বাংলাদেশঃ কিছু জরুরি নিষেধাজ্ঞা উত্তোলন ও এ্যামনেস্টির মূল্যায়ন

মত প্রকাশ, সমাবেশ ও সংগঠন করার স্বাধীনতার উপর থেকে কিছু জরুরি নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা সম্পর্কে বাংলাদেশের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সিদ্ধান্ত একটি ভালো পদক্ষেপ, এবং সুনির্দিষ্ট কার্যক্রমের মাধ্যমে একে অবশ্যই সমর্থন করা উচিত৷এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে সীমাবদ্ধ করে রাখা ২০০৭ সালের জরুরি ক্ষমতা আইনের ৫ ও ৬ নম্বর ধারা প্রত্যাহারের ফলে বাংলাদেশকে এই অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার আরো এক ধাপ কাছে নিয়ে আসা হয়েছে৷ তবে, সমাবেশ করার স্বাধীনতা সম্পর্কিত ৩ নম্বর ধারার আংশিক প্রত্যাহার, শুধুমাত্র নির্বাচনের সাথে সংশ্লিষ্ট সমাবেশ ও জনসভা করার অনুমতি দেয়, কিন্তু সুশীল সমাজের চাপপ্রয়োগকারী দলগুলো ও মানবাধিকার রক্ষাকর্মীদের প্রচারাভিযান ও জনসমাবেশের অনুমতি দেয় না৷ এই ধরনের প্রচারাভিযান এই দলগুলোর জন্য নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে মানবাধিকার সম্পর্কিত উদ্দেশ্যগুলোর পক্ষে প্রতিশ্রুতি ও সমর্থন অর্জনের জন্য অপরিহার্য৷ সমাবেশ করার স্বাধীনতা পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ৩ নম্বর ধারা সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাহার করার জন্য এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল সুপারিশ করছে৷

এছাড়াও পুলিশি কার্যক্রম থেকে সেনাবাহিনীকে প্রত্যাহার করে নেওয়াকে এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল স্বাগত জানাচ্ছে৷ সেনা কর্মকর্তারা, অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীর পাশাপাশি, অনেকগুলো ধারাবাহিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়ী ছিল, যার মধ্যে রয়েছে নির্যাতন এবং আটকাবস্থায় মৃত্যু৷ এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে ২০০৭ সালের মার্চ মাসে সেনাবাহিনীর হেফাজতে থাকা অবস্থায় গারো আদিবাসী নেতা চলেশ রিচিলের মৃত্যু, এজন্য কাউকে বিচারের সম্মুখীন করা হয়নি৷

এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল নিচে উল্লিখিত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানায়ঃ

  • দোষী ব্যক্তিদেরকে বিচারের সম্মুখীন করার উদ্দেশ্য নিয়ে বেসামরিক বিচার ব্যবস্থার মধ্যে পুলিশ,  র্যা ব ও অন্যান্য নিরাপত্তা কর্মকর্তা কর্তৃক নির্যাতন, অন্যান্য নিষ্ঠুর-আচরণ ও নিরাপত্তা হেফাজতে মৃত্যু সহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগগুলোর দ্রুত, নিরপেক্ষ ও কার্যকর তদন্ত নিশ্চিত করা;
  • আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তারা মানবাধিকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন ও তা সুরক্ষার জন্য তাদের বাধ্যবাধকতা সম্পর্কে সম্পূর্ণ সচেতন আছেন তা নিশ্চিত করা৷

যদিও মানবাধিকার সুরক্ষিত রাখার দায়-দায়িত্ব প্রাথমিকভাবে সরকারের উপর বর্তায়, কিন্তু এই প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক দলগুলো সহ সমাজের প্রতিটি স্তরের একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে৷এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ডিসেম্বর মাসে দেশের সাধারণ ও উপজেলা নির্বাচনের আগে, নির্বাচন চলাকালীন ও নির্বাচনের পরে মানবাধিকারের প্রসার ও এর প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে সুস্পষ্ট অঙ্গীকার করার জন্য সনির্বন্ধ আহ্বান জানায় এবং মানবাধিকারের অপব্যবহারের শিকার না হয়ে ভিন্নমত ধারণ ও প্রকাশ করার বাংলাদেশের সব মানুষের অধিকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্য তাদের দলীয় সদস্য ও সমর্থকদেরকে উন্মুক্তভাবে আহ্বান জানায়৷

