টানা দুই বছরের তত্ত্বাবধায়ক কাম সেনা শাসন, সেই শাসনে মানুষের আহাজারি, দ্রব্যমূল্য নিয়ে মানুষের খাবি খাওয়া, এর থেকে পরিত্রাণের জন্য মানুষের আকুল আগ্রহে বসে থাকার ভেতর খুবই নিরবে এদেশের মানুষের সামনে আর একটি ভয়াবহ বিপদ উপস্থিত হয়েছে। দুই বছরের জাতাকলে পিষ্টোনো মানুষ একটা বহুল কাঙ্খিত নির্বাচনে সদ্য ভোট দিয়ে তাদের পছন্দের সরকার নির্বাচিত করে সবে একটু থিতু হয়েছে। সবে তারা দ্যব্যমূল্যের অসহনীয় দশা থেকে বাঁচার জন্য উন্মূখ হয়ে আছে, ঠিক তখনই এই দুঃসংবাদটি তাদের শুনতে হলো। পাট চাষীরা এই সংবাদ শুনে মাথায় হাত দিয়ে বসেছেন। স্থানীয় বাজারে পাটের ক্রয় মূল্য নেমে ১১শ থেকে ১ হাজার হয়ে গেছে! যা কিছুদিন আগেও ছিল ১৪শ বা ১৫শ এর মত। যে পাট চাষীরা আগেই টাকা নিয়ে খেয়ে ফেলেছেন তাদের এখন হিসেবের বাইরে অতিরিক্ত পাট আড়ৎদার কে বুঝে দিতে হবে। আর যারা সকল প্রকার চাষাবাষের খরচপাতি হিসেব করে সেই মত পাটের স্টক করেছিলেন তাদের তো মাথায় হাত।
কিছুদিন ধরেই আন্তর্জাতিক বাজারে পাটের দাম কমে আসছিল। এবার পাটের প্রধান তিন ক্রেতা,চীন,ভারত আর পাকিস্তানও পাট কেনা অর্ধেকে নামিয়ে এনেছে। এর কারণ তেমন কিছুই না, তাদের চাহিদা কমে গেছে। অর্থাৎ তারা নিশ্চই বিকল্প কিছু একটার সন্ধান পেয়েছে। এর বিপরীতে আমাদের পাট নিয়ে কায়কারবার করা সংস্থার ‘শ্বেতহস্তিদের কথা বার্তা শুনলে মনেই হবে না যে পাট নিয়ে আমরা যতটা না ভাবি তার চে অনেক বেশী ভাবে এর ব্যবহারকারীরা। আমাদের এই কর্তারা যখন চোঙার সামনে কথা বলবেন তখন মনেই হবে না যে পাটের বাজারের কোন তারতম্য হয়েছে বা হচ্ছে! তারা এটা বলতে বলতে মুখে ফেনা তুলে ফেলেছেন যে পাটের বহুমুখি ব্যবহার বাড়াতে হবে, পাটের অভ্যন্তরীণ বাজারের চাহিদা বাড়াতে হবে, পাটচাষীদের নায্যমূল্য দিতে হবে…..। পাট নিয়ে আমাদের রাজনীতিক আর নীতিনির্ধারকদের যে কি পরিমানে দরদ তার উৎকৃষ্ট প্রমাণ হলো আমাদের সবচেয়ে বড় পাটকলটি বন্ধ করার পর আমাদের রাজনীতিকরা,তৎকালিন বিএনপি-জামাত সরকারের মন্ত্রিরা, আমলারা খুশিতে মিষ্টিমুখ করেন! কারণ আদমজী নামক সেই পাটকলটি নাকি বছরের পর বিপুল পরিমানে লোকাসান গুনছিল! সেই লোকসান থেকে তারা জাতিকে পরিত্রাণ দিয়েছেন! তারা তো মিষ্টিমুখ করবেনই! পাট এবং বাংলাদেশের অন্যান্য কৃষিপণ্য নিয়ে বিশ্বব্যাংক,এইএমএফ,এডিবি সংস্থাগুলোর যে প্রেসক্রিপশন ছিল