কি হালে বেঁচে আছে আমাদের শিশুরা : শুধু পেটের দায়ে ৩৫ লাখ শিশুশ্রমিক অমানবিক শ্রমে নিয়োজিত

monjuraul_1245599442_2-ddd2 এঁদো পচা ঘেয়ো র্দুগন্ধযুক্ত আলোবাতাসহীন বদ্ধ এক চিলতে ঘরে ছেঁড়া কাঁথা কিংবা স্রেফ চটের বস্তার উপর কোনও ভাবে বিয়োচ্ছে। পশুর মতই তার মা চেটেচুটে(মুছে) তাকে সাফসুতোর করছে। তারপর কোন এক হেকমতি বুজর্গটাইপ ধান্ধাবাজের তাবিজ-কোবজ, সূতো পড়া কিংবা মাদুলি পরিয়ে স্যাঁতসেঁতে মেঝেয় শুইয়ে রাখা হচ্ছে। মাত্র ক’দিনের মধ্যেই তার মা কাজে চলে যাচ্ছে, কেননা তা না হলে তার মায়ের পেটে ভাত জুটবে না। আর পেটে যদি ভাতই না যায় তাহলে বুকে দুধ কি ভাবে আসবে? যদিও তার পরেও বুকে দুধ আসে না। হালা, ফ্যান, এটা ওটা ছাইপাশ মুখে দিয়েই তার বেড়ে ওঠা। কুকুর, কাক, চিল , পোকামাকড় আর মশামাছির সাথে সহাবস্থানে সেই জীবনের বেড়ে ওঠা। এর বিপরীতে উন্নত বিশ্বের একটি শিশু কি ভাবে জন্মে, বেড়ে ওঠে দেখুন [...]

monjuraul_1245599442_2-ddd2
এঁদো পচা ঘেয়ো র্দুগন্ধযুক্ত আলোবাতাসহীন বদ্ধ এক চিলতে ঘরে ছেঁড়া কাঁথা কিংবা স্রেফ চটের বস্তার উপর কোনও ভাবে বিয়োচ্ছে। পশুর মতই তার মা চেটেচুটে(মুছে) তাকে সাফসুতোর করছে। তারপর কোন এক হেকমতি বুজর্গটাইপ ধান্ধাবাজের তাবিজ-কোবজ, সূতো পড়া কিংবা মাদুলি পরিয়ে স্যাঁতসেঁতে মেঝেয় শুইয়ে রাখা হচ্ছে। মাত্র ক’দিনের মধ্যেই তার মা কাজে চলে যাচ্ছে, কেননা তা না হলে তার মায়ের পেটে ভাত জুটবে না। আর পেটে যদি ভাতই না যায় তাহলে বুকে দুধ কি ভাবে আসবে? যদিও তার পরেও বুকে দুধ আসে না। হালা, ফ্যান, এটা ওটা ছাইপাশ মুখে দিয়েই তার বেড়ে ওঠা। কুকুর, কাক, চিল , পোকামাকড় আর মশামাছির সাথে সহাবস্থানে সেই জীবনের বেড়ে ওঠা। এর বিপরীতে উন্নত বিশ্বের একটি শিশু কি ভাবে জন্মে, বেড়ে ওঠে দেখুন:

