(গত পর্বের পর) পদত্যাগের কারণ সংসদীয় কমিটিতে তলব? সরকারি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে তলবের কারণেই দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যানের পদ থেকে লেফট্যানেন্ট জেনারেল (অব.) হাসান মশহুদ চৌধূরী পদত্যাগ করার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন বলে মনে করা হচ্ছে। এই স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান হচ্ছেন আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. মহীউদ্দিন খান আলমগীর। সূত্র জানায়, গত এক এপ্রিল অনুষ্ঠিত সরকারি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে দুর্নীতি সংশ্লিষ্ট কিছু বিষয়ে আলোচনার জন্য পরবর্তী বৈঠকে হাসান মশহুদ চৌধূরীকে তলব করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাঁকে নোটিস দিয়ে তলবের কথা বলা হয়। এ খবর জানার পর এবং সরকারের সঙ্গে চলমান টানাপোড়েনসহ একাধিক কারণে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন হাসান মশহুদ। অসহযোগিতাও অন্যতম কারণ? সরকারের চাপ ও অসহযোগিতার কারণেই চলে যেতে হয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)-এর চেয়ারম্যান লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) হাসান মশহুদ চৌধুরীকে। দুদক-এর দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জানায়, ইদানীং সরকারের পক্ষ থেকে কোন সহযোগিতাই করা হচ্ছিল না তাকে। জানা গেছে, এই অসহযোগিতার অংশ হিসেবে দুদক-এর মতামতের তোয়াক্কা না করেই দু’ কর্মকর্তার নিয়োগ আদেশ বাতিল করে আওয়ামী লীগ সরকার অন্য দু’জনকে দুদক-এর ঊর্ধ্বতন দু’টি পদে নিয়োগ দেয়। এ কারণে এক কর্মকর্তাকে কোন দায়িত্বও দেয়নি দুদক। এছাড়াও দুদক-এর মতামত না নিয়ে পরিচালক পদে আরও কয়েকটি নিয়োগ দেয় সরকার। সর্বশেষ দুদক-এর সহকারী পরিচালক, উপ-পরিচালক ও পরিচালক পর্যায়ে পদোন্নতি দেয়ার বিষয়ে গঠিত কমিটির বৈঠক নিয়ে সরকারের সঙ্গে হাসান মশহুদ চৌধুরীর সম্পর্ক শীতল হয়ে পড়ে। দুদক-এর সচিবের সভাপতিত্বে পদোন্নতি বিষয়ক কমিটির এ বৈঠক হওয়ার কথা ছিল গত ২৯ মার্চ। পদোন্নতি কমিটির পাঁচ সদস্যের মধ্যে ওই দিন সরকারি এক সদস্য বৈঠকে উপস্থিত না হওয়ায় তা স্থগিত করে পরদিন ৩০ মার্চ করার সিদ্ধান্ত হয়। পরের দিনও ওই সদস্যকে পাঠানো হয়নি বৈঠকে। পরে চেয়ারম্যান খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের ইঙ্গিতেই তাকে বৈঠকে যেতে বারণ করা হয়। এরপরই পদত্যাগের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন হাসান মশহুদ চৌধুরী। এর একদিন পরই তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র পাঠান। এছাড়া আরও কিছু বিষয়েও কেবিনেট থেকে দুদককে অসহযোগিতা করা হয়। যেমন, দুদকের জনবল কাঠামো অনুমোদন করেনি সরকার। মামলা পরিচালনায় এটর্নি জেনারেলের অফিস থেকেও প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেয়া হচ্ছিল…
২০০৭ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিয়েই হাসান মশহুদ চৌধুরী (অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল) বলেছিলেন, ‘এবার পদত্যাগ নয়, এবার লড়াই হবে।’ কথাটি তিনি বলেছিলেন তাঁর অতীতের দিকে তাকিয়ে। কেননা রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিনের প্রথম পর্বের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টার পদ থেকে যে চারজন উপদেষ্টা পদত্যাগ করেন, তাঁদের মধ্যে তিনিও ছিলেন। কিন্তু এবারও লড়াই নয়, শেষ পর্যন্ত পদত্যাগ করলেন হাসান মশহুদ। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দায়িত্ব নেয়ার পর ২৫ মাস ও বর্তমান সরকারের আমলে ৮৮ দিনের মাথায় গত দুই এপ্রিল তিনি পদত্যাগ করলেন। পদত্যাগ পত্রে তিনি কোন কারণ উল্লেখ না করলেও বিদায়ের সময় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বলেছেন, ‘পদত্যাগের ব্যাখ্যা দেয়ার প্রয়োজন নেই। আমি মনে করি, বর্তমানে এমন একটি পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে যে দুদকের কাজ এগিয়ে নেয়ার জন্যে নতুন নেতৃত্বের প্রয়োজন। তাই আল্লাহর ইচ্ছায় পদত্যাগ করেছি। এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু এখন বলবো না।’ তাঁর এই পদত্যাগ ভবিষ্যতের জন্যে কী তাৎপর্য বহন করছে? তা কি সামরিকতন্ত্রের সঙ্গে ক্ষমতাকাঠামোর যে নীরব দ্বন্দ্ব রয়েছে তাকে উৎসাহিত করবে? তা কি দুদককে দলীঁয়করণের দুয়ার খুলে দিলো? বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগ কিংবা বিরোধী দল বিএনপি উৎসাহ দেখালেও এবং কেউ কেউ এ পদত্যাগে আনন্দিত হলেও দুদককে একটি প্রাতিষ্ঠানিক রুপ দেয়ার ক্ষেত্রে ঘটনাটি কতটা ইতিবাচক কিংবা নেতিবাচক দৃষ্টান্ত হলো? এ বিষয়গুলি নিয়ে সবার মন্তব্য আশা করছি। আর এই মন্তব্য নির্মাণের স্বার্থে গত কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় যে-সব সংবাদ ছাপা হয়েছে, যাতে পদত্যাগের এ ঘটনা এবং অতীত প্রেক্ষাপট ইত্যাদি তুলে ধরা হয়েছে তার একটি সংক্ষিপ্ত রুপ তুলে ধরছি। দ্বিতীয় পর্বে এ ঘটনার সর্বশেষ পরিস্থিতি এবং বিভিন্ন জনের প্রতিক্রিয়া (সংবাদপত্র ও টেলিভিশনে) তুলে ধরা হবে। উল্লেখ্য, নিচের পুরো বিবরণই বিভিন্ন পত্রপত্রিকা থেকে নেয়া। আমাকে বড়জোর গ্রন্থক বলতে পারেন। তথ্যসূত্রের উল্লেখ করতে পারলে ভালো হতো, কিন্তু নোট নেয়ার সময় তা রাখতে পারিনি বলে দুঃখিত। তবে এতে তেমন কোনও অসুবিধা হবে না বলে আশা করি। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বেশ কয়েকবার তার পদত্যাগ করার কথা শোনা গেলেও বারবার তিনি তা উড়িয়ে দিয়েছিলেন। ড. ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিচারপতি সুলতান হোসেন খানের নেতৃত্বাধীন দুর্নীতি দমন কমিশনকে পুনর্গঠন করে সাবেক এ সেনাপ্রধানের নেতৃত্বে নতুন…