“আমরা একে-অন্যের শক্তিকে হয় অবমূল্যায়ন করি নয়তো অতিমূল্যায়ন করি। খুব কম মানুষ আছে যারা অন্যের সম্পর্কে যথার্থ মূল্যায়ন করতে পারে। এটা একটা বিশেষ গুণ। উঁচু মাপের মহৎ মানুষেরাই তা পারে। ”–আন্দ্রেই তারকোভস্কি
সময়টা ২০০৪ সালের জানুয়ারী মাসের ১৬ই জানুয়ারী। ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদে’র উদ্যোগে নয়দিন ব্যাপী তারেক মাসুদ পরিচালিত “মাটির ময়না” প্রদর্শনের আয়োজন করা হয় চট্টগ্রাম শিল্পকলা একাডেমীতে। শেষ দিন তারেক মাসুদ ও ক্যাথেরীন মাসুদ দুজনেই উপস্থিত হলেন চট্টগ্রামে। প্রদর্শনী শেষে তারেক ভাই ও ক্যাথেরীন ফিরে যাবেন। আমাদের বলা হলো, ট্রেনের টিকেট জোগাড় করতে। ট্রেনের টিকেট, তাও আবার স্লীপার। রীতিমতো দুঃসাধ্য ব্যাপার। আমরা বললাম, “এ.সি বাসে টিকেট করে দিই, খুব ভালো হয়।” তারেক ভাই রাজী হলেন না। কোনভাবে বোঝানো সম্ভব না। তারেক ভাই এর ছোট ভাই নাহিদ (যিনি পুরো প্রদশর্নীর আয়োজনে আমাদের সাথে কাটিয়েছেন) আমাকে বললেন, তারেক ভাই বাসে যাবেন না। বেপোরোয়া বাস চালালে উনি অসম্ভব ভয় পান। আমরা হেসে উঠি। তার কাছে জানলাম, একবার নাকি ঢাকা থেকে আসতে গিয়ে বাসের গতিবেগ বেপেরোয়া দেখে যাত্রাবাড়ীতে মাঝ পথে নেমে গিয়েছিলেন তারেক ভাই ও ক্যাথরীন। এই ঘটনা নিয়ে আমি পরবর্র্তীতে তারেক ভাইকে অনেক খেপাতাম। তার এ্যক্সিডেন্ট নিয়ে খুব ভয় ছিল। আর এমনি এক এক্সিডেন্টই তারেক মাসুদ কে আামাদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে গেল।
তারেক মাসুদের সাথে আমাদের পরিচয় হয় ১৯৯৯ সালে। তখন ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদে’র এর দায়িত্বে আছি আমরা অনেকে। আমাদের তারুন্যময় কর্মকান্ড আর চলচ্চিত্রের প্রতি উৎসাহ দেখে সংগঠনের অন্যতম প্রধান উপদেষ্টা হলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলা বিভাগে তৎকালীন সহযোগী অধ্যাপক ঢালী আল মামুন। আমাদের প্রিয় ‘মামুন স্যার’, যিনি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একজন বরেন্য চিত্রশিল্পী। স্যার আমাদের কাছে শুধুমাত্র উপদেষ্টা হিসেবে কখনও ছিলেন না । তার সার্বিক তত্ত্বাবধায়নে CUFS বাংলাদেশ শর্ট ফিল্ম ফোরামের সহযোগিতায় ১৯৯৯ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘আন্তর্জাতিক স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র প্রদশর্নী’র আয়োজন করে। আমরা পরিচিত হই বাংলাদেশের বিকল্পধারা চলচ্চিত্রের সাহসী মানুষ তারেক শাহরিয়ার, আমিনুল ইসলাম খোকন, তানভীর মোকাম্মেল, প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার মসিহউদ্দিন শাকের, শারমিন আখতারসহ আরো অনেকের সাথে। ঢালী আল মামুন ছিলেন সার্বজনীন একজন মানুষ। তাঁর সুবাদে সবার সাথে কাজ করার সুযোগ ঘটেছিল আমাদের ।
“চ. বি. ক্যাম্পাসে ‘মুক্তির গান’এর উন্মুক্ত প্রদর্শনীতে তারেক ও ক্যাথেরীন মাসুদ”