তার কোনটিই এদেশের জন্য উপযোগী ছিল না। তার পরও আমাদের সেসব মানতে হয়েছে। গিলতে হয়েছে। এখন যখন আমাদের যেটুকু পাট উৎপন্ন হতো সেটুকুরই বাজার শেষ, তখন বিশ্বব্যাংকঅলারা কোন নতুন প্রেসক্রিপশন দিচ্ছেন না। দেবেন না, কারণ আর কোন প্রেসক্রিপশর নেই। আমাদের দেশে আগেও যে পরিমানে পাট ব্যবহার হতো, এখনো সেই পরিমানেই পাট ব্যবহারের চল গড়ে ওঠেনি। আগে সাত কোটির বাংলাদেশ যে পরিমান পাট ব্যবহার করত এখর তার দ্বিগুণ লোকসংখ্যা হয়েও সেই আগের অনুপাতে পাটের ব্যবহার। তার মানে এখানেও পাটের বিকল্প তৈরি হয়েছে। তাহলে বাকি থাকছে রপ্তানী। আমাদের পাটের মূল আবাদটাই হতো বা হয় রপ্তানীর উদ্দেশ্যে। কিন্তু যারা কিনবেন তারা যদি আর না কেনেন, তাহলে কি করতে হবে, তেমন কোন বিকল্পও আমাদের কর্তাদের মগজে নেই।
পাটের আন্তর্জাতিক বাজার নিয়ে এই দুঃসংবাদটি ছাপা হয়েছে দৈনিক সংবাদ এ, ১০ জানুয়ারী ২০০৯ এ। আর কোন জাতীয় দৈনিকে খবরটি আসেনি। সংবাদ লিখছে, ভারত, চীন, পাকিস্তান থাইল্যান্ড, ইতালি, জার্মানি, ভিয়েতনামে যে পরিমান পাট রপ্তানী হয়েছে বা প্রতিবছর হয়, তার ৮৮ ভাগই রপ্তানী হয় চীন,ভারত আর পাকিস্তানে। চীনের যে আমদানী সেটার ক্রেতা ইউরোপীয় দেশগুলি ক্রমান্বয়ে পাটজাত দ্রব্যের আমদানী কমিয়ে দেওয়ায় চীনও তার চাহিদার তুলনায় আমদানী করেনি। তাছাড়া চীনের এই রপ্তানী বাধাগ্রস্থ হওয়ায় তাদের ৩৬ শতাংশ পাটকল বন্ধ করে দিতে হয়েছে। ভারতে লাগাতার পাটকলে ধর্মঘটও পাট রপ্তানী কমে যাওয়ার কারণ। সব কিছু মিলিয়ে দেখা যাচ্ছে, বিশ্বে যখনই আমদানী-রপ্তানীতে বড় ধরণের কোন দুর্ঘটনা বা বাধা সৃষ্টি হয় তখনই আমাদের উৎপাদিত পণ্য মার খায়, আবার আমরা যা আমদানী করি তা চড়াদামে কিনতে হয়। এটা যেন নিয়মে দাঁড়িয়ে গেছে! যেহেতু এবার সারা বিশ্ব জুড়ে অর্থনৈতিক মন্দা চলছে, তাই গোটা ইউরোপে আমাদের বা আমাদের কাছ থেকে কিনে যারা রপ্তানী করেন তাদের ভরাডুবি হয়েছে।
আমি একবার শিলিগুড়ি যাওয়ার সময় পথের দুধারে দেখেছিলাম মাইলের পর মাইলে পাট চাষ হয়েছে। জিজ্ঞাসা করে যানা গেল ওরা এখানে কয়েক বছর আগেও পাটের বদলে ধান চাষ করত। তাহলে এখন কেন তারা পাট চাষে ব্রতি হলেন? এই প্রশ্নটাই আমাদের কর্তাব্যক্তিরা মগজে ঠাঁই দিতে নারাজ। তারা বুঝেছে যে, আদমজী বন্ধ হওয়ার পর পরই বাংলাদেশে আরো কিছু গুত্বপূর্ণ পাটকল বন্ধ হয়ে গেছে এবং বন্ধ হওয়ার