সবাই তাকে মই হিসেবেই নিয়েছেন। তিনি পশ্চিমবঙ্গের সব বিরোধীর মই। কংগ্রেস, এসইউসি, সচেতন শিল্পী বিদ্বজ্জন ও নাগরিক, মাধ্যমবাজার—সবার একটাই মই : মমতা মই। তিনি ব্যবহৃত হচ্ছেন সবার জন্য, সবার লক্ষ্যই তার লক্ষ্য; celebrated, ভারতের সবচেয়ে celebrated নেত্রী এখন তিনি, তার ধারে কাছে এখন কেউ নেই। কিন্তু কতদিন? আপাততঃ ১৬ মে ২০০৯ পর্যন্ত, ৪২* এ ১৩** পেলে তিনি যে উচ্চতায় উঠবেন সেখান থেকে শুধু পশ্চিমবঙ্গ বা ভারতই নয় সারা পৃথিবী থেকে দেখা যাবে মমতাকে। কিন্তু যদি হয় ভরাডুবি তাহলে সবাইকে নিয়ে তিনি যেখানটায় পড়বেন সেখান থেকে সবাই উঠে পড়বেন আর শুধু মইটি পড়ে থাকবে? এমন মমতাময়ী নির্বাচন পশ্চিমবঙ্গে আগে কখনো হয়নি আর কোনোদিন হবেও না, সে তিনি ১ পান আর ১৩-ই পান। চারিদিকে জয় মমতা, এ নির্বাচন মমতাময়ী : তিনি কি সত্যিই এমনি এক জড় মই শুধু। না, তিনি জড় মই শুধু নন, তিনি স্বয়ংক্রিয় মই, এবং স্বেচ্ছাচারী মই-ও বটে—যখন যাকে ফেলতে হয় তখন তাকে ফেলে দেন—তিনি মমতা বন্দোপাধ্যায়—তিনি সর্বভারতীয় তৃণমূল নেত্রী, তিনি মই-ই আর কিছু নন, যেই উঠতে চান সোনিয়া বা আদবানি, তিনি কাউকে এখন না করতে পারেন না, তিনি সচেতন মই, বাধা তখনই দেবেন, যখন দিতে চাইবেন, এ এক অনন্য রাজনৈতিক চরিত্র, আশংকা এবার মইটি তার চরম পরিণতিতে পৌঁছে যাবে, ওপরে বা নীচে যেখানেই হোক এরপর আর তাকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। কলকাতার ডিলান জয় মমতা স্লোগানকে তখন কবীর সুমনের গান করে তুলবেন আর পথে ঘাটে সুফী ফকিরের মতো ঘুরে ঘুরে জীবনের বাকি দিনগুলো মমতাময়ী সাধনায় দিন কাটাবেন : হরি দিন তো গেল, সন্ধ্যা হলো…
* লোকসভায় পশ্চিমবঙ্গের আসন সংখ্যা
** আনন্দবাজার পত্রিকা ও স্টার আনন্দের সমীক্ষায় তৃণমূল ১৩ আসনে জয়লাভ করবে।

মাসুদ করিম

লেখক। যদিও তার মৃত্যু হয়েছে। পাঠক। যেহেতু সে পুনর্জন্ম ঘটাতে পারে। সমালোচক। কারণ জীবন ধারন তাই করে তোলে আমাদের। আমার টুইট অনুসরণ করুন, আমার টুইট আমাকে বুঝতে অবদান রাখে। নিচের আইকনগুলো দিতে পারে আমার সাথে যোগাযোগের, আমাকে পাঠের ও আমাকে অনুসরণের একগুচ্ছ মাধ্যম।

৪ comments

  1. মাসুদ করিম - ১৪ জুলাই ২০১০ (১:৩০ পূর্বাহ্ণ)