ধূলোবালিহীন অত্যাধুনিক হাসপাতালের কাঁচ ঘেরা কুঠরিতে জন্মানোর পর প্রচন্ড রকম হাইজেনিক ব্যবস্থা বজায় রাখা একদল নার্সের সেবায় দিনে দিনে একটু একটু করে বাড়তে থাকে এই শিশুরা।মায়ের কি দরকার, শিশুর কি দরকার সবই ঠিক করে দেয় ম্যাটার্নিটি বা হাসপাতাল। ওই শিশুটি এরপর বাড়ি ফেরে। সেখানেও সেই হাসপাতালের মতই সুব্যবস্থা।ন্যাকার-পুকার, ডায়াপার, প্যাম্পারস, সব দামী দামী গেজেট সহ সে বাড়তে থাকে। যদি কোন কারণে কোন শিশু কেঁদে ওঠে, আর সেটা যদি রাষ্ট্রর আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর কেউ শুনে ফেলে সাথে সাথে সেই বাবা-মা কে তলব করে জানিয়ে দেওয়া হয়- শিশুর যত্ন নিতে তারা অপারগ হলে তাকে যেন নিদৃষ্ট দপ্তরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। অর্থাৎ রাষ্ট্র পুরোপুরিই এক একটি শিশুকে আগামীর নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলে। আরো বড় হয়ে সেই শিশুটির যখন স্কুলে যাবার সময় হয়, তখনো রাষ্ট্র তার লেখাপড়ার যাবতীয় দায়-দায়িত্ব তুলে নেয়। তার মেধার বিকাশের ফলোআপ দেখে তাকে সেই বিষয়েই লেখাপড়া করানো হয়। সাথে সাথে রাষ্ট্র তাকে খেলাধুলা থেকে শুরু করে যাবতীয় সামাজিক আচার-আচরণ, সংস্কৃতি সবই শেখায়। এভাবেই আজকের শিশু আগামী দিনের নাগরিক হয়ে ওঠে। এবার সেই নাগরিককে আর কোনভাবেই নাগরিক দায়-দায়িত্ব বোঝানোর দরকার করে না।

আর আমাদের এরা ? আরো পরে একটু হাঁটতে শিখলেই যেন নিজেই খাবার যোগাড় করে নিতে পারে সেই চেষ্টায় তাকে ঠেলে দেওয়া হয় বাইরে। গু-মুতের পাশে পাশে শুরু হয় তার জীবন সংগ্রাম। সেই কচি বয়সেই তার সাথী হয়ে ওঠে মশা-মাছি, পোকা-মাকড় আর ঘেয়ো নেড়ি কুকুর। যদি খুব দারিদ্র থাকে তাহলে মাত্র তিন-চার বছরেই তার হাতে উঠে আসে রংচটা থালা। আর পিঠের ওপর ঝুলে থাকবে তার চেয়েও আরো ছোট একজন। এদের আপনি দেখবেন মৌচাক মোড়ে, পল্টনে, নিউমার্কেটের সামনে, সায়দাবাদে, মহাখালিতে, এবং প্রায় পুরো ঢাকা শহরেই। যাদের পরিবারের অবস্থা এরচে একটু ভাল তারা আরো একটু বড় হতেই তাদের বাবা-মা তাদের ঠেলে দেবে কাজে। কি কাজ ? সে ভয়ংকর সব কাজ। যে কাজ পূর্ণ বয়ষ্ক মানুষে করে, এরাও ঠিক সেই ধরণের পরিশ্রমের কাজে নেমে পড়ে। এই জীবন থেকে কর্পূরের মত উবে যায় পুতুল খেলা, লাটিম ঘোরানো, ঘুড়ি ওড়ানো, যখন তখন নদীতে ঝাঁপ দিয়ে পড়া, একছুঁটে তেপান্তরের মাঠ পেরুনো আর রাতে দাদী-নানীর কাছে ব্যঙ্গমা-ব্যঙ্গমীর গল্প শোনা! এরাই আমাদের আগামীর সন্তান। এরাই আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম। আসুন দেখি আমাদের এই ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কিভাবে তাদের পেটের খাবার যোগাড় করছে, কি ভাবে শুধুমাত্র একবেলা খাবারের জন্য কি কি হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমের কাজ করে চলেছে………..

