এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল সরকারগুলোকে আহ্বান জানিয়েছে মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষনাপত্রের ৬০ তম বার্ষিকীকে কার্যক্রম গ্রহণের একটি সময়ে পরিণত করার জন্য, শুধুমাত্র উদযাপন করার জন্য নয়৷ মানবাধিকারের সবর্জনীন ঘোষণাপত্রের ৬০তম বার্ষিকীর পটভূমিতে এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছে যে বিশ্ব বহুমুখী চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে যাচ্ছে।
দরিদ্র দেশগুলোর উপর বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাব বিবেচনা করে, যা আরো লক্ষ লক্ষ ব্যক্তিকে দারিদ্রের মধ্যে নিপতিত করার ঝুঁকি সৃষ্টি করেছে, এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল অর্থনৈতিক ও সামাজিক অধিকারগুলোকে নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারের মত যতটা সম্ভব বলিষ্ঠভাবে সুরক্ষিত রাখার জন্য সরকারগুলোকে আহ্বান জানিয়েছে৷
Have your say
You must be logged in to post a comment.
২ comments
রায়হান রশিদ - ১৫ ডিসেম্বর ২০০৮ (৩:৫৫ অপরাহ্ণ)
কয়েকটি বিষয় পোস্টটিতে ব্যাখ্যা করলে আমরা পাঠকরা আরো উপকৃত হবো বলে মনে করি:
১) নাগরিক ও রাজনৈতিক (civil and political) অধিকারের সাথে অর্থনৈতিক-সাংস্কৃতিক-সামাজিক (socio economic cultural) অধিকারের এই পার্থক্যটি কেন করা হয়?
২) এই পার্থক্যের ঐতিহাসিক পটভূমি কি? [বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী আদর্শিকভাবে দ্বিধাবিভক্ত বিশ্বব্যবস্থায় মৌলিক মানবাধিকারের এই কৃত্রিম বিভাজনটি নিয়ে লেখা যেতে পারে]
এ্যমনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল সরকারগুলোকে অর্থনৈতিক-সাংস্কৃতিক-সামাজিক অধিকারের ব্যাপারেও সমান সুরক্ষা প্রদানের আহ্বান জানিয়েছে। নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয় আহ্বান। এ বিষয়ে, প্রসঙ্গত, জানার কৌতুহল হচ্ছে এ্যমনেস্টি কি নিজে তার ম্যানডেটে কোন মৌলিক পরিবর্তন এনেছে বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা পরবর্তী পরিস্থিতিতে? যতদূর জানি সংগঠনটির ফোকাস মূলতঃ রাজনৈতিক ও নাগরিক অধিকার রক্ষার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। ভুল জানলে শুধরে দেবেন অনুগ্রহ করে।
উপরের এই বিষয়গুলোকে এক করে পোস্টটি লিখলে হয়তো আরো অনেক কিছু আলোচনার সুযোগ তৈরী হবে। নাহলে পোস্টটিকে পরিপ্রেক্ষিত-বিচ্ছিন্ন সাংগঠনিক প্রেস রিলিজ বলে অনেকে ভুল করতে পারেন। বিষয়গুলো খুবই জরুরী, আলোচনা এবং সচেতনতা সৃষ্টির স্বার্থে, তাই এই দিকগুলো তুলে ধরা জরুরী মনে করলাম। ভবিষ্যতে এই বিষয়গুলোর ওপর আলোকপাত করার সনির্বন্ধ অনুরোধ থাকলো।
লেখককে ধন্যবাদ।
সংশপ্তক - ১৭ ডিসেম্বর ২০০৮ (৪:২৪ অপরাহ্ণ)
খুবই সংগত কিছু প্রশ্ন। কিন্তু খুবই সংক্ষেপে বলছি-
শুরু করা যাক দ্বিতীয় প্রশ্ন থেকে যা থেকে কিছুটা হলেও আমরা ধারনা করতে পারবো নাগরিক ও রাজনৈতিক (civil and political) অধিকার ও সেইসাথে অর্থনৈতিক-সাংস্কৃতিক-সামাজিক (social, economic and cultural) অধিকারসমূহ সম্পর্কে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়ংকর রক্তস্নানের পর সব বড় বড় (!) রাষ্ট্রনেতারা মনস্থির করলেন কিছু একটা করা দরকার। তারা জাতিসংঘ বানালেন। তারা জাতিসংঘ সনদ (UN Charter) বানালেন ১৯৪৫ সালে যা সাথে সাথেই ৫০ টা দেশ গ্রহন করলো। সনদের ধারা এক (Article 1) বিশেষভাবে উল্লেখ করে ‘মানবাধিকার ও স্বাধীনতা’র কথা। এই ‘মানবাধিকার ও স্বাধীনতা’ রক্ষা এবং নিশ্চিত করার লক্ষ্যে মানবাধিকার কমিশন গঠন করলেন। এই মানবাধিকার কমিশনকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিল তৈরী করার দায়িত্ব অর্পন করা হয়। অতঃপর মানবাধিকার কমিশন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিল তৈরী করে যার অন্তর্ভূক্ত রয়েছে:
১। মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্র;
২। নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারসমূহের আন্তর্জাতিক চুক্তি (ICCPR) ও এর ঐচ্ছিক ধারাসমূহ;
৩। অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকারসমূহের আন্তর্জাতিক চুক্তি (ICESCR) ও এর ঐচ্ছিক ধারাসমূহ।
মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্র ১৯৪৮ সালে গৃহীত হলেও নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারসমূহের আন্তর্জাতিক চুক্তি ও অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকারসমূহের আন্তর্জাতিক চুক্তি দুটোই ১৯৬৬ সালে গৃহীত হয়।
খুব সাধারভাবে আমি যেটুকু বুঝি তা হলো অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকারসমূহ নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারসমূহের সাথে ওতোপ্রোতভাবে জড়িত। তাই এই নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারসমূহের সাথে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকারসমূহের যে পার্থক্য করা হয় তার কিছুটা কৃত্রিম তো বটেই যা না করলেও হয়তো কোন সমস্যার সৃষ্টি হতোনা।
এই বিভাজনের পেছনে অন্য কি আন্তর্জাতিক রাজনীতি আছে সে বিষয়ে আমাকে আরো গবেষনা করতে হবে। আশাকরি আপনি কিছুটা সাহায্য করতে পারবেন এ বিষয়ে।
তবে নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারসমূহ সবসময় অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকারসমূহর নিশ্চয়তা দেয়না। নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারসমূহ সাধারনত কিছু আইন তৈরী ও তার সঠিক প্রয়োগ করে অর্জন করা সম্ভব হয় আর অন্য দিকে এই অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকারসমূহ শুধুমাত্র কিছু আইন তৈরী ও তার সঠিক প্রয়োগ করে অর্জন করা সম্ভব হয় না। এখানে সরকার জনসাধারনের সমষ্টিগত কার্যক্রম দরকার। আবার নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারসমূহের ধারাগুলো ও অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকারসমূহের ধারাগুলোর প্রয়োগের ক্ষেত্রেও কিছু সাধারন পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়।
আপনি ঠিকই জানেন যে, এ্যমনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ফোকাস মূলতঃ রাজনৈতিক ও নাগরিক অধিকার রক্ষার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু এ্যমনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের নিজে তার ম্যানডেটে মৌলিক পরিবর্তন এনেছে ২০০১ সালে। এ্যমনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ২০০১ সাল থেকেই অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকারসমূহ নিয়ে কাজ করে আসছে।আর এই মৌলিক পরিবর্তনের ফলস্বরূপ খুব শীঘ্রই এ্যমনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল তার নতুন আন্তর্জাতিক প্রচারনা শুরু করতে যাচ্ছে ‘দারিদ্র্য এবং মানবাধিকার’ (মানব-মর্যাদা প্রচারনা) নিয়ে।
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।