এরপর ১৯৯৯ সালের শেষের দিকে “২১শে ফেব্রুয়ারী’ কে জাতিসংঘ ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা’ দিবস ঘোষনা করলো । এই ঘোষনা প্রাপ্তির সাথে সাথে ডিসেম্বর মাসে একটি উম্মুক্ত প্রদশর্নীর আয়োজন করার সিদ্ধান- নিল CUFS । ঢালী স্যার তারেক মাসুদের সাথে যোগাযোগ করলেন। ঠিক হলো ৮ই ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় লাইব্রেরী ভবনের সামনে প্রদর্শিত হবে তারেক ও ক্যাথরীন মাসুদ পরিচালিত মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক তথ্যচিত্র “মুক্তির গান” (১৯৯৫) ও “মুক্তির কথা” (১৯৯৮)। মুক্তির গান অনেকের দেখা ছিল আর মুক্তির কথা ছিল মূলত ‘মুক্তির গানে’র সারা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে যে প্রদর্শনী – তার সাথে যুদ্ধকালীন সময়ে মানুষের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা ও সম্পৃক্ততার গল্প। খুব অল্পসময়ে আয়োজনের তোড়জোড় শুরু হল। এরমধ্যে আছে নানা ভয়। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ থাকলেও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে তখনো ইসলামী ছাত্র শিবিরের দাপট রয়ে গেছে। বিভিন্ন এলাকায় পোস্টারিং করার সময় হুমকি আসছিল । আমরা অন্যান্য রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠন, সাংস্কৃতিক ও সামজিক সংগঠনের কর্মীদের আমন্ত্রন জানালাম। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, এমনকি আশে পাশের গ্রাম থেকেও প্রচুর লোক সমাগম হলো। এরমধ্যে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধাও ছিলেন। আমাদের আয়োজনটি ছিল উম্মুক্ত, ফলে বাইরে আলো নিভে অন্ধকার নামলেই প্রর্দশনী শুরু। কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করে ছাত্রীদের জন্য ‘সান্ধ্য আইন’ শিথিল করা হল যাতে ছাত্রীরা রাত নয়টা পর্যন- বাইরে থাকতে পারে। কোন আনুষ্ঠানিক অতিথি নেই, চেয়ার নেই, কোন আড়ম্বরতা নেই। ঠিক হলো ছাত্র শিক্ষক সকলেই মাটিতে, সিড়িতে, দেয়ালে যে যেখানে বসে সিনেমা দেখবেন। তাই-ই হলো। বিকেলের দিকে তারেক মাসুদ ও ক্যাথেরীন মাসুদ গাড়িতে সরাসরি ক্যাম্পাসে এসে পৌছুলেন। আয়োজন দেখে তিনি অভিভূত। বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি উচ্ছ্বাসিত হয়ে পড়লেন। প্রায় সাড়ে চার হাজার দর্শক নিয়ে ‘মুক্তির গান’ ও ‘মুক্তির কথা’ প্রদর্শিত হলো চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে।
তারেক ভাই কেবল একজন চলচ্চিত্র নির্মাতা ছিলেন না, ছিলেন চলচ্চিত্র কর্মীও। প্রদর্শনী শেষে তিনি মাইকে আহ্বান জানালেন, দর্শকদের মধ্যে যদি কোন মুক্তিযোদ্ধা থাকেন, তাকে সামনে আসতে। একজন মুক্তিযোদ্ধা এগিয়ে এলেন। ছবি সম্পর্কে, যুদ্ধকালীন সময় সম্পর্কে তার বক্তব্য জানালেন। প্রদর্শনী ও দর্শকের মতামতের সম্পৃক্ততা বিষয়টি পরবর্তীতে ল্যাটিন আমেরিকার চলচ্চিত্র আন্দোলনের ইতিহাস জেনে ছিলাম। কিন’ নিজ দেশের কোন চলচ্চিত্র নিয়ে এই আয়োজন ছিল আমাদের প্রথম চাক্ষুষ অভিজ্ঞতা।
