নির্যাতন ও অন্যান্য নিষ্ঠুর, অমানবিক বা অবমাননাকর আচরণ, যেমন দাসত্ব ও গণহত্যা, সবসময়ই ভুল৷ এই নীতি বহু বছর আগেই প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে, এবং আন্তর্জাতিক আইনে সন্নিবেশিত করা হয়েছে৷ মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণা-এর অনুচ্ছেদ ৫ অনুযায়ী সবার অধিকার রয়েছে নির্যাতন ও নিষ্ঠুর, অমানবিক বা অবমাননাকর আচরণ বা শাস্তির (‘অন্যান্য নিষ্ঠুর-আচরণ’) হাত থেকে মুক্ত থাকার৷
এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ২০০৮ সালের প্রতিবেদনে দেখা যায় যে জাতিসংঘ কর্তৃক ঘোষণাপত্রটি গৃহীত হওয়ার ৬০ বছর পরে, এখনো সারাবিশ্বজুড়ে মানুষ নির্যাতন বা নিষ্ঠুর-আচরণের শিকার হচ্ছে৷ প্রতিবেদনটি ৮১টি দেশের অবস্থাকে তুলে ধরে, কিন্তু আরো অনেকগুলো দেশেও নির্যাতন ও অন্যান্য নিষ্ঠুর-আচরণের ঘটনা ঘটে থাকে৷
সংগঠনটি কয়েক দশকের নির্যাতন লিপিবদ্ধ করেছে, যাতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে এমন পরিস্থিতিসমূহ যেখানে সরকারগুলো সন্ত্রাসের হুমকিকে আবাহন করেছে যাতে এর ব্যবহারের পক্ষে সাফাই গাওয়া যায়৷ কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সন্ত্রাসবাদ দমনের নামে দেশগুলো কর্তৃক গৃহীত ব্যবস্থাগুলো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করার প্রতি সম্মানকে দুর্বল করার হুমকি দেয় এবং এর গুরুত্ব অনুধাবনকে জোরদার করার প্রয়োজনীয়তা প্রদর্শন করে৷
এ সম্পর্কে আরো পড়ুন এখানে
Have your say
You must be logged in to post a comment.
২ comments
রায়হান রশিদ - ২০ নভেম্বর ২০০৮ (৮:৩১ অপরাহ্ণ)
অত্যন্ত দরকারী এই বিষয়টি নিয়ে লিখবার জন্য সংশপ্তককে ধন্যবাদ। আপনার লেখাটির পাশাপাশি প্রাসঙ্গিক কয়েকটি বিষয় উল্লেখের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি:
ক.
বাংলাদেশ সংবিধানের মৌলিক অধিকার সম্বলিত তৃতীয় ভাগের ৩৫(৫) অনুচ্ছেদে বলা আছে:
আন্তর্জাতিক আইনের আওতায়, সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণা ছাড়াও জাতিসংঘে ১৯৮৪ সালে Convention against Torture and Other Cruel, Inhuman or Degrading Treatment or Punishment (Torture Convention) গৃহীত হয়, যেটি ১৯৮৭ সাল থেকে বাস্তবায়নের জন্য বলবত হয়েছে। এটির উল্লেখ জরুরী কারণ, বাংলাদেশ সরকার জাতিসংঘের এই কনভেনশনটিতে স্বাক্ষর করেছে ১৯৯৮ সালে। ফলে এর নীতিমালার পূর্ণ বাস্তবায়ন করতে আমাদের সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছে। এছাড়াও ২০০০ সালে বাংলাদেশ সরকার স্বাক্ষর করেছে জাতিসংঘের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দলিলে - International Covenant on Civil and Political Rights।
এর অর্থ হল, সংবিধানে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতির পাশাপাশি আন্তর্জাতিক এই দলিলগুলোতে স্বাক্ষরের মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকার “নির্যাতন” রোধে এবং এর প্রতিকারে আইনগতভাবে দায়বদ্ধ। সুতরাং, “নির্যাতন” ইস্যুটিতে প্রতিটি বাংলাদেশী নাগরিকের আইনগত সুরক্ষা/অধিকার এবং সরকারের দায়বদ্ধতার বিষয়টি নিয়ে কোন ধরণের মতদ্বৈততার অবকাশ নেই। এ বিষয়ে আরো তথ্য পাওয়া যাবে এখানে।
খ.
Torture Convention এর আওতায় জাতিসংঘে একটি ফোরাম গঠন করা হয়েছে যেটির নাম Committee Against Torture (অনুচ্ছেদ ১৭)। কনভেনশনে স্বাক্ষরকারী রাষ্ট্রপক্ষগণ এই কমিটির কাছে প্রতি চার বছর অন্তর অন্তর নিজেদের অগ্রগতি (নির্যাতন রোধে) জানিয়ে প্রতিবেদন পেশ করতে দায়বদ্ধ (অনুচ্ছেদ ১৯)। সে বিচারে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে এতদিনে অন্তত দু’টি প্রতিবেদন পেশ হয়ে যাওয়ার কথা। সংশপ্তকের কাছে সনির্বন্ধ অনুরোধ থাকবে, যদি সম্ভব হয় বাংলাদেশ সরকারের পেশকৃত এই প্রতিবেদন দু’টির ওপর সমালোচনা ও নিরীক্ষামূলক কিছু একটা লেখার। কারণ, অপারেশন ক্লিন হার্ট, কিংবা “র্যাব”, ডিজিএফআই এর ব্ল্যাকহোল ইত্যাদি এত কিছু ঘটে যাবার পরও বাংলাদেশ সরকার কিভাবে তার নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করে তা জানতে আমরা বিশেষভাবে আগ্রহী।
সরকারপক্ষের অফিশিয়াল প্রতিবেদন ছাড়াও, যতদূর জানি, মানবাধিকার সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকেও Shadow Report প্রস্তুত করা হয়। এই রিপোর্টটিতে সাধারণত সে সব বিষয় উঠে আসে যা সরকার পক্ষের রিপোর্টে স্থান পায়না। সে অর্থে শ্যাডো রিপোর্টটি এক ধরণের সমালোচনামূলক রিপোর্ট। জাতিসংঘের কমিটিতে দু’টো রিপোর্ট পাশাপাশি রেখে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হয়ে থাকে। সংশপ্তকের কাছে এ-ও অনুরোধ থাকবে সরকারের রিপোর্টের সাথে শ্যাডো রিপোর্টগুলোর তুলনামূলক বিচার নিয়ে একটা লেখা দাঁড় করানোর। তাতে অনেক কিছু জানতে পারবো আমরা সবাই।
আবারো ধন্যবাদ।।
সংশপ্তক - ২১ নভেম্বর ২০০৮ (১০:২৪ পূর্বাহ্ণ)
ধন্যবাদ রায়হান,
আপনি বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরেছেন। আমি চেষ্টা করছি যত শীঘ্র সম্ভব এই বিষয়গুলোর উপর কিছু লিখতে।
ধন্যবাদসহ,
সংশপ্তক