গত ১৭ই মার্চ ছিল বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকায় নিশ্চয় দেশে ব্যাপক উৎসাহ নিয়ে এই জন্মদিন পালিত হয়েছে। কিছুদিন আগে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের ফাঁসি হয়ে যাবার পরে যারা মিষ্টি খেয়ে, আধাবেলা অফিস করে ছুটি কাটাতে চলে গিয়েছিলেন, তাঁরাও নিশ্চয় এই সু্যোগে আধাবেলা বা পুরো বেলা ছুটি নিয়েছেন। যেখানে সুযোগ পেয়েছেন, বঙ্গবন্ধুর গুণকীর্তন করে গলা ফাটিয়ে ফেলেছেন। যাই হোক, এই লেখা বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন নিয়ে নয়, সম্প্রতি পড়া বঙ্গবন্ধুর এক সাক্ষাৎকার নিয়ে।
এক বন্ধুর কল্যাণে ইতালিয়ান সাংবাদিক ওরিয়ানা ফালাচীর নেয়া বঙ্গবন্ধুর ‘সাক্ষাৎকারের’ বিবরণ দেখলাম। সাক্ষাৎকারটি নেয়া হয়েছিল ১৯৭২ সালের জানুয়ারি বা ফেব্রুয়ারিতে, ফালাচীর বর্ণনামতে ‘ঘৃণ্য নগরী’ ঢাকা শহরে (যেখানে সশস্ত্র মুক্তিবাহিনী ঘুরে বেড়াচ্ছে আর ইচ্ছামত লুটতরাজ করেছে, দৈনিক রাস্তাঘাটে অবাঙ্গালী হত্যা চলছে)। একটি সদ্য স্বাধীন দেশ সম্পর্কে একটিও ইতিবাচক কথা নেই। ফালাচী বঙ্গবন্ধু বিষয়ে টাইম পত্রিকায় যে সংশয় প্রকাশ করা হয়েছে তার উল্লেখ করেছেন। টাইম পত্রিকার অনলাইন আর্কাইভে রাখা সেই লেখা পড়ে সংশয়ের তেমন কিছুই দেখা গেল না। বরং দেখা গেল কিশোর বঙ্গবন্ধু ব্রিটিশ আমলের পুলিশের হাতে বন্দি হয়ে ছয়দিনের জেল খেটেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারীদের আন্দোলনে সাহায্য করতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চিরতরে বহিষ্কৃত হয়েছেন। বঙ্গবন্ধু ফালাচীর ‘কঠিন’ প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যান আর তাঁকে অফিস থেকে বের করে দেন। ফালাচী আরও বলেছেন যে মুক্তিবাহিনী তাঁকে হত্যার হুমকি দেয় এবং এক জার্মান পর্যটকের সহায়তায় তিনি বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে আসেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর এক ভাগনের উদ্ধৃতি দিয়ে জানান, বঙ্গবন্ধু একজন মাথামোটা ব্যক্তি যিনি ফাঁকতালে নেতা বনে গেছেন। সাক্ষাৎকারটি পড়ে বঙ্গবন্ধুকে মোটামুটি একজন গ্যাং লীডার ছাড়া আর কিছুই মনে হয়নি। তবে সেন্ট পিটার্সবার্গ টাইমসের অনলাইনে আর্কাইভে দেখা গেল (১৮ জানুয়ারি, ১৯৭২) বঙ্গবন্ধু সকল মুক্তিযোদ্ধাকে ১০ দিনের মধ্যে অস্ত্র জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
একজন পেশাদার সাংবাদিক এই জাতীয় মিথ্যাচার কেন করলেন সেটা বুঝতে পারছি না। মূল সাক্ষাৎকারটি কোথাও খুঁজে পাইনি। তবে এই সাক্ষাৎকারকে কেন্দ্র করে www.sheikhmujiburrahman.org বঙ্গবন্ধুর নামে মিথ্যা প্রচারণা চালানো হচ্ছে। জামায়াত নেতারাও আসন্ন যুদ্ধাপরাধ বিচারে ফালাচীর বইয়ের (Interview With History) উদ্ধৃতি দিবেন বলে শোনা যাচ্ছে। কিন্ত সেই একই সময়ে বিশ্ববিখ্যাত সাংবাদিক ডেভিড ফ্রস্টকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বঙ্গবন্ধুর বক্তব্য শুনে পোড় খাওয়া সাংবাদিক ফ্রস্ট নিজেও আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন এবং ‘জয় বাংলা’ বলে তাঁর সাক্ষাৎকার শেষ করেন। যুদ্ধাপরাধীদের ব্যাপারে একজন প্রাজ্ঞ রাজনীতিবিদের মতই বঙ্গবন্ধু বলেছেন “Trial, I have to give it to them.”
বঙ্গবন্ধুকে আসমান থেকে নেমে আসা কোন ফেরেশতা বলে প্রতিষ্ঠিত করা আমাদের কারোরই উদ্দেশ্য নয়। তবে ৪০-এর দশকে মুসলিম লীগে যুক্ত হয়ে একটি দীর্ঘ রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু তৈরি হয়েছেন। তিনি পাকিস্তান আন্দোলন করেছেন, ৪৬-এর দাঙ্গায় বহু মুসলমানের জীবন রক্ষা করেছেন। পাকিস্তান তৈরি হবার পরে পুর্ব বাংলার নাম পুর্ব পাকিস্তান করার প্রতিবাদ করছেন। ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। বাংলাদেশের আর্দ্র জলবায়ুতে চলচ্চিত্র তৈরি করা যাবে না এইসব ভুয়া থিয়োরী ছূঁড়ে ফেলে দিয়ে তিনি এফডিসি প্রতিষ্ঠায় কাজ করেছেন (এই তথ্য এফডিসি ওয়েবসাইটে নেই)। পাকিস্তানের ২৪ বছরের ইতিহাসে তিনি অসংখ্যবার জেল খেটেছেন। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার মত জটিল মামলার মোকাবেলা করেছেন। মামলায় প্যারোলে মুক্তির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে সরকারকে মামলা তুলে নিতে বাধ্য করেছেন। স্বাধীনতার পরে ভারতীয় বাহিনীকে অতি দ্রুত বিদায় করেছেন। বিহারীদের রক্ষা করার জন্য তাঁর সরকার দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। ১৯৭২ সালের বাংলাদেশ নিয়ে জাতিসংঘের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে
“…In this situation a new and untried government was faced with the task of converting a provincial administration into a national government, without benefit of any transitional or preparatory period. Most of the senior civil servants in East Pakistan had come from the West wing, and many of the most experienced Bangalee leaders and administrators had been lost or, like Sheikh Mujibur Rahman himself, were still detained in Pakistan. Government departments capable of administering the world’s eighth largest nation had to be created from the wreckage of a demoralized and discredited provincial administration that had been accustomed to defer decisions to Islamabad. Sheikh Mujibur and his colleagues succeeded in doing this. A workable administration was established. The pessimists were confounded and the disasters they had predicted were averted. The ten million refugees and the millions of displaced Bangalees were reabsorbed quickly and quietly. Law and order was by and large preserved. The threatened mass slaughter of minorities did not take place. Most important of all, the people were fed….”
এত বছর পরে এসে তাঁর সরকারের অনেক পদক্ষেপই ভুল মনে হতে পারে, কলকারখানার জাতীয়করণ, রক্ষীবাহিনী, বাকশাল গঠন সবই বিতর্কিত পদক্ষেপ। ৭৪-এর দুর্ভিক্ষে ফসল ভাল হবার পরেও কালোবাজারী এবং অন্যান্য কারণে ব্যাপক সংখ্যক লোক না খেয়ে মারা যায় (এই অন্যান্য কারণের একটা হল কিউবাতে পাট রপ্তানির অপরাধে মার্কিন সরকারের ২ মিলিয়ন টন খাদ্যশস্যের চালান আটকে দেয়া)। ‘৭২ থেকে ‘৭৫ -এ তাঁর সরকারের নেয়া পদক্ষেপগুলো বাংলাদেশকে ভালোর দিকে না খারাপের দিকে নিয়ে যাচ্ছিল সেই বিতর্ক আজকের যুগে অনেকটাই একাডেমিক বিষয়। বর্তমান বিশ্বের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ নিজস্ব পথে এগিয়ে যাবে। কিন্তু যেটি শুধু একাডেমিক বিষয় নয় সেটা হচ্ছে আমাদের প্রজন্মের মাঝে বঙ্গবন্ধুকে ঘিরে গড়ে উঠা কিছু কমন ধারণা। ধারনাগুলো হচ্ছে : ‘তিনি একজন মাঠ গরম করা উগ্র জাতীয়তাবাদী ছিলেন, স্বাধীন বাংলাদেশ কি করে শাসন করবেন বুঝতে পারছিলেন না, গ্রামের মোড়লের মত করে দেশ চালাচ্ছিলেন। “আমার কম্বল কই” “কোথায় আজ সিরাজ সিকদার” “লালঘোড়া দাবরাইয়া দিবো” এ জাতীয় কিছু কথা তিনি বলেছেন আর তাঁর সাগরেদ আর সন্তানেরা আজ মেজর ডালিমের স্ত্রীকে কিডন্যাপ, কাল ব্যাঙ্ক ডাকাতি এই করে বেড়াচ্ছিল। তাঁর মৃত্যুর পরে “স্বাধীনতার ঘোষক” জিয়াঊর রহমান খলিফা উমরের মত সততা নিয়ে, বহুদলীয় গণতন্ত্র চালু করে, নিজের হাতে খাল কেটে বাংলাদেশকে উদ্ধার করেন।’
আমার নিজের সিরিয়াস রাজনৈতিক পড়াশোনা মোটামুটি শুন্যের কোঠায়, পাড়ার আড্ডা আর দৈনিক পত্রিকা এই হচ্ছে আমার দৌড়। এই নিয়েই আমার রাজনৈতিক বিশ্ববীক্ষা গড়ে ঊঠেছে। এই অতি সিম্পলিফাইড বিশ্ববীক্ষা নিয়ে বঙ্গবন্ধু আর জিয়াউর রহমানকে নিয়ে যে কমন ধারণা আছে সেটার বেশি কিছু ধারণ করা সম্ভব ছিল না। তবে ইদানীং কিছু ‘চ্যাংড়া’ ব্লগার (যেমন অমি পিয়াল, হাসান মোরশেদ) কিছু বইপত্র পড়ে যেসব ব্লগ লিখছেন তাতে বোঝা যাচ্ছে যে আমার বিশ্ববীক্ষা অনেকাংশেই ভুল।
মেজর ডালিমের বইয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে অমি পিয়াল যা লিখেছেন তাতে দেখা যাচ্ছে কিডন্যাপের ব্যাপারটা পুরোটাই অন্য রকম। বঙ্গবন্ধু সিরাজ সিকদারকে হত্যা করে পরের দিন সংসদে “কোথায় আজ সিরাজ সিকদার” সদম্ভে এই ঘোষণা দেবার ব্যাপারটাও মিথ্যা। শেখ কামালের ব্যাঙ্ক ডাকাতির ব্যাপারটা আমি শুনেছিলাম একজন বাম নেতার কাছে। তাঁকে অবিশ্বাস করার কোন কারণই আমি খুঁজে পাইনি। দেখা যাচ্ছে সেই ব্যাপারটাও নেহাতই গুজব।
আমেরিকাতে আসার পরপর এখানকার টিভিতে নীল আর্মস্ট্রং এর চন্দ্রাভিযান বিষয়ে একটি ডকুমেন্টারি দেখি। ডকুমেন্টারির মুল বক্তব্য হল নীল আর্মস্ট্রং এবং তাঁর সঙ্গীরা চাঁদে যাননি। মার্কিন সরকার আমেরিকার কোন এক জায়গাতে চাঁদের সেট সাজিয়ে, ফিল্ম তুলে সেটাই টিভিতে চন্দ্রাভিযান হিসাবে চালিয়েছে। ডকুমেন্টারিটি দেখে আমার মাথা খারাপ হবার যোগাড়। এতদিন শুনলাম নীল আর্মস্ট্রং চাঁদে গেছেন, চাঁদে সূক্ষ্ম নীল দাগ দেখে পৃথিবীতে ফিরে তিনি মুসলিম হয়ে গেছেন। এই সবই মিথ্যা? শেষে আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বৃদ্ধ অধ্যাপককে এই ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, এ ব্যাপারটিকে বলে ‘কন্সপিরেসি থিয়োরী’, পৃথিবীর তাবৎ বিষয়ে কন্সপিরেসি থিয়োরী আছে, এবং কোন কোন থিয়োরী ব্যাপক সংখ্যক লোকে বিশ্বাস করে। চন্দ্রাভি্যান প্রকল্পে লাখ দুয়েক লোক জড়িত ছিল, এত বড় বিষয়টি ফাঁকিবাজি হওয়া একেবারেই অসম্ভব। তিনি আরও বললেন যে চন্দ্রাভিযানের প্রাযুক্তিক খুঁটিনাটি বেশি লোকে বুঝবে না, আর সেই নিয়ে ডকুমেন্টারি বানালে লোকে দেখবে না। কিন্তু চন্দ্রাভিযানের পুরো ব্যাপারটিই ফাঁকিবাজি এই চমকপ্রদ থিয়োরীটি লোকে আগ্রহ ভরে দেখবে, আর এই সুযোগে বিজ্ঞাপন দেখিয়ে কিছু পয়সা বানানো যাবে, এই হচ্ছে ডকুমেন্টারির মূল কথা। এর মধ্যে সত্যানুসন্ধানের কিছুই নেই। চাঁদে সূক্ষ্ম নীল দাগ আর আর্মস্ট্রং সাহেবের মুসলিম হওয়া প্রসঙ্গে অধ্যাপক বললেন দুটো তথ্যই মিথ্যা।