সেই থেকে শুরু। তারেক ভাইয়ের সাথে আমাদের যোগাযোগ ও সখ্যতা বাড়তেই থাকে। ঢাকায় এসে উনার বাসায় যেতাম। এরমধ্যে তারেক ভাইয়ের ছোট ভাই নাহিদ মাসুদ এর সাথে আন্তরকিতা ও বন্ধুত্ব গড়ে উঠলো, যিনি তারেক ভাইয়ের চলচ্চিত্র নির্মান ও প্রদর্শনের অন্যতম সহকর্মী হিসেবে সবসময় ছিলেন। তারেক ভাই শেখাতেন, চলচ্চিত্র অবশ্যই শিল্প ও প্রযুক্তির সমন্বয়ে সৃষ্টি হয়। শুধু মাত্র শৈল্পিক মানস থাকলে চলচ্চিত্র নির্মান সম্ভব নয়। একারনে চলচ্চিত্রে নির্মানের ক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তিগত ও কারিগরী দক্ষতা খুব দরকার এবং সেই সাথে প্রয়োজন চলচ্চিত্র নির্মানের দার্শনিকতা নিয়ে গভীর মূল্যবোধ।
যে কোন সাংগঠনিক প্রয়োজনে তারেক ভাই-য়ের কাছে যাওয়া যেতো। ঢাকায় চলচ্চিত্র নিয়ে বিশেষ কিছু হলে তিনি খবর দিতেন। আমরা উনার চলচ্চিত্র কর্মকান্ডের সাথে একভাবে জড়িয়ে গেলাম। এর মধ্যে ‘মাটির ময়না’ চলচ্চিত্র আন্তর্জাতিক খ্যাতি লাভ করলে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র নতুন রূপ পেল। আমরাও আশাবাদী হলাম, এবার হয়তো বাংলাদেশের চলচ্চিত্র বিশ্ব চলচ্চিত্রে একটি নতুন অধ্যায় রচনা করবে।
বাইরের দিক থেকে আমাদের অনেকের ভুল বোঝাবুঝি থাকে। সবাই মনে করতো, ‘মাটির ময়না’-র জন্য বিদেশী চলচ্চিত্র সংস্থাগুলো অনেক টাকা দিয়েছে। তারেক মাসুদের টাকার অভাব নেই। কিন্তু ভেতরে গেলে জানা যেত, ‘অন্তরের নীলাভ বেদনার’ কথা। বিদেশী কোম্পনী কি কখনো তাদের স্বার্থ বিকিয়ে কিছু দেয় ? এদিকে দেশে বানিজ্যিক সিনেমা হল থেকে আশানরুপ সহযোগিতা পাওয়া গেল না। কিন্তু তারেক ভাই দমে যাওয়ার মানুষ নয়। কোন কিছুর সাথে আপোষ করতেন না। আমাকে বলা হলো, চট্টগ্রামে ‘মাটির ময়না’ প্রদর্শনীর আয়োজন করতে। প্রথমত ঠিক হলো চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী ‘আলমাস’ সিনেমা হলে প্রদর্শনীর আয়োজন হবে যথাযথ নিয়মে। নাহিদ ভাই এবং একজন অভিজ্ঞ বয়স্ক ( মধুমিতা সিনেমা হলের) প্রজেকশনিস্টকে পাঠালেন। ‘আলমাস’ তারা এলেন সিনেমা হলের প্রজেক্টর, শব্দ প্রক্ষেপক যন্ত্রের সার্বিক অবস্থা দেখতে। আমরা দু’দিন আলমাস সিনেমা হলের প্রজেকশন রুমে কাটালাম। কিন্তু যে ত্রুটিগুলো ছিল, তা সারিয়ে তোলা গেল না । তারেক ভাই ফোনে বললেন, একমাস পর চলচ্চিত্র সংসদে’র উদ্যোগে জেলা শিল্পকলা একাডেমীতে ‘মাটির ময়না’ আয়োজন করতে। যাবতীয় প্রজেকশন সরঞ্জমাদি ঢাকা থেকে পাঠাবেন। নয়দিন ব্যাপী প্রদর্শনীর আয়োজন । এর মধ্যে নাহিদ ভাই চট্টগ্রাম চলে এলেন প্রচারের দায়িত্ব নিয়ে। চলচ্চিত্র সংসদ-এর কর্মীরা দারুন উৎসাহ নিয়ে আয়োজনের প্রস্তুতি শুরু করলেন। প্রায়ই ফোনে কথা হচ্ছে। একটু ফাঁকিবাজীর গন্ধ পেলেই ব্যাপক বকাঝকা খাচ্ছি। নাহিদ ভাই, আমি-কেউই বাদ যাচ্ছি না। ভোরে উঠে ফোন। ঘুম থেকে উঠতে দেরী করেছি টের পেলেই, “শোন, এভাবে আরাম আয়েশে ফিল্ম মুভমেন্ট্ হয় না। অনেক কষ্ট করতে হয়।” বকা খাওয়ার কিছুক্ষনের মধ্যেই আবার মাথা ঠান্ডা। আমরা অভ্যস্ত হয়ে উঠেছিলাম। ১৬ তারিখ ভোরবেলা তারেক ভাই ও ক্যথেরীন মাসুদ ট্রেন