হ্যাঁ, সত্যিই বসে না, আমাদের দেশের ক্ষমতাবানদের ডালে সত্যিই কাক বসে না। এতো প্রতাপ যার, এতো নির্দ্ধিধায় যে আদেশ করতে পারে, যাকে চারিদিক থেকে মহোদয় মহোদয় করা হয় – সেডালে কী করে কাক বসবে! এখানে ক্ষমতাবানদের দাপট আমাদের অন্তরাত্মা শুকিয়ে দেয়, আমাদের ডানা ছেঁটে দেয়, আমরা অবিকল্প বিশ্বাসে শুধু বিকল্প খুঁজি, বিশ্বস্ত কাউকে খুঁজে পাই না – নিষ্ঠায় কাউকে নিতে পারি না।
এতো ক্ষমতার চর্চা এই দেশে, এতো টাকার ছড়াছড়ি কাজেকর্মে। কোনো একটা ঠেলা বা ঠোলার জন্য বসে থাকে এদেশের সব উর্ধ্বতন। বড় অসহায় আমাদের জীবন, নিঃসঙ্গ হওয়া নাগরিকের চরিত্রলক্ষণ, কিন্তু অসহায় হওয়া তো কোনো নাগরিকেরই কাম্য নয়, বরং সবাই সহায়তা চায়, আর ক্ষমতাবানদের কাছ থেকে সহায়তার পরিবর্তে নাগরিকের জোটে আমাদের কপালে সবার পা। একটা কাক একটা ডালে বসার স্বাভাবিক নিশ্চিন্তি কার কাছে পাবে? ডালের করুণা হলে আজ অনেকেই বসতে পারে, সেডালকে ভজাতে কতকিছুই লাগে : সাধনেভজনে নামাজেকালামে তাগাতাবিজে ক্ষমতাবানদের আয়ত্তে রাখা – ডালে বসার নিশ্চিন্তিটুকু পাওয়ার আশায়! তাহলে রাজতন্ত্র ও ধর্মতন্ত্রের শৃঙ্খল থেকে বেরিয়ে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রযন্ত্রের রাজনীতিশাসিত জীবনে আমাদের কী এমন উত্তরণ হল? রাজতন্ত্র ও ধর্মতন্ত্র, রাষ্ট্রযন্ত্র ও রাজনীতির শাসন – এর মধ্যে রাজতন্ত্রকে যেমন আমরা ত্যাগ করতে পেরেছি, তেমনি রাষ্ট্রযন্ত্রকে আমরা পছন্দ করতে পারি – কিন্তু যেমন ধর্মতন্ত্র ছেড়ে আমরা কথা বলতে পারি না, তেমনি রাজনীতির শাসন ছাড়িয়ে আমরা জীবনযাপন করতে পারি না – মানুষের জীবনে তাই সবচেয়ে বিকট প্রসঙ্গ ধর্ম ও রাজনীতি – আধুনিক অনাধুনিক মানুষ এই দুইয়ের যন্ত্রণায় নির্যাতিত অথবা এই দুইয়ের অনুগ্রহে উচ্চকিত।
সময় হোক বা অসময় হোক, আজ হোক অথবা কাল, দীননয়নে চেয়ে থাকি, সম্ভব কী প্রভাব প্রতিপত্তি ক্ষমতাকে বিলুপ্ত করা – ভাল খারাপের প্রশ্ন অবান্তর – এই চক্করই থাকল না!
মাসুদ করিম
লেখক। যদিও তার মৃত্যু হয়েছে। পাঠক। যেহেতু সে পুনর্জন্ম ঘটাতে পারে। সমালোচক। কারণ জীবন ধারন তাই করে তোলে আমাদের। আমার টুইট অনুসরণ করুন, আমার টুইট আমাকে বুঝতে অবদান রাখে। নিচের আইকনগুলো দিতে পারে আমার সাথে যোগাযোগের, আমাকে পাঠের ও আমাকে অনুসরণের একগুচ্ছ মাধ্যম।
Have your say
You must be logged in to post a comment.
১ comment
মোহাম্মদ মুনিম - ২৬ মার্চ ২০১০ (১১:৩৫ অপরাহ্ণ)
শুনেছি ব্রিটিশ আমলে সাহেবদের দাপটে বাঘে মহিষে এক ঘাটে জল খেতো। জল খাওয়া তো বাঘ এবং মহিষ দুটোরই প্রয়োজন, তবে তাদেরকে accommodate করে একসাথে জল খাওয়ানোর মুরোদ সাহেবদের ছিলো। এই কারণেই সম্ভবত দুশো বছরের শোষনের পরেও লোকজন সাহেবদের ব্যাপারে এখনো খানিকটা নস্টালজিক হয়। এখনকার সাহেবদের দাপট আছে বটে, তবে সেটা কোন কাজের দাপট নয়। সেই দাপটে শুধু কাকই ভয় পায়। বাঘ আর মহিষ সাহেবদের হয়ে চাঁদাবাজী করে, একসাথে জল খাওয়াতে গেলে গোলাগুলি করে মারা যায়।