মুহম্মদ হাবিবুর রহমান তার ‘বাংলাদেশের তারিখ’ বইয়ে ১৯৯৪ সালের ৯ আগস্ট তারিখে ‘তসলিমা নাসরিনের দেশত্যাগ’ কথাটি ঠিক লেখেননি। এটা ছিল মোটা দাগের নির্বাসন দণ্ড : নিশ্চিত গলাধাক্কা। মৌলবাদের কাছে পরাজিত রাষ্ট্র ও সরকার সেদিন তসলিমা নাসরিনকে বাংলাদেশ থেকে গলা ধাক্কা দিয়ে বের করে দিয়েছিল। সেসাথে দেশের পত্রপত্রিকা ও প্রকাশকরা তার কলাম ও বই প্রকাশও বন্ধ করে দিয়েছিল।
১৯৯৮ সালে তসলিমা নাসরিন একবার বাংলাদেশে আসার সুযোগ পান এবং মাস তিনেক থাকার পর মৌলবাদীদের চাপে রাষ্ট্র ও সরকার আবার তাকে বাংলাদেশ ত্যাগে বাধ্য করে। ২০০২ সালে বাংলাদেশ সরকার তসলিমার পাসপোর্ট নবায়নের আবেদন প্রত্যাখ্যান করে, তখন সুইডেন তাকে সেদেশের নাগরিকত্ব প্রদান করে।
সুইডিশ পাসপোর্টে ভারতের রেসিডেন্সি ভিসা নিয়ে ২০০৪ সাল থেকে তসলিমা কলকাতায় থাকতে শুরু করেন। তার ভারতে পদার্পনের পর থেকেই ভারতীয় মুসলিম মৌলবাদীরা বোম্বে হায়াদ্রাবাদ ও কলকাতায় তার ভারতে অবস্থানের বিরুদ্ধাচরণ করতে থাকে। শেষ পর্যন্ত ২০০৭ সালে কলকাতায় মুসলিম মৌলবাদীদের তাণ্ডবের পর আইন শৃঙ্খলার অবনতির আশঙ্কায় পশ্চিমবঙ্গ সরকার তসলিমাকে তার বাসস্থান ত্যাগে বাধ্য করে ও প্রাথমিকভাবে রাজস্থানে অজ্ঞাতবাসে পাঠিয়ে দেয়। এরপর ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার তাকে রাজস্থান থেকে সরিয়ে দিল্লিতে অজ্ঞাতবাসে নিয়ে যায়। ৭/৮ মাস অজ্ঞাতবাসের পর ভারত ত্যাগের শর্তে তসলিমার ভারতের রেসিডেন্সি ভিসার নবায়ন করে তাকে ভারত ত্যাগে বাধ্য করা হয়।
২০০৮ সালে তসলিমা নাসরিন বাংলাদেশ সরকারের কাছে পাসপোর্টের আবেদন করলে তার আবেদন যথারীতি প্রত্যাখ্যাত হয়। তখন তসলিমা তার ইউরোপিয়ান পাসপোর্টে ‘বাংলাদেশ ভ্রমণে ভিসার প্রয়োজন নেই’ এই ছাপ মারতে কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেন, এতেও প্রত্যাখ্যাত হয়ে তিনি সাধারণ টুরিস্ট ভিসার আবেদন করেন এবং তাতেও প্রত্যাখ্যাত হন। আর এসব কিছুর পর ২০০৮ সালেই বাংলাদেশ সরকার তার ‘কালো তালিকা’য় তসলিমা নাসরিনের নাম অর্ন্তভুক্ত করে।
২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত নতুন করে বেশ কয়েকবার তিনি বাংলাদেশে এসে বসবাসের ইচ্ছা প্রকাশ করেন, কিন্তু সরকার থেকে এখনো কোনো আশ্বাস বা অনুমতি তসলিমা পাননি।
এরমধ্যে ২০১০-এর ফেব্রুয়ারিতে তিনি আবার দিল্লির অজ্ঞাতবাসে ফিরে আসেন, এখনো তিনি অজ্ঞাতবাসেই সিদ্ধান্তহীনভাবে দিন কাটাচ্ছেন।
তসলিমা হয়তো একমাত্র দৃষ্টান্ত যিনি পাশাপাশি দুটি দেশের সংখ্যাগুরু মৌলবাদী ও সংখ্যালঘু মৌলবাদীদের হুমকিতে জীবনযাপন করেছেন। মুসলিম মৌলবাদীরা যেমন তাকে বাংলাদেশছাড়া করেছে, ভারতের মুসলিম মৌলবাদীরাও তাকে অজ্ঞাতবাসে নিয়ে যেতে ও ফলশ্রুতিতে ভারত ছাড়তে বাধ্য করতে পেরেছে। নারীবাদীর শত্রু অনেক, কিন্তু তার সবচেয়ে বড় শত্রু মৌলবাদীরাই। এবং এই মৌলবাদীরা সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের হোক বা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের হোক, তাদের উন্মত্ততার প্রতিক্রিয়াশীলতা সমান ক্ষুরধার। কারণ সরকারের কাছে সংখ্যাগুরুরা স্বাভাবিকভাবেই প্রধান বিবেচ্য বিষয় হলেও সংখ্যালঘুরা আবার ভোটে হারজিতের গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক। তাই মত প্রকাশের স্বাধীনতায় বাধা দিতে গুরুচাপ লঘুচাপ দুটোই সমান শক্তিশালী – সভ্যতাকে ঘাড় ধরে টেনে নামাতে, লেখক শিল্পীর নির্বাসন নিশ্চিত করতে, তাকে গলা ধাক্কা দিয়ে বের করে দিতে ‘মৌলবাদের মুখ, তার ভাষা এবং মতলব’ সমান সক্রিয়।
সমালোচকরা আমার স্বাধীনতাকে চিহ্নিত করতে চাইছেন স্বেচ্ছাচারিতা বলে। আসলে আমাদের সুরুচি কুরুচি বোধ, পাপ পুণ্য বোধ, সুন্দর অসুন্দর বোধ, সবই যুগ-যুগান্ত ধরে পিতৃতন্ত্রের শিক্ষার পরিণাম। নারীর নম্রতা, নতমস্তকতা, সতীত্ব, সৌন্দর্য, সহিষ্ণুতা সেই শিক্ষার ফলেই নারীর বৈশিষ্ট হিসেবে স্বীকৃত। আমাদের সুনিয়ন্ত্রিত চেতনা কোনো রূঢ় সত্যের মুখোমুখি হতে তাই আতঙ্ক বোধ করে। কোনো নিষ্ঠুর বাক্য শুনলে কানে আঙুল দিতে ইচ্ছে করে, ঘৃণায় ঘিনঘিন করে গা, অনেক সমালোচকেরও বাস্তবে তাই হচ্ছে। আমি লেখক কি না, আমার আত্মজীবনী তাও আবার ধারাবাহিকভাবে লেখার অধিকার আছে কি না, এমন প্রশ্নও তুলেছেন। বস্তুত সবার, যে কোনো মানুষেরই আত্মকথা লেখার অধিকার আছে। এমনকী আত্মম্ভর সেই সাংবাদিকেরও সেই অধিকার আছে যিনি মনে করেন আমার হাতে কলম থাকাই একটি ঘোর অলুক্ষণে ব্যাপার। আমাকে দোষ দেয়া হচ্ছে এই বলে যে, আমি চরম দায়িত্বহীনতার কাজ করেছি। আমি দায়িত্বহীন হতে পারি, যুক্তিহীন হতে পারি, তবু কিন্তু আমার অধিকারটি ত্যাগ করতে আমি রাজি নই। জর্জ বার্নার্ড শ বলেছিলেন, A reasonable man adopts himself to the world. An unreasonable man persists in trying to adopt the world to himself. Therefore, all progress depends upon the unreasonable man. বুদ্ধিমান বা যুক্তিশীল লোকেরা পৃথিবরি সঙ্গে মানিয়ে চলে। নির্বোধ বা যুক্তিহীনরা চেষ্টা করে পৃথিবীকে তার সঙ্গে মানিয়ে চলতে। এতএব সব প্রগতি নির্ভর করে এই যুাক্তহীনদের ওপর। আমি তসলিমা সেই যুক্তিহীনদেরই একজন। আমি তুচ্ছ একজন লেখক, এত বড় দাবি আমি করাছ না যে পৃথিবীর প্রগতি আমার উপর সামান্যতম নির্ভর করে আছে। তবে বিজ্ঞদের বিচারে আমি নির্বোধ বা যুক্তিহীন হতে সানন্দে রাজি। নির্বোধ বলেই তো মুখে কুলুপ আঁটিনি, যে কথা বলতে মানা সে কথা বলেছি, পুরো একটি সমাজ আমাকে থুথু দিচ্ছে দেখেও তো সরে দাঁড়াইনি, নির্বোধ বলেই পিতৃতন্ত্রের রাঘব বোয়ালরা আমাকে পিষে মারতে আসছে দেখেও দৃঢ় দাঁড়িয়ে থেকেছি। আমার মূর্খতাই, আমার নির্বুদ্ধিতাই, আমার যুক্তিহীনতাই সম্ভবত আমার জীবনের সবচেয়ে বড় সম্পদ।
ধর্মের কথাও উঠেছে। আমি, যাঁরা আমাকে জানেন, জানেন যে, সব ধরনের ধর্মীয় দুঃশাসনের বিরুদ্ধে কথা বলি। ধর্ম তো আগাগোড়াই পুরুষতান্ত্রিক। ধর্মীয় পুরুষ ও পুঁথির অবমাননা করলে সইবে কেন পুরুষতন্ত্রের ধারক ও বাহকগণ! ওই মহাপুরুষেরাই তো আমাকে দেশছাড়া করেছেন। সত্যের মূল্য আমি আমার জীবন দিয়ে দিয়েছি। আর কত মূল্য আমাকে দিতে হবে।
বাংলা ভাষায় সাম্প্রতিক কালে অনেক নারীবাদীর লেখাই পড়েছি, দেহহীন নারীবাদীদের প্রাধান্যের মধ্যে হাতে গোনা কয়েক জন দেহী নারীবাদী আছেন – এর মধ্যে সবচেয়ে স্বতঃস্ফূর্ত আমাদের তসলিমা নাসরিন। আমাদের দূর্ভাগ্য আমরা মত প্রকাশের স্বাধীনতায় এতোই পশ্চাদপদ ও স্বাধীন মত প্রকাশে অভ্যস্ত কারো প্রতি এতোই প্রতিশোধ পরায়ণ, যে, আমাদের দেশের শ্রেষ্ঠ নারীবাদীকে আমরা হত্যা করতে চেয়েছি, আমরা তাকে নির্বাসনে পাঠিয়েছি – হয়তো বা চিরকালের জন্য বিতাড়িত করেছি। আর এটা এমন এক বিতাড়ন, যা, আমাদের দেশকে শুধু নারীপ্রগতিতেই পিছিয়ে দেবে না, আমাদের দেশে মানবতার স্ফূরণকেও ব্যাহত করছে ও করবে।
আমি চাই তসলিমা নাসরিনকে তার প্রিয় স্বদেশ ফিরিয়ে দেয়া হোক – দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠ নারীবাদী তাকে অন্যরা বলুক – আমরা তাকে বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ নারীবাদী হিসেবে বাংলাদেশে উদযাপিত দেখতে চাই। আর সবার আগে চাই অচিরেই দেশের প্রধান পত্রিকাগুলো তার লেখা ছাপাক – অন্তত, দুয়েকটি পত্রিকা তার লেখা ছেপে দেখাক মত প্রকাশের স্বাধীনতার সংগ্রামে বাংলাদেশের দুয়েকটি পত্রিকা শামিল আছে।
মাসুদ করিম
লেখক। যদিও তার মৃত্যু হয়েছে। পাঠক। যেহেতু সে পুনর্জন্ম ঘটাতে পারে। সমালোচক। কারণ জীবন ধারন তাই করে তোলে আমাদের। আমার টুইট অনুসরণ করুন, আমার টুইট আমাকে বুঝতে অবদান রাখে। নিচের আইকনগুলো দিতে পারে আমার সাথে যোগাযোগের, আমাকে পাঠের ও আমাকে অনুসরণের একগুচ্ছ মাধ্যম।
Have your say
You must be logged in to post a comment.
