আমাকে নিয়ে আমার এই রসিকতায় মনে হয় না কেউ খুব একটা আশ্চর্য হবে। সারাজীবন তো নিজেকে নিয়ে রসিকতাই করে গেছি, সেরসিকতা দেশ ও জনগণের সর্বনাশ ডেকে এনেছে। কিন্তু আমি ছিলাম বাংলাদেশের সবচেয়ে ক্ষমতাধর অংশের সবচেয়ে ক্ষমতাবান প্রতিনিধি। তাই আমার রসিকতা ও আমার ক্ষমতা দুয়ে মিলে আমি হয়েছি – বিশ্ববেহায়া। এখন আমার ক্ষমতা নেই, তাই আমার এখনকার রসিকতা আর দেশ ও জনগণের ক্ষতি করে না। আমার নিজের কই মাছের প্রাণটা আমি উপভোগ করি – এই যে গুরুতর অসুস্থতা থেকেও এই আশি বছর বয়সেও ফিরে এলাম – এ তো উপভোগ করার মতোই ঘটনা। মুজিব মরল, জিয়া মরল – কিন্তু আমি বেঁচে আছি, এরশাদ বেঁচে আছে। এই শব্দটাও আমাকে খুব মানায় – ঠ্যাঁটা, শঠতার চূড়ান্তে পৌঁছতে চেয়েছি আমি – পৌঁছেছি দাবী করব না – কিন্তু বাংলার সেরা শঠদের সেরা সারিতে থাকব, এতে কোনো সন্দেহ নেই আমার। আমার ও রওশনের সন্তান ছিল না, সন্তান দত্তক নিয়েছিলাম, কিন্তু সন্তানসম্ভবা বলে রওশনকে হাসপাতালে ভর্তি করালাম, তার বাচ্চা হল, আমরা বাবা-মা হলাম। সারাদেশকে জোর করে আনন্দে ভাসানো হল, ঘনিষ্ঠরা শুধু জানে, রওশন ছাড়া পৃথিবীতে আর কেউ সম্ভবত রাতারাতি সন্তানসম্ভবা ও সন্তানের মা হয়নি। ১৯৭১ সালে আমি পাকিস্তান আর্মিতে নিশ্চিন্তে কাজ করে গেছি, ছুটি নিয়ে বাবা-মাকে দেখেও গেছি, আর কোনো কিছুর সঙ্গে নিজেকে জড়াইনি, এতো উদাসীন ছিলাম, কোনো কিছুই স্পর্শ করত না, আজো করে না, তাই হয়তো বেঁচে আছি। জিয়ার জীবনের সবচেয়ে বড় ট্র্যাজেডি ছিল তিনি বাংলা ভাষাটাই ঠিক মতো জানতেন না। দেশের প্রেসিডেন্ট দেশের ভাষা না জানলে জিন্নার মতো এক বছর চলে যায়, কিন্তু বছরের পর বছর চলা যায় না, আর তাই জিয়া আমাকে আবিষ্কার করলেন – আর আমার জীবনের সবচেয়ে বড় গুণটাকে আমি, বাংলা ভাষাজ্ঞানের দিকটাকে আমি জিয়ার সেবায় বিলিয়ে দিলাম – দিনে রাতে জিয়ার ড্রাফট লিখতে লিখতে আমার মনে হয়েছিল, আরেকজনের ড্রাফট লেখার জন্য আমার জন্ম হয়নি – এগিয়ে গেলাম – জিয়া মারা গেলেন – আমার কী কপাল! – তারপর তো কত লোক আমার কবিতাগান লেখার জন্য লাইন দিল। রসিকতা আর শঠতা কাকে বলে! একটা কথা না বললে খুব অন্যায় হবে, ইসলামের সাথে আর কেউ রসিকতা ও শঠতা করেছিল কি না আমার জানা নেই – কিন্তু আমি করেছিলাম – চূড়ান্ত অনৈতিক জীবনযাপন ও রগরগে ভোগবিলাসের মধ্যে থেকেও আমি রাষ্ট্রধর্মে ইসলামকে অভিষিক্ত করেছিলাম, শুক্রবারের ছুটি এনেছিলাম, পীরের লালসা নিয়ে মোনাজাতে মোনাজাতে চারিদিক আকুল করে তুলেছিলাম। ছিলাম পেশাদার মুসলমান, আমার সাথে প্রতিযোগিতা হতে পারে জামাতিদের, একটা রিয়েলিটি শো হলে দেখা যেত – কে হারে, কে জেতে – তবে এই যে আমরা পেশাদার মুসলমানেরা, আমাদের সবার বাবা ‘কায়দে আজম’ জিন্না – ভাগ্য ভাল তার কই মাছের প্রাণ ছিল না, থাকলে হয়তো আমাকে আর ‘বিশ্ববেহায়া’ হতে হত না।
লেখক। যদিও তার মৃত্যু হয়েছে। পাঠক। যেহেতু সে পুনর্জন্ম ঘটাতে পারে। সমালোচক। কারণ জীবন ধারন তাই করে তোলে আমাদের। আমার টুইট অনুসরণ করুন, আমার টুইট আমাকে বুঝতে অবদান রাখে। নিচের আইকনগুলো দিতে পারে আমার সাথে যোগাযোগের, আমাকে পাঠের ও আমাকে অনুসরণের একগুচ্ছ মাধ্যম।