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, দেশের ৩৫ লাখ শিশুশ্রমিকদের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমে নিয়োজিত রয়েছে ১৩ লাখ শিশু, যা মোট শিশুশ্রমিকের ৪১ শতাংশ। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা আইএলও’র তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশের শিশুশ্রমিকরা প্রায় ৩৪৭ ধরণের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত। এর মধ্যে ৪৭ ধরণের কাজকে ঝুঁকিপূর্ণ ও ১৩ ধরণের কাজকে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। আর এসব কাজে নিয়োজিতদের অধিকাংশই পথশিশু।শুধুমাত্র একবেলা খাবার যোগাড় করতে এ পথশিশুরা দৈনিক ১০ থেকে ১২ ঘন্টা পর্যন্ত হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে। পথশিশুদের ৬৯ শতাংশই কোন না কোন শিশুশ্রমে নিয়োজিত রয়েছে। এই ঢাকা শহরে প্রাতিষ্ঠানিক খাতের এমন কোন জায়গা নেই যেখানে শিশুশ্রমিক নেই! চরম দারিদ্রের কারণে তাদের বাবা-মা তাদেরকে এধরণের কাজে ঠেলে দিতে বাধ্য হয়। এই যে আমরা বলছি- ঝুঁকিপূর্ণ কাজ। এটা কি পরিমান ঝুঁকি ? বিস্ময়কর যে এই শিশুরা ঝালাই কারখানা, ঢালাই কারখানা, রি-রোলিং মিলের লোহা গলানোর কাজে, এমনকি জ্বলন্ত বয়লারের পাশে ১০ থেকে ১২ ঘন্টা কাজ করে।

এদেরকে এধরণের কাজ করার সময় যে ভাবে জীবনের ঝুঁকি নিতে হয় তার সাথে তুলনা চলে শুধুমাত্র যুদ্ধক্ষেত্রের সৈনিকের।

যে সিসা মানব দেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ, সেই সিসা, তামা,চামড়া কারখানার কেমিক্যালস, বিষাক্ত রি-এজেন্ট, লোহার ঢালাইয়ের গনগনে আগুনে এদের কাল মুখ আরো লাল হয়ে ওঠে। ঘুমঘুম চোখে তারা নিরবেই কাজ করে যায়। কাজ শেষে যখন সে বাইরে আসে তখন তার চোখের সামনে অবারিত মানুষের কোলাহল আর মুক্ত প্রেম-ভালবাসা তাকে যেন বিদ্রুপ করে। ক্লান্ত শরীরটা কোনও মতে টেনে টেনে ঘরে ফেরে তারা। মায়ের আদর, বাবার øেহ, ভাই-বোনের সহচর্য কিছুই এদের স্পর্শ করে না। ক্লান্ত অবসন্ন শরীরটা কখন আরো ক্লান্তিতে এলিয়ে পড়ে এরা বুঝতেও পারেনা। আবার তো সকালে সেই অমানুষিক হাড়ভাঙ্গা কাজের জোয়াল।

বিভিন্ন জরিপ (এই জরিপমার্কা ব্যাপারটায় আমাদের সাংঘাতিক বুৎপত্তি। আমরা কোটি কোটি টাকা বেতনে শত শত পরিসংখ্যানবিদ পুষি। তারা নিরবিচ্ছিন্ন পরিসংখ্যান দিয়ে চলেন)। দেখা গেছে অপ্রাতিষ্ঠানিক ভাবে গড়ে ওঠা শত শত ব্যক্তিমালিকানাধীন বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ খাতে দশ লাখেরও বেশি শিশু শ্রমিক কাজ করছে। এই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আছে ধাতব কারখানা, ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ, প্লাস্টিক কারখানা, অটোমোবাইল ওয়ার্কশপ, গাড়ির গ্যারেজ, ঝালাই কারখানা, রিক্সা মেরামতি, মোটর সাইকেল ওয়ার্কশপ, গাড়ির-টেম্পোর হেল্পারি, গার্মেন্টের ছোটখাট কাজ, লেদ কারখানা, হাড়িপাতিল বানানো এবং ছোট ছোট কুুটির শিল্প ধরণের কারখানা। এর বাইরে একটা বড় অংশ কাজ করে বাজারগুলোতে। সারারাত বা সারাদিনই সেখানে কাজে লেগে থাকতে হয়।