চন্দ্রাভিযান বিষয়ে মুখরোচক গালগল্প নির্দোষ ব্যাপার, কিন্তু বঙ্গবন্ধুর নামে কিছু ফালতু গুজব আর তার উপর ভিত্তি করে একটি গোটা প্রজন্মের বিরাট অংশের রাজনৈতিক দর্শন দাঁড়িয়ে যাওয়াটা গুরুতর ব্যাপার। এই রাজনৈতিক দর্শনের কারণে মইন ইউ আহমেদের ক্ষমতা দখল দেখে আমরা হাততালি দিয়ে ফেলি। আমরা দেখি না একই ভাবে ক্ষমতা নিয়েছেন ইস্কান্দার মির্জা, আয়ুব খান, ইয়াহিয়া খান, সেই একই দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই, সে একই রাজনৈতিক জঞ্জাল সাফ করা, সেই একই সামরিক স্মার্টনেস, সেই একই গোয়েন্দা সংস্থার রাতের আঁধারে মিটিং, ফলাফল ঘোড়ার ডিম। এই রাজনৈতিক দর্শনের কারণেই আমাদের গণতন্ত্র দ্রুত ক্লান্ত হয়ে পড়ে, দু তিন টার্ম পরপরই সেনাবাহিনীকে এসে জঞ্জাল সাফ করে যেতে হয়। এই রাজনৈতিক দর্শনে একজন নেতা তৈরিতে কোন “process” (বঙ্গবন্ধু ডেভিড ফ্রস্টকে যেমন বলেছেন) প্রয়োজন নেই, দরকার আছে কেবল কিছু ভাল ভাল কথা, ড. ইউনুস যেমন ভাল ভাল কথা বলেন (বাংলাদেশে বসে লোকে চা খেতে খেতে ক্যামেরাতে আমেরিকার Wal-Mart পাহারা দেবে, এই তাঁর স্বপ্নের বাংলাদেশ), সুশীল সমাজ সেমিনার করে করে যাদু করে ফেলবেন। ছাত্ররা রাজনীতি ফেলে মন দিয়ে পড়াশোনা করবে। ব্র্যাকের কর্মীরা গ্রামে গ্রামে নলকুপ বসিয়ে লোকজন কে বিশুদ্ধ পানি খাওয়াবে। আর কিছুই প্রয়োজন নেই। আমিনা ব্র্যাকের মোড়া বুনবেন আর আমিনার ছেলে কিছু পড়াশুনা শিখে Wal-Mart পাহারা দিবে। মইন ইউ আহমেদ যেহেতু আলু খাওয়া শিখিয়ে গেছেন, চালের দাম বেড়ে গেলে আলু খেয়ে কাটানো যাবে। চাখার বা টুঙ্গিপাড়ার কোন কিশোরের রাজনীতিতে যোগ দেবার আর কোন প্রয়োজন নেই।
যাই হোক, ফালাচীর ইন্টারভিউ, আমার বৃদ্ধ অধ্যাপক যেমন বলেছেন, sensationalism, যা করলে বিক্রি বাড়ে। বঙ্গবন্ধু ১০ জানুয়ারি দেশে ফিরেছেন, ১২ তারিখ শপথ নিয়েছেন, সারা পৃথিবীর সাংবাদিকেরা জড়ো হয়েছেন বাংলাদেশে। তাঁরা রিপোর্ট করছেন নয় মাসব্যাপী চলা হত্যা, ধর্ষণ আর লুন্ঠনের কথা, একই সাথে একটি সদ্য জন্ম নেয়া জাতির স্বপ্নের কথা। ফালাচী ওপথে গেলেন না, তাঁকে চমক লাগানো কিছু একটা লিখতে হবে, তিনি লিখে ফেললেন কাদেরিয়া বাহিনীর হাতে নিহত চার রাজাকারের কাহিনী। এমন নৃশংস হত্যাকাণ্ড তিনি নাকি কখনো দেখেননি। অথচ ফালাচী নিজে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশ নিয়ে পুরস্কৃত হয়েছেন (তখন তাঁর বয়স ছিল ১৪ বছর)। ১৯৪৩ সালে মুসোলিনি ধরা পড়েন, তাঁকে হত্যা করা হয় ১৫ জন সাঙ্গপাঙ্গ সহ, হত্যা করে মিলানের প্রাণকেন্দ্রে উল্টো করে ঝুলিয়ে রাখা হয় তিন দিন। সারা মিলান শহর দেখতে এসেছে, লাশে পাথর ছুড়েছে আর থুতু দিয়েছে, এই সব কাণ্ডের শেষে মুসোলিনিকে এক অজ্ঞাত কবরে ফেলে আসা হয়। ফ্রান্সে হাজার হাজার দালালকে বিনা বিচারে হত্যা করা হয়। এতসব জেনেও ফালাচী মুক্তিবাহিনীর নৃশংসতায় শিউরে উঠেছেন। বঙ্গবন্ধুর ইন্টারভিউ নিয়ে তিনি গেলেন ভুট্টোর কাছে, ভুট্টো তাঁকে সাদরে অভ্যর্থনা জানালেন, কারণ ভুট্টোর মতে “you are the only journalist who wrote the truth about Mujib Rahman”. পরাজিত ভুট্টো চালিয়ে গেলেন, ইয়াহিয়া খান “disgusting drunkard” শেখ মুজিব “congenital liar” ইন্দিরা গান্ধী “a woman devoid of initiative and imagination”. আড্ডা জমে উঠল, ফালাচী প্রশ্ন করেন “Mr. President, Mujib told you…….” রাখাল বালক মুজিব আর ‘Mr. President’ ভুট্টো, সারা বিশ্বের কোন আগ্রহ নেই ভুট্টো নিয়ে, মুজিব সম্পর্কে একমাত্র সত্যবাদী ফালাচীকে পাঁচ পাঁচটি মিটিংয়ে ভুট্টো তাঁর মনের কথা খুলে বললেন। এত সময় মুজিবের ছিল না, দেশের ব্যাঙ্কে একটা পয়সা নেই, গুদামে কোন চাল নেই, সাত কোটি লোককে খাওয়াতে হবে, চার বছর পরে তাঁকে যারা খুন করবেন তাঁদের পাকিস্তান থেকে ফিরিয়ে আনতে হবে, আইনশৃংখলা ফিরিয়ে আনতে হবে। ১৮ ডিসেম্বরের চার রাজাকারের হত্যাকাণ্ড নিয়ে ফালাচীর সাথে ভ্যাজরভ্যাজরের সময় তাঁর নেই, তিনি বিরক্ত হয়ে ফালাচীকে বেরিয়ে যেতে বললেন। ফালাচী বিনা আমন্ত্রণে তাঁর বাড়িতে উপস্থিত হতে পারেন, বেগম মুজিব তার পুত্রকন্যাদের নিয়ে দুপুরে খেতে বসেছেন, সে দৃশ্য দেখতে পারেন, বাড়িতে কোন গার্ডের ব্যবস্থা নেই, রাখাল রাজা মুজিবের অফিসেও কোন গার্ড নেই, সেখানেও ফালাচী উপস্থিত হন, কোন অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছাড়াই, কারণ রাখাল রাজা মুজিব Mr. President ভুট্টোর মত গুরুত্বপূর্ণ নন, রাখাল রাজা ভয় পেয়ে ফালাচীকে পুনর্বার বেরিয়ে যেতে বলেন। অপমানিত ফালাচী খুঁজে বের করেন মুজিবের নুইয়র্ক ফেরত কোন এক ভাগ্নেকে, সেই ভাগ্নে অশিক্ষিত মুজিবের হয়ে ক্ষমা চান, নাটকের সেখানেই শেষ নয়, মুক্তিবাহিনী তাঁকে হত্যার হুমকি দেয়। ফালাচী কোন এক জার্মান পর্যটকের সাহায্যে বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে আসেন। ফালাচী যেখানেই যান সেখানেই এমন ঘটে, ১৯৬৮ সালে মেক্সিকোতে তিনি গুলিবিদ্ধ হন, মেক্সিকান পুলিশ তাঁকে মৃত ভেবে চলে যায়। ৭০ দশকের শেষে ফালাচী এক গ্রীক বিপ্লবির সাক্ষাৎকার নিতে গিয়ে তাঁর প্রেমে পড়ে যান। ১৯৭৯ সালে খোমেইনীর সাক্ষাৎকার নিতে গিয়ে তিনি চাদর ছুঁড়ে ফেলে তাঁকে ‘tyrant’ বলে সম্বোধন করেন। সেই সময়ে মার্কিন মহিলা সাংবাদিক ডায়ান সইয়্যার খোমেনীর সাক্ষাৎকার নেন, চাদর পড়েই, কারণ ডায়ান সইয়্যার গিয়েছেন সাংবাদিকতা করতে, নাটক করতে নয়।
১৪ বছর বয়সে স্বৈরাচার মুসোলিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করে পুরস্কৃত হওয়া ফালাচী তাঁর দীর্ঘ sensational সাংবাদিক জীবন শেষ করে শুরু করেন লেখক জীবন। লেখার বিষয় ইউরোপ অভিবাসী মুসলিমরা। ইউরোপের রাস্তা, বাথরুম আর রেস্টুরেন্ট পরিষ্কার করতে আসা অভিবাসী মুসলিমরা, নামাজ পড়ে আর মসজিদ বানিয়ে পশ্চিমা সভ্যতা ধ্বংস করে ফেলছে। শুধু মুসলিম অভিবাসিরাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রে আগত মেক্সিকানরাও তাঁর দুশ্চিন্তার বিষয় (খোদ মার্কিনীরাও এত চিন্তিত নয়)। নিজের সম্পর্কে তার অভিমত হচ্ছে “…a woman not used to medals and not too keen on trophies, has an intense ethical and moral significance”. হযরত মুহম্মদ সম্পর্কে তাঁর অভিমত হচ্ছে “I will draw Mohammed with his 9 wives, including the little baby he married when 70 years old, the 16 concubines and a female camel wearing a Burqa. So far my pencil stopped at the image of the camel, but my next attempt will surely be better” (হযরত মুহম্মদ মৃত্যুবরণ করেন ৬৩ বছর বয়সে)। এতে অবশ্য জামাতিদের কিছুই যায় আসে না। কারণ যুদ্ধাপরাধ বিষয়ক আসন্ন এই বিচারে কোরআণ আর সুন্নাহ তাদের রক্ষা করবে না, রক্ষা করতে পারে ওরিয়ানা ফালাচীর অমর গ্রন্থ, Interview With History।
মোহাম্মদ মুনিম
পেশায় প্রকৌশলী, মাঝে মাঝে নির্মাণ ব্লগে বা ফেসবুকে লেখার অভ্যাস আছে, কেউ পড়েটড়ে না, তারপরও লিখতে ভাল লাগে।
Have your say
You must be logged in to post a comment.
৪২ comments
আহমদ জিয়াউদ্দিন - ২০ মার্চ ২০১০ (১১:১৮ অপরাহ্ণ)
অসাধারণ /
মুয়িন পার্ভেজ - ২১ মার্চ ২০১০ (১২:২০ পূর্বাহ্ণ)
অত্যন্ত প্রয়োজনীয়, তথ্যঋদ্ধ ও যুক্তিদিগ্ধ এ-লেখার জন্য মোহাম্মদ মুনিমকে অভিনন্দন জানাই। প্রথম লেখাতেই (মুক্তাঙ্গন-এ তো বটেই — মন্তব্য ছাড়া তাঁর কোনো পোস্ট অন্য কোথাও পড়িনি) তিনি আমার মনোহরণ ক’রে নিয়েছেন। সত্যের সঙ্গে গুজবের মিশেল বাংলাদেশের রাজনৈতিক পটভূমিকে ধূম্রাচ্ছন্ন ক’রে রেখেছে ব্যাপকভাবে — ফাল্লাচির মতো সাংবাদিকের নেওয়া ‘সাংঘাতিক’ সাক্ষাৎকার তাতে আরও ইন্ধন যোগাবে, সন্দেহ নেই।
২
ইতালির লেখক-সাংবাদিক ওরিয়ানা ফাল্লাচি-র নামের বানানে ‘ফালাচী’ কি সঙ্গত হবে?
ফাল্লাচিকে নিয়ে নির্মিত একটি প্রামাণ্যচিত্র দেখা যেতে পারে ইউটিউবে (প্রথম অংশ, দ্বিতীয় অংশ, তৃতীয় অংশ, চতুর্থ অংশ, পঞ্চম অংশ, ষষ্ঠ অংশ ও সপ্তম অংশ)।
বিনয়ভূষণ ধর - ২১ মার্চ ২০১০ (২:০৭ অপরাহ্ণ)
@মুয়িন পার্ভেজ!
ওরিয়ানা ফাল্লাচি নামটাই যুক্তিসংগত বলে মনে হচ্ছে আমার কাছে।
Potheek Aami - ২১ মার্চ ২০১০ (৪:৪২ পূর্বাহ্ণ)
My heartiest thanks for such a wonderfully flowing editorial.
মাসুদ করিম - ২১ মার্চ ২০১০ (৯:৪৭ পূর্বাহ্ণ)
Oriana FALLACI, নামটা শুনেই যে ইংরেজি শব্দটা আমার মনে এল, FALLACY: a false way of thinking about something, বাংলা কী হতে পারে, ভ্রান্ত ধারণা, ইতালিয়ান ভাষায় অরিয়ানার পারিবারিক নাম FALLACI-এর মানে কী আমি জানি না, তবে ইংরেজি FALLACY শব্দটা লাতিন fallacia থেকেই এসেছে, ফলে খুব সম্ভাবনা আছে ইতালিয়ান ভাষায় একই অর্থ না হলেও কাছাকাছি কোনো অর্থ হতে পারে। পারিবারিক নামের সম্মান সবাই রাখতে পারেন না, অরিয়ানা পেরেছেন।
রায়হান রশিদ - ২১ মার্চ ২০১০ (৮:২০ অপরাহ্ণ)
ঠিক এই কথাটিই ভাবছিলাম মাসুদ ভাই, আপনি লিখে ফেললেন।
ব্লাডি সিভিলিয়ান - ২১ মার্চ ২০১০ (১:৫৮ অপরাহ্ণ)
ফাল্লাচির প্রথম বই পড়ি ‘হাত বাড়িয়ে দাও (Letters to a child never born) ‘, আনু মুহাম্মদের অনুবাদে। বেশ ভাল লাগে এবং বইটি বেশ কয়েকজনকে কিনে উপহার দেই।
তাঁর ‘ইন্টারভিউ উইথ হিস্ট্রি’ বইটা সম্পর্কে কিছুটা জেনেছিলাম, কিন্তু কেনা হয় নি বা পড়া।
তবে, শফিক রেহমানের ‘দৈনিক যায়যায়দিন’-এর কল্যাণে শেখ মুজিবের ‘কলঙ্কিত চরিত্রের’ উদাহরণস্বরূপ ওরিয়ানার নেয়া সাক্ষাৎকারটি পড়া হয়ে গেছে। আসলেই, মুজিব সম্পর্কে এতো ‘ভয়াবহ’ তথ্য জানানোর জন্যে ওরিয়ানা অন্তত অনেক মুজিববিরোধীর ধন্যবাদ পাবেন।
এখন এই লেখায় তো শুনলাম বরাহযূথ এটাকেই তাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধের একটি অকাট্য প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করবে।
চলুক, মজা দেখিতে থাকি।
বিনয়ভূষণ ধর - ২১ মার্চ ২০১০ (২:০২ অপরাহ্ণ)
@মোহাম্মদ মুনিম!
