ছাত্র রা

আমাদের জানা দরকার এই ছাত্রসরকার সরকারের কোথায় কোথায় তাদের আয়ের টাকার ভাগ পৌঁছে দেয়। পৌঁছে অবশ্যই দেয়। আর যদি পৌঁছে না দেয়, সরকারের সতর্ক হওয়া উচিত, কারণ এর অর্থ দাঁড়ায় – কোথাও আছে এক সমান্তরাল সরকার, যার সাথে নিয়মিত চলে ছাত্রসরকারের লেনদেন।[...]

ছাত্ররাই জাতির ভবিষ্যৎ। ছাত্ররা রাজনীতিরও ভবিষ্যৎ। রাজনীতি কি জাতির ভবিষ্যৎ? তাহলে ছাত্র রাজনীতি জাতির ভবিষ্যতের সবকিছু? কিন্তু এখন ছাত্র রাজনীতি উবে গেলে ভবিষ্যতে রাজনীতিও মরে যাবে? রাজনীতি মরে গেলে জাতিও মরে যাবে? মৃত্যু অপরিহার্য। কিন্তু ধর্ম মরেনি, শাসন মরেনি, শোষণ মরেনি : রাজনীতি তাহলে কেন মরবে? মৃত্যু অপরিহার্য নয়, ধর্ম শাসন শোষণ রাজনীতি অমর। কেন? প্রক্রিয়া বড় শক্ত জিনিস।

ছাত্ররাই প্রথম একসাথে চলা। এরাই ঝাঁকে ঝাঁকে চলে। এরাই সংঘবদ্ধতা। তাই এরা রাজনীতির ক্যাডার। এরাই প্রাণভোমরা। কিন্তু জনমত দিনে দিনে ছাত্র রাজনীতির বিরুদ্ধে চলে গেছে। এদিকে জনমত রাজনীতির সপক্ষেও নেই। তাহলে সরকার? ভোট ব্যক্তির অধিকার হিসেবে টিকে আছে। তাই সরকার তৈরি হচ্ছে। ছাত্র রাজনীতির সাথে ব্যক্তির ভোটের সম্পর্ক নেই। তাই বলে ফেলি – ছাত্র রাজনীতি চাই না। রাজনীতি চাই না, এটাও বলি, কিন্তু ভোট দিতে ঠিকই হাজির হয়ে যাই। রাজনীতি আর থাকে না। কিন্তু সরকার থাকে। আর ওদিকে ছাত্ররা কী করে? এরাও আর রাজনীতি করে না। যা করার তাই করে তাদের প্রবল প্রতিনিধিরা ছাত্রসরকার চালায়। এটা নিয়ন্ত্রণ করে ওটা নিয়ন্ত্রণ করে, এখান থেকে খায় ওখান থেকে খায়, একে ধরে নিয়ে যায় ওকে ধরে নিয়ে যায়। তাহলে এই প্রবল ছাত্রসরকারকে কে প্রতিহত করবে? সরকারই করবে। কিন্তু আমরা তো তেমন কিছু দেখতে পাচ্ছি না। তাহলে সরকারের সাথে ছাত্রসরকারের নিয়মিত বোঝাপড়া চলছে। ছাত্রসরকারের অর্জন সরকারের কাছে নিশ্চয়ই পৌঁছে যাচ্ছে। সরকার প্রধান ছাত্রসরকারের দায়িত্ব ছেড়েছেন, কিন্তু সংঘবদ্ধতা তো ছাড়েননি। সংঘং শরণং গচ্ছামি।

শুধু সরকার। তাই শুধু ছাত্রসরকার। আমাদের জানা দরকার এই ছাত্রসরকার সরকারের কোথায় কোথায় তাদের আয়ের টাকার ভাগ পৌঁছে দেয়। পৌঁছে অবশ্যই দেয়। আর যদি পৌঁছে না দেয়, সরকারের সতর্ক হওয়া উচিত, কারণ এর অর্থ দাঁড়ায় – কোথাও আছে এক সমান্তরাল সরকার, যার সাথে নিয়মিত চলে ছাত্রসরকারের লেনদেন। লেনদেন কখনোই গোষ্ঠীহীন নয়, শরণ নিতেই হয়, সংঘং শরণং গচ্ছামি।