৭৮ comments
বিনয়ভূষণ ধর - ৩ এপ্রিল ২০১০ (৩:২৭ অপরাহ্ণ)
@মাসুদ ভাই!
আপনার সাথে আমারও খুব আশাবাদী হতে ইচ্ছে হয় কিন্তু মুশকিলটা হচ্ছে ‘বিড়ালের গলায় ঘন্টাটা বাঁধবে কে?’
মুয়িন পার্ভেজ - ৩ এপ্রিল ২০১০ (৫:৩১ অপরাহ্ণ)
বেগম রোকেয়ার (১৮৮০-১৯৩২) জন্ম না হলে তসলিমা নাসরিনকে (জ. ১৯৬২) হয়তো ‘বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ নারীবাদী’ বলা যেত! যুক্তিশাণিত ভাষায় রোকেয়া ‘অবরোধবাসিনী’দের যে-মুক্তির কথা লিখে গেছেন উনিশ শতকে, তা পড়লে শ্রদ্ধায় নত হয়ে আসে মুখ আর তসলিমার উপন্যাসোপম জীবনচরিত পাঠ করলে বিবমিষা জাগে কখনও-কখনও! লজ্জা উপন্যাসটি মৌলবাদীদের ‘নেকনজরে’ পড়ার পর আগ্রহ নিয়ে পড়েছিলাম কৈশোরান্তে, প’ড়ে আমার দুঃখ হল তসলিমার জন্য নয় — মৌলবাদীদের জন্যই। অদ্ভুত একরৈখিক মিল আছে এসব বইয়ের ‘দুর্ভাগ্যে’ : সালমান রুশদির The Satanic Verses, তসলিমা নাসরিনের লজ্জা, হুমায়ুন আজাদের পাক সার জমিন সাদ বাদ — সবই তো উপন্যাস। উপন্যাসের বিরুদ্ধে ফতোয়া দেওয়া আর ছায়ার উপর কোপ মারা তো একই ব্যাপার!
তসলিমার নিষিদ্ধ আত্মচরিত ক-এর একটি মলাটহীন সংস্করণ সংগ্রহ করেছিলাম পুরোনো বইয়ের দোকান থেকে। কিয়দংশ পড়ার পর শুধু যে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিলাম তা নয়, তসলিমার আর কোনো বই না কেনারই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। যে-নারী কেবল অর্থবিত্ত বা বিশেষ সুবিধার বিনিময়ে দেহদান করেন, তাঁকে বারাঙ্গনা বলা হয়; তসলিমার ‘কৃতিত্ব’ এটুকু যে তিনি শয্যাকক্ষকে হাটের মাঝখানে এনে বসিয়ে দিয়েছেন!
কয়েক বছর আগে ‘তসলিমার ভালোমন্দ’ নামের একটি দীর্ঘ প্রবন্ধে তসলিমার বিরুদ্ধে ‘হঠকারিতা’ ও ‘সংকীর্ণ স্বার্থপরতার’ অভিযোগ তুলেছিলেন গোলাম মুরশিদ; দৈনিক প্রথম আলো-র ‘সাহিত্য সাময়িকী’র পৃষ্ঠা থেকে অংশবিশেষ পড়া যাক :
(‘সাহিত্য সাময়িকী’, ১২ মার্চ ২০০৪, পৃ. ২১ ও ২৩)
শরীফা বুলবুলের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে হুমায়ুন আজাদ বলেছেন যে নব্বইয়ের দশকে তসলিমা নিজেই নিজের বিরুদ্ধে মিছিল করিয়েছিলেন মোল্লা জুটিয়ে! এ যদি সত্যি হয়, তাহলে তসলিমার নারীবাদের শিকড়েই টান লেগে যায়। তবে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে কারও মিছিল করানোর অধিকার তো থাকতেই পারে।
কামরুজ্জামান জাহাঙ্গীর - ৩ এপ্রিল ২০১০ (১১:১০ অপরাহ্ণ)
মাসুদ করিম কর্তৃক তসলিমা নাসরিনকে শ্রেষ্ঠ নারীবাদী বলাটা যেমন সমর্থনযোগ্য নয় তেমনি মুয়িন পার্ভেজ কর্তৃক তসলিমার প্রতি এত তুচ্ছতাচ্ছিল্যও সঠিক বলে মনে হয় না। তসলিমা নাসরিন মোল্লাদের জুটিয়ে মিছিল করিয়েছিলেন বলাটা রীতিমতো হাস্যকর। কারণ এসব আমরা নানাভাবে তখন সরাসরিই জানতে পারছি, ওইসময় তসলিমার উপর কতধরনের নির্যাতন যে ঘটৈ যাচ্ছিল!
মুয়িনকে আবারও ধৈর্যসহযোগে আবারও ‘ক’ পড়তে অনুরোধ করব। তিনি কেবল অর্থবিত্তের জন্য দেহদান করছিলেন, এটি একেবারেই সঠিক নয়। তাহলে তাকে অনুরোধ করব, তা প্রমাণসহ উল্লেখ করার জন্য।
লজ্জা উপন্যাস শিল্পমানের দিক থেকে একেবারেই সাধারণ মানের; কিন্তু হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর নানাবিধ জান্তব নিপীড়নের যে শব্দচিত্র তাতে আছে তা কি সঠিক নয়? মুসলিম প্রাবল্যের এই দেশে হিন্দু সম্প্রদায় যেভাবে মানসিক-শারীরিক-বৈষয়িকভাবে অত্যাচারিত, তার এক জলজ্যান্ত দলিল হচ্ছে লজ্জা।
মুয়িন পার্ভেজ - ৪ এপ্রিল ২০১০ (১১:০৫ পূর্বাহ্ণ)
কামরুজ্জামান জাহাঙ্গীর
তসলিমা নাসরিন সম্পর্কে সবই বলেছি বইপত্রের ভিত্তিতে — তাঁকে ‘তুচ্ছতাচ্ছিল্য’ করার অভিপ্রায়ে মনগড়া কিছুই বলিনি। ক এ-মুহূর্তে আমার হাতের কাছে নেই ব’লে উদ্ধৃতি দিতে পারছি না; আপনার সংগ্রহে থাকলে জনৈক নেতৃস্থানীয় ব্যক্তির সঙ্গে তসলিমার ঘনিষ্ঠতার বিবরণটুকু আরেকবার পড়ার জন্য অনুরোধ করছি। তসলিমা নিজেই স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছেন দেহদানের বিনিময়ে ‘বিশেষ সুবিধা’ (যেমন : ফ্ল্যাটে থাকার সুব্যবস্থা) গ্রহণ করার কথা। ছাড়াছাড়ি হয়ে যাওয়ার পরও ‘নির্যাতনকারী’ (তসলিমার বর্ণনা) প্রথম স্বামীর আহ্বানে সাড়া দিতে তসলিমার অরুচি হয় না, অন্যদিকে কবি রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ্র (১৯৫৬-১৯৯১) সঙ্গে তসলিমার দৈহিক সম্পর্ক আন্তর আবেগে সংরঞ্জিত হয়ে আছে — দ্বৈতসত্তার এই টানাপোড়েন তো থাকতেই পারে, কিন্তু পূর্বোক্ত ‘বিশেষ সুবিধা’র প্রসঙ্গ আপনি কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন?
বার্ট্রান্ড রাসেলের (১৮৭২-১৯৭০) মতো আত্মচরিত লিখতে পারবেন না ব’লে আক্ষেপ প্রকাশ করেছিলেন হুমায়ুন আজাদ, ‘অকপট’ তসলিমার অন্তত সেই খেদ নেই, মনে হয়!
নিরাভরণ - ৪ এপ্রিল ২০১০ (২:১৩ পূর্বাহ্ণ)
তসলিমা নাসরিনকে নিয়ে ঘটে যাওয়া ঘটনা প্রবাহ খুব মনোযোগ দিয়ে অনুসরন করা হয়নি। আর তার লেখাও পড়া হয়নি সে ভাবে। কিন্তু অল্পবিস্তর যা পড়েছি, তাতে প্রগতিচিন্তার সাথে মেধার সংযোগের যে সহজ আকাংখা তা পূর্ণতা পায়নি তসলিমার লেখায়। একটু সরলিকরন হলেও আমার পর্যবেক্ষনে মনে হয়েছে প্রগতি বা নারীবাদকে ব্যবহার করে সুনাম কূড়ানোর চেষ্টা হয়ত তার মধ্যে প্রবল ছিল। ভাল সাহিত্য বা সমাজবীক্ষনের চেয়ে এই মাত্রাটাই হয়ত বেশি প্রকট ছিল তাঁর ক্ষেত্রে। যে নারীবাদকে তিনি অস্ত্র হিসাবে ব্যবহারের চেষ্টা করেছিলেন সেটাকে সংবেদনশীল ভাবে উপস্থাপনে ব্যর্থ হয়েছিলেন বলেই আমার অভিমত। ফলে নিজে জর্জরিত হয়েছেন এই অস্ত্রের অসতর্ক নাড়াচাড়ার ফলস্বরূপ। তার কিছু নিবন্ধ পড়েছিলাম। একজন ডাক্তার হলেও তাঁর যে বিজ্ঞানবীক্ষা তা আমার হাইস্কুল জীবনে সীমিত বিজ্ঞানের সাধারন জ্ঞানের সাথেই সাংঘর্ষিক ছিল। তাই লেখিকা হিসাবে তার বিশ্লেষনের প্রতি আস্থার ক্ষেত্রটি তৈরি হতে পারেনি। তবে এটা আমার ব্যর্থতাও হতে পারে। এটা পুরো চিত্রটির একটা দিক।
মূলপোস্টে বার্নার্ডশ থেকে তসলিমার যে উদ্ধৃতি এটা অনেকটা একটা নারীবাদি লেখার নিচে আলাদাভাবে টীকা দিয়ে ‘এটা কিন্তু নারীবাদি লেখা’ বলার মত শোনাল। তিনি কি করেছেন সেটা আসলে তার লেখারই মধ্যেই স্পষ্ট হবার দরকার ছিল। আলাদা টীকার দরকার পড়ল কেন সেটা ভেবে দেখা দরকার?