থেকে নেমেই সোজা বাসায়। যাত্রার ধকলটা সামান্য কাটিয়ে, সকালের নাস্তা সেরে আবার চলে এলেন ভেন্যুতে। সকাল ১১ টার শোতে চট্টগ্রামবাসী পরিচালককে সাথে নিয়ে ‘ মাটির ময়না’ উপভোগ করলো এবং প্রদর্শনী শেষে পরিচালকের মুখোমুখি হলো। এরপর দীর্ঘ নয়দিন আমরা কিভাবে কি করলাম, তা তদারকি করলেন। ‘মিনি ভিডি’ হ্যান্ডি ক্যামেরাটা হাতে নিয়ে বললেন, “রাসেল, এই রকম ক্যামেরা দিয়ে ইরানের আব্বাস কিয়ারসতামী ছবি বানিয়েছেন, আর তোমরা এখনও বসে আছো।” তারেক ভাই উৎসাহ দিতে কখন ভুলতেন না। সব সময় চাইতেন সবাই চলচ্চিত্র নিযে এগিয়ে যাক। আমাদের চলচ্চিত্র সংসদ কর্মীদের মূল্যায়ন করতে ভূলতেন না তারেক মাসুদ। আগেই বলেছি, তিনি নিজে সবসময় চলচ্চিকর্মীর ইমেজ নিয়ে আমাদের কাছে উপস্থিত হতেন। ’মাটির ময়না’ প্রদর্শনীর উপার্জিত অর্থ থেকে আমাদের চলচ্চিত্র সংসদকেও বেশ কিছু অর্থ দিলেন। তিনি সংগঠন গুলোর আর্থিক অবস্থা সম্পর্কে অবহিত থাকতেন।
ঢাকায় পৌছে ফোন দিয়ে জানালেন, নতুন ছবির কাজ শুরু করবেন। জানতে চাইলেন, আমি কাজ করবো কিনা। মাত্র মাস্টার্স পরীক্ষা দিয়েছি, তখনো ঠিক করে উঠতে পারিনি কি করবো। মিডিয়া, নাটক, বিজ্ঞাপন নিয়ে উৎসাহ ছিল না। চলচ্চিত্র-ই ছিল সব। চলে গেলাম । নাহিদ ভাই সহ থাকতাম তারেক ভাইয়ের আরেকটি ফ্ল্যাটে, উনার মনিপূরী পাড়ার বাসার কছেই। ৩৫এমএম কিংবা ১৬এমএম ফরম্যাটে নির্মিত চলচ্চিত্রই আসলে শিল্প- এটা তিনি মানতেন না। নবীন যে কোন মাধ্যমকে তিনি পরীক্ষা নিরীক্ষা করে একটা শক্তিশালী মানদন্ডে নিয়ে যেতে চাইতেন। যার প্রত্যক্ষ উদাহরন ‘ অন্তর্যাত্রা ’। আমার মনে আছে, এই ছবিতে প্রথম ব্যবহৃত হবে ’কার মাউন্ট’। সম্ভবত বাংলাদেশের কোন ছবিতে প্রথম ব্যবহৃত হয়েছিল সেটা। অনেক উৎসাহ ছিল যে কোন নতুন মাধ্যমকে নিয়ে এক্সপ্রেরিমেন্ট করার। টেকনোলজি নিযে উৎসাহ থাকাতে এটা ওটা ব্যাখা করে বোঝাতেন। আমি বললাম, “কিন্তু সবাই তো বলে, সেলুলয়েডে না বানালে ওটা সিনেমা হয় না ”। তারেক ভাই হাসতে হাসতে বললেন- “আরে তাই তো আমি এখন ভিডিওতে ফিল্ম বানাতে যাচ্ছি।” চলচ্চিত্রে নির্মানে তো প্রফেশনালিজম খুবই গুরুত্বপূর্ন, তারেক মাসুদ আমাদের তা বুঝিয়েছিলেন। কিছু কিছু বিষয়ে খেপাটে ছিলেন। এমন কি শুধুমাত্র উদাসী, ভাবুক, দায়িত্ব জ্ঞানহীন মানুষজনকে তিনি চলচ্চিত্র নির্মানে যোগ্য ভাবতেন না। নিজে অসম্ভব ডিসিপ্লিন্ড ছিলেন। ‘মেকিং অভ অন্তর্যাত্রা’ চলচ্চিত্রের শুটিং অংশটি ধারনের দায়িত্ব পেয়েছিলাম কিছুদিনের জন্য। আমরা কাজ করছি। প্রোডাকশন থেকে আমাদের ভিটামিন সি- এর জন্য সিভিট খেতে দেয়া হলো। জিজ্ঞেস করলাম ‘কেন সিভিট খাবো? ’ বললেন, শুটিং এর সময় সর্দি জ্বর কাশি এই গুলো হওয়া খুবই বিরক্তিকর। সাবধান থাকা জরূরী। আমাদের কাছে এসব ছেলেমানুষী মনে হলেও, তারেক ভাই এ বিষয়ে খুব সিরিয়াস থাকতেন। শুটিং -এর সবকিছু খুবই নিখুঁতভাবে পরিকল্পিত থাকতে হতো।