সারিতে আরো কল দাঁড়িয়ে আছে। তাহলে বাংলাদেশে যে কাঁচা পাট উৎপাদন হবে সেগুলো যদি যথাযথভাবে আন্তর্জাতিক বাজাারে ঢুকতে না পারে তাহলে কোথায় যাবে? খুব সহজ উত্তর, সেই কাঁচা পাট বৈধ বা অবৈধ উপায়ে ভারতের বাজারে আসবে। ভারত সেই পাট ব্যবহারের পাশাপাশি আরো ব্যবহার বাড়ানোর জন্য নিজেরাই নতুন নতুন পাটকল বসিয়েছে! তাহলে কি দাঁড়াচ্ছে ব্যাপারটা? বাংলাদেশ তাদের পাটকল বন্ধ করে দিচ্ছে, আর ভারত নতুন করে পাটকল স্থাপন করছে! আমাদের মোটামাথার আমলা আর এইসকল দপ্তরের অধিকর্তাদের কানে পানি ঢোকানোর আর কোন উপায় খোলা আছে বলে আমার মনে হয় না। কারণ তারা সরকারি পয়সায় বেশুমার মচ্ছব করার জন্য আগেই নিজেদের চুলজ্জা,চোখের মাথা, কানের মাথা খেয়ে বসে আছেন!
এটাতো গেল বিশ্ববাজারের কথা। তাহলে আমাদের যে কৃষকরা চড়াদামে সার বীজ,কীটনাশক কিনে পাট চাষ করে উৎপাদন ব্যয়ও তুলতে পারবেন না তাদের কি হবে? পাট অধিদপ্তর কেবল ব্যাংকসুদ কমানো বা স্টক করে রাখার কথা বলেই খালাস।
সরকারের হাতেও এখন আর সময় নেই। সরকার তাদের কাজটাজ গুছিয়ে সময় করতে করতে পাটের যে কি দশা হবে সেটি বোধকরি সরকারে এখন যারা সদ্য দায়িত্ব নিলেন তারা ঠাওরে আনছেন না। আমরা আশা করতে পারি সরকার অনতিবিলম্বে এই গুরুতর বিষয়টিকে আমলে নেবেন,এবং পাটচাষীদের এই বিপর্যয় থেকে রা করবেন।শুধু ব্যাংক ঋণ মওকুফ করে যে পাটচাষীদের বাঁচানো যাবে না সেটা আমরা যেমন বুঝতে পারছি ঠিক সেভাবেই বুঝতে পারা উচিৎ কর্তাদের। আশা করব তারা কৃষকের কষ্টগুলো বুঝবেন। যদিও এধরণের আশার কোন ভিত্তি এদেশে কোন কালেই ছিল না, এখনো নেই। তবুও আমরা উপায়হীন আশা করা ছাড়া আর কি-ই বা করতে পারি!
মনজুরাউল
আমাদের মাতৃগর্ভগুলি এই নষ্ট দেশে চারদিকের নিষেধ আর কাঁটাতারের ভিতর তবু প্রতিদিন রক্তের সমুদ্রে সাঁতার জানা হাজার শিশুর জন্ম দেয় যারা মানুষ......
Have your say
You must be logged in to post a comment.
১২ comments
badal - ২৯ জানুয়ারি ২০০৯ (৮:২৭ অপরাহ্ণ)
ভাল লিখেছেন
Vib - ৩০ জানুয়ারি ২০০৯ (৮:১১ পূর্বাহ্ণ)
মনজুরাউল সাহেবকে সাধুবাদ জানাই মাটির কাছাকাছি মানুষদের বিষয়ে কিছু লেখার জন্য । তার লেখা থেকে ভারতের পাটশিল্পের বিষয়ে আমরা বিস্ময়কর কিছু তথ্য জানতে পারলামঃ বাংলাদেশ যেখানে পাটকল বন্ধ করে দিচ্ছে ভারত সেখানে পাটকল স্থাপন করছে,পাশাপাশি বাংলাদেশ থেকেও ভারত পাট যাচ্ছে!
