বাংলাদেশের ইতিহাস কৃষক নিপীড়নের ইতিহাস – চার (শেষ পর্ব)

১ম পর্ব, ২য় পর্ব, ৩য় পর্ব / এর পর থেকে . . .

এই পোস্টে আজ দেওয়া হলো চতুর্থ এবং শেষ পর্ব। এই পর্বগুলির সাথে বিজ্ঞ পাঠকের পর্যবেক্ষণ, অর্থাৎ যার কাছে এ ধরণের অত্যাচারের বিবরণ বা মনে থাকা ঘটনা আছে তাঁরা সেগুলি দিলে একটা পূর্ণাঙ্গ লেখা দাঁড় করানো যাবে। একেবারে নিখুঁত সন-তারিখ মিলতেই হবে এমন নয়। সম্ভাব্য মাস এবং বছর উল্লেখ করলেই হবে। আশা করি আপনাদের স্মৃতিতে বা রেকর্ডে ছোট ছোট কৃষক নিপীড়ন বা অত্যাচারের যে টুকু বর্ণনা বা ইতিহাস আছে সেটা এই লেখাটা পূর্ণাঙ্গ করতে সাহায্য করবে।

ইন্ট্রো-৭

কৃষিতে কর্পোরেট পুঁজির অনুপ্রবেশ। ট্রাক্টর, মেশিন, শ্যালো, সেচ, যান্ত্রিকায়ন, আধুনিকায়ন, অধিক ফলন, হাইব্রিড, মোবাইল,ক্ষুদ্রঋণ, ব্যাংকঋণ, তবুও কৃষকের বিদ্রোহের সেই পুরোনো হাতিয়ার, লাঠি-বল্লম-কাস্তে…. সাঁওতাল বিদ্রোহ, সন্যাস বিদ্রোহ, ফকির বিদ্রোহ, তেভাগা বিদ্রোহ, নকশাল বিদ্রোহ, বাংলার সকল বিদ্রোহের সূতিকাগার বাংলার গ্রাম, বাংলার কৃষক। আড়াইশ বছর আগেও বাংলার চাষাদের চাষের অধিকার, বাঁচার অধিকারের জন্য বিদ্রোহ করতে হয়েছে, সংগ্রাম করতে হয়েছে, দলে দলে প্রাণ দিতে হয়েছে। শক্ত এঁটেলমাটি রাঙা রক্তে সিক্ত করতে হয়েছে। আড়াইশ বছর পর আজো কৃষককে সারের দাবিতে, বিদ্যুতের দাবিতে বিদ্রোহ করতে হচ্ছে, আন্দোলন-সংগ্রাম করতে হচ্ছে। কাতারে কাতারে প্রাণ দিতে হচ্ছে। পূর্বে বেনিয়া ব্রিটিশ, মোঘল, স্থানীয় রাজারাজড়া, জোতদার-মহাজনদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে প্রাণ দিতে হয়েছে। আর এখন স্বাধীন দেশের নিজ ভাষাভাষির সরকার, শাসকদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে ঘাম ঝরিয়ে শক্ত মাটি খুঁড়ে বের করা খাবার খাইয়ে, কর-খাজনা দিয়ে লালিত পালিত নিজ ভাষাভাষির পুলিশের গুলি খেয়ে মরতে হচ্ছে। একাত্তরে ভিনদেশী দখলদারদের বিরুদ্ধে জয়ী হওয়ার পর বাঙালির যুদ্ধ শেষ হলেও কৃষকের, ক্ষেতমজুরের যুদ্ধ শেষ হয়নি। বিদ্রোহ, যুদ্ধ ছাড়া কৃষক সার পায় না, বীজ পায় না, সেচের জল পায় না, ফসলের দাম পায় না। টাকা দিয়ে বিদ্যুৎ পায় না। নিজের দুবিঘে জমি পরের বছর ধরে রাখার নিশ্চয়তা পায় না। কাল থেকে কালান্তরে বাংলার কৃষক, ক্ষেতমজুর, চাষা কোটি কোটি মানুষের খাদ্য জুগিয়ে চলেছে, অথচ তার পুরস্কার হিসেবে তার যুগযুগান্তরের পাওনা, লাঠি, গুলি, টিয়ার গ্যাস, লাথি, বুট, মামলা, কারাবাস এবং বেহিসেবি নির্বিচার প্রাণদান। কতোকিছু বদলে কতো কী হয়ে গেলো, কিন্তু হতভাগা চাষার পরিণতি বদলালো না। প্রাণ দেওয়াই যেন তার জন্ম-জন্মান্তরের নিয়তি।