রাজনীতিই এর সমাধান। সরকার ছাত্রসরকারের রাশ টেনে রাখতে পারে রাজনীতি। আমাদের রাজনীতি যে নেই তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ আমাদের সরকার ছাত্রসরকারের দাপটেই সবকিছু চলছে। জীবন যাপনে যে পরিমাণ দাপটের নীচে আমাদের বসবাস, যে সংঘবদ্ধ লোলুপতা আমাদের চারপাশ কুরে কুরে খাচ্ছে, তার কাছ থেকে বাঁচতে হলে রাজনীতিকে সরকারের চেয়ে শক্তিশালী হতে হবে। সংঘের শক্তিকে প্রতিহত করার প্রথম ধাক্কা দিতে পারে ছাত্ররাই – সংঘবদ্ধতা নয়, রাজনৈতিক চেতনা : সেখানে যেতে পারে প্রথমে ছাত্ররাই।

মাসুদ করিম

লেখক। যদিও তার মৃত্যু হয়েছে। পাঠক। যেহেতু সে পুনর্জন্ম ঘটাতে পারে। সমালোচক। কারণ জীবন ধারন তাই করে তোলে আমাদের। আমার টুইট অনুসরণ করুন, আমার টুইট আমাকে বুঝতে অবদান রাখে। নিচের আইকনগুলো দিতে পারে আমার সাথে যোগাযোগের, আমাকে পাঠের ও আমাকে অনুসরণের একগুচ্ছ মাধ্যম।

৪ comments

  1. মোহাম্মদ মুনিম - ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১০ (১:৩৫ পূর্বাহ্ণ)

    ছাত্রলীগের এই দশার কথা প্রধানমন্ত্রীও জানেন, মাঠ পর্যায়ের নেতারাও জানেন। কিন্তু তাঁরা কিছুই করবেন না, করবেন না মানে করতে পারবেন না। কারণ, আবার ভোটের সময় বা রাজনীতির মাঠ গরম হলে পলিটিক্যাল শো ডাউনে এদেরই লাগবে। বিএনপি আমলের শেষে লগী বৈঠার যে ব্যাপারটা হলো, সেটা তো ক্যাডার ছাড়া হয় না। দুয়েকটা লাশ না পরলে তো কেউ গা করে না।
    বাংলাদেশের মফস্বলগুলোতে এখন হাজার হাজার কলেজ, এই কলেজগুলো থেকে পাশ করে কোন চাকরী জোটে না, আবার বিএ পাশ করে তো কৃষিকাজও করা যায় না। তারচেয়ে ছাত্রজীবনে টেন্ডারবাজী করে কিছু টাকা জমিয়ে ব্যবসা করা যায়, নাহলে মালয়েশিয়া যাওয়া যায়। খারাপ কিছু তো নয়।
    আমরা আওয়ামী লীগের আগের আমলে বুয়েট থেকে পাশ করলাম। আমাদের সাথে পাশ করলেন ছাত্রলীগের পাঁচ আইবুড়ো নেতা, বংগবন্ধুর নানাবিধ স্বপ্নের বাস্তবায়ন করতে করতে তাঁরা পাশ করতে করতে বয়স তিরিশ পার করে ফেললেন। এবং তার সাথে সাথে আমরা যারা নিয়মিত ছাত্র তারাও আধা আইবুড়ো হয়ে গেলাম। তিরিশ পার হয়ে গেলেতো আর বিসিএস দেয়া যায় না, তাই ঢাকা সিটি কর্পোরেশনে তাঁদের জন্য পাঁচটি পদ তৈরী হয়ে গেলো। সিটি কর্পোরেশনের অফিস বুয়েটের কাছাকাছি হওয়াতে পেশাদার দায়িত্ব পালনের সাথে সাথে তাঁরা বুয়েটের দেখাশোনা করতে লাগলেন।
    আঠারো বছরের নবিন তরুণ বুয়েটে আসে, এক দুই টার্ম মন দিয়ে পড়াশোনা করে, তার পরে জয় বাংলা বা লক্ষ জিয়া ঘরে ঘরে এই জাতীয় স্লোগান দিয়ে মিছিলে যাওয়া শুরু করে। মিছিল শেষে হলের ক্যান্টিনে দল বেঁধে খাওয়া, বিল দেওয়ার বালাই নেই। বিল দিলে আবার নেতা কিসের। তারপর বিশ্ববিদ্যালয়ের ঠিকাদারদের সাথে কুশল বিনিময়, জিয়া এবং বংগবন্ধুর স্বপ্নের বাস্তবায়নে কত টাকা যাবে, তার রেট তো বাঁধাই আছে। পাশেই যেহেতু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, সেখানকার জিয়া আর মুজিব সৈনিকদের সাথে বোঝাপড়ার ব্যাপার আছে। মাঝে মাঝে দল বেঁধে ধানমন্ডিতে ফুল দিতে আর সংসদ ভবনের মাজারে যাওয়া। এই হচ্ছে মোটামুটি রাজনৈতিক কর্মকান্ড। তবে মাসুদ ভাই যেভাবে বলেছেন, এই কর্মকান্ডের মাঝের রাজনীতি নেই, আছে সংঘবদ্ধতা। একমাত্র রাজনীতিই পারে এই সংঘবদ্ধতার বিরুদ্ধে লড়াই করতে।