এ ছাড়া আর একটি বড় শ্রম ক্ষেত্র হচ্ছে গৃহকর্ম। আমরা বেশ চটকদার ভাষায় কথাটা বলি-গৃহকর্ম! কিন্তু কর্মটা যে কি ভয়ংকর সেটা যারা এখানে কাজ করে তারাই কেবল বোঝে। এদের কোন টাইম টেবিল নেই। খুব ভোরে ঘুম থেকে ওঠার পর থেকে গভীর রাত অব্দি, অর্থাৎ ঘুমানোর আগপর্যন্ত এদের কাজ করতে হয়। এই কাজের ক্ষেত্রে কেউ বেতন পায়, কেউ বা শুধুই পেটেভাতে। গতরখাটা এই খাতে একটু এদিক-ওদিক হলে এদের উপর যে ভয়াবহ অত্যাচেরর খড়গ নেমে আসে তার যৎসামান্য চিত্র আমরা সংবাদ পত্রে মাঝে মাঝে দেখি। খুন্তির ছ্যাঁকা, হাড়গোড় ভেঙ্গে দেওয়া, পুড়িয়ে দেওয়া, চুল কেটে মুখে চুনকালি মেখে দেওয়া থেকে শুরু করে আমাদের সুশীল মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষেরা এদের যৌন কাজেও ব্যবহার করে। বিকৃত সেই সব কাজের আর সারা দিনের খাটনির নিট ওয়েজ কি ? সামান্য তিনবেলা অথবা দুবেলা খাবার! যে পথশিশুরা এভাবে অমানুষিক পরিশ্রম করে পেটের ভাত যোগাড় করছে অথবা সামান্য কিছু টাকা পাচ্ছে সেখানেও ভাগ বসায় রাষ্ট্রের পুলিশ, মাস্তান, বখাটে, পাড়ার ছিঁচকে মাস্তানরা। এদেরকে ভাগ না দিলে ওই শিশুদের কাজের অধিকারও হাতছাড়া হয়ে যায়। ইদানিং ঢাকায় ‘নাইটগার্ড’ নামক এক নয়া শোষক পয়দা হয়েছে। এরা বিভিন্ন বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারি। এদেরর একটা হিস্যা তৈরি হয়েছে এখন। এরা এখন রীতিমত এক নয়া লেঠেল বা ঠেঙ্গাড়ে প্রাতিষ্ঠানিক মাস্তান। সবাইকে ভাগ দিয়ে থুয়ে যেটুকু বাঁচে তাই দিয়েই এই পথশিশু আর শিশু শ্রমিকরা এক একটি নিরেট পাথুরে দিন পার করে চলেছে।

এদের জন্য কিছু করার কি কেউ নেই? হ্যাঁ আছে। ঠান্ডা ঘরে বসে এদের জন্য দরদ দেখাতে দেখাতে এনারা প্রায় গলদঘর্ম! “কারিতাস”, “রাড্ডা করনেন”,” সেভ দ্য চিলড্রেন”, “নিজেরা করি”,” শৈশব বাংলাদেশ”, “বিলস”, “শ্রমিক কর্মচারি ঐক্য পরিষদ”,” সমাজ কল্যাণ মন্ত্রনালয়”…… এরকম আরো ডজন ডজন প্রতিষ্ঠান এই পথশিশু বা শিশু শ্রমিকদের নিয়ে গবেষণা-টবেষণা করে চলেছেন! ভাগ্যিস তারা আছেন! তাই আমরা পরিসংখ্যান-টরিসংখ্যান পাই! বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ বা ‘বিলস’গত ১২ জুন বিশ্ব শিশু শ্রম প্রতিরোধ দিবসও পালন করে ফেলেছে! বেশ, ভাল কথা। তাহলে দেখা যাচ্ছে এই অভাগাদের জন্য কেউ না কেউ আছেন। কিন্তু তারা যে বিশেষ ভাবে নির্মিত লাল ড্রেসআপ লাল ক্যাপ পরে র‌্যালীতে নামলেন, সেটা দেখে কি মনে হবে এরা দুস্থ অনাথদের জন্য কাজ করছেন! হাহ্ কোনভাবেই না। তাদের র‌্যালী দেখে মনে হবে এরা সেই বিশ্ব ভালবাসা দিবস বা বিশ্ব প্রেমময় দিবস-টিবস কিছু একটা পালনে সৌহার্দ আর আনন্দঘন র‌্যালীতে নেমেছেন। কী অপূর্ব কন্ট্রাস্ট!

