তো বুঝতে পারবেন তার লেখাটির ‘কনটেন্ট’ বা মর্মার্থ। (রেজাউলকে দেয়া আপনার উপদেশটাই আবার আপনাকে ফিরিয়ে দিলাম)।
শান্ত - ৪ আগস্ট ২০০৮ (৭:৪৮ পূর্বাহ্ণ)
টলস্টয় সম্পর্কে লেনিনের সেই বিখ্যাত মূল্যায়নের অংশ বিশেষ আপনাদের জ্ঞাতার্থে কপি পেস্ট করছিঃ
“The contradictions in Tolstoy’s works, views, doctrines, in his school, are indeed glaring. On the one hand, we have the great artist, the genius who has not only drawn incomparable pictures of Russian life but has made first-class contributions to world literature. On the other hand we have the landlord obsessed with Christ. On the one hand, the remark ably powerful, forthright and sincere protest against social falsehood and hypocrisy; and on the other, the “Tolstoyan”, i.e., the jaded, hysterical sniveller called the Russian intellectual, who publicly beats his breast and wails: “I am a bad wicked man, but I am practising moral self-perfection; I don’t eat meat any more, I now eat rice cutlets.” On the one hand, merciless criticism of capitalist exploitation, exposure of government outrages, the farcical courts and the state administration, and unmasking of the profound contradictions between the growth of wealth and achievements of civilisation and the growth of poverty, degradation and misery among the working masses. On the other, the crackpot preaching of submission, “resist not evil” with violence. On the one hand, the most sober realism, the tearing away of all and sundry masks; on the other, the preaching of one of the most odious things on earth, namely, religion, the striving to replace officially appointed priests by priests who will serve from moral conviction, i. e., to cultivate the most refined and, therefore, particularly disgusting clericalism.”।
এখন টলস্টয়ের শান্তিবাদী (অনেকটা গান্ধীবাদী!!) অবস্থান, অর্থাৎ “resist not evil” with violenceএর তীব্র সমালোচনা লেনিন তথা বামপন্থীরা করেছেন বলে কি এখন আমরা বলবো- সেটাকে লেনিন টলস্টয়ের মহা অপরাধ হিসাবে চিহ্নিত করেছেন এবং টলস্টয়কে অচ্ছুৎ হিসাবে ঘোষণা করেছেন??? কেউ যদি শুধু On the other hand এর আলোচনা উল্লেখ করে- দেখায় লেনিন টলস্টয়কে অপরাধী হিসাবে উল্লেখ করেছেন- তখন বিনীত ভাবেই জিজ্ঞেস করবো যে, লেনিন On the one hand এ কি আলোচনা করেছেন?
একইভাবে টলস্টয়কে লেনিন Mirror of the Russian Revolution হিসাবে চিহ্নিত করেছেন- তাই বলে টলস্টয়ের কোন একটি সমালোচনা করলেই সেটা লেনিনের মহা অপরাধ যিনি ভাবেন- তাদের সাথেও ডিবেট করতে রাজী আছি- তবে এরকম ব্যক্তির সাথে যে আগে শ্রেণী ও শ্রেণী প্রভাব বিষয়ে কথা বলতে হবে সেটাও বুঝতে পারছি। যাহোক, তাতেও আপত্তি নেই- কিন্তু প্রথমে তো অন্ধ আক্রোশ জনিত গালমন্দের অবস্থান থেকে বের হয়ে আসতে হবে!!
আর, রেজাউল করিম সুমনকে অনেক জ্ঞানদান করতে দেখলেও – পোস্টদাতার “কী এই “শ্রেণীপ্রভাব” ?” এ প্রসঙ্গে কথা বলতে না দেখে হতাশই হলাম; মার্ক্স-এঙ্গেলস-লেনিন-গোর্কী প্রমুখের সাহিত্যালোচনা পাঠ করার উপদেশ যিনি দিলেন; ধরে নিতে ইচ্ছা হয় যে তিনি নিজে সেসমস্ত ভালোই পাঠ করেছেন- এবং সেখান থেকেই ভেবেছিলাম- তিনি ভালোই জানেন “কী এই “শ্রেণীপ্রভাব” ?” কিন্তু দেখা গেলো- এই বিশেষ গ্রুপটির আর সকলের মত ওনারো বাসদ নিয়েই বেশী মাথা ব্যাথা- …, যাহোক কি আর করা!!!
ইনসিডেন্টাল ব্লগার - ৬ আগস্ট ২০০৮ (১:১৫ পূর্বাহ্ণ)
@শান্ত:
শান্ত বলেছেনঃ . . . আর, রেজাউল করিম সুমনকে অনেক জ্ঞানদান করতে দেখলেও – পোস্টদাতার “কী এই “শ্রেণীপ্রভাব” ? এ প্রসঙ্গে কথা বলতে না দেখে হতাশই হলাম; মার্ক্স-এঙ্গেলস-লেনিন-গোর্কী প্রমুখের সাহিত্যালোচনা পাঠ করার উপদেশ যিনি দিলেন; ধরে নিতে ইচ্ছা হয় যে তিনি নিজে সেসমস্ত ভালোই পাঠ করেছেন- এবং সেখান থেকেই ভেবেছিলাম- তিনি ভালোই জানেন “কী এই “শ্রেণীপ্রভাব” ?” কিন্তু দেখা গেলো- এই বিশেষ গ্রুপটির আর সকলের মত ওনারো বাসদ নিয়েই বেশী মাথা ব্যাথা- …, যাহোক কি আর করা!!!”
>>আমারও এই বিষয়ে জানার আগ্রহ ছিল। সেই তখন থেকে বসে আছি উত্তরের অপেক্ষায়। যে কারণে মূল পোস্টেই লিখেছি:
আপনার আক্ষেপটা বুঝতে পারি। রেজাউল করিমের উচিত ছিল অপ্রিয় এ প্রশ্নগুলোর উত্তর দিয়ে আপনাদের বাঁচিয়ে দেয়া। না করে তিনি আপনাদের সাথে অত্যন্ত অন্যায় আচরণ করেছেন। তিনি তো দিলেন না। যাই হোক তাঁকে তো দোষ দিয়ে লাভ নেই। দায়িত্বটা স্বাভাবিকভাবেই এখন আপনাদের উপর বর্তাচ্ছে। কই আপনারা এত কিছু বললেন, লিখলেন, মূল এ প্রশ্নগুলোর তো কোন সদুত্তর দিলেন না। এমনকি একরকম এড়িয়েই গেলেন। কঠিন প্রশ্নকে “কুৎসা”, “গালিগালাজ” “এসবের আমরা উত্তর দিইনা” বলে এভাবে এড়িয়ে যাওয়াটা কি ঠিক হল? আমরা সবাই যে বুঝে ফেললাম আপনার (এবং আপনার কমরেডদের) এসব চালিয়াতি আচরণ, তা কি একটু ক্ষতিকর হয়ে গেলনা আপনাদের জন্য? এ পোস্টের পাঠকরা আপনাদের মত সুযোগ্য সমাজতন্ত্রীদের সম্বন্ধে কি ভাববে এখন? আর তাছাড়া আপনি যদি না বলেন তাহলে আমরা বাকী দুনিয়াই বা জানবো কিভাবে? বরং আপনিই উত্তর দিননা শান্ত এ সংগঠনের প্রাক্তন সদস্য হিসেবে! আর নাঈম সাহেব তো অনেক জানেন টানেন (যাঁর ওপর আবার আপনার বন্ধু সুব্রত সরকারের অসীম আস্থা)। তাদের সাহায্যই বরং নিন না? আমাদেরও কৌতুকের অভাব (যেমন বলেছেন অস্মিতা) কিছুটা ঘোঁচে তাহলে! একটু দেখতে চাই নাঈম এবং আপনি নতুন কি হাস্যকর (এবং পূঁথিগত, এবং formal) তত্ত্ব নিয়ে হাজির হন এবার।
শান্ত - ৪ আগস্ট ২০০৮ (৮:০৭ পূর্বাহ্ণ)
যাহোক- এখানে সাহিত্য বিষয়ে কোন কথা বলতে চাইনি- কারণ আলোচ্য পোস্ট টিকে কখনো সাহিত্য নিয়ে আলোচনার উপযোগী কিছু মনে হয়নি- একটি গালিগালাজ সর্বস্ব পোস্টে সাহিত্য সংক্রান্ত বিষয়ে কথা বলার কোন মানে হয় না বিধায় আর কিছু বলছি না- যদিও আরো অনেক কিছু নিয়েই অনেক কথা বলা যেত!! আর এতক্ষণের আলোচনাটি করলাম- শুধু এই কারণে যে- এমন কিছু আলোচনা এসে গিয়েছিল যে, সেগুলো নিয়ে না বললেই নয় বলে মনে হয়েছিল!!
এবারে, উপরের অনেকের আলোচনার আরো কিছু বিষয়ে আলোকপাত করতে চাই…………
ইনসিডেন্টাল ব্লগার - ৬ আগস্ট ২০০৮ (১:২২ পূর্বাহ্ণ)
@শান্ত:
শান্ত বলেছেনঃ এখানে সাহিত্য বিষয়ে কোন কথা বলতে চাইনি- কারণ আলোচ্য পোস্ট টিকে কখনো সাহিত্য নিয়ে আলোচনার উপযোগী কিছু মনে হয়নি- একটি গালিগালাজ সর্বস্ব পোস্টে সাহিত্য সংক্রান্ত বিষয়ে কথা বলার কোন মানে হয় না বিধায় আর কিছু বলছি না- যদিও আরো অনেক কিছু নিয়েই অনেক কথা বলা যেত!!
>>এই নিয়ে কতবার এই একই কথা বললেন হিসেব আছে? নাকি এটা আপনাদের কোনো গোয়েবলসীয় কায়দার অংশ –একটা মিথ্যাকে বারবার বলতে থাকুন, একসময় মানুষ হয়তো সেটাকেই বিশ্বাস করতে শুরু করবে — সে আশায় এমনটি করছেন?
শান্ত - ৪ আগস্ট ২০০৮ (৮:৩৫ পূর্বাহ্ণ)
এখানে বাসদকে নিয়ে গালিগালাজমূলক পোস্ট দেয়ার পরে- সেগুলো নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে- সামনে আরো করবো ; কিন্তু খুব অবাক হয়ে ও কষ্ট নিয়ে দেখলাম- আমার বক্তব্যকে খণ্ডন না করেই এক লাইনে এক ব্যক্তি, নাম আহমেদ মুনীর, মন্তব্য করে বসলেন- সেখানে জানালেন: বাসদের না-কি মুখোশ উন্মোচিত হয়ে গেছে!!!!
20 নং কমেন্টে তিনি বললেন, “লেখাটা পড়লাম । জানিনা কে এই লেখক । তবে মনেহয় বাসদকে তার ভালই জানা । মুখোশ খুলে গেছে বাসদের।”
এহেন মন্তব্যের আবার যখন প্রতিক্রিয়া আসা শুরু করলো- তখন দেখা গেলো- তিনি নিজেকে একটু আড়াল করার চেস্টা করছেন এই বলে যে- তিনি নাকি মুখোশ খোলা মানে সাহিত্য বিষয়টিকে ইণ্ডিকেট করতে চেয়েছেন!!!!
এনাদের এমন তরো আলোচনার বহর দেখে হাসবো না কাঁদবো ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না!!
উনি যে মুহুর্তে ওনার কমেন্ট টি করেছেন (20 নং)- সেটি দেখে যে কেউ বুঝবে- মুখোশ খোলা মানে তিনি কি বুঝাতে চেয়েছেন- আর এখন কি সুন্দর তিনি প্রতিক্রিয়ার মুখে ভোল পাল্টে নিলেন!!! ইনসিডেন্টাল ব্লগার আলোচ্য পোস্টে- আর তার আলোচনায় সাহিত্য বিষয়ে বাসদের কোন মুখোশ খুলেছেন বলেন দেখি- যেটি দেখে মুনীর সাহেবের মনে হতে পারে যে- বাসদকে লেখকের ভালোই চেনা আছে??? পোস্টদাতা সাহিত্য নিয়ে আলোচনা যা করেছেন- বাসদের তথ্য যা দিয়েছেন- সেটিতো শুধু খালেকুজ্জামানের সেই পুস্তিকা থেকে কিছু কোট করাই। এর বাইরে যা তিনি করেছেন- বাসদের নামে নানারকম অপ্রাসঙ্গিক অভিযোগের ফুলঝুড়ি ছোটানো- আর সেটি পড়ে যখন মুনীর বলেন যে- লেখকের বাসদকে ভালো চেনা আছে- বাসদের মুখোশ খুলে গেছে- তখন সেটার মানে কি দাঁড়ায়???