মন্তব্যের প্রথমে তোমাকে আমার তরফ থেকে অসংখ্য ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা জানাচ্ছি এরকম একটি বিষয় নিয়ে তোমার তথ্যবহুল লেখাখানার জন্যে। তোমার এই সতথ্য লেখাখানা বর্তমান সময়ের পরিপ্রক্ষিতে অনেক বিষয়ের ব্যাপারে বির্তকের অবসান ঘটাবে বলে আশা করছি। তোমার লেখাটি পড়ে আমি নিজেও কিছু বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা নিতে পেরেছি যা আগে ধোঁয়াশার মধ্যে ছিলাম।
বর্তমানে জামাতীরা যুদ্ধাপরাধ মামলা মোকাবেলা করার জন্যে নানান বিষয়ের উপর তথ্য সংগ্রহ করছে। তার মধ্যে ওরিয়ানা ফাল্লাচি‘র নেয়া বঙ্গবন্ধু’র সাক্ষাৎকারখানা তারা মুক্তিযুদ্ধের সময় তাদের কৃতকর্মের ব্যাপারে নিজেদেরকে নির্দোষ প্রমাণের ক্ষেত্রে কাজে লাগাবে বলে বলছে। আমি জানিনা তাদের এই সংগ্রহকৃত তথ্যসমূহ তাদের নিজেদেরকে নিরাপরাধ প্রমাণের ব্যাপারে কতটুকু সাহায্য করবে। তারা যে সাংবাদিকের সংগ্রহকৃত সাক্ষাৎকারখানা নিয়ে এতো লাফালাফি করছে সেই ওরিয়ানা ফাল্লাচি ২০০১ সালের ১১ই সেপ্টম্বর আমেরিকার নিউইয়র্কের টুইন টাওয়ারে হামলা হবার পরে পুরো পৃথিবীর মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি বিষোদগার করে একটি ভয়াবহ রকমের বির্তকিত বই লেখেন। বইটির নাম হলো “The Rage and The Pride (La Rabbia e l’Orgoglio in Italian)…Oriana Fallaci”। যার বাংলা অর্থ করলে দাঁড়ায় ‘আমার ক্ষোভ আমার অহংকার’। বইখানা আমাদের দেশে অবনি অনার্য অনুবাদ করেন। বইটি সম্পূর্ণভাবে সাম্পদায়িক দৃষ্টিকোণ থেকে লেখা হয়েছে। সারা পৃথিবীর সমগ্র মুসলিম সম্প্রদায়কে উনি অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। ফলাফল যা হবার তা হলো! বইটি লক্ষীদেবীর কৃপা দৃষ্টি পেলো মানে বেষ্ট সেল হলো এবং একইসাথে দারুনভাবে বির্তকিত ও সমালোচিত হলো। অথচ এই মহিলা বাম ঘরানার লোক ছিলেন একসময়। আমাদের দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ,বাম রাজনীতিবিদ ও লেখক আনু মোহাম্মদ ওরিয়ানা ফাল্লাচি’র লেখা “Letter to a Child Never Born” বইখানার বাংলা অনুবাদ করেন। যার নাম হচ্ছে ‘হাত বাড়িয়ে দাও’।
পরিশেষে তোমাকে আবারও অভিনন্দন জানাচ্ছি মুক্তাঙ্গনে তোমার পেশকৃত প্রথম লেখাটির জন্যে।
অস্মিতা - ২১ মার্চ ২০১০ (৮:০৭ অপরাহ্ণ)
ধন্যবাদ মুনিমকে, রীতিমতো মনে রাখার মত একটি পোস্ট উপহার দেবার জন্য।
আমার ক্ষুদ্র অভিজ্ঞতায় দেখেছি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে যে কোন লেখা প্রায় সবসময়ই কিছুটা বিপদজনক হয়ে থাকে। আওয়ামী শাসন আমলেও সেই প্রচেষ্টার বিপদ কমে না বরং বাড়ে। পূর্ব জন্মে কোন পাপ থাকলে তথাকথিত প্রগতিশীলদের কারও কারও খাতায় ‘আওয়ামী পন্থী’ বলে নাম উঠে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকে। পূর্ব জন্মের পাপ গুরুতর হলে ‘ব্যক্তি মমতাপ্রসূত, অবৈজ্ঞানিক আবেগতাড়িত’ ইত্যাদি শিরোনামও শিরোধার্য হতে পারে। বঙ্গবন্ধুর পরিবারটিকে নিয়ে গত উনচল্লিশ বছরের যে সুপরিকল্পিত মিথ্যাচার তার কয়েকটি আমিও শুনেছি জনৈক বাম সমর্থক ব্যক্তিবর্গের কাছ থেকে। একে কো-ইনসিডেন্স বলা যাবে কি না বলতে পারছি না। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় দেখেছি, বাম দলের অনেক সমর্থক এবং নেতাই তাদের সমালোচনায় বঙ্গবন্ধু ও জিয়াউর রহমান (বা তাদের শাসনামলের ব্যাপারে) তেমন কোন পার্থক্য করেন না। তাদের ভাষায় একরকম ‘নিরপেক্ষ’ সমালোচনার স্বার্থেই। আমার ছেলেবেলার এক ইসলামিয়াত শিক্ষকের কথা মনে পড়ে। ক্লাসে এসে পড়া তৈরী করতে বলে যিনি একটি নাতিদীর্ঘ ঘুম দিয়ে নিতেন এবং কোন প্রকার শব্দে (বা নিরবতায়) অকস্মাৎ নিদ্রাভঙ্গ হলে একটি রুলার দিয়ে সামনের সারিতে বসা প্রতিটি ছাত্রীকেই গুনে গুনে এক ঘা করে লাগিয়ে দিতেন। তার ভাষায় কে আওয়াজ করেছে তা হলফ করে বলবার উপায় নেই তাই নিরপেক্ষতার স্বার্থেই নাকি এই ব্যবস্থা। একবার একটি বাম দলের বার্ষিক সম্মেলনে যোগ দিতে ঢাকায় গিয়েছিলাম। টিএসসির সামনে নেতা সাহেব তার সোয়া ঘন্টার বক্তৃতায় অত্যন্ত প্রাঞ্জল ভাষায় প্রায় পনেরো মিনিট আওয়ামী আমলের (৭২ থেকে ৭৫) সমালোচনা করলেন আর বিএনপি আমলের সমালোনা করলেন সাড়ে পাঁচ মিনিট। ঘড়ির দিকে অপলক তাকিয়ে থাকা আমি কিঞ্চিত ধন্দে পড়েছিলাম, কারণ, তখন ক্ষমতায় ছিল বিএনপি এবং গণ আদালত, রাজনীতিতে জামায়াতের অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রা, দূর্নীতি ইত্যাদি বিষয়ে রাজনীতির মাঠ ছিল গরম এবং অ-বাম জনতা ছিল প্রায় মারমূখী। বিচলিত আমি ঐ দলের এক পাতি নেতার শরণাপন্ন হলাম এবং বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করলাম। পাতি নেতা খানিক ভেবে উত্তর দিয়েছিলেন – আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি দুটোই বুর্জোয়া দল হওয়া সত্বেও আওয়ামী লীগের জনসমর্থন (প্রকারান্তরে প্রলেতারিয়েতকে ধোঁকা দেবার ক্ষমতা) বেশী থাকায় আওয়ামী লীগকেই শ্রেনী সংগ্রামের প্রধান শত্রু (বিএনপি জামায়াতের সাথে তুলনায়) ভাবা যেতে পারে, যে কারণে তাদের নেতা সেভাবে বক্তৃতা দিয়েছেন! মনে মনে বুঝলাম, তাদের নিরপেক্ষতার এই সুকঠিন বৈজ্ঞানিক দন্ডের কাছে সম্ভবত আমার ইসলামিয়াত শিক্ষকও হার মানবেন।
জনাব আনু সাহেব ‘হাত বাড়িয়ে দাও’ অনুবাদ করতেই পারেন। আমার জানবার ইচ্ছে ওরিয়ানা ফ্যাল্লাচির অপরাপর কর্মকান্ড এবং লেখার ব্যাপারে কোন সমালোচনা বা মূল্যায়ন তিনি তার বইয়ের ভূমিকাতে বা পাদ টীকায় যুক্ত করেছিলেন কি না। কিংবা, পরবর্তীতে তাকে নিয়ে মূল্যায়নধর্মী কিছু লিখেছিলেন কি না। এটি জানতে চাই এ কারণে যে জনাব আনুর মত রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় কোন মানুষ যখন কোন লেখককে অনুবাদের যোগ্য মনে করেন তখন তিনি প্রকারান্তরে মূল লেখকের কিছু মতবাদকে endorse ও করেন; সেই মতবাদকে প্রচারণায় সাহায্য তো করেনই। ধরুন আজ যদি কেউ শর্মিলা বোস, কিংবা হালের ইয়াসমিন সাইকিয়া গোত্রের কারো লেখা অনুবাদ করেন কোনো রকম caveat, বা পূর্বাপর মূল্যায়ন বা সতর্কবাণী ছাড়া – তাহলে সেই অনুবাদকের মতাদর্শ বা রাজনীতিক বিশ্ববিক্ষা সম্পর্কে ঠিক কি ধরে নেয়া সঙ্গত হবে? একইভাবে গোলাম আযম নিজামীর জীবনী-প্রচারপত্রগুলো যদি কেউ আজ আগ্রহ নিয়ে ইংরেজীসহ অন্যান্য ভাষায় অনুবাদ করার ‘গুরুদায়িত্ব’ গ্রহণ করে তাহলে তা ঐ ব্যক্তির মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে মতাদর্শ-দৃষ্টিভঙ্গী সম্পর্কে আমাদের কাছে কি বার্তা পৌঁছায়? ইংরেজীতে বা বিদেশী ভাষায় কোন লেখা দেখলেই বা তার অংশবিশেষ নিজেদের মতাদর্শের\প্রচারণার সামান্য পক্ষে গেলেই হামলে পড়ে তার অনুবাদ করতে যাওয়ার এই প্রবণতা থেকে অন্তত আমাদের দায়িত্বশীল বুদ্ধিজীবিরা বেরিয়ে আসবেন কবে?
সম্প্রতি পত্রিকায় দেখলাম – প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন যে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রাক্কালে তিনি জেলায় জেলায় জনসভা করে জনমত সংগ্রহ করবেন এবং এই উদ্যোগে সকল বাম দলসমূহকে সংগঠিত করবেন। শুনে আমার এক বন্ধুর সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতার কথা মনে পড়লো। বন্ধুটি তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়ে জনমত সংগ্রহ করছিল। সেই প্রক্রিয়ায় জনৈক বাম সহকর্মীর সমর্থন চাইলে সে জানায় যে – তার নেতৃবৃন্দের মতে ‘এই সরকারের আমলে যুদ্ধাপরাধীদের সুষ্ঠ বিচার সম্ভব নয়, তাই এই প্রহসনের এবং জাতির সাথে ধোকাবাজিমূলক বিচারের ব্যাপারে তাদের দলের তেমন কোন আগ্রহ নাই’। বন্ধুটিকে বললাম, তার বাম সমর্থক সহকর্মীটিকে জানাতে যে বিচারের বর্তমান প্রক্রিয়ার ব্যাপারে তাদের আপত্তি থাকলে তাদের তো উচিত বিকল্প পদ্ধতির সুপারিশ করা বা নিদেন পক্ষে দলীয়ভাবে তাদের মতো করে উদ্যোগটি এগিয়ে নিয়ে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা। বন্ধুটি ব্যাজার মুখে জানালো – ‘তাগো লগে আমি তর্ক করুম? আমারে কি পাগলে পাইসে? কিসু কইতে গেলেই মার্কস এঙ্গেলস হেগেল বগলে লইয়া তাইড়া আহে’!