বার্নার্ড শ এর এই ‘আনরিজনেবল ম্যান’ কি একজন জীবনবীক্ষাশুন্য মানুষ? আমি মনে করিনা। তসলিমা কি সেই অর্থে একটা বিকল্প পৃথিবীর খোঁজ দিয়েছিলেন তার লেখায় না কি প্রচলিত সমাজের সমালোচনাই সার ছিল তার লেখার। যারা তাকে অনেক বেশি পড়েছেন তারা ভাল ভাবে বলতে পারবেন। কিন্তু কৌশলগত দিক দিয়ে এটা একজন সাহিত্যিক বা সমাজবীক্ষকের সাফল্যের বা গ্রহন যোগ্যতা অনেকাংশে বেড়ে যায় যদি সে একটা বিকল্প পৃথীবি বা সমাজের চিত্রকল্প তুলে ধরতে পারে পাঠকের সামনে।
তিনি যা লিখেছেন তা পাঠককে কিভাবে টেনেছে সেটা বিবেচনা আনলেও প্রশ্ন দাঁড়ায় তিনি যে নির্বাসিত হলেন এটা কি তার প্রাপ্য ছিল? উত্তর হচ্ছে, না। কিন্তু এটা কি অবধারিত ছিল? উত্তর ‘অনেকটা’। সে কারনেই অনেকে হয়ত বলতে চাচ্ছেন তিনি মোল্লা জুটিয়ে তার বিরুদ্ধে মিছিল করিয়েছেন। মন্তব্যটি একপেশে সন্দেহ নেই। তবে এখানে আমি রাষ্ট্রের ব্যর্থতার একটা চিত্র দেখি। দেখি রাষ্ট্র তাকে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা দিতে পারেনি। এখনো এই দায়িত্বটি এড়িয়ে যাচ্ছে রাষ্ট্র অথবা রাষ্ট্রের পেছনে থাকা রাজনৈতিক নেতৃত্ব। কারন গনতন্ত্রের একটা পরিনতি হচ্ছে সংখ্যাগরিষ্ঠ বা বেশি ক্ষমতাশালী সামাজিক গোষ্ঠীদের প্রতি ক্ষমতাকামীদলগুলোর একধরনের বোঝাপরা। এখানে এসে রাষ্ট্র হয়ত ব্যর্থ হয়েছে বারবার।তসলিমার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের বক্তব্য কি আমি জানি না। আবার তসলিমাকে এটা বলতেও বাঁধে যে আপনি সমঝোতা করুন। কারন তিনি যা লিখেছেন সেটা হয়ত তার ব্যক্তিগত অনুভুতি আর বিশ্বাস থেকেই লিখেছেন। হয়ত ভালমত আর্টিকুলেট করতে পারলে তিনিও রোকেয়ার মত বা আরো বড় কেউ হয়ে উঠতেন। কিন্তু তিনি যে রোকেয়া হয়ে ওঠেননি তার কারন হচ্ছে তার ব্যক্তিগত জীবনের প্যাথলিজি। রোকেয়া ছিলেন প্রচন্ড রকমের আশাবাদি। বাঁধার জঞ্জাল পেড়িয়ে তিনি দেখিয়েছেন অথৈ সাগরের মধ্যে সাতরিয়ে তীরে পৌছে অন্যদের ডেকে জাগান সহজ। মেয়েদের জন্য তিনি ছিলেন আশাবাদিতার আদর্শ চিত্র। এভাবে আস্তে আস্তে পৃথীবি আগায়। আর তসলিমা হয়ত ব্যক্তিগত ব্যর্থতার দায় সমাজের কাঁধে চাপিয়ে দিতে চেয়েছেন। লড়াই না করে হয়ত কর্কশভাবে সমালোচনার তীর ছুড়েছেন এলোপাথারি ভাবে। অন্ধকারে ছোড়া ঢিল হয়ত এমন সব যায়গায় গিয়ে আঘাত করেছে যেটা আসলে আঘাতের উপযুক্ত লক্ষ্য ছিলনা। নৈরাশ্য আর অন্ধকারের ব্যপারে নালিশ করতে গিয়ে তিনি হয়ত টানেলের শেষপ্রান্তের আলোর ক্ষীণ রেখাটি দেখতে পাননি। এটা সাহিত্যের অঙ্গনে তার অসারতাকে, অগ্রহনযোগ্যতাকে হয়ত ব্যখ্যা করে, কিন্তু নির্বাসনকে জাস্টিফাই করে না।
বিষয়টিকে সামনে তুলে ধরবার জন্য মাসুদ করিমকে ধন্যবাদ। আরো আলোচনা আশা করছি।
নীড় সন্ধানী - ৪ এপ্রিল ২০১০ (২:০৬ অপরাহ্ণ)
তসলিমা নাসরিনের সবচেয়ে বড় সাফল্য সম্ভবতঃ তার বিতর্কিত হবার ক্ষমতা। তাঁর নারীবাদী চরিত্রের চেয়েও তাঁর নারীত্বকে পরীক্ষামূলক অবমাননার মুখে ঠেলে দেয়ার ক্ষমতাকে প্রধান মনে হয়। এটা একান্তই ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষন আমার। তার আত্মজীবনীগুলি পড়েই সেই ধারনা হয়েছে।
মোহাম্মদ মুনিম - ৬ এপ্রিল ২০১০ (৪:৪৫ পূর্বাহ্ণ)
তসলিমা নাসরীন নব্বই দশকের শুরু থেকে লিখছেন। সে সময়ে তিনি মুলত ঈভ টিজিং নিয়ে লিখতেন, মফস্বল শহরে সিনেমা দেখে ফেরার সময় কেউ একজন অযথাই তাঁর বাহুতে সিগারেটের ছ্যাঁকা দেন, এই জাতীয় অভিজ্ঞতা। বাংলাদেশের মেয়েরা প্রতিনিয়ত এই জাতীয় হয়রানীর শিকার হয়, কেউ কিছু বলে না, মেয়েরাও মেনে নেয়। সম্ভবত তসলিমা নাসরীন প্রথম এই ‘তুচ্ছ’ ব্যাপারগুলোকে এভাবে হাইলাইট করা শুরু করেন। বেগম রোকেয়া নিজেও radical লেখা লিখেছেন, তবে সে আমলে কটা লোকই আর লিখতে পড়তে পারতো? আর সে আমলের মোল্লারাও ব্রীটিশদের লাঠির ভয়ে তেমন কিছু বলার সাহস পেতেন না। তবে বেগম রোকেয়া বেজায় কষ্ট করে মুসলমান মেয়েদের জন্য স্কুল দিয়েছেন, তাদের নিজের পায়ে দাড়াঁনোর পথ দেখিয়েছেন। তো মুসলমান মেয়েরা তো লেখাপড়া শিখছে, ডাক্তার হচ্ছে, উকিল হচ্ছে। কিন্তু তাঁরা তো সেই মেয়েই থেকে গেলো, মানুষ হিসাবে প্রাপ্য সম্মান তো বাংলাদেশের মেয়েরা পেলো না। এই ব্যাপারগুলো তসলিমা নাসরীন তাঁর ধারালো লেখায় তুলে আনছিলেন।
সে পর্যন্ত ব্যাপারগুলো ঠিকই ছিল। কিন্তু তিনি নারী স্বাধীনতার ইস্যুতে ধর্মকে, মুলত ইসলামকে টেনে আনলেন। ইসলাম প্রবর্তনের আগে আরবের মহিলারা স্বাধীন ছিলেন, ইসলাম এসে মহিলাদের পরাধীন কে ফেলেছে, এইসব সেন্সিটিভ কথাবার্তা। ইসলামপূর্ব আরবে নারীরা কেমন ছিলেন, আর ইসলাম এসে নারীদের উপকার না অপকার করেছেন, এটা বেজায় জটিল আলোচনা (এই সম্পর্কিত একটি লিঙ্ক এখানে)। ইসলামের আগে মেয়ে শিশুদের জীবন্ত কবর দেয়া হতো, ইসলাম এসে সেটা বন্ধ করে দুনিয়া উদ্ধার করেছে, এ জাতীয় উক্তিও যেমন অতি সরলীকৃত, নারীকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করার জন্য ইসলামই মূলত দায়ী, এ সিদ্ধান্তও তেমনি সরলীকৃত। এসব কথা বাজারে ফেলে দিলে হৈ চৈ হবেই, তাঁর উপরে তসলিমা আবার আনন্দ পুরষ্কার পেয়েছেন। সব কিছু মিলে হৈ চৈ মাত্রা ছাড়িয়ে গেল, তিনি দেশছাড়া হলেন। দেশছাড়া হয়ে তিনি বিশ্ববিখ্যাত হয়ে গেলেন। তাঁর লজ্জা বইটি অনেকগুলো ভাষায় রুপান্তরিত হলো। এসব করে বাংলাদেশের নারীকুলের কি উপকার হয়েছে সেটা বোঝা মুশকিল, তবে তসলিমা ইউরোপ আমেরিকার বুদ্ধিজীবি মহলে তাঁর অবস্থান পাকা করে নিয়েছেন বলাই বাহুল্য। ইউরোপে সব সময় বসে থাকলে তো হবে না, তাতে তাঁর বাজার পরে যাবে। তাই তিনি কয়েক মাসের জন্য কলকাতায় আসেন, কলকাতার মুসলমানদেরও খেয়ে দেয়ে কাজ নেই, তিনি একটা কিছু বললেই মিছিল মিটিং দাঙ্গা হাঙ্গামা। তাতে দশটা গরিবের দোকান পুড়ে, দু তিনটা লাশ পড়ে, নির্বাসিত তসলীমা আবারও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে নিরাপদ ইউরোপে ফিরে যান। গত পনের বছর ধরে তিনি এই করছেন, আর ‘বাজার’ ধরে রেখেছেন।
তসলীমা সাহসী বটে, তবে তিনি সম্ভবত পাকিস্তানের মুখতারান বিবির মত সাহসী নন। আফগান তরুনী মালালাই জয়া, যিনি মাত্র আঠার বছর বয়সে তালিবানদের ফাঁকি দিয়ে আফগান বালিকাদের ইংরেজী শিক্ষা দিয়েছেন, তিনিও সম্ভবত তসলীমার চেয়ে অনেক বেশী সাহসী। এমন আরও অনেক সাহসী নারী আছেন পৃথিবীতে, কেউই তসলীমার মত বিখ্যাত নন, বিখ্যাত হবার কোন ইচ্ছাই নেই তাঁদের, ফালতু শখের নারীবাদের কোন মূল্যই তাঁদের কাছে নেই। তরুনী তসলীমা শুরু করেছিলেন এঁদের মত সাহস আর সততা দিয়ে, সেই সাহস আর সততার কিছুমাত্র তাঁর মধ্যে অবশিষ্ট নেই।
তানবীরা - ১০ এপ্রিল ২০১০ (৪:৪৮ পূর্বাহ্ণ)
আলোচনাটা ভালো লাগছে। পৃথিবী খুব দ্রুত বদলাচ্ছে। যখন দশ বছর আগে ঢাকার রাস্তায় কোন তরুনী জীন্স পরে হাটতো তখনকার মানুষদের যা প্রতিক্রিয়া ছিলো আজকে নিঃসন্দেহে সেই প্রতিক্রিয়া আর নেই। তাই আজ থেকে একশ বছর পরে, তাসলিমা বাংলাদেশের মেয়েদের কাছে আর্দশের প্রতীক হবেন না এটা জোর করে বোধ হয় আর বলা যাবে না। বেগম রোকেয়া যখন পড়াশোনা করেছেন তখন তাকেও হয়তো তাসলিমার মতোই কটু পরিস্থিতির মধ্যে দিয়েই যেতে হয়েছিল।
ভবিতব্যই তার স্থান ঠিক করবে। শুধু সেদিন আমি কিংবা তাসলিমা আরো অনেকেই হয়তো দেখবেন না।
মাসুদ করিম - ১১ এপ্রিল ২০১০ (১২:৩০ অপরাহ্ণ)
মত প্রকাশের স্বাধীনতা প্রসঙ্গে লিখতে গিয়ে আজকের প্রথম আলোতে দৃক গ্যালারির সাম্প্রতিক ‘ক্রসফায়ার’ প্রদর্শনীর উদ্বোধনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে পুলিশের বাধাদানে গণতান্ত্রিক সরকারের ভূমিকার সমালোচনা করে মুহাম্মদ জাহাঙ্গীরের কলাম : আলোকচিত্রের স্বাধীনতা। প্রসঙ্গক্রমে সেখানে তিনি আলোচনা করেছেন ‘স্বাধীন মত প্রকাশের অপরাধে’ নির্বাসিত দুই বাঙালি লেখক দাউদ হায়দার ও তসিলমা নাসরীন বিষয়ে।
সুমাদ্রি - ২৬ এপ্রিল ২০১০ (২:৩৮ পূর্বাহ্ণ)