আর, মুনীর পরে নিজেও বাসদের সাহত্য রুচি নিয়ে- মুবিনুল হায়দারের নাম উল্লেখ করে- যে আলোচনাটি উপস্থাপন করেছেন- সেখান থেকে কি বুঝা যায়? বরং মনে হয় তিনি বাসদের সাহিত্যরুচির ব্যাপারে ইনসিডেন্টাল ব্লগারের চেয়েই ভালো জানেন!!!! আর, তিনি দাবী করেছেন- ইনসিডেন্টাল ব্লগারই নাকি ওনার সামনে বাসদের মুখোশ খুলে দিয়েছেন- সাহিত্য প্রসঙ্গে!!!!
আহমেদ মুনীরকে বিনীত ভাবে অনুরোধ করবো- যুক্তি-তর্ক-আলোচনায় সবসময়ই আর যাই হোক একটু সৎ থাকার চেস্টা করুন- কেননা ক্যারেকটারটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়, মনে রাখবেন।
ইনসিডেন্টাল ব্লগার - ৬ আগস্ট ২০০৮ (১:২৭ পূর্বাহ্ণ)
@শান্ত:
শান্ত বলেছেন (আবারো):এখানে বাসদকে নিয়ে গালিগালাজমূলক পোস্ট দেয়ার পরে
>>এই যে একই কথা আবারো বললেন। আপনার সমস্যাটা কি বলুন তো? এতটাই কি গোয়েবলস্ প্রভাবিত আপনারা? নাকি পার্টি হাই কমান্ড থেকে আপনাদের এই করে যেতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে? শুনলাম, আপনাদের কেন্দ্রীয় নেতা (সভাপতি) খালেকুজ্জামান লিপন সাহেব নাকি তোপখানা আর বিশ্ববিদ্যালয়/বুয়েট এলাকার মধ্যে বেশ হন্তদন্ত হয়ে ছুটোছুটি করছেন আজকাল। নিন্দুকেরা বলছে ছুটোছুটির পরিমাণ একটু নাকি বেড়েই গেছে যেদিন থেকে আপনারা এই পোস্টে পদধুলি দেয়া শুরু করেছেন ঠিক তার পরদিন থেকেই। কি কাকতালীয় ব্যপার বলুন তো!
শান্ত - ৪ আগস্ট ২০০৮ (১০:০০ পূর্বাহ্ণ)
এবারে ইনসিডেন্টাল ব্লগারের কিছু আলোচনার দিকে দৃষ্টি দেয়া যাক। এই লোক একের পর এক মন্তব্য করে গেছেন- ওনার মন মত যখন যেটা খুশী বলেছেন- কোন বক্তব্য নিয়ে আপত্তি জানালে- সেটা থেকে সরে আরেকটি বক্তব্য তুলে ধরছেন- এভাবে মিথ্যার মায়াজাল বিস্তৃত করেছেন। অবলীলায় আতাত শব্দটি ব্যবহার করেছেন- আতাত নিয়ে আপত্তি তুললে বলেছেন- সদ্ভাবের ঘাটতি নেই- ভাগ্যের ফেরে ক্ষমতার শিকেটা ছিঁড়ে তার কিছু ভাগ পাওয়ার কথা বলেছেন- বাসদ কর্মীদের খুশীতে আত্মহারা হওয়ার কথা বলেছেন- ভ্যানগার্ডের মিউ মিউ আলোচনার কথা বলেছেন- ভ্যানগার্ডের আলোচনা দেখিয়ে দিলে- বলছেন, অন্যদের বক্তব্য/আলোচনা এনে হাজির করে তুলনামূলক আলোচনা করেছেন…….
এহেন ব্যক্তির সাথে ধরে ধরে লাইন বাই লাইন আলোচনার ইচ্ছা, প্রবৃত্তি, ধৈর্য কোনটাই নেই, মানে আগ্রহবোধ করছি না। শুধু কয়েকটি বিষয় সকলের সামনে তুলে ধরছিঃ
*1/11 এ জরুরী অবস্থা জারি হলে- বাংলাদেশে সমস্ত দলগুলোর মধ্যে (ব্যক্তিগত কারো অবস্থান বিবেচ্য নয়!) বাসদ-ই সর্বপ্রথম জরুরী অবস্থার বিরোধীতা করে।
*12 জানুয়ারী, 2007 এ বাসদ বিবৃতি দিয়ে জরুরী আইন প্রত্যাহার, এবং জনগণের ভোটাধিকার ও মৌলিক গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবি জানায়। অধিকাংশ পত্র-পত্রিকা জরুরী বিধির আওতায় সেই বিবৃতি ছাপায় না; কিন্তু এই প্রেস রিলিজের কপি সংরক্ষিত।
*1/11 এর পরে সমগ্র বাংলাদেশের মধ্যে সর্বপ্রথম জরুরী অবস্থা ভঙ্গ করে সমাবেশ ও মিছিল করে বাসদের জোট গণমুক্তি আন্দোলন। 13`জানুয়ারীতে গণমুক্তি আন্দোলনের সমাবেশে যথারীতি পুলিশী বাধা উপস্থিত ছিল। মুক্তাঙ্গনের এই সমাবেশ মিছিলের দাবীও ছিল জরুরী আইন প্রত্যাহার।
ইনসিডেন্টাল ব্লগার - ৬ আগস্ট ২০০৮ (১:৩৬ পূর্বাহ্ণ)
@শান্ত:
শান্ত বলেছেনঃ এহেন ব্যক্তির সাথে ধরে ধরে লাইন বাই লাইন আলোচনার ইচ্ছা, প্রবৃত্তি, ধৈর্য কোনটাই নেই, মানে আগ্রহবোধ করছি না। শুধু কয়েকটি বিষয় সকলের সামনে তুলে ধরছিঃ
>>নাঈম বলেছে, শান্ত বলছে, সুব্রত বলেছে। একই কথা আপনি আর আপনার দলের প্রত্যেকেই বারবার করে বলে যাচ্ছেন। শান্ত’র ‘হুক্কা হুয়া’ তত্ত্ব’র (শান্ত:২০) বুঝি এর চেয়ে ভালো আর কোন উদাহরণ হয়না। আর বিতর্ক করতে এসে এ কেমনতরো আচরণ? পিউরিটান আচরণ (‘অসংস্কৃত, কুরুচিপূর্ণ লেখার জবাব দেইনা আমরা’ ইত্যাদি)? যুক্তি থাকলে দেখাবেন। টিন এজার বালক বালিকাদের মত ঠোঁট উল্টে নালিশ করতে আসবেন না প্লীজ তর্কে হেরে গিয়ে (যদিও এটা আমার কাছে হারজিতের কোন বিষয় নয়)। এই ব্লগে আপনারা এসেছেন নিজের ইচ্ছায়, কেউ বাধ্য করেনি আপনাদের। grow up! এসব তো আপনার দল থেকে আপনাকে শেখানোর কথা না! মনে তো হয়না দুনিয়াদারীর কোন খবর রাখেন আপনারা। নিজেদের পিঠচাপড়াচাপড়ির কুপমন্ডুক বুদবুদের (bubble) মধ্যে বাস করতে করতে পরিণত মানুষের মত আচরণ করতে শেখা আর হয়ে উঠলোনা আপনাদের, সেটাই দুঃখ।
ইনসিডেন্টাল ব্লগার - ৬ আগস্ট ২০০৮ (২:০৪ পূর্বাহ্ণ)
*1/11 এর পরে সমগ্র বাংলাদেশের মধ্যে সর্বপ্রথম জরুরী অবস্থা ভঙ্গ করে সমাবেশ ও মিছিল করে বাসদের জোট গণমুক্তি আন্দোলন। 13`জানুয়ারীতে গণমুক্তি আন্দোলনের সমাবেশে যথারীতি পুলিশী বাধা উপস্থিত ছিল। মুক্তাঙ্গনের এই সমাবেশ মিছিলের দাবীও ছিল জরুরী আইন প্রত্যাহার।
>>কথাটা মনে হয় ঠিক বললেন না। আমার ছোট ফুপা তার মেজ শালিকার বিয়েতে (১/১১র ঠিক পরপরই) গিয়ে তার বেয়াই বেয়াইন এবং তাদের দুই তালাতো ভাই এবং তাদের স্ত্রী এবং ছেলে মেয়েরা মিলে দলগতভাবে সামরিক সরকারের প্রতিবাদে কিছু অনুযোগ/সমালোচনা করেছিলেন সে অনুষ্ঠানে, জরুরী অবস্থা সর্বপ্রথম ভঙ্গ করে। সেটাই সম্ভবত প্রথম ঘটনা। কোন পত্রিকা সেটা ভয়ে রিপোর্ট করেনি; এমনকি মফস্বলের লোকাল পত্রিকাটাও মোসাহেবী করে বা শত্রুতা/ষড়যন্ত্র করে সে খবর ছাপায়নি। কি অন্যায় ভাবুন দেখি! আমার অবশ্য শুনে সবসময়ই মনে হয়েছে এখানে অন্য কোন ব্যপারও থাকতে পারে। এটা খুবই সম্ভব যে আমার ফুফাতো ভাইয়ের ১৩ বছর বয়সী ফাজিল ছেলেটা, যার কাছ থেকে আমি সর্বপ্রথম এই গল্পটি শুনি, সে হয়তো আমাদের ইমপ্রেস করার জন্য পুরো ব্যপারটা বানিয়ে থাকতে পারে। আজকালকার ছেলে তো, কিছুই বিশ্বাস নাইরে ভাই।
শান্ত - ৪ আগস্ট ২০০৮ (১০:১৫ পূর্বাহ্ণ)
*এমনিকরে গণমুক্তি আন্দোলনের ব্যানারে এবং বাসদের নিজস্ব ব্যানারে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান ব্যক্ত করেছে।
*বস্তি-হকার উচ্ছেদ; শ্রমিক ছাটাই- কারখানা বন্ধ এসবের বিরুদ্ধে জোরালো আওয়াজ বাসদ সহ অন্যান্য বামেরা তুলেছে।
*তথাকথিত দুর্নীতি বিরোধী অভিযানে যখন গোটা দেশ খুশী- তখন বাসদ প্রশ্ন তুলেছে, “সমাজের অভ্যন্তরে দুর্নীতির সমস্ত আয়োজন অক্ষুন্ন রেখে এমন লোক দেখানো অভিযানে আদতে কি হবে?” যখন ব্যবসায়ীরা একের পরে এক ছাড়া পেয়ে গেলো তখনও বাসদই উচ্চকিত হয়েছে।
*চাল নিয়ে সংকটের সময়ে ব্যবসায়ী সিণ্ডিকেটদের নিয়ে বাসদ কন্টিনিউয়াস কথা বলে গিয়েছে এবং বারবার জানিয়েছে- এই সরকার কাদের হয়ে কথা বলেছে- কাদের পক্ষে কাজ করছে।
*ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনায়- ঢাবি, জাবি-জগন্নাথ কলেজ- ইডেন কলেজের ছাত্র ফ্রন্ট কর্মীরাই মামলা খেয়েছে, পুলিশী নির্যাতন-হয়রানির স্বীকার হয়েছে দীর্ঘদিন। এই ঘটনায় যখন বিভিন্ন দল নিজেদরা যুক্ত নয় বলে বারবার বিবৃতি দিচ্ছিলো- তখন একুশে টিভিতে খালেকুজ্জামান ও সিপিবির মঞ্জুরুল আহসান খান সদর্পে ঘোষণা দিচ্ছেন- আমাদের ছেলেরা এই ঘটনায় আসামী হয়ে নির্যাতনের সম্মুখীন হচ্ছে।
ইনসিডেন্টাল ব্লগার - ৬ আগস্ট ২০০৮ (১:৫৫ পূর্বাহ্ণ)
এতো কিছু করেছেন, অথচ পত্রিকাগুলো তার কিছুই কাভারেজ দেয়নি? খুব অন্যায়। ওরাও কি আপনাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত? কি সাংঘাতিক!