যাহোক, আশা করি প্রধান মন্ত্রী তার উদ্যোগে সফল হবেন এবং জাতিগতভাবে আমাদের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই ইস্যুটিতে আমাদের সকল প্রগতিশীল একমত হবেন।
মুয়িন পার্ভেজ - ২২ মার্চ ২০১০ (৮:০৫ অপরাহ্ণ)
খরস্রোতা নদীর মতো মন্তব্যের জন্য অস্মিতাকে অভিনন্দন জানাই। দীর্ঘ স্বাধীনতা-সংগ্রামে বামদলের অসাধারণ ভূমিকার কথা ভুলতে পারি না, তবে এ-সময়ের বামদলগুলোর সাধারণ কর্মকাণ্ড বা কখনও-কখনও ‘নীরবতা হিরণ্ময়’-নীতি দেখে হতাশই হয়ে পড়ি। আমার জনৈক তরুণ কবিবন্ধুর অভিজ্ঞতার কথা বলি : তাকে গত বছর ছাত্র ফ্রন্টের এক কর্মী কুশলাদি বিনিময়ের পর দু’টি স্মারকপত্র (বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাব্যবস্থা সংক্রান্ত) দেয় স্বাক্ষর করার জন্য; বন্ধু সাগ্রহে স্বাক্ষর দিয়ে বিদায় চাইলে ছাত্রকর্মীটি নীচু স্বরে বললেন, ‘আমরা স্বাক্ষরপ্রতি দু’টাকা ক’রে নিচ্ছি।’ পাশে দু’জন ছাত্রীকর্মী থাকায় বন্ধু বিনাবাক্যে পাঁচ টাকার নোট ‘গোবিন্দায় নমঃ’ ক’রে স’রে পড়ে! আরেক কবিবন্ধুর সঙ্গে কিছুদিন আগে গিয়েছিলাম তার কলেজের অধ্যক্ষার বাসায়, চা-পানের আমন্ত্রণে। সদালাপী এই বৃদ্ধা কথাপ্রসঙ্গে জানালেন যে প্রতিমাসে তাঁর কাছ থেকে ছাত্র ইউনিয়নের ছাত্রীকর্মীরা ‘নাতনিসুলভ আবদার’ খাটিয়ে চাঁদা নিয়ে যান। এ-বিষয়ে তাঁর অসন্তোষ চাপা থাকেনি। এই তো সেদিন (৭ মার্চ ২০১০) চট্টগ্রাম শহরের চেরাগিতে পাহাড়িনিগ্রহের প্রতিবাদ জানিয়ে বক্তৃতা-গানের একান্নবর্তী অনুষ্ঠান করলেন বিভিন্ন সাংস্কৃতিক দলের সঙ্গে একটি বামদলের কিছু কর্মী; প্রচারপত্র ছাপিয়ে, রীতিমতো কাগজের বাকশো বানিয়ে চাঁদা সংগ্রহ করলেন তাঁরা। প্রতিদিনের চেনা লোকজনের বাইরে তেমন কাউকে দেখা গেল না সে-অনুষ্ঠানে — ওই দলেরই সব নেতা-কর্মী ছিলেন কি না সন্দেহ! এসব প্রতিবাদের সঙ্গে একাত্মতা অনুভব করেন ব’লেই (কিংবা পূর্বোক্ত বন্ধুটির মতো ‘লোকলজ্জা’র খাতিরেই) অনেকে চাঁদা দেন। চাঁদা নিয়ে বামদলগুলো কাজের কাজ যে কিছু করে না, তাও নয় অবশ্য (শীতবস্ত্র-বিতরণ স্মর্তব্য), কিন্তু পিপীলিকাস্বভাবে মূলত তহবিল গড়তে থাকলে বামদলগুলোর সঙ্গে এনজিও-র কোনো পার্থক্য রচিত হয় কি আদৌ?
বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের অধিকার আদায় করার জন্য মুষ্টিমেয় বামদলই আন্দোলন ক’রে থাকে আজও (‘মিছিল-অন্তপ্রাণ’ বা ‘স্মারকপত্রসর্বস্ব’ হলেও) — এক্ষেত্রে ছাত্রলীগ বা ছাত্রদলের সাড়া পাওয়াই যায় না, বরং নারী দিবসের মাসে, ১৪ মার্চ ২০১০ তারিখে, দৈনিক আমার দেশ পত্রিকায় ঢাকার ইডেন কলেজে ছাত্রলীগের যে-ঘৃণ্য কুকীর্তির কথা প্রকাশিত হয়েছে, তা প’ড়ে মনে হল, সমাজের মগজে ঘুণপোকা ঢুকেছে অনেক আগেই — ‘সবকিছু নষ্টদের অধিকারে’ গেছে!
যুদ্ধাপরাধীদেরকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর জন্য বামদলগুলো কী পদক্ষেপ নিয়েছে, তা জানতে চেয়েছিলাম পরিচিত এক কর্মীর কাছে। এ-বিষয়ে তিনি গুরুত্বপূর্ণ কোনো তথ্য দিতে পারলেন না। প্রপদ-এর (প্রগতির পরিব্রাজক দল) জনৈক কর্মী বললেন যে এ-ব্যাপারে তাঁদের দলের কিছু বক্তব্য আছে, তবে ফোনে সবিস্তারে না জানিয়ে তিনি সাক্ষাতেই বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে আগ্রহী। সম্ভবত আশাব্যঞ্জক কিছু নেই!
রেজাউল করিম সুমন - ২২ মার্চ ২০১০ (৯:৫৪ অপরাহ্ণ)
@ অস্মিতা (মন্তব্য # ৭)
অনুমান করি, মুনিমকে ব্যাংক ডাকাতির গল্প-বলিয়ে নেতা আর আপনার শোনা বক্তৃতার সেই প্রাঞ্জল বক্তা হয়তো একই ব্যক্তি; আর সেটা কোনো কাকতালও নয়। আপনার বন্ধুটি তাঁর বামপন্থী সুহৃদ সম্পর্কে বগলে মার্ক্স-এঙ্গেলস-হেগেল নিয়ে তেড়ে আসার যে-অভিযোগ তুলেছেন সেটাকে আক্ষরিক অর্থে গ্রহণ করা মুশকিল। আর তাছাড়া, জনৈক বাঙালি ভাবুকের দু-খণ্ড রচনাবলির কথা বোধহয় আপনার বন্ধুর জানা নেই যেগুলোকে মার্ক্স-এঙ্গেলস-লেনিনের বইয়ের সঙ্গে একত্রে বগলদাবা করা নানা কারণেই কঠিন, হয়তো-বা অসম্ভব!
ফারুক ওয়াসিফ - ২২ মার্চ ২০১০ (১২:০৯ পূর্বাহ্ণ)
@ অস্মিতা # ৭
ওরিয়ানা ফালাচি যাদেরই সাক্ষাতকার নিয়েছেন, তাদের ব্যাক্তিত্ব ও রাজনৈতিক চরিত্রকে তার নিজের ব্যাক্তিত্বের ধার দিয়ে আঘাত করে বিচলিত অবস্থায় দেখাতে চেয়েছেন। তার এই কৌশল বা মূল্যায়নের সংগে আমি একমত নই, এটা কোনো যৌক্তিক ধরন নয়। কিন্তু মতামতের সহনশীলতার নীতিতে তাকে কতটা জায়গা কে দেবেন এটা ঐ বিষয়ে যার যার ধারণার ওপর নির্ভরশীল।
কিন্তু অনাগত সন্তানের কাছে লেখা তার বইয়ের অনুবাদে আনু সাহেবের কাছ থেকে ওরিয়ানা ফালাচির চরিত্রের মূল্যায়ন দাবি করাটা কী বিচারে প্রাসংগিক তা বোধগম্য হয় কেবল তখনই, যখন শেখ মুজিবের সমালোচক মাত্রই ঘৃনার্হ, এরকম ধারণা কেউ পোষণ করেন। ভারতে গান্ধি বা নেহেরুকে নিয়ে এর থেকে কড়া আলোচনা হয়, কারণ ততটা গণতান্ত্রিক সহনশীলতা সেখানকার জাতীয়তাবাদীরা অর্জন করেছে।
আজ বাংলাদেশে যে শেখ মুজিব কাল্ট দাড়াচ্ছে (আওয়ামী আমলে এমনটা ঘটাই স্বাভাবিক, যেমন বিএনপি আমলে জামাতিকরণ)। আখেরে এটা বুমেরাং হবে, তার থেকে বড় কথা অন্ধ ব্যাক্তিপূজার সংস্কৃতি যে কোনো দেশের রাজনীতির বিকাশে ক্ষতিকারক। এর বিরুদ্ধে দাড়ানো আজ এতই বিপজ্জনক যে, আক্রান্ত হওয়ার ঝুকি ষোল আনা। এই কাজ মাও সে তুং, স্ট্যালিন, হিটলারদের নিয়েও করা হয়েছে। ইতিহাস সাক্ষ্য দেবে, তার ফল ভাল হয়নি।
একাত্তর এবং তার পরের রাজনীতির নির্মোহ মূল্যায়ন না হওয়াটা আজকের বাংলাদেশের ইতিহাস বিকৃতি এবং রাজনৈতিক সংস্কৃতির দীনতার একটি কারণ। যাহোক, বামপন্থি বিদ্বেষের চোখে এই সত্য ধরা যাবে না।
ইয়াসমিন সাইকিয়ার লেখা আমি ধারাবাহিকভাবে অনুবাদ করেছি। এবং এখনো লেখাটাকে প্রয়োজনীয় মনে করি। কী কারণে তিনি বা আমার অনুবাদকর্ম শর্মিলা বোসের মতো এক অবিমৃশ্যকারী লেথকের সংগে তুলনায় হবে, সেটা জানতে চাই। আপনি যত বড় অভিযোগ তুলেছেন, আমার ব্যাখ্যা চাওয়ার দাবিটা ততই জোরালো।
অস্মিতা - ২২ মার্চ ২০১০ (৩:৪৪ পূর্বাহ্ণ)
@ ফারুক ওয়াসিফ # ৮
১.
নিশ্চয়ই ফারুক ওয়াসিফ। সে কারণেই ফাল্লাচির পূর্বাপর কর্মকান্ড বা লেখনীর বা সাংবাদিকতার প্রক্রিয়া নিয়ে আনু মুহাম্মদ সাহেবের নিজের ধারণা এবং ফাল্লাচিকে তিনি কতখানি ‘জায়গা’ দেন তা জানতে চাওয়ার নির্দোষ ইচ্ছা পোষণ করেছিলাম মাত্র। তাতে আপনি ‘বাম বিদ্বেষ’ থেকে শুরু করে ‘ব্যক্তিপুজা’ এবং ‘মুজিব সমালোচনাকারীদের প্রতি ঘৃণা’ সবই আবিষ্কার করে ফেললেন! তেমন অবাক হইনি অবশ্য।
বাংলাদেশের প্রগতিশীল পাঠক সমাজের একাংশের কাছে আনু সাহেবের একটি গ্রহণযোগ্যতা আছে। বাংলাদেশে তার একটি সমর্থক গোষ্ঠীও আছেন যারা আক্ষরিক অর্থেই ‘আনুর চোখে বিশ্ব দেখেন’। তাই আনু সাহেবের মত অবস্থানের মানুষ যখন কারও লেখা কোন ধরণের caveat ছাড়া অনুবাদের যোগ্য মনে করেন, তখন, আবারও বলি – ‘তিনি প্রকারান্তরে মূল লেখকের কিছু মতবাদকে endorse ও করেন; সেই মতবাদকে প্রচারণায় সাহায্য তো করেনই।’ ‘হাত বাড়িয়ে দাও’ অনুবাদের পূর্বে (ঘৃণ্য ঢাকা শহর, মিথ্যাবাদী মুজিব, মুক্তিবাহিনীর হত্যাযজ্ঞ এবং misunderstood বেচারা ভুট্টো) এবং অনুবাদের পরবর্তীতে (বিপদজনক এবং সর্বতোভাবে প্রতিরোধ্য মুসলিম সমাজ) বর্ণিল রূপ নিয়ে যে ফাল্লাচি আমাদের মাঝে বিরাজমান – তাকে বৃহত্তর একটি পাঠক গোষ্ঠীর কাছে সতর্কতাবানীহীন গ্রহণযোগ্যতাসহ পরিচয় করিয়ে দেয়ার কৃতিত্ব যে ব্যক্তির, সেই আনু সাহেবের কাছে ফাল্লাচি বিষয়ে তার নিজস্ব মূল্যায়ন জানতে চাওয়া আপনার কাছে অসঙ্গত মনে হল কেন? একজন সক্রিয় বুদ্ধিমান রাজনৈতিক বিশ্লেষক কি কেবলই একজন naive আক্ষরিক অনুবাদক? যিনি কিনা একটি বৃহত্তর তরুণ গোষ্ঠীর মনন নির্মাণে ভূমিকা রাখেন – তার কি কোনোই দায়-দায়িত্ব থাকে না? এখন পাঠক হিসেবে আমি ফাল্লাচির মূল্যায়ন আনু সাহেবের কাছে দাবী করবো না তো কার কাছে দাবী করবো? পাশের বাড়ীর কাকুর কাছে?
২.
ইয়াসমিন সাইকিয়ার প্রসঙ্গটিতে তার একজন মুগ্ধ অনুবাদক হিসেবে আপনি জোরালো প্রতিবাদ এবং ব্যাখ্যার দাবী জানিয়েছেন। আপনার এই জোরালো দাবী আমাকে অনুপ্রাণিত করছে সাইকিয়া প্রসঙ্গে একটি পৃথক পোস্টে এর জবাব দিতে। একটু ধৈর্য্য ধরতে বিনীত অনুরোধ করি, সেখানেই আশা করি আমরা আলোচনাটি আরও বিস্তৃত পরিসরে করতে পারবো। এই পোস্টটি ওরিয়ানা ফাল্লাচিকে নিয়েই থাকুক।
রেজাউল করিম সুমন - ২২ মার্চ ২০১০ (৯:৫১ অপরাহ্ণ)
১
মুনিমকে অসংখ্য ধন্যবাদ এরকম একটি ‘জ্ঞানচক্ষু-উন্মীলক’ লেখার জন্য।
মনে পড়ে গেল, বিশ্বখ্যাত ইরানি পরিচালক আব্বাস কিয়ারোস্তামি-র ক্লোজ আপ ছবিতে এক সাংবাদিককে আমরা দেখেছি, যিনি ওরিয়ানা ফাল্লাচির বন্ধু এবং ফাল্লাচির মতোই তাক-লাগানো একটা প্রতিবেদন তৈরি করবেন বলে ভয়ানক উত্তেজিত।
হাত বাড়িয়ে দাও পড়ে মুগ্ধ হয়েছিলাম, কিন্তু বাংলা অনুবাদে ইন্টারভিউ উইদ হিস্ট্রি বইটা আর কেনা হয়নি। বইয়ের দোকানে দাঁড়িয়েই আলোচ্য ‘সাক্ষাৎকার’-এর অংশবিশেষ পড়া হয়ে গিয়েছিল, পুরোটা পড়ার ইচ্ছে হয়নি। তখন ভাবতে পারিনি যে, যুদ্ধাপরাধীরা সেই লেখাটিকেই একদিন শেষ খড়কুটোর মতো আঁকড়ে ধরবে!