  2. মাসুদ করিম - ২১ মার্চ ২০১০ (১০:১৫ পূর্বাহ্ণ)

    আজকের কালের কণ্ঠের খবর:

    ছাত্রলীগের উচ্ছৃঙ্খল কাজে কয়েক মন্ত্রীর ইন্ধন আছে
    নিজস্ব প্রতিবেদক
    ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণহীন কর্মকাণ্ডের পেছনে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সারির কিছু নেতা এবং কয়েকজন মন্ত্রীর ইন্ধন রয়েছে বলে দাবি করেছেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ওবায়দুল কাদের। সেই নেতাদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন এই নেতা। তবে তিনি ইন্ধনদাতা নেতাদের নাম জানাতে রাজি হননি।
    আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট ক্ষমতায় আসার পর থেকে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা সংঘর্ষ, সন্ত্রাস, অভ্যন্তরীণ কোন্দল, খুন, ভর্তিবাণিজ্য, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজিসহ বিতর্কিত কর্মকাণ্ড করেই চলেছে। ছাত্রলীগের এই কর্মকাণ্ডে শিক্ষাঙ্গনের পাশাপাশি সমাজেও অস্থিরতা বিরাজ করছে। ক্ষুণ্ন হচ্ছে সরকারের ভাবমূর্তি।
    ছাত্রলীগের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড নিয়ে কালের কণ্ঠের সঙ্গে আলাপকালে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে জিরো-টলারেন্স দেখানোর কথা বললেও ছাত্রলীগকে থামানো যাচ্ছে না। কারণ কয়েকজন মন্ত্রী, বিভিন্ন পর্যায়ের কিছু নেতা, সেটা জেলা পর্যায়েরও আছেন, আবার কেন্দ্রীয় নেতাও আছেন_যারা ছাত্রলীগকে মদদ দিচ্ছেন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে। এর ফলে বিশৃঙ্খল কর্মকাণ্ডের জন্য গ্রেপ্তার হলেও পরে জামিনে বেরিয়ে আসছে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা। তিনি বলেন, ‘না হলে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ উপেক্ষিত হয় কিভাবে?’
    কাদের বলেন, গুটিকয়েক নেতার কারণে পুরো দল ও সরকার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সুতরাং, এই নেতাদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। কারণ, এ ধরনের নেতার সংখ্যা খুব কম।
    দলের পক্ষ থেকে এক সময় ছাত্রলীগের দেখভালের দায়িত্বে ছিলেন ওবায়দুল কাদের। তাঁর এই মন্তব্যের বিষয়ে জানতে আওয়ামী লীগের কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তাঁরা এ বিষয়ে কিছু বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