কাভারেজ না পাওয়ায় জরুরী অবস্থার দোহাই দেয়াটা মনে হয় ঠিক হলনা। যখন জরুরী অবস্থা ছিলনা তখনও যে খুব পত্রপত্রিকায় কাভারেজ পেতেন আপনারা তা তো না। সেকি কর্মকান্ড করেও পেতেন না, নাকি কিছু না করেই, তা আপনারাই ভালো জানবেন। আমাদের তো আর কোনভাবে জানবার উপায় দেখিনা। আমি অবশ্য আপনাদের ছেলেপিলেদের সবসময়ই কাজ করতে এবং ছুটোছুটি করতে দেখেছি; মূলত গণচাঁদা collection এর কাজে। তারা কিন্তু খুবই কর্মঠ এবং পরিশ্রমী ছিল, মানতেই হবে। যখনই তাদের সাথে দেখা হোতো, তারা হয় চাঁদা সংগ্রহ করে ফিরছে, না হলে চাঁদা সংগ্রহ করতে যাচ্ছে শহরের কোন নির্দিষ্ট এলাকায়। তাদের বিরুদ্ধে আর যাই হোক অকর্মন্যতার অভিযোগ দেয়াটা হবে খুবই অন্যায়।
সত্যি বলতে কি, তুলনামূলক বিচারে আগের তুলনায় বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে বরং এই জরুরী অবস্থার সময়েই আপনাদের নেতারা আমন্ত্রণ পেয়েছেন বেশী (একটা rough estimate থেকে বলছি)। কারণ মনে হল যেন বেশ কয়েকবারই টিভি টকশো গুলোতে রাজেকুজ্জামান রতন আর খালেকুজ্জামানকে দেখলাম আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে (নাকি ভুল দেখলাম?)। বলতেই হবে আপনাদের দলের এবং এর নেতাদের জন্য এটা জরুরী অবস্থার একটা অন্তত ইতিবাচক দিক, তা তো আপনি নিশ্চয়ই স্বীকার করবেন। অবশ্য আপনি স্বীকার না করলেও কিছু যায় আসেনা। আপনাদের কয়েকজন নেতাকর্মীকে এবিষয়ে বেশ সন্তোষ প্রকাশ করতে দেখেছি। কেনই বা করবেন না সন্তোষ প্রকাশ? ঠিক করেছেন আপনাদের নেতারা এ সব প্রচারের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে।
মুহম্মদ জাফর ইকবালের কলামে পড়েছিলাম গত বছর – সব টিভি চ্যানেলকে নাকি কাদেরকে কাদেরকে ডাকতে হবে অতিথি হিসেবে তা ক্যান্টনমেন্ট থেকে তালিকা (approved list) দিয়ে দেয়া হয়েছিল। আমরা অত্যন্ত খুশী হয়েছিলাম যে এই সুযোগে কমরেড জামান কমরেড রতনরা অন্তত মূলধারার মিডিয়াতে নিজেদের ধারার রাজনীতির কথাগুলো তুলে ধরার সুযোগ পেলেন। কিন্তু কিছু প্রশ্ন রয়েই যায়। এসব টক শোতে আপনাদের নেতৃবৃন্দ কি সামরিক সরকারের বৈধতা নিয়ে সরাসরি কিছু বলেছেন? অনেক কথাই তো তারা আলোচনা করেছেন সেখানে, সরকারের সাংবিধানিক বৈধতার বিষয়গুলো কেন তেমন sharply উঠে আসেনি তাদের বক্তব্যে? পুরো বাংলাদেশকে যেভাবে বিরাজনীতিকরণের আয়োজন/ষড়যন্ত্র চলছিল, সে সব বিষয়ে কি আপনাদের নেতারা দৃঢ়ভাবে স্পষ্টভাবে বলতে পারতেন না? আমরা তো মনে করি ১/১১ হল সেই দিন যেদিন গণতন্ত্র এবং সংবিধানকে হত্যা করা হয়েছিল। রাজনীতির ভাষায় বলতে গেলে গণতন্ত্রের লাশের উপর দাঁড়িয়ে এ সরকার দুর্নীতিদমনের নাটক আস্ফালন তর্জন গর্জন করে যাচ্ছে। আপনাদের নেতারা কি সে সব কথা বলেছেন টিভি টকশোগুলোতে? একটু ব্যাখ্যা করতে পারেন বিষয়গুলো? New Age এর সম্পাদক নূরুল কবীর এর মত মানুষেরা তো স্পষ্টকথনের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন দেশের বিবেকবান মানুষদের সামনে। বিপ্লবী রাজনীতির নেতা হিসেবে আপনাদের নেতাদের কি সেভাবে spade কে spade বলার দায়িত্ব আরো বেশী ছিলনা?
আরেকটা ব্যপার বুঝতে পারিনা আমরা। মুল ধারার প্রিন্ট মিডিয়া না হয় নাই ছাপালো আপনাদের বীরত্বের গাঁথা। এসব বীরত্ব ও ত্যাগের কাহিনী আপনারা তো vanguard এর পাতায় পাতায় এমনকি রঙিন ছবিসহ তুলে ধরতে পারতেন। পারতেন না আপনারা তা করতে? তাহলে করলেন না কেন? সেটা নিয়েই একটু ধন্দে আছি আরকি! আমাদের মত সাধারণ মানুষেরা আর নাহলে কিভাবে আপনাদের বিপ্লবী জোশ কিংবা ত্যাগ নিপীড়ন নির্যাতনের কথা জানবে? বলুন? আমাদের জানবার সুযোগ না দিয়ে একদমই ঠিক করেননি কিন্তু বলে দিলাম! এভাবে কি প্রচারের তোয়াক্কা না করে সবসময় পর্দার অন্তরালে (কোন স্বীকৃতি ছাড়াই) কাজ করে যেতে আছে দেশের মানুষকে অপরাধবোধের নদীতে ডুবিয়ে-ভাসিয়ে দিয়ে?
শান্ত - ৪ আগস্ট ২০০৮ (১১:০৮ পূর্বাহ্ণ)
*বাসদ তার সীমিত শক্তি দিয়ে প্রথম থেকেই সরকারের, সাম্রাজ্যবাদীদের বিভিন্ন পদক্ষেপ/ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধাচরণ বরাবরই করে এসেছে; সেই সাথে শক্তি-সামর্থের কথা বিবেচনা করে বামদের বৃহত্তর ঐক্যের প্রয়োজনীয়তাও সবসময়ই অনুভব করেছে। ভ্যানগার্ডের আগস্ট সংখ্যায় লিড আর্টিকেলে তেমনি বাম ঐক্যের ডাক আমরা পাই।
*12 সেপ্টেম্বরে গণমুক্তি আন্দোলন- 5 বাম দল মিলে বৃহত্তর ঐক্য বাম মোর্চা গঠন করে। যেখানে দক্ষিণপন্থী সুবিধাবাদ ও বাম হঠকারীতার পথ পরিহার করে গণআন্দোলনের ধারায় জনগণের শক্তিকে সংগঠিত করার অঙ্গীকার করা হয়।
*আজ অবধি- বাসদ, গণমুক্তি আন্দোলন, বাম মোর্চা- নিজস্ব ও জোটবদ্ধভাবে কাজ করে যাচ্ছে- অনেক বড় কিছু করে ফেলতে না পারলেও- বুর্জোয়া শাসক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে পরিষ্কার ও স্পষ্ট অবস্থান নিয়েই আছে।
ইনসিডেন্টাল ব্লগার - ৬ আগস্ট ২০০৮ (২:০৬ পূর্বাহ্ণ)
উপরের প্রত্যুত্তর দেখুন। এক কথা বারবার বলার অভ্যাস নেই।
শান্ত - ৪ আগস্ট ২০০৮ (১১:৩১ পূর্বাহ্ণ)
ফলে কেউ যদি বলেন- বাসদ এই সেনা সমর্থিত সরকারকে উৎখাত করে ফেলেনি; মানতে রাজী আছি; বাসদ এই সেনা সমর্থিত সরকারকে উৎখাতের ডাক দেয়নি- মানতে রাজী আছি; বাসদ এই সেনা সমর্থিত সরকারকে সামান্য নাড়াও দিতে পারেনি বা দেয়নি- সেটাও মানতে রাজী আছি;….. কিন্তু যখন বলা হয়- এই সরকারের সাথে আঁতাত আছে- কোরেশীর সাথে মিলে ক্ষমতার ভাগের শিকেটা আদায়ের চেস্টা করছে,- অসদ্ভাবের কমতি আছে…… তখন সেই অন্ধ আক্রোশী অভিযোগকারীর প্রতি শুধু করুনাই হয়!!!!
এ কদিনে অনেক কথা বলেছি – আশা করি আমার মূল বক্তব্য বুঝাতে পেরেছি- ……
সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
ইনসিডেন্টাল ব্লগার - ৬ আগস্ট ২০০৮ (২:২২ পূর্বাহ্ণ)
@শান্ত:
শান্ত বলেছেনঃ কিন্তু যখন বলা হয়- এই সরকারের সাথে আঁতাত আছে- কোরেশীর সাথে মিলে ক্ষমতার ভাগের শিকেটা আদায়ের চেস্টা করছে,- অসদ্ভাবের কমতি আছে…… তখন সেই অন্ধ আক্রোশী অভিযোগকারীর প্রতি শুধু করুনাই হয়!!!!
>>আবারো একই ‘আঁতাত’ point! একবার তো ব্যাখ্যা দেয়াই হয়েছে ভাই শব্দটির প্রয়োগের ব্যাপারে। ‘আঁতাত-কোরেশী’ বিষয়ে যা লিখেছি মুল পোস্টে তাকে বলে figuratively speaking (লিন্কটি দেখুন) । এটা এক ধরণের stipulative description ও বলতে পারেন। একে এভাবে literally দেখানোর চেষ্টা করে যাচ্ছেন কেন বারবার? মনে হচ্ছে ভালোই lexically challenged! অনুগ্রহ করে বই থেকে ভাষাপ্রয়োগের এই সাধারণ বিষয়গুলো একটু বুঝে নিন আর আমাকে এবং এই পোস্টের বাকী মন্তব্যকারীদেরও রেহাই দিন। নাকি এটা (আঁতাত-কোরেশী) আপনাদের কাছে অথৈ জলে খড়কুটোর মত? যার ওপর নির্ভর না করে আপনাদের কমরেড খালেকুজ্জামানের মানইজ্জত (যেটাকে পোস্টলেখক নাকি গালিগালাজ করে ধুলোয় লুটিয়ে দিয়েছে আপনাদের puritan দৃষ্টিভঙ্গী অনুযায়ী) আর কোন কুটকৌশল প্রয়োগ করে পুনরুদ্ধার করা যাচ্ছেনা?
খুব কষ্ট লাগে আপনাদের কয়েকজনের মত তোতাপাখির বুলি আওড়াতে থাকা এমন ব্রেনওয়াশড মানুষ দেখলে যাদের কোন স্বাধীন চিন্তাভাবনা নেই। নেই কিন্তু তারা সেটা কখনোই জানেননা, মানা বা স্বীকার করা তো দূরের কথা। উল্টো কেউ যদি সেটা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখানোর চেষ্টা করে তাহলে তো কথাই নেই – সেই উপযাজক ব্যক্তিটি তখন আপানাদের চোখে হয়ে যান ‘অসৎ, ষড়যন্ত্রকারী, মিথ্যেবাদী’। বোঝেন অবস্থা! আর এমনই মগজধোলাইয়ের স্বীকার তারা যে এমনকি তাদের নেতা ও দলের কাছে submission-টাকেও তারা সন্তুষ্ট মনে মেনে নিয়েছেন নিজেদের rational যুক্তিনির্ভর সিদ্ধান্ত হিসেবে। নিজেকে মিথ্যে প্রবোধ দেয়ার বুঝি এর চেয়ে ভালো কোন উদাহরণ হতে পারেনা। আহা, কেউ যদি আপনাদের জন্য একটা rehabilitation centre খুলতে পারতো তাহলে খুব কাজের কাজ হোতো।
শান্ত - ৪ আগস্ট ২০০৮ (৭:৪৫ অপরাহ্ণ)
এক বন্ধুর অনুরোধে আরেকটু লিখছি- যদিও সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, এখানে এই পোস্টে আর কোন কথা বলবো না- তার অনুরোধ শরৎ নিয়েও যেন কিছু বলি এখানে…., যেহেতু এই পোস্টকে সাহিত্য আলোচনার উপযোগী মনে করছি না- সেহেতু খুব সংক্ষেপে কটি বিষয়ে টাচ করছি- বিস্তারিত আলোচনা- যেকোন তর্ক বিতর্কই হতে পারে- স্বতন্ত্র কোন এক পোস্টে যেখানে এ পোস্টের মত সাহিত্যালোচনার বাইরের নির্লজ্জ মিথ্যা অভিযোগের পাহাড় থাকবে না…..
…..