প্রোডাকশন এ দেখলাম তারেক ভাই, ক্যাথেরীন এদের কাজ করার পদ্ধতি অন্যরকম। চলচ্চিত্রের নির্মানের চিত্রনাট্য থেকে সম্পাদনা পর্যন- সব কিছুরই সমান গুরুত্ব। কোথাও খেয়ালী বা মনগড়া কোন ব্যাখা নেই। মাটির ময়না’র অনেক গল্প শুনেছি। প্রতিটি দৃশ্যায়নের, সংলাপের , গানের এমনকি প্রতিটি সম্পাদনারও যেন গুরু তাৎপর্য আছে। বাংলাদেশে কাউকে আমি এইভাবে কাজ করতে দেখার সুযোগ হয়নি।
তারেক মাসুদ ও ক্যাথেরীন মাসুদ দু’জনই অসম্ভব পরিশ্রমী ছিলেন। তাঁরা ছিলেন একে অন্যের পরিপূরক। তারেক ভাই কোন কারনে রেগে গেলে ক্যাথেরীন বুঝিয়ে শান্ত করে দিতেন তারেক ভাইকে । ক্যাথেরীন থাকা মানে আমরা বেঁচে গেলাম। ভিনদেশী এই মহিলা কোন এক অদ্ভূত খেয়ালে পুরোপুরি বাঙ্গালী নারীতে পরিনত হয়েছিলেন। সেই মমতাময়ী চির বাঙ্গালী চরিত্র উনার ভিতর কি করে গড়ে উঠল জানি না। বোনের অসুস্থতার কথা বলে শুটিং এর আগেই প্রোডাকশন থেকে চলে এসেছি। দিন পনের পরে গিয়ে দেখি তারেক ভাইয়ের বাসায় শুটিং চলছে অন্তর্যাত্রার। সবাই খুব ব্যস্ত। কেউ কারো দিকে তাকাবার ফুসরত নেই। সবচেয়ে বেশি ব্যস্ত তারেক ভাই ও ক্যাথেরীন। এর মাঝে আমার দিকে তাকিয়ে ক্যাথেরীন জানতে চাইলেন, বোন কেমন আছে ? আমি বিস্মিত হলাম। উনি মনে রেখেছেন।
আমার চাকুরী হওয়াতে শেষ পর্যন্ত শুটিং এ থেকে যেতে পারলাম না, চট্টগ্রাম চলে আসি। তারেক ভাই রাগলেন না। কিন্তু মন খারাপ করলেন । খুব চাইতেন আমরা চলচ্চিত্রের জগতে থাকি, কাজ করি, কষ্ট করি। যেমনটি তিনি করেছেন। মাঝে মাঝে যে কোন গাফিলতির জন্য চট করে রেগে যেতেন ঠিকই, কিন্তু একটু পরে সব ভুলে যেতেন। সদা হাস্যোজ্জ্বল মুখ নিয়ে আমাদের সাথে মজা করতেন। আমরা ভুলে যেতাম। প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে তিনি অসম্ভব উদার আচরন করতেন। আবার সুযোগ সন্ধানীদের তিনি একেবারেই প্রশ্রয় দিতেন না। তাঁর প্রফেশনালিজম নিয়ে অনেকের অভিযোগ ছিল। আমরা তা শুনে মামুন স্যারকে গিয়ে বলতাম। স্যার বলতেন, “তোমরা জানো না, ও (তারেক মাসুদ) অনেক কষ্ট করেছে। আমি জানি- কিভাবে না খেয়ে, না ঘুমিয়ে ও সিনেমা বানানোর জন্য পরিশ্রম করেছে। ফলে যারা এসব বলে ,তারা কেউই পেছনটা না ভেবে বলে।” মামুন স্যার তার বন্ধুদের এ ধরনের সমালোচনা গ্রহন করতেন না। হয়তো মুখের উপর কোন প্রতিবাদ করতেন না, কিন্তু মেনেও নিতেন না। শুধু তারেক মাসুদ নয়, সমস্ত বন্ধুদের প্রতি স্যার খুবই আন্তরিক ছিলেন। মামুন স্যার-এর আরেকজন কাছের বন্ধু ‘ তারেক শাহরিয়ার’ কে নিয়ে আমাদের খুব উৎসাহ ছিল। তিনি ছিলেন অসম্ভব ফুর্তিবাজ স্বভাবের। তিনি কোন নিয়মের মধ্যে থাকতেন না। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের এই প্রয়োজনীয় মানুষটাকে বেশ কিছুদিন আগে হারাতে হয়েছিলো। মহেশখালীতে শুটিং করতে গিয়ে হ্রদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান তিনি। মামুন স্যার সহ সারাদিন চট্টগ্রামে তার লাশের সমস- আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন-এর গাড়িতে ঢাকায় পাঠাই। সঙ্গে তার ইউনিট-এর তরুন লোকজন।