কোন লেখককে,সে তিনি ”নারী” ই হোন আর ”পুরুষ” ই হোন, একটা ”বাদ”‘ এর ভেতরে ঢুকিয়ে রাখার মানসিকতাটাও কিন্তু পাঠকের বিশাল এক সীমাবদ্ধতা।আমাদের দেশে অনেক ”শক্তিমান” পুরুষ লেখকেরা নিজেদের ”মানবিক” , ” প্রথাবিরোধী” অথবা ”নারীবাদী” বলে আত্মতৃপ্তি লাভ করে থাকেন যদিও তাদের সাহিত্যে দেখা যায় তারা নারীকে সম্ভোগ্য বস্তু হিসেবেই তুলে ধরেছেন সবচেয়ে বেশি।তসলিমা’র লেখার সাহিত্য-মুল্য কতটুকু সে আলোচনায় যাওয়াটা অবান্তর কারণ এটা সময়-ই নির্ধারণ করে দেবে।আমি যা বলতে চাই তা যদিও ”ক্লিছে” প্রায়,সেটি হল বাংলাদেশে অনেক রাষ্ট্রবিরোধী,লম্পট,ভন্ড,ধর্ষক জনপ্রিয় হয়ে বহাল তবিয়তেই আছেন,আমাদের সমাজে মিথ্যে আর কুপমন্ডুকতা টিকে থাকুক তার জন্য তাদের প্রচেষ্টা অব্যহত রয়েছে।রাষ্ট্র তাদের আশ্রয় দিতে এতটুকু কুন্ঠাবোধ করেনা।ধর্মীয় অনুভূতিতে ”আঘাত” দিয়ে লেখা তসলিমা’র আগে ও অনেকেই লিখেছেন এবং যথারীতি তারা ও আক্রান্ত হয়েছেন,তবে তসলিমা বা দাউদ হায়দারের মত করুণ ভাগ্য আর কারও হয়েছে কিনা আমার জানা নেই।তসলিমা’র প্রথম দিককার লেখা যেমন ” আমার মেয়েবেলা”, ” লজ্জা”, ” নির্বাচিত কলাম” এসবে তিনি একজন নারী লেখক হিসেবে যে পরিমান সাহস দেখিয়েছেন তা সত্যিই অতুলনীয়।তসলিমা ও সম্ভবত কোথাও গলা ফাটিয়ে বলেননি যে তিনি আমাদের দেশের নারীদের ত্রাতা হিসেবে হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন।তসলিমা তাঁর কিছু নিজস্ব অভিজ্ঞতা, ক্ষোভ ,পুরুষশাষিত সমাজের ভন্ডামো,অন্যায় তুলে ধরেছেন তাঁর লেখায়।আমাদের দেশে রাজপথে সরকারবিরোধী,মৌলবাদবিরোধী মিছিলে মানুষের সংখ্যা ও কম হয়না।তাদের কাউকেই দেশ থেকে নির্বাসনে যেতে হয়না অথবা আমাদের ”নারীবাদী” লেখকদের ঘৃনা ও সমালোচনার শিকার হতে হয়না।তসলিমা’র দোষ অন্যত্র।তিনি একই সাথে ধর্ম ও ”পুরুষমানসিকতা” দুটোরই বিরুদ্ধাচরণ করেছেন।একটা মেয়ে হয়ে পুরো একটা ”সংঘ”এর বিরুদ্ধে যাওয়া পুরুষ সইবে কেন।”রাষ্ট্র” ”ধর্ম” এরা ও তো আসলে অগনতান্ত্রিক ফ্যাসিস্ট পুরুষ।তসলিমা নাসরিন এর সাম্প্রতিক লেখার মান নিম্নমানের অথবা নিম্নরুচির কিনা সে কুটতর্কের বিষয় কারণ একটু এদিক ওদিক করলে এরকমই অনেক লেখা ”আধূনিক” হয়ে যায়।মানুষ তসলিমা বাংলাদেশ তাঁর জন্য বিপদজনক জেনে ও দেশে আসতে চান দেশের প্রতি ভালবাসার টানেই,যে দেশকে তিনি হয়তো ”মা” বলে সম্বোধন করেন।বিদেশে এত ”সম্মান” ও ”খ্যাতি” পাওয়া সত্ত্বে ও তিনি বলেন ” নেই,কিছু নেই”।তসলিমা ও দাউদ হায়দার আবার ফিরে আসুক বাংলায়,আবার লিখুক কবিতা,প্রবন্ধ,এই আশাটুকু আমরা তাদের দিলে কার কি এমন ক্ষতি!!
এশার - ১৬ মে ২০১০ (৮:২১ অপরাহ্ণ)
তসলিমা নাসরিনের লেখার ভক্ত কোনোদিনই ছিলাম না। কারন আমি করি তিনি ভালো লিখতে জানেন না, ভালো পড়েনওনি।
কিন্তু প্রচন্ডরকম লজ্জিত হই তার নির্বাসনে। তিনি কী লেখেন কিনবা না লেখেন তার চেয়ে আমার কাছে বড় হয়ে উঠে “তার কথা বলার অধিকার হরণের বিষয়টি”।
সভ্য সমাজের অন্যতম স্তম্ভ হচ্ছে “আমার কথা বলার স্বাধীনতা”।
কোনো সরকার জনগনের এই অধিকার নিশ্চিত করতে না পারলে তা তাদের একটি বড় ব্যার্থতা বলেই বিবেচিত হবে।
জাতি হিসেবে আমরা ভন্ড এবং তার আরেকটি বড় প্রমান হচ্ছে তসলিমার “নির্বাসন দন্ড”। এদেশে পতিতা থাকতে পারবে, তসলিমা থাকতে পারবেন না। এর চেয়ে বড় লজ্জা আর কী হতে পারে আমাদের জন্য?
তস্লিমা, ক্ষমা চাই।
আর সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় হোক তাই কামনা করি।
তমসো দীপ - ১১ জুন ২০১০ (১২:৩৬ অপরাহ্ণ)
যারা এই লেখার বিভিন্ন কমেন্টে বলেছেন তসলিমা নাসরিন কোন লেখক না, ভাল লিখতে পারেন না, তাঁর লেখা সাহিত্য হয়নি, তাদের কাছে আমার একটি কথা জানবার আছে। তারা ক’টা বই পড়েছেন তসলিমা নাসরিনের? আসলেই কি পড়েছেন?
আমার মনে পড়ে, আমি যখন তসলিমা নাসরিনের ‘ফরাসী প্রেমিক’ পড়ছিলাম, একটা চাপ্টারে আমার চোখ আটকে যায়। নায়িকা নীলা নিজের জন্য একটা বাড়ি কিনেছে। নিজের মত করে বাড়িটাকে সে সাজাচ্ছে। হঠাৎ পড়তে পড়তে আমার মনে পড়ল নিজের জীবনের একটা সময়ের কথা। তখন আমার জীবন কেবল শুরু হচ্ছে।বাবা মা’র সাথে থাকি, ইচ্ছে করে না। সারাক্ষণ স্বপ্ন দেখি নিজস্ব একটা ফ্ল্যাটের। মনে মনে হাজার বার এওটা ফ্ল্যাট কিনি, সাজাই, বারান্দায় শুয়ে গুন গুন করে রবীন্দ্রসংগীত গাই, সন্ধ্যেবেলায় আমায় যে ভালোবাসে, সে আসে আমায় দেখতে। আশ্চর্য হয়ে দেখলাম, নীলার মনোজগতের সাথে আমার মনোজগত কি আশ্চর্য্রকম মিলে যাচ্ছে।
সেদিন আমি উপলব্ধি করেছিলাম, তসলিমা নাসরিন কত মহান লেখক। তাঁর প্রধান উপন্যাসগুলোয় মানব মনের এমন অনেক চিত্র আছে, যেগুলো আমাদের অনেকের সাথেই মিলবে। ত্তাঁর আত্মজ়ীবনীতে যা আছে, তাঁর কিছু না কিছু প্ররথিবীর যে কোন নারীর জীবনের কিছু না কিছুর সাথে মিলতে বাধ্য।
‘ফরাসী প্রেমিক’ থেকে কিছু অংশ রইল –
বসন্ত কাল হল আত্মহত্যার ঋতু। দুই যুবক চলন্ত গাড়ির তলায় ঝাঁপ দিয়েছে। মরতে চেয়েছে, মরেছে। এরকম প্রতি বসন্তকালেই লোকে রেলের তলে জীবন দেয়। এর কারণ, দানিয়েল আগেই জানিয়েছে যে বসন্তকাল। বসন্তকালে মানুষের আত্মহত্যা করার ইচ্ছে হবে কেন, এই কারণটি নীলা জানতে চায়।
বসন্ত এলে পশ্চিমীরা যত দূর জানে সে, আনন্দে মেতে ওঠে। তবে আত্মহত্যা কেন?
দানিয়েল বলে, যারা একা, সঙ্গীহীন, তারা আত্মহত্যা করে এ সময়টায়। বসন্তকালে একাকীত্বের জ্বালা খুব বেশিরকম হয় কি না। বসন্তই তো জানিয়ে দেয় যে গ্রীষ্ম আসছে, সুখের সময় আসছে, প্রেমের সময় আসছে, মিলনের সময় আসছে। সারা গ্রীষ্মকাল প্রেমিক প্রেমিকা জোড়ায় জোড়ায় ঘুরে বেড়াবে, আনন্দ করবে, আর যারা একা, মাঠে ঘাটে লেকের ধারে, সমুদ্রতীরে এত জোড়া দেখে আরও বেশি একা বোধ করবে, এই ভয়ে এই কষ্টে বসন্তকালেই, গ্রীষ্ম আসার আগেই আত্মহত্যা করে।
নীলা বোঝে না।‘
(উদ্ধৃত অংশটুকু ‘ফরাসী প্রেমিক’ এর অঙ্কুর প্রকাশনীর সংস্করণের ১৫১ নং পৃষ্ঠা ত্থেকে নেয়া)
‘ফরাসী প্রেমিক’ থেকে আরেকটি অংশ –
নীলা দিন পার করে শুয়ে বসে, দুএকটি বইয়ের কিছু পাতা পড়ে, সন্ধ্যের পর টেলিভিশন খোলে, বন্ধ করে। শুয়ে থাকে, উঠে বসে। জ্যাক রেলের গান শোনে। গান বন্ধ করে। বারান্দায় দাঁড়ায়, ফিরে আসে। রান্নাঘরে ঢোকে। রান্না করতে ইচ্ছে করে না। ফোনের কাছে যায়, রিসিভার হাতে নেয়, রেখে দেয়। বালিশে মুখ গোঁজে, চাদরে মুখ মাথা ঢাকে, চাদর সরিয়ে ফেলে, আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে একটি একটি করে পরনের কাপড় খোলে, নিজেকে দেখে, পরনের কাপড় পরে আয়নায় নিজেকে ভেংচি কেটে, কাঁদো মুখ করে, স্মিত হেসে, হা হা হেসে, সরে আসে। একা বসে গান গাইতে গীতবিতান হাতে নেয়, গাইতে গাইতে অনুভব করে গলার স্বর বুজে আসছে, গীতবিতান রেখে দেয়।
আর রাত হলে বিছানায় শুয়ে সে খোলা জানালায় কালো আকাশ দেখতে দেখতে ভাবে, বেনোয়া পাসকালকে চুমু খাচ্ছে, ঠিক যেমন করে চুমু খায় নীলাকে। জ্যাকলিনকে ঘুম পাড়িয়ে পাসকাল শোবার ঘরে এসেছে, আর তাকে জড়িয়ে ধরে বেনোয়া বলছে জ তেম জ তেম জ তেম। জ তেম প্যাশনামো, জ তেম সিরিয়াসোমো। তারপর ঠিক যেমন করে নীলাকে উলঙ্গ করে বেনোয়া, তেমন করে করছে পাসকালকে। নীলার স্তনবৃন্ত দুটোর নাম যদি চেরি হয়, পাসকালের ও দুটো লিঙমবেরি তবে। পাসকালের সাদা ত্বক স্পর্শ করে বেনোয়া উল্লাসে ফেটে পড়ছে, কী সুন্দর তোমার রঙ, কী মসৃণ তোমার ত্বক, ঠিক যেমন করে নীলার রঙ দেখে সে বলে। পাসকালের ভেতর ঢোকার জন্য বেনোয়ার পুরুষ অঙ্গ ফুলে ফেঁপে উঠেছে, গুঁসছে। সারারাত পাসকালকে ঠিক তেমন করে সুখ দিচ্ছে, যেমন করে নীলাকে দেয় বেনোয়া।
পাসকাল নামের এক অদৃশ্য আততায়ীর উত্তপ্ত শ্বাস নীলার সারা গা পোড়াতে থাকে।‘
এ অংশটুকু অঙ্কুর থেকে বেরুনো ‘ফরাসী প্রেমিক’ এর ২৬১ ও ২৬১ পৃষ্ঠা থেকে নেয়া। জীবনের কাছাকাছি না গেলে এত তীব্রভাবে বাস্তবতার চিত্র ফুটিয়ে তোলা কিভাবে সম্ভব, তা আমার জানতে ইচ্ছে করে।
‘ফরাসী প্রেমিক’ এর আরেকটি অংশও রইল –
‘ বেলোয়া নীলার ধ্যানে টোকা দিয়ে বলে, কি ভাবছ এত?