  3. মাসুদ করিম - ২১ জুলাই ২০১০ (১:৩৬ পূর্বাহ্ণ)

    বিডিনিউজ ২৪ ডট কমে ছাত্ররাজনীতি নিয়ে খালিকুজ্জামান ইলিয়াসের মতামত : ছাত্ররাজনীতি: বাগানের সাপ।

    সম্প্রতি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে যে গোলাগুলি, হল দখল, চারতলা থেকে ছুঁড়ে ফেলা, সবুজ ঘাসের বিছানায় অচেতন হয়ে বিক্ষিপ্তভাবে শুয়ে থাকার ঘটনা ঘটলো তা বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়, ছাত্ররাজনীতির একটা ধারাবাহিক উত্তরাধিকার। এই উত্তরাধিকার কর্কটরোগাক্রান্ত এবং সবার স্বার্থেই একে উৎপাটন করতে হবে। ছাত্ররা যত খুশি রাজনীতি করুক কিন্তু সেটা তারা করবে দেশের সচেতন শিক্ষিত সমাজের অংশ হিসেবে, ছাত্র হিসেবে নয়, নয় কোন রাজনৈতিক দলের অঙ্গ সংগঠনের সদস্য হিসেবে। এজন্য প্রথমেই প্রয়োজন খুঁটিতে বাঁধা দড়িটাকে সরিয়ে ফেলা। কিন্তু সরাবেটা কে? বর্তমান সরকার যেহেতু মৌখিকভাবে তাদের অসংগঠনকে পরিত্যাজ্য ঘোষণা করেছে এবং সংসদেও তাদের বিপুল সংখ্যাধিক্য। এই সুযোগে একটা আইন করে কি লেজুড়বৃত্তির ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করা যায় না? লেজুড়বৃত্তির রাজনীতির বিকল্প হিসেবে যে রাজনীতি বিশ্ববিদ্যালগুলোতে চালু হতে পারে তা হলো বিষয় কিংবা কর্মকান্ডভিত্তিক বিভিন্ন সংগঠনের রাজনীতি। এই সব সংগঠন হবে বহুলাংশে স্বায়ত্বশাসিত, এদের প্রত্যেকের জন্য থাকবে প্রয়োজন মাফিক অর্থ বরাদ্দ; এদের পরিচালনা কমিটি হবে নির্বাচনের মাধ্যমে কিংবা সর্ব সম্মতি ক্রমে, এবং প্রত্যেক সংগঠনের পরামর্শক হিসেবে থাকবেন একজন শিক্ষক। এই সব সংগঠন হতে পারে বিচিত্র বিষয়ক, যেমন সমাজসেবা, সংস্কৃতি, রাজনৈতিক পর্যালোচনা, কম্পিউটার, বিজ্ঞান, নাটক, সিনেমা, আলোকচিত্র ইত্যাদি। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক কার্যক্রম পর্যালোচনা এবং ছাত্রদের বিষয়ে পরামর্শদানের কিংবা হলের ব্যবস্থাপনায় সীমিত আকারে অংশগ্রহণের জন্যও সংগঠন থাকতে পারে। পড়াশোনাকে মুখ্য ভূমিকায় রেখে লেখাপড়ার বাইরে ছাত্রদের এইসব কার্যক্রমে নিয়োজিত রাখলে তারা মোটামুটি দায়িত্বশীল মানুষ হিসেবে ছাত্রত্ব শেষ করে কর্মজীবনে প্রবেশ করতে পারবে। আমার এক স্বনামধন্য শিক্ষক বলতেন বিশ্ববিদ্যালয়ে যে হারে গোলাগুলি, মারপিট হয় তাতে একজন ছাত্র কোনো রকমে বেঁচে জীবন নিয়ে পার হতে পারলেও সেশন জটের কারণে যৌবন নিয়ে বেরুতে পারে না। খুঁটির রাজনীতি যদি উৎপাটন করা যায় তাহলে সে তার জীবন যৌবন জয় নিয়েই বেরুতে পারবে কারণ তখন ভর্তি-বাণিজ্য, টেন্ডারবাজী, চাঁদাবাজী, ফেরেববাজী ইত্যাদির রাজনীতি উৎপাঠিত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেবে। ছাত্রত্বের সঙ্গে এই “বাজী” প্রত্যয় নিতান্তই বেমানান। একমাত্র রাজনৈতিক নেতৃত্বের সদিচ্ছা ও শুভ বুদ্ধির জয় হলে এবং শিক্ষক নেতৃত্বেও তা সঞ্চারিত হলে ছাত্র সমাজ এই নষ্ট প্রত্যয় থেকে মুক্ত হতে পারে।

