এর একটি গঠনকাঠামো আছে, গোলাম মুরশিদ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের গঠনকাঠামোকে ধরেছেন, প্রায় আড়াইশ পৃষ্টার বইটি এক্ষেত্রে পথিকৃতের ভূমিকা পালন করবে বলেই আমার মনে হয়। চারটি ভাগে তিনি বইটিকে ভাগ করেছেন। প্রথম ভাগের পরিচ্ছেদগুলো : বাংলা ও বাঙালির কথা, মুসলিম জাগরণের সূচনা, বাংলা ভাষা নিয়ে মুসলমানদের বিতর্ক, বঙ্গভঙ্গ, মুসলমানদের ক্ষমতায়ন। দ্বিতীয় ভাগে আছে : দেশবিভাগ:অসম মিলন, ‘মুখের ভাষা কাইড়া নিতে চায়’, রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’, রাজনীতিতে ভাষা আন্দোলনের প্রভাব, ‘আমরা সবাই বাঙালি’, পঞ্চাশ-ষাটের রাজনীতি। তৃতীয় ভাগে : স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতা, ঝটিকা আক্রমণ ও গণহত্যা, মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা, মুক্তিযুদ্ধের সূচনা, ভারতের আশ্রয়ে মুক্তিযুদ্ধ, সংগঠিত যুদ্ধ, যুদ্ধের আড়ালে আরেক যুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের মাশুল। চতুর্থ ভাগে রেখেছেন : স্বাধীন বাংলাদেশ:স্বপ্ন ও বাস্তবতা, নক্ষত্রের পতন, মুজিব-পরবর্তী অরাজকতা, ‘প্রথম বাংলাদেশ, শেষ বাংলাদেশ’, উপসংহার।
১৮৮০ সাল থেকে ১৯৮১ মোটামুটি এই সময়কালের একটি ‘মুক্তিযুদ্ধ’কে প্রধান করে তিনি ধরতে চেষ্টা করেছেন। ১৮৮০ সালেই অখণ্ড বাংলাদেশে মুসলমানদের সংখ্যা হিন্দুদের ছাড়িয়ে যায়। ১৯৮১ সালের ৩০ মে এক সামরিক অভ্যূত্থানে জিয়া মারা যান। একশ বছরের এই ব্যাপ্তি নির্দিষ্ট হল এই বইটিতে – ভবিষ্যতে আরো গভীর ইতিহাস অধ্যয়নের বিষয় হয়ে, যদি এই সময়কাল নিয়ে বড় পরিসরে ব্যাপ্ত ইতিহাস লেখা হয়, আমার মনে হয় বাঙালি জাতি তার এক অসাধারণ ইতিহাস গ্রন্থ হাতে পাবে – যেইতিহাস শুধু ইতিহাস নয়, হয়ে উঠবে বাঙালির ইতিহাসের বিবৃত দলিল। আজকের গোলাম মুরশিদের এই বই ‘মুক্তিযুদ্ধ ও তারপর’, যাকে দ্বিতীয় শিরোনামে অপ্রয়োজনীয়ভাবে বলা হয়েছে ‘একটি নির্দলীয় ইতিহাস’, তা খুবই কাজে লাগবে, যখন লেখা হবে সেই বিবৃত দলিল : যাতে মুক্তিযুদ্ধের এই শতাব্দীব্যাপী অনুসন্ধানকে বাঙালি জাতির মুক্তবোধের বিবৃতি হিসেবেই লেখা হবে।
এই পোস্টটি লিখেছি পাঠকদের এই বইটি*পড়বার জন্য অবহিত করতে। এবং যারা পড়বেন অথবা এর মধ্যেই পড়ে ফেলেছেন তাদের অনুরোধ করব পাঠের অভিজ্ঞতা মন্তব্য আকারে জানাতে।
*মুক্তিযুদ্ধ ও তারপর।।গোলাম মুরশিদ।।প্রথমা প্রকাশন।।প্রথম প্রকাশ:মাঘ ১৪১৬, জানুয়ারি ২০১০।।মূল্য:৩২০ টাকা।।
মাসুদ করিম
লেখক। যদিও তার মৃত্যু হয়েছে। পাঠক। যেহেতু সে পুনর্জন্ম ঘটাতে পারে। সমালোচক। কারণ জীবন ধারন তাই করে তোলে আমাদের। আমার টুইট অনুসরণ করুন, আমার টুইট আমাকে বুঝতে অবদান রাখে। নিচের আইকনগুলো দিতে পারে আমার সাথে যোগাযোগের, আমাকে পাঠের ও আমাকে অনুসরণের একগুচ্ছ মাধ্যম।
Have your say
You must be logged in to post a comment.
