প্রবর্ত্তক সংঘের এই পাহাড় থেকে প্রবর্ত্তক সংঘের কমিটি, ইসকন, শেভরন, প্রাইম ব্যাংক, ডিভিশানাল কন্ট্রোলার অফ একাউন্টসের কার্যালয় (একটা সরকারি অফিস কিকরে এই বিতর্কিত স্থাপনায় এসে উঠল?) – অনাথাশ্রম, এর প্রশাসনিক ভবন, স্কুল ছাড়া – আর সবাইকে বের করে দিন। এটা এখনই সরকারি রক্ষণাবেক্ষণে নিয়ে আসুন – প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর, শিক্ষামন্ত্রণালয় ও পরিবেশমন্ত্রণালয়ের অধীনে নিয়ে আসা হোক – এই অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত পাহাড়টিকে। এখানে ধর্ম বর্ণ গোত্র লিঙ্গ নির্বিশেষে একটা অনাথাশ্রম গড়ে তোলার কাজ করুক ওই তিন মন্ত্রণালয় এবং আরো ভাল হয় এর সাথে নাগরিক যোগাযোগ বাড়ানোর জন্য পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের মাধ্যমে অনাথাশ্রম প্রকল্পটির প্রতিটি কাজে প্রতিনিয়ত বেসরকারি তৎপরতার পথটিও খোলা রাখা। এটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই জন্য, যদি এখানে অনাথাশ্রমের এরকম মডেল তৈরি করা যায়, তাহলে এই মডেলে দেশে আরো আরো এরকম অনাথাশ্রম গড়ে উঠতে পারে। এর ফলে মাদ্রাসার আধিপত্য থেকে দেশে অন্যধরনের এতিমখানার প্রসার বাড়ানোর চেষ্টাও করা যেতে পারে।
আমরা যারা এই পাহাড়ের কাছাকাছি থাকি আমরা এই পাহাড়কে কোনোমতেই হারাতে চাই না। যেরকম আমরা হারাতে চাই না : ম্যানোলা পাহাড়, মেডিকেলের ভেতরের পাহাড়, জেমস ফিনলে পাহাড়, জয় পাহাড়, জিলিপি পাহাড়, স্যারসেন রোডের পাহাড়গুচ্ছ, বাঘঘোনা খুলশি শেরশাহ ফযেজলেক ভাটিয়ারি বোস্তামি ফতেয়াবাদ হাটহাজারির পাহাড়গুচ্ছ, টাইগারপাস সিআরবি মতিঝর্ণার পাহাড়গুচ্ছ। চট্টগ্রামের আর একটি পাহাড়ও আমরা হারাতে চাই না, পরিবেশ প্রতিমন্ত্রী হাছান মাহমুদ চট্টগ্রামের সন্তান, শেখ হাসিনা কথায় কথায় চট্টগ্রামের দায়িত্ব তার কাঁধে এই প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করেন, তাই এই প্রবর্ত্তক সংঘের পাহাড়কে উদ্ধারের মধ্য দিয়ে এবং এখানে জনকল্যাণমূলক সাধারণ অনাথাশ্রম গড়ে তুলে শিক্ষা পরিবেশ ও প্রধানমন্ত্রীত্বের এক কার্যকর দৃষ্টান্ত গড়ে তোলা যায়।
মাসুদ করিম
লেখক। যদিও তার মৃত্যু হয়েছে। পাঠক। যেহেতু সে পুনর্জন্ম ঘটাতে পারে। সমালোচক। কারণ জীবন ধারন তাই করে তোলে আমাদের। আমার টুইট অনুসরণ করুন, আমার টুইট আমাকে বুঝতে অবদান রাখে। নিচের আইকনগুলো দিতে পারে আমার সাথে যোগাযোগের, আমাকে পাঠের ও আমাকে অনুসরণের একগুচ্ছ মাধ্যম।
Have your say
You must be logged in to post a comment.