খাদ্য নিরাপত্তা :
দেশে নিরাপদ খাদ্য মজুদ হিসেবে ধরে নেওয়া হয় ১০ থেকে ১২ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য। এসব থাকে সরকারের সাইলো আর গুদামে। এই মজুদ নিরাপত্তা দেয় শহুরে নাগরিকদের, ধনীদের অপরাপর শ্রেণীদের। কৃষক এবং ক্ষেতমজুর এই নিরাপত্তায় পড়ে না। বতর, আকাল, মঙ্গা যাই হোক ক্ষেতমজুরকে সরকারের বেঁধে দেওয়া দামেই খাদ্য কিনতে হয়। কৃষক, ক্ষেতমজুর যখন বাজার দরে খাদ্য কেনে তখন সরকারের বিভিন্ন বাহিনীকে বরাদ্দ দেওয়া হয় নামমাত্র মূল্যে। চার-পাঁচ টাকা কেজি দরে। তারা তাদের সারা মাসের খোরাক পায় আড়াইশ থেকে ৩০০ টাকায়। মজুরকে খরচ করতে হয় আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা। ধনীদের জন্য কেজি ৩০ টাকায়ও ক্ষতি নেই, কারণ সরকার ৩০ টাকা জোগানোর ব্যবস্থা করে দেয়। বাজারমূল্য অসম্ভব বেড়ে গেলে শহুরে শ্রমিক বা অন্যান্য ক্ষুদ্র পেশার গতরখাটা মানুষগুলোও শ্রমবাজার বাড়িয়ে নিতে পারে। চাষা পারে না। চার থেকে সাড়ে চার কোটি ক্ষেত মজুর বছরের অর্ধেক সময় বেকার। দিনের অর্ধেক সময় অনাহারি। তাদের বাজারমূল্যের সঙ্গে শ্রমমূল্য বাড়িয়ে নেওয়ার, মানিয়ে নেওয়ার সুযোগ নেই। ক্ষেত্র নেই।

শিক্ষা :
প্রাথমিক পর্যন্ত টেনেটুনে চললেও এর ওপরে চাষার ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার সুযোগ নেই, সঙ্গতি নেই। শহুরে মিশ্র শ্রেণীর সন্তানদের সাকুল্যে জনপ্রতি দুতিন হাজার টাকা শিক্ষা ব্যয়। তাদের দৌড় তবুও হয়তোবা ম্যাট্রিক পর্যন্ত, কিন্তু মজুর, ক্ষেত মজুরের সন্তানদের দৌড় মাধ্যমিক। মাধ্যমিকের গণ্ডি পার হওয়ার আগেই তাদের বাঁচার জন্য গতর খাটতে হয়। শিক্ষা সংকুচিত হতে হতে চাষার জন্য ‘নেই’ হয়ে গেছে। চাষার কাছে শিক্ষা যতো বেশি ‘নেই’ হয়ে যাচ্ছে ততোই সে মধ্যযুগীয় আঁধারে ঢুকে যাচ্ছে। চাষা আরো বেশি শিক্ষা পেলে তাকে কাজের ক্ষেত্র দিতে হবে। সরকারের হাতে, শাসক শ্রেণীর হাতে কাজের ক্ষেত্র নেই। সুতরাং চাষার জন্য প্রাথমিকের গণ্ডি পেরুনো মহাপাপ। চাষা যতো বেশি শিক্ষা পাবে ততোই সে গতরখাটা ছেড়ে শিল্পীয় শ্রমিক হতে চাইবে। শিল্প শ্রমিকের জন্য শিল্প নেই, যতো বেশি শিল্প শিক্ষা শ্রমিক, ততো বেশি শ্রমিক বিদ্রোহ, যে বিদ্রোহ চাষা বিদ্রোহের চেয়ে ধ্বংসাত্মক, কার্যকরী, যুদ্ধংদেহি। সুতরাং চাষাকে শিক্ষা দেওয়া শাসক শ্রেণীর জন্য মৃত্যুকূপ। তারা তা হতে দিতে পারে না। গতর খাটানোর জন্য যতোটুকু দরকার তা ওই প্রাথমিক পর্যায়েই মেলে, তাই চাষাকে ওখানেই ইতি টানাতে হবে। সেই দুরভিসন্ধিতে ‘সবার জন্য শিক্ষা’ মানে প্রাথমিক।