২
National Geographic পত্রিকার ১৯৭২ সালের সেপ্টেম্বর সংখ্যার প্রচ্ছদ নিবন্ধ ছিল বাংলাদেশ নিয়ে — ‘Bangladesh: Hope Nourishes a New Nation’; William S. Ellis-এর সেই লেখার সূচনাংশ :
উদ্ধৃতি হয়তো একটু দীর্ঘই হয়ে গেল। কিন্তু এর সঙ্গে ফাল্লাচির বক্তব্যের মূল সুরের তুলনা করলে ভদ্রমহিলার ‘মন’ পড়তে সুবিধা হবে আমাদের।
ব্লাডি সিভিলিয়ান - ২৩ মার্চ ২০১০ (২:৪৪ অপরাহ্ণ)
ঠিক আছে।
কিন্তু, ফারুক ওয়াসিফ যেমন বলেছেন,
এটাও নেহাৎ মিথ্যে নয়।
তবে, মুজিবের বিরুদ্ধে অপপ্রচার খণ্ডনে বামপন্থীদের তেমন প্রবল ভূমিকাও দ্রষ্টব্য নয়। তিনি কিন্তু কমিউনিজম (তাঁর ধাঁচে) পত্তন করতে গিয়েই ম’লেন।
লেখাটা দেখিতে পারেন।
লোপা তাসনীম - ২৩ মার্চ ২০১০ (৯:৩৩ পূর্বাহ্ণ)
মূ্ল লেখাটি এবং মন্তব্য – ভাল লাগলো।
ফারুক ওয়াসিফ - ২৩ মার্চ ২০১০ (৬:৩৭ অপরাহ্ণ)
বাংলাদেশের বামপন্থিদের মস্কোপন্থি ন্যাপ-সিপিবি তো দলটা পর্যন্ত বিসর্জন দিয়ে মুজিবের বাকশালে সামিল ছিলেন। উভয়ের জাতীয়তাবাদ ও মতাদর্শও একই গোত্রের। মুজিব হত্যার পরো তারা প্রথম দিকের প্রতিবাদী। এ অবধি সেটাই তারা করে আসছেন।
চীনাপন্থিদের মধ্যে অধপতিতদের নিয়ে নতুন করে কিছু বলবার নাই।
কিন্তু সমালোচনা, বিরোধিতা আর অপপ্রচারের মধ্যে পার্থক্য করতে হবে।
@ অষ্মিতা, আমার অপেক্ষা থাকবে। কিন্তু ধান ভানতে গিয়ে এই শিবের গীত না গাইলেও চলে। তাতে আলোচনাটা বন্ধুত্বপূর্ণ থাকে।
ফারুক ওয়াসিফ - ২৩ মার্চ ২০১০ (৬:৩৮ অপরাহ্ণ)
মুক্তাঙ্গনের কপিরাইট জনিত আপত্তি না থাকলে, কিংবা সাইকিয়াকে শর্মিলা বোসের সমতুল্য ভাবার অবস্থান না থাকলে সাইকিয়ার লেখাটি আমিই তুলে দিতে পারি কয়েক কিস্তিতে।
মুক্তাঙ্গন - ২৪ মার্চ ২০১০ (৩:২৪ পূর্বাহ্ণ)
@ ফারুক ওয়াসিফ,
রিপোস্ট নীতির কারণে আপনার ২০০৮ এর অনুবাদ-পোস্টটি মুক্তাঙ্গন এ প্রকাশ করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে আপনি সবগুলো খন্ড একত্র করে একটি ওয়ার্ড কিংবা পিডিএফ ফাইল হিসেবে মডারেশন ঠিকানায় (muktangon.moderators@gmail.com) পাঠাতে পারেন। তাহলে ফাইলটি সার্ভারে আপলোড করে একটি ডাউনলোড-লিন্ক দিয়ে দেয়া যেতো, এমনকি এই আলোচনাতেই।
@ অস্মিতা,
আপনি যদি সাইকিয়া বিষয়ে পোস্টটি লেখার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন, তাহলে আশা করি সেখানে রেফারেন্স হিসেবে ফারুক ওয়াসিফের সম্পূর্ণ অনুবাদটির পিডিএফ লিন্ক উল্লেখ করতে আপনার কোন আপত্তি থাকবে না।
ধন্যবাদ।
মুক্তাঙ্গন
ফারুক ওয়াসিফ - ২৪ মার্চ ২০১০ (৩:৫৮ অপরাহ্ণ)
প্রথম আলোর ব্লগে সাইকিয়ার লেখার প্রায় দশ ভাগের এক ভাগ অর্থাত প্রথম কিস্তিটাই দেওয়া হয়েছিল। পরে আর কিছু যোগ করা হয়নি। সে হিসাবে এটাকে কি রিপোস্ট বলা যাবে? আমি জানি না।
অষ্মিতা সাইকিয়াকে নিয়ে পোস্ট লিখবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আর আমি বলেছি সাইকিয়ার মূল লেখাটাই তুলে ধরার কথা। রেফারেন্স হিসেবে নয়, সাইকিয়াকেই তুলে ধরে তার মূল্যায়ন করার জন্য। পোস্ট-রিপোস্টের প্রসংগটি ছাড়া তাহলে কীভাবে এই প্রশ্ন আসে:
আমি পরিষ্কার নই, একজন সহব্লগারের ব্যক্তিগত আপত্তি-অনাপত্তির বিষয়টি এখানে কীভাবে প্রাসঙ্গিক??? প্রশ্নটা মুক্তাঙ্গনের কাছে।
অস্মিতা - ২৪ মার্চ ২০১০ (৫:৪১ অপরাহ্ণ)
@ মুক্তাঙ্গন প্রশাসক @ ফারুক ওয়াসিফ
সাইকিয়া নিয়ে পোস্ট লেখার ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলাম। উদ্দেশ্য সাইকিয়ার ‘মূল লেখাটিই’ (‘Beyond the Archive of Silence: Narratives of Violence of the 1971 Liberation War of Bangladesh’ History Workshop Journal), নিশ্চয়ই ব্যক্তি সাইকিয়া নয়! যেহেতু ফারুক ওয়াসিফের ‘ব্যাখ্যা চাওয়ার’ পরিপ্রেক্ষিতেই এই প্রতিশ্রুতির সূচনা, তাই সাইকিয়ার মূল ইংরেজী লেখাটির লিন্ক (সাথে ফারুক ওয়াসিফের করা বঙ্গানুবাদটির লিন্ক) স্বাভাবিকভাবেই পোস্টটির জন্য প্রাসঙ্গিক হয়। এ নিয়ে অনর্থক জটিলতার তো কোন কারণ দেখি না। বলতেই হচ্ছে – এই সব হুজ্জতি ভালো লাগছে না।
ফারুক ওয়াসিফ - ২৪ মার্চ ২০১০ (৭:১৫ অপরাহ্ণ)
>অষ্মিতা,
সাইকিয়া প্রসংগে বলতে তার ন্যারেটিভ অব ভায়োলেন্স লেখাটির কথাই বোঝাতে চেয়েছি।
আমার প্রশ্নটি ছিল মুক্তাঙ্গনকে যে, সাইকিয়ার লেখাটি ধারাবাহিকভাবে তুলে দেওয়া যায় কিনা এবং এটির সামান্য খন্ডাংশ অন্য একটি ব্লগে বছর খানেক আগে প্রকাশিত হওয়ায় বাকি অংশ এখানে প্রকাশ করা রিপোস্ট হবে কিনা। জবাবের মুক্তাঙ্গন কতৃপক্ষের অ্যাপ্রোচটি (আপনার আলোচনার রেফারেন্স হিসেবে লিংক ইত্যাদি) সঙ্গত মনে হয়নি। হুজ্জত কিছু হয়নি এবং আমি বা আপনি কোনো অতিরিক্ত কথাও বলিনি। মুক্তাঙ্গন কতৃপক্ষেরই উচিত ছিল বিষয়টা পরিষ্কার করা।
খামাখা হুজ্জতের ফিলিং নিজে নেবেন না, আমাকেও দেবেন না।
> মুক্তাঙ্গন,
আমার পোস্ট মডারেশন স্ট্যাটাসে যাচ্ছে। কেন যাচ্ছে তা আমাকে বলা হয়নি। যতদুর মনে পড়ে আমি এ বিষয়ে একটা মেইল-ও করেছিলাম। কারণ থাকতেই পারে, কিন্তু তা জানাটা আমার অধিকার। প্রথম দিকে অন্য ব্লগের লেখা এখানে দেওয়ায় নিষেধ ছিল না বলে জানতাম। তারপর নতুন নিয়ম হলে, আমার নতুন লেখা ছাড়া প্রিন্ট মিডিয়ায় দেওয়া লেখাই এখানে প্রকাশ করে আসছি। সেক্ষেত্রে সমস্যাটা কোথায়?
মুক্তাঙ্গন - ২৬ মার্চ ২০১০ (২:৪৯ অপরাহ্ণ)
@ ফারুক ওয়াসিফ
নিশ্চয়ই এটি জানতে চাওয়া আপনার অধিকার। আপনার জ্ঞাতার্থে — সরাসরি মডারেশন ছাড়া পোস্ট প্রকাশের ব্যবস্থাটি চালু করা হয়েছিল ‘পরীক্ষামূলক ভিত্তিতে’ এবং তা বেশ আগেই বন্ধও করে দেয়া হয়েছে, নিতান্ত বাধ্য হয়েই। কারণ, এখানকার একাধিক লেখক সাধারণ নিয়মগুলো না মেনে পোস্ট করা শুরু করেছিলেন, পরে যা নিয়ে সকলের জন্যই বিব্রতকর পরিস্থিতির উদ্ভব হচ্ছিল। মডারেশন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই এখন সব লেখাকে যেতে হয়, সেটি এমনকি মডারেশন টিমের সদস্যদের লেখার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য, ব্লগারদের মধ্যে কোনো ধরণের শ্রেণীবিন্যাসগত পার্থক্য ছাড়াই। প্রসঙ্গত, এই বিষয়ে কোনো আপত্তি থাকলে সেটি জানানোর একমাত্র ঠিকানা হলো মুক্তাঙ্গন-এর মূল মডারেশন ঠিকানা (muktangon.moderators@gmail.com)। আমাদের মেসেজ আর্কাইভ পরীক্ষা করা হয়েছে; আপনাকে জানাতে পারি, সেই ঠিকানায় আপনার কাছ থেকে এই বিষয়ে এমন কোনো ইমেইল এসে পৌঁছায়নি। আপনার পাঠানো ইমেইলটির কপি দয়া করে (বিস্তারিত সার্ভার-তথ্যসহ) উপরের ঠিকানায় পাঠিয়ে দিন। ইমেইলটি আমাদেরও পরীক্ষা করে জানা দরকার, ঠিক কী কারণে এসে পৌঁছায়নি!
আপনার এই জানতে চাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতেই প্রশ্ন করি: এ পর্যন্ত আপনার কোনো পোস্টের প্রকাশ কি মডারেশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ‘বন্ধ’ করা হয়েছে?