৬ comments
নীড় সন্ধানী - ২৯ জানুয়ারি ২০১১ (৩:০৫ অপরাহ্ণ)
পাহাড়ের কারণে পরিবেশ কতোটা স্নিগ্ধ থাকে তা দেওয়ানহাট ওভারব্রীজ পেরিয়ে টাইগারপাসে পা দিলেই বোঝা যায়। অতিমাত্রায় বানিজ্যিকীকরনের জন্য দেওয়ানহাট থেকে বারিকবিল্ডিং হয়ে সিমেন্টক্রসিং কিংবা কদমতলী মাদারবাড়ী বাংলাবাজার হয়ে সদরঘাট চাক্তাই বেল্টের পুরো এলাকা বায়ুদুষনের কারণে অনেক বেশী উষ্ণতা বহন করে। এখন যে কয়টি সবুজ পাহাড় অক্ষত আছে সেগুলোও যদি কংক্রীট আগ্রাসনের সম্মুখীন হয়, তাহলে পুরো শহরে নিঃশ্বাস নেবার জায়গা একটিও থাকবে না।
মাসুদ করিম - ২৯ জানুয়ারি ২০১১ (৫:৩৮ অপরাহ্ণ)
হ্যাঁ, এই এলাকাটা যদিও অনেক বেশি নদী ও সমুদ্রের কাছাকাছি এবং আমরা যদি আরো পরিমিতির সাথে আমাদের নগরায়ন করতাম তাহলে চট্টগ্রাম শহরের তুলনামূলক এই সমতল এলাকাটা অনেক বেশি মুক্ত বাতাসের জায়গা হতে পারত। আমরা এই এলাকাটাকে নষ্ট করার পর এখন চট্টগ্রামের পাহাড়ি অংশটার — জামালখান, দামপাড়া, বাঘঘোনা, খুলশি, ফযেজ লেক, ভাটিয়ারি, ও আর নিজাম রোড, পাঁচলাইশ, ষোলশহর,বায়েজিদ বোস্তামি,ফতেয়াবাদ, হাটহাজারির বারোটা বাজানোর জন্য উন্মাদ হয়ে ছুটছি। পাহাড় বাঁচাতে না পারলে চট্টগ্রাম বসবাসের অযোগ্য হয়ে যাবে পুরোপুরি।
অবিশ্রুত - ২৯ জানুয়ারি ২০১১ (৭:২০ অপরাহ্ণ)
আমার প্রথম পাহাড় দেখা চট্টগ্রামে, ১৯৯১ সালে। তারপর আরও পাহাড় দেখেছি, কিন্তু চট্টগ্রামের পাহাড় দেখার মধ্যে বিস্ময়ের কৌমার্য ভেঙে পড়ার যে-শিহরণ ছিল, সেটিই আমাকে তাড়িয়ে ফেরে। চট্টগ্রামের সেই ‘নস্যিমাত্র’ পাহাড় আর দূরে সমুদ্রের রেখা-সব মিলিয়ে চট্টগ্রামের মানুষরা আমার ঈর্ষার পাত্র।
ততদিনে চট্টগ্রাম থেকে পাহাড় বিলীন হতে শুরু করেছে। এখন সেই পাহাড়গুলির অবস্থা চিন্তা করতে গেলে নিজেই শিউরে উঠি। আমরা দোহাই দেই বটে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণেই পরিবেশবিনাশী এসব তৎপরতা দেখা দিয়েছে, কিন্তু রোগ আরও গভীরে-রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন প্রক্রিয়াতে। রাজনৈতিক অঙ্গীকার আর সিদ্ধান্তই পারে এ রোগ তাড়াতে। কিন্তু যে-দেশে সব সিদ্ধান্তের ব্যাপারেই প্রধানমন্ত্রীর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয়, সে-দেশের রাজনৈতিক অঙ্গীকার আর সিদ্ধান্তের ভিত্তি যে কত অগভীর, তা সহজেই বোঝা যায়।
তারপরও, অবস্থা যখন এমনই-যেভাবেই হোক না কেন,আমরা চাই পাহাড়গুলো বেঁচে থাকুক। সরকার পাহাড়কে বাঁচিয়ে রাখার উদ্যোগ নিক।
মাসুদ করিম - ৩০ জানুয়ারি ২০১১ (২:০৭ অপরাহ্ণ)
