মুক্তিযুদ্ধের সময় অপরাধের সাথে যুক্ত ছিল যে-সব গোষ্ঠী তাদের সবার ক্ষেত্রেই অবস্থানগত মিলটি হল - এরা সবাই ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধকে সবসময়ই হয় "গৃহযুদ্ধ" (civil war), না-হয় "অভ্যন্তরীণ সংঘাত" (internal conflict), নয়তো "ইন্দো-পাক যুদ্ধ" হিসেবে বর্ণনা করার চেষ্টা করে এসেছে। ঠিক কেন? ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধকে "সিভিল ওয়ার" বলে চালিয়ে দিতে পারলে ১৯৭১-এর "অপরাধীপক্ষ" আইনগত বা কৌশলগত কোনো সুবিধা পায় কি না, এবং পক্ষান্তরে তা ১৯৭১-এ সংঘটিত অপরাধের বিচারের ক্ষেত্রে কোনো ধরণের অসুবিধা বয়ে আনে কিনা, সে সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে এই লেখা।

ব্রিটেনের একটি ট্যাবলয়েড পত্রিকা দি সানডে টাইমস-এর সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে গত ৫ ফেব্রুয়ারি পত্রিকাটির একটি বিশেষ ক্রোড়পত্রে ফটোগ্রাফার ডন ম্যাককালিন-এর তোলা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালীন একটি আলোকচিত্র নিয়ে সম্প্রতি ফেসবুক এবং ব্লগসহ বেশ কিছু প্লাটফর্মে আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে ((দেখুন: The Sunday Times-এর ক্রোড়পত্র Spectrum-এর ৫০ নম্বর পৃষ্ঠায় ছাপানো আলোকচিত্রটি ও তার ক্যাপশন))। ছবিটিতে কলেরা-আক্রান্ত স্ত্রীকে বহনকারী জনৈক উদ্বাস্তু শরণার্থীকে দেখা যাচ্ছে। ছবিটির ক্যাপশনে বাসস্থানচ্যুতি বা displacement-এর প্রেক্ষাপট বর্ণনায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে "civil war" বা "গৃহযুদ্ধ" হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। এই নিয়েই বিতর্ক। অস্বীকার করার উপায় নেই যে, এই "গৃহযুদ্ধ তত্ত্বকে" ব্যবহার করার মতো একটি শ্রেণী রয়েছে যারা দেশে এবং বিদেশে যথেষ্ট সক্রিয়। তবে, এই ক্ষেত্রে দি সানডে টাইমস-এর ক্যাপশনটিকে আমার কাছে সচেতনতার অভাবজনিত একটি ত্রুটি বলে মনে হয়েছে, যা একটি দায়িত্বশীল পত্রিকার (যদিও অনেকেই সানডে টাইমসকে "দায়িত্বশীল"-দের কাতারে ফেলেন না) পক্ষ থেকে হওয়া উচিত ছিল না। কিন্তু এই ক্যাপশনটিকে কেন্দ্র করে একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার সুযোগ তৈরি হয়েছে, যা বর্তমান প্রেক্ষাপটে নানা কারণেই প্রাসঙ্গিক। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে যাঁরা "সিভিল ওয়ার" হিসেবে বর্ণনা করেছেন বা এখনো করেন তাঁদের মধ্যে রয়েছেন -- সাম্প্রতিকদের মধ্যে শর্মিলা বোস, ইয়াসমিন সাইকিয়া; একটু পুরনোদের মধ্যে হামুদুর রহমান কমিশন, ইন্টারন্যাশনাল কমিশন অব জুরিস্টস (ICJ)-এর মতো প্রতিষ্ঠানগুলো। এছাড়াও রয়েছে ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ এবং যুদ্ধ-পরবর্তীকালের দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মিডিয়া, যারা অনেক ক্ষেত্রেই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে "সিভিল ওয়ার" হিসেবেই বর্ণনা করে এসেছে। লক্ষণীয় বিষয় হল, মুক্তিযুদ্ধের সময় অপরাধের সাথে যুক্ত ছিল যে-সব গোষ্ঠী (যেমন: তৎকালীন পাকিস্তানের সেনাবাহিনী), কিংবা অপরাধীচক্রের সহায়তাকারী বা সহযোগী হিসেবে যারা যুক্ত ছিল (যেমন: জামায়াতে ইসলামী, শান্তি কমিটি, রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস ইত্যাদি), কিংবা যারা এযুগেও তাদের সমর্থক -- তাদের সবার ক্ষেত্রেই একটা বিষয়ে অবস্থানগত একটি মিল খুঁজে পাওয়া যায় - আর তা হল, এরা সবাই ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধকে সবসময়ই হয় "গৃহযুদ্ধ" (civil war), না-হয় "অভ্যন্তরীণ সংঘাত" (internal conflict), নয়তো "ইন্দো-পাক যুদ্ধ" হিসেবে বর্ণনা করার চেষ্টা করে এসেছে। মনে প্রশ্ন জাগে, কেন? মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তির দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে -- ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধকে যদি নিছক একটি "অভ্যন্তরীণ সংঘাত" হিসেবে, কিংবা বাংলাদেশের কথা পুরোপুরি বাদ দিয়ে একে "পাক-ভারত যুদ্ধ" হিসেবে চালিয়ে দেয়া যায়, তাহলে তার একটা…

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.