চাকুরী হওয়ার পর আমি সব কিছু থেকে একটু দুরে সরে এলাম। কিন্তু তারেক ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ থাকলো। তিনি চট্টগ্রাম এলেই ফোন। হয়তো থাকবেন ঢালী আল মামুনের বাসায়। চাকুরী করতাম বলে ডাকতেন ‘কর্পোরেট রাসেল’। এর মধ্যে কয়েকজন সহকর্মী নিয়ে চট্টগ্রামে একটা ফিল্ম এন্ড মিডিয়া সেন্টার বানাবার কাজ শুরু করলাম। মামুন স্যার নাম দিলেন ‘অযান্ত্রিক’। বলতে আপত্তি নেই, জীবনের যা করেছি সবই ঢালী আল মামুন ছাড়া অসম্পূর্ন ও অসমাপ্ত থেকে যেতো। উদ্ভোধনীতে আসার কথা জানালাম তারেক মাসুদকে। বললেন তখন দেশের বাইরে থাকবেন। মন খারাপ করতে বারন করে বললেন, দেশেই ফিরে চিটাগাং চলে আসবো। দেশে আসলে আমি ঢাকায় দেখা করতে গেলাম। অযান্ত্রিক-এ তৈরী ফিল্মের উপর টি-শার্ট, পোস্টার নিয়ে গেলাম তারেক ও ক্যাথেরীন মাসুদের জন্য। টি-শার্ট দেখে তারেক ভাই দারুন উৎসাহ নিয়ে বলেন, “তোমরা তো চিটাগাং এ অনেক কিছু করে ফেলছো, এবার তো যেতেই হবে।” আমি একটা ওয়ার্কশপ করানোর কথা বললাম। তারেক ভাই জানতেন আমরা চলচ্চিত্রকে খুব একাডেমিক ভাবে পরিচিত করতে চাই। তাই তিনি সিরিয়াসলি বললেন, “দেখো আমরা যারা নির্মাতা, আমরা যে খুব ভালো শিক্ষক হবো – এটা ভুল ধারনা। আমরা কি করি জানো ? নিজেদের অভিজ্ঞতা গুলো কেবল শেয়ার করি আর ওটাকে সবাই শিক্ষা মনে করে। কিন’ চলচ্চিত্র যখন শিখানোর ব্যাপারে হয়, তখন সেই শিক্ষক মানুষগুলো ভিন্ন। আমার কিছু বন্ধু আছেন যারা ভারতের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম স্টাডিজ-এর শিক্ষক। তারা হয়তো কোন ফিল্মই নির্মান করেনি। কিন্তু আমাদের নিজেদেরই তাদের কাছে ছাত্র মনে হয়। তুমি চাইলে আমি তাদের বলতে পারি। তবে আরো কিছুদিন যাক।” তারেক মাসুদ চলচ্চিত্র পাঠকে গুরুত্ব দিয়ে অনুভব করতেন। তাই তিনি চাইতেন ‘অযান্ত্রিক’ যেন লোক দেখানো চলচ্চিত্র আন্দোলনের রাস্তায় না যায় । চাইতেন – আমাদের ভেতর যাতে প্রফেশনালিজম তৈরী হয় চলচ্চিত্র নির্মান নিয়ে । “তোমরা ক্যাথরীনকে নিয়ে যেতে পারো কিনা দেখো। ও আমার চেয়ে অনেক বেশি তোমাদের শেখাতে পারবে।” বলেই হাসলেন। আমরা জানতাম ক্যাথেরীন চলচ্চিত্রের নির্মানের শৈল্পিক এবং প্রযুক্তিগত উভয়ক্ষেত্রে অসম্ভব দক্ষ ছিলেন। চলচ্চিত্র সম্পাদনার মতো একটি জটিল প্রক্রিয়াকে তিনি অসামান্যভাবে সামলাতেন।
এর মধ্যে বেশ কিছুদিন যোগাযোগ ছিল না। তারেক ভাই নির্মান নিয়ে দেশে বিদেশে ব্যস- থাকলেন। ২০০৭ সালে একদিন ফোন করলেন। বিভিন্ন কুশলাদি শেষ করে বললেন, ঢাকা ব্রিটিশ কাউন্সিলের উদ্যোগে একটি ‘ডিজিটাল ফিল্ম মেকিং’ ওয়ার্কশপ হবে । একজন ব্রিটিশ নির্মাতা করাবেন। সাতদিনের জন্য ঢাকায় চলে যেতে বললেন। আমি অফিসের কথা তুলতেই পারলাম না। বললেন, “ আমি চাই তুমি ওয়ার্কশপটি করো” । ছুটি নিয়ে চলে গেলাম।
“ঢাকা ব্রিটিশ কাউন্সিলের উদ্যোগে ‘ডিজিটাল ফিল্ম মেকিং ওয়ার্কশপ’ এ নির্মানাধীন শর্টফিল্ম।”
