ভাষা শহীদদের রক্তস্নাত ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম দিনই পত্রিকার পাতায় অন্য অনেক সংবাদের সাথে একটি দুঃসংবাদ পড়তে হলো পাঠকদের। চট্টগ্রামের আঞ্চলিক পত্রিকা তো বটেই, জাতীয় দৈনিকগুলোতেও সংবাদটি ছাপা হয়েছে বেশ গুরুত্বের সাথে। অনলাইন বার্তা সংস্থা বিডি নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডট কম পরিবেশিত সংবাদটি হলো : “জামায়াতের অনুষ্ঠানে যুদ্ধাপরাধীর সঙ্গে আওয়ামী লীগ সাংসদ এম এ লতিফ”। এ সংবাদটি চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত দৈনিক সুপ্রভাত বাংলাদেশ-এ ছাপা হয়েছে প্রথম পাতায় বক্স নিউজ হিসেবে। একই দিন দৈনিক যুগান্তর পত্রিকা সংবাদটি ছেপেছে ১২ নম্বর পৃষ্ঠায় সিঙ্গেল কলামে “চট্টগ্রামে জামায়াতের অঙ্গসংগঠনের অনুষ্ঠানে আ’লীগের সাংসদ” শিরোনামে। দৈনিক সংবাদ-এর শেষের পাতায় শিরোনাম ছিল : “চট্টগ্রামে যুদ্ধাপরাধীকে সঙ্গে নিয়ে ছেলেকে বিয়ে দিলেন আ’লীগ এমপি”। এছাড়া দেশের আরো অনেক পত্রিকাতেই এই দুঃসংবাদটি ছাপা হয়েছে।

চট্টগ্রাম নগরীর একটি কমিউনিটি সেন্টারে যৌতুকহীন বিয়ে অনুষ্ঠানে যুদ্ধাপরাধী মাওলানা শামসুদ্দিন (গোল চিহ্নিত)-এর সাথে আওয়ামী লীগ সাংসদ এম এ লতিফ

চট্টগ্রাম নগরীর একটি কমিউনিটি সেন্টারে যৌতুকহীন বিয়ে অনুষ্ঠানে যুদ্ধাপরাধী মাওলানা শামসুদ্দিন (গোল চিহ্নিত)-এর সাথে আওয়ামী লীগ সাংসদ এম এ লতিফ

চট্টগ্রাম-১০ সংসদীয় আসন থেকে নব নির্বাচিত সাংসদ ও চট্টগ্রাম শিল্প ব্যবসা বাণিজ্যের প্রতিনিধিত্বশীল সংগঠন চট্টগ্রাম চেম্বার-এর সভাপতি এম এ লতিফ আবারও সংবাদের শিরোনামে পরিণত হলেন। মাত্র ৫ দিনের মাথায় স্বনামধন্য (!) এই সাংসদ দেশবাসীর সামনে সাংসদ হিসেবে নিজের ক্ষমতা প্রকাশের মাধ্যমে পত্রপত্রিকার পাতায় ব্যাপক আলোচনায় আসেন । গত ৫ ফেব্রুয়ারি দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকার শেষ পাতায় শিরোনাম ছিল “আমাকে চিনেন, আমি সরকারি দলের এমপি”। আর দৈনিক যুগান্তর-এর প্রথম পাতায় অষ্টম কলামের শিরোনাম : “‘সাংসদের অশোভন আচরণে হতবাক বিমান যাত্রীরা”। দৈনিক সুপ্রভাত বাংলাদেশ অনলাইন বার্তা সংস্থা ফোকাস বাংলা-র বরাত দিয়ে তাদের প্রথম পাতায় বক্স আইটেম করেছে “অশোভন আচরণ” শিরোনামে।

