রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা সাহিত্যের দিকপাল কবি, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, গীতিকার, সুরকার, নাট্যকার ও দার্শনিক। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগ থেকে বিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগ পর্যন্ত রবীন্দ্রনাথ বাংলা সাহিত্যে এক যুগান্তকারী পরিবর্তনের সূচনা করেন। ১৯১৩ সালে তিনি তাঁর গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের জন্য প্রথম এশীয় হিসাবে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি তার সারা জীবনের কর্মে সমৃদ্ধ হয়েছে। বিশ্বের বাংলা ভাষাভাষীদের কাছে তিনি বিশ্বকবি ও কবিগুরু হিসেবে সম্মানিত ও খ্যাত। তিনি বিশ্বের একমাত্র কবি যিনি দু'টি দেশের জাতীয় সঙ্গীতের রচয়িতা। বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত 'আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি' এবং ভারতের জাতীয় সঙ্গীত 'জনগণমন-অধিনায়ক জয় হে ভারত ভাগ্যবিধাতা' উভয়টির রচয়িতাই রবীন্দ্রনাথ। রবীন্দ্রনাথের হাতে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য, শিল্পকলা ও শিল্প চেতনা নতুনভাবে ও নতুনরূপে বিকশিত হয়েছে। কলকাতার পিরালী ব্রাহ্মণ সমাজের অন্তর্গত রবীন্দ্রনাথ প্রথম কবিতা লিখেছিলেন মাত্র ৮ বছর বয়সে। ১৮৭৭ সালে মাত্র ১৬ বছর বয়সে তিনি প্রথম ছোট গল্প ও নাটক লিখেন। এর আগেই প্রথম প্রতিষ্ঠিত কাব্যের জন্ম দিয়েছিলেন যা ভানুসিংহ ছদ্মনামে প্রকাশিত হয়। পারিবারিক শিক্ষা, শিলাইদহের জীবন ও প্রচুর ভ্রমণ তাকে প্রথাবিরুদ্ধ এবং প্রয়োগবাদী হিসেবে গড়ে উঠতে সাহায্য করেছিল। তিনি ব্রিটিশ উপনিবেশিক সাম্রাজ্যবাদী শাসন-শোষণের প্রবল বিরোধিতা করেন ও মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে পরিচালিত ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনকে সমর্থন করেন। তার পুরো পরিবারের পতন ও বাংলার বিভক্তিরেখার নিদর্শন তাকে দেখতে হয়েছিল অনেকটা অসহায়ের মতোই। এদিক থেকে তার জীবনকে দুঃখী বলতেই হয়। কিন্তু তার কবিতা, অন্যান্য সাহিত্য আর বিশ্বভারতী প্রতিণ্ঠা তার জীবনকে মহিমান্বিত করেছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ভারতের কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও মা সারদা দেবীর ১৪ সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন ১৩তম । জন্মের সময় তার ডাক নাম রাখা হয় রবি। ১১ বছর বয়সে তার উপনয়ন সম্পন্ন হওয়ার পর ১৮৭৩ সনের ১৪ ফেব্রুয়ারি ঠাকুর তার বাবার সাথে কলকাতা ত্যাগ করেন ভারত ভ্রমণের উদ্দেশ্যে। ভারতের বিভিন্ন স্থানে যান তারা। এর মধ্যে ছিল শান্তিনিকেতনে দেবেন্দ্রনাথের নিজস্ব সম্পত্তি, অমৃতসর ও হিমালয় অধ্যুষিত পাহাড়ি স্টেশন ডালহৌসি। সেখানে তিনি বিভিন্ন ব্যক্তির জীবনী, ইতিহাস, জ্যোতির্বিজ্ঞান, আধুনিক বিজ্ঞান ও সংস্কৃত অধ্যয়ন করেন। এছাড়াও তিনি কালিদাসের ধ্রুপদি কাব্যের সাথে পরিচিত হন ও এর বিভিন্ন পর্যালোচনা করেন। ১৮৭৭ সনে তিনি প্রথম জনসম্মুখে…

রবীন্দ্রনাথ আজ আমাদের মধ্যে বেঁচে নেই। এই বেঁচে না থাকা রবীন্দ্রনাথ সেই ১৯৪২ থেকে বছরে দুদিন তাঁর জন্মমৃত্যুর তারিখ ঘোষণায় আমাদের পত্রপত্রিকায় উপস্থিত আছেন। আমরা তাঁকে নিয়ে গর্বিত। আমরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করি এবং তাঁকে নিয়ে আমাদের উচ্ছ্বাস আমাদের সাংষ্কৃতিক অবস্থানকে উচ্চকিত করে। কিন্তু আমরা কি রবীন্দ্রনাথকে ছেনে দেখছি? কিন্তু আমরা কি আমাদের হাতে ছেনে আমাদের রবীন্দ্রনাথকে তৈরী করছি? কিন্তু আমরা কেন ওপথে যাচ্ছি না, যখন সে পথে না গেলে, আমরা জানি, অন্তত বাংলাদেশের রবীন্দ্রনাথকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। (more…)