মনজুরাউল সাহেব যদি ভারত কি কি কৌশলে এবং কোন কোন ক্ষেত্রে পাটের আভ্যন্তরীন ব্যবহার বাড়িয়েছে এবং বাংলাদেশেও কি কি উপায়ে পাটের ব্যবহার বাড়ানো যায়, এসব বিষয়ে তথ্য জানান, বাংলাদেশের মানুষ পাট সম্পর্কে ধীরে ধীরে সচেতন হতে থাকবে বলে আমরা আশা করতে পারি।
বাংলাদেশের মানুষ ভুলে যাচ্ছে একটা সময় সবাইকেই স্কুলজীবনে বাংলা ২য় পত্র এবং ইংরেজী ২য় পত্র, এ ২টি বিষয়েই পাট বিষয়ে রচনা লিখতে হয়েছে যেখানে ১ম বাক্যটি ছিলঃ পাটকে বাংলাদেশের সোনালি আঁশ বলা হয়।
Pingback: Global Voices Online » Bangladesh: The Future Of Jute In Peril?
মনজুরাউল - ৩ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ (১০:০০ অপরাহ্ণ)
আমি একটা বিশেষ কাজ নিয়ে ক’দিন একটু ব্যস্ত আছি। ওটা একজনকে বাঁচানোর জন্য সাহায্য পোস্ট। আশা করছি, এই পাট বিষয়ে আরো আলোচনা করা যাবে।
নীড় সন্ধানী - ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ (৯:১৯ পূর্বাহ্ণ)
কয়েক বছর আগে একটা ইউরোপীয়ান কোম্পানী বাংলাদেশ থেকে পাটজাত পন্য আমদানীতে আগ্রহ দেখায়। তাৎক্ষনিক ভাবে কিছু তথ্য জানতে চাওয়াতে রপ্তানীকারক হিসেবে আমি খোঁজ নেয়া শুরু করি। পাট বানিজ্য সম্পর্কে আমার তেমন জানাশোনা নাই। তাই উপায় না দেখে গুগল সার্চ দিলাম। ওখানে পাট নিয়ে যত ওয়েব সাইট পেলাম সব ভারতীয়। বাংলাদেশের কোন নাম নিশানা নেই পাট সম্পর্কিত অনুসন্ধান তালিকায়। আশ্চর্য না? একমাত্র বিজেএমসি ছাড়া আর কোথাও কোন তথ্য পাওয়া যায় না পাট সম্পর্কে। পাট নিয়ে যত তথ্যাবলী সব কিছু হলো কাঁচামাল। পাটজাত পন্যের কোন এমন কোন কোম্পানী পাইনি যেখান থেকে পাটের তৈরী পন্য ক্রয় করে রপ্তানী করতে পারি। আমার পাটজাত পন্যের বানিজ্য প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলো।
অর্থাৎ আমরা বছর বছর পাট রপ্তানী করেছি ঠিকই, কিন্তু পাটের উন্নয়নে বৃটিশদের রেখে যাওয়া প্রযুক্তির বাইরে কিছু করতে পারিনি। করার চেষ্টা ছিল কিনা সেটাও প্রশ্নের সম্মূখীন। বিশ্বের পাট উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান এক নম্বরে ছিল বরাবর। অথচ বিগত কয়েক বছরে ভারত বাংলাদেশের জায়গা দখল করেছে। ২০০৮ সালে বাংলাদেশ পাট উৎপাদন করেছে ৮ লাখ টন, আর ভারত করেছে ২১ লাখ টন।
জাতিসংঘ ২০০৯ সালকে International Year of Natural Fibres ঘোষনা করেছে। পাট অন্যতম একটি Natural Fibre। বাংলাদেশে পাট মন্ত্রনালয়ের কী কোন ভুমিকা আছে? পাট মন্ত্রনালয়ের যে ওয়েবসাইট আছে তা অপ্রবেশ্য। পাট গবেষনা কেন্দ্রের ওয়েবসাইটেরও একই অবস্থা।