সত্যিই কী বিশাল গুণ-সম্মানের অধিকারী হলেন আমাদের মহান জাতীয় সংসদের নির্বাচিত প্রতিনিধি সাংসদ, ব্যবসায়ী এম এ লতিফ। ৩শ’ জন সাংসদের মধ্যে ক’জন সাংসদ তাঁদের এমন কর্মকাণ্ডের জন্য আলোচনায় আসতে পারেন! জনাব এম এ লতিফ তাঁর আচার-ব্যবহার দিয়ে দেশবাসীর নজর কাড়তে সক্ষম হয়েছেন। ভাগ্যবানই বলতে হবে মাননীয় সাংসদকে।

একদিকে মুজিব কোট গায়ে লাগিয়ে নব্য আওয়ামী লীগ সাজা এই স্বনামধন্য সাংসদ জাতীয় সংসদে একাত্তরের ঘৃণ্য যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য জনদাবির মুখে যে-প্রস্তাব উঠেছিল তাতে সমর্থন দিয়ে প্রস্তাব পাশ করিয়ে মুক্তযুদ্ধের সপক্ষের দাবিদার হতে চান। তিনিই আবার গত ৩১ জানুয়ারি শনিবার জামাতে ইসলামীর নেতাদের সাথে একই মঞ্চে উঠে সহাস্য বদনে ছবি তোলেন “যৌতুকবিহীন বিয়ে অনুষ্ঠানে”! সেই অনুষ্ঠানে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী মাওলানা শামসুদ্দিন এবং আলবদর বাহিনীর সদস্য আফছার উদ্দিন চৌধুরীর উপস্থিত ছিলেন। মাওলানা শামসুদ্দিন চট্টগ্রামের চিহ্নিত রাজাকার ও জামায়াত নিয়ন্ত্রিত ইসলামী সমাজ কল্যাণ পরিষদের সভাপতি ও জামায়াতের মজলিশে শূরার সদস্য বলেই জানি।

বিডি নিউজ টুয়েন্টিফোর ডট কম-কে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ-এর সাধারণ সম্পাদক ও মুক্তিযুদ্ধকালীন চট্টগ্রাম শহরের বিএলএফ কমান্ডার কাজী এনামুল হক দানু এবং মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা গ্রন্থের প্রণেতা ও মুক্তিযোদ্ধা ডা. মাহফুজুর রহমান জানান, “মুক্তিযুদ্ধের সময় মাওলানা শামসুদ্দিন পাকিস্তানি বাহিনীর কুখ্যাত নির্যাতন কেন্দ্র (টর্চার সেল) ডালিম হোটেলের অন্যতম নিয়ন্ত্রক ছিলেন।”

আমি নিজে কয়েক বছর আগে গণতন্ত্রী পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা সাইফুদ্দিন খানের সাথে আলাপচারিতায় চট্টগ্রামের টিঅ্যান্ডটি রোডের সেই “টর্চার সেল” ডালিম হোটেলে রাজাকার আল-বদরদের নির্মম-বীভৎস অত্যাচারের কাহিনী খানিকটা হলেও জেনেছি। মাওলানা শামসুদ্দিন ছিলেন নির্যাতনকারীদের একজন নেতা। আর বর্তমানে চট্টগ্রাম জামায়াতের নেতা আফসার উদ্দিন ছিলেন আল-বদর বাহিনীর অন্যতম সোর্স ও নির্যাতনকারী। আরো জানা গেছে, চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রগতিশীল লোকজন, মুক্তিযোদ্ধা ও যুবকদের ধরে এনে পৈশাচিকভাবে নির্যাতন আর হত্যা করা হতো ওই টর্চার সেল-এ।

আওয়ামী লীগের টিকেটে নির্বাচিত সাংসদ এম এ লতিফ এই যুদ্ধাপারাধীদের সাথে একই অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন সানন্দচিত্তে। এ নিয়ে যখন সাংবাদিকরা তাঁর কাছে জানতে চাইলেন তখন তাঁর বক্তব্য ছিল : “আমি একটি সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছি। যেখানে আমার ছেলেসহ ১৭ জন নবদম্পতি যৌতুকবিহীন বিবাহবন্ধনে অংশ নেন। অনুষ্ঠানে যাবার পর জেনেছি মাওলানা শামসুদ্দিন একজন যুদ্ধাপরাধী।”

