ছাত্ররাই জাতির ভবিষ্যৎ। ছাত্ররা রাজনীতিরও ভবিষ্যৎ। রাজনীতি কি জাতির ভবিষ্যৎ? তাহলে ছাত্র রাজনীতি জাতির ভবিষ্যতের সবকিছু? কিন্তু এখন ছাত্র রাজনীতি উবে গেলে ভবিষ্যতে রাজনীতিও মরে যাবে? রাজনীতি মরে গেলে জাতিও মরে যাবে? মৃত্যু অপরিহার্য। কিন্তু ধর্ম মরেনি, শাসন মরেনি, শোষণ মরেনি : রাজনীতি তাহলে কেন মরবে? মৃত্যু অপরিহার্য নয়, ধর্ম শাসন শোষণ রাজনীতি অমর। কেন? প্রক্রিয়া বড় শক্ত জিনিস।
ছাত্ররাই প্রথম একসাথে চলা। এরাই ঝাঁকে ঝাঁকে চলে। এরাই সংঘবদ্ধতা। তাই এরা রাজনীতির ক্যাডার। এরাই প্রাণভোমরা। কিন্তু জনমত দিনে দিনে ছাত্র রাজনীতির বিরুদ্ধে চলে গেছে। এদিকে জনমত রাজনীতির সপক্ষেও নেই। তাহলে সরকার? ভোট ব্যক্তির অধিকার হিসেবে টিকে আছে। তাই সরকার তৈরি হচ্ছে। ছাত্র রাজনীতির সাথে ব্যক্তির ভোটের সম্পর্ক নেই। তাই বলে ফেলি – ছাত্র রাজনীতি চাই না। রাজনীতি চাই না, এটাও বলি, কিন্তু ভোট দিতে ঠিকই হাজির হয়ে যাই। রাজনীতি আর থাকে না। কিন্তু সরকার থাকে। আর ওদিকে ছাত্ররা কী করে? এরাও আর রাজনীতি করে না। যা করার তাই করে তাদের প্রবল প্রতিনিধিরা ছাত্রসরকার চালায়। এটা নিয়ন্ত্রণ করে ওটা নিয়ন্ত্রণ করে, এখান থেকে খায় ওখান থেকে খায়, একে ধরে নিয়ে যায় ওকে ধরে নিয়ে যায়। তাহলে এই প্রবল ছাত্রসরকারকে কে প্রতিহত করবে? সরকারই করবে। কিন্তু আমরা তো তেমন কিছু দেখতে পাচ্ছি না। তাহলে সরকারের সাথে ছাত্রসরকারের নিয়মিত বোঝাপড়া চলছে। ছাত্রসরকারের অর্জন সরকারের কাছে নিশ্চয়ই পৌঁছে যাচ্ছে। সরকার প্রধান ছাত্রসরকারের দায়িত্ব ছেড়েছেন, কিন্তু সংঘবদ্ধতা তো ছাড়েননি। সংঘং শরণং গচ্ছামি।
শুধু সরকার। তাই শুধু ছাত্রসরকার। আমাদের জানা দরকার এই ছাত্রসরকার সরকারের কোথায় কোথায় তাদের আয়ের টাকার ভাগ পৌঁছে দেয়। পৌঁছে অবশ্যই দেয়। আর যদি পৌঁছে না দেয়, সরকারের সতর্ক হওয়া উচিত, কারণ এর অর্থ দাঁড়ায় – কোথাও আছে এক সমান্তরাল সরকার, যার সাথে নিয়মিত চলে ছাত্রসরকারের লেনদেন। লেনদেন কখনোই গোষ্ঠীহীন নয়, শরণ নিতেই হয়, সংঘং শরণং গচ্ছামি।
রাজনীতিই এর সমাধান। সরকার ছাত্রসরকারের রাশ টেনে রাখতে পারে রাজনীতি। আমাদের রাজনীতি যে নেই তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ আমাদের সরকার ছাত্রসরকারের দাপটেই সবকিছু চলছে। জীবন যাপনে যে পরিমাণ দাপটের নীচে আমাদের বসবাস, যে সংঘবদ্ধ লোলুপতা আমাদের চারপাশ কুরে কুরে খাচ্ছে, তার কাছ থেকে বাঁচতে হলে রাজনীতিকে সরকারের চেয়ে শক্তিশালী হতে হবে। সংঘের শক্তিকে প্রতিহত করার প্রথম ধাক্কা দিতে পারে ছাত্ররাই – সংঘবদ্ধতা নয়, রাজনৈতিক চেতনা : সেখানে যেতে পারে প্রথমে ছাত্ররাই।
মাসুদ করিম
লেখক। যদিও তার মৃত্যু হয়েছে। পাঠক। যেহেতু সে পুনর্জন্ম ঘটাতে পারে। সমালোচক। কারণ জীবন ধারন তাই করে তোলে আমাদের। আমার টুইট অনুসরণ করুন, আমার টুইট আমাকে বুঝতে অবদান রাখে। নিচের আইকনগুলো দিতে পারে আমার সাথে যোগাযোগের, আমাকে পাঠের ও আমাকে অনুসরণের একগুচ্ছ মাধ্যম।
Have your say
You must be logged in to post a comment.