শান্ত - ৪ আগস্ট ২০০৮ (৯:৫৮ অপরাহ্ণ)
১। প্রথমেই আসি পথের দাবী প্রসঙ্গে। অনেকেই জানাচ্ছেন- বাসদের মতে এই “পথের দাবী” নাকি “সাহিত্য মানোত্তীর্ণ”, “বিপ্লবী”, “উচ্চাঙ্গ সাহিত্য”, “উন্নত সাহিত্য”… ইত্যাদি। কিন্তু বাসদ কবে কোথায় এই ধরণের দাবী করেছে একটু দয়া করে জানালে কৃতার্থ হতাম।
আমি বাসদ ও এসইউসিআই এর এ সংক্রান্ত কিছু লেখনী আবারো পড়ে দেখলাম, কই সেরকম দাবী তো পেলাম না???
যেটি পেয়েছি- সেটি হলো: একটি সময়ের আলোচনা- যুগের আলোচনা। যুগটি হলো বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের যুগ। কংগ্রেসের মধ্যে দুটো গ্রুপ– একদল স্বশস্ত্র বিপ্লবের পক্ষে (সুভাষের নেতৃত্বে), আরেকটি গান্ধীর নেতৃত্বে এর বিরুদ্ধে। সে সময় শরৎ নিসংকোচে সুভাষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন- বৃটিশদের বিরুদ্ধে স্বশস্ত্র বিপ্লবের পক্ষে যুক্তি করছেন, যারা বিপ্লবীদের সন্ত্রাসী বলছেন- বিপ্লবকে সন্ত্রাসবাদ বলে আখ্যা দিচ্ছেন- তাদের বিরুদ্ধে কথা বলছেন, এবং তিনি “পথের দাবী” লিখলেন- যার কেন্দ্রীয় চরিত্র বিপ্লবী গুপ্ত সংগঠনের নেতা। সব্যসাচী চরম রোমান্টিক ক্যারেক্টার মনে হতে পারে- তবে সেই যুগে একজন জ্ঞানে, চিন্তা-ভাবনায় গভীর দরদবোধে, প্রবল দেশাত্ববোধে নানাদিক দিয়ে এমন শ্রেষ্ঠ হিসাবে এই চরিত্র সৃষ্টি- সে আমলের বিপ্লবীদের জন্য অনুপ্রেরণা হয়েই থাকবে। এবং এটাই সত্য যে, সরকার বেআইনী করলেও সেই যুগে ছাত্র- যুবক তরুনরা গোপনে এই বই পড়তো এবং বিপ্লবী হওয়ার স্বপ্ন দেখতো। একজন বিপ্লবীর চরিত্রে সমস্ত গুণের সন্নিবেশ ঘটানোর কারণ- ঐ যুগে বিপ্লবীদের সামনে এই সব্যসাচী চরিত্রটি অনুপ্রেরণা হিসাবেই কাজ করানো।
বাসদ পথের দাবী নিয়ে আলোচনা করলে- এটিকেই সামনে আনে বলে আমি জানি।
সাহিত্যমান বিচারে এটাকে অতুলনীয় বলতে কখনো দেখি নি- তবে যুগের প্রয়োজনের নিরীখে অতুলনীয় সৃষ্টি সবসময়ই বলেছে। অতুলনীয় এ কারণে- পুরো বৃটিশ পিরিয়ডে এমন ডিরেক্ট আর কোন উপন্যাস নেই। রবীন্দ্রনাথের চার অধ্যায়, ঘরে বাইরে উপন্যাসে উল্টো বিপ্লবীদের, স্বদেশীদের খাটো করেই চিত্রিত করা হয়েছে!! সে সময়ে অনেক রথী-মহারথী শিল্পী সাহিত্যিক ছিলেন- কিন্তু শরৎ নজরুলের মত করে এমন বৃটিশদের বিরুদ্ধে কলম ধরা লেখক খুব বেশী ছিল না।
২। পোস্টদাতা তার আলোচনায় “পথের দাবী” সম্পর্কে এক ধরণের মিশ্রণের কথা বলেছেন: মাসুদ রানা+দস্যু বনহুর+ কবীর চৌধুরী = পথের দাবী!!! নিখাদ সাহিত্যরস অন্বেষীর এহেন দশা দেখে মনে হয়, ভাগ্যিস বড় মাপের শিল্পী-সাহিত্যিকেরা ওনার মত ছিলেন না!!! একজন লেখক বা সাহিত্যিকের যুগ- কাল- প্রেক্ষাপট- ঐতিহাসিকতা এসব বিবেচনায় না আনলে শেক্সপীয়রের নাট্যগুলোকেও কখনো আজকের বাংলা সিনেমা- কখনো গাজাখুরী আর কখনো রূপকথাই মনে হবে বৈকি!!! আজকের সমাজে দুর্ধর্ষ স্পাই মাসুদ রানা, সুপারন্যাচারাল পাওয়ার সমৃদ্ধ হিমু পড়ে একজন যুবকের যে রোমান্টিসিজম- আর একটি পরাধীন দেশে দেশপ্রেমী-বলিষ্ঠ-সাহসী বিপ্লবী সব্যসাচী পড়ে যে রোমান্টিসিজম দুটো কি এক হলো????
৩। একটি প্রশ্ন তোলা হয়েছে যে, বাসদ কর্মীরা কেন তাদের অফিসিয়াল সাহিত্য রুচিকে নির্বিচারে মেনে নেয়?? “শিবদাস ঘোষ শরৎচন্দ্রের লেখা পছন্দ করতেন। মানিক মুখোপাধ্যায়ও করেন। খালেকুজ্জামানও করেন। করেন মবিনুল হায়দার চৌধুরীও। আর তাই তাঁদের দলের আর সকলেও করেন! …”।
এখানে প্রথমেই বলে রাখি- বাসদের প্রত্যেকের সাহিত্য রুচি একরকম নয়; সকলেরই শরৎ খুব প্রিয় এটাও ঠিক নয়; ফলে এমন ঢালাও মন্তব্য ভিত্তিহীন।
তাহলে ঘটনাটি আসলে কি?
লেনিন যখন টলস্টয়কে নিয়ে আলোচনাটি করলেন- যুগকে ধরেই আলোচনা করলেন- করে দেখালেন কিভাবে টলস্টয়ের লেখায় 1861 এর ভূমি থেকে চাষীদের মুক্ত হওয়ার অধিকার প্রতিষ্ঠার পরের দ্বন্দ্বগুলো প্রভাবিত করেছে- তখন কিন্তু সেটি একটি যুক্তি। আর এই যুক্তিকে খণ্ডন করে পাল্টা যূক্তি না আসলে যে কেউই সে যুক্তিকে সঠিক হিসাবে গ্রহণ করতেই পারে। সেটিই হয়েছে। লেনিনের এমনতরো অসংখ্য যুক্তিকে দুনিয়ার দেশে দেশে একমত হয়ে মেনে নিয়েছে। এখন একজনের টলস্টয়ের চেয়ে দস্তয়ভস্কির লেখা বেশী টানতে পারে- কিন্তু টলস্টয়ের প্রসঙ্গে লেনিন যে যুক্তি করেছেন- সেটিকেও সে সঠিক মনে করতে পারে। এটাকে বলে যুক্তির প্রতি সাবমিশন। সেটাকে তখন আর সাহিত্যরুচি বলে না।
একইভাবে, বাসদের কেউ একজন শরতের ভক্ত হতে পারে যেমন- তেমনি একজন মানিকের- কেউ ইলিয়াসের- কেউ রবীন্দ্রনাথের ভক্ত হতেই পারে। সেই সাথে সাথে শরৎ মূল্যায়ন প্রসঙ্গে (এ মূল্যায়ন সাহিত্যের নিরীখের চেয়েও সমাজমনস্কতার নিরীখে) বাসদের যুক্তির সাথেও একমত পোষণ করাটাই স্বাভাবিক। ফলে- সেটাকে কিভাবে সাহিত্যরুচি বলা হবে?
এখানে আরেকটি বিষয় আছে। বাসদের একটি সিদ্ধান্ত হলো- তারা বাংলা ভাষী সাহিত্যিকদের মধ্যে নজরুল-শরৎ-বেগম রোকেয়াকে নিয়ে বিশেষভাবে মানুষের কাছে যায়। সেটার মূল জায়গা হলো এনাদের সংগ্রামী জীবনের বিশেষ দিকটি, এবং মূলত এই দিকটিকেই মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে চাওয়া। কিন্তু এর মানে যদি কেউ করেন যে, অন্যদের থেকে বাসদ কর্মীরা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে- সেটি সম্পূর্ণই অজ্ঞতাবশত নয়তো উদ্দেশ্য প্রণোদিত। বাসদ কখনোই রবীন্দ্রনাথ-জীবনানন্দ-মানিক-ইলিয়াস পড়তে অনুৎসাহিত করে না- বরং উৎসাহিতই করে সবসময়।
ইনসিডেন্টাল ব্লগার - ৫ আগস্ট ২০০৮ (১০:৩২ পূর্বাহ্ণ)
@শান্ত
এটাকে বলে যুক্তির প্রতি সাবমিশন। সেটাকে তখন আর সাহিত্যরুচি বলে না।
>>আপনি যে কোনটা বুঝে লেখেন, আর কোনটা যে লিখে ফেলে তারপর তা বোঝার ভান করে বাকীদেরও বোঝাবার পাঁয়তারা করেন, কিংবা কোনটা স্রেফ বোঝানোর ভাণ করে যান, বুঝতে পারিনা শান্ত। ধন্দ লাগে।
যেমন ধরুন, আপনার এই “যুক্তির প্রতি সাবমিশন” তত্ত্বটা একটু ব্যাখ্যা করবেন কি? কে এই তত্ত্বের প্রবক্তা? তিনি ‘যুক্তি’ বলতে ঠিক কি বা কোনটাকে বুঝিয়েছেন; আর submission এর মত এমন একটি শব্দই বা তিনি কেন ব্যবহার করলেন? আপনি সত্যিই তাহলে ভাবেন আপনার বা আপনার দলের লোকদের পছন্দ অপছন্দ আসলে ‘স্বাধীন’ এবং ‘যুক্তিনির্ভর’? ব্যপারটা আরেকটু বোঝাতে হবে আমাদের। আপনি বরং এই তাত্ত্বিকটির নাম ধাম জানিয়ে শুরু করতে পারেন, তাহলে বুঝতে পারবো আসলে কি বোঝাতে চেয়েছেন তিনি এবং আপনি। যতদূর জানি এসব বিষয়ে সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু interesting কাজ হয়েছে, সে সবও না হয় আলোচনা করা যাবে তখন।
বুঝতেই পারছেন কেন জানতে চাচ্ছি। আজকাল লোকজনের মধ্যে কিছু term ব্যবহার করে ইনটেলেকচুয়ালের ভড়ং ধরার এক কৌতুককর প্রবণতা লক্ষ্য করে আসছি। কিছু জিজ্ঞেস করলেই তারা বিভিন্ন স্থান থেকে cut-paste করে উপস্থাপন করাকে ‘আলোচনা’ মনে করেন। (এখানে আপনি সহ আপনার কয়েকজন সহযোগী তেমনটিই করছেন বলে মনে হল; কিংবা আমার দেখার ভুল!)। কোন কিছু quote করাটায় দোষের কিছু দেখিনা; তবে সে সব quote কে যদি মূল আলোচনার সাথে পর্যাপ্তভাবে link up করে analytical conclusion না টানা হয়, তখন পুরো ব্যপারটাকেই একধরণের pretentious প্রচেষ্টা মনে হয়, মানুষকে ইমপ্রেস করার। এসব লোকদের ক্ষেত্রে দেখেছি, ঠিক হোক বেঠিক হোক ‘নিজস্ব’ কোন চিন্তাভাবনা বা বিশ্লেষণ প্রায় কখনোই থাকেনা তাদের (কি জানি তারা চাবি দেওয়া ব্রেনওয়াশড পুতুল কিনা!)। কতটুকু বুঝে আর কতটুকু না বুঝে যে তারা তাদের বক্তব্য দেন তাও বোঝার উপায় নেই (উপরে নাঈম সাহেব তার আদর্শ উদাহরণ হতে পারেন; আপনিও দেখছি তার পথ ধরেছেন!); কারণ তারা কোনো কনসেপ্ট বইয়ের ভাষায় ছাড়া নিজের ভাষায় সহজভাবে ভনিতা ছাড়া বলতে পারেন না কখনো (মোশাররফ সাহেব, সে প্রবণতা আপনার মধ্যেও কিছুটা দেখে দুঃখিত হয়েছি; নাকি সেটা articulation এর সমস্যা?)। প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলে আরো দশটা প্রশ্ন ছুঁড়ে, পানি ঘোলা করে উত্তর দেন বা যাকে বলে non-answer তাই দিয়ে যান তোতা পাখির মত, সরকারী আমলাদের মত (সে প্রবণতা শান্ত’র মধ্যে দেখেছি; সুব্রত’র মধ্যে তো দেখেছিই, যিনি এখন পর্যন্ত অলকেশের সুনির্দিষ্ট প্রশ্নগুলোর উত্তর দেননি)।
এসব ভনিতা ভড়ং দেখতে দেখতে ক্লান্ত তো, তাই জানতে চাচ্ছি!