না তেমন কিছু না,
তেমন কিছু না মানে? আমাকে বল।
বলার মত কিছু না।
বলার মত না হলেও বল।
বেনোয়ার কন্ঠে দাবি, প্রেমিকের দাবি। প্রেমিকা অন্যমনে কিছু ভাবলেও সে শোনার বা জানার দাবি করতেই পারে, কারণ নীলা বেনোয়াকে জীবন সঁপে দিয়েছে। জীবন সঁপে দিলে শরীর যেমন দেওয়া হয়, মনও দিতে হয়, রেলের কামরায় বসে ভাবা টুকরো টুকরো উদাসীন ভাবনাগুলোকেও।
জঁ পল সার্ত্রের অথা ভাবছি। নীলা বলে।
আমাদের জঁ পল সার্ত্রের কথা?
হ্যাঁ তোমাদের জঁ পল সার্ত্রের কথা।
বেনোয়া জোরে হেসে ওঠে, আমি ভাবলাম তুমি বুঝি তোমাদের দরিদ্র কৃষকদের কথা ভাবছ।
নীলা অনেকক্ষণ চুপ থেকে বলে, সার্ত্র বলেছেন, জীবনের কোনও অর্থ নেই, কিন্তু একে অর্থময় করে তুলতে হবে। কি করে অর্থময় করতে হয় বলো তো? কোনও দরিদ্র দেশে দরিদ্র পরিবারে দরিদ্র ছেলে বা মেয়ের জন্ম হল, লেখাপড়া করার সুযোগ জোটেনি, অনাহারে অভাবে অসুখে কষ্ট পাচ্ছে, চব্বিশ ঘন্টা তার পরিশ্রম করতে হয় এক থালা ভাত জোটাতে, তার হয়ত বিরাট প্রতিভা ছিল বড় একজন বিজ্ঞানী হবার, বা বড় একজন লেখক হবার, বা বড় একজন দার্শনিক হবার। কিন্তু প্রতিভাকে সে কাজে লাগাবে কি করে, বল? জীবনকে অর্থময় করার তার সুযোগ কোথায়? পেটে যার খাবার নেই, গায়ে যার কাপড় নেই, মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই, তার কাছে জীবন মানে কি কেবলই যন্ত্রণা নয়? ..
বেনোয়া এবারও হেসে ওঠে, বলে, কি সব আবোল তাবোল বকছ! সবাই তো আর একইরকম করে জীবনের অর্থ তৈরী করে না। আমার জীবনের অর্থ হচ্ছে জ্যাকলিন। আমার বাবা মা ধনী ঘরের সন্তান ছিলেন না, তাঁরাও প্রচুর সংগ্রাম করেছেন। সন্তানের জন্ম দিয়েছেন, আমি তাঁদের জীবনকে পূর্ণতা দিয়েছি, অর্থ দিয়েছি। আর তাছাড়া পরকালে কৃতকর্মের ফল তো ভোগ করতেই হবে। জীবন অর্থহীন হবে কেন?
নীলা জোরে হেসে ওঠে।
কি হাসছো যে?
নীলা হাসতে হাসতেই বলে, তুমি পরকালে বিশ্বাস কর?
নিশ্চয়ই। তুমি কর না?
না।
কেন তোমাদের ধর্মে তো স্বর্গ নরক আছে! বেনোয়া বলে।
বহুকাল আগে এক বাঙালি লেখক লিখে গেছেন স্বর্গ নরক নিয়ে, “কোথায় স্বর্গ কোথায় নরক কে বলে তা বহুদূর, মানুষের মাঝে স্বর্গ নরক, মানুষেতে সুরাসুর।”
নীলা হাসতে হাসতে বলে।
বেনোয়া সোজা হয়ে বসে, গম্ভীর কন্ঠ তার, তুমি কি ঈশ্বরে বিশ্বাস কর না?
নীলা স্পষ্ট স্বরে বলে, না।
আশ্চর্য! ভেনোয়া গা ছেড়ে দেয় আরাম চেয়ারে।
ভারতবর্ষের খ্যাতিই হচ্ছে এর আধ্যাত্ববাদ। ভারতে আদিকাল থেকে এরই চর্চা হয়েছে, এখনও এরই চর্চা হচ্ছে, এ সে ইশকুলের বইয়েই পড়েছে জানালো।
নীলা বলে, প্রাচীন ভারতের চার্বাক দার্শনিকের কথা তোমার ইশকুলের বইয়ে লেখেনি? তখনকার জনপ্রিয় দর্শনের নাম ছিল লোকায়ত। লোকায়তবাদীরা আত্মা মানত না, ঈশ্বর মানত না, স্বর্গ নয়, নরক নয়। বহুকাল ধরে ভারতবর্ষ ইংরেজদের শাসনে থেকেছে। ইংরেজরা আমাদের বোঝাতে চেয়েছে যে, আমরা ভারতবাসীরা, নেহাত খাটো ধরণের মানুষ। সভ্যতায় শিক্ষায় জ্ঞানে বুদ্ধিতে কোনোদিক থেকেই ওদের সমান নই, তাই আমাদের পক্ষে দাসত্বটাই স্বাভাবিক। অবশ্যই এসব মিথ্যে। ভারতবাসীকে ঠকাবার জন্যই এসব বলা হচ্ছে। একারণেই, ভারতবর্ষে যখন স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু হল, কিছু কিছু জাতীয়তাবাদী পন্ডিত দেশের অতীত গৌরবটাকে খুব বড় করে দেখাবার চেষ্টা করলেন। ভারতবর্ষের ইতিহাস খুঁড়ে প্রমাণ দেখাতে লাগলেন কত মহান, কত উচ্চ আমাদের সভ্যতা। পশ্চিমের বিজ্ঞানবাদ বা বস্তুবাদের বিপরীত ভাববাদ দেখিয়ে বলতে লাগলেন অতীতে মুনি ঋষিরা বলে গেছেন সংসারটা হচ্ছে অনিত্য, মায়া, মিথ্যা। সংসারের কিছু স্থূল সুখভোগকেই পুরুষার্থ মনে করা নেহাত স্থূলবুদ্ধির লক্ষণ। এসব হচ্ছে আত্মমর্যাদার কারণে। আর একেই পশ্চিমীরা ভেবে নিয়েছে, ভারতের সত্যিকার পরিচয়।
এটুকু বলে নীলার আশংকা হয় এই বুঝি বেনোয়া এখন প্রশ্ন করবে, এতই যদি বস্তুবাদের কদর
ভারতবর্ষে, কই, দেশ তো এখনও দরিদ্রই রয়ে গেছে? অর্থনীতির অবস্থা এমন করুন কেন? মানুষ কেন দারিদ্রসীমার নিচে বাস করে? নীলা সম্ভাব্য প্রশ্নটির একটি উত্তর দাঁড় করায়, কারণ দুশ বছরের ইংরেজ শাসন অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দিয়েছে। প্রশ্ন, ইংরেজ তো গেছে, পঞ্চাশ বছরের বেশি হয়ে গেল। উত্তর, পঞ্চাশ বছর খুব কম সময় দেশকে গড়ার জন্য। বেনোয়া যুক্তি দেখাতে পারে, দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর জার্মানিতে কিচ্ছু ছিল না, পঞ্চাশ বছরে ইউরোপের সবচেয়ে ধনী দেশ জার্মানি। নীলা তখন আমেরিকার মার্শাল প্ল্যানএর কারণটি দেখাবে।
ধ্যুত। মাথা ঝিমঝিম করে নীলার। মাথায় বেনোয়ার ভয় ঘাপটি মেরে আছে।
নীলার হাতদুটিতে আঙুল বুলিয়ে দিতে দিতে বলে বেনোয়া, তাহলে তুমি কি বলতে চাও তুমি বিশ্বাস কর না যে ঈশ্বর আমাদের গড়েছেন পরস্পরের জন্য?
নীলা জানালা থেকে চোখ না ফিরিয়ে বলে, না।’
এই অংশটা ৩২৪, ৩২৫ ও ৩২৬ নং পৃষ্ঠায় রয়েছে।
ভাবনার এমন আঁকবাঁক কলমে ধরা সাধারণ কোন লেখকের পক্ষে সম্ভব নয়।
আমার তসলিমা নাসরিনের আরেকটি উপন্যাস ‘শোধ’ থেকেও লম্বা একটা উদ্ধৃতি দেবার ইচ্ছে ছিল, আপাতত আর তা করছি না। তার চেয়ে তাঁর কয়েকটা কবিতা নিচে তুলে দিলাম –
প্রাপ্তি
সাতসকালে খড় কুড়োতে গিয়ে
আমার ঝুড়ি উপচে গেছে ফুলে
এত আমার কাম্য ছিল না তো!
এখন আমি কোথায় রাখি, কোথায় বসি, কোথায় গিয়ে কাঁদি!
পুরো জীবন শূন্য ছিল, ছিল
কারু তো আর দায় পড়েনি দেবে
তুমি এমন ঢেলে দিচ্ছ, ভরে দিচ্ছ,ম কাছে নিচ্ছ টেনে
এত আমার প্রাপ্য ছিল না তো!
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
ব্যস্ততা
তোমাকে বিশ্বাস করেছিলাম, যা কিছু নিজের ছিল দিয়েছিলাম,
যা কিছুই অর্জন-উপার্জন !
এখন দেখ না ভিখিরির মতো কেমন বসে থাকি !
কেউ ফিরে তাকায় না।
তোমার কেন সময় হবে তাকাবার ! কত রকম কাজ তোমার !
আজকাল তো ব্যস্ততাও বেড়েছে খুব।
সেদিন দেখলাম সেই ভালবাসাগুলো
কাকে যেন দিতে খুব ব্যস্ত তুমি,
যেগুলো তোমাকে আমি দিয়েছিলাম।
~~~~~~~~~~~
চুক্তি
এক বিকেলে মেঘনা যাবো, ঠিক তো!
আগের সব অভিজ্ঞতা তিক্ত,
একটু ভাই বুঝে চলবে, নৌকো যদি চড়ি,
শেষ বিকেলে খিদে লাগলে কাঁচকি-চচ্চড়ি,
চন্দ্রমুখী আকাশখানি আয়না-জলে ফেলে
উপুড় করে রাখব কিছু স্বপ্ন এলেবেলে।
সুখে কিন্তু শরীর ভাসে, জল-জোয়ারে সুখ,
একটু তুমি জানি জলের পা ছুঁতে ইচ্ছুক।
আমার বড় শহর ছেড়ে দূরে যাবার শখ
সঙ্গে যদি ইচ্ছে যদি চঞ্চল বালক
একটু ভাই দেখে চলবে, পিছলে যদি পড়,
সাঁতার জানো? মনে হয় না। নৌকো নড়বড়।
এক বিকেলে জীবন ছোঁবো, ঠিক তো!