  4. মাসুদ করিম - ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৯ (৪:০২ পূর্বাহ্ণ)

    ছাত্রলীগের পর এবার যুবলীগকে ধরেছি: শেখ হাসিনা

    সরকার যে উন্নয়ন করেছে, তাতে কালিমা লাগাবে, এমন কোনো কর্মকাণ্ড সহ্য করবেন না বলে দল ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের সাফ জানিয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা।

    ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে পদচ্যুত করার পর যুবলীগের ঢাকার এক নেতাকে গ্রেপ্তারের প্রেক্ষাপটে তিনি বলেছেন, “আমি ছাত্রলীগের পর এখন যুবলীগকে ধরেছি।”

    বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় এবং ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য্যের নেতৃত্বে সংগঠনটির কয়েকজন নেতা গণভবনে দেখা করতে গেলে শেখ হাসিনা তার এই কঠোর মনোভাব প্রকাশ করেন।

    প্রধানমন্ত্রীর উপ প্রেসসচিব হাসান জাহিদ তুষার সাংবাদিকদের বলেন, “উনি বলেছেন, ‘আমি কষ্ট করে দেশের উন্নয়ন করছি, এটার উপর কোনো কালিমা আসুক, সেটা আমি হতে দেব না, আমি কাউকেই ছাড়ব না’।”

    সহযোগী সংগঠন যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাদের নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে বিভিন্ন সময় বিব্রত হতে হয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে।

    সম্প্রতি ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে উন্নয়ন প্রকল্প থেকে চাঁদা দাবির অভিযোগ উঠলে কঠোর মনোভাব দেখান আওয়ামী লীগ সভানেত্রী।

    গত শনিবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সংসদের বৈঠকে শেখ হাসিনা তা নিয়ে বিরক্তি প্রকাশের পর পদত্যাগ করেন ছাত্রলীগের দুই শীর্ষনেতা। ওই বৈঠকে যুবলীগের কয়েক নেতার কর্মকাণ্ডেও অসন্তোষ ঝরে তার কণ্ঠে।

    এরপর যুবলীগের নেতাদের জুয়ার আখড়া চালানোর খবর চাউর হওয়ার মধ্যে বুধবার ঢাকায় চারটি ক্যাসিনোতে অভিযান চালায় র‌্যাব। গ্রেপ্তার করা হয় যুবলীগের ঢাকা মহানগরের শীর্ষ পর্যায়ের এক নেতাকে।

    ছাত্রলীগ নেতাদের সঙ্গে কথায় প্রধানমন্ত্রী অবৈধ ক্যাসিনো চালানোর প্রসঙ্গও তোলেন।

    তার বরাত দিয়ে হাসান জাহিদ তুষার বলেন, “উনি বলেছেন, ক্যাসিনো নিয়ে মারামারি, খুনোখুনি সহ্য করব না।

    “ক্যাসিনোর সাথে যারা যারা জড়িত, তারা এদেশে কীভাবে আসল? কীভাবে ভিসা পেল? তাদের বেতন কীভাবে দেওয়া হয় ক্রেডিট কার্ডে নাকি ক্যাশে? কে ভিসা দিয়ে আনল, সবকিছু তদন্ত করা হচ্ছে।”