আপনি ব্যাখ্যা করেছেন (# ১২.১.১) যে আপনার বঙ্গানুবাদটির প্রথম খণ্ড কেবল প্রথম আলো ব্লগে ছাপানো হয়েছে। সেক্ষেত্রে আপনার উল্লেখিত কপিরাইটজনিত সমস্যা ছাড়াও রিপোস্ট সংক্রান্ত নীতিমালার আলোকে একে কিছুটা ভিন্নভাবে দেখার সুযোগ হয়তো রয়েছে। কিন্তু তাতে যাওয়ার আগে, উদ্ভূত পরিস্থিতির আলোকে অন্য কিছু বিষয়ও বিবেচনায় আনা প্রয়োজন বলে মনে করি। ইয়াসমিন সাইকিয়ার লেখাটিকে নিয়ে খণ্ড খণ্ড আলোচনা এই ব্লগেও আগে বেশ কয়েকবার হয়েছে। মূ্ল্যায়নধর্মী পূর্ণাঙ্গ আলোচনা সেভাবে হয়নি, এবং সেটি হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে এখানকার একজন সহ-ব্লগার অস্মিতার অভিপ্রায় প্রকাশের পরিপ্রেক্ষিতে। এই আলোচনাটি কেন্দ্রীভূতভাবে এক জায়গায় হলে নিশ্চয়ই মুক্তাঙ্গন-এর পাঠকদের জন্যও তা অনুসরণ করা অনেক বেশি সহজ হয়, একই বিষয়ে দুটি আলাদা পোস্টে অংশগ্রহণের তুলনায়। যাঁরা এই ব্লগে সময় নিয়ে, কোনো ধরণের পার্থক্য না করে, দীর্ঘ মন্তব্য দেন, বলা বাহুল্য, তাঁদেরও অনেক সময় বাঁচে এতে। অন্য পোস্টে আপনার যদি ‘মূ্ল্যায়নধর্মী’ (সাইকিয়ার মূল লেখা বিষয়ে) কোনো বক্তব্য থেকে থাকে তা নিশ্চয়ই সেখানে প্রদান করতে আপনার কোনো আপত্তি থাকবে না। এই ক্ষেত্রে আমরা দেখতে পাচ্ছি মূল্যায়নধর্মী লেখার উদ্যোগটি অস্মিতাই আগে নিয়েছেন, আপনার মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতেই। এর পরও আপনি যদি মনে করেন ‘মূল্যায়নধর্মী বক্তব্য’ (অনুবাদ নয়) আপনি অন্যের পোস্টে মন্তব্য আকারে দেবেন না, নিজের পৃথক পোস্ট আকারে দেবেন, তাহলে সে স্বাধীনতা তো আপনার সব সবময়ই থাকছে।
আপনি যদি সাইকিয়ার মূল ইংরেজি লেখাটির কথা বুঝিয়ে থাকেন, তাহলে সেটি পৃথকভাবে পাঠানোর (‘তুলে ধরার’) প্রয়োজন নেই। কারণ, সেটি WCSF-এর ই-লাইব্রেরিতে রয়েছে, ডাউনলোডযোগ্য পুরো টেক্সটসহ। যে-কোনো লেখকই সেখানকার লিংক সরবরাহ করতে পারছেন বা সেখান থেকে উদ্ধৃত করতে পারছেন।
আর যদি এখানে আপনার করা দু’বছর আগে প্রকাশিত অনুবাদটি বুঝিয়ে থাকেন — তাহলে আমাদের বোঝা মতে সেটি একটি ‘অনুবাদ’, ‘পূর্ণাঙ্গ মূল্যায়ন’ নয়। (আপনার সেই লেখার ভূমিকাতে আপনিও জানিয়েছেন সেটি একটি ‘ধারাবাহিক অনুবাদ’)। এক্ষেত্রে আমরা মনে করি, সাইকিয়ার লেখাটির মূল্যায়নের সময় এর মূল টেক্সট (অর্থাৎ, মূল ইংরেজি লেখাটি) ধরেই আলোচনা এগোনো অধিকতর যুক্তিযুক্ত। কারণ, যুদ্ধাপরাধ এবং তৎসংশ্লিষ্ট কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিভাষাগত বিষয় রয়েছে, যে-সবের আলোচনা সাইকিয়ার মূল ইংরেজি লেখাতে তিনি নিজে যেভাবে প্রয়োগ করেছেন তাকে কেন্দ্র করে এগোনোই সমীচীন। উপরের মন্তব্যে আমরা দেখছি, অস্মিতাও সেই মূল ইংরেজি লেখাটিকে অবলম্বন করেই আলোচনা করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন। এ কারণেই বঙ্গানুবাদটি রেফারেন্স হিসেবে দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছিল, যাতে চাইলে আপনার করা বাংলা অনুবাদটিও কেউ সমান্তরালে দেখে নিতে পারেন।
যে বিষয়টি আমাদের কাছে স্পষ্ট হয়নি তা হল — সাইকিয়ার মূল লেখার আলোচনাকেন্দ্রিক অস্মিতার পোস্টে যদি আপনার অনুবাদটি লিংক হিসেবে সরবরাহ করা হয় তাহলে তাতে আপনার কোনো আপত্তি আছে কি না। আপত্তি থাকলে জানিয়ে দিতে পারেন। লেখক এবং অনুবাদকের অভিপ্রায় নিশ্চয়ই সম্মানযোগ্য।
@ অস্মিতা
মতামত, বিতর্ক, সমালোচনা এই বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে খানিকটা হুজ্জতির মধ্য দিয়ে সবাইকেই যেতে হয়। নিজ নিজ অবস্থান, প্রশ্ন এবং দ্বিমত স্পষ্টকরণে এটি হয়তো স্বাস্থ্যকরও।
ধন্যবাদ।
মোহাম্মদ মুনিম - ২৩ মার্চ ২০১০ (৮:৩৯ অপরাহ্ণ)
বংগবন্ধুকে নিয়ে কাল্ট তৈরির চেষ্টা তো ১৯৯৬ থেকে ২০০১ এও হয়েছে, বাংলাদেশের যাবতীয় হাসপাতাল, স্কুল, কলেজ, সেতু, সড়ক এবং বিমানবন্দর বংগবন্ধুর নামে করার চেষ্টা হয়েছে। একই সাথে জিয়ার মাজারের সেতু ভেঙ্গে দেয়া হয়েছিল, তিনি একজন অখ্যাত মেজর, স্বাধীনতার কোন ঘোষণাই তিনি দেননি। ৯৭ কি ৯৮ এ চট্টগ্রামের আবদেল মান্নান ভাই জাতীয় যাদুঘরে ‘চট্টগ্রাম ৭১’ প্রদর্শনী করলেন, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রফিকুল ইসলাম এলেন, উদ্বোধন করলেন, তিনি ব্যস্ত মানুষ, চলে যাবেন। এমন সময় ভিড় ঠেলে এক লোক একটা খোলা বই নিয়ে এলেন “রফিক ভাই, দেখেন, দেখেন, জিয়ার নামে কি লিখেছে, কোথাকার কোন জিয়া, কালুরঘাটে কি বীরত্ত্ব দেখিয়েছে, সব মিথ্যা কথা, এগুলো তো পাল্টাতে হবে”। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সময় নেই, তিনি সবিনয়ে বললেন, ভাই আমার একটু তাড়া আছে, আপনি আমার সাথে পরে যোগাযোগ করুন। ক্ষমতার পট পরিবর্তন হয়, ইতিহাস নতুন করে লেখা হয়। কিন্তু শেখ কামালের ব্যাঙ্ক ডাকাতির গুজব, সেটা থেকেই যায়, সেই গুজবটাই ইতিহাস হয়ে যায়। ৭ ই মার্চের ভাষনের চেয়েও শক্তিশালী হয়ে যায় ব্যাঙ্ক ডাকাতির ইতিহাস। একজন মহান নায়কের জীবনের সব সবকিছুই মিথ্যা হয়ে যায়, যখন তাঁর পুত্র তিনি ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় ব্যাঙ্ক ডাকাতি করে।
ফালাচিকে ভুট্টো অনেক কথা বলেছেন, মুজিবর মিথ্যাবাদী, লোক ক্ষেপানো ছাড়া আর কিচ্ছু পারে না। লন্ডনে বলে এক মিলিয়ন মারা গেছে, দেশে গিয়ে বলে তিন মিলিয়ন। ফালাচি একজন পরাজিত রাষ্ট্রনায়কের মনের কথা লিখে নিজেকে মহান কিছু মনে করেন। কিন্তু ব্যাপারটা তো এখানেই শেষ নয়। ৭৪ এ ভুট্টো বাংলাদেশে এলেন, তাঁর ‘রক্তমাখা’ হাত মুজিব জড়িয়ে ধরলেন, পাকিস্তান বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়ে দিল। ১৫ আগস্ট, ১৯৭৫, মুজিব নিহত হলেন, ভুট্টো তার ছেলেমেয়েদের ঘুম থেকে ডেকে তুলে বললেন তোমাদের ‘মুজিবর চাচাকে’ মেরে ফেলেছে। তিনি সারারাত বসে রইলেন, মিথ্যাবাদী মুজিবরের জন্য তাঁর এত দরদ কেন। দরদ কি এইজন্য নয় যে, ৬৯ তে এই মুজিবরই তো ‘ওদিক’ থেকে আওয়াজ তুলে, লোক ক্ষেপিয়ে আওয়ুব কে ফেলে দিল। আজ ক্যান্টনমেন্টের কোন শালা যদি বাড়াবাড়ি করে, আমি কি করবো। আমি মার্ক্স জানি, এঙ্গেলস জানি, গ্যারিবল্ডি জানি, কিন্তু আমি তো লোক ক্ষেপাতে জানি না। করাচী তো ভরে গেছে মোহাজিরে, ইন্ডিয়ার মোহাজিরে, সব শালা ইন্ডীয়ার দালাল, আমার পিপিপি তো লোক জমাতে পারে না। মুজিবরকে আমি বিশ বছর ধরে জানি, ক্যান্টনমেন্টের কোন শালা যদি বাড়াবাড়ি করে, মুজিবর আমাকে বাঁচাতে আসবে, মুজিবর আজ অন্য দেশের প্রেসিডেন্ট, কিন্তু আমি ডাকলে না করতে পারবে, নিশ্চয় আসবে। ইতালিয়ান এক মেমসাহেব, চুল খুলে, সার্টের উপরের দুটো বোতাম খুলে, সারা দুনিয়াতে নাটক করে বেড়াচ্ছেন, তাতে ভুট্টোর কিছুই যায় আসে না।
১৯৭৭ এর এপ্রিলে ফালাচীর অমর গ্রন্থ, Interview with History বেরুল, ভুট্টো তখন মহা বিপদে, ক্ষমতা চলে যাবে, চলেও গেল, জুলাইয়ে। ভুট্টোর নামে মামলা হলো, ৭৪ এর মার্চে কোন এক বৃদ্ধকে হত্যার ষড়যন্ত্রের অভি্যোগে। ১৯৭২ এর ভুট্টোকে সবাই ভুল বুঝেছে, শুধু ফালাচী ছাড়া, সেই নিয়ে বই। সেই বই কজনে পড়েছে কে জানে, তবে সেই বই ভুট্টোর কোন কাজে আসেনি, ১৯৭৯ এর মার্চে ভুট্টো ফাঁসিতে ঝুললেন। ৭২ এ ফালাচীকে ভুট্টো অনেক ভাল ইন্টারভিও দিয়েছেন, ১০০ তে ১০০ পেয়েছেন, মুজিবর পেয়েছে ২০। সেই ইন্টারভিউয়ার ফালাচী তখন ব্যস্ত আরেক নাটক নিয়ে, ইরানের শাহ পালিয়েছেন, খোমেইনি ক্ষমতায় আসবেন, সেই খোমেইনিকে কঠিন প্রশ্ন করতে হবে, তাঁর সাথে নাটক করতে হবে। Misunderstood ভুট্টোকে নিয়ে ফালাচির কোনই আগ্রহ নেই।
এখন ফালাচীর সেই অমর গ্রন্থ out of print. তবে পুরনো পাওয়া যায়, প্রতি কপি ৪ ডলার। খুঁজলে আরও সস্তায় পাওয়া যায়, ৫০ সেন্ট, এক বাক্স পুরনো বইয়ের সাথে কিনলে আরো সস্তা, ১০ সেন্ট। এমন বই আমেরিকাতে প্রতি বছর বের হ্য়, হাজার হাজার, চার্চিল ড্রেসডেনে কত লোক মেরেছিলেন? ২০ হাজার, ৫০ হাজার, ১ লাখ, দেড় লাখ? চার্চিল গান্ধিকে ন্যান্টি পরা ফকির বলেছেন, ভারতীয়দের চোর বলেছেন, মদ্যপ অবস্থাতে কাঁপা কাঁপা হাতে এক রাতের মধ্যে জর্ডান নামের দেশ তৈরি করছেন, বইয়ের পর বই লেখা হয়, লোকে পড়ে আর ভুলে যায়। চা্চিল বুশ সাহবের প্রিয় নেতা, চেনি সাহেবের প্রিয় নেতা, মেয়র জুলিয়ানির প্রিয় নেতা, তাঁদের চিরশত্রু সাদ্দাম হোসেনেরও প্রিয় নেতা, এমনকি মুজিবরেরও প্রিয় নেতা। কারণ চার্চিল চুরুট মুখে বুক ফুলিয়ে হেটেছেন লন্ডনে, রূটির মত জার্মান বোমা পড়ছে, তাতে ভ্রুক্ষেপ না করে চার্চিল বুক ফুলিয়ে হেঁটেছেন। সেটাই আসল চার্চিল। যেমন আসল মুজিবর ৪৬ এর দাঙ্গার লড়কে লেঙ্গে পাকিস্তানের মুজিবর, কংগ্রেসের পান্ডা ‘শিবু গুন্ডা’ হুমকি দিচ্ছে, মুসলমান বস্তির সব কটাকে ‘রগড়ে’ দেবে, মুজিবর লাঠি হাতে দাঁড়িয়ে গেছে। সেখান থেকেই ‘process’ শুরু, তারপর ৫২ এর মুজিবর, ৬৯ এর মুজিবর, ৭১ এর মুজিবর। কিন্ত সবই মিথ্যা, কারণ মুজিবরের ছেলে ব্যাঙ্ক ডাকাত।
ব্লাডি সিভিলিয়ান - ২৪ মার্চ ২০১০ (২:৫৯ অপরাহ্ণ)
@ রেজাউল করিম সুজন: আমারো জানা নেই। দয়া করে জানাবেন কি?
অগ্রিম ধন্যবাদ।
ব্লাডি সিভিলিয়ান - ২৪ মার্চ ২০১০ (৩:১৫ অপরাহ্ণ)
ইশ, ইশ, টাইপো।
সুজন নয়, সুমন।
দারুণ দুঃখিত।
আসলেই।
বয়েস বাড়ছে. তাই জানান দিচ্ছে!
কামরুজ্জামান জাহাঙ্গীর - ২৫ মার্চ ২০১০ (৮:০৩ পূর্বাহ্ণ)
ব্লাডি সিভিলিয়ান, আপনি তো টাইপে ভুল করে সুমনকে সুজন লিখে দিলেন, আর আমি তো খোলা চোখে সুজনকে সুমন পড়ে ফেলেছি। আপনি সংশোধনী না দিলে তা ধরতেই পারতাম না। মেন্টাল সেটাপ বোধ হয় লেখাকেও উল্টে দেয়!