কী সহজ-সরল আত্মপক্ষ সাফাই ব্যবসায়ী সাংসদ এম এ লতিফের! ভেবে ঘৃণায়-লজ্জায় সংকুচিত হই। যেখানে গত ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশবাসী ২/৩ জন ছাড়া যুদ্ধাপরাধী ও জামায়াতীদের বর্জন করলো ভোটের মাধ্যমে, সেখানে সাংসদ লতিফের এত দহরম-মহরম কেন জামায়াতে ইসলামী নেতার সাথে? তাহলে কি তিনি শুধুমাত্র ভোল পাল্টিয়ে মুজিব কোট গায়ে দিয়ে আওয়ামী লীগের টিকেটে নির্বাচিত হওয়ার জন্য সংসদ নির্বাচন করেছেন? কিন্তু তাঁর রাজনৈতিক আদর্শ সম্ভবত আর চাপা দিয়ে রাখতে পারলেন না তিনি। এ যেন “কাকের ময়ূরপুচ্ছ ধারণ”।

এতদিন পরেও আমরা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের কাছ থেকে তাঁদের এই “ময়ূরপুচ্ছধারী” সাংসদ এম এ লতিফের ‘জামায়াত প্রীতি’ বিষয়ে কোনো বক্তব্য পাইনি! এ দেশের একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে রাজাকার ও যুদ্ধাপরাধীমুক্ত একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণের আশা নিয়ে বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনার আহ্বানে সাড়া দিয়ে ভোট দিয়েছিলাম; আরো অনেকের মতো আমিও আজ হতাশ আর ক্ষুব্ধ না হয়ে পারছি না। জানি না আমাদের মতো নগণ্য মানুষদের হতাশা আর ক্ষোভে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী বিশাল দলটির কিছু যায় কি না!

সাংসদ লতিফের আরো একটি কীর্তির কথা সম্প্রতি জানা গেল! পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক কেন তাঁকে স্যালুট দেননি, তাঁকে দেখে কেন স্যার স্যার স্যার করেননি — তাই নিয়ে তাঁর প্রতিক্রিয়ার কথা সবাই জানেন এখন। হায়রে সাংসদ! হায়রে স্যার! হায়রে স্যালুট! হায়রে সম্মান! কোন্ অভিধায় যে আপনাকে ভূষিত করবো জানি না মাননীয় সাংসদ?

পাঠকদের জন্য গত ৫ ফেব্রুয়ারি দৈনিক প্রথম আলো-তে প্রকাশিত সংবাদটির কিছু অংশ তুলে ধরছি:

একটি বেসরকারি বিমান সংস্থার ফ্লাইটে বসা পুলিশের একজন অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (আইজিপি) পদমর্যাদার কর্মকর্তার সামনের আসনে বসলেন তিনি। কর্মকর্তার নাম জিজ্ঞেস করে নিশ্চিত হয়ে বললেন, ‘আমাকে চিনেন, আমি চট্টগ্রাম-১০ আসনের সরকারি দলের এমপি।’ সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ কর্মকর্তা দাঁড়িয়ে অভ্যর্থনা জানালেন। কিন্তু ঐ সাংসদ ততক্ষণে ক্ষিপ্ত কণ্ঠে জানতে চাইলেন, এক পুলিশ কর্মকর্তাকে ঘুষসহ তিনি যে ধরিয়ে দিয়েছিলেন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে? অতিরিক্ত আইজিপি জানালেন, এ ব্যাপারে তদন্ত হয়েছে। জবাবে অসন্তুষ্ট হন ওই সাংসদ। জানতে চাইলেন ‘কাকে পাঠিয়েছেন, কী তদন্ত করেছে, আমার সঙ্গে তো কথা বলেনি।’ সাংসদ লতিফ আরো ক্ষিপ্ত হয়ে বললেন, ‘আপনি জানেন, আমি সাংসদ, আমাকে সালাম দেননি কেন? আপনারা জনগণের সারভেন্ট, এটা মনে রাখবেন …।