    মমতা ব্যানার্জির ঘনিষ্ঠ মহল থেকে জেনেছি, বাংলাদেশের বাঙালিদের প্রতিও তাঁর অসীম মমতা। শেখ হাসিনার প্রতি তাঁর অসীম শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা এবং মনে করেন রাজ্য বিধানসভার নির্বাচনে তাঁর দল বিজয়ী হয়ে ক্ষমতায় গেলে বাংলাদেশের সঙ্গে এক স্পেশাল রিলেশনশিপ গড়ে তোলার উদ্যোগ তিনি নেবেন। বাংলাদেশে তাঁর সোনার তরী ট্রেনযাত্রাই শেষ কথা নয়, দুই বাংলার সম্পর্ক ও সহযোগিতাকে তিনি আরো সুদৃঢ় করে তুলতে চান।
    পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় আগামী নির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিজয়লাভের সম্ভাবনায় বাংলাদেশের অনেক মানুষও তাই আশাবাদী। তাদের আশা, বামফ্রন্ট সরকারের মতো বাংলাদেশের প্রতি ভাবী মমতা সরকারের নীতি উদাসীন ও সুবিধাবাদী হবে না; হবে আন্তরিকতা ও আত্দীয়তায় ভরা। রাজ্য সরকারের ক্ষমতা যদিও সীমিত, তথাপি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হতে পারলে মমতা দিলি্লর ওপর প্রভাব খাটিয়ে গঙ্গার পানির হিস্যালাভে বাংলাদেশের কখনো অসুবিধা না হওয়ায়, ঢাকা-কলকাতায় যোগাযোগ ও যাতায়াত সহজ করা, ভারতীয় ভিসা লাভের বর্তমান কড়াকড়ি শিথিল করা, দুই বাংলার মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধি, সাংস্কৃতিক যোগাযোগ ঘনিষ্ঠ করা, সীমান্ত সংঘর্ষ বন্ধ করা ইত্যাদি ব্যাপারে বলিষ্ঠ পদক্ষেপ নেবেন বলে বাংলাদেশের অনেক মানুষ আশা পোষণ করেন এবং সেই আশা থেকে পশ্চিমবঙ্গের আগামী নির্বাচনে তাঁরা মমতার জয় সম্পর্কেও আশাবাদী

    আগাচৌকে দেখি তার কারো ওপর প্রীতি জন্মালে আর তিনি কোনো কিছুর বাছবিচার করেন না। মহিউদ্দিন, হাজারীর পর এবার মনে হচ্ছে মমতার ওপর তার প্রীতি জন্মেছে। জানি না তিনি এত নিশ্চিত কী করে হলেন যে মমতা পশ্চিম বাংলার মূখ্যমন্ত্রী হলেই ভারত-বাংলাদেশের অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। তার এই প্রীতি এতই বাঁধভাঙ্গা যে, তিনি কেন্দ্রে ভারতের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী বাঙ্গালি প্রণববাবুকে ‘দিল্লির দাস’ পর্যন্ত বলে ফেললেন

    তৃণমূল কংগ্রেস বামপন্থী নয়, তার নেত্রী মমতা ব্যানার্জিও তা নন। কিন্তু দেখা গেল, একটি বামপন্থী সরকারের অপশাসন থেকে পশ্চিমবঙ্গকে মুক্ত করতে তিনি তাঁর অতীতের রাজনীতি পেছনে ফেলে রেখে জনতার নেত্রী হিসেবে জনগণের আন্দোলনে এসে দাঁড়িয়েছেন। কৃষক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তাদের সঙ্গে নির্যাতিত হচ্ছেন। সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে তিনি সোচ্চার। পুরসভায় নির্বাচনে জেতার পর সোনিয়া গান্ধী এবং কংগ্রেস দল তাঁকে কংগ্রেসে যোগ দিতে অনুরোধ জানিয়েছিলেন। তিনি রাজি হননি। তাতেই বোঝা যায়, তিনি প্রণব মুখার্জিদের মতো ‘দিলি্লর দাস’ হতে রাজি নন। তিনি দিলি্লর মিত্র থাকতে চান এবং পশ্চিমবঙ্গের মানুষের ভাগ্যোন্নয়নকেই অগ্রাধিকার দিতে চান।

    ১৩ জুলাই ২০১০-এর কালের কণ্ঠে ( http://www.kalerkantho.com) উপসম্পাদকীয়তে আব্দুল গাফফার চৌধুরীর কলাম ‘ মমতা পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় এলে বাংলাদেশের মানুষ আশাবাদী হতে পারে কি?’

  2. Pingback: মমতাস্তু | প্রাত্যহিক পাঠ

  3. মাসুদ করিম - ১৮ মার্চ ২০১৪ (৪:৪১ অপরাহ্ণ)

  4. মাসুদ করিম - ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ (১০:২৫ পূর্বাহ্ণ)

Have your say

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.