সেই কতকাল ভিতরখানা রিক্ত।
~~~~~~~~~~~~~~~
এসেছি অস্ত যেতে
পুবে তো জন্মেছিই, পুবেই তো নেচেছি, যৌবন দিয়েছি,
পুবে তো যা ঢালার, ঢেলেইছি
যখন কিছু নেই, যখন কাঁচাপাকা, যখন চোখে ছানি, ধূসর-ধূসর,
যখন খালি-খালি, যখন খাঁ খাঁ – এসেছি অস্ত যেতে পশ্চিমে।
অস্ত যেতে দাও অস্ত যেতে দাও দাও অস্ত যেতে
না দিলে স্পর্শ করো, একটু স্পর্শ করো, স্পর্শ করো একটুখানি
লোমকূপে বুকে
স্পর্শ করো ত্বকের মরচে তুলে ত্বকে, চুমু খাও,
কণ্ঠদেশ চেপে ধরো, মৃত্যুর ইচ্ছেটিকে মেরে ফেলো,
সাততলা থেকে ফেলো! স্বপ্ন দাও, বাঁচাও।
পুবের শাড়ির আঁচলটি বেঁধে রেখে পশ্চিমের ধুতির কোঁচায়
রং আনতে যাব আকাশপারে,
যাবে কেউ? পশ্চিম থেকে পুবে,
দক্ষিণ থেকে উত্তরে ঘুরে ঘুরে
এই তো যাচ্ছি আনতে উৎসবের রং, আর কারও ইচ্ছে থাকলে চলো,
কারও ইচ্ছে হলে আকাশদুটোকে মেলাতে, চলো।
মিলে গেলে অস্ত যাব না, ওই অখন্ড আকাশে আমি অস্ত যাব না,
কাঁটাতার তুলে নিয়ে গোলাপের বাগান করব, অস্ত যাব না,
ভালবাসার চাষ হবে এইপার থেকে ওইপার, দিগন্তপার
সাঁতরে সাঁতরে এক করে দেব গঙ্গা পদ্মা ব্রহ্মপুত্র, অস্ত যাব না।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
ঝরাপাতা
ঝরাপাতাদের জড়ো করে পুড়িয়ে দেব ভেবেছি অনেকবার,
রাত হলেও যত রাতই হোক, আগুন হাতে নিই।
ওদের তাকিয়ে থাকা দেখলে গা শিরশির করে।
ঝরে গেলে কিছুর আর দায় থাকে না
যেমন খুশি ওড়ে, ঘরে বারান্দায় হৈ হৈ করে খেলে,
জানালায় গোত্তা খাচ্ছে, গায়ে লুটোপুটি, হাসছে,
কানে কানে বার বার বলে, ঝরে যাও, ঝরো, ঝরে যাও।
মন বলে কিছু নেই ওদের। তারপরও কী হয় কে জানে, আগুন নিভিয়ে দিই।
পাতাগুলো পোড়াতে পারি না, কোনও কোনও দিন হঠাৎ কাঁদে বলে পারি না,
গুমরে গুমরে কারও পায়ের তলায় কাঁদে।
কান্নায় শব্দ দিগন্ত অবদি ছড়ানো শত শতাব্দীর মরুময় নৈঃশব্দ
ভেঙে ভেঙে জলতরঙ্গের মতো উঠে আসে…
কেউ হেঁটে আসে, আমার একলা জীবনে কেউ আসে।
সে না হয় দুদণ্ড দেখতে এল, তবু তো এল।
সে না হয় কাছেই কোথাও গিয়েছিল, তাই এল, তবু তো এল।
ঝরাপাতারা তাকে নিয়ে নিয়ে আসে, যতক্ষণ নিয়ে আসে,
ততক্ষণ জানি আসছে, ততক্ষণ নিজেকে বলি কাছেই কোথাও নয়, পথ ভুল করে নয়,
আসলে আমার কাছেই, বছরভর ঘুরে, ঠিকানা যোগাড় করে খুঁজে খুঁজে
আমার কাছেই আসছে কেউ, ভালোবেসে।
ওই অতটা ক্ষণই, ওই অতটা কুয়াশাই
আমার হাত পা খুলে খুলে, খুলি খুলে, বুক খুলে গুঁজে দিতে থাকে প্রাণ।
বাড়ির চারদিকে পাহাড় হয়ে আছে ঝরাপাতার,
পোড়াতে পারি না।
ডুবে যেতে থাকি ঝরাপাতায়, পোড়াতে পারি না।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
নীলকন্ঠ নারী
পান করবার যে পাত্রটিই আমি বেছে নিই
সে পাত্রেই থাকে বিষ, নিকটেই ছিল
প্রিয় নাসপাতি-রস, বেদানা ও আঙুরের বাদামি পানীয়।
বরাবরই আমি রং দেখে ভুল করি
যে রঙে ঔজ্জল্য বেশি
যে রঙের মোহে আপাত আনত হই
দেখি কন্ঠ পুড়ে নামে বিষ।
আমার ব্যার্থতা এই,
একশ গোলাপ ঘেঁটে হাতে নিই হলুদ করবী।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
সারাদিন কেটে যায় বিষে ও বিষাদে
সংসারে তেমন মানুষ কি আছে যে কিনা দীর্ঘ দীর্ঘ দিন দুঃখ না দিয়ে পারে ?
যে মানুষই সুখের নদীতে সাম্পান ভাসাবে বলে শর্ত দিয়েছে,
যে মানুষই কাছে এসে বিস্তর গল্প শুনিয়েছে ফুলের জন্মের,
প্রজাপতির ডানায় যে রং থাকে সেই রঙের…
যে মানুষই আকাশের ডাল থেকে চাঁদ ছিঁড়ে এনে কপালে পরাতে চেয়েছে আমার
তারই খুব তাড়া পড়ে যাবার যদি হাতখানা না বাড়াই তার হাতের দিকে ক্রমশ,
অথবা যদি বাড়াই, সে ছোঁয়, ছুঁয়ে একটু একটু করে মন্থন করে মেদ মাংস, বশ করে
স্নায়ু।
ভালবাসি শব্দটি যে উচ্চারণ করে বেশি, সেই যায় ভেড়াতে
এক-এক দিন এক-এক ঘাটে তার বুকের সাম্পান…
বেনিয়া প্রেমিকগুলো কড়া দরে ফেরি করে ফেরে প্রেমের অঙ্কুর।
সংসারে আসলে তেমন মানুষ নেই, যে কিনা দীর্ঘ দীর্ঘ দিন দুঃখ না দিয়ে পারে।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
স্বেচ্ছামৃত্যু
জীবনের চেয়ে বেশি এখন মৃত্যুতে বিশ্বাস আমার,
চেনা শহরের চেয়ে দ্বীপান্তরে
প্রেমের চেয়ে বেশি অপ্রেমে।
কেউ আমার, ধরা যাক কোথাও বসে আছি
ঘাসে অথবা ক্যাফেতে অথবা বাসস্টপে
কাছ ঘেঁষলেই মনে হয়
এই বুঝি জীবনের রঙের স্বাদের গন্ধের
কথা শোনাতে এল…
তড়িঘড়ি দৌড়ে যাই নির্জনতার দিকে
জমকালো বিষণ্ণতায়, শূন্যতার ভিড়ে
জন্ম থেকে এখানেই বাস আমার, এখানেই মানায় আমাকে।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
আরও অনেক দেয়া যেত। দিলাম না।
শিল্পবোধসম্পন্ন যে কারো কাছে আমার প্রশ্ন, যিনি এমন কবিতা লিখতে পারেন, তাঁকে কি করে খারাপ লেখক বলা যায়?
মাসুদ করিম - ২৩ জুলাই ২০১০ (৯:০৮ অপরাহ্ণ)
যদিও তসলিমা নাসরিন ভারত সরকারের কাছে ভারতে স্থায়ী বসবাসের আবেদন করেছেন এবং ভারতের অনেক সাংবাদিক মিডিয়াকর্মী এবিষয়ে তাদের অকুণ্ঠ সমর্থন জানিয়েছেন কিন্তু ভারতের সংবাদসংস্থা পিটিআই-এর সূত্রে জানা যাচ্ছে যে তসলিমাকে ভারত ছেড়ে যেতে বলা হয়েছে। বিস্তারিত পড়ুন এখানে।
মাসুদ করিম - ১৩ আগস্ট ২০১০ (৫:০০ অপরাহ্ণ)
২৫ আগস্ট তসলিমা নাসরিনের জন্মদিন, আর গতকাল তার ভারতে অবস্থানের ভিসার মেয়াদ এক বছর বাড়ানো হয়ছে, ভারত সরকার জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের প্রভাবশালী লেখক ও বুদ্ধিজীবিদের অনুরোধে নিয়মের ব্যাতিক্রম ঘটিয়েই miscellaneous category-র ‘পাঁচ বছরের’ বাধ্যবাধকতাকে শিখিল করেছে, আউটলুক ইন্ডিয়া একেই বলছে ভারত সরকারের কাছ থেকে তার জন্মদিনের উপহার।
বিস্তারিত পড়ুন এখানে।
মাসুদ করিম - ৮ মার্চ ২০১১ (১০:০৮ অপরাহ্ণ)
নারী দিবসের শতবর্ষে সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে তসলিমা নাসরিনের একটি অসাধারণ কবিতা তুলে দিয়েছেন নওরীন তামান্না, এখানে।
নওরীন তামান্না - ৯ মার্চ ২০১১ (১২:১০ পূর্বাহ্ণ)
সত্যিই বড়ো দুঃখ হয় মাসুদ ভাই। আমরা কয়েক প্রজন্মের নারীরা বড় হলাম, সান্ত্বনা পেলাম, শক্তি পেলাম যার ‘নির্বাচিত কলাম’ পড়ে, আজ তাকেই আর কোথাও দেখি না। অথচ এই দেশটিতে এরশাদ, আমিনী, গোলাম আযম – সকলেরই ঠাঁই হয়, কেবল তসলিমারই হয়না। তার অপরাধ ্(যদি নিজের মত প্রকাশ কোন অপরাধ হয়ে থাকে) কি এদের চেয়েও গুরুতর?