পটভূমি
২০০৭ সালের জানুয়ারিতে বর্তমান সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার একটি জরুরি অবস্থা চাপিয়ে দেয়৷ এটি ২২ জানুয়ারি ২০০৭ তারিখে অনুষ্ঠিতব্য সংসদ নির্বাচনকে ২০০৮ সালের শেষদিক পর্যন্ত স্থগিত করে, এবং মূল রাজনৈতিক দলগুলোর সমর্থকদের মধ্যে নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট সহিংস সংঘাত অবসানের অজুহাতে মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে, ও সেইসাথে সংগঠন ও সমাবেশ করার স্বাধীনতাকে গুরুতরভাবে সীমাবদ্ধ করে৷ আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে পুলিশকে সহায়তা করার জন্য সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়৷

সুশীল সমাজের অনেকগুলো দল এবং বৃহত্তর জনগোষ্ঠী প্রাথমিকভাবে জরুরি অবস্থাকে স্বাগত জানিয়েছিল, কিন্তু মানবাধিকার সংগঠনগুলো উদ্বেগ জানাতে শুরু করে যে এটি অব্যাহত থাকলে তা আইনের যথাযথ প্রক্রিয়াকে দুর্বল করবে এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়মুক্তিকে আরো জোরদার করবে৷

জরুরি অবস্থায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের অন্য কিছু উদাহরণের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছেঃ

  • ২০০৮-এর জুলাইতে একটি শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক সমাবেশে পুলিশের হামলায় কমপক্ষে ১৫ জন রাজনৈতিক কর্মী আহত হওয়া;
  • ২০০৮ সালের মে মাসের শেষদিকে এবং জুন মাসের প্রথমদিকে দলীয় কার্যালয়ে শান্তিপূর্ণভাবে সমবেত হওয়ার চেষ্টাকালে প্রায় ৩০,০০০ রাজনৈতিক কর্মীকে গণগ্রেপ্তার;
  • ২০০৮ সালের প্রথমদিকে টিভি চ্যানেলগুলোকে জরুরি অবস্থা সম্পর্কে সমালোচনামুখর সরাসরি টেলিফোন অনুষ্ঠানগুলো বন্ধ করে দেয়ার জন্য নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর নির্দেশনা, নিয়মিত বিরতিতে সংবাদপত্রের অফিসগুলোতে নিরাপত্তা বাহিনীর ভীতিপ্রদর্শনমূলক ফোনকল বা পরিদর্শন যাতে সরকারের সমালোচনা করে কোনো প্রতিবেদন প্রকাশ করা না হয়, সরকারি কর্মকর্তাদের অপছন্দনীয় লেখার জন্য ২০০৭ সালে কমপক্ষে তিনজন সাংবাদিকের গ্রেপ্তার;
  • রাজশাহী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ক্ষমতার অপব্যবহারের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ করার কারণে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয়জন শিক্ষক (২০০৭-এর অগাস্টে গ্রেপ্তার করা হয় এবং ২০০৭-এর ডিসেম্বরে মুক্তি দেয়া হয়) এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারজন শিক্ষকের (২০০৭-এর অগাস্টে গ্রেপ্তার করা হয় এবং ২০০৮-এর জানুয়ারিতে মুক্তি দেয়া হয়) গ্রেপ্তার ও আটক রাখা৷

বাংলাদেশ ১৮ ডিসেম্বর ২০০৮ তারিখে সাধারণ নির্বাচন এবং ২৮ ডিসেম্বর ২০০৮ তারিখে উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে যাচ্ছে৷

সূত্র: http://bangla.amnesty.org/en/news-and-updates/public-statement-on-bangladesh

Have your say

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.