আরও একটা পরসিংখ্যান দেখুনঃ

বাংলাদেশে ৬ থেকে ১৬ বছরের মোট ৪ লাখ ২০ হাজার শিশু বাসাবাড়িতে কাজ করে। এদের শ্রমঘন্টা ১২ থেকে ১৪ ঘন্টা। বাড়ির এঁটো বা উচ্ছিষ্ট খাবারই এদের ভাগ্যে জোটে। রাতে হয় বারান্দা অথবা রান্নাঘরে ঠাঁই হয় এদের। নেই চিকিৎসা ভাতা, নেই ছুটিছাটা। বেতন বাড়ারও কোন সুযোগ নেই। তার উপর আছে শারীরিক অত্যাচার। গত ২০০১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত ৬৪০ টি শিশু নির্যাতনের ঘটনা নথিভূক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৩০৫ জন মারা গেছে। নিয়মিত-অনিয়মিত ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৭৭টি শিশু।

এমন জবরজং পরিসংখ্যানের বাইরে আরো আরো ঘটনা আছে, যা আমাদের মোলায়েম পেলব চোখে কখনোই ধরা পড়ে না। আমাদের বিবেকের আশপাশ দিয়েও এমন অত্যাচার আর নির্যাতনের খবরগুলো নিয়মিতই অদেখা চলে যায়। সংবাদপত্র আর বিভিন্ন জরিপটরিপের বাইরে আরো হাজার হাজার পথশিশু বা শিশু শ্রমিকের জীবন এভাবেই একটু একটু করে নরকের দিকে ধেয়ে চলেছে। আর আমরা, আমাদের সমাজ, আমাদের সরকার, আমাদের মনুষ্যত্ব, আমাদের বিবেক চোখে-কানে ঠুসি পরে এক ভয়ানক পাওয়ারফুল সেডেটিভ নিয়ে যেন গভীর তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে আছে।এবং অতি আবশ্যিকভাবে নিজেদের প্রবোধ দিচ্ছি…… জাস্ট ইগনোর এভরীথিং ফর পীস!! উই শ্যুড মেক আ বেটার চার্মিং সোসাইটি ফর আওয়ার নেক্সট জেনারেশন!!

সরকারী নিয়ম অনুযায়ী ১৪ বছরের নিচে শিশুদের ভারী শ্রমে নিয়োগ দেওয়া বেআইনী। এব্যাপারে সরকারের কোন মনিটরিংই নেই। শিশুদের নিয়ে যারা কাজ করছেন সেই সব সংগঠনেরও এমন কোন কর্মসূচী নেই যে তারা শিশুদের এইসব ঝুঁকিপূর্ণ কাজ থেকে পরিত্রাণ দিয়ে তাদের সহনীয় কোন কাজ দেবে। এই অসহ্য অমানবিক কাজ থেকে শিশুদের রক্ষা করার জন্য আমরা কি কিছু করতে পারি?তারা যদি কাজই ছেড়ে দেবে তাহলে খাবে কি? বাবা-মা-ই বা কি খাবে?

১. আমরা অন্তত আমাদের বাড়িতে বা আমাদের কারখানায় কাজ করা শিশুটিকে হালকা শ্রমের কাজে নিয়োগ দিতে পারি।
২. বিষাক্ত কারখানা থেকে শিশুদের সরিয়ে এনে আমরা অফিসের টুকটাক কাজে লাগাতে পারি।
৩. আমার শিশুটির হাত ধরে তাকে যখন স্কুলে পৌঁছে দিচ্ছি, তখন যেন একটিবারের জন্যও এই হতভাগা শিশুদের কথা ভাবি। কারণ মানুষই সমাজ নির্মাণ করে। আপনার-আমার শিশুটির সাথে যেন ওরাও বেড়ে উঠতে পারে। আর সেই আরাধ্য দায়িত্ব কি আমাদের উপরই বর্তায় না ?