২০১০ সালে জুন মাসে আমাদের প্রতিষ্ঠান ‘অযান্ত্রিক’ -এর কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেল। মামুন স্যার, নুরুল আলম আতিক, তারেক মাসুদ – সবাই খুব মন খারাপ করেছিলেন। তারা অনেকেই চেয়েছিলেন, অন্তত সংগঠন হিসেবে অযান্ত্রিক এর অস্তিত্ব টিকে থাক। গত ২০১০ সালে তারেক মাসুদ অনেকদিন পর চট্টগ্রামে আসলেন। পোড়াপাড়া স্পেস ফর আর্টিস্ট’ -এর আমন্ত্রনে একটি আর্ট সেমিনার এ। শিল্পকলা একাডেমীতে শ’খানেক দর্শকের সামনে ‘নরসুন্দর’ দেখিয়ে তারেক ভাই বক্তব্য রাখলেন – আগত চলচ্চিত্র শিল্পের ভাষা হিসেবে ডিজিটাল ভিডিওর সম্ভাবনা নিয়ে। স্টেজে ডেকে আমাদের মতো নবীন চলচ্চিত্র কর্মীদের মতামত জানতে চাইলেন। জানালাম, “যে কোন নতুন প্রযুক্তির সাথে শিল্পের আদতে কোন বিরোধ নেই। কিন্তু মহৎ শিল্পীরা মাঝে মাঝে আমাদের বিভ্রান্ত করেন। এমনকি চার্লি চ্যাপলীনও প্রথম শব্দ এসে যুক্ত হলে, অনেক দেরীতে তা গ্রহণ করতে রাজী হয়েছিলেন । আমাদের দেশেও ডিজিটাল চলচ্চিত্রকে এখনো চলচ্চিত্র শিল্প হিসেবে মেনে নিতে অনেকে অনিচ্ছুক। তারেক মাসুদ’কে ধন্যবাদ। তাঁর মতো শক্তিমান চলচ্চিত্র নির্মাতা আমাদের প্রযুক্তির এই নতুন অধ্যায়ের সাথে দ্রত পরিচিত হবার আহ্বান জানাতে এলেন।”
কোন এক অজানা কারনে আমাদের মতো চলচ্চিত্রকর্মীদের যথেষ্ঠ মূল্যায়ন করেছেন, নিজের সংগ্রামে পাশাপাশি রাখতে চেয়েছেন। হৃদ্যতার সাথে আমাদের সাথে মিশেছেন, তাকেও জানার সুযোগ দিয়েছেন। জীবনের নানা চাপে আমরা ভুলে যেতে চাইলেও তিনি আমাদের ভুলে যান নি।
ডিসেম্বরে আবার এলেন চট্টগ্রামে নবনির্মিত চলচ্চিত্র ‘রানওয়ে’ নিয়ে। চট্টগ্রাম চলচ্চিত্র কেন্দ্রের উদ্যোগে টিআইসি’তে তিনদিন ব্যাপী আয়োজিত হলো রানওয়ে’র শো। তারেক মাসুদ চট্টগ্রাম নেমেই ফোন করে জানালেন। বললেন, প্রেস কনফারেন্সে অবশ্যই থাকতে হবে। জানালাম, আসবো। প্রেস কনফারেন্সে দেখা হলো। কানে কানে বললো, “ আমি কিন্তু এবার শুধু ফিল্ম দেখাতে আসিনি। আমার আরো একটি উদ্দেশ্য আছে। তা হলো – মৃত ফিল্ম সোসাইটিজ গুলোকে আবার জীবিত করে তোলা। অযান্ত্রিক, CUFS – এদের আবার জাগিয়ে তোলা চাই। একারনে তোমাকে লাগবে। ” আমি হাসলাম। খুব বেশি উৎসাহিত হতে পারছিলাম না। কিন্তু তারেক ভাইয়ের দারুন উৎসাহ। শুধু জানালাম, আপনার যেকোন প্রয়োজনে থাকবো।
‘রানওয়ে’ ছবিতে তারেক মাসুদ সমকালীন বাংলাদেশকে নিয়ে এলেন। ‘রানওয়ে’ ছবি নিয়ে তারেক ভাইয়ের সাথে হাজার যুক্তি-তর্ক । তবে যা এককথায় অনস্বীকার্য তা হলো রানওয়ে, চলচ্চিত্রের অসামান্য সিনেমাটাগ্রাফী – যার কৃতিত্ব ক্যামেরার পেছন সেই মানুষ, মিশুক মুনীর । তাঁর সম্পর্কে এর আগে কিছুই জানতাম না। ‘রানওয়ে’ ছবির প্রদর্শনীতে ডিজিটাল চলচ্চিত্রের সম্ভবনা বিষয়ক একটি সেমিনারে তারেক ভাই বলেছিলেন, “তারেক মাসুদের কারনে ‘রানওয়ে’ চলচ্চিত্রটি কেউ মনে না রাখলেও, মিশুকের অসামান্য সিনেমেটোগ্রাফীর জন্য দর্শক মনে রাখবে বলে আমার বিশ্বাস।” সত্যিই দর্শক অভিভূত হয়েছিল রানওয়ে ছবির চিত্রগ্রহনের শৈল্পিকতায়। প্রকৃতির কাব্যময়তা যেমন জীবনানন্দ তুলে এনেছিলেন অক্ষরের মাধ্যমে, তেমনি মিশুক মূনীরও দৃশ্যকল্পের মাধ্যমে সেই প্রকতিতে আবার