বারো বছর পূর্ণ হতে যাচ্ছে আমার ব্লগ জীবনের। যখন শুরু করেছিলাম দুই হাজার আট সালে তখন ভাবিনি এতগুলো বছর পার করে দেব এই মাধ্যমে। কিন্তু এক যুগ পূর্ণ তো হয়েই যাচ্ছে ভাবছি সামনে আরো কয়েক যুগ এই মাধ্যমে আমার কাটবে আশা আছে। যদিও যখন একথা লিখছি তখন আমি জানি এই মাধ্যমের যেদুর্দিন চলছে তাতে তো এই আশঙ্কা প্রকট যে যেকোনো সময় এই মাধ্যমে পথ চলাই আমার বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তবে কেন আমি আশা করছি আমি চলতে থাকব। কারণ এপথে একা চলতে থাকা সম্ভব। হ্যাঁ, এক সময় অনেকে ছিল আজ অনেকে নেই সামনে হয়তো আজ যে গুটিকয়েক আছে তারাও থাকবে না কিন্তু তাতে কী আমি যদি একা ব্লগের পথ চলতে চাই আমাকে তো কেউ থামিয়ে দিতে পারবে না। আমার একটা ব্যক্তিগত শক্তি আমি কোনো প্রভাব বিস্তার করতে চাই না। আর যেহেতু আমি প্রভাব বিস্তার করতে চাই না সেহেতু একটা খুব স্বাচ্ছন্দ্যে আমি নীরবে এগিয়ে যেতে পারি। এবং এই এগিয়ে যাওয়ার ধরনের সাথে ব্লগ মাধ্যমটিকে আমি কেমন যেন খুব আপন করে

পেয়েছি। সেটা আমি প্রথম দুয়েক বছর বুঝতে না পারলেও দুই হাজার এগারো থেকে আমি মোটামুটি বুঝে ফেলি ব্লগ মাধ্যমে আমি অনেক দিন পড়ে থাকব। এবং এই পড়ে থাকার মধ্যে আমার একটা অবস্থান থাকবে যা কখনো টলানো যাবে না। হ্যাঁ, এমন একটা স্থিতিস্থাপকতা থাকবে আমার ব্লগ মাধ্যমে টিকে থাকার সেটা একটা টিকে থাকার পথ চলার পথ করার অপ্রত্যাশিত পথে যাবার একটা গল্প হয়তো কখনো মানুষকে বলবে। প্রথমে বলবে তাদেরকে যারা শুনতে চায় আর তারপর বলবে তাদেরকেও যারা শুনতে চায় না। প্রতিজ্ঞা প্রত্যয় এগুলো আমার কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ শব্দ নয়। যদিও দিনের শেষে এই শব্দগুলো পরিহার আমি করি না যখন দেখি যেসমাজে বাস করি সেখানে ব্লগারদের অবমূল্যায়ন যেমন প্রাত্যহিক তেমন ব্লগার হত্যার মতো সন্ত্রাসবাদী অপরাধের শিকার আমাদের সহকর্মীরা। আমি জানি না আর কত তিন চলবে আমাদের এই বিপর্যস্ত দিন। আমি জানি না আর কত প্রাণসংহার চায় এই সংস্কৃতিবিমুখ প্রগতিবিমুখ সমাজ। এই যে জানি না কিন্তু পথ চলা থামবে না এরকম কোনো অগ্রগতির অদৃশ্য শক্তিই হয়তো প্রতিজ্ঞা প্রত্যয়। এবং এটা থাকবে। এই ব্লগ…

এটা খুবই দুঃখজনক, সন্ত্রাসহীন মতপ্রকাশের পথে বাধা সৃষ্টি করে, ইন্টারনেটের সবচেয়ে জনপ্রিয় উপযোগ 'ব্লগ'এর গলা টিপে ধরে সরকার তার নিজস্ব অবস্থানকে টালমাটাল করে দিচ্ছে এবং সত্যিই এক অচিন পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হয়েছে। [...]

আমার পরিমণ্ডলে আমিই একমাত্র ব্যক্তি যে কখনো ব্যাঙ্গাত্মকভাবে একবারের জন্যও 'ডিজিটাল বাংলাদেশ' বাগধারা ব্যবহার করিনি, এমনকি যখন আমার খুবই প্রিয় ও খুবই প্রয়োজনের 'ইউটিউব' বন্ধ করে দেয়া হল তখনো আমি প্রতিবাদ করেছি কিন্তু দেশের ডিজিটাল অগ্রযাত্রা নিয়ে কোনো ব্যঙ্গ করিনি। আর গতকাল যখন 'আমার ব্লগ' বন্ধ করে দেয়া হল ঠিক তখনও বন্ধুদের মধ্যে শ্লেষাত্মক 'ডিজিটাল বাংলাদেশ' খিস্তি ওঠার পরও আমি নিজেকে সংযত রেখেছি, কিন্তু মাথায় 'ডিজিটাল' শব্দের জার্মান উচ্চারণটা ঘুরতে লাগল, হ্যাঁ, সরকারের তাই হয়েছে ব্লগের প্রশ্নে, সরকারের 'ডিগি টাল' হয়েছে। এবং এটা খুবই দুঃখজনক, সন্ত্রাসহীন মতপ্রকাশের পথে বাধা সৃষ্টি করে, ইন্টারনেটের সবচেয়ে জনপ্রিয় উপযোগ 'ব্লগ'এর গলা টিপে ধরে সরকার তার নিজস্ব অবস্থানকে টালমাটাল করে দিচ্ছে এবং সত্যিই এক অচিন পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হয়েছে। আশা করি, সরকার দ্রুত তার এই অবস্থান থেকে সরে আসবে। সরকার অনেক বেশি মনোনিবেশ করবে সন্ত্রাসী ও অপরাধীচক্র কিভাবে ইন্টারনেটের সহায়তায় জঙ্গি হামলা ও অপরাধ সংঘটিত করছে তার মোকাবেলা করতে সেসব সাইট ও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করতে। সরকারকে স্বাধীন মত প্রকাশের 'ব্লগ' মাধ্যমের পেছনে সুকৌশলে তারাই লেলিয়ে দিয়েছে যারা খুব পরিকল্পিতভাবে সরকারের ইন্টারনেটের উপর নাশকতাবিরোধী নজরদারিকে দুর্বল করে দিতে চায় এবং সরকারও 'ইসলাম'এর মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে তার কঠোর অবস্থান ঘোষণা করতে তোড়জোড় করে নেমে পড়েছে। সরকারের এখনকার চূড়ান্ত সতর্কতার সময় নাশকতার বিরুদ্ধে সদাসতর্ক 'ব্লগ' মাধ্যমের সাথে বৈরিতা সৃষ্টি হবে সবচেয়ে আত্মঘাতী পদক্ষেপ। আমরা সরকারকে উপদ্রুত দেখতে চাই না, আমরা চাই সরকার তার অচিন পক্ষাঘাত থেকে মুক্তি লাভ করুক -- একমাত্র সেপথেই সৃষ্টিশীল হতে পারে 'ডিজিটাল বাংলাদেশ'।

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.