আলোচনার সুবিধার্থে ব্লগপোস্টটিকে দুই ভাগে বিভক্ত করে নিচ্ছি। প্রথমভাগের আলোচনাটি কমরেড জামানের মূল্যায়নটির সুনির্দিষ্ট বক্তব্যনির্ভর, পাঠকের সুবিধার্থে মূল্যায়নটির কিছু কিছু অংশ সেখানে সরাসরি উদ্ধৃত। পাশাপাশি, যেখানে প্রাসঙ্গিক মনে হয়েছে, সেখানে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে সাম্প্রতিক কিছু উদাহরণ তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। দ্বিতীয় অংশটি বৃহত্তর দৃশ্যপট নিয়ে, যেখানে চেষ্টা করেছি সমাজতান্ত্রিক দল এবং আদর্শকে ঘিরে আবর্তিত "পার্টি সাহিত্যে"র ধারণা এবং আনুষঙ্গিক কিছু বিষয়ের ওপর আলোকপাত করার।

কবি শামসুর রাহমানের মৃত্যুর পর কলকাতা থেকে প্রকাশিত দ্বি‌-মাসিক "পথিকৃৎ"-এর পক্ষ থেকে প্রয়াত কবির উপর একটি বিশ্লেষণধর্মী লেখা ছাপাবার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। লেখাটি চাওয়া হয়েছিল বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল - বাসদ-এর আহ্বায়ক কমরেড খালেকুজ্জামানের কাছে। কমরেড জামান-কৃত কবির মূল্যায়নটি পড়তে হলে এই লিংক থেকে ডাউনলোড করে নিন। সুন্দরভাবে টাইপ করা তথ্যসমৃদ্ধ মূল্যায়নটি পড়ে আমার মনে কিছু প্রশ্ন জেগেছে, যে কারণে এই ব্লগ লেখা। শুরুতে বুঝতে পারিনি যে লেখাটি এত দীর্ঘ হয়ে যাবে; তাই পাঠকের কাছে অগ্রিম ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি তাঁদের অনেকটা সময় নিয়ে নেয়ার জন্য। আমার জানা নেই কমরেড খালেকুজ্জামানের সাহিত্য সমালোচনার কোনো প্রশিক্ষণলব্ধ যোগ্যতা (যেমন: সাহিত্যে উচ্চতর ডিগ্রি), কিংবা প্রাতিষ্ঠানিক অভিজ্ঞতা (যেমন: দীর্ঘদিন কোনো পত্রিকার সাহিত্য পাতা সম্পাদনার সাথে সম্পৃক্ততা), কিংবা একজন সাহিত্যিক বা সাহিত্য সমালোচক হিসেবে সর্বজনগ্রাহ্যতা আছে কিনা। ধরে নিতে হচ্ছে, এই তিন দলের অন্তত যে-কোনো একটির মধ্যে তিনি পড়েন; আর তা নাহলে কেনই-বা "পথিকৃৎ" নামের এই সাহিত্য পত্রিকাটি তাঁর কাছেই কবি শামসুর রাহমানের মূল্যায়ন চাইবে ? আর যদি তিনি এই তিনটি দলের কোনোটির ভেতরই না পড়েন, তখন পুরো বিষয়টিকেই একটু অন্যভাবে দেখার অবকাশ থাকে বৈকি। এ প্রসঙ্গে বলে রাখা দরকার, "পথিকৃৎ" পত্রিকার এই মূল্যায়ন চাওয়ার বিষয়টিও কিছুটা কৌতূহলোদ্দীপক। কেন একটি সাহিত্য পত্রিকা একজন অসাহিত্যিকের কাছ থেকে শামসুর রাহমানের মূল্যায়ন চাইবে, সে বিষয়টা আমার এবং আরো অনেকের কাছেই পরিষ্কার নয়। একজন কবি, তা-ও শামসুর রাহমানের মাপের একজন কবি কোনো দেশ, কাল বা সীমানার মধ্যে আবদ্ধ থাকেন না; কোনো দল বা মতাদর্শের মধ্যে তো নয়ই। তাঁর মতো কবিরা পৃথিবীর সম্পদ। তাঁকে নিয়ে মূল্যায়নধর্মী কাজ দাঁড় করানোর মতো প্রয়োজনীয় মাল-মশলা-তথ্যাদি পশ্চিমবঙ্গে দুর্লভ নয়। আমার জানা মতে, পশ্চিমবঙ্গে শামসুর রাহমানের প্রায় সমস্ত কবিতার বই-ই পাওয়া যায়। "পথিকৃৎ" পত্রিকা যদি নিউ ইয়র্ক কিংবা ব্রাসেলসের হতো, তাহলেও কথা ছিল। এও ধরে নিতে পারি যে, "পথিকৃৎ"-এর সদস্যরা পড়তে লিখতে পারেন এবং সাহিত্য বিষয়ে যথেষ্ট আগ্রহ-ও ধারণ করেন। সুতরাং এত কিছু থাকতে কেন যে তারা জনৈক অসাহিত্যিক রাজনৈতিক নেতার মতামত জানতে এত আগ্রহী হলেন, সে বিষয়ে যত ভাবি, ততই বিস্মিত হই। যাই হোক, মূল্যায়নটিকে একটু কাছ থেকে দেখার চেষ্টা করা যাক। আলোচনার সুবিধার্থে ব্লগপোস্টটিকে দুই…

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.