আমার জানতে ইচ্ছে করে, সরকারের বিজ্ঞাপন নীতিমালা এই বিজ্ঞাপনগুলোকে সমর্থন করে কি না। আর যদি আমাদের চরম দুর্ভাগ্যবশত সমর্থন করেও থাকে, তাহলে আমরা এই অপকর্মের বিরুদ্ধে সোচ্চার হব কি না। [...]

আমাদের টেলিভিশন চ্যানেলগুলো খুললেই চটকদার নানান বিজ্ঞাপনচিত্র দেখতে পাওয়া যায়। দেশে এখন বিজ্ঞাপনশিল্প গড়ে উঠেছে। হাজার-হাজার মানুষ এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত। অবাক করা বিষয় হল: এফডিসি-তে চলচ্চিত্রের যত না কাজ হয়, তার চেয়ে বেশি কাজ হয় বিজ্ঞাপনের। অনেককেই বলতে শোনা যায়, টিভি-অনুষ্ঠান মানুষ দেখে বিজ্ঞাপন দেখার আশায়। আমাদের অনেক বিজ্ঞাপনচিত্র আন্তর্জাতিকভাবে পুরস্কৃত হয়েছে, তাও আমরা জানি। এমনও নজির আছে: আমাদের দেশে বিজ্ঞাপন সামাজিক দায়বদ্ধতার জন্য বিটিভিতে জনসচেতনতা ও শিক্ষামূলক অনুষ্ঠানের আওতায় বিশেষ হ্রাসকৃত মূল্যে প্রচারিত হয়েছে। বিজ্ঞাপনটি সুনির্মাতা আফজাল হোসেন দ্বারা নির্মিত ছিল। ছোট শিশুদের মায়েদের অনুরোধ ছিল, বিজ্ঞাপনটি না শুনলে তাদের শিশুরা খাবার খেতে চাচ্ছিল না। অন্য কথায় আসি। বিভিন্ন চ্যানেলে প্রচারিত দু'-চারটি বিজ্ঞাপন আমার মনে প্রশ্ন সৃষ্টি করেছে। প্রথমে বলি, ভারতীয় কিছু বিজ্ঞাপন, বিশেষত বহুজাতিক কোম্পানি লিভার ব্রাদার্স-এর দু'-একটি পণ্যের বিজ্ঞাপন, যেগুলো ভারতের শিল্পী ও কলাকুশলীদের দ্বারা নির্মিত, সেই বিজ্ঞাপনগুলোর কথা বাংলায় তর্জমা করে আমাদের এখানে প্রচার করা হচ্ছে। এখন আমার প্রশ্ন: আমাদের এখানে যেহেতু বিজ্ঞাপনশিল্প, মডেল, শিল্পী, কলাকুশলী আছে, সেহেতু ভারতীয় বিজ্ঞাপনগুলো প্রচারের প্রয়োজনীয়তা আছে কি না। ভারতীয় বিজ্ঞাপনগুলোর মডেলদের পোশাক-আশাকও আমাদের এখানকার পরিবেশের সঙ্গে যায় কি না ভেবে দেখা প্রয়োজন। সম্প্রতি হরলিক্স-এর একটি বিজ্ঞাপনও আমাদের এখানে দেখানো হচ্ছে, যার মোদ্দা কথা হল: এই হরলিক্স পান করলে বাচ্চারা Taller, Sharper and Stronger হবে। এই বিজ্ঞাপন যখন ইউকে-তে দেখানো হয়, তখন এর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। মামলায় বলা হয়, এটা কীভাবে প্রমাণিত হল যে স্বাভাবিক খাবার খাওয়া শিশুর চেয়ে হরলিক্স পান-করা শিশু Taller, Sharper and Stronger হয়? তখন হরলিক্স কর্তৃপক্ষ বলেছে, আসলে বিজ্ঞাপনটি ভারত-শ্রীলঙ্কা তথা তৃতীয় দুনিয়ার জন্য বানানো হয়েছে এবং ইউকে থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এই ভুল তথ্য দেওয়া বিজ্ঞাপনটি আমাদের এখানে চালানো হচ্ছে। এবার আসি আমাদের এখানে বানানো দু'টি বিজ্ঞাপনের প্রসঙ্গে। প্রথমটি প্রাণ কোম্পানির ফ্রুটো ড্রিঙ্ক নিয়ে। শিক্ষক বাচ্চাদের আম বিষয়ক রচনা লিখতে দিয়েছেন। বাচ্চারা লিখেছে: ‌'এমন একদিন আসবে, যখন আমের ছালবাকল থাকবে না, আঁটি থাকবে না; বোতলবন্দি থাকবে আম। বৈশাখমাসে নয় শুধু, সারা বছরই আম খাওয়া যাবে। সেই আমকে আদর করে ফ্রুটো ডাকবে সবাই।' হায় রে আমার শিক্ষক, হায় রে আমার পাকা আমের মধুর রস!…

বাংলাদেশে এনজিও-কাযর্ক্রম নিয়ে কিছু আশঙ্কা ও প্রশ্ন [...]

এনজিও যে আমাদের সামাজিক-সাংস্কৃতিক জীবনের প্রতি রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছায়ার মতো তাদের থাবা বিস্তার করছে তা বোধহয় আর বলার অপেক্ষা রাখে না। আমরা যদি এনজিও-কার্যক্রমের দিকে নজর দিই তাহলে দেখব, স্বাধীনতার পর-পর মাত্র গুটিকয় এনজিও তাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছিল। আর এখন তো বাংলাদেশের প্রতি ধূলিকণায় তাদের রক্তাক্ত ছোঁয়া রেখে যাচ্ছে। রুরাল ইকোনোমির প্রায় সবটুকুই তারা তাদের করায়ত্ত করে ফেলছে। তাদের কাজের বিস্তৃতির কিছু নমুনা দেয়া যাক। রেলের টেলিকম সিস্টেমের সাথে গ্রামীণ ফোনের সম্পর্ক বরাবরই বেশ নিবিড়। এখন এরা সুবর্ণ এক্সপ্রেসের একটা বগি সেলফোনের জন্য নানান সুযোগ-সুবিধা দিয়ে তাদের বিজ্ঞাপনের কাজে ব্যবহার করছে। আরও এক মজাদার বিষয় কেউ কেউ লক্ষ্য করে থাকবেন : চট্টগ্রাম শহরের অলঙ্কার মোড়ে একটি পুলিশ বক্স। তা এমনই দৃষ্টিনান্দনিকতায় পরিপূর্ণ যে, মনে হবে বেহেশতের স্নিগ্ধস্রোত চুঁইয়ে চুঁইয়ে নামছে। যে-কোনো পুলিশ বক্সকে বরাবরই ষড়যন্ত্রমুখর, পলায়নপর, যন্ত্রণাময় এক জায়গা মনে হয়। কিন্তু এমন স্মার্ট আর রোমান্টিক পুলিশ বক্স এই দেশে কমই আছে। এটি নির্মিত হয়েছে সানমারের সৌজন্যে। এ-ধরনের বহু কাজ সরকার-নিয়ন্ত্রিত অঙ্গনে হরহামেশাই চোখে পড়ে। সবচেয়ে বড়ো বিষয় হচ্ছে, এই যে, এনজিও-গ্রাস শুরু হয়েছে তা কোথায় গিয়ে ঠেকবে? বাংলাদেশের সামাজিক-সাংস্কৃতিক বিকাশ কি এতে রুদ্ধ হবে না?

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.