কতিপয় খবরের কাগজ সহ ইলেকট্রনিক মিডিয়াগুলো যেভাবে বিদেশী সাহায্যকারীদের সংবাদ ফলাও করে প্রকাশ করে তাতে মনে হয় এটি অশুভ চক্রের পাঁয়তারা ছাড়া আর কিছুই নয়। আমরা বাংলাদেশের মানুষ তাদের বক্তব্য বা পরামর্শ শুনতে চাই না। যদি শুনতেই হয়, যে-সময় যে-সরকার থাকবে তারা শুনবে এবং প্রয়োজন মনে করলে প্রয়োগ করবে। আমাদের সাধারণ মানুষদের তা নিয়ে এত মাথাব্যথা নেই। দয়া করে তাদের সংবাদ ফলাও করে প্রকাশ করার কারণ অথবা উদ্দেশ্য আমাদেরকে বলবেন কি? সংবাদ সংস্থাগুলো কিসের মোহে কূটনীতিক পাড়া বা বিশ্বব্যাংক বা আই.এম.এফ. প্রেরিত ব্যক্তিত্বকে এত গুরুত্ব দিয়ে থাকে! বাংলাদেশের উন্নয়নে তাদের অবদান বা অংশগ্রহণ কতটুকু তা সংবাদমাধ্যমগুলো দয়া করে প্রকাশ করবেন কি? অথবা এ যাবৎ তাদের ঋণের বিপরীতে কত টাকা আমরা সুদ দিয়েছি বলবেন কি? আপনাদের মাধ্যমে জাতি তা জানতে চায়।
আপনাদের মাধ্যমে এই সুদখোরদের হিরো বানাতে চাই না। তাদের সংবাদ বা পরামর্শ যতটুকু সম্ভব পাশ কাটিয়ে যাওয়া উচিত। তারা কখনো জনগণের পক্ষে ওকালতি করতে আসে না। আসে আমাদের দেশের মূল্যবান সম্পদ চুরির ষড়যন্ত্র করতে। তারা কোনো আমলে কোনো সময় বৃহৎ জনগোষ্ঠীর পক্ষে কথা বলেনি। এমনকি ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় এবং ১৯৯০-এর গণ অভ্যুত্থানের সময়ে তাদের ভূমিকাও সকলের জানা। তারা সবসময় নব্য স্বৈরাচারী, নব্য রাজাকার, নব্য মিরজাফর তৈরিতে ব্যস্ত থাকে। তাদের মধ্যে এখনো ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আচরণ বিদ্যমান। দোষ আমাদেরই, আমরা শিক্ষা নিই না।
কথা থেকে যায়, আমরা যদি আমাদের কয়েকজন বুদ্ধিজীবীকে তাদের দেশে পরামর্শ দেয়ার জন্য প্রেরণ করি তারা কি আমাদের এই বুদ্ধিজীবীদের পরামর্শ গ্রহণ করবে? অথবা আপনাদের মতো কাভারেজ দেবে? দেবে না।
আমি বিব্রত বোধ করি যখন আমাদের দেশের মিডিয়ার কল্যাণে ঐ দেশের একজন ৩য় শ্রেণীর কর্মকর্তা আমাদের দেশে এসে হয়ে যান ন্যাশনাল ইস্যু বা জাতীয় ব্যাক্তিত্ব। যে ব্যক্তিটির সংবাদ পরিবেশন করা হলো তার দেশে তার গ্রহণযোগ্যতা কতটুকু? বা সে এই মর্যাদার কতটুকু প্রয়োগ করতে পারবে? যদি এতো প্রচার কাজে আসতো, তারা ফিরে গিয়ে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারতো তাহলে আমার কোনো দুঃখ ছিল না। তারা আমাদের দেশে আসে অল্প খরচে কিছু বিনোদনের আশায়, সাথে বাড়তি প্রাপ্তি সংবর্ধনা বা আদরযত্নের আশায়। যেসব ব্যক্তি খুব কার্যকর ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে, তারা আমাদের দেশে না এসে পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে আমাদের সম্পর্কে সব ধারণা নিয়ে যায়। এমনও অনেক কথা বলে যে, গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা এদেশে আসার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে।
আর ঐ যে যারা আসে তাদের মধ্যে দেখা যায় একটা বড় বড় ভাব। সাম্রাজ্যবাদীরা যেভাবে উপনিবেশ গড়ে তুলেছিল, সেভাবে তারা চায় প্রতিটি আমেরিকান অথবা ব্রিটিশ এদেশে এলে যাতে আমাদের মানুষরা ঐ আগের মতো মাথা নত করে কুর্নিশ করে। তাদের এই ভাবগাম্ভীর্য তা-ই প্রমাণ করে। কেবল আমাদের সংবাদমাধ্যমগুলোই তা বোঝে না।
আপনারা কি তাদের তাঁবেদারি করে চলবেন? আমাদের দেশে সংবাদের কি এতই অভাব যে বিদেশী দাতা সংস্থার সংবাদ পরিবেশন করতে হবে? তারা আমাদের কত টাকা দিয়েছে? আর কত টাকা দিতে পারবে?
এখন সময় এসেছে আমাদের কথা তাদের শোনার। কারণ সারা পৃথিবীতে আমাদের অনেক আইডিয়া তাদের চেয়ে উন্নত। তারা অনেক সময় আমাদের আইডিয়া চুরি করতে আসে।
আমাদের সামাজিক ব্যবস্থায় গড়ে উঠেছে প্রাচীন মহাজনী প্রথার আদলে বা এরই মতো ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণ ব্যবস্থা। যে চক্র একবার শুরু হলে আর শেষ হতে চায় না। আমরা তাই আই.এম.এফ./বিশ্ব ব্যাংক এ.ডি.বি.-র চেয়েও অনেক উন্নত ঋণ ব্যবস্থা গড়ে তুলেছি। ওদের যদি ঋণ লাগে আমরা দিতে পারব।
Have your say
You must be logged in to post a comment.
১ comment
আইবি - ৩ সেপ্টেম্বর ২০১১ (৪:০২ অপরাহ্ণ)
“আমরা তাই আই.এম.এফ./বিশ্ব ব্যাংক এ.ডি.বি.-র চেয়েও অনেক উন্নত ঋণ ব্যবস্থা গড়ে তুলেছি। ওদের যদি ঋণ লাগে আমরা দিতে পারব।” আপনার এ সাহসী বক্তব্যকে শতভাগ সমর্থন করি।