যাই হোক, মোহাম্মদ মুনিম অনেকটাই ’খোলা দিলে’ সবকিছু দেখতে চেয়েছেন। তার পোস্টযাত্রা শুভ হোক।
পুরো আয়োজনটি নিয়ে বিস্তৃত করে বলার বাসনা রেখে আপাতত সংক্ষিপ্তভাবেই মন্তব্য শেষ করছি।
রেজাউল করিম সুমন - ৩০ মার্চ ২০১০ (৯:৪৬ অপরাহ্ণ)
@ ব্লাডি সিভিলিয়ান (মন্তব্য # ১৪)
অনেকেই তাঁকে বামপন্থী সংগঠকদের মধ্যে অগ্রগণ্য বলে মনে করেন। তাঁর অনুরাগীদের মুখে এমনও শুনেছি যে, তাঁর লেখাজোকা (ইংরেজি) নাকি পশ্চিমের (ব্রাসেল্স্ সহ আরো নানা জায়গার) বাম-শিবিরে সমাদৃত; অধুনা তা অনলাইনেও প্রাপ্তব্য। আমি একবার দু-খণ্ডের রচনাবলি কেনার প্রস্তাব পেয়েছিলাম, এখন জানতে পারছি আসলে তা চার খণ্ডে প্রকাশিত। তাঁর কয়েকটি লেখা পুস্তিকা আকারেও ছাপা আছে — বাংলাতেই; গোটা তিনেক আমার সংগ্রহে আছে। তাঁর নাম এত বেশি প্রচারিত যে নতুন করে বলার অপেক্ষাই রাখে না! আলোচনা প্রসঙ্গচ্যুত হতে পারে এই আশঙ্কায় আপাতত সে-নামটা এখানে অনুচ্চারিত রাখাই ভালো।
ইয়াসিন আরাফাত - ২৭ মার্চ ২০১০ (৯:৩১ অপরাহ্ণ)
মাথা জ্যামহওয়ার মত বহু তথ্য ঢুকালাম। লিখাটির সাথে মন্তব্য পাঠেও ধন্য হয়েছি।
ফাল্লাচি সম্পর্কে বেশি কিছু জানা ছিল না, তার ‘হাত বাড়িয়ে দাও’ ( আনু মোহাম্মদ অনুদিত ) আমার খুব ভালোলাগা একটি বই।
ইমতিয়ার - ৩১ মার্চ ২০১০ (১২:৪৭ পূর্বাহ্ণ)
আরও অনেকের মতো, আমিও ওরিয়ানা ফালাচীর প্রথম যে-লেখাটি পড়ি, সেটি হাত বাড়িয়ে দাও। এবং মুগ্ধও হই আরও অনেকের মতো। এই বইকে ঘিরে সেই মুগ্ধতা, অস্বীকার করব না, এখনও আছে। এবং অনিবার্যভাবে ওই মুগ্ধতার পথ ধরে ওরিয়ানার আরও লেখা পড়বার আগ্রহ গড়ে ওঠে।
হাত বাড়িয়ে দাও ছাপা হয়েছিল সম্ভবত সাপ্তাহিক বিচিত্রার ঈদসংখ্যায়। তার অনেক পরে ইন্টারভিউ উইথ হিস্ট্রি হাতে পাই ১৯৯২ সালে। কিন্তু বইটিতে ইন্দিরা আছেন, ভুট্টো আছেন, আরও অনেকে আছেন, অথচ শেখ মুজিব নেই। কেন নেই, তারও কোনও উল্লেখ নেই ভূমিকায়। এক বন্ধু অবশ্য জানিয়েছিলেন, এশিয়ান নেতাদের সাক্ষাৎকারের সংকলনে এই সাক্ষাৎকারটি আছে। কিন্তু সে বইয়েরও কোনও হদিস পাইনি।
প্রসঙ্গত বলি, অস্মিতা কোনও বইয়ের ভূমিকা বা পাদটিকা সম্পর্কে যে-কথাগুলি লিখেছেন, শিশুকিশোরদের নন-ফিকশন বাদে, ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি সেগুলি অবশ্যই প্রযোজ্য। মার্কস, এঙ্গেলস এবং লেনিনের কথাই ধরা যাক – প্রতিটি বইয়ের নতুন সংস্করণের জন্যে, প্রতিটি ভাষার নতুন সংস্করণের জন্যে আলাদা আলাদা ভূমিকা লিখেছেন তারা, সেই ভূমিকায় যুক্ত করেছেন প্রাসঙ্গিক ভাষ্য এবং মূল্যায়ন। প্রয়োজনীয় পাদটিকা দিয়েছেন, কেন নতুন সংস্করণের প্রয়োজন হলো সে প্রসঙ্গে নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরেছেন। সে অর্থে, হাত বাড়িয়ে দাও বইটির অনুবাদে আনু মুহাম্মদ যদি একটি প্রাসঙ্গিক ভূমিকা যুক্ত করতেন তা হলে নিশ্চয়ই ভালো হতো। খুবই ভালো হতো।
কিন্তু সেটি করেননি বলেই যে শেখ মুজিব সম্পর্কে আনু মুহাম্মদ ফালাচীর মতো বিবেচনাহীন, সেটি আমার ব্যক্তিগত ভাবে মনে হয় না। আমি নিজে আনু মুহাম্মদ-এর এমন কোনও লেখা পড়িনি, যাতে আনু মুহাম্মদ বঙ্গবন্ধুকে সমালোচনা করতে দিয়ে ফালাচীকে সাক্ষী মেনেছেন। বরং ১৯৭৪-এর দুর্ভিক্ষ ও খাদ্যসঙ্কট নিয়ে আনু মুহাম্মদের একটি ছোট বই পড়েছিলাম (নাম মনে নেই, দুঃখিত), যাতে তিনি ওই দুর্ভিক্ষের জন্যে ব্যক্তি বা শাসক মুজিবকে নয়, বরং সাম্রাজ্যবাদকেই দায়ী করেছিলেন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কিউবা নীতি যে বাংলাদেশের জন্যে ১৯৭৪-এ কী বিপর্যয় নিয়ে এসেছিল তা একাডেমিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে তুলে ধরেছিলেন।
যাই হোক, ফালাচীর নেয়া ইন্দিরার ইন্টারভিউ আমার মুগ্ধতা আরও বাড়িয়ে দেয়। আমার তো এখনও মনে হয়, ইন্দিরা বোধহয় অন্য কোনও সাক্ষাৎকারেই নিজেকে এমন করে মেলে ধরেননি, আর কোনও সাক্ষাতেই তার জীবন ও দৃষ্টিভঙ্গি এত সুন্দরভাবে উঠে আসেনি। গোল্ডিং-এর সাক্ষাৎকারটিও খুব ভালো লেগেছিল।
কিন্তু বঙ্গবন্ধুর সাক্ষাৎকার কোনওখানে পাই না- কী করা যায়! শেষ পর্যন্ত আমার এক বন্ধু ঢাকা ডাইজেস্ট-এর কয়েকটি কপি সরবরাহ করলেন, যেগুলিতে কয়েকটি সংখ্যায় ফালাচীর মুজিব, ইন্দিরা ও ভুট্টোর সাক্ষাৎকার অনুবাদ করে ছাপানো হয়েছে। এবং মুজিবের নেয়া সাক্ষাৎকারটি পড়তে পড়তে আমি বিস্মিত হই। এটি ঠিক ওই অনুবাদ তত সুন্দর নয়, মোহাম্মদ মুনিম যে-লিংকটি দিয়েছেন, তা থেকে সেটি যে কেউ পড়তে পারবেন। কিন্তু অনুবাদের মানের কারণে আমি বিস্মিত হইনি, যদিও পড়তে পড়তে দেখেছি, পত্রিকাটিতে প্রকাশিত অনুবাদে মাঝেমধ্যেই …. (ডটচিহ্ন) ব্যবহার করে খানিকটা অংশ বাদ দেয়া হয়েছে, তার মানে হয়তো বা প্রকাশক নিজের সুবিধা অনুযায়ী অথবা অনুবাদের অক্ষমতার কারণে অথবা অপ্রয়োজনীয় বিবেচনা করে কিছু কিছু অংশ বাদ দিয়েছেন। এ-ও হতে পারে ঢাকা ডাইজেস্ট তার সম্পাদকীয় নীতির কারণেই হয়তো কোনও কোনও বাক্য উহ্য রেখেছে। জানি না পরে বই আকারে তিনি এগুলি ছাপিয়েছেন কি না অথবা ছাপানোর সময় এগুলি ঠিক করেছেন কি না।
যে-বন্ধুর মাধ্যমে আমি ঢাকা ডাইজেস্ট-এর কপিগুলি পেয়েছিলাম, তার সঙ্গে ফালাচীর সাক্ষাৎকারের অনুবাদকেরও পরিচয় ছিল। আমি দীর্ঘদিন চেষ্টা করেছি, শেখ মুজিবের সাক্ষাৎকারের ইংরেজি কপিটি পাওয়ার। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বন্ধুটি তা সংগ্রহ করে দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। এখানে প্রসঙ্গত বলা উচিত, ঢাকা ডাইজেস্ট পত্রিকাটির সম্পাদকীয় নীতি ভালো না লাগায় আমি পত্রিকাটির নিয়মিত পাঠক ছিলাম না। সেই ঢাকা ডাইজেস্ট-এর অনুবাদে ফালাচীর দেখা বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু ছিল সত্যিই হোচট খাওয়ার মতো। প্রথমেই যে প্রশ্নটি মনে জেগেছিল, নয় মাস ধরে যে-দেশের জনগণ যুদ্ধ করল, একটি দেশ স্বাধীন করল, সেই জনগণের যুদ্ধ সম্পর্কে ওরিয়ানার এত অনীহা কেন? ইন্টারভিউ উইথ হিস্ট্রি বইতে দেখেছি, প্রতিটি সাক্ষাৎকারের আগেই ওরিয়ানা দীর্ঘ-নাতিদীর্ঘ ভূমিকা দিয়েছেন, তাতে দেশটির রাজনীতির নানা প্রসঙ্গও এসেছে। কিন্তু বাংলাদেশের জনগণের ১৯৪৮ থেকে শুরু করে ১৯৭১ অবধি আন্দোলন ও যুদ্ধের কিছুই তাতে কেন আকর্ষণ করেনি তা একটি বড় রহস্য। একটি দেশ রক্তস্নানের মধ্যে দিয়ে জেগে উঠেছে, অথচ তিনি সে সম্পর্কে কোনও বাক্য খরচ করেনি, কিন্তু কয়েকজন রাজাকারকে হত্যা করতে দেখে নিজেও প্রায় নিহত হয়েছেন। যদিও দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের একজন যোদ্ধা হিসেবে তার ভালো করেই জানার কথা যে একটি দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আইনশৃঙ্ক্ষলা পরিস্থিতি কত নিয়ন্ত্রণহীনতার মধ্যে দিয়ে যায়। তিনি নিজে মুসোলিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন, সেই মুসোলিনীকে যুদ্ধাপরাধের দায়ে হত্যা করে কয়েকদিন ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল; কোথায় তার লাশ ফেলে দেয়া হয়েছে অথবা পুতে রাখা হয়েছে তা কেউ জানে না; মুসোলিনীরই যখন এই অবস্থা তখন মুসোলিনীর সাঙ্গোপাঙ্গোদের ফালাচীর যোদ্ধাবন্ধু ও প্রিয় জনগণ কী করেছিল, তা আমরা খুব সহজেই অনুমান করে নিতে পারি। ফ্রান্সে ওই পরিস্থিতিতে হিটলার বাহিনীর সাহায্য করায় হাজার হাজার লোককে দিনের পর দিন বিচার ছাড়াই হত্যা করা হয়েছে। বাঙালি কিন্তু আদৌ অত নিষ্ঠুর হয়নি, বরং কেউ কেউ যুদ্ধের পর রাজাকার বনে যাওয়া আত্মীয়কে লুকিয়ে রেখেছে, শান্তি কমিটির নেতারা মুক্তিযোদ্ধাদের গোপনে সাহায্য করেছে এই দোহাই দিয়ে বাঁচিয়ে রেখেছে। ফালাচী যখন শুরু থেকেই কয়েকজন রাজাকার হত্যার বিষয়টিকে বড় করে দেখতে শুরু করেন, তখনই বোঝা যায় যার সাক্ষাৎকার তিনি নিতে যাচ্ছেন তাকে তিনি দেখার আগেই ঘৃণা করতে শুরু করেছেন এবং তিনি সেই মানুষটিকে উদ্ঘাটন করার বদলে অপদস্থ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে বসেছেন। বঙ্গবন্ধুর ক্ষেত্রে শেষ পর্যন্ত ফালাচী ঠিক তাই করেছেন।
অবশ্য মুনিম যেমন আউট অব প্রিন্ট বলে ফালাচীর গ্রন্থকে উপহাস করেছেন, আমি সেরকম উপহাস করতে পারছি না। এটি ঠিক পশ্চিমা মুল্লুকে অনেক বই কালক্রমে অনেক কম দামে পাওয়া যায়, কিন্তু সেই বইয়ের মধ্যে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বইও আছে। আমাজন ডট কমে দেখছি ফালাচীর এই বইটির দাম তিন পাউন্ড (ব্যবহৃত) থেকে শুরু করে ৮৬ পাউন্ড পর্যন্ত।
কিন্তু বইয়ের দাম কম বা বেশি কি না সেটি গুরুত্বপূর্ণ নয়। গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো, ফালাচীর নেয়া শেখ মুজিবুর রহমানের সাক্ষাৎকারটির ইংরেজি কপিটি কি কারও কাছে আছে? ইন্টারনেটে দেখতে পাচ্ছি, এটি ১৯৭২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ছাপা হয়েছিল রোমের একটি পত্রিকাটিতে। সেটির ইংরেজি অনুবাদই বা কে করেছিলেন? ইটালিয়ান ভাষা থেকে ইংরেজি অনুবাদে তা কতটুকু অক্ষুণ্ন ছিল? এমন কেউ কি আছেন যিনি এর ইতালিয়ান ও ইংরেজি দুটো অনুবাদই পড়েছেন। সেসবের সঙ্গে বাংলা ভাষার অনুবাদটি মিলিয়ে নেয়ার আগ্রহ আমার এখনও সেই ১৯৯২ সালের মতোই জীবন্ত রয়েছে।