স্বাস্থ্যসেবা :
দেশের প্রায় প্রত্যেকটি থানায়, অনেক ইউনিয়নে সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্র আছে। ওখানে একদুজন ডাক্তারও আছেন। আছে কিছু ওষুধ, কিন্তু তা রাখা আছে চাষা, ক্ষেতমজুরদের পরিচালক, ভূমি মালিকদের জন্য, সরকারের কর্মচারীদের জন্য এবং ওই থানা বা ইউনিয়নের শাসকদের জন্য। চাষার জন্য বরাদ্দ উনিশ পয়সা দামের ভিটামিন। পেটে ব্যথা হোক, জ্বর হোক, ডায়রিয়া হোক, দাওয়াই এই ভিটামিন যা ইউনেস্কো থেকে মুফতে পাওয়া। কর্পোরেট বেনিয়ার নব্য সংস্করণ এনজিওঅলারা অধিকাংশ প্রজেক্ট প্রকিউর করেন স্যানিটেশন নিয়ে। চাষার খাবারের জোগান নেই, কচুঘেচু, ঘাসপাতা খাক, ওষুধের জোগান নেই, ঝাড়ফুঁক, তাবিজ কবজ ধরুক, ব্যবস্থাপত্র নেই, সব রোগেই ভিটামিন খাক, কিন্তু ওইসব ছাইপাশ খেয়ে যেন চাষা যত্রতত্র ‘ত্যাগ’ না করে। তাহলে পরিবেশ দূষণ, তাই চাষার জন্য এনজিও অলাদের প্রকিউরমেন্ট-স্যানিটেশন। কুয়া পায়খানা। শহুরে সকল চিকিৎসা ব্যবস্থা চাষার জন্য হারাম। চাষা চিকিৎসার জন্য শহরে এসে মূত্রত্যাগেও তাকে একটাকা খরচ করতে হবে। চিকিৎসা কেন্দ্রে দশ টাকার টিকিট। লাইনে দাঁড়িয়ে তিন ঘণ্টা পর ব্যবস্থাপত্র, ‘ভালো ডাক্তার দেখাও, রোগকে পুষে রেখো না, আজেবাজে ওষুধ খেও না, নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চলে যাও’। চাষার রোগাক্রান্ত সন্তান নিয়ে শহরে তার থাকার জায়গা নেই। ট্রেন, বাস, লঞ্চ-স্টিমার, রিকশা, হোটেল সর্বত্র চাষাকে খুবলে খাবে। ফুটপাথে পুলিশ পেটাবে। রাতে ফুটপাথে চাষার মেয়েকে জাতভাইরা ধর্ষণ করবে, পুলিশ থানায় ঢুকিয়ে দেবে। শহুরে মধ্যবিত্তরা চোর অপবাদ দেবে। মধ্যবিত্তের দুর্ভেদ্য কারাগার সদৃশ বাসার বারান্দায় চাষার ঠাঁই নেই। সারা শহরে দুর দুর ছেই ছেই শুনে, লাথিগুতো খেয়ে, টাকা-পয়সা খুঁইয়ে চাষা যখন গ্রামে ফিরবে, দেখবে তাদের শ্রমে, তাদের পয়সায়, তাদের গতরখাটায় গড়ে ওঠা ডাকবাংলোতে শহুরে বাবু-সায়েবরা তশরিফ রেখেছেন। উদ্দেশ্য, গণমানুষের স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নকল্পে গবেষণাপত্র নির্মাণ।