মনজুরাউল

আমাদের মাতৃগর্ভগুলি এই নষ্ট দেশে চারদিকের নিষেধ আর কাঁটাতারের ভিতর তবু প্রতিদিন রক্তের সমুদ্রে সাঁতার জানা হাজার শিশুর জন্ম দেয় যারা মানুষ......

৯ comments

  1. মনজুরাউল - ২৮ জুন ২০০৯ (৬:৪৮ অপরাহ্ণ)

    দায়ঃ এই লেখাটি ১৬ জুন দৈনিক ভোরের কাগজ-এ আমার নিয়মিত কলামে ছাপা হয়েছিল। জনগুরুত্ব বিবেচনায় এখানে পোস্ট করা হ’ল।

    • মুক্তাঙ্গন - ২৯ জুন ২০০৯ (১২:৪৯ অপরাহ্ণ)

      উল্লেখ করার জন্য ধন্যবাদ। দুই দুনিয়ায় অমূল্য শৈশবের এই উৎকট পার্থক্য যদি জনগুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত না হয়, তাহলে গুরুত্বের সংজ্ঞাই হয়তো পাল্টে দিতে হবে। এখান থেকে অর্থবহ আলোচনার সূত্রপাত হবে, সেটা আশা করা যায় হয়তো। ‘‍কি হচ্ছে বাস্তবে’ তার চাইতেও হয়তো এখন বেশী জরুরী হল ‘কেন হচ্ছে’ – সেই প্রশ্ন। এবং, ‘কিভাবে এর থেকে বাস্তবসম্মত উত্তরণ সম্ভব’, এমনকি আংশিকভাবে হলেও।
      লেখককে ধন্যবাদ।

      • মনজুরাউল - ৩০ জুন ২০০৯ (৫:২৯ অপরাহ্ণ)

        “‘‍কি হচ্ছে বাস্তবে’ তার চাইতেও হয়তো এখন বেশী জরুরী হল ‘কেন হচ্ছে’ – সেই প্রশ্ন। এবং, ‘কিভাবে এর থেকে বাস্তবসম্মত উত্তরণ সম্ভব’, এমনকি আংশিকভাবে হলেও।”

        এই কথাটিকে ভিত্তি করেই সুস্থ আলোচনা শুরু হতে পারে। এখন এটাই জরুরী। ধন্যবাদ মুক্তাঙ্গন।

  2. সাইদুল ইসলাম - ১ জুলাই ২০০৯ (৬:৩২ পূর্বাহ্ণ)

    ভয়ানক! এ শিশু‍দের আলোর পথে, স্বাভাবিক জীবনের পথে, আমরা কি দেখতে পাবো না? রাষ্ট্র কি কোনো দায় নেবে না?
    আর এদিকে এইসব লোক-দেখানো বাণিজ্যিক দিন বদলের শপথ!
    ধন্যবাদ মনজুরাউলকে।

  3. রায়হান রশিদ - ১৩ আগস্ট ২০০৯ (১১:৪৭ অপরাহ্ণ)