একই ঘটনা নিয়ে দৈনিক যুগান্তর-এ প্রকাশিত খবরের কিছু অংশ :

… লতিফ এডিশনাল আইজি ত্রিপুরাকে আগে থেকেই চিনতেন, তিনি তাকে দেখে চিৎকার করেই বলতে থাকেন পুলিশ প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। তাদের আবার এত ভাব কেন? দেখা করতে গেলে অনুমতি লাগে। … প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ত্রিপুরা ঐ এমপিকে সালাম দেননি বলে এমপি নিজেকে ‘মনিব’ দাবি করে পুলিশ কর্মকর্তারা যে তার কর্মচারী, তা অশ্রাব্য ভাষার মাধ্যমে জানিয়ে দেন। তার দুর্ব্যবহার নিজের সম্মান বাঁচাতে বড়ই অসহায় হয়ে পড়েন পুলিশের শীর্ষস্থানীয় এ কর্মকর্তা …।

সুপ্রভাত বাংলাদেশ পত্রিকায় ছাপা হয়েছে :

… আসলে আপনারা বেশি বেড়ে গেছেন। আমরা জনপ্রতিনিধি। আপনারা প্রজাতন্ত্রের সার্ভেন্ট। তিনি আরো বলেন, আমি মাস্টার, আপনি সার্ভেন্ট। মাস্টারের সাথে সার্ভেন্ট-এর কীভাবে কথা বলতে হয় তা আপনার জানা উচিত …।

সেদিন আমাদের কথিত মাননীয় সাংসদ এম এ লতিফ একজন পদস্থ পুলিশ কর্মকর্তার সাথে যে অশোভন, অশালীন দুর্ব্যবহার করলেন তাতে কি তাঁর নিজের সম্মান বেড়েছে, না কি দেশবাসীর কাছে তাঁর মতো একজন এমপি-র সত্যিকার চেহারাটিই উন্মোচিত হলো এতে? এ ধরনের সাংসদ যদি আওয়ামী লীগের মধ্যে থাকেন তাহলে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দলটির কি কোনোই ক্ষতি হবে না? কয়েকজন সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, সাবেক ও বর্তমান পুলিশ কর্মকর্তার সাথে আলাপকালে তাঁরা জানিয়েছেন, এমন কোনো নিয়ম নেই যে একজন সাংসদকে স্যালুট করতেই হবে। সাধারণভাবে সম্মান জানানো এক কথা আর বাধ্যগতভাবে স্যালুট করা ভিন্ন বিষয়। বাংলাদেশ সরকারের আইনে কোথাও বলা নেই যে একজন সাংসদকে স্যালুট করতে হবে।

আমরা যতদূর জানতে পেরেছি বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে নববিক্রম কিশোর ত্রিপুরা একজন সজ্জন ভদ্র মেধাবী পুলিশ অফিসার হিসেবেই পরিচিত। তাঁর কর্মদক্ষতা ও সততার জন্যই তাঁকে অতিরিক্ত আইজি হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। সাংসদ লতিফের পরিচয় জনার পর তো নববিক্রম কিশোর ত্রিপুরা (এনবিকে ত্রিপুরা) যথেষ্ট সম্মান দেখিয়েছেন, যার উল্লেখ ইতিমধ্যেই বিভিন্ন পত্রিকায় আমরা পেয়েছি। কিন্তু সাংসদ লতিফ নিজেকে ‘মনিব’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে যে এদেশের আপামর জনগণের কাছে নিজেকে অত্যন্ত হাস্যাস্পদ করে তুললেন তা কি তিনি বুঝতে পেরেছেন? না কি নতুন ক্ষমতার দাপটে (সাংসদ, তাও আবার সরকারি দলের — তাঁর দাবি অনুযায়ী!) তিনি এতটাই দিশেহারা যে কখন কাকে কী বলতে হয়, সেই কাণ্ডজ্ঞানটুকুও বা সৌজন্যবোধটুকুও হারিয়ে ফেলেছেন!