ব্যবসা-বাণিজ্য :
চাষার জীবনে কোনো ব্যবসা-বাণিজ্য নেই। খাদ্য ফলাও, ফসল ফলাও, গতর খাট এবং আগামী দিন যে আবারো গতর খাটতে পারে সেই মোতাবেক আহার কর, ব্যস, চাষার দিনপঞ্জি শেষ। ব্যাংক, বীমা, কোর্ট-কাছারি, দপ্তর, দোকান, মহাজনি চাতাল সর্বত্র কম্পিউটারাইজ করে চাষার প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। চাষার ছেলে আর শেয়ার ব্যবসা করতে পারবে না, এখন সেখানে বিও অ্যাকাউন্ট খুলতে হয়। চাষা শহরে গিয়ে শাকপাতা বেচতে পারবে না, তোলা, খাজনা, হপ্তা আর পুলিশি সামারিতে তার দফারফা হয়ে যাবে। একশ তেপ্পান্নটা ঢেঁড়শ একসঙ্গে করে ৫ কেজি বানিয়ে তাকে বেচতে হবে ফড়িয়ার কাছে, মাত্র ২৫-৩০ টাকায়। শহরে ওটা বিকোবে একশ টাকায়। চাষা নিজের ধান নামিতে বেচতে পারবে না, বতরের সময়েই সরকারের কাছে সে বেচতে বাধ্য। তার ফলানো ফসল নিয়ে সরকার তাকে স্লিপ দেবে। বহুদিন পর বহু ঘোরাঘুরি করে সেই স্লিপ ভাঙিয়ে চাষা টাকা পাবে। তার জন্য মেম্বার, চেয়ারম্যান, টাউট-বাটপারদের কমিশন দিতে হবে। চাষা সার, কীটনাশক, বীজ, জল কিনবে সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে, কিন্তু ফসল বেচতে গিয়ে বাজারদরের কথা তুলতে পারবে না। কম দামেই তাকে ভাগ্যবান শহুরে নাগরিকদের জন্য রিজার্ভ কনফার্ম করতে হবে। চাষার প্রোটিন বাজার বিপণন ব্যবস্থার কারসাজিতে চলে আসবে শহরে। তার জন্য থাকবে কেবল ‘আয়রন’, যা আসবে কচু ঘেচু থেকে। চাষা নিজে পাটের বেপারি হতে পারবে না। সরকারি-বেসরকারি মিলে পাট দিয়ে মাসের পর মাস চাষাকে টাকার জন্য হত্যে দিতে হবে। এনজিও আর নোবেল লরিয়েটের ক্ষুদ্র-মাঝারি ঋণের টাকা শোধ করতে চাষা তার ফসলের প্রায় পুরোটা বিক্রি করবে। তারপর পেটের জ্বালায় না বেঁচে খেয়ে বসলে তার গরুটা, ছাগলটা, ঘরের টিনটা সায়েবরা খুলে নিয়ে যাবে। ব্যাংকঅলারা চাষার কোমরে দড়ি দিয়ে জেলে পুরবে।