Mosharrof - ৫ আগস্ট ২০০৮ (৭:০২ পূর্বাহ্ণ)
উল্লিখিত লেখায় যেভাবে আলোচনা হয়েছে তাতে অনেক বিষয় স্পস্ট হয়েছে। সাহিত্য মূল্যায়নে মার্কসীয় দৃষ্টিভঙ্গিকে ব্যাখ্যা করার চেষ্টাও হয়েছে। ইনসিডেন্টাল ব্লগার এর যে লেখা নিয়ে এ আলোচনা এতদিন হয়েছে তাতে ইনসিডেন্টাল ব্লগার কী বুঝলেন তা একটি মূখ্য প্রশ্ন। কারণ, লেখাটিতে সাহিত্য নিয়ে বলা হলেও এবং তার মধ্যেও কনেটন্ট হিসেবে সাহিত্য বিচারে মার্কসীয় বিচারধারার প্রশ্নটি আসলেও শেষ পর্যন্ত তা বাসদের রাজনীতি ও এ দলের সাহিত্য সম্পর্কিত দৃষ্টিভঙ্গির বিরুদ্ধে একটি মতবাদিক বিরোধিতা হিসেবে লেখক আনতে চেয়েছিলেন। শান্ত’র আলোচনায় বাসদের রাজনৈতিক অবস্থান (সক্রিয় কর্মী হিসেবে না থেকেও শুধুমাত্র বাহির থেকে দেখে) এতো ভালভাবে এসেছে যে তাকে অনেকেই বাসদের কর্মী হিসেবেই দেখেছেন। এটি এ কারণে বললাম যে নিরপেক্ষ বিচারধারা নিয়ে আলোচনা বাসদের কর্মীরা করতে পারেন না এমন কথাও ইনসিডেন্টাল ব্লগারের লেখাতেই উঠে এসেছিল।
যিনি কোন আলোচনার সূত্রপাত ঘটাবেন তার যদি এ ধারণা থেকে থাকে তবে আলোচনার অবকাশ কতটুকু?
সে কারণে তার লেখাকে কেন্দ্র করে যেটুকু তাচ্ছিল্য হয়েছে তা তার লেখার কনটেন্টের কারণেই যে হয়েছে তা কী বলা যায় না?
ইনসিডেন্টাল ব্লগার - ১৩ আগস্ট ২০০৮ (৮:১২ অপরাহ্ণ)
@ মোশাররফ
উল্লিখিত লেখায় যেভাবে আলোচনা হয়েছে তাতে অনেক বিষয় স্পস্ট হয়েছে। সাহিত্য মূল্যায়নে মার্কসীয় দৃষ্টিভঙ্গিকে ব্যাখ্যা করার চেষ্টাও হয়েছে। ইনসিডেন্টাল ব্লগার এর যে লেখা নিয়ে এ আলোচনা এতদিন হয়েছে তাতে ইনসিডেন্টাল ব্লগার কী বুঝলেন তা একটি মূখ্য প্রশ্ন।
>>এভাবেই বুঝি আপনারা সবসময় প্রশ্ন করেন আর অপ্রাসঙ্গিক উত্তর বা non-answer বা এমনকি নিরুত্তরকেও উত্তর ভেবে নিয়ে সন্তুষ্ট চিত্তে ঘুরে বেড়ান? চিন্তার কথা! আপনাদের নেতারাও কি আপনাদের সমস্ত প্রশ্নের উত্তর এভাবেই দিয়ে থাকেন? আপনাকে কে বললো যে যেটুকু ‘ব্যাখ্যা আপনারা দিয়েছেন’ কিংবা যেভাবে দিয়েছেন তাই যথেষ্ট? কিংবা যে প্রশ্নগুলো করা হয়েছে তার সুনির্দিষ্ট উত্তর আপনার এবং আপনার সহযোগীদের লেখায় আদৌ উঠে এসেছে? কিছু কোটেশন আর কিছু তোতাপাখির মত গতবাঁধা বুলি ছাড়া আমাদের তো আর কিছুই চোখে পড়ছেনা আপনাদের উত্তরের সারবস্তু হিসেবে। এখন প্রশ্নের উত্তরে যদি আপনি শিবদাস কিংবা খালেকুজ্জামানের শরৎ ইত্যাদি মূল্যায়নবিষয়ক চটি বই থেকে নিতান্ত পুঁথিগত একটা আলোচনা চালিয়ে যান, তাহলে কিভাবে হবে? এসব তো আমরা বছরের পর বছর ধরেই শুনে আসছি, যে কারণে মূলত এই পোস্টটি লেখা। নতুন কিছু তো বলুন। যাকে বলে নতুন spin, না হয় তাই দিলেন, তাহলেও বুঝবো অন্তত চেষ্টাটুকু করেছেন। বরং নিচের এ কয়টি প্রশ্নেরই উত্তর দিননা:
১। গত ৮০ বছরের বিশ্বসাহিত্য থেকে কয়েকজন নন্দিত সাহিত্যিকের নাম দিন যাঁরা আপনাদের ভাষায় ‘সত্যিকারের মার্কসবাদী’ বা যাঁদের লেখায় কমরেড খালেকুজ্জামান “উপলদ্ধির ঘাটতি” খুঁজে পান না।
২। লেখকের কমিটমেন্ট এর বিষয়গুলো তুলেছেন আপনি ও শান্ত। খুব ভালো। এবার স্পষ্ট করে বলুন, কোন লেখকের আপনাদের ভাষায় যদি ‘কমিটমেন্ট এর অভাব’ থেকে থাকে, তার প্রতি আপনাদের মূল্যায়নটি কি হবে? তার লেখার মূল্যায়নের আর কোন বিকল্প মানদন্ড আছে কি? আরো জরুরী প্রশ্ন সে মূল্যায়নের নিরিখে আপনাদের সে লেখকের প্রতি আচরণ কি হবে? ধরুন, আপনারা আজ রাষ্ট্রক্ষমতায়, সেক্ষেত্রে কোন লেখক যদি গোঁ ধরে বসেন যে তিনি কিছুতেই “কমিটেড” (আপনাদের ভাষায়) হবেন না, সেক্ষেত্রে তার প্রতি আপনার ও আপনার দলের রিএ্যাকশন কি হবে? (প্রশ্নটা hypothetical, শুনি আপনার উত্তর)।
৩। সোভিয়েত আমলে যে সব অজস্র লেখক নিপীড়নের কাহিনী সারা বিশ্ব শুনেছে (আপনারাও শুনেছেন নিশ্চয়ই!), সে বিষয়ে আপনার ও আপনার দলের রায় কি? যেমন ধরুন: লেখকদের প্রতি যা করা হয়েছিল তা ঠিকই ছিল বলে মনে করেন আপনারা? নাকি সেটা অন্যায় ছিল? সে সব কি আপনারা কোথাও লিখিতভাবে condemn করেছেন আজ পর্যন্ত? নাকি এর সবই পূঁজিবাদী মিডিয়ার অপপ্রচার মনে করেন এখনো? [এর উত্তর থেকে হয়তো খানিকটা বোঝা যাবে আসলে আপনারা কতটা স্বাধীন চিন্তা ধারণ করতে সক্ষম]
৪। আপনি বা আপনারা কি এ সম্ভাবনার কথা উড়িয়ে দিতে পারেন যে ক্ষেত্রবিশেষে এসব “সমাজতান্ত্রিক বিচারের প্রবণতা” লেখক বা সৃজনশীল মানুষদের ‘মত প্রকাশের স্বাধীনতার’ বিপরীতেও ব্যবহৃত হতে পারে? অস্বীকার করবেন যে এ ধরনের অপপ্রয়োগ কোন কোন সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ইতিপূর্বে ঘটেনি (ব্যাপকহারে)? সমাজতান্ত্রিক চীন (সাংস্কৃতিক বিপ্লব), সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েতে (শুদ্ধি অভিযান) যে সব কান্ড ঘটেছিল তাকে কি আপনি শুধু “ইতিহাসের casualty” বা “পশ্চিমা অপপ্রচার” বলবেন?
রায়হান রশিদ - ৮ আগস্ট ২০০৮ (৩:৪১ অপরাহ্ণ)
মন্তব্যকারীদের কয়েকজনের আলোচনায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে পেশ করা বাসদের একটি “ফর্দ” বা দাবীনামার কথা বারবার উঠে এসেছে (দেখুন: অস্মিতা, শান্ত, ইনসিডেনটাল ব্লগার, মোশাররফ)। আলোচনার সুবিধার্থে এই দাবীনামার কিছু বিষয়ের উপর আলোকপাত প্রাসঙ্গিক। বাসদ মুখপত্র ভ্যানগার্ডে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী গত ৪ জুন ২০০৮ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রতিনিধিদের সাথে মুখোমুখি সংলাপে বসেন বাসদ নেতৃবৃন্দ। দলের পক্ষ থেকে এতে উপস্থিত ছিলেন সর্বোচ্চ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ, যাঁদের মধ্যে: কমরেড খালেকুজ্জামান (যিনি লিখিত বক্তব্যটি পাঠ করেন), কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী, কমরেড আব্দুল্লাহ সরকার, কমরেড রাজেকুজ্জামান রতন, কমরেড শুভ্রাংশু চক্রবর্তী প্রমূখ উল্লেখযোগ্য। তাঁদের লিখিত বক্তব্যে ‘জাতীয় সনদ’, ‘লেজুড় রাজনীতি’, ‘দলীয় নিবন্ধন ও সংস্কার’, ‘প্রতিযোগীতামূলক অর্থনীতি’, ‘দূর্নীতি’, ‘হরতাল ধর্মঘট’ থেকে শুরু করে ‘সংবিধানে ক্ষমতার ভারসাম্যহীনতা’ এবং ‘জরুরী অবস্থায় নির্বাচন’ অনুষ্ঠানের বিষয়গুলো উঠে এসেছে। এসব বিষয়ে অন্য কোন একদিন বিস্তারিত আলোচনা করা যাবে। এখানে শুধু লিখিত বক্তব্যটির শেষাংশে উত্থাপিত দাবীনামা বা প্রদত্ত সুপারিশনামার কিছু বিষয়ে মন্তব্যটি সীমাবদ্ধ রাখার চেষ্টা করবো, যাকে বাসদের পক্ষ থেকে উপস্থাপন করা হয়েছে “জাতীয় ঐকমত্য ও বিদ্যমান রাজনৈতিক ও জনজীবনের সংকট মোকাবিলার জন্য করণীয়” হিসেবে।
এতে কোন সন্দেহ নেই যে সেখানে উল্লেখিত প্রতিটি দাবীই কোন না কোনভাবে গুরুত্বপূর্ণ এবং ‘জনজীবনের সংকট মোকাবিলায়’ তাদের তাৎপর্য অনস্বীকার্য, যদি দীর্ঘমেয়াদী অর্থে বিচার করা হয়। তবে ঘটমান বর্তমান, নিকট অতীত কিংবা ভবিষ্যতের নিরিখে সে সবের বেশির ভাগ ঠিক এখনই কতটা প্রাসঙ্গিক বা সময়োপযোগী সে বিষয়ে প্রশ্ন থাকতে পারে। কারণ, সেখানে উল্লেখিত বেশীরভাগ বিষয়ই বর্তমান প্রেক্ষাপটের নিরিখে (যথা: জরুরী অবস্থা ও এর নিরসন, দমন নিপীড়ন, সুষ্ঠ নির্বাচন অনুষ্ঠান, সংবিধান সমূন্নতকরণ, গণতন্ত্রে প্রত্যাবর্তন ইত্যাদি) কিভাবে ও কতটা জরুরী তা ঠিক স্পষ্ট হয়নি দাবী পূর্ববর্তী আলোচনা থেকে। আর তাছাড়া সাংবিধানিক বৈধতা নিয়ে নিজেই প্রশ্নের সম্মূখীন এমন একটি সরকারের প্রতিনিধিদের কাছে সে সব উত্থাপন কতটা যুক্তিযুক্ত সে বিষয়টি তো বিবেচনার দাবী রাখেই। থাক সে আলোচনা।
Note: এখানকার সব মতামত একজন সাধারণ গণতন্ত্রকামী নাগরিকের দৃষ্টিকোণ থেকে।
যে জিনিসটি প্রথমেই চোখে পড়ে তা হল সংখ্যার দিক থেকে খুব বেশী দাবীর সমাহার। গুণে দেখলাম মোট ১২ ভাগে উপস্থাপিত সর্বমোট দাবীর সংখ্যা আসলে ৯৮ টি। যেমন ধরা যাক, ১ এর আওতায় ৩১টি, ২ এর আওতায় ৪৭ বা তারও বেশী, ৩ এর আওতায় ২, ৪ এর আওতায় ৩টি দাবী ইত্যাদি। প্রথমতঃ একটা অরাজনৈতিক টেকনোক্র্যাট সরকারের কাছে পেশ করার মত দাবী এগুলো আদৌ কিনা, সেটি ভেবে দেখার মত। দ্বিতীয়তঃ সর্বমোট ১৫ টি পৃথক দাবী সম্বলিত দাবী নং ৩ (জরুরী আইন প্রত্যাহার, গণতান্ত্রিক অধিকার পুনর্বহাল), ৪ (দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ), ৫, ৬ (জামিনের অধিকার), ৯ (নির্বাচনের পরিবেশ, তারিখ ঘোষণা, ক্ষমতা হস্তান্তর) এবং ১২ (কৃষক-ক্ষেতমজুরের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা জাল) ছাড়া বাকী ৮৩ টি দাবী আদৌ ঠিক এসময়েই এ সরকারের কাছে উত্থাপনের উপযুক্ত ছিল কিনা তাও বিবেচ্য। Rhetoric রাজনীতিরই ভাষা এবং সেই অর্থে এসব দাবীর বেশীর ভাগই তুলতে এক অর্থে কোন বাধা নেই হয়তো। যিনি রথ দেখতে যাবেন তিনি যে চাইলে কিছু কলাও বেচতে পারবেননা, তা তো নয়। নিশ্চয়ই পারবেন। তবে, এমন সময়ও তো আসে যখন প্রয়োজন হয় গুরুত্বানুযায়ী prioritise করার। সেক্ষেত্রে কলা বেচা যদি রথ দেখায় বিঘ্ন ঘটায়, তাকে হয়তো তখন ত্যাগ করাই শ্রেয়। সরকারের সাথে এই সংলাপটা বোধ করি তেমনই গুরুত্বের একটি বিষয় ছিল। এতে একদিকে যেমন ছিল আদৌ এ সংলাপে বাসদের যাওয়া উচিত কিনা সেই বিবেচনা, একইভাবে অন্যদিকে বিচার্য ছিল যদি যেতেই হয় তবে কেমন হওয়া উচিত সে আলোচনার বিষয়বস্তু।