হয়তো এই কাণ্ডজ্ঞান, এই স্বাভাবিক সৌজন্যবোধ তাঁর না থাকাই স্বাভাবিক। এদেশের ঘৃণ্য যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতা রাজাকার আলী আহসান মুজাহিদ গং দম্ভ করে বলেন, “এ দেশে কোনো যুদ্ধাপরাধী নেই”; আর যুদ্ধাপরাধী হিসেবে চিহ্নিত জামায়াত ইসলামীর নেতাদের সাথেই যেন নব্য আওয়ামী লীগার সাংসদ এম এ লতিফের আত্মার আত্মীয়তা! কাজেই এই সাংসদ যে এমন দাম্ভিকতা দেখাবেন এতে আর বিস্ময়ের কী আছে?!

হায়রে স্বদেশ, কী দুর্ভাগ্য তোমার! কী দুর্ভাগা এদেশের পরিবর্তনকামী আশাবাদী জনগণ, যাঁরা একটি সুন্দর সমাজ গড়ার প্রত্যয়ে তাঁদের জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করেছেন এম এ লতিফ নামে একজন যুদ্ধাপরাধী-বান্ধব দাম্ভিক ব্যবসায়ীকে। আমি ব্যক্তিগতভাবে তারপরও আশা নিয়ে থাকতে চাই। সুন্দর স্বপ্ন দেখতে চাই আমার প্রিয় মাতৃভূমি নিয়ে। আরো অনেকের মতো আমিও আশা করে আছি যে, সম্মানিত প্রিয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা নিশ্চয়ই এম এ লতিফের মতো দুর্বৃত্তসম সাংসদদের লাগাম টেনে ধরবেন — দেশের স্বার্থে, তাঁর নিজের দলের স্বার্থে। এ ধরনের লতিফদের জন্য যাতে পুরো সরকারকে যুদ্ধাপরাধীদের সাথে দহরম-মহরমের এবং অন্যদের সাথে অশালীন অভব্য আচরণের দায়ভার বহন করতে না হয়। শুভস্য শীঘ্রম!

সমরেশ বৈদ্য

সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী।

৭ comments

  1. কমলেষ - ১০ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ (৫:১১ অপরাহ্ণ)

    সাংসদ হিসেব বিমানে উঠে এমন আচরণ কোনোভাবেই কাম্য নয়। আপনি কি খেয়াল করেছেন এই অনুষ্ঠানটি একটি সামাজিক অনুষ্ঠান যেখানে ১৭টি ভিন্ন পরিবারের যৌতুকবিহীন বিবাহের সংবর্ধনা দেয়া হয়েছে। একজন সাংসদের সন্তান যৌতুকবিহীন বিবাহ করেছে এটি কিন্তু বিরল ঘটনা। এটি অবশ্যই প্রশংসার বিষয় হতে পারতো। কিন্তু যেটা করা হয়েছে এটা অন্যায়! ধরা যাক আপনি কোনো মঞ্চে ছবি তুলতে গিয়ে দেখলেন কাছেই একজন রাজাকার দাঁড়িয়ে, আপনি কি দৌড়ে পালাবেন? আর এমন অবস্থায় আপনি কি রাজাকার হয়ে যাবেন? তাহলে তো রাজাকারদের পোয়াবারো! যেখানে দরকার পাশে দাড়িয়ে যাবেন আর বলবেন ছবিই প্রমাণ করে আমার পাশের লোক রাজাকার! লেখার বিশেষণ প্রয়োগে মনে হয় লেখাটি একদিক-ঘেঁষা ।

  2. অবিশ্রুত - ১০ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ (৭:৩৭ অপরাহ্ণ)