সামাজিক মর্যাদা :
চাষা ক্ষেতমজুরের কোনো সামাজিক মর্যাদা নেই। থাকতে নেই। থাকার বিধানও নেই। কেবলমাত্র সায়েবসুবোদের সাংস্কৃতিক ছেনালির সময় চাষার জীবনযাপন, চাষার ব্যবহার্য ইত্যাদি দিয়ে বিজ্ঞাপন বানানো, বেলজ্জ প্রচার আর নিজস্ব সংস্কৃতির ফেনায়িত বর্ণনায় চাষা উঠে আসবে মাত্র। পৃথিবীর অন্য অগ্রসর দেশ বা জাতিসমূহের কথা থাক। আমাদের পাশেই একই ভাষাভাষির পশ্চিমবঙ্গে সামাজিক মর্যাদায় সর্বাগ্রে শিক্ষক। তারপরই চাষা বা কৃষকের অবস্থান। কমিউনিজম, সমাজতন্ত্রকে রাইটার্স ভবনের চার দেওয়ালে ভ্রষ্ট করলেও ত্রিশ বছরের বামজমানা অন্তত মর্যাদা প্রদানের ক্ষেত্রে কঞ্জুস থাকেনি। এই বঙ্গে চাষা কোনো শ্রেণীতেই পড়ে না। বড়োলোকের অ্যালসেশিয়ান, বুশিবল, হাউন্ড আর মিউনিসিপালিটির নেড়ির যেটুকু মর্যাদা আছে চাষার তাও নেই। শহুরে সংস্কৃতিতে চাষার নাম কলিমুল্লাহ। তার মেয়ের নাম জরিনা-সখিনা, ছেলের নাম কাশেম বা কেষ্ট। চাষা বানে ভাসে, খরায় পোড়ে, আগুনে ছাই হয়, নদী ভাঙনে বিলীন হয়, ঝড়ে ভাঙে, সাগরে ডোবে, জলে সমাধি হয়, বাসের চাকায় থ্যাৎলায়, মহামারিতে সাবাড় হয়, কলেরাতে পচেগলে মরে, রোদ-বৃষ্টি-ঝড়ে ঝাড়ে বংশে মরে। শেয়াল-কুকুর-বেড়াল, চামচিকের মতো কুঁই কুঁই করে যখন বাঁচে তখন শহুরে বাবু সায়েবরা, সরকার, লেখাপড়া জানা ঘোড়েল মধ্যবিত্ত চাষার ওই বাঁচা নিয়ে গর্ব করে। ওই রকম নাইনসাফি, অমানবিক, পশুকারভাবে বাঁচাকে এরা ভাষা সাহিত্য মাখিয়ে বলেন, ‘এ দেশের মানুষ সাহসী আর সংগ্রামী, সাহসের সঙ্গে দুর্যোগ মোকাবিলা করতে জানে’!! পুঁজিবাদী বিশ্বে শ্রেণী বৈষম্য নতুন কিছু নয়। থাকবেই, কিন্তু শ্রেণী বৈষম্যের একটা সহনীয় মাত্রা আধুনিক পুঁজিবাদী এলিটরা মেইনটেইন করে, যাতে করে ওই মানুষগুলো যেন চরম বৈষম্যে পশু হয়ে না যায়। কেননা ওরা পশু হয়ে গেলে ওদের জন্য আলাদা থাকার ব্যবস্থা করতে হবে। একই আলো-বাতাসে রাখা যাবে না, তাই মানুষ এবং পশু এর মাঝামাঝি একটা ক্লাস তারা তৈরি করে সেখানেই তাদের ওয়ার্কিং ক্লাসকে রিজার্ভ করে। কিন্তু এ দেশের পুঁজিবাদ যেহেতু সামন্ত ধরনের ছ্যাঁচড়া ফড়িয়া পরাধীন পুঁজিবাদ, তাই তারা চাষার পশু হয়ে যাওয়া নিয়ে চিন্তিত নন। এরা চাষার পশু হয়ে যাওয়াকে ত্বরান্বিত করেছেন।

তবে যেহেতু আলাদা জগত তৈরি করতে পারেননি, তাই নিজেদের সমাজেই বাধ্য হয়ে থাকতে দিচ্ছেন। এটা তাদের জন্য (শাসক-শ্রেণী, তাদের শাখা-প্রশাখা শ্রেণী) খুবই শরমের। আর সেই শরম মোচন করার জন্য তারা চাষা এবং তার শহুরে বাইপ্রডাক্ট দিনমজুর, গতরখাটা মানুষদের গমনাগমন প্রবলভাবে নিয়ন্ত্রণ করেছেন। দপ্তর, বাড়ি, মহল তো দূরের কথা ওদের জন্য শহরে সব জায়গা, সব রাস্তা, সব ময়দান খোলা নয়। শহরের প্রায় অর্ধেকে চাষার প্রবেশ নিষিদ্ধ। বাংলার চাষা তথা ক্ষেতমজুর তথা দিনমজুরদের প্রতিমুহূর্তে ঠেলে ঠেলে অতল গহ্বরে ফেলছি আমরা, এই অদ্ভুত বৈপরীত্য নিয়ে বেড়ে ওঠা জগাখিচুড়ি শ্রেণী। আমরা যতোই ওদের কালো গহ্বরে ফেলছি ততোই ওরা ওখানে জমা হচ্ছে। ওখান থেকে আর সরে যাওয়ার জায়গা নেই। আছে শুধু ঘুরে দাঁড়ানোর উপায়। আমরা ঠেলছি, ওরা ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। যে চাষা সারের জন্য, বিদ্যুতের জন্য জীবন দিতে পারে, সে তার জীবনের জন্য কী করতে পারে সে সম্পর্কে ধারণা না থাকায় আমরা প্রতি মুহূর্তে নিজেদের কবরের পরিধি বাড়াচ্ছি।

সাবস্ক্রাইব করুন
অবগত করুন
guest

8 মন্তব্যসমূহ
সবচেয়ে পুরোনো
সাম্প্রতিকতম সর্বাধিক ভোটপ্রাপ্ত
Inline Feedbacks
View all comments
8
0
আপনার ভাবনাগুলোও শেয়ার করুনx
  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.