নিতান্ত সাধারণ জ্ঞান থেকে যা বুঝি তা হল, যে কারো কাছে দাবী নিয়ে যাওয়ার সময় ভাবা দরকার : কি দাবী করছি? কার কাছে দাবী করছি? যা দাবী করছি তা কি তার দেয়ার ক্ষমতা বা সদিচ্ছা আছে কিনা? কি জন্য দাবী করছি? অর্থাৎ, সত্যিই কি এমূহুর্তে এসব দাবীর বাস্তবায়ন আশা করছি, নাকি জনসচেতনতা তৈরীর উদ্দেশ্যে সেগুলি উত্থাপিত, নাকি সেগুলো স্রেফ কথার কথা। রাজনৈতিক অঙ্গনে যাকে বলে point make করা, কেবল সে উদ্দেশ্যেও যে দাবী উত্থাপিত হয়ে থাকেনা তা তো নয়! কিন্তু সাধারণ জ্ঞান থেকে এও বুঝি যে যত্রতত্র আলোচনায় বসে যাওয়া কিংবা যথেচ্ছ দাবী তোলার কিছু বিপদও আছে। প্রথমত, এতে নিজেদের রাজনৈতিক অবস্থানের ব্যপারে জনগণের কাছে ভুল বার্তা পৌঁছাতে পারে। ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হতে পারে এমনকি নিজেদের শিবিরেই। উপরের কিছু আলোচনা-সমালোচনায় তারই ইঙ্গিত উঠে এসেছে কয়েকবার (দেখুন: অস্মিতা, ইনসিডেনটাল)। দ্বিতীয়তঃ কোন দাবী তোলার আগে এও ভাবা দরকার যে ভুল মানুষদের কাছে ভুল সময়ে ভুল দাবী করে কোন অহেতুক জটিলতা সৃষ্টি করছি কিনা। কারণ যে সামরিক সরকারের সদুদ্দেশ্য নিয়েই সন্দেহের যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে, সে কোনো নির্দিষ্ট রাজনৈতিক শিবির থেকে আসা দাবীনামাকে কিভাবে ব্যাখ্যা (interpret) করতে পারে, অথবা কিভাবে তার নিজের উদ্দেশ্য হাসিলের কাজে সে সব দাবীকে ব্যবহার করতে পারে, তাও আগেভাগেই ভাবা দরকার। দেশ ও জাতির এই সংকটের দিনে প্রগতিশীল গণতন্ত্রকামী রাজনৈতিক শক্তিগুলোর কাছ থেকে এটুকু নিষ্ঠা, প্রজ্ঞা এবং thoroughness তো আমরা আশা করতেই পারি। গত দুই মাসের ঘটনাবলী থেকে এ তো এখন সবারই জানা কিভাবে বাসদের সংবিধানসংক্রান্ত প্রস্তাবগুলোকে (ক্ষমতার ভারসাম্য, সংশোধনী বাতিলের দাবী ইত্যাদি) তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিজের মত করে ব্যাখ্যা দিয়ে “সংবিধান পর্যালোচনার” মতো অবৈধ পদক্ষেপ নেয়ার পাঁয়তারা করেছে। এটা কি নিতান্তই কাকতালীয় যে বাসদের সাথে সংলাপের ঠিক পর পরই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জনৈক উপদেষ্টা সংবিধান পর্যালোচনার এই অসাংবিধানিক প্রস্তাবটিকে “জনগণের দাবী” হিসেবে সাংবাদিকদের কাছে উপস্থাপন করেছেন? অবশ্য, বাসদ পরবর্তীতে তাদের নিজ সংবাদ সম্মেলনে এর একটা ব্যাখ্যা দিয়ে অবস্থান পরিস্কার করেছে। কিন্তু এই ভুল বোঝাবুঝিটুকুর সুযোগ কি তৈরী না করলেই হোতো না? তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে আরেকটি অস্ত্র কি তুলে না দিলেই নয়? আর সেটা কি বাসদের মত একটি আদর্শবাদী দলের হাত দিয়েই হতে হবে?
রাজনীতির জটিল হিসাব নিকাশ বুঝিনা, এ হল আমাদের মত সাধারণ মানুষদের সহজ সরল চিন্তাভাবনা। আশা করবো বাসদ নেতৃবৃন্দ ভবিষ্যতে এই বিষয়গুলো আরেকটু বিবেচনা করে দেখবেন এধরণের পদক্ষেপ নেয়ার আগে। আর এ শুধু বাসদ নয়, মনে করি প্রতিটি রাজনৈতিক দলের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। যে ধরণের কৌশল পাল্টা কৌশলের তোড়জোড় দেখছি আমাদের এ সামরিক সরকারের, পাল্লা দিয়ে তাদের চেয়েও বেশী বুদ্ধিমত্তার সাথে জনগণকে নেতৃত্ব না দিতে পারলে সামনের দিনগুলিতে আরো ভোগান্তি আছে আমাদের। ইতোমধ্যেই ইলেকশন নিয়ে আওয়ামী লীগ কি করলো, আমরা তো সবাই দেখলাম!
সময় থাকলে দাবীনামাটি নিয়ে আরো বিস্তারিত আলোচনা করা যেতো। তবে শেষ করার আগে তিনটি বিষয় তুলে ধরা দরকার মনে করছি।
১) প্রথম দফাটিতে দেখতে পাচ্ছি আর সব কালো আইনের পাশাপাশি “সন্ত্রাস দমন অধ্যাদেশ” বাতিলের দাবীটিও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। দাবী হিসেবে এটি অত্যন্ত যুক্তিযুক্ত, তবে এখানে কিছু প্রশ্ন আছে। উল্লেখ করা দরকার, ডেইলি স্টার এর রিপোর্ট অনুযায়ী “Anti-Terrorism Ordinance 2008” নামের এই আইনটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ গত ১৮ জুন আইন হিসেবে চূড়ান্তভাবে অনুমোদন দেন। সুতরাং ৪ জুন বাসদ নেতাদের সংলাপের দিন পর্যন্ত যে আইন পাশই হয়নি কিভাবে তা বাতিলের দাবী করা যায় তা বোধগম্য নয়। ব্যপারটা একটু premature হয়ে যায়না কি? এমন হতে পারে যে দাবীনামায় বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে ১৯৯২ সালের কাছাকাছি নামের পুরনো একটি আইনকে: “Suppression of Terrorist Offences Act, 1992 (Act No.44 of 1992)”, যেটি The Suppression of Terrorist Offences Ordinance, 1992 (Ordinance No.7, 1992) নামের আরো পুরনো আরেকটি আইনকে replace করেছিল। কিন্তু সেটা বোঝানোও একটু মুশকিল, কারণ, ১৯৯২ সালের আইনটির (Act No.44 of 1992) ধারা ২(১) অনুযায়ী: “This Act shall come into force at once and it shall have effect for a period of two years unless such period is extended by Parliament”, অর্থাৎ আইনটির মধ্যেই এর প্রয়োগকালের সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছিল, সুতরাং এর বাতিল দাবী করার কিছু নেই, অন্তত আইনটি বাতিল হয়ে যাওয়ার ১৪ বছর পর। [ইন্টারন্যশনাল কমিশন অব জুরিস্টের কাছে দায়েরকৃত এই দলিলটির পৃষ্ঠা ৮ দেখুন]। আরেকটা সম্ভাবনা এই যে দাবীটির মাধ্যমে আসলে বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে ১৯৯৪ সালের ১ ডিসেম্বর এর Suppression of Terrorist Offences (Special Provisions) Act, 1994 (Act No. 21 of 1994) নামের আরেকটি আইন। কিন্তু এ আইনটি আমার জানা মতে কখনো বাতিল করা হয়নি কারণ তা বাতিলের কোন প্রয়োজন নেই। আইনটির বিষয়বস্তু পড়লেই জানা যাবে কেন সেকথা বলছি। কারণ, নতুন এ আইনটি মূলত ১৯৯২ সালের আইনের আওতাধীন ইতিমধ্যেই দায়েরকৃত মামলাদির বিচারকার্যের ব্যপারে কিছু পদ্ধতিগত ব্যপারকে address করে মাত্র। অবশ্য সর্বশেষ আরেকটি ব্যাখ্যা থাকতে পারে এই আপাত ভুল দাবীটির পেছনে। পর্দার অন্তরালে কঠোর গোপনীয়তার মধ্যে ২০০৮ এর নতুন এই কালো আইনটির আয়োজন চললেও কিছু কিছু unconfirmed খবর বিভিন্নভাবে প্রকাশ হয়ে গিয়েছিল আইনটি চূড়ান্তভাবে পাশ হওয়ার আগেই (যেমন ধরা যাক ১৬ জুনের এই রিপোর্টটি দেখুন)। বাসদের দাবীনামায় হয়তো তারই ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে আশা করবো। কিন্তু ব্যপারটা আরেকটু পরিস্কার করার দরকার ছিল বলে মনে করি। কারণ এটাকে যথেষ্ট চিন্তাভাবনা ছাড়াই ১৬ বছরের “পুরনো খসড়া” থেকে তুলে দেয়া দাবী বলে ভুল বুঝতে পারেন অনেকেই, যা বাসদ কেন যে কোন রাজনৈতিক দলের ভাবমূর্তির জন্যই ক্ষতিকর।
২) লক্ষ্য করলাম ফৌজদারী কার্যবিধির ৫৪ ধারার বিলোপ চাওয়া হয়েছে। শুধুমাত্র আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর লোকজন ছাড়া মনে হয় এই ধারাটির খুব কম ভক্তই পাওয়া যাবে সারা দেশ খুঁজলে। কিন্তু সরাসরি এই ধারাটির বিলোপ চাওয়া মনে হয় খুব একটা পরিণত দাবী হয়নি। এটা শুধু আমারই অভিমত না, সুপ্রীম কোর্টের একটি বিখ্যাত রায়ও আছে এ বিষয়ে যেখানে ধারাটির কিছু অনস্বীকার্য প্রয়োগ-প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করে নিয়েই কিছু safeguards এবং দিকনির্দেশনা তুলে ধরা হয়েছে এর প্রয়োগের ক্ষেত্রে। হাতের কাছে এই গুরুত্বপূর্ণ রায়টির reference থাকলে এখানে দিয়ে দিতে পারতাম (খুঁজে পেলে পরে দিয়ে দেব)। সুতরাং, শর্তহীনভাবে ধারাটির বিলোপের পরিবর্তে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের পক্ষের রাজনৈতিক শক্তিগুলোর উচিত সুপ্রীমকোর্টের guideline অনুযায়ী ধারাটির প্রয়োগ দাবী করা।
৩) দাবীনামার দ্বিতীয় ধারাটি ছাত্রসমাজের ১০ দফা, শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদের ৫ দফা, ১৭ কৃষক সংগঠনের ১৫ দফা, ঐক্যবদ্ধ নারী সমাজের ১৭ দফা ইত্যাদির বাস্তবায়নের কথা লিখেছে। মনে করি, বাংলাদেশে এমন মানুষ খুব কমই আছেন যারা শুনেই প্রতিটি দফা গড় গড় করে মুখস্ত বলে দিতে পারবেন। এটা বললাম এ কারণে যে, আমার মনে হয়নি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টাগণ যাঁদের কাছে সর্বমোট এই ৪৭ টি দফা পেশ করা হল, তাঁদের কাছে এসবের কোন তাৎপর্য আছে। দাবীনামার দ্বিতীয় দফাটি পড়েই তাঁরা বুঝে ফেলবেন “কি চাওয়া হচ্ছে সেখানে” এমনটা আশা করা বোধ হয় একটু কষ্ট কল্পনাই হয়ে যায়। রাজনীতির অঙ্গন থেকে বহু দূরের পরিবেশে বেড়ে ওঠা এই উপদেষ্টাদের কথা বাদই দিলাম। আজ যদি শাহবাগের মোড়ে দাঁড়িয়ে random sampling করে ১০০ জন মানুষের কাছে এই দাবীগুলোর বিষয়বস্তু জানতে চাওয়া হয়, আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে কয়জন ঠিক ঠিক উত্তর দিতে পারবেন (করেই দেখুন না কেউ?)। জনগণের দাবী যদি জনগণই না জানেন বা না বোঝেন তাহলে আর তা তুলে কি লাভ? তোলা উচিত না, তা কিন্তু বলছি না। তোলা উচিত, সব অর্থে, সব শক্তি দিয়ে, তবে দুর্বোধ্য করে নয়। এক বন্ধু একটা মজার মন্তব্য করেছে দ্বিতীয় এই দফাটি পড়ে। সে বলেছে, “এই ৪৭ দফা দাবীগুলো যখন পরিপূরণের কাছাকাছি চলে যাওয়া হবে, বিপ্লবের বুঝি আর তখন খুব বেশীদিন বাকি থাকবেনা।” সে অর্থে দাবীগুলো কিছুটা ambitious ই হয়তো।
সংশ্লিষ্টদের বিষয়গুলোর প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
রেজাউল করিম সুমন - ৯ আগস্ট ২০০৮ (৪:৫২ অপরাহ্ণ)
১.