পাট মন্ত্রনালয়ের ওয়েবসাইট http://www.motj.gov.bd/jute/index.html
পাট গবেষনা কেন্দ্র http://www.bangladesh.gov.bd/bjri/
পাট নিয়ে দুটি ভবিষ্যতবানীঃ
১) পাট খুব শীঘ্রই ইতিহাস হয়ে যাবে
২) আমরা পাটজাত পন্য আমদানী শুরু করবো
মোঃ ওয়াজেদ আলী - ৪ এপ্রিল ২০১১ (১২:৩৩ অপরাহ্ণ)
আপনি কী জুটের জুটের ডাইভারসিফাইড প্রোডাক্ট অর্থাৎ জুট শপিং ব্যাগ, লেডিস ব্যাগ, স্কুল ব্যাগ, ল্যাপটপ ব্যাগ ,লাঞ্চক্যারী ব্যাগ, পানির বতল ক্যারী ব্যাগ, কবি ব্যাগ ইতাদি রপ্তানি করতে চান ? না কি RAW jute (কাঁচা পাট)অথবা পাটের বস্তা রপ্তাণী করতে চান ? তাহলে আমি আপনাকে সাহাহ্য করতে পারি।
আশরাফ - ৪ এপ্রিল ২০১১ (১:১২ অপরাহ্ণ)
বহুমূখী পাটপণ্যে সন্ধান দেওয়ার জ্ন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
নীড় সন্ধানী - ৪ এপ্রিল ২০১১ (৩:৪২ অপরাহ্ণ)
আমি পাটের ডাইভারসিফাইড প্রোডাক্ট শপিং ব্যাগ, লেডিস ব্যাগ, স্কুল ব্যাগ, ল্যাপটপ ব্যাগ, এরকম জিনিস রপ্তানীর চেষ্টা করেছিলাম। আপনার কাছে কোন সুত্র থাকলে যোগাযোগের উপায় বলতে পারেন। অথবা মেইল করুন uniresources@gmail.com
মোঃ বাবু - ৪ এপ্রিল ২০১১ (১:০৩ অপরাহ্ণ)
নীড় সন্ধানী গত ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০০৯, সোমবার সময়: ৯:১৯ পূর্বাহ্ণ লিখেছেন তিনি কয়েক বছর আগে একটা ইউরোপীয়ান কোম্পানী বাংলাদেশ থেকে পাটজাত পন্য আমদানীতে আগ্রহ দেখায়। কিন্ত পাট পণ্য অথবা পাট বানিজ্য সস্মন্ধে জ্ঞান না থাকায় তিনি উক্ত বানিজ্য শুরু করতে পারেন নি। তিনি ব্যাবসা শুরু করতে পারলে হয়তো ব্যক্তিগত ভাবে লাভবান হতেন এবং দেশে আসতো বৈদেশিক মূদ্রা। কিন্তু বহুদিন পর হলেও আমি যখন ওনার প্রতিবেদন দেখলাম আমার মনে হলো ওনাকে সাহায্য করা উচিৎ।তাই আপনাকে প্রশ্ন দু-একটি প্রশ্ন করলাম ঃ-
আপনি কী জুটের জুটের ডাইভারসিফাইড প্রোডাক্ট অর্থাৎ জুট শপিং ব্যাগ, লেডিস ব্যাগ, স্কুল ব্যাগ, ল্যাপটপ ব্যাগ ,লাঞ্চক্যারী ব্যাগ, পানির বতল ক্যারী ব্যাগ, কবি ব্যাগ ইতাদি রপ্তানি করতে চান ? না কি RAW jute (কাঁচা পাট)অথবা পাটের বস্তা রপ্তাণী করতে চান ? তাহলে আমি আপনাকে সাহাহ্য করতে
ইনসিডেন্টাল ব্লগার - ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ (১:৫৮ পূর্বাহ্ণ)
@ মনজুরাউল
সময়োপযোগী আলোচনা। অনেক অজানা তথ্য জানা গেল। আপনি লিখেছেন:
কী অদ্ভুত! একদিকে সারা বিশ্বে পরিবেশ নিয়ে যেমন মাতামাতি, তাতে সাধারণ বিচারে মনে হবে, পরিবেশ বান্ধব পাটের চাহিদা আরও বহুগুণ বেড়ে যাওয়ার কথা। অথচ হয়েছে তার ঠিক উল্টোটা। জানতে ইচ্ছে করে পাটের এই বিকল্প বস্তুটি ঠিক কী?