চট্টগ্রামে থাকার সুবাদে পাহাড় ও সমুদ্রের এমন রূপ দেখেছি, যখন কেউ প্রশ্ন করে কোনটা বেশি পছন্দ : পাহাড় না সমুদ্র — আমি এক নিঃশ্বাসে বলে ফেলি, কোনোটাই নয় — আমি পাহাড় ও সমুদ্রের মধ্যিখানে থাকি। নিজে যেখানে থাকি সেখানকার কোনো ক্ষতি যেমন রক্তক্ষরণ করে আর কিছুই তেমন করে না। আমাদের মৃত রাজনীতির কাছে কিছুই চাই না, শুধু তার প্রেতাত্মার কাছে চাই এই রূপ যেন সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে না যায়। জানি না সেচাওয়ার দেয়ালে মাথা কুটে কী পাব, কিন্তু ওই পাহাড়গুলোর রূপে মজেছি অনেকদিন — ওদেরকে হারালে রূপের আর কিছুই থাকবে না চট্টগ্রামের।
মাসুদ করিম - ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১১ (৭:১১ অপরাহ্ণ)
আমার এই পোস্টটি লেখা হয়েছিল পরিবেশ অধিদপ্তর প্রবর্ত্তকের নিচে ‘আর এফ প্রোপার্টিজ’এর প্রকল্পের বাউন্ডারি ও হোর্ডিং ভেঙ্গে দেয়ার পর। তখন প্রবর্ত্তক সংঘের কমিটির বর্তমান সভাপতি বাবু তিনকড়ি বলেছিলেন
হ্যাঁ, তার কথাই ঠিক — আজ সকালেই দেখলাম ‘আর এফ প্রোপার্টিজ’এর প্রকল্পের বাউন্ডারি পুনঃর্নিমাণের কাজ সুসম্পন্ন হয়েছে আর প্রকল্পের প্রিন্টেড হোর্ডিংগুলোও খুব তাড়াতাড়ি লাগিয়ে দেয়া হবে। বাবু তিনকড়ির কথাই ঠিক হবে আমার পাহাড় , আর আমরা আরেকটি সুন্দর পাহাড় হারাব। পরিবেশ অধিদপ্তর হয়ত কিছু একটা ভাঙ্গে কিছু একটা গড়ার জন্যই, কী সেটা? — আর কী, লক্ষ্য তো সবার একটাই দুর্নীতির টাকার পাহাড় গড়া।
মাসুদ করিম - ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১১ (৮:৩৩ পূর্বাহ্ণ)
আমার স্মৃতির ওপর আমি নিজেও ভরসা রাখি না, তবুও মনে হচ্ছে এই আর এফ প্রপার্টিজ-ই গত সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে নন্দনকানন টিএন্ডটি অফিসের সামনে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত এক মাঠে ‘পুলিশ প্লাজা’র ডেভেলপার ছিল। যে প্রবর্ত্তক সংঘ নিয়ে আজ কথা হচ্ছে এই অনাথ আশ্রমও ব্রিটিশ বিরোধী স্বদেশী আন্দোলনের সাথে বিজড়িত। এই সংঘ প্রতিষ্ঠিতই হয়েছিল অনাথদের শিক্ষিত করে গড়ে তুলে স্বদেশী আদর্শের অগ্রপথিক সৃষ্টির লক্ষ্যে। দুই প্রকল্পই এই ডেভেলপারের হাতে দেখে মনে হচ্ছে এইসব বিতর্কতি প্রকল্পের সাথে নিজেকে জড়িত করার একটা দুষ্টপ্রত্যয়ের প্রবণতায় এই ডেভেলপার আক্রান্ত। তখন তারা সহযোগী ছিল অসীম ক্ষমতাবান চট্টগ্রাম পুলিশের আজ তারা সহযোগী পাহাড়ওয়ালা প্রবর্ত্তক সংঘের কমিটির। আর সরকার হোক তত্ত্বাবধায়ক বা ভোটসৃষ্ট পরিবেশ ইতিহাস ও জনগণ সমান ঝুঁকির মধ্যেই বসবাস করে।