    ১৯৮৯ সালের জাতিসংঘের শিশু অধিকার কনভেনশনটা আজ আবার পড়লাম। পড়তে পড়তে বিশ্ব বিবেকের (!) তৈরী করে দেয়া মানদন্ডের সাথে ভূমি বাস্তবতার বিস্তর ফারাকটাই জ্বলজ্বলে হয়ে উঠছিলো। বাংলাদেশ সরকারও এই আন্তর্জাতিক চুক্তিটির একটি পক্ষরাষ্ট্র (স্বাক্ষর: ২৬ জানুয়ারী ১৯৯০; অনুমোদন: ৩ আগস্ট ১৯৯০)। এর অর্থ চুক্তিটি এখন কিন্তু কেবল কিছু ‘সুন্দর’ নীতিমালার পর্যায়ে নেই। বাংলাদেশ সরকারের জন্য এটি এখন একটি আইনগত বাধ্যবাধকতা যার জন্য সরকারকে নিয়মিতভাবে জবাবদিহি করতে হয়। এর অর্থ এ দেশের প্রতিটি শিশুর জন্য বলবত অলঙ্ঘনীয় অধিকার, যা ছিনিয়ে নেয়ার ক্ষমতা কারো হাতেই নেই। শুধু তা-ই নয়, এর অর্থ, দেশের প্রতিটি শিশু যেন এই অধিকারগুলো সুষ্ঠভাবে পায় এবং পেয়ে পূর্ণভাবে বিকশিত হতে পারে, তা নিশ্চিত করার আইনগত দায়িত্ব সরকারের।
    যাকগে। এ পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকার তার শিশু অধিকার নিশ্চিতকল্পে দায়িত্বপালনের ফিরিস্তি দিয়ে সর্বমোট চারবার পর্যায়ক্রমিক প্রতিবেদন পেশ করেছে জাতিসংঘের জেনেভাস্থিত শিশু অধিকার রক্ষা কমিটির কাছে। শেষ দুটো করলো এ বছরের জুন মাসে। এই প্রতিবেদনগুলো একটু খুঁটিয়ে পড়ে সেগুলোর সুনির্দিষ্ট সমালোচনা করাটা খুব জরুরী। পাশাপাশি, মূলধারার আলোচনায় এই সুনির্দিষ্ট বিষয়গুলোও তুলে ধরা দরকার।

    বাংলাদেশ সরকারের পেশকৃত পর্যায়ক্রমিক প্রতিবেদনগুলো এখানে:
    – প্রাথমিক প্রতিবেদন (১৯৯৫),
    – দ্বিতীয় পর্যায়ক্রমিক প্রতিবেদন (২০০১),
    – তৃতীয় এবং চতুর্থ পর্যায়ক্রমিক প্রতিবেদন (২০০৯)।

    সরকারী প্রতিবেদনের বিপরীতে বেসরকারী সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকেও বিকল্প প্রতিবেদন পেশ করা হয়েছে। সেগুলো হল:
    ইচ্ছে মিডিয়া গ্রুপ এবং শিশু ব্রিগেড
    শিশু অধিকার ফোরাম
    এডোলেসেন্ট ডেভেলাপমেন্ট ফাউন্ডেশন (এডিএফ)
    চাইল্ড হেল্পলাইন ইন্টারন্যাশনাল
    সেভ দ্য চিল্ড্রেন
    মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন

    এই দু’ধরণের প্রতিবেদন পাশাপাশি রেখে মিলিয়ে পড়লে অনেকগুলো বিষয়ই হয়তো আমাদের কাছে আরও পরিষ্কার হবে। সেইসাথে, প্রতিবেদনগুলো যখন পেশ করা হয়েছিল, যদি তখনকার ক্ষমতাসীন সরকারগুলোর নির্বাচনী ওয়াদাগুলোরও একটা তুলনামূলক চিত্র দাঁড় করানো যায়, তাহলে মন্দ হয় না।

    • ইনসিডেন্টাল ব্লগার - ২৩ আগস্ট ২০০৯ (১০:০৪ অপরাহ্ণ)