ছুঁয়ে দেখালেন রানওয়ে ছবিতে। প্রদর্শনী শেষে চলে গেলেন তারেক ভাই। অল্প সময়ের মধ্যে চলচ্চিত্র সংসদের ব্যাপারে সফল হলেন না। বলে গেলেন, “তুমি চেষ্টা করো কিন্তু’” । সত্যি আমি আর চেষ্টা করিনি। সময়টা আসলে ভালো নয়। আমরা হয়তো বয়সের আগেই বুড়ো হয়ে গেছি । তারুন্যের অবয়ব নিয়ে আমাদের জরাজীর্ন মন সবসময় প্রাপ্তি অপ্রাপ্তির দারুন সব হিসেব নিকেষ কষতে থাকে। কিন্তু এই মানুষগুলো যেন কেমন তরুন, সব সময়ের জন্য। তারা যেন সদা দুঃসাহসী – এই বয়সেও।
তারেক মাসুদ চলচ্চিত্র নির্মান প্রক্রিয়ায় যাবতীয় ডিসিপ্লিনের মধ্যে থাকতেন এবং অন্যদেরও সেভাবে থাকতে বলতেন। সব যেন তার মতো হওয়া চাই্। এমনকি জীবন যাপনেও আমি দেখতাম, স্বাস্থ্য, নিদ্রা, পড়াশুনা সব বিষয়ে নিয়ম মেনে চলতে চাইতেন। অনিয়ম কোন মানুষকে খুব বেশি দুর নিতে পারে না। এটা ঠিক, মামুন স্যার ও তাঁর অন্যান্য বন্ধুদের (যাদের সাথে পরিচিত হবার সুযোগ হয়েছে) বেশির ভাগকেই দেখেছি অসম্ভব নিয়ামানুবর্তীতার মধ্যে জীবনযাপন করতে। মামুন স্যার সকাল সন্ধ্যা প্রায়ই হাঁটতেন। বলতেন, “স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে হবে রাসেল, কারণ আরো কিছুদিন যাতে কাজ করতে পারি।” তাই জানতাম, বিলাসী কোন কুঅভ্যাস, অনিয়ম বা কঠিন কোন মহামারী – এই মানুষগুলোকে ঘায়েল করতে পারবে না। এদের রুখতে হলে, হয় একটি বিমান আকাশ থেকে পড়ে যেতে হবে; নতুবা কোন বেপোরোয়া বাস এসে তাদের দুমড়ে মুচড়ে দিয়ে যেতে হবে। আর প্রকৃতি যেন ঠিক তাই-ই করলো। গত ১৩ ই অগাস্ট-এর মধ্য দুপুর যেন এমনি একটি বিষাদময় মূহুর্ত। মানিকগঞ্জের সেই রাস্তায় বাংলাদেশে চলচ্চিত্রের দু’টি অপরিনত অধ্যায়ের সমাপ্তি হলো – তারেক মাসুদ এবং মিশুক মূনীর। । তাদের সঙ্গী হলেন, সাাথে থাকা আরো তিনজন চলচ্চিত্রের কর্মী।
পাঠক, একটি কারনে দুঃখিত এই কারনে- তারেক মাসুদকে নিয়ে স্মৃতিকথা লিখতে গিয়ে হয়তো ঢালী আল মামুন-এর নাম বার বার উঠে এসেছে। এই লেখা যখন লিখছি, তখনো একই দুর্ঘটনায় মারাত্মক ভাবে আহত মামুন স্যার ব্যাংককের হাসপাতালে চিকিৎসারত আছেন। তিনি জানেন না, তার প্রিয় দুই বন্ধু তারেক মাসুদ এবং মিশুক মুনীর আর নেই। আমাদের বিশ্বাস তিনি আমাদের কাছে শিঘ্রই ফিরে আসবেন। আসলে আমার স্বল্পকালীন চলচ্চিত্র আন্দোলনের পথচলার ইতিহাসে তারেক মাসুদ যদি একটি গুরুত্বপূর্ন অধ্যায় হয়, ঢালী আল মামুন তবে সেই পথের পুরো গ্রন্থটাই।
তারিখ ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১১
রফিকুল আনোয়ার (রাসেল)
চলচ্চিত্রকর্মী
Have your say
You must be logged in to post a comment.
২ comments
শাহ আলম বাদশা - ১৯ আগস্ট ২০১৪ (১০:০৬ অপরাহ্ণ)
খুব ভালো শোকগাথা; অনেক ধন্যবাদ এই প্রতিভাবানকে নিয়ে লেখায়
কার্তিক চন্দ্র মোদক - ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ (৩:৫৮ অপরাহ্ণ)
তারেক মাসুদ স্যার মারা যাওয়ার পর সড়ক দুর্ঘটনা সম্পর্কে অনেক তোলপাড় শুনা গিয়েছিল। এখন আবার সব আগের মত হয়ে গেছে।