তর্কটা যেদিকে এগোচ্ছে, যেভাবে উপর্যুপরি মন্তব্যের ফুলঝুরি (‘ফুলঝুড়ি’ নয়, ওটা সম্ভবত অন্য জিনিস, ফুল রাখার ঝুড়ি বা সেরকম কিছু … হয়তো নার্সারি-ওয়ালারা ভালো বলতে পারবেন) ছুটছে, মূল প্রসঙ্গকে এড়িয়ে অন্যের জ্ঞানগম্যি নিয়ে মুহুর্মুহু সংশয় উত্থাপিত হচ্ছে, ষড়যন্ত্রকারী গোষ্ঠীর অস্তিত্ব কল্পনা করা হচ্ছে, এসব দেখার পর বীতশ্রদ্ধ না হয়ে উপায় থাকে না।
২.
বাসদের সাহিত্যরুচির ব্যাপারে ইনসিডেন্টাল ব্লগারই সবচেয়ে ওয়াকিবহাল এমনটা মনে করার কোনো কারণ আছে কি? আহমেদ মুনির কিংবা শান্ত কিংবা অন্য কেউ তাঁর চেয়েও এ বিষয়ে বেশি জানতে পারেন। আহমেদ মুনির একসময়ে বাসদের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন; শান্ত তাঁকে না চিনলেও বাসদের নেতাকর্মীদের অনেকেই তাঁকে বিলক্ষণ চেনেন। ইনসিডেন্টাল ব্লগারের লেখায় বাসদের মুখোশ খুলে গেছে কি যায়নি — এই প্রশ্ন আমার কাছে অবান্তর, বিশেষত বাসদ আদৌ মুখোশ পরে আছে কি না তা-ই যখন আমার জানা নেই। মূল লেখাটা পড়ে একবারও মনে হয়নি যে ওরকম কোনো উদ্দেশ্য নিয়েই ওই পোস্ট লেখা হয়েছে।
৩.
গল্প-উপন্যাস ভালো-লাগা না-লাগার ব্যাপারটা বোধহয় কখনোই নিছক যুক্তির আওতায় পড়ে না। সাহিত্য পড়ে যে ভালোও লাগতে পারে, এবং প্রধানত ভালো লাগার কারণেই যে অধিকাংশ পাঠক সাহিত্য পড়েন, সেটা আমরা অনেকে সবসময়ে মনে রাখি না। শুরুতেই ‘শ্রেণীপ্রভাব’ আবিষ্কারে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। স্বীকার করতে কুণ্ঠা হওয়া উচিত নয় যে, ‘শ্রেণীপ্রভাব’ সম্পর্কে আমার জ্ঞানগম্যি সত্যিই খুব বেশি নয় (অন্য অনেকের তুলনায়), তবে এটুকু বুঝতে পারি : এক বিশেষ শ্রেণীর পাঠকের ওপর এর যথেষ্ট প্রভাব আছে!
৪.
আমার আগের মন্তব্যে (#২৫) একজন সমাজতন্ত্রী কনটেন্টকে বেশি গুরুত্ব দেয় — এ ধারণাটি খণ্ডিত কি না সে-বিষয়ে কিছু বলিনি। বরং বলেছি যে, কনটেন্ট যে অধিক গুরুত্বপূর্ণ — এ-ধারণাটিই খণ্ডিত। প্রসঙ্গত তানভীর মোকাম্মেলের একটি উদ্ধৃতি দিয়েছিলাম এটাই দেখাতে যে, এ-ধরনের যান্ত্রিক ধারণা আরো কোনো কোনো মার্কসবাদী শিবিরে (ও ব্যক্তিপর্যায়ে) চালু আছে, কেবল বাসদেই নয় (এবং কেবল এদেশেই নয়)। আভনের ও আদোল্ফো-র বই পড়ে আমি উপকৃত হয়েছিলাম, সেজন্যই তার উল্লেখ করেছি। আশা করেছিলাম, অন্য কোনো পাঠকের কাছ থেকে এ-বিষয়ক আরো কিছু বইয়ের খোঁজ পাব।
৫.
আমাকে ‘অনেক জ্ঞানদান করতে’ দেখা গেছে শুনে বিস্মিত হয়েছি। (শান্ত #৩৭)। এটি সম্ভবত মন্তব্যকারীর কোনো স্বপ্নদৃশ্য কিংবা দৃষ্টিভ্রম। অবশ্য তাঁর বোঝার ভুলও হতে পারে। আরেকটা জিনিসও স্পষ্ট করা দরকার। ইমতিয়ার সাহেবের মন্তব্যের (#৩২) নীচে ক্রুপস্কায়ার লেখা থেকে প্রাসঙ্গিক অংশের উদ্ধৃতি সংযোজন করেছিলাম তথ্যের যাথার্থ্যের খাতিরে এবং ওই লেখা হাতের কাছে ছিল বলেই। ‘ছোট্ট ইনেসা’র অধিকতর প্রাসঙ্গিক লেখাটাও ছিল, তবে ইংরেজিতে; কষ্ট করে আর অনুবাদ করিনি।
ওই একই মন্তব্যকারী যে-‘বিশেষ গ্রুপটির’ প্রতি ইঙ্গিত করেছেন তার অস্তিত্ব সম্পর্কেই আমি না-ওয়াকিফ। আর জানিয়ে রাখা ভালো : বাসদ নিয়ে আমার ‘বেশি মাথা ব্যথা’ নেই। এটা তাঁর কষ্টকল্পনা। তবে বাসদের সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠজনদের কেউ কেউ যুক্ত আছেন। সাম্প্রতিক এই বিতর্কের ফলে, আমাদের মধ্যে মতান্তর থেকে মনান্তর ঘটবে কি না, তা নিয়ে সত্যিই চিন্তিত আছি।
৬.
‘টলস্টয়কে নিয়ে লেনিনের আলোচনাটি, পুশকিনকে নিয়ে গোর্কির আলোচনাটি’র প্রতি আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য শান্তকে ধন্যবাদ (#৩৬)। প্রবন্ধের নাম উল্লেখ না করলেও, এবং ফলত প্রথমে কিঞ্চিৎ বিভ্রান্ত বোধ করলেও, পরে তাঁর দেয়া উদ্ধৃতি (#৩৭) থেকে বুঝে নিতে পারা গেল যে, তলস্তোয়কে নিয়ে লেনিনের প্রথম প্রবন্ধটির কথাই (‘লিয়েফ তলস্তোয় — রুশ বিপ্লবের দর্পণ’) তিনি বলছেন। অনেকে অবশ্য তলস্তোয়কে নিয়ে লেনিনের পাঁচটি লেখার সঙ্গে মিলিয়ে পড়তে চাইতে পারেন প্লেখানভের তিনটি লেখাও: ‘তলস্তোয় ও প্রকৃতি’ (১৯০৮), “সীমা বজায় রেখে” (১৯১০) এবং ‘কার্ল মার্কস ও লিয়েফ তলস্তোয়’ (১৯১১)। ‘তলস্তোয় ও প্রকৃতি’ লেখা হয়েছিল তলস্তোয়ের অশীতিতম জন্মদিন উপলক্ষে। পুরো এক শতাব্দী পরেও ওই লেখাটিকে আমাদের অনেকের কাছেই হয়তো কালোন্নীত বলেই মনে হবে। লেখকের শ্রেণীচরিত্র নির্ণয় ও তাঁর লেখায় শ্রেণীপ্রভাব আবিষ্কারের চেষ্টায় ব্যস্ত না হয়েও কোনো লেখকের রচনার বিশেষ কোনো দিক নিয়ে যে মূল্যায়ন করা যায়, তারই দৃষ্টান্ত ওই লেখাটি।
গোর্কির পুশকিন-বিষয়ক যে-উদ্ধৃতি দেয়া হয়েছে, একালের সামান্য পুশকিন-পাঠক হিসেবে আমরা যে তার দ্বারা বিশেষ উপকৃত হই, এমন বলতে পারি না। আমার অস্বস্তি গোর্কির ওই লেখা নিয়ে নয়, উদ্ধৃতি নির্বাচন নিয়ে। বরং তলস্তোয় ও চেখভ-কে নিয়ে গোর্কির অসামান্য ‘প্রতিকৃতি’ দুটির কথা মনে পড়ছে এ মুহূর্তে। মনে পড়ছে মার্সেল প্রুস্তের লেখার মূল্যায়ন করতে গিয়ে গোর্কি ও লুনাচার্স্কির ভিন্ন অবস্থানের কথাও। যে-লেখকের রচনাকে প্রগতিশীল রাজনৈতিক ধারার সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত করা যায় না, তাঁর বিষয়ে লেখার সময়েই মার্কসবাদী সমালোচককে সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষাটা দিতে হয়। আর সে-পরীক্ষায় উতরানোর সহজ কায়দা হিসেবে অনেক সময়ে কেউ কেউ পৌরাণিক গ্রিক দস্যু প্রোক্রুস্তেস্ (Procrustes)-এর ভূমিকায় অবতীর্ণ হন!
৭.
আমার আগের মন্তব্যে (#২৫) অনেকগুলো প্রশ্ন তুলেছিলাম। লক্ষ করলে দেখা যাবে, সব প্রশ্নই একটিমাত্র পক্ষকে লক্ষ্য করে করা হয়নি। এমনকী প্রশ্নগুলোর উত্তরও (যে-অবস্থান থেকেই দেয়া হোক না কেন) বিভিন্ন হতে বাধ্য। প্রশ্নগুলোর উত্তর এখানেই দিতে/পেতে হবে — এমনটাও ভাবিনি।
যে-মানের তর্ক-বিতর্ক এখানে চলছে, বিশেষত বাসদের পক্ষাবলম্বনকারী বন্ধুদের দিক থেকে, তাতে আদৌ কোথাও যে পৌঁছানো যাবে, এমন ভরসা তো হয় না।
৮.