      যে সমাজে প্রাপ্ত বয়স্কদেরই অধিকারের কোনো নিশ্চয়তা নেই, সেখানে শিশুদের শৈশবের অধিকার তো অনেক দূরের কথা। আর আমরা তথাকথিত “প্রাপ্ত বয়স্করা” নিজেদের জীবনের আর দশটা টানাপোড়েনেই এতো ব্যস্ত থাকি, শিশুদের কথা ভাববার সময় কই? ভাবার সময় কোথায় যে পূ্র্ণবয়স্কদের মতো ওদেরও আছে বোধ, অনুভূতি, মতামত, স্বপ্ন! এমনকি শিশুরাও বিশ্বকে এবং আমাদের মত বড়দেরকে প্রতিনিয়ত লক্ষ্য করছে, বিচার করছে, আর শিখছে। শিখছে প্রাপ্ত বয়স্ক হয়ে ওঠার নিয়মাবলী মূল্যবোধ, আমাদেরই কাছ থেকে। এই হল ভবিষ্যত প্রজন্ম। ওরা আসছে, ওরা এখানে, ওরা এসে গেছে। চুরি হয়ে যাওয়া শৈশব, বঞ্চনার শৈশব – এসব নিয়ে কথা বার্তা তো কম হোলো না। সকলেই বলছে। কেউ কেউ তো আবার এনজিও ফেঁদেও বসে আছে। এখন মনে হয় হৃদয় কচলানো আবেগের প্রকাশের চেয়েও বেশী দরকার সত্যিকারের কাজের। টিভি টকশোতে শিশুদের হারানো শৈশব নিয়ে কাঁপা গলায় সেনসেশেনাল বিবৃতি দিয়ে নিজে কেঁদে আর দেশবাসীকে চোখের জলে ভাসিয়ে কোন লাভ হবে না। তাতে কোনো দিন কি কিছু অর্জিত হয়েছে? হয়নি। একারণেই এ্যাকটিভিজমের ধরণগুলো পাল্টানো দরকার। দায়সারা বক্তব্য বিবৃতি আলোচনা না, দায় নিয়ে বিষয়ের গভীরে প্রবেশ। তাতে যদি কিছু লাভ হয়। সমস্যা বাস্তব, সমস্যা সিরিয়াস। একে যদি খেলার সাথে তুলনা করি, তাহলে বলতে হয় এখানে স্টেক অনেক উঁচু। কারণ, নতুন প্রজন্মের সাথে জিম্মি হয়ে আছে জাতির ভবিষ্যত, পৃথিবীরও। তাই এতে জিততে হলে যারা নিজেদের সচেতন এ্যাকটিভিস্ট বলে দাবী করেন, তাদের কাজের ধরণ পড়াশোনার ধরণ ইনফরমেশনের ধরণ নতুক করে মূ্ল্যায়ন করতে হবে। এবং সে অনুযায়ী সাজাতে হবে কর্মপন্থা, কতটুকু কি আসলে অর্জন সম্ভব, সে সবের সাফল্যের মাপকাঠি আগেই পূঙ্খানুপুঙ্খ নির্ধারণ করে নিয়ে।‍‍‍ উপরের মন্তব্যে দেয়া প্রতিবেদনের লিন্কগুলো সে অভিমুখে যাত্রায় হয়তো কিছুটা সহায়ক হবে। বাকিটা আমাদের ওপর নির্ভর করবে। ঠিক কতটা নিবিড়ভাবে বা কি মাত্রায় শিশুদের শৈশব ফিরিয়ে দেয়ার এ কর্মযজ্ঞে সংশ্লিষ্ট হতে প্রস্তুত আছি আমরা তার ওপর। সবাইকে ধন্যবাদ। আজ সকালে কাছাকাছি বিষয়ে আবু নাঈম মাহতাব এর লেখাটাও পড়লাম। ভাল লেগেছে।

    • মনজুরাউল - ৪ সেপ্টেম্বর ২০০৯ (১:৪২ পূর্বাহ্ণ)

      আপনার এই গুরুত্বপূর্ণ লিংকগুলো থেকে আর একটি লেখা দাঁড় করানো যেতে পারে। আমার হাতে এখন সময় কম থাকায় কাজটা এখনই হাতে নিতে পারছিনা। আশা করছি খুব শিগগির কাজটা শুরু করতে পারব।

      আবারও আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

  4. অবিশ্রুত - ৬ সেপ্টেম্বর ২০০৯ (২:৫১ পূর্বাহ্ণ)

    বাংলাদেশের শিশু আইন ১৯৭৪কে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক শিশু অধিকার সনদ ও জাতীয় শিশু নীতির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সংশোধন ও পরিমার্জনের নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। এ ব্যাপারে বিস্তারিত খবরটি পাবেন এই লিংকে

    • মনজুরাউল - ৬ সেপ্টেম্বর ২০০৯ (২:৫৯ পূর্বাহ্ণ)

      ধন্যবাদ অবিশ্রুত।এই লেখাটা কম্পাইল করে আরো একটি লেখা দেওয়া জরুরী। আপনার দেওয়া লিংকটা সেই কাজে অনেক সাহায্য করবে।

Have your say

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.