    “সবাইকে ধরা হবে। কাউকেই ছাড়া হবে না,” হুঁশিয়ারি দেন সরকার প্রধান।

    সংগঠনের ভাবমূর্তি ও দেশের ভাবমূর্তি বাড়াতে ছাত্রলীগকে কাজ করার তাগিদ দেন তাদের ‘সাংগঠনিক নেত্রী’ শেখ হাসিনা। সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত সম্মিলিতভাবে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নেওয়ারও পরামর্শ দেন তিনি।

    ছাত্রলীগের নেতাদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেছেন, “মোটর সাইকেল নিয়ে চলতে হবে, প্রটোকল নিয়ে চলতে হবে, ক্ষমতার সাথে চলতে হবে, এগুলো করা যাবে না। এগুলো করলে সাময়িকভাবে কিছু টাকা-পয়সা হবে। কিন্তু হারিয়ে যাবে। সেটা হবে দুঃখজনক। এটা আমি তোমাদের কাছে চাই না।”

    ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের কাছে নিজের রাজনৈতিক জীবনের নানা প্রতিকূলতার মুখোমুখি হওয়ার অভিজ্ঞতাও তুলে ধরেন বঙ্গবন্ধুকন্যা হাসিনা।

    “যত প্রতিকূল অবস্থা আমার জীবনে মোকাবেলা করতে হয়েছে, এটা বাংলাদেশে আর কারও মোকাবেলা করতে হয়নি। আমাকে অনেক অফার দেওয়া হয়েছে। কিন্তু জীবনে কখনও কম্প্রোমাইজ করিনি।”

    এখনও ষড়যন্ত্র অব্যাহত আছে জানিয়ে ছাত্রলীগ নেতাদের সজাগ থাকার আহ্বানও জানান শেখ হাসিনা।

    মানুষের আস্থা নষ্ট হয়ে যায়, এমন কোনো কাজে যুক্ত না থাকতে ছাত্রলীগ নেতাদের পরামর্শ দেন তিনি।

    “মানুষের আস্থা ও বিশ্বাসের মূল্য দিতে হবে। পাওয়ারে গিয়ে পাওয়ার শো আপ করা ছাত্রনেতাদের থেকে আশা করি না। তাদের বিনয়ী হতে হবে। সাধারণ মানুষ বিরক্ত হলে সরকার যে সুন্দর পদক্ষেপগুলো নিচ্ছে, সেটা নষ্ট হবে।”

    শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রমের কারণে এক সময় বাংলাদেশের সমালোচনা করত যারা, তারাই এখন প্রশংসা করছে।

    যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, “যারা বলেছিল এদেশ বটমলেস বাস্কেট হবে..পাকিস্তান বলেছিল বাংলাদেশে নাকি বোঝা। আজকে তাদের ওখানে আলোচনা হচ্ছে বাংলাদেশে এখন এমন হলো কীভাবে।”

    ছাত্রলীগকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নিয়ে চলার পরামর্শ দিয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, “সত্যিকারে নীতি-আদর্শ নিয়ে রাজনীতি করলে সংগঠন একটা শক্তিশালী ভিত্তির ওপর দাঁড়াবে। তাহলে মানুষের আস্থা বিশ্বাস ছাত্রলীগের উপর অনেক বাড়বে।”

    ছাত্রলীগ নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “তোমাদের উপর বিশ্বাস-আস্থা নিয়ে দায়িত্ব দিয়েছি। নীতি, আদর্শ, সততা, সংযম নিয়ে রাজনীতি করতে হবে। যদি সেটা না কর, একটি আদর্শ নিয়ে যদি না চল, তাহলে ভবিষ্যতে দেশকে কার কাছে রেখে যাব?”

    বিএনপির ছাত্র সংগঠন ছাত্রদলের মতো আচরণ না করতে ছাত্রলীগের নেতাদের পরামর্শ দেন শেখ হাসিনা।

    “(বিএনপি) সরকারে আসার পর ছাত্রদল যেমন আচরণ করেছিল, তেমন করা যাবে না। সরকারে থাকার সময় যদি ওদের মতো আচরণ করা হয়, তাহলে আমাদের অবস্থাও তাদের মতো হবে।”

    এই সাক্ষাৎ অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, বি এম মোজাম্মেল হক উপস্থিত ছিলেন।

Have your say

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.