৪ comments
মোহাম্মদ মুনিম - ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১০ (১:৩৫ পূর্বাহ্ণ)
ছাত্রলীগের এই দশার কথা প্রধানমন্ত্রীও জানেন, মাঠ পর্যায়ের নেতারাও জানেন। কিন্তু তাঁরা কিছুই করবেন না, করবেন না মানে করতে পারবেন না। কারণ, আবার ভোটের সময় বা রাজনীতির মাঠ গরম হলে পলিটিক্যাল শো ডাউনে এদেরই লাগবে। বিএনপি আমলের শেষে লগী বৈঠার যে ব্যাপারটা হলো, সেটা তো ক্যাডার ছাড়া হয় না। দুয়েকটা লাশ না পরলে তো কেউ গা করে না।
বাংলাদেশের মফস্বলগুলোতে এখন হাজার হাজার কলেজ, এই কলেজগুলো থেকে পাশ করে কোন চাকরী জোটে না, আবার বিএ পাশ করে তো কৃষিকাজও করা যায় না। তারচেয়ে ছাত্রজীবনে টেন্ডারবাজী করে কিছু টাকা জমিয়ে ব্যবসা করা যায়, নাহলে মালয়েশিয়া যাওয়া যায়। খারাপ কিছু তো নয়।
আমরা আওয়ামী লীগের আগের আমলে বুয়েট থেকে পাশ করলাম। আমাদের সাথে পাশ করলেন ছাত্রলীগের পাঁচ আইবুড়ো নেতা, বংগবন্ধুর নানাবিধ স্বপ্নের বাস্তবায়ন করতে করতে তাঁরা পাশ করতে করতে বয়স তিরিশ পার করে ফেললেন। এবং তার সাথে সাথে আমরা যারা নিয়মিত ছাত্র তারাও আধা আইবুড়ো হয়ে গেলাম। তিরিশ পার হয়ে গেলেতো আর বিসিএস দেয়া যায় না, তাই ঢাকা সিটি কর্পোরেশনে তাঁদের জন্য পাঁচটি পদ তৈরী হয়ে গেলো। সিটি কর্পোরেশনের অফিস বুয়েটের কাছাকাছি হওয়াতে পেশাদার দায়িত্ব পালনের সাথে সাথে তাঁরা বুয়েটের দেখাশোনা করতে লাগলেন।
আঠারো বছরের নবিন তরুণ বুয়েটে আসে, এক দুই টার্ম মন দিয়ে পড়াশোনা করে, তার পরে জয় বাংলা বা লক্ষ জিয়া ঘরে ঘরে এই জাতীয় স্লোগান দিয়ে মিছিলে যাওয়া শুরু করে। মিছিল শেষে হলের ক্যান্টিনে দল বেঁধে খাওয়া, বিল দেওয়ার বালাই নেই। বিল দিলে আবার নেতা কিসের। তারপর বিশ্ববিদ্যালয়ের ঠিকাদারদের সাথে কুশল বিনিময়, জিয়া এবং বংগবন্ধুর স্বপ্নের বাস্তবায়নে কত টাকা যাবে, তার রেট তো বাঁধাই আছে। পাশেই যেহেতু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, সেখানকার জিয়া আর মুজিব সৈনিকদের সাথে বোঝাপড়ার ব্যাপার আছে। মাঝে মাঝে দল বেঁধে ধানমন্ডিতে ফুল দিতে আর সংসদ ভবনের মাজারে যাওয়া। এই হচ্ছে মোটামুটি রাজনৈতিক কর্মকান্ড। তবে মাসুদ ভাই যেভাবে বলেছেন, এই কর্মকান্ডের মাঝের রাজনীতি নেই, আছে সংঘবদ্ধতা। একমাত্র রাজনীতিই পারে এই সংঘবদ্ধতার বিরুদ্ধে লড়াই করতে।
মাসুদ করিম - ২১ মার্চ ২০১০ (১০:১৫ পূর্বাহ্ণ)
আজকের কালের কণ্ঠের খবর:
মাসুদ করিম - ২১ জুলাই ২০১০ (১:৩৬ পূর্বাহ্ণ)
বিডিনিউজ ২৪ ডট কমে ছাত্ররাজনীতি নিয়ে খালিকুজ্জামান ইলিয়াসের মতামত : ছাত্ররাজনীতি: বাগানের সাপ।
মাসুদ করিম - ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৯ (৪:০২ পূর্বাহ্ণ)