অনেকবার ‘আমি’, ‘আমাকে’ ইত্যাদি সর্বনাম ব্যবহার করতে হলো বলে আশা করি কেউ আবার আমাকে ভুল বুঝবেন না। অনন্যোপায় হয়েই করেছি। ‘আমরা’ মন্তব্য লিখছি না এখানে, লিখছি ‘আমি’।
সান্ত্বনা - ১৪ আগস্ট ২০০৮ (১১:৩৬ পূর্বাহ্ণ)
মুক্তাঙ্গনে ইনসিডেন্টাল ব্লগারের এই লেখাটা পড়লাম। পড়লাম নানা বিচিত্র স্বাদের (শুধু অম্লমধুর নয়) অজস্র মন্তব্য ও প্রতিমন্তব্যগুলো। কেবল যুক্তি-তর্ক দিয়ে সত্যিই এগোনো যাবে ভাবছেন আপনারা? আমার তো মনে হয় প্রয়োজন সংলাপের। তা যে এখানেই, এখনই হতে হবে তা অবশ্য নয়।
সেই সঙ্গে মার্কসীয় দলগুলোর নেতা-কর্মীদের মধ্যেও নানা বিষয়ে সংলাপ হওয়া দরকার। মতান্ধতা, কে না জানে, সুস্থ সাহিত্যবোধেরও পরিপন্থী। সুস্থ জীবনবোধের পরিপন্থী তো বটেই।
অস্মিতা - ১৪ আগস্ট ২০০৮ (১:২৪ অপরাহ্ণ)
#মোশাররফ#৪৬:
“তার (ইন্সিডেনটালের) লেখাকে কেন্দ্র করে যেটুকু তাচ্ছিল্য হয়েছে তা তার লেখার কনটেন্টের কারণেই যে হয়েছে তা কী বলা যায় না?”– মোশাররফ
মোশাররফ সাহেবের সাথে একমত না হয়ে পারছিনা। কিছুটা তাচ্ছিল্য ইন্সিডেনটালের নিশ্চয়ই প্রাপ্য। যেহেতু তিনি (ইন্সিডেনটাল) উপর্যুপুরি “অসভ্য”, “কুরুচিপূর্ণ”, “বকলম” – তিনি অন্য অনেক কিছুর পাশাপাশি বাসদের সাহিত্য রুচি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন – একথা বুঝতেই পারেননি (বা বোঝার চেষ্টা করেননি) যে সাহিত্যরুচি মানুষের একেবারে নিজস্ব একটি বিষয়। যেটি তিনি নিজে দাবি করেছেন বাসদের কাছ থেকে – সেই একই অধিকার (প্রেসক্রিপশনহীন সাহিত্য পঠনের এবং রসাস্বাদনের অধিকার) তিনি বাসদের নেতাকর্মীদের দেবেননা কিংবা তাদের রুচি নিয়ে এমনকি ঠাট্টা তামাশাও করবেন তা নিঃসন্দেহেই সংগত নয়, সমর্থনযোগ্য তো নয়ই। আমি মনে করি – এমনকি প্রবলভাবে বিশ্বাস করি যে – বাসদের নেতাকর্মীরা যদি শিবদাস ঘোষের “মুকছেদুল মুমেনিন” বা চটি সিরিজ বুকে চেপে এবং শরৎ চাটুজ্জে বালিশের নিচে রেখে ঘুমুতে যান তবে তা নিতান্তই তাদের নিজস্ব বিষয়। এমনকি “ইতিহাস নির্ধারিত পথে হাঁটাহাটি করে” কষ্টকর তাত্ত্বিক আলোচনা এবং শ্রেনীসংগ্রামের কঠিন দায়িত্ব পালনের পর দিন শেষে যদি তারা শরৎ চাটুজ্জের নায়ক-নায়িকার বেদনা ও সংগ্রাম তাদের “সভ্য”, “সুরুচিপূর্ণ” এবং “সর্বহারা” হৃদয়ে ধারণ করে কেঁদে বালিশ ভেজান তবে নিশ্চয়ই তা তাদের মৌলিক মানবাধিকারের পর্যায়েই পড়ে। এ বিষয়ে কোনরকম বাজে প্রশ্ন তোলার ইন্সিডেনটাল কে?
ইন্সিডেনটালের (এবং কিছু “উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মন্তব্য লেখকের”) আরো কিছু তাচ্ছিল্য প্রাপ্য একারণে যে, তিনি (তারা) দেশ ও জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে বাসদের নেতৃবৃন্দের এমন “বেড়ালোচিত” (ইন্সিডেনটালের ভাষায় “মিউ মিউ”) ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এটি এমনকি খুবই অন্যায় হয়েছে বলে মনে করি। তাদের (ইন্সিডেনটাল ও অন্যান্যদের) মনে রাখা উচিত ছিল যে জলপাই শাসকেরা মার্কস এঙ্গেলস পড়েননা, এমনকি শিবদাস খালেকুজ্জামান বা শরৎ চাটুজ্জে পর্যন্ত পড়েন না যে তাদের সাথে ভদ্র পদের কোন তর্ক বা বিবাদে যাওয়া যায়। সুব্রত যেমন বলেছেন – বিতর্ক হতে হবে দু’জন “সৎ মানুষের মধ্যে”। তাছাড়া যে দু’চারজন প্রতিবাদ করেছেন তাদের অবস্থাটা কি আমরা চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছিনা? যে দুই নেত্রী জলপাই শাসনের রুদ্র রোষে পড়ে জেলে গেলেন, তারা দু’জনেই কমবেশী “মেধাশূন্য”, “অবলা”, এবং “বুর্জোয়া” নারী। জেল খাটা, অত্যাচার অনাচার সহ্য করা নিশ্চয়ই তাদেরই মানায়। এমতাবস্থায় বেমক্কা প্রতিবাদ করে (শান্ত’র ভাষায় “হঠকারী” সিদ্ধান্ত নিয়ে) অগুনতি ভক্ত নেতাকর্মীদের যত্নে লালিত এবং জনগণের অর্থে “পালিত” বাসদের “তাত্ত্বিক” নেতারা জলপাইধারীদের রুদ্র রোষের শিকার হলে ক্ষতি তো আমাদেরই - কারণ সর্ব অর্থে শরীরে ও মনে তারা তো জনগণেরই “সম্পদ”।
মন্তব্য লেখকদের মধ্যে শান্ত’র প্রতি বাসদের দলগত স্নেহ ও আস্থা দেখে হৃদয় ভরে গেল (“শান্ত’র আলোচনায় বাসদের রাজনৈতিক অবস্থান এতো ভালভাবে এসেছে যে তাকে অনেকেই বাসদের কর্মী হিসেবেই দেখেছেন – মোশাররফ)। তার (শান্ত’র) যুক্তি ও তর্কের কনটেন্ট ও মান নিয়ে (পুনরায়) প্রশ্ন তুলবোনা – শুধুমাত্র এই কারণে যে একজন কর্মী (থুক্কু “সমর্থক বা “শুভার্থি”) হিসেবে বাসদের মুখরক্ষার এই দায়িত্ব (গুরু বা লঘু) তার একার হওয়ার কথা ছিলোনা। ভবিষ্যতে নিজেদের কর্মীদের (থুক্কু “সমর্থকদের”) তোপের মুখে ঠেলে দিয়ে পেছন থেকে পিঠ চাপড়ে দেওয়ার এই নেহায়েতই কাপুরুষোচিত ভূমিকাটি ত্যাগ করবেন বলে আশা করি।
এত সব প্রশ্নোত্তর এবং ভাব বিনিময়ের পরও মনে একটি প্রশ্ন থেকেই গেল। সমাজতান্ত্রিক ধ্যানধারণার বিষয়ে “ঈমান” তেমন পোক্ত হয়নি বলে, অথবা হয়তো নিছক নারী বলেই (জানেনই তো পৃথিবীর প্রধান কয়েকটি ধর্ম অনুযায়ী এর একটি কারণ শরীরবৃত্তীয় – “বক্র পাঁজরাস্থি” থেকে উদ্ভব হেতু অযাচিত বক্র চিন্তাভাবনা আমাদের আবার স্বভাবজাত) পুরনো একটি প্রসঙ্গের অবতারণা আবারও করতে হচ্ছে। মন্তব্যকারীদের কাউকে দেখলাম এই ভেবে খানিকটা আহ্লাদিত যে এই প্রথম বাংলাদেশী কোন রাজনীতিবিদ (কমরেড খালেকুজ্জামান) কারো সাহিত্য মূল্যায়নের গুরুদায়িত্বটি হাতে নিয়েছেন (বা আগ্রহ প্রকাশ করেছেন)। ভাবছি, আজ যদি সেই পথ স্মরণ করে, এবং সেই কীর্তি ধ্বজা ধরে গোলাম আযম সাহেবরাও কবি সাহিত্যিকদের “ইসলামিক মূল্যায়নে” নেমে পড়েন (যেমনটি হয়েছিল শ্রদ্ধেয় হুমায়ুন আজাদ, আহমদ শরীফ কিংবা তসলিমা নাসরিনদের বেলায়) তাহলেও কি আপনারা এমন আহ্লাদিতই থাকবেন?
পরিশেষে, এত সব আলোচনার পর “ইন্সিডেনটাল কি বুঝেছেন” সেটি নিয়ে মোশাররফকে বিশেষ চিন্তিত হতে দেখলাম (“ইনসিডেন্টাল ব্লগার এর যে লেখা নিয়ে এ আলোচনা এতদিন হয়েছে তাতে ইনসিডেন্টাল ব্লগার কী বুঝলেন তা একটি মূখ্য প্রশ্ন” - মোশাররফ)। আমি এবং আমার মত সাধারণ মানুষদের কাছে কিন্তু ইন্সিডেনটাল কি বুঝলেন তা মূখ্য নয়। আমাদের কাছে বরং তার চাইতেও অনেক বেশী জরুরী এইটি জানা যে আপনারা এই আলোচনা থেকে দল হিসেবে কর্মী হিসেবে কি বুঝলেন, কি শিখলেন? ইন্সিডেনটাল গণচাঁদায় বাঁচেন না, আপনারা বাঁচেন। ইন্সিডেনটাল একজন ব্যক্তি, আর আপনারা একটি রাজনৈতিক দল – সুতরাং জনগণের প্রশ্নের উত্তর দেবার দায় ইন্সিডেনটালের নেই, আপনাদের আছে।
যাই হোক, গত কয়েক সপ্তাহে দু’পক্ষের মতবিনিময় বা অবিনিময় দেখে আমি মোটামুটি স্বীকার করে নিতে প্রস্তুত যে আপনারা “ভালো লক্ষী সবাই – আমরা ভারী বিশ্রী” (ভয়ে ভয়ে সুকুমার রায়ের “হিংসুটিদের গান” দ্রষ্টব্য; আরো অনেকের মতই বেচারী কবি জীবদ্দশায় শ্রেনীসংগ্রামের ডাক দিতে ভুলে গিয়েছিলেন। নিজের অজান্তেই তাই তাঁর বেশ খানিকটা “উপলদ্ধির ঘাটতি” থেকে গেল)।
এভাবে দল বেঁধে আঁড়ি নিয়ে চলে যাবেন না যেন। ভবিষ্যতে আপনাদের আরো অংশগ্রহণ দেখতে পাবো এই আশা নিয়ে শেষ করছি। সবাই ভালো থাকবেন এই কামনায়।
মুক্তাঙ্গন - ১৪ আগস্ট ২০০৮ (৫:০০ অপরাহ্ণ)
বিভিন্ন প্রাসঙ্গিক বিষয় আলোচনায় এনেছেন ব্লগার এবং মন্তব্যকারীরা। এভাবেই যদি অনন্তকাল আলোচনাটা চালিয়ে নেয়া যেত তাহলেও মন্দ হোতো না। কিন্তু সংগত কারণেই আলোচনাটায় ইতি টানতে হচ্ছে, সদস্য ব্লগারদের অনুরোধক্রমে।
সবার প্রতি আহ্বান রইলো মুক্তাঙ্গনের অন্যান্য পোস্টগুলোতেও এমন সুচিন্তিত অংশগ্রহণের। বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে সাম্প্রতিক আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা দানা বেঁধে উঠছে। আশা করবো সকল ব্লগার আর মন্তব্যকারীদের কলম এবং চিন্তা সেসবের বিশ্লেষণে কেন্দ্রীভূত হবে।
সবাইকে ধন্যবাদ।