৫ comments
কামরুজ্জামান জাহাঙ্গীর - ১৮ মার্চ ২০১০ (১০:০৮ অপরাহ্ণ)
গোলাম মুরশিদ পরিশ্রমী লেখক_যার লেখায় অনেক তথ্য-উপাত্ত থাকে। তার নির্মোহ প্রকাশে মানবতাবাদী আবহ বিরাজমান। তবে এখানে একটি বিষয় একেবারেই বোঝা যাচ্ছে না, যেখানে দলীয় রাজনীতি ব্যতীত ব্রিটিশ উপনিবেশের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রাম সংগঠিত হত না; তেমনি একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের তো প্রশ্নই আসে না। ৫২, ৬২, ৬৯, ৭০, বা স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে যেখানে রাজনৈতিক আন্দোলনই মুখ্য ছিল, সেখানে তিনি সামগ্রিক ইতিহাসকে ’নির্দলীয় ইতিহাস’ বলে নিজেকে পুত-পবিত্র কেন রাখতে চাইছেন? তিনি কি রাজনীতিকে ভয় পান, বা, এ ব্যাপারে শুচিবায়ুগ্রস্ত?
কামরুজ্জামান জাহাঙ্গীর - ১৯ মার্চ ২০১০ (৭:০৬ পূর্বাহ্ণ)
জনাব গোলাম মুরশিদ,
সর্বজন গ্রহণীয় বলে কিছু নেই, সবার কাজে গ্রহণযোগ্য বা আদরণীয়ও কিছু থাকতে পারে না। প্রত্যেকেই তার প্রয়োজন মাফিক সত্য-মিথ্যা বানায়। কাজেই ইতিহাসকে নির্দলীয় নির্বীর্য মনপছন্দ-কাহিনী বানানোর চেয়েও সক্ষম কার্যকারিতায় ভরিয়ে রাখাই দরকারি কাজ।
সর্বকালের নবী হওয়ার চেয়ে অগ্নিকালের অবতার হওয়া অনেক শ্রেয়।
মাসুদ করিম - ১০ সেপ্টেম্বর ২০১১ (৫:২৭ অপরাহ্ণ)
এই বইটি নিয়ে ‘সচলায়তন’এ নজরুল ইসলাম লিখেছেন : প্রথমা ও গোলাম মুরশিদ প্রণীত মুক্তিযুদ্ধের বর্জনীয় ইতিহাস।
মাসুদ করিম - ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১১ (১২:২৪ অপরাহ্ণ)
নজরুল ইসলাম অন্যত্র জানতে চেয়েছেন কী বুঝে আমি গোলাম মুরশিদের এই বইটির প্রশংসা করেছি, আমি লিখেছি
মাসুদ করিম - ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১১ (১২:২৮ পূর্বাহ্ণ)
আসলে মুক্তিযুদ্ধের সামরিকীকরণ, এই অভিব্যক্তিটি বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীরের — ব্যবহার করেছেন জনকণ্ঠে তার সাম্প্রতিক কলামে, জিয়া থেকে শুরু হয়ে এই সামরিকীকরণ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস থেকে গণমানুষের অবস্থানকে অবিরত দূরে ঠেলে নিয়ে গেছে আর ২০০৭-২০০৮এর সামরিক তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে গণমানুষের অবস্থানকে একবারে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের ভবিষ্যৎ নিয়ে যেমন গভীর উদ্বেগের কারণ আছে, তেমনি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে গণমানুষের অবস্থানকে পাকাপোক্ত করতে আরো বিরাট গবেষণার প্রয়োজনীয়তা অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি জরুরি হয়ে পড়েছে। আমাদের ইতিহাসবিদ ও লেখকরা সেই ‘সত্য কাজে’ ব্রতী হবেন তো?