    আমার মনে হয়, সাংসদ লতিফের দাবিকৃত সামাজিক অনুষ্ঠানটি সম্পর্কে সমরেশ বৈদ্য ভালো করে খোঁজ নিতে পারেন। কেননা জামায়াতে ইসলামীর একটি রাজনৈতিক সামাজিক কর্মসূচিই আছে, যাতে দলের খরচে অনেককে যৌতুকবিহীন বিয়ে করানো হয় এবং পরে যৌতুকবিহীন বিয়ে করা এই দম্পতিদের একত্রিত করে সম্বর্ধনা দেয়া হয়। আরও একবার এরকম একটি সংবাদ আমার চোখে পড়েছিল।
    এই সামাজিক অনুষ্ঠানটি সম্পর্কে (পত্রিকায় সাংসদ লতিফ-এর জবানিতে যা লেখা হয়েছে এবং যে ছবি ছাপা হয়েছে তা থেকে অনুষ্ঠান সম্পর্কে কোনও স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায় না) বিস্তারিত জানলে বোঝা যাবে, সাংসদ লতিফ কেন জামায়াতের এই সামাজিক অনুষ্ঠানটি সম্পর্কে এত আগ্রহী হয়েছিলেন
    আমার প্রশ্ন : যুদ্ধাপরাধী প্রসঙ্গ পরের ব্যাপার, জামায়াত এই ১৭ দম্পতির যৌতুকহীন বিয়ের ব্যবস্থা করছে, জানার পরও সাংসদ লতিফ কেন সেখানে গিয়েছিলেন? আমরা তো যতদূর জানি, আওয়ামী লীগ অনেক আগেই জামায়াতের সামাজিক অনুষ্ঠানসমূহ বর্জন করার ঘোষণা দিয়েছিল। তা হলে কি বুঝতে হবে, সাংসদ লতিফ ফাৎকতালে জামায়াতে ইসলামীর টাকায় নিজের সন্তানের বিয়েটা সেরে ফেললেন? নাকি তার এই সন্তান জামায়াতে ইসলামী ঘেৎষা? কোনও উত্তর জানা থাকলে জানাবেন, প্লিজ।

  3. নীড় সন্ধানী - ১২ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ (২:৪২ পূর্বাহ্ণ)

    লতিফ সাহেব এবং আমি প্রায় একই মহল্লার মানুষ। সেই হিসেবে কয়েকটা কথা বলি। ভদ্রলোককে যেদিন আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দিল, আমরা একটা ধাক্কা খেয়েছিলাম। লতিফ জীবনে কখনো আওয়ামী রাজনীতির সাথে ছিলেন কিংবা আওয়ামী লীগের হিতাকাংখী ছিলেন তেমন রেকর্ড নেই। বরং যতদুর দেখেছি এই নির্বাচনের আগের নির্বাচনেও ওনার বাড়ির উঠান ছিল জামাতের নির্বাচনী প্রচারণা কেন্দ্র। তিনি বিএনপি বা ৪ দলের প্রার্থী হলে স্বাভাবিক হতো। কিন্তু বিএনপিতে জায়গা খালি নেই। আমির খসরুর জনপ্রিয়তার কাছে লতিফ নস্যি। বিএনপি থেকে মনোনয়ন না পেয়ে কোন এক জুয়েল আইচের জাদুতে তিনি হঠাৎ নৌকার লাইসেন্স জোগাড় করে ফেললেন। জাদুর উৎসে নগদ নারায়ণের কোন ভুমিকা ছিল কিনা জানি না, তবে নৌকার প্রবল জলোচ্ছাসে লতিফ এমপি হয়ে গেলেন।

    অতএব লতিফ জামাতের অনুষ্ঠানে যোগ দেবে এটা আশ্চর্য কোন ঘটনা নয়।
    বরং লতিফ কী করে নৌকার লাইসেন্স যোগাড় করলো সেই বিষ্ময় এখনো জাগ্রত।

  4. অবিশ্রুত - ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ (১০:১৫ অপরাহ্ণ)