দ্রষ্টব্য : কাল্ট প্রসঙ্গ এসেছে বিভিন্ন জনের বক্তব্যে। মুশকিল হলো, একদিকে আমরা কাল্ট উপেক্ষা করতে চাই, অন্যদিকে এ-ও বুঝি কাল্ট না হলে কোনও আন্দোলন দানা বাধে না, দেশ স্বাধীন হয় না, দেশ গড়েও ওঠে না। যারা যৌথ নেতৃত্বের কথা বলেন, তারাও বলেন, নেতৃত্বের পার্সোনিফিকেশন ঘটে। সেটি যদি ঘটেই থাকে, যতই চেষ্টা করি না কেন, আমরা কি পারব পাহাড় সরাতে? রবীন্দ্রনাথের তো কত সমালোচনাই করি আমরা, যৌক্তিক কারণেই করি, কিন্তু তারপরও কি শ্রদ্ধায় নত হই না? কিন্তু রাজনীতি এত বেশি প্রত্যক্ষ ও সংবেদনশীল যে, বিশেষত এইখানে কারও মধ্যে কাল্ট হওয়ার উপাদান দেখলেই আমরা শঙ্কিত হই, আর যারা শঙ্কিত হন না তারা সেই কাল্টের এত অপব্যবহার করতে থাকেন যে, শঙ্কাগুলির রাজনৈতিক ব্যবহারের পথ খুলে যায়। শেখ মুজিব একদিকে কাল্ট, অন্যদিকে ভিকটিম। দূর ভবিষ্যতে আহমদ ছফার এই কথাগুলিই সত্য হবে :
এই সত্য আবিষ্কার করতে পেরেছিলেন বলে আহমদ ছফা মাত্র দু’বার সাক্ষাতে শেখ মুজিবের কাছ থেকে পাওয়া কমলা রঙের, খুবই হালকা, যার ওজন এক কেজিও হবে না, কম্বলটি যতদিন বেঁচে ছিলেন রাতে জড়িয়ে ঘুমাতেন। কম্বলটি হাতছাড়া হওয়ার ভয়ে শীতের শেষে লন্ড্রি থেকে ধোলাই করে এনে তালাবদ্ধ করে রাখতেন।
বিনয়ভূষণ ধর - ৩১ মার্চ ২০১০ (৬:২৪ অপরাহ্ণ)
এই পোস্টখানার মন্তব্যের জায়গায় প্রাসঙ্গিকভাবে আজকে ‘আমাদের সময়’ পত্রিকায় প্রকাশিত সমাজ গবেষক জাহাঙ্গীর হোসেন কর্তৃক লিখিত তাৎপর্যপূর্ণ কলাম ‘বাকশাল’ কি সত্যিই আমাদের জন্যে ক্ষতিকর ছিল? তুলে দেয়া হল। পড়ুন এখানে…
মোহাম্মদ মুনিম - ১ এপ্রিল ২০১০ (১২:০৫ পূর্বাহ্ণ)
দীর্ঘ মন্তব্যের জন্য ইমতিয়ার ভাইকে ধন্যবাদ, ভুট্টোর সাথে ফালাচির ইন্টারভিঊটি আমি বেশ মন দিয়ে পড়েছি। তিনি ভুট্টোকে অনেক কঠিন প্রশ্ন করেছেন, যেমন ২৫শে মার্চ কত লোক মারা গেছে। ভূট্টো বলেছেন সে রাতে ৫০ হাজার মারা গিয়ে থাকতে পারে। ভুট্টো স্ট্যালিন এবং মাও সে তুং য়ের দোহাই দিয়ে সেই হত্যাকান্ডকে defend করার চেষ্টা করেছেন। ফালাচিও এই উত্তরে সন্তুষ্ট হয়েছেন বলে মনে হয়েছে। তিনি ভুট্টোকে তাঁর দ্বিতীয় বিয়ে নিয়েও অস্বস্তিকর প্রশ্ন করেছেন ভুট্টো সে প্রশ্নেরও সন্তোষজনক জবাব দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু ফালাচীকে সাক্ষাৎকারের এক পর্যায়ে তাঁর নিজের গ্রামের বাড়িতে পাকবাহিনী কি নির্যাতন চালিয়েছেন, তার বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিয়েছে সে সব কথা বলেছেন। আর ভূট্টো তার ভুমি সংস্কারের কারণে নিজের মালিকানাধীন হাজার হাজার একর জমি দিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনার কথা বলেছেন। এই দুটো উত্তরকে মিলিয়ে ফালাচী ভুট্টোকে অনেক বড় নেতা মনে করেছেন।
ফালাচীর অন্যান্য ব্যক্তিত্বকে ইন্টারভিও নেওয়ার সময়ও অস্বস্তিকর প্রশ্ন করেছেন। কিসিঞ্জারের মুখ থেকে তিনি বের করে নিয়েছেন ভিয়েতনামের যুদ্ধ ‘অর্থহীন’। খোমেইনিকে তিনি বেজায় রাগিয়ে দিয়েছিলেন। যেকোন সক্রিয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ত্বকে অস্বস্তিকর প্রশ্ন করে রাগিয়ে দেয়া যায়। রাগের মাথায় তিনি কি বলেন সেটা দেখে আমরা মজা পেতে পারি। সেই সাংবাদিককে বাহবা দিতে পারি। কিন্তু সেটা স্রেফ তামাশা, সাংবাদিকতা নয়। ক্লিনটনের ইন্টারভিঊ নিলে নিশ্চয় তিনি মনিকা লিউনস্কি কি হাজারো প্রশ্ন করতেন, আমরাও মজা পেতাম। মনিকা লিউনস্কি কে নিয়ে ক্লিনটন কি করেছেন তার সাথে রাজনীতিবিদ ক্লিনটনের কোনই সম্পর্ক নেই।
যাই হোক, ফালাচী এবং অন্যান্য গুজবকে কেন্দ্র করে বঙ্গবন্ধুকে একজন মাঠ গরম করা মোটা দাগের রাজনীতিবিদ হিসাবে দেখার যে একটা কালচার দাঁড়িয়ে গেছে, সেটা আমার মতে অত্যন্ত ক্ষতিকর। ভুট্টো ফালাচীর সাথে ইন্টারভিউতে বঙ্গবন্ধুর নামে প্রচুর বাজে কথা বলেছেন। তবে একটা ব্যাপার পরিষ্কারভাবে বোঝা গেছে যে ষাটের দশকের গোড়া থেকে বঙ্গবন্ধুই পাকিস্তানের রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করছিলেন। ভুট্টো বলেছিলেন ইয়াহিয়া খান বঙ্গবন্ধুর কাছে ‘পারমিশন’ চেয়েছিলেন ভুট্টোকে গ্রেফতার করার। সে আমলের সেনাশাসকরা জনসাধারণকে ব্রিটিশদের মতোই অত্যন্ত অবজ্ঞার দৃষ্টিতে দেখতেন, শুধু মাঠ গরম করে এদের সাথে টেক্কা দেওয়া যেত না। বঙ্গবন্ধু সেই ৬১ সালেই ভুট্টোকে গণতান্রিক পাকিস্তানের কথা বলেছিলেন (পশ্চিম এবং পুর্ব পাকিস্তানের ‘loose confederation’ এর মাধ্যমে)। অক্সফোর্ডে পরা, মার্ক্স এঙ্গেলস গুলে খাওয়া ভুট্টো সেসবের কিছুই বুঝতে পারেননি। বরং আয়ুব খানের মন্ত্রীত্ব নিয়েছেন। ৪০ এর দশকে সেই যে মুসলিম লীগে যুক্ত হয়ে সেই মুসলিম লীগ সম্পর্কে দ্রুত মোহভংগ হওয়া, তারপর আওয়ামী মুসলিম লীগ, সেখান থেকে অসাম্প্রদায়িক আওয়ামী লীগ। একজন মোটাদাগের মানুষের তো এত দ্রুত মানসিক উত্তরণ হয় না।
মোহাম্মদ মুনিম - ২২ মে ২০১০ (২:১০ পূর্বাহ্ণ)
সিডনী শ্যানবার্গ, নিউইয়র্ক টাইমসের হয়ে কম্বোডিয়ার যুদ্ধ কভারের জন্য পুলিৎজার পুরস্কার পেয়েছিলেন। কম্বোডিয়াতে খেমাররুজদের ক্ষমতায় আসার ঘটনাকে কেন্দ্র করে তিনি The Death and Life of Dith Pran নামে একটি বই লিখেন, সেই বই পরে The Killing Fields নামে চিত্রায়িত হয়। শ্যানবার্গ সাহেব আমাদের মুক্তিযুদ্ধও কভার করেছিলেন এবং পাকিস্তান সরকার তাঁকে তৎকালীন পুর্ব পাকিস্তান থেকে বহিষ্কার করেছিল। তিনি ১৯৭২ সালের জানুয়ারী মাসে বংগবন্ধুর সাক্ষাৎকার নেন এবং সেই সাক্ষাৎকার নিউ ইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত হয়। সাক্ষাৎকারটির কাটিংইয়ের লিঙ্ক এখানে। এই কাটিংটি সংগৃহীত হয়েছে শ্রদ্ধেয় এম এম আর জালাল ভাইয়ের সৌজন্যে।
রেজাউল করিম সুমন - ২৬ মার্চ ২০১২ (১২:২৮ অপরাহ্ণ)
সম্প্রতি (২৩ মার্চ ২০১২) ‘বঙ্গবন্ধু ও ওরিয়ানা ফাল্লাচি’ নামে হাসান ফেরদৌসের একটা লেখা বেরিয়েছে প্রথম আলোয়। মুনিমের আর ফেরদৌসের লেখার শিরোনাম প্রায় একই হলেও তাঁদের স্বর আর ঝোঁক দুই-ই আলাদা।
পড়ুন এখানে।
মাসুদ করিম - ২৬ মার্চ ২০১২ (১:২৭ অপরাহ্ণ)
এটাই কি লিখেছেন হাসান ফেরদৌস, না এটা প্রথম আলোর ছাপার ভুল। আমার ইতিহাস! আর কি হারানো অধ্যায় ফিরিয়ে দিলেন ফালাচি?
এরকম ছবির কি আসলেই কোনো অভাব ছিল বা আছে বাংলাদেশে, যে এই কয়েকটি ছবিতে ইতিহাসের হারানো অধ্যায় ফিরে এলো? প্রথম আলো এন্ড কোম্পানির লেখকদের লেখা কেন আমি বুঝতে পারি না? কেন? কেন?
মোহাম্মদ মুনিম - ২৭ মার্চ ২০১২ (৮:৪৭ পূর্বাহ্ণ)
১৯৭২ সালের শুরুতে বঙ্গবন্ধু সারা পৃথিবীর সংবাদ মাধ্যমগুলোর মনোযোগের পাত্র ছিলেন এবং ABC, BBC, NY Times সহ প্রায় সমস্ত প্রধান সংবাদ মাধ্যম তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছে। এই সাক্ষাৎকারগুলোর ট্রান্সক্রিপ্ট এবং ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে আছে(কয়েকটি উদাহরণ এখানে, এখানে এবং এখানে)। বঙ্গবন্ধু কোন পর্যায়ের নেতা ছিলেন তা এইসব ইন্টারভিউ দেখলেই বোঝা যায়। এত ইন্টারভিউ থাকতে ফালাচীর মতো মাঝারি মানের সাংবাদিকের বঙ্গবন্ধু বিষয়ক মূল্যায়ন কেন ‘ঐতিহাসিক দলিল’ হয়ে যায় সেটা বোধগম্য নয়। ফালাচী নিজে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন এবং ইতালিতে কিভাবে দালালদের বিনা বিচারে হত্যা করা হয়েছিল তা নিজেই দেখেছেন। সুতরাং কাদের সিদ্দিকীর হাতে কয়েকজন রাজাকারের নিহত হওয়াতে তাঁর বিচলিত হওয়ার কোনই কারণ ছিল না। তিনি বঙ্গবন্ধুকে রাজাকার হত্যা নিয়ে প্রশ্ন করেছেন তাঁকে বেকায়দায় ফেলার জন্য। নিম্নশ্রেণীর সাংবাদিকেরা এই জাতীয় ফালতু প্রশ্ন করে তাক লাগাতে চান, ফালাচীও তাই করেছেন। হলিঊডের নায়িকা মার্কা চেহারা না থাকলে ফালাচী তাঁর ‘সাংবাদিকতা’ বেশীদিন চালিয়ে যেতে পারতেন না।
অবাক করার মত ব্যাপার হচ্ছে এই ফালাচির এই ‘ঐতিহাসিক’ দলিলটি বঙ্গবন্ধুকে এবং আওয়ামী লীগকে অবমূল্যায়ন করতে বহুল ব্যবহৃত হয়েছে। শফিক রেহমান বঙ্গবন্ধুকে একজন মোটা দাগের নেতা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে এই সাক্ষাৎকার নিয়ে বহু আগেই আলোচনা করেছিলেন (যতদুর মনে পড়ে নব্বইয়ের দশকের শুরুতে)। ব্লগে ওরিয়ানা ফালাচীর সাক্ষাৎকারটি নিয়ে ‘নতুন প্রজন্মের’ বেশ কয়েকজন ব্লগার লিখেছেন, অধিকাংশ সময়েই বঙ্গবন্ধুকে অবমূল্যায়নের প্রচেষ্টা হিসাবে।
রায়হান রশিদ - ২৬ মার্চ ২০১২ (৬:৫৯ অপরাহ্ণ)
ওরিয়ানা বললো, আমাদেরও চোখ খুললো! যেন সাংবাদিকেরা আর কোথাও কখনো বানিয়ে সংবাদ লেখেনা, লেখেনি!
রেজাউল করিম সুমন - ২৭ মার্চ ২০১২ (১২:৪৮ পূর্বাহ্ণ)
হাসান ফেরদৌস বিতর্কিত চলচ্চিত্র মেহেরজান নিয়েও গত বছর প্রথম আলোয় লিখেছিলেন। সে-লেখার শেষ অনুচ্ছেদ মনে রাখার মতো:
রেকর্ডের খাতিরে সে-লেখার লিংকটাও রইল এখানে।
মনিরুল ইসলাম মণি - ৫ নভেম্বর ২০১৪ (১:১৩ পূর্বাহ্ণ)
এত চমৎকার ভাষায় কীভাবে লেখেন!
মাসুদ করিম - ১৮ মার্চ ২০১৫ (১২:৫০ পূর্বাহ্ণ)
নাজিব তারেক - ২৭ জুন ২০১৬ (২:৪৭ পূর্বাহ্ণ)
আপনার সেই বাম নেতা হচ্ছেন চৈনিক বাম, যারা ১৯৭১-এ বাংলাদেশ (ও আওয়ামী বিরোধী ছিল) ১৯৭১-এ না করলেও ১৯৭২ থেকে অস্ত্রহাতে ও কলম হাতে এরা বাংলাদেশী নিধন শুরু করে (সিরাজ সিকদার, হলিডে পত্রিকা)। আজো এদের হাতেই অধিকাংশ পত্রিকা (সাংবাদিক বা মালিক বা সম্পাদক)
leo minhaz - ৭ ডিসেম্বর ২০১৮ (৫:৫৮ অপরাহ্ণ)
লেখাটা আরেকটু গোছানো হলে পড়তে আরামদায়ক হতো।