রফতানির কথা যদি বাদও দিই, শুধুমাত্র যদি সহায়ক নীতি থাকতো, তাহলে দেশের ভেতর পাটজাত পণ্য জোগান দিতেই হিমশিম খাওয়ার কথা ছিল আমাদের কলগুলোর। ধরুন, আজ যদি দেশের সর্বত্র পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ করে দেয়া হয় (কেউ কি জানাবেন দেশের ঠিক কোন্ কোন্ শহরে বর্তমানে পলিথিন নিষিদ্ধ? নিষিদ্ধকারী এই আইনটি কি আসলে মানা হয়?); কিংবা ধরুন, যদি তৈরী-পোশাক শিল্পের জন্য কাপড় উৎপাদন দেশের ভেতরই পর্যাপ্তভাবে বাড়ানোর মতো তেমন পরিপূরক শিল্পনীতি থাকতো!
এসব দেখলে ঠিক বুঝতে পারি না আমাদের নীতি-নির্ধারকরা যেসব কাণ্ড করে বেড়ান তা কি কেবল মেধার অভাবের প্রতিফলন, নাকি সততারও? নাকি দুটোর মিশ্রণে তৈরি কোনো আত্মধ্বংসী ককটেল গিলে তারা মাঠে নামেন?
আদমজী নিয়ে যা হয়েছে, অন্য কোনো দেশ হলে তা নিয়ে শ্বেতপত্র বের করতে হত সরকারকে। আমরা যারা জনগণ, তারা আজও জানি না ঠিক কী কারণে কোন্ পরিস্থিতিতে আদমজীর এই পরিণতি হয়েছে। সরকার জনগণের সামনে কোনো ধরণের comprehensive ডেটা বা উপাত্ত দেয়ার প্রয়োজন মনে করেনি। সেসব উপাত্ত ছাড়া আমরা কীভাবে জানবো ঠিক কী কী বিকল্প খোলা ছিল সামনে? আমাদের জানার কোনো উপায় নেই। ‘তথ্য অধিকার’ নামে নাকি একটি আইনের অনুমোদন দিচ্ছে বর্তমান সরকার। দেখা যাক, তাতে আমাদের জানবার অধিকার কিছুটা হলেও বাড়ে কিনা!
পাট নিয়ে আমাদের কি কোনো জাতীয় নীতিমালা আছে বা ছিল? আপনার জানা আছে?