    নীড়সন্ধানীর মন্তব্য থেকে যা জানা গেল, তা থেকে সাংসদ লতিফের আচরণের সু্প্ত কারণ বেশ খানিকটাই অনুমান করা যায়। হতে পারে, তিনি জামায়াতের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছেন নিজের আচরণের মধ্যে দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারকে অজনপ্রিয় করে; হতে পারে, আওয়ামী লীগের একটি অংশের হামড়া ভাবই প্রকাশ পেয়েছে তার দাপটের মধ্যে দিয়ে। যেটাই হোক না কেন, এ নিয়ে সাংসদীয় বিতর্কেরও কোনও প্লাটফরম নেই। কেননা, শুরু হতে না হতেই বাংলাদেশের সংসদ মুখ থুবড়ে পড়েছে। বিরোধী দল অনুপস্থিত এবং আমাদের স্পিকার থেকে শুরু করে সকলেই মনের মাধুরী মিশিয়ে এলোপাথাড়ি কথা বলছেন। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, সচেতন চিন্তাশীল নাগরিকদের ছায়া-সংসদ গড়ে তোলার পথে পা বাড়াতে হবে। তাতেও এই লতিফগণকে সামলানো যাবে না অবশ্য, তবে মুখোশ প্রতিনিয়ত উন্মোচন করে চলা সম্ভব হবে বোধকরি।

  5. samaresh Baidya - ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ (৬:৫৫ পূর্বাহ্ণ)

    I am veru much thanks full to you all who wrote some coments with some valuable information. I need more information about M A Latif . if anybody can help me I’ll be highly obliged to you all.

    I’m also sorry not to reply all of your comments due to my short time . Pls excuse me for that. But most wellcome everybody …pls. All the best. Thanks a lot .

    Samaresh baidya, 18.02.09

  6. shoeb - ২৭ মার্চ ২০০৯ (৬:৫৯ অপরাহ্ণ)

    সমরেশদা,
    ‍ভালো আছেন? আপনাকে খুঁজছি অনেকদিন ধরে। যদি সম্ভব হয় আমাকে একটা ইমেইল করবেন …

    ukbdnews@gmail.com
    http://www.ukbdnews.com

  7. মাসুদ করিম - ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ (১২:৪৪ অপরাহ্ণ)

    এমপি লতিফের বিলবোর্ডে বঙ্গবন্ধুর ছবি ‘বিকৃতি’

    শেখ হাসিনার সফরকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রামে সংসদ সদস্য এম এ লতিফের নামে স্থাপিত বিলবোর্ডে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি বিকৃতির অভিযোগ উঠেছে।

    এনিয়ে ইন্টারনেটে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে তুমুল আলোচনার পর আওয়ামী লীগের এই সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে মঙ্গলবার চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগ মিছিল-সমাবেশও করেছে।

    গত শনিবার আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চট্টগ্রাম সফরের আগে লতিফের নির্বাচনী এলাকায় (বন্দর, কাঠগড় ও পতেঙ্গা) সড়কের ধারে অনেক বিলবোর্ড লাগানো হয়।

    এসব বিলবোর্ডে বঙ্গবন্ধুর দাঁড়ানো অবস্থার একটি ছবি এবং এম এ লতিফের নামে দেওয়া বক্তব্য ছিল। সেখানে বঙ্গবন্ধুর ওই ছবিটি বিকৃত দাবি করে বলা হচ্ছে, ছবির দেহাবয়ব, পাজামা ও জুতা বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

    নিজের নামে এসব বিলবোর্ড লাগানোর স্বীকার করলেও এই দায়িত্বটি অন্যদের দেওয়া হয়েছিল দাবি করে করে লতিফ বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর ছবি বিকৃত করলে ব্যবস্থা নেবেন তিনি।

    লতিফের নামে লাগানো বিলবোর্ডগুলোতে বঙ্গবন্ধুর যে ছবি রয়েছে, তাতে প্রকৃতপক্ষে বঙ্গবন্ধুর নয় বলে আলোচনা চলছে ফেইসবুকসহ নানা যোগাযোগ মাধ্যমে।

    কবি কামরুল হাসান বাদল তার ফেইসবুক ওয়ালে ছবিটি শেয়ার দিয়ে লিখেছেন, “এ ছবিটি বঙ্গবন্ধুর বলে বিশ্বাস হচ্ছে না। পোশাক ও দাঁড়ানোর এই ভঙ্গি বঙ্গবন্ধুর নয়। জাতির জনকের মর্যাদা রক্ষায় কেউ কি আছেন যিনি এ প্রশ্নের উত্তর দেবেন?”

    চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রণি লিখেছেন, “এমপি লতিফ তার নিজের ছবিতে ‘সুপার কম্পোজিংয়ের’ মাধ্যমে জাতির জনকের মাথার ছবি বসিয়ে শুধু বঙ্গবন্ধুর ছবিই বিকৃতি করেননি, জাতিকে আকাশ থেকে মাটিতে নিক্ষেপ করেছেন।”

    তিনি স্ট্যাটাসটি দেওয়ার পর ৭৬ শেয়ার এবং তাতে ১৩৮টির মতো মন্তব্যও এসেছে, যাতে সাংসদ লতিফের বিষেদগার ছাড়াও এর প্রতিবাদ জানানো হয়।

    ছাত্রলীগ নেতা রণি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ফেইসবুকে বিলবোর্ডের ছবিসহ পোস্ট দেওয়ার পর অনেকেই শেয়ার করে। এরপর ওইসব বিলবোর্ড সরিয়ে ফেলা হয়।”

    এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে লতিফ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে কিছু বিলবোর্ড লাগানো হয়েছিল।

    “তবে চট্টগ্রাম চেম্বারের শতবর্ষ ও ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের পাঁচ দিনের অনুষ্ঠান নিয়ে আমি খুব ব্যস্ত ছিলাম। যাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তারা কীভাবে করেছে আমি ব্যস্ততার কারণে দেখিনি।”

    বঙ্গবন্ধুর ছবি বিকৃতির অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, “যদি এটা হয়ে থাকে, যে বা যারা করেছে তারা অনৈতিক কাজ করেছে। আমি এখন ঢাকায়। ফিরে এসে ঘটনা যাচাই করে ব্যবস্থা নেব।”

    প্রধানমন্ত্রীর চট্টগ্রাম সফরের সময় লতিফ ছাড়াও অন্য সংসদ সদস্য এবং আওয়ামী লীগ নেতাদের নামে নগরীর বিভিন্ন সড়কে বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনার ছবিসহ বিলবোর্ড লাগানো হয়েছিল।

    লতিফের দেওয়া বিলবোর্ডের একটিতে বঙ্গবন্ধুর ছবির নিচে লেখা ছিল- ‘মানবসম্পদ মহাসম্পদ এতে নেই দ্বিধা, এতেই মোদের দেশ এগুবে বঙ্গবন্ধুর কথা-এম এ লতিফ এমপি’।

    অন্য বিলবোর্ডে লেখা ছিল- ‘জনসংখ্যা আর নদ-নদী, বাংলাদেশের জিয়নকাঠি-এম এ লতিফ এমপি’।

    ২০০৮ সালে আকস্মিকভাবে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে চট্টগ্রাম-১০ আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ায় লতিফ নানা সময়েই বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন।

    ২০০৯ সালের ৩১ জানুয়ারি জামায়াতে ইসলামীর সহযোগী সংগঠন চাষী কল্যাণ সমিতি আয়োজিত যৌতুকবিহীন বিয়ের অনুষ্ঠানে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগের মুখে থাকা ইসলামী সমাজ কল্যাণ পরিষদের সভাপতি মাওলানা শামসুদ্দিন, জামায়াতের তৎকালীন নায়েবে আমির আফসার উদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গে মঞ্চে উঠে সমালোচনায় পড়েছিলেন তিনি।

    চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গেও একাধিকবার বিরোধে জড়িয়েছিলেন চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক সভাপতি লতিফ।

    মহিউদ্দিনঘনিষ্ঠ নেতারা বলে আসছেন, লতিফ একজন ‘বর্ণচোরা’। তার সঙ্গে জামায়াতের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।

Have your say

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.