মাসুদ করিম - ৪ জানুয়ারি ২০১২ (৫:২৪ অপরাহ্ণ)
কী অসাধারণ তৎপর বাংলাদেশ পুলিশ! পিরোজপুরের এক কলেজে ‘লজ্জা’র একটি কপি পাওয়া গেছে তাই কলেজের অধ্যক্ষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এবং পুলিশ ইন্সপেক্টর এও বলছেন, অধ্যক্ষের বিচার হবে ও বিচারে ওই অধ্যক্ষের প্রচলিত আইনে তিন বছরের সাজাও হবে। ‘লজ্জা’ তো আমরা যখন বেরিয়েছিল তখনই পড়েছি। এটাই তসলিমা নাসরিনের একমাত্র বই যাতে ধর্ম নিয়ে ‘অবমামনাকর’ কিছু লেখা নেই। এটা সম্পূর্ণতই বাবরি মসজিদ ভাঙ্গা পরবর্তী বাংলাদেশের এক শ্রেণীর মুসলমানের হিন্দু নির্যাতনের সত্য ঘটনা নিয়ে রিপোর্টধর্মী উপন্যাস।
খবরের লিন্ক : Bangladesh teacher arrested over banned book।
মাসুদ করিম - ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১২ (১:৫২ অপরাহ্ণ)
গত বৃহষ্পতিবার তসলিমা নাসরিনের আত্মজীবনীমূলক নতুন বই ‘নির্বাসন’এর মোড়ক উন্মোচন হল ঢাকা বইমেলায়, বইটি প্রকাশ করেছে আগামী প্রকাশন এবং মোড়ক উন্মোচন করেছেন সৈয়দ আবুল মকসুদ। খবরের লিন্ক : এসেছে তসলিমা নাসরিনের ‘নির্বাসন’। কলকাতা বইমেলায় মুসলিম মৌলবাদীদের হুমকিতে এই বইটিরই মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠান স্থগিত করা হয়েছিল। এনিয়ে টাইমস অফ ইন্ডিয়ার সাথে তসলিমা নাসরিনের সাক্ষাৎকার।
লিন্ক এখানে।
মাসুদ করিম - ৩০ আগস্ট ২০১২ (১২:১০ অপরাহ্ণ)
তার কবিতার হিন্দি অনুবাদ সংকলন ‘মুঝে দেনা ঔর প্রেম’-এর মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে দিল্লিতে প্রায় চার বছর পর জনসমক্ষে আসলেন তসলিমা নাসরিন। এই সুযোগে ভারতীয় ইংরেজি দৈনিক ‘দি হিন্দু’ তার একটি সাক্ষাৎকার নিয়েছে।
মাসুদ করিম - ৪ সেপ্টেম্বর ২০১২ (৭:০৮ অপরাহ্ণ)
আর কিছু নয় একটা রেকর্ড রাখছি।
তসলিমা বলেছেন
সুনীল বলেছেন
মাসুদ করিম - ১২ জানুয়ারি ২০১৩ (২:২০ অপরাহ্ণ)
মাসুদ করিম - ১৩ জানুয়ারি ২০১৩ (২:৩৬ অপরাহ্ণ)
নারী পুরুষের পোষাকের সমতা নিয়ে তসলিমা নাসরিন তার ইংরেজি ব্লগে এক সম্প্রতিক পোস্টে কিছু মতামত দিয়েছেন, তা নিয়ে বিডিনিউজ২৪.কম স্পটলাইট বিভাগে খবর করেছেন ‘নারী পুরুষের অভিন্ন পোশাক চান তসলিমা‘, এটা ভাল যে দেশের একটি অনলাইন সংবাদ মাধ্যম তসলিমার ব্লগপোস্টকে খবর হিসাবে তুলে এনেছে। তসলিমা নাসরিনের বিভিন্ন মন্তব্য নিয়ে এর আগে বাংলানিউজ২৪.কমও বিভিন্ন সময় খবর করেছে। কিন্তু যেটা প্রার্থিত সেটা এখনো হচ্ছে না — তসলিমা নাসরিনের লেখা প্রকাশ হচ্ছে না বাংলাদেশের ছাপা অনলাইন পত্রপত্রিকায়, এটা কিন্তু নিয়মিত হওয়া উচিত। সমস্যাটা কোথায় অবশ্য জানি না — বাংলাদেশে সরকারের দিক থেকে, পত্রপত্রিকার দিক থেকে,তসলিমা নাসরিনের দিক থেকে? নাকি সব দিক থেকে?
এবার আসা যাক পোষাক নিয়ে আলোচনায়, তসলিমা নাসরিন লিখেছেন
হ্যাঁ, নারীরা পোষাকের ব্যাপারে সত্যিই অনেক বেশি বৈচিত্রপূর্ণ পুরুষদের থেকে। পুরুষদের পোষাকের বৈচিত্র আসলেই কম। আগ্রহী পুরুষরা অবশ্যই এব্যাপারে এগিয়ে আসতে পারেন। তবে এখানে একটা ব্যাপার আছে — মেয়েদের শার্ট, প্যান্ট সবকিছু আলাদা কাটাকুটিতে করা পুরুষরাও যখন শাড়ি, স্কার্ট, ব্লাউজ পরবেন তখন সেগুলোরও আলাদা কাটাকুটি বের করতে হবে। ফ্যাশন ডিজাইনাররা অবশ্য এরমধ্যেই এসব নিয়ে ভাবতে শুরৃ করেছেন তার কিছু ছবিও তসলিমা নাসরিনের ব্লগপোস্টে আছে : Why not gender neutral clothes? তবে ইউনিসেক্স টিশার্টের মতো শাড়িকে ইউনিসেক্স বলা যাবে না। শাড়ি পরা একজন পুরুষের ছবিও তিনি দিয়েছেন তার ব্লগপোস্টে এবং বলেছেন তাকে ‘গর্জিয়াস’ লাগছে, তবে একজন ফ্যাশন সচেতন পুরুষ হিসেবে আমার তা মনে হয়নি। তার চেয়ে আমাদের জনজাতিদের থামি অনেক বেশি ইউনিসেক্স পোষাক হতে পারে।
তবে এটা অনস্বীকার্য যে এভাবে পোষাকের সমতা নারীপুরুষের সমতা আনবে না। সেটা তসলিমা নাসরিনও স্বভাবতই বলেছেন
এপ্রসঙ্গে এবার আমার মূলকথাটা বলি, তসলিমা নাসরিন খেয়াল করেছেন কিনা জানি না, ঐতিহ্যগতভাবে উত্তর ভারত এবং পাকিস্তানে আজো নারীপুরুষ যে পোষাকটি পরে থাকেন — কুর্তা পাজামা — তা এতই কাছাকাছি যে, এপোষাকটাকে(দোপাট্টাও সমস্যা নয়, পুরুষের ক্ষেত্রে তা হয়ে যায় উত্তরীয়) একেবারে প্রায় ইউনিসেক্স পোষাকই বলা যায়। আরো আছে এঅঞ্চলের লোক ঐতিহ্যগতভাবে কানে দুল ও হাতে বাজু নারীপুরুষ নির্বিশেষে পরতে অভ্যস্ত,কিন্তু কে না জানে নারীপুরুষের অসমতায় সারা পৃথিবীতে ওই এলাকাটা কত পশ্চাদপদ!
মাসুদ করিম - ২১ জানুয়ারি ২০১৩ (৩:০৩ অপরাহ্ণ)
খুবই দুঃখজনক টুইট তসলিমা নাসরিনের কাছ থেকে
আমার উত্তর
মাসুদ করিম - ২৭ জানুয়ারি ২০১৩ (৯:৫৯ পূর্বাহ্ণ)
মাসুদ করিম - ৩০ জানুয়ারি ২০১৩ (২:৩২ অপরাহ্ণ)
মাসুদ করিম - ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ (১০:৩৭ অপরাহ্ণ)
মাসুদ করিম - ২৯ মার্চ ২০১৩ (৪:১৬ অপরাহ্ণ)
বাংলাদেশকে আজ কিভাবে দেখছেন তসলিমা নাসরিন, তার ব্লগে বলছেন বিস্তারিত, এব্লগে শাহবাগ নিয়ে তিনি এপর্যন্ত কী কী লিখেছেন সেসবের লিন্কও দেয়া আছে।
বিস্তারিত পড়ুন : মুক্তচিন্তা: বাংলাদেশ।
মাসুদ করিম - ২৫ আগস্ট ২০১৩ (৭:৫১ অপরাহ্ণ)
মাসুদ করিম - ২৩ নভেম্বর ২০১৩ (১২:৩৬ পূর্বাহ্ণ)
এ তথ্যটি এখানে থাকা দরকার
মাসুদ করিম - ১৩ ডিসেম্বর ২০১৩ (১২:১৮ অপরাহ্ণ)
মাসুদ করিম - ১৫ ডিসেম্বর ২০১৩ (৫:১৯ অপরাহ্ণ)
টুইটের চেয়ে একটু বিস্তারিত কিন্তু আগাপাশতলায় একই ভাষ্য।
মাসুদ করিম - ১৩ এপ্রিল ২০১৫ (৫:০১ অপরাহ্ণ)
মাসুদ করিম - ১৯ ডিসেম্বর ২০১৩ (১০:১১ পূর্বাহ্ণ)
মাসুদ করিম - ২০ ডিসেম্বর ২০১৩ (১২:১৫ অপরাহ্ণ)
মাসুদ করিম - ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ (৩:০৯ অপরাহ্ণ)
মাসুদ করিম - ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ (১০:৩৯ অপরাহ্ণ)
মাসুদ করিম - ১২ মে ২০১৪ (১০:০৪ অপরাহ্ণ)
মাসুদ করিম - ২০ জুলাই ২০১৪ (১১:২৫ পূর্বাহ্ণ)
মাসুদ করিম - ২ আগস্ট ২০১৪ (১০:৪৬ পূর্বাহ্ণ)
মাসুদ করিম - ৭ আগস্ট ২০১৪ (৩:৫০ অপরাহ্ণ)
মাসুদ করিম - ১২ আগস্ট ২০১৪ (১০:০২ পূর্বাহ্ণ)
Pingback: তসলিমা নাসরিন সম্বন্ধে একথাগুলোও জেনে রাখা দরকার | প্রাত্যহিক পাঠ
মাসুদ করিম - ১৭ আগস্ট ২০১৪ (৩:২২ অপরাহ্ণ)
মাসুদ করিম - ২৫ অক্টোবর ২০১৪ (১১:৫৩ পূর্বাহ্ণ)
মাসুদ করিম - ১১ ডিসেম্বর ২০১৪ (১:৩২ পূর্বাহ্ণ)
মাসুদ করিম - ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ (১১:০৯ পূর্বাহ্ণ)
মাসুদ করিম - ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ (৭:৫৬ অপরাহ্ণ)
মাসুদ করিম - ২০ মার্চ ২০১৫ (৫:০২ অপরাহ্ণ)
মাসুদ করিম - ২৩ মার্চ ২০১৫ (১০:০৮ পূর্বাহ্ণ)
মাসুদ করিম - ২৩ মার্চ ২০১৫ (১০:০৭ পূর্বাহ্ণ)
মাসুদ করিম - ২৪ মার্চ ২০১৫ (৬:৫৬ অপরাহ্ণ)
মাসুদ করিম - ৩১ মার্চ ২০১৫ (৬:৩৫ অপরাহ্ণ)
মাসুদ করিম - ২৪ এপ্রিল ২০১৫ (৬:২৯ পূর্বাহ্ণ)
মাসুদ করিম - ১২ মে ২০১৫ (৮:৪৫ পূর্বাহ্ণ)
মাসুদ করিম - ১৭ জুন ২০১৫ (২:৪১ অপরাহ্ণ)
মাসুদ করিম - ১৪ মে ২০১৫ (৫:০৫ অপরাহ্ণ)
মাসুদ করিম - ৩ জুন ২০১৫ (৯:০৭ অপরাহ্ণ)
মাসুদ করিম - ৬ জুন ২০১৫ (৯:৪২ পূর্বাহ্ণ)
মাসুদ করিম - ৯ জুন ২০১৫ (৪:০০ অপরাহ্ণ)
মোদির হাসিনাকে বলা #DespiteBeingAwoman নিয়ে নারীবাদীরা সোচ্চার হলেও তসলিমা নাসরিন চুপ, শুধু ফাঁকে ফোঁকরে দুএকটা সংঘাতমূলক রিটুইট দিয়েই খালাস।
মাসুদ করিম - ১০ জুন ২০১৫ (৬:১৪ অপরাহ্ণ)
বাটারিং অন ফর মোদিজি
মাসুদ করিম - ৬ জুলাই ২০১৫ (৯:১৮ পূর্বাহ্ণ)
মাসুদ করিম - ২০ জুলাই ২০১৫ (১:৪২ অপরাহ্ণ)
সবকিছুর পর তসলিমা নাসরিনের চারিত্রিক সংকীর্ণতাই ফুটে ওঠে বারবার – বন্যার বক্তৃতা নিয়ে তার মন্তব্য তার অচিকিৎস্য চারিত্রিক সংকীর্ণতারই প্রকাশ ঘটায়।
মাসুদ করিম - ৩ আগস্ট ২০১৫ (৮:৫৩ অপরাহ্ণ)
মাসুদ করিম - ৫ আগস্ট ২০১৫ (৫:৫০ অপরাহ্ণ)
মাসুদ করিম - ১১ আগস্ট ২০১৫ (১২:৪১ অপরাহ্ণ)
মাসুদ করিম - ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫ (১:২০ অপরাহ্ণ)