@ নীড় সন্ধানী
ধন্যবাদ। একেবারে মাঠের খবর তুলে ধরেছেন নিজের দৈনন্দিন অভিজ্ঞতা থেকে। ২০০৯ কে জাতিসংঘ যে Year of Natural Fibres ঘোষণা করেছে এটা জানা ছিল না। এ নিয়ে তো আমাদের দেশের ভেতরই একটা ছোটখাটো তোলপাড় হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। অন্তত তেমনটা হওয়াই প্রত্যাশিত ছিল। কারণ, এটি এমন দেশ যে-দেশের প্রতিটি স্কুল-পড়ুয়া শিশু ‘পাট’ রচনা মুখস্থ করতে করতে বেড়ে ওঠে। হায়রে সোনালি আঁশ! পাঠ্যবই কারা লেখে? কারা পরীক্ষাপত্রে ‘পাট’ নিয়ে রচনা লিখতে দেয়? আপনার এই মন্তব্য এবং মনজুরাউলের পোস্টটি সম্ভব হলে তাদের ধরে এনে পড়ানো দরকার। তাতে যদি এইসব প্রাতঃস্মরণীয় মানুষেরা ফুলেল ইউটোপীয় ‘পাট’ রচনার বাইরে নতুন কিছু লিখতে-পড়তে দেন এ প্রজন্মের শিশুদের। যেমন, “বাংলাদেশের পাট সংকট”, কিংবা “ফিরিয়ে দাও সোনালি আঁশ”, কিংবা “কীভাবে পাটের গুষ্টি উদ্ধার হলো বঙ্গদেশে” ইত্যাদি। [ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি, লিখতে লিখতে খুব রাগ চড়ে যাচ্ছে]।
পাট গবেষণা কেন্দ্রের ওয়েবসাইটের হাল তো সত্যিই করুণ। কোথায় “গবেষণা কেন্দ্র” থাকবে জ্ঞান, তথ্য ও প্রযুক্তিতে সব দিক থেকে এগিয়ে, তা না। ওয়েবসাইটটিই কিনা পা ভেঙে পড়ে আছে। আমার সন্দেহ আছে তাঁরা (গবেষক মহোদয়গণ) নিজেরাও জানেন কিনা যে তাঁদের ওয়েবসাইটটি এখন আর কাজ করে না! দেখবেন নাকি একটা ফোন করে?
এক বন্ধু একবার আপনার একটা পোস্টের লিংক পাঠিয়েছিল। কোথায় ছাপা হয়েছিল মনে নেই, তবে যতদূর মনে পড়ে তা ছিল পর্যটনের ওয়েবসাইট নিয়ে। লিংকটি খুঁজে পাচ্ছি না, তবে এটুকু মনে পড়ছে — লেখাটি পড়ে হাসবো না কাঁদবো বুঝতে পারছিলাম না। লিংকটি একটু দিয়ে দেবেন এখানে? ডিজিটাল বাংলাদেশের বেশ একটা ডিজিটাল কনট্রাস্ট দেখা যেত তাহলে।
নীড় সন্ধানী - ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ (৫:০৪ পূর্বাহ্ণ)
ঠিক ধরেছেন। ওটা ছিল পর্যটন কর্পোরেশানের ওয়েবসাইট। অপ্রয়োজনীয় সেই লজ্জাজনক ওয়েবসাইটটা এখনো জীবিত। কিন্তু প্রয়োজনীয় অনেক সরকারী ওয়েবসাইট মনোযোগের অভাবে মৃত। এরকম মৃত ওয়েবসাইটগুলোকে বাঁচিয়ে তোলার হাসপাতালের ঠিকানা জানা থাকলে মৃতদেহটা রেখে আসতে পারতাম। তবে তাতেও প্রযুক্তিবিমুখ কর্তাদের টনক নড়তো কি না সন্দেহ আছে।
প্রথমআলোব্লগের লিংকটা দিলাম।
http://prothom-aloblog.com/users/base/uniresources/4
মনজুরাউল - ৭ সেপ্টেম্বর ২০০৯ (১:৫১ পূর্বাহ্ণ)
পাট নিয়ে সরকারের ভেতর আবার নতুন খেলা শুরু হয়েছে। তারা একবার বলছেন “চাষীরা পাট চাষে নতুন করে উদ্যম পাচ্ছে” এই মর্মে কিছু ছবিটবিও সংবাদপত্রে ছাপা হয়েছে। আসলে কি সত্যিই এধরণের কিছু ঘটেছে দেশে?
এবিষয়ে সহব্লগারদের কারো কাছে তথ্য থাকলে এখানে শেয়ার করার অনুরোধ করছি।