মাসুদ করিম - ১৭ অক্টোবর ২০১৫ (১:৪৯ অপরাহ্ণ)
ভারতীয় লেখকদের ‘দুমুখো’ বললেন তসলিমা
লেখক হত্যা ও হিন্দু জঙ্গিবাদের সাম্প্রতিক উত্থানে অনেক ভারতীয় লেখক রাষ্ট্রীয় পুরস্কার ফিরিয়ে দিলেও তাদের সমালোচনা করতে ছাড়েননি তসলিমা নাসরিন।
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত বাংলাদেশি এই লেখক টাইমস অফ ইন্ডিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ভারতীয় লেখকদের ‘দু-মুখো’ বলেছেন।
কট্টরপন্থি মুসলিমরা যখন পশ্চিমবঙ্গে তার উপর চড়াও হচ্ছিল, তখন এ লেখকদের সমর্থন না পেয়ে ক্ষোভ তসলিমার।
“যখন মুসলমান জঙ্গিরা আমার বিরুদ্ধে ৫টি ফতোয়া জারি করে, যখন আমাকে পশ্চিমবঙ্গ থেকে ছুড়ে ফেলা হয়, যখন দিল্লিতে গৃহবন্দি থাকি, যখন আমার মেগা-সিরিয়াল নিষিদ্ধ করা হয়, তখন এদের অনেকেই চুপ ছিলেন।”
“সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ও শঙ্খ ঘোষের মতো বিখ্যাত লেখকরা আবেদন করে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে দিয়ে আমার বই নিষিদ্ধও করিয়েছিলেন।”
ধর্মীয় জঙ্গিবাদ নিয়ে ভারতীয় লেখকদের অবস্থানের সমালোচনা করে তসলিমা বলেন, “দু-মুখো’ এ লেখকরা হিন্দু জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে শক্তিশালী অবস্থান নিলেও মুসলমান জঙ্গিদের নির্মম অপরাধগুলোকে ‘সমর্থন’ জানায়।
দাদরি হত্যাকাণ্ড ও হিন্দু জঙ্গিবাদী দলগুলোর উগ্র তৎপরতার প্রতিবাদে ভারতে সাহিত্য একাডেমিসহ রাজ্য সরকারের দেওয়া নানা পুরস্কার ফিরিয়ে দিচ্ছেন অনেক লেখক।
দুই দশক আগে বাংলাদেশ ছাড়তে বাধ্য হওয়ার পর ভারতে ঠিকানা নেন তসলিমা। ক্রমাগত জঙ্গি হুমকির মুখে তিনি এ বছরের জুনে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান।
ভারতকে এখনও পাকিস্তান ও বাংলাদেশের চেয়ে অধিক ‘সংবেদনশীল রাষ্ট্র’ মনে করেন এই লেখক।
ভারতে নির্যাতিত মুসলিমদের পাশের দেশগুলোতে স্বেচ্ছা নির্বাসনেও যাওয়ার পরামর্শও দেন তিনি।
“মুসলমানরা যদি ভারতে নৃশংস নির্যাতনের শিকার হয়, তাহলে তারা পাশের মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোতে চলে যেতে পারে; যেভাবে বাংলাদেশ আর পাকিস্তান থেকে হিন্দুরা চলে যায়।”
মাসুদ করিম - ১৮ অক্টোবর ২০১৫ (৪:২৭ অপরাহ্ণ)
মাসুদ করিম - ১ নভেম্বর ২০১৫ (১০:০৯ পূর্বাহ্ণ)
মাসুদ করিম - ২৮ মার্চ ২০১৬ (১০:৩১ অপরাহ্ণ)
মাসুদ করিম - ২১ আগস্ট ২০১৭ (৯:৩৮ পূর্বাহ্ণ)
মাসুদ করিম - ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭ (৮:২৮ অপরাহ্ণ)
যেমন প্রশ্নকর্তা তেমন উত্তরদাতা। সীমাবদ্ধতা বেড়েই চলেছে তসলিমার, নিজেকে নিয়ে তার সীমাবদ্ধতায় নারীবাদ অপহৃত হচ্ছে, এটাই সবচেয়ে বেশি দুঃখের, তসলিমা নির্বাসনে যত না কষ্টের তসলিমার অপহৃত নারীবাদও ততটাই কষ্টের।
মাসুদ করিম - ২৪ মে ২০১৮ (১:৩৮ পূর্বাহ্ণ)
মাসুদ করিম - ২৯ এপ্রিল ২০১৯ (৬:৫৭ পূর্বাহ্ণ)
মাসুদ করিম - ২২ জুন ২০১৯ (৫:৪০ পূর্বাহ্ণ)
https://pratyahikpath.wordpress.com/2014/08/17/%e0%a6%a4%e0%a6%b8%e0%a6%b2%e0%a6%bf%e0%a6%ae%e0%a6%be-%e0%a6%a8%e0%a6%be%e0%a6%b8%e0%a6%b0%e0%a6%bf%e0%a6%a8-%e0%a6%b8%e0%a6%ae%e0%a7%8d%e0%a6%ac%e0%a6%a8%e0%a7%8d%e0%a6%a7%e0%a7%87-%e0%a6%8f/
মাসুদ করিম - ১১ আগস্ট ২০১৯ (৩:৫৩ অপরাহ্ণ)
মাসুদ করিম - ২৪ জুন ২০২০ (৪:৫৭ অপরাহ্ণ)
মাসুদ করিম - ৯ আগস্ট ২০২৪ (১১:১২ পূর্বাহ্ণ)
‘বলতে পারছি না চিরশান্তিতে থাকুন’, বুদ্ধপ্রয়াণে বিস্ফোরক তসলিমা! লিখলেন ‘অন্য অধ্যায়ে’র কথা
https://www.sangbadpratidin.in/entertainment/cinema/taslima-nasrin-posts-about-buddhadeb-bhattacharjees-demise/
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের প্রয়াণের পর যখন শোকবার্তা জ্ঞাপনে ব্যস্ত বাঙালিরা, তখনই এক ‘অন্য অধ্যায়ে’র কথা তুলে ধরে বিস্ফোরক মন্তব্য তসলিমা নাসরিনের (Taslima Nasrin)। অস্তমিত বুদ্ধর মরদেহ যখন শেষযাত্রায় শায়িত তখন অতীতকথা স্মরণ করে লেখিকার মন্তব্য, “বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য (Buddhadeb Bhattacharya) মারা গিয়েছেন। ২০০৩ সালের আগে এরকম খবর শুনলে আমি হয়তো চোখের জল ফেলতাম। কিন্তু তিনি আমার চোখের জল অনেক বছর ঝরিয়েছেন। তিনি বেঁচে থাকাকালীন। তাই চোখ থেকে আজ কোনও জল ঝরল না তাঁর জন্য। আসলে কোনও জল আর অবশিষ্ট নেই।”
ঠিক কী ঘটেছিল? সোশাল মিডায়া পোস্টে কমরেড বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে লাল সেলাম জানিয়ে তলসিমা লিখেছেন, “২০০২ পর্যন্ত তাঁর সঙ্গে সখ্য ছিল। তারপর তাঁর কী হলো কে জানে, ২০০৩ সালে বলা নেই, কওয়া নেই আমার ‘দ্বিখণ্ডিত’ বইটি তিনি নিষিদ্ধ করলেন। সেদিনই মনে হয়েছিল, আমি তাঁর চেয়ে খাঁটি বামপন্থী। আমি নাস্তিক, আমি নারীবাদী, আমি ধর্ম বর্ণ শ্রেণী লিঙ্গ নির্বিশেষে সকলের সমতা এবং সমানাধিকারে বিশ্বাস করি। একটি মৌলবাদী দেশে কিশোর বয়স থেকে আমার আদর্শের জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে লড়াই করছি। আমার ‘দ্বিখণ্ডিত’ বইটিতে আমি রাষ্ট্রের কোনও রকম ধর্ম থাকার বিরুদ্ধে লিখেছিলাম। রাষ্ট্র থেকে ধর্মকে পৃথক করার জন্য লিখেছিলাম বলে তিনি আমার বই নিষিদ্ধ করেছিলেন। ভাবা যায়, একজন বড় বামপন্থী নেতা ইসলাম থাকা সমর্থন করতে চান। যুক্তি দেন, তা না হলে মুসলমানরা রাগ করবে। হাইকোর্টে কলকাতার মানবাধিকার সংস্থা এপিডিআর ‘দ্বিখণ্ডিত’ নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে মামলা করল। জয়ী হল। ‘দ্বিখণ্ডিত’ থেকে বুদ্ধবাবুর জারি করা নিষেধাজ্ঞা উঠে গেল। তিনি আমার ওপর আগুন হয়ে রইলেন রেগে। আরে মামলা তো আমি করিনি, জয়ী তো আমি হইনি, সুজাতবাবুরা হয়েছে। এরপর থেকেই আমাকে দেশ থেকে, সম্ভব না হলে কলকাতা থেকে তাড়াতে মরিয়া হয়ে উঠলেন। ২০০৭ সালে আমাকে সাড়ে চারমাস গৃহবন্দি রেখেছিলেন, যেন অতিষ্ট হয়ে দেশ ছেড়ে চলে যাই। কিন্তু কোথাও যাইনি আমি। শেষ পর্যন্ত একটা কুৎসিত নাটক করে তাড়িয়েছিলেন। তারপর কী হল? আপদ তো বিদায় হলাম। তিনি নিশ্চয়ই খুব আনন্দে ছিলেন তখন। আর অসহায় নিরীহ নির্বাসিত, নির্যাতিত, সৎ ও আপসহীন মানুষটির জীবন কতটুকু দুর্বিষহ হয়েছিল? সে কথা আজ আর নাই বললাম।”
এরপরই লেখক বুদ্ধবাবুর কথা মনে করিয়ে তসলিমা নাসরিনের সংযোজন, “শুনেছি পরে একটি বই লিখেছেন তিনি। তাঁর কী কী ভুল হয়েছিল তাঁর শাসন আমলে। কী কী ভুল তিনি করেছিলেন? সবই লিখেছেন। শুধু আমাকে পশ্চিমবঙ্গ থেকে বিনা দোষে যে তাড়িয়েছিলেন, সেই কথাটা উল্লেখ করেননি। এর মানে এই নিয়ে তাঁর কোনও অনুশোচনা ছিল না। তিনি মনে করতেন তিনি যা করেছিলেন ভালো করেছিলেন। আমার স্বপ্ন, সাধ সব চুরমার করে দিয়ে তিনি ভালো করেছিলেন। একজন বাংলা অন্ত প্রাণের কাছ থেকে বাংলাকে ছিনিয়ে নিয়ে তিনি ভালো করেছিলেন। আমি ইউরোপ থেকে বাংলা ভাষার টানে, প্রাণের টানে, কলকাতায় বাস করতে গিয়েছিলাম। যেহেতু বাংলাদেশের কোনও সরকারই আমাকে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে দেয়নি। কিন্তু আমি কল্পনাও করতে পারিনি, নন্দনে যে বুদ্ধবাবুর সঙ্গে সাহিত্য-সংস্কৃতি নিয়ে আড্ডা দিতাম, প্যারিস থেকে তাঁর জন্য তিনি যা চাইতেন উপহার এনে দিলাম, সেই মানুষটি একসময়ে আমার বাংলা মাকে, বাংলায় আমার শেষ আশ্রয়টিকে চিরকালের মতো টেনে নিয়ে যাবেন আমার পায়ের তলা থেকে।” এপ্রসঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও একযোগে বিঁধেছেন তিনি এই বিষয়ে বুদ্ধবাবুর পদাঙ্ক অনুসরণ করে চলার জন্য।
পোস্টের শেষপাতে আরও বিস্ফোরক তসলিমা। লিখলেন, “আমি আত্মায় বিশ্বাস করি না। পরলোকে বিশ্বাস করি না। তাই আজ অন্য সবার মতো বলতে পারলাম না চিরশান্তিতে থাকুন। অথবা যেখানে থাকুন ভালো থাকুন ইত্যাদি। তবে তাঁর জীবনে তিনি ভালো যেসব কাজ করেছেন, তার জন্য বলব